২২-২৩. আনন্দের সাথে অভ্যর্থনা

২২.

দিমিত্রি আমাদেরকে আনন্দের সাথে অভ্যর্থনা এলাকায় রেখে গেল। সেখানে গিয়ানা তখনও পোলিশড কাউন্টারের পিছনে তার পোস্টে ছিল। লুকানো স্পিকারের ভেতর দিয়ে উজ্জ্বল ক্ষতিহীন সংগীতের মুৰ্ছনা ভেসে আসছিল।

অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত চলে যেও না। সে আমাদের সতর্ক করল।

এ্যাডওয়ার্ড মাথা নোয়াল। দিমিত্রি দ্রুত চলে গেল।

গিয়ানা এইসব পরিবর্তনের ভেতর কোন বিষ্ময়কর কিছু দেখতে পেল না। যদিও সে এ্যাডওয়ার্ডের ধার করা আলখাল্লার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল।

তুমি কি ঠিক আছে? এ্যাডওয়ার্ড নিঃশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করল। এতটাই নিচু গলায় যে একজন মানবীর পক্ষে শোনা দুষ্কর। তার কণ্ঠস্বর রুক্ষ। যদি ভেলভেট রুক্ষ্ম হয়ে যায়। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এখনও আমাদের পরিস্থিতি টান টান অবস্থায় আছে। আমি কল্পনা করলাম।

সবচেয়ে ভাল হয় সে পড়ে যাওয়ার আগেই তাকে বসিয়ে দাও। এলিস বলল, সে যেন টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র তারপর বুঝতে পারলাম আমি কাঁপছি। বেশ জোরেই কাঁপছি। আমার সমস্ত শরীর কাঁপছে যতক্ষণ পর্যন্ত দাঁতের ঠকঠকানি শুনতে পেলাম। আমার চারপাশের ঘরের দেয়াল যেন মনে হচ্ছে ঘুরছে। আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এক মুহূর্তের জন্য, আমি বিস্মিত হলাম যদি এটা এমন হয় যেমনটি জ্যাকবের হয়ে থাকে। সে মায়ানেকড়ে মানব হয়ে যাওয়ার আগের মুহূর্তে।

আমি একটা শব্দ শুনতে পেলাম। সেটার কোন অর্থ বুঝতে পারলাম না। একটা অদ্ভুত, তরঙ্গায়িত শব্দ, যেটা সংগীতের ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে আসছিল।

শশশ। বেলা। শশশ। এ্যাডওয়ার্ড বলল। সে আমাকে তখন সোফার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। সেটা ডেস্কের ওপাশের কৌতূহলী মানুষের থেকে দূরে।

আমি মনে করি সে হিস্টোরিয়া বা মৃগীরোগগ্রস্ত। হতে পারে তুমি তাকে থাপড়াতে পার। এলিস উপদেশ দিল।

এ্যাডওয়ার্ড তার দিকে উন্মত্ত দৃষ্টিতে তাকাল।

তারপর আমি বুঝতে পারলাম। ওহ। এই গোলমালটা আমিই। এই তরঙ্গায়িত শব্দটা আমার বুকের ভেতর থেকেই আসছে। সেটাই আমাকে এভাবে কাঁপিয়ে তুলছে।

সব ঠিক আছে। তুমি নিরাপদ। সবকিছু ঠিক আছে। সে বারবার উৎফুল্ল হয়ে উঠতে লাগল। সে আমাকে তার কোলের উপর টেনে নিল। তার গায়ের মোটা উলের আলখাল্লা দিয়ে আমাকে জড়িয়ে দিল। রক্ষা করছিল তার বরফ ঠাণ্ডা ত্বকের হাত থেকে।

আমি জানতাম এভাবে প্রতিক্রিয়া দেখানো খুব বুদ্ধিমতীর মত হবে। কে জানে কতটা সময় ধরে আমি তার মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম? সে নিরাপদ। আমিও নিরাপদ। যত তাড়াতাড়ি আমরা মুক্ত হয়ে যাব সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমার চোখ কান্নায় ভরে উঠল। যে কারণে পরিষ্কারভাবে আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিলাম না।

কিন্তু, আমার চোখের পেছনে যেখানে কান্নার জল সেই ইমেজ ধুয়ে মুছে দিতে পারে না। আমি তখনও দেখতে পাচ্ছিলাম সেই ভয়ার্ত আতংকিত মুখ, সেই ছোট্ট মেয়েমানুষটার গোলাপিবর্ণা মুখ।

এই সমস্ত লোকেরা। আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম।

 আমি জানি। সে ফিসফিস করে বলল।

এটা এতটাই ভয়ানক।

হ্যাঁ। এটা তাই। আমি আশা করছি তোমাকে তা যাতে দেখতে না হয়।

আমার মাথা বিশ্রামের জন্য তার ঠাণ্ডা বুকের উপর রাখলাম। আমার চোখের জল মুছে ফেলতে সেই মোটা আলখাল্লা ব্যবহার করলাম। আমি কয়েকবার গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। চেষ্টা করলাম নিজেকে শান্ত রাখতে।

সেখানে কি কোন কিছু তোমার জন্য আনতে পারি? একটা কণ্ঠস্বর খুব নরম ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করল। এটা গিয়ানা। সে এ্যাডওয়ার্ডের কাঁধের উপর দিকে ঝুঁকে আছে। সে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন সতর্ক এবং সচেতন। এখনও পর্যন্ত পেশাগতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। একই সাথে এসব থেকে যেন বিছিন্ন। আমি তাকে বিরক্ত হতে দেখলাম না। তার মুখ ছিল একটা শত্রুপূর্ণ ভ্যাম্পায়ার থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে। সে হয়তো পুরোপুরি সুস্পষ্ট। অথবা তার কাজে খুবই দক্ষ।

না। এ্যাডওয়ার্ড শীতল কণ্ঠে জবাব দিল।

 সে মাথা নোয়াল। আমার দিকে তাকিয়ে হাসল। তারপর চলে গেল।

আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম যতক্ষণ পর্যন্ত না তার চলে যাওয়ার শব্দ কান থেকে মুছে না যায়। সে কি জানে এখানে কি হতে চলেছে? আমি জানতে চাইলাম। আমার কণ্ঠস্বর খুবই নিচুলয়ের এবং কিছুটা কর্কশ। আমি এখন নিজের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছি। আমার নিঃশ্বাসও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

হ্যাঁ। সে সবকিছু জানে। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে বলল।

সে কি জানে তারা তাকে যে কোন একদিন খুন করে ফেলবে?

সে জানে যে সেরকম সম্ভাবনা আছে। সে বলল।

সেটা আমাকে বিস্মিত করল।

এ্যাডওয়ার্ডের মুখের অভিব্যক্তি পড়া খুব কঠিন। সে আশা করছে তারা তাকে রেখে দেয়ারই সিদ্ধান্ত নেবে।

আমি অনুভব করলাম আমার মুখ থেকে রক্ত সরে যাচ্ছে। সে কি তাদের একজন হতে চাচ্ছে নাকি?

সে একবার মাথা নোয়াল। তার চোখ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে আমার মুখের উপর রাখল। আমার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছে।

আমি কাঁপতে লাগলাম। সে কীভাবে সেটা চাইতে পারে? আমি ফিসফিস করে তার উত্তরের চেয়ে নিজের বোঝার জন্যই যেন বললাম। সে কীভাবে দেখেছে যখন সেই সমস্ত লোকেরা সেই জঘন্য রুমে। সে কীভাবে তাদের অংশ হতে চাইতে পারে?

এ্যাডওয়ার্ড উত্তর দিল না। তার অভিব্যক্তি আমার কিছু একটা বলার কারণে অন্যভাবে ঘুরে গেল।

আমি তার সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। পরিবর্তনটা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।, এটা হঠাৎ করে আমাকে আঘাত করল। আমি সত্যিই এখানে। এখন এই এ্যাডওয়ার্ডের বাহুর মধ্যে। এখন এই মুহূর্তে। খুন হওয়ার সময়গুলোর মধ্যে।

ওহ, এ্যাডওয়ার্ড, আমি কেঁদে উঠলাম। আমি আবার ফুঁপিয়ে উঠলাম। এটা বোকার মত প্রতিক্রিয়া। চোখের জল এতটাই ঘন যে তার মুখ দেখা সম্ভব হয় না। এটা অভিযুক্ত করার মত ঘটনা নয়। আমি এখন শুধুমাত্র সূর্য ডোবার নিশ্চয়তায় আছি। এটা যেন সেই রুপকথার গল্পের মতই। একেবারে ডেডলাইনে এসে যাদুর ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়।

সমস্যাটা কি? সে জিজ্ঞেস করল। এখনও উদ্বিগ্ন। আমার পিঠের উপর আলতো করে হাত রেখে ঘষে দিচ্ছে।

আমার হাত দিয়ে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম। সবচেয়ে খারাপ কি জিনিসটা সে করতে পারে? শুধু আমাকে ঠেলে দিতে পারে। আমি আবার জড়িয়ে ধরব তার কাছাকাছি থাকার জন্য। এটা কি সত্যিই অসুস্থতা যে এই মুহূর্তে সুখী হওয়ার জন্য? আমি জিজ্ঞেস করলাম। আমার কণ্ঠস্বর ভাঙা ভাঙা শোনাল।

সে আমাকে ঠেলে সরিয়ে দিল না। সে তার বরফ শীতল কঠিন বুকের উপর আমাকে টেনে শক্ত করে চেপে ধরল। এতটাই শক্ত করে যে আমার পক্ষে নিঃশ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াল। এমনকি আমার ফুসফুসও যেন ভেতরে চেপে লেগে গেছে। আমি প্রকৃতপক্ষে জানি তুমি কি বোঝাতে চেয়েছে। সে ফিসফিস করে বলল। কিন্তু আমাদের অসংখ্য কারণ আছে সুখী হওয়ার জন্য। একবারের জন্য, আমরা জীবত।

হ্যাঁ। আমি একমত হলাম। সেটা সবচেয়ে ভাল কারণ।

এবং একসাথে। সে শ্বাস নিল। তার নিঃশ্বাস এতটাই মিষ্ট আমার মাথা যেন ভাসতে লাগল।

আমি শুধু মাথা নোয়ালাম।

এবং, যেকোন সৌভাগ্যের জন্য, আমরা এখনও আগামীকালের জন্য বেঁচে থাকব। আশা করা যায়। আমি অস্বস্তিকরভাবে বললাম।

বাইরের আউটলুক মোটামুটি ভাল। এলিস নিশ্চিত করল। সে এখন খুবই নিশ্চুপ। আমি এর মধ্যে তার উপস্থিতি ভুলে বসে ছিলাম। আমি জেসপারকে চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে দেখব। সে সন্তুষ্টির স্বরে যোগ করল।

সৌভাগ্যবতী এলিস। সে তার ভবিষ্যৎকে বিশ্বাস করতে পারে।

আমি আমার চোখ জোড়া এ্যাডওয়ার্ডের মুখের উপর থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য সরিয়ে রাখতে পারলাম না। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আশা করছি যেকোন কিছুর চেয়ে যে ভবিষ্যতে কিছুই ঘটবে না। এই তাকানোর মুহূর্তেই সারা জীবনের জন্য থাকবে। অথবা যদি এটা নাও থাকে। সেটা যখন এটা ঘটবে অস্তিত্ব রাখা বন্ধ করে দেব।

এ্যাডওয়ার্ড প্রতি উত্তরে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। তার গাঢ় কালো চোখের দৃষ্টি নরম। এটা খুব সহজেই অনুমান করা যায় যে সেও একই রকম অনুভব করছে। যেটা আমি অনুমান করছি। আমি ভান করলাম। এই মুহূর্তকে আরো বেশি মধুর করার জন্য।

তার আঙুলের ডগা আমার চোখের নিচের বৃত্তাকর ঘুরতে লাগল। তোমাকে এতটাই ক্লান্ত দেখাচ্ছে।

এবং তোমাকে খুব তৃষ্ণার্ত দেখাচ্ছে। আমি ফিসফিস করে প্রত্যুত্তর করলাম। তার কালো আইরিশের চারিদিকের দৃষ্টি পড়তে পড়তে।

সে কাঁধ ঝাঁকাল। এটা কিছুই না।

তুমি কি নিশ্চিত? আমি এলিসের সাথে বসতে পারি। আমি অফার করলাম। অনিচ্ছাসত্বেও। আমি এখন নিজেকে এর চেয়ে খুন হতে দেব আমি যেখানে যেভাবে আছি সেখান থেকে এক ইঞ্চি নড়ার পরিবর্তে।

হাস্যকর হয়ো না। সে শ্বাস ফেলল। তার মধুর প্রশ্বাস আমার মুখের উপর দিয়ে বয়ে গেল। আমি কখনও এখানকার চেয়ে ভাল নিয়ন্ত্রণে ছিলাম না।

তার কাছে আমার হাজার হাজার প্রশ্ন আছে। তাদের একটা এখন আমার ঠোঁটের উপর বুড়বুড়ি কাটছে। কিন্তু আমি আমার জিহ্বা সংযত করলাম। আমি এই মুহূর্তটাকে ধ্বংস করতে চাইলাম না। এখানে এই রুমে আমাকে অসুস্থ করে তুলেছে। সেই চোখের নিচে যেটা দৈত্যকার ধারণ করতে পারে।

তার এই বাহুর ভেতরে এখানে। এটা এখন খুবই সহজ যে সে আমাকে চায় এই ধারনা করা। আমি এখন তার উদ্দেশ্যে নিয়ে ভাবতে চাই না। যেখানে সে আমাকে এখানে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। যখন আমরা এখনও বিপদের মধ্যে আছি। অথবা যেন সে শুধু দোষী অনুভব করছে। যেখানে আমরা আছি সে জন্য। এটাই স্বস্তির ব্যাপার যে সে আমার মৃত্যুর জন্য কোনমতে দায়ী নয়। হতে পারে এই সময়ে আমি তাকে মোটেই বোর অনুভব করছি না বা সেও করছে না। কিন্তু এটা কোন ব্যাপার নয়। আমি এতটাই সুখী যে সেটার ভান করতে পারি।

আমি তার বাহুর উপর শান্তভাবে শুয়ে রইলাম। তার মুখটাকে মনে করার চেষ্টা করে। ভান করে…

সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। যেন সেও একই রকম করছে। সে এবং এলিস আলোচনা করছে কীভাবে বাড়িতে পৌঁছাবে। তাদের কণ্ঠস্বর আমার কানে এতটাই দ্রুতগতির এবং এতটাই নিচুলয়ের আমি জানি গিয়ানা সেটা বুঝতে পারছে না। আমি নিজেই এর অর্ধেকটাই মিস করলাম। এরকম মনে হলো আরো অনেক দুবৃর্ত্ত এখানে জড়িত। আমি বিস্মিত যদি আমি এই হলদে পোর্শে গাড়িটা তার মালিকের কাছে ফেরত দিতে পারি।

তারা সেই গায়িকা সম্বন্ধে কি আলোচনা করছে? এলিস এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করল।

লা তুয়া ক্যানটেটা। এ্যাডওয়ার্ড বলল। তার কণ্ঠস্বর সেটাকে সংগীতের মুর্ঘনার মত শোনাল।

হ্যাঁ। সেটাই। এলিস বলল। আমি সেদিকে এক মুহূর্তের জন্য মনোযোগ দিলাম। আমি বিস্মিত সেই বিষয়ে। এই সময়েও।

আমি অনুভব করলাম এ্যাডওয়ার্ড কাঁধ ঝাঁকাল। তাদের একটা নাম আছে কেউ একজনের জন্য যে যে পথে বেলা এসেছে তার গন্ধ পায়। তারা তাকে আমার গায়িকা নামে ডাকে। কারণ তার রক্ত আমার জন্য নেচে ওঠে। গান গায়।

এলিস হেসে উঠল।

আমি এত ক্লান্ত ছিলাম যে ঘুমাতে পারলাম না। কিন্তু আমি দুশ্চিন্তার বিরুদ্ধে লড়তে থাকলাম। আমি এই মুহূর্তে একটা মুহূর্তও মিস করতে যাচ্ছি না যখন আমি তার সাথেই আছি। এখন এবং যখন সে এলিসের সাথে কথা বলে। সে হঠাৎ করে ঝুঁকে পড়তে পারে এবং আমাকে চুমু খেতে পারে। সে চুমু খায়। তার কাঁচের মত মসৃণ ঠোঁট জোড়া আমার চুলের উপর ঘষে যায়। আমার কপাল আমার নাকের ডগায়। প্রতিবারই এটা আমার কাছে এক প্রকার বৈদ্যুতিক শকের মত আমার হৃৎপিণ্ডের উপর। হৃৎপিণ্ডের শব্দটা আমার কাছে এতই জোরালো মনে হয় যেন এটা গোটা রুমটাকে ভরে ফেলবে।

এটা স্বর্গীয় অনুভূতি। ঠিক নরকের মাঝখানে বসেও।

আমি সময়ের ব্যাপারে ধারণা পুরোপুরি হারিয়ে ফেললাম। সুতরাং যখন এ্যাডওয়ার্ডের বাহু আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল- সে এবং এলিস দুজনেই চিন্তিত চোখে রুমের পিছনের দিকে তাকাল। আমি আতংকিত হয়ে পড়লাম। আমি এ্যাডওয়ার্ডের বুকের মধ্যে শুয়েই কুঁকড়ে গেলাম যখন এলেককে দেখলাম। তার চোখজোড়ায় বিভিন্ন রকম রুবি পাথরের মত জ্বলছিল। কিন্তু এখনও স্পটলেস। সে ডাবল দরজা দিয়ে হেঁটে আমাদের দিকে এগিয়ে এল।

এটা খুব ভাল সংবাদ।

তুমি এখন চলে যাওয়ার জন্য মুক্ত। এলেক আমাদেরকে বলল। তার কণ্ঠস্বর এতটাই উষ্ণ যে তুমি মনে করতে পার যেন আমরা আজীবনের বন্ধু। আমরা জিজ্ঞেস করলাম যে তুমি এই শহর ছেড়ে চলে যেও না।

এ্যাডওয়ার্ডকে সেই মুহূর্তে কোন উত্তর দিতে দেখা গেল না। তার কণ্ঠস্বর বরফের মত শীতল। সেটা কোন সমস্যা হবে না।

এলেক হাসল। মাথা নোয়াল। তারপর চলে গেল।

অনুসরণ করো ডান হলওয়ের কোণের দিকে প্রথম জোড়া এলিভেটরের জন্য। গিয়ানা আমাদেরকে বলল। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে আমার পায়ে দাঁড়ানোর জন্য সাহায্য করার চেষ্টা করল। লবিটা দুই তলা নিচে। সেটা রাস্তায় গিয়ে বেরিয়েছে। এখন বিদায়। গিয়ানা আনন্দিত স্বরে যোগ করল। আমি বিস্মিত যদি তার এই সাহায্যকারী মনোভাব তাকে কোনভাবে রক্ষা করতে পারে।

এলিস তার দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকাল।

আমি স্বস্তিবোধ করলাম যে সেখানে আরেকটা বেরোনোর পথ আছে। আমি নিশ্চিত নই যে আরেকটা আন্ডারগ্রাউন্ডের পথে যাত্রার ব্যাপারে।

আমরা একটা আভিজাত্যপূর্ণ লবি ছেড়ে যেতে থাকলাম। আমিই একমাত্র যে চকিতে লক্ষ্য করলাম যে একটা মধ্যযুগীয় প্রাসাদকে ব্যবসার খাতিরে বিস্তৃত করা হয়েছে। আমি এখান থেকে টারেট দেখতে পেলাম না। যে কারণে আমি কৃতজ্ঞবোধ করলাম।

পার্টি তখনও পুরোদমে রাস্তার উপর চলছিল। স্ট্রিট লাইটগুলো এই মাত্র জ্বলে উঠল যখন আমরা পথে নামলাম। আকাশ ছিল বিষণ্ণ। মাথার উপর ধুসর বর্ণ ধারণ করেছে। কিন্তু দালানগুলো এত কাছাকাছিতে এত উঁচু হয়ে উঠেছে যে সেটা আরো বেশি গাঢ় অন্ধকার রুপ ধারণ করেছে।

পার্টিও অনেক বেশি গাঢ়তর ছিল। এ্যাডওয়ার্ডের লম্বা বিস্তৃত আলখাল্লার কারণে এটাতে তেমন সাধারণ কোন ভলতেরা সন্ধ্যে বলে মনে হচ্ছিল না। সেখানে অন্যরাও কালো সাটিনের ক্লোক পরে ছিল। শিশুরাও বয়স্কদের সাথে খুব জনপ্রিয়তার সাথে আজকে দেখা যাচ্ছিল।

হাস্যকর। এ্যাডওয়ার্ড একবার বিড়বিড় করে বলল।

আমি লক্ষ্য করিনি কখন এলিস আমার পাশ থেকে সরে গেছে। আমি তাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য তার দিকে তাকালাম। দেখলাম সে চলে গেছে।

এলিস কোথায়? আমি ফিসফিস করে আতংকিত স্বরে বললাম।

সে আজ সকালে যেখানে তোমার ব্যাগ রেখে এসেছে সেখানে তোমার ব্যাগ আনতে গেছে।

আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে আমার একটা টুথব্রাশ ছিল। এটা আমার বাইরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয়।

সে একটা গাড়িও চুরি করেছে, তাই নয় কি? আমি অনুমানে বললাম।

সে মুখ কুঁচকাল। যতক্ষণ আমরা বাইরে, ততক্ষণ নয়।

দেখে মনে হলো অনেক বেশি পথ প্রবেশ পথের জন্য। এ্যাডওয়ার্ড তার আঘাত প্রাপ্ত হাত আমার কোমরে জড়িয়ে রাখল। হাঁটার সময় আমার বেশির ভাগ শরীরের ওজন সে বহন করতে লাগল।

আমি কেপে উঠলাম যখন সে আমাকে আর্চওয়ে গাঢ় পাথরের দিক থেকে টেনে নিল। বিশাল, প্রাচীন পাথরগুলো গুহার প্রবেশপথের মতো। এটা আমাদের হুমকি দিয়েছে ফেলে দেয়ার জন্য ভেতরে নেয়ার জন্য।

সে আমাকে একটা গাঢ় গাড়ির দিকে নিয়ে গেল। অপেক্ষা করছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন ছায়ার মধ্য থেকে যখন ইঞ্জিনের শব্দ পাবে বেরিয়ে আসবে। আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে গাড়ি আসলো। সে আমাকে পেছনের সিটে ঠেলে পাঠিয়ে দিল। আমাকে গাড়ি চালাতে জোরাজুরি করার পরিবর্তে।

এলিসের কণ্ঠস্বর ক্ষমা প্রার্থনা সূচক। আমি দুঃখিত। সে ড্যাশবোর্ডের উপর থেকে শূন্যভাবে বলল। সেখানে পছন্দ করার মত খুব বেশি গাড়ি ছিল না।

এটাই অনেক সুন্দর এলিস। সে মুখ বিকৃত করে বলল। তারা এখনই ৯১১কে খবর দেবে না।

সে শ্বাস নিল। আমি এটা অর্জন করতে পারে আইনগতভাবে। এটা খুবই সুন্দর।

আমি তোমাকে এরকম একটা ক্রিসমাসে দেব। এ্যাডওয়ার্ড প্রতিজ্ঞা করল।

এলিস তার দিকে ঘুরে তাকাল। যেটা আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিল। যখন সে এরই মধ্যে দ্রুতগতিতে নিচের অন্ধকারের দিকে চলেছে। একই সাথে খাড়া পাহাড়ের পাশ দিয়ে।

হলুদ রঙের। সে তাকে বলল।

এ্যাডওয়ার্ড আমাকে তার বাহুর মধ্যে শক্ত করে ধরে রাখল। তার ধুসর বর্ণের আলখাল্লার ভেতরে। আমি উষ্ণ হয়ে উঠছিলাম। অনেক বেশি আরামদায়ক। আরামদায়কের চেয়ে বেশিকিছু।

তুমি এখন ঘুমাতে পার বেলা। সে বিড়বিড় করে বলল। এটা চলে গেছে।

আমি জানতাম সে এটা বলতে বিপদকেই বোঝাচ্ছে। প্রাচীন এই শহরের দুঃস্বপ্নকে। কিন্তু আমি এখনও সেটা হজম করতে পারি নাই আমি কোন উত্তর দেয়ার আগে।

আমি ঘুমিয়ে পড়তে চাই না। আমি ক্লান্ত নই। আমার কথার দ্বিতীয় অংশটি মিথ্যে। আমি আমার চোখ বন্ধ করতে পারছি না। গাড়িটা কেবলমাত্র মৃদু আলোকিত হয়ে আছে ড্যাশবোর্ডের কন্ট্রোল প্যানেলের আলোয়। কিন্তু এটাই তাকে দেখার জন্য যথেষ্ট আলো।

সে তার ঠোঁটজোড়া আমার কানের পাশের ফাঁকা জায়গাটায় চেপে ধরল। চেষ্টা করো। সে উৎসাহ দিল।

আমি দুদিকে মাথা নাড়লাম।

 সে শ্বাস ফেলল। তুমি এখনও সেই আগের মতই জিদ্দী আছে।

আমি জিদ্দী। আমি আমার সেই খারাপ সময়টার বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছি। আমি জিতে গেছি।

অন্ধকার রাস্তাটাই সবচেয়ে কঠিন অংশ। ফ্লোরেন্সের এয়ারপোর্টের উজ্জ্বল আলো পথটাকে কিছুটা সহজ করে দিয়েছে। যেটা এখন আমার দাঁত ব্রাশ করা এবং পরিষ্কার কাপড় পরিধান করার সুযোগ করে দিয়েছে। এলিস এ্যাডওয়ার্ডের জন্যও নতুন কাপড় এনেছিল। সে তার গাঢ় আলখাল্লাটা অন্ধকারের মধ্যে এক গাদা স্তূপের মধ্যে ছেড়ে এসেছিল। প্লেনে করে রোমের যাত্রা পথ এতটাই নীতিদীর্ঘ যে সেখানে সত্যিই কোন সুযোগ নেই ক্লান্ত হওয়ার। আমি জানতাম রোম থেকে আটলান্টার ফ্লাইট আরেকটা প্রবেশের ব্যাপার হতে পারে। সুতরাং আমি ফ্লাইট এটেন্টডেন্টকে জিজ্ঞেস করলাম সে যদি আমার জন্য একটা কোকের ব্যবস্থা করতে পারে।

বেলা। এ্যাডওয়ার্ড অস্থির স্বরে বলল। সে জানত আমার ক্যাফেইনের প্রতি নিচু মাত্রার সহ্য ক্ষমতার কথা।

এলিস আমাদের পাশেই আছে। আমি তার বিড়বিড় করে মোবাইল ফোনে জেসপারের সাথে কথা বলতে শুনতে পেলাম।

আমি ঘুমিয়ে পড়তে চাই না। আমি তাকে মনে করিয়ে দিলাম। আমি তাকে একটা অজুহাত দেখালাম যেটা বিশ্বাসযোগ্য কারণ এটা সত্যি। আমি যদি এখন আমার চোখ বন্ধ করি। আমি সেই সব জিনিস দেখতে পাব যেটা আমি দেখতে চাই না। আমার বেশ কিছু দুঃস্বপ্ন আছে।

সে সেটার পর আমার সাথে কোন তর্কে গেল না।

এখন কথা বলার জন্য খুব ভাল সময় হতে পারে। যে সকল প্রশ্নের উত্তর আমার জানা দরকার সেগুলো জানার জন্য। জানা প্রয়োজন কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমার সেটার দরকার নেই। আমি এরই মধ্যে সে সকল বিষয় বিস্তৃত হতে শুরু করেছি। আমাদের দুজনের মধ্যে একটা অমোচনীয় সময়ের ব্লক আছে। সে একটা এরোপ্লেন থেকে আমার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারবে না। বেশ। এতটা সহজে নয়। অন্ততপক্ষে কেউ আমাদের কথা শুনছে না শুধুমাত্র এলিস ছাড়া। দেরি হয়ে গেছে। অধিকাংশ যাত্রীই আলো নিভিয়ে দিয়েছে। খুব নিচু গলায় তারা তাদের জন্য বালিশ চেয়ে যাচ্ছে। কথাবার্তা বলা আমাকে এই ক্লান্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাহায্য করবে।

কিন্তু, বিপরীতভাবে, আমি আমার জিহ্বায় কামড় খেলাম প্রশ্নের তোড়ের ব্যাপারে। আমার প্রশ্নের তোড় সম্ভবত ক্লান্তির তোড়ে ভেসে গেছে। কিন্তু আমি আশা করেছিলাম এই আলোচনা বন্ধ করে রাখলে আমি তার সাথে আরো বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য থাকতে পারব। পরবর্তী কোন সময়ে আরেকটা রাতের জন্য।

সুতরাং আমি সোডা ওয়াটার পান করায় নিজেকে ব্যস্ত রাখলাম। নিজেকে ব্যপ্ত রাখলাম শূন্যতার মাঝে। এ্যাডওয়ার্ডকে দেখে মনে হচ্ছে আমাকে তার বাহুর মধ্যে ধরে রাখার জন্য ব্যস্ত। তার আঙুলগুলো আমার মুখমন্ডল বারবার অনুভব করে যাচ্ছে। আমি ভীত হয়ে পড়লাম এটা পরবর্তীতে আমাকে কষ্ট দেবে ভেবে। যখন আমি আবার একাকী হয়ে পড়ব। সে আমার চুলে চুমু খেয়ে যেতে লাগল। আমার কপালেও। আমার হাতে….কিন্তু কখনও আমার ঠোঁটে নয়। সেটাই ভাল। সর্বোপরি, কতগুলো পথে একটা হৃদয় স্পন্দিত হতে পারে এবং এখন আরো কত হৃৎস্পন্দন আশা করতে পারে? গত শেষ কয়দিনের তার সাথের আমার স্মৃতি নিয়ে আমি বাস করতে পারব। কিন্তু আমি এটা আমাকে কোন শক্তিশালী অনুভূতি দিচ্ছিল না। পরিবর্তে আমি ভেতরে ভেতরে অনুভব করছিলাম ভয়ানক রকম ভঙ্গুর অবস্থা। যেমনটি একটা কথায় আমাকে কাঁপিয়ে তোলে।

এ্যাডওয়ার্ড কোন কথা বলছিল না। হতে পারে সে আশা করছিল আমি হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছি। হতে পারে তার কিছুই বলার ছিল না।

আমি আমার নিজের সাথের সেই বিশাল লড়াইয়ে জিতে গেলাম। আমি জেগে উঠলাম যখন আমরা পৌঁছে গেলাম আটলান্টা বিমানবন্দরে। আমি এমনকি এও দেখতে পেলাম সূর্য উদিত হতে শুরু করেছে সিয়াটলের মেঘের উপর দিয়ে। এ্যাডওয়ার্ড জানালার কভার টেনে দেয়ার আগেই সেটা দেখলাম। আমি নিজেকে নিয়ে গর্বিত হয়ে উঠলাম। আমি এক মিনিটও মিস করি নাই।

এলিস অথবা এ্যাডওয়ার্ড কেউ বিস্মিত হলো না সি-টাক বিমানবন্দরের অভ্যর্থনা কক্ষে। কিন্তু এটা আমার চোখে পড়ল। জেসপারই হলো প্রথম ব্যক্তি যাকে আমি দেখলাম। সে আমাকে এখনও দেখেছে বলে মনে হলো না। তার চোখ শুধু মাত্র এলিসের উপরেই। এলিস দ্রুত তার পাশে চলে গেল। তারা অন্য জোড়ার মত দেখা হলে যেমন কোলাকুলি করে তেমনটি করল না। তারা শুধু একে অন্যের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। যাই হোক, সেই মুহূর্ত এতটাই ব্যক্তিগত যে আমি তখনও অন্যদিকে তাকিয়ে থাকার প্রয়োজন বোধ করছিলাম।

কার্লিসল ও এসমে একটা নির্জন কোণার দিকে অপেক্ষা করছিল। যেটা মেটাল ডিক্টেটরের লাইন থেকে বেশ দূরে। একটা বিশাল পিলারের ছায়ার আড়ালে। এসমে আমার জন্য এগিয়ে এল। আমাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরল। কিছুটা অদ্ভুতভাবেও। কারণ এ্যাডওয়ার্ড তখন তার বাহু দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিল।

তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সে আমার কানের কাছে বলল।

তারপর সে তার হাত এ্যাডওয়ার্ডের দিকে বাড়িয়ে দিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যদি সম্ভব হতো তাহলে সে হয়তো কেঁদে ফেলতো।

তুমি কখনই আমাকে আর এরকম অবস্থার মধ্যে ফেলবে না। সে প্রায় গোঙানির স্বরে বলল।

এ্যাডওয়ার্ড মুখ বিকৃত করল। সে অনুতপ্ত। সরি মা।

 তোমাকে ধন্যবাদ বেলা। কার্ল বলল। আমরা তোমার প্রতি ঋণী।

কিছুটা। আমি বিড়বিড় করে বললাম। সেই নিঘুম রাত হঠাৎ করে আমার উপর ভর করল। আমার মাথা মনে হচ্ছিল আমার শরীর থেকে ছাড়িয়ে পড়ে যাবে।

সে তার পায়ের উপর দাঁড়াতে পারছে না। মরার মত অবস্থা। এসমে এ্যাডওয়ার্ডকে বকল। আগে তাকে বাড়িতে নিয়ে চলো।

নিশ্চিত নই যদি বাড়ি বলতে আমি এই মুহূর্তে যেটা চাইছি সেটাই বোঝাচ্ছে কিনা। আমি হতবুদ্ধি হয়ে গেলাম। এয়ারপোর্টের ভেতরেই। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে একপাশে টেমে সরিয়ে নিয়ে এল এসমে আরেক পাশ থেকে ধরে। আমি জানি না এলিস ও জেসপার আমার পিছনে আছে কিনা। আমি এতটাই ক্লান্ত ছিলাম যে তাকাতে পারছিলাম না।

আমি মনে করছিলাম আমি অধিকাংশই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। যদিও আমি তখনও হাঁটছিলাম। যখন আমরা গাড়ির কাছে পৌঁছালাম। আরো বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। দেখলাম এমেট ও রোসালি কালো রঙের সিডান গাড়ির উপর ঝুঁকে আছে পাকিং গ্যারেজের মৃদু আলোর মধ্যে। এ্যাডওয়ার্ড শক্ত হয়ে গেল।

ওরকম করো না। এসমে ফিসফিস করে বলল। সে নিজেকে ভয়ানক অপরাধী মনে করছে।

সে করবে। এ্যাডওয়ার্ড বলল। তার কণ্ঠস্বর নিচুতে রাখার কোন চেষ্টাই করল না।

এটা তার কোন দোষ নয়। আমি বললাম। আমার কথাগুলো ক্লান্তিতে যেন জড়িতে যেতে লাগল।

তাকে এমেটের দিকে নিয়ে চলো। এসমে বলল। আমরা এলিস ও জেসপারের সাথে চড়ব।

এ্যাডওয়ার্ড তাকিয়ে দেখল ভালবাসাপূর্ণ ভ্যাম্পায়াররা আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

দয়া করো এ্যাডওয়ার্ড। আমি বললাম। আমি রোসালির সাথে কোনভাবেই যেতে চাচ্ছিলাম না। তারপরও আমি তাকে দেখে মনে হলো। কিন্তু আমি তাদের…

সে নিঃশ্বাস ফেলে আমাকে গাড়ির দিকে এগিয়ে নিল।

এমেট এবং রোসালি কোন কথাবার্তা বলা ছাড়াই সামনের সিটে যেয়ে বসল। এ্যাডওয়ার্ড আমাকে আবারও পিছনে নিয়ে এল। আমি জানতাম আমি আমার চোখের পাপড়ির সাথে লড়াই করে পারছি না। আমার মাথা তার বুকের উপর দিয়ে রাখলাম। আরো কাছাকাছি হলাম। আমি অনুভব করলাম গাড়ি যেন আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।

এ্যাডওয়ার্ড। রোসালি শুরু করল।

আমি জানি। এ্যাডওয়ার্ডের কণ্ঠস্বরকে কোনমতেই ভদ্র বলা যাবে না।

বেলা? রোসালি নরম স্বরে জিজ্ঞেস করল।

আমার চোখের পাতা কাঁপতে লাগল খোলার জন্য। এটাই প্রথমবার যখন সে সরাসরি আমার সাথেই কথা বলছে।

হ্যাঁ রোসালি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। দ্বিধান্বিত।

 আমি খুবই দুঃখিত বেলা। আমি অনুভব করছি এই অংশের ব্যাপারে জঘন্য অবস্থা। এতটাই কৃতজ্ঞ যে তুমি যথেষ্ট সাহস করে গিয়েছো আমার ভাইকে রক্ষা করতে। আমি তোমার প্রতি যা করেছিলাম তার পরও। দয়া করে আমাকে বলে যে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছে।

কথাগুলো ছিল ভয়ানক। কারণ তার বিব্রতকর অবস্থায়। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে সত্যিই আন্তরিক।

অবশ্যই রোসালি। আমি বিড়বিড় করে বললাম। তাকে কোন সুযোগ দিতে চাইলাম না যাতে আমাকে কোনভাবে ঘৃণা করতে পারে। এটা তোমার দোষ ছিল না আদৌও। আমিই সেই একজন যে ওই জঘন্য বাড়ির উপর থেকে লাফ দিয়েছিলাম। অবশ্যই আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

কথাগুলো আমার কাছে অদ্ভুতভাবে এলো।

এটা কোন ধর্তব্যের মধ্যে আসবে না কারণ সে যতক্ষণ না রোজ সচেতন অবস্থায় আসে। এমেট বলল।

আমি সচেতন আছি। আমি বললাম। এটা আমার কাছেই অন্যরকম শোনাল।

তাকে ঘুম পড়তে দাও। এ্যাডওয়ার্ড জোর দিয়ে বলল। কিন্তু তার কণ্ঠস্বর এখন কিছুটা উষ্ণ বলেই মনে হলো।

এটা তারপরে অনেক শান্ত অবস্থা। শুধুমাত্র ইঞ্জিনের এক ঘেয়ে শব্দ ছাড়া। আমি অবশ্যই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কারণ এটা দেখে মনে হচ্ছিল এক সেকেন্ড পরেই দরজা খুলে গেল এবং এ্যাডওয়ার্ড আমাকে গাড়ি থেকে বহন করে নিয়ে চলল। আমার চোখ খুলল না। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম আমরা এখনও বিমানবন্দরেই আছি।

তারপর আমি চার্লির গলা শুনতে পেলাম।

বেলা! তিনি কিছুটা দূর থেকে চিৎকার দিলেন।

 বাবা। আমি বিড়বিড় করে বললাম। চেষ্টা করছিলাম জেগে উঠতে।

শশশ। এ্যাডওয়ার্ড ফিসফিস করে বলল। এটা ঠিক আছে। তুমি এখন বাড়িতে এবং নিরাপদ। শুধু ঘুমিয়ে পড়া।

আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না যে তোমার স্নায়ুর জোর আছে তুমি এখনও তোমার মুখ এখানে দেখাচ্ছ। চার্লি এ্যাডওয়ার্ডের দিকে তাকিয়ে বললেন। তার কণ্ঠস্বর এখন অনেক বেশি কাছে।

এটা বন্ধ করো বাবা। আমি গুঙিয়ে উঠলাম। তিনি আমার কথা শুনতে পেলেন না।

 তার কি হয়েছে? চার্লি জানতে চাইলেন।

সে শুধুমাত্র খুবই ক্লান্ত চার্লি। এ্যাডওয়ার্ড শান্তভাবে তাকে নিশ্চিত করল। দয়া করে তাকে বিশ্রামে থাকতে দিন।

আমাকে বলতে যেও না আমার কি করতে হবে! চার্লি চেঁচিয়ে উঠলেন। তাকে আমার কাছে দাও। তোমার হাত তার উপর থেকে সরাও।

এ্যাডওয়ার্ড আমাকে চার্লির কাছে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু আমি তাকে আঁকড়ে জড়িয়ে থাকলাম। আমার হাতের আঙুল দিয়ে। আমি অনুভব করতে পারলাম আমার বাবা বাহুর ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।

আমাকে ছেড়ে দাও বাবা। আমি আরো বেশি জোরে বললাম। আমি চেষ্টা করে কোনমতে ম্যানেজ করলাম আমার চোখের পাতা খোলা রেখে এক দৃষ্টিতে চার্লির দিকে তাকাতে। আমার জন্য পাগল হয়ে গেছ।

আমরা আমাদের বাড়ির সামনে। সামনের দরজাটা খোলা আছে। আকাশের মেঘ এতটাই ঘন হয়ে আছে মাথার উপর এটা দিনের কোন সময় সেটা অনুমান করা মুশকিল।

তুমি বাজি ধরতে পার আমি সেরকমই হয়ে গিয়েছিলাম। চার্লি প্রতিজ্ঞা করলেন। ভেতরে যাও।

এ্যাই, আমাকে নিচে নামিয়ে দাও। আমি নিঃশ্বাস নিলাম।

এ্যাডওয়ার্ড আমাকে পায়ের উপর দাঁড় করিয়ে দিল। আমি দেখতে পেলাম যে আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু আমি আমার পায়ের কোন অনুভব পাচ্ছি না। আমি সামনের দিকে কোনভাবে এগিয়ে চললাম। যতক্ষণ না পাশের অংশটা আমার মুখের সামনে এল। কনক্রীটের মেঝের উপর পড়ে যাওয়ার আগে এ্যাডওয়ার্ডের বাহু আমাকে ধরে ফেলল।

আমাকে ওকে উপরে নিয়ে যেতে দিন। এ্যাডওয়ার্ড বলল। তারপর আমি চলে যাব।

না। আমি কেঁদে উঠলাম। আতংকিত হলাম। আমি তখনও আমার উত্তরগুলো পাইনি। তাকে এখানে থাকতে হবে কমপক্ষে যতটুকু আমার দরকার, সে থাকবে না কি?

আমি খুব বেশি দূরে যাব না। এ্যাডওয়ার্ড প্রতিজ্ঞা করল। আমার কানের কাছে এতটাই নিচু স্বরে ফিসফিস করে বলল যে চার্লি তা শোনার জন্য কোন মতেই আশা করতে পারে না।

আমি চার্লির উত্তর শুনতে পেলাম না। কিন্তু এ্যাডওয়ার্ড বাড়ির দিকে এগিয়ে চলল। আমার খোলা চোখে এটা শুধু সিঁড়িটা দেখতে পেলাম। শেষ যে জিনিসটা আমি অনুভব করলাম সেটা হচ্ছে এ্যাডওয়ার্ডের ঠাণ্ডা শীতল হাত, যেটা আমার আঙুলগুলোকে আঁকড়ে আছে।

.

২৩.

আমার মনে হচ্ছিল যে আমি বোধহয় দীর্ঘ সময় যাবত ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলাম। আমার শরীর শক্ত হয়েছিল। এরকমটি যেন আমি এক সাথে গোটা শরীর নাড়াতে পারছিলাম না। আমার মনের অবস্থায় সুবিধের ছিল না। সেটা ঘূর্ণিবর্তী এবং ধীর গতির। অদ্ভুত। বর্ণময় স্বপ্নীল। স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্ন। যেগুলো আমার মাথার মধ্যে চক্রাকারে ঘুরছিল। সেগুলো বিভিন্ন রকমের। ভয়ানক এবং স্বর্গীয়। সবগুলো মিশে জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গিয়েছিল। সেখানে ছিল তীব্র অধৈৰ্য্য এবং ভয়ের মিশ্রণ। স্বপ্নের উভয় অংশেই হতাশাযুক্ত স্বপ্ন যেটাতে পা নাড়াতে পারছিলাম দ্রুতগতিতে…এবং সেখানে অসংখ্য দৈত্য ছিল। লালচোরা-যেগুলো ভয়ানকভাবে তেড়ে আসছিল। স্বপ্নগুলো তখনও খুব মজবুত ছিল। আমি এমনকি নামগুলোও মনে করতে পারি। কিন্তু সবচেয়ে মজবুত সবচেয়ে পরিষ্কার অংশ, স্বপ্নের অংশটা, ভয়ের ছিল না। এটা ছিল স্বর্গীয় দেবদূত যেটা আরো বেশি পরিষ্কার ছিল।

এটা খুবই কঠিন ছিল যে স্বপ্ন থেকে তাকে যেতে দেয়া এবং জেগে উঠা। এই স্বপ্নগুলো এমন ছিল না যে এগুলো স্বপ্নের খনি থেকে উঠে আসছে এবং আবার দেখা যাবে। আমি আমার মনের সাথে লড়াই করছিলাম আরো বেশি সচেতন আরো বেশি বাস্তবতার প্রতিফলন টনার জন্য। আমি মনে করতে পারছিলাম না এটা সপ্তাহের কোন দিন। কিন্তু আমি নিশ্চিত জ্যাকব স্কুল অথবা কাজ অথবা অন্য কিছু আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। বিস্মিত কীভাবে আরেকটি দিনের মুখোমুখি হব।

ঠাণ্ডা কিছু একটা আমার কপাল স্পর্শ করছিল। সেটা খুব মৃদু মৃদু চাপ দিচ্ছিল।

আমি আমার চোখ আরো জোর করে বন্ধ করে রাখলাম। এটা তখনও স্বপ্নের ভেতরেই। এটা দেখে মনে হয়। এটা অস্বাভাবিকভাবে বাস্তব অনুভূত হয়। আমি এতটাই জেগে উঠার কাছাকাছি ছিলাম… প্রতিটি সেকেন্ডে এখন এবং এটা চলে যেতে পারে।

কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম যে এটা এতটাই বাস্তব অনুভূত হচ্ছে যে এটা আমার জন্য ভাল হবে। সেই পাথুরে হাত যেটা আমি কল্পনা করি আমার চারিদিকে জড়িয়ে থাকে, খুব বেশি দূরে নয়। যদি আমি এটাকে আরো দূরে যেতে দেই, আমি এটার জন্য পরে দুঃখিত হবো। দীর্ঘশ্বাসের সাথে আমি চোখের পাতা কচলালাম এই বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য।

ওহ! আমি শ্বাস নিলাম। আমার মুষ্টি চোখের উপর ছুঁড়ে দিলাম।

বেশ, পরিষ্কারভাবে, আমি খুব দূরে যেতে পারি। এটা অবশ্যই একটা ভুল হবে আমার কল্পনাকে যেতে দিতে আমার হাতের নাগালের বাইরে। ঠিক আছে, তো, যেতে দেয়া হচ্ছে ভুল শব্দ। আমি এটাকে জোর দিয়ে হাতছাড়া বলতে পারি। যেটা আমার হ্যালুসিনেশনের জন্য অনেকখানি উপযুক্ত শব্দ। এখন আমার মন ধাক্কা খেয়েছে।

আমি অর্ধ সেকেন্ডের বেশি সময় নিলাম ব্যাপারটা বুঝতে। যতটাই দীর্ঘ সময় আমি এখন সত্যিকারের পাগল কিনা। আমি এর চেয়ে আমার বিভ্রান্তিটাকে উপভোগ করতে পারি।

আমি চোখ খুললাম। এ্যাডওয়ার্ড এখনো সেখানে। তার মুখটা আমার মুখ থেকে মাত্র ইঞ্চি খানেক দূরে।

আমি কি তোমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছি? তার নিচুলয়ের স্বরে উদ্বিগ্নতা।

এটা খুবই ভাল। বিভ্রান্তিটা চলে গেছে। মুখটা, সেই কণ্ঠস্বর, সেই সুঘ্রাণ, সবকিছুই। এটা ডুবে যাওয়ার চাইতে অনেক বেশি ভাল। আমার কল্পনার সুন্দরতম অংশ আমার অভিব্যক্তি পরিবর্তনের সংকেত দিচ্ছে। তার চোখের মণি আলকাতরা কালো, সেগুলোর নিচে ছায়া। এটা আমাকে বিস্মিত করল। আমার হ্যালুসিনেশনের ফলে এ্যাডওয়ার্ড এখন অনেক ভাল অবস্থানে।

আমি দুইবার চোখের পলক ফেললাম। বেপরোয়াভাবে শেষ যে জিনিসটা মনে করার চেষ্টা করলাম যে আমি নিশ্চিত এটা বাস্তব ছিল। এলিস আমার স্বপ্নের অংশ ছিল। আমি বিস্মিত যদি এলিস সত্যিই আদৌ ফিরে আসে। অথবা যদি সেটা শুধুমাত্র পুর্ব ধারণা হয়ে থাকে। আমি ভেবেছিলাম সে ফিরে আসবে আমি যেদিন ডুবে যাওয়ার কাছাকাছি…

ওহ, সব ভেঙে চুরে গেছে। আমি গুঙিয়ে উঠলাম। আমার কণ্ঠস্বর ঘুমে জড়ানো।

কি সমস্যা বেলা?

আমি তার দিকে খুশির সাথে তাকালাম। তার মুখ আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্নতায় ভরা।

আমি মৃত। ঠিক? আমি গুঙিয়ে উঠলাম। আমি ডুবে গিয়েছিলাম। এটা চার্লিকে মেরে ফেলতে যাচ্ছে।

এ্যাডওয়ার্ড ভ্রু কুঁচকাল। তুমি মৃত নও।

তাহলে কেন আমি জেগে উঠছি না? আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। আমার → উপরে তুললাম।

তুমি জেগে আছো বেলা।

আমি মাথা নাড়লাম। নিশ্চয়, নিশ্চয়। সেটাই তাই যেটা তুমি আমাকে ভাবতে বলছ। এবং তারপর এটা আরো বেশি খারাপ হবে যখন আমি জেগে উঠব। যদি আমি জেগে উঠি। যেটা আমি করতে চাই না। কারণ আমি মৃত। সেটা হবে ভয়ানক। বেচারা চার্লি। এবং রেনে এবং জ্যাক… আমি ভয়ে শিহরিত হয়ে উঠলাম আমি কি করেছি ভেবে।

আমি দেখছি কোথায় তুমি আমাকে কনফিউজ করতে পারে একটা দুঃস্বপ্নের সাথে। তার ছোট্ট হাসিটা ভেংচিতে পরিণত হলো। কিন্তু আমি কল্পনা করতে পারি না যে তুমি নরকের আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছ। তুমি কি কয়েকটা খুন করেছ আমি যখন চলে গিয়েছিলাম?

আমি মুখ ভেংচি দিলাম। অবশ্যই না। যদি আমি নরকে যাই। তুমি কি আমার সাথে যাবে না।

সে নিঃশ্বাস ফেলল।

আমার মাথা পরিষ্কার হয়ে গেল। আমার চোখ জোড়া পলক ফেলল তার মুখের উপর থেকে। অনিচ্ছাকৃতভাবে। এক সেকেন্ডের জন্য, অন্ধকারের দিকে। খোলা জানালা দিয়ে। তারপর তার দিকে ফিরে এল। আমি সবকিছুই মনে করার চেষ্টা করতে শুরু করলাম… এবং আমি অনুভব করলাম মুছা যাওয়ার। অপরিচিত উষ্ণ একটা অনুভূতি আমার শরীরের উপর দিয়ে আমার থুতনিতে নেমে এল, যখন আমি বুঝতে পারলাম যে এ্যাডওয়ার্ড সত্যিই আমার সাথে এবং আমি বোকার মত ইডিয়টের মত আমার সময় নষ্ট করছি।

এইসব কিছুই কি সত্যিই ঘটেছিল, তারপর? এটা প্রায় অসম্ভব যে আবার নতুন করে আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দান করা। এটা আমার মাথাকে ওই ধারণায় ঢেকে দিতে পারছে না।

সেটা নির্ভর করছে, এ্যাডওয়ার্ডের হাসি এখনও বেশ কঠিন। যদি তুমি ইতালির সেই জঘন্য ম্যাসাকারকে টেনে তুলে আনো তাহলে, হ্যাঁ।

কতটা অদ্ভুত। আমি হাসলাম। আমি সত্যিই ইতালিতে গিয়েছিলাম। তুমি কি জানতে আমি কখনও বাইরের দূরে যাইনি?

সে তার চোখ ঘুরাল। হতে পারে তুমি এখন আবার ঘুমিয়ে পড়তে পারো। তুমি এখনও সংলগ্ন কথাবার্তা বলছ না।

আমি আর কোনরকম ক্লান্ত নই। এটা প্রায় পুরোটাই এখন আমার কাছে পরিষ্কার। এখন কত বাজে? আমি কতটা সময় ধরে ঘুমিয়েছি?

এটা মাত্র সকালের এক ঘণ্টা হয়েছে। সুতরাং প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা।

সে যখন কথা বলছিল তখন আমি শরীর টান টান করে দিলাম। আমি এতটাই শক্ত হয়ে আছি।

চার্লি? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

এ্যাডওয়ার্ড ভ্রু কুঁচকাল। ঘুমাও। তুমি সম্ভবত জেনে থাকবে যে আমি সেই নিয়মকানুনগুলো এখন ভেঙে ফেলেছি। বেশ, সেটা টেকনিক্যালি নয়, যখন সে বলেছিল আমি আর কখনও যেন তার দরজা না মাড়াই। তো আমি জানালা দিয়ে এসেছি…কিন্তু এখনও, ধারণাটা অতি পরিষ্কার।

চার্লি তোমাকে এই বাড়িতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম। অবিশ্বাস দ্রুততার সাথে রাগে রুপ নিল।

তার চোখগুলি দুঃখিত হয়ে গেল। তুমি কি সেইটা ছাড়া আর কোন কিছু আশা করেছিলে?

আমার চোখের দৃষ্টি পাগলের মত হয়ে গেল। আমার বাবার সাথে কিছু কথা বলতে হবে। সম্ভবত এটা খুব ভাল সময় যে তাকে মনে করিয়ে দেয়া যে আমি এখন বয়সের দিক দিয়ে আইনগত সীমানায় পৌঁছে গেছি। সেটা অতটা বিষয় করে না। অবশ্যই। অতি শীঘ্রই সেখানে কোন বাধ্যবাধকতা থাকবে না। আমি আমার চিন্তা ভাবনা ঘুরিয়ে আরো কম কষ্টজনক বিষয়ে নিয়ে গেলাম।

ঘটনাটা কি? আমি জিজ্ঞেস করলাম। প্রকৃতপক্ষেই উৎসাহী। কিন্তু বেপরোয়াভাবে চেষ্টা করছি বিষয়টি স্বাভাবিক রাখার। একটা শান্ত ধারণা রাখা। আমি তাকে ভয় পাইয়ে দিতে চাই না। যে ভয়ংকর বিয়য়গুলো আমার মনের মধ্যে খেলে বেড়াচ্ছে।

তুমি কি বোঝাতে চাইছ?।

আমি চার্লিকে কি বলতে যাচ্ছি। আমার এই উধাও হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কি অজুহাত খাড়া করব…কতটা সময় ধরে আমি চলে গিয়েছিলাম, যাই হোক? আমি মাথার ভেতরে সময়টা গোণার চেষ্টা করতে লাগলাম।

শুধুমাত্র তিনদিনের জন্য। তার চোখ জোড়া স্থির হয়ে রইল। কিন্তু সে এইবারে আমার দিকে তাকিয়ে অনেক বেশি স্বাভাবিক হাসি দিল। প্রকৃতপক্ষে, আমি আশা করছি তোমার কাছে খুব ভাল কোন ব্যাখ্যা থাকতে পারে। আমি কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না।

আমি গুঙিয়ে উঠলাম। অপুর্ব।

বেশ, হতে পারে এলিস কোন কিছুর ধারণা অজুহাত নিয়ে আসতে পারে। সে অফার করল। আমাকে স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করছে।

আমি বেশ স্বস্তি পেলাম। কে পরোয়া করে আমি পরবর্তীতে কি নিয়ে ডিল করতে যাচ্ছি? প্রতি সেকেন্ডে সে আমার সাথে ছিল। এতটাই কাছাকাছি। তার সেই অপূর্ব মুখ সবসময় আমার প্রতি নিবদ্ধ ছিল। সেটাই খুব মূল্যবান এবং সেটা ফেলনা কিছু নয়। অপচয়ের কিছু নয়।

তো আমি শুরু করলাম। সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ অংশটা তুলে নিলাম। যদিও এখন গুরুত্বপূর্ণভাবে উৎসাহজনক। প্রশ্নটা শুরু করার জন্য। আমি নিরাপদে বাড়িতে আসতে পেরেছি। হয়তো সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেকোন মুহূর্তে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আমি তাকে কথাবার্তা বলায় ব্যস্ত রাখতে চাই। পাশাপাশি, এই অস্থায়ী স্বর্গে পুরোপুরি তার কণ্ঠস্বর ছাড়া সম্পূর্ণ হবে না। সেই তিন দিন আগে তুমি কি করছিলে?

তার মুখ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে গেল মুহূর্তের মধ্যেই। তেমন ভয়ানক উত্তেজনাপূর্ণ তেমন কিছু নয়।

অবশ্যই না। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

তুমি মুখটা অমন করে রেখেছো কেন?

বেশ… আমি ঠোঁট কামড়ে ধরলাম। বিবেচনা করছি। যদি তুমি এসব কিছুর পর, শুধু স্বপ্ন হয়ে থাক, তাহলে প্রকৃতপক্ষে তুমি সেই প্রকারের জিনিস বলতে পারবে। আমার কল্পনা অবশ্যই এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে।

সে নিঃশ্বাস নিল। যদি আমি তোমাকে সেটা বলি, তুমি কি শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করবে যে তুমি কোন দুঃস্বপ্নের মধ্যে বসে নেই?

দুঃস্বপ্ন! আমি আশ্চর্যজনক গলায় পুনরাবৃত্তি করলাম। সে আমার উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। হতে পারে। আমি এক সেকেন্ড চিন্তা করে বললাম। যদি তুমি আমাকে সেটা বল।

আমি…শিকার খুঁজছিলাম…শিকার করছিলাম।

এটাই সবচেয়ে ভাল জিনিস যেটা তুমি করতে পার? আমি বিদ্রূপ করলাম। সেটা প্রকৃতপক্ষে এটা বোঝায় না যে আমি স্বপ্ন দেখছি না।

সে দ্বিধা করতে লাগল। তারপর আস্তে আস্তে বলতে শুরু করল। খুব সাবধানে তার শব্দগুলো সে বাছাই করে নিচ্ছিল। আমি খাবারের জন্য শিকার করছিলাম না…আমি প্রকৃতপক্ষে চেষ্টা করছিলাম আমার হাতে…ট্রাকিং। আমি এটাতে খুব একটা দক্ষ নই।

তুমি কি ট্রাকিং করছিলে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

ফলাফলের জন্য কিছুই নয়। তার শব্দগুলো তার অভিব্যক্তির সাথে মিলল না। তাকে বেশ আপসেট দেখাল। অস্বস্তিকরভাবে।

আমি বুঝতে পারছি না।

সে দ্বিধান্বিত। তার মুখ ঘড়ির আলোয় একটা সবজেটে উজ্জলতা দেখাচ্ছিল।

আমি- সে বড় করে শ্বাস নিল। আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সাথে ঋণী। না। অবশ্যই আমি তোমার কাছে অনেক বেশি ঋণী। অনেক বেশির চেয়ে বেশি কিছু। কিন্তু তোমাকে জানতে হবে– শব্দগুলো আমার কাছে এত দ্রুত এল যে, আমার মনে পড়ে গেল যখন সে ইতস্ততবোধ করে তখন সে এই ভঙ্গিতেই কথা বলে। আমি সত্যি সত্যিই মনোযোগ দিলাম তার সব কথার ব্যাপারেই।

আমার কোন ধারণা ছিল না। আমি সেই জগাখিচুড়ি অবস্থাটার ব্যাপারে বুঝতে পারছিলাম না, যা আমি পিছনে ছেড়ে চলে এসেছি। আমি ভেবেছিলাম এটা তোমার জন্য নিরাপদই হবে। এতটাই নিরাপদ। আমার কোন ধারণাই ছিল না ভিক্টোরিয়ার ব্যাপারে তার ঠোঁট বেকে গেল যখন সে তার নাম বলল- ফিরে আসতে পারে। আমি স্বীকার করব। যখন আমি তাকে দেখলাম সেই একবার। আমি আরো বেশি মনোযোগ দিলাম ভিক্টোরিয়ার জেমসের ব্যাপারে অনুভূতির ব্যাপারে। আমি সে চিন্তা করলাম। কিন্তু আমি শুধু দেখতে পায়নি যে সে এই প্রকৃতির প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সেটা যে এমনকি সে জেমসের ব্যাপারে একটা নিরুৎসাহী ভাব দেখাচ্ছিল। আমি মনে করি। আমি বুঝতে পেরেছি কেন সেটা এখন-সে তার ব্যাপারে এতটাই নিশ্চিত ছিল, তার পড়ে যাওয়ার চিন্তাটা কখনও তার ভেতরে আসেনি। এটা ছিল তার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস যেটা জেমসের প্রতি তার অনুভূতিকে অন্ধ করে দিয়েছিল। সেটাই আমাকে তাদের ভালবাসার গভীরতার ব্যাপারে ভাবিয়ে তুলেছিল, যেখানে একটা দৃঢ় বন্ধন ছিল।

সেটা কোন অজুহাত হতে পারে না যে আমি তোমাকে কি মুখোমুখি হওয়ার জন্য ছেড়ে দিয়েছি। যখন আমি শুনতে পেলাম তুমি এলিসকে বলেছ– সে নিজে যেটা দেখেছে–যখন আমি বুঝতে পারলাম যে তুমি তোমার জীবন নিবেদিত করেছ মায়ানেকড়ে মানবের হাতে, অপরিপক্ক, ভিক্টোরিয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে খারাপ যে জিনিসটা- সে কাঁপতে লাগল। কথার তুড়ি এক সেকেন্ডের জন্য হোঁচট খেয়ে থমকে দাঁড়াল। দয়া করে জানোবোধহয় যে আমার এ ব্যাপারে কোন ধারনাই ছিল না। আমি অসুস্থ অনুভব করছিলাম। অসুস্থ অনুভব করছিলাম আমার অন্তরের ভেতর থেকে। যখন আমি বুঝতে পারলাম তুমি এবং দেখতে পেলাম, অনুভব করলাম যে তুমি আমার বাহুর মধ্যে নিরাপদ। আমার আছে সবচেয়ে দুঃখজনক অজুহাত এটার জন্য

বন্ধ করো। আমি তাকে বাধা দিলাম। সে আমার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে রইল। আমি সঠিক শব্দ খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলাম। সেই শব্দটা যেটা তাকে তার কল্পনা থেকে তার বাধ্যকতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করবে। যা তাকে এতটাই কষ্ট দিচ্ছে। আমাকে বলার জন্য সেগুলো খুবই কঠিন শব্দ। জানি না আমি যদি সেই শব্দগুলো কোন বিরতি ছাড়াই বের করতে পারি। কিন্তু আমাকে সেটা এই মুহূর্তে করার চেষ্টা করতে হবে। আমি একটা দোষীর উৎস হতে চাই না। তার জীবনে দুর্ভাবনার প্রতিমূর্তি হতে। সে সুখী হবে। সেটা কোন ব্যাপার না এটা আমার জন্য কতটা ব্যয়বহুল হবে।

আমি সত্যিই আশা করছিলাম আমাদের শেষ কথোপকথনে তার জীবন থেকে সরে যেতে। এটা একটা শেষ হওয়ার জন্য যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভাল।

আমার সকল চেষ্টা এই এক মাসের সকল সাজানো কথাবার্তা চেষ্টা করছিলাম চার্লির জন্য স্বাভাবিক হতে। আমি আমার মুখ স্বাভাবিক মসৃণ রাখতে চেষ্টা করলাম।

এ্যাডওয়ার্ড। আমি বললাম। তার নাম আমার বুকের ভেতর জ্বলতে লাগল। গলার কাছে পুড়তে লাগল। আমি সেই গভীর ক্ষতের অনুভব ভেতরে অনুভূত হলো। অপেক্ষা করছিলাম এটা তরঙ্গায়িত হয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যায়। আমি এইবারে কতটা রক্ষা করতে পারব সে ব্যাপারে দেখতে পেলাম না। এটা এখনই শেষ করতে হবে। তুমি চিন্তা করতে পারো যেভাবে তুমি চিন্তা করছ। তুমি এটাকে যেতে দিতে পারো না….এই দোষী…তোমার জীবনের নিয়মকানুন। তুমি এর জন্য কোন দায়ী করতে পারো না যেটা আমার ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে। এর কোনটাই তোমার দোষ নয়। এটা আমার জীবনেরই অংশ জীবন আমার জন্য কীভাবে গড়ে উঠেছে। সুতরাং যদি আমি বাসের সামনে একটা যাত্রা করি অথবা পরবর্তী সময়ে এটা যেটাই হোক না কেন। তোমার এটা বোঝা উচিত যে এটা তোমার কাজ নয় যে এটার ব্যাপারে নিজেকে দোষী ভাবা। তুমি শুধু ইতালিতে উড়ে যেতে পারো না, কারণ তুমি খারাপ অনুভব করছ, তুমি আমাকে রক্ষা করো নাই। যদি আমি ক্লিফ থেকে মরার জন্য লাফ দিয়ে পড়ি, তাহলে এটা হবে আমার নিজের দায়িত্বে, নিজের পছন্দে এবং এটা তোমার কোন দোষ নয়। আমি জানি এটা তোমার…তোমার প্রকৃতি যে সব কিছুর জন্য নিজেকে দোষী ভাবাই তোমার স্বভাব। কিন্তু তুমি প্রকৃত পক্ষেই কোন কিছুই এভাবে নিজেকে ভেবে নিতে পারো না। এটা খুবই অমনোযোগীতার ব্যাপার এসমে এবং কার্লের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করো।

আমি একেবারে নিজেকে নিয়ন্ত্রণহীন করার ব্যাপারে শেষ প্রান্তে চলে এলাম। থমকে গেলাম নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য। আশা করছিলাম যে নিজেকে শান্ত করতে পারব। আমি তাকে মুক্ত করতে চাই। নিশ্চিত হতে চাই এটা আর কখনওই ঘটবে না।

ইসাবেলা মেরি সোয়ান। সে ফিসফিস করে বলল। একটা অদ্ভুত অভিব্যক্তি তার মুখের উপর দিয়ে খেলে গেল। তাকে প্রায় মাতালের মত পাগলের মত দেখাল। তুমি কি বিশ্বাস করো যে আমি ভলচুরিকে বলেছিলাম আমাকে হত্যা করতে কারণ আমি নিজেকে দোষী মনে করি?

আমার মুখের উপর দিয়ে একটা শূন্য অনুভূতি খেলে গেল। তাই করো নি কি?

দোষী অনুভব করব? ইনটেনসলি সেরকমই। যখন তুমি এর সাথে জড়িয়ে গেছে।

তারপর…তুমি কি বলেছিলে? আমি বুঝতে পারছি না।

বেলা, আমি ভলতুরিতে গিয়েছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম তুমি মারা গেছে। সে বলল। তার কণ্ঠস্বর নরম। চোখে অগ্নিবান। এমনকি যদিও তোমার মৃত্যুর ব্যাপারে আমার কোন হাত নেই। সে কাঁপতে লাগল যখন সে শেষ কথাগুলো ফিসফিস করে বলতে লাগল। এমনকি যদিও এটা আমার দোষ নয় আমি ইতালিতে চলে যেতাম। সুস্পষ্টত, আমাকে আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হতো। আমাকে এলিসের সাথে সরাসরি কথা বলতে হতো। এটা রোসালির কাছ থেকে পুরানো হয়ে যেয়ে শোনার চেয়ে। কিন্তু সত্যিই কি আমি মনে করেছিলাম ভাবতে যে যখন সেই ছেলেটা বলল চার্লি শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গিয়েছে? তাহলে অদ্ভুত ব্যাপারটা কি ছিল?

অদ্ভুত ব্যাপারটা… সে তারপর বিড়বিড় করে বলল, অমনোযোগী বিছিন্ন। তার কণ্ঠস্বর এতটাই নিচু লয়ের আমি নিশ্চিত নই আমি সঠিক জিনিসটা শুনতে পাচ্ছি। অদ্ভুত ব্যাপারটা সবসময়েই আমাদেরকে আঘাত করে। ভুলের পরে ভুল। আমি আর কখনও রোমিওকে বিদ্রুপাত্বক সমালোচনা করব না।

কিন্তু আমি এখনও বুঝতে পারছি না। আমি বললাম, সেটাই আমার সমস্ত বিষয়। তারপর কি হতো?

এক্সকিউজ মি?

কি হতে যদি আমি আজ মারা যেতাম?

সে আমার দিকে তাকিয়ে রইল অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দীর্ঘ সময় ধরে তার উত্তর দেয়ার আগে। তুমি কি মনে করতে পার না কোন কিছুই আমি যেটা তোমাকে আগে বলেছিলাম?

আমি মনে করতে পারি সবকিছুই যেগুলো তুমি বলেছিলে। সেই সব শব্দগুলো যোগ করলাম যেগুলো আগে এড়িয়ে গিয়েছিলাম।

সে আমার নিচের ঠোঁটে তার হাতের ঠাণ্ডা আঙুল দিয়ে বোলাতে লাগল বেলা, তোমাকে দেখে মনে হয় তুমি একটা ভুল বোঝাবুঝির মধ্যে আছে। সে চোখ বন্ধ করল। তার মাথা পিছনের দিকে ঝাঁকাতে লাগল সামনে পিছনে। তার সুন্দর মুখে হাসির ছোঁয়া। এটা কোন সুখী হাসি নয়। আমি ভেবেছিলাম আমি এটার আগেই পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করব। বেলা, আমি এমন একটা পৃথিবীতে বাস করতে চাই না যেখানে তোমার অস্তিত্ব নেই।

আমি… আমার মাথা ভাসতে লাগল যখন আমি উপযুক্ত শব্দের জন্য হাতড়াতে লাগলাম। দ্বিধাগ্রস্ত। সেটায় কাজ দিল। আমি সেটা বুঝতে পারছিলাম না সে কি বলতে চাচ্ছে।

সে আমার চোখের গভীরে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার সকল মনোযোগ দিয়ে। আমি খুব ভাল মিথ্যেবাদী বেলা। আমাকে সেটা হতে হয়েছে।

আমি জমে গেলাম। আমার মাংসপেশী এটার প্রতিক্রিয়া দেখাল। সেই ভুল লাইনটা আমার বুকে তরঙ্গায়িত হলো। এটার ব্যথা আমার শ্বাসকষ্ট বাড়িয়ে দিল।

সে আমার কাঁধ ঝাঁকাতে লাগল। চেষ্টা করছিল আমার এই শক্ত অবস্থা থেকে মুক্ত করতে। আমাকে শেষ করতে দাও! আমি ভাল মিথ্যেবাদী। কিন্তু এখনও তোমার জন্য, আমাকে বিশ্বাস করো বেশ দ্রুত। সে → উপরে তুলল, সেটা ছিল..যন্ত্রণাদায়ক পীড়াদায়ক…

আমি অপেক্ষা করছিলাম। আমি শুনছিলাম।

 যখন আমরা জঙ্গলের মধ্যে ছিলাম যখন আমি তোমাকে বিদায় জানিয়ে ছিলাম

আমি নিজেকে সেটা মনে করতে দিতে চাইলাম না। আমি নিজের সাথে লড়তে লাগলাম নিজের উপস্থিতি এখানে রাখার জন্য।

তুমি সেখানে যেতে পার না। সে ফিসফিস করে বলল। আমি সেটা দেখেছিলাম। যে কারণে আমি সেটা করতে দিতে চাইনি। আমার কাছে এমন অনুভূতি হয়েছিল যেন আমি নিজেকে খুন করে ফেলছি। কিন্তু আমি জানতাম যদি আমি তোমাকে কনভিন্স না করতাম যে আমি তোমাকে ভালবাসি না মোটেও এটা শুধু তোমাকে নিয়ে যেত অনেক দূর তোমার নিজের জীবনের ক্ষেত্রে। আমি আশা করেছিলাম যে যদি তুমি ভাব আমি চলে গেছি বলে তুমি যাবে।

একটা পরিষ্কার বিছিন্নতা। আমি ফিসফিস করে বললাম আমার ঠোঁট না নাড়িয়েই।

ঠিক তাই। কিন্তু আমি কখনো কল্পনাও করিনি যে এটা এত সহজেই করা যাবে। আমি ভেবেছিলাম এটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার–যে তুমি নিশ্চিত হতে পারবে যে আমি তোমাকে দিনের পর দিন মিথ্যে কথা বলেছিলাম। এমনকি তোমার মাথার মধ্যে সন্দেহের বীজও বপন করেছিলাম। আমি মিথ্যে বলেছিলাম। আমি খুবই দুঃখিত। দুঃখিত কারণ আমি তোমাকে আঘাত দিয়েছিলাম। দুঃখিত কারণ এটা ছিল একটা অপ্রয়োজনীয় শক্তিক্ষয়। দুঃখিত যে আমি তোমাকে রক্ষা করিনি। আমি তোমাকে বাঁচাতে মিথ্যে বলেছিলাম এবং এটা কোন কাজ করে নাই। আমি দুঃখিত।

কিন্তু কীভাবে তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছিলে? সর্বোপরি যখন হাজার বার আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি তোমাকে ভালবাসি। কীভাবে তাহলে একটিমাত্র শব্দে তোমার বিশ্বাস আমার প্রতি ভেঙে গিয়েছিল?

আমি উত্তর দিতে পারলাম না। আমি এতটাই শক খেয়েছি যে আমি গতানুগতিক কোন উত্তর করতে পারলাম না।

আমি এটা তোমার চোখের মধ্যে দেখতে পারি। যে তুমি সত্যিই সতোর সাথে বিশ্বাস করেছিলে যে আমি তোমাকে আর একটিবারের জন্যও চাই না। সবচেয়ে উদ্ভট বিষয় হচ্ছে হাস্যকর ধারণা। যে যদি সেখানে কোন উপায় থাকত যে আমি অস্তিত্ব রাখতে পারতাম তোমার প্রয়োজন ছাড়াই।

আমি তখনও জমে ছিলাম। তার কথাগুলো আমার কাছে দুবোর্ধ লাগছিল। কারণ সেগুলো অসম্ভব ছিল।

সে আমার কাঁধ ধরে আবার আঁকাতে লাগল। খুব জোরে নয়। কিন্তু মোটামুটি যথেষ্ট যে আমার দাঁতে দাঁতে বাড়ি খাচ্ছিল।

বেলা! সে শ্বাস নিল। সত্যিই, তুমি কি ভাবছ?

আমি তখন কাঁদতে শুরু করলাম। সেই কান্না আমাকে আরাম দিল। তারপর সেটা দুঃখ হয়ে চিবুক দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল।

আমি এটা জানতাম। আমি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আমি জানতাম আমি স্বপ্ন দেখছি!

তুমি অসম্ভব। সে বলল। সে একবার হেসে উঠল। একটা কঠিন হাসি। হতাশাগ্রস্ত। আমি কীভাবে সেটা তোমার উপর চাপিয়ে দিতে পারি যে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? তুমি ঘুমিয়ে নেই এবং তুমি মৃতও নও। আমি এখানে আছি। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি সবসময় তোমাকে ভালবেসেছি। আমি চিরদিন তোমাকে ভালবাসব। আমি তোমার কথা ভাবছিলাম। তোমার মুখ আমার মনের ভেতর দেখছিলাম প্রতি সেকেন্ডে আমি যখন পালিয়ে ছিলাম। যখন আমি তোমাকে বলেছিলাম যে আমি তোমাকে চাই না, এটা ছিল সবচেয়ে খারাপ ধরনের ব্লাসফেমি।

আমি মাথা নাড়লাম যখন কান্না আমার চোখের কোণা দিয়ে নিচে গড়িয়ে পড়তে লাগল।

তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না। করো কি? সে ফিসফিস করে বলল। তার মুখ আরো বেশি বিবর্ণ, স্বাভাবিক বিবর্ণতার চেয়ে। আমি সেটা এমনকি এই মৃদু আলোর মধ্যেও দেখতে পেলাম। কেন তুমি সেই মিথ্যেটুকুকে বিশ্বাস করছ। কিন্তু এই সত্যটাকে নয়?

এটা কখনই কোন সেন্স তৈরি করেনি তোমার জন্য আমাকে ভালবাস। আমি ব্যাখ্যা করলাম। আমি কণ্ঠস্বর দুবার ডাঙা ভাঙা শোনাল। আমি সবসময় সেটা জানতাম।

তার চোখ ছোট হয়ে গেল। তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।

আমি প্রমাণ করে দেব যে তুমি জেগে আছ। সে প্রতিজ্ঞা করল।

সে আমার মুখ তার দুই লৌহ কঠিন হাতের মাঝখানে শক্ত করে ধরল, আমার লড়াইকে উপেক্ষা করেই। যখন আমি আমার মুখ পিছিয়ে মাথা পিছনে নেয়ার চেষ্টা করলাম।

দয়া করে এটা করো না। আমি ফিসফিস করে বললাম।

সে থেমে গেল। তার ঠোঁট জোড়া আমার থেকে মাত্র এক ইঞ্চি দূরে।

কেন নয়? সে জানতে চাইল। তার শ্বাস প্রশ্বাস আমার মুখের উপর দিয়ে বয়ে যেতে লাগল। আমার মাথা ঘুরতে লাগল।

যখন আমি জেগে উঠলাম, সে তার মুখ খুলল প্রতিবাদ করার জন্য। সুতরাং আমিই আগে বললাম ঠিক আছে। সেই একটা জিনিস ভুলে যাও-যখন তুমি আবার ছেড়ে চলে যাবে, এটা খুব কঠিন হতে যাচ্ছে এইটা ছাড়াও।

সে টেনে এক ইঞ্চি পিছনে নিল আমার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে।

গতকাল, যখন আমি তোমাকে স্পর্শ করেছিলাম, তুমি ছিলে এতটাই…দ্বিধাগ্রস্ত, এতটাই সতর্ক এবং এখনও একইরকম আছো। আমার জানা প্রয়োজন, কেন? এটা কি এই জন্য যে আমি খুবই দেরি করে ফেলেছি? কারণ আমি তোমাকে অনেক বেশি আঘাত করেছি? কারণ তুমি চলে গিয়েছিলে যেটা আমি তোমাকে বোঝাতে চেয়েছিল? সেটা হতে পারে…কিছুটা উপযুক্ত। আমি তোমার সিদ্ধান্তের উপর জোর চাপাতে চাচ্ছি না। সুতরাং আমার অনুভূতি আবেগকে তুমি এড়িয়ে যেও না। দয়া করো। শুধু আমাকে এখন বলো আমাকে এখনও ভালবাস কিনা অথবা কখনোই বাসবে না। আমি যত কিছু করেছি এসব কিছুর পরেও। ভালবাস কি? সে ফিসফিস করে বলল।

এটা কি ধরনের ইডিয়টের মত প্রশ্ন করা হচ্ছে?

শুধু এটার উত্তর দাও। দয়া করে।

আমি তার দিকে একদৃষ্টিতে গভীরভাবে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকলাম। যেভাবে আমি তোমাকে অনুভব করি সেটা কখনওই পরিবর্তন হবে না। অবশ্যই আমি তোমাকে ভালবাসি–এবং সেখানে তুমি এই ব্যাপারে আর কোন কিছুই করতে পার না!

এটাই সব যেটা আমার শোনার প্রয়োজন ছিল।

তার মুখ তারপর আমার মুখের উপর এল। তার নিঃশ্বাসের বাতাস আমার মুখ ছুঁয়ে যাচ্ছে। তার ঠোঁট নেমে আসছে আমার মুখের উপর, আমার ঠোঁটের উপর। তার শীতল ঠোঁট জোড়া আমার উষ্ণ ঠোঁটের উপর আছড়ে পড়ল। আমি তার সাথে লড়তে পারলাম না। এটা এই কারণে নয় যে সে আমার চেয়ে হাজারগুন বেশি শক্তিশালী। কিন্তু কারণ আমার ইচ্ছেশক্তি ধুলো হয়ে মিশে গেল যখন তার ঠোঁট আমার উপর নেমে এল। এই চুমুটা এতটা সতর্কতার সাথে ছিল না অন্যগুলোর মত যেগুলো আমি স্মরণ করতে পারি। যেগুলো শুধু আমাকে শুধুই ভাল অনুভূতি দিত। যদি আমি নিজেকে আরো দূরে যেতে দেই আমি সম্ভবত আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি ভাল থাকব যতটা সম্ভব।

সুতরাং আমি তাকে প্রতি উত্তরে চুমু খেলাম। আমার হৃৎপিণ্ড বড় বেশি শব্দ করতে লাগল নির্দিষ্ট ছন্দে যখন আমার শ্বাস হাঁপানিতে পরিণত হলো। আমার হাতের আঙুলগুলো লোভীর মত তার মুখ হাতড়ে চলল। আমি তার মার্বেল পাথরের মত শরীরকে আমার শরীর প্রতি একই লাইনেই স্পর্শ পাচ্ছিলাম। আমি এতটাই আনন্দিত ছিলাম যে সে আমাকে শুনতে পেল না। সেখানে কোনই ব্যথা নেই এই পৃথিবীর যেটা এই আনন্দের বিচার করতে পারে। তার হাত আমার মুখকে মনে করিয়ে দিল। একইভাবে আমার হাতও তার মুখে ঘুরতে লাগল। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে যখন তার ঠোঁট আমার উপর থেকে মুক্ত হলো। সে আমার নাম ফিসফিস করে উচ্চারণ করল।

তার হাত আমার শক্ত স্তনের উপর চেপে বসল। সেই স্পর্শে আমার সমস্ত শরীরে শিহরণ খেলে গেল। আমি যেন অবশ হয়ে যেতে লাগলাম। আমি যেন গলে পড়তে লাগলাম। আমি যেন নিঃশেষ হয়ে যেতে লাগলাম।

যখন আমি তন্দ্রাছন্ন হতে শুরু করলাম সে আমাকে টেনে নিল। শুধু তার কান আমার বুকের শব্দ শোনার জন্য বুকের উপরে পেতে রাখলাম।

আমি সেখানে শুয়ে ছিলাম। তন্দ্রাছন্ন। নেশাতুর। অপেক্ষা করছিলাম আমার শ্বাস প্রশ্বাস ধীর এবং শান্ত হওয়ার জন্য।

যাই হোক। সে খুব স্বাভাবিক গলায় বলল। আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।

আমি কিছুই বললাম না। তাকে দেখে মনে হলো আমার নিরবতায় সে যেন নিজেকে কিছুটা আড়াল করতে পেরেছে।

সে তার মুখ তুলল আমার দৃষ্টির পথ আবদ্ধ করে দিয়ে। আমি কোথায় কোনভাবেই যাচ্ছি না। তোমাকে ছাড়া। সে আরো দৃঢ়ভাবে যোগ করল। আমি শুধু তোমাকে প্রথম জায়গায় ছেড়ে গিয়েছিলাম কারণ আমি চেয়েছিলাম তোমাকে একটা স্বাভাবিক জীবনের সুযোগ দিতে। সুখী জীবনের। সাধারণ মানব জীবনের। আমি দেখতে পেলাম আমি তোমার উপর কি করেছি। তোমাকে আমি একের পর এক বিপদের শেষ সীমানায় রেখে গেছি। তুমি যে জগতে বাস করো সেই জগত থেকে আমি তোমাকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছি। প্রতি মুহূর্তে তোমার জীবন ঝুঁকির উপর রেখেছি। আমি তোমার সাথে আছি। সুতরাং আমি চেষ্টা করেছিলাম। আমি কিছু করতে চেয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিল যে তোমাকে ছেড়ে যাওয়ায় একমাত্র পথ। যদি আমি না ভাবতাম যে তুমি সেভাবে ভাল থাকবে আমি কখনও এভাবে তোমার কাছে থেকে পালিয়ে চলে যেতাম না। আমি অনেক বেশি স্বার্থপরও। একমাত্র তুমিই আমার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ আমি যা চেয়েছি তার চেয়ে…যা আমার প্রয়োজন। যেটা আমি চেয়েছি এবং যেটা আমার প্রয়োজন এটা হচ্ছে তুমি। আমি তোমার সাথে থাকতে চেয়েছি। আমি জানতাম আমি কখনও বেশি শক্তিশালী থাকব তোমাকে ছেড়ে আবার। আমার অনেক বেশি অজুহাত আছে থাকার স্বর্গকে এজন্য ধন্যবাদ। এটা দেখে মনে হয় তুমি নিরাপদ নও। সেটা কোন ব্যাপার নয় আমাদের দুজনের মধ্যে কত মাইলের ব্যবধান এখন বিস্তৃত।

আমাকে আর কোন কিছু প্রতিজ্ঞা করিও না। আমি ফিসফিস করে বললাম। যদি আমি আমাকে আশা করতে দেই এবং এটা থেকে কিছুই না আসে…তাহলে সেটা আমাকে মর্মপীড়া দেবে। আমাকে মেরে ফেলবে। যেখানে ওই নির্দয় নিষ্ঠুর ভ্যাম্পায়াররা আমাকে শেষ করতে পারে নাই সেখানে আশাই আমাকে শেষ করে ফেলবে।

রাগের বহিঃপ্রকাশ তার কালো চোখে ধাতব চকচকের মত ঝংকার তুলল তুমি মনে করছো আমি তোমার সাথে এখন মিথ্যে বলছি?

না- মিথ্যে নয়। আমি মাথা নাড়লাম। আমি সংলগ্নভাবে এটা ভাবার চেষ্টা করলাম। হাইপোথিসিসগুলো পরীক্ষা করে যে সে আমাকে ভালবাসে, সেটা সব দিক বিবেচনা করেই। সুতরাং আমি কোন আশার ছলনায় ফাঁদের ভেতর পড়তে যাচ্ছি না। তুমি এটা বুঝাতে চাচ্ছ…এখন। কিন্তু আগামীকালের ব্যাপারে কি হবে, যখন তুমি প্রথম জায়গা ছেড়ে যাওয়ার মত সমস্ত কারণ খুঁজে ভেবে বের করবে? অথবা পরের মাসে, যখন জেসপার আমার পিছনে ধাওয়া করবে।

সে ভ্রু কুঁচকাল।

আমি ভেবেছিলাম আমার জীবনের শেষ দিনগুলো যখন সে চলে গিয়েছিল, সেগুলো দেখতে চেষ্টা করলাম সে এখন কি বলছে সেগুলোর ফিল্টার করে। সেই দিক থেকে, কল্পনা করা, সে আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে যখন সে আমাকে ভালবাসত, আমাকে ছেড়ে গিয়েছিল আমার জন্যই, তার গোমড়া মুখ এবং শীতল নীরবতা সেগুলোর একটা ভিন্ন। অর্থ দাঁড় করাল। এটা কি তাই নয় যে তুমি প্রথমে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলে সেটাই আবার তাই নয় কি? আমি অনুমান করলাম। তুমি সেটাতেই শেষ করো যে তুমি সবসময়ই ঠিক মনে করো।

আমি এতটাই শক্তিশালী নয় যতটা তুমি আমাকে ক্রেডিট দাও। সে বলল, ঠিক এবং ভুল আমার জন্য অনেক কিছুই বোঝায়। আমি যেভাবেই হোক ফিরে আসছিলাম। রোসালি আমাকে খবরটা জানানোর আগেই। আমি এরই মধ্যে চেষ্টা করছিলাম অতীতের এক সপ্তাহ বাস করার অথবা একটা দিনের। আমি এটাকে কোন মতে এক ঘণ্টায় আনার জন্য চেষ্টা করছিলাম। এটা শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। এবং এটা তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। আমি তোমাকে তোমার জানালায় দেখা দেয়ার আগে। তোমার কাছে প্রার্থনা করব যে আমাকে ফিরিয়ে নাও। আমি এখন তোমার কাছে ভিক্ষা প্রার্থনা করতে সুখী বোধ করব। তুমি যদি সেটা পছন্দ করো।

আমি মুখ ভেঙচালাম। দয়া করে সিরিয়াস হও।

ওহ, আমি তাই। সে জোর দিল। এখনও তাকিয়ে আছে। তুমি কি দয়া করে আমি যেটা তোমাকে বলার চেষ্টা করছি সেটা শুনবে? তুমি কি তোমার প্রতি আমার মনোভাব কি সেটা ব্যাখ্যা করার সময়ে দেবে?

সে অপেক্ষা করতে লাগল। আমার মুখ পড়তে চেষ্টা করল যখন সে কথা বলছিল এবং নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিল আমি শুনছি।

তোমার আগে, বেলা, আমার জীবন ছিল একটা চন্দ্রিমাহীন রাত। খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিন্তু সেখানে অনেক তারা ছিল। সেগুলো আলোর নির্দেশিকা এবং কারণ… এবং তারপর তুমি আমার আকাশে একটা উল্কার মত উদিত হলে। হঠাৎ করে সবকিছু বিচৎ হয়ে গেল। কিন্তু সবকিছু আলোকিত হয়ে উঠল। সেখানে উজ্জ্বলতা ছিল। সেখানে সৌন্দর্য ছিল। যখন তুমি চলে গেলে, যখন উল্কাটা দিগন্তে পতিত হলো, সবকিছু আবার অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল। কোন কিছুই পরিবর্তিত হলো না। কিন্তু আমার চোখ জোড়া উজ্জ্বল আলোতে অন্ধ হয়ে গেল। আমি আর কোন তারা কোনভাবেই দেখতে পেলাম না। এবং সেখানে কোন কিছুর জন্য আর কোন কারণ ছিল না।

আমি তাকে বিশ্বাস করতে চাইলাম। কিন্তু এটা আমার জীবন তাকে ছাড়া যেটা সে বর্ণনা করেছে। সেটা কোন কোন দিক দিয়ে নয়।

তোমার চেয়ে সেটা সয়ে যাবে। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

সেটাই শুধু মাত্র সমস্যা-তারা তা পারছে না।

 তোমার বিছিন্নতার ব্যাপারগুলো কি?

সে কোন রকম হাসির কারণ ছাড়াই হেসে উঠল। সেটা শুধু মাত্র মিথ্যের একটা অংশমাত্র। ভালবাসার। সেখানে কোন বিছিন্নতা ছিল না…। আমার হৃদয় নব্বই বছর। ধরে কোন স্পন্দন করেনি। কিন্তু এইটা ছিল ভিন্নরকম। এটা ছিল এরকম যেন আমার হৃৎপিণ্ড চলে গেছে। এমনটি যেন আমি একটা শূন্য খোলাস। ফাঁপা জিনিস। এমনটি যেন আমি সবকিছুই ফেলে গেছি যেগুলো আমার ভেতরে ছিল যখন আমি এখানে তোমার সাথে ছিলাম।

সেটা মজার। আমি বিড়বিড় করে বললাম।

সে একটা উপযুক্ত ক্রু উঁচু করল। মজার?

আমি বুঝাতে চেয়েছি অদ্ভুত আমি ভেবেছিলাম এটা শুধুমাত্র আমার ক্ষেত্রেই ঘটেছে। আমার ভেতরের অনেকগুলো টুকরো অনেকগুলো অংশও হারিয়ে গেছে। আমি সত্যিই সত্যিই দীর্ঘদিন ধরে নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি আমার ফুসফুস ভরে নিলাম। সে অনুভূতিতে বিলাসিবোধ করছিলাম। এবং আমার হৃৎপিণ্ড। সেটা সত্যি সত্যিই হারিয়ে গিয়েছিল।

সে তার চোখ বন্ধ করল। সে আবার ঝুঁকে পড়ে আমার বুকের উপর হৃৎপিণ্ডের উপর কান পাতল। আমার চিবুক তার চুলের উপর চেপে ধরলাম। এটার ধরণ আমার ত্বকের উপর অনুভব করছিলাম। তার শরীরের অদ্ভুত সুবাস পাচ্ছিলাম।

ট্রাকিং তাহলে বিচ্ছিন্নতার মত কোন কিছু নয়? আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, উৎসুক্য। অবশ্যই নিজের বিচ্ছিন্নতার প্রয়োজন। আমি খুব বেশি মাত্রায় আশার বিপজ্জনক অবস্থানে থাকি। আমার হৃৎপিণ্ড ছন্দায়িতভাবে নাচছিল। আমার বুকের ভেতর কেউ যেন গান গাইছিল।

না। সে শ্বাস নিল। সেটা কখনও বিছিন্নতা নয়। এটা একটা বাধ্যবাধকতা।

 সেটার মানে কি?

এটার মানে হলো, এমনকি যদিও আমি ভিক্টোরিয়ার কাছ থেকে কোন বিপদ কখনও আশা করি নাই, আমি তাকে যেতে দিচ্ছিলাম না এটা নিয়ে চলে যেতে…বেশ, আমি যেমনটি বলছিলাম, আমি এটার মধ্যে ভয়ানক অবস্থানে ছিলাম। আমি তাকে ট্রেস করেছিলাম যতদূর পর্যন্ত টেক্সাস পর্যন্ত কিন্তু তারপর আমি একটা ভুল জিনিস অনুসরণ করে ব্রাজিলে যাই এবং সত্যিই সে এখানে আসে। সে গুঙিয়ে উঠল। আমি এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নই তার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে! এবং যেটা ঘটেছে সেটা আমার সবচেয়ে খারাপ চেয়ে খারাপ কিছু ছিল,…

তুমি ভিক্টোরিয়াকে শিকার করে বেড়াচ্ছিলে? আমি কেঁপে উঠতেই নিজের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। সেটা যেন গুলির মত আঘাত করছে।

দূর থেকে চার্লির একঘেয়ে নাক টানা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল এবং তারপর সেটা আবার আগের ছন্দে ফিরে এল।

ভালভাবে নয়। এ্যাডওয়ার্ড উত্তর দিল। আমার মুখের রাগান্বিত অভিব্যক্তি সে দ্বিধান্বিত দৃষ্টিতে পড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমি এইবারে অনেক বেশি ভাল অবস্থানে থাকব। সে আর বাইরের পৃথিবীতে স্বছন্দে খুব বেশিদিন শ্বাস প্রশ্বাস নিতে পারবে না।

সেটা…প্রশ্নাতীত বিষয়। আমি চেষ্টা করে ঢোক গিলোম। এমনকি যদি তাকে এমেট অথবা জেসপার সাহায্য করে থাকে। এমনকি যদি তাকে এমেট ও জেসপার দুজনেই সাহায্য করে। এটা আমার অন্য কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি খারাপ হবে। জ্যাকব ব্লাক দাঁড়িয়ে আছে একটা ছোট্ট অবস্থানে, ভিক্টোরিয়ার অশুভ এবং হিংস্রতা থেকে। আমি সেই ছবিটা সহ্য করতে পারছি না যে এ্যাডওয়ার্ড সেখানে। এমনকি যদিও সে আমার অর্ধ মানব সবচেয়ে ভাল বন্ধু থেকে অনেক বেশি প্রাণশক্তির অধিকারী, তারপরেও।

এটা তার জন্য অনেক দেরি হয়ে যাবে। আমি হয়তো অন্য সময়ে তাকে চেষ্টা করতে পারি, কিন্তু এখন নয়, এটার পরে নয়

আমি তাকে আবার বাধা দিলাম। চেষ্টা করলাম শান্ত স্বরে বলতে তুমি কি এই মাত্র প্রতিজ্ঞা করলে না যে তুমি আর আমাকে ছেড়ে যাচ্ছ না? আমি জিজ্ঞেস করলাম। লড়াই করছিলাম শব্দগুলো নিয়ে যেগুলো আমি বলছিলাম। সেগুলোকে আমি আমার হৃদয়ে জমা রাখতে চাচ্ছিলাম না। সেটা কোন ট্র্যাকিংয়ের নতুন কোন অভিজ্ঞতার জন্য যাওয়া নয়, তাই নয় কি?

সে ভ্রু কুঁচকাল। আমি তার বুকের কাছে গজরালাম। আমি আমার প্রতিজ্ঞা রাখব বেলা। কিন্তু ভিক্টোরিয়া- গর্জন আরো বেশি উচ্চতর হয়ে উঠল। খুব শিগগিরই মারা যেতে চলেছে।

সেটা এত দ্রুত করো না। আমি বললাম, চেষ্টা করলাম আমার আতংক লুকাতে। হতে পারে সে আর ফিরে আসছে না। জ্যাকের দল সম্ভবত তাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। সেখানে তাকে খুঁজতে যাওয়ার জন্য সত্যিকারের কোন কারণ নেই। আমার ভিক্টোরিয়ার চেয়ে আরো বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে।

এ্যাডওয়ার্ডের চোখ ছোট ছোট হয়ে গেল। কিন্তু সে মাথা নেড়ে সম্মতি দিল। এটা সত্য। এই নেকড়েমানবগুলো একটা সমস্যা।

আমি নাক টানলাম। আমি জ্যাকবের সম্বন্ধে কথা বলছি না। আমার সমস্যা হলো তার চেয়ে অনেক খারাপ। সেটা এই গোটা কয়েক কিশোর নেকড়েমানব যে সমস্যার সৃষ্টি করবে তার চেয়ে বেশি কিছু।

এ্যাডওয়ার্ড এমনভাবে তাকাল যেন সে কোন একটা কিছু বলতে যাচ্ছে। তারপর ভাবল মুখ বন্ধ রাখাই ভাল। তার দাঁত একসাথে দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেল। তারপর সে কথা বলা শুরু করল। সত্যিই? সে জিজ্ঞেস করল। তাহলে কি তোমার সবচেয়ে বড় সমস্যা হতে পারে? যেটা তোমার জন্য ভিক্টোরিয়ার ফিরে আসার মত মনে হয় যেমনটি যেন একজন সেটার সাথে তুলনা করলে?

দ্বিতীয় সমস্যাটা ধরলে কেমন হয়? আমি দ্বিধান্বিত।

 ঠিক আছে। সে সম্মত হলো। সন্দেহবাতিকগ্রস্ত।

আমি থেমে গেলাম। আমি নিশ্চিত নই আমি সেই নামটা বুলেছি কিনা। সেখানে আরো অন্যরা আছে যারা আমাকে খোঁজার জন্য আসছে। আমি কিছুটা ফিসফিসানির স্বরে তাকে মনে করিয়ে দিলাম।

সে শ্বাস নিল। কিন্তু আমি ভিক্টোরিয়ার ব্যাপারে পর তার প্রতিক্রিয়া যতটা জোরালো হয়েছিল ততটা আমি কল্পনা করেছিলাম ততটা হলো না।

ভলচুরি হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম।

তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এই ব্যাপার নিয়ে তেমন আপসেট নও। আমি লক্ষ্য করে বললাম।

বেশ, তোমার যথেষ্ট সময় আছে এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার। সময় বলতে তাদের কাছে বেশ কঠিন কিছু বোঝায়, যেটা তোমার কাছে বোঝায় না অথবা আমার কাছেও নয়। তারা সেইভাবে বছর গুনে যেভাবে তুমি দিন গুনো। আমি বিস্মিত হব না যদি তুমি তিরিশ হয়ে যাও তাদের মন পরিবর্তন করার। সে হাল্কাভাবে যোগ করল।

ভয় আমার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেল।

তিরিশ!

সুতরাং তার প্রতিজ্ঞা মানে কিছুই না। শেষ পর্যন্ত। যদি আমি কোন দিন তিরিশে পরিণত হতাম তাহলে সে কখনও পরিকল্পনা করত না দীর্ঘদিন থাকার। এই জ্ঞানের কর্কশ ব্যথা আমাকে বুঝতে দিল যে আমি এরই মধ্যে আশা করতে শুরু করেছি। আমার নিজেকে এই ব্যাপারে কোন অনুমতি না দিয়েই।

তোমার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সে বলল। আমার চোখের কোণা বেয়ে আবার ঝরে পড়তে থাকা জল দেখে উদ্বিগ্ন। আমি তাদেরকে তোমাকে ব্যথা পেতে দেব না।

যখন তুমি এখানে থাকবে। আমি সেটা নিয়ে পরোয়া করি না যখন সে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে তখন কি হবে।

সে তার পাথরের মত দুই হাতের মধ্যে আমার মুখটা নিল। এটা শক্ত করে চেপে ধরল। তার মধ্যরাতের চোখ জোড়া আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল, যেটার ভেতর থেকে মধ্যাকর্ষণ শক্তি আমাকে আছন্ন করে ফেলল। আমি আবার তোমাকে কখনও ছেড়ে চলে যাব না।

কিন্তু তুমি বলেছিলে তিরিশ। আমি ফিসফিস করে বললাম। চোখের কোণা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। কি? তুমি এখানে থাকতে যাচ্ছ কিন্তু আমাকে এতটাই বয়স্ক করে রাখতে? ঠিক।

তার চোখজোড়া নরম হলো। কিন্তু তার মুখের রেখা কঠিন হয়ে গেল। সেটাই সঠিক যেটা আমি প্রকৃতপক্ষে করতে যাচ্ছি। তাছাড়া আমার আর কি চয়েস থাকতে পারে? আমি তুমি ছাড়া যেতে পারব না কিন্তু আমি তোমার আত্মাকে ধ্বংস করে দিতে পারি না।

এটা কি সত্যিই… আমি চেষ্টা করলাম আমার কণ্ঠস্বর সমান্তরাল রাখার কিন্তু এই প্রশ্নটা এতটাই কঠিন। আমি মনে করতে পারলাম তার মুখ, যখন এ্যারো তার কাছে প্রার্থনা করেছিল ক্ষমা করতে, আমাকে অমর করার জন্য। সেই অসুস্থ চাহনি সেখানে। সেই অমরত্ব আমাকে মানব হিসাবে রাখবে অথবা এটা কি এই কারণে যে সে নিশ্চিত নয় যে সে আমাকে তত দীর্ঘদিন আমাকে চাইবে?

হ্যাঁ? সে জিজ্ঞেস করল। আমার প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছিল।

 আমি ভিন্ন একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম। প্রায় কিন্তু শান্ত স্বরে নয়। কিছুটা কঠিনভাবে।

কিন্তু তখন কি হবে যখন আমি ততটাই বৃদ্ধ হয়ে যাব যে লোকজন ভাবতে শুরু করবে আমি তোমার মা? তোমার দাদীমা? আমার কণ্ঠস্বর বিবর্ণ। আমি সেই মুহূর্তে স্বপ্নে দেখা আমার দাদীমার মুখ মনে করতে পারলাম।

তার সমস্ত মুখে এখন নরম অনুভূতি। সে তার ঠোঁট দিয়ে আমার চিবুক থেকে চোখের কান্না শুয়ে নিল। সেটা আমার কাছে কোন কিছুই বোঝায় না। সে আমার নরম ত্বকের উপর আবার নিঃশ্বাস ফেলল। তুমি সবসময়ই আমার জন্য সবচেয়ে সুন্দরতম জিনিস আমার পৃথিবীতে। অবশ্যই… সে দ্বিধা করতে লাগল। হঠাৎ চোখ মুখ কুঁচকাল। যদি তুমি আমার চেয়ে বেশি বেড়ে ওঠো- যদি তুমি আরো বেশি কিছু চাও-আমি সেটা বুঝতে পারছি, বেলা। আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি তোমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াব না, যদি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও।

তার চোখ অনেকটা সহজ হয়ে গেল। হঠাৎ করে খুব সচেতন হয়ে উঠল। সে এমনভাবে কথা বলছিল যেন সে এইসব ব্যাপারে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে অনেক কিছু ভেবে রেখেছে।

তুমি কি সেটা বুঝতে পার যে আমি এমন কি মারাও যেতে পারি ঘটনাক্রমে, ঠিক? আমি জানতে চাইলাম।

সে ব্যাপারটা নিয়ে একটু চিন্তাও করল। আমি তারপর তোমাকে অনুসরণ করব যত তাড়াতাড়ি পারা যায়।

সেটা সিরিয়াসলি.. আমি সঠিক শব্দের জন্য হাতড়াতে লাগলাম। অসুস্থ।

বেলা, এইটাই একমাত্র সঠিক পথ যেটা তুমি রেখে যাবে…

এক মিনিটের জন্য আমাকে সময় নিতে দাও। আমি বললাম। ভেতরে ভেতরে রাগ অনুভব করছিলাম। প্রতারণাময়। তুমি ভলচুরির কথা স্মরণ করতে পার, ঠিক? আমি আর মানুষ হিসাবে চিরদিনের জন্য থাকতে পারি না। তারা আমাকে হত্যা করবে। এমনকি যদি তারা মনে না করে তিরিশ হওয়া পর্যন্ত– আমি হিসিয়ে উঠলাম তুমি কি সত্যিই মনে করো যে তারা তা ভুলে যাবে?

না। সে ধীরে ধীরে উত্তর দিল। তার মাথা নাড়ছে। তারা তা ভুলবে না কিন্তু…

কিন্তু কি?

সে গোঙাল যখন আমি তার মুখের দিকে দুশ্চিন্তাগ্রস্তভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। হতে পারে আমিই একমাত্র উন্মত্ত কেউ নই।

আমার কয়েকটা পরিকল্পনা আছে।

এবং সেইসব পরিকল্পনা আমি বললাম, আমার কণ্ঠস্বর আগের চেয়ে অনেক বেশি তিক্ত হয়ে উঠল প্রতিটি শব্দের ব্যাপারে। সেই সব পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু আমাকে মানুষ থাকার জন্য চারিদিকে থেকে ঘিরে।

আমার অভিব্যক্তি তার অভিব্যক্তিকে কঠিন করে দিল। স্বাভাবিকভাবেই। তার কণ্ঠস্বরে কাঠিন্য। তার স্বর্গীয় মুখে বেপরোয়াভাব।

আমরা একে অন্যের দিকে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে রইলাম।

তারপর আমি গভীরভাবে শ্বাস নিলাম। কাঁধ চওড়া করে দিলাম। আমি তার হাত ঠেলে সরিয়ে দিলাম যাতে আমি উঠে বসতে পারি।

তুমি কি আমাকে চলে যেতে বলতে চাও? সে জিজ্ঞেস করল। এটা আমার হৃদয়কে আনন্দিত করল যে এই ধারণা তাকে পীড়া দিচ্ছে। যদিও সে চেষ্টা করছে সেটা কোনমতে না দেখাতে।

না। আমি তাকে বললাম। আমি চলে যাচ্ছি।

সে সন্দেহযুক্তভাবে আমাকে লক্ষ্য করতে লাগল যখন আমি বিছানার উপর উঠে দাঁড়ালাম এবং অন্ধকার রুমের ভেতরে আমার জুতোজোড়া খুঁজতে লাগলাম।

আমি কি জানতে চাইতে পারি তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে জিজ্ঞেস করল।

আমি তোমার বাড়িতে যাচ্ছি। আমি তাকে বললাম। এখনও অন্ধভাবেই অনুভব করছিলাম।

সে উঠে দাঁড়াল এবং আমার পাশে আসলো। তোমার জুতো এইখানে। তুমি কীভাবে সেখানে যাবে বলে ঠিক করেছ?

আমার লরী নিয়ে।

সেটা সম্ভবত চার্লিকে জাগিয়ে তুলবে। সে সেইভাবে ব্যাপারটা বলল।

আমি শ্বাস নিলাম। আমি জানি। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি এক সপ্তাহ ধরে তাকে এই অবস্থায় ফেলেছি। আর কত বেশি সমস্যা আমি আর সৃষ্টি করতে পারি?

একটাও না। সে আমাকে দোষারোপ করবে। তোমাকে নয়।

 যদি তোমার ভাল কোন আইডিয়া থাকে বলো আমি শুনছি।

 এখানেই থাকো। সে উপদেশ দিল। কিন্তু তার অভিব্যক্তি আশাব্যঞ্জক নয়।

তা হয় না। কিন্তু তুমি এগিয়ে যাও এবং নিজেকে বাড়িতে নিয়ে যাও। আমি তাকে উৎসাহিত করলাম। বিস্মিত যে আমার সেই টিজিং শব্দগুলো কত স্বাভাবিকভাবে আসছে। দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।

সে তার আগেই সেখানে আমার পথ আগলে ছিল।

আমি ভ্রু কুঁচকালাম। জানালার দিকে ঘুরে গেলাম। এটা মাটি থেকে সত্যিই খুব বেশি উঁচুতে নয়। আব নিচে বেশিরভাগই ষের আস্তরণ…

ঠিক আছে। সে শ্বাস নিল। আমি তোমাকে পৌঁছে দেব

আমি কাঁধ ঝাঁকালাম। অন্য পথে। কিন্তু তুমি সম্ভবত সেখানেও থাকবে।

 এবং তাহলে কি?

কারণ তুমি অতিরিক্তভাবে মতামতদানকারী। আমি নিশ্চিত তুমি একটা সুযোগ চাইবে তোমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।

কোন বিষয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গি? সে তার দাঁতে দাঁত ঘষে জিজ্ঞেস করল।

এটা এখন আর কোনমতেই তোমার বিষয় নয়। তুমিই এই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দু নও। তুমি সেটা জানো। আমার ব্যক্তিগত পৃথিবী আছে। অবশ্যই। সেটা ভিন্ন গল্প। যদি তুমি ভতুরিতে আমাদের নিচে এনে দাও যেটা বোকার মতই হবে যেটা আমাকে মানুষ হিসাবে বাস করতে তাহলে তোমার পরিবারের কিছু একটা বলার থাকবে।

বলার থাকবে কোন বিষয়ে? সে জিজ্ঞেস করল। প্রতিটি শব্দই দূরবর্তী।

আমার অমরত্ব নিয়ে। আমি এই ব্যাপারে ভোটের উপর রেখেছি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *