বরকত আলি রাতে নীলগঞ্জ স্টেশনের ওয়েটিং রুমে ঘুমিয়েছিল। সকালবেলা সে জেগে উঠে দেখে তার চামড়ার ব্যাগটি চুরি গেছে। তার পাঞ্জাবির পকেটে একুশ টাকা চল্লিশ পয়সা ছিল, সেগুলোও নেই। সে তার দুঃখের কথা বলার জন্যে দবির মিয়ার বাড়ি গেল। দবির মিয়া তাকে হাঁকিয়ে দিল।
বরকত আলিদুপুর পর্যন্ত নেজামুদ্দিনের ডিসপেনসারিতে বসেরইল। নেজামুদ্দিন এক জন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। তার সঙ্গে বরকত আলির বেশ খাতির হয়েছিল। নেজামুদ্দিন তিন ফাইল কানপাকার ওষুধ কিনেছিল, বরকত আলি তার কোন দাম নেয় নি। কিন্তু আজ বরকত আলির দুঃখের গল্প শুনে নেজামুদ্দিনের মুখ লম্বা। হয়ে গেল। সে বরকত আলিকে বসিয়ে রেখে দুপুরে ভাত খেতে গেল। ফিরল বিকালে।
বরকত আলি চোখে অন্ধকার দেখছিল। সে ক্ষুধা একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আজ সারা দিন তার তিন কাপ চা, দুটি টোষ্ট বিসকিট ছাড়া কিছুই খাওয়া হয় নি।
সন্ধ্যার আগে-আগে সে থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে গেল। ওসি সাহেবের সঙ্গে দেখা হল না। তাঁর শরীর বেশি ভালো নয়। তিনি থানায় আজ আর আসবেন না। সেকেণ্ড অফিসার তাকে এক কাপ চা খাওয়ালেন এবং বললেন খামোকা ঘোরাঘুরি না করে বাড়ি ফিরে যেতে।
রাতের বেলা বরকত আলিকে দেখা গেল ছেলের কবরের কাছে উবু হয়ে বসে আছে।
সাইফুল ইসলাম নান্টুর দোকানের চা খেয়ে ফিরবার পথে তাকে দেখতে পেল। সে চেচিয়ে উঠল, কে, কে? মনসুর নাকি? এ্যাই–এ্যাই।
বরকত আলি উঠে দাঁড়াল। ধরা গলায় বলল, জি আমি। আমি বরকত আলি।
এইখানে কী করেন আপনি?
বরকত আলি বলল, আজকে আমার খাওয়া হয় নাই সাব।
খাওয়া হয় নাই?
জ্বি না ভাইসাব। আমার জিনিসপত্র সব চুরি গেছে। একটা পয়সাও নাই সাথে।
আরে, এ তো সিরিয়াস মুসিবত।
এই বয়সে খিদার কষ্ট সহ্য হয় না ভাইসাব।
হুঁ, না হওয়ারই কথা।
সাইফুল ইসলাম কুঞ্চিত করল। মসজিদ থেকে আবার ওয়াজ শুরু হয়েছে, নবীজীর সাফায়াত পাওয়া সহজ না, এই কথাটা মনে রাখবেন। দুনিয়াদারী কঠিন। জায়গা ভাই সব। বড় কঠিন স্থান। দীন-দুনিয়ার মালিক গাফুরুর রহিম ইয়া জাল জালাল ওয়াল্ ইকরাম এরশাদ করেছেন…
সাইফুল ইসলাম তাঁকে নিজের ঘরে নিয়ে এল। সেই রাত্ৰেই নীলগঞ্জ থানার ওসি সাহেবের কাছে তিন পাতার একটা চিঠি লিখল। চিঠির শুরু এরকম।
ওসি সাহেব, আপনার কি ধারণা নীলগঞ্জের অধিবাসীরা ঘাস খাইয়া জীবনধারণ করে। সমস্ত জারিজুরি ফাঁস হইয়া গিয়াছে। খুনের দায়ে এখন হাতকড়া পরিবার জন্যে তৈরী হওয়ার সময় আসিয়াছে। শালা, তুই কি ভাবিয়াছিস…