হিজাযী আরবদের ঊর্ধ্বতন পুরুষ আদনান-এর বৃত্তান্ত
আদনান যে ইসমাঈল ইব্ন ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম-এর বংশধর, সে সম্পর্কে কোন মতভেদ নেই। তবে তার এবং ইসমাঈলের মধ্যস্থলে কত পুরুষের ব্যবধান সে বিষয়ে বহু মতভেদ রয়েছে। কথিত সর্বোচ্চ ব্যবধান হচ্ছে চল্লিশ পুরুষের। আহলি কিতাবদের মধ্যে এই উক্তিই প্রচলিত। আরমিয়া ইব্ন হলিকিয়া এর লিপিকার রাখিবার লিপি থেকে আহলি কিতাবরা এ মত গ্ৰহণ করেছে। এ সম্পর্কে আমরা পরে আলোচনা করবো। মতান্তরে উভয়ের মধ্যকার এ ব্যবধান ৩০, ২০,১৫,১০, ৯, অথবা ৪ পুরুষের। মূসা ইব্ন ইয়াকূব এ ব্যাপারে উন্মু সালামা-এর বরাতে বলেন যে, নবী করীম (সা) বলেছেন, মাআদ ইব্ন আদনান ইব্ন উদাদ ইব্ন যান্দি ইবনুল বারী ইব্ন আরাফ আস-ছারা। উন্মু সালাম (রা)-বলেন : যান্দ হচ্ছেন হামায়সা আর বারী হচ্ছেন নাবিক, আর আরােত আস ছারা হচ্ছেন ইসমাঈল, আর ইসমাঈল হচ্ছেন ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র। আর আগুন ইবরাহীম (আ)-কে দহন করেনি, যেমন আগুন দহন করে না মাটিকে। ছারা কুতুনী বলেন : এ বর্ণনা ছাড়া (অন্য কোথাও) আমরা মান্দ সম্পর্কে জানতে পারি না। আর মান্দ ইবনুল জওন হচ্ছেন কবি আবু দালামা।
হাফিজ আবুল কাসিম সুহাইলী প্রমুখ ইমাম বলেন : আদনান থেকে ইসমাঈল (আ) পর্যন্ত সময়কাল ৪ পুরুষ থেকে ১০ পুরুষ বা ২০ পুরুষের চেয়েও বেশী। আর এটা এজন্য যে, বুখত নসরের শাসনকালে মাআদ ইব্ন আদনান-এর বয়স ছিল ১২ বছর। আবু জাফর তাবারী প্রমুখ উল্লেখ করেন যে, আল্লাহ তাআলা এ সময়ে আরমিয়া ইবনু হালকিয়ার নিকট এ মর্মে ওহী প্রেরণ করেন যে, তুমি বুখত নসর এর নিকট গিয়ে তাকে জানিয়ে দাও যে, আমি তাকে আরবদের উপর শাসনকর্তা করেছি। আর আল্লাহ তাআলা আরমিয়াকে নির্দেশ দান করেন যে তিনি যেন তাঁর সঙ্গে মাআদ ইবনু আদনানকেও বুরাকে আরোহন করিয়ে নিয়ে যান, যাতে তাদের মধ্যে তাকে কোন কষ্ট পেতে না হয়। কারণ, তার বংশে আমি একজন মহান নবীর আবির্ভাব ঘটাবো। যার মাধ্যমে আমি রিসালতের ধারার পরিসমাপ্তি ঘটাবো। আরমিয়া সে মতে কাজ করেন এবং মাআদকে নিজের সঙ্গে বুরাকে আরোহণ করিয়ে শাম দেশ পর্যন্ত নিয়ে যান। বায়তুল মুকাদাস ধ্বংসের পর সেখানে যেসব বনী ইসরাঈল অবশিষ্ট ছিল—তিনি তাদের মধ্যে প্রতিপালিত হয়ে বেড়ে উঠেন। স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসার পূর্বে তিনি সেখানে বহু দূর ইবনু জুরহুম বংশে মুআনা বিনত জওশন নাসের এক মহিলাকে বিবাহ করেন। আরব দেশে অশান্তি দূর হয়ে শান্তি ফিরে এলে তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। আরমিয়ার লিপিকার সচিব রাখইয়া তাঁর নিকট রক্ষিত একটা লিপিতে তার বংশধারা লিপিবদ্ধ করে রাখেন, যাতে তা আরমিয়ার ভাণ্ডারে রক্ষিত থাকে। আল্লাহই ভালো জানেন। এ কারণে মালিক (র) আদনান-এর উপরের বংশধারা বর্ণনা করা পছন্দ করতেন না।
সুহাইলী বলেন : এ বংশধারা উর্ধের্ব নিয়ে যাওয়া নিয়ে আমায়া আলোচনা করেছি। সেসব মনীষীদের মত অনুযায়ী। যারা এটাকে বৈধ মনে করেন (এবং এটাকে নাপছন্দ করেন না, যথা ইব্ন ইসহাক, বুখারী, যুবাইর ইব্ন বাককার তাবারী প্রমুখ। তবে ইমাম মালিক (র)-কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, যে সে বংশধারা আদম (আ) পর্যন্ত পৌঁছায়, তখন তিনি এটাকে নাপছন্দ করে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন- সে এটা কোথা থেকে জানতে পেরেছে? ইসমাঈল (আ) পর্যন্ত বংশধারা পৌঁছালে তিনি তা-ও নাপছন্দ করেন। এ সম্পর্কেও তিনি বলেন যে, কে তাকে তা বলেছে? এমনকি তিনি নবীগণের বংশধারা আরো উপরে নিয়ে যাওয়া, যেমন বলা ইবরাহীম অমুকের পুত্ৰ অমুক তাও অপছন্দ করেছেন। আল-মুঈতী তার গ্রন্থে এরূপই উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন : মালিক (র)-এর এ উক্তি উরওয়া ইব্ন যুবায়ব (র)-এর মতের অনুরূপ। তিনি বলেছেন আদনান ও ইসমাঈল (আ)-এর মধ্যবর্তী বংশধারা সম্পর্কে জানে, এমন কারে সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আদনান আর ইসমাঈল (আ)-এর মধ্যকার ত্ৰিশ পুরুষ সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। ইব্ন আব্বাস (রা) থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, বংশধারা আদনান পর্যন্ত পৌঁছার পর তিনি দুবার বা তিনবার বলতেন- বংশধারা বর্ণনাকারীরা মিথ্যা বলে। বিশুদ্ধ মতে ইব্ন মাসউদ (রা) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলতেন : আদনান পর্যন্ত বংশধারা পৌঁছানো যায়। আবু উমর ইব্ন আব্দুল বার তাঁর গ্রন্থ আল-ইস্বাহ ফী মারিাফাতে কাবাইলির রুয়াত-এ বলেন : ইব্ন লাহীয়া আবুল আসওয়াদ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি উরওয়া ইব্ন যুবায়রকে বলতে শুনেছেন যে, আদনান বা কাহতান এরপর বংশধারা সম্পর্কে কেউ জানে বলে আমাদের জানা নেই। কেউ এমন দাবী করলে তা হবে একান্তই অনুমান নির্ভর ও অসত্য। আর আবুল আসওয়াদ বলেন : কুরাইশদের কাজগামা আর বংশধারা সম্পর্কে অন্যতম বিশেষজ্ঞ আবু বকর ইব্ন সুলায়মান ইব্ন আবু খায়সামাকে আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলতেন, মাআদ ইব্ন আদনান-এর উর্ধের্ব কোন কবির কবিতা বা কোন জ্ঞানী ব্যক্তির জ্ঞানের কথা কেউ জানে এমন লোকের সন্ধান আমরা পাইনি।
আবু উমর বলেন- অতীত মনীষীদের মধ্যে এক দল ছিলেন, যাদের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন
আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ আমর ইবুন মায়মুন আল-আযদীি এবং মুহাম্মদ ইব্ন কাব আল-কুরায়ী নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাত্তয়াত করার পর বলতেন- বংশধারা বর্ণনাকারীরা মিথ্যা বলেছে।
و الذین من بغدهم لا یغلمبهم الاً الله (سورة ابراهیم :۹) (তোমাদের নিকট কি সংবাদ আসেনি তোমাদের পূর্ববতীদের নূহ আদি ও সামুদ
জাতির) এবং তাদের পূর্ববতীদের? তাদের বিষয় আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ জানে না (১৪ ইবরাহীম : ৯)।
আবু উমর-(র) বলেন : এ ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাখ্যা হচ্ছে ভিন্নতর। আমাদের মতে এর মানে হচ্ছে আদম (আ)-এর বংশধারা সম্পূর্ণ জানে বলে যারা দাবী করে তাদের প্রতিই উক্ত মিথ্যাচারের উক্তিটি প্রযোজ্য। জানেন কেবল এক আল্লাহ। যিনি তাদের পয়দা করেছেন। আর আরবদের বংশধারা এবং তাদের ইতিহাস ও বংশ বৃত্তান্ত সম্পর্কে জ্ঞানী ব্যক্তিরা অনেক কিছু সংরক্ষণ করেছেন। জ্ঞানীরা তাদের সাধারণ মানুষ এবং বড় বড় কবীলা সম্পর্কে অনেক কিছু তত্ত্ব ও তথ্য সংরক্ষণ করেছেন। তবে এর কোন কোন খুঁটিনাটি বিবরণ সম্পর্কে তাদের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।
আবু উমর বলেন : আদনান-এর বংশধারা বিষয়ে ওয়াকিবহাল মহলের ইমামগণ বলেন? আদনান ইব্ন উদাদ মুকাব্বিস ইব্ন নাহ্র ইব্ন তায়রাহ ইব্ন ইয়ারূব ইব্ন ইয়াশজুর ইব্ন নাবিত ইব্ন ইসমাঈল ইব্ন ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম। মুহাম্মদ ইব্ন ইসহাক তার সীরাত গ্রন্থে এভাবেই উল্লেখ করেছেন।
ইব্ন হিশাম উক্ত বংশতালিকা সম্পর্কে বলেন যে, কায়ের কারো মতে তা হচ্ছে আদনান উদ ইব্ন উদাদ। অতঃপর আবু উমর অবশিষ্ট বংশধারা আদম (আ) পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। যেমন আমরা ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর আলোচনার পূর্বেই উল্লেখ করে এসেছি। অবশ্য আদনান পর্যন্ত আরবের সকল কবীলার নসব নামা সংরক্ষিত এবং এতই খ্যাত ও সুসংরক্ষিত যে, সে বিষয়ে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। আদনান পর্যন্ত মহানবী (সা)-এর বংশধারা ভোরের আলোর মতই স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন। এ বিষয়ে মারফু হাদীস উক্ত হয়েছে, যা আরবের কবীলা প্রসঙ্গে যথাস্থানে আমরা উল্লেখ করবো। মহানবী (সা)-এর পবিত্ৰ বংশধারা ও উৎস সম্পর্কে আলোচনাকালে আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ। তারই প্রতি রয়েছে। আমাদের আস্থা ও ভরসা। প্রবল পরাক্রমশালী ও কুশলী আল্লাহ ভিন্ন কোন ক্ষমতা নেই। নেই কোনই শক্তি-সামর্থ্য। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ ইব্ন মুহাম্মদ আন-নাশীর রচিত মহানবী বলে কথিত একটা প্ৰসিদ্ধ কাসীদায় নবী করীম (সা)-এর বংশধারার কী চমৎকার বর্ণনাই না রয়েছে। যাতে তিনি বলেন?
আমি আল্লাহর রাসূলের প্রশংসা করছি আর তার প্রশংসা দ্বারা আমি তার অনুগ্রহভাজন হওয়ার আখাজক্ষা পোষণ করি।
আমি এমন এক ব্যক্তির নিরংকুশ প্রশংসা করি, প্রশংসা ভাজন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যার স্থান সকলের শীর্ষে আর গুণাপনায় যিনি নিকটবতী আর দূরবতী সকলের উপরে।
(আমি (প্রশংসা করি) এমন এক নবীর প্রাচ্য দেশে যার নূরের স্থান অত্যুচ্চে। ফলে পাশ্চাত্যবাসীদের নিকট তাঁর হিদায়াতকারীরা উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেন।
তার আগমনের পূর্বেই আগমণবার্তা পৌঁছেছে আমাদের কাছে। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে খবর তার আগমণের।
গনক আর ভবিষ্যদ্বক্তারা তার নাম উচ্চারণ করতে শুরু করে। আন্দাজ-অনুমান করে মিথ্যাবাদীরা তাকে অস্বীকার করে।
প্রতিমাগুলো এমন কথা উচ্চারণ করে, যার দ্বারা তারা মিথ্যাবাদীদের কথা থেকে সম্পর্ক হীনতা ঘোষণা করে এবং আল্লাহর দিকে তারা রুজু করে।
প্রতিমাগুলো কুফৱীর অনুসারীদেরকে স্পষ্ট বলে দেয়, তোমাদের নিকট একজন নবী এসেছেন। লুয়াই ইব্ন গালিব-এর বংশ থেকে।
জিনরা চুরি করে আড়ি পেতে শোনার প্রয়াস পেলে নক্ষত্ররাজি নিক্ষেপ দ্বারা তাদেরকে বিতাড়িত করে দেয়া হয়।
তিনি আমাদেরকে এমন পথ প্রদর্শন করেন, যে পথের দিশা পাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কারণ, স্পষ্ট ধর্ম সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছিল দীর্ঘ দিনের।
তিনি নিয়ে আসেন এমন সব নিদর্শন, যদ্বারা প্ৰমাণ হয় যে, সেগুলো হচ্ছে এমন এক সত্তার প্রমাণ, যিনি দুর্দান্ত পরাক্রমশালী, পুরস্কারদাতা ও শাস্তিদাতা।
সেসব প্রমাণের অন্যতম হচ্ছে চন্দ্ৰ বিদীর্ণ হওয়া এমন এক সময়ে, যখন তার আলোর ছটা উর্ধ্বাংশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
তন্মধ্যে আরো একটা প্রমাণ হচ্ছে তার অঙ্গুলীর অগ্রভাগ থেকে পানি উৎসারিত হওয়া, অথচ তখন পানির সন্ধানে আগন্তুকরা পানির ধারে কাছেও ছিল না।
সে পানি দ্বারা পরিতৃপ্ত করা হয় এক বিরাট দলকে এবং পাপাচারীদের হাতসমূহ গর্দনসহ স্বেচ্ছায় নত হয়ে পড়ে।
তাঁর তীরের পাশে অনেক কূপ থেকে পানি প্রবাহিত হয়, অথচ ইতিপূর্বে তাতে কোন পানি পানকারী এক ফোটা পানির স্বাদ গ্রহণ করেনি।
এমন অনেক ওলান, যা ছিল শুকনো তা দুধে ভর্তি হয়ে গেল। অথচ তাতে এমন দুধ ছিল না, যা দুগ্ধ দোহনকারীর হস্তকে আকর্ষণ করে।
সুস্পষ্ট বচন ফুটে উঠে স্পষ্টভাষী বাহু থেকে, দুশমনের প্রতারণা সম্পর্কে যার প্রতারণা ছিল তীব্ৰ।
و اخبار ه بالامر من قبل کونه – و عند بوادیه بما فی العوا قب অনেক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তাঁর সে বিষয়ে খবর দেওয়া এবং সূচনাতেই পরিণতি কি হবে তা বলে দেয়া।
و من تلکم الایات و حیاتی به م – قریب المائی مسجم العجائب সে সবের মধ্যে এমন কিছু আয়াত, যা ওহী হয়েছে। তিনি সে সব নিয়ে এসেছেন। কিয়ামতের নিকটবতী এবং বিস্ময়ের বিপুল সমাহার।
تقاصیرت الافکار عنه فلم یطع – بلیغا و لم یخطر علی قلب خاطب তাঁর চিন্তাধারা এতই উন্নত যে তা হৃদয়ঙ্গম করতে সাধারণ মানুষ অক্ষম। ফলে তিনি আনুগত্য করেননি কোন বাগীর এবং কোন বাগীর অন্তরে তার অনুরূপ চিন্তা উদিতও হয়নি।
حوی کلی علم و احتوی کلی حکمة – وفات مرام المستمر الوار بب সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান তিনি আয়ত্ত করেছেন। এবং সফলকাম হয় না। সর্বদা প্রতারণাকারী ব্যক্তি।
اتانا به لا عن رویهٔ موتی – ولا صحف مستمل و لا وصف کاتب আমাদের নিকট তা নিয়ে এসেছেন সন্দেহবাদীর চিন্তা-কল্পনা থেকে নয়, লিখিত পুস্তক আর লেখকের লেখকসুলভ গুণ থেকেও নয়।
یواتیه طو را فى اجابة سائل – وافتاء مستفت ووعظ مخاطب কখনো তিনি উপস্থাপন করেন কোন প্ৰশ্নকর্তার জবাবে; আবার কখনো ফতোয়া প্ৰাথীর জবাবে। কখনও খতীবরূপে ওয়াউ হিসাবে।
واتیان بر هاری و فرضی شرائع – و قصی احادیث و نص مادب নিয়ে আসেন। তিনি দলীল-প্রমাণ, শরীয়তের বিধি-বিধান বর্ণনা করেন। ঘটনাবলী এবং বর্ণনা করেন লক্ষ্য উদ্দেশ্য দ্ব্যর্থহীনভাবে।
و تصریف امثال و تثبیت حجة – و تعریف ذی جحد و توقیف کاذب
দৃষ্টান্ত বৰ্ণনায় প্রমাণ উপস্থাপনে অস্বীকারকারীর পরিচয় দানে মিথ্যাবাদীর স্বরূপ উদঘাটনে।
الغرائب এবং কোন প্ৰকাশ্য জনসমাবেশে ও প্ৰকাশ্য রণাঙ্গণে এবং কোন তীব্র সংকটকালে তিনি দেখা দেন বিস্ময়করভাবে।
ফলে তুমি যেমনটি চাও তিনি তেমনি নিয়ে আসেন দ্ব্যর্থহীন রূপে, স্বভাবগতভাবে ृिन् िप्रान्त्रीब्ल।
তার কতক অংশ অনুমোদন করে কতককে, যেন পৰ্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তার অর্থ ও তাৎপর্য পর্যবেক্ষকের দৃষ্টি নিয়ে।
التجارب তার মোকাবিলা করতে সমগ্ৰ বিশ্ব যে অক্ষম, যা আমরা পূর্বে বর্ণনা করেছি, তা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত।
আমার পিতা উৎসর্গ হোন তাঁর পিতা আব্দুল্লাহর প্রতি, যিনি সর্বাধিক সম্মানিত পিতা, যার থেকে প্রকাশ পেয়েছে সম্মান আর মর্যাদা, যিনি উপযুক্ত সম্মানের পাত্র।
শায়বী (আবদুল মুত্তালিব) প্রশংসার অধিকারী, যার জন্য তাঁর বংশ কুরাইশ গর্বিত সকল মর্যাদা ও পদের অধিকারীদের তুলনায়।
আর তিনি এমন যে তাঁর চেহারার ওসীলায় বৃষ্টি কামনা করা হতো এবং বিপদাপদে তাঁর মতামত চাওয়া হতো।
আর হাশিম, যিনি প্রতিষ্ঠাতা, যার গর্বের ভিত মজবুত, তার কর্ম প্রচেষ্টার ঔজ্জ্বল্য এবং বিদ্যান্যতার কারণে।
আশা-আখাঙ্ক্ষা, উৎসাহ-উদ্দীপনায় উজ্জীবিত করেন।
এবং কুসাইতো হচ্ছেন সম্মানিত উৎসের ব্যক্তিত্ব, তিনি এমন এক উৎসে অবস্থান করেন, কর্তনকারীর হস্ত তার নিকটেও আসতে পারে না।
তার দ্বারা আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন গোত্ৰকে একত্রিত করেন, ছিনতাইকারী হস্তগুলো তা ছিন্ন-ভিন্ন করার পর।
সম্মানিত বংশ থেকে কিলাব-এর উদ্ভব হয়। দূরের আর নিকটের সকল ব্যক্তিই অক্ষম ও অপারগ। তার নিকটে পৌছতে।
এবং মুররা, যার অভিপ্ৰায়ের দৃঢ়তা অতিক্রম করতে পারেনি কোন নির্বোধের নিবুদ্ধিতা বা কোন পাপীর পাপ।
এবং কাব উর্ধে উঠেছে। যার গোড়ালী, মর্যাদা কামীর উর্ধের্ব। ফলে তিনি লাভ করেছেন সামান্যতম চেষ্টায় উচ্চতম মর্যাদা।
আর লুয়াই পেচিয়ে নেন ঔদ্ধত্য পরায়ণদেরকে, ফলে তাঁর অনুগত হতে বাধ্য হয় উঁচু নাক বিশিষ্ট প্রবলরাও।
আর গালিব, তার মধ্যে রয়েছে শক্তিমত্তা—যুদ্ধ তাকে ছাড়া অপরকে (গ্রহণ করতে) অস্বীকার করে, প্রবল জাতিসমূহ ও তাদের নেতারা তাদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
আর কুরাইশ বংশে ফিহর এর জন্য ছিল বাগীতা, তিনি যখন উদ্দীপ্ত উত্তেজিত হতেন তখন তারা তার আশ্রয় কামনা করতো।
আর তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মালিক আর মালিক ছিলেন উত্তম, আর তিনি ছিলেন উত্তম সহচরবৃন্দ পরিবেষ্টিত ও উত্তম সঙ্গী।
আর নযর এর জন্য ছিল এমন দৈর্ঘ্য, চোখ যার নাগাল পেতো না। যেমন উজ্জ্বল নক্ষত্রমালার আলো চোখে অল্পই ধরা পড়ে।
আমার জীবনের শপথ, কিন্যানা। তার মধ্যে প্ৰকাশিত হয় এমন গুণাবলী, কোন বিজয়ীর কাছে মাথা নত করতে অস্বীকার করে।
তার পূর্বে খুযায়মা অবশিষ্ট রেখে গিয়েছিলেন। তাঁর প্রশংসা, উত্তরাধিকারের সম্পত্তি ও নিকটাত্মীয়দের প্রশংসা ছাড়াও।
আর মুদরিকা, মানুষ দেখেনি তার অনুরূপ পূত-পবিত্র ও উন্নত, হীন-নীচ উপার্জন থেকে।
আর মূয়ার-এর মধ্যে সমাবেশ ঘটতো সকল অহমিকার, যখন যুদ্ধে লিপ্ত হয় ত্ৰিশোধৰ্ব্ব সংখ্যক অশ্বরাজি।
আর নিযার অবস্থান করেন তাঁর পরিজনের কর্তৃত্ব থেকে এমন উর্ধে এক স্থানে, যা পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টির উর্ধে।
আর মাআদি ছিলেন সদা প্রস্তুত তাঁর বন্ধুদের জন্য, যখন সে শঙ্কিত হতো যুদ্ধবাজ দুশমনের চক্রান্তে।
আর আদনান ছিলেন এমন যে, যখন তাঁর গুণ শুমার করা হয় তখন তিনি থাকেন সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে একক।
আর উদ যার মহিমা প্রকাশ পায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আর এমন উত্তরাধিকার, যা তাকে অন্যান্য সর্দারদের থেকে নিরাপদে রাখে।
আর উদাদ-এর মধ্যে বলেছে ধৈর্য-স্থৈৰ্ম্ম যা ভূষিত জ্ঞান দ্বারা, যখন ধৈর্যহারা হয়ে যায় বড় বড় নেতারা।
আর হামায়সা, সর্বদা তিনি উর্ধ্ব গমন অব্যাহত রাখেন, আর অনুগমন করেন দূরবতী আগ্রহীদের উচ্চাকাংজক্ষার। M
আর নাবিত তাকে বানিয়েছে মর্যাদার বিশাল বৃক্ষ, আর তিনি তৈরী করেছেন তাঁর দুর্গ বৃষ্টিবহুল এলাকায়।
ও শান্ত্রীর সাহসিকতা।
তারা হচ্ছেন ইসমাঈলের বংশধর, যিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী। তাঁর পরে গৰ্বকারীর গর্বের আর কিছুই নেই।
و کان خلیل الله اکرم من عنات – له الار ضی ما ماش علیها و را کب আর ইবরাহীম ছিলেন আল্লাহ্র বন্ধু, পৃথিবীর বক্ষে পদচারণাকারী ও অশ্বারোহী সকলের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত।
আর তারিহ সৎ স্বভাব তাকে সদা আনন্দ দান করতো, বিশাল তাবু থেকে প্রকাশ পেতো তার প্রশংসা।
আর নাতুর, তিনি তো দুশমনদের বিনাশকারী, তার জন্য সংরক্ষিত থাকে স্মৃতিচিহ্ন, গণনাকারী যখন তা গণনা করে।
و اشرع في الهيجاء ضبغم غابة – يقد الطلى بالمرهفات القواضب আর আশরাগ যুদ্ধ-বিগ্রহে তিনি ছিলেন বনের সিংহের মত। বিনাশী অস্ত্র দ্বারা তিনি বিদীর্ণ করেন গর্দান।
আর আরগু-যুদ্ধে তিনি গর্জন করেন, বিজয় লোভী ব্যক্তির ব্যাপারে তিনি কৃপণ।
আর ফালিগ-তার জাতির পেছনে তার মর্যাদা বিনাশকারী কেউ নেই, মর্যাদায়ত্ত তাদের মধ্যে কেউ নেই তাকে অতিক্রমকারী।
و شالخ و ار فخشذ و سام سمت بهم – مجا یا حمتهم کلی ذار و غائب এবং শালিখ, আরফাখশান্য ও সাম, উন্নত করে তাদেরকে এমন সব স্বভাব, যাদেরকে সমর্থন করে যে কোন সাক্ষাৎপ্রার্থী ও অনুপস্থিত ব্যক্তি।
و ما زالی نوح عند ذی العرش فاضلا – یعده فی الصطفین الا طایب আর নূহ সর্বদাই ছিলেন আরশের অধিপতির নিকট গুণীজন, তিনি তাকে বাছাইকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য করেন।
আর তাঁর পিতা লেমক, প্ৰতাপ প্রতিপত্তির ক্ষেত্রে ছিলেন সেরা, তিনি ছিলেন বর্মধারী বীরের বিরুদ্ধে সাহসী যোদ্ধা।
و من قبل لملك لم يزل متوشلخ ما يذود العديى بالذاشدات الشواذب আর লোমক এর পূর্বে ছিলেন মতুশেলখ দুশমন। হটাতেন। তিনি দুর্বল হাডিডাসার বাহন নিয়ে।
নাগাল পায় না।
و یارد بحر عند آلی سرانه – ابی الخزایا مستندقی الاً رب আর ইয়ারিদ (থেরদ) ছিলেন একটা সমুদ্র তার বংশের সেরা ব্যক্তিদের নিকট, অপমানকে প্রত্যাখ্যানকারী আকাজক্ষা পূরণকারী।
و كانت لمهلا ييل فهم فضائل – مهذبة من فاحشات المثالب আর মাহলাঈলের জন্য ছিল শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতি যা ছিল পরিশীলিত ও অশ্লীল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত।
তিনি দ্রুত অগ্রগামী। . – د
আর আনৃশ ছিলেন প্রবৃত্তির তাড়না থেকে আত্মসম্বরণকারী এবং তার প্রবৃত্তিকে তিনি পবিত্র রাখেন রিপুর বিধ্বংশী তাড়না থেকে।
وما زال شيث بالفضائل فاضلا – شريفا بريئا من ذميم المعاشب আর শীছ ছিলেন মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ, তিনি ছিলেন সন্ত্রান্ত, মুক্ত ছিলেন নিন্দনীয় দোষ-ত্রুটি থেকে।
و کلهم من نور آدم اقتبسوا – و عن عود ه اجنوا ثمار الناقب আর তাদের সকলেই আহরণ করেন আদমের নূর থেকে আলো, আর তার বৃক্ষ থেকে আহরণ করেন মর্যাদার ফল।
বংশধারা আদি থেকে চলে এসেছে।
তাঁর মায়ের বংশধারা ও পিতার বংশধারা সমান্তরালভাবে চলে এসেছে। তারা সকলেই ছিলেন দোষ-ত্রুটি মুক্ত।
তার উপর আল্লাহর তরফ থেকে শান্তি বৰ্ষিত হোক উদয়াচলে ও অস্তাচলে।
শায়খ আবু উমর ইব্ন আব্দুল বার কাসীদাটি এভাবেই উল্লেখ করেছেন। আমাদের শায়খ
আল-নগশী, যিনি ইব্ন শার শীর নামে পরিচিত, তাঁর কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে এটি উদ্ধৃত করেছেন। মূলত তিনি ছিলেন আম্বার অঞ্চলের অধিবাসী। তিনি বাগদাদে আগমণ করে পরে মিশরে গমন করেন এবং হিজরী ২৯৩ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত মিশরেই অবস্থান করেন। তিনি ছিলেন মুতাজিলা দর্শনে বিশ্বাসী একজন ধর্মতত্ত্ববিদ। শায়খ আবুল হাসান আল-আশআরী তার আল-মাকালাত গ্রন্থে মুতাজিলাদের আলোচনা প্রসঙ্গে ইব্ন শারশী-এর উল্লেখ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন স্বভাব কবি। কবিতায় তাঁর এমনই দখল ছিল যে, তিনি বিভিন্ন কবির কবিতার প্যারোভী লিখতেন। আর তাদের বিরোধিতায় তিনি পদ্য রচনা করতেন এবং এগুলোতে তিনি এমন সব অভিনব শব্দের ঝংকার আর ভাবের দ্যোতনা সৃষ্টি করতেন, যার সাধ্য অন্য কবিদের ছিল না। এমনকি কেউ কেউ তাকে প্রবৃত্তি পূজারী এবং ভোগবাদী বলে আখ্যায়িত করেছেন। খতীব বাগদাদী উল্লেখ করেছেন যে, তার অভিন্ন ছন্দ বিশিষ্ট একটা অনবদ্য কাসীদা আছে, যার পংক্তি সংখ্যা প্ৰায় ৪ হাজার। ইতিপূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি যে, আন-নাজিম এ কাসীদটির উল্লেখ করেছেন এবং তার ওফাতের তারিখও কবিতায় নির্ণয় করেছেন।
আমি বলিঃ এই কসীদাটি তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, বাগিতা, ভাষা জ্ঞান, শব্দালংকার, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, ধীশক্তি, শব্দ প্রয়োগে দক্ষতা, তত্ত্ব ও তথ্য সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান এবং মহানবী (সা)-এর পবিত্ৰ বংশধারা কবিতার ছন্দে প্ৰকাশ করার অসাধারণ ক্ষমতা প্রমাণ করে। এসব হচ্ছে তাঁর ভাব সমুদ্র থেকে আহরিত উৎকৃষ্ট মুক্তোমালা। আল্লাহ তাঁর প্রতি সদয় হোন তাঁকে ছওয়াব দান করুন এবং তার পরকালকে কল্যাণময় করুন।