২২. সাহিত্যের বদলে সিনেমা

জানা নেই শোনা নেই, অন্নদাশঙ্করের হঠাৎ একটা চিঠি পেলাম। বিলেত থেকে লেখা, যখন সে সেখানে ট্রেনিংএ। চিঠিতে আমার সম্বন্ধে যতো কিছু অতিশয়োক্তি ছিল—এহ বাহ্য–কি লিখেছে তার চেয়ে কে লিখেছে সেইটেই গণনীয়। পত্রের চেয়েও স্পর্শটাই বেশি স্বাদু, বেশি স্বাগত। অন্নদাশঙ্করের সেই হস্তলিপি জীবনের পত্রে জীবনদেবতার নতুনতরো স্বাক্ষর।

বিলেত থেকে এলে তার সঙ্গে মিলিত হলাম। তাকে দেখার প্রথম সেই দিনটি এখনো মনের মধ্যে উজ্জ্বল হয়ে আছে। সে শুধু রৌদ্রের উজ্জলতা নয়, একটি অনির্বের তারুণ্যের উজ্জলতা। অন্নদাশঙ্করের তারুণ্য কল্লোলযুগের মর্মবাণী।

ক্রমে ক্রমে সেই পরিচয়ের কলি বন্ধুতার ফুলে বিকশিত হয়ে উঠল। লাগল তাতে অন্তরঙ্গতার সৌরভ। দুজনে শান্তিনিকেতনে গেলাম, রবীন্দ্রনাথের শরিধানে। অমিয় চক্রবর্তীর অতিথি হলাম। কটা দিন মুখস্বপ্নের মত কেটে গেল। মুখ যায় কিন্তু স্মৃতি যায়না।

অন্নদাশঙ্করের চিঠি :

বন্ধু,

আমি ভেবেছিলুম তোমার অসুখ করেছে, শারীরিক অসুখ। তাই বেশ একটু উদ্বিগ্ন ছিলুম। আজকের চিঠি পেয়ে বোঝা গেলো অসুখ করেছে বৈ কি, কিন্তু মানসিক। উদ্বেগটা বেশী হওয়া উচিত ছিল, কিন্তু মানুষের সংস্কার অন্যরকম।…

সতী পূজার সময় এখানে এলে কেমন হয়? বিবেচনা করে লিখো। সাহিত্যিক জলবায়ুর অভাবে মারা যাচ্ছি। দ্বিজেন মজুমদার না থাকলে এতদিনে ভূত হয়ে যেতুম।

কাল রাত্রি ২টার সময় ডিনার ও ডান্স থেকে ফিরি। নাচতে জানিনে, বসে বসে পর্য্যবেক্ষণ করছিলুম কে কী পরেছে, কত রং মেখেছে, ক’বার চোখ নাচায় ও কানের দুল দোলা, কেমন করে nervous আমি হাসে-যেন হি উঠেছে। ইত্যাদি। ইংরেজ ও ইঙ্গবঙ্গদের ভিড়ে আমার এত খারাপ লাগছিল তবু study করাব লোত দমন করতে পারছিলুমনা।

পরশু রাতে ১টা অবধি হয়েছিল fancy dress ball. আমি সেজেছিলুম সন্ন্যাসী। সকলে তারিফ করেছিল।

এমনি করে দিন কাটছে। কবে কে নিমন্ত্রণ করলে, কে করলে না, কে ইচ্ছে করে অপমান করলে, কে মান রাখলেনা—এই সব নিয়ে মন কষাকষি চলেছে ক্লাবের মেম্বরদের সঙ্গে। মুস্কিল হয়েছে এই যে দ্বিজেন ও আমি হাফগেরস্থ। আমরা যদি একেবারে পার্টিতে যাওয়া বন্ধ করে দিতুম ও সানন্দে একঘরে হতুম, তবে এসব pin prick থেকে বাঁচা যেতো। কিন্তু আমরা dinner jacket পরে খেতে যাই অথচ বাঙালী মেয়েদের বিজাতীয়তা দেখে মর্মাহত হই। আমরা ইংরেজী পোষাকে চলি ফিরি, অথচ কোনো বাঙালী তার স্ত্রীকে dearie ডাকছে শুনলে চটে যাই। আমাদের চেয়ে যারা আরেক ডিগ্রী সাহেবিয়ানাগ্রন্ত তাদের সম্বন্ধে আমাদের যে আক্রোশ আমাদের ওপরে ডেপুটীবাবুদের বোধ হয় সেই আক্রোশ। কিন্তু জাতিভেদের দরুণ ডেপুটী-উকীল-জমিদার ইত্যাদির সঙ্গে আমাদের পরিচয় পৰ্যন্ত হয়নি।

মোটের উপর বড় বিশ্রী লাগছে। টেনিসটা মোজ খেলি সেই এক আনন্দ। আরেক আনন্দ চিঠি ও কাব্যাদি লেখা।

অমিয় দুখানা চিঠি লিখেছিলেন। তুমি কি শান্তিনিকেতন সম্বন্ধে কিছু লিখছো? আমি সত্বর সুরু করবো।

 

বন্ধু,

Departmentalএ ফেল করবো এ একেবারে মৃত্যুর মতো নিশ্চিত। এতএব আজকের এই বাদলা অপরাহ্নটিতে তোমার সঙ্গে আলাপ করবো। কোকিল ঝড়বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে অশ্রান্ত আলাপ করছে–ভবানীপুরে বা আলিপুরে শুনতে পাও?

আমার বিয়ের সম্বন্ধ ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে। তোমার আসে? সাহিত্য তো তুমিও লেখো, কিন্তু কেউ কি তাই পড়ে তোমাকে মন-প্রাণ সঁপে? যদি আই-সি-এসটা কোনোক্রমে পাশ করে থাকতে, তবে হঠাৎ সবাই তোমার সাহিত্যের দরুণ তোমাকে পতিরূপে কামনা করতে। এবং তুমি প্রত্যাখ্যান করলে hunger strike করতো। এই কয়েক মাসে আমার ভারি মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। বলব তোমাকে।

অনেক সুন্দর সুন্দর গল্পের প্লট মাথায় ঘুরছে। লিখে উঠতে পারছিনে। সমাজটাকে আরেকটু ভালো করে দেখতে-শুনতে চাই। কিন্তু এ চাকরীতে থেকে সমাজের সঙ্গে point of contact জোটেনা। আমরা ক্লাব-চর জীব। ক্লাবে সম্প্রতি বাঙালী মেয়ের দুর্ভিক্ষ।

Departmentalএর সময় কলকাতায় যে কদিন থাকবে সেই সময়ের মধ্যে জনকয়েক সাহিত্যিককে চা খাওয়াতে চাই। সেই সূত্রে পরিচয় হবে। তুমি নাম suggest করে দেখি।

তুমি কলকাতাতেই একটা লেকচারারী জোগাড় করে থেকে যাও। মুনসেফী বড় বিদঘুটে। তোমাদের কি খুব টাকার টানাটানি?….

 

বন্ধু,

অনেকদিন পর তুমি আমাকে একখানা চিঠির মত চিঠি লিখলে। চিঠির জবাব আমি প্রাপ্তিতে লিখতে ভালোবাসি, দেরি করলে নিতে প্রবৃত্তি হয়না, তা ঘুলিয়ে যায়।…

দশ বছর আমি সমাজ-ঘাড়া, কদাচ আমার আপনার লোকেদের সঙ্গে দেখা হয়। ক্কচিৎ তাদের উপর আমি নির্ভর করেছি অন্নবস্ত্রের জন্যে বা সাংসারিক সুবিধার জন্যে। এমনি করে আমি একটা Semi-সন্ন্যাসী হয়ে পড়েছি। আমার পক্ষে বিয়ে করা হচ্ছে সমাজের সঙ্গে পুরোদস্তুর জড়িয়ে পড়া—শশুর শাশুড়ী শালা শালী ইত্যাদির উৎপাত সওয়া। তাহলে চিরকাল এই চাকরীতে বাধা থাকতে হয়। তাহলে ইউরোপে পালিয়ে বসবাস করা চলেনা। একলা মানুষের অনেক সুবিধা। He can travel from China to Peru.

মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে বটে বিয়ে করে সংসারী হই—একটি জমিদায়ী কিনি, বাগানবাড়ীতে থাকি, নিজের ইস্কুলে পড়াই, নিজের হাতে বীজ বুনি ও ফসল কাটি। একটি কল্যাণী বধু, কয়েকটি সুন্দর স্বাস্থ্যবান ছেলেমেয়ে।

কিন্তু এর জন্যে অপেক্ষা করতে হয়। এস্বপ্ন একা আমার হলে চলবে না। আরেকজনের হওয়া চাই। সাহিত্য আমার কাছে প্রাণের মতো প্রিয়। কিন্তু ওর চেয়ে প্রিয় সুসমঞ্জস প্রেম। ও-জিনিষ পেলে আমি হয়তো সাহিত্য ছেড়ে দিতে পারি। জীবনের মধ্যাহ্ন কালটা purely উপলব্ধি করতে চাই। তারপরে সন্ধ্যা এলে জীবনের রূপকথা বলার সময় হবে।…

I feel like a child very often, আমি খানিক কেঁচেছি। যুবক হতে আমার কিছু বিলম্ব হবে, কৈশোরটা ভালো করে শেষ করে নিই। আমার বিয়ের বয়স হয়নি।

তোমার চাকরীর জন্য চিন্তিত হয়েছি। তুমি খুব অল্প বেতনে কাজ করতে রাজী হও তো ঢেঙ্কানালের রাজাকে লিখতে পারি। ঢেঙ্কানালের জল-হাওয়া ভালো। কত কম মাইনেতে কাজ করতে পারো, লিখো। ঢেঙ্কানালে চার পাচজন মানুষের একটি পরিবার ৪০/৪৫ টাকায় বেশ চলে। ভাবলে বলছিনে যে তুমি ৫০ টাকার চাকরিতে রাজি হও। Say, 100/.?…ইতি।

তোমার অন্নদা।

 

অন্নদাশঙ্কর তেমন একজন বিরল সাহিত্যিক যার সান্নিধ্যে গিয়ে বসলে আধ্যাত্মিকতার একটি সুঘ্রাণ পাওয়া যায়। (তেমন আরেকজনকে দেখেছি। সে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।) একটি মৌন মহত্ব যে তার চিন্তায় তা যেন স্পষ্ট স্পর্শ করি। কোনো কথা না বলে তার কাছে চুপ করে বসে-থাকাটিও অনেক কথা-ভরা। আত্মার সঙ্গে আত্মার যখন কথা হয় তখনই মহৎ আর্ট জন্ম নেয়। অন্নদাশঙ্কর সেই মহৎ আর্টের অম্বেষক। সাহিত্যের আদর্শ তার এত উঁচু, যা তার আয়ত্ত, অধিকৃত, তাতে সে আপ্তকাম নয়। জীবনে যে স্বস্থ ও শান্ত হতে পারে, কিনে সে সৃজনে সে অপরিতৃপ্ত। এমনিতে সহজ গৃহস্থ মানুষ, কিন্তু আসলে সে বন্দী প্রমিথিউস।

স্বচ্ছ সরল কথা, স্নিগ্ধ মুক্ত হাসি-চিত্তনৈল্যের দুটি অপরূপ চিহ্ন। স্টাইল বা লিখনরীতিই যদি মানুষ হয় তবে অন্নদাশঙ্করকে বুঝতে কারু ভুল হবেনা। মৌনের আবেগ নিষ্ঠার কাঠিন্য আর বৈরাগ্যের গাম্ভীর্য নিয়ে মাশরু। ভিড়ের মধ্যে থেকেও সে অসঙ্গ, অবিকৃত। আর যার বিকার নেই তার বিনাশও নেই। যাকে আমরা বাস্তব বলি তাই বিকার্য—শুধু কটি স্বপ্নই বুঝি অবিনাশী, মৃত্যুহীন। অন্নদাশঙ্কর সেই কটি স্বপ্নের চারু কারু।

ভালো লেখা লিখতে হবে। তার জন্যে চাই ভালো করে ভাবা, ভালো করে অনুভব করা আর ভালো করে প্রকাশ করা—তার মানে, একসঙ্গে মন প্রাণ আর আত্মার অধিকারী হওয়া। আশঙ্করের লেখা এই মন প্রাণ আর আত্মার মহামিলন।

 

অমিয় চক্রবর্তী কল্লোলে না লিখলেও কল্লোলযুগের মানুষ। এই অর্থে যে, তিনি তদানীন্তন তারুণ্যের সমর্থক ছিলেন। নিজেো অন্তরে সংক্রামিত করে নিয়েছিলেন সেই নতুনের বহ্নিকণা। শনিবারের চিঠির বিরুদ্ধে আমাদের হয়ে লড়েছিলেন বিচিত্রায়।

পুরোনো দিনের ফাইলে তাঁর একটা মাত্র চিঠি খুঁজে পাচ্ছি।

প্রিয়বরেষু, আপনার চিঠিখানি পেয়ে খুব ভালো লাগল। এবারকার যাত্ৰাপৰ্ব সুন্দর হোক—আপনাদের নুতন পত্রিকা ঐশ্বর্যে পূর্ণ হয়ে নিজেকে বিকশিত করুক এই কামনা করি। কল্লোলকে আপনি চৈতন্যময় মুক্তির বাণীতে মুখর করে তুলবেন—তার বীর্য অন্তরের নির্মলতারই পরিচয় হবে।

রবীন্দ্রনাথের এই ছোটো গানটি বোধ হয় কোথাও প্রকাশিত হয়নি। তিনি যাবার আগে বলে গিয়েছিলেন মহুয়ার কবিতা বাদে কোনো কিছু থাকলে তা আপনাকে পাঠাতে।

তাঁর ঠিকানা দিচ্ছি।…আপনি ঐ ঠিকানায় চিঠি লিখলে তিনি পাবেন—তবে পেতে দেরি হবে কেননা তিনি কোনো স্থানেই বেশি সময় থাকবেন না, কাজের ভিড়ও তাঁকে ঘিরে রাখবে। আপনার চিঠি এবং নূতন পত্রিকা পেলে তিনি বিশেষ আনন্দিত হবেন।

আমার একটা কবিতা পাঠালাম—এইটুকু অনুরোধমাত্র যেন ছাপা ভুল না হয়। এই ভয়বশত কোথাও কোনো কবিতা ছাপাতে ভরসা হয় না। প্রবাসীতেও ভুল করেছে—হয়তো এ বিষয়ে আমাদের কাগজপত্র অসাবধানী। কবিতা ছাপানোর কথা বলছি—কিন্তু বলা বাহুল্য এবারকার রচনা উপযুক্ত না ঠেকলে কখনোই ছাপাবেন না। পয়ে অন্য কিছু লিখে পাঠাতে চেষ্টা করব।

আমার একটা বক্তব্য ছিল। আপনার বেদে সম্বন্ধে কবির লেখা চিঠিখানি আপনি যদি সমগ্র উদ্ধৃত করে নূতন কল্লোলে ছাপান একটা বড় কাজ হবে। ঐ পত্রের মূল্য সমস্ত দেশের কাছে, আপনার লেখার সমালোচনা আছে কিন্তু তা ব্যক্তিগতের চেয়ে বেশি।

 

গানটি দুয়ার নাম দিয়ে কল্লোলে ছাপা হয়েছিল। এ দুয়ায় প্রকাশ-প্রারম্ভের প্রতীক, চিরকালের অনাগতের আমন্ত্রণ। সেই অর্থে ও গানটির প্রযুক্ততা কল্লোলে অত্যন্ত স্পষ্ট।

হে দুয়ার, তুমি আছো মুক্ত অনুক্ষণ
রুদ্ধ শুধু অন্ধের নয়ন।
অন্তরে কী আছে তাহা বেঝেনা সে তাই
প্রবেশিতে সংশয় সদাই।।

হে দুয়ার, নিত্য জাগে রাত্রি দিনমান
সুগম্ভীর তোমার আহ্বান।
সূর্যের উদয় মাঝে খেলে আপনারে
তারকায় খোলো অন্ধকারে।।

হে দুয়ার, বীজ হতে অঙ্কুরের দলে
খোলো পথ, ফুল হতে ফলে।
যুগ হতে যুগান্তর করো অবারিত
মৃত্যু হতে পরম অমৃত।।

হে দুয়ার, জীবলোক তোরণে তোরণে
করে যাত্রা মরনে মরণে।
মুক্তি সাধনার পথে তোমার ইঙ্গিতে
“মা ভৈঃ” বাজে নৈরাশ্যনিশীথে।

 

অমিয়বাবুর ভাই অজিত চক্রবর্তীর নাম সাহিত্যের দৈনিক বাজারে প্রচলিত নয়। কেননা সে তো সাহিত্য রচনা করেনি, সে সাহিত্য ভজনা করেছে। ভক্ত কি ভজনীয়ের চেয়ে কম? রসস্রষ্টার দাম কি যদি রসজ্ঞ না থাকে। চারদিকেই যদি অরসিক-বেসিকের দল, তবে তো সমস্ত সৃষ্টি রসাতলে। অজিত চক্রবর্তী ছিল রসোপভোগের দলে, তার কাজ ছিল তার বোধের দীপ্তি দিয়ে লেখকদের বোধিকে উত্তেজিত করা। ট্রামে-সে রাস্তা-ঘাটে যেখানেই দেখা হোক, কার কী কবিতা ভালো লেগেছে তাই মুখস্ত বলা। অনেক দিন দেখা না হলে বাড়িতে বয়ে এসে অন্তত প্রশংসনীয় অংশটুকুকে চিহ্নিত করে যাওয়া। যার সৃষ্টিকে সুন্দর বলে অনুভব করলাম সেই আনন্দ সৃষ্টিকর্তাকে পৌছে না দিলে আস্বাদনের পূর্ণতা কই?

সর্বতোদীপ্ত যৌবনের প্রতি ছিল অজিত। সে যে অকালে মরে গেল তাতেও তার রসবোধের গভীরতা উহ্য ছিল। জীর্ণ বসন ছাড়তে যদি ভয় নেই তবে মৃত্যুতে বা কী ভয়? তার নিঃশব্দ মুখে এই রসাস্বাদের প্রসন্নতাটি চিরকালের জন্যে লেখা হয়ে আছে।

একদিন এক হালকা দুপুর কল্লোল-আপিসের ঠিকানায় লম্বাটে খামে একটা চিঠি পেলাম। কবিতায় লেখা-চিঠি-১০৯ সীতারাম ঘোষ স্ট্রিট থেকে লিখেছে কে এক শ্যামল রায়। কবিতাটি উদ্ধৃত করতে সংকোচ হচ্ছে, কবির তরফ থেকে নয়, আমার নিজের তরফ থেকে। কিন্তু যখন ভাবি শ্যামল রায় বিষ্ণু দে এবং এই চিঠির সূত্র ধরেই তার কল্লোলে আবির্ভাব, তখন চিঠিটির নিশ্চয়ই কিছু ঐতিহাসিক মূল্য আছে। তাই তুলে দিচ্ছি :

হৃদয়ের মাঝে আছে যে গোপন বেদে,
অদ্ভুত তার বিচিত্র কিবা ভাষা,
অপরূপ তার ক্ষণিকের ভালোবাসা
ঘোরে সে কেবল খেয়ালিয়া হেসে কেঁদে।
ভাষার বাঁধন রেখে দেছে তারে বেঁধে
ফোটেনিক তার অতীত স্মৃতি ও আশা,
জোটেনিক তার কবিদের স্নেহ-হাসা—
বেদে যে ডুবেছে মনুনিষিদ্ধ ক্লেদে।
তুমি দিলে তার মুমুখমাঝে ভাষা
হে নবস্রষ্টা! দিলে জীবনের আশা।
বনজ্যোৎস্নার আলোতে ছেয়েছে মন,
মৈত্রেয়ী মোরে মিত্র করেছে তার,
বাতাসী খুলিছে উদাস হিয়ার দ্বার–
হৃদয়বেদিয়া ঘুরিছে—এই জীবন?

স্বপ্নভরা দুটি সম্মিত চোখ, সুমিতমৃদু কথা আর সরলসুস্থ হাসি–এই তখন বিষ্ণু দে। এন্তার বই আর দেদার সিগারেট—দুইই অজস্র পড়তে আর পোড়াতে দেয় বন্ধুদের। বেশবাসে সাদাসিধে হয়েও বিশেষভাবে পরিচ্ছন্ন, ব্যবহারে একটু নির্লিপ্ত হয়েও সৌজন্যসুন্দর। কাছে গেলে সহজে চলে আসতে ইচ্ছে করেনা। বুদ্ধির ঝলস বা বিদ্যের জৌলুসের বাইরেও এমন একটি নিভৃত হৃদ্যতা আছে যা মনকে আকর্ষণ করে, ভিড় সরিয়ে মনের অন্দরে বসিয়ে রাখে। যেটুকু তার স্থান ও যেটুকু তার সংস্থান তারই মধ্যে তার সৌন্দর্যের অধিষ্ঠান দেখেছি। ঠিক গল্প নয়, কেচ্ছ। শুনতে ও বলতে খুব ভালবাসে বিষ্ণু। এবং সে সব কাহিনীর মধ্যে যেটুকুতে দ্বেষমুক্ত শ্লেষ আছে সেটুকুই আহরণ ও বিতরণ করে। স্মৃতিশক্তি প্রখর, তাই মজাদার কাহিনী সঞ্চয় তার অফুরন্ত। অল্প কথায় অনেক অর্থের সূচনা করতে জানে বলে বিষ্ণুর রচনায় নিরু আবেগ, প্রোজ্জ্বল কাঠিন্য।

প্রগতিতে তখন পুরাণের পুনর্জন্ম লেখা হচ্ছে—হালের সমাজ ও সভ্যতার পরিবেশে রামায়ণের পুনর্লেখন। প্রভু গুহঠাকুরতাই সে লেখার উদ্বোধন করেছেন। তারই অনুসরণে বিষ্ণু কল্লোলে পৌরাণিক প্রশাখা লিখলে-ভরতকে নিয়ে। প্রভু গুহ-ঠাকুরতা ঢাকার দলের মুকুটমণি–ব্যক্তিত্বে-স্বাতন্ত্র্যে শোভনমোহন। ওঁর কাছ থেকে সাহিত্যবিষয়ে পাঠ নেওয়া, বই পড়তে চাওয়া বা সিগারেট খেতে পাওয়া প্রায় একটা সম্মাননার জিনিস ছিল। আমার তিরিশ-গিরিশের বাসায় যখন উনি প্রথম আসেন, তখন মনে হয়েছিল লক্ষ্মীছাড়াদের দলে এ কোন লক্ষ্মীমন্ত রাজপুত্র। কিন্তু যিনি লক্ষ্মীছাড়াদের গুরু তাঁকে সুলক্ষণাক্রান্ত মনে করার কোনো কারণ ছিলনা। নোঙর-ছেঁড়া ভাঙা নৌকোয় তিনি অপারে পাড়ি জমিয়েছেন।

 

আমরা নোঙর-ছেঁড়া ভাঙা তরী ভেসেছি কেবল।
আমরা এবার খুলে দেখি অকূলেতে কূল মেলে কি,
দ্বীপ আছে কি ভবসাগরে–
যদি সুখ না জোটে দেখব ডুবে কোথায় রসাতল।।

ধূপছায়া বেরোয় এ সময়। আধুনিক সাহিত্যেরই পতাকাবাহী পত্রিকা। সম্পাদক ডাক্তার রেণুভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুলে আমার আর প্রেমেনের সহপাঠী ছিল। তাই আমাদের দলে টানল সহজেই। সেই টানে আমরা ও-দল থেকে নতুন কয়েকজন লেখককে কল্লোলে নিয়ে এলাম। পাঁচুগোপাল মুখোপাধ্যায় আগেই এসেছিল, এবার এল সত্যেন্দ্র দাস, প্রণব রায়, ফণীন্দ্র পাল আর সুনীল ধর। ভবের পদ্মপত্রে আরো কটি চঞ্চল জলবিন্দু। নবীনের দীপ্তার্করাগে ঝলমল।

কল্লোলের এ নব পর্যায়টি আরো মধুর হয়ে উঠল। দুয়ার অনুক্ষণ খোলা আছে, হে তরুণ, জয়হীন যৌবনের পূজারী, নবজীবনের বার্তাবহ, এখানে তোমাদের অনন্ত নিমন্ত্রণ। বর্ষে-বর্ষে যুগে-যুগে আসবে এমনি এই যৌবনের ঢেউ। ধরন-ধারণ-করণ-কারণ-না-জানা শাসন-বারণ-না-মানা নিঃসম্বলের দল। স্বপ্নের নিশান নিয়ে সত্যের চারণেরা। কল্লোল চিরযুবা। চিরযুবা বলেই চিরজীবী।

সত্যেন্দ্র দাস কোথায় সরে পড়ল, থেকে গেল আর চারজন, পাঁচুগোপাল, প্রণব, ফণী আর সুনীল—বন্ধু চতুষ্টয়। একটি সংযুক্ত প্রচেষ্টা ও একটি প্রতিপ্রেরিত একপ্রণতা। যেন বিরাট একটা বন্যার জল কোথায় গিয়ে নিভৃতে একটি স্তব্ধ-শীতল জলাশয় রচনা করেছে। কল্লোল উঠে গেলে আড্ডার খোঁজে চলে এসেছি এই বন্ধু-চতুষ্টয়ের আখড়ায়। পেয়েছি সেই হৃদয়ের উষ্ণতা, সেই নিবিড় ঐক্যবোধ। মনে হয়নি উঠে গেছে কল্লোল।

এ সময়ে নবাগত বন্ধুর সমাগমে মহাকাল নামে এক পত্রিকার আবির্ভাব হয়। শনিবারের চিঠির প্রত্যুক্তি। শনিবারের চিঠি যেমন বাংলাসাহিত্যের শ্রদ্ধেয়দের গাল দিচ্ছে—যেমন রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, প্রমথ চৌধুরী, দীনেশচন্দ্র ও নরেশচন্দ্র—তেমনি আরো কজন শ্রদ্ধাভাজনদের—যাদের প্রতি শনিবারের চিঠির মমতা আছে-তাদেরকে অপদস্থ করা। মহাকালের সঙ্গে আমি, বুদ্ধদেব ও বিষ্ণু সংশ্লিষ্ট ছিলাম। মহাকাল অনন্তকাল ধরে রক্তের অক্ষরে মানুষের জীবনের ইতিহাস লেখে, কিন্তু–এ মহাকাল যে কিছুকাল পরেই নিজের ইতিহাসটুকু নিয়ে কালের কালিমায় বিলুপ্ত হয়ে গেল এ একটা মহাশান্তি। বিবেচনা করে দেখলাম, যে সৃষ্টিকর্তা সে শুধু রচনাই করে সমালোচনা করেনা। যিনি আকাশ ভরে এত তারার দীপ জ্বালিয়েছেন তিনি জ্যোতিষশাস্ত্র লেখেন না। মল্লিনাথের চেয়ে কালিদাস অতুলনীয়রূপে বড়। সৃষ্টিতে যে অপটু সেই পরের উচ্ছিষ্ট ঘাটে। নিজের পূর্ণতার দিকে না গিয়ে সে যায় পরের ছিদ্রান্বেষণের দিকে। লেখক না হয়ে অবশেষে সমালোচক হয়।

নিন্দা করছে তো করুক। নিন্দার উত্তর কি নিন্দা? নিন্দার উত্তর, তন্নিষ্ঠের মত নিজের কাজ করে যাওয়া, নিজের ধর্মপথে দৃঢ়ত থাকা। স্বভাবচ্যুতি না ঘটানো। আত্মস্বরূপে অবস্থিতি করা। এক কথায় চুপ করে যাওয়া। অফুরন্ত লেখা। ধ্যানবৃক্ষের ফল এই স্তব্ধতা। কর্মবৃক্ষের ফল এই সৃষ্টি। আরো সংক্ষেপে, ধৈর্য ধরা। ধৈর্যই সব চেয়ে বড় প্রার্থনা।

তাছাড়া, এমনিতেও মহাকাল চলতনা। তার কারণ অন্য কিছু নয়, এ ধরনের কাগজ চালাতে যে কূটনীতি দরকার তা তার জানা ছিলনা। হেয়-র সঙ্গে উপাদেয়কে মিশিয়ে দেওয়া, লঘুর সঙ্গে গম্ভীর, খিস্তি-খেউড়ের সঙ্গে বৈরাগ্যশতক বা বেদান্তদর্শন। শনিবারের চিঠি এ বিষয়ে অত্যন্ত বুদ্ধিমান। এদিকে মণিমুক্তার আবর্জনা, অন্যদিকে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, রাজশেখর বসু, মোহিতলাল মজুমদার, ঘতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, রঙীন হালদার ইত্যাদির প্রবন্ধ। অকুলীনকে আভিজাত্যের মুখোস পরানো। এবং, এতদূর পর্যন্ত যে, মোহিতলাল শিবস্তব করতে বসলেন। কথাই আছে, শিবব ভূত্বা শিবং যজেৎ। শনিবারের চিঠিকে উদ্দেশ করে লিখলেন মোহিতলাল।

শিব’ নাম জপ করি’ কালরাত্রি পার হয়ে যাও–
হে পুরুষ! দিশাহীন তরণীর তুমি কর্ণধার!
নীর-প্রান্তে প্রেতচ্ছায়া, তীরভূমি বিকট আঁধার–
ধ্বংস দেশ–মহামারী!–এ শ্বশানে কারে ডাক দাও?
কাণ্ডারী বলিয়া কারে তর-ঘাটে মিনতি জানাও?
সব মরা!–শকুনি গৃধিনী হের ঘেরিয়া সবার
প্রাণহীন বীর-বপু, ঊর্দ্ধস্বরে করিছে চীৎকার!
কেহ নাই!–তরী ‘পরে তুমি একা উঠিয়া দাঁড়াও।

ছলভরা কলহাস্যে জলতলে ফুঁসিছে ফেনিল
ঈৰ্যার অজস্র ফণা, অৰ্দ্ধমগ্ন শবের দশনে
বিকাশে বিদ্রুপ-ভঙ্গি, কুৎসা-ঘোর কুহেলি ঘনায়–
তবু পার হতে হবে, বাঁচাইতে হবে আপনায়!
নগ্ন বক্ষে, পাল তুলি’ একমাত্র উত্তরী-বসনে,
ধর হাল—বদ্ধ করি’ করাঙ্গুলি, আড়ষ্ট আনীল!

আদিরসসিক্ত আধুনিক কীর্তনেও এমনি ভাবে রাধা-কৃষ্ণের নাম ঢুকিয়ে দেবার চতুরতা দেখেছি।

আরো দুজন লেখক চকিততড়িতের মত এসে চলে গেল—কল্লোলের বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় আর ধূপছায়ার অরিন্দম বসু। বাসুদেব কল্লোলের বহু আড্ডা-পিকনিকে এসেছে, হেসে গেছে অনেক উচ্চ হাসি—বিচিত্রায়ও তার লেখায় জের চলেছিল ছিল। তারপর কোথায় চলে গেল তার ঠিকানা নেই। অরিন্দম বেপাত্তা।

এসেছিল অখিল নিয়োগী আর মন্মথ রায়। মন্মথকে যদিও সব সময়ে মনের মত করে পাওয়া যেত না কাছাকাছি, অখিলের ঘরের দরজায় খিল ছিল না। আমাদের বইয়ের তো আবার একজন আর্টিস্ট চাই—অখিলই আমাদের সেই চিত্তরঞ্জী চিত্রকর।

বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশি ও পরিমল গোস্বামীও কল্লোলে লিখেছেন। বিভূতিবাবু প্রায় নিয়মিত লেখকের মধ্যে। তাঁর অনেকগুলি গল্প কল্লোলে বেরিয়েছে, কিন্তু তিনি নিজে কোনোদিন কল্লোলে আসেননি। যিনি হাসির গল্প লেখেন তিনি সকল দলেই হাসির খোরাক পান এবং কাজেকাজেই তিনি সকল দলের বাইরে। বা, তিনি সকল দলের সমান প্রিয়।

শিবরাম তো হাসির গল্প লেখে, তবে তাকে কল্লোলের দলে টানি কেন? কারণ কল্লোলের সমসময়ে শিবরাম বিপ্লবপ্রধান কবিতা লিখত। যার কবিতার বইর নাম মানুষ আর চুম্বন সে তো সবিশেষ আধুনিক। বই দুখানি থেকে দুটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি :

আমার স্বাচ্ছন্দ্য মোরে হানিছে বিকার,
এই আলো এ বাতাস
যেন পরিহাস–
আমার সম্মান মোরে করে অপমান।–
ভূমাতেও নাহি সুখ, অমৃতেও নাহি অধিকার
–কে সহিবে আত্মার ধিক্কার!…
সুখ নাই পূর্ণতায়, তিক্ত প্রেয়সীর ওষ্ঠাধর
সভ্যতায় সুখ নাই, শত কোটী নর যার পর–
এ জীবন এত সুখহীন–বেদনাও হেথায় বিলাস!

কিংবা :

গাহি জয় জননী রতির!
এ ভুবনে প্রথমা গতির—
গাহি জয়–
যে গতির মাঝে ছিল জীবনের শত লক্ষ গতি
নিত্য নব আগতির
অনন্ত বিস্ময়।
স্বর্গ হতে আসিল যে রসাতলে নেমে
সকলের পাপে আর সকলের প্রেমে…
গাহি জয় সে বিজয়িনীর!
যে বিপুল যে বিচিত্র যে বিনিদ্র কাম
গাহি জয়—তারই জয়।

হেমন্ত সরকার কল্লোল যুগের কেউ নন একথা বলতে রাজি নই। তিনি আমাদের পক্ষে কিছু লেখেননি হয়তো কিন্তু বরাবর অনুপ্রাণনা দিয়ে এসেছেন। সুভাষচন্দ্রের সতীর্থ, নজরুলের বন্ধু, হেমন্তকুমার চিরকাল বন্ধন-বশ্যতা-না-মানা, অমেয়জীবী যৌবনের পক্ষে। তাই তিনি বহুবার আমাদের সঙ্গে মিলেছেন, আমরাও তার কাছ থেকে বহু আনন্দ নিয়ে এসেছি। উল্লাসে-উৎসবে বহু ক্ষণ-খণ্ড কেটেছে তার সাহচর্যে। তিনি বলতেন, যে কিছুই করে না, কিছুই বলে না, কিছুই হয় না, সেই শুধু নিন্দা এড়ায়। যে কিছু করে, বলে, বা হয়, সেই তো নিন্দা দ্বারা স্বীকৃত, সংবর্ধিত। চলতে-চলতে একবারও পড়ব না এতে কোনো মহত্ত্ব নেই, যতবার পড়ব ততবারই উঠব এতেই আসল মহত্ব। তাই যত গাল খাবে তত লিখবে। শত চীৎকারেও ক্যারাভেন থামেনি কোনোদিন।

বর্ধমানের বলাই দেবশর্মার চিঠি নিয়ে কল্লোল-আপিসে আসে একদিন দেবকী বসু, বর্তমানে এক জন বিখ্যাত ফিলম-ডিরেক্টর। চিঠিখানি পত্রবাহকের পরিচিতি বহন করছে—’ইনি আমার শক্তি কাগজের সহকারী’—অনুরোধ–‘যদি এর লেখা তোমরা দয়া করে একটু স্থান দাও তোমাদের পত্রিকায়।’ ঠিক উদীয়মান নয়, উদয়উন্মুখ দেবকী বোস বিনয়গলিত ভঙ্গিতে বসল কল্লোলের তক্তপোশে। দীনেশরঞ্জন হয়ত বুঝলেন, এর স্থান এই তক্তপোশে নয়, অন্য মঞ্চে। দমদমে তখন ধীরেন গাঙ্গুলিরা ব্রিটিশ ডোমিনিয়ন ফিলম কোম্পানি চালাচ্ছে, সেইখানে যাতায়াত ছিল দীনেশরঞ্জনের। দেবকী বোসকে সেখানে নিয়ে গেলেন দীনেশরঞ্জন। দেবকী বোস দেখতে পেল তার সাফল্যের সম্ভবনা। সে আর ফিরল না। বলাই দেবশর্মার পরিচয়পত্র প্রত্নতত্ত্বে লীন হয়ে গেল!

সিনেমায় ফল পেলে সাহিত্যফলের জন্যে বুঝি কেউ আর লালায়িত হয় না। মদের স্বাদ পেলে মধুর সন্ধানে কে আর কমলবনে বিচরণ করে? এককালে দারিদ্র্যপীড়িত লেখকের দল ভাগ্যদেবতার কাছে এই প্রার্থনাই করেছিল, জমিদারি-তেজারতি চাই না, শুধু অভাবের ঊর্ধ্বে থাকতে দাও, এই ক্লেশক্লেদময় কায়ধারণের ঊর্ধ্বে। দাও শুধু ভদ্র পরিবেশে পরিমিত উপার্জন, যাতে স্বচ্ছন্দ-স্বাধীন মনে পরিপূর্ণ ভাবে সাহিত্যে আত্মনিয়োগ করতে পারি। সাহিত্যই মুখ্য আর সব গৌণ। সাহিত্যই জীবনের নিশ্বাসবায়ু।

গল্পে নাকের বদলে নরুন দিয়েছিল। ভাগ্যদেবতা সাহিত্যের বদলে সিনেমা দিলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *