২১. হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা

হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)এর ঘটনা

ইবরাহীম (আ)-এর নিসাবনামা নিম্নরূপ : ইবরাহীম ইব্‌ন তারাখি (২৫০) ইব্‌ন লাহুর (১৪৮) ইব্‌ন সারূগী (২৩০) ইব্‌ন রাউ (২৩৯) ইব্‌ন ফালিগ (৪৩৯) ইব্‌ন আবির (৪৬৪), ইব্‌ন শালিহা (৪৩৩) ইব্‌ন আরফাখশাদ (৪৩৮) ইব্‌ন সাম (৬০০) ইব্‌ন নূহ (আ)। আহলে কিতাবদের গ্রন্থে এভাবেই হযরত ইবরাহীম (আ)-এর নিসাবনামার উল্লেখ করা হয়েছে। উপরে বন্ধনীর মধ্যে বয়স দেখান হয়েছে। হযরত নূহ (আ.)-এর বয়স ইতিপূর্বে তার আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, তাই এখানে পুনরুল্লেখের প্রয়োজন নেই। হাফিজ ইব্‌ন আসাকির (র) তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে ইসহাক ইব্‌ন বিশ্বর কাহিলীর ‘আল মাবদা’ গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, ইবরাহীম (আ)-এর মায়ের নাম ছিল উমায়লা। এরপর তিনি ইবরাহীম (আ)-এর জন্মের এক দীর্ঘ কাহিনীও লিখেছেন। ফালবী লিখেছেন যে, ইবরাহীম (আ)-এর মায়ের নাম বুনা বিনত কারবানা ইব্‌ন কুরহী। ইনি ছিলেন। আরফাখশাদ ইব্‌ন সাম ইব্‌ন নূহের বংশধর।

ইব্‌ন আসাকির ইকরামা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইবরাহীম (আ)-এর কুনিয়াত বা উপনাম ছিল আবুষ যায়ফান (৩La – J৷ ৩)। বৰ্ণনাকারিগণ বলেছেন, তারাখের বয়স যখন পঁচাত্তর বছর তখন তার ঔরসে ইবরাহীম, নাহুর ও হারান-এর জন্ম হয়। হারানের পুত্রের নাম ছিল লুত (আ)। বৰ্ণনাকারীদের মতে, ইবরাহীম ছিলেন তিন পুত্রের মধ্যে মধ্যম। হারান পিতার জীবদ্দশায় নিজ জন্মস্থান কালদান অর্থাৎ বাবেলে (ব্যাবিলনে) মৃত্যুবরণ করেন। ঐতিহাসিক ও জীবনীকারদের নিকট এই মতই প্ৰসিদ্ধ ও যথার্থ। ইব্‌ন আসাকির ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইবরাহীম (আ) গুস্তায়ে দামেশকের* বুরযা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যা কাসিয়ুন পর্বতের সন্নিকটে অবস্থিত। অতঃপর ইব্‌ন আসাকির বলেন, সঠিক মত এই যে, তিনি বাবেলে জন্মগ্রহণ করেন। তবে গুতায়ে দামেশকে জন্ম হওয়ার কথা এ কারণে বলা হয় যে, হযরত লুত (আ)-কে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে যখন তিনি এখানে আগমন করেছিলেন, তখন তিনি সেখানে সালাত আদায় করেছিলেন। ইবরাহীম (আ) বিবি সারাহকে এবং নাহ্র আপন ভাই হারানের কন্যা মালিকাকে বিবাহ করেন। সারাহ ছিলেন বন্ধ্যা। তার কোন সন্তান হত না। ইতিহাসবেত্তাদের মতে, তারাখি নিজ পুত্র ইবরাহীম, ইবরাহীমের স্ত্রী সারাহ ও হারানের পুত্ৰ লুতকে নিয়ে কালদানীদের এলাকা থেকে কানআনীদের এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। হারান নামক স্থানে তারা অবতরণ করেন। এখানেই তারাখের মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল দুশ পঞ্চাশ বছর। এই বর্ণনা থেকে প্রমাণ মেলে যে, ইবরাহীম (আ)-এর জন্ম হারানে হয়নি; বরং কাশদানী জাতির ভূখণ্ডই তার জন্মস্থান। এ স্থানটি হল বাবেল ও তার পার্শ্ববতী এলাকা। এরপর তারা সেখান থেকে কানআনীদের আবাসভূমির

১. সিরিয়ার একটি এলাকার নাম – যেখানে প্রচুর পানি ও বৃক্ষ বিদ্যমান।  (১ম খণ্ড) ৪১

DN

উদ্দেশে যাত্রা করেন। এটা হলো বায়তুল মুকাদাসের এলাকা। তারপর তার হারানে বসবাস আরম্ভ করেন। হারান হলো সেকালের কাশদানী জাতির আবাসভূমি। জাসীরা এবং শামও-এর অন্তর্ভুক্ত। এখানকার অধিবাসীরা সাতটি নক্ষত্রের পূজা করত। সেই জাতির লোকেরা দামেশক শহর নির্মাণ করেছিল। তারা এই দীনের অনুসারী ছিল। তারা উত্তর মেরুর দিকে মুখ করে বিভিন্ন ধরনের ক্রিয়াকলাপ বা মন্ত্রের দ্বারা সাতটি তারকার পূজা করত। এই কারণেই প্রাচীন দামেশকের সাতটি প্রবেশ দ্বারের প্রতিটিতে উক্ত সাত তারকার এক একটি তারকার বিশাল মূর্তি স্থাপিত ছিল। এদের নামে তারা বিভিন্ন পর্ব ও উৎসব পালন করত। হারানের অধিবাসীরাও নক্ষত্র ও মূর্তি পূজা করত। মোটকথা, সে সময় ভূ-পৃষ্ঠের উপর যত লোক ছিল তাদের মধ্য থেকে শুধু ইবরাহীম খলীল (আ), তার স্ত্রী (সারা) ও ভাতিজা লুত (আ) ব্যতীত সবাই ছিল কাফির। আল্লাহ তা’আলা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দ্বারা সেসব দুস্কৃতি ও ভ্রান্তি বিদূরিত করেন। কেননা, আল্লাহ তাকে বাল্যকালেই সঠিক পথের সন্ধান দেন। রাসূল হওয়ার গৌরব দান করেন এবং বৃদ্ধ বয়সে খলীল বা বন্ধুরূপে গ্ৰহণ করেন।

/ a ., 7 22/%A4 A r/2 */A.,/* 、〈’z */イベ و لقد اتینا را براهیم رشدهٔ ون قبل وکتار به غالمین. :।(۹||Slal۹۹۹ আমি তাে ইতিপূর্বে ইবরাহীমকে সৎপথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে ছিলাম সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা আম্বিয়া : ৫১) অর্থাৎ তিনি এর যোগ্য ছিলেন।

আল্লাহ্ বাণীঃ ۶

স্মরণ কর ইবরাহীমের কথা, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাকে ভয় কর; তোমাদের জন্যে এটাই শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে। তোমরা তো আল্লাহ ব্যতীত কেবল মূর্তি পূজা করছি এবং মিথ্যা উদ্ভাবন করছ; তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা করা তারা তোমাদের জীবনোপকরণের মালিক নয়। সুতরাং তোমরা জীবনোপকরণ কামনা কর আল্লাহর নিকট এবং তাঁরই ইবাদত কর ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করা। তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমরা যদি আমাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন কর। তবে জেনে রেখ, তোমাদের পূর্ববর্তগণও নবীগণকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করেছিল। বস্তৃত সুস্পষ্টভাবে প্রচার করে দেয়া ব্যতীত রাসূলের আর কোন দায়িত্ব নেই। ওরা কি লক্ষ্য করে না, কিভাবে আল্লাহ সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, তারপর তা পুনরায় সৃষ্টি করেন? এটা তো আল্লাহর জন্যে সহজ।

বল, পৃথিবীতে ভ্ৰমণ কর এবং অনুধাবন কর, কিভাবে তিনি সৃষ্টি আরম্ভ করেছেন? তারপর আল্লাহ সৃষ্টি করবেন। পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ তো সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। তিনি যাকে ইচ্ছা! শান্তি দেন এবং যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। তোমরা তারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। তোমরা আল্লাহকে ব্যৰ্থ করতে পারবে না পৃথিবীতে অথবা আকাশে এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই। যারা আল্লাহর নিদর্শন ও তার সাক্ষাৎ অস্বীকার করে, তারাই আমার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়, তাদের জন্যে রয়েছে মর্মতুদি শান্তি।

উত্তরে ইবরাহীমের সম্প্রদায় শুধু এই বলল, ‘তাকে হত্যা কর অথবা আগুনে পুড়িয়ে দাও।’ কিন্তু আল্লাহ তাকে অগ্নি থেকে রক্ষা করলেন। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য। ইবরাহীম বলল, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে মূর্তিগুলোকে উপাস্যরূপে গ্ৰহণ করছ; পার্থিব জীবনে তোমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের খাতিরে। পরে কিয়ামতের দিন তোমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পরকে অভিসম্পাত দিবে। তোমাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। লুত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। ইবরাহীম বলল, ‘আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করছি। তিনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আমি ইবরাহীমকে দান করলাম। ইসহাক ও ইয়াকুব এবং তার বংশধরদের জন্যে স্থির করলাম নবুওত ও কিতাব এবং আমি তাকে দুনিয়ায় পুরস্কৃত করেছিলাম; আখিরাতেও সে নিশ্চয় সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম হবে। (সূরা আনকাবুত : ১৬-২৭)

তারপর আল্লাহ ইবরাহীম (আ)-এর সাথে তাঁর পিতার এবং সম্প্রদায়ের লােকদের বিতর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। পরে আমরা ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। হযরত ইবরাহীম (আ) সর্বপ্রথম আপন পিতাকে ঈমানের দাওয়াত দেন। তার পিতা ছিল মূর্তিপূজারী। কাজেই কল্যাণের দিকে আহবান পাওয়ার অধিকার তারই সবচাইতে বেশি। আল্লাহ বলেন :

স্মরণ কর, এই কিতাবে উল্লিখিত ইবরাহীমের কথা; সে ছিল সত্যনিষ্ঠ নবী। যখন সে তার পিতাকে বলল, ‘হে পিতা! তুমি কেন তার ইবাদত করা যে শুনে না, দেখে না এবং তোমার কোন কাজেই আসে না? হে আমার পিতা! আমার নিকট তো এসেছে জ্ঞান, যা তোমার নিকট আসেনি; সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তোমাকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদত কর না। শয়তান তো দয়াময়ের অবাধ্য। হে আমার পিতা! আমি আশংকা করছি, তোমাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে এবং তুমি শয়তানের বন্ধু হয়ে পড়বে।’

পিতা বলল, ‘হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার দেব-দেবী হতে বিমুখ? যদি তুমি নিবৃত্ত না হও তবে আমি পাথরের আঘাতে তোমার প্রাণনাশ করবই। তুমি চিরদিনের জন্যে আমার নিকট হতে দূর হয়ে যাও!’ ইবরাহীম বলল, ‘তোমার প্রতি সালাম। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থীনা করব, তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল। আমি তোমাদের হতে ও তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত কর তাদের হতে পৃথক হচ্ছি। আমি আমার প্রতিপালককে আহবান করি, আশা করি আমার প্রতিপালককে আহবান করে আমি ব্যৰ্থকাম হব না। (সূরা মািরয়াম : ৪১-৪৮)

এখানে আল্লাহ ইবরাহীম (আ) ও তাঁর পিতার মধ্যে যে কথোপকথন ও বিতর্ক হয়েছিল তা উল্লেখ করেছেন। সত্যের দিকে পিতাকে যে কোমল ভাষায় ও উত্তম ভংগিতে আহবান করেছেন তা এখানে সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে। তিনি পিতার মূর্তি পূজার অসারতা তুলে ধরেছেন এভাবে যে, এগুলো তাদের উপাসনাকারীদের ডাক শুনতে পায় না, তাদের অবস্থানও দেখতে পায় না; তা হলে কিভাবে এরা উপাসকদের উপকার করবে? কিভাবে তাদের খাদ্য ও সাহায্য দান করে তাদের কল্যাণ করবে? তারপর আল্লাহ তাকে যে হিদায়াত ও উপকারী জ্ঞান দান করছেন তার ভিত্তিতে পিতাকে সতর্ক করে দেন, যদিও বয়সে তিনি পিতার চেয়ে ছোট।

হে আমার পিতা! আমার কাছে জ্ঞান এসেছে যা তোমার নিকট আসেনি; সুতরাং আমার অনুসরণ কর, আমি তােমাকে সঠিক পথ দেখাব। অর্থাৎ এমন পথ যা অতি সুদৃঢ়, সহজ ও সরল। যে পথ অবলম্বন করলে দুনিয়া ও আখিরাতে তোমাকে কল্যাণের পথে নিয়ে যাবে। ইবরাহীম (আঃ) যখন পিতার নিকট এই সত্য পথ ও উপদেশ পেশ করলেন, তখন পিতা তা গ্রহণ করল না, বরং উল্টো তাঁকে ধমকালু ও ভয় দেখাল। সে বললঃ

M 1 м у كَ عَنْ الهتى ياً ابرهيم لأن تم تشكه لأزجمتك . ‘(হে ইবরাহীম! তুমি কি আমার দেব-দেবী থেকে বিমুখী? যদি তুমি নিবৃত্ত না হও, তবে আমি পাথরের আঘাতে তোমার প্রাণ নাশ করবোই।’ কেউ কেউ বলেন, মৌখিকভাবে আবার কেউ কেউ বলেন, বাস্তবেই পাথর মারব। 64 52%, A1% (চিরতরের জন্যে দূর হয়ে যাও) অর্থাৎ আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দীর্ঘকালের জন্যে চলে যাও। ইবরাহীম (আঃ) তখন বলেছিলেন : ……?8_%- (তােমার প্রতি সালাম) অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে কােন রকম কষ্টদায়ক ব্যবহার তুমি পাবে না; আমার তৃবৃন্তু থেকে তুমি সম্পূর্ণ নিরাপদ। ইবরাহীম অতিরিক্ত আরও বললেন, .سکآشکاغفر لله زبان را ته گان پی کفی )SIRSTRI۱۹ প্রতিপালকের নিকট তােমার জন্য ক্ষমা প্রার্থীনা করব। তিনি আমার প্রতি অতিশয় অনুগ্রহশীল)। ইব্‌ন আব্বাস (রা) প্রমুখ বলেছেন ‘6, 4 অর্থ {… অর্থাৎ দয়ালু। কেননা তিনি আমাকে সত্য পথের সন্ধান দিয়েছেন। একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করার তওফীকু দিয়েছেন। একারণেই

তিনি, ‘

(আমি তােমাদেরকে পরিত্যাগ করছি এবং আল্লাহ ব্যতীত যাদের

তােমরা পূর্জা করছি তাদেরও পরিত্যাগ করছি। আমি কেবল আমার পালনকর্তকেই আহবান করি। আশা করি, আমার প্রতিপালককে আহবান করে আমি ব্যর্থকাম হব না। এই ওয়াদা অনুযায়ী ইবরাহীম পিতার জন্যে সর্বদা ক্ষমা প্রার্থীনা করতে থাকেন। পরে যখন জানলেন যে, তাঁর পিতা আল্লাহর দুশমন; তখন তিনি তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন। যেমন আল্লাহ

ইবরাহীম তার পিতার জন্যে ক্ষমা প্রার্থীনা করেছিল, তাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলে; অতঃপর যখন এটা তার নিকট সুস্পষ্ট হল যে, সে আল্লাহর শত্ৰু, তখন ইবরাহীম তার সম্পর্ক

ছিন্ন করল। ইবরাহীম তো কোমল হৃদয় ও সহনশীল। (সূরা তাওবা : ১১৪)

ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ইবরাহীম (আ)-এর সাথে তাঁর পিতা আযরের সাক্ষাৎ হবে। আযারের চেহারা মলিন ও কালিমালিপ্ত দেখে ইবরাহীম (আ) বলবেন, আমি কি আপনাকে দুনিয়ায় বলিনি যে, আমার অবাধ্য হবেন না? পিতা বলবে, ‘আজ আর আমি তোমার অবাধ্য হব না।’ তখন ইবরাহীম (আ) বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, পুনরুত্থান দিবসে আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। কিন্তু আমার পিতা যেখানে আপনার দয়া ও

9ՀՆ

ক্ষমা থেকে দূরে থাকছে, সেখানে এর চেয়ে অধিক লাঞ্ছনা। আর কি হতে পারে? আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। তারপর বলা হবে : হে ইবরাহীম! তোমার পায়ের নিচে কি? নিচের দিকে তাকিয়ে তিনি দেখবেন, একটি জবাইকৃত পশু রক্তপুত অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর পশুটির পাগুলি ধরে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা

হবে।

ইমাম বুখারী (র) ‘কিতাবুত তাফসীরে’ ভিন্ন সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম নাসাঈও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম বাযযার (র) এটা আবু হুরায়রা (রা) ও আবু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণনা করছেন- এসব বর্ণনায় ইবরাহীম (আ)-এর পিতা আযর বলে বর্ণিত

স্মরণ কর, ইবরাহীম তার পিতা আযরাকে বলেছিল, আপনি কি মূর্তিকে হরূপে গ্ৰহণ করেন? আমি আপনাকে ও আপনার সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রাত্তিতে দেখছি। (সূরা আনআম : ৭৪)

কুরআনের উক্ত আয়াত ও বর্ণিত হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইবরাহীম (আ)-এর পিতার নাম আযরা। কিন্তু অধিকাংশ বংশবিদদের মতে- যাদের মধ্যে ইব্‌ন আব্বাস (রা)-ও আছেন, ইবরাহীম (আ)-এর পিতার নাম তারাখি। আহলি কিতাবদের মতে, তারাখা একটি মূর্তির নাম। ইবরাহীম (আ)-এর পিতা এর পূজা করত এবং এরই নামানুসারে তাকে তাঁরাখ উপাধি দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত নাম আযরা। ইব্‌ন জারীর লিখেছেন : সঠিক কথা এই যে, আযর তার প্রকৃত নাম; অথবা আযার ও তারাখা দুটোই তার আসল নাম; কিংবা যে কোন একটা উপাধি এবং অপরটা নাম। ইবনে জারীরের এ বক্তব্যটি সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত। আল্লাহর বাণী :

এভাবে ইবরাহীমকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পরিচালন ব্যবস্থা দেখাই, আর যাতে সে নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়। তারপর রাত্রির অন্ধকার যখন তাকে আচ্ছন্ন করল, তখন সে নক্ষত্র দেখে বলল, ‘এই তো আমার প্রতিপালক, এরপর যখন উহা অস্তমিত হল তখন সে বলল, যা অস্তমিত হয় তা আমি পছন্দ করি না।’ তারপর যখন সে চন্দ্রকে সমুজ্জ্বল রূপে উদিত হতে দেখল, তখন সে বলল, ‘এই তো আমার প্রতিপালক, যখন এটাও অস্তমিত হল। তখন সে বলল, ‘আমাকে আমার প্রতিপালক সৎপথ প্রদর্শন না করলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ তারপর যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমানরূপে উদিত হতে দেখল তখন সে বলল, এটাই আমার প্রতিপালক – এটিই সর্ববৃহৎ, যখন এটাও অস্তমিত হল তখন সে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যাকে আল্লাহর শরীক কর তার সাথে আমার কোন সংশ্ৰব নেই। আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি। যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ ܨ

তার সম্প্রদায় তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হল। সে বলল, তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবে? তিনি তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। আমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা না করলে তোমরা যাকে তাঁর শরীক কর তাকে আমি ভয় করি না, সব কিছুই আমার প্রতিপালকের জ্ঞানায়ত্ত। তবে কি তোমরা অবধান করবে না? তোমরা যাকে আল্লাহর শরীক কর আমি তাকে কিরূপে ভয় করব? অথচ তোমরা আল্লাহর শরীক করতে ভয় কর না, যে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে কোন সনদ দেননি; সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বল, দু’দলের মধ্যে কোন দল নিরাপত্তা লাভের অধিকারী।’ যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি, নিরাপত্তা তাদের জন্যে, তারাই সৎপথ প্রাপ্ত। এবং এই হচ্ছে আমার যুক্তি-প্রমাণ যা ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার সম্প্রদায়ের মুকাবিলায়; যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় আমি উন্নীত করি; তোমার প্রতিপালক প্রজ্ঞাময়, জ্ঞানী। (সূরা আন’আম : ৭৫-৮৩)

এখানে ইবরাহীম (আ) ও তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট বিতর্কের কথা বলা হয়েছে। তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন যে, এসব উজ্জ্বল নক্ষত্র মূলত জড় পদার্থ – যা কখনো উপাস্য হতে পারে না। আর আল্লাহর সাথে শরীক করে এগুলোর পূজাও করা যেতে পারে না। কেননা, এটা সৃষ্ট, প্রতিপালিত ও নিয়ন্ত্রিত। এরা উদিত হয় ও অস্ত যায় এবং অদৃশ্যও হয়ে যায়। পক্ষান্তরে, মহান প্রতিপালক আল্লাহ, যার থেকে কোন কিছুই অদৃশ্য হতে পারে না। কিছুই তাঁর দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে পারে না। বরং তিনি সর্বদা, সর্বত্র বিদ্যমান। তার কোন ক্ষয় ও পতন নেই। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি ব্যতীত অন্য কোন প্ৰতিপালক নেই। এভাবে ইবরাহীম (আ) সর্বপ্রথম নক্ষত্রের ইলাহ হওয়ার অযোগ্যতা বর্ণনা করেন। কারো কারো মতে, এখানে নক্ষত্র বলতে যোহরা সেতারা তথা শুক্র গ্রহকে বুঝানো হয়েছে-যা অন্য সকল নক্ষত্রের চেয়ে অধিক উজ্জ্বল হয়। এ কারণেই পরবর্তীতে তিনি আরও অগ্রসর হয়ে চন্দ্রের

উল্লেখ করেন-যা নক্ষত্রের চেয়ে অধিক উজ্জ্বল ও ঝলমলে। এর পর আরও উপরের দিকে লক্ষ্য করে সূর্যের উল্লেখ করেন, যার অবয়ব সর্ববৃহৎ এবং যার উজ্জ্বলতা ও আলোক বিকিরণ তীব্রতর। এভাবে ইবরাহীম (আ) স্পষ্টভাবে বুঝালেন যে, সূর্যও নিয়ন্ত্রিত ও অধীনস্থ – অন্যের

নির্দেশ পালনে বাধ্য। আল্লাহর বাণী :

তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন। তোমায়া সূর্যকে সিজদা করো না; চন্দ্রকেও নয়, বরং সিজদা কর সেই আল্লাহকে-যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তােমরা কেবল তার ইবাদত করা। (সূরা হা-মীম আসসাজদা : ৩৭)

এ কারণেই আল্লাহ বলেছেন ‘ … ………. … … (যখন সে সূর্যকে দীপ্তিমান অর্থাৎ উদিত হতে দেখল।)

আমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা না করলে তোমরা যাকে তার শরীক কর তাকে আমি ভয় করি না। অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্য যাদের ইবাদত তোমরা কর তাদের কোন পরোয়া আমি করি না। কেননা ওরা না পারে কোন উপকার করতে, না পারে কিছু শুনতে আর না পারে কিছু অনুধাবন করতে। বরং এরা হয় প্রতিপালিত ও নিয়ন্ত্রিত যেমন নক্ষত্র ইত্যাদি। না হয় নিজেদেরই হাতের তৈরি ও খোদাইকৃত।

নক্ষত্র সম্পর্কে ইবরাহীম (আ)-এর উপরোক্ত উপদেশ বাণী থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, এ সব কথা তিনি হারানের অধিবাসীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন। কেননা, তারা নক্ষত্রের পূজা করত। এর দ্বারা ইব্‌ন ইসহাক (র) প্রমুখ যারা মনে করেন যে, ইবরাহীম (আ) এ কথা তখন বলেছিলেন; যখন তিনি বাল্যকালে গুহা থেকে বের হয়ে আসেন। এতে তাদের অভিমত খণ্ডন হয়ে যায়। এই মত ইসরাঈলী বৰ্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে। যার কোন নির্ভরযোগ্যতা নেই। বিশেষ করে যখন তা সঠিক বর্ণনার পরিপন্থী হয়। অপরদিকে বাবেলবাসীরা ছিল মূর্তিপূজক। ইবরাহীম (আ) তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হন। মূর্তি ভাঙ্গেন, অপদস্ত করেন এবং সেগুলোর অসারতা বর্ণনা করেন।

NORGd

তুল্লাহ্ তা’আলা বলেন :

ইবরাহীম বলল, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে মূর্তিদেরকে উপাস্যরূপে গ্ৰহণ করছে, পার্থিব জীবনে তােমাদের পারস্পরিক বন্ধুত্বের খাতিরে; পরে কিয়ামতের দিন তােমরা একে অপরকে অস্বীকার করবে এবং পরস্পরকে অভিসম্পাত দিবে। তোমাদের আবাস হবে জাহান্নাম এবং তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরা আনকাবৃত : ২৫)

সূরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তা’আলা বলেন :

আমি তো এর পূর্বে ইবরাহীমকে সৎপথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে ছিলাম

সম্যক পরিজ্ঞাত। যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল, এই মূর্তিগুলো কী, যাদের পূজায় তােমরা রত রয়েছ? ওরা বলল, আমরা আমাদের পিতৃ-পুরুষগণকে এগুলোর পূজা

(১ম খণ্ড) ৪২- )

NOO

করতে দেখেছি। সে বলল, তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পিতৃ-পুরুষগণও রয়েছে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে। ওরা বলল, তুমি কি আমাদের নিকট সত্য এনেছ, নাকি তুমি কৌতুক করছ? সে বলল, না তােমাদের প্রতিপালক তাে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক, যিনি ওদের সৃষ্টি করেছেন এবং এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী।

‘শপথ আল্লাহর, তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মূর্তিগুলো সম্বন্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা অবলম্বন করব।’ তারপর সে চুৰ্ণ-বিচূর্ণ করে দিল ওদের প্রধানটি ব্যতীত; যাতে তারা ওর দিকে ফিরে আসে। তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের প্রতি এরূপ করল কে? সে নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারী। কেউ কেউ বলল, এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে শুনেছি, তাকে বলা হয়। ইবরাহীম। ওরা বলল, তাকে উপস্থিত কর লোকজনের সম্মুখে, যাতে তারা সাক্ষ্য দিতে পারে। তারা বলল, হে ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যদের প্রতি এরূপ করেছ? সে বলল, সে-ই তো এটা করেছে, এ-ই তো এগুলোর প্রধান। এ গুলোকে জিজ্ঞেস করা। যদি এগুলো কথা বলতে পারে। তখন ওরা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল, তোমরাই তো সীমালংঘনকারী?

অতপর ওদের মস্তক অবনত হয়ে গেল এবং ওরা বলল, তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলে না। ইবরাহীম বলল, তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর যা তােমাদের কোন উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না? ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদেরকে। তবে কি তোমরা বুঝবে না? ওরা বলল, একে পুড়িয়ে দাও, সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলোকে, তোমরা যদি কিছু করতে চাও। আমি বললাম, হে আগুন তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। ওরা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। (शूद्धा जात्रिशा 8 १s-१०)

সূরা শু’আরায় আল্লাহর বাণী :

ওদের নিকট ইবরাহীমের বৃত্তান্ত বর্ণনা কর। সে যখন তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, তোমরা কিসের ইবাদত করা? ওরা বলল, আমরা প্রতিমার পূজা করি এবং আমরা

۸۷ با ام( 7 | او بيضزو ن . ابل و جد ناً ا

צפאפא

নিষ্ঠার সাথে ওদের পূজায় নিরত থাকব। সে বলল, তোমরা প্রার্থীনা করলে ওরা কি শোনে? অথবা ওরা কি তোমাদের উপকার কিংবা অপকার করতে পারে? ওরা বলল, না, তবে আমরা আমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে এরূপই করতে দেখেছি।

সে বলল, তােমরা কি তার সম্বন্ধে ভেবে দেখেছ, যার পূজা করছি—তোমরা এবং তােমাদের অতীত পিতৃ-পুরুষরা? ওরা সকলেই আমার শত্ৰু, জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত; যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন। তিনিই আমাকে দান করেন আহার্য ও পানীয়। এবং রোগাক্রান্ত হলে তিনিই আমাকে রোগমুক্ত করেন; এবং তিনিই আমার মৃত্যু ঘটাবেন, তারপর পুনজীবিত করবেন। এবং আশা করি, তিনি কিয়ামত দিবসে আমার অপরাধসমূহ মার্জনা করে দেবেন। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান দান কর এবং সৎকর্মপরায়ণদের শামিল করা। (সূরা শু’আরা : ৬৯-৮৩)

সূরা সাফফাতে আল্লাহ বলেনঃ

ইবরাহীম তো তার অনুগামীদের অন্তর্ভুক্ত। স্মরণ কর, সে তার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত হয়েছিল বিশুদ্ধচিত্তে। যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কেও জিজ্ঞেস করেছিল, তোমরা কিসের পূজা করছ? তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে অলীক ইলাহগুলোকে চাও? জগতসমূহের প্রতিপালক সম্বন্ধে তোমাদের ধারণা কী? তারপর সে তারকারাজির দিকে একবার তাকাল এবং বলল, আমি অসুস্থ। অতঃপর ওরা তাকে পশ্চাতে রেখে চলে গেল। পরে সে সন্তৰ্পণে ওদের দেবতাগুলোর নিকুটি গেল। এবং বলল, তোমরা খাদ্য গ্রহণ করছ না কেন? তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা কথা ৰলনা? তখন সে তাদের উপর সবলে আঘাত হানিল। তখন ঐ লোকগুলো তার দিকে ছুটে আসলো। সে বলল, তোমরা নিজেরা যাদেরকে খোদাই করে নির্মাণ করা, তোমরা কি তাদেরই পূজা করা? প্রকৃত পক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যা তৈরি কর তাও। ওরা বলল, এর জন্যে এক ইমারত তৈরি কর, তারপর একে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ কর। ওরা তার বিরুদ্ধে চক্রান্তের সংকল্প করেছিল; কিন্তু আমি ওদেরকে অতিশয় হেয় করে দিলাম। (সূরা সাফফাত : ৮৩-৯৮)

এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা জানিয়ে দেন যে, ইবরাহীম (আ) তাঁর

সম্প্রদায়ের লোকদের মূর্তি পূজার সমালোচনা করেন এবং তাদের কাছে ওগুলোর অসারতা ও অক্ষমতার কথা তুলে ধরেন। যেমন তিনি বলেছেন :

NONOSR

ما هزم الكُمَاثيل التوى أنتُمْ لَهَا عَاكمُونَ – (এই মূর্তিগুলাে কি? যাদের পূজায় তােমরা রত রয়েছ), অর্থাৎ এদের নিকট নিষ্ঠার সাথে বসে থাক ও কাতর হয়ে থাক। তারা উত্তর দিল; 64.44 41 64।( 67 4% (আমরা আমাদের পূর্ব-পুরুষদেরকে এদের পূজারীরূপে পেয়েছি।) তাঁদের যুক্তি এই একটাই যে, তাদের বাপ-দাদারা এরূপ দেবদেবীর পূজা-অৰ্চনা করতো। –

قال لقد كُنتُمْ أَنتُمْ وَ أباه كم فى ضلال فيين . তিনি বললেন, তোমরা ও তোমাদের বাপ-দাদারা স্পষ্ট বিভ্রাত্তিতে রয়েছে। যেমন আল্লাহ

বলেছেন :

যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে জিজ্ঞেস করেছিল, তোমরা র্কিসের পূজা করছ? তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে অলীক ইলাহগুলোকে চাও? তা হলে জগতসমূহের প্রতিপালক সম্পর্কে তােমাদের ধারণা কি?

কাতাদা। এ আয়াতাংশের ব্যাখ্যা এভাবে করেছেন যে, বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যখন তােমরা অন্যদের ইবাদত করছ, তখন যেদিন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হবে সেদিন তিনি তোমাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করবেন বলে মনে করা?

ইবরাহীম (আঃ) তাদেরকে বলেছেন :

তোমরা প্রার্থীনা করলে ওরা কি শুনে? অথবা ওরা কি তোমাদের উপকার কিংবা অপকার করতে পারে? ওরা বলল, না। তবে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে এরূপই করতে দেখেছি। (সূরা শু’আরা : ৭২-৭৪)

তারা স্বীকার করে নেয় যে, আহবানকারীর ডাক ওরা শোনে না, কারও কোন উপকারও করতে পারে না। অপকারও করতে পারে না। তারা এরূপ করছে কেবল তাদের মূখ পূর্বপুরুষদের অন্ধ আনুগত্য হিসেবে। এ জন্যেই তিনি তাদেরকে বলে দেন যে :

: W% % .6:43 ξ أفرأيتم ما كثثم تعبُدُونَ أثثم وأبا / л பிடிப் سا / را ه ر با لومین . তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের পূজা করে আসছ তোমরা ও তোমাদের পূর্ববতী পিতৃ-পুরুষেরা; কেননা রাব্বুল আলামীন ব্যতীত তারা সবাই আমার দুশমন। (সূরা

শু’আরা : ৭৫-৭৭)

তারা মূর্তির উপাস্য হওয়ার যে দাবি করত তা যে বাতিল ও ভ্রান্ত, উল্লিখিত আয়াতসমূহে তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়। কেননা, হযরত ইবরাহীম (আ) ওগুলোকে পরিত্যাগ করেন ও

סיסיסי

হেয়াপ্রতিপন্ন করেন। এতে যদি তাদের ক্ষমতা থাকত ক্ষতি করার তা হলে অবশ্যই তারা তার ক্ষতি করত। অথবা যদি আদৌ কোন প্রভাবের অধিকারী হত, তবে অবশ্যই তাঁর উপর সে

قالوا الجثثتك بالحق أم أثنك من اللعبين – 1 5 289) 814 3 K468

(তারা বলল, তুমি কি আঁর্মাদের নিকট সত্যসহ আগমন করেছ, না কি তুমি কৌতুক

করছ?) অর্থাৎ তারা বলেছে যে, হে ইবরাহীম! তুমি আমাদের নিকট যা কিছু বলছো, আমাদের

উপাস্যদেরকে তিরস্কার করছে এবং আমাদের পূর্ব-পুরুষদের সামালোচনা করছে। এ সব কি

তুমি সত্যি সত্যিই বলছি, নাকি কৌতুক করছ? قال بل رّبّكم رئ الشموت والأرض الذى فطرهُنَّ وَأَنَّا عَلى ذالكم من

الشهدين. سمي (সে বলল, না তোমাদের প্রতিপালক তো তিনি, যিনি আসমান ও যমীনের প্রতিপালক, যিনি এগুলো সৃজন করেছেন; এবং আমিই এর উপর অন্যতম সাক্ষী। (অর্থাৎ আমি তােমাদের নিকট যা কিছু বলছি, সবই সত্য ও যথাৰ্থ বলছি। বস্তৃত তোমাদের উপাস্য সেই একজনই, যিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং আসমান-যমীনেরও প্রতিপালক। পূর্ব-দৃষ্টান্ত ছাড়াই তিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং ইবাদতের যোগ্য একমাত্র তিনিই, তার কোন শরীক নেই; এবং আমি নিজেই এর উপর সাক্ষী।

برفل / سمہ تمي

وَنَا الله لأكثدنّ أشكامُكُمُ بعد أن تُوتُوا كثيرين. আল্লাহর কসম, তোমরা চলে গেলে আমি তোমাদের মূর্তিগুলো সম্বন্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা অবলম্বন করব (সূরা আম্বিয়া : ৫৫-৫৭)। অর্থাৎ হযরত ইবরাহীম (আ) এ মর্মে প্রতিজ্ঞা করেন যে, লোকজন মেলায় চলে যাওয়ার পর তাদের উপাস্য মূর্তিগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্ৰহণ করবেন। কারো কারো মতে, ইবরাহীম (আ) এ কথা মনে মনে বলেছিলেন। ইব্‌ন মাসউদ (রা) বলেছেন যে, তাদের মধ্যে কয়েকজন ইবরাহীম (আ)-এর এ কথাটি শুনে ফেলেছিল। ইবরাহীম (আ)-এর সম্প্রদায়ের লোকজন শহরের উপকণ্ঠে তাদের একটি নির্ধারিত বার্ষিক মেলায় মিলিত হতো। ইবরাহীম (আ)-এর পিতা তাকে মেলায় যাওয়ার জন্যে আহবান জানালে তিনি

বলেছিলেন, ‘আমি পীড়িত’। আল্লাহ বলেন :

(সে নক্ষত্রের দিকে একবার তাকাল, তারপর বলল, আমি পীড়িত) তিনি কথাটা একটু ঘুরিয়ে বললেন। যাতে তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়। আর তা হলো তাদের মূৰ্তিসমূহকে হেয়াপ্রতিপন্ন করা। মূর্তিপূজা খণ্ডনের ব্যাপারে আল্লাহর সত্য দীনের সাহায্য করা। আর ধ্বংস ও চরম লাঞ্ছনাই ছিল মূর্তিগুলাের যথার্থ পাওনা। এরপর সম্প্রদায়ের লােকজন যখন মেলায় চলে যায় এবং ইবরাহীম (আ) শহরেই থেকে যান। তখন 844} J & 16 অৰ্থাৎ তিনি চুপিসারে দ্রুতপদে দেবতাদের দিকে অগ্রসর হলেন। তিনি দেখর্তে পান যে, মূর্তিগুলো একটি বিরাট প্রকোষ্ঠের মধ্যে রয়েছে এবং তাদের সম্মুখে বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য নৈবেদ্যরূপে রাখা আছে। এ

দেখে তিনি উপহাস ছলে বললেন :

(তোমরা খােচ্ছ না কেন? কি হল তোমাদের, কথা বলছি না কেন? তারপর সে তাদের উপর তার ডান হাত দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত হানল।) কেননা, ডান হাতই অধিকতর শক্তিশালী ও দ্রুত ক্রিয়াশীল হয়ে থাকে। তাই তিনি নিজ হাতের কুঠারের প্রচণ্ড আঘাতে মূর্তিগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দিলেন … (ইবরাহীম মূর্তিগুলোকে টুকরো টুকরো করে দিল) অর্থাৎ সবগুলোকে তিনি ভেঙ্গে চুরমার করে দিলেন …. (তাদের মধ্যে বড়টা ব্যতীত, যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে।) কেউ কেউ বলেছেন; ইবরাহীম (আ) তাঁর কুঠারখানা বড় মূর্তির হাতে বুলিয়ে রেখে দেন। এতে এই ইঙ্গিত ছিল যে, তারা যেন মনে করে যে, তার সাথে ছোট মূর্তিগুলো পূজিত হওয়ার কারণে ওটাই ছোটগুলোর উপর ঈর্ষা বশত আক্রমণ করেছে। তারপর মেলা থেকে ফিরে এসে লোকজন তাদের উপাস্যদের এ অবস্থা

যখন দেখল।। (তখন তারা বলল, আমাদের উপাস্যদের সাথে এরূপ আচরণ কে করল? নিশ্চয়ই সে একজন সীমালংঘনকারী।)-এ কথার মধ্যে তাদের জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণ ছিল, যদি তারা বুঝতে চেষ্টা করত! কেননা, তারা যে সব দেব-দেবীর উপাসনা করে, তারা যদি সত্যি উপাস্য হত, তা হলে যে তাদেরকে আক্রমণ করেছে তাকে তারা প্ৰতিহত করত। কিন্তু নিজেদের মূর্থিতা,

নিবুদ্ধিতা ও চরম পথভ্রষ্টতার কারণে তারা বললঃ,

(আমাদের উপাস্যদের সাথে এ আচরণ করল কে? নিশ্চয়ই সে এক জালিম। তাদের কতিপয় লোক বলল, আমরা এক যুবককে এদের বিষয়ে আলোচনা করতে শুনেছি, তাকে ইবরাহীম বলা হয়।) অর্থাৎ সে এদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করত, এদের নিয়ে সমালোচনা করত। সুতরাং সে-ই এসে এদেরকে ভেঙ্গেছে। ইব্‌ন মাসউদ (রা) বলেছেন آ) یذ گر هم ५éना আলোচনা করত) দ্বারা ইবরাহীম (আ) ইতিপূর্বের কথা বলাই উদ্দেশ্য; অর্থাৎ

(আল্লাহর কসম, আমি তােমাদের মূর্তিগুলাের ব্যাপারে এক ব্যবস্থা নেব তোমরা ফিরে যাওয়ার পরে), তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা দেখতে পারে) অর্থাৎ উপস্থিত জনতার মাঝে নেতৃবৃন্দের সম্মুখে তাকে হাযির কর; যাতে জনগণ তার বক্তব্য প্রদানকালে উপস্থিত থাকে এবং তার কথাবার্তা শুনতে পারে। এবং তাকে বদলা স্বরূপ যে শান্তি দেওয়া হবে তা প্ৰত্যক্ষ করতে পারে। এটাই ছিল হযরত ইবরাহীম খলীলের প্রধানতম উদ্দেশ্য যে, সকল মানুষ উপস্থিত হলে তিনি সমস্ত মূর্তি পূজারীর সম্মুখে তাদের ধর্ম-কর্মের ভ্রান্তির প্রমাণ পেশ করবেন। যেমনটি মূসা (আ)-ও ফিরআউনকে বলেছিলেন :

OOG

(তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং যেই দিন পূর্বাহে লোকজনকে সমবেত করা হবে। (সূরা তা-হা : ৫৯)। তারপর যখন লোকজন জমায়েত হলো এবং ইবরাহীম (আ)-কে সেখানে হাযির করা হল, তখন তারা বলল :

أنتك فعلتك هذا بالهتئا يباً اثرهثم قال بل فعله كيثؤهم لهذا – (হে ইবরাহীম!! আমাদের দেব-দেবীর সাথে এই কাণ্ড কি তুমিই ঘটিয়েছ? সে বলল, AWMTK এই বড়টাই, বরং এ কাজটি করেছে।) কেউ কেউ এ আয়াতের অর্থ করেছেন এভাবে-এটি আমাকে এগুলো ভাঙ্গার ব্যাপারে উর্দুদ্ধ করেছে; অবশ্য কথাটাকে তিনি একটু ঘুরিয়ে বলেছেন। — %34 %34 134LK: 31: 44%, .14 (ওদের কাছেই জিজ্ঞেস কর যদি ওরা কথা বলতে পারে) ইবরাহীম (আ) এ কথার দ্বারা এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, ওরা যেন দ্রুত এই কথা বলে যে, এরা তো কথা বলতে পারে না। ফলত তারা স্বীকার করে নিবে যে, অন্যান্য জড়বস্তুর

অতঃপর তারা মনে মনে চিন্তা করল এবং বলল; তোমরাই তো জালিম) অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে তিরস্কার ও ধিককার দিয়ে বলল, জালিম তো তোমরা নিজেরাই; এদেরকে তোমরা

এমনিই ছেড়ে চলে গেলে, কোন পাহারাদার ও হিফাজতকারী রেখে গেলে না।

(তারপর তারা মাথা নত করে বুকে গেল) সুদৃদী (র)-এর অর্থ করেছেন, তারা ফিতুন

ফ্যাসাদের দিকে ফিরে গেল। এ অর্থ অনুযায়ী উপরের ‘তোমরাই জালিম’ رتكم أن ثم(

(6:2gারি। এর অর্থ তােমরা এদের ইবাদত করার কারণে জালিম পদবাচ্য। কাতাদা (র) বলেছেন, ইবরাহীম (আ)-এর কথায় তারা অত্যধিক দুশ্চিন্তাগ্ৰস্ত হয়। ফলে তাদের মাথা নত

ረሥ 1

হয়ে যায়। তারপর তারা বলল 534, 4 545.1 L. এ.216 44 (তুমি তো জােনই যে, এগুলো কথা বলে না) অর্থাৎ হে ইবরাহীম! তোমার তো জানা আছে যে, এরা কথা বলে না। সুতরাং এদের নিকট জিজ্ঞেস করার জন্যে তুমি কেন বলছ? এ সময় ইবরাহীম খলীল তাদের

উদ্দেশ করে বলেন : (তােমরা কি আল্লাহ ব্যতীত এমন সব বস্তুর পূজা কর, যা না তােমাদের কোন উপকার করতে পারে; না কোন ক্ষতি করতে পারে? ধিক তোমাদের জন্যে এবং তোমাদের উপাস্যদের

জন্তু যাদেরকে তৃেত্যুর পূজা করা আল্লাহ ব্যতীত। তােমূৱা কি মােটেই জ্ঞান খাটাও নূহ) 33%34 %34, 13:14, L’ : (তারপর তারা ইবরাহীমের দিকে তেড়ে আসলো।)। মুজাহিদ  (তোমরা কি সেই সব দেবতাদের পূজা কর যেগুলো তোমরা নিজেরাই খোদাই করে তৈরি করা?)

অর্থাৎ তোমরা কিভাবে এমন সব মূর্তির পূজা কর, যেগুলো তোমরা স্বহস্তে কাঠ অথবা পৃথর

খোদাই করে নির্মাণ করে থাকো এবং নিজেদের ইচ্ছামত আকৃতি দান কর।;&#14 1116

— 361 43%, L., (অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাদেরকে তোমরা তৈরি করে থােক) L-অক্ষরটি ৫-৩১–৯ ও হতে পারে; আবার <_—-

-ও হতে পারে। যেটাই হোক, এখানে যে কথা বলা উদ্দেশ্য তা হল এই যে, তোমরাও সৃষ্টি আর এই মূর্তিগুলোও সৃষ্টি। এখন একটি সৃষ্টি অপর একটি সৃষ্টির ইবাদত কিভাবে করতে পারে! কেননা, তোমরা তাদের উপাস্য না হয়ে তারা তোমাদের উপাস্য হবে এই অগ্ৰাধিকারের কোন ভিত্তি নেই। এটাও যেমন ভিত্তিহীন, তেমনি এর বিপরীতটা অর্থাৎ তোমার উপাস্য হওয়াও ভিত্তিহীন। কারণ, ইবাদত, উপাসনা পাওয়ার অধিকারী কেবল সৃষ্টিকর্তাই; এ ব্যাপারে কেউ তার শরীক নেই।

.6,14, 28)। (তারা বলল, এর জন্যে এক ইমারত তৈরি করা। তারপর একে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ কর। তারা ইবরাহীমের বিরুদ্ধে চক্রান্তের সংকল্প করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে অতিশয় হেয় করে দিলাম।) ইবরাহীম (আ)-এর সাথে তারা যখন যুক্তি ও বিতর্কে ঐটে উঠতে পারলো না, তাদের পক্ষে পেশ করার মত কোনই দলীল-প্রমাণ থাকল না, তখন তারা বিতর্কের পথ এড়িয়ে শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগের পথ অবলম্বন করে- যাতে করে নিজেদের নিবুদ্ধিতা ও

হঠকারিতা টিকিয়ে রাখতে পারে। সুতরাং আল্লাহ সুবহানুহ তা’আলাও তাদের চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দেয়ার কৌশল গ্ৰহণ করেন। আল্লাহ বলেন, :

তারা বলল, ইবরাহীমকে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবতাদেরকে সাহায্য কর যদি তোমরা কিছু করতে চাও। আমি বললাম, হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের জন্যে শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও। তারা ইবরাহীমের ক্ষতি সাধন করতে চেয়েছিল; কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্ৰস্ত। (সূরা আম্বিয়া : ৬৮-৭০)

তারা বিভিন্ন স্থান থেকে সম্ভাব্য চেষ্টার মাধ্যমে জ্বালানি কাঠ সংগ্ৰহ করতে থাকে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত তারা এ সংগ্রহের কাজে রত থাকে। তাদের মধ্যে কোন মহিলা পীড়িত হলে মানত করত। যে, যদি সে আরোগ্য লাভ করে তবে ইবরাহীম (আ)-কে পোড়াবার লাকড়ি সংগ্রহ করে দেবে। এরপর তারা বিরাট এক গর্ত তৈরি করে তার মধ্যে লাকড়ি নিক্ষেপ করে অগ্নি সংযোগ করে। ফলে তীব্ৰ দাহনে প্ৰজ্বলিত অগ্নিশিখা এত উর্ধে উঠতে থাকে, যার কোন তুলনা হয় না। তারপর ইবরাহীম (আ)-কে মিনজানীক নামক নিক্ষেপণ যন্ত্রে বসিয়ে দেয়। এই যন্ত্রটি কুদী সম্প্রদায়ের হাযান নামক এক ব্যক্তি তৈরি করে। মিনজানীক যন্ত্র সে-ই সর্ব প্রথম আবিষ্কার করে। আল্লাহ তাকে মাটির মধ্যে ধসিয়ে দেন। কিয়ামত পর্যন্ত সে মাটির মধ্যে তলিয়ে যেতে থাকবে। তারপর তারা ইবরাহীম (আ)-কে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে, তখন তিনি لاً إله إلأ

(আপনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, আপনি মহা পবিত্র, বাদশাহীর মালিক কেবল আপনিই, আপনার কোন শরীক নেই।), ইবরাহীম (আ)-কে মিনুজনীকের পাল্লায় হাত-পা বাধা অবস্থায় রেখে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। তখন তিনি বলেন 1551 4466/51// ……. (আমার জন্যে আল্লাহ্-ই যথেষ্ট, তিনি উত্তম অভিভাবক)। যেমন বুখারী শরীফে ইব্‌ন আব্বাস

ספאס

(রা) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে : ইবরাহীম (আ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন তিনি

Y Yo A y

বলেছিলেন : -145.511 456 111 ……. আর মুহাম্মদ (সা) তখন এ দু’আটি পড়েছিলেন। যখন তাকে বলা হয়েছিল ৪

তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর; কিন্তু এটা তাদের ঈমানকে আরও দৃঢ় করে দিয়েছিল। আর তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্যে যথেষ্ট এবং তিনি বড়ই উত্তম কর্ম-বিধায়ক। তারপর তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিল। কোনরূপ ক্ষতি তাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি। (সূরা আল-ইমরান : ১৭৩-১৭৪)

আবু ইয়া’লা (র) . আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন : ইবরাহীম (আ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন তিনি এই দু’আটি পড়েন : হে আল্লাহ! আপনি আকাশ রাজ্যে একা আর এই যমীনে আমি একাই আপনার ইবাদত করছি।

পূর্ববতী যুগের কোন কোন আলিম বলেন, জিবরাঈল (আ) শূন্যে থেকে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে বলেছিলেন : আপনার কোন সাহায্যের প্রয়োজন আছে কি? উত্তরে ইবরাহীম (আ) বলেছিলেন, ‘সাহায্যের প্রয়োজন আছে, তবে আপনার কাছে নয়।’ ইব্‌ন আব্বাস ও সাঈদ ইব্‌ন জুবায়র (রা) থেকে বর্ণিত : ঐ সময় বৃষ্টির ফেরেশতা (মীকাঈল) বলেছিলেন, আমাকে যখনই নির্দেশ দেওয়া হবে তখনই বৃষ্টি প্রেরণ করব। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ বাণী অধিক দ্রুত فلكا يا

অর্থাৎ—আমি হুকুম করলাম, হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের উপর শীতল ও শাণ্ডিদায়ক হয়ে যাও)। হযরত আলী ইব্‌ন আবী তালিব (রা) (%54%. -এর অর্থ করেছেন, তাকে কষ্ট দিও না। ইব্‌ন আব্বাস (র) ও আবুল আলিয়া (র) বলেছেন, আল্লাহ যদি ***}:J14 (………… না বলতেন তাহলে ঠাণ্ডা ও শীতলতায় ইবরাহীম (আ)-এর কষ্ট হত। কাবে আহবার বলেছেন, পৃথিবীর কোন লোকই ঐদিন আগুন থেকে কোনরূপ উপকৃত হতে পারেনি এবং ইবরাহীম | (আ)-এর বন্ধনের রশি ছাড়া আর কিছুই জ্বলেনি। যাহাহাক (র) বলেছেন, ঐ সময় হযরত জিবরাঈল (আঃ) ইবরাহীম (আ)-এর সঙ্গে ছিলেন এবং তাঁর শরীর থেকে ঘাম মুছে দিচ্ছিলেন এবং ঘাম নিৰ্গত হওয়া ছাড়া আগুনের আর কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়নি। সুদন্দী (র) বলেছেন : ইবরাহীম (আ)-এর সাথে ছায়া দানের ফেরেশতাও ছিলেন। হযরত ইবরাহীম (আ) যখন প্রাচীর বেষ্টনীর মধ্যকার উক্ত গহবরে অবস্থান করছিলেন, তখন তার চতুষ্পার্শ্বে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করছিল। অথচ তিনি ছিলেন শ্যামল উদ্যানে শান্তি ও নিরাপদে। লোকজন। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করছিল; কিন্তু না তারা ইবরাহীম (আ)-এর নিকট যেতে পারছিল, আর না। ইবরাহীম (আ) বেরিয়ে তাদের কাছে আসতে পারছিলেন। আবু হুরায়রা (রা) বলেন : ইবরাহীম (আ)-এর পিতা আপন পুত্রের এ অবস্থা দেখে একটি অতি উত্তম কথা বলেছিল, তা

প্ৰতিপালক।

ইব্‌ন আসাকীর (র) ইকরিম (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন : ইবরাহীম (আ)-এর মা পুত্রকে এ অবস্থায় দেখে ডেকে বলেছিলেন, হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি তোমার নিকট আসতে চাই। তাই আল্লাহর কাছে একটু বল, যাতে তোমার চারপাশের আগুন থেকে আমাকে রক্ষা করেন। ইবরাহীম (আ) বললেন, হ্যা, বলছি। তারপর মা পুত্রের নিকট চলে গেলেন। আগুন তাঁকে স্পর্শ করল না। কাছে গিয়ে মাতা আপন পুত্ৰকে আলিঙ্গন ও চুম্বন করলেন এবং পুনরায় অক্ষতভাবে সেখান থেকে বের হয়ে আসেন। মিনহাল ইব্‌ন আমর (রা) বর্ণনা করেছেন : হযরত ইবরাহীম (আঃ) আগুনের মধ্যে চল্লিশ কিংবা পঞ্চাশ দিন অবস্থান করেন। এই সময় সম্পর্কে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেন, : আগুনের মধ্যে আমি যতদিন ছিলাম ততদিন এমন শান্তি ও আরামে কাটিয়েছি যে, তার চেয়ে অধিক আরামের জীবন আমি কখনও উপভোগ করিনি। তিনি আরও বলেন, : আমার গোটা জীবন যদি ঐ রূপ অবস্থায় কাটত, তবে কতই না উত্তম হতো! এভাবে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সম্প্রদায় শক্রিতাবশত প্ৰতিশোধ নিতে চেয়েছিল; কিন্তু তারা ব্যর্থকাম হল। তারা গৌরব অর্জন করতে চেয়েছিল, কিন্তু লাঞ্ছিত হল। তারা বিজয়ী হতে চেয়েছিল, কিন্তু পরাজিত হল। আল্লাহর বাণী :

(তারা চক্রান্ত করে ক্ষতি করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত করে দেই।) অপর আয়াতে আছে এ5, 281 44 414.4% (আমি তাদেরকে হীনতম করে দেই) এরূপে দুনিয়ার জীবনে তারা ক্ষতি ও লাঞ্ছনাপ্রাপ্ত হয়। আর আখিরাতের জীবনে তাদের উপর আগুন না। শীতল হবে, না শান্তিদায়ক হবে বরং সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন : %: 43 1547.2 ঐ….L. (4%), (জাহান্নাম হল তাদের জন্যে নিকৃষ্ট আবাস ও ঠিকানা (সূরা ফুরকান : ৬৬)

ইমাম বুখারী (র) উম্মু শারীক (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) গিরগিটি মারার আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ইবরাহীম (আ)-এর বিরুদ্ধে এটি আগুনে ফুক দিয়েছিল। ইমাম মুসলিম (র) ইব্‌ন জুরায়জ (র) সূত্রে এবং বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ ও ইব্‌ন মাজাহ (র) সুফিয়ান ইব্‌ন উয়ায়না (রা) সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ (র) আয়েশা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা গিরগিটি হত্যা কর; কারণ সে ইবরাহীম (আ)-এর বিরুদ্ধে আগুনে ফুক দিয়েছিল— তাই হযরত আয়েশা (রা) গিরগিটি হত্যা করতেন। ইমাম আহমদ (র) নাফি (র)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, জনৈক মহিলা হযরত আয়েশা (রা)-এর গৃহে প্রবেশ করে একটি বর্শা দেখে জিজ্ঞেস করল : এ বর্শা দ্বারা আপনি কি করেন? উত্তরে আয়েশা (রা) বললেন, এর দ্বারা আমি গিরগিটি নিধন করি। তারপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : ইবরাহীম (আ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয় তখন সমস্ত জীব-জন্তু ও কীট-পতঙ্গ আগুন নিভাতে চেষ্টা করেছিল, কেবল এ গিরগিটি তা করেনি; বরং সে উল্টো আগুনে ফুক দিয়েছিল। উপরোক্ত হাদীস দু’টি ইমাম আহমদ (র) ভিন্ন আর কেউ বর্ণনা করেননি।

ΟνΦυ

ইমাম আহমদ…ফাকিহ ইবনুল মুগীরার মুক্ত দাসী সুমামা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি একদা আয়েশা (রা)-এর গৃহে যাই। তখন সেখানে একটা বর্শা রাখা আছে দেখতে পাই। জিজ্ঞেস করলাম, হে উন্মুল মু’মিনীন! এ বর্শা দিয়ে আপনি কী করেন? তিনি বললেন, এ দিয়ে আমি এসব গিরগিটি বধ করি। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে বলেছেনঃ ইবরাহীম (আ)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়, তখন যমীনের উপর এমন কোন জীব ছিল না। যারা আগুন নেভাতে চেষ্টা করেনি, কেবল এই গিরগিটি ব্যতীত। সে ইবরাহীম (আ)-এর উপরে আগুনে ফুক দেয়। তাই রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে এগুলো হত্যা করতে আদেশ করেছেন। ইব্‌ন মাজাহ (র).. জারীর ইব্‌ন হাযিম (র) সূত্রে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

এক দুর্বল বান্দার বিতর্ক প্রসঙ্গ এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী

তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখনি, যে ইবরাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছিল, যেহেতু আল্লাহ তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। যখন ইবরাহীম বলল, তিনি আমার প্রতিপালক যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিও তাে জীবন দান করি ও

দিক হতে উদয় করাও তো! অতঃপর যে কুফরী করেছিল, সে হতবুদ্ধি হয়ে গেল। আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। (সূরা বাকারা : ২৫৮)

এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সাথে সেই সীমালংঘনকারী প্রতাপশালী রাজার বিতর্কের কথা উল্লেখ করছেন, যে নিজে প্ৰতিপালক হওয়ার দাবি করেছিল। হযরত ইবরাহীম খলীল (আঃ) তার উপস্থাপিত যুক্তির অসারতা প্রমাণ করেন, তার মূর্থিতা ও স্বল্পবুদ্ধিতা প্ৰকাশ করে দেন এবং নিজের দলীল দ্বারা তাকে নিরুত্তর করেন।

তাফসীরবিদ, ঐতিহাসিক ও বংশবিদদের মতে, এ রাজাটি ছিল ব্যাবিলনের রাজা। মুজাহিদ (র) তার নাম নমরূদ ইব্‌ন কিনআন ইব্‌ন কৃশ ইব্‌ন সাম ইব্‌ন নূহ বলে উল্লেখ করেছেন। অন্যরা তার বংশলতিকা বলেছেন এভাবে- নিমরূদ ইব্‌ন ফালিহ ইব্‌ন আবির ইব্‌ন সালিহ ইব্‌ন আরফাখশাদ ইব্‌ন সাম ইব্‌ন নৃহ। মুজাহিদ (র) প্রমুখ বলেছেন, যেসব রাজা-বাদশাহ দুনিয়া জোড়া রাজত্ব করেছে, এ ছিল তাদের অন্যতম। ঐতিহাসিকদের মতে, এরূপ বাদশাহর সংখ্যা ছিল চার। দুজন মু’মিন ও দু’জন কাফির। মু’মিন দু’জন হলেন (১) যুলকারনায়ন ও (২) সুলায়মান (আ) আর কাফির দু’জন হল (১) নমরূদ ও (২) বুখত নসর। ঐতিহাসিকদের মতে,

W)8O

নমরূদ চারশ’ বছরকালব্যাপী রাজত্ব করেছিল। ফলে সে জুলুম-অত্যাচার, দাম্ভিকতা ও সীমালংঘনের চরমে গিয়ে পৌঁছে এবং পার্থিব জীবনকেই সে চরম লক্ষ্য বলে বেছে নেয়। ইবরাহীম খলীল (আঃ) যখন তাকে এক ও লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের জন্যে আহবান জানালেন, তখন তার মূর্খতা, পথ-ভ্ৰষ্টতা ও উচ্চাভিলাষ তাকে সৃষ্টিকর্তাকে অস্বীকার করতে প্ররোচিত করে। এ ব্যাপারে সে ইবরাহীম (আ)-এর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং নিজেই প্রতিপালক হওয়ার দাবি করে। হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন বললেন, : আমার প্রতিপালক তো তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। নমরূদ বলল, আমিও তো জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই।

কাতাদা, সুদৃদী ও মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক (র) লিখেছেন, নমরূদ ঐ সময় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত দু’ ব্যক্তিকে ডেকে আনে। অতঃপর একজনকে হত্যা করে ও অপরজনকে ক্ষমা করে দেয়। এর দ্বারা সে বোঝাতে চেয়েছে যে, সে একজনকে জীবন দান করল এবং অন্যজনের মৃত্যু ঘটাল। এ কাজটি ইবরাহীম (আ)-এর দলীলের কোন মুকাবিলাই ছিল না। বরং তা বিতর্কের সাথে সামঞ্জস্যহীন একটা উদ্ভট দুষ্কর্ম ছাড়া কিছুই নয়। কেননা, হযরত ইরবাহীম খলীল (আ) বিদ্যমান সৃষ্ট-বস্তুর দ্বারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করছেন। তিনি দেখাচ্ছেন যে, যেসব প্রাণী আমরা দেখতে পাই, তা এক সময় জন্মলাভ করেছে। আবার কিছু দিন পর সেগুলো মৃত্যুবরণ করছে। এ থেকেই বোঝা যায় যে, এই কাজের একজন কর্তা আছেন, যিনি প্রাণীকে সৃষ্টি করছেন ও মৃত্যু দিচ্ছেন। কারণ কর্তা ছাড়া আপনা-আপনি কোন কিছু হওয়া অসম্ভব। সুতরাং বিশ্বজগতে প্ৰাণী অপ্রাণী যা কিছু আছে তা একবার অস্তিত্বে আসা ও আর একবার অস্তিত্ব লোপ পাওয়া, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা; নক্ষত্র, বায়ু, মেঘমালা ও বৃষ্টি পরিচালনা করা ইত্যাদি কাজের জন্যে অবশ্যই একজন কর্তা আছেন। সে জন্যে ইবরাহীম (আ) বললেনঃ।

এ*4% এবং ৩৫%। %ে (আমার প্রতিপালক তিনিই, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।) অতএব, এ মূহুৰ্থ বাদশাহর এই যে কথা- আমিও জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এর দ্বারা যদি এটা বোঝান হয় যে, সে-ই দৃশ্যমান জগতের কর্তা, তবে এটা বৃথা দম্ভ ও। বাস্তবকে অস্বীকার করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এ কথার দ্বারা যদি সেটাই বোঝান হয়ে থাকে, যার উল্লেখ মুজাহিদ, সুদন্দী ও ইব্‌ন ইসহাক (র) করেছেন, তাহলে এ কথার কোন মূল্যই নেই। কেননা ইবরাহীম (আ)-এর পেশকৃত দলীলের তাতে খণ্ডন হয় না।

বাদশাহ নমরূদের এই যুক্তির অসারতা উপস্থিত অনেকের কাছে অস্পষ্ট হওয়ায় এবং অনুপস্থিতদের নিকট অস্পষ্ট হওয়ার প্রবল আশংকা থাকায় হযরত ইবরাহীম (আ) আর একটি যুক্তি পেশ কুরেন, যার দ্বারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব, ও নমরূদ্যুের মিথ্যা দাবি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত

ইবরাহীম বলল, আল্লাহ তাে সূর্যকে পূর্ব দিক থেকে উদিত করেন, তুমি একে পশ্চিম দিক থেকে উদিত করাও দেখি।

অর্থাৎ এই সূর্য আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে প্রত্যহ পূর্ব দিক থেকে উদিত হয় এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে পরিচালনা করেন। এই আল্লাহ এক, অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা।

ՎՓ8 Ֆ

এখন তোমার জীবন দান ও মৃত্যু ঘটানোর দাবি যদি যথার্থ হয়, তবে এ সূর্যকে তুমি পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। কেননা, যিনি জীবন দান ও মৃত্যু ঘটাতে পারেন, তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন। তার ইচ্ছাকে কেউ বাধা দিতে পারে না, তাকে কেউ অক্ষম করতে পারে না; বরং সব কিছুর উপরই তাঁর কর্তৃত্ব চলে, সব কিছুই তাঁর নির্দেশ মানতে বাধ্য। অতএব, নিজের দাবি অনুযায়ী তুমি যদি প্রতিপালক হয়ে থােক, তাহলে এটা করে দেখাও। আর যদি তা করতে না পার তবে তোমার দাবি মিথ্যা। কিন্তু তুমিও জান এবং অন্যান্য প্রত্যেকেই জানে যে, এ কাজ করতে তুমি সক্ষম নও। এতো দূরের কথা, একটা সামান্য মশা সৃষ্টি করাও তোমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ যুক্তি প্রদর্শনের পরে নিমরূদের ভ্ৰষ্টতা, মূর্খতা, মিথ্যাচার ও মূর্থ সমাজের কাছে তার দাম্ভিকতা স্পষ্ট হয়ে যায়। সে কোন উত্তর দিতে সক্ষম হল না, নীরব-নিশুচুপ হয়ে রয়ে গেল।

কাফির লোকটি হতভম্ব হয়ে গেল। আর জালিম সম্প্রদায়কে আল্লাহ সুপথ দেখান না। (সূরা বাকারা : ২৫৮)

সুদৃদী (র) লিখেছেন, নমরূদ ও ইবরাহীম (আ)-এর মধ্যে এ বিতর্ক হচ্ছে তিনি অগ্নি থেকে বের হয়ে আসার দিনের ঘটনা এবং সেখানে লোকের কোন জমায়েত ছিল না। কেবল দু’জনের মধ্যেই বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। আবদুর রাজ্জাক যায়দ ইব্‌ন আসলাম (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন : নমরূদের নিকট সঞ্চিত খাদ্য ভাণ্ডার ছিল। লোকজন দলে দলে তার নিকট খাদ্য আনার জন্যে যেত। হযরত ইবরাহীম (আ)-ও এরূপ এক দলের সাথে খাদ্য আনতে যান। সেখানেই এ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ফলে নমরূদ ইবরাহীম (আ)-কে খাদ্য না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়। ইবরাহীম (আ) শূন্যপাত্র নিয়ে বেরিয়ে আসেন। বাড়ির কাছে এসে তিনি দু’টি পাত্রে মাটি ভর্তি করে আনেন এবং মনে মনে ভাবেন বাড়ি পৌঁছে সাংসারিক কাজে জড়িয়ে পড়বেন। বাড়ি পৌঁছে বাহন রেখে তিনি ঘরে প্রবেশ করে দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। ইবরাহীম (আ)-এর স্ত্রী সারাহ পাত্র দু’টির কাছে গিয়ে উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্য দ্বারা তা ভর্তি দেখতে পান এবং তা দ্বারা খাদ্য তৈরি করেন। ঘুম থেকে জেগে হযরত ইবরাহীম (আ) রান্না করা খাদ্য দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এ তোমরা কোথেকে পেলে? সারাহ জানালেন, আপনি যা এনেছেন তা থেকেই তৈরি করা হয়েছে। এ সময় ইবরাহীম (আ) আঁচ করতে পারেন যে, আল্লাহ তা’আলা বিশেষ খাদ্য হিসেবে তাদেরকে এ রিযক দান

যায়দ ইব্‌ন আসলাম (রা) বর্ণনা করেছেন যে, এই অহংকারী বাদশাহর নিকট আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। ফেরেশতা তাকে আল্লাহর উপর ঈমান আনতে বললে সে অস্বীকার করে। পুনরায় দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার আহবান জানালে প্রত্যেক বারেই সে অস্বীকৃতি জানায় এবং বলে দেয়, তুমি তোমার বাহিনী একত্র কর, আর আমি আমার বাহিনী একত্র করি। পরের দিন সূর্যোদয়ের সময় নমরূদ তার সৈন্য-সামন্তের সমাবেশ ঘটালো। অপর দিকে আল্লাহ অগণিত মশা প্রেরণ করলেন। মশার সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, তাতে তারা সূর্যের মুখটি পর্যন্ত দেখতে সক্ষম হয়নি। আল্লাহ মশা বাহিনীকে তাদের উপর লেলিয়ে দেন। ফলে মশা তাদের রক্ত-মাংস খেয়ে সাদা হাডিড বের করে দেয়। একটি মশা নমরূদের নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করে।

SO8 S

চারশ’ বছর পর্যন্ত এই মশা তার নাকের ছিদ্রে অবস্থান করে দংশন করতে থাকে। এই দীর্ঘ সময়ে সে হাতুড়ি দ্বারা নিজের মাথা ঠুকাতে থাকে। অবশেষে এভাবেই আল্লাহ তাকে ধ্বংস

করেন |

হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সিরিয়া ও মিসরে হিজরত

এবং অবশেষে ফিলিস্তিনে স্থায়ী বসতি স্থাপন এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী :

লুত তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল। ইবরাহীম বলল, ‘আমি আমার প্রতিপালকের উদ্দেশে দেশ ত্যাগ করছি। তিনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আমি ইবরাহীমকে দান করলাম। ইসহাক ও ইয়াকুব এবং বংশধরদের জন্যে স্থির করলাম নবুওত ও কিতাব এবং আমি তাকে দুনিয়ায় পুরস্কৃত করেছিলাম। আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎকর্ম পরায়ণদের অন্যতম হবে (সূরা আনকাবৃত : ২৬-২৭)

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, :

এবং আমি তাকে ও লুতকে উদ্ধার করে সেই দেশে নিয়ে গেলাম, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্যে এবং আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম। ইসহাক এবং পৌত্ররূপে ইয়াকুব, আর প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ; এবং তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথপ্রদর্শন করত, তাদেরকে ওহী প্রেরণ করেছিলাম সৎকর্ম করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্ৰদান করতে; তারা-আমারই ইবাদত করত। (সূরা আম্বিয়া : ৭১-৭৩)

হযরত ইবরাহীম (আ) নিজের দেশ ও জাতিকে ত্যাগ করে আল্লাহর রাহে হিজরত করেন। তার স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা, কোন সন্তান হত না এবং তার কোন পুত্ৰ সন্তান ছিল না। বরং ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ লুত ইব্‌ন হারান ইব্‌ন আযর তাঁর সংগে ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাকে একাধিক পুত্ৰ সন্তান দান করেন এবং তাদের সকলেই পূণ্যবান ছিলেন। ইবরাহীম (আ)-এর বংশে নবুওত এবং কিতাব প্রেরণের ধারা চালু রাখেন। সুতরাং ইবরাহীম (আ)-এর পরে যিনিই নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন তার বংশ থেকেই হয়েছেন এবং তার পরে যে কিতাবই আসমান থেকে কোন

Ֆ8Ֆ

নবীর উপর অবতীর্ণ হয়েছে, তা তাঁর বংশধরদের উপরই অবতীর্ণ হয়েছে। এ সব পুরস্কার আল্লাহ তাকে দিয়েছেন তার ত্যাগ ও কুরবানী এবং আল্লাহর জন্যে দেশ, পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে পরিত্যাগ করার বিনিময়ে। এমন দেশের উদ্দেশে তিনি হিজরত করলেন। যেখানে আল্লাহর ইবাদত এবং বান্দাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবানের সুযোগ ছিল। তার সেই হিজরতের দেশটি হল শাম বা সিরিয়া। এ দেশ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন :

إلى الأرض التى بارككا فيها للعالمين – * সে দেশের দিকে যেখানে আমি বিশ্ববাসীর জন্য বরকত রেখে দিয়েছি।’ উবাই ইব্‌ন কা’ব আল আলিয়া, কাতাদা প্রমুখ এই মত পোষণ করেন। কিন্তু আওষ্ণকীর সূত্রে ইব্‌ন ‘আব্বাস (রা)

দেশের কথা বলা হয়েছে, সে দেশ হল মক্কা এবং সমর্থনে তিনি নিম্নের আয়াত উল্লেখ করেন :

بمبگة مُبار وهدى العالمين নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে স্থাপিত হয়েছে সেটাই হচ্ছে এ ঘর যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের জন্যে হিদায়াত ও বরকতময়। (সূরা আল-ইমরান : ৯৬)

কা’ব আহবার (রা)-এর মতে, সে দেশটি ছিল হারান। ইতিপূর্বে আমরা আহলি কিতাবদের বরাত দিয়ে বলে এসেছি যে, হযরত ইবরাহীম (আ), তাঁর ভ্রাতুষ্পপুত্ৰ লুত (আ), ভাই নাহ্র স্ত্রী সারাহ ও ভাইয়ের স্ত্রী মালিকাসহ বাবিল থেকে রওয়ানা হন এবং হারানে পৌঁছে সেখানে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ইবরাহীম (আ)-এর পিতা তারাখ-এর মৃত্যু হয়।

সুদূদী (র) লিখেছেন, ইবরাহীম (আ) ও লুত (আ) সিরিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হন। পথে সারাহর সাথে সাক্ষাৎ হয়। সারাহ ছিলেন হারানের রাজকুমারী। তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের ধর্মকে কটাক্ষ করতেন। ইবরাহীম (আ) তাকে এই শর্তে বিবাহ করেন যে, তাকে ত্যাগ করবেন না। ইব্‌ন জারীর (র) এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ঐতিহাসিকদের আর কেউ এ ব্যাপারে বর্ণনা করেন নি। প্ৰসিদ্ধ মতে, সারাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর চাচা হারান-এর কন্যা। যার নামে হারান রাজ্যের পরিচিতি। সুহায়লী (র) কুতায়বী ও নাফফাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, সারাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর সহোদর হারানের কন্যা লুত-এর ভগ্নি। এ মত সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। এ মত পোষণকারীরা দাবি করেছেন যে, ঐ সময় ভাতিজী বিবাহ করা বৈধ ছিল। কিন্তু এ দাবির পক্ষে কোন প্রমাণ নেই। যদি ধরেও নেয়া হয় যে, কোন এক সময়ে ভাতিজী বিবাহ করা বৈধ ছিল। যেমন ইহুদী পণ্ডিতরা বলে থাকেন তবুও এটা সম্ভব নয়। কেননা, নিরুপায় অবস্থায় কোন কিছু বৈধ হলেও তার সুযোগ গ্ৰহণ নবী-রাসূলগণের উন্নত চরিত্রের মর্যাদার পক্ষে শোভনীয় নয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

প্ৰসিদ্ধ মত হল, হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন বাবিল থেকে হিজরত করেন, তখন সারাহকে সাথে নিয়েই বের হয়েছিলেন যেমন পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত। আহলি কিতাবদের বর্ণনা মতে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন সিরিয়ায় যান। তখন আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে জানান, তোমার পরে এই দেশটি আমি তোমার উত্তরসূরিদের আয়ত্তে দেব। এই অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা প্রকাশস্বরূপ তিনি তথায় কুরবানীর একটি কেন্দ্র নির্মাণ করেন এবং বায়তুল

WD88

মুকাদ্দাসের পূর্ব প্রান্তে তিনি নিজের থাকার জন্যে একটি গম্বুজ বিশিষ্ট প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করেন। অতঃপর তিনি জীবিকার অন্বেষণে বের হন। এ সময় বায়তুল মুকাদ্দাস অঞ্চলে ছিল প্রচণ্ড আকাল ও দুর্ভিক্ষ, তাই সবাইকে নিয়ে তিনি মিসরে চলে যান। এই সাথে আহলি কিতাবরা সারাহ এবং তথাকার রাজার ঘটনা, সারাহকে নিজের বোন বলে পরিচয় দিতে শিখিয়ে দেয়া, রাজা কর্তৃক সারাহ (র)-এর খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান; অতঃপর সেখান থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করা এবং বরকতময় বায়তুল মুকাদাস অঞ্চলে বহু জীব-জন্তু, দাস-দাসী ও ধন-সম্পদসহ প্ৰত্যাগমন করার কথা উল্লেখ করেছেন।

ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন; হযরত ইবরাহীম (আ) তিনবার অসত্যু উক্তি করেছিলেন। এর দুটি আল্লাহ সংক্রান্ত (১) তিনি বুলেছিলেন لنین * … আমি পীড়িত; (২) আর একবার বলেছিলেন : 1, k &#123′,4’… J. — এই বড় মূর্তিটিই এ কর্মটি করেছে। এবং তৃতীয় উক্তিটি করেছিলেন নিজের ব্যাপারে। ঘটনা এই: হযরত ইবরাহীম (আ) স্ত্রী সারাহসহ কোন এক জালিম বাদশাহর এলাকা অতিক্রম করছিলেন। বাদশাহর নিকট সংবাদ গেল যে, এই এলাকায় একজন লোক আছে যার সাথে রয়েছে এক পরমা সুন্দরী নারী। জালিম বাদশাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর নিকট লোক পাঠান। আগন্তুক এসে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে সারাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল, ইনি কে? উত্তরে তিনি বললেন : আমার বোন। এরপর হযরত ইবরাহীম (আ) সারাহর কাছে এসে বলেন, দেখ সারাহু! এই ধরা পৃষ্ঠে আমি এবং তুমি ব্যতীত আর কোন মুমিন নেই। এই আগভুক তােমার সাথে আমার সম্পর্কের কথা জানতে চেয়েছে। আমি তাকে এই কথা বলে দিয়েছি যে, তুমি আমার বোন। এখন আমাকে তুমি মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করো না। এরপর ঐ জালিম বাদশাহ সারাহকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে লোক পাঠান।

সারাহ বাদশাহর দরবারে নীত হলে, বাদশাহ তার প্রতি হাত বাড়ায়। সংগে সংগে সে খোদার গযবে পতিত হয়। বাদশাহ বলল, সারাহ আমার জন্যে দু’আ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি সাধন করব না। সারাহ দুআ করলেন। ফলে বাদশাহ ছাড়া পায়। কিন্তু দ্বিতীয়বার সে। সারাহর প্রতি হাত বাড়ায়। এবারও সে পূর্বের ন্যায় কিংবা তদপেক্ষা কঠিনভাবে তাঁর প্রতি শান্তি নেমে আসে। পুনর্বার বাদশাহ বলল, আমার জন্যে দুআ কর। আমি তোমার কোন অনিষ্ট করব না। সারাহ দু’আ করলে সে পুনরায় রক্ষা পায়। তখন বাদশাহ তার একান্ত সচিবকে ডেকে বলল, তুমি তো আমার কাছে কোন মানবী আননি, এনেছ এক দানবী। পরে বাদশাহ সারাহর খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান করল। সারাহ ইবরাহীম (আ)-এর কাছে ফিরে এসে তাকে সালাত আদায়রত দেখতে পান। হযরত ইবরাহীম (আ) সালাতে থেকেই হাতের ইশারা দ্বারা ঘটনা জানতে চাইলেন। সারা বললেন, আল্লাহ অনাচারী কাফিরের চক্রান্ত নস্যাত করে দিয়েছেন এবং ঐ জালিম আমার খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দিয়েছে।

আবু হুরায়রা (রা) বলেন, হে বেদুঈন আরব সন্তানগণ! এই হাজেরাই তোমাদের আদি মাতা। ইমাম বুখারী (র) এই একক সূত্রে হাদীসটি মওকুফ রূপে বর্ণনা করেছেন। হাফিজ আবু বকর আল বাযযার (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : হযরত ইবরাহীম (আ) মাত্র তিনবার ব্যতীত কখনও অসত্য উক্তি করেন নি। ঐ তিনটি উক্তিই

V8C

ছিল আল্লাহ সংক্রান্ত। (১) f۹6976>این ساقی م )Tif|| 5 if5ا پ > Tl:( )پل فله (د &#124;< (এদের এ বড়টাই এ কাজ করেছে বলী;) (৩) হযরত ইবরাহীম কােন এক জালিম রাজার এলাকা দিয়ে সফর করার সময় কোন এক মঞ্জিলে অবতরণ করেন। জালিম রাজা তথায় আগমন করে। তাকে জানানো হয় যে, এখানে একজন লোক এসেছে যার সাথে এক পরমা সুন্দরী রমণী আছে। রাজা তখনই ইবরাহীম (আ)-এর নিকট লোক প্রেরণ করে। সে এসে মহিলাটি সম্পর্কে ইবরাহীম (আ)-কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, সে আমার বোন। এরপর ইবরাহীম (আ) তাঁর স্ত্রীর কাছে আসেন এবং বলেন, একটি লোক তোমার সম্পর্কে আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছে। আমি তোমাকে আমার বোন বলে পরিচয় দিয়েছি। এখন আমি আর তুমি ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন মুসলিম নেই। এ হিসেবে তুমি আমার বোনও বটে। সুতরাং রাজার কাছে আমাকে মিথ্যাবাদী প্ৰতিপন্ন করো না যেন। রাজা তার দিকে হাত বাড়াতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আযাব এসে তাকে পাকড়াও করে। রাজা বলল, তুমি আল্লাহর কাছে দুআ কর, আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তিনি দুআ করেন। ফলে সে মুক্ত হয়। কিন্তু পরীক্ষণে আবার তাঁকে ধরার জন্যে হাত বাড়ায়। এবারও আল্লাহর পক্ষ থেকে পূর্বের ন্যায় কিংবা তদপেক্ষা শক্তভাবে পাকড়াও হয়। রাজা পুনরায় বলল, আমার জন্যে আল্লাহর নিকট দুআ কর, তােমার কোন ক্ষতি আমি করব না। সুতরাং দু’আ করায় সে মুক্তি পেয়ে যায়। এরূপ তিনবার ঘটে। অতঃপর রাজা তার সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ অনুচরকে ডেকে বললো, তুমি তো কোন মানবী আননি; এনেছ এক দানবী। একে বের করে দাও এবং হাজেরাকেও সাথে দিয়ে দাও। বিবি। সারাহ ফিরে আসলেন। ইবরাহীম (আ) তখন সালাতে রত ছিলেন। সারাহর শব্দ পেয়েই তিনি তার দিকে ফিরে তাকালেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনা কি? সারাহ বললেন, ‘আল্লাহ জালিমের চক্রান্ত ব্যৰ্থ করে দিয়েছেন। আর সে আমার খিদমতের জন্যে হাজেরাকে দান করেছে।’ বাযযার (র) বলেছেন, মুহম্মদ (র)-এর সূত্রে আবু হুরায়রা (রা) থেকে হিশাম ব্যতীত কেউ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। অন্যরা একে মওকুফ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

ইমাম আহমদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেছেন : তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, হযরত ইবরাহীম (আ) তিনবার ছাড়া কখনও মিথ্যা কথা বলেননি। (১) কাফিররা যখন তাদের মেলায় যাওয়ার জন্যে আহবান জানায়, তখন তিনি বলেছিলেন, % *; … 🙂 (আমি পীড়িত) (২) তিনি মূর্তি ভেঙ্গে বলেছিলেন, ‘…… :45, 4 × 414, U, (এদের মধ্যে এই বড়টিই এ কাজ করেছে); (৩) নিজের স্ত্রী সারাহর পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন : ৭২।। ৬৫১। (এ আমার বোন)। বর্ণনাকারী বলেন, : হযরত ইবরাহীম (আ) একবার কোন এক জনপদে প্রবেশ করেন। সেখানে ছিল এক জালিম রাজা। তাকে জানানো হল যে, এ রাত্রে ইবরাহীম এক পরমা সুন্দরী নারীসহ এখানে এসেছে। রাজা তার কাছে দূত পাঠাল। দূত হযরত ইবরাহীম (আ)-কে জিজ্ঞেস করল। আপনার সাথী এ রমণীটি কে? ইবরাহীম (আ) বললেন, আমার বোন। দূত বলল, একে রাজার কাছে পাঠিয়ে দিন। হযরত ইবরাহীম (আ) পাঠিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন যে, আমার উক্তিকে তুমি মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করো না যেন। কারণ রাজাকে আমি জানিয়েছি যে, তুমি আমার বোন হও। মনে কর যে, এ পৃথিবীর বুকে আমি এবং

(১ম খণ্ড) ৪৪—

NO8V

তুমি ছাড়া আর কোন মু’মিন নেই। সারাহ রাজার দরবারে পৌছলে সে সারাহর দিকে অগ্রসর হল। সারাহ তখন অযু করে সালাত আদায় করতে উদ্যত হলেন এবং নিম্নের দু’আটি পড়লেন।

اللهم ان کنت تعلم انی امنت بلک و بر سولالک و احصنات فرجی الا علی

زوجی فلا تسلط علی الکافر . অর্থাৎ- ‘হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই অবগত আছেন যে, আমি আপনার উপর ও আপনার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি। আমার স্বামী ব্যতীত অন্য সবার থেকে আমার লজ্জাস্থানকে হিফাজত করেছি। অতএব, কোন কাফিরকে আমার উপর হস্তক্ষেপ করতে দেবেন না।’

জালিম রাজাকে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে এমনভাবে টুটি চেপে ধরা হলো যে, পায়ের সাথে পা ঘর্ষণ করে ছট্‌ফটু করতে লাগলো। আবৃযি যিনাদ (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বলেন, সারাহ তখন পুনরায় দুআ করেন, ‘হে আল্লাহ! লোকটি এভাবে মারা গেলে লোকে বলবে আমিই তাকে হত্যা করেছি। অতএব, রাজা শাস্তি থেকে মুক্তিলাভ করল। কিন্তু পুনরায় রাজা তার দিকে অগ্রসর হলো। সারাহও পূর্বের ন্যায় অযু ও সালাত শেষে ঐ দু’আটি পড়লেন। রাজা পুনরায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ছটুফটু করতে থাকে। এ দেখে সারাহ বললেন, ‘হে আল্লাহ! এ যদি মারা যায়। তবে লোকে বলবে ঐ মহিলাটিই তাকে হত্যা করেছে।’ অতঃপর সে মুক্তি লাভ করে। এ ভাবে তৃতীয় বা চতুর্থ বারের পর জালিম রাজা তার লোকদেরকে ডেকে বলল, তোমরা আমার কাছে তো একটা দানবী পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের নিকট ফিরিয়ে দাও। আর হাজেরাকেও এর সাথে দিয়ে দাও। বিবি। সারাহ ফিরে এসে হযরত ইবরাহীম (আ)-কে জানালেন, আপনি কি জানতে পেরেছেন, আল্লাহ কাফিরদের চক্রান্ত ব্যর্থ করে দিয়েছেন এবং ঐ জালিম একজন দাসীকেও দান করেছে? কেবল ইমাম আহমদ (র) এই সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, অবশ্য সহীহ সনদের শর্ত অনুযায়ী। ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে মারফু’ভাবে হাদীসটি সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করেছেন। ইব্‌ন আবী হাতিম আবু সাঈদ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : হযরত ইবরাহীম (আ) যে তিনটি কথা বলেছিলেন তার প্রতিটিই আল্লাহর দীনের গ্রন্থি উন্মোচন করে। তাঁর প্রথম কথা : ***, … ……J (আমি পীড়িত), দ্বিতীয় কথা : …, :424.< 414, 14 (বরং এদের বড়জনই এ কাজ করেছে), তৃতীয় কথা : যখন রাজা তার স্ত্রীকে কামনা করেছিল তখন বলেছিলেন, هی لختی )G2آ SITA|||||||||۹ বোন)। অর্থাৎ আল্লাহর দীনের সম্পর্কে বোন। হযরত ইবরাহীম (আ) তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন—’এ জগতে আমি এবং তুমি ব্যতীত আর কোন মু’মিন নেই।’ তাঁর এ কথার অর্থ হল, আমরা ব্যতীত আর কোন মু’মিন দম্পতি নেই। এ ব্যাখ্যা এ জন্যে প্রয়োজন, যেহেতু হযরত লুত (আ)-ও তখন তাদের সফরসংগী ছিলেন আর তিনি ছিলেন একজন নবী। বিবি। সারাহ যখন জালিম বাদশাহর নিকট যাওয়ার জন্যে রওয়ানা হন, তখন থেকেই হযরত ইবরাহীম (আ) সালাত আদায়ে রত থাকেন এবং দুআ করতে থাকেন, যেন আল্লাহ তাঁর স্ত্রীকে হিফাজত করেন এবং জালিমের কুমতলব ব্যৰ্থ করে দেন। বিবি সারাহ ও অনুরূপ আমল করেন। আল্লাহর দুশমন। তাকে ধরতে গেলে তিনি অযু করে সালাত আদায়ান্তে দুআ করেন। আল্লাহ বলেনঃ

واشئشتيثئوا بالظشر والضلوة.

‘ .

VO8 Գ

তোমরা ধৈর্য ও সালাত দ্বারা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থীনা করা। (২ বাকারা : ৪৫)। এভাবে আল্লাহ

কোন কোন বিজ্ঞ আলিমের মতে, তিনজন মহিলা নবী ছিলেন (১) সারাহ (২) হযরত মূসা (আ)-এর মা, (৩) মারিয়াম। কিন্তু অধিকাংশের মতে, তারা তিনজন সিন্দীকা (সত্যপরায়ণা) (আল্লাহ তাদের প্রতি প্ৰসন্ন হোন) ছিলেন। আমি কোন কোন বর্ণনায় দেখেছি- বিবি। সারাহ যখন ইবরাহীম (আ)-এর নিকট থেকে জালিম বাদশাহর কাছে যান, তখন থেকে তার ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহ ইবরাহীম (আ) ও সারাহর মধ্যকার পর্দা উঠিয়ে নেন। ফলে রাজার কাছে তার থাকাকালীন যা যা ঘটছিল সবই তিনি প্রত্যক্ষ করছিলেন। আল্লাহ এ ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে ইবরাহীম (আ)-এর হৃদয় পবিত্র থাকে, চক্ষু শীতল থাকে এবং তিনি অন্তরে প্রশান্তি বোধ করেন। কেননা, হযরত ইবরাহীম (আ) সারাহকে তার দীনের জন্যে, আত্মীয়তার সম্পর্কের জন্যে ও অনুপম সৌন্দর্যের জন্যে তাকে প্রগাঢ় মহব্বত করতেন। কেউ কেউ বলেছেন, বিবি হাওয়ার পর থেকে সারাহর যুগ পর্যন্ত তার চাইতে অধিক সুন্দরী কোন নারীর জন্ম হয়নি। সকল প্ৰশংসা আল্লাহরই।

কোন কোন ইতিহাসবিদ লিখেছেন, এই সময়ে মিসরের ফিরআউন ছিল বিখ্যাত জালিম বাদশাহ জাহহাকের ভাই। সে তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে মিসরের শাসনকর্তা ছিল। তার নাম কেউ বলেন সিনান ইব্‌ন আলওয়ান ইব্‌ন উবায়দ ইব্‌ন উওয়ায়জ ইব্‌ন আমলাক ইব্‌ন লাওদ ইব্‌ন সাম ইব্‌ন নূহ। ইব্‌ন হিশাম, ‘তীজান’ নামক গ্রন্থে বলেছেন, যে রাজা সারাহর উপর লোভ করেছিল তার নাম আমর ইব্‌ন ইমরুল কায়স ইব্‌ন মাইলুন ইব্‌ন সাবা। সে মিসরের শাসনকর্তা ছিল। সুহায়লী (র) এ তথ্য বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই সম্যক জ্ঞাত।

অতঃপর হযরত ইবরাহীম (আ) মিসর থেকে তাঁর পূর্ববতীর্ণ বাসস্থান বরকতের দেশ তথা বায়তুল মুকাদাসে যান। তার সাথে বহু পশু সম্পদ, গোলাম, বাদী ও ধন-সম্পদ ছিল। মিসরের কিবতী বংশোদ্ভূত হাজেরাও সাথে ছিলেন। এই সময় হযরত লুত (আ) তাঁর ধন-সম্পদসহ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর আদেশক্রমে গাওর দেশে চলে যান। ‘গাওরে-যাগার’ নামে এ স্থানটি প্রসিদ্ধ ছিল। তিনি সে অঞ্চলে ঐ যুগের প্রসিদ্ধ শহর সাদৃদূমে অবতরণ করেন। শহরের বাসিন্দারা ছিল কাফির, পাপাসক্ত ও দুষ্কৃতকারী। আল্লাহ্ তা’আলা হযরত ইবরাহীম (আ)-কে দৃষ্টি প্রসারিত করে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে তাকাতে বলেন এবং সু-সংবাদ দেন যে, এই সমুদয় স্থান তোমাকে ও তোমার উত্তরসূরিদেরকে চিরদিনের জন্য দান করব। তোমার সন্তানদের সংখ্যা এত বৃদ্ধি করে দেব যে, তাদের সংখ্যা পৃথিবীর বালুকণার সংখ্যার সমান হয়ে যাবে। এই সুসংবাদ পূর্ণ মাত্রায় প্রতিফলিত হয়, বিশেষ করে এই উম্মতে মুহাম্মদিয়ার ক্ষেত্রে। একটি হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়।

রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : আল্লাহ আমার সম্মুখে পৃথিবীর এক অংশকে ঝুঁকিয়ে দেন। আমি তার পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত দেখে নিলাম। অচিরেই আমার উম্মতের রাজত্ব এই দেখান সীমানা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করবে। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, কিছুদিন পর ঐ দুরাচার লোকেরা হযরত লুত (আ)-এর উপর চড়াও হয় এবং তাঁর পশু ও ধন-সম্পদ কেড়ে নিয়ে তাকে বন্দী

98եր

করে রাখে। এ সংবাদ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর নিকট পৌছলে তিনি তিনশ’ আঠারজন সৈন্য নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করেন এবং লুত (আ)-কে উদ্ধার করেন, তার সম্পদ ফিরিয়ে আনেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিপুল সংখ্যক শক্রকে হত্যা করেন। শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করেন ও তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে তিনি দামেশকের পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছেন। শহরের উপকণ্ঠে বারব্যাহ নামক স্থানে সেনা ছাউনি স্থাপন করেন। আমার ধারণা— এই স্থানকে ‘মাকামে ইবরাহীম’ বলার কারণ এটাই যে, এখানে ইবরাহীম খলীলুল্লাহর সৈন্য বাহিনীর শিবির ছিল।

তারপর হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর সাহায্যপুষ্ট অবস্থায় বিজয়ীর বেশে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বায়তুল মুকাদদাসের শহরসমূহের শাসকবর্গ শ্রদ্ধাভরে ও বিনীতভাবে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানান। তিনি সেখানেই বসবাস করতে থাকেন।

হাজেরার গর্ভে ইসমাঈল (আঃ)-এর জন্ম প্রসঙ্গ আহলি কিতাবদের বর্ণনা মতে, হযরত ইবরাহীম (আ) আল্লাহর নিকট সুসন্তানের জন্য দুআ করেন। আল্লাহ তাকে এ বিষয়ে সুসংবাদ দানও করেন। কিন্তু এরপর বায়তুল মুকাদ্দাসে তাঁর বিশটি বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। এ সময় একদিন সারাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-কে বললেন, আমাকে তো আল্লাহ সন্তান থেকে বঞ্চিতই রেখেছেন। সুতরাং আপনি আমার বাদীর সাথে মিলিত হন। তার গর্ভে আল্লাহ আমাকে একটা সন্তান দিতেও পারেন। সারাহ হাজেরাকে ইবরাহীমের জন্যে হেবা করে দিলে ইবরাহীম (আ) তাঁর সাথে মিলিত হন। তাতে হাজেরা সন্তান-সম্ভবা হন। এতে আহলি কিতাবগণ বলে থাকেন, হাজেরা অনেকটা গৌরববোধ করেন। এবং আপন মনিবা সারােহর তুলনায় নিজেকে ভাগ্যবতী বলে মনে করতে থাকেন। সারাহর মধ্যে আত্মমর্যাদা বোধ জাগ্রত হয় এবং তিনি এ সম্পর্কে ইবরাহীম (আ)-এর নিকট অভিযোগ করেন। জবাবে ইবরাহীম (আ) বললেন, ‘তার ব্যাপারে তুমি যে কোন পদক্ষেপ নিতে চাও নিতে পোর।’ এতে হাজেরা শংকিত হয়ে পলায়ন করেন এবং অদূরেই এক কৃপের নিকটে অবতরণ করেন। সেখানে জনৈক ফেরেশতা তাকে বলে দেন যে, তুমি ভয় পেয় না; যে সন্তান তুমি ধারণ করেছ আল্লাহ তাকে গৌরবময় করবেন। ফেরেশতা তাকে বাড়িতে ফিরে যেতে বলেন এবং সুসংবাদ দেন যে, তুমি পুত্র-সন্তান প্রসব করবে। তাঁর নাম রাখবে ইসমাঈল। সে হবে এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। সকল লোকের উপর তাঁর প্রভাব থাকবে এবং অন্য সবাই তাঁর দ্বারা শক্তির প্রেরণা পাবে। সে তার ভাইদের কর্তৃত্বাধীন সমস্ত এলাকার অধিকারী হবে। এসব শুনে হাজেরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। এই সুসংবাদ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর অধঃস্তন সন্তান মুহাম্মদ (সা)-এর ক্ষেত্রে পূর্ণমাত্রায় প্রযোজ্য। কেননা, গোটা আরব জাতি তার দ্বারা গৌরবের অধিকারী হয়। পূর্ব-পশ্চিমের সমস্ত এলাকায় তাঁর আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁকে আল্লাহ এমন উন্নত ও কল্যাণকর শিক্ষা এবং সৎকর্ম-কুশলতা দান করেন যা পূর্বে কোন উম্মতকেই দেওয়া হয়নি। আরব জাতির এ মর্যাদা পাওয়ার কারণ হচ্ছে তাদের রাসলের আদৰ্শযিনি হচ্ছেন নবীকুল শিরোমণি। তার রিসালত হচ্ছে বরকতময়। তিনি হচ্ছেন ১। জন্যে রাসূল। তাঁর আনীত আদর্শ হচ্ছে পুণ্যতম আদর্শ। হাজেরা ঘরে ফে

Փ85

ইসমাঈল (আঃ) ভূমিষ্ঠ হন। এ সময় ইবরাহীম (আ)-এর বয়স হয়েছিল ছিয়াশি বছর। এটা হচ্ছে ইসহাক (আ)-এর জন্মের তের বছর পূর্বের ঘটনা। ইসমাঈল (আ.)-এর জন্মের পর আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আ)-কে সারাহর গর্ভে ইসহাক নামের সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেন। ইবরাহীম (আ) তখন আল্লাহর উদ্দেশে শোকরানা সিজদা আদায় করেন। আল্লাহ তাকে জানান যে, আমি তোমার দুআ ইসমাঈলের পক্ষে কবুল করেছি। তাকে বরকত দান করেছি। তাঁর বংশের বিস্তৃতি দান করেছি। তার সন্তানদের মধ্য থেকে বারজন প্রধানের জন্ম হবে। তাঁকে আমি বিরাট সম্প্রদায়ের প্রধান করব। এটাও এই উম্মতের জন্যে একটা সুসংবাদ। বারজন প্রধান হলেন সেই বারজন খলীফায়ে রাশিদা— যাদের কথা জাবির ইব্‌ন সামুরা সূত্রে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে- যাতে বলা হয়েছে যে, নবী করীম (সা) বলেছেন, ‘বারজন আমীর হবে।’ জাবির (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) এরপর একটা শব্দ বলেছেন, কিন্তু আমি তা বুঝতে পারিনি। তাই সে সম্পর্কে আমার পিতার কাছে জিজ্ঞেস করি। তিনি বললেন, রাসূলের সে শব্দটি হল ৬৯,৭০ ও ৬- *4©I< অর্থাৎ তারা সবাই হবেন কুরায়শ গোত্রের লোক।’ বুখারী ও মুসলিম এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অপর এক বর্ণনায় আছে : لا يزال هذا الامر قائما وفى رواية عزيزا حتى يكون اثنا عشرة

خلیفة کلهم من قریش. অর্থাৎ এই খিলাফত বারজন খলীফা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত বা শক্তিশালী থাকবে- এরা সবাই হবে কুরায়শ গোত্রের লোক। উক্ত বারজনের মধ্যে চারজন হলেন প্রথম চার খলীফা আবু বকর (রা), উমর (রা), উসমান (রা) ও আলী (রা); একজন উমর ইব্‌ন আবদুল আয়ীয (র); কতিপয় বনী আব্ববাসীয় খলীফা। বারজন খলীফা ধারাবাহিকভাবে হতে হবে এমন কোন কথা নাই, বরং যে কোনভাবে বারজনের বিদ্যমান হওয়াটাই জরুরী। উল্লিখিত বারজন ইমাম রাফিজী সম্প্রদায়ের কথিত ‘বার ইমাম’ নয়— যাদের প্রথমজন আলী ইব্‌ন তালিব (রা) আর শেষ ইমাম মুহাম্মদ ইব্‌ন হাসান আসকারী। এই শেষোক্ত ইমামের ব্যাপারে তাদের বিশ্বাস এই যে, তিনি সামেরার একটি ভূগর্ভস্থ প্রকোষ্ঠ থেকে তিনি বের হয়ে আসবেন— এরা তার প্রতীক্ষায় আছে। কারণ এই ইমামগণ হযরত আলী (রা) ও তার পুত্র হাসান ইব্‌ন আলী (রা) অপেক্ষা অধিকতর কল্যাণকামী হতে পারেন না। বিশেষ করে যখন স্বয়ং হাসান ইব্‌ন আলী (রা) যুদ্ধ পরিত্যাগ করে হযরত মু’আবিয়া (রা)-এর অনুকূলে খিলাফত ত্যাগ করেন। যার ফলে ফিৎনার আগুন নির্বাপিত হয়, মুসলমানদের মধ্যে পারস্পরিক গৃহযুদ্ধ বন্ধ হয়। অবশিষ্ট ইমামগণ তো অন্যদের শাসনাধীন ছিলেন। উম্মতের উপরে কোন বিষয়েই তাদের কোন আধিপত্য ছিল না। সামিরার ভূগর্ভস্থত প্রকোষ্ঠ সম্পর্কে রাফিজীদের যে বিশ্বাস তা নিতান্ত অবাস্তব কল্পনা ও হেঁয়ালীপনা ছাড়া আর কিছুই নয়, এর কোন ভিত্তি নেই।

হাজেরার গর্ভে ইসমাঈল (আঃ)-এর জন্ম হলে সারাহর ঈর্ষা পায়। তিনি হযরত ইবরাহীম (আ)-এর নিকট আবেদন জানান, যাতে হাজেরাকে তার চোখের আড়াল করে দেন। সুতরাং ইবরাহীম (আ) হাজেরা ও তাঁর পুত্রকে নিয়ে বের হয়ে পড়েন এবং মক্কায় নিয়ে রাখেন। বলা হয়ে থাকে যে, ইসমাঈল (আঃ) তখন দুধের শিশু ছিলেন। ইবরাহীম (আঃ) যখন তাদেরকে

WOGO

সেখানে রেখে ফিরে আসার জন্যে উদ্যত হলেন, তখন হাজেরা উঠে তার কাপড় জড়িয়ে ধরে বললেন, হে ইবরাহীম! আমাদেরকে এখানে খাদ্য-রসাদহীন অবস্থায় রেখে কোথায় যাচ্ছেন? ইবরাহীম (আ) কোন উত্তর দিলেন না, বারবার পীড়াপীড়ি করা সত্ত্বেও তিনি যখন জওয়াব দিলেন না, তখন হাজেরা জিজ্ঞেস করলেন, : ‘আল্লাহ কি এরূপ করতে আপনাকে আদেশ করেছেন?’ ইবরাহীম (আঃ) বললেন, ‘হ্যা’। হাজেরা বললেন, : ‘তাহলে আর কোন ভয় নেই। তিনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না।’ শায়খ আবু মুহাম্মদ ইব্‌ন আবী যায়ীদ (র) নাওয়াদির কিতাবে লিখেছেন : সারাহ হাজেরার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে কসম করলেন যে, তিনি তাঁর তিনটি অঙ্গ ছেদন করবেন। ইবরাহীম (আঃ) বললেন, দু’টি কান ছিদ্র করে দাও ও খাৎনা করিয়ে দাও এবং কসম থেকে মুক্ত হয়ে যাও। সুহায়লী বলেছেন : ‘এই হাজেরাই সর্বপ্রথম নারী যার খাৎনা করা হয়েছিল, সর্বপ্রথম যার উভয় কান ছিদ্র করা হয় এবং তিনিই সর্বপ্রথম দীর্ঘ আঁচল ব্যবহার করেন।’

ইসমাঈল (আ.) ও হাজেরাকে নিয়ে হযরত ইবরাহীম (আ)-এর ফারান পর্বতমালা তথা মক্কা ভূমিতে হিজরত ও কা’বা গৃহ নির্মাণ ইমাম বুখারী (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন : নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্দ

ব্যবহার শিখে ইসমাঈল (আঃ)-এর মায়ের নিকট থেকে। হাজেরা কোমরবন্দ ব্যবহার করতেন সারাহ্র দৃষ্টি থেকে নিজের পদচিহ্ন গোপন রাখার জন্যে।

হযরত ইবরাহীম (আ) হাজেরা ও ইসমাঈল (আঃ)-কে নিয়ে যখন মক্কায় যান, হাজেরা তখন তার শিশু পুত্রকে দুধ পান করাতেন। মসজিদে হারমের উচু অংশে বায়তুল্লাহর কাছে যম যম কূপের নিকটে অবস্থিত একটি বড় গাছের নিচে তিনি তাদেরকে রেখে আসেন। মক্কায় তখন না ছিল কোন মানুষ, না ছিল কোন পানি। এখানেই তিনি তাদেরকে রেখে এলেন। একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর ও একটি মশকে কিছু পানিও রাখলেন। তারপর ইবরাহীম (আ) যেদিক থেকে এসেছিলেন, সেদিকে ফিরে চললেন। হাজেরাও তাঁর পিছু পিছু ছুটে যান এবং জিজ্ঞেস করেন : ‘হে ইবরাহীম! আমাদেরকে এই শূন্য প্রান্তরে রেখে কোথায় যাচ্ছেন? যেখানে নেই কোন মানুষজন, নেই কোন খাদ্য-পানীয়।’ হাজেরা বার বার একথা বলা সত্ত্বেও ইবরাহীম (আ) তাঁর দিকে ফিরেও তাকালেন না। তখন হাজেরা জিজ্ঞেস করলেন : ‘আল্লাহ কি এরকম করতে আপনাকে আদেশ করেছেন?’ ইবরাহীম (আ) বললেন, ‘হ্যা’। হাজেরা বললেন : ‘তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না।’ একথা বলে হাজেরা ফিরে আসলেন এবং ইবরাহীম (আ)-ও চলে গেলেন। যখন তিনি ‘ছানিয়া’ (গিরিপথ) পর্যন্ত পৌছলেন, যেখান থেকে তাকে আর দেখা যাচ্ছিল না। তখন তিনি কা’বা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং দু’হাত তুলে নিম্নোক্ত দুআ পড়লেন :

‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার বংশধরদের কতককে বসবাস করালাম অনুর্বর উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট। হে আমাদের প্রতিপালক! এজন্যে যে, ওরা যেন সালাত কায়েম করে। অতএব, তুমি কিছু লোকের অন্তর তাদের দিকে অনুরাগী করে দাও এবং ফলাদি দ্বারা ওদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দাও। যাতে ওরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।’ (সূরা ইবরাহীম : ৩৭)।

ইসমাঈল (আঃ)-এর মা ইসমাঈলকে নিজের স্তনের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশকের পানি পান করতেন। শেষে মশকের পানি ফুরিয়ে গেলে মা ও শিশু উভয়ে তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েন। শিশুর প্রতি তাকিয়ে দেখেন, পিপাসায় তার বুক ধড়ফড় করছে কিংবা মাটিতে পড়ে ছট্‌ফটু করছে। শিশু পুত্রের এ করুণ অবস্থা দেখে সহ্য করতে না পেরে মা সেখান থেকে উঠে গেলেন এবং নিকটবতী সাফা পর্বতে আরোহণ করলেন। সেখান থেকে প্রান্তরের দিকে তাকিয়ে কাউকে দেখা যায়। কিনা লক্ষ্য করলেন। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। তারপর সাফা পর্বত থেকে হাজেরা নেমে নিম্ন ভূমিতে চলে আসলে তিনি তাঁর জামার আঁচলের একদিক উঠিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত ব্যক্তির মত ছুটে চললেন। নীচু ভূমি পাড়ি দিয়ে তিনি মারওয়া পাহাড়ে ওঠেন। চতুর্দিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলেন, কাউকে দেখা যায়। কিনা। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এভাবে তিনি সাতবার আসা-যাওয়া করেন। ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, এ জন্যেই লোকজন হজ্জ ও উমরায় উভয় পাহাড়ের মাঝে সাতবার সাঈ করে থাকেন। মারওয়া পাহাড়ে উঠে তিনি একটি আওয়াজ শুনতে পান। তিনি তখন নিজেকে লক্ষ্য করে বলেন, : চুপ করা! তারপর কান পেতে পুনরায় ঐ একই আওয়াজ শুনতে পেলেন। হাজেরা তখন বললেন, তোমার আওয়াজ শুনেছি, যদি সাহায্য করতে পার, তবে সাহায্য কর! এমন সময় তিনি দেখতে পূেলেন যে, যম যম কূপের স্থানে একজন ফেরেশতা দাড়িয়ে আছেন। ফেরেশতা নিজের পায়ের গোড়ালি দ্বারা কিংবা তার ডানা দ্বারা মাটিতে আঘাত করতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত পানি বের হয়ে আসে। তখন হাজেরা এর চারপাশে আপন হাত দ্বারা বাধা দিয়ে হাউজের ন্যায় করে দিলেন এবং আজলা ভরে মশাকে পানি তোলার পরও পানি উপচে পড়তে লাগল।

ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, ইসমাঈল (আঃ)-এর মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি যম যমকে বাঁধ না দিয়ে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা তিনি বলেছেন : যদি তিনি আঁজলা ভরে পানি মিশকে জমা না করতেন, তা হলে যম যম একটি কূপ না হয়ে প্রবহমান ঝর্ণায় পরিণত হত। তারপর হাজেরা পানি পান করলেন এবং শিশু-পুত্রকে দুধ পান করালেন। ফেরেশতা তাকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোন আশংকা করবেন না। কেননা, এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। একে এই শিশু ও তাঁর পিতা পুনঃনির্মাণ করবেন। আল্লাহ তার পরিজনকে বিনাশ করবেন না। ঐ সময় আল্লাহর এ ঘরটি মাটির থেকে কিছু উচু ঢিবির মত ছিল। বন্যার পানির ফলে তার ডান ও বামদিকে ভাঙন ধরেছিল। হাজেরা এভাবে দিনযাপন করছিলেন। পরিশেষে জুরহুম গোত্রের য়ামান দেশীয়]] একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। অথবা জুরহুম পরিবারের কিছু লোক ঐ পথ ধরে এদিকে আসছিল। তারা মক্কার নিচু ভূমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল যে, একটা পাখি চক্রাকারে উড়ছে।

Yod S

তখন তারা বলাবলি করল, নিশ্চয় এ পাখিটি পানির উপরই উড়ছে অথচ আমরা এ উপত্যকায় বহুদিন কাটিয়েছি, এখানে কোন পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দু’জন মশকধারী লোক সেখানে পাঠান। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে সবাইকে পানির সংবাদ দিল। সংবাদ পেয়ে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। ইসমাঈল (আঃ)-এর মা ঐ সময় পানির নিকট বসা ছিলেন। তারা তার নিকটবতী স্থানে বসবাস করার অনুমতি চাইল। হাজেরা জবাব দিলেন : হ্যা, থাকতে পোর, তবে এ পানির ওপর তোমাদের কোন অধিকার থাকবে না। তারা তা মেনে निळ्ल।

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈল (আ)-এর মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। সেও মানুষের সাহচর্য চাচ্ছিল। এরপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার-পরিজনের কাছেও সংবাদ পাঠাল, তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। এদিকে ইসমাঈল (আঃ) যৌবনে উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌঁছে তিনি তাদের কাছে আকর্ষণীয় ও প্ৰিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈল (আঃ)-এর মা হাজেরার ইন্তিকাল হয়। ইসমাঈল (আঃ)-এর বিবাহের পর ইবরাহীম (আ) তাঁর পরিত্যক্ত পরিবারকে দেখার জন্যে এখানে আসেন। কিন্তু ইসমাঈল (আ)-কে পেলেন না। তখন তার স্ত্রীকে তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। স্ত্রী জানালেন, তিনি আমাদের জীবিকার খোজে বেরিয়ে গেছেন। তখন তিনি তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। সে জানায়, আমরা অতি কষ্টে, অভাব-অনটনে আছি। সে তার কাছে নিজেদের দুর্দশার অভিযোগ করল। তখন ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমার স্বামী বাড়ি ফিরে এলে আমার সালাম জানাবে এবং তাকে দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলতে বলবে।

ইসমাঈল (আঃ) বাড়ি ফিরে এলে তিনি যেন কিছু একটা ঘটনার আভাস পেলেন। স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তােমাদের কাছে কি কোন লোক এসেছিল? স্ত্রী বলল, হ্যা, এই এই আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন। তিনি আপনার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আমি তা জানিয়েছি। আমাদের জীবনযাত্ৰা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি বলেছি যে, আমরা খুব কষ্টে ও অভাবে আছি। ইসমাঈল (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তিনি তোমাকে কোন উপদেশ দিয়েছেন কি? স্ত্রী বলল, হ্যা, আপনাকে তাঁর সালাম জানাতে বলেছেন ও আপনাকে দরজার চৌকাঠ বদলাতে বলেছেন। ইসমাঈল (আঃ) বললেন, ইনি আমার পিতা। তোমাকে ত্যাগ করার জন্যে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং তুমি তোমার আপনজনদের কাছে চলে যাও। তখন তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং জুরহুম গোত্রের অন্য এক মহিলাকে বিবাহ করেন। ইবরাহীম (আ) দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাদের থেকে দূরেই রইলেন। তারপর হযরত ইবরাহীম (আ) তাদেরকে পুনরায় দেখতে এলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈলকে বাড়িতে পেলেন না। পুত্রবধুর নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানালেন, ‘তিনি আমাদের জীবিকার অন্বেষণে বাইরে গেছেন।’ ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমরা কেমন আছ, তোমাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা কেমন? জবাবে পুত্ৰবধু বললেন, : আমরা ভাল আছি ও স্বচ্ছন্দে আছি, সাথে সাথে

NO(fՖ

মহিলাটি আল্লাহর প্রশংসাও করলেন। ইবরাহীম (আ) জিজ্ঞেস করলেন, সাধারণত তোমাদের খাদ্য কী? তিনি বললেন, : গোশত। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, : তোমাদের পানীয় কি? তিনি বললেন, পানি। ইবরাহীম (আ) দু’আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! এদের গোশত ও পানিতে বরকত प्र यः।।’

নবী করীম (সা) বলেছেন, ঐ সময় তাদের ওখানে খাদ্যশস্য উৎপাদিত হত না। যদি হত তা হলে তিনি তাদের জন্যে সে বিষয়েও দুআ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ব্যতীত অন্য কোথাও কেউ শুধু গোশত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারে না। কেননা, শুধু গোশত ও পানি জীবন যাপনের অনুকুল হতে পারে না। ইবরাহীম (আ) বললেন, তোমার স্বামী যখন বাড়িতে আসবে তখন আমার সালাম জানাবে ও দরজার চৌকাঠ অপরিবর্তিত রাখতে বলবে। ইসমাঈল (আঃ) যখন বাড়িতে আসলেন, তখন স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিল কি? স্ত্রী বললেনঃ হ্যা, একজন সুন্দর আকৃতির বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন। স্ত্রী আগন্তুকের প্ৰশংসা করলেন। তিনি, আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। তিনি আমাদের জীবনযাত্রা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছেন। আমি জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল (আঃ) বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোন উপদেশ দিয়েছেন? স্ত্রী বললেন, হ্যা, তিনি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন ও আপনার দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখতে বলেছেন। ইসমাঈল (আঃ) বললেন, ইনি আমার পিতা। তোমাকে স্ত্রীরূপে বহাল রাখতে আদেশ

করেছেন।

পুনরায় ইবরাহীম (আ) এদের থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত দূরেই থাকলেন। তারপর ইবরাহীম (আ) পুনরায় তথায় আসলেন। দেখলেন, ইসমাঈল যম যম কূপের নিকটে বিরাট এক বৃক্ষের নিচে বসে তীর চাছছিলেন। পিতাকে দেখে তিনি তার দিকে এগিয়ে আসলেন। অতঃপর উভয়ে এমনভাবে পরস্পরকে আলিঙ্গন করলেন, যেমন সাধারণত পিতাপুত্রের মধ্যে হয়ে থাকে। এরপর ইবরাহীম (আ) বললেন, হে ইসমাঈল!! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের আদেশ করেছেন। ইসমাঈল (আঃ) বললেন, আল্লাহ যে আদেশ করেছেন তা বাস্তবায়িত করুন। ইবরাহীম (আ) বললেন, তুমি আমাকে সাহায্য করবে? ইসমাঈল (আঃ) বললেন, : নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাহায্য করব। ইবরাহীম (আ) পার্শ্বে অবস্থিত উচু ঢিবিটির দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আল্লাহ আমাকে এ স্থানটি ঘিরে একটি ঘর নির্মাণের আদেশ দিয়েছেন। তখন তারা উভয়ে কা’বা ঘরের দেয়াল উঠাতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল (আ.) পাথর আনতেন ও ইবরাহীম (আ) গাঁথুনী দিতেন। শেষে যখন দেয়াল উচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল (আ) ‘মাকামে ইবরাহীম’ নামে প্রসিদ্ধ পাথরটি আনলেন এবং সেখানে রাখলেন। ইবরাহীম (আ) তার উপর দাঁড়িয়ে ইমারত তৈরি করতে লাগলেন আর ইসমাঈল (আঃ) তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁরা উভয়ে নিম্নের দু’আটি পাঠ করেন -514, 14 01 44 1145

  • 1161 544.J৷ এ. হে আমাদের রব! আমাদের থেকে এ কাজ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সবকিছু শোনেন ও জানেন। (সূরা বাকারা : ১২৭) (১ম খণ্ড) ৪৫

V©(ሱ8

এভাবে তারা দু’জনে কা’বাঘার নির্মাণ কাজ শেষ করেন এবং কাজ শেষে ঘরের চারদিকে তাওয়াফ করেন এবং উক্ত দুআ পাঠ করেন। ইমাম বুখারী (র) ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, : যখন ইবরাহীম (আ) ও তাঁর স্ত্রী সারাহর মধ্যে যা ঘটার ঘটে গেল, তখন তিনি ইসমাঈল (আ.) ও তাঁর মাকে নিয়ে বের হয়ে যান। তাদের সাথে পানি ভর্তি একটি মশক ছিল। তারপর ইমাম বুখারী (র) পূর্বোল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ ঘটনার বিবরণ দেন। হাদীসটি ইব্‌ন আব্বাসের উক্তি। এর কিছু অংশ মারফু’ আর কিছু গরীব।’ পর্যায়ের। ইব্‌ন আব্বাস (রা) সম্ভবত ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, ইসমাঈল (আ) ঐ সময় দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন। তাওরাত পহীরা বলেন, আল্লাহ ইবরাহীম (আ)-কে পুত্ৰ ইসমাঈল (আঃ) ও তার কাছে আর যত দাস ও অন্যান্য লোক ছিল তাদের খাতানার নির্দেশ দেন। তিনি এ নির্দেশ পালন করেন এবং সবাইকে খাৎনা করান। এ সময় ইবরাহীম (আ)-এর বয়স হয়েছিল নিরানব্বই বছর ও ইসমাঈল (আঃ)-এর বয়স ছিল তের বছর। খাতুনা করাটা ছিল আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে। এতে প্রতীয়মান হয়, অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবেই তিনি তা পালন করেন। এ কারণেই উলামায়ে কিরাম খাতুনা করা ওয়াজিব বলেছেন—এ মতই সঠিক।

বুখারী শরীফে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সা) বলেছেন : ইবরাহীম (আ) আশি বছর বয়সে (জুতারের) বাইসের (৩১a Ju) সাহায্যে নিজের খাতনা করেন। আবদুর রহমান ইব্‌ন ইসহাক, আজলান, মুহাম্মদ ইব্‌ন আমরা ও ইমাম মুসলিম ভিন্ন ভিন্ন সনদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। উক্ত বর্ণনায় ব্যবহৃত ‘কুদুম’ শব্দটির অর্থ ধারাল অস্ত্ৰ। কেউ কেউ এটি একটি স্থানের নাম বলেছেন। এসব হাদীসের শব্দের মধ্যে কিছু কিছু পার্থক্য মেধ্য আছে। ইব্‌ন হিব্বান (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : নবী ইবরাহীম (আ) একশ’ বিশ বছর বয়সে খাতুনা করান। এর পরেও আশি বছর জীবিত থাকেন। এসব বর্ণনায় ইসমাঈল (আঃ)-কে ‘যাবীহ’ বলে উল্লেখ করা হয়নি এবং এতে ইবরাহীম (আ)-এর তিনবার আগমনের কথা বলা হয়েছে। প্রথমবার আগমন করেন তখন, যখন হাজেরার মৃত্যু হয় ও ইসমাঈল (আ) বিবাহ করেন। শিশুকালে রেখে আসার পর থেকে ইসমাঈলের বিবাহ করা পর্যন্ত তিনি আর তাদের খোঁজ-খবর নেননি। বলা হয় যে, সফরকালে ইবরাহীম (আ)-এর জন্যে যমীনের দূরত্ব সংকুচিত হয়ে যেত। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি যখন আসতেন তখন বিদ্যুতের গতিসম্পন্ন বাহন বুরাকে চড়ে আসতেন। এ যদি হয় তাহলে হযরত ইবরাহীম (আ) তাদের সংবাদ না নিয়ে কিভাবে দূরে পড়ে থাকতে পারেন? অথচ নিজের পরিজনের সংবাদ রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব; বিশেষ করে যে অবস্থায় তাদের রেখে এসেছিলেন। এসব ঘটনার কিছু অংশ ইসরাঈলী বৰ্ণনা থেকে নেয়া। অবশ্য কিছু আছে মারফ’ হাদীস। তবে এতে ‘যাবীহ’-এর ঘটনার উল্লেখ নেই। কিন্তু তাফসীরের মধ্যে সূরা সাফফাতে আমরা দলীলসহ উল্লেখ করেছি যে, ‘যাবীহ হলেন হযরত ইসমাঈল (আঃ)।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *