২৩। পুন্তের শহর
প্রবল মাথা যন্ত্রণার মধ্যে অগস্ত্যর জ্ঞান ফিরল। তার মুখের ফাঁকে কেউ ঢেলে দিচ্ছে এক তরল। সুমিষ্ট সেই তরলটি গলা বেয়ে নীচের দিকে নামার সময় অগস্ত্য বুঝল সে মৃত নয়। যে বা যারা তাদের দিকে বল্লম ছুঁড়েছিল তারা অগস্ত্যকে হত্যা করেনি, বরং তার শুশ্রষা করছে। অগস্ত্য কপালে চাপ ভাব অনুভব করল, মনে হয় কাপড়ের পটি বাঁধা আছে। চোখ দুটি অল্প খোলার পর কিছুই দেখতে পেল না সে, তার দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আছে।
কতক্ষণ ও সংজ্ঞাহীন হয়েছিল তা জানে না। এবার সে বুঝতে পারল তার হাত এবং পা বাঁধা। সঙ্গে সঙ্গে প্রবল চেষ্টায় হাতের বাঁধন খোলার জন্য ছটফট করতে লাগল সে। তখন তার কাঁধে কারোর হাত পড়ল। শান্ত স্বরে এক পুরুষ কণ্ঠ পরিষ্কার প্রাকৃত উচ্চারণে বলল, ‘শান্ত হও। শান্ত হও। কোনও ভয় নেই।’
সেই স্বরে এমনই আশ্বাসধ্বনি ছিল যা অগস্ত্যর ছটফটানি থামাল। সেই হাত জলে ভেজা নরম কাপড় দিয়ে অগস্ত্যের দু’চোখ একটু একটু করে মুছে দিল। অগস্ত্য এবারে সম্পূর্ণ রূপে চোখ খুলতে পারল। দেখল তার সামনে এক সৌম্যকান্তি যুবক বসে আছে, তার বয়স হয়তো অগস্ত্যরই সমান। যুবকের ঊর্ধাঙ্গ অনাবৃত, নিম্নাঙ্গ একটি সবুজ বর্ণের বস্ত্রে ঢাকা। যুবক দীর্ঘদেহী, তার গায়ের রঙ সোনালি ধানের শিষের মতো, তার ভ্রু দুটি গাঢ়, কর্ণদ্বয় মাথার দু’পাশে খাড়া হয়ে আছে। যুবকটির শরীরের গঠন অগস্ত্য এবং উপলের মতোই! অগস্ত্য অবাক হল। কিন্তু এই ভাবনা মনে উদয় হয়েই মিলিয়ে গেল। আকুল কণ্ঠে সে জানতে চাইল, ‘আমার সঙ্গীরা, আমার স্ত্রী কেমন আছেন? কোথায় তারা? তাদের কিছু হয়নি তো?’
যুবকটি বলল, ‘আপনার স্ত্রী অন্য একটি কক্ষে রয়েছেন, তিনি জ্ঞান না হারালেও তার বাম হাতে সামান্য আঘাত পেয়েছেন, চিকিৎসা চলছে। আর আপনার বাকি দুই সঙ্গী এই কক্ষেই রয়েছেন।’
যুবকের দৃষ্টি লক্ষ্য করে অগস্ত্য এবারে ঘরের অপর প্রান্তে তাকাল। সে এখন একটি মাঝারি আকৃতির কক্ষে রয়েছে। ঘরটি আকারে গোলাকার, বোঝা যায় মাটির তৈরি, উপরে শুকনো ডালপালার আচ্ছাদন। ঘরের মেঝে শুকনো পাতায় ঢাকা, তার উপরে শুয়ে আছে অগস্ত্য। সে এবারে উঠে বসল, অপর প্রান্তে দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে উপল এবং বাকারি। তাদেরও হাত এবং পা বাঁধা। তবে তাদের উভয়ের হাতেই একটি করে পাত্র। সেটিকে দু’হাতের তালুর মাঝে ধরে তা থেকে কিছু একটা পান করছে তারা।
বাকারির কপালে অগস্ত্যর মতো কাপড়ের পটি বাঁধা, তার এক অংশে রক্তের গোলাকার দাগ। বোঝা যায় সেও মাথায় আঘাত পেয়েছিল। উপলের অঙ্গে অজস্র ছোট এবং মাঝারি কাটাছেঁড়ার দাগ, সম্ভবত হাথোরেত থেকে অরণ্যের কোনও কন্টকাকীর্ণ গাছের উপরে পড়েছিল সে। অবশ্য তাতে তার কোনও প্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই, সে এক মুখ হাসি হেসে অগস্ত্যকে বলল, ‘কী ভাই? বেশ অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে রইলে যে। এখন কেমন বোধ করছ? এই পানীয়টা কিন্তু মোক্ষম, শুনলাম কোন বন্য হরিনীর দুধ থেকে তৈরি করে এটা, এমন জিনিস এ জীবনে আগে…’
উপলকে বাধা দিয়ে অধৈর্য স্বরে অগস্ত্য বলল, ‘ইরতেনসে কেমন আছে উপল?’
পাত্রে আরেকটি চুমুক দিয়ে শান্ত স্বরে বলল উপল, ‘হাথোরেত মাটিতে ভেঙে পড়ার পর থেকে ইরতেনসেনুর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। তবে ঋষভের মুখে তো শুনলেই যে ইরতেনসেনু ভালো আছে। চিন্তা কোরো না, এরা আমাদের ক্ষতিসাধন করবে না।’
তাহলে এই যুবকটির নাম ঋষভ। মিশরের এই দুর্গম, গহীন অরণ্যের মধ্যে থাকা পুরুষটির নাম কেন ভারতীয়দের মতো? ও প্রাকৃত ভাষায় কথাই বা কীভাবে বলছে? অগস্ত্যর এমন ভাবনার মাঝে ঋষভ বলল, ‘খুব আনন্দের বিষয় যে আপনার জ্ঞান ফিরে এসেছে। আপনার খবর আমি আপনার স্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেব। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনারা মিলিত হতে পারবেন। আমরা যাত্রা শুরু করব পুন্ত নগরীর উদ্দেশে।’
পুন্ত! তাহলে সত্যিই তারা সেই হারানো শহরের খোঁজ পেয়েছে! কিন্তু এখন এই মুহূর্তে তারা কোথায় রয়েছে? অগস্ত্য প্রশ্ন করল, ‘এখন আমরা পুন্তে নেই?’
সামান্য হেসে ঋষভ বলল, ‘না, নগরী থেকে বেশ কিছুটা দূরে আছি আমরা এখন। আমাদের একটি দল জঙ্গলে শিকারে এসেছিল। এখানে আমাদের কয়েকটি মাটির তৈরি ঘর আছে, শিকারে এসে প্রয়োজনে যাতে রাত্রিবাস করা যায়। এই ঘরটি তাদের মধ্যে একটি। তবে আজ আমরা এখানে রাত্রি কাটাব না। এবারে ফিরে যাব আমরা। আপনারাও আমাদের সঙ্গী হবেন এই যাত্রায়।’
‘আচ্ছা, আমাদের শুশ্রূষা করার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু এভাবে হাত পা বেঁধে রেখেছেন কেন?’
‘মাফ করবেন। যতক্ষণ না নগরীতে আমরা পৌঁছচ্ছি ততক্ষণ আপনাদের হাত এবং পা বাঁধাই থাকবে। আপনারা আগন্তুক। গত কয়েক শতাব্দীতে এই অরণ্যে পুন্তের অধিবাসী ছাড়া আর কোন মানুষের পা পড়েনি। আমরা এখনও আপনাদের সম্পূর্ণ রূপে বিশ্বাস করতে পারব না। যাত্রাকালীন আপনাদের সবার চোখও বাঁধা থাকবে।’
পুন্তের যাত্রাপথের সন্ধান তারা অগস্ত্যদের দিতে চায় না, তা বুঝল অগস্ত্য। যাই হোক, নগরীতে অন্তত পৌঁছনো সম্ভব হবে। কিন্তু তারা তো চাইলেই তাদের মেরে ফেলতে পারত। কিন্তু তা না করে তাদের চিকিৎসা করতে উদ্যত হল কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খানিকক্ষণ বাদে পেল সে। কিছুক্ষণ পর ঋষভ এবং তার কয়েকজন সাথী এসে অগস্ত্যদের চোখ বেঁধে ফেলল। তারপর তাদেরকে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে এসে তাদের কোন একটি যানে উঠিয়ে দিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই যানটি দুলকি চালে চলতে শুরু করল। যানটির গতি আর দোলা থেকে অগস্ত্যর মনে হল সেটি কোন পশুর দ্বারা টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অগস্ত্য তার ডান হাতে একটি নরম স্পর্শ পেল, সেই সঙ্গে তার নাকে ভেসে এল একটি গন্ধ। সুমিষ্ট এই গন্ধটি তার খুব চেনা।
‘ইরতেনসেনু!’ উত্তেজনায় চেঁচিয়ে উঠল অগস্ত্য।
চোখ বাঁধা অবস্থায় ইরতেনসেও অগস্ত্যর স্পর্শ পেয়ে আনন্দিত হয়ে উঠল। সে বলল, ‘তুমি ঠিক আছ? কোন ক্ষতি হয়নি তো?
‘না, মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম মনে হয়। কিন্তু এখন ঠিক আছি। তোমার কথা ঋষভের কাছে শুনেছিলাম।’
‘হ্যাঁ, তারা আমাকে নারীদের জন্য সংরক্ষিত অন্য একটি কক্ষে নিয়ে গিয়েছিল। আমার বাম হাতে চোট পেয়েছি। তবে তারা খুব ভালো চিকিৎসা করেছে। আমার দু’হাত বাঁধা নেই। ডানহাতটি একটি শক্ত কাপড় আর কিছু শুকনো ডাল দিয়ে বুকের সঙ্গে বেঁধে রাখা আছে।’
এবারে একটি গলা খাঁকারির আওয়াজ পেল অগস্ত্য। সেটি উপলের। সে শ্লেষ মেশানো কৌতুকের স্বরে বলল, ‘আর ইরতেনসেনু তুমি আমাদের খবর না নিতে চাইলেও জানিয়ে রাখি, তোমার স্বামীটির মতো আমি এবং বাকারিও এখনও বেঁচে আছি ভালোভাবেই। সামান্য চোট আঘাত যা লেগেছে তা ঠিক হয়ে যাবে।’
এই কথায় ইরতেনসেনু হয়তো সামান্য লজ্জিত হল, বিব্রতও বোধ করল, কিন্তু চোখ বাঁধা থাকায় অগস্ত্য তা দেখতে পেল না। সে এবারে জিজ্ঞাসা করল, ‘কিন্তু আমরা বেঁচে আছি কীভাবে? তারা তো চাইলেই আমাদের হত্যা করতে পারত।’
এর উত্তরে এবারে বাকারি মুখ খুলল। তার গলার স্বর শোনা গেল, ‘হাথোরেতকে আকাশে উড়তে দেখে পুন্তবাসী এই শিকারীর দল একইসঙ্গে কৌতূহলী এবং ভীত হয়ে পড়ে। তা অবশ্য স্বাভাবিকই। তারা আগে কখনও এমন কিছু দেখেনি। তাই তারা হাথোরেতকে লক্ষ করে বল্লম ছুঁড়তে শুরু করে। বেশ উঁচু থেকে পতিত হলেও অরণ্যের ঘন বৃক্ষরাজির জন্য আমরা কেউ একেবারে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়িনি, তা হলে আমাদের কেউই বাঁচতাম না। তুমি একটি বৃক্ষের শক্ত কাণ্ডে ধাক্কা খেয়ে জ্ঞান হারাও। আমারও কপালে আঘাত লাগলেও জ্ঞান হারাইনি। উপল পড়ে একটি কন্টকাকীর্ণ ঝোপের মধ্যে। ইরতেনসেনুর ভাগ্য সামান্য খারাপ থাকায় সে পড়ে একটি মাঝারি আকারের পাথরের উপরে।
‘তারপর?’
উপল এবারে বলল, ‘মাটিতে পড়ার সঙ্গে-সঙ্গেই আনুমানিক কুড়িজন নারী পুরুষ আমাদের ঘিরে ধরে। তাদের হাতে ছিল উদ্যত তির-ধনুক এবং বল্লম। তারা হয়তো আমাদের হত্যাই করত যদি না ইরতেনসে তাদের আটকাতো।
‘ইরতেনসেনু? কীভাবে?’
‘হাতে আঘাত পেয়েও তা সহ্য করে শান্ত স্বরে ইরতেনসেনু তাদের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। সে তার সঙ্গে থাকা ফারাও মেন্তুহোতেপের প্রহেলিকার প্যাপিরাসটি তাদের দেখায়। আমার সঙ্গে ফারাও হাতসেপসুতের রাজসংকেত সম্বলিত একটি সম্পুট ছিল। আমিও সেটি তাদের হাতে তুলে দিই।’
এবার ইরতেনসেনু বলল, ‘আমি তাদেরকে বোঝাই যে কোন ক্ষতিসাধন করতে আমরা আসিনি। মেন্তুহোতেপের প্যাপিরাস তাদের হাতে দিয়ে সংক্ষেপে জানাই থীবসের মৃত শ্বেতপুষ্পের বৃক্ষের কথা। ফারাও-এর সম্পুটটি দেখেও তারা হয়তো কিছুটা আশ্বস্ত হয়। তখন তারা আমাদের চিকিৎসায় রত হয়। কিন্তু এখনও যে আমরা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নই তা তো বুঝতেই পারছ হাত, পা এবং চোখের এই বাঁধন থেকে। তবে পুন্তে পৌঁছনো তো অন্তত সম্ভব হচ্ছে। মহান হাথোরের আশীর্বাদে এখন শ্বেতপুষ্পের সন্ধান পেলেই হল!’
‘একটি বিষয় আমাকে অবাক করল…’ বলল অগস্ত্য।
‘বুঝেছি কী বিষয়, এদের মুখে প্রাকৃত ভাষা শুনে আমিও ভীষণই অবাক হয়েছি। যদিও এদের কথা বলার ধরন ভারতীয়দের তুলনায় কিছুটা আলাদা। আর এদের কথার মধ্যে কিছু শব্দ অন্যরকম, যা আমাদের বোধগম্য নয়।’
‘তাহলে প্রাকৃত না হলেও তার খুবই কাছাকাছি কোন ভাষা। কিন্তু এই ভাষায় তাহলে এরা কথা বলছেন কীভাবে?’
‘সেটির উত্তর আমারও জানা নেই। তোমার কী মনে হয় উপল? পুত্তের নগরীতে ভারতীয়রা বাস করে? কীভাবে?’
উপল এর উত্তরে শুধু বলল, ‘হুম।’
তার গলার স্বরে বোঝা গেল হয়তো অন্য কোন গভীর চিন্তায় মগ্ন সে, কিন্তু তা কী সেটি জানা গেল না। প্রায় অর্ধপ্রহর ধরে একটানা যাত্রা করল অগস্ত্যরা। তারপর একসময় যানটি থামল। তাদেরকে যান থেকে নামিয়ে আনা হল। তারপরে তাদের পায়ের বাঁধন এবং চোখের আবরণ খুলে দেওয়া হল। অগস্ত্য দেখল একটি বেশ চওড়া সরণির একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা। তার অনুমানই ঠিক। তাদের যানটিকে টেনে নিয়ে এসেছে দুটি বৃষ। মাটির দিকে তাকিয়ে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ছাড়ছে তারা।
এতটা পথ এসে নিশ্চয় তারাও ক্লান্ত। অগস্ত্য দেখল ঋষভ তার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। তার পিছনে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সাথীরা। নারী পুরুষ মিলিয়ে বাকারির কথা মতোই প্রায় কুড়িজনের দল। পুরুষদের সবার শুধুমাত্র নিম্নাঙ্গ একটা বস্ত্র দিয়ে ঢাকা। তা কোমর থেকে গোড়ালি অবধি নেমে এসেছে। নারীদের নিম্নাঙ্গের বস্ত্র অন্যরকমের, সে বস্ত্র দুটি পাকে আলাদা করে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। উরুর কাছে এসে বস্ত্রখণ্ডদুটি এক হয়েছে। তাদের ঊর্ধ্বাঙ্গে বক্ষবন্ধনী আছে। তাদের প্রত্যেকের কণ্ঠে শোভা পাচ্ছে পাথরকুচির কণ্ঠহার। কয়েকজন পুরুষও এমন অলঙ্কার পরিধান করে আছেন। নারী পুরুষ উভয়ের হাতেই ধরা আছে শিকারের অস্ত্রাদি। কয়েকজন পুরুষ নারীর কাঁধ থেকে ঝুলছে মৃত শূকর এবং হরিণের শব। ঋষভ তার সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তোমরা গৃহে ফিরে যাও। আমি আগন্তুকদের নিয়ে এখন কেন্দ্রগৃহের দিকে গমন করব।’
ঋষভের সঙ্গে চলল তার তিনজন সঙ্গী। তাদের পাহারায় অগস্ত্যরা হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে মাথা দু’পাশে ঘুরিয়ে চারদিক দেখছিল ইরতেনসেনু। এই তাহলে পুন্তের নগরী! যার কথা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মিশরবাসী শুনে এসেছে! যার অস্তিত্ব সম্বন্ধে মাত্র কয়েকদিন আগেও তারা সন্দিহান ছিল। এই সেই পুন্ত নগরী যেখানে সন্ধান মিলবে শ্বেতপুষ্পের! তবে ইরতেনসেনুর কল্পনার নগরীর সঙ্গে বাস্তবের পুন্তের কোন মিল নেই।
এই নগরীকে একটি ছোট জনপদও বলা চলে। এটি সুরম্য অট্টালিকা শোভিত নয়। নগরীর প্রতিটি গৃহই একতলীয়। পাথর দিয়ে বানানো। দুটি গৃহের মাঝখানে সমান মাপের ছাড় আছে। গৃহগুলির সামনে কিছুটা করে সবুজ জমি, তাতে বিভিন্ন শাক সবজীর চাষ করেছে গৃহস্থরা। তাদের কেউ কেউ বাড়ির সামনেই কোন কার্যে রত ছিল, কেউ বা সরণি বেয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। সবাই ইরতেনসেনদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। এই নগরী গত কয়েকশো বছরে কোন ভিনদেশিকে দেখেনি। পথে ঋষভ অগস্ত্যকে তাদের অলৌকিক বায়ুযানের ব্যাপারে নানান প্রশ্ন করছিল, অগস্ত্যও হাসি মুখে তার কৌতূহল নিরসন করে চলেছিল।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর ঋষভ এসে থামল একটি পাথরের বাড়ির সামনে। এই বাড়িটি আয়তনে অন্যান্য বাড়িগুলোর মতো হলেও আকারে বৃত্তাকার। এই গৃহের সামনে দাঁড়িয়ে একটি ব্যাপার বুঝল অগস্ত্য। আক্ষরিক অর্থেই এই কেন্দ্রগৃহ শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। বাকি বাড়িগুলি যেন এই গৃহের চারপাশেই এক বৃত্তাকার নকশায় তৈরি করেছে। শহরটিকে যদি একটি গোলাকার উদরের সঙ্গে তুলনা করা যায় তাহলে তার নাভি হল এই কেন্দ্রগৃহ। ঋষভ গৃহের দরজায় সামান্য টোকা দিল। খানিকক্ষণ পর এক কমবয়সি যুবতী দরজা খুলল। তার দিকে তাকিয়ে ঋষভ বলল, ‘অনিকাদেবীর সাক্ষাৎপ্রার্থী আমি। মিশর থেকে কয়েকজন আগন্তুক এসেছেন।’
যুবতীটি এই কথায় বেশ অবাক হল। বিস্ময়াবিষ্ট চোখে সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল অগস্ত্যদের দিকে। তারপর কিছু না বলে গৃহের ভিতরে প্রবেশ করল। খানিকক্ষণ পর আবার বেরিয়ে এসে বলল, ‘আসুন, অনিকাদেবী আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।’
গৃহটির দরজা নীচু। মাথা সামান্য নামিয়ে একে একে সবাই গৃহে প্রবেশ করল। কয়েক পা হেঁটে একটি ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল তারা। প্রথমে ঘরটিতে সেই অনাম্নী যুবতী ঢুকল, তার পিছনে এল ঋষভ, তার সঙ্গীরা এবং অগস্ত্যরা। বাইরে থেকে গৃহটি পাথর দ্বারা নির্মিত হলেও ঘরের ভিতরে মাটির প্রলেপ দেওয়া রয়েছে। দেওয়াল হালকা নীল বর্ণের। ঘরের দুটি দেওয়ালে দুটি জানালা রয়েছে, যা দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছে। ঘরের এক পাশে রয়েছে যৎসামান্য কিছু আসবাবপত্র, একটি চারপায়া এবং দুটি কাঠের তৈরি আসন। অন্য পাশে রয়েছে একটি ভূমিশয্যা। তার উপরে যে বৃদ্ধা বসে আছেন তিনিই অনিকা দেবী।
বৃদ্ধার বয়স যে আনুমানিক কত তা বোঝা না গেলেও তার মুখের অজস্ত্র বলিরেখা জানিয়ে দেয় যে তিনি অনেকগুলি বসন্তের সাক্ষী। বৃদ্ধার পরনে শুভ্রবস্ত্র। তিনি শয্যায় হাঁটু মুড়ে বসে আছেন। তার সামনে এসে বসল ঋষভ। তার দেখাদেখি ইরতেনসেনুরাও মেঝেতে হাঁটু মুড়ে বসল। বৃদ্ধার দু’পা স্পর্শ করে ঋষভ বলল, ‘আমার প্রণাম নেবেন।’
‘আশীর্বাদ করি।’
বরাভয়ের মুদ্রায় ডান হাত তুলে ঋষভকে আশীর্বাদ করে বৃদ্ধা ইরতেনসেনুদের দিকে তাকালেন। এই প্রথমবার তার চোখের দিকে নজর গেল ইরতেনসেনুর। অনিকাদেবীর দু’চোখ ঘোলাটে। শুকনো কাঠ পুড়ে যে ছাই তৈরি হয় সেই বর্ণের যেন চোখের মণিদুটি। বার্ধক্যজনিত কারণেই হয়তো এমনটা। বৃদ্ধা সেই ঘোলাটে চোখ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন ইরতেনসেনুর দিকে, এবারে তাকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ‘আমি কিন্তু তোমাকে বেশ দেখতে পাচ্ছি কন্যা। তুমি নিজেকে যতটা দেখতে পাও তার চেয়েও স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি। সময় আমার দৃষ্টিকে পরাজিত করলেও আমি এখনও অনেক কিছু দেখতে পাই, যার জন্য এই দু’চোখের প্রয়োজন হয় না। এই যেমন এখন আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মন সংশয়াবিষ্ট। কোনও দুরূহ চিন্তা তোমাকে পীড়িত করে রেখেছে বেশ কিছু দিন ধরে।’
তারপর একে একে অগস্ত্য, উপল এবং বাকারির দিকে তাকালেন বৃদ্ধা। তারপর আবার বললেন, ‘তোমাদের অপেক্ষাতেই আমি দিন গুনছিলাম। এবারে আমার ছুটি হবে। ঋষভ, তুমি এই আগন্তুকদের হাতের বাঁধন খুলে দাও। এরা পুন্তের অতিথি। এরা কোন ক্ষতিসাধন করবে না।’
অনিকাদেবীর নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গেই ঋষভ এবং তার সঙ্গীরা অগস্ত্যদের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করল। তারপর ঋষভ বৃদ্ধার হাতে তুলে দিলেন মেন্তুহোতেপের প্যাপিরাস। প্যাপিরাসটিকে খুলে তার অনেকটা কাছে মাথাটিকে নামিয়ে আনলেন অনিকাদেবী। খানিকক্ষণ পর চোখ তুলে বললেন, ‘তোমরা শ্বেতপুষ্পের সন্ধানে এসেছ বুঝলাম। ছ’শো বছর আগে যখন মেন্তুহোতেপ এই পুন্ত নগরীতে দু’মাস কাটিয়ে ফিরে যান তখন নগরবাসী তাঁকে দুটি শ্বেতপুষ্পের বৃক্ষ উপহার স্বরূপ দেন। এমন বৃক্ষের তুলনা এই পৃথিবীতে আর নেই। কিন্তু এই প্রহেলিকার পাঠোদ্ধার করল কে?’
ইরতেনসেনু বলল, ‘আমি।’
বৃদ্ধা আবার কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন ইরতেনসেনুর দিকে। সেই চাহনিতে যেন একই সঙ্গে আনন্দ এবং আবেগের ভাব ফুটে উঠল। তিনি ইরতেনসেনুর দিকে হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘আমার কাছে এসো মা, এখানে এসে বোস।’
ইরতেনসেনুর এবার অনিকাদেবীর কাছে এসে বসল। তিনি পরম স্নেহে ইরতেনসেনুর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘তোমার নাম কী?’
‘ইরতেনসেনু।’
‘তোমার পিতার নাম কী?
‘আমার জন্মদাতা পিতাকে আমি দেখিনি। আমাকে বড় করেছেন আমার পালক পিতা।’
‘প্রহেলিকাটি যে ভাষায় লেখা আছে তা পাঠ করার বিদ্যা তোমাকে কে দিয়েছিল?’
‘আমার পালক পিতার কাছেই এর শিক্ষা পেয়েছিলাম আমি।’
‘কী নাম তার?’
‘সেনেনমুত।’
‘তার শরীরের গড়ন কেমন ছিল?’ সে ছিল মাঝারী উচ্চতার, গাত্রবর্ণ ঠিক মিশরীয়দের মতো নয়। তার গ্রীবার ডানদিকে এবং বাম বাহুর উপরের অংশে একটি করে তিল ছিল, তাই তো?
ইরতেনসেনু হতবাক হয়ে চেয়ে রইল অনিকাদেবীর দিকে, তার মুখ থেকে কথা সরছিল না। তিনি অবিকল সেনেনমুতের বর্ণনা দিলেন কীভাবে?
অনিকাদেবী এবার বললেন, ‘তার আসল পরিচয় এবার তোমার জানার সময় হয়েছে।’
এবার ইরতেনসেনু অবাক হল। সে পিছনে ফিরে বাকারির দিকে তাকাল, দেখল বাকারিও একই রকম অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইরতেনসেনু আবার তাকাল বৃদ্ধার দিকে। বৃদ্ধা স্মিত হেসে বললেন, ‘তার আসল নাম বিবান। বিবান এই পুন্তের সন্তান। ফারাও মেন্তুহোতেপকে পুন্ত নগরী শ্বেতপুষ্পের বৃক্ষ উপহার দেওয়ার পর তিনি তাদেরকে রোপন করেন থীবসে তাঁর মন্দিরের সামনে। তাদেরকে উৎসর্গ করেন মিশরের যুদ্ধের এক দেবতার নামে।
‘এই ঘটনা আমার জন্মের পাঁচশত বছর আগে ঘটে। মেন্তুহোতেপের এই প্রহেলিকা তাঁর নিজের লেখা নয়। এই পুন্তের এক অধিবাসীরই লেখা। মেন্তুহোতেপ পুস্ত নগরীর ভাষা পড়তে আদৌ সক্ষম হননি। আমরা পুন্তকে বাইরের জগতের থেকে গোপন রাখতে বদ্ধপরিকর, তাই মিশরের ফারাওকেও এই ভাষার শিক্ষা দিইনি আমরা।’
এবারে অনিকাদেবীর কথার মাঝে বাকারি বলে উঠল, ‘তাহলে এই প্রহেলিকাকে ফারাওয়ের সঙ্গে মিশরে পাঠাবার প্রয়োজন কী?’
‘ভবিষ্যতের একটি দিনের কথা ভেবে, যদি কোন কারণে থীবসের শ্বেতপুষ্পের বৃক্ষের মৃত্যু হয় তাহলে তার খোঁজ পাওয়ার জন্য।’
‘কিন্তু সেই ভাষা তো মিশরের কেউই পড়তে পারবে না। তাহলে সেটিকে রাখার কী অর্থ?’
বাকারির গলার স্বর রূঢ় শোনাল। তার নিজের পিতা যে মিশরীয় নন তা সে বিশ্বাস করতে পারছে না। সে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে।
‘এই কারণেই বিবানের মিশরে গমন। তার আগেও পুন্তের নাগরিকরা মিশরে থেকেছে। ভীষণ গোপনে মিশে গেছে মিশরীয়দের সঙ্গে। যুগ যুগ ধরে এই পুন্ত শহরের একজন প্রতিনিধি মিশরের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। তাদের কাজ ছিল ওই দিনটির অপেক্ষা করা, যদি সেই দিন আদৌ কখনও এসে পৌঁছয় তাহলে যাতে তারা সেই প্রহেলিকার পাঠোদ্ধার করে তৎকালীন ফারাওকে সাহায্য করতে পারে। এই কারণে তারা ফারাওয়ের রাজসভায় কোনও না কোনও কার্যে নিযুক্ত হয়ে যেত।
‘পুন্তের অধিবাসীরা স্থিতধী এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী, তাই ফারাওয়ের ব্যক্তিগত পার্ষদের কাজ খুব সহজেই পেত তারা। তোমরা জানলে অবাক হবে, গত ছ’শো বছরে এমন বারোজন পুন্তবাসী থীবসের রাজসভায় নিয়োজিত ছিল। কোনও একটি সময়ে মাত্র একজনই থাকত মিশরে যে পুন্তের এই ভাষা জানত। তাদের কেউ ছিল ফারাওয়ের ব্যক্তিগত পার্ষদ, কেউ প্রধান উপদেষ্টা, কেউ গ্রন্থাগারের প্রধান আবার কেউ ছিল মহামন্ত্রী। যেমন ছিলেন বিবানের পিতা। তিনি ছিলেন ফারাও প্রথম তুতমোসের সময়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক। তাঁর মৃত্যুর পর এই দায়িত্ব এসে পড়ে বিবানের উপরে।
‘বিবান এই কাজে ব্রতী হওয়ার জন্য দু’বার ভাবেনি। সে জানত সে চিরদিনের জন্য পুন্ত ত্যাগ করছে। কিন্তু যেদিন বিবানের যাত্রা করার কথা তার কয়েকদিন আগেই তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী প্রসবের সময়ে মারা যান। বেঁচে যায় তার সন্তানটি, সেই দু’দিনের সন্তানকে কোলে নিয়ে বিবান যাত্রা করে মিশরের উদ্দেশে। মিশরে পৌঁছে সে নিজের নাম বদলে রাখে সেনেনমুত। তার সদ্যজাত কন্যাটিকে সে গোপনে দান করে থীবসের এক অনাথ আশ্রমে। বিবান কয়েক বছর অন্তর এই নগরীতে আসত, কয়েকটি ঘন্টা কাটিয়ে ফিরে যেত আবার। তার কাছেই আমি শুনি সে বিবাহ করেছে এক মিশরীয় নারীকে, তার ঔরসে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।’
ইরতেনসেনু মৃদু স্বরে বলল, ‘সেই সন্তানটি এই যুবক।’
এই বলে সে বাকারির দিকে দেখাল। বৃদ্ধা এবারে তার আসন ছেড়ে উঠে ধীর পায়ে বাকারির কাছে এসে দাঁড়ালেন। সস্নেহে বাকারির চিবুকটি তুলে তাকিয়ে বললেন, ‘তোমার রক্তেও তবে পুন্ত প্রবাহিত হচ্ছে। তোমার মুখমণ্ডলে বিবানের সাদৃশ্য দেখতে পাচ্ছি এখন আমি।’
এই সময় অগস্ত্য বলল, ‘তাহলে ইরতেনসে…
হ্যাঁ, ইরতেনসেন বিবানের কন্যা। এই নগরীর মাটিতে তার জন্ম হয়েছিল। তার জন্মের সময়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। যেদিন কোলের মেয়েটিকে নিয়ে সে এই শহর ত্যাগ করে সেদিনও শেষবারের মতো তাকে আমি আদর করি। পরে বিবান তাকে অনাথ আশ্রম থেকে দত্তক নেয়। নিজের আত্মজাকে ছেড়ে সে বেশিদিন থাকতে পারেনি। সেই কারণেই বিবান ইরতেনসেনুকে পুন্তের ভাষা শিক্ষার পাঠ দিয়েছিল। কিন্তু তার দুই সন্তানের কাছে সে আজীবন নিজের পরিচয় গোপন রেখেছে। শতাব্দী প্রাচীন এক শপথকে সম্মান দেওয়ার জন্য নিজের আত্মপরিচয়কে বিসর্জন দিয়েছিল সে।’
এই বলে কিছুক্ষণের জন্য থেমে রইলেন অনিকাদেবী। গোটা ঘরে তখন আর কোন একটিও শব্দ নেই। এমন বিস্ফোরক সত্যের সম্মুখীন হওয়ার জন্য ইরতেনসেনু বা বাকারি কেউই প্রস্তুত ছিল না। তারা এখনও যেন বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিল না। যাঁকে পালক পিতা বলে জানত ইরতেনসেনু সে আসলে তার জন্মদাতা! দত্তক নেওয়ার পর থেকে তাকে কখনও পিতার অভাব বুঝতে দেননি সেনেনমুত।
কিন্তু ইরতেনসেনু তো একবারের জন্যও তাঁকে নিজের জন্মদাতা পিতা বলে ভেবে উঠতে পারেনি, সব ছাপিয়ে কোথাও এক বাধা, এক সঙ্কোচ তার মনে রয়েই গিয়েছিল। আজ ওর মনে হচ্ছে তার সেই পিতার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে, কিন্তু সেই উপায় তো আর নেই! এক প্রবল কষ্টে ইরতেনসেনুর হৃদয় মুচড়ে উঠছিল।
সেই সময়ে অগস্ত্যর মনের মধ্যে একটি প্রশ্নের উত্তর ঘুরপাক খাচ্ছিল। ইরতেনসেনু সেনেনমুতের নিজের সন্তান, তার মাতাও পুন্তের। অতএব তার শরীরে কেবলমাত্র পুন্তের রক্তই প্রবাহিত হচ্ছে। সেই কারণেই সেনেনমুত ইরতেনসেনুকে এই ভাষা শিক্ষার পাঠ দিলেও বাকারিকে দেননি। কারণ পুন্তের রহস্যকে রক্ষা করার দায়িত্ব ইরতেনসেনুরই।
অনিকাদেবী এবারে কাতর কণ্ঠে বললেন, ‘আজ শ্বেতপুষ্পটিকে এই নগরী থেকে আবার নিয়ে যাওয়ার জন্য বিবানের নিজেরই আসার কথা। কিন্তু তার স্থানে তুমি এসেছ, অর্থাৎ…’
ইরতেনসেনু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধু তিনটি শব্দ উচ্চারণ করতে পারল, ‘পিতা আর নেই।’
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন অনিকাদেবী। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, ‘তোমরা নিশ্চয় ক্লান্ত। এখন বিশ্রাম করো। আগামীকাল ঋষভ তোমাদের শ্বেতপুষ্পের উদ্যানে নিয়ে যাবে। এই নগরীতে তো কোনও অতিথিশালা নেই। এই গৃহের একটি কক্ষে তোমাদের থাকার আয়োজন করা হবে।’
‘মাফ করবেন দেবী অনিকা।’ বাকারির কথায় অনিকাদেবী তার দিকে তাকালেন।
‘অনেক পথ পাড়ি দিয়ে আমরা এখানে এসেছি। আজকের মধ্যে শ্বেতপুষ্পের গাছটিকে যদি আহরণ করতে পারি তাহলে আগামীকাল ভোরে আমরা যাত্রা শুরু করতে পারব মিশরের উদ্দেশে। ফারাও হাতসেপসুত চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন, যত দ্রুত সম্ভব তাঁর কাছে পৌঁছতে চাইছি আমরা।’
‘আচ্ছা, তবে তাই হোক।’ শান্ত স্বরে বললেন অনিকাদেবী। অগস্ত্য লক্ষ করল তাঁর স্মিত মুখে লেগে রয়েছে অল্প হাসি। সে হাসি মমতার। সে হাসি ভরসার।