২১. মোসাদ্দেক সাহেব

মোসাদ্দেক ভাই, আমাকে চিনতে পারছেন?

মোসাদ্দেক সাহেব বারান্দায় একটা জলচৌকির উপর বসে আছেন। ওয়েল কালারের হলুদ রঙের একটা টিউবের মুখ জ্যাম হয়ে গেছে। হাজার টিপটিপি করেও রঙ বের করা যাচ্ছে না। তিনি বটি দিয়ে মুখটা কেটেছেন। মুখ কাটতে গিয়ে বা হাতের বুড়ো আঙুল কেটে গেছে। ফোটা ফোটা রক্ত পড়ছে। তিনি মুগ্ধ হয়ে বুক্তের রঙ দেখছেন। রঙটা তার কাছে আশ্চর্য সুন্দর লাগছে। ওয়েল কালার কি রক্তে ডিজলভড হবে? তাহলে তার্পিনের বদলে থিনার হিসেবে রক্ত ব্যবহার করা যেত ওয়েল কালারে ব্যবহার না করা গেলেও ওয়াটার কালারে নিশ্চয়ই ব্যরহার করা যাবে। তবে রক্তের রঙ স্থায়ী না–কিছুক্ষণের ভেতর কালচে হয়ে যায়। এতে অন্য রকম একটা এফেক্ট হতে পারে। বিভিন্ন রঙের সঙ্গে রক্ত মিশিয়ে একটা এক্সপেরিমেন্ট করা যেতে পারে। তার জন্যে অনেকখানি রক্ত দরকার। বুড়ে আঙুল থের্কে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে। আরো কিছু রক্ত পড়লে ভাল হত। আঙুলটা আরেকটু বেশী কাটলে ভাল হত। এর কাটল কেন?

মোসাদ্দেক সাহেব যখন রক্ত নিয়ে এই জাতীয় চিন্তা-ভাবনা করছিলেন তখনই সাজ্জাদ এসে বলল, আমাকে চিনতে পারছেন? গভীর চিন্তায় বাধা পেলে যে-কেউ বিরক্ত হয়। মোসাদ্দেক সাহেব হন না। তিনি চিন্তাটাকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখেন। আবার অবসর মত শুরু করেন।

মোসাদ্দেক ভাই, আমাকে চিনতে পারছেন?

মোসাদ্দেক সাহেব বললেন, কেমন আছ সাজ্জাদ?

জ্বি ভাল। আপনি দেখি আঙুল কেটে ফেলেছেন।

হুঁ।

অনেক রক্ত পড়েছে। এতটা কাটল কি ভাবে?

দা দিয়ে।

আপনার শরীর ভাল মোসাদ্দেক ভাই?

হ্যাঁ, শরীর ভাল।

আমার তো দেখে মনে হচ্ছে খুব কাহিল। অসুখ-বিসুখ না-কি?

বেশ কিছুদিন থেকে বুকে ব্যথা হচ্ছে। মনে হয় লাংস ক্যানসার।

এখনো কি হচ্ছে?

না।

আমি আপনার জন্যে দুবোতল হুইস্কি নিয়ে এসেছি। ভালটা পেলাম না–হাতের কাছে যা পেয়েছি–এনেছি। হানড্রেড পাইপার।

আচ্ছা।

তিনি এমনভাবে আচ্ছা বললেন যে খুশি হলেন কি বোজার হলেন বুঝতে পারা গোল না। আসলে তিনি রক্ত নিয়ে চিন্তা ভাবনা আবার শুরু করতে যাচ্ছেন।

সাজ্জাদ নিতান্ত পরিচিতজনের মত ঘরে ঢুকে পড়ল। এখানে সে অবশ্যি খুব অপরিচিতও নয়। এর আগে সে চারদিন কাটিয়ে গেছে। ঘর-দুয়ার আগে যেমন ছিল এখনো সে রকমই আছে। সেই স্টেভি, সেই থালা-বাসন। জানালায় সেই আগের রঙজ্বলা হলুদ পর্দাঁ। দেয়ালে মাকড়সার ঝুল। মাকড়সার ঝুলের পরিমাণও স্থির। বাড়েওনি, কমেওনি। এই বাড়িটায় সময় মনে হয় স্থির হয়ে আছে। সাজ্জাদ আবার বারান্দায় এল।

মোসাদ্দেক ভাই!

হুঁ।

কণা কি এর মধ্যে এসেছিল?

না।

ন্যুড ছবির ফরমাশ এখন আর পান না?

না।

চায়ের সরঞ্জাম কি আছে?

না।

চা খেতে চাইলে কি করেন–দোকানে বলে আসেন?

হু।

আপনার এখানে আসার আমার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে মোসাদ্দেক ভাই।

আচ্ছা।

উদ্দেশ্যটা হচ্ছে–আমার একটা নুড পোট্রেট দরকার। আপনি পোট্রেটের জন্য কত নেন?

চার হাজার।

আমি আপনাকে চার হাজারের অনেকে বেশি দেব। আমাকে ভালমত এঁকে দিতে হবে।

আচ্ছা পোটেন্টটা কার–কণার?

না। কণার না। তবে কণাকে আপনি মডেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। যার পোট্রেট সে কখনো মডেল হবে না।

আচ্ছা। ঐ মেয়েটির মুখের ছবি লাগবে। বড় ছবি। সামনাসামনি ছবি এবং প্রোফাইলের ছবি।

আমি জোগাড় করে দেব। একটা ছবি শেষ করতে কতদিন লাগে?

আমি দ্রুত কাজ করি। সময় লাগে না। ধর এক সপ্তাহ। তবে ভাল করে আঁকতে সময় লাগে।

আপনি সময় নিন। কিন্তু খুব ভাল করে আঁকবেন। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড কি রকম হবে আপনাকে বলে দেব?

দাও। আমি ফরমায়েশী কাজই করি। নিজের ইচ্ছায় কিছু আঁকি না।

মনে করুন। একটা নির্জন বন। সাধারণ বন না–কদম্ব বন। বর্ষাকাল। গাছ ভর্তি কদম ফুল ফুটেছে। কদম্ব বনের মাঝখানে ছোট্ট একটা পুকুরের পাড়ে মেয়েটি নাচছে। আপন মনে নাচছে। যেহেতু চারপাশে কেউ নেই সেহেতু মেয়েটি তার নগ্ন শরীর নিয়ে চিন্তিত নয়। আমি কি দৃশ্যটা আপনাকে বুঝাতে পেরেছি?

হুঁ। ছবির সময়টা কি?

সন্ধ্যা। গাছের মাথায় সন্ধ্যার শেষ আলো পড়েছে।

আকাশ দেখা যাচ্ছে?

না। তবে পুকুরের জলে আকাশের ছায়া পড়েছে।

জটিল ছবি। আঁকতে সময় লাগবে।

আপনি সময় নিন। আমার কোন তাড়া নেই। আপনি চার হাজার চেয়েছেন–আমি দশ হাজার টাকা নিয়ে এসেছি। টাকাটা কি এখন দেব?

দাও।

সাজ্জাদ টাকা বের করে দিল। মোসাদ্দেক সাহেব টাকা হাতে নিলেন। দুবার গুনলেন। তারপর পাঞ্জাবি গায়ে বের হয়ে গেলেন। কোথায় যাচ্ছেন সাজ্জাদকে বলে গেলেন না। তার বুড়ো হাতের আঙুলের রক্ত আবার ফোটা ফোটা পড়তে শুরু করেছে। মোসাদ্দেক সাহেবের ভুরু কুঁচকে আছে। এক নাগাড়ে অনেকখানি রক্ত পড়লে ভাল হত। এক্সপেরিমেন্টটা করা যেত। শুধু শুধু রক্তটা নষ্ট হচ্ছে।

 

সাজ্জাদ রাত দুটায় লীলাবতীকে টেলিফোন করল। লীলাবতী ঘুমুচ্ছিল। সে টেলিফোন ধরল আধো-ঘুম ও আধো-তন্দ্রায়।

হ্যালো, কে?

আমি সাজ্জাদ–তুমি কি ঘুমুচ্ছিলে?

হুঁ।

ঘুম ভাঙালাম?

হুঁ।

দুঃখিত লীলাবতী।

দুঃখিত হবার দরকার নেই। কেন টেলিফোন করেছেন?

তুমি ঘুমুচ্ছ না জেগে আছ, এটা জানার জন্যে।

যা জানার তা তো জেনে গেছেন। এখন কি টেলিফোন রেখে দেবেন?

না, কিছুক্ষণ গল্প করব। আমার ঘুম আসছে না। কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।

আমার কথা মনে পড়ল?

ঠিক তাও না। তুমি তোমার টেলিফোন নাম্বার দেয়ালে লিখে রেখে গিয়েছিলে। চোখের সামনে নাম্বারটা জ্বলজ্বল করছে।

দেয়াল নষ্ট করার জন্যে দুঃখিত।

জন্মদিনের পার্টি থেকে যে ঘাড় ধরে বের করে দিলে তার জন্যে দুঃখিত না?

না। আমি খুব খুশি হব। যদি আর কখনো আমাদের বাড়িতে না আসেন।

আচ্ছা আসব না। দেয়ালে লেখা টেলিফোন নাম্বারটা কি মুছে ফেলব?

না, এটা থাকুক। এই নাম্বারটা ঘুমের অষুধ হিসেবে ব্যবহার করবেন। ঘুম না এলে টেলিফোন করবেন।

টেলিফোন করলে অসুবিধা নেই?

না, তাতে অসুবিধা নেই। দূর থেকে আপনি চমৎকার মানুষ। কাছ থেকে না। খুব কাছ থেকে যে আপনাকে দেখতে যাবে সেই একটা শক খাবে।

আমার নিজেরো তাই ধারণা। আচ্ছা শোন লীলাবতী, তোমার নাচ বিষয়ে একটা কথা।

নাচ প্ৰসঙ্গ থাক। অন্য প্রসঙ্গ আলোচনা করুন—

সামান্য একটা প্রশ্ন। এক অক্ষরে জবাব দেয়া যায় এ রকম।

প্রশ্নটা কি? তুমি কি সম্পূর্ণ নিজের আনন্দে একা একা কখনো নাচ? মানুষ যেমন একা একা গান গায় সে রকম?

হ্যাঁ, নাচি।

এখন বল একা একা যখন নাচ তখন কি সামনে কাউকে কল্পনা করে নিতে হয়?

লীলাবতী চুপ করে রইল। সাজ্জাদ আগ্রহের সঙ্গে বলল, চুপ করে আছ কেন? বল।

লীলাবতী নিচু গলায় বলল, হ্যাঁ, কল্পনা করে নিতে হয়।

কাজেই চিন্তা করে দেখা নৃত্যকলা এমন এক বিদ্যা যা সৃষ্টি হয়েছে অন্যের জন্যে। গান কিন্তু নিজের জন্যেও।

নৃত্যকলা নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি না।

আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি কি তোমার কয়েকটা ছবি আমাকে দেবে?

কি দেব?

ছবি। ফটোগ্রাফ।

কেন?

আছে, আমার একটা কাজ আছে। তিনটা ছবি–একটা সামনে থেকে, দুটা প্রোফাইল। লেফট প্রোফাইল এবং রাইট প্রোফাইল।

লীলাবতী গম্ভীর গলায় বলল, কেন চাচ্ছেন আগে বলুন।

সাজ্জাদ বলল, আগে বলব না। আমি টেলিফোন রেখে দিচ্ছি। ভাল থেকো।

ভাল লাগছে না। কিছু ভাল লাগছে না। ভয়ংকর কিছু করতে ইচ্ছে করছে। ভয়ংকর কিছু। ঈশ্বর মানুষকে ভয়ংকর কোণ্ড করার ক্ষমতা দিয়ে পাঠান। কিন্তু বার বার বলে দেন–তোমরা ভয়ংকর কিছু করো না। সাবধান, সাবধান, সাবধান। তিনি যদি চাইতেন মানুষ ভয়ংকর কিছু করবে না। তাহলে তাদের সেই ক্ষমতা না দিলেই পারতেন। তাদের প্রজাপতি বানিয়ে হত। তারা রঙ্গিন পাখা মেলে ফুলে ফুলে উড়বে। কোনদিন ভয়ংকর কিছু করতে পারবে না।

সাজ্জাদ হাত বাড়িয়ে এডমন্ড স্পেনসারের কবিতার বই টেনে নিল। কোন বাছাবাছি না। বই খুললে প্রথম যে কবিতাটি বের হবে সেটাই পাঠ করা হবে। পাঠ এবং তাৎক্ষণিক অনুবাদ। লীলাবতী পাশে থাকলে ভাল হত। তাকে বলা যেত–লীলা তুমি হাতে কলম নাও। নাচের মুদ্রার মত কলামটা ধর যেন এটা কলম না, এটা একটা পদ্মফুল। তারপর আমি যা বলব তুমি লিখে ফেলবে। কবিতার পালা শেষ হলে নাচ হবে–তুমি নাচবে আমি দেখব। ঘরে বাতি থাকবে না। তুমি নাচবে অন্ধকারে আমি অন্ধকারেই তোমাকে দেখার চেষ্টা করব। পৃথিবীর প্রকৃত রূপ লুকিয়ে থাকে অন্ধকারে। কারণ কল্পনার জন্ম অন্ধকারে, পরাবাস্তবে। সাজ্জাদ বই খুলল—

Unhappy verse, the witness of my unhappy state,

লীলাবতী তাড়াতাড়ি লেখ–

অসুখী পংক্তিমালা, দেখো দেখো আমার অসুখ দেখো।

হচ্ছেনা অসুখী পংতিমালা অসুখ দেখবে না। সে অসুখের সাক্ষি হবে। তাছাড়া পংক্তিমালা কখনো অসুখী হয় না … এডমন্ড স্পেনসার সাহেব এইসব কি হাবিজাবি লিখছেন?

বরিশালের ছায়াময় শহরের জীবনানন্দ দাস কি বলেন?

নির্জন আমের ডালে দুলে যায়–দুলে যায়–বাতাসের সাথে বহুক্ষণ।
শুধু কথা, গান নয়–নীরবতা রচিতেছে আমাদের সবের জীবন।

মন্দ না–নীরবতা রাচিতেছে আমাদের সবের জীবন। এক আশ্চর্য নীরবতা আমাদের ভেতর অথচ আমরা বাস করি সরব পৃথিবীতে। এক আশ্চর্য অন্ধকার আমাদের ভেতর–অথচ আমরা বাস করি আলোর ভুবনে। মাতৃজঠরের অন্ধকারের স্মৃতি মাথায় নিয়ে আমরা আলোর আরাধনা করি। উল্টোটা করাই কি যুক্তিযুক্ত না?

সাজ্জাদ ড্রয়ার খুলল। তার পা টলছে, হাত কাঁপছে তাকে কেমন যেন নেশাগ্ৰস্ত মনে হচ্ছে। অথচ সে কোন নেশা করেনি। এখন করবে। আফিং-এর একটা ডেরিভেটিভ শরীরে ঢুকিয়ে দেবে। মরফিনকে এসিটিক এনহাইড্রাইড দিয়ে মিশিয়ে যে বস্তুটি তৈরি করা হয়েছে যার নাম হেরোইন। হেনরিখ ড্রেসার সাহেবের মহান (?) আবিহুকার! যখন প্রথম তৈরি করা হল তখন পৃথিবীর প্রথম সাড়ির বিজ্ঞানীরা মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন–এটি একটা বড় ধরনের আবিষ্কার। এই আবিষ্কার ব্যবহৃত হবে মানব কল্যাণে। আজ উল্টোটা হয়েছে। হেনরিখ ড়েসার সাহেব ফ্রাংকেনস্টাইন তৈরি করেছেন।

সাজ্জাদ শাদা পাউডারের দ্রবণ তৈরি করল খুব সাবধানে। পাকা কেমিষ্টের মত। হাইপারডারমিক সিরিঞ্জে দ্রবণটা ঢুকাল। এই কাজটিও করা হল নিখুঁতভাবে। এখন শুধু শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া–ব্যাপারটা দুভাবে করা যেতে পারে। চামড়ার নিচে ঢুকিয়ে দেয়া, কিংবা সরাসরি কোন রক্তবাহী শিরায় ঢুকিয়ে দেয়া। রক্তে ঢোকার সঙ্গে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠবে। প্রচণ্ড একটা ঝড় শরীরের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। শরীরের প্রতিটি জীবকোষ এক সঙ্গে নেচে উঠবে।

লীলাবতী তুমি কি এই নাচের খবর জান? না, তুমি এই নাচের খবর জান না। এ এক অদৃশ্য নাচ।

তারপরের সময়টা নৃত্যক্লান্ত নর্তকীর অবসাদের মত। সে অবসাদও আনন্দময় অবসাদ। এক ধরনের মুক্তি। সরব পৃথিবী থেকে মুক্তি, আলো থেকে মুক্তি। উল্টো যাত্রা।

If in bed, tell her that my eyes can take not rest :
If at board, tell her that my mouth can eat no meat;
If at her virginals, tell her I can heat no mirth.

এটা করে কবিতা? কে আবৃত্তি করছে? সাজ্জাদ কুণ্ডুলি পাকিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে। খোলা জানোলা দিয়ে শীতল হওয়া আসছে। শীত লাগছে। শরীর কাঁপিছে। ভাল লাগছে। খুব ভাল লাগছে। যিনি কবিতা আবৃত্তি করছেন তার কণ্ঠ ভরাট। কে এই ভদ্রলোক কে? ঘরে বাতি জ্বলছে। বাতির আলো ধীরে ধীরে কমে আসছে। কি সুন্দর করেই না আলো কমছে। আহ অন্ধকারের দিকে যাত্রা এত আনন্দময়?

সাজ্জাদ চোখ বন্ধ করে গাঢ় স্বরে বলল, লীলাবতী এসো, তুমি এসো। বিছানায় উঠে এসো। না আমাকে স্পর্শ করার কোন দরকার নেই। তুমি শুধু তাকিয়ে থাক আমার দিকে–আমি তাকিয়ে থাকবে তোমার আশ্চর্য সুন্দর চোখের দিকে। তুমি জান তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি কি দেখি? I can see the universe. তুমি কি একটা কাজ করতে পারবে? তোমার চোখ দুটা আমাকে দিয়ে দেবে? তোমার শরীর তোমারই থাকুক। সেই শরীর নিয়ে যত ইচ্ছা তুমি নেচে বেড়াও শুধু চোখ দুটা আমাকে দিয়ে দাও। আমি একটা হরলিক্সের কৌটায় দুটা চোখ রেখে দেব। না চোখ নষ্ট হবে না। আমি ফরমালিনে ড়ুবিয়ে রাখব। তুমি কি জান ফরমালিন কি? ফরমালিন হচ্ছে ফাইভ পার্সেন্ট ফরমালডিহাইডের দ্রবণ।

এর রাসায়নিক সংকেত হচ্ছে–HCHO

সাজ্জাদ নিজের মনেই হাসল। ঘরের আলো আরো কমে আসছে–সুন্দর একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কে এসেছে। ঘরে? লীলাবতী? তার কি হেলো সিনেশন হচ্ছে? মরফিন ডিরিভেটিভের কি হেলো সিনেটিং এফেক্ট আছে? সাজ্জাদ বিড় বিড় করে বলল, এসো লীলাবতী, এসো!

সুন্দর একটা গান ছিল না ঘরে আসা নিয়ে? এসো আমার ঘরে এসো, . .  এই জাতীয়। গানের সুর মাথায় আসছে, কথা আসছে না। আবার যখন কথা মনে আসছে তখন সুর মনে আসছে না। হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা সূত্রের মত। যখন গতি জানা যায় তখন অবস্থান অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দুটি অনিশ্চয়তার গুনফল সমান h প্ল্যাংক কনসটেন্ট। এই ভদ্রলোক ১৯০৫ সনে জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটির মিটিং-এ বলেছিলেন–আচ্ছা মাথার মধ্যে অংক ঘুরছে কেন? গান কোথায় গেল? গান?’

এসো আমার ঘরে…

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *