২৩. চিঠিটা পড়ে ধাক্কার মতো

মতিন,

তোর সবশেষ চিঠিটা পড়ে ধাক্কার মতো খেয়েছি। তোর কী হচ্ছে বল তো? আজহার উল্লাহ নামের একজন বুড়োমানুষ মারা গেছেন তাতে কী হয়েছে? বুড়োরা মরবে। স্বাভাবিকভাবেই মরবে। এই বুড়োর সঙ্গে তোর কখন এমন গভীর সম্পর্কে হলো সেটাও তো জানি না।

তোর চরিত্রে স্যাঁতস্যাঁতে ব্যাপার কখনোই ছিল না। তুই হঠাৎ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গেলি কেন? প্রবলেমটা কোথায়?

এত বড় একটা চিঠি লিখলি, সেখানে নিশুর কোনো উল্লেখ নেই। মামলার কী হলো জানাবি না?

তৌ নামের আরেকটা মেয়ে ছিল না? সে মানসিকভাবে অসুস্থ। তাকে ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে এইটুকু জানি। আর কিছু কিন্তু জানি না।

আমি পড়ে থাকি জঙ্গলে, কিন্তু আমার চেতনার একটি অংশ নগরবাসী। নগরবাসী মানুষদের কথা জঙ্গলে বসে পড়তে ভালো লাগে। এখন অবশ্যি বিজ্ঞানের বইপত্র পড়া শুরু করেছি। এই মুহর্তে পড়ছি–The Holographic Universe. লেখকের নাম টেলবট। তিনি ভালো থিওরি ফেঁদেছেন। পড়লে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। বিজ্ঞান যে ক্রমেই গাঁজাখুরির দিকে এগুচ্ছে, এটা জানিস?

এইসব বৈজ্ঞানিক গাঁজাখুরি নিয়ে নদ্দিউ নতিম সাহেবকে একটা সায়েন্সফিকশান লিখতে বল না! গল্পের প্রাথমিক আইডিয়া তোকে দিচ্ছি। মনে কর দশ এগারো বছরের ছেলে। একটা ট্রেনে করে তার নানার বাড়িতে যাচ্ছে। মডেল হিসেবে তুই তোর পরিচিত ছেলেটাকেই নে। কমল না নাম?

কমল একা যাচ্ছে তার নানার বাড়ি। রাতের ট্রেন। কোন স্টেশনে সে নামবে তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ট্রেন থামল, সে নেমে পড়ল। নেমেই হতভম্ব! কোথায় সে নেমেছে? এটা তো পৃথিবীর কোনো জায়গা না। সম্পূর্ণ অন্য এক ভুবন।

ব্যাপারটা হয়েছে কী, সে চলে এসেছে প্যারালাল ইউনিভার্সে।

নদ্দিন নতিম সাহেবকে বল তিনি যেন তার কল্পনার সাত দরজা খুলে দেন। যা লিখতে ইচ্ছা করে লিখতে থাকুন। আমরা তার কল্পনার দৌড় দেখি।

মতিন, তোকে লিখতে বলছি কারণ আমি চাই তুই কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাক।

ভালো কথা, তোর নিশ্চয়ই টাকা পয়সা দরকার? মামলা চলছে। মামলার খরচ আছে। আমি টাকা পাঠাতে পারি। তোর বইটা থেকেও তুই টাকা পাবি। তবে সময়। লাগবে।

প্রতি রাতে যে দুঃস্বপ্ন দেখতি তার অবস্থা কী? দুঃস্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়েছে? না-কি স্বপ্নগুলি আরো জটিল

দুঃস্বপ্ন থেকে বাঁচার একটি আফ্রিকান ব্যবস্থা আছে। জুলু সম্প্রদায় এই কাজটা করে। পরীক্ষা করে দেখতে পারিস। ঘুমুবার আগে আগে মাথা থেকে একগোছা চুল কেটে বলের মতো গুটলি পাকাবি। সেই গুটলি মুখে নিয়ে ঘুমাবি। সামান্য হা করে ঘুমাতে হবে। দুঃস্বপ্ন মুখের ভেতর দিয়ে ঢোকার সময় চুলের জালে আটকা পড়বে। পরদিন সেই চুলের বল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে হবে। চুলের জালে আটকা পড়া দুঃস্বপ্ন জ্বলে ছাই হয়ে যাবে। ইহজীবনে তুই আর দুঃস্বপ্ন দেখবি না।

দেখবি না-কি ট্রাই করে? দুই লাইন কবিতা শোন–

If you can dream-and not make dreams your master,
If you can think, and not make thoughts your aim.

বল দেখি কার লেখা? বলতে না পারলে বইপত্র ঘাঁটতে থাক। শুধু নিশুকে জিজ্ঞেস করবি না।

কার কবিতা বলতে পারলে Special gift আছে। কী গিফট শুনলে চমকে উঠবি।

ইতি
তোর কঠিন গাধা

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *