২৩ অক্টোবর, শনিবার ১৯৭১
জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচন নিয়ে কদিন খবর কাগজের পৃষ্ঠা সরগরম। কতগুলো আসনে কতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করছে, তা বেশ ফলাও করে রোজ ছাপা হচ্ছে। কেউ কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছে।
ফকির বললেন, এরা তো নির্বাচিত হয়ে গেল, বাকিরাও হয়তো হবে। এরা কি কখনো ভেবে দেখেছে–এরপর এদের অদৃষ্টে কি আছে? শরীফ ভুরু কুচকে বলল, কি আছে?
কাফনের কাপড়, লোবান আর পঞ্চাশ টাকার একটা নোট।
আমি বললাম, পঞ্চাশ টাকার তো নয়, দশ টাকার নোট।
ওটা তো গ্রামের শান্তি কমিটির মেম্বারদের জন্য। হাজার হলেও এরা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি, এদের বেলায় দশ টাকা একটু কম হয়ে যায় না ? মর্যাদাহানিকরও বটে।
আজকাল শুনতে পাই মুক্তিযোদ্ধারা নাকি খুব বেশি খারাপ। শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান, মেম্বার, ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের একটা কাফনের কাপড়, এক প্যাকেট লোবান আর দশটা টাকাসহ একটা চিঠি পাঠিয়ে দেয়–যা খাবার ইচ্ছে হয়, ঐ দশ টাকায় খেয়ে নাও, তোমার দিন শেষ হয়ে আসছে।
আমি বললাম, এতগুলো বাঙালি মনোনয়নপত্র দাখিল করবে, আমি কিন্তু আশা করি নি।
ফকির বললেন, কেন আশা করেন নি ভাবী? সব বাঙানিই যে দেশপ্রেমিক নয়, সে তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি আমরা সবাই।নইলে রুমীর বন্ধু বদি যে সব্বার আগে দুপুরবেলা ধরা পড়েছিল, সে তো তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বাড়ি থেকে ধরা পড়েছিল। বন্ধুটি যে পাকিস্তানের দালাল ছিল, তাতে তো আর কোন সন্দেহ নেই। বদি দুপুরবেলা আরেক বাঙালি বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় ধরা পড়ল বলেই না পরবর্তীকালে এতবড় সর্বনাশ হল। তেমনি অনেক অযোগ্য-অকর্মা বাঙালি, যারা এতদিন কিছুই করতে পারে নি, তারা এই সুযোগে এসেম্বলি মেম্বার হতে পারছে।
শরীফ বলল, তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এতসব ক্যান্ডিডেট নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছে দেখে একটা সন্দেহও হচ্ছে। বেশির ভাগ জায়গাতেই বেয়নেটের গুঁতোর ভয় দেখিয়ে ক্যান্ডিডেট খাড়া করা হয়েছে, একটার বেশি পাওয়া যায় নি। তাই কনটেস্টও হয় নি। ক্লাসে একটাই মাত্র ছাত্র, কাজেই ফার্স্ট ক্লাস ফাস্ট।
কেন, বহু জায়গায় তো একের বেশিও মনোনয়নপত্র দাখিল হয়েছে।
মনে হয়, ওগুলো সব লোকের চোখে ধুলো দেবার জন্য বানানো খবর। আসলে একটাই যোগাড় হয়েছে অতি কষ্টে।