২২. আবার পেঁচার ডাক
হ্যারি।
হ্যারির জামার হাতায় ধরে টান দিল হারমিওন, চোখ রয়েছে ঘড়ির উপরে। হাসপাতালে ফিরে যাওয়ার জন্যে আমাদের আর ঠিক দশ মিনিট হাতে রয়েছে ডাম্বলডোর দরজা লাগিয়ে দেয়ার আগে–
ঠিক আছে, বলল হ্যারি, আকাশের দিকে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে, চল
যাই
পেছনের দরজাটা দিয়ে চুপিসারে নেমে পাথরের ঘোরানো সিঁড়িটা ভেঙে নামল ওরা। নিচে নেমে শুনতে পেল মানুষের কণ্ঠস্বর। একেবারে দেয়ালের সঙ্গে মিশে গেল ওরা, শুনছে। মনে হচ্ছে ফাজ এবং স্নেইপ কথা বলছেন। করিডোর ধরে দ্রুত এগিয়ে সিঁড়িটার গোড়ায় গেলেন।
একমাত্র ভরসা হচ্ছে ডাম্বলডোর কাজে কোন বাগড়া দেবেন না, বললেন স্নেইপ। দ্রুতই কী কিস-এর কাজটা শেষ করে ফেলা হবে?
যত দ্রুত ডিমেন্টারদেরকে নিয়ে ম্যাকনায়ার ফিরে আসতে পারবে। ব্ল্যাক এর পুরো ব্যাপারটা খুবই বিব্রতকর। ডেইলি প্রফেট-এ খবরটা দেয়ার জন্যে, যে ব্ল্যাককে অবশেষে আমরা ধরতে পেরেছি, আমি একেবারে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছি … আমি বলতে পারি যে ওরা তোমার সাক্ষাৎকার নেবে স্নেইপ হ্যারিরও নেবে, ও সুস্থ হয়ে উঠলে, আমি আশা করছি ও প্রফেট-এর কাছে সঠিকভাবে বলতে পারবে কিভাবে তুমি ওকে উদ্ধার করেছে
দাঁতে দাঁত চেপে থাকল হ্যারি। স্নেইপ এবং ফাজ ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ও স্নেইপ-এর মুখের বিদ্রূপটা ঠিকই দেখতে পেল। ওদের পদশব্দ মিলিয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত আরও অপেক্ষা করল হ্যারি আর হারমিওন, নিশ্চিত হয়ে নিল ওদের যাওয়ার ব্যাপারে। বিপরীত দিকে দৌড়াতে শুরু করল ওরা। সিঁড়ি ধরে, তারপরে আরেকটা, তারপরে একটা করিডোর ধরে-এরপর সামনে ওরা শুনতে পেল উচ্চস্বরে একটা হাসির শব্দ।
পিভস! আস্তে আস্তে বলল হ্যারি, হারমিওন-এর হাত খামচে ধরে টেনে নিয়ে এল। এই খানে!
শূন্য একটা ক্লাসরুমের ভেতরে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে ঢুকল ওরা। পিভস মনে হয় করিডোর ধরে লাফালাফি করছে মনের আনন্দে, হেসে মাতিয়ে তুলছে চারদিক।
ওহ, বিরক্তিকর ভূত একটা, ফিসফিস করে বলল হারমিওন, দরজার কান পেতে রয়েছে ও। আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওর এত খুশির কারণ হচ্ছে ডিমেন্টাররা যে সাইরিয়াসকে শেষ করে ফেলবে আবার ঘড়ি দেখল সে। হ্যারি, তিন মিনিট আর আছে মাত্র!
পিভস-এর কোলাহলপূর্ণ কণ্ঠস্বরটা দূরে মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করল ওরা, রুম থেকে চুপিসারে বেরিয়েই দৌড়াতে শুরু করল।
হারমিওন–কি হবে–যদি আমরা–ডাম্বলডোর দরজায় তালা দেয়ার আগে ওখানে পৌঁছাতে না পারি? হাঁপাতে হঁপাতে বলল হ্যারি।
এ ব্যাপারে আমি ভাবতেও চাই না! বলল হারমিওন। ঘড়িটা আবার দেখে নিল, এক মিনিট!
করিডোরের শেষ প্রান্তে পৌঁছল ওরা হাসপাতালে ঢোকার মুখে। ঠিক আছে আমি শুনতে পাচ্ছি ওই যে ডাম্বলডোর– বলল উদ্বেগের সাথে হারমিওন। জলদি এসো হ্যারি!
পা টিপে টিপে করিডোর ধরে দৌড়াচ্ছে ওরা। দরজাটা খুলে গেল। ডাম্বলডোরের পেছনটা দেখা যাচ্ছে।
আমি তোমাদেরকে ভেতরে তালা মেরে রাখব, ওদেরকে বলা কথা হলো আবার ওকে বলতে শুনল ওরা। এর মধ্যে কত ঘটনাই না ঘটে গেছে। মাঝ রাতের আর পাঁচ মিনিট বাকি। মিস গ্লেজার, তিনটা উল্টো ঘোরানো সময়ের মধ্যে নিশ্চয়ই কাজটা হবে। গুড লাক।
ওয়ার্ডের দরজা থেকে পিছু হেঁটে এলেন ডাম্বলডোর, দরজাটা বন্ধ করে জাদুর কাঠিটা দিয়ে বন্ধ করে দিলেন তালাটা। শঙ্কিত হ্যারি আর হারমিওন দৌড়ে সামনে গেল, ডাম্বলডোর ওখান থেকে মুখ তুলে তাকালেন, ওর রূপালী গোঁফের নিচে বড়সড় একটা হাসি দেখা গেল। আচ্ছা? শান্ত স্বরে বললেন তিনি।
আমরা সফল হয়েছি! দম আটকে বলল হ্যারি। চলে গেছে সাইরিয়াস বাকবিক-এর পিঠে চড়ে
উদ্ভাসিত মুখে ওদের দিকে তাকালেন ডাম্বলডোর।
চমৎকার। আমার মনে হচ্ছে– হাসপাতালের দিক থেকে কোন শব্দ আসছে কি না সেটা শোনার চেষ্টা করছেন তিনি। আমার মনে হয়, তুমিও চলে গিয়েছে। ভেতরে ঢোকো, তালা মারব আমি।
হ্যারি এবং হারমিওন ওয়ার্ডের ভেতরে ঢুকে গেল। রন ছাড়া আর কেউ নেই ওখানে। বিছানায় পড়ে আছে ও স্থির হয়ে। ওদের পেছনে তালা লাগানো শব্দ হলো। যার যার বিছানায় ওঠে পড়ল হ্যারি আর হারমিওন। সময়–ঘোরানো ঘড়িটা পোশাকের নিচে রেখে দিল হারমিওন। পরমুহূর্তেই মাদাম পমফ্রে লম্বা লম্বা পা ফেলে তার অফিস থেকে ফিরে এলেন।
হেড মাস্টারের চলে যাওয়ার শব্দ শোনা গেল না? আমি কী এখন আমার রোগীদের যত্ন নিতে পারি?
মেজাজ খারাপ হয়েছে মাদাম পমফ্রের। ওরা ভাবল চুপচাপ তার দেয়া চকলেটটা খেয়ে নেয়াই ভালো। সামনে দাঁড়িয়ে মাদাম পমফ্রে নিশ্চিত করলেন ওদের খাওয়াটা। হ্যারি চকলেটটা গিলতেই পারছে না ও আর হারমিওন মনে মনে অপেক্ষা করছে, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় নার্ভাস হয়ে আছে মনে মনে এবং তারপর, ওরা যখন চকলেটের চতুর্থ টুকরোটা মুখে দিল, শুনতে পেল দূর থেকে ওদের মাথার উপরে কারও ক্ষিপ্ত গর্জন
ওটা আবার কী? সতর্ক মাদাম পমফ্রে জিজ্ঞেস করল।
এখন তারা কারো ক্ষিপ্ত কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে স্পষ্ট, আরও কাছে আসছে আরও জোরে জোরে শোনা যাচ্ছে। দরজার দিকে নিস্পলক তাকিয়ে রয়েছেন মাদাম পমফ্রে।
কি মুশকিল-এরাতো দেখি সবাইকে জাগিয়ে তুলবে! ওরা ভেবেছে কী?
বাইরের কণ্ঠস্বরগুলো কি বলছে শোনার চেষ্টা করছে হ্যারি। কাছে আসছে ওরা
হঠাৎ উবে যায়নি ও! গর্জন করছেন স্নেইপ, এখন একেবারে কাছে চলে এসেছেন। এই প্রাসাদের ভেতরে কেউ হঠাৎ গায়েবও হয়ে যেতে পারে
আবার আবির্ভূতও হতে পারে না! এটা–নিশ্চয়ই–পটার-এর–কোন কারসাজি!
সেভেরাস–যুক্তিটা বোঝার চেষ্টা কর–হ্যারি এখানে তালাবদ্ধ ঘরে রয়েছে
দড়াম
হাসপাতালের ওয়ার্ডের দরজাটা উড়ে গেল কোথাও।
ফাজ, স্নেইপ এবং ডাম্বলডোর লম্বা লম্বা পা ফেলে ওয়ার্ডে ঢুকলেন। শুধু ডাম্বলডোরকেই শান্ত দেখাচ্ছে। বস্তুত ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন পুরো ব্যাপারটাতেই দারুণ মজা পাচ্ছেন তিনি। খুব রেগে গেছেন ফাজ, কিন্তু স্নেইপ ওরে–বাপ একেবারে আগ্নেয়গিরি!
পটার, বলে ফেল, এক্ষুণি! চিৎকার করে উঠলেন তিনি। কি করেছো তুমি?
প্রফেসর স্নেইপ! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলেন মাদাম পমফ্রে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন!।
দেখুন স্নেইপ, যুক্তিটা বোঝার চেষ্টা করন, বললেন ফাজ। এইমাত্র আমরা দেখলাম, ওয়ার্ডের দরজাটায় তালা লাগানো ছিল—
আমি জানি, ওরা ওকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, শোনা গেল স্নেইপ-এর গর্জন, আঙুল তুলে হ্যারি আর হারমিওনকে দেখালেন তিনি। রাগে বিকৃত হয়ে গেছে মুখ, সমানে থুথু ছিটাচ্ছেন।
শান্ত হোন! ধমক দিয়ে বললেন ফাজ। অর্থহীন কথা বলছেন আপনি!
পটারকে আপনি চেনেন না! রাগে কাঁপছেন স্নেইপ। আমি জানি ওই এটা করেছে, ওই করেছে।
যথেষ্ট হয়েছে সেভেরাস, শান্ত স্বরে বললেন ডাম্বলডোর। কি বলছ একবার ভাব তো। দশ মিনিট আগে আমি ওয়ার্ড থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে ওয়ার্ডের দরজা তালাবদ্ধ ছিল। মাদাম পমফ্রে, এরা কী ওদের বিছানা ছেড়ে উঠেছিল?
নিশ্চয়ই না! বললেন মাদাম পমফ্রে, রেগে টং হয়ে আছেন তিনি। আপনার যাওয়ার পর থেকেই আমি ওদের সঙ্গে রয়েছি।
বেশ, শুনলে তো সেভেরাস, ডাম্বলডোর বললেন অবিচলিতভাবে। অবশ্য যদি বলতে না চাও যে হ্যারি এবং হারমিওন একই সময়ে দুই জায়গায় উপস্থিত ছিল, তাহলে আমার মনে হয় ওদেরকে বিরক্ত করার কোন মানে হয় না।
দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্নেইপ, রাগে টগবগ করছেন, ফাজ-এর দিক থেকে, ওর ব্যবহারে ক্ষুব্ধ, তাকালেন ডাম্বলডোরের দিকে, চশমার কাঁচের পেছনে যার চোখ দুটো মিটমিট করছে। সাঁই করে ঘুরলেন স্নেইপ, পোশাকটা ঘুরলো পেছন পেছন ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলেন ওয়ার্ড ছেড়ে।
একেবারেই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে মনে হয়, বললেন ফাজ ওর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে। আমি যদি আপনার জায়গায় হতাম ডাম্বলডোর, তাহলে ওর ওপর বিশেষভাবে নজর রাখতাম।
ওহ, না, উনি ভারসাম্য হারাননি, বললেন ডাম্বলডোর। সাংঘাতিক রকমের একটা হতাশায় আক্রান্ত হয়েছেন।
উনিই একমাত্র নন! বললেন ফাজ। ডেইলি প্রফেট-এর জন্যে সাংঘাতিক একটা খবর অপেক্ষা করছে! ব্ল্যাককে ধরার পরও আমাদের হাত থেকে ও পালিয়ে গেছে। এখন শুধু বাকি আছে হিপোগ্রিটার পালিয়ে যাওয়ার খবর বের হওয়ার, তাহলে আমি হবো সবার হাসির পাত্র! আচ্ছা যাই মন্ত্রণালয়কে সবকিছু জানাই …।
আর ডিমেন্টারদের কী হবে? বললেন ডাম্বলডোর। আমার মনে হয় স্কুল থেকে ওদেরকে সরিয়ে দেয়া হবে!
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, এবার ওদেরকে যেতে হবে, বললেন ফাজ, মাথার চুলের ভেতর দিয়ে আঙুল চালিয়ে দিলেন তিনি। কখনও ভাবতেও পারিনি যে ওরা একটা নির্দোষ বালকের উপর কিস প্রয়োগ করবে একেবারেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে … না, আজ রাতেই ওদেরকে আজকাবানে পাঠিয়ে দিতে হবে। এরপর হয়তো স্কুলের গেটে আমাদেরকে ড্রাগন পাহারা রাখার কথা ভাবতে হবে।
এই ব্যবস্থাটা হ্যাগ্রিড-এর পছন্দ হবে, বললেন ডাম্বলডোর, হ্যারি এবং হারমিওন-এর দিকে ছুঁড়ে দিলেন মুচকি একটা হাসি। ওরা বেরিয়ে যেতেই দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মাদাম পমফ্রে দরজাটা লাগিয়ে দিলেন। নিজের মনেই ক্ষুব্ধ মন্তব্য করতে করতে অফিস রুমের ভেতরে গেলেন।
ওয়ার্ডের আরেক মাথা থেকে মৃদু গোঙানির স্বর শোনা গেল। জেগে উঠেছে রন। ওরা দেখতে পাচ্ছে উঠে বসেছে সে, মাথা ডলছে, তাকাচ্ছে চারদিকে।
কি–কি হয়েছে! যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠল রন। হ্যারি? তুমি ওখানে শুয়ে আছ কেন? সাইরিয়াস কোথায়? লুপিন কোথায়? কী হচ্ছে সব?
হ্যারি এবং হারমিওন তাকাল পরস্পরের দিকে।
তুমি ওকে ব্যাখ্যা করে বলো! বলল হ্যারি, আরও কয়েকটি চকলেট নিয়ে মুখে পুরে দিল।
***
পরদিন দুপুরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ওরা দেখল প্রাসাদটা প্রায় খালি হয়ে গেছে। প্রাণান্তকর গরম আর পরীক্ষা শেষ হওয়া মানেই সবাই আরেকবার হগসমিড-এ যাওয়ার সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে। রন এবং হারমিওন-এর ওখানে যাওয়ার কোন ইচ্ছে নেই। মাঠে হেঁটে বেড়াচ্ছে ওরা, আলাপ করছে গত রাতে ঘটে যাওয়া অসাধারণ অদ্ভুত সব ঘটনাগুলো নিয়ে। এবং ভাবছে এই মুহূর্তে সাইরিয়াস এবং বাকবিক কোথায়? লেকের কাছে বসে, পানির মধ্যে বিশাল আকৃতির স্কুইডটাকে দেখতে দেখতে লেকের অপর পাড়ে চোখ পড়তেই অন্য মনস্ক হয়ে গেল হ্যারি। ওইখান থেকেই গত রাতে হরিণটা ছুটে এসেছিল ওর দিকে…
ওদের উপরে একটা ছায়া এস পড়ল, উপর দিকে তাকিয়ে দেখল, হ্যাগ্রিড ওর ঘাম মুছছে টেবিল ক্লথ সাইজের রুমাল দিয়ে এবং চেয়ে আছে ওদের দিকে খুশিতে ডগমগ।
আমি জানি আমার খুশি হওয়া উচিত না, বিশেষ করে গত রাতে যা ঘটে গেল, বলল সে। মানে, আবার ব্ল্যাকের পালিয়ে যাওয়া আর সব ঘটনা–কিন্তু ভাবতো আরও কী ঘটেছে?
কী? সমস্বরে জিজ্ঞাসা করল ওরা, কৌতূহলী হওয়ার ভান করল।
বিকি! ও পালিয়েছে! মুক্ত হয়ে গেছে সে! সারা রাত ধরে আমি এই সুখবরটা উদযাপন করছি!
চমৎকার, সাংঘাতিক ব্যাপার! বলল হারমিওন, রন-এর দিকে তাকাল। কুঁচকে, কারণ ও প্রায় হেসে দিয়েছিল আর কি।
হ্যাঁ ওকে ভালো করে মারতে পারেনি, বলল সে সামনের মাঠের দিকে তাকিয়ে, খুশি সে। সকাল বেলাটায় খুব ভয় পাচ্ছিলাম ভেবেছিলাম প্রফেসর লুপিন রয়েছেন বাইরে, কিন্তু লুপিন বললেন গত রাতে কিছুই খাননি তিনি…
কী? দ্রুত জিজ্ঞাসা করল হ্যারি।
বিশ্বাস কর, তোমারা কিছুই শোননি? বলল হ্যাগ্রিড, মুখের হাসিটা একটু মলিন হলো। গলার স্বর নামিয়ে বলল, যদিও কাউকে দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে, মানে আজ সকালে স্লিথারিনদেরকে বললেন স্নেইপ ভাবছি এর মধ্যে নিশ্চয়ই সবাই জেনে গেছে … প্রফেসর লুপিন একজন ওয়েরউলফ। এবং গত রাতে মাঠে উনি ছিলেন মুক্ত। অবশ্য এখন তিনি তার সব জিনিসপত্র গোছগাছ করছেন।
গোছগাছ করছেন? বলল হ্যারি, সতর্ক হয়ে। কেন?
ছেড়ে চলে যাচ্ছেন? বলল হ্যাগ্রিড, অবাক হয়েছে যে হ্যারি ব্যাপারটা জানে। আজ সকালেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। বলেছেন এ ঘটনা আবার ঘটতে পারে বলে তিনি ঝুঁকি নিতে চান না।
লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল হ্যারি।
আমি তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি, রন এবং হারমিওনকে বলল সে।
কিন্তু উনি যদি পদত্যাগ করেই থাকেন–
–মনে হয় না আমরা আর কিছু করতে পারব।
সেটা আমি বুঝি না। আমি তারপরও তার সঙ্গে দেখা করতে চাই। এখানেই তোমাদের সঙ্গে আমার দেখা হবে।
***
লুপিন-এর অফিস কক্ষটা খোলাই ছিল। প্রায় সব জিনিসই গুছিয়ে এনেছেন। পুরনো স্যুটকেসটার পাশে গ্রিন্ডিলোর শূন্য বাক্সটা রয়েছে, ডেস্কের উপরে ঝুঁকে পড়ে কিছু একটা করছিলেন লুপিন, দরজায় হ্যারির নক শুনে মুখ তুলে তাকালেন।
তোমাকে আসতে দেখেছি, বললেন লুপিন, মুখে মৃদু হাসি। টেবিলের উপরে ছড়ানো পার্চমেন্টটা দেখালেন। ওটা মরেডার্স ম্যাপ।
এই মাত্র হ্যাগ্রিড-এর সঙ্গে দেখা হল, বলল হ্যারি। এবং ও বলল আপনি পদত্যাগ করেছেন। এটা ঠিক না তাই না?
আমার ভয় হচ্ছে এটাই ঠিক, বললেন লুপিন। ডেস্কের ড্রয়ারগুলো খুলছেন, ওখান থেকে জিনিসপত্র বের করছেন।
কিন্তু কেন? বলল হ্যারি। ম্যাজিক মন্ত্রণালয়তো মনে করে না যে আপনিই সাইরিয়াসকে সাহায্য করছেন, মনে করে কী?
হেঁটে গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিলেন লুপিন।
না। প্রফেসর ডাম্বলডোর ফাজকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে আমি তোমাদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো লুপিন-এর বুক থেকে। সেভেরাস-এর জন্যে ওটা ছিল একটা বড় আঘাত, আমার মনে হয় অর্ডার অফ মার্লিন না পাওয়ার সম্ভাবনাটাই ওর মনে দারুণভাবে লেগেছে। সে কারণেই, সে–মানে–যেন হঠাৎ করেই আজ সকালে বলে ফেলল যে আমি ওয়েরউলফ।
শুধুই এই কারণেই আপনি চলে যাবেন এটা হতে পারে না! বলল হ্যারি।
শুষ্ক হাসলেন লুপিন।
আগামীকাল এ সময়ে ছাত্রদের অভিভাবকদের কাছ থেকে চিঠি নিয়ে পেঁচাগুলো সব আসতে শুরু করবে-একটা ওয়েরউলফ ওদের ছেলেমেয়েদের পড়াবে এটা তারা কিছুতেই মেনে নেবে না। এবং গত রাতের ঘটনার পর ওদের যুক্তিটা আমার কাছে আরও পরিষ্কার। হ্যারি, আমি তোমাদের যেকোন একজনকে কামড়ে দিতে পারতাম এরকম আশঙ্কা আবার তৈরি হোক সেটা কখনই আমি চাইব না।
ডিফেন্স এগেনস্ট দ্যা ডার্ক আর্টস-এর আপনি আমাদের সবচেয়ে ভালো শিক্ষক! বলল হ্যারি। প্লিজ, যাবেন না!
মাথা ঝাঁকালেন লুপিন, কিন্তু কথা বলতে পারলেন না। ড্রয়ারগুলো খালি করে চলেছেন নীরবে। হ্যারি যখন কিছু বলার জন্য মনে মনে ভালো একটা যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, তখনই লুপিন বললেন, আজ সকালে হেডমাস্টার আমাকে যা বললেন তা থেকে বুঝলাম তুমি বেশ কয়েকটা জীবন রক্ষা করেছে হ্যারি। আমি যদি কোন কিছু সম্পর্কে গর্ববোধ করি, তাহলে সেটা হচ্ছে তোমরা যদি আমার কাছ থেকে কিছু শিখে থাক তার জন্যে। তোমার পেট্রোনাস সম্পর্কে আমাকে বল, হ্যারি।
আপনি ওটা সম্পর্কে জানেন কীভাবে? বলল হ্যারি, ওর মনযোগ চলে গেছে অন্যদিকে।
এছাড়া আর কীভাবে ডিমেন্টারদের তাড়িয়ে দিয়েছিলে?
যা যা ঘটেছে একে একে সব লুপিনকে বলল হ্যারি। ওর কথা শেষ হতে হাসলেন তিনি।
হ্যাঁ, তোমার বাবা সব সময় একটা হরিণে রূপান্তরিত হতেন, বললেন তিনি। তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছে সে কারণেই তাকে আমরা প্রংস বলে ডাকতাম।
শেষ কয়েকটা বই বাক্সে ছড়িয়ে ফেললেন তিনি, ডেস্কের ড্রয়ারটা বন্ধ করে ঘুরে তাকালেন হ্যারির দিকে।
এই যে–গত রাতে শ্ৰিকিং শ্যাক থেকে এটা নিয়ে এসেছি আমি, হ্যারির হাতে অদৃশ্য হওয়ার জামাটা তুলে দিয়ে বললেন। আর ইতস্তত করলেন তিনি, তারপর মরেডার্স ম্যাপটা তুলে দিলেন ওর হাতে। এখন আমি আর তোমার শিক্ষক নেই, সুতরাং এটা তোমার কাছে ফিরিয়ে দিতে আমার কোন অপরাধবোধ নেই। এটা আমার কোন কাজে লাগবে না, কিন্তু মনে হয় তোমার, রন এবং হারমিওন-এর কাজে লাগতে পারে।
ম্যাপটা নিয়ে দাঁত বের করে হাসল হ্যারি। আপনি বলেছিলেন মুনি, ওয়ার্মটেইল, প্যাডফুট এবং প্রংস আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে স্কুল থেকে নিয়ে যেতে চাইতে পারে আপনি বলেছিলেন ব্যাপারটা ওদের কাছে মজার বলেই মনে হতো।
এবং ঠিক সেটাই তো করেছি আমরা, বললেন লুপিন, হাত বাড়িয়ে স্যুটকেসটা বন্ধ করলেন। আমি নিশ্চিন্তে বলতে পারি যদি জেমস দেখত যে তার ছেলে প্রাসাদ থেকে বের হওয়ার কোন একটিও গোপন পথ কখনই খুঁজে পায়নি তাহলে সে যারপরনাই হতাশ হতো।
দরজায় নক হলো। মরেডার্স ম্যাপ এবং অদৃশ্য হওয়ার জামাটা দ্রুত পকেটে ভরে ফেলল হ্যারি।
প্রফেসর ডাম্বলডোর এসেছেন। হ্যারিকে এখানে দেখে মোটেও অবাক হলেন না।
গেটে আপনার বাহন এসে গেছে, রেমাস, বললেন তিনি।
ধন্যবাদ, হেডমাস্টার।
পুরনো স্যুটকেস আর গ্রিন্ডিলোর খালি বাক্সটা তুলে নিলেন লুপিন।
আচ্ছা–গুড বাই হ্যারি, বললেন তিনি মুখে মৃদু হাসি। তোমাকে পড়ানোটা আমার জন্যে সত্যিই খুবই আনন্দের ব্যাপার ছিল। আমার মন বলছে আবার হয়তো কোথাও দেখা হবে। হেডমাস্টার, গেটে গিয়ে আমাকে বিদায় জানাবার দরকার নেই, আমি নিজেই যেতে পারব
হ্যারির মনে হচ্ছে লুপিন যেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যেতে চাইছেন।
তাহলে, বিদায়, রেমাস, ডাম্বলডোর বললেন স্থির কণ্ঠে। গ্রিন্ডিলোর বাক্সটা একটু সরিয়ে ডাম্বলডোরের সাথে করমর্দন করলেন লুপিন। হ্যারির দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে দ্রুত একটু হাসি দিয়ে অফিস ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
শূন্য চেয়ারটায় বসে পড়ল হ্যারি, তাকিয়ে রয়েছে মেঝের দিকে। মুখ ভার। দরজাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার শব্দ শুনল সে, মুখ তুলে তাকাল। তখনও ডাম্বলডোর রয়েছেন ওখানে।
এত দুঃখিত হচ্ছ কেন হ্যারি? শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি। গত রাতে যা ঘটেছে তার জন্যে তোমার গর্ববোধ করা উচিত।
তাতে তো তফাৎ হলো না, তিক্ত স্বরে বলল হ্যারি। পেট্টিগ্রু তো পালিয়ে গেল।
কোন তফাৎ হয়নি? বললেন ডাম্বলডোর। অনেক বড় তফাৎ হয়েছে হ্যারি। সত্য উঘাটন করায় তুমি ভূমিকা রেখেছে। একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে ভয়াবহ পরিণতির হাত থেকে তুমি রক্ষা করেছে।
ভয়াবহ। হ্যারির স্মৃতিতে কি যেন আঘাত করল। ভয়াবহ এবং আগের সবকিছুর চাইতে ভয়াবহ … প্রফেসর ট্রিলনির ভবিষ্যদ্বাণী!
প্রফেসর ডাম্বলডোর–গতকাল, আমার যখন ডিভাইনেশন পরীক্ষা হচ্ছিল, প্রফেসর ট্রিলনি হঠাৎ কেমন যেন অদ্ভুত রকমের অদ্ভুত রকমের হয়ে গেলেন।
সত্যিই? বললেন ডাম্বলডোর। ইয়ে মানে–স্বাভাবিকের চেয়ে অদ্ভুত, তুমি তাই বোঝাতে চাইছ?
হ্যা তার কণ্ঠস্বর গম্ভীর হয়ে গেল, চোখ বড় বড় ঘুরছে ভাটার মতো এবং তিনি বললেন তিনি বললেন মধ্য রাতের আগেই ভল্টেমর্টের দাস তার কাছে ফিরে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুত হবে তিনি বললেন সেই দাস তাকে আবার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সাহায্য করবে। ডাম্বলডোর-এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে হ্যারি। এরপর তিনি আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলেন কিন্তু আমাকে যা বলেছিলেন তার কিছুই মনে করতে পারলেন না। তিনি কী–তিনি কী সত্যি সত্যিই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?
মনে হলো কথাটা ডাম্বলডোর-এর মনে সামান্য রেখাপাত করেছে।
কি জান হ্যারি, আমার মনে হয় তিনি বোধহয় তাই করেছিলেন, চিন্তিত স্বরে বললেন তিনি। আর কে এটা চিন্তা করতে পারত? এই নিয়ে তার সত্যিকারের ভবিষ্যদ্বাণীর সংখ্যা হলো দুটো। তার বেতনটা এবার বাড়িয়ে দেয়া উচিত।
কিন্তু– ডাম্বলডোর-এর দিকে তাকাল হ্যারি। বিস্ময়াবিভূত। এই ঘটনাটা ডাম্বলডোর এত শান্তভাবে নিচ্ছেন কীভাবে?
কিন্তু আমি সাইরিয়াস এবং প্রফেসর লুপিনকে পেট্টিগ্রুকে হত্যা করা থেকে বিরত করেছি! তাহলে এখন যদি ভল্ডেমর্ট ফিরে আসে তাহলে সেটা হবে আমার দোষ!
না সেরকম কিছু হবে না, শান্তভাবে বললেন ডাম্বলডোর। টাইম–টার্নার ঘড়ির অভিজ্ঞতাটা তোমাকে কী কিছুই শেখায়নি হ্যারি? আমাদের সকল কর্মকাণ্ডের পরিণতি এত জটিল, এত বিভিন্নমুখী যে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আগে থেকে বলে দেয়া খুবই কঠিন একটা কাজ এটার একেবারে জীবন্ত প্রমাণ হচ্ছে প্রফেসর ট্রিলনি। পেট্টিগ্রুর জীবন বাঁচিয়ে তুমি একটি মহৎ কাজ করেছে।
কিন্তু সে যদি ভল্টেমর্টকে ক্ষমতা ফিরে পেতে সাহায্য করে!
ওর জীবনের জন্যে পেট্টিগ্রু তোমার কাছে ঋণী। তুমি ভল্ডেমর্ট-এর কাছে এমন একজন সহকারী পাঠালে যে তোমার কাছে ঋণী। একজন জাদুকর যখন আরেকজন জাদুকরের প্রাণ রক্ষা করে তখন তাদের মধ্যে একটা আত্মিক বন্ধন তৈরি হয় এবং ভন্ডেমর্ট যদি হ্যারি পটার-এর কাছে ঋণী একজন সহকারীকে ফিরে পেতে চায় তাহলে আমার ধারণাটাই ভুল হবে।
পেট্টিগ্রুর সাথে আমার কোন বন্ধন থাকুক সেটা আমি চাই না! বলল হ্যারি। সে আমার বাবা-মার সঙ্গে বেঈমানি করেছে!
এটাই হচ্ছে একেবারে গভীরে গিয়ে সর্বোচ্চ ম্যাজিক, যাকে ভেদ করা সবচেয়ে কঠিন। হ্যারি, আমাকে বিশ্বাস করো আবার এমন একটা সময় আসতে পারে যখন তুমি খুশিই হবে পেট্টিগ্রুর জীবন বাঁচিয়েছিলে বলে।
সেই সময় কখন আসবে হ্যারি ভাবতে পারছে না। ডাম্বলডোরকে মনে হলো হ্যারির ভাবনাটা ধরে ফেলেছেন।
আমি তোমার বাবাকে খুবই ভালো করে জানতাম, হোগার্টস-এ এবং তারপরও, আলতো করে বললেন তিনি। সে নিজে থাকলেও পেট্টিগ্রুকে বাঁচাত, আমি একেবারে নিশ্চিত।
ওর দিকে মুখ তুলে তাকাল হ্যারি। ডাম্বলডোর হাসবেন না–বলতে পারে ডাম্বলডোর…।
গত রাতে আমার মনে হয় আমার বাবাই আমার জন্যে একটা পেট্রোনাস তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমি বলতে চাচ্ছি, লেকের ওপর পাড়ে আমি যখন আমাকে দেখলাম আমি ভেবেছিলাম আমি তাকে দেখছি।
সহজ ভুল একটা, বললেন ডাম্বলডোর। আমার মনে হয় কথাটা তুমি বহুবার শুনেছো, এবং শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তোমাকে অসাধারণভাবে জেমস-এর মতোই মনে হয়। শুধু চোখ দুটো ছাড়া মায়ের চোখ পেয়েছো তুমি।
মাথা ঝাঁকাল হ্যারি।
ও আমার বাবা ছিল সেটা ভাবাই ছিল বোকামি, বিড় বিড় করে বলল হ্যারি। মানে, আমি জানি যে বাবা মারা গেছেন।
তুমি কী মনে করো আমরা যাদেরকে ভালোবাসি কিন্তু যারা মৃত তারা সত্যি সত্যিই কখনও আমাদেরকে ছেড়ে যান? তুমি কী মনে করো না আমাদের বড় ধরনের বিপদের সময় আমরা তাদেরকে ডেকে আর্নি? তোমার বাবা তোমার মধ্যেই বেঁচে রয়েছেন হ্যারি, এবং যখন তাকে তোমার খুব দরকার হবে তখনই তুমি তার দেখা পাবে। না হলে আর কীভাবে তুমি ওই বিশেষ পেট্রোনাসটা তৈরি করতে পারলে? গত রাতে আবার এসেছিল প্রংস।
ডাম্বলডোর-এর কথা বুঝতে এক মুহূর্ত সময় লাগল হ্যারির।
সাইরিয়াস আমাকে বলেছিল কিভাবে ওরা সকলে অ্যানিম্যাগি হয়েছিল, বললেন ডাম্বলডোর। একটি অসাধারণ অর্জন-একটুও কম নয়, এমনকি আমার কাছ থেকেও সেটা গোপন রাখা। তারপর আমার মনে পড়ল র্যাভেনক্ল–দের বিরুদ্ধে তোমাদের ম্যাচে মিস্টার ম্যালফয়কে তাড়া করতে গিয়ে তোমার পেট্রোনাসটা যে অস্বাভাবিক আকৃতি ধরেছিল তার কথা। তাহলে, তোমার বাবাকেই তুমি গত রাতে দেখেছিলে হ্যারি তুমি তাকে তোমার নিজের ভেতরে দেখতে পেয়েছে।
অফিস ছেড়ে চলে গেলেন ডাম্বলডোর, হ্যারিকে ছেড়ে গেলেন বিভ্রান্ত চিন্তার মধ্যে।
***
প্রফেসর ডাম্বলডোর, হ্যারি, রন, এবং হারমিওন ছাড়া ওই রাতে কি ঘটেছিল, যে রাতে সাইরিয়াস, বাকবিক এবং পেটিঞ অদৃশ্য হয়ে গেল, এ ব্যাপারে হোগার্টস এ আর কেউই সত্যটা জানে না। স্কুলের টার্ম শেষ হতে হতে, এ ব্যাপারে অনেক থিওরি শুনল হ্যারি, কিন্তু কোনটাই সত্যের কাছাকাছি আসতে পারেনি।
বাকবিক-এর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত হলো ম্যালফয়। ও বিশ্বাস করে যে হ্যারিই ওটাকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে দিয়েছে। ও আরো ক্ষেপেছে, তার বাবাকে এবং তাকে সামান্য একটা বন্য পশু রক্ষক শিক্ষক বুদ্ধির খেলায় হারিয়ে দিতে পারল বলে। ইতোমধ্যে পার্সি উইজলির, অনেক কিছুই বলার তৈরি হয়ে গেল সাইরিয়াস-এর পালানোর ব্যাপারে।
আমি যদি কখনও ম্যাজিক মিনিস্ট্রিতে চাকরি নিয়ে ঢুকতে পারি তাহলে আইন প্রয়োগের ব্যাপারে আমার অনেকগুলো প্রস্তাব রয়েছে। বলল সে তার একমাত্র শ্রোতা–গার্লফ্রেড পেনিলোপিকে।
আবাহওয়া চমৎকার, চারিদিকে যেন আনন্দ ভেসে বেড়াচ্ছে, যদিও সে জানে সাইরিয়াস-এর মুক্তির ব্যাপারে সে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে, তবুও স্কুলের শেষ দিনগুলোতে হ্যারি কখনই এত হতাশা অনুভব করেনি।
প্রফেসর লুপিন-এর চলে যাওয়াতে একমাত্র তারই মন খারাপ হয়নি। তার পদত্যাগের ব্যাপারে হ্যারিদের পুরো ক্লাসটাই মনমরা হয়ে গেছে।
ভাবছি আগামী বছর আমাদের ঘাড়ে আবার কাকে চাপিয়ে দেয়া হবে? ভারমুখে বলল সিমাস ফিনিগান।
হয়তো একটা রক্তচোষা, বলল ডিন থমাস।
শুধু যে প্রফেসর লুপিন-এর বিদায়েই হ্যারির মন খারাপ হয়েছে তাই নয়, প্রফেসর ট্রিলনির ভবিষ্যদ্বাণী নিয়েও তার মনে তোলপাড় চলছে। সে ভাবছে এখন পেট্টিগ্রু কোথায়, সে কি ভল্টেমর্টের কাছে শরণ চেয়েছে। কিন্তু যে ব্যাপারটায় হ্যারির মন সবচেয়ে বেশি খারাপ, সেটি হচ্ছে আবার ডার্সলিদের কাছে ফিরে যেতে হচ্ছে তাকে। মাত্র আধ ঘণ্টার জন্যে, গৌরবময় আধঘণ্টার জন্যে, সে বিশ্বাস করেছিল যে সে এখন থেকে সাইরিয়াস-এর সঙ্গেই থাকছে সাইরিয়াস, তার বাবা মায়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু তার বাবাকে ফিরে না পেলেও ওটাই ছিল সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা, এবং কোন খবর নেই মানেই, সাইরিয়াস-এর ব্যাপারে ভালো খবর, তার মানে হচ্ছে সে সাফল্যের সঙ্গে লুকিয়ে রয়েছে। নিজের জন্যে যে বাসাটা হ্যারি পেতে পারত, সেটা না পাওয়ায় একেবারেই ভেঙে পড়েছে সে, এবং এখন মনে হচ্ছে সেটা আদৌ সম্ভবই নয়।
শেষ দিন পরীক্ষার ফলাফল জানা গেল। হ্যারি রন এবং হারমিওন সব বিষয়েই উত্তীর্ণ হয়েছে। হ্যারি খুবই অবাক হলো যে সে পোশন ক্লাসেও পাস করেছে। তার সন্দেহ হচ্ছে স্নেইপ হ্যারিকে ফেল করাতে চাইলেও ডাম্বলডোর এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছেন। হ্যারির প্রতি স্নেইপ-এর ব্যবহার গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিপদজনক পর্যায়ে চলে গেছে। হ্যারি কখনও ভাবেনি যে তার প্রতি স্নেইপ এর বিতৃষ্ণা কখনও বিপদজনক পর্যায়ে বাড়তে পারে কিন্তু ঠিক সেটাই ঘটেছে। যতবার স্নেইপ হ্যারির দিকে তাকিয়েছেন ততবারই তার মুখের কোণটা বিকৃত হয়ে গেছে, সবসময় হাতের আঙুল খুলছেন মুঠো করছেন, যেন হ্যারির গলা চেপে ধরার জন্য ছটফট করছেন।
কুইডিচ ম্যাচে অসাধারণ খেলার সুবাদে গ্রিফিন্ডর হাউজ পরপর তিন বছরের জন্য হাউজ চ্যাম্পিয়নশিপ পেল। টার্ম শেষের উৎসব অনুষ্ঠিত হলো রক্তলাল এবং সোনালী ডেকোরেশনের মধ্যে, এবং গ্রিফিন্ডরদের টেবিলটা ছিল সবচেয়ে বেশি হৈচৈপূর্ণ। এমনকি পরদিন যে ডার্সলিদের কাছে যেতে হবে হ্যারি সেটাও ভুলে গেল, অন্য সবার সঙ্গে হাসল, পান করল এবং কথা বলল প্রাণখুলে।
***
পরদিন সকালে হোগার্টস এক্সপ্রেস স্টেশনে থামতেই হ্যারি আর রনকে হারমিওন কয়েকটি বিস্ময়কর খবর দিল।
আজ সকালে নাস্তা করার আগে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল-এর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমি ম্যাগল স্টাডিজ বিষয়টা বাদ দিয়ে দেব।
কিন্তু এই পরীক্ষাটা তুমি তিনশ কুড়ি পার্সেন্ট পেয়ে পাস করেছো! বলল রন।
আমি জানি, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল হারমিওন, কিন্তু এই বছরের মতো আরেকটি বছর আমি পার করতে পারব না। ওই টাইম–টার্নার ঘড়িটা আমাকে পাগল করে ফেলবে। আমি ওটা ফিরিয়ে দিয়েছি। মাগল স্টাডিজ এবং ডিভাইনেশন ছাড়া আমার রুটিন আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আমি এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না যে, তুমি এ বিষয়ে আমাদেরকে বলনি, গাল ফুলিয়ে বলল রন। আমরা বোধহয় তোমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে কাউকে বলব না, সিরিয়াসলি বলল হারমিওন। হ্যারির দিকে তাকাল সে, ও দেখছে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে হোগার্টস। আবার দুই মাস পর ওকে দেখতে পাব।
ওহ, মন খারাপ হয়েছে, হ্যারি! নিজেই মন খারাপ করে বলল হারমিওন।
আমি ঠিক আছি, দ্রুত বলল হ্যারি। শুধু ভাবছিলাম ছুটির দিনগুলোর কথা।
হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছিলাম, বলল রন। হ্যারি, তোমাকে আমাদের সঙ্গে এসে থাকতে হবে। মা-বাবাকে রাজি করিয়ে আমি তোমাকে খবর দেব। আমি এখন জানি কিভাবে টেলিফোন ব্যবহার করতে হয়
টেলিফোন, রন, টেলিফোন, বলল হারমিওন। সত্যিই বলছি আগামী বছর তোমার মাগল স্টাডিজ নেয়া উচিত
ওর কথার জবাব দিল না রন।
এই গ্রীষ্মে কুইডিচ ওয়ার্ল্ডকাপ হবে! কি বলল, হ্যারি? আমাদের সঙ্গে এসে থাকবে এবং আমরা সবাই মিলে দেখতে যাব! বাবা নিশ্চয়ই অফিস থেকে টিকিট যোগাড় করতে পারবেন।
এই প্রস্তাবে হ্যারি অনেকটাই উফুল্ল হয়ে উঠল।
হ্যা আমি বাজি ধরে বলতে পারি আমাকে আসতে দিতে ডার্সলিরা খুবই খুশি হবে… বিশেষ করে আন্ট মার্গারেটকে আমি যা করেছি তারপর
এবার উৎফুল্ল হ্যারি রন এবং হারমিওন-এর সঙ্গে খেলায় মেতে উঠল, চা নিয়ে ডাইনিটা যখন এল, হ্যারি নিজের জন্যে বড়সড় একটা লাঞ্চ প্যাকেট নিল।
কিন্তু খুশি হওয়ার আসল ঘটনাটা ঘটল বিকেলে
হ্যারি, হঠাৎ কাঁধের উপর দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল হারমিওন। তোমার জানলার বাইরে কি ওটা?
ঘুরে বাইরে তাকাল হ্যারি। কাঁচের বাইরে ছোট্ট এবং ধূসর একটা কিছু একবার দৃষ্টিতে আসছে আবার পেছনে চলে যাচ্ছে। ভালো করে দেখার জন্য উঠে দাঁড়াল সে, ছোট্ট একটা পেঁচা, ঠোঁটে তার চেয়েও অনেক বড় একটা চিঠি ধরে আছে। পেঁচাটা এতই ছোট যে ওটা বাতাসের ঝাপটায় উল্টেপাল্টে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি জানালাটা খুলে হাত বাড়িয়ে পেঁচাটাকে ধরে ফেলল হ্যারি। যেন একটা নরম সরম লোমওয়ালা স্নিচ। সাবধানে ভেতরে নিয়ে এল ওটাকে। হ্যারির কোলে চিঠিটা ফেলে দিয়ে কামরা জুড়ে উড়ে বেড়াতে লাগল পেঁচাটা, যেন দায়িত্ব শেষ করে দারুণ খুশি। ব্যাপারটা পছন্দ হলো না হেডউইগ-এর, ঠোঁট দিয়ে শব্দ করল একটা। কশ্যাংকস উঠে বসল তার আসনে বড়বড় হলুদ চোখ দিয়ে ছোট্ট পেঁচাটাকে অনুসরণ করছে। এটা খেয়াল করে রন তাড়াতাড়ি পেঁচাটাকে ধরে আড়াল করে ফেলল।
চিঠিটা তুলে নিল হ্যারি। ওকেই লেখা চিঠি। খুলেই চেঁচিয়ে উঠল, সাইরিয়াস-এর চিঠি!
কী? রন আর হারমিওন উত্তেজিত। জোরে জোরে পড়!
প্রিয় হ্যারি,
আশা করি তোমার আঙ্কল এবং আন্টির কাছে পৌঁছনোর আগেই এ চিঠিটা পেয়ে যাবে। আমি জানি না পেঁচার ডাকব্যবস্থা সম্পর্কে তারা অভ্যস্ত
কি না।
আমি আর বাকবিক লুকিয়ে রয়েছি। আমি তোমাকে বলব না কোথায়,
যদি চিঠিটা ভুল হাতে পড়ে যায় এই ভয়ে। পেঁচাটার বিশ্বস্ততা সম্পর্কে আমার কিছু সন্দেহ রয়েছে, অবশ্য আমি যা পেয়েছি এটাই সবচেয়ে
ভালো, এবং মনে হয় কাজটার
জন্যে সে খুব আগ্রহী।
আমার বিশ্বাস ডিমেন্টাররা এখনও আমাকে খুঁজছে। কিন্তু এখানে আমাকে পাওয়ার আশা নেই। আমি ভাবছি হোগার্টস থেকে এখানে অনেক দূরে, আমাকে যেন মাগলরা একটু দেখতে
পায় সেরকমভাবে দেখা দেব,
যেন প্রাসাদ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা তুলে নেয়া হয়।
একটা বিষয় তোমাকে বলার সুযোগ
পায়নি। আমিই তোমাকে ফায়ারবোল্টটা
পাঠিয়েছিলাম
হা! বিজয়নীর স্বরে বলল হারমিওন। দেখেছো! আমি বলেছিলাম না ওই ওটা পাঠিয়েছে!
হ্যাঁ, কিন্তু ও ওটার মধ্যে জাদুটোনা করেছিল, তাই না? বলল রন। আউচ!
ওর হাতে তখন ক্ষুদে পেঁচাটা মনের আনন্দে, একটা আঙুলে আদর করতে গিয়ে ঠোকর মেরে দিল।
আমার জন্যে পেঁচার ডাকঘরে অর্ডার
নিয়ে গিয়েছিল ক্রুকশ্যাংকস।
আমি তোমার নাম ব্যবহার করেছি কিন্তু ওদেরকে বলেছি গ্রিংগটস-এর সাতশ এগারো নম্বর ভল্ট থেকে স্বর্ণমুদ্রা
নেয়ার জন্যে-একাউন্টটা
আমার নামে। এটাকে তোমার তেরতম জন্মদিনের উপহার হিসেবে গ্রহণ করবে, তোমার গডফাদারের কাছ থেকে।
গত বছর যখন তুমি তোমার আঙ্কল-এর বাড়ি
ছেড়ে আসছিলে তখন রাতের বেলায় তোমাকে ভয় দেখানোর জন্যে ক্ষমা চাইছি। আমি শুধু যাত্রার আগে তোমাকে একনজর দেখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মনে হয় আমাকে দেখে তুমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলে।
চিঠিতে আমি আরও কিছু জিনিস পাঠাচ্ছি, আমার মনে হয় আগামী বছর হোগার্টস-এ তোমার খুব ভালো সময়
কাটবে।
যদি কখনও আমার দরকার হয়, খবর পাঠিও। তোমার পেঁচা আমাকে খুঁজে পাবে।
আবার তোমাকে লিখব।
সাইরিয়াস।
খামের ভেতরে গভীর আগ্রহের সঙ্গে দেখল হ্যারি। ভেতরে আরেকটা পার্চমেন্টের টুকরো রয়েছে। দ্রুত ওটা পড়ে হ্যারির গা এত গরম হয়ে গেল যেন মনে হলো এক চুমুকে সে গরম একটা বাটার বিয়ার-এর বোতল শেষ করে ফেলেছে।
আমি, সাইরিয়াস ব্ল্যাক, হ্যারি পিটার-এর গডফাদার, তাকে প্রতি সপ্তাহান্তে হগসমিড-এ যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি।
ডাম্বলডোর-এর জন্যে এটাই যথেষ্ট হবে! আনন্দের চোটে বলল হ্যারি। আবার সাইরিয়াস-এর চিঠিটা মেলে ধরল।
দাঁড়াও, পুনশ্চ রয়েছে একটা
আমার মনে হয় তোমার বন্ধু রন এই পেঁচাটা পেয়ে খুশিই হবে, কারণ তার যে এখন আর ইঁদুরটা নেই সেটা আমারই দোষ।
চোখ বড় বড় হয়ে গেল রন-এর। ক্ষুদে পেঁচাটা যেন আনন্দের চোটে ডেকে চলেছে।
ওকে রাখব? অনিশ্চিতভাবে বলল সে। এক মুহূর্তের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে দেখল পেঁচাটাকে, তারপরে হ্যারি এবং হারমিওন-এর অবাক দৃষ্টির সামনে ও সেটাকে কুকশ্যাংকস-এর দিকে বাড়িয়ে ধরল।
তোমার কি মনে হয়? বিড়ালটাকে জিজ্ঞাসা করল রন। এটা নিশ্চিতভাবেই একটা পেঁচা?
গলা দিয়ে গরর আওয়াজ করল ক্রুকশ্যাংকস।
আমার জন্য ওটুকুই যথেষ্ট, খুশি হয়ে বলল রন। এখন থেকে এটা আমার।
কিংক্রস স্টেশনে আসতে আসতে পুরো পথটা সাইরিয়াস-এর চিঠিটা বারবার পড়ল হ্যারি। প্ল্যাটফর্ম নং নয়–তিন–চতুর্থাংশ-এর বাধাটা পেরিয়ে স্টেশনে যখন ঢুকছে তখনও ওর হাতে ধরা ছিল চিঠিটা। আঙ্কল ভার্ননকে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দেখতে পেল হ্যারি। মিস্টার এবং মিসেস উইজলির কাছ থেকে বেশ দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি, সন্দেহের চোখে দেখছেন ওদের, এবং যখন মিসেস উইজলি ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করল তখন, তার সন্দেহটা নিশ্চিত হলো।
বিশ্বকাপের ব্যাপারে আমি তোমাকে ফোন করব! রন চিৎকার করে উঠল হ্যারির উদ্দেশ্যে, ওকে আর হারমিওনকে বিদায় জানিয়ে ট্রাঙ্কসহ ট্রলিটা নিয়ে অগ্রসর হলো হ্যারি। আঙ্কল ভার্নন তার রীতি মতোই স্বাগত জানাল তাকে।
ওটা কী? দাঁতমুখ বের করে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি হ্যারির হাতে ধরা ইনভেলপটার দিকে তাকিয়ে। ওটা যদি আমার স্বাক্ষরের জন্য আরেকটা ফরম হয়, তাহলে তোমাকে আরেকটি
না, ওটা সেরকম কিছু না, আনন্দের সঙ্গে বলল হ্যারি। এটা আমার গডফাদারের চিঠি।
গডফাদার? আঙ্কল ভার্নন যেন খেঁকিয়ে উঠলেন। তোমার কোন গডফাদার নেই!
হ্যাঁ, আছে, উজ্জ্বলভাবে বলল হ্যারি। সে আমার বাবা-মার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। দণ্ডিত খুনি, কিন্তু জেল ভেঙে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ও চায় আমি যেন ওর সঙ্গে যোগাযোগ রাখি আমার সব খবরই রাখে সে আমি ভালো আছি কি না সবসময় খেয়াল রাখে
আঙ্কল ভার্ননের চোখেমুখে ফুটে উঠল ভয়ঙ্কর ভীতি। দেখে প্রাণ ভরে গেল হ্যারির। দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে স্টেশন থেকে বের হবার পথে এগিয়ে গেল। সামনে শব্দ করতে করতে যাচ্ছে হেডউইগ। ওর মনে হচ্ছে যা ভেবেছিল গ্রীষ্মটা তার চেয়ে অনেক ভালো কাটবে।
.
গ্রীষ্মের ছুটির পর স্কুলে ফিরে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছে হ্যারি। (ভয়ংকর সেই ডার্সলিদের সঙ্গে যাকে থাকতে হয় সে অধীর হবেই বা না কেন?) ঘনিষ্ঠ বন্ধু রণ এবং হারমিওনকে নিয়ে হোগার্টস-এ তৃতীয় বছর শুরু করতে যাচ্ছে হ্যারি পটার। কিন্তু ও যখন পৌঁছাল হোগার্টস-এ তখন সেখানে টান টান উত্তেজনা। একাধিক মানুষকে হত্যা করে পলাতক এক খুনী তখন ঘুরে বেড়াচ্ছে মুক্তভাবে, আজকাবানের ভয়ানক অশুভ সব কারারক্ষীদের ডাকা হয়েছে স্কুল পাহারা দেয়ার জন্যে …