রতনপুরে পাঁচখানা নতুন সাইকেল রিকশা চালু হল। পাঁচখানাই তৃষার। মাইল তিনেক দূরে তৃষা খুলেছে হাসকিং মিল। এই পাঁচখানা রিকশা আর মিল অবশ্য তৃষা নিজের নামে করেনি, করেছে সরিতের নামে।
একটা হালকা পলকা সস্তা মোপেড় কিনে দিয়েছে সরিৎকে। সে এখন হাসকিং মিল আর রিকশা নিয়ে দিনরাত গলদঘর্ম। প্রথমটাতেই বুঝতে যা একটু সময় লাগে। তারপর আস্তে আস্তে সব কাজেরই একটা বাঁধা ছক দাঁড়িয়ে যায়। তখন আর কষ্ট হয় না। বহুকাল বাদে খাটুনিতে নেমে প্রথমটায় হাঁফ ধরে যাচ্ছিল সরিতের। এখন ক্রমে সয়ে যাচ্ছে।
মোপেড জিনিসটা সরিতের তেমন পছন্দ নয়। মোপেড মানেও সে জানে না। তবে আন্দাজ করে, মোটর কাম পেডাল, অর্থাৎ যখন মোটরে চলবে তখন একরকম, মোটর খারাপ হলে পেডাল মেরে সাইকেলের মতোও চালানো যাবে। সুতরাং গাড়িটা না রাম না গঙ্গা। সাইকেলও নয়, মোটর সাইকেলও নয়। তবে কলকবজা বিশেষ জটিল নয় বলে সহজেই সারানো যায়। বেশি খরচাও নেই। এক লিটার তেলে পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন কিলোমিটার চলে যেতে পারে। তবু এই কলের গাড়িতেও দুইদিক সামলাতে সরিতের দমসম হয়ে যায়।
আজকাল রোদের তেজ বেড়েছে। গরম পড়ে গেছে বেশ। ভোর হতে না হতেই হাসকিং মিলে গিয়ে হাজির হতে হয়। মিল চালু করে দিয়েই কাজ শেষ হয় না। খাতায় এনট্রি রাখতে হয়। মাঝে মাঝে ধান কিনতেও বেরোতে হয় তাকে। দুপুরে বাড়িতে খেতে আসার নিয়ম নেই। এক গেরস্তর ঘরে মাসকাবারি বন্দোবস্তে দুপুরের ভাতের ব্যবস্থা করে দিয়েছে তৃষা। কাজেই সারাদিন সরিৎ এখানে বন্দি। বিকেলে বাড়ি ফিরে স্নান সেরে একটু জিরোতে না জিরোতেই বেরোতে হয় দোকানঘরে।
তৃষা তিন মেয়ের নামে ঝকঝকে এক স্টেশনারি আর মুদির দোকান দিয়েছে বাজারের কাছে। দোকানের নাম ত্রয়ী। রতনপুরে যা পাওয়া যেত না সেইসব জিনিস মনে করে রেখেছিল তৃষা। ত্রয়ীতে এখন সেইসব জিনিস পাওয়া যায়। নুডল, লিপস্টিক, স্টেনলেস স্টিলের বাসন; ভাল শ্যাম্পু কিংবা সাবান, দামি সিগারেট পর্যন্ত। প্রথম-প্রথম খুব একটা বিক্রি ছিল না। কিন্তু লোকের আজকাল নতুন নতুন জিনিস কেনার আগ্রহ দেখা দিয়েছে। দোকানও তাই রমরম করে চলছে। লোকে তৃষাকে দেখতে পারুক চাই না-পারুক তার দোকান থেকে চোখ বুজে জিনিস কেনে।
দোকানে দু’জন কর্মচারী রেখেছে তৃষা। সন্ধেবেলায় সরিৎ গিয়ে বসে স্টক আর বিক্রির টাকা মেলায়। মুদির দোকানের স্টক মেলানো রোজ অসম্ভব। তবু যথাসাধ্য হিসেব নিতে হয়। রাত দশটা পর্যন্ত এই করতে চলে যায়। তারপর বাড়িতে ফিরতে না ফিরতেই শেষ ট্রেনের ট্রিপ মেরে রিকশা ফেরত দিতে আসে রিকশাওয়ালারা। তাদের কাছে রোজের পয়সা গুনে নিতে হয়। সব কিছুতেই লাভের অর্ধেক বখরা সরিৎ পায়। শুধু ত্রয়ীর আয় থেকে তার ভাগ নেই। দোকানের টাকা জমা হচ্ছে মেয়েদের বিয়ের জন্য। তবু প্রথম মাসের হিসেবেই সরিৎ পেল প্রায় চারশো টাকা পেয়ে তার মাথা ঘুরে গেল।
এত টাকা একসঙ্গে নিজের করে কোনওকালে পায়নি সরিৎ। কী করবে তা ভেবে পাচ্ছিল না। টাকাটা অবশ্য এক রাত্রির বেশি রইল না তার কাছে। পরদিনই তৃষা ডেকে একশো টাকা মায়ের নামে আর পঞ্চাশ টাকা মালদায় বড়দার নামে পাঠাতে বলে দিল। আর বলল, বাকি টাকা থেকে খাইখরচ বাবদ মাকে একশো টাকা দিবি। যা থাকবে তা থেকে পঞ্চাশ টাকার বেশি হাতখরচ রাখবি না। বাকিটা ডাকঘরে অ্যাকাউন্ট খুলে জমা দিয়ে আয়। পাশবই আমার কাছে দিয়ে যাবি।
সরিৎ কিছুটা ম্লান হয়ে গেল বটে, কিন্তু মেজদির ওপরে যে কথা চলে না তাও সে জানে।
পরের মাসেই তার আয় আরও পঁচিশ টাকার মতো বেড়ে গেল। সরিৎ বুঝতে পারছিল, এই হারে চললে তার টাকা খায় কে। তবে মুশকিল হল, তার একটু গানবাজনা আসত, সিনেমা দেখার নেশা ছিল। সেগুলো এবার যায় বুঝি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেজদি একেবারে নিচ্ছিদ্র করে দিয়েছে তার।
এর মধ্যেই আবার তাকে অন্যরকম কাজেও লাগায় তৃষা। একদিন ডেকে বলল, স্টেশনের কাছে চায়ের দোকানে কয়েকটা বাজে লোক নাকি বসে থাকে, একটু নজর রাখিস তো। তোর। জামাইবাবুকে টিটকিরি দেয়, সজল স্কুলে শুনে এসেছে।
সরিৎ একটু চনমনে হয় কথাটা শুনে। মারপিট, হাঙ্গামা তার পছন্দসই জিনিস।
তৃষা বোধহয় তার মনের ভাব বুঝেই বলল, তা বলে খুনোখুনি করতে হবে না। সঙ্গে গঙ্গা থাকবে, যা করার সেই করবে। তুই তোর জামাইবাবুকে আগলে রাখিস।
জামাইবাবু যে ভেড়ুয়া তা সরিৎ জানে। তবে আবার অন্যরকম তেজও আছে। পাঁচখানা। রিকশার মধ্যে একখানা রোজ রাতে স্টেশন থেকে শ্রীনাথকে নিয়ে আসবে, এরকম একটা কথা হয়েছিল। কিন্তু শ্রীনাথ রাজি হয়নি। বলেছে, না, আমি এমনিই আসতে পারব।
সরিৎ ব্যাপারটা খুব ভাল বুঝল না। গঙ্গাকে সে চেনেও না। তবে মেজদির কাছে বেশি কিছু জানতে চেয়ে লাভ নেই। দরকারও নেই।
পরদিন সন্ধেবেলা হাসকিং মিল থেকে ফিরে আসার পর গঙ্গার দেখা পেল সরিৎ। বড় ঘরের দাওয়ায় এক কোণে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে বসে আছে। সামনে একটা কাঠের চেয়ারে তৃষা।
তৃষা ডেকে বলল, এই গঙ্গাকে দেখে রাখ। কাল তোর সঙ্গে যাবে।
সরিৎ দেখল, আবছা অন্ধকারে গোঁয়ার গম্ভীর ধরনের একটা লোক। চোখে চোখ রেখে তাকাতে জানে না। চেহারাটা খুব মজবুত। পরনে ধুতি আর হাফহাতা শার্ট। সরিতের সঙ্গে কথাই বলল না। শুধু যাওয়ার আগে ভাঙা চাষাড়ে গলায় বলল, আমি স্টেশনের ধারেই থাকব। আপনি রাতের দিকে আসবেন।
গঙ্গা কে, কী তার পেশা তা কিছুই জানা গেল না। এমনকী মুখটাও ভাল করে দেখতে পায়নি সরিৎ। মেজদিও কোনও পরিচয় দেওয়ার দরকার মনে করল না। তবে সরিৎ বুঝল, এ হল মেজদির পোষা গুন্ডা। শহুরে গুন্ডাদের মতো চতুর না হলেও বোধহয় কাজের লোক। গাঁইয়া গুন্ডারা বোধহয় অন্যরকম হয়।
স্টেশন থেকে একটা পাকা রাস্তা আঁকাবাঁকা হয়ে ঢুকে এসেছে জনবসতির মধ্যে। সামনেই একটা চৌরাস্তা। তার মোড়ে কয়েকটা কাঁচা ঘরে চা মিষ্টির দোকান। বাইরে পেতে রাখা বেঞ্চে সর্বদাই কিছু লোককে সন্ধের পর বসে থাকতে দেখা যায়। হ্যাজাক জ্বলে, চায়ের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
পরদিন রাত আটটা নাগাদ সরিৎকে তাদের রিকশাওয়ালা ফাগুলাল স্টেশনের চত্বরে এনে নামিয়ে দিল। লোকজন কেউ নেই এত রাতে। জামাইবাবু কোন গাড়িতে আসবে তাও কিছু ঠিক নেই। সরিৎ মালদা থেকেই একটা চেন সঙ্গে করে এনেছে। খুব কাজের জিনিস। প্যান্টের পকেট থেকে সেটা বের করে একবার দেখে নিল। ধারেকাছে গঙ্গা নেই, তবে নিশ্চয়ই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে আছে। কী করতে হবে মেজদি তা বলে দেয়নি। রতনপুরে তার দু-চারজন বন্ধু হয়েছে। তাদের কাউকে সঙ্গে আনলেও হত। কতজনের সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে তা তো জানে না।
আজকাল সরিতের পকেটে সিগারেটের প্যাকেট এবং দেশলাই থাকে। এতকাল থাকত না। বরাবর দুটো বা চারটে সিগারেট কিনে খালি প্যাকেটে ভরে রাখত। সিগারেট থাকলেও বেশির ভাগ সময়েই দেশলাই থাকত না। পথচলতি লোককে থামিয়ে তাদের জ্বলন্ত সিগারেট থেকে ধরিয়ে নিত। এমন সব উঞ্ছবৃত্তি আজকাল করতে হচ্ছে না। স্টেশনের কাঠের বেঞ্চে বসে নিজের ভরা প্যাকেট থেকে সিগারেট ঠোঁটে তুলে নিজেরই দেশলাই দিয়ে সেটা ধরিয়ে খুব একটা আত্মতৃপ্তি বোধ করল সরিৎ। মাস গেলে এখন তার রোজগার সোয়া চারশো। মেজদির জন্য এখন জান দিয়ে দিতে পারে সে।
একটা ডাউন গাড়ি চলে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আপ গাড়িরও আলো দেখা যাচ্ছিল। গাড়ি থেকে অনেকজনাই নামল, কিন্তু শ্রীনাথকে দেখা গেল না।
হাই তুলে বসে বসে নিজের অবস্থার এই পরিবর্তনের কথা সুখের সঙ্গে ভাবছিল সরিৎ। আর কিছুদিন পর ইচ্ছে করলে সে বিয়েও করতে পারে। মালদায় দু-চারটে মেয়ের সঙ্গে তার ভাব হয়েছিল বটে। কিন্তু আজ, বেশ কিছু দূরে বসে এবং অনেকটা সময়ের পার্থক্যে সে আবেগহীন ভাবে বিচার করে দেখল সেই মেয়েদের কাউকেই তার খুব একটা প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে না। বরং রতনপুর হাইস্কুলের একজন ছাত্রীকে তার চোখে ধরে গেছে। আলাপ-টালাপ অবশ্য হয়নি এখনও। কিন্তু সেটা কোনও ব্যাপার নয়।
আবার একটা আপগাড়ি হল। চলেও গেল। দুটো সিগারেট শেষ হয়ে গেল সরিতের। ফাগুলাল এসে বলল, গাড়ি কি গ্যারাজ করে দেব বাবু? আমার মেয়েটার জ্বর।
সরিৎ একটু কড়া চোখে চেয়ে বলল, আরও দুটো গাড়ি দেখব। তারপর যা হয় করা যাবে। এখন যা।
পরের গাড়িটাতেই শ্রীনাথ এল।
জামাইবাবু যে কলকাতায় ফুর্তি লোটে এ কথা সবাই জানে। জামাইবাবুর চোখে-মুখে ফুর্তি করার একরকমেব ছাপও পড়ে গেছে। প্রায় রোজই সামান্য নেশা করে আসে। আজও এসেছে। ঠিক মাতাল নয়, তবে খুব আয়েসে পা ফেলছে, শরীরে গা ছাড়া ভাব, চোখ লালচে এবং উজ্জ্বল।
গেটের কাছে শ্রীনাথের কনুইটা ছুঁয়ে সরিৎ ডাকল, জামাইবাবু!
শ্রীনাথ অবাক হয়ে বলে, আরে তুমি?
ভচাক করে মদের গন্ধটা সরিতের নাক দিয়ে পেটে ঢুকে যায়। সেও এক সময়ে খেয়েছে এসব। তবু এখন গা গুলিয়ে উঠল।
শ্রীনাথের অহংকারী স্বভাবের কথা সবাই জানে। সরিৎ তাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে। জানলে মারাত্মক চটে যাবে। সরিৎ তাই সাবধানে বলল, এদিকে একটু কাজ ছিল।
শ্রীনাথ বোকাটে একরকম মাতলা হাসি হেসে বলল, হ্যাঁ, তোমরা সব কাজের মানুষ।
ফাগুলালের রিকশাটা দাড় করানো আছে। যেতে চান তো–
ও তোমাদের রিকশা তোমরা চড়বে। আমি দিব্যি হেঁটে যেতে পারব।
তা হলে আপনি এগোন, আমি পিছু পিছু আসছি।
সরিৎ শ্রীনাথের সঙ্গে যেতে চায় না। শ্রীনাথের সঙ্গে তাকে দেখলে মোড়ের মাস্তানরা টিটকিরি নাও দিতে পারে। শ্রীনাথ, তারা ভেড়ুয়া বলে জানে, কিন্তু সরিৎকে তো জানে না।
শ্রীনাথ মাথা নেড়ে বলে, এসো। তবে আমার সঙ্গে থাকার এমনিতে দরকার নেই।
আপনার দরকার নেই সে জানি। পথটা একসঙ্গে হেঁটে যাব আর কী।
এসো।–বলে শ্রীনাথ এগোয়।
সরিৎ রেল-কোয়ার্টারের পিছনে মেঠো পথটা আগেই ঠিক করে রেখেছিল। পাকা রাস্তা এড়িয়ে ওটা ধরে দোকানঘরগুলোর পিছন দিকে গিয়ে ওঠা যায়।
মেঠো পথে নেমেই পকেট থেকে চেনটা বের করে সরিৎ একবার নিপুণ হাতে বাতাসে সেটা ঘোরাল। বেঁ করে ভোমরার ডাক ডেকে বাতাস কেটে এসে বশীভূত সাপের মতো সেটা আবার কুণ্ডলী পাকাল তার হাতে।
শ্রীনাথের অনেক আগেই সে দোকানঘরের পিছনে পৌঁছে যায়। এখানে গাছপালার অভাব নেই। শান্তভাবে সে একটা বড়সড় গাছের আবডালে দাঁড়িয়ে দোকানঘরগুলোর দিকে লক্ষ রাখে। প্রথম দোকানটাই বড় এবং সেখানেই ছোকরা আড্ডাবাজদের সংখ্যা বেশি। অন্তত ছ’জনকে সে দেখতে পায় বাইরের বেঞ্চে বসে হাঃ হাঃ হিঃ হিঃ করছে। বয়স কুড়ি থেকে ত্রিশের মধ্যে। কাউকেই তেমন পোক্ত মাস্তান মনে হল না। একজন খুব চেঁচিয়ে গান গাইছে, চাদনি চাদসেই হোতা হ্যায়, সিতারো সে নহি। কোনও হিন্দি ছবির গান। ছেলেটা গায়ও ভাল। একটু উৎকর্ণ হয়ে শুনছিল সরিৎ। এ ছবিটা তার দেখা নয় নিশ্চয়ই। কাছেপিঠে কোথাও চলছে কি? কিংবা কলকাতায়? একদিন সময় করে গিয়ে দেখে আসবে।
শ্রীনাথ মন্থর পায়ে মোড়ে এসে পড়ল। চলার ভঙ্গিতে আত্মবিশ্বাস নেই, তাড়া নেই, এমনকী কোনদিকে যাবে তারও যেন ঠিক নেই। মোড়ে এসে চারদিকে চেয়ে তবে বাঁ দিকে ফিরল।
মুঠো থেকে চেনটার একটা কোনা ছেড়ে দিল সরিৎ।
ঠিক এমন সময়ে পিছন থেকে তার কবজিটা আলতো হাতে ধরে ফেলল কে যেন। সরিৎ বাঘের মতো পিছু ফিরতেই গঙ্গা বলল, এখানে আপনি জড়াবেন না। বাবুকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। হাঙ্গামা হলে মা ঠাকরোন যেন এতে না বেঁধে যান।
তবে আমি এলাম কেন?
দরকার হলে আমি হাঁক মারব।
দু’জনে গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কটমটে চোখে তাকিয়ে দেখে, শ্রীনাথ বড় দোকানঘরটার সমুখে আমোর চৌহদ্দিতে গিয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে একটা ছোকরা লাফিয়ে উঠে বলল, আরে শ্রীচরণ চাটুজ্জে যাচ্ছে ওই দ্যাখ।
আর একজন, আজ খুব টেনেছে রে।
কাছাটা টেনে খুলে দিয়ে আয় না।
আমার কাকা কী বলে জানিস? শ্রীনাথ বউদি আর তৃষা দাদা।
হোঃ হোঃ! হিঃ হিঃ!
শ্রীনাথ একবার খুব উদাস চোখে দোকানটার দিকে তাকাল। চোখে রাগ নেই, ঘৃণা নেই, কেবল বুঝি বৈরাগ্য বা অবহেলা আছে।
সরিতের চোখ বাঘের মতো জ্বলে ওঠে।
গঙ্গা নিচু স্বরে বলে, আপনি কর্তাবাবুর পিছু পিছু যান। একটু আস্তে হাঁটবেন।
সরিতের এই প্রস্তাব পছন্দ নয়। তার রক্তে রীতিমতো জ্বালা ধরেছে, হাত-পা নিশপিশ করছে। সে বলল, অত কায়দা কানুনের দরকার কী?
দরকার আছে।–ঠান্ডা গলায় গঙ্গা বলে।
সরিৎ কথা বাড়ায় না। মেজদির ব্যাপার মেজদিই ভাল বুঝবে। ভিতরের জ্বালা চেপে রেখে রাগে গনগন করতে করতে পাকানো চেনটা হাতের মুঠোয় চেপে রেখে সে বড় রাস্তা ধরে জামাইবাবুর পিছু নেয়। দোকানঘরটার সামনে একবার থমকে দাঁড়িয়ে আগুনে চোখে তাকায় ছছাকরাদের দিকে।
ছোকরারা চোখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের স্বাভাবিক জৈব বুদ্ধি তাদের বলে দেয়, এবার গোলমাল করাটা ঠিক হবে না।
ছোকরারা একটা টু শব্দ করলেও সরিৎ লাফিয়ে পড়ত। তা হল না। সরিৎ কয়েক কদম এগিয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে একবার ফিরে চাইল। গঙ্গাকে এখনও দেখা যাচ্ছে না। লোকটা করছে কী?
জামাইবাবু খানিকটা এগিয়ে গেছে। যাক। লোকটা আস্তে আস্তে হাঁটছে। সরিৎ পা চালিয়ে ধরতে পারবে। সে রাস্তা থেকে সরে ধারে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরাল।
একটু বাদে হঠাৎ ওপাশের আঁধার থেকে গঙ্গা বেরিয়ে এসে দোকানটার সামনে দাঁড়াল, তার হাতে একটা খাটো লোহার রড। ভাবগতিক আকাট খুনির মতো। ছোকরাগুলো বোধহয় গঙ্গাকে চেনে। গঙ্গা দু-চারটে কথা বলে দোকানটার দিকে দু’ কদম এগোতে না এগোতেই তড়াক তোক করে লাফিয়ে উঠে ছোকরাগুলো এধার-ওধার দৌড়ে পালাতে থাকে। সরিৎ হাসে। একপাল ভেড়য়া। এগুলোকে ধাওয়া করতে খামোখা এত কায়দা কসরত। গঙ্গা একটা ছোকরাকে ধরে পেটাচ্ছে, দূর থেকে দেখতে পেল সরিৎ। দুই হোকরা এদিকে পালিয়ে আসছিল। সরিৎ চেনটা খুলে দু’কদম এগিয়ে রাস্তার মাঝবরাবর গিয়ে দাঁড়ায়। ছোকরা দুটো পালাতে পালাতে পিছু ফিরে দোকানঘরের কাণ্ডটা দেখছে। সরিৎকে লক্ষ করেনি।
সরিতের চেন একবার ঘুরে এল। ‘বাপ রে’ বলে চেঁচিয়ে পয়লা ছোকরা বসে পড়তে না পড়তেই দু’ নম্বরকে ল্যাং মেরে ফেলে দিয়ে সরিৎ তার থুতনিতে বুটশুদ্ধ একটা লাথি জমিয়ে দিল। এতসব করতে গা একটু ঘামলও না তার। পয়লা ছোকরার গলায় চেনটা ফাঁসের মতো পরিয়ে টেনে দাড় করাল সরিৎ। কদর্য একটা খিস্তি দিয়ে বলল, আর কখনও গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোবে?
এ ধরনের কঠিন মার ছোকরা বোধহয় জীবনেও খায়নি। কেমন ভ্যাবলা হয়ে গেছে। কানের ওপরে অনেকটা জায়গা চেন-এ কেটে গিয়ে কাঁধের জামা পর্যন্ত রক্তে ভিজে যাচ্ছে। ওই অবস্থাতে ছেলেটা মাথা নেড়ে বসা গলায় বলল, না।
ঠিক এই সময়ে পিছন থেকে জামাইবাবুর স্পষ্ট তীক্ষ গলা শুনতে পায় সে, কী হচ্ছে এখানে? সরিৎ, ওদের মারছ কেন?
সরিৎ চেনটায় একটু টাইট মেরে জামাইবাবুর দিকে ফিরে চেয়ে হাসল। বলল, আপনাকে রোজ আওয়াজ দেয় এই সুমুন্দির পুতেরা। মুখগুলো বন্ধ করে দিয়ে যাচ্ছি।
শ্রীনাথ একটু বুঝি থমকে যায়। তারপর হঠাৎ প্রচণ্ড রাগে ফেটে পডে চেঁচিয়ে ওঠে, কে বলেছে তোমাকে এ কাজ করতে? আওয়াজ দেয়, বেশ করে। একশোবার আওয়াজ দেবে। ছেড়ে দাও। ছেড়ে দাও শিগগির।
সরিৎ যতটা অবাক হয়, ততটাই রেগে যায়। তেজি গলায় বলে, কী বলছেন আপনি?
শ্রীনাথ তেড়ে এসে বলে, ঠিক বলছি। ওরা আওয়াজ দেয় ঠিকই করে। যা সত্যি তাই বলে। তাতে তোমাদের অত গায়ের জ্বালা কেন?
চেন-এর ফাঁস থেকে ছেলেটাকে ছেড়ে দিয়ে সরিৎ ধমক দিয়ে বলে, আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! যান তো, বাড়ি যান। যা করার আমরা করছি।
কেন বাড়ি যাব? ইয়ারকি পেয়েছ? গুন্ডামি করে চলে যাবে? আপনারা বসে দেখছেন কী সব? এক্ষুনি পুলিশে খবর দিন। বেঁধে নিয়ে যাক দুটোকে…
দু-চারজন ডেইলি প্যাসেঞ্জার, চায়ের দোকানের খদ্দের, মালিক আর বয় বেয়ারা মিলে মোড়ে নেহাত কম লোক নেই। চেঁচানিতে তারা বেরিয়ে এসেছে।
মার-খাওয়া দুটো ছেলেই রাস্তার ওপর গাড়লের মতো বসে আছে। সরিতের হাতে রক্তমাখা চেন। জামাইবাবু লোক জড়ো করছে।
এই সংকট-সময়ে ছায়ার মতো গঙ্গা এসে পাশে দাঁড়াল। হিংস্র গলায় বলল, আপনাকে হুজ্জত করতে মানা করেছিলাম, শুনলেন না।
সরিৎ অন্যমনস্ক গলায় বলে, লোকটা পাগল হয়ে গেছে।
পাগল নয়। শয়তান। আপনি দেরি করবেন না। ফাগুলালের রিকশা সামনে এগিয়ে দাঁড় করানো আছে, সোজা বাড়ি চলে যান। পুলিশ এলে বিপদে পড়ে যাবেন।
জামাইবাবুকে কী করবে?
সে আমি দেখছি। আপনি যান তো৷ কাজ একেবারে গুবলেট করে দিয়েছেন আপনি।
সরিৎ ব্যাপারটা বুঝল না। তবে গঙ্গার পরামর্শটা মেনে নিল। একটু এগিয়ে গিয়ে রিকশাটা দেখে চড়ে বসল। ফাগুলাল ঊর্ধ্বশ্বাসে নিয়ে এল বাড়িতে।
তৃষা রান্নাঘরে বসে ঠাকুরের কাজকর্ম দেখছিল।
সরিৎ গিয়ে জরুরি গলায় ডাক দিল, মেজদি, একটু বাইরে এসো।
তৃষা তাড়াহুড়ো করল না। কিছু একটা বুঝে নিয়েই যেন একটু বিরক্ত গলায় বলল, ঘরে যা, যাচ্ছি।
সরিৎ কোথায় কী গণ্ডগোল করে ফেলেছে তা সে নিজেও বুঝতে পারছিল না। ঘরে এসে নিঃশব্দে জামা কাপড় বদল করল।
তৃষা শান্ত ভঙ্গিতে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে?
সরিৎ একটু উত্তেজিত গলায় ঘটনাটা সংক্ষেপে জানিয়ে ক্ষোভের সঙ্গে বলল, জামাইবাবু সব কঁচিয়ে দিয়েছে।
তৃষা কঠিন চোখে ভাইয়ের দিকে চেয়ে ছিল। ঠান্ডা এবং বিরক্ত গলায় বলল, তুই গঙ্গার কথা শুনলি না কেন?
ছেলে দুটো আমার ওপর এসে পড়ল যে।–একটু রং চড়াল সরিৎ।
তৃষা অনুত্তেজিত গলায় বলে, আমি খোঁজ নিয়েছি, ছেলেগুলো পাজি হলেও ষন্ডাগুন্ডা নয়। তোকে মারতে আসেনি।
আমি ভাবলাম বুঝি…
সরিৎ আমতা আমতা করে।
এর পর থেকে যেটা বলব সেটা ভাল করে শুনবি, বুঝবি। যা করলি তাতে সবাই জেনে যাবে এ ঘটনায় আমাদের হাত আছে। গঙ্গা অনেক সাবধানে কাজ করত।
সরিৎ বলল, লোকে জানতে পারত না। শুধু জামাইবাবু ওই পাগলামিটা না করলে
তোর জামাইবাবু যে ওরকম কিছু করবে তা জানি বলেই তোকে বলেছিলাম ওঁকে আগলে রাখতে। তুই ওঁকে নিয়ে চলে এলে এরকম করতে পারত না।
এখন তা হলে কী করব?
কিছু করতে হবে না। চুপচাপ থাক।
পুলিশ এলে?
তৃষা বোধহয় একটু হাসল। কিন্তু আবছা অন্ধকারে ভাল দেখতে পেল না সরিৎ। তবে শান্ত আত্মবিশ্বাসের কণ্ঠস্বর শুনতে পেল, পুলিশ আসবে না।
মেজদি চলে গেলে সরিৎ উত্তেজিত মাথায় বসে জামাইবাবুর সাইকোলজিটা বুঝবার চেষ্টা করছিল। এরকম কাণ্ড করার কোনও যুক্তিসংগত কারণই সে খুঁজে পাচ্ছে না।
একটু বাদে উঠে সে একবার বাইরের দিকে বেরোল। জামাইবাবুর ঘর এখনও অন্ধকার তালাবন্ধ। বুকটা গুরুগুর করে উঠল তার। লোকটা যদি সত্যিই পুলিশে যায়। বহু লোক সাক্ষী আছে।
খ্যাপা নিতাই আজ ঘরেই আছে। ডাকতেই বেরিয়ে এসে এক গাল হেসে বলল, আজকাল খুব কাজের লোক হয়েছ সরিৎবাবু।
তা হয়েছি। চল খালধারে গিয়ে একটু গাঁজা টেনে আসি। বহুকাল টানি না।
গাঁজা পাব কোথায়? পয়সা-টয়সা ছাড়ো কিছু।
ছাড়ছি। বদমায়েশি করিস না। আজ একটু গাঁজা না টানলেই নয়।
চোখ ছোট করে নিতাই জিজ্ঞেস করে, কেন, কী হয়েছে?
সে অনেক কথা।
নিতাই টপ করে ঘরে ঢুকে গাঁজার ঝুলি নিয়ে বেরিয়ে এসে ঘরের ঝপ টেনে দিয়ে বলল, চলো।
শ্রীনাথের চেঁচামেচিতে মোড়ের মাথায় বিস্তর লোক জমে গেছে এতক্ষণে। পরের ট্রেনের ডেলি-প্যাসেঞ্জাররাও জুটেছে। আচমকা দু-দুটো গুন্ডার হাতে দোকানঘরের আড্ডাবাজ ছেলেরা ঘায়েল হওয়ায় কিছু লোক হয়তো খুশিই কিন্তু শ্রীনাথ তাদের খুশি থাকতে দিতে চায় না।
সে সমবেত জনসাধারণকে বলছিল, আপনারা কি ভেড়া হয়ে গেছেন নাকি? যে ছেলেটা চেন চালিয়েছিল তাকে আমি চিনি। পুলিশের কাছে আমি তার নামধাম বলব। আপনারা সাক্ষী দেবেন।
ভিড়ের মধ্যে গঙ্গাকে কোথাও দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু তার জায়গা নিয়েছে আর-একজন রোগা পাতলা ছোটখাটো লোক। তাকে এ অঞ্চলের সবাই চেনে। এত ধূর্ত এবং ফেরেববাজ লোক দুটো নেই। তার নাম গণি। যখন যে রাজনৈতিক দল টাকা দেয় তখনই সে সেই দলের হয়ে গ্রামেগঞ্জে কাজ করে বেড়ায়। মামলা-মোকদ্দমায় তার মাথা খুব সাফ। জমি-ঘটিত আইন-কানুন তার নখদর্পণে।
পিছন থেকে গলা তুলে গণি জিজ্ঞেস করে, ছেলেটার নাম যদি জানেন তবে সবার কাছে বলছেন না কেন? সাক্ষী দেবার কথাই বা উঠছে কীসে? লোকে যদি তাকে না চিনে থাকে তবে কি বানিয়ে বলবে নাকি?
গণিকে শ্রীনাথও ভালই চেনে। এও জানে গণি অন্তত তৃষার বিপক্ষের লোক নয়। তবু সে তেজি গলায় বলল, যে ছোকরা দু’জন মার খেয়েছে তারা দেখেছে।
তারা কোথায়? কে মার খেয়েছে?
ওই যে রাস্তায়।–বলে শ্রীনাথ আঙুল তুলে দেখায় পিছনবাগে। কিন্তু রাস্তায় ছেলে দুটোকে দেখা গেল না।
গণি বলল, কেন ঝুটমুট ঝামেলা করছেন? মাল খেয়ে আছেন বুঝতে পারছি। বাড়ি গিয়ে আরাম করুন গে।
শ্রীনাথ রাগে লাল হয়ে চেঁচিয়ে বলল, এইমাত্র এত বড় ঘটনাটা ঘটে গেল সকলের চোখের সামনে সেটা কি ইয়ারকি নাকি?
সবাই গুনগুন করছিল। একমাত্র গণিই গলা তুলে বলল, ঘটনা আবার কী? একটা গাঁইয়া লোক হঠাৎ কী কারণে খেপে গিয়ে একটা ছেলেকে দুটো কিল ঘুসি চালিয়ে পালিয়ে গেল। তাই নিয়ে এত হইচইয়ের কিছু নেই।
গাঁইয়া লোক!–শ্রীনাথ অবাক হয়ে বলে, কিসের গাঁইয়া লোক! ও তো গঙ্গা।
গণি খুব হাসল। বলল, গঙ্গা না কে তা কে দেখেছে? আপনি মাল-খাওয়া চোখে কী দেখতে কী দেখেছেন।
শ্রীনাথ বলল, আলবত গঙ্গা। সবাই দেখেছে।
দেখেছে তো বলুক না। বলছে না কেন?
শ্রীনাথ চেঁচিয়ে বলল, আপনারা বলুন তো, লোকটা গঙ্গা নয়?
শ্রীনাথ ভুল করেছিল। এ কথা ঠিক গঙ্গাকে প্রায় এক ডাকে লোকে চেনে। তাকে মারতে লোকে দেখেছেও। কিন্তু সে কথা কেউ কখনও স্বীকার করবে না।
করলও না। দু-চারজন বরং বলল, শ্রীনাথবাবু, বাড়ি চলে যান। যা হওয়ার হয়ে গেছে।
শ্রীনাথ অসহায়ভাবে বলল, একটা ছেলের মাথা ফেটে রক্ত পড়ছিল, আমার নিজের চোখে দেখা।
চারদিকের গুঞ্জনটা বেশ চেঁচামেচিতে দাঁড়িয়ে গেল! শ্রীনাথের কথা কেউ শুনছে না। সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা, যাদের ওপর হামলা হয়েছিল সেই আড্ডাবাজ ছেলেগুলোর একটারও টিকি দেখা গেল না।
ভিড় ঠেলে একটা খালি রিকশা এগিয়ে এল। চালাচ্ছে তৃষার আর-এক বশংবদ বীরু। তৃষারই রিকশা। ঝকঝকে নতুন। সামনে এসে শ্রীনাথকে বলল, বাবু, উঠে পড়ুন, মা আপনার জন্য ভাবছেন।
গণি এক ফাঁকে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। কাঁধে হাত রেখে একটু চাপ দিয়ে বলল, উঠে পড়ুন। মালটা কিন্তু আজ একটু বেশি টেনে ফেলেছেন।
শ্রীনাথ কঠিন স্বরে বলল, আমি কিন্তু অত সহজে ছেড়ে দেব না গণিমিয়া। বলে রাখলাম।
কী করবেন? পুলিশে যাবেন? যান না, কে ঠেকাচ্ছে?
যাব। তাই যাব।
পুলিশ হাসবে। আপনার তো সাক্ষীই নেই।
দরকার হলে টাকা দিয়ে সাক্ষী জোটাব। তা বলে এত বড় অন্যায় সহ্য করব না।
তার চেয়ে বাড়ি গিয়ে মাথাটা ঠান্ডা করুন। তারপর যা বিবেচনা হয় করবেন।
বলে একরকম ঠেলেই তাকে রিকশায় তুলে দেয় গণি। রোগা হলেও গণির কবজিতে জোর বড় কম নয়। আঙুলগুলো লোহার মতো শক্ত। ছাড়াতে গিয়েও পারল না শ্রীনাথ। কবজিতে ব্যথা পেয়ে ‘উঃ করে ককিয়ে উঠল। রিকশায় উঠতে না উঠতেই বীরু হাওয়ার বেগে রিকশা ছেড়ে দিল। একটু বাদে ছায়ার মতো রিকশার পাশাপাশি একটা সাইকেল চলে এল। তাতে গণি।
পাশাপাশি চলতে চলতে গণি বলল, ওই ছেড়াগুলো যে রোজ আপনাকে টিটকিরি দেয় সেটা কি আপনার ভাল লাগে শ্রীনাথবাবু?
শ্রীনাথ উগ্ৰস্বরে বলল, বেশ করে টিটকিরি দেয়। কেন দেবে না?
আপনাকে বা আপনার বউকে অপমান করলে আপনার লাগে না?
না। ওরা সত্যি কথাই বলে।
আপনি কি মরদ নন? আমাকে বললে তো আমি অনেক আগেই চামড়া তুলে নিতাম।
ওরা ঠিক কাজই করে।
সে আপনার যা খুশি ভাবুন। কিন্তু থানা-পুলিশ করলে একটু ভেবেচিন্তে করবেন।
আমি কাউকে পরোয়া করি না।
লোকে তো হাসবে। আজও তো তোক হাসালেন।
এটা তোমাদের ষড়যন্ত্র, গণি। তোমরা তৃষার টাকা খাও।
হি হি। কী যে বলেন!–গণি বোধহয় জিভ কাটল। তারপর হালকা গলায় বলল, ঠাকরোনের সঙ্গে আপনার বনিবনা নেই তো সেটা হল ঘরের ব্যাপার। পাঁচজনকে সেটা জানাতে যাওয়া কি ভাল? ঘরের কথা পরকে জানালে যে ঘরটা বাজার হয়ে যায়।