২৩. জাহিদ সাহেব ডাক্তার ডেকে আনলেন

২৩

বুধবার।

জাহিদ সাহেব রাত এগারটার দিকে এক জন ডাক্তার ডেকে আনলেন।

নীলুর আকাশ-পাতাল জ্বর। তিনি নিজে হতবুদ্ধি হয়ে গেছেন। ডাক্তারের অবস্থাও তাই। ডাক্তার মুখ শুকনো করে বলল, ‘এই মেয়েকে এক্ষুণি হাসপাতালে নিতে হবে। আমি আমার ডাক্তারি জীবনে এত জ্বর কারো দেখি নি। আপনি মেয়েটির মাথায় বরফ চাপা দেবার ব্যবস্থা করুন। আগে টেম্পরেচার কমাতে হবে।’

ফ্রীজে বরফ ছিল না। তারা দু’ জন ধরাধরি করে নীলুকে বাথরুমে নিয়ে ঝরনার কল খুলে দিল। পানির ধারার স্রোতে যদি গায়ের তাপ কমানো যায়।

নীলু পড়ে আছে মড়ার মতো। তার চোখ রক্তবর্ণ। সে কিছুক্ষণ পরপরই মাথা ঘুরিয়ে চারদিকে তাকাচ্ছে এবং ফিসফিস করে বলছে, ‘স্যারের বড় বিপদ! তুমি কি তাকে দেখবে না? এইটুকু কি তুমি আমার জন্য করবে না?’

জাহিদ সাহেব ডাক্তারকে বললেন, ‘এই সব কী বলছে ডাক্তার সাহেব?’

‘প্রলাপ বকছে। ডেলিরিয়াম। আপনি মেয়ের কাছে থাকুন, আমি অ্যাম্বুলেন্সের জন্যে যাচ্ছি। টেলিফোন আছে তো?’

‘জ্বি আছে। বসার ঘরে।’

ডাক্তার সাহেব দ্রুত নিচে নেমে গেলেন। নীলু কাতর স্বরে বলল, ‘বাবা, তুমি খানিকক্ষণ আমাকে একা থাকতে দাও। আমি ওর সঙ্গে কথা বলি।’

‘কার সঙ্গে কথা বলবি?’

‘যে আমার সঙ্গে থাকে, তার সঙ্গে। ওর সাহায্য আমার ভীষণ দরকার। বাবা,

প্লীজ। প্লীজ। তুমি আছ বলে সে আমার সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। বাবা, আমি তোমার পায়ে পড়ি।’

নীলু সত্যি সত্যি হাত বাড়িয়ে বাবার পা স্পর্শ করল। জাহিদ সাহেব বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালেন এবং সঙ্গে-সঙ্গেই চাঁপা ফুলের তীব্র সুবাস পেলেন।

স্পষ্ট শুনলেন নূপুর পায়ে কে যেন হাঁটছে। নীলুর কথাও শোনা যাচ্ছে, ‘আমার এত বড় বিপদে তুমি আমাকে দেখবে না?’

অপরিচিত একটি কণ্ঠ শোনা গেল। জাহিদ সাহেব কিছু বুঝতে পারলেন না। তিনি একমনে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *