২২. গাঞী বিভাগ

গাঞী বিভাগ

কুলজীগ্রন্থের আদিশূর-কাহিনীর উপর বিশ্বাস স্থাপন করিয়া বর্ণকাহিনী রচনার প্রয়োজন নাই; লিপিমালা ও সমসাময়িক স্মৃতিগ্রন্থাদির সাক্ষ্যই যথেষ্ট। পঞ্চম-ষষ্ঠ-সপ্তম শতকেই দেখিতেছি ভট্ট, চট্ট, বন্দ্য ইত্যাদি গ্রামের নামে পরিচয় দিবার একটি রীতি ব্রাহ্মণদের মধ্যে দেখা যাইতেছে; নিঃসংশয়ে বলিবার উপায় নাই, কিন্তু মনে হয় গাঞী পরিচয় রীতির তখন হইতেই প্রচলন আরম্ভ হইয়াছে, কিন্তু তখনও বিধিবদ্ধ, প্রথাবদ্ধ হয় নাই। দ্বাদশ ত্রয়োদশ শতকে কিন্তু এই রীতি একেবারে সুনির্দিষ্ট সীমায় প্রথাবদ্ধ নিয়মবদ্ধ হইয়া গিয়াছে। ভবদেব ভট্টের মাতা বন্দ্যঘটীয় ব্রাহ্মণ কন্যা; “টাকাসর্বস্ব” গ্রন্থের রচয়িতা আর্তিহরপুত্র সর্বানন্দ (১১৫৯-৬০) বন্দ্যঘটীয় ব্রাহ্মণ(১) ভবদেব স্বয়ং এবং শান্ত্যাগরাধিকৃত ব্রাহ্মণ রামদেবশৰ্ম্মা উভয়েই সাবর্ণগোত্রীয় এবং সিদ্ধল গ্রামীয়;(২) বল্লালগুরু অনিরুদ্ধভট্ট চম্পাহিটী বা চম্পহট্টীয় মহামহোপাধ্যায়,(৩) মদনপালের মনহলি লিপির দানগ্রহীতা বটেশ্বরও চম্পহট্টীয়;(৪) জীমূতবাহন আত্মপরিচয় দিয়াছেন পারিভদ্রীয় বলিয়া।(৫) দশরথদেবের আদাবাড়ী লিপিতে দিণ্ডী, পালি বা পালী, সেউ, মাসচটক বা মাসচড়ক, মূল, সেহন্দায়ী, পুতি, মহান্তিয়াড়া এবং করঞ্জ প্রভৃতি গাঞী পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। হলায়ূধের মাতৃপরিচয় গোচ্ছাষণ্ডী গ্রামীয়রূপে,(৬) লক্ষ্মণসেনের অন্যতম সভাকবি শ্ৰীনিবাসের মহিন্তাপনীবংশ পরিচয়ও গাঞী পরিচয়।(৭) বরেন্দ্রীর তটক, মৎস্যাবাস; রাঢ়ার ভূরিশ্রেষ্ঠী, পূর্বগ্রাম, তালবাটী, কাঞ্জিবিল্লী এবং বাংলাদেশের অন্যান্য অনেক গ্রামের (যথা, ভট্টশালী, শকটী, রত্নামালী, তৈলপাটী, হিজ্‌ জলবন, চতুর্থ খণ্ড, বাপডলা) ব্রাহ্মণদের উল্লেখ সমসাময়িক লিপি ও গ্রন্থাদিতে পাওয়া যাইতেছে।(৮) সংকলয়িতা শ্রীধর দাসের “সদুক্তিকর্ণামৃত” (১২০৬) গ্রন্থেও দেখিতেছি বাঙালী ব্রাহ্মণদের নামের সঙ্গে—বর্তমান ক্ষেত্রে নামের পূর্বে—গ্রামের নাম অর্থাং গাঞী পরিচয় ব্যবহারের রীতি সুপ্রতিষ্ঠিত হইয়া গিয়াছে, যথা, ভট্টশালীয় পীতাম্বর, তৈলপাটীয় গাঙ্গোক, কেশরকোলীয় নাথোক, বন্দিঘটীয় সর্বানন্দ, ইত্যাদি।(৯) এইসব গাঞী পরিচয় অল্পবিস্তর পরিবর্তিতরূপে কুলজীগ্রন্থমালার রাঢ়ীয় ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের পঞ্চগোত্রে বিভক্ত ১৫৬টা গাঞী পরিচয়ের মধ্যেই পাওয়া যায়। কালক্রমে এই গাঞী পরিচয়প্রথা বিস্তৃত হইয়াছে, বিধিবদ্ধ হইযাছে এবং সুনির্দিষ্ট সীমায় সীমিত হইয়াছে; এই সীমিত, বিধিবদ্ধ প্রথারই অস্পষ্ট পরিচয় আমরা পাইতেছি কুলজীগ্রন্থমায়।

 

————————
(১) Insc. of Bengal, III, p. 37; Ëiŵ।RR®, Ed, Trivandrum, Sans. Ser. 4. Vols; also see JRAS., 1927, p. 472.
(২) Insc. of Bengal, III, p. 36 and 24 respectively.
(৩) JASB., 1912, 343 p.
(৪) গৌড়লেখমালা, ১৫৪ পৃ।
(৫) কালবিবেক গ্রন্থের পুম্পিকা; কালবিবেক, Bib, Ind. Intro. vii p.
(৬) ব্রাহ্মণসর্বস্ব; Ind. Culture, I, 505 p.
(৭) অদ্ভূতসাগর, Ind. Ant., 1922, 47 p.
(৮) সদুক্তিকর্ণামৃত, Ed. by Ramavatara Sarma & Haradatta Sarma, Intro 44, 47, 58, 71, 81
(৯) Ed. Ind. XV. 3o1 p, ন্যায়কন্দলী, Jour Andhra Hist. Sec 1V, 158-62; Ind. Off Cat. I, Part one, No. 450; D.U. Mss, no.

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *