আদনান পর্যন্ত হিজাযের আরবদের ঊর্ধ্বতন বংশধারা
আদনান-এর দুইজন পুত্র ছিলেন (১) সাদ (২) আক সুহায়লী বলেন : আর আদনানের আরো দুইজন সন্তান ছিলেন একজনের নাম হারিছ এবং অপরজনকে বলা হতো মযহাব। তিনি বলেন, তাঁর সন্তানদের মধ্যে যাহাহাক নামের আরেক জনের উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কারো কারো মতে যাহাহাক ছিলেন সাদ-এর পুত্র, আদনান-এঃ নন। তিনি বলেন : কেউ কেউ বলেছেন যে, আদান-যার নামে আদিন বা এডেন নগরীর নামকরণ করা হয়েছে এবং আবাইয়ান ও আদনান-এর অপর দুইপুত্র ছিলেন। এটি তাবারীর বর্ণনা।
আর আক আশাআরির বংশে বিবাহ করেন এবং ইয়ামানে তাদের জনপদে বসবাস করেন। ফলে তারা একই ভাষাভাষী হয়ে যান এবং এর ফলে কোন কোন ইয়ামানবাসী ধারণা করেন। তারাও ঐ বংশের লোক। ফলে তারা বলে- আক ইব্ন আদনান ইব্ন আব্দুল্লাহ ইবনুল আযদ ইব্ন ইয়াগুছ। আবার কেউ কেউ বলেন, আক ইব্ন আদনান ইব্ন যাইব (মতান্তরে রাইস) ইব্ন আব্দুল্লাহ ইব্ন আসাদ। আর বিশুদ্ধ কথা হলো আমরা যা উল্লেখ করেছি যে, তারা আসলে আদনান এর বংশধর। এ প্রসঙ্গে কবি আব্বাস ইব্ন মিরদাস বলেন :
আক ইব্ন আদনান, যারা গাসসান গোত্রের সঙ্গে ক্ৰীড়া-কৌতুক করতো, যতদিন পর্যন্ত না তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করে দেয়া হয়।
আর সাদ-এর ছিলেন চার পুত্র নিযার, কুযাআ, কুন্ছ ও ইয়াদ। আর কুযাআ ছিলেন সাদের জ্যৈষ্ঠ সন্তান এজন্য তাকে আবু কুযাআ নামে অভিহিত করা হতো। কুযাআ সম্পর্কে ইতিপূর্বে আমরা ভিন্ন মতের উল্লেখ করেছি। কিন্তু ইব্ন ইসহাক প্রমুখের নিকট এটাই বিশুদ্ধ } আল্লাহই ভালো জানেন।
আর কুন্ছ সম্পর্কে বলা হয় যে, তার বংশধারা ধ্বংস হয়ে গেছে, তাদের কেউই আর বেঁচে নেই। তবে অতীত ইতিহাস বেত্তাদের এক দলিলের মতে নুমান ইব্ন মুনযির, যিনি ছিলেন হীরায় কিসূরার প্রতিনিধি, তিনি ছিলেন কুন্ছ-এর বংশধর। ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভিন্ন মতে তিনি ছিলেন হিময়ার বংশের লোক। আল্লাহই ভালো জানেন।
vibr8
আর নেযার-এর তিনপুত্র ছিলেন রবীআ, মুযার এবং আনসার। ইব্ন হিশাম বলেন : ইয়াদ নামক নেযার অপর এক পুত্র ছিলেন। যেমন কবি বলেন :
ইব্ন হিশাম বলেন : ইয়াদ ও মুযার ছিলেন সহোদর ভাই, তাদের মা সাওদা ছিলেন আক ইব্ন আদানানের কন্যা। আর রবীআ ও আনসার-এর মা ছিলেন আক ইব্ন আদনান-এর অপর কন্যা শাকীকা, মতান্তরে জুমআ বিনত আক। ইব্ন ইসহাক বলেন : আনসার হচ্ছেন। খাছ আম ও বাজীলার পিতা। জরীর ইব্ন আব্দুল্লাহ আল-বাজালী এই বাজীলারই অধস্তন বংশধর। তিনি বলেন : আনসার ইয়ামানে আগমন করে ইয়ামানীদের সঙ্গে মিলেমিশে সেখানেই বসবাস করেন। ইব্ন হিশাম বলেন? ইয়ামানবাসীরা বলে যে, আনসাব ইব্ন আরাশ ইব্ন লাহইয়ান ইব্ন আমর ইবনুল গাওছ ইব্ন নাবৃত ইব্ন মালেক ইব্ন যায়ছ ইব্ন কাহলান ইব্ন সাবা। আমি বলি ৪ ইতিপূর্বে সাবা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে। তা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ ভালো জানেন। ঐতিহাসিকরা বলেন : মুযার হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি যিনি হুদী গান গেয়ে গেয়ে উট হাঁকানোর প্রবর্তক। কারণ, তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল সুমধুর। একদিন উটের পিঠ থেকে পড়ে যান। মাটিতে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে গেলে তিনি বলে উঠেন। ৪ হায় আমার হাত। হায় আমার হাত! এ থেকেই উটের দ্রুতগতির প্রচলন হয়। ইব্ন ইসহাক বলেন : মুযার ইব্ন নিযাবের দুই পুত্ৰ ছিলেন, ইলিয়াছ ও আইলান আর ইলিয়াসের ছিলেন তিন পুত্ৰ মুদরিকা, তাবিখ্যা এবং কুমআ। আর এঁদের মাতা ছিলেন খানদাফি বিনত ইমরান ইব্ন ইলহাফ ইব্ন কুযাআ। ইব্ন ইসহাক বলেন : মুদরিকার নাম ছিল আমের আর তাবিখ্যার নাম ছিল উমর। তবে তারা দুজনে মিলে একটা শিকার করেন। তাঁরা উভয়ে যখন তা রান্না করছিলেন, তখন ভয়ে উটটি পালিয়ে যায়। আমের উটের খোজে বের হন এবং শেষ পর্যন্ত তা খুঁজে পান। অপরজন রান্নায় ব্যস্ত ছিলেন। উভয়ে পিতার নিকট এসে তাকে এ কাহিনী শুনালে তিনি আমেরিকে বললেন : তুমি হলে মুদরিকা (পাকড়াওকারী) আর আমরকে বললেনঃ তুমি হলে তাবিখ্যা (রন্ধনকারী)। তিনি আরো বলেন : মুন্দাবের বংশধারা সম্পর্কে অবহিত ব্যক্তিদের ধারণা যে, খুযাআ হচ্ছেন আমর ইব্ন লুহাই ইব্ন কুমআ ইব্ন ইলিয়াস এর বংশধর। আমি বলিঃ এটা স্পষ্ট যে, তিনি তাদের বংশের লোক, কিন্তু তাদের পিতৃপুরুষ নন। আর তারা যে হিময়ার গোত্রের লোক, সে কথা আগেই বলা হয়েছে। আল্লাহই ভালো জানেন।
ইব্ন ইসহাক বলেন : মুদরিকার দুই ছেলে খুযায়মা ও হুযাইল আর এঁদের উভয়ের মা হচ্ছেন কুযাত্মা গােত্রের এক মহিলা। আর খুযায়মার সন্তান ছিলেন। কিনানা, আসাদ, উসদা ও হাওনা। আবু জাফর তাবারী কিনানার সন্তানদের ব্যাপারে এ চারজনের অতিরিক্ত আমের হারিছ, নাখীর, খানাম, সাদ আওযা, জারওয়াল, হিন্দাল এবং গাযওয়ান এর নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : আর কিনানার সন্তান ছিলেন নাযার, মালিক, আযদ মানাত এবং মালকান।
কুরায়শ তথা বনু নযর ইব্ন কিনানা-এর বংশধারা ও শ্রেষ্ঠত্ব
ইব্ন ইসহাক বলেন : নযর-এর মা বারা ছিলেন মুর ইব্ন উদ ইব্ন তাবিখ্যার কন্যা। আর তার সমস্ত সন্তানরা তার অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত। এ মতের বিরোধিতা করেন ইব্ন হিশাম। তার মতে বাররা বিনত মুর হচ্ছেন নাযার, মালিক ও মালকান-এর মা। আর আবদে মানাত-এর মা হচ্ছেন আযাদ সানুআ গোত্রের হানা বিনত সুয়াইদ ইব্ন গিন্তরীফ। ইব্ন হিশাম বলেন : নব্যরই হচ্ছেন কুরাইশ আর তার সন্তানরাই কুরায়শী নামে পরিচিত হন। তিনি এও বলেন যে, কারো কারো মতে ফিহর ইব্ন মালিক হচ্ছেন কুরায়শ, আর তাৰ সন্তানরা কুরায়শী। যারা তাঁর সন্তান নয়, তারা কুরায়শী একাধিক কুলজিবিশারদ যথা শায়খ আবু উমর ইব্ন আব্দুল বার, যুবায়র ইব্ন বাককার এবং মুছআব প্রমুখ এ দুটি উক্তির উল্লেখ করেছেন। আবু উবায়দ এবং ইব্ন আব্দুল বার বলেন : আসাআদ ইব্ন কায়স-এর উক্তি মতে অধিকাংশ ঐতিহাসিক এ মত পোষণ করেন যে, কুরায়শ হচ্ছেন নযর ইব্ন কিনানা।
আমি বলবো : হিশাম ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন সাইব আল-কানবী এবং আবু উবায়দা মাযার ইব্ন মুসান্না এ মতের সমর্থনে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। আর তিনি শাফিঈ মাযহাবের প্রসারে অবদান রাখেন। পক্ষান্তরে আবু উমর এ মত পোষণ করেন যে, কুরায়শ হচ্ছেন ফিহর ইব্ন মালিক। এ মতের সমর্থনে তিনি প্রমাণ উপস্থিত করে বলেন যে, বর্তমানে এমন কেউ নেই, যে নিজেকে কুরায়শী বলে দাবী করে অথচ সে ফিহর ইব্ন মালিক-এর বংশধর নয়। অতঃপর তিনি এ উক্তির পক্ষে যুবোয়র ইব্ন বাককার মুসা আর ইব্ন যুবায়র। এবং আলী ইব্ন কায়সান-এর নাম উল্লেখ করে বলেন : এ ব্যাপারেইত এরাই হচ্ছেন সর্বজন স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ। আর যুবোয়র ইব্ন বাককার বলেন : কুরায়শ ও অন্যান্য বংশধারা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা একমত যে ফিহর ইব্ন মালিকই হচ্ছেন কুরায়শদের আদি পুরুষ। ইব্ন মালিক-এর উধ্বতন পুরুষদের কেউই কুরায়শ নামে অভিহিত হননি। অতঃপর এ বক্তব্যের সমর্থনে তিনি অনেক প্রমাণ দেন। কুলায়াব ইব্ন ওয়ায়েল-এর সূত্রে বুখারী বর্ণনা করেন যে, আমি নবীজীর ঘরে লালিত যয়নবকে বললাম, আমাকে জানান যে, নবী করীম (সা) কি মুযার গোত্রের লোক ছিলেন? তিনি বললেনঃ তিনি নযর ইব্ন কিনানা গোত্রের মুযার গোত্রেরই ছিলেন। আর তাব্বারানী জাশীশ আল- কিন্দীর বরাতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা)-এর নিকট কিন্দা থেকে একদল লোক আগমন করে বললোঃ আপনি তো আমাদের বংশের লোক। তখন তিনি বললেন, না, বরং আমরা নসর ইব্ন কিনানা গোত্রের লোক। আমরা আমাদের মাতৃপক্ষ সম্পর্কে কোন সন্দেহ পোষণ করি না এবং আমাদের উর্ধ্বতন পিতৃ পুরুষ আমরা অস্বীকার করি না।
আর ইমাম আবু উসমান সাইদ ইব্ন ইয়াহয়া ইব্ন সাঈদ ইব্ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, শিন্দা গোত্র থেকে জাশীস নামক জনৈক ব্যক্তি নবী করীম (সা)-এর নিকট আগমন করে বলেন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা মনে করি আবদ মানাফ আমাদের বংশের লোক। নবী করীম (সা) মুখ ফিরায়ে নিলেন। লোকটি ফিরে এসে অনুরূপ বললে তিনি তার থেকে পুনরায় মুখ ফিরালেন। লোকটি আবারও ফিরে এসে অনুরূপ কথা বললে তিনি বললেন : আমরা নসর ইব্ন কিনানার বংশধর। আমাদের মাতৃকুল সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করি না। আর আমাদের উধ্বতন পিতৃ পুরুষকে অস্বীকার করি না। তখন রাবী বললেন : আপনি প্রথম দফায়ই চুপ করে রইলেন না কেন? এইভাবে আল্লাহ তাঁর নবীর পবিত্র মুখে তাদের দাবী নাকচ করে দেন। এ সনদে হাদীসটি গরীব পর্যায়ের উপরন্তু কালীবী হচ্ছেন একজন দুর্বল রাবী। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।
ইমাম আহমদ আশী আছ। ইব্ন কায়েস সূত্রে বলেন যে, কিন্দার প্রতিনিধি দলে আমিও নবী করীম (সা)-এর নিকট আগমন করি। তখন আমি বললাম : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের ধারণা, আপনি আমাদের বংশেরই লোক। তখন নবী করীম পূর্বোল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ জবাব দেন। এ বর্ণনার শেষাংশে আছে, আশআস ইব্ন কায়েস বলেন, আল্লাহর কসম, কুরাইশরা যে নযর ইব্ন কিনানার বংশধর, একথা কাউকে অস্বীকার করতে শুনলে শরীয়তের দণ্ডবিধি অনুযায়ী তাকে বেত্ৰাঘাত করবো। ইব্ন মাজাহও এ হাদীসটি উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন। এ হচ্ছে। এ বিষয়ে শেষ কথা। সুতরাং যে তার বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কথার প্রতি ভ্ৰক্ষেপ করা যাবে না। জারীর ইব্ন আতিয়া তামীমী হিশাম, ইব্ন আব্দুল মালিক ইব্ন মারওয়ান-এর প্ৰশংসায় বলেন :
যে মা কুরাইশকে জন্ম দিয়েছেন তাঁর বংশে কোন কলংক নেই এবং তিনি বন্ধ্যাও নন, কোন নেতা তোমাদের পিতৃপুরুষের চাইতে অধিকতর সন্ত্রান্ত নয়, আর কোন মামা তামীম গোত্রের চাইতে অধিক সম্মানিত নয়।
ইব্ন হিশাম বলেন : এ উক্তিটি নযর ইব্ন কিনানার মা সম্পর্কে। আর তিনি হলেন তামীম ইব্ন মুর-এর বোন বারা বিনত মুর। কুরায়াশ শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে কথিত আছে যে, তাকাররুশ (৩৯, ১ এ) শব্দ থেকে-এর উৎপত্তি যার অর্থ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর একত্র হওয়া। আর
এটা হয়েছে কুসাই ইব্ন কিলাব-এর যমানায়। তারা ছিল বিচ্ছিন্ন। তিনি তাদেরকে হেরেম শরীফে একত্র করেন। পরে এর বিবরণ আসছে। হুযাফা ইব্ন গানিম আলআদবী বলেন :
তোমাদের পিতা কুসাই সমবেতকারী নামে অভিহিত হতেন। তাঁরই মাধ্যমে আল্লাহ সমবেত করেছেন ফিহরের কবীলাকে। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন : কুসাইকে বলা হতো
কুরাইশ, যার অর্থ একত্র করা। আর তাকাররুশ অর্থও একত্র করা। যেমন আবু খালদা আল ইয়াশকারী বলেন :
ভাইয়েরা আমাদের বিরুদ্ধে জড়ো করেছে। অপরাধের অভিযোগ, আমাদের যুগের এবং প্রাচীন যুগের কাহিনীতে।
আবার কেউ কেউ বলেন, কুরাইশ নামকরণ করা হয়েছে তাকাররুশ (৩৯, ১ এ) থেকেঃ যার অর্থ- উপার্জন করা, ব্যবসা করা। ইব্ন হিশাম, এটি উল্লেখ করেন। অভিধানবেত্তা জওহারী বলেন : কুরাইশ (৩৯, ৪) অর্থ উপার্জন করা, জড়ো করা আর ব্যাকরণবিদ ফাররা বলেনএ নামেই কুরাইশ কবীলার নামকরণ করা হয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষ হচ্ছেন নযর ইব্ন কিনানা। তাঁর সন্তানগণই কুরায়শী-উর্ধতনরা নন। আবার কারো কারো মতে, কুরাইশ নামকরণ হয়েছে তাকতীশ শব্দ থেকে। হিশাম ইব্ন কালবী বলেন, নযর ইব্ন কিনানার নাম রাখা হয় কুরাইশ। কারণ, তিনি মানুষের আভাব-অনটনের খোঁজ খবর নিতেন এবং নিজের অর্থ দ্বারা তাদের অভাব পূরণ করতেন। আর তাকরীশ (৩১,৩৮১ এ) অর্থ হচ্ছে তাফতীশ (৩৪, ৭, ১ এ) তথা অনুসন্ধান। আর তাঁর সন্তানরা মওসুমের সময়ে লোকজনের অভাব-অনটনের খোজ নিতেন। যাতে লোকেরা দেশে ফিরে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা তারা করতেন। একারণে তাদের নামকরণ করা হয় কুরাইশ। এ নাম তাদের এ কাজের জন্য। ৩৮১৯ – অর্থ যে তাফতীশ তথা অনুসন্ধান, এ অর্থে কবি হারিস ইব্ন হিল্লিযা বলেন :
হে আমাদের সম্পর্কে অনুসন্ধানী বক্তা! আমার-এর নিকট, তার কি কোন স্থিতি আছে? এটি যুবোয়র ইব্ন বাককারের বর্ণনা। আবার কেউ কেউ বলেন, কুরায়শ শব্দটা কিন্নশ (,, a) শব্দের তাসগীর তথা ক্ষুদ্রতা জ্ঞাপক শব্দ। আর ৩, ৪, অর্থ সমুদ্রে বিচরণকারী প্রাণী। কোন কবি বলেন :
আর কুরায়শ হচ্ছে সমুদ্রে বসবাস করা প্ৰাণী, যে কারণে কুরায়শকে কুরায়শ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আবু রুকানা আল-আমিরী সূত্রে বলেন যে, মুআবিয়া (রা) ইব্ন আব্বাস (রা)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কুরায়শের এরূপ নামকরণের কারণ কী? তিনি বললেন : একটি সামুদ্রিক প্রাণীর কারণে, যা কিনা সমুদ্রের সর্ববৃহৎ প্রাণী। তাকে বলা হয় কিরশ। ক্ষুদ্রবৃহৎ যার নিকট দিয়ে এ প্রাণী অতিক্রম করে, তাকেই গ্রাস করে। তিনি বললেন, এ প্রসঙ্গে আমাকে কোন কবিতা আবৃত্তি করে শুনান। তিনি আমাকে কবি জুমাহীর কবিতা শুনালেন, যাতে তিনি বলেন :
আর কুরায়শ সে প্রাণী, যে বাস করে সমুদ্রে, এ কারণে কুরায়শের নাম করণ করা হয়। কুরায়শ।
সে ক্ষুদ্র-বৃহৎ সবই গ্ৰাস করে নেয়, ছাড়ে না কোন পাখা ওয়ালার পাখনা।
এভাবেই জনপদে কুরায়শ গােত্র, গ্রাস করে জনপদকে প্রচণ্ড ভাবে।
আখেরী যমানায় কুরায়শদের একজন নবী হবেন, যিনি তাদের অনেকের হত্যার ও যখমের কারণ হবেন। আবার কেউ কেউ বলেন, কুরায়শ ইবনুল হারিছ ইব্ন ইয়াখলাদ ইব্ন কিনানার নামানুসারে কুরায়শ নামকরণ করা হয়েছে। আর তিনি ছিলেন বনু নয়র-এর নেতা এবং তাদের সঞ্চিত সম্পদের রক্ষক। আরবরা বলতো, কুরায়শের দল এসেছে। ঐতিহাসিকরা বলেন, ইব্ন বদর ইব্ন কুরায়শ ছিলেন। ঐ ব্যক্তি, যিনি ঐতিহাসিক বদর কূপ খনন করান, কুরআন মজীদে এ যুদ্ধকে ইয়াওমুল ফুরকান তথা পার্থক্যের দিন এবং দুটি দলের মুখোমুখি হওয়ার দিন বলে উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহই ভালো জানেন। কুরাইশের দিকে সম্পৃক্ত করে কারশী এবং কুরায়শী বলা হয়। জওহারী বলেন, এটাই যুক্তি সঙ্গত। কবি বলেন :
সকল কুরায়শী চেহারায় রয়েছে গান্তীর্যের ছাপ। দ্রুত ছুটে যায় সে বদ্যান্যতা ও সম্মানের দিকে।
অভিধানবেত্তা জওহারী বলেন, কুরায়শ শব্দটি যদি শাখা গোত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে তা হবে – 3 –> • • আর যদি গোত্র অর্থে ব্যবহৃত হয় তবে তা হবে – ৪ – ১ + ০.১-১.৫ এ প্রসঙ্গে জনৈক কবি বলেন।
সমস্যার মুকাবিলার কুরায়শরা যথেষ্ট তাতে তারা নেতৃত্ব দেয়।* আর মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে ওয়াছিলা ইবনুল আসকা। সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ তাআলা। ইসমাঈলের বংশধরদের মধ্য থেকে ফিনানাকে মনোনীত করেছেন, আর কুরায়শকে মনোনীত করেছেন ফিনানার সন্তানদের মধ্য থেকে এবং হাশিমকে মনোনীত করেছেন কুরায়শ থেকে
টীকা ১. এটি আদী ইব্ন রুফা-এর কবিতার অংশ বিশেষ। এতে তিনি ওলীদ ইব্ন আব্দুল মালিক-এর প্রশংসা করেন।
এবং আমাকে মনোনীত করেছেন বনু হাশিম থেকে। আবু উমর ইব্ন আব্দুল বার বরেন : বনু
আব্দুল মুত্তালিবকে বলা হয় রাসূলুল্লাহর পরিজন (a_1,… :); বনু হাশিম শাখা গোত্র (১, ২-১) বনু আব্দ মানাফ তার উপগোত্র (৩১ – ) এবং কুরায়শ তার গোত্র (১ L -) এবং বনু কিনানা তাঁর কবীলা (a_1, 4) এবং মুযার তার কওম (এম-১)। কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক। ইব্ন ইসহাক বলেন : নযর ইব্ন।
কিনানার সন্তান হচ্ছেন মালিক এবং মুখাল্লাদ। ইব্ন হিশাম সালত নামের তার আরেক
সন্তানের কথা উল্লেখ করেছেন। এবং তাদের সকলের মা হচ্ছেন সাদ ইব্ন যারাব আল
উদওয়ানী। কাহীর ইব্ন আব্দুর রহমান, যিনি খুযাআ গোত্রের অন্যতম সম্মানীত ব্যক্তি এবং বনু
মুলাইহ ইব্ন আমর- এর অন্তর্ভুক্ত। ইব্ন হিশাম বলেন : বনু মুলায়াহ ইব্ন আমরা সালত ইব্ন
নযর- এর পুত্র হচ্ছেন ফিহর। এই ফিহরের মা ছিলেন জন্দলা বিনতু হারিছ ইব্ন মুযায। আল
আসগর। আর ফিহর -এর সন্তানরা হচ্ছেন গালিব, মুহারিব, হারিছ এবং আসাদ আর এদের মা
লায়লা বিন্যত সাআছ ইব্ন হুযইল ইব্ন মুদরিকা।
ইব্ন হিশাম বলেন : জন্দলা বিনত ফিহর তাদের বৈমাত্ৰেয় বোন। ইব্ন ইসহাক বলেন : গালিব ইব্ন ফিহর এর সন্তান হচ্ছেন। লুয়াই এবং তায়ম। এদেরকে বলা হয় বনুল আদরাম আর তাদের মা হচ্ছেন সালমা বিনতে আমার আল-খুযায়ী। আর ইব্ন হিশাম বলেন : কায়স ছিলেন গালিবের অন্য এক সন্তান আর তার মা ছিলেন সালমা বিনত কব ইব্ন আমার আল- খুযায়ী আর ইনি হলেন লুয়াই-এর মা। ইব্ন ইসহাক বলেন : লুয়াই ইব্ন গালিব-এর চার পুত্ৰ কব আমির, সামা এবং আওফ।
ইব্ন হিশাম বলেন : এমনও বলা হয় যে, তিনি জন্ম দেন হারিসকে, আর তারা হচ্ছে জসীম ইবনুল হারিস রবীআর হুযান গোত্রে এবং সায়াদ ইব্ন লুয়াইকে। আর তারা হচ্ছে শাইবান ইব্ন সালাবার বিনানা গোত্র আর এরা হচ্ছে তাদের প্রতিপালনকারী। আর খুযাইমা ইব্ন লুয়াই, যারা শারবাম ইব্ন সালাবা গোত্রে আশ্রয় গ্রহণকারী।
অতপর ইব্ন ইসহাক সামা ইব্ন লুয়াই এর বর্ণনা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন যে, সামা ওমানে চলে যান এবং সেখানেই বসবাস করেন। আর তিনি এটা করেন তার ভাই আমির-এর সঙ্গে শক্ৰতা আর বিদ্বেষের কারণে। ভাই আমির তাকে ভয় দেখালে তিনি তাতে ভীত হয়ে ওমানে পলায়ন করেন এবং সেখানেই নির্জন নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান। আর তার কারণ এই হয়েছিল যে, তিনি আপনি উটনী ছেড়ে দিলে একটা সাপ এসে উটনীটির ঠোঁট জড়িয়ে ধরে। তখন উটনীটি কান্ত হয়ে পড়ে যায় এবং সাপটি সামাকে দংশন করে। ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। কথিত আছে যে, মৃত্যুর পূর্বে তিনি অঙ্গুলি দ্বারা মাটির উপর কয়েকটি পংক্তি লিখে যানঃ
চক্ষু রোদন কর সামা ইব্ন লুয়াইর তরে, ঝুলে রয়েছিল তার সাথে যে ঝুলন্ত বস্তু (সাপ).
হে ইব্ন লুয়াই, তুমি চেয়েছিলে মৃত্যু ঠেকাতে, মৃত্যু যাকে গ্ৰাস করতে চায়, তার তো ঠেকাবার ক্ষমতা নেই।.
ইব্ন হিশাম বলেন : আমি জানতে পেরেছি যে, তার কোন এক সন্তান রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এর নিকট আগমন করে সামা ইব্ন লুয়াইর সঙ্গে নিজের বংশের সম্পৃক্ততা ব্যক্ত করলে রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে বলেন : কবি সামা? তখন জনৈক সাহাবী তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি যেন তার পংক্তিটির দিকে ইঙ্গিত করছেন :
কতো পানপত্র প্রবাহিত করেছ হে ইব্ন লুয়াই, মৃত্যু ডয়ে, তুমি তো ছিলে না তা প্ৰবাহিত করার।
তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেনঃ হ্যাঁ। আর সুহায়লী বলেন : কারো কারো মতে, সামা কোন সন্তান রেখে যাননি।
যুবোয়র বলেন, সামা ইব্ন লুয়াইর গালিব নাকীত এবং হারিছ নামের তিন পুত্র ছিল। ঐতিহাসিকরা বলেন যে, সামা ইব্ন লুয়াইর সন্তানরা ছিল ইরাকে, যারা হযরত আলী (রা)-এর সঙ্গে বিদ্বেষ পোষণ করতো। তাদের মধ্যে একজন ছিল আলী ইব্নল জাদ, যে তার আলী নামকরণের জন্য আপন পিতাকে গালিগালাজ করতো। বনু সামা ইব্ন লুয়াইর অন্যতম অধস্তন পুরুষ আর আরা ইবনুল ইয়াখীদ ছিলেন ইমাম বুখারীর অন্যতম উস্তাদ।
ইব্ন ইসহাক বলেন : আওফ ইব্ন লুয়াই সম্পর্কে কথিত আছে যে, তিনি কুরায়শের একদল অশ্বারোহী সঙ্গে বহির্গত হন। গাতফান ইব্ন সাদ ইব্ন কায়স ইব্ন আয়লান-এর জনপদে পৌঁছলে তিনি সেখানে রয়ে যান এবং তার সঙ্গীরা চলে যায়। তখন তার নিকট আগমন করেন। ছালাবা ইব্ন সাদ। তিনি বনু লুবইয়ানের জ্ঞাতি ভাই ছিলেন। ছলাবা তাকে এবং তাঁর স্ত্রীকে সেখানে রেখেছেন এবং তার সঙ্গে ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপন করার ফলে বনু লুবইয়ান এবং ছালাবা গোত্রের মধ্যে তাঁর বংশ বিস্তার ঘটে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন।
ইব্ন ইসহাক বলেন : উমর ইব্নল খাত্তাব (রা) বলেছেন : আমি যদি আরবের কোন গােত্রের দাবীদার হতাম, অথবা তিনি বলেন যে, আমি যদি তাদেরকে আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতাম তাহলে আমি বনু মুররা ইব্ন আওফের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দাবী করতাম। আমরা তাদের মত লোকদেরকে চিনি, অথচ আমরা সে ব্যক্তির অবস্থান স্থল সম্পর্কে জানি না, এই বলে তিনি
টীকা- মূল আরবী গ্রন্থে সামা স্থলে উসামা মুদ্রিত হয়েছে।
আওফ ইব্ন লুয়াইর দিকে ইঙ্গিত করেন। ইব্ন ইসহাক বলেন : আমি অভিযুক্ত করতে পারি না-এমন ব্যক্তি আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করেন যে, উমর ইব্ন খাত্তাব (রা) কতিপয় ব্যক্তিকে বলেন, তাদের মধ্যে বনু মুররার লোকও ছিল। তোমরা যদি নিজেদের বংশের দিকে ফিরে যেতে চাও তবে সে দিকে ফিরে যাও। ইব্ন ইসহাক বলেন : আর এরা ছিলেন। গাতফান বংশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। তারা ছিলেন গাতফান কায়েস বংশে সকলের মধ্যে সেরা। তারা তাদের সেই পরিচয় নিয়ে সেখানেই রয়ে যান। ঐতিহাসিকরা বলেন : ওরা বলতো, যখন তাদের নিকট ংশের কথা বলা হতো, আমরা তা অস্বীকার করছি না, আমরা তার বিরোধিতাও করছি না। আর তা-ই হচ্ছে আমাদের নিকট সবচেয়ে প্রিয় বংশধারা। অতঃপর লুয়াইর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি তাদের কবিতার উল্লেখ করেছেন।
ইব্ন ইসহাক বলেন : এবং তাদের মধ্যে বুসল (নিষিদ্ধ) নামে একটা প্রথা চালু ছিল। আর সে প্রথাটা হচ্ছে আরবদের মধ্যে বছরের আট মাসকে হারাম বা নিষিদ্ধ জ্ঞান করা। আর আরবরা তাদের এ প্রথা সম্পর্কে অবগত ছিল এবং ঐ সময়ে তারা তাদেরকে নিরাপত্তা দান করতো আর নিজেরাও নিরাপদ বোধ করতো। আমি বলি, রবীআ এবং মুযার গোত্ৰও বছরে চারটি মাসকে নিষিদ্ধ জ্ঞান করতো। সে মাসগুলো হলো যুলকাদা যুলাহিজা, মুহররম। চতুর্থ মাস সম্পর্কে রবীআ আর মুযার এর মধ্যে মতভেদ রয়েছে মুযার গোত্র বলেঃ সে মাসটি হচ্ছে জুমাদা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রজব।। পক্ষান্তরে রবীআ গোত্রের মতে সে মাসটি হচ্ছে শাবান ও শাওয়ালের মধ্যবর্তী মাস অর্থাৎ রমযান মাস। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবু বকরা থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেছেনঃ আসমান-যমীন সৃষ্টির দিন আল্লাহ তা যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, সে অবস্থায় তা ফিরে এসেছে। বছর হচ্ছে ১২ মাসে। সেগুলোর মধ্যে চারটি হচ্ছে হারাম মাস- তিনটি মাস পরপর : যুলকদা যুল হজ্জ ও মুহররম এবং মুযার-এর রজব, যা হচ্ছে জুমাদা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস। এ থেকে রবীআ নয়, বরং মুযার-এর উক্তির বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। আল্লাহ ऊऊळली द(ळलन्?
আল্লাহর নিকট মাসের গণনা তার কিতাবে ১২ মাস, যেদিন তিনি আসমান যমীন সুষ্টি করেছেন; তার মধ্যে চারটি হচ্ছে হারাম মাস। (৯ তাওবা : ৩৬)
বনু আওফ ইব্ন লুয়াই যে, আটটি মাসকে হারাম গণ্য করে, উক্ত আয়াত দ্বারা তা খণ্ডিত হয়ে যায়। আর তারা আল্লাহর বিধানে অতিরিক্ত সংযোজন করেছে এবং যা হারাম নয়, তাকে হারামের অন্তর্ভুক্ত করেছে। আর হাদীসে যে বলা হয়েছে তিনটি মাস পরপর : এটা নাসী পন্থীদের মতের খণ্ডন; যারা মুহররমের হুরমতকে সফর মাস পর্যন্ত পিছিয়ে দিত। মহানবীর বাণী মুযার এর রজব মাস-এ কথায় খণ্ডিত হয়েছে রবীআ গোত্রের মত।
ইব্ন ইসহাক বলেন : কব ইবনু লুয়াইর তিনজন পুত্র ছিলেন মুররা, আদী ও হাসীস I এবং মুররােরও তিন সন্তান ছিলেন : কিলাব তায়ম এবং ইযাকযা। এদের প্রত্যেকের মা ভিন্ন ভিন্ন। তিনি বলেন : কিলাবেরও দুজন পুত্র ছিলেন : কুসাই এবং সাহরা। এ দুজনের মা হলেন ফাতিমা বিনাত সন্দি ইবনু সায়ল। ইয়ামানের জাসা আমাদের গোত্রের অন্যতম জুদারা। এঁরা ছিলেন বনু সােয়ল ইব্ন বকর (ইব্ন আরফ সালাত ইবনু কিনানা)-এর মিত্র। এই ফাতিমার পিতৃপুরুষ সম্পর্কে কবি বলেন :
মানুষের মধ্যে আমরা দেখি না। একজন মানুষকেও যাদেরকে আমরা জানি। সাদ ইব্ন সায়ল-এর মতো।
সুহায়লী বলেন : সােয়ল এর নাম হচ্ছে কামর ইবনু জামালা; আর তিনি হলেন সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যার তরবায়ীকে স্বর্ণ ও রৌপ্য খচিত করা হয়।
ইবনু ইসহাক বলেন : তাদেরকে জুদারা বলা হতো এ জন্য যে, আমির ইব্ন আমর ইব্ন খুযায়মা ইব্ন জাসামা হারিছ ইব্ন মুসাম আল-জুরহুমীর কন্যাকে বিবাহ করেন। তখন জুরহুম গোত্র ছিল বায়তুল্লাহর সেবায়েত। তিনি কাবার জন্য প্রাচীর নির্মাণ করান। এ কারণে আমর এর নামকরণ হয় জাদীর তথা প্রাচীর নির্মাতা। এ কারণে তার সন্তানদেরকে জুদারা বলা হয়ে
যাকে।
কুসাই ইব্ন কিলাবের বৃত্তান্ত বায়তুল্লাহর সেবায়েতের দায়িত্ব কুরাইশের হাতে ফেরত আনা এবং খুযাআর নিকট থেকে তা ছিনিয়ে নেয়া :
কুসাইয়ের পিতা কিলাবের মৃত্যুর পর তার মাতা আযরা গোত্রের রবীআ ইব্ন হারাযকে বিবাহ করেন। কুসাই তার মা এবং সৎ পিতাকে নিয়ে নিজ দেশে রওয়ানা হন। অতঃপর কুসাই যৌবনে মক্কায় ফিরে এসে খুযাআ গোত্রের সর্দার হুলায়ল ইব্ন হুবশিয়ার কন্যা হুরায়কে বিবাহ করেন। খুযায়ীদের ধারণা এই যে, পুত্র পক্ষে বংশ ধারা বৃদ্ধি দেখে হুলায়ল কুসাইকে বায়তুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ওসিয়ত করেন। তিনি একথাও বলেন যে, এ দায়িত্ব পালনের জন্য তুমি আমার চেয়ে বেশী যোগ্য। ইব্ন ইসহাক বলেন : এ কথা তাদের কাছে ছাড়া অন্য কারো কাছে আমরা শুনিনি। আর অন্যদের ধারণা এই যে, কুসাই তার বৈমাত্রেয় ভাইদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। মক্কার আশ-পাশের কুয়াইশ প্রমুখ, বনু কিনানা, বনু কুযাআ এবং তাঁর ভাইদের দলপতি ছিলেন রাযাহ ইব্ন রবীআ। তিনি বনু খুযাআকে নির্বাসিত করে নিজে এককভাবে বায়তুল্লাহর কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। কারণ হাজীদের অনুমতি দানের কর্তৃত্ব ছিল সুফাদের হাতে। আর সুফা বলা হতো গাওস ইব্ন মুর (ইব্ন উদ্দ ইব্ন তাবিখ্যা ইব্ন ইলিয়াস ইব্ন মুযার)-এর বংশধরদেরকে। তারা কংকর নিক্ষেপ না করা পর্যন্ত অন্যরা যাত্রা নিক্ষেপ করতো না এবং মিনা থেকে তারা যাত্ৰা না করা পর্যন্ত অন্যরা যাত্রা করতো না। তাদের বংশ নিঃশোষিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ ভাবেই চলে আসছিল। অতঃপর বনু সাদ ইব্ন যায়দ মানাত ইব্ন তামীম তাদের উত্তরাধীকারী হন। তাঁদের প্রথম ব্যক্তি ছিলেন সাফওয়ান ইবনুল হারিস ইব্ন শিজনা ইব্ন উতারিদ ইব্ন আওফ ইব্ন কাব। ইব্ন সাদ ইব্ন যায়দ মানাত ইব্ন তামীম। আর এ দায়িত্ব তারই বংশে রয়ে যায় এবং তাদের শেষ ব্যক্তি কুরব ইব্ন সাফওয়ানের আমলে ইসলামের অভু্যদয় ঘটে। আর মুযদালিফা থেকে যাত্রার অনুমতি দানের কর্তৃত্ব ছিল আদওয়ান গোত্রের হাতে এবং তাদের শেষ ব্যক্তি আবু সাইয়্যারা আমীলা মতান্তরে আম ইবনুল আযালের আমলে ইসলাম কায়েম না হওয়া পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত ছিল। কারো কারো মতে, আযাল-এর নাম ছিল খালিদ এবং তিনি তার কানা গান্ধীর পৃষ্ঠে সওয়ার হয়ে লোকদেরকে অনুমতি দিতেন। এভাবে চল্লিশ বছর অতিবাহিত হয়। তিনি হলেন প্ৰথম ব্যক্তি, যিনি রক্তপণ একশ উট সাব্যস্ত করেন, আর তিনিই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বলেন : – ১ + ০ < ১ % ও -১, এটি সুহায়লীর বর্ণনা, অর্থাৎ ছবীির পর্বত দেখা যাচ্ছে উট হাকাও!
আর আমির ইবনুল যারব আদওয়ালী এমন এক অবস্থানে ছিলেন যে আরবদের মধ্যে কোন চরম বিরোধ দেখা দিলে সকলে ফয়সালার জন্য তাঁর শরণাপন্ন হতো এবং তিনি যে সিদ্ধান্ত দিতেন, তাতে সকলেই সন্তুষ্টি হতো। একবার এক হিজড়ার উত্তরাধিকার নিয়ে তাদের মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে চিন্তা করতে করতে তিনি বিনিদ্র রজনী যাপন করেন। তার এক দাসী তাকে এ অবস্থায় দেখতে পায়। এ দাসী তাঁর মেষপাল চড়াতো। তার নাম ছিল সাখীলা। সে বললো, কি হল আপনার? বিনিদ্র রজনী যাপন করতে দেখছি যে আপনাকে? কি বিষয়ে চিন্তা করছেন, তাকে তিনি তা জানালেন। তিনি মনে মনে একথাও বললেন যে, হয়তো এ ব্যাপারে তার কাছে কোন সমাধান থাকতেও পারে। দাসীটি তাকে বললো : তার প্রস্রাবের রাস্তা দেখে ফয়সালা করুন! তিনি বললেন : আল্লাহর কসম সাখীলা, তুমি তো সমস্যাটির সমাধান করে দিলে। এবং তিনি সে অনুযায়ী ফয়সালা দিলেন। সুহায়ালী বলেন : এটা ছিল লক্ষণ বিচারে ফয়সালা দানের একটি দৃষ্টান্ত। শরীয়তে এর ভিত্তি রয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেন :
তারা তার জামা নিয়ে আসে মিথ্যা রক্তসহ (ইউসুফ : ১৮৯) {
অথচ, তাতে বাঘের নখের কোন লক্ষণ ছিল না। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
তার জামা যদি সামনে থেকে ছেড়া হয় তবে সে নারী সত্য বলেছে আর সে (ইউসুফ) মিথ্যাবাদী, আর যদি তার জামা সামনে থেকে ছেড়া হয়, তবে সে নারী মিথ্যা বলেছে এবং সে
পুরুষ সত্যবাদী। (১২ ইউসুফ : ২৬)। আর হাদীসে আছে : তোমরা নারীটির দিকে লক্ষ্য করবে। সে যদি ধূসর বর্ণের কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট সন্তান প্রসব করে তা হলে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য।
ইব্ন ইসহাক বলেন : বনু ফকীম ইব্ন আদী (ইব্ন আমির ইব্ন ছলাবা ইব্ন হারিস ইব্ন মালিক ইব্ন কিনানা ইব্ন খুযায়মা ইব্ন ইব্ন মুদরিয়া ইব্ন ইলিয়াস) ইব্ন মুযার গোত্রে নাসী প্রথায় প্রচলন ছিল। ইব্ন ইসহাক বলেন : সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি আরবদের মধ্যে নাসী প্রথার প্রচলন ঘটান। তিনি ছিলেন আল- কালাম্মাস আর তিনিই ছিলেন হুযাফা ইব্ন আবদ ইবনু ফাকীম ইবনু আদীি। তার পর তাঁর পুত্র আব্বাদ তার পর তাঁর পুত্ৰ কালা তারপর উমাইয়া ইব্ন কালা তারপর আওফ ইব্ন উমাইয়া। এরপর ছিল তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি আবু সামামা জানাদা ইব্ন আওফ ইব্ন কালা ইব্ন আব্বাদ-ইব্ন হুযায়ফা। আর তিনিই হচ্ছে। আল-কালাম্মাস। এই আবু সামামার কালেই ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। আর আরবরা হজ্জ শেষে তার কাছে এসে একত্র হতো। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন। এ ভাষণে তিনি হারাম মাসের ঘোষণা জারী করতেন। সেসব হারাম মাসগুলোর মধ্যে কোন মাসকে হালাল করতে চাইলে মুহররমকে
হালাল করতেন এবং তদস্থলে রাখতেন সফর মাসকে, যাতে আল্লাহ যেগুলো হারাম করেছেন, সেগুলোর সংখ্যা পূর্ণ করতে পারে। তখন তারা বলতো? হে আল্লাহ! আমি দুটি সফর মাসের একটিকে হালাল করেছি। আর অপরটি পিছিয়ে রেখেছি আগামী বছরের জন্য। আর এ ক্ষেত্রে আরবরা তাঁরই অনুসরণ করতো। এ ব্যাপারে উমোয়র ইব্ন কায়স, যিনি ছিলেন বনু ফিরাস ইব্ন গনমা ইব্ন মালিক ইব্ন কিনানার অন্তর্ভুক্ত আর এই উমোয়র ইব্ন কায়স জাদলুত তাঅ্যান নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বলেন :
মা আদি গোত্ৰ নিশ্চিত জানে যে, আমার সম্প্রদায় সকল মানুষের মধ্যে সম্মানিত। সম্মান
রয়েছে তাদের তরে। cy
তবে কোন মানুষ, নিয়ে এসো আমাদের কাছে, তাদের কোন একজনকে, আর এমন কোন লোক আছে, যার লাগাম আমরা কষে বাধিনি?
আমরা কি নই মায়াদ গোত্রের উপর নাসী কারী? হালাল মাসকে আমরা করি হারাম।
আর কুসাই ছিলেন তাঁর জাতির নেতা। সকলে তাঁর নেতৃত্ব মেনে চলতে এবং তাকে সম্মান করতো। মোদ্দাকথা, তিনি জাযিরাতুল আরবের নানা স্থান থেকে এনে কুরায়শদেরকে এক জায়গায় একত্র করেন এবং আরবের গোত্রসমূহের মধ্যে যারা তার আনুগত্য করে, তাদের সাহায্য নেন। খুযাআর যুদ্ধে এবং তাদেরকে বায়তুল্লাহ থেকে নির্বাসিত করেন। ফলে সকলে বায়তুল্লাহর দায়িত্ব তার হাতে অৰ্পণ করে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক যুদ্ধ হয়। অনেক তাজা রক্ত ঝরে। অতঃপর সকলেই আপোষ রাফার দাবী জানায়। সকলে ফয়সালার ভার অর্পণ করে ইয়ামার ইব্ন আওফ ইব্ন কব ইব্ন আমির ইব্ন লায়ছ ইব্ন বকর ইব্ন আবদ মানাত ইব্ন কিনানার উপর। তিনি ফয়সল করেন যে, বায়তুল্লাহর তত্ত্বাবধানে খুযাআর চেয়ে কুসাই আধিকতর যোগ্য ব্যক্তি। তাতে এ সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় যে, কুসাই খুযাআ এবং বনু বকর-এর যে রক্তপাত করেছেন, তা রহিত এবং পদতলে নিষ্পেষিত কিন্তু খুযাআ ও বনু বকর কুয়ায়শ কিনানা এবং কুযাআ গোত্রের যে রক্তপাত ঘটিয়েছে, সে জন্য তাদেরকে রক্তপণ আদায় করতে হবে। এ সিদ্ধান্তও গৃহীত হয় যে, মক্কা ও কাবার কর্তৃত্বের ব্যাপারে কেউ বাধ সাধতে পারবে না। তখন থেকে ইয়ামার। এর নাম করা করা হা শাদাখ।
ইব্ন ইসহাক বলেন : ফলে কুসাই বায়তুল্লাহ এবং মক্কার কর্তৃত্বের অধিকারী হন এবং তাঁর সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিজেদের মনযিল থেকে মক্কায় এনে একত্র করেন এবং তার সম্প্রদায় আর মক্কাবাসীরা তাঁর কর্তৃত্ব মেনে নিলে তারা সকলে তাকে বাদশাহ বলে স্বীকার করে নেয়। তিনি আরবদের ব্যাপারে একটা বিষয় মেনে নেন যে, তারা যা মেনে চলতো, তা মেনে চলবে। কারণ তিনি এটাকেই নিজের দীন মনে করতেন। যার পরিবর্তন অনুচিত। ফলে সাফওয়ান আদওয়ান, নাসয়া এবং মুররা ইব্ন আওফের লোকজন এটা মেনে নেয় যে, তারা পূর্বে যে রীতি মেনে চলতো, তা-ই মেনে চলবে। এ অবস্থায় ইসলামের আগমন ঘটলে আল্লাহ ইসলাম দ্বারা সেসব রীতি-নীতির মূলোৎপাটন ঘটান সম্পূর্ণ রূপে। কুসাই ছিলেন বনু কাবের প্রথম ব্যক্তি, যিনি বাদশাহ হন এবং তাঁর জাতির লোকেরা তা মেনে নেয়। ফলে বায়তুল্লাহর সেবা-যত্ন, হাজীদের পানি পান করানো, তাদের আপ্যায়ন করা, পরামর্শ সভার ব্যবস্থাপনা এবং পতাকা ধারণ করা তার দায়িত্বে ন্যস্ত হয়। ফলে মক্কার মর্যাদা রক্ষা করার পূর্ণ কর্তৃত্ব তিনি লাভ করেন। এবং তিনি মক্কাকে তাঁর লোকজনের মধ্যে কয়েক ভাগে বিভক্ত করলে কুযায়।শের সকলে নিজ নিজ মনযিলে এসে বসবাস শুরু করেন।
আমি বলি : ফলে সত্য তার স্ব-স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সুবিচার লোপ পাওয়ার পর পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং কুরায়শরা তাদের নিজেদের আবাসভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। খুযাআ গোত্রেকে বিতাড়নের ব্যাপারে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়। প্রাচীন পবিত্র গৃহ (বায়তুল্লাহ) তাদের হাতে ফেরৎ আসে। কিন্তু খুযাআ গোত্রের উদ্ভাবিত মূর্তি পূজা, কাবার চতুষ্পার্শ্বে মূর্তি স্থাপন, মূর্তির উদ্দেশ্যে কুরবানী, মূর্তির নিকট আবেদন নিবেদন আর কাতর প্রার্থনা ও সাহায্য কামনা মূর্তির নিকট জীবিকা ভিক্ষা করার কুপ্রথা সমূহ অব্যাহত থাকে; কুসাই কুরাইশের কতক গোত্ৰকে মক্কার কেন্দ্ৰস্থলে অন্যকতক গোত্রকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করে মক্কার উপকণ্ঠে। আবাদ করায় কুরাইশের কিছু গোত্ৰকে আর এ কারণে কুরাইশকে কুরায়শে বিতাহ এবং কুরায়শে যাওযাহর নামে দুভাগে বিভক্ত করা হয়। ফলে কুসাই ইব্ন কিলাব বায়তুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণ, সেবা-যত্ন এবং পতাকা বহনের পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করেন। আবিচার দূর করা আর বিরোধ নিস্পত্তির নিমিত্ত তিনি একটা ভবন নির্মাণ করে তার নাম লেন দারুন নাদওয়া তথা মন্ত্রণালয়। কোন তীব্ৰ সংকট দেখা দিলে সমস্ত গোত্র প্রধানরা একত্র হয়ে পরামর্শ করতেন এবং সমস্যার সমাধান করতেন। দারূন নাদওয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়া পতাকা উত্তোলন করা হতো না এবং কোন বিয়ে শাদীও সংঘটিত হতো না। দারুন নাদওয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়া কোন দাসী কামিজ পরিধান করতে পারতো না। দারুন নাদওয়ার দরজা ছিল মসজিদে হারামের দিকে। বনু আবদুন্দদার। এরপর দারুন নদওয়ার দায়িত্ব পান হাকীম ইব্ন হিযাম। তিনি মুয়াবিয়া (রা)-এর শাসনামলে তা এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রয় করলে মুয়াবিয়া (রা) সে জন্য তাকে তিরস্কার করেন। তিনি বলেন-এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে তুমি নিজ জাতির মর্যাদা বিক্রয় করে দিলে? জবাবে তিনি বলেন, এখনতো মর্যাদা কেবল তাকওয়ার সঙ্গে যুক্ত। আল্লাহর কসম, জাহিলী যুগে আমি তা ক্রয় করেছিলন এক মশক মদের বিনিময়ে; আর এখন তা বিক্রয় করছি এক লক্ষ দিরহামের বিনিময়ে। আমি তোমাদেরকে সাক্ষ্য রেখে বলছি যে, তার মূল্য আমি আল্লাহর রাস্তায় সাদাকা করে দিলাম। তাহলে আমাদের মধ্যে কে ক্ষতিগ্ৰস্ত হলো? দারা কুতুনী মুয়াত্তার আসমাউর রিজাল প্রসঙ্গে এ ঘটনা উল্লেখ করেছেন। হাজীদেরকে পানি পান করানোর দায়িত্বও ছিল তাঁর। ফলে তার কুয়োর পানি ছাড়া তারা পানি করতে পারতো না। জুরহুমের যমানা থেকে তখন পর্যন্ত যম যম কুপ নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছিল। ফলে দীর্ঘ কাল থেকে লোকেরা যম যম কূপের কথা ভুলেই বসেছিল। তা কোথায় ছিল সে কথাও তাদের জানা ছিল না। ওয়াকিদী বলেন : কুসাই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি মুযদালিফায় অগ্নিপ্ৰজ্বলিত করেন। যাতে আরাফাত থেকে আগত ব্যক্তি মুযদালফার সন্ধান পেতে পারে। আর রিফাদা হচ্ছে নিজগৃহে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত হাজীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা।
ইব্ন ইসহাক বলেন : এটা এ জন্য যে, কুসাই হাজীদের খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা কুরাইশদের উপর অবশ্য পালনীয় করে দেন। তিনি কুরাইশদের উদ্দেশ করে বলেন : তোমরা আল্লাহর প্রতিবেশী মক্কা আর হেরোমের বাসিন্দা। আর হাজীরা আল্লাহর মেহমান এবং তার ঘর যিয়ারতকারী। তারাই মেহমানদারীর অধিকতর হকদার। সুতরাং হজ্জের সময় তোমরা তাদের জন্যে পানাহারের আয়োজন করবে, যতক্ষণ না তারা ফিরে যায়, কুরাইশের লোকেরা তার কথা মতো কাজ করে। এজন্য তারা প্রতি বছর নিজেদের সম্পদ থেকে একটা অংশ বের করতো। এবং তা তার নিকট অর্পণ করতো। তিনি হাজীদের মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে তা দ্বারা খাবারের আয়োজন করতেন। ইসলামের প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্ব পর্যন্ত এ ধারা চালু ছিল এবং পরেও সে ধারা চালু থাকে। হজ্জ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুলতান এখনো প্রতি বছর মিনায় ভোজের আয়োজন করেন।
আমি বলি ৪ ইব্ন ইসহাকের পর সুলতানের আপ্যায়নের এধারার অবসান ঘটে। তারপর পর বায়তুলমাল থেকে হজ্জের উদ্দেশ্যে গমনকারী পথচারীদের জন্য পাথেয় এবং পানীয় সরবরাহের ব্যবস্থা চালু হয়। অনেক দিক থেকে এটা উত্তম কাজ। তবে নির্ভেজাল বায়তুল মালের সবচেয়ে হালাল অর্থ এতে ব্যয় করা উচিত। আর সর্বোত্তম যাদের যিম্মায় হজ্জ ফরয হয়েছে, তাদের থেকে পর্যায়ক্রমে হজ্জ করিয়ে নেওয়া। কারণ সাধারণত তারা কাবা গৃহের হজ্জ করেনা। সে চাই ইহুদী বা খৃষ্টান হিসাবে মৃত্যুবরণ করুক। তাতে কিছু আসে যায় না।
কুসাইয়ের প্রশংসা এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে তীর মর্যাদার বর্ণনায় কবি বলেন :
আমার জীবনের শপথ, কুসাইকে বলতে হয় সমবেতকারী, আল্লাহ তার মাধ্যমে ফিহরের অনেক গোত্রকে একত্র করেছেন।
তারা ভরে তোলে বাত্হাকে মর্যাদা আর নেতৃত্ত্বে, আর তারা তাড়িয়ে দেয় আমাদের পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট বনু বকর গোত্ৰকে।
ইব্ন ইসহাক বলেন : যুদ্ধ শেষে কুসাইর ভাই রেযাহ ইব্ন রবীআ সদলবলে স্বদেশে ফিরে যায় এবং সঙ্গে নিয়ে যায়। তার তিন বৈমাত্রেয় ভাইকে, তারা হলো : হান, মাহমুদ এবং জালহামা। রেযাহ কুসাইয়ের আহবানে সাড়া দিতে গিয়ে বলেন।
যখন আসে কুসাইর পক্ষ থেকে দূত,
দূত এসে বললো, বন্ধুর ডাকে সাড়া দাও।
থেকে অবসাদ ও ক্লান্তি।.
খুযাআকে আমরা বধ করেছি তাদের গৃহে, বধ করেছি। বনু বকরকে. অতঃপর প্রজন্মের পর প্ৰজন্মকে।
نقابنا هم من بلاد السمليك – لا يحلون ارثا سمولا বিতাড়িত করেছি। আমরা তাদেরকে মালিকের দেশ থেকে, সমভূমিতে তারা আর পদচারণা করতে পারবে না।
فاصبح سبیلهم فی الحدید — کل حی شفینا الغلیلا তাদের বন্দীরা হয় লোহার শেকলে আবদ্ধ আমরা সকল গোত্রের মনোকষ্ট দূর করি।
ইব্ন ইসহাক বলেন : রেযাহ স্বদেশে ফিরে গেলে আল্লাহ তার ভাই হানার বংশ বৃদ্ধি করেন। তারাই আজ পর্যন্ত আযরা গােত্রদ্বয় রূপে পরিচিত।
ইব্ন ইসহাক বলেন : এ প্রসঙ্গে কুসাই ইব্ন কিলাব বলেন :
انا ابن العاصمین بنی لؤی بمکة منزلی و بهار بیت
আমি হলাম বনু লুয়াই বংশের রক্ষাকারীদের পুত্র। মক্কায় আমার অবস্থান স্থল, সেখানেই আমি প্রতিপালিত হই।
الی البطحاء قد علمیت معد — و مر و نهار ضیات بهار حنیت বাতুহা পর্যন্ত। মাআদি গোত্র তো নিশ্চিত জানে। তাদের বীরত্বে আমি মুগ্ধ।
فلسبت لغالب، ان لم تاثلی – بها اولاد قیدر والنسیت
আমি গালিবের কেউ নই। যদি না কীদার আর নাবীত এর সন্তানদেরকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারি।
زراح ناصری، و بسته اسامی – فلسست اخاف ضسیما ما حییت
রোযাহ আমার সহায়ক তাকে নিয়ে আমি মর্যাদার আসনে উন্নীত হই। সুতরাং ভয় করিনা আমি জুলুমকে, যতো দিন আমি বেঁচে থাকবো।
উমবী উল্লেখ করেছেন : কুসাই খুযাআ গোত্রকে নির্বাসিত করার পরই রেযাহার আগমন ঘটেছিল।
অধ্যায়।
কুসাই বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলে কুরাইশদের নেতৃত্ব, রিফাদা সিকায়া, হিজায়া, লিওবা, মাদওয়া প্রভৃতি যে সব দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত ছিল, সে সব দায়িত্ব তিনি ন্যস্ত করেন পুত্ৰ আব্দুন্দদার এর উপর। আর ইনি ছিলেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি জ্যেষ্ঠ পুত্রকে মনোনীত করেন। এজন্য যে, তাঁর অন্যান্য ভাই আবদ মানাফ আব্বদ শামস এবং আবদ—এরা প্রত্যেকেই পিতার জীবদ্দশায়ই প্রভূত মর্যাদা ও শক্তি-সামর্থ্যের অধিকারী হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে কুসাই তাদের সঙ্গে আব্দুন্দদারকে নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট করতে চেয়েছিলেন। তাই তিনি তাকে এ সব দায়িত্ব অর্পণ করলেন। ফলে তার ভাইয়েরা তার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে প্রবৃত্ত হননি। অবশ্য তাদের আমল শেষে তাদের সন্তানরা এ ব্যাপারে বিরোধে প্রবৃত্ত হয়। তারা বলে : কুসাই এ জন্য আবদুন্দারকে মনোনীত করেছিলেন যাতে ভাইদের সঙ্গে তাকে যুক্ত করতে পারেন। সুতরাং আমাদের পূর্ব পুরুষ যে সব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন, তাতে আমাদেরও অধিকার রয়েছে। আর আবদুন্দার এর সন্তানরা বললো, কুসাই এ কাজটা আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সুতরাং আমরাই এর সবচেয়ে বড় হকদার। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড বিরোধ দেখা দেয়। কুরাইশ বংশীয়রা দুদলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একজন আবদুন্দার এর নিকট আনুগত্যের শপথ নেয় এবং তাদের সঙ্গে থাকার অঙ্গীকার করে। আর অপর দল বনু আব্দমানাফ এর হাতে। এ ব্যাপারে তারা শপথও করে এবং শপথকালে তারা একটা সুগন্ধিপূর্ণ পাত্ৰে হাত রাখে। সেখান থেকে উঠে গিয়ে তারা কাবার দেয়ালে হাত মুছে। এ কারণে তারা হিলফুল মুতাইয়্যিদ্বীন তথা সুগন্ধধারীদের শপথ নামে পরিচিত হয়। তাদের মধ্যে ছিল কুরাইশদের অন্যতম গোত্ৰ বনু আসাদ ইব্ন আবদুল ওযযা ইব্ন কুসাই, বনু যুহরা, বনু তায়ম, বনু হারিছ ইব্ন ফিহর, আর বনু আব্দুন্দারের সঙ্গে ছিল বনু মখযুম, বনু সহম, বনু জুমুহ এবং বনু আদীি। এ বিরোধ আর বিবাদ বিসংবাদ থেকে দূরে ছিল বনু আমির ইব্ন লুয়াই এবং মুহারির ইব্ন ফিহর। এরা উক্ত দুটি দলের কারো সঙ্গে ছিল না। অতঃপর তারা ঐক্যমতে পীেছে এবং একটা পরিভাষা গড়ে তোলে যে, রিফাদা তথা হাজীদের মেহমানদারী আর সিকায়া তথা হাজীদের পানি পান করাবার দায়িত্ব থাকবে বনু আবৃন্দ মানাফের হাতে আর হিজাবী তথা রক্ষণাবেক্ষণ, লিওয়া তথা পতাকা বহন এবং নাদওয়া তথা পরামর্শ সভার দায়িত্ব থাকবে বন আব্দুদার এর হাতে। এ সিদ্ধান্ত অটল থাকে এবং এ ধারাই অব্যাহত থাকে।
উমাবী আবু উবায়দা সূত্রে বর্ণনা করেন : খুযাআর কিছু লোক মনে করে যে, কুসাই যখন হুবাই বিনত হুলাযলকে বিবাহ করে এবং হুলাযলকে বায়তুল্লাহর তত্ত্বাবধান থেকে অপসারণ করা হয়। তখন তার দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়, কন্যা হুবাই-এর উপর এবং তার প্রতিনিধি করা হয়
আমর ইব্ন আমিরকে। তখন কুসাই এক মশক মদ আর একটা উষ্ণু শাবকের বিনিময়ে তার নিকট থেকে বায়তুল্লাহর কর্তৃত্ব ক্রয় করে নেন। তখন থেকে একটা প্রবাদবাক্য চালু হয়ে BDBBDS S AA AAS AAA AA JJAJAAA AAAASAJ BBB BBB BBDSBaSBB BB0BBBBB লোকসান জনক। খুযাআ গোত্ৰ এটা দেখে কুসাইর সঙ্গে কঠোর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়। এতে তিনি আপন ভাইয়ের সাহায্য কামনা করেন, ভাই তার সঙ্গী-সাথীদেরকে নিয়ে এগিয়ে আসেন এবং যা ঘটবার ছিল তা-ই ঘটলো। অতঃপর কুসাই তাঁর উপর ন্যস্ত সিন্দানা, হিজাবা প্রভৃতি দায়িত্বসমূহ তাঁর পুত্র আব্দুন্দারের উপর ন্যস্ত করেন। এ সম্পর্কে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে এবং বিষয়টা আরো স্পষ্ট করা হবে। মুযদালিফা থেকে ফেরার অনুমতি দেয়ার কর্তৃত্ব দানের কর্তৃত্ব আসে ফাকীম এর হাতে। এভাবে অনুমতি আসে সুফার একটি দলের হাতে। এ সব বিষয়ে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে এবং তার আগে এ সব দায়িত্ব কাদের হাতে ছিল, তা-ও সেখানে বলা হয়েছে।
ইব্ন ইসহাক বলেন : কুসাই এর চার পুত্র এবং দুই কন্যা সন্তান ছিল। তারা হলেন আব্দমানাফ, আব্দুদার, আব্দুল ওযযা আব্দ এবং তাখাবযুর ও বাররা। আর এদের সকলের মাতা ছিলেন হুবাই বিনত হুলায়ল ইব্ন হুবশিয়া ইব্ন সাললি ইব্ন কব ইব্ন আমার আল-খিযায়ী। ইনি ছিলেন বনু খুযাআর বংশীয় বায়তুল্লাহর সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক। তার হাত থেকে বায়তুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণ করেন কুসাই ইব্ন কিলাব। ইব্ন হিশাম বলেন : কুসাই পুত্র আব্দ মানাফের চারজন পুত্ৰ সন্তান ছিলেন এদের মধ্যে হাশিম, আবদ, শামস এবং মুত্তালিবের মাতা ছিলেন আতিকা বিনত মুররা ইব্ন হিলাল। আর চতুর্থ সন্তান নওফলের মা ছিলেন ওয়াকিদা। আবদে মানাফের আরো কয়েকজন সন্তান ছিলেন, যাদের নাম ছিল আবু আমর, তামায়ুর, কালাবা, হায়্যা রীতা উম্মল আখসায় এবং উন্মে সুফিন ইব্ন হিশাম বলেন : হাশিমের চার পুত্ৰ এবং পাচ কন্যা সন্তান ছিলেন। তাঁরা হলেন আব্দুল মুত্তালিব, আসাদ, আবু ছাইকী, নাযিলা, শিফা, খালিদা, যয়ীফা, রুকাইয়া এবং হায়্যা আবদুল মুত্তালিব রুকাইয়্যার মা সালমা বিনত আমুর ইব্ন যাযদ (ইব্ন লবীদ ইব্ন খাদাশ। ইব্ন আমির ইব্ন গানাম ইব্ন আব্দী ইব্ন নাজ্জার) ছিলেন মদীনাবাসী। তিনি অন্যদের মায়ের বিষয়ও উলেখ করেছেন। তিনি বলেন : আব্দুল মুত্তালিবের দশ পুত্র ও ৬ কন্যা ছিলেন আব্বাস, হামযা, আব্দুল্লত্ব আবু তালিব (তাঁর আসল নাম ছিল আব্দ মানাফ, ইমরান নয়) যুবায়র, হুরিছ। তিনি ছিলেন পিতার জ্যোষ্ঠি সন্তান। এজন্যেই তার নামেই তাঁর পিতার কুনিয়াত বা উপনাম হয়, জহল, (মতান্তরের হজল) তার ধন-সম্পদের আধিক্যের কারণে তাঁর লকব হয় গীদাক। মুকাওয়েম, যিরার, আবু লাহাব, (তার নাম ছিল আবদুল ইসযা সফিয়্যা, উন্মে হাকীম আল-বায়দা আতিকা, উমায়মা, আরওয়া, বারা। তিনি এদের মাদেরও নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন : আবদুল্লাহ আবু তালিব, যুবাইর এবং
ইব্ন মািখযুম ইব্ন ইয়াক যা ইব্ন মুররা ইব্ন ইমরান ইব্ন মািখযুম ইব্ন ইয়াকুযা। ইব্ন মলিক ইব্ন নিযুর ইব্ন কিনানা ইব্ন খুযাযমা ইব্ন মুদরিকা ইব্ন ইলইয়াস ইব্ন মুযার ইব্ন নিযার মুয়াদ ইব্ন আদনান)। আবদুল্লাহ পুত্র মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়ামাল্লাম যিনি হচ্ছেন আদম সন্তানদের সর্দার। তাঁর যা ছিলেন আমিনা বিনতে ওহাব ইব্ন আব্দ মানাফ ইব্ন যুহুৱা ইব্ন কিলাব ইব্ন মুররা ইব্ন কব ইব্ন লুয়াই। তারপর তিনি তাদের সকলের মায়ের বিস্তরিতভাবে উল্লেখ করেন। তারপর তিনি বলেন : বংশ পরম্পরা আর বৈবাহিক সূত্রের আত্মীয়তার বিবেচনায় বনী আদমের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে মর্যাদাবান সন্তান। পিতা মাতা উভয় কুলের বিবেচনায় তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর উপর দরুদ ও সালাম বৰ্ষিত হোক। আল্লাহর পক্ষ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত।
ওয়াসিলা ইব্ন আসকা। সূত্রে শাদাদ ইব্ন আবু আম্মার থেকে বর্ণিত। আওযায়ী বৰ্ণিত এমর্মের হাদীস ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইসমাঈলের সন্তানদের মধ্য থেকে কিনানা থেকে মনোনীত করেছেন কুরাইশকে, কুরাইশ থেকে মনোনীত করেছেন হাশিমকে আর আমাকে মনোনীত করেছেন বনু হাশিম থেকে। (মুসলিম)। পরে নবী করীম (সা)-এর মুবারক জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা হবে এবং এতদসংক্রান্ত হাদীস আর মনীষীদের উক্তিসমূহ উল্লেখ করা হবে ইনশা আল্লাহ।
জাহিলি যুগের কিছু ঘটনার সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বনু ইসমাঈলের নিকট থেকে জুরহুম গোত্রের বায়তুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এতে তারা আগ্রহী ছিল এজন্য যে, তারা ছিল কন্যা পক্ষের সন্তান খুযাআ গোত্র জুরহুমদের উপর হামলা করে তাদের নিকট থেকে বায়তুল্লাহর দায়িত্ব ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ও সেখানে উল্লিখিত হয়েছে। অতঃপর কুসাই এবং তার সন্তানদের নিকট তা ফিরে আসার কাহিনীও বর্ণিত হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ (সা)-এর আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত তাদের হাতে বায়তুল্লাহর সেবায়েতের দায়িত্ব ছিল অব্যাহত ধারায়। নবী করীম (সা) তা বহাল রাখেন।
জাহিলী যুগের কতিপয় প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব
তিনি ছিলেন। হযরত ঈসা (আ) ও মহানবীর মধ্যবর্তী কালের লোক। কারো কারো ধারণা তিনি একজন নবী ছিলেন। আল্লাহই ভালো জানেন।
তাবারানী বলেন : আহমদ ইব্ন যুহায়র আত-তাসন্তারী আমাদের নিকট সাঈদ ইব্ন জুবায়র। এর বরাতে ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে হাদীস বর্ণনা করে বলেন : খালিদ ইব্ন সিনানের কন্যা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট আগমন করলে তিনি তার জন্য নিজের চাদর বিছিয়ে দেন এবং বলেন : (১৭ –> … … এ. এ হচ্ছে এমন এক নবীর কন্যা, যাকে তাঁর সম্প্রদায় ধ্বংস করেছে। বাজ্জারও ভিন্নসূত্ৰে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, খালিদ ইব্ন সিনানের উল্লেখ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট করা হলে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন এমন এক নবী, যাকে তার সম্প্রদায় ধ্বংস করেছে। অতঃপর তিনি বলেন : এ সূত্র ছাড়া হাদীসটি মারফু পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আর এসূত্রের একজন রাবী কায়েস ইব্ন রবী বিশ্বস্ত হলেও তাঁর স্মৃতিশক্তি দুর্বল ছিল। তিনি হাদীসে এমন কিছু অন্তর্ভুক্ত করতেন, যা আসল হাদীস নয়। আল্লাহই ভালো জানেন।
বাযযার বলেন : সাঈদ ইব্ন জুবাঈর থেকে মুরসালরূপে হাদীসটি বর্ণিত। আর হাফিজ আবু ইয়ালা আল-মুছলী ইব্ন আব্বাসের বরাতে বলেন, আব্বাস গোত্রের খালিদ ইব্ন সিনান নামক জনৈক ব্যক্তি তার সম্প্রদায়কে বলেন : আমি তোমাদের উপর আসন্ন কঙ্করময় উচ্চ ভূমির আগুন নিভিয়ে দেবো। তখন তার সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি তাকে বললো, আল্লাহর কসম, হে খালিদ, তুমি তো সত্য ছাড়া আমাদের সঙ্গে কখনো কোন কথা বলনি। তবে তোমার এ বক্তব্যের অর্থ কী? তখন খালিদ তাঁর জাতির কিছু লোক নিয়ে বের হলেন। তাদের মধ্যে আম্মারা ইব্ন যিয়াদও ছিল। তিনি সেখানে আগমন করলে সে আগুন পাহাড়ের ফাঁকি থেকে বেরিয়ে আসছে দেখেন। তখন খালিদ তাদের জন্য রেখা টানলেন এবং তাতে তাদেরকে বসালেন এবং বললেন : আমি তোমাদের নিকট আসতে হলে তোমরা আমার নাম ধরে ডাকবে না। তখন আগুন। এমনভাবে বের হয়ে আসছিল যেন লাল রঙের অশ্বদল একের পর এক ছুটে আসছে। তখন খালিদ অগ্রসর হয়ে আপন লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করছিলেন আর বলছিলেন :
প্রকাশ পেয়েছে, প্রকাশ পেয়েছে, প্রকাশ পেয়েছে সকল হিদায়াত। ইবনু রাঈয়া আল-সাবী মনে করেছে, আমি সেখান থেকে বের হবো না। আমার বস্ত্ৰ তো আমার হাতেই। একথা বলে তিনি সে ফাটলে ঢুকে পড়েন। সেখানে তার বিলম্ব হলে আপনারা ইব্ন যিয়াদ
নিকট এতক্ষণে ফিরে আসতেন। তারা বললেন? তোমরা তাকে তার নাম ধরে ডাকো। রাবী বলেন, তারা বললো : তিনি আমাদেরকে নাম ধরে ডাকতে নিষেধ করেছেন। তখন তারা তার নাম ধরে ডাকলো। তখন মাথায় হাত তিনি মাথায় হাত রেখে বের হয়ে এলেন ধরে এবং বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে আমার নামে ডাকতে নিষেধ করিনি? আল্লাহর কসম, তোমরা তো আমাকে হত্যা করে ফেললে। সুতরাং আমাকে দাফন করে ফেল। যখন তোমাদের নিকট দিয়ে কিছু গাধা অতিক্রম করবে। তখন তার মধ্যে একটি গাধা থাকবে লেজ কাটা, তখন তোমরা আমাকে কবর থেকে উঠালে জীবিত পাবে। তারা তাকে দাফন করলো। তখন তাদের নিকট দিয়ে কিছু সংখ্যক গাধা অতিক্রম করলো। তার মধ্যে একটি গাধা সত্যিই লেজ কাটা ছিল। তখন আমরা একে অপরকে বললাম : কবরটা খুঁড়ো। কারণ তিনি আমাদেকে কবর খোড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তখন আম্মারা তাদেরকে বললেন : না, তোমরা তার কবর খুঁড়বে না। আল্লাহর কসম, মুদার গোত্ৰ যেন আমাদেকে বলতে না পারে যে, আমরা আমাদের মৃতদের কবর খুঁড়ে থাকি। খালিদতো তাদেরকে বলছিলেন; তাঁর স্ত্রীর পেটের মাংসে রয়েছে দুটি ফলক। তোমাদের কোন অসুবিধা দেখা দিলে সে দুটির দিকে তাকাবে। তোমরা যা চাইবে, তার কাছে তাই পাবে। রাবী বলেন, কোন ঋতুবতী স্ত্রী লোক যেন তা স্পর্শ না করে। তারা তার স্ত্রীর নিকট ফিরে এসে তাকে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে ঋতুবতী অবস্থায় তাদের দিকে তা বের করে আনে। ফলে ফলকের সমস্ত উপদেশাবলী মুছে যায়।
আবু ইউনুস বলেন সাম্মাক ইব্ন হারব বলেছেন, তিনি সে সম্পর্কে নবী করীম (সা)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : এতো এমন নবী, যাকে তার জাতি ধ্বংস করেছে। আবু ইউনুস সিমাক ইব্ন হারবের বরাতে বলেন, খালিদ ইব্ন সিনানের পুত্র নবী (সা)-এর নিকট আগমন করলে তিনি বললেন, মারহাবা হে ভাতিজা! এটি ইব্ন আব্বাসের উক্তি। তাতে একথা নেই যে, তিনি নবী ছিলেন। আর সে সব মুরসল বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি নবী এ কথা সেগুলো নির্ভরযোগ্য নয়। খুব সম্ভব তিনি একজন পুণ্যবান ও কারামত সম্পন্ন লোক ছিলেন। কারণ তিনি যদি অন্তবতীকালের লোক হয়ে থাকেন, তবে সহীহ বুখারীতে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে প্রমাণিত আছে যে, তিনি বলেছেন : ঈসা ইব্ন মারইয়ামের সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি হচ্ছি। আমি। কারণ, তাঁর আর আমার মধ্যখানে কোন নবী নেই। আর তাঁর পূর্বে হলেও তার নবী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, আল্লাহ বলেন :
যাতে তুমি এমন এক জাতিকে সর্তক করতে পার যাদের কাছে তোমার পূর্বে সতর্ককারী আসেনি। (২৮ কাসাস ৪৬) একাধিক আলিম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইসমাঈল (আ)-এর পর আরবদের মধ্যে কোন নবী প্রেরণ করেননি; কেবল শেষ নবী মুহাম্মদ (সা)-ব্যতীত। কাবা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা ইবরাহীম (আ) তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন। কাবাকে আল্লাহ বিশ্ববাসীর জন্য শরীয়ত সম্মত কিবলা করেছেন। আর অন্যান্য নবীরা নিজ নিজ জাতিকে মহানবীর আগমনের সুসংবাদ দান করেছেন। সর্বশেষ যিনি এ সুসংবাদ দিয়েছেন, তিনি হলেন ঈসা ইব্ন। মারিয়াম (আ)। আরবদের প্রতি প্রেরিত নবী ছিলেন বলে সুহায়লী প্রমুখ আলিমগণ যা বলেছেন, এত তা রদ হয়ে যায়। মাদয়ানবাসী সুয়ায়ব ইব্ন লু সিহযাম ইব্ন শুয়ায়ব ইব্ন ছাফওয়ান, অনুরূপ ভাবে তাদের এ বক্তব্য রদ হয়ে যায়। আরবে হানযোলা ইব্ন সাফওয়ান এরও নবীরূপে আগমন ঘটে এবং তাকে অস্বীকার করলে আল্লাহ তাদের উপর বুখত নসরকে বিজয়ী করেছিলেন। তিনি তাদের হত্যা আর বন্দী করেন। যেমন ঘটেছিল বনী ইসরাঈলের ক্ষেত্রে। আর এটা ঘটে। মাআদ ইব্ন আদমান এর শাসনামলে। স্পষ্টত এরা ছিলেন নেককার লোক, কল্যাণের দিকে তারা ডাকতেন। আল্লাহ ভালো জানেন। জারহুমের পর খুযাআদের বৃত্তান্ত প্রসঙ্গে আমর ইব্ন লুহাই ইব্ন কিমআ ইব্ন খন্দািফ সম্পর্কে ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
হাতিম। তাই : জাহিলী যুগের অন্যতম প্রধান দাতা
তিনি হাতিম ইব্ন আবদুল্লাহ (ইব্ন সাআদ ইব্ন হাশরাজ ইব্ন ইমরাউল কায়েস ইব্ন আদী ইব্ন আহ্যাম ইবদ আবু আহ্যাম) তাঁর আসল নাম ছারামা ইব্ন রবীআ ইব্ন জারওয়াল ইব্ন সাল ইব্ন আমর ইব্ন গাওছ ইব্ন তাই আবু সাফফানা আত-তাঈ সাহাবী আদী ইব্ন হাতিম তাঁরই পুত্র। জাহিলী যুগে তিনি ছিলেন বিপুল প্রশংসিত বড়দাতা। অনুরূপ ভাবে ইসলামী যুগে তাঁর পুত্রও ছিলেন একজন নামকরা দাতা। হাতিমের বদান্যতার অনেক কিংবদন্তী ও চমকপ্ৰদ কাহিনী প্রচলিত আছে। তবে সেসব দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পরকালের মুক্তি ও কল্যাণ তার কাম্য ছিল না। সেসবের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল লোকজনের প্রশংসা কুড়ানো। হাফিজ আবু বকর আল-বাযযার তীর মুসনাদ গ্রন্থে ইব্ন উমর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (স)-এর নিকট হাতিমের প্রসঙ্গে আলোচনা করা হলে তিনি বলেন : তিনি যা চেয়েছিলেন তাই পেয়েছেন।
আদী ইব্ন হাতিম সূত্রে বর্ণনা করেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বললাম : আমার পিতা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতেন এবং নানা সৎ কাজ করতেন। এজন্য তিনি কি পুণ্য লাভ করবেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন : তোমার পিতা যা চেয়েছিলেন, তাই পেয়েছেন। আবু ইয়ালা ও বাগাবী ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
সহীহ (বুখারীতে) উল্লিখিত হয়েছে যে, যে তিন ব্যক্তির জন্য জাহান্নামকে প্ৰজ্বলিত করা হবে, তাদের মধ্যে একজন হবে সে ব্যক্তি, যে এজন্য দান করে, যেন তাকে দাতা বলা হয়।
দুনিয়াতে তাকে দাতা বলাই হবে তার প্রতিদান। অনুরূপভাবে একজন আলিম এবং মুজাহিদের জন্যও জাহান্নামের অগ্নি প্ৰজ্বলিত করা হবে।
সহীহ (বুখারীতে) অপর এক হাদীসে আছে যে, সাহাবায়ে কিয়াম রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞেস করেন, আবদুল্লাহ ইব্ন জাদ আন ইব্ন আমর ইব্ন কাব। ইব্ন সাদ ইব্ন তায়ম ইব্ন মুররা সম্পর্কে। তাঁরা বললেন : তিনি অতিথি আপ্যায়ন করতেন, দাস মুক্ত করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন। এতে কি তাঁর কোন কল্যাণ হবে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন ৪ সে তো দীর্ঘ জীবনের মধ্যে একটা দিনও একথা বলেনি- হে আমার পালনকর্তা! কিয়ামতের দিন আমার অপরাধ ক্ষমা করো। অনুরূপভাবে অনেক খ্যাতনামা দাতা আছে, যারা অভাব আর দুর্যোগের সময় মানুষকে আহার করায় (তাদের অবস্থাও এরূপই হবে)। বায়হকী আলী ইব্ন আবু তালিবের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন এভাবে : সুবহানাল্লাহ! কতো মানুষ কতই না পুণ্য কাজ করে। অবাক লাগে সে ব্যক্তির জন্য, যার কাছে তার একজন মুসলিম ভাই অভাবের সময় আসে। অথচ, সে নিজেকে কল্যাণ কর্মের জন্য উপযুক্ত মনে করে না। সে সওয়াবের আশা আর শাস্তির ভয় না করলেও সৎকাজে তো তার ছুটে যাওয়া উচিৎ। কারণ তা-তো মুক্তির পথেই চালিত করে। তখন জনৈক ব্যক্তি তাঁর দিকে এগিয়ে এস বললো : হে আমীরুল মুমিনীন! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন, আপনি কি আল্লাহর রাসূলের নিকট এমন কথা শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ তার চেয়েও উত্তম কথা হলো তার কবীলার বন্দী নারীদেরকে যখন উপস্থিত করা হয়, তখন এক দাসী সামনে এলো, রক্তিম ওষ্ঠ ঘন-কালো লম্বা চুল, দীর্ঘ গৰ্দান, তীরের মতো তীক্ষু নাক, অবয়ব মধ্যম স্তন সুডোল, পায়ের গোছা মাংসল, চিকন কোমর, মরু নিতম্ব ও নিটোল পিঠের অধিকারিণী। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে দেখেই আমি বিমুগ্ধ হই এবং বলি, আমি অবশ্যই তাকে পাওয়ার দাবী নিয়ে রাসূলের নিকট গমন করবো এবং রাসূল (সা) তাকে আমার গনীমতের মালের অন্তর্ভুক্ত করবেন। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমি তার সৌন্দর্যের কথা বিস্মৃত হই। বিস্থিত হই আমি তার কথা শুনে তার বাগ্নিতায়। সে বললো, হে মুহাম্মদ! আপনি কি আমাকে মুক্ত করবেন? আরবের গোত্রদের ঠাট্টা বিদ্রুপ থেকে রক্ষা করবেন? কারণ, আমি তো আমার গোত্রের সর্দার তনয়া। আর আমার পিতা যাকে সাহায্য করা দরকার,
করতেন, ক্ষুধাতুরকে পেট পুরে খাওয়াতেন, বস্ত্ৰহীনকে বস্ত্ৰদান করতেন, অতিথিকে আপ্যায়ন করতেন, লোকজনকে আহার করাতেন, সালাতের বিস্তার ঘটাতেন। তিনি কখনো অভাবীকে বিমুখ করেন নি। আমি হাতিম। তাইর কন্যা। তখন নবী (স) বললেনঃ হে বালিকা! এগুলোতো সত্যিকার মুমিনের গুণাবলী। তোমার পিতা মুমিন হয়ে থাকলে আমরা অবশ্যই তার প্রতি সদয় হবো। তিনি তখনি আদেশ দিলেন ৪ তোমরা তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ, তার পিতা উত্তম চরিত্রকে ভালোবাসতেন। আর আল্লাহ তাআলা উত্তম চরিত্রকে ভালোবাসেন। তখন আবু বুরদা ইব্ন ইয়ানার দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ উত্তম চরিত্র ভালোবাসেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন নিহিত, তার শপথ করে বলছি, সুন্দর চরিত্র ছাড়া কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্ৰবেশ করতে পারবে না।
আদী ইব্ন হাতিম। এর বৈপিত্রেয় ভাই এর বরাতে বলেন : হাতিম-এর স্ত্রী নাওয়ারকে বলা হয়- হাতিম সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু শুনাও। তিনি বললেন, তাঁর সব ব্যাপারই ছিল অবাক হওয়ার মতো। একবার আমরা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হলাম। তাতে সব কিছুই আক্রান্ত হলো, এর ফলে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেল। আকাশ ধূলাবালিতে ছেয়ে গেলো। স্তন্য দাত্রীদের দুধ শুকিয়ে গেল। উটগুলো এমনই দুর্বল কঙ্কালসার হয়ে পড়ে যে, এক ফোটা দুধও দিতে পারছিল না। অর্থ সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দেয় সে দুৰ্ভিক্ষ। আমরা এক শীতের রাতে এক নির্জন প্রান্তেরে ছিলাম। ক্ষুধার তীব্ৰতায় শিশুরা চিৎকার জুড়ে দেয়, চিৎকার জুড়ে দেয়। আব্দুল্লাহ। আন্দী এবং সাফানা। খোদার কসম, আমরা কোন কিছু পেলে তা দিয়ে তাদেরই ব্যবস্থা করতাম। তিনি একটি শিশুকে এবং আমি কন্যাটিকে কোলে তুলে নিলাম এবং প্ৰবোধ দিতে লাগলাম। আল্লাহর কসম, বেশ কিছু রাত অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তারা নীরব হলো না। অতঃপর আমরা অপর পুত্রটির দিকে মনোনিবেশ করি। তাকে প্ৰবোধ দিলে অতিকষ্টে তাকে চুপ করা গেল। অতঃপর আমরা শাম দেশীয় একটা মখমলের চাদর বিছাই এবং শিশুদেরকে তার উপর শোয়াই। তিনি আর আমি একটা কক্ষে ঘুমাই ৷ সন্তানরাও ছিল আমাদের মধ্যস্থলে। এরপর তিনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন আমাকে প্ৰবোধ দেয়ার জন্য, যাতে আমি ঘুমাতে পারি। আর তিনি যে কি চান, তা-ও আমি বুঝতে পারি। তখন আমি ঘুমের ভান করি। আমাকে বললেন, হলোটা কী? তুমি কি ঘুমিয়েছ গো? আমি চুপ করে রইলাম। তখন, তিনি বললেন, সে তো দেখছি ঘুমিয়েই পড়েছে। অথচ আমার চোখে ঘুম ছিল না। রাত্রি যখন তাদেরকে আচ্ছন্ন করে নেয়, নক্ষত্র যখন অন্তর্ধান করে চতুর্দিকের শব্দ আর কোলাহল থেমে গিয়ে যখন পূর্ণ নিস্তব্ধতা বিরাজ করে।
তখন তাঁবুটির কোন এককোণ কে একজন যেন উঠিয়ে দিল। তখন তিনি বললেন, এখানে কে? তখন সে ফিরে গেলো। রাত ভোর হলে সে ফিরে আসে। আবার তিনি বললেন : কে? সে বললো-হে আব্দীর পিতা! আমি তোমার অমুক প্রতিবেশিনী। চিৎকার করে রোদন করা আর ডাকার জন্য তোমাকে ছাড়া আর কাউকে আমি পাইনি। আমার এমন সন্তানদের নিকট থেকে তোমার কাছে এসেছি, যারা ক্ষুধায় নেকড়ের মতো চীৎকার দিচ্ছে। তিনি বললেন, দেরী না করে এক্ষুণই তুমি তাদেরকে আমার কাছে নিয়ে এসো। নাওয়ার বলনে? আমি ছুটে এসে বললাম – তুমি একি করেছ? শুয়ে পড়ে। আল্লাহর কসম, তোমার সন্তানরা ক্ষুধায় ছটফট করছে। তাদেরকে প্ৰবোধ দেয়ার মতো কিছু তুমি পাওনি। কি হবে ঐ মহিলা আর তার সন্তানদের নিয়ে? তিনি বলললেনঃ তুমি থাম। ইনশা আল্লাহ আমি তোমাকে তৃপ্ত করবো। তিনি বলেন, সে মহিলাটি এগিয়ে আসে, দুজন শিশুকে সে বহন করছিল। আর চারজন শিশু হেঁটে চলছিল তার ডানে বায়ে। যেন সে উটপাখী আর তার চারিপার্শে বাচ্চাগুলো। হাতিম। আপনি ঘোড়ার দিকে এগিয়ে যান এবং তার বুকে বর্শা দিয়ে আঘাত করে তারপর চকমকি পাথর ঘষে আগুন জ্বালান। এরপর ছােরা দিয়ে চামড়া ছিলে ফেলে তাঁর স্ত্রী লোকদের হাতে তুলে দিয়ে বললেন, তুমি নিয়ে যাও। তিনি এবং তোমার সন্তানদেরকে পাঠাও। সে তার শিশু সন্তানদের পাঠায়। এরপর তিনি বলেন : শরীম শরাম তোমরা কি চর্মসার লোকগুলোকে রেখে খাবে।
8Oと。
এরপর তিনি তাদের মধ্যে ঘুরতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তাদের সংকোচ দূর হয় এবং তারা তার কাছে ঘেষে এবং তার কাপড় জড়িয়ে ধরে। এরপর তিনি কান্ত হয়ে এককোণে শুয়ে পড়েন, আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আল্লাহর কসম, তিনি এক টুকরা গোশত বা এক ঢোক পানিও স্পর্শ করলেন না। অথচ তার প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশী। এ অবস্থায় আমাদের ভোর হল। আর আমাদের কাছে ঘোড়াটির হাডিড আর খুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
দারা কুতনী বলেন : কাষী আবু আবদুল্লাহ আল মাহামিলী আমার নিকট বর্ণনা করে বলেন : হাতিমের স্ত্রী হাতিমকে বললেন, হে আবু সাফানা, আমি এবং তুমি একান্তে খাবার খেতে চাই, যেখানে আর কেউই থাকবে না। স্বামী স্ত্রীকে সে অনুমতি দিলেন, ফলে তিনি তার তাঁবু লোকালয় থেকে এক ক্রোশ দূরে সরিয়ে নিলেন এবং তাকে খাদ্য প্রস্তুতের নির্দেশ দান করলেন এবং সে মতে খাদ্য প্রস্তুত করা হলো। এসময় স্বামী -স্ত্রী উভয়ের জন্য পর্দা ঝুলানো হল। খাদ্য পাক সম্পন্ন হওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে হাতিম মাথা বের করে বললেন :
فلا تطبخی قد به ی وسترلک دونها- علی اذا ما تطبخین حرام আমার উপর তোমার পর্দার আড়াল রেখে পাকাবে না। এমন হলে তুমি যা পাকাবে, তা আমার জন্য হারাম হবে। কিন্তু তা পাকানোর সময় হলে পাক করবে, আগুন জ্বালাবে। বর্ণনাকারী বলেন, এর পর তিনি পর্দা উন্মোচন করেন,খাদ্য সম্মুখে এগিয়ে দেন এবং লোকজনকে ডাকলেন, তিনি এবং অন্যরা মিলে খাবার খেলেন। তখন হাতিম। তাইর স্ত্রী বললেন : আমাকে যা বলেছিলে, তা তো পূরণ করলে না! তখন জবাবে তিনি বললেন : আমার
মন আমার নিকট অধিক সম্মানের পাত্র। প্রসৎসা পাওয়ার উর্ধে আমার মন। আর আমার বদান্যতা তো পূর্ব থেকেই খ্যাত। অতঃপর তিনি বললেন :
ولا نشتکینی جارتی غیر از ها – اذا غاب عنها بعلها لا از و رها আমার প্রতিবেশিনী আমার সম্পর্কে। এছাড়া কোন অভিযোগ করেন যে, যখন তার স্বামী দূরে থাকে আমি তাকে দেখতে যাই না।
আমার দান পৌছবে তার নিকট এবং ফিরে আসবে তার স্বামী অথচঃ ভেদ ঘরা হবে। না তার পর্দা।
হাতিম। তাইর আরো কিছু কবিতার পংক্তি :
آ آفضح جار تی و اخون جاری – فلا و الله افعل ما حییت আমি যখন রজনী যাপন করি প্রতারিত করি আমার প্রতিবেশীর স্ত্রীকে, যাতে আঁধার ঢেকে নেয়। আমাকে, আমি আর গোপন থাকি না।
আমি লজ্জিত করবো। আমার প্রতিবেশিনীকে আর বিশ্বাষ ঘাতঘতা করবো। আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে। না, আল্লাহর কসম, যতদিন বেঁচে থাকি, তা করতে পারিনা।
😯 Գ
হাতিম। তাইর আরো কিছু কাবতার পংক্তি :
اغضی اذا ماجار تی برزنت – حتی یواری جار تی الخدد চক্ষু মুদে নেই যখন বের হয় আমার প্রতিবেশিনী, এমনকি ঢেকে নেয়। আমার প্রতিবেশিনীকে পর্দা।
হাতিম। তাইয়ের আরো কিছু কবিতার পংক্তি :
আমার স্বভাব নয়। চাচাতো ভাইকে গালি দেওয়া, যে আমার নিকট কিছু কামনা করে, আমি তাকে নিরাশ করি না।
বিনা দোষে নিন্দুক আর হিংসুকের কথা, আমি শুনে বলি-চলে যাও আর আমাকে রক্ষা
কর।
و عابوها علی فلم تعینی – و لم یعرق لها یوما جبینی তাদের নিন্দাবাদ আমাকে ক্লান্ত করে না এবং তা আমাকে ঘর্মাক্তি করে না।
و ذی و جهین یلقانی طلیقا – ولیس اذا تغیب یاتسینی আর মিলিত হয় আমার সঙ্গে দ্বিমুখী ব্যক্তি (মুনাফিক) হাসি-খুশী, তার অন্তর্ধান আমাকে ব্যথিত করে না।
আমি জয় করে নেই তার দোষ এবং বিরত থাকি তার থেকে, আমার বংশ আর ধর্ম রক্ষা
করার কারণে।
তাঁর আরো কিছু কবিতা থেকে –
হে উন্মে মালিক, শীতার্তা বিপন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করো, যখন সে আসে আমার কাছে আগুন আর জবাইখানার মাঝে।
কাষী আবুল ফারজল মুআফ্ৰিকী আবু উবায়দার সুত্রে বলেন, কবি মুতালম্মিস এর এ নিম্নোক্ত উক্তি শুনে হাতিম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন
সামান্য সম্পদ তার মালিকের কল্যাণ সাধন করে, আর তা দীর্ঘস্থায়ী হয়, আর বিপর্যয়ের সঙ্গে বেশী সম্পদও দীর্ঘস্থায়ী হয় না।
8のbr
আর সম্পদ উজাড় করার চেয়ে তা রক্ষা করা উত্তম, আর কোন রকম পুঁজি ছাড়া দেশ ভ্ৰমণ ভ্ৰষ্টতা স্বরূপ।
এ কবিতা শুনে তিনি বলেন- তার হয়েছে কী? আল্লাহ তার জিহবা, কর্তন করুন, তিনি মানুষকে কৃপণতার জন্য উদ্ধৃদ্ধ করেছেন। তিনি কেন বলেননি –
فلا الجود یفنی المال قبل فناء ہ – ولا البخل فی مالی الشحیح یزید বদান্যতা সম্পদ বিনাশ করে না ধ্বংসের পূর্বে, আর কৃপণতা বৃদ্ধি সাধন করে না কৃপণের সম্পদে।
فلا تلتمس مالا بعلبشر لقتر لكل غد رزق يعود جديد অনটনে জীবন যাপনের জন্য সম্পদ কামনা করবে না, সকল নতুন দিনের জন্য নতুন জীবিকা আছে, যা আসবেই।
الم تران المال غاد و اثح – وان الذی یعطیلک غیر بعید তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, সম্পদ সকালে আসে আর বিকালে চলে যায়, আর তোমাকে যিনি দান করেন তিনি তো মোটেই দূরে নন। কাষী আবুল ফারাজ বলেন, হাতিম তাঈ কী চমৎকার কথাই না বলেছেন, তোমাকে যিনি দিয়ে থাকেন। তিনি মোটেই দূরে নন। তিনি যদি
ইসলাম গ্ৰহণ করতেন তাহলে পরকালে তাঁর মুক্তির আশা করা যেতো। আল্লাহ তাআলা তার কিতাবে বলেছেন :
و اسئلوا اللّه من فضله তোমরা আল্লাহর নিকট তার অনুগ্রহ ভিক্ষা কর। (৪ নিসা : ৩২)
আল্লাহ আরো বলেন?
আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞেস করলে (তুমি বলবে)। আমি তো নিকটেই আছি। আহবানকারী যখন আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দেই। ( ২ বাকারা ৪ ১৮৬)
ওয়াযাহ ইব্ন মাবাদ আত-তাঈ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : হাতিম তাঈ একদা নুমান ইব্ন মুনাযির এর অতিথি হলে তিনি অতিথিকে সসম্মানে বরণ করে নেন, নিকটে বসান এবং ফিরে যাওয়ার সময় তাঁকে দুই উট বোঝাই স্বর্ণ-রৌপ্য দান করেন। এ ছাড়াও তিনি অনেক দেশীয় উপহার সামগ্ৰী দান করেন। সে সব সামগ্ৰী নিয়ে তিনি প্ৰস্থান করেন। তিনি স্বজনদের নিকটবতী হলে তায় কবীলার বেদুইনদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত ঘটে। তারা বললো : হে হাতিম! তুমি তো এসেছ বাদশাহের নিকট থেকে আর আমরা এসেছি। স্বজনদের নিকট থেকে দারিদ্র্য নিয়ে। তখন হাতিম বললেন : এসো, আমার সম্মুখে যা কিছু আছে তা নিয়ে যাও। তারা তার
8の冷)
সম্মুখ থেকে ছোবল মেরে তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই ভাগ-ব্ৰণ্টন করে নেয়। এমনকি তার সম্মুখ থেকে নুমানের প্রদত্ত সমস্ত বিশেষ উপটৌকন ও তারা বণ্টন করে ফেলে। এসময় হাতিমের দিকে এগিয়ে আসে তার দাসী তরীফা এবং বলে, আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজের জন্যও কিছু অবশিষ্ট রােখ। এরা তো দেখছি দীনারা-দিরহাম আর উট-ছাগল-ভেড়া কিছুই বাদ দেবে না। তখন তিনি বলেন :
قالت طريفة ما تبقى دراهمسنا – وما بنا سرف فيها ولا خزق তরীফা বললো, থাকবেনা। আমাদের একটা দিরহামিও আমাদের তো অপচয় করার বা দান করার কিছুটা রইলো না।
আমাদের নিকট যা আছে তা ফুরিয়ে গেলেও আল্লাহ দেবেন। আমাদেরকে জীবিকা, এমন
লোকদের নিকট থেকে, যারা আমাদের অন্তৰ্গত নয়। আমরা তো নিজেরা নিজেদের জীবিকা नाऊा नरे।
উপর দিয়ে বয়ে যায় এবং শেষ পর্যন্ত চলে যায়।
কোন দিন যদি একত্র হয় আমাদের দিরহাম তাহলে আমরা এমন যে, আমাদের দিরহাম প্রতিযোগিতায় প্রবৃত্ত হয়ে এগিয়ে যায় কল্যাণকর কাজে।
আবু বকর ইব্ন আইয়াশ বলেন : একদা হাতিম তাঈকে জিজ্ঞেস করা হয়, আররে কি আপনার চাইতে অধিকতর বিদ্যান্যশীল কেউ আছেন? জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি আরবই আমার চেয়ে বড় দাতা। অতঃপর তিনি বলতে শুরু করেন, এক রাত্রে আমি আরবের এক এতীম বালকের অতিথি হলাম। এতীম বালকটির ছিল একশ ছাগল। সেখান থেকে সে আমার জন্য একটা বকরী জবাই করলো। এবং তা (পাক করে) আমার নিকট উপস্থিত করলো। বালকটি আমার নিকট বকরীর মগজ উপস্থিত করলে আমি তাকে বললাম-কতই না মজাদার এ মগজ। তিনি বলেন, এ ভাবে সে (এক এক করে বার বার) মগজ আনতে থাকে। অবশেষে যখন ভোর হলো সে একশ টা বকরীই জবাই করে ফেলেছে। তার কাছে আর একটিও নেই। হাতিমকে তখন জিজ্ঞেস করা হলো, তখন আপনি কী করলেন? তিনি বললেন : সব কিছু করেও কী করে আমি তার পূর্ণ শুকরিয়া আদায় করতে পারতাম? তিনি বললেন, যাই হোক আমার উৎকৃষ্ট উষ্ঠগুলোর মধ্য থেকে তাকে আমি একশ উত্নী দান করলাম।
মুহাম্মদ ইব্ন জাফর আল-খারাইতী তাঁর মাকারিমুল আখলাক গ্রন্থে তাঈ গোত্রের জনৈক বৃদ্ধার বরাতে বলেন, হাতিম। তাই এর মাতা আনতারা বিনতি আকীফ ইব্ন আমর ইব্ন ইমরাউল কায়েস বদ্যান্যতা-দানশীলতার কোন কিছুই বাদ দিতেন না। তার ভাইয়েরা তাকে বারণ করতো, তিনি তাদের বাধা মানতেন না। আর তিনি ছিলেন ধনাঢ্য মহিলা। ফলে তার লোকজন তাকে একটা ঘরে এক বছর বন্দী করে রাখে এবং সেখানে তাকে প্ৰাণে বঁাচার পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করে, যাতে তিনি তার বদান্যতা থেকে বিরত থাকেন। এক বছর পর তারা তাকে সেখান থেকে বের করে আনে। তাদের ধারণা ছিল হয়তো তিনি আগের অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর লোকজন তাঁর সম্পদ থেকে একখণ্ড রৌপ্য মহিলার নিকট সমর্পণ করে এবং বলে এগুলো ভোগ-ব্যবহার করবে। একদা হাওয়াযিন গোত্রের এক মহিলা তার নিকট আগমন করে। তিনি তখন নিজের সম্পদ লুকিয়ে রাখেন। আগন্তুক মহিলাটি তার নিকট যাঞো করে। তখন তিনি বলেন, সম্পদের এই রৌপ্য খণ্ডটি তুমি নিয়ে যাও। আল্লাহর কসম, আমার এমন ক্ষুধার অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, কোন প্রার্থীকে বিমুখ করবে না বলে আমি শপথ করেছি। তখন তিনি আবৃত্তি করতে শুরু করেনঃ
আমার জীবনের শপথ; ক্ষুধা আমাকে এমনই আঘাত করেছে যে, আমি শপথ করেছি।- জীবনে কোন ক্ষুধাতুরকে বিমুখ করবো না।
فقولا لهذا اللعی الیوم اع فنی – وان انت لم تفعلی فعضی الاصابعا তাই আজ তোমরা এই ভৎসনাকারীকে বলে আমাকে মাফ কর; আর তা না করলে আঙ্গুল কামড়াও।
তবে কি তোমরা বা তোমাদের মত নিবৃ কারীরা তোমাদের বোনকে ভৎসনা ছাড়া অন্য কিছু বলবে বলে কি আশা করা যায়?
আজ তোমরা যা দেখছ, তাতো আমার স্বভাব। তবে হে মোর মায়ের সন্তান! কিরূপে আমি আমার স্বভাব বিসর্জন দিতে পারি? হায়ছাম ইব্ন আব্দী আব্দীর বরাতে বলেন? আমি হাতিমের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি নিজেকে ভৎসনা করছিলেন। আমাকে বললেন, বৎস! আমি মনে মনে তিনটি অভ্যাসের প্রতিজ্ঞা করছি। আল্লাহর কসম, আমি প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে কোন সন্দেহজনক আচরণ করিনি কখনো। আমার নিকট যে আমানত রাখা হয়েছে, তা অবশ্যই ফেরৎ দান করেছি এবং আমি কোন দিন কারো মনে কষ্ট দেইনি। আবু বকর আল-খারাইতী বলেন : আলী ইব্ন হারব। আবু হুরাইরার আযাদকৃত গেলাম মুহাররার থেকে বর্ণনা করেন আবদুল কায়েস গোত্রের একদল লোক হাতিম তাঈর কবরের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে অবতরণ করে। ঐ দলের আবুল খায়বারী নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাঁর কবরে পায়ের খোচা দিয়ে বলেন : হে আবু জাদ! আমাদের মেহমানদারী করুন। তখন জনৈক সঙ্গী তাকে বলে, তুমি কি হাডিডর সঙ্গে কথা বলছি তাতো পচে-গলে গেছে। তারপর রাত হলে তারা সকলে ঘুমিয়ে পড়লো। উক্ত আবুল খায়বারী ব্যাকুল হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন – হে আমার
সম্প্রদায়! নিজ নিজ সওয়ারী গ্ৰহণ করা। কারণ, হাতিম স্বপ্নে আমার নিকট আগমন করে আমাকে কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়েছেন। আমি তা মুখস্থ করেছি। তিনি বলেন :
ابا الخیبری وانت امر و ظسوم العشیرة شتامها হে আবুল খায়বারী! তুমি তো এমন এক ব্যক্তি যে স্বজনের প্রতি অবিচার করে ও তাদেরকে গালমন্দ করে।
তুমি আগমন করেছ সঙ্গী সাথী নিয়ে কামনা কর তুমি আতিথেতায় কবরবাসীর নিকট, যার মাথার খুলিতে মারিচা ধরে গেছে। … . .
اتبغی لی الذنب عند المبیات و حوللث طی و العامها তুমি কি কামনা করি আমার জন্য পাপ রাত্রি যাপনকারীর নিদ্ৰা কালে। অথচ তোমার নিকট রয়েছে তাঈ গোত্র আর তার পশুকুল।
و انا لنشبع اضیافنا و تاتی الطی فنعتامها আমরা অবশ্যই তৃপ্ত করবো। আমাদের অতিথিদেরকে রজনীতে আগমন ঘটবে আমাদের উস্ত্রীর এবং তা দোহন করবো।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন হঠাৎ করে উক্তি কারীর উষ্ঠী আহত হয়ে আগমন করলে তারা তাকে যাবাই করে এবং তৃপ্ত হয়ে খায়। তারা বলে, আল্লাহর কসম, হাতিম জীবিত আর মৃত অবস্থায় আমাদের মেহমানদারী করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, ভোরে সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের সঙ্গী-সাখী নিয়ে সওয়ার হয়ে গমন করে। তখন জনৈক ব্যক্তি সওয়ার হয়ে আসছিল এবং তাদেরকে উচু স্বরে আহবান করছিল। আর তার সাথে ছিল আরেকটি উট। তখন লোকটি বলে, তোমাদের মধ্যে কে আবুল খায়বারী; তিনি বললেন, আমি। লোকটি বললো, হাতিম রজনীতে স্বপ্নে আমার কাছে এসে বলেন যে, তিনি তোমার সঙ্গীদের তোমার উট দিয়ে মেহমানাদারী করেছেন এবং তোমার নিকট এ উন্ট নিয়ে আসার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই হলো সে উট। তা নাও এবং এই বলে তাকে উটটি দিয়ে দিল।
আবদুল্লা ইব্ন জাদআন –এর কিছু বৃত্তান্ত তিনি আবদুল্লাহ ইব্ন জাদ আন ইব্ন আমর ইব্ন কাব। ইব্ন সাআদ ইব্ন তাইম ইব্ন মুররাহ, যিনি ছিলেন বনু তাইমের নেতা এবং তিনি ছিলেন আবু বকর সিদীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর চাচাতো ভাই। তিনি ছিলেন জাহিলী যুগের অন্যতম দাতা ও দয়ালু। জাহিলী যুগে যারা
ব্যাপার। তিনি আহার্য দান করতেন তীব্ৰ দারিদ্র্যাক্লিষ্ট ফকীর ব্যক্তিকে। তিনি এমনই দুষ্ট প্রকৃতির লোক ছিলেন যে, অনেক অপরাধ সংগঠন করেন। এর ফলে জাতি, বংশ-গোত্র পাড়া প্রতিবেশী সকলেই তাকে ঘৃণা আর নিন্দার চোখে দেখতো। সকলের ঘৃণা-নিন্দা আর বর্জনের মুখে একদিন তিনি বিচলিত হয়ে মক্কার গিরিপথে বেরিয়ে পড়েন। পর্বতের মধ্যে একটা গর্ত দেখে তিনি মনে করলেন, এতে ক্ষতিকর কিছু থাকতে পারে। তিনি সেখানে গেলেন এই আশায় যে, হয়তো সেখানে মারা গিয়ে জীবন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবেন। তিনি গর্তের নিকট গমন করলে একটা আযদাহা তার দিকে ছুটে আসে। আযদাহাটি তাকে দংশন করতে উদ্যত হয়। তিনি তা থেকে দূরে সরে গিয়ে বরং তার উপর হামলা করতে উদ্যত হন। কিন্তু তিনি আযদাহাটির নিকট এসে দেখতে পেলেন যে, তা-তো স্বর্ণের আর তার চক্ষু মুক্তার। তিনি তা ভেঙ্গে চুরে গর্তে নিয়ে যান। গর্তে প্ৰবেশ করে দেখেন যে, সেখানে রয়েছে। জুরহাম গোত্রের শাসকদের কবর। তাদের মধ্যে হারিস ইব্ন মুযাযও রয়েছেন, যিনি দীর্ঘ দিন অন্তর্ধানে ছিলেন। ফলে তিনি কোথায় কি অবস্থায় আছেন, কিছুই জানা যায় না। তিনি তাদের মাথার দিকে একটা ফলক দেখতে পান, যাতে তাদের মৃত্যুর তারিখ লেখা রয়েছে। সে ফলকে তাদের রাজত্বকালও লেখা আছে। লাশ গুলোর নিকট রয়েছে। মণি-মুক্তা সোনা-রুপা অনেক কিছু। তিনি সেখান থেকে নিজের প্রয়োজন পরিমাণ গ্ৰহণ করে বেরিয়ে পড়েন। গর্তের দরজা সম্পর্কেও তিনি জ্ঞান লাভ করলেন। জাতির লোকজনের নিকট ফিরে এসে তিনি তাদেরকে সে সব থেকে দান করেন। ফলে তারা তাকে ভালোবাসে নেতা বানায় আর তিনিও জাতির লোকজনকে আহার করান। হাতের সম্পদ ফুরিয়ে গেলে তিনি আবার সে গর্তে গমন করে প্রয়োজন পরিমাণ নিয়ে আসতেন। যাদের নিকট থেকে আমরা এ কাহিনী উল্লেখ করছি, তাদের মধ্যে আছেন আবদুল মালিক ইব্ন হিশাম। তিনি কিতাবুত তীজান-এ এ কাহিনী উল্লেখ করেছেন। তার রচিত কিতাবের নাম হচ্ছে :
তাঁর একটা বড় পেয়ালা ছিল। আরোহী ব্যক্তি সওয়ারীর পৃষ্ঠে বসে এ পেয়ালায় আহার করতো। পেয়ালাটা এমনই বড় ছিল যে, তাতে একজন ছোটখাট মানুষ পতিত হলে ডুবে যেতো।
ইব্ন কুন্তাইবা প্রমুখ উল্লেখ করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন, আবদুল্লাহ ইব্ন জাদআন-এর ডেগছির ছায়ায় আমি আশ্রয় নিতাম। তা ছিল এক লিখিত দলীল- অর্থাৎ দুপুরের সময়। আবু জহল এর হত্যার হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীদেরকে বলেন : নিহত ব্যক্তিদের লাশের মধ্যে তোমরা তাকে খুঁজবে। হাটুতে আঘাতের চিহ্ন দ্বারা তোমরা তাকে চিনতে পারবে। কারণ, সে এবং আমি আবদুল্লাহ ইব্ন জাদ আন এর দস্তরখানে মল্ল যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলে সে পড়ে গিয়ে হাঁটুতে আঘাত পা এবং তা ভেঙ্গে
যায়। তার হাঁটুতে এখনো সে চিহ্ন বর্তমান রয়েছে। রাসূল (সা) যেমন বলেছেন, তাকে তেমনই পাওয়া যায়।
ঐতিহাসিকরা উল্লেখ করে না যে, আবদুল্লাহ ইব্ন জাদ আন খেজুর আর ছাতু খেতেন এবং দুধ পান করতেন। তিনি উমাইয়া ইবুন আবুছ ছালত এর এ উক্তি শ্রবণ করেন –
কথা আর তাদের কর্ম আমি দেখেছি, তাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত পেয়েছি। আমি বনু দাইয়্যানকে
লানত করে। অতঃপর জাদ আন পুত্র শাম দেশে দু হাজার উস্ত্র বোঝাই গম, মধু এবং ঘী প্রেরণ করে। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী কাবার পৃষ্ঠ থেকে ঘোষণা দেয়, ইব্ন জাদ আন-এর ডেকের দিকে তোমরা ছুটে এসো। এ প্রসঙ্গে উমাইয়্যা বলেন :
له داع بمكة مشمعلی – و آخر فوق لعبتها نیادی তার জন্য মক্কায় আছেন। একজন আহবানকারী মশালবাহী, অপরজন আছেন কাবার ছাদে, যিনি আহবান করেন। ཆ
الی رد اح من الشیزی ملا و ۳۰ لباب البر ایلبلاد بالشهاد আহবান জানায় দীর্ঘ সময় থেকে কালো কাষ্ঠ নির্মিত পূর্ণ পাত্ৰ পানে, জ্ঞানের দ্বার পানে, যা সাক্ষ্য দ্বারা তোমাকে জ্ঞানী করে।
এতসব কিছু সত্ত্বেও সহীহ মুসলিমে উল্লেখিত আছে যে, আয়েশা সিদ্দীকা (রা) বলেছেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, জাদআন পুত্ৰ আহার করাতেন এবং অতিথির মেহমানাদারী করতেন। এতে কি তার কোন উপকার হবে? কিয়ামতের দিন এসব কি তার কোন কাজে আসবে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, না সে তো কোন দিন একথা বলেনি-হে পালনকর্তা, কিয়ামতের দিন আমার অপরাধ ক্ষমা করে দেবে।