ত্রয়োবিংশ অধ্যায় – অরুন্ধতী–বিবাহ
মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–অনন্তর, দেবী অরুন্ধতী চন্দ্রভাগা নদীর তীরে তাপসারণ্যনামক সেই মহর্ষি-আশ্রমে বৃদ্ধি পাইতে লাগিলেন। ১
অরুন্ধতী, শুক্লপক্ষের শশিকলা ও জ্যোৎস্নার ন্যায় দিন দিন বাড়িতে লাগিলেন। ২
সতী অরূন্ধতী, পঞ্চমবর্ষে পদার্পণ করিলে চন্দ্রভাগা নদীকে এবং সেই তাপসারণ্যকে নিজ-গুণে পবিত্র করিতে লাগিলেন। ৩
তথায় অরুন্ধতীর বাল্যোচিত পবিত্র ক্রীড়াস্থান–মেধাতিথি-নিষেবিত মহাপুণ্য তীর্থ হইল। ৪।
আজও লোকে সেই তাপসারণ্যে চন্দ্রভাগা নদীর অরুন্ধতীতীর্থজলে স্নান করিলে বিষ্ণুপদ লাভ করে। ৫
সমস্ত কার্তিকমাস চন্দ্রভাগা নদীতে স্নান করিলে মানুষ, প্রথমতঃ বিষ্ণুগৃহে গমন করিয়া শেষে মুক্তি লাভ করে। ৬
যে ব্যক্তি মাঘ মাসের পূর্ণিমা ও অমাবস্যাতে এক একবার চন্দ্রভাগ নদীতে স্নান করিবে, তাহার বংশে কদাচ রাজযক্ষ্মা রোগ হয় না। ৭
সে ব্যক্তি, মৃত্যুর পর চন্দ্রলোকে গিয়া পশ্চাৎ বিষ্ণুলোকে গমন করে। তারপর পুণ্য ক্ষয় হইলে, ইহলোকে জন্মিয়া বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ হয়। ৮
চন্দ্রভাগাজল পান করিলে চন্দ্রলোকপ্রাপ্তি হয়; একবার যথাবিধি স্নান করিলেও অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়। ৯
একদা অরুন্ধতী চন্দ্রভাগজলে স্নান করিয়া পিতৃসমীপে বাল্যোচিত-ক্রীড়া করিতেছেন। ১০
ইত্যবসরে কমলাসন ব্রহ্মা, আকাশপথে যাইতে যাইতে তাহাকে দেখিতে পাইলেন। ১১
অনন্তর, লোকপিতামহ ভগবান্ ব্রহ্মা তথায় অবতীর্ণ হইয়া অরুন্ধতীকে উপদেশ দিবার উপযুক্ত সময় হইয়াছে দেখিলেন। ১২
অনন্তর ব্রহ্মা, মেধাতিথি প্রভৃতি মুনিগণ কর্তৃক পূজিত হইয়া সেই মহর্ষি মেধাতিথিকে বলিলেন। ১৩
ব্রহ্মা বলিলেন,–মুনিবর অরুন্ধতীকে উপদেশ দিবার সময় এই; অতএব ইহাকে সতীরমণীগণের সমীপে রাখ। ১৪
স্ত্রীলোককে স্ত্রীলোকেরই উপদেশ দেওয়া উচিত; কিন্তু তোমার এখানে ত কোন স্ত্রীলোক নাই। অতএব তুমি তোমার কন্যাকে বহুলা ও সাবিত্রীর নিকটে রাখ গিয়া। ১৫
মুনিবর। তোমার কন্যা তাহাদিগের দুই জনের সংসর্গ পাইলে অবিলম্বে মহাগুণ-সম্পত্তিশালিনী হইবে। তখন মেধাতিথি, পরমাত্মা ব্রহ্মার কথা শুনিয়া তাহাকে যে আজ্ঞা বলিলেন। ১৬-১৭
অনন্তর সুরশ্রেষ্ঠ ব্ৰহ্মা গমন করিলে, মেধাতিথি মুনি, কন্যাকে লইয়া তৎক্ষণাৎ সূৰ্য্যলোকে গমন করিলেন। ১৮
তথায় সূর্যমণ্ডলমধ্যগতা পদ্মাসনে আসীনা অক্ষমালা-ধারিণী কল্যাণী সাবিত্রীদেবীকে দেখিতে পাইলেন। ১৯
তখন বহুলা মানসপৰ্বতের সানুদেশে গমন করিয়াছিলেন, এখন মুনি দৃষ্টা সাবিত্রীও সূৰ্য্যমণ্ডল হইতে নিঃসৃত হইয়া তথায় চলিলেন, মুনিও সঙ্গে সঙ্গে যাইলেন। ২০
সেই মানসপৰ্বতে, সাবিত্রী, গায়ত্রী, বহুলা, সরস্বতী এবং চারুপদা এই পাঁচজন, পরস্পরে ধৰ্ম্মোপাখ্যানের সদালাপ করিয়া লোকহিতাভিলাষে পুনরায় স্বস্থানে গমন করেন। ২১
তপোধন মেধাতিথি, সৰ্ব্বলোকের জননীস্বরূপা তাহাদিগের সকলকে একত্র অবস্থিত দেখিয়া প্রত্যেককে পৃথক পৃথক প্রণাম করিলেন। ২৩
তাহাদিগকে একত্ৰ দেখিয়া বিস্ময়াপন্ন তপোধন, তাহাদিগকে সভয়ে এই মধুর কথা বলিলেন। ২৪
মা সাবিত্রী! মা বহুলে! এই আমার যশস্বিনী কন্যা; এক্ষণে ইহাকে উপদেশ দিবার এই সময়, তাই আমি এখানে আসিয়াছি। ২৫
ব্ৰহ্মা, আমার কন্যাকে আপনার নিকট উপদেশ লইতে বলিয়াছেন; তাই আমার কন্যা, আপনার কাছে আসিয়াছে। ২৬
যাহাতে আমার এই বালিকা সচ্চরিত্রা হয়, আপনারা দুইজনে ইহাকে সেইরূপ শিক্ষা দিন। মা! সাবিত্রি! মা! বহুলে! তোমাদিগের উভয়কে নমস্কার করি। ২৭
অনন্তর দেবী সাবিত্রী, বহুলার সহিত, মুনিবর মেধাতিথিকে এবং তাহার বালিকা তনয়াকে সস্মিতভাবে বলিলেন। ২৮
মুনিবর! ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর প্রাসাদেই আপনার কন্যা পূর্ব হইতেই সুচরিত্রা হইয়া রহিয়াছেন। ২৯
তবে, ব্রহ্মার আদেশ বলিয়া আমি এবং মহাসতী বহুলা–আমরা উভয়ে আপনার কন্যাকে এইরূপ শিক্ষা দিব, যাহাতে তিনি অবিলম্বেই আরও ধীর হন। ৩০
এই অরুন্ধতী, পূর্বজন্মে ব্ৰহ্মার কন্যা ছিলেন; আপনার তপোবলে নারায়ণের অনুগ্রহে ইনি আপনার কন্যা হইয়াছেন। ৩১
ইনি আপনার কুল পবিত্র করিয়াছেন, যশ বাড়াইবেন, ইনি সমস্ত জগতের এবং দেবগণের কেবল মঙ্গল সম্পাদনই করিবেন। ৩২
মার্কণ্ডেয় বলিলেন;–অনন্তর, মুনিবর মেধাতিথি তাহাদিগের নিকট বিদায় গ্রহণ ও তাহাদিগকে প্রণামপূর্বক কন্যা অরুন্ধতীকে আশ্বাস দিয়া স্বস্থানে গমন করিলেন। ৩৩
মুনিবর, চলিয়া গেলে অরুন্ধতী মাতৃ-সমা তাহাদিগের উভয়ের সহ বাস ও যত্ন পালনে, নির্ভয় হইয়া থাকিলেন এবং আনন্দিত হইতে লাগিলেন। ৩৪
অরুন্ধতী, কখন, রাত্রিতে সাবিত্রীসহ সূৰ্য্যগৃহে গমন করেন, কখন বা বহুলার সহিত ইন্দ্রালয়ে গমন করেন। ৩৫
দেবী অরুন্ধতী, তাহাদিগের সহিত এইরূপ বিহার করত দৈব পরিমাণে সপ্ত বৎসর অতিবাহিত করিলেন। ৩৬
সতী অরুন্ধতী তাঁহাদিগের উভয়ের নিকট স্ত্রীলোকের কর্তব্যকাৰ্য্য বিষয়ে উপদেশ পাইয়া অবিলম্বে সমস্ত বুঝিলেন; তখন তিনি সাবিত্রী ও বহুলা হইতেও শ্রেষ্ঠা হইলেন। ৩৭
অনন্তর, যথাযোগ্য কাল প্রাপ্ত হইলে, কমলিনীকুলের শোভার ন্যায় তাহার সুন্দর যৌবন সঞ্চার হইল। ৩৮
এক দিন, উদ্ভিন্ন-যৌবনা অরুন্ধতী মানস পৰ্ব্বতে একাকী বিচরণ করিতে করিতে মনোহর তেজস্বী বসিষ্ঠ মুনিকে দেখিতে পাইলেন। ৩৯
সেই সতী, ব্রহ্ম-শ্ৰীসম্পন্ন নবসূৰ্য-সন্নিভ চারুরূপধারী বসিষ্ঠকে দেখিবামাত্র কামভাবে ইচ্ছা করিলেন। ৪০
অনন্তর বসিষ্ঠ ও বরবৰ্ণিনী অরুন্ধতীকে দেখিবামাত্র মদনাকুল হইয়া বার বার তাহাকে দেখিতে লাগিলেন। ৪১
হে দ্বিজবরগণ! তাহাদিগের পরস্পরের দর্শনে, সামান্য লোকের ন্যায় মর্যাদা শূন্যভাবে তাহাদিগেরও পরস্পরের অত্যন্ত কাম বৃদ্ধি হইল। ৪২
অনন্তর, মেধাতিথিনন্দিনী, ধৈৰ্য্য অবলম্বন-পূর্বক আত্মাকে এবং মদনো দ্বিগ্ন হৃদয়কে প্রকৃতিস্থ করিলেন। মহাতেজা বসিষ্ঠও ধৈৰ্য্যাবলম্বনপূর্বক আপনার মদনোন্মথিত চিত্তকে প্রশমিত করিলেন। ৪৩-৪৪
অনন্তর, দেবী অরুন্ধতী মুনি-সন্নিধান ত্যাগ করিয়া, নিজ কামোদ্বেগের নিন্দা করত সাবিত্রী সমীপে গমন করিতে লাগিলেন। ৪৫
“হায়! আমি সতীত্ব হারাইলাম” এই চিন্তা সেই মহাসতীর মনে নিরন্তর উদিত হইতে লাগিল। ৪৬
তাহাতে তিনি সাতিশয় মনোদুঃখে কাতর হইলেন। মনোদুঃখে তাঁহার মুখ মলিন, অঙ্গ সকল স্নান এবং গতি স্খলিত হইতে লাগিল। ৪৭
নিজ চিত্তকে নিন্দা করত এইরূপ ভাবিলেন;–সতীগণের মর্যাদা, মৃণাল সূত্রের ন্যায় সূক্ষ্ম এবং বুঝি ক্ষণকাল বায়ুর ভারও সহিতে পারে না; তাই তাহা অল্প চাঞ্চল্যেই বিনষ্ট হয়। ৪৮
ইহাই যে সতীধৰ্ম্মের সারোদ্ধার, ব্রতচারিণী সাবিত্রী স্ত্রীধর্ম অধ্যয়ন করাইয়া আমাকে ইহা বলিয়াছেন। ৪৯
হায়, আমি আজ পরপুরুষের প্রতি অভিলাষ করিয়া সেই ধর্ম লোপ করিলাম। ৫০
হায়, আমার ইহ পরকালের কি হইবে? মেধাতিথিনন্দিনী এই রূপ চিন্তা করত দুঃখার্তা হইয়া দেবী বহুলা ও সাবিত্রীর নিকটে উপস্থিত হইলেন। ৫১
সাবিত্রী অরুন্ধতী সতীকে, তথাবিধ মলিনমুখী দেখিয়া ধ্যান-যোগ অবলম্বনে সমুদয় জানিতে পারিলেন। ৫২।
অনন্তর সর্বজ্ঞা দিব্যদর্শিনী সাবিত্রী, বসিষ্ঠ অরুন্ধতীর পরস্পর-দর্শন, তাঁহাদিগের উভয়ের অতিদুঃসহ কামোদ্রেক এবং অরুন্ধতীর মালিন্যের নিদান চিন্তা–সকল ব্যাপারই দিব্য-জ্ঞান-বলে জানিতে পারিলেন। ৫৩-৫৪
অনন্তর, ব্রতচারিণী মহাদেবী সাবিত্রী মেধাতিথি-তনয়ার মস্তকে হস্ত স্থাপন করিয়া এই কথা বলিলেন। ৫৫
বৎস! সূৰ্য-কিরণ-পরিতপ্ত ছিন্নমূল কমলের ন্যায় তোমার মুখমণ্ডল আজি এমন বিবর্ণ হইল কেন? ৫৬
হে গুণবতী প্রধানে! বিরল-নীল-জলদাবলি সংবৃত চন্দ্রমণ্ডলের ন্যায় তোমার শরীর এত ম্লান হইল কেন? ৫৭
ভদ্রে! তোমার মন যেন চিন্তাকুল বোধ হইতেছে, যদি গোপনীয় না হয়, তাহা হইলে তুমি স্বীয় দুঃখকারণ আমার নিকট ব্যক্ত কর। ৫৮
মার্কণ্ডেয় বলিলেন;–অনন্তর, অরুন্ধতী, এইরূপে জিজ্ঞাসিত হইয়াও লজ্জায় অধোবদনা হইয়া রহিলেন। মাতৃতুল্য গুরুজন সাবিত্রীর নিকট কিছুই বলিতে পারিলেন না। ৫৯
যখন মেধাতিথি-নন্দিনী কিছুই বলিলেন না, তখন তপস্বিনী সাবিত্রী স্বয়ং সেই সকল কথা প্রকাশ করিয়া বলিতে লাগিলেন। ৬০
বৎসে! তুমি যে সূৰ্যসন্নিভ ঋষিকে অবলোকন করিয়াছ, তিনি ব্রহ্মার পুত্র বসিষ্ঠ, তিনিই তোমার স্বামী হইবেন। ৬১
তোমার এবং বসিষ্ঠের পরস্পর দাম্পত্য-বন্ধন বিধাতা পূর্ব হইতেই স্থির করিয়া রাখিয়াছেন; সুতরাং বসিষ্ঠকে দেখাতে সতীত্ব-লোপ হয় নাই। ৬২
বৎসে! তাহাকে দেখিয়া তোমার মনে যে কামোদ্রেক হইয়াছে, তাহাতেও দোষ নাই, অতএব মনোদুঃখ ত্যাগ কর। ৬৩
শোভনে! তুমি পূর্বজন্মে কঠোর তপস্যা করিয়া বসিষ্ঠকেই পতিভাবে প্রার্থনা করিয়াছিলে, এই জন্যই তিনি তোমার প্রতি কামভাবাপন্ন হইয়াছেন। ৬৪
বৎসে! পূৰ্বে তুমি যেরূপ বসিষ্ঠকে পতিত্বে বরণ করিয়াছিলে এবং তথায় যে ভাবে নিরন্তর তপস্যা করিয়াছিলে তৎসমস্ত শ্রবণ কর। ৬৫
মার্কণ্ডেয় বলিলেন;–সাবিত্রী এই কথা বলিয়া সন্ধ্যার উৎপত্তি, তিনি যে উদ্দেশে চন্দ্রভাগ পৰ্বতে তপস্যা কারন তাহা, বিধাতার বচনানুসারে সন্ধ্যাকে বসিষ্ঠের ব্রহ্মচারিরূপে তপস্যা শিক্ষা দান, তদুপদেশে সন্ধ্যার কঠোর তপস্যা, ভগবান বিষ্ণু প্রসন্ন হইয়া যেরূপে সন্ধার প্রত্যক্ষ গোচর হন তাহা, সন্ধ্যাকে বিষ্ণুর বরদান, মর্যাদা স্থাপন, উপদেশক বসিষ্ঠকে পরজন্মে স্বামী করিতে সন্ধ্যার অভিলাষ, মেধাতিথির যজ্ঞানলে তাঁহার দেহত্যাগ এবং মেধাতিথির কন্যারূপে তাঁহার উৎপত্তি–অরুন্ধতীকে এ সমস্ত কথাই সুবিস্তারে যথাক্রমে বহুলার সহিত বলিলেন। ৬৬-৭০
অনন্তর, অরুন্ধতী, সাবিত্রীর নিকট সেই কথা ও পূর্বজন্মবৃত্তান্ত শ্রবণে “ইনি আমার মনোগত সকল কথাই জানিতে পারিয়াছেন” ভাবিয়া অত্যন্ত লজ্জাবশতঃ সাতিশয় অধোমুখী হইলেন। আর সাবিত্রীর কথায় তিনি জাতিস্মর হইলেন। ৭১-৭২
তখন অরুন্ধতী সতী সেই রূপ অধোমুখে থাকিয়াই পূর্বজন্মে যাহা হইয়াছিল, তৎসমস্তই দিব্য জ্ঞানবলে স্মরণ করিলেন। ৭৩
বিষ্ণুর প্রসাদে পূর্বকালে তিনি দিব্য-দর্শিনী হন, বালকভাব প্রযুক্ত দিব্য-দর্শিত্ব প্রচ্ছন্ন ছিল। ৭৪
এখন আবার সাবিত্রীর কথায় পূর্বজন্মবৃত্তান্ত স্মরণ হওয়াতে তৎসমস্ত যেন তাঁহার প্রত্যক্ষবৎ বোধ হইতে লাগিল এবং তিনি সমুদয় পূর্ব-জ্ঞান প্রাপ্ত হইলেন। ৭৫
অরুন্ধতী দেবী পূর্বজন্মের বিষ্ণুদত্ত জ্ঞান পাইয়া “আমি এই বসিষ্ঠকে পূর্বজন্মে মনে মনে পতিত্বে বরণ করিয়াছি” আনন্দ সহকারে স্বয়ং ইহা জানিতে পারিলেন। ৭৬
বসিষ্ঠ দর্শনে কামোদ্রেক হওয়াতে সতীত্ব নাশ হইল বলিয়া পূর্বে মনে মনে যে আতঙ্ক হইয়াছিল, মেধাতিথি-নন্দিনী, তখন আপনা হইতেই তাহা পরিত্যাগ করিলেন। ৭৭-৭৮
অনন্তর, সাবিত্রী, অরুন্ধতী সতীকে চিন্তাশূন্য দেখিয়া তাহার সহিত সূৰ্যভবনে গমন করিলেন। ৭৯
সতী-শ্ৰেষ্ঠা সর্বজ্ঞা সাবিত্রী, অরুন্ধতীকে সূৰ্য-ভবনে রাখিয়া ব্ৰহ্ম-সদনে গমন করিলেন। ৮০
সাবিত্রী ব্রহ্মাকে প্রণাম করিবামাত্র তৎকর্তৃক জিজ্ঞাসিত হইয়া, সেই অমিত-তেজা সুরশ্রেষ্ঠকে বলিলেন-হে ভগবন। জগদীশ্বর! অরুন্ধতী সতী, মানস পৰ্বতের সানুদেশে আপনার পুত্র বসিষ্ঠকে দেখিয়াছেন। ৮১-৮২
প্রজাপতে! তাহাদিগের পরস্পরের সন্দর্শনে পরস্পরের সাতিশয় কামোদ্রেক হয় এবং পরস্পরের প্রতি পরস্পরে অভিলাষী হন। ৮৩
অনন্তর, ধৈর্য্যবলে মদনবিকার প্রশমিত করিয়া অসৎকার্য আচরণ বোধে অত্যন্ত দুঃখিত, অন্যমনস্ক ও লজ্জিত ভাবে স্ব স্ব স্থানে গমন করেন। ৮৪
সুরজ্যেষ্ঠ! এই ত ব্যাপার; এখন পরিণামে যাহা শুভ ফলপ্রদ হয়, লোক-হিতাভিলাষে তাহা সম্পাদন করুন। ৮৫
নিখিল জগদগুরু ব্রহ্মা, সাবিত্রীর এই কথা শুনিয়া দিব্যজ্ঞানবলে, ভাবী কার্যের ফলাফল দর্শন করিলেন। ৮৬
লোকপিতামহ ব্রহ্মা, মনে মনে বলিলেন, “বসিষ্ঠ অরুন্ধতীর বিবাহ সময় এই ত উপস্থিত। ৮৭
অতএব লোকহিতার্থে তাহা সম্পাদনের জন্য আমি তথায় গমন করি”; মনে মনে ইহা নিশ্চয় করিয়া যথায় বসিষ্ট-অরুন্ধতীর পরস্পরে দর্শন হইয়াছিল, সাবিত্রী-সমভিব্যাহারে সেই মানসপৰ্বত-সানুদেশে গমন করিলেন। ৮৮-৮৯
পিতামহ তথায় গমন করিলে, বৃষধ্বজ মহাদেব, নন্দি-ভৃঙ্গি-প্রভৃতি অনুচরগণ সমভিব্যাহারে তথায় আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ৯০
ব্ৰহ্মা কর্তৃক ভক্তিভাবে চিন্তিত হইয়া শঙ্খ-চক্র-গদাধর জগদীশ্বর বাসুদেবও ব্রহ্মা এবং শিব যথায় অবস্থিত ছিলেন, তথায় স্বয়ং আসিয়া উপস্থিত হইলেন। অনন্তর, জগৎপ্রভু ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর–মেধাতিথির নিকট নারদকে দূত পাঠাইলেন। ৯১-৯২।
তাহারা বলিলেন, নারদ! তুমি সত্বর চন্দ্রভাগ পৰ্ব্বতে যাও; ঐ পব্বতের উপত্যকা ভূমিতে মহর্ষি মেধাতিথি বাস করেন। ১৩
আমাদিগের বাক্যে তুমি যথাসময়ে তাহাকে এখানে আনয়ন কর, অর্থাৎ তাহাকে সঙ্গে লইয়া সত্বর তুমি এখানে ফিরিয়া আইস। ৯৪
নারদও, ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের কথাক্রমে, মহাকাৰ্য সিদ্ধির জন্য মেধা তিথিকে আনিতে সত্বর গমন করিলেন। ৯৫
সেই দেব-ত্রয়ের কথানুসারে নারদ, মেধাতিথির সহিত সম্ভাষণপূর্বক তাঁহাকে সঙ্গে লইয়া মানস পর্বতে গমন করিলেন। ১৬
এদিকে ইন্দ্রাদি দেবগণ, ঋষি-তপস্বি-গণ, আর সাধ্য, বিদ্যাধর, যক্ষ, গন্ধৰ্ব্ব, সমস্ত দেবপত্নী, দেবগণের অনুচরবৃন্দ এবং অন্যান্য প্রাণিগণ সকলে মানস পৰ্বত প্রস্থে গমন করিলেন। ৯৭-৯৮
এইরূপে তথায় দেবগণের সভা হইলে কমলাসন ব্রহ্মা, মেধাতিথিকে আদেশ করত এই কথা বলিলেন—মেধাতিথি! এই দেবসভামধ্যে ব্রাহ্ম বিবাহ বিধি-অনুসারে তোমার ব্রতচারিণী কন্যা অরুন্ধতীকে বসিষ্ঠ-হস্তে সম্প্রদান কর। ৯৯-১০০
বসিষ্ঠ-অরুন্ধতীর দাম্পত্য-বন্ধন, আমি পূৰ্বেই স্থির করিয়াছি; আর এই সুসঙ্গত কার্য নারায়ণেরও অনুমোদিত। ১০১
এইরূপ করিলে তোমার বংশের বড়ই যশ হইবে এবং নিখিল জগতের হিতসাধন হইবে; অতএব সম্প্রদান কর, আর বিলম্ব করিও না। ১০২।
অনন্তর মেধাতিথি ঋষি, ব্ৰহ্মার কথা শুনিয়া অত্যন্ত আনন্দসহকারে সেই সুরশ্রেষ্ঠদিগকে প্রণামপূর্বক “যে আজ্ঞা” বলিলেন। ১০৩
মেধাতিথি তাঁহাদিগের, বচনানুসারে কন্যা অরুন্ধতীকে লইয়া দেবগণ সমভিব্যাহারে ধ্যানস্থ বসিষ্ঠের সমীপবর্তী হইলেন। ১০৪
দেবগণপরিবৃত মেধাতিথি মুনি, সমীপে গিয়া ধৰ্মার্থ-কাম-মোক্ষ–এই চতুৰ্বগের প্রতি পৃথক পৃথক ভাবে অনুরক্ত জ্বলন্ত অনল-সন্নিভ, ব্রাহ্মণ্য শোভা-সমুজ্জ্বল নবোদিত দিবাকরের ন্যায় সাতিশয় তেজস্বী মহর্ষি বসিষ্ঠকে মানস পর্বতের কন্দরে আসীন দেখিলেন। ১০৫-১০৭
অনন্তর, অরুন্ধতী-পিতা মুনিবর মেধাতিথি, তনয় অরুন্ধতীকে অগ্রে করিয়া সংযতচিত্ত বসিকে বলিলেন-হে ভগবন ব্ৰহ্মনন্দন! আমি ব্রাহ্মণ বিবাহ বিধি অনুসারে আপনাকে এই ব্রতচারিণী স্বীয় কন্যাকে দান করিলাম, গ্রহণ করুন। ১০৮
ব্ৰহ্মন। আপনি আপন ইচ্ছাক্রমে যে যে আশ্রমে বাস করিবেন, এই পতিব্ৰতা সুন্দরী কন্যা তথায় তথায় আপনার প্রতি ভক্তিমতী ছায়ার ন্যায় অনুগত ও সমান ব্ৰত-চারিণী হইয়া আপনার শুশ্রূষা করিবে। ১০৯-১১০
মার্কণ্ডেয় বলিলেন,–বসিষ্ঠ, মেধাতিথি মুনির এই কথা শুনিয়া এবং ব্ৰহ্মা বিষ্ণু-মহেশ্বর প্রভৃতি দেবগণ সমাগত হইয়াছেন দেখিয়া “এই কাৰ্য্য অবশ্যম্ভাবী” দিব্য-জ্ঞানবলে ইহা নিশ্চয় করিলেন। ১১১-১২
অনন্তর ব্রহ্মার সম্মতিক্রমে সেই মেধাতিথি-নন্দিনীকে গ্রহণ করিয়া ‘বাঢ়ং’ অর্থাৎ ‘আচ্ছা গ্রহণ করিলাম’ বলিলেন। ১১৩
মহাত্মা বসিষ্ঠ পাণিগ্রহণ করিলেই সতী অরুন্ধতী, পতি-বসিষ্ঠের চরণযুগলে দৃষ্টি স্থাপন করিলেন। ১১৪
অনন্তর, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর এবং অন্যান্য দেবগণ, বসিষ্ঠ-অরুন্ধতীকে বিবাহবিধি অনুসারে বিবিধ উৎসবে আমোদিত করিতে লাগিলেন। ১১৫
সাবিত্রী প্রভৃতি দেবীগণ, ইন্দ্রাদি দেবগণ এবং দক্ষ কশ্যপ প্রভৃতি অতি তপস্বী মুনিগণ, ব্রহ্মার কথানুসারে তদীয় পুত্র বসিষ্ঠকে জটাবল্কল পরিধান, চর্ম সমস্ত উন্মোচনপূর্বক মন্দাকিনী জলে স্নান করাইয়া সেই বসিষ্ঠ ও অরুন্ধতী সতীকে সুবর্ণময় নানাবিধ মনোহর দিব্যালঙ্কারে অলঙ্কৃত করিলেন। ১১৬-১৮
মুনিগণ, তাহাদিগের উভয়কে ভূষিত করিয়া সাজসজ্জাদি সমাধা করিলে ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর, বসিষ্ঠ অরুন্ধতীর বিবাহাবভৃথ (বিবাহান্তে স্নান) করাইলেন। ১১৯
সৰ্ব্বতীর্থ জল সুবর্ণকলসে স্থাপন করিয়া গায়ত্রী ‘দ্রুপদা’ প্রভৃতি আশীর্বাদকর মন্ত্র পাঠ করত স্বয়ং ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর, তাহাদিগের উভয়কে স্নান করান। ১২০-২১
অনন্তর, মহর্ষিগণ, দেবর্ষিগণ–সকলে, উত্তম স্বরে উচ্চারিত ঋগ-যজুঃ-সাম বেদীয় মন্ত্রাবলী পাঠ করত গঙ্গা প্রভৃতি নদীজল দ্বারা বারংবার তাহাদিগের শান্তি বিধান করিলেন। ১২২
ব্ৰহ্মা, অব্যাহত-গতি ত্রিভুবনসঞ্চারী সূর্যের ন্যায় তেজস্বী একখানি বিমান ও জলপূর্ণ কমণ্ডলু তাহাদিগের যৌতুক দিলেন। ১২৩
বিষ্ণু সকল দেবতাগণের ঊর্ধ্বে মরীচি প্রভৃতির নিকটে উত্তম দুর্লভস্থান তাহাদিগকে যৌতুক দিলেন। ১২৪
মহেশ্বর, তাহাদিগকে সপ্তকল্পপৰ্যন্ত বাঁচিবার বর দিলেন। ১২৫
অদিতি, ব্ৰহ্মনির্মিত স্বীয় কুণ্ডলযুগল, কর্ণ হইতে উন্মোচনপূর্বক মেধাতিথি নন্দিনীকে দিলেন। ১২৬
তাঁহাকে সাবিত্রী পাতিব্ৰত্য, বহুলা বহু-পুত্রসম্পন্নতা, আর ইন্দ্র ও কুবের বহুতর ধনরত্নাদি দান করিলেন। ১২৭
অন্যান্য দেবদেবী মুনিগণ–যাহার তথায় আসিয়াছিলেন, তাঁহারা সকলেই প্রত্যেকে বসিষ্ঠ-অরুন্ধতীকে এইরূপে যথাযোগ্য যৌতুক প্রদান করিলেন। ১২৮
বসিষ্ঠ, স্বর্ণময় সেই মানস পৰ্ব্বতে এইরূপে যথাবিধি অরুন্ধতীকে বিবাহ করিয়া তিনি এবং তাহার পত্নী উভয়েই আনন্দিত হইলেন। ১২৯
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বরের করতল বিগলিত বসিষ্ঠ-অরুন্ধতীর বিবাহাবভৃথ-জল ও শান্তিজল প্রথমে সেই মানসপৰ্বত-কন্দরে পতিত হয়, পরে তাহা আবার সপ্তধা বিভক্ত হইয়া মানসপৰ্বত হইতে হিমালয় পৰ্ব্বতের গুহা সানু ও সরোবরে পৃথক পৃথক ভাবে পতিত হইতে থাকে। ১৩০-৩১
তন্মধ্যে যে জল দেবভোগ্য শিপ্রসরোবরে পতিত হয়, তাহা হইতেই শিপ্রা নদীর উৎপত্তি; বিষ্ণু শিপ্রানদীকে ভূমণ্ডলে প্রেরণ করেন। ১৩২
যে জল মহাকৌষিক প্রপাতে পতিত হয়, তাহা হইতে কৌষিকীনদীর উৎপত্তি। ১৩৩
বিশ্বামিত্র এই নদীকে পৃথিবীতে অবতারিত করেন। ১৩৪
সে জল উমাক্ষেত্রে মহাকাল সরোবরে পতিত হয়, তাহাতে কাবেরী নবী মহাকাল সরোবর হইতে নিঃসৃত হয়। ১৩৫
হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্বে শিব-সমীপে যে জল পতিত হয়, তাহাতে এক নদীর উৎপত্তি হয়। ১৩৬
‘গোমত’ নামক শৈলক্ষণ্ড হইতে নিঃসৃত হওয়াতে তাহার নাম গোমতী। ১৩৭
পর্বতরাজ হিমালয়ের মৈনাক নামে আত্মসদৃশ পুত্র মেনকার গর্ভ হইতে যে সানুতে ভূমিষ্ঠ হইয়াছিল, তথায় যে জল পতিত হয়, তাহাতে দেবিকা নামে মহানদীর উৎপত্তি; মহাদেব ঐ নদীকে সাগরে প্রেরণ করেন। ১৩৮
“হংসাবতার” সমীপবর্তী গুহাতে যে জল পতিত হয়, তাহাতে ‘সরযূ’ নাম্নী পুণ্যতমা নদীর উৎপত্তি। ১৩৯
যে জল খাণ্ডব-বন-সন্নিধানে হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী গুহাতে “ইরা” হৃদের মধ্যে নিপাতিত হয়, তাহাতে মহানদী ইরাবতীর উৎপত্তি। ১৪০
দক্ষিণসমুদ্রগামিনী এই সমস্ত নদী মর্তবাসীদিগকে স্নান-পান-সেবনে জাহ্নবীর ন্যায় ফলদান করিয়া থাকেন। ১৪১
এই সমস্ত নদী ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষের নিদান এবং চিরকাল-স্থায়িনী। ১৪২
এই সপ্ত মহানদী দেবগণের সতত ভোগ্য। ১৪৩
সুরগণ সমীপে বসিষ্ঠ-অরুন্ধতীর বিবাহ কালে সদা পবিত্ৰম-সলিলা সপ্ত, নদীর এইরূপে উৎপত্তি হইল। ১৪৪
তখন বসিষ্ঠ, অরুন্ধতীকে এইরূপে বিবাহ করিয়া তাহার সহিত বিমান যোগে দেবদত্ত স্থানে গমন করিলেন। ১৪৫
মুনিবর বসিষ্ঠ, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের বচনানুসারে নিখিল ত্রিভুবনের লোকের হিতার্থে ঘুরিতে লাগিলেন। ১৪৬
যুগ-গুণানুরূপ শরীর বেশ ভাবাদি করিয়া সকলকে ধর্মকাৰ্য্যে তৎপর করত অপ্রমত্তভাবে প্রসন্নচিত্তে ত্রিলোক বিচরণ করেন। ১৪৭
বসিষ্ঠ, পূর্বকালে এইরূপে দেবগণের কথায় ভুবনহিতের জন্য অরুন্ধতীকে বিবাহ করেন। ১৪৮
যে ব্যক্তি, এই ধর্মসাধক উপাখ্যান নিত্য শ্রবণ করিবে, সে সৰ্বমঙ্গলযুক্ত চিরজীবী এবং ধনবান হইবে। ১৪৯
যে রমণী সৰ্ব্বদা এই অরুন্ধতী-উপাখ্যান শ্রবণ করিবে, সে ইহলোকে পতিব্রতা হইয়া পরলোকে স্বর্গ লাভ করিবে। ১৫০
সৰ্ব্বদা যশ, কীর্তি এবং পুণ্যবর্ধনকারী এই আখ্যানই পরম স্বস্ত্যয়ন ও পরম ধর্ম। ১৫১
ইহা বিবাহে শ্রবণ করাইলে স্ত্রীপুরুষের দীর্ঘজীবন, পুংসবনে শ্রবণ করাইলে পুত্রজন্ম, যাত্রাকালে শ্রবণ করাইলে কার্যসিদ্ধি আর শ্রাদ্ধে শ্রবণ করাইলে পিতৃলোকের প্রীতি হইয়া থাকে। ১৫২
যেরূপে অরুন্ধতী অতি পতিব্রতা ও মহাত্মা বসিষ্ঠের ভাৰ্য্যা হইলেন, তোমাদিগকে তৎসমস্তই এই বলিলাম। ১৫৩
অরুন্ধতী যাহার কন্যা, যেরূপে যথায় উৎপন্ন হন, ব্ৰহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের বচনে যেরূপে তিনি, বসিষ্ঠকে পতিভাবে বরণ করেন, পুণ্যজনক পাপনাশক আয়ুবর্ধন আরোগ্যকর গুহ্যতিগুহ্যতম সেই-সমস্ত কথাই আমি তোমাদিগকে বলিলাম। ১৫৪-৫৫
যে ব্যক্তি বিপ্র-সভামধ্যে অন্ততঃ একবারও এই পুণ্যপুঞ্জসাধন ও মঙ্গলকর ইতিহাস শ্রবণ করাইবে, সে পাপ-জাল বিমুক্ত হইয়া দেহান্তে পরলোকে মুনি গণের সাহায্য লাভপূর্বক অমরত্ব প্রাপ্ত হয়। ১৫৬
ত্রয়োবিংশ অধ্যায় সমাপ্ত। ২৩