২১. বারসীসা-এর ঘটনা

বারসীসা-এর ঘটনা

এটি জুরায়জের ঘটনার বিপরীত। জুরায়জ ছিলেন পুতঃপবিত্র আর বারসীসা ছিল পথ-ভ্ৰষ্ট। আল্লাহ তাআলার বাণী :

এরা শয়তানের মত, সে মানুষকে বলে, কুফরী করা, তারপর যখন সে কুফরী করে তখন সে বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।* ফলে উভয়ের পরিণাম হবে জাহান্নাম। সেথায় তারা স্থায়ী হবে। আর এটাই জালিমদের কর্মফল। এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে ইব্‌ন জারীর আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রা) সূত্রে

বলেন, একজন মহিলা বকরী চর্যাত। তার ছিল চার ভাই। রাতের বেলা সে ধর্মযাজকের উপাসনালয়ে এসে আশ্রয় নিত।

একদিন যাজক এসে তার সাথে কুকর্ম করে। তাতে সে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। শয়তান এসে প্ররোচণা দিয়ে বলে, মহিলাকে খুন করে মাটি চাপা দিয়ে দাও। লোকে তো তোমাকে বিশ্বাস করে। তারা তোমার কথা শুনবে। শয়তানের প্ররোচণায় সে মহিলাটিকে খুন করে এবং মাটি চাপা দিয়ে দেয়। এবার শয়তান স্বপ্নে মহিলার ভাইদের নিকট উপস্থিত হয়। তাদেরকে বলে যে, উপসনালয়ের যাজক তোমাদের বোনের সাথে কুকর্ম করেছে এবং সে অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ায় তাকে খুন করে অমুক স্থানে মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে। সকাল হলে ভাইদের একজন বললো, আল্লাহর কসম! গত রাতে আমি এক আশ্চর্যজনক স্বপ্ন দেখি, সেটি তোমাদেরকে বলব। কি বলব না তা স্থির করতে পারছি না।

অন্যরা বলল, তুমি বরং ঐ স্বপ্নের কথা আমাদেরকে বল। সে তা বর্ণনা করলো। অন্যজন বললো, আল্লাহর কসম, আমিও স্বপ্নে তাই দেখেছি। তৃতীয়জন বললো, আমিও তাই দেখেছি। তখন তারা বলাবলি করে যে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন রহস্য আছে। তারা সবাই তাদের শাসনকর্তাকে যাজকের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে উদ্ধৃদ্ধ করে। তারপর সবাই যাজকের নিকট যায় এবং তাকে উপাসনালয় থেকে নামিয়ে আনে। এ সময়ে শয়তান যাজকের নিকট উপস্থিত হয়ে বলে, আমিই তোমাকে এ বিপদে ফেলেছি। আমি ছাড়া কেউ তোমাকে এখান থেকে উদ্ধার করতে পারবে না। সুতরাং তুমি আমাকে একটি সিজদা করা; আমি তোমাকে যে বিপদে ফেলেছি তা থেকে উদ্ধার করব। সে মতে সে তাকে সিজদা করল। তারপর শাস্তি বিধানের জন্যে যখন শাসনকর্তার নিকট তাকে নিয়ে গেল তখন শয়তান সেখান থেকে কেটে পড়ে তখন তাকে নিয়ে হত্যা করা হয়। ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রেও অনুরূপ বৰ্ণিত হয়েছে।

আমিরুল মুমিনীন আলী ইব্‌ন আলী তালিব (রা) থেকে অন্য এক সনদে এ ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। ইব্‌ন জারীর আবদুল্লাহ ইব্‌ন নাহীদকে উদ্ধৃত করে বলেন, আমি আলী (রা)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, এক ধর্মযাজক দীর্ঘ ষাট বছর ধরে ইবাদত করেছিল। শয়তান তাকে জব্দ করতে ফন্দি আঁটে। অতঃপর সে এক মহিলার ওপর আছর করে। সে মহিলার কয়েকটি ভাই ছিল। ভাইদেরকে সে বলল, ওকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাজকের কাছে নিয়ে যাও। ভাইয়েরা মহিলাটিকে যাজকের নিকট নিয়ে যায়। তার চিকিৎসা করল। মহিলাটি কয়েকদিন তার ওখানে ছিল। একদিনের কথা। মহিলার প্রতি আসক্ত হয়ে সে তার সাথে কুকর্মে লিপ্ত হয়। সে তাতে গৰ্ভবতী হয়ে পড়ে। অবশেষে যাজকটি তাকে হত্যা করে। তার ভাইয়েরা বোনের খোজে। যাজকের নিকট আসে। এ দিকে শয়তানও তার কাছে। উপস্থিত হয়ে বললেন, এক সময় তুমি আমাকে ব্যৰ্থ করে দিয়েছিলে। এখন আমিই তোমাকে দিয়ে এসব কাণ্ড ঘটিয়েছি। অতএব এখন তুমি আমার আনুগত্য কর। আমি তোমাকে উদ্ধার করব। তুমি আমাকে একটি সিজদা কর। যাজকটি তাকে সিজদা করল। তখন শয়তান বলল, এখন তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ব প্ৰতিপালক আল্লাহকে ভয় করি। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ তাআলা। ইরশাদ করেন :

এরা শয়তানের মত, সে মানুষকে বলে, কুফৱী কর। অতঃপর যখন সে কুফরী করে, তখন সে বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করি।।*

গুহায় আশ্রয় গ্রহণকারী তিন ব্যক্তির ঘটনা

পূর্বেকার যামানার তিন ব্যক্তি একদা একটি গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। গুহার মুখটি অকস্মাৎ রুদ্ধ হয়ে যায়। তখন তারা নিজেদের সৎকর্মের উসিলা দিয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করেন। আল্লাহ তাদেরকে বিপন্মুক্ত করেন।

ইমাম বুখারী (র) ইব্‌ন উমর (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পূর্বেকার যুগের তিনজন লোক পথ চলছিল। হঠাৎ তারা ঝড়ে পতিত হয়। তারা একটি গুহায় আশ্রয় নেয়। তখন অকস্মাৎ গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তারা পরস্পরে বলাবলি করতে থাকে, আল্লাহর কসম! এই বিপদটি থেকে যে কোন পুণ্যকর্মের উসিলা ব্যতীত তোমরা মুক্তি পাবে না। এখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ উত্তম কর্মের উসিলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া কর। তাদের একজন এ বলেন, দোয়া শুরু করল, হে আল্লাহ আপনি তো জানেন, আমার এক শ্রমিক ছিল। এক ফুরক ধান পারিশ্রমিক ধার্য করে সে আমার কাজে নিয়োজিত হয়েছিল। কাজ শেষে পারিশ্রমিক না নিয়েই সে চলে যায়। অতঃপর তার সে ধান আমি জমিতে বপন করে ফসল উৎপন্ন করি। ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। অবশেষে তা দিয়ে আমি একটি গাভী ক্রয় করি। একদিন সে আমার নিকট তার পারিশ্রমিক নেয়ার জন্যে আসে। আমি বলি, ওই যে গাভী তা তুমি নিয়ে যাও। সে আমাকে বলে, আমার তো আপনার নিকট শুধু এক ফুরক ধানই পাওনা। আমি বলি, তোমার সে ধান থেকেই এই গাভী তুমি তা নিয়ে যাও। সে তখন ঐ গাভীটি নিয়ে চলে যায়। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার ভয়েই আমি এরূপ করেছি, তবে আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। এতে পাথর একটুখানি ফাক হয়ে যায়।

অপর একজন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আমার ঘরে বৃদ্ধ মাতা পিতা ছিলেন। প্রতি রাতে আমি তাদেরকে বকরীর দুধ পান করাতাম। এক রাতে আমার আসতে বিলম্ব হয়ে যায়। আমি যখন আসি, তখন আমার পিতামাতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমার পরিবার-পরিজন ও ছেলে-মেয়েরা তখনও ক্ষুধায় ছটফট করছিল, কান্নাকাটি করছিল। আমার পিতামাতা দুধ পান না করা পর্যন্ত আমি পরিবারের কাউকেই দুধ পান করতে দিতাম না। এ সময়ে আমি পিতামাতাকে ঘুম থেকে জাগ্রত করা সমীচীন মনে করিনি। আবার তাদেরকে রেখে পরিবারের অন্যদেরকে দুধ খেতে দেয়াও পছন্দ করিনি। আমি তাদের জাগ্রত হওয়ার অপেক্ষায় থাকি। এভাবে ভোর হয়ে যায়। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার ভয়ে আমি এরূপ করেছি। তাহলে আমাদের বিপদ দূর করে দিন! অতঃপর গুহার মুখের পাথর আরেকটি ফাক হয়ে যায়, যাতে আকাশ দেখতে পাওয়া যায়। তাদের অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আমার এক চাচাত বোন ছিল। সে ছিল আমার সর্বাধিক প্রিয়। আমি তাকে। কুকর্মের জন্য প্ররোচিত করি। একশটি স্বর্ণ মুদ্ৰা না দেওয়া পর্যন্ত সে তাতে অস্বীকৃতি জানায়। আমি সে পরিমাণ স্বর্ণ মুদ্রা অর্জনের চেষ্টা চালাই। আমি তা সংগ্রহ করে তা তার হাতে তা অর্পণ করি। তখন সে আমাকে সুযোগ দেয়। আমি যখন চূড়ান্ত মুহুর্তে উপনীত হই তখন সে বলে ওঠে, আল্লাহকে ভয় করুন! বৈধ পন্থায় ব্যতীত আমার শ্ৰীলতাহানি করবেন না। তখনই আমি উঠে আসি এবং আমার একশ স্বর্ণ মুদ্রাও রেখে আসি। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আপনার ভয়েই আমি তা করেছি, তবে আমাদের বিপদ দূর করে দিন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের বিপদ দূর করে দিলেন। তারা গুহা থেকে বেরিয়ে আসে।

ইমাম মুসলিম (র) ইমাম আহমদ (র) নিজ নিজ সনদে অনুরূপ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম আহমদের একটি বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত কথাও রয়েছে। বাযযারও অনুরূপ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন।

১. মদীনা শরীফে প্রচলিত তিন সা বা দশ কেজি বিশিষ্ট মাপপাত্ৰ।

অন্ধ, কুষ্ঠ ও টাক মাথাওয়ালা তিন ব্যক্তির ঘটনা

ইমাম বুখারী (র) ও মুসলিম (র) একাধিক সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আবু হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছেন যে, বনী ইসরাইলের তিন ব্যক্তি একজন কুণ্ঠ রোগী, একজন অন্ধ, একজন টাক মাথা বিশিষ্ট ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাদের নিকট আল্লাহ তাআলা একজন ফিরিশতা পাঠালেন। তিনি প্রথম কুণ্ঠরোগীর নিকট উপস্থিত হন। .

ফিরিশতা তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার প্রিয় বস্তু কি? সে বলে, সুন্দর রং ও সুন্দর তত্ত্বক। লোকজন এখন আমাকে ঘৃণা করে। ফিরিশতা তার গায়ে হাত বুলিয়ে দেন। ফলে তার রোগ বিদূরিত হয়। তাকে সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক দান করা হয়। ফিরিশতা আবার বলেন, কোন সম্পদ তোমার নিকট প্রিয়? সে বলে, উট। অথবা সে বললো, গাড়ী। (কুণ্ঠ রোগীও টেকো মাথা বিশিষ্ট এ দুজনের একজন উট চেয়েছিল অপরজন চেয়েছিল। গাভী। তাদের কে উট চেয়েছিল আর কে গাভী চেয়েছিল তা নিয়ে রাবীর সন্দেহ রয়েছে।) ফিরিশতা একটি দশ মাসের গর্ভবতী। উটনী তাকে প্রদান করেন এবং বলেন, এতে আল্লাহ তোমাফে, বরকত দিন!

রাসূলুল্লাহ বলেন, অতঃপর ফিরিশতা আসেন টেকো মাথা বিশিষ্ট ব্যক্তির নিকট। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন। কোন বস্তু তোমার প্রিয়া? জবাবে সে বলে। আমার প্রিয় হল সুন্দর চুল, আর এই টাক যেন দূরীভূত হয়। লোকজন তো এখন আমাকে ঘৃণা করে। ফিরিশতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। টাক দূরীভূত হয় এবং তার মাথায় সুন্দর চুল গজায়। আবার ফিরিশতা বলেন, কোন সম্পদ তোমার নিকট প্রিয়? সে বলে, গরু। ফিরিশতা তাকে একটি গৰ্ভবতী গাভী দান করেন এবং বলেন, আল্লাহ এতে তোমাকে বরকত দিন!

এবার ফিরিশতা আসেন অন্ধ ব্যক্তির নিকট। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার প্রিয় বস্তু কি? সে বললো, আল্লাহ যেন আমার দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেন। আমি যেন লোকজনকে দেখতে পাই। ফিরিশতা তার চোখে হাত বুলিয়ে দিলেন। আল্লাহ তাআলা তার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিলেন। ফিরিশতা বললেন, কোন সম্পদ তোমার প্রিয়? সে বলে, ছাগল। তিনি তাকে একটি গৰ্ভবতী ব্যকরী দান করেন।

ইতিমধ্যে উটনী, গাভী ও বকরী বাচ্চা দিতে থাকে। ক্রমে ক্রমে উট ওয়ালার মাঠ উটে ভর্তি হয়ে যায়। গাভীওয়ালার মাঠ পূৰ্ণ হয়ে যায় গরুতে। আর বকরী ওয়ালার মাঠ পরিপূর্ণ হয় বকরীতে।

এরপর একদিন ফেরেশতা কুণ্ঠরোগীর নিকট তার পূর্বের আকৃতি নিয়ে উপস্থিত হন। তিনি বললেন, আমি একজন মিসকিনা। সফরে এসে আমার যা ছিল সব ফুরিয়ে গেছে। আল্লাহর সাহায্য এবং অতঃপর আপনার সহযোগিতা ব্যতীত আমার দেশে ফেরার কোন উপায় নেই। যে আল্লাহ। আপনাকে সুন্দর দেহ, বর্ণ ও সুন্দর ত্বক দান করেছেন তাঁর দোহাই দিয়ে আপনার নিকট আমি একটি উটি ভিক্ষা চাইছি। আমার সফর কালে সেটি কাজে লাগবে। সে বলল, মানুষের চাহিদার শেষ নেই। ফেরেশতা বলেন, আপনাকে আমার চেনা চেনা মনে হচ্ছে। আপনি না। কুণ্ঠ রোগী ছিলেন? মানুষ আপনাকে ঘৃণা করত। আর আপনি ছিলেন দরিদ্র। আল্লাহই তো আপনাকে সব সম্পদ দান করেছেন। সে বলল, আমি তো বংশানুক্ৰমে উত্তরাধিকার সূত্রে এ সম্পদের মালিক হয়েছি। ফেরেশতা বললেন, তুমি যদি মিথ্যাবাদী হয়ে থাকো, তাহলে আল্লাহ যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেন!

এরপর ফেরেশতা টেকো মাথা লোকের নিকট তাঁর আকৃতি নিয়ে আসলেন। কুণ্ঠরোগীকে যেরূপ বলেছিলেন, তাকেও সেরূপ বললেন। সেও ঐ কুণ্ঠরোগীর মত উত্তর দিল। ফেরেশতা বললেন, তুমি মিথ্যাবাদী হলে আল্লাহ যেন তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিবিয়ে দেন!

এরপর ফেরেশতা অন্ধ ব্যক্তির নিকট তীর আকৃতিতে আসলেন। তিনি বললেন, আমি মিসকিন ও মুসফির ব্যক্তি। সফরে এসে আমার সহায় সম্বল ফুরিয়ে গিয়েছে। আল্লাহর সাহায্য ও তারপর আপনার সহায়তা ব্যতীত আমার বাড়ি ফিরে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। যে মহান আল্লাহ। আপনাকে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন তার দোহাই দিয়ে আমি আপনার নিকট একটি বিকারী যাঞা করছি। ওটি দ্বারা আমার সফরের প্রয়োজনীয় খরচ মিটাবো। বকরী ওয়ালা বলল, আমি ছিলাম অন্ধ। আল্লাহ আমাকে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি ছিলাম দরিদ্র। আল্লাহ আমাকে ধনী বানিয়েছেন। তোমার যেটা পছন্দ সেটা নিয়ে যাও। আল্লাহর নামে তুমি আজ যেটিই নিবে আমি তাতে দুঃখ পাব না। ফিরিশতা বললেন, আপনার মাল আপনি রেখে দিন! বস্তৃত আল্লাহ। আপনাদের তিনজনকে পরীক্ষা করলেন। আপনার প্রতি আল্লাহর রাজী হয়েছেন। পক্ষান্তরে আপনার অপর দুই সাখীর প্রতি আল্লাহ নারাজ ও অসন্তুষ্ট হয়েছেন।

এটি ইমাম বুখারী (র)-এর ভাষ্য। বনী ইসরাঈল বিষয়ক হাদীসসমূহে তিনি এটি উদ্ধৃত করেছেন।

এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার নিয়ে তা পরিশোধের ঘটনা

ইমাম আহমদ (র) বলেন, হযরত হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বনী ইসরাঈলের এক লোকের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। উক্ত লোক বনী ইসরাঈলের অন্য এক ব্যক্তি থেকে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা ধার চেয়েছিল। ঋণদাতা বললো, কয়েকজন সাক্ষী নিয়ে আসা। সে বললে, সাক্ষীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলেছিল, একজন জামিন নিয়ে আসুন। সে বলল, জামিন হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা তখন বলে, তুমি যথার্থই বলেছে।

সে মতে সে তাকে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্ৰা দিল। ঋণ গ্রহিতা। এরপর এক সমুদ্র যাত্রায় বের হয়। তার কাজ শেষ হলে নির্দিষ্ট সময়ে সে ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে ঋণ দাতার নিকট পৌছার জন্যে একটি বাহন খুঁজতে থাকে। কিন্তু কোন বাহন সে খুঁজে পায়নি। তখন সে একটি কাষ্ঠখণ্ড সংগ্ৰহ করে। সেটিকে ছিদ্র করে। এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা এবং ঋণদাতার উদ্দেশ্যে লিখিত একটি চিঠি সে ঐ ছিদ্রের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। অতঃপর ভাল করে ছিদ্রের স্থানটি বন্ধ করে দেয়। অতঃপর ঐ কাষ্ঠখণ্ডটি নিয়ে সে উপস্থিত হয়। সমুদ্রের তীরে। সে বলে, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন অমুক ব্যক্তি থেকে আমি এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা ধার নিয়েছিলাম। সে আমার নিকট জামিন দাবি করে। আমি তাকে বলেছিলাম যে, জামিন রূপে আল্লাহই যথেষ্ট। সে আমার নিকট সাক্ষী দাবি করে। আমি বলি সাক্ষীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট। এতে সে রাজী হয়। আমি তো যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি একটি বাহন যোগাড় করার জন্যে। যাতে যথাসময়ে আমি তার টাকা পৌছিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমি কোন বাহন পেলাম না। এখন সেই এক হাজার মুদ্রা আপনার নিকট আমানত রাখছি। এ বলে ঐ কাষ্ঠখণ্ডটি সে সমুদ্র ভাসিয়ে দেয়। কাঠ ভেসে যায় সমুদ্রে। সে ফিরে যায় এবং নিজ দেশে পৌছার জন্যে বাহন খুঁজতে থাকে। ঋণ গ্রহীতা তার সম্পদ নিয়ে আগমনকারী বাহনের অপেক্ষায় থাকে। হঠাৎ সেই সম্পদ সম্বলিত কাঠটি তার নজরে পড়ে। পরিবারের জ্বালানি কাঠ রূপে ব্যবহারের জন্যে সে কাঠটি বাড়ি নিয়ে যায়। সেটি কাটতে গিয়ে সে উক্ত স্বর্ণ মুদ্রা ও চিঠিটি পায়। পরবর্তীতে একদিন ঋণ গ্রহীতা তার নিকট এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা নিয়ে এসে উপস্থিত হয়। সে বলে, আমি বাহন সংগ্ৰহ করার জন্যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। যাতে করে পাওনা টাকা নিয়ে যথাসময়ে আপনার নিকট আসতে পারি। কিন্তু যে বাহনে করে আমি আপনার নিকট এসেছি সেটির পূর্বে কোন বাহন পাইনি। ঋণদাতা বললো, তুমি ইতিপূর্বে আমার নিকট কোন কিছু প্রেরণ করেছিলে? সে বললো, আমি তো আপনাকে বলেছি-ই যে, এ বাহনের পূর্বে আমি কোন বাহন পাইনি। ঋণ দাতা বললো, তোমার কাঠের ভেতরে রাখা স্বর্ণ মুদ্রা আল্লাহ তাআলা আমাব নিকট পৌছিয়ে দিয়েছেন। যে এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা সাথে করে এনেছে তা নিয়ে তুমি ফিরে যাও।

ইমাম আহমদরে সনদ সহকারে হাদীসটি এভাবে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী (র) তার সহীহ গ্রন্থের একাধিক স্থানে সনদ ছাড়াই নিশ্চয়তা প্রকাশক শব্দ দ্বারা লাইছ ইব্‌ন সাদা সূত্রে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তার কাতিব আবদুল্লাহ ইব্‌ন সালিহ সূত্রে সনদ সহকারে উল্লেখ করেছেন। এতদসত্ত্বেও হাকিম বাযযার যে তাঁর মুসনোদ গ্রন্থে হাদীসটি একক বৰ্ণনা বলে মন্তব্য করেছেন, তাতে বিস্মিত হতে হয়।

সততা ও আমানতের আরও দৃষ্টান্ত ঘটনা

ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির নিকট থেকে একখণ্ড জমি ক্ৰয় করেছিল। যে ব্যক্তি জমি ক্ৰয় করে সে ঐ জমিতে একটি স্বৰ্ণভর্তি কলসী পায়। সে বিক্রেতাকে বলে যে, আপনার স্বর্ণ আপনি নিয়ে নিন। আমি তো আপনার নিকট থেকে শুধু জমিই ক্ৰয় করেছি। স্বর্ণ ক্রিয় করিনি।

জমির মালিক বলে, আমি জমি এবং জমির অভ্যন্তরস্থ সবকিছু আপনার নিকট বিক্রয় করেছি। তারা দুজনে মীমাংসার জন্যে তৃতীয় এক ব্যক্তিকে সালিশ নির্ধারণ করে। সে ব্যক্তি বলে, আপনাদের কোন ছেলে মেয়ে আছে কি? একজন বললো, আমার একটি পুত্ৰ সন্তান আছে। অন্যজন বললো, আমার আছে একটি কন্যা সন্তান। মীমাংসাকারী ব্যক্তিটি বললো, ঐ মেয়েকে ঐ ছেলেটির নিকট বিয়ে দিয়ে দিন। ঐ স্বর্ণ দুজনের জন্যে ব্যয় করুন এবং ঐ দুজনকে দান করে দিন।

বনী ইসরাঈলের বর্ণনায় ইমাম বুখারী (র) এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুসলিম (র)-ও হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। তিনি এও উল্লেখ করেছেন যে, বাদশাহ যুলকারনাইন-এর যুগে এ ঘটনাটি ঘটেছিল। যুলকারনাইনের যুগ তো বনী ইসরাঈলের যুগের বহু পূর্বে ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসহাক ইব্‌ন বিশরীরে তার আল মুরতাদ গ্রন্থে সাঈদ ইব্‌ন আবী আরুবাহ—-হাসান (র) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যুলকারনাইন নিজে তাঁর অধীনস্থ রাজা-বাদশাহ এবং কর্মচারীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতেন। কারো সম্পর্কে কোন বিশ্বাস ভঙ্গের ঘটনা তার গোচরে এলে তিনি সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্ৰহণ করতেন। নিজে সরাসরি অবগত না হয়ে কারো অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোন ব্যবস্থা গ্ৰহণ করতেন না।

একদিন তিনি ছদ্মবেশে এক শহরে ঘুরছিলেন। একাদিক্ৰমে কয়েকদিন তিনি এক বিচারকের আদালতে বসেন। তিনি দেখলেন, কেউই বিচার প্রার্থ হয়ে ঐ বিচারকের আদালতে আসে না। বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত এ অবস্থা লক্ষ্য করার পর যুলকারনাইন যখন এ বিচারক সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারলেন না। তখন তিনি ওখান থেকে ফিরে যেতে মনস্থ করেন। সেদিনই তিনি লক্ষ্য করলেন, দুজন লোক বিচারপ্রার্থী হয়ে উক্ত বিচারকের নিকট এসেছে। একজন আরজি পেশ করে বলে যে, মাননীয় বিচারক! আমি ঐ ব্যক্তি থেকে একটি বাড়ি ক্রয় করে তা আবাদ করি। ঐ বাড়িতে আমি গুপ্ত ধনের সন্ধান পাই। আমি তাকে এটি নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু সে তা নিয়ে যেতে অস্বীকার করে।

অপরজনকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, এ ব্যাপারে তুমি কি বলা? জবাবে সে বললো, আমি কখনো এ মাটির নিচে কোন সম্পদ লুকিয়ে রাখিনি এবং এ গুপ্তধন সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। সুতরাং এটি আমার নয়। আমি তা গ্ৰহণ করব না। বাদী বলে, মাননীয় বিচারক! কাউকে আমার নিকট থেকে তা নিয়ে আসতে আদেশ করুন। তারপর আপনার যেখানে খুশী তা ব্যবহার করবেন। বিচারক বললেন, তুমি নিজে যে বিপদ থেকে রক্ষা পেতে চাও আমাকে তার মধ্যে জড়াতে চাচ্ছে? তুমি আমার প্রতি সুবিচার করনি। আমি মনে করি, দেশের আইনেও এরূপ বিধান নেই। বিচারক আরও বললেন, আচ্ছা, আমি কি এমন একটি ব্যবস্থা করব যাতে তোমাদের উভয়ের প্রতি ইনসাফ হয়। তারা বললো, অবশ্যই।

বিচারক বাদীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার কি কোন পুত্ৰ সন্তান আছে? সে বলল : জী, হ্যাঁ। অপরজনকে বললেন, তোমার কি কোন কন্যা সন্তান আছে? সে বললো জী হ্যাঁ। তিনি বললেন, দুজনেই যাও তোমার মেয়েকে তার ছেলের সাথে বিবাহ দিয়ে দাও। এ সম্পদ থেকে তাদের বিবাহের ব্যয় নির্বাহ করবে। আর যা অবশিষ্ট থাকবে তা তাদেরকে দিয়ে দেবে। সেটি দ্বারা তারা তাদের সংসার চালাবে। তাহলে দুজনেই এ ধনের লাভ-ক্ষতির সমান অংশীদার হবে।

বিচারকের রায় শুনে বাদশাহ যুলকারনাইন মুগ্ধ হলেন। তারপর বিচারককে ডেকে বললেন, আপনার মত এমন চমৎকার করে বিচার অন্য কেউ করতে পারে বলে আমার মনে হয় না। অন্য কোন বিচারক এমন ফয়সালা দিতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না। বিচারক বাদশাহকে চিনেননি। তিনি বললেন, কেউ কি এছাড়া অন্য কোন রায় দিতে পারে? যুলকারনাইন বললেন, হ্যাঁ, দেয়ই তো। বিচারক বললেন, তারপরও ওদের দেশে কি বৃষ্টি বর্ষিত হয়? একথা শুনে বিস্মিত হলেন যুলকারনাইন। তিনি মন্তব্য করলেন, এরূপ লোকের বদৌলতেই আসমান-যমীন এখনও টিকে রয়েছে।

আরেকটি শিক্ষণীয় ঘটনা

ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের এক লোকের ঘটনা। সে ৯৯ জন মানুষ খুন করেছিল। তারপর কোন বুযর্গ ব্যক্তির খোজে বের হয়। সে একজন ইয়াহুদী ধর্মযাজকের নিকট এসে পৌছে বলে, আমার তাওবা কবুল হবে কি? ধর্মযাজক বলেন, না, তোমার কোন তাওবা কবুল হবে না। তখন সে ঐ ধর্মযাজককেও হত্যা করে।

এরপর সে অন্য বুযর্গ লোকের সন্ধান করছিল। একজন বলল, অমুক জনপদে যাও। পথে তার মৃত্যুর সময় হয়। তার বক্ষদেশ তখন ঐ জনপদ অভিমুখী ঝুকে রয়েছিল। তখন রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতা উভয় পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। আল্লাহ তাআলা। সম্মুখ ভাগের ভূমিকে নির্দেশ দিলেন সংকুচিত ও কাছাকাছি হয়ে যেতে। পেছনে রেখে আসা

দিকে ভূমি মেপে দেখতে। দেখা গেল, সম্মুখের গন্তব্য স্কুল পেছনের ছেড়ে আসা স্থান থেকে এক বিঘাত নিকটে। অতঃপর তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।

ইমাম বুখারী (র) এরূপ সংক্ষিপ্ত-ই-বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুসলিম (র) তা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে একাধিক সনদে বর্ণনা করেন, একদিনের কথা, রাসূলুল্লাহ (সা) ফজরের নামায শেষে মুসল্পীদের দিকে মুখ করে বসলেন। তিনি বললেন, একজন লোক একটি গরু নিয়ে যাচ্ছিল। এক সময় সে গরুটির পিঠে চড়ে বসে এবং সেটিকে প্রহার করে। গরুটি বলে উঠে, আমাকে তো এ কাজের জন্যে সৃষ্টি করা হয়নি। আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে জমি চাষ করার জন্যে। তখন লোকজন অবাক হয়ে বলে, সুবহানাল্লাহ, গরু আবার কথা বলে! রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আমি নিজে এ ঘটনাটি বিশ্বাস করি। আবু বকর (রা) এবং উমর (রা)-ও এ ঘটনা বিশ্বাস করেন। এ আলোচনার সময় আবু বকর ও উমর (রা) কিন্তু সেখানে ছিলেন না।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, এক ব্যক্তি বকরী চরচ্ছিল। এমন সময় একটি নেকড়ে বাঘ হামলা চালিয়ে একটি বকরী নিয়ে যায়। বকরী ওয়ালা তার পিছু পিছু ছুটতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সে বকরী নেকড়ের হাত থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। নেকড়েটি বললো, আজ তুমি এটিকে আমার হাত থেকে উদ্ধার করে নিলে তবে হিংস্র জীবদের রাজত্বের দিনে, কে তাকে রক্ষা করবে? সেদিন তো আমি ব্যতীত কোন রাখাল থাকবে না। এটি শুনে লোকজন বলে ওঠে, সুবহানাল্লাহ! নেকড়েও আবার কথা বলে? রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, আমি আবু বকর (রা) ও উমর (রা)। আমরা সবাই এটি বিশ্বাস করি। সেখানে আবু বকর (রা) ও উমর (রা) উপস্থিত ছিলেন না।

ইমাম তিরমিয়ী (র) হাদীসটি হাসান, সহীহ বলে অভিহিত করেছেন। ইমাম মুসলিম (র) সহীহ সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববতী উম্মতের মধ্যে অনেক ইলহামপ্রাপ্ত লোকও ছিলেন। এই উম্মতের মধ্যে যদি এরূপ কেউ থেকে থাকেন তবে তিনি হবেন উমর ইবনুল খাত্তাব (রা)। ইমাম মুসলিম (র) ভিন্নসূত্রে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) মুয়াবিয়া (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, যে বছর তিনি হজ্জ করেন সে বছর জনৈক পাহারাদারের হাত থেকে এক গোছা পরচুলা নিয়ে বললেন, হে মদীনাবাসীগণ! তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি, তিনি এ ধরনের চুল ব্যবহার করতে বারণ করে বলেছেন, বনী ইসরাঈলের মহিলাগণ যখন এরূপ কৃত্রিম চুলের ব্যবহার করতে শুরু করে তখন তারা ধ্বংস হয়।

ইমাম মুসলিম (র) এবং আবু দাউদ (র) এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী (র) হাদীসটিকে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইমাম বুখারী (র) বর্ণনা করেন, মুআবিয়া ইব্‌ন আবু সুফিয়ান শেষ বার যখন মদীনা শরীফ এলেন তখন তিনি খুৎবা দানকালে তার আন্তীন থেকে এক গোছা পরচুলা বের করেন এবং বলেন, ইয়াহুদী ব্যতীত অন্য কেউ এ কাজ করে বলে তা আমি মনে করতাম না। রাসূলুল্লাহ (সা) এ কর্মকে মিথ্যাচার রূপে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ কৃত্রিম চুল লাগানো।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন, একটি কুকুর একটি কুয়ার পাড়ে হাঁপাচ্ছিল। তৃষ্ণায় তার প্রাণ যায় যায়। বনী ইসরাঈল বংশের একজন ব্যভিচারিণী মহিলা এ বিষয়টি লক্ষ্য করে। অতঃপর সে তার মোজা খুলে নেয় এবং তার সাহায্যে কুকুরটিকে পানি পান করায়। এর উসিলায় আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেন। ইমাম মুসলিম (র)-ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) আবদুল্লাহ ইব্‌নে উমর (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের ব্যাপারে। আযাব দেয়া হয়েছে। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল। শেষ পর্যন্ত বিড়ালটি মারা যায়। এ কারণেই তাকে শাস্তি দেয়া হয়। বেঁধে রাখা অবস্থায় সে ওটিকে কিছু খেতে দেয়নি এবং সেটিকে ছেড়েও দেয়নি যে, সে পোকা-মাকড় ধরে খাবে। ইমাম মুসলিম (র)-ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের একজন বেঁটে মহিলা ছিল। সে কাঠের সুদীর্ঘ দুটো পা তৈরি করে এবং সেটিতে পা রেখে দুজন খাটো মহিলার মধ্যে থেকে সে চলতে থাকে। একদিন সে একটি সোনার আংটি প্রস্তুত করে রাখে। তার আংটির নগীনার নিচে সে তীব্ৰ সুগন্ধি ও মিশক লুকিয়ে রেখেছিল। অতঃপর কোন মজলিসে গেলে সে আংটিটি একটু নাড়াচাড়া করে দিত। আর তার হাত থেকে খুশবু ছড়িয়ে পড়ত। ইমাম মুসলিম (র) মুসতামির খালীদ ইব্‌ন জাফর থেকে মারফু সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী (র) বলেন। এটি সহীহ হাদীস।

অন্য একটি হাদীস ইমাম বুখারী (র) বলেন, ইব্‌ন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, অতীত যুগের যে সব নবুওতী বাণী লোকজনের কাছে পৌঁছেছে তার, একটি এই যে,

…….., L., & ~L; -…;। 181 লজ্জা না থাকলে তুমি যা ইচ্ছা করতে পোর।

ইমাম বুখারী (র) এককভাবে এটি উল্লেখ করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, অতীত কালের এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী নিঃস্ব অবস্থায় ছিল। তাদের কিছুই করার সামর্থ্য ছিল না। একদিন লোকটি বাড়ি ফিরে এসে অত্যন্ত ক্ষুধার্তা ও ক্লান্ত অবস্থায় তার স্ত্রীকে বলে, তোমার কাছে কোন খাবার আছে কি? সে বলে, হ্যাঁ, আছে। সুসংবাদ নিন, আপনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রিযিক এসেছে। স্বামী স্ত্রীকে তাগিদ দিয়ে বলল, আমি চাচ্ছি। এখনই তোমার নিকট কিছু থাকলে নিয়ে এসো। স্ত্রী বললো, হ্যাঁ, একটু অপেক্ষা করুন, আমরা আল্লাহর রহমতের আশায় আছি। বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর সে স্ত্রীকে বললো, আল্লাহ রহম করুন। খুঁজে দেখ তো তোমার কাছে কোন খাবার আছে কিনা? থাকলে নিয়ে এসো। আমার ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে। আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। সে বলল, হ্যাঁ, খাবার আছে, চুলায় রান্না হচ্ছে। একটু অপেক্ষা করুন। কিছুক্ষণ উভয়ে নীরব থাকার পর স্ত্রী মনে মনে বলল, আমি যদি উঠে গিয়ে চুলাটা একটু দেখে আসতাম!! এরপর মহিলাটি নিজেই গেল এবং চুলায় গিয়ে দেখল। সে বকরীর

ՀԳԵ՛

সিনায় ডেগচী ভর্তি এবং একটি যাতায় আটা পেষমা হচ্ছে। মহিলাটি নিকটে গেল এবং যাতার আটা ঢেলে নিলে তা এবং চুলার উপরের বকরীর সিনা নিয়ে আসল।

রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে আবু হুরায়রা (রা) বলেন, আবুল কাসেম (সা)-এর প্ৰাণ যার হাতে সেই পবিত্ৰ সত্তার শপথ করে বলছি! মহিলাটি যদি যাতা থেকে আটাগুলো নিয়ে চাক্কি উপুড় না করত, তবে ঐ চাক্কিতে আটা পেষা কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকত।

ইমাম আহমদ (র) বলেন, আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক লোকের ঘটনা। সে তার পরিবারের নিকট উপস্থিত হয়। তাদের অভাব-অনটন দেখে সে মাঠের দিকে রওয়ানা হয়। এ অবস্থা দেখে তার স্ত্রী আটা পেষার চাক্কির নিকট যায়, এবং তা চালু করে দেয়। তারপর চুলার নিকট গিয়ে চুলা জ্বলিয়ে দেয়। তারপর আল্লাহর নিকট দোয়া করে বলে, হে আল্লাহ! আমাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিন হঠাৎ সে দেখে আবার–তাদের গামলা ভর্তি হয়ে গিয়েছে। চুলার নিকট গিয়ে দেখে চুলা ভর্তি হয়ে রয়েছে।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপর স্বামী ফিরে আসে এবং বলে, তোমরা কিছু পেয়েছ কি? তার স্ত্রী বলে, হ্যাঁ, আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে পেয়েছি। অতঃপর তার চাক্কির নিকট যায়। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট বর্ণনা করা হয়। তিনি বলেন, যদি ঐ চাক্কি উঠানো না হত, তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তা ঘুরতে থাকত।

বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট এ সময় তিনি বলছিলেন, আল্লাহর কসম, কারো কাছে এসে ভিক্ষা চাওয়া অপেক্ষা কাঠের বোঝা বাহন করে এনে তা বিক্রি করে নিজের মর্যাদা রক্ষা করা তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর।

তওবাকারী দুরাজার ঘটনা

ইমাম আহমদ (র) আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের পূর্ববতী জনৈক রাজার কথা। একদা তিনি তাঁর রাজত্ব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তামগ্ন হলেন। তাতে তিনি উপলব্ধি করলেন যে, একদিন না একদিন তাকে এই রাজত্বের মায়া ছাড়তে হবে। অথচ তখন এটাই তাকে আপন প্ৰতিপালকের ইবাদত থেকে গাফিল করে রেখেছে।

একরাতে তিনি চুপিসারে নিজের প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়েন। তিনি অন্য এক রাজ্যে এসে পৌছেন এবং সাগর তীরে আস্তানা স্থাপন করেন। সেখানে তিনি ইট তৈরির কাজ শুরু করেন। এতে যা আয় হত তা দিয়ে প্রয়োজন মাফিক খাদ্য দ্রব্যের ব্যবস্থা করতেন এবং উদৃত্ত অর্থ সাদকা করে দিন-তন। এভাবে তার দিন কাটছিল। ঐ দেশের রাজার নিকট তার সংবাদ পৌছে। রাজা তাকে ডেকে পাঠান। তিনি যেতে অস্বীকার করেন। রাজা তখন নিজেই তার কাছে চলে আসেন। রাজাকে দেখেই ঐ রাজা পালাতে শুরু করেন। রাজা ও ঘোড়া নিয়ে তার পিছু নেন। কিন্তু তিনি তার নাগাল পেলেন না।

অবশেষে রাজা চিৎকার করে বলেন, হে আল্লাহর বান্দা! আমার পক্ষ থেকে আপনার কোন ক্ষতির আশংকা নেই। তখন ঐ রাজা থামলেন, ফলে উভয়ের সাক্ষাৎ হলো। রাজা বললেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দয়া করুন, আপনার পরিচয় কি? তিনি বললেন, আমি অমুকের পুত্ৰ অমুক। অমুক রাজ্যের রাজা। আমার রাজত্ব নিয়ে আমি একদিন গভীরভাবে চিন্তা করেছিলাম। তাতে আমি উপলব্ধি করেছি যে, শেষ পর্যন্ত আমি এ রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হবই। আর তখন এ রাজ্যই আমাকে আমার প্রতিপালকের ইবাদত থেকে গাফিল করে রেখেছে। তাই আমি ঐ রাজ্য ত্যাগ করে এখানে এসে আমার প্রতিপালকের ইবাদত করছি। রাজা বললেন, আপনি যা করছেন এ ব্যাপারে আমি আপনার চাইতে কম মুখাপেক্ষী নই। এ বলে রাজা বাহন থেকে নেমে পড়েন এবং সেটিকে ছেড়ে দেন। তিনি পূর্ববর্তী রাজার পথ অনুসরণ করেন। এবার তারা দুজনে একসাথে আল্লাহর ইবাদত করতে লাগলেন। তাঁরা দুজনে আল্লাহর নিকট এক সাথে মৃত্যু কামনা করলেন এবং পরে দুজনেই মারা গেলেন।

হাদীস বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রা) বলেন, আমি যদি তখন মিসরের রমনিয়ায় থাকতাম, রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের নিকট তাদের যে পরিচয় বর্ণনা করেছেন। তার আলোকে আমি কবর দুটো চিনিয়ে দিতাম।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) সূত্রে নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন। তোমাদের পূর্ববতী যুগে এক লোক ছিল। আল্লাহ তাআলা তাকে প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। তাঁর মৃত্যু সময় উপস্থিত হওয়ায় সে তার পুত্রদেরকে কাছে ডাকে। তাদেরকে বলে বৎসগণ! আমি তোমাদের পিতা রূপে কেমন ছিলাম? তারা বলে, আপনি খুবই ভাল পিতা ছিলেন। অতঃপর সে ব্যক্তি বলে, আমি কখনো কোনো পুণ্যকর্ম করিনি। সুতরাং আমার মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে পুড়িয়ে ফেলবে। তারপর পিষে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলবে এবং প্রচণ্ড বেগে প্রবাহিত বাতাসে নিক্ষেপ করবে। সে মতে পুত্ররা তাই করল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা সে সব একত্রিত করে জিজ্ঞেস করলেন। তোমার এরূপ করার হেতু কী? সে বলল, প্ৰভো! আপনার ভয়ে এরূপ করেছি। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে তার রহমত দান করলেন। ইমাম মুসলিম (র)-ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।;

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি লোকজনকে প্রায় ঋণ দিত। নিজের কর্মচারীকে সে নির্দেশ দিত যে, কোন? অভাবী ব্যক্তি এলে তার ঋণ মাফ করে দিবে। এর উসিলায় হয়ত আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মাফ করে দিবেন। ঐ ব্যক্তির মৃত্যুর পর সে আল্লাহর নিকট পৌছলে আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দেন। ইমাম মুসলিম (র) ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) সাদ ইব্‌ন আবী ওয়াক্কাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি হযরত উসামা ইব্‌ন যায়ীদ (রা)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, প্লেগ রোগ সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মুখে কী শুনেছেন? হযরত উসামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, প্লেগ রোগ হল শাস্তি বিশেষ। বনী ইসরাঈলের একটি গোত্রের ওপর আল্লাহ তাআলা এটি প্রেরণ করেছিলেন। আর তোমাদের পূর্ববতী লোকদের উপরও এ শাস্তি এসেছিল। কোন এলাকায় প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শুনলে তোমরা ঐ এলাকার দিকে অগ্রসর হয়ো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান করছ, সেখানে এ রোগের প্রকোপ দেখা দিলে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তোমরা সেখান থেকে পালিয়ে যেয়ো না।

ইমাম মুসলিম (র) হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি প্লেগ রোগ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি আমাকে জানালেন যে, এটি একটি শাস্তি বিশেষ। বান্দাদের মধ্যে যাদের প্রতি আল্লাহ ইচ্ছা করেন তাদের নিকট এটি প্রেরণ করেন। আল্লাহ তাআলা এটিকে ঈমানদারদের জন্যে রহমত ও কল্যাণরূপে নির্ধারণ করেছেন। কোন এলাকায় প্লেগ রোগের প্রকোপ দেখা দিলে কোন ব্যক্তি যদি পূৰ্ণ ধৈর্য সহকারে, সওয়াবের আশায় এবং এ বিশ্বাস নিয়ে তথায় অবস্থান করে যে, আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীরের অন্যথা করে কোন বিপদ তার ওপর আসবে না, অতঃপর সে যদি সেখানে মারা যায়। তবে সে শহীদের মর্যাদা পাবে।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন। মািখযুম গোত্রীয় যে মহিলাটি চুরি করেছিল। তার ব্যাপারটি কুরায়শদেরকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। তারা বলাবলি করছিল যে, তার বিষয়ে কে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট সুপারিশ করবে? তারা বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর একান্ত প্রিয় উসামা ইব্‌ন যায়ীদ (রা) ব্যতীত আর কে এ সাহস করবে? সে মতে হযরত উসামা (রা) এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে আলাপ করলেন। অটল রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ড বাতিলের জন্যে তুমি সুপারিশ করছ? এরপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং খুৎবা দিতে গিয়ে বললেন :

তোমাদের পূর্বে যারা ধ্বংস হয়েছে তাদের ধ্বংসের কারণ হলো, তাদের কোন সম্রােন্ত লোক চুরি করলে তাকে তারা ছেড়ে দিত। আর কোন দুর্বল শ্রেণীর কেউ চুরি করলে তাকে তারা শাস্তি দিত। আল্লাহর কসম, মুহাম্মদের (সা) কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করত। তবে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম।

অন্যান্য সহীহ হাদীস গ্রন্থসমূহেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) ইব্‌ন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি এক লোককে কুরআন তিলাওয়াত করতে শুনলাম। আমি কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা)-কে তা অন্যভাবে পাঠ করতে শুনেছি। তাকে ধরে এনে আমি রাসুলুল্লাহ (সা)-এর দরবারে উপস্থিত করি এবং তার ভিন্ন রকম কুরআন পাঠ সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করি। এতে আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চেহারা কিছুটা অসন্তুষ্টির চিহ্ন লক্ষ্য করি। তিনি বললেন, তোমাদের দুজনই তো যথার্থ ও শুদ্ধ পাঠ্যকারী। তোমরা মতভেদ করো না। কারণ তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা পরস্পর বাদানুবাদে লিপ্ত হয়েছিল। ফলে তারা ধ্বংস হয়েছে। ইমাম বুখারী (র) হাদীসটি এককভাবে বর্ণনা করেন।

অন্য একটি হাদীস ইমাম বুখারী (র) হযরত আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন :

ব্যবহার করে না। তোমরা তাদের বিপরীত করবে। ইমাম বুখারী (র) এককভাবে এ রিওয়াতটি বর্ণনা করেছেন। আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে, তোমরা পাদুকাসহ সালাত আদায় করবে: এবং এভাবে ইয়াহুদীদের বিরোধিতা করবে।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বলেন, আমি হযরত উমর (রা)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা অমুক ব্যক্তিকে ধ্বংস করুন। সে কি জানে না যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, আল্লাহ লানত করুন ইয়াহুদীদের ওপর, তাদের জন্যে চর্বি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিন্তু তারা তা গলিয়ে বিক্রি করতো। ইমাম মুসলিম (র)-ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী (র) …….. হযরত আনাস ইব্‌ন মালিক (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নামাযের সময়ের ঘোষণারূপে লোকজন আগুন জ্বালানো এবং সিঙ্গীয় ফুৎকার দেওয়ার প্ৰস্তাব করেছিল। তখন এও আলোচনা হয়েছিল যে, এগুলো তো ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতীক। অতঃপর হযরত বিলাল (রা)-কে জোড় শব্দে আযান এবং বেজোড় শব্দে ইকামত দিতে নির্দেশ দেয়া হল। এর উদ্দেশ্য হল, সকল কর্মে ইয়াহুদী নাসারাদের বিপরীত কাজ করা। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) যখন মদীনায় পদার্পণ করেন, তখন নামায্যের প্রতি আহবানকারী কোন আহবান ব্যতিরেকেই মুসলমানগণ নামাযের সময়ে উপস্থিত হত। এরপর তাদের মধ্যে জনৈক ঘোষককে নামাযের সময় হলে 4-2 (x & 11 11 নামাযের জামাত আসন্ন বলে ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হল। অতঃপর জামাতের সময়ের প্রতীকরূপে তারা এমন কোন বিষয় নির্ধারণের ইচ্ছা করলেন, যা দেখে মানুষ বুঝবে যে, জামাতের সময় আসন্ন। তখন কেউ কেউ প্ৰস্তাব দিলেন যে, আমরা তখন সিঙ্গায় ফুৎকার দিব। অপর কেউ প্ৰস্তাব করলেন যে, আমরা বরং যথাসময়ে আগুন প্ৰজ্বলিত করব।

কিন্তু এগুলোতে ইয়াহুদী-নাসারাদের সাথে সামঞ্জস্য হয়ে যায়। বিধায় দুটো প্রস্তাবই অগ্রাহ্য হয়। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ ইব্‌ন আবদ রাব্বিহী (রা)-কে তার ঘুমের মধ্যে আযান দেখানো হলো। তিনি এসে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সা) উক্ত নিয়মে আযান দেয়ার জন্যে হযরত বিলাল (রা)-কে নির্দেশ দিলেন। হযরত বিলাল আযান ब्लिन्।

অন্য একটি হাদীস ইমাম বুখারী (র) …… হযরত আয়েশা ও ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন ইন্তিকালের সময়ে উপনীত হলেন, তখন তিনি একটি চাদর টেনে তাঁর মুখে ঢাকতে শুরু করলেন। আর যখন তিনি অস্বস্তিবোধ করছিলেন, তখন তা মুখ থেকে সরিয়ে ফেলছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বলে উঠলেন :

ইয়াহুদী ও নাসারাদের ওপর আল্লাহর ল্যানত বৰ্ষিত হউক, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সিজদার স্থানে পরিণত করেছে। তিনি তাদের কার্যকলাপ থেকে সতর্ক করছিলেন।

অন্য একটি হাদীস ইমাম বুখারী (র) আবু সাঈদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) বলেন :

তোমরা এক সময় তোমাদের পূর্ববতীদের রীতিনীতির অনুসরণ করবে। একেবারে বিঘিতে বিঘাতে, হাতে হাতে (সমানে-সমান) এমনকি তারা যদি কোন গুইসাপের গর্তে ঢুকে থাকে তোমরাও তাতে ঢুকবে। আমরা বললাম। ইয়া রাসূলাল্লাহ! পূর্ববতীগণ বলে কি আপনি ইয়াহুদী-নাসারাদেরকে বুঝিয়েছেন? তিনি বললেন, তা না হলে আর কারা?

হাদীসটি ইমাম মুসলিম (র)-ও বর্ণনা করেছেন।

ইহুদী খ্ৰীষ্টানদের আচার-আচরণের সাথে সামঞ্জস্যশীল, ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ, পরবর্তী যুগে অনুষ্ঠিতব্য এসব কথা ও কর্ম সম্পর্কে অবগত করানোর পেছনে উদ্দেশ্য এই যে, মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ঈমানদারদেরকে ইয়াহুদী-খ্ৰীষ্টানদের সাথে সামঞ্জস্যশীল কথা ও কর্ম থেকে বারণ করেছেন। এ প্রকার কথা ও কাজের পেছনে কোন মুমিনের উদ্দেশ্য সৎ থাকলেও এটি মূলত ওদেরই অনুকরণ। সুতরাং এরূপ কর্ম স্পষ্টতই তাদের কর্ম।

এভাবে ঈমানদারদেরকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে, যাতে করে মুশরিকদের সাথে সামঞ্জস্য না হয়। কেননা তারা এ সময়ে সূর্যের উপাসনা করত। যদিও ঈমানদারের মনে সূর্যের উপাসনার কোন কল্পনাও না থাকে।

অনুরূপভাবে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন –

তোমরা রাসূলকে সম্বোধন করে ( – ) বলো না বরং (এ1, 31 (আমাদের প্রতি তাকান) বলবে, আর তোমরা শোন, কাফিরদের জন্যে রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি। আলোচ্য আয়াতের প্রেক্ষাপট এই যে, কাফিরগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে কথা বলার সময় আমাদের দিকে তাকান এবং আমাদের কথা শুনুন বুঝানোর জন্যে বলত  -, -1?  ( -1) শব্দটি মূলত দ্ব্যৰ্থবোধক উপরোক্ত অর্থ ছাড়া ও মুখ অর্থেও এটি ব্যবহৃত হয়)। [… -1 ) শব্দ ব্যবহার করে তারা হে আমাদের মূর্খ ব্যক্তির অৰ্থ বুঝাত। ঈমানদারগণের কেউ উক্ত শব্দ ব্যবহার করলে কখনোই তাদের মনে উক্ত অর্থের লেশ মাত্র থাকবে না; তবুও তাদেরকে এরূপ বলতে নিষেধ করা হয়েছে।

ইমাম আহমদ ও তিরমিয়ী (র) আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রা) সূত্রে নবী করীম (সা) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন :

কিয়ামতের নিকটবতী কালে আমি প্রেরিত হয়েছি তরবারি সহকারে, যতক্ষণ না নিহিত। লাঞ্ছনা ও হীনতা সে ব্যক্তির জন্যে, যে আমার নির্দেশের বিরোধিতা করবে। যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে সামঞ্জস্য রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং ইয়াহুদী-খ্ৰীষ্টানদের সাথে সামঞ্জস্য রাখা কোন মুসলমানের জন্যে মোটেই সমীচীন নয়। তাদের আনন্দ উৎসব, মেলা -পার্বন কিংবা পূজা-অৰ্চনা কোন ক্ষেত্রেই তাদের সাথে সামঞ্জস্য রাখা উচিত নয়। কারণ আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে সর্বশেষ নবী দ্বারা মহিমান্বিত করেছেন। তিনি তাঁর জন্যে পরিপূর্ণ, সামগ্রিক, সুদৃঢ় ও মহান দীন ও শরীয়ত দান করেছেন। এমন যে, তাওরাতপ্রাপ্ত হযরত মূসা ইব্‌ন ইমরান এবং ইনজীলপ্রাপ্ত হযরত ঈসা ইব্‌ন মারিয়াম (আ) যদি জীবিত থাকতেন তবে এই পবিত্র শরীয়তের বর্তমানে তাদের কোন শরীয়ত থাকতো না। শুধু তারা কেন অন্য সকল নবী-রাসূল (আ)-ও যদি বর্তমান থাকতেন তাহলে এই মহান, সম্মানিত ও পবিত্র শরীয়তের অনুসরণ ছাড়া তাদের গত্যন্তর থাকতো না।

আল্লাহ তাআলা যখন আমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর অনুসারী বানিয়ে অনুগৃহীত করেছেন, তাই যে সম্প্রদায় ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট করেছে এবং নিজেরা সত্যপথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, সে সম্প্রদায়ের অনুসরণ করা কী করে আমাদের জন্যে সমীচীন হবে? ঐ সম্প্রদায় তো তাদের দীনকে পরিবর্তিত করেছে, বিকৃত করেছে এবং তার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। শেষে তারা এমন এক পর্যায়ে নেমে এসেছে যেন কখনো তাদের প্রতি কোন শরীয়ত নাযিলই হয়নি। পরবর্তীতে ঐ শরীয়ত তো রহিতই হয়ে গিয়েছে। রহিত এবং বাতিলকৃত দীনের অনুসরণ করা হারাম। কেউ তা অনুসরণ করলে তার ছােট-বড় কোন আমল আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন না। যা আন্দীে শরীয়তারূপে নির্ধারিত হয়নি, তার মধ্যে আর এ বাতিলকৃত শরীয়তের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরল পথপ্রদর্শন করেন।

অন্য একটি হাদীস

ইমাম বুখারী ইব্‌ন উমর (রা) থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমাদের পূর্ববতী উম্মতদের মেয়াদের তুলনায় তোমাদের মেয়াদ হল আসরের নামায থেকে সূর্যস্ত পর্যন্ত সময়ের ন্যায়। তোমাদের এবং ইয়াহুদী-নাসারাদের উদাহরণ হল এমন এক ব্যক্তির ন্যায়, যে কতক কর্মচারী নিয়োগের ইচ্ছা করল। সে বলল, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রত্যেকে এক কীর্যাত করে পাবে। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমার কাজ করার কেউ আছে কী? এ প্রেক্ষিতে এক কীরাতের বিনিময়ে ইয়াহুদীগণ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কাজ করল। তারপর ওই লোক বলল, দুপুর থেকে আসরের নামাযের সময় পর্যন্ত এক কীরােত। এক কীরােত পারিশ্রমিকের বিনিময়ে আমার কাজ করার কেউ আছে কী? এ প্রেক্ষিতে নাসারগণ এক কীরাতের বিনিময়ে দুপুর থেকে আসার পর্যন্ত কাজ করল।

তারপর ঐ ব্যক্তি বলল, আসরের নামাযের সময় থেকে সূর্যস্ত পর্যন্ত প্রত্যেকে দুকীরােত পরিশ্রমিকের বিনিময়ে আমার কাজ করার কেউ আছে কী? জেনে রেখ, হে আমার উম্মত! তোমরা এখন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দুকীরাতের বিনিময়ে কাজ করে যোচ্ছ। জেনে রেখা, তোমাদের পারিশ্রমিক হল ওদের দ্বিগুণ।

তাতে ইয়াহুদী ও নাসারগণ ক্ষুব্ধ হলো এবং বলল, আমরা কাজ করলাম বেশী আর পারিশ্রমিক পেলাম কম!! আল্লাহ তাআলা বললেন, আমি কি তোমাদের পাওনা পরিশোধের ব্যপারে জুলুম করেছি? তারা বলল, না। আল্লাহ তাআলা বললেন, ওদেরকে যে দ্বিগুণ দিচ্ছি। তা আমার অনুগ্রহ। আমি যাকে চাই, আমার অনুগ্রহ দান করি।

আলোচ্য হাদীস খানা প্রমাণ করে যে, অতীত উম্মতদের মেয়াদের তুলনায় এ উম্মতের মেয়াদ কম হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন –

মাগরিব পর্যন্ত সময়ের ন্যায়। অবশ্য পূর্ববতী উম্মতদের সাকুল্য মেয়াদ কতটুকু ছিল, তা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জানা নেই। তদ্রুপ এই উম্মতের সাকুল্য মেয়াদ কতটুকু হবে, তা-ও আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কেউ জানেন না। তবে এটা ঠিক যে, পূর্ববতী উম্মতের মেয়াদের তুলনায় এ উম্মতের মেয়াদ কম। কিন্তু ঐ মেয়াদের কতটুকু এখনও অবশিষ্ট আছে, তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন।

এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন ১৯ ১! + ১ -1 , ১ শুধু তিনিই যথাসময়ে তা প্ৰকাশ করবেন।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :

ওরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কিয়ামত সম্পর্কে, (সেটি কখন ঘটবে? এটির আলোচনার সাথে আপনার কী সম্পর্ক? এটির চরম জ্ঞান আছে আপনার প্রতিপালকের নিকট। রাসূলুল্লাহ (সা)-এর পরে পৃথিবী হাজার বছর আয়ু পাবে না বলে যে জনশ্রুতি মশহুর রয়েছে, তা আন্দীে কোন হাদীস নয়।

এ বিষয়ে অবশ্য অন্য একটি হাদীস রয়েছে। সেটি হল ৫, ৬- কুঁ–…। …….।। ৬ ১১২১ ৷ -দুনিয়া হল আখিরাতের জুমা সমূহের মধ্যকার একটি জুমা (সপ্তাহ) বরাবর মাত্র। তবে এ হাদীসের বিশুদ্ধতায় সন্দেহ রয়েছে। উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত উদাহরণ প্রদানের উদ্দেশ্য হল তাদের ছওয়াব ও পারিশ্রমিকের তারতম্য বর্ণনা করা এবং এটাও জানিয়ে দেয়া যে, ছওয়াবের প্রাচুর্য ও কমতি কর্মের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল নয়; বরং এটি নির্ভর করে অন্য বিষয়ের উপর, যা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন অনেক ক্ষেত্র আছে, যেখানে স্বল্প আমল দ্বারা এমন প্রচুর ছওয়াব অর্জন করা যায়, যা অন্যখানে বেশী আমল দ্বারা অর্জন করা যায় না। যেমন লায়লাতুল কদর। এই রাতে ইবাদত করা লাইলাতুল কদর বিহীন হাজার মাস ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম। অদ্রপ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর সাহাবীগণ। তারা এমন এক সময়ে আল্লাহর পথে দান করেছেন যে, অন্যরা উহুদ পর্বত সমান স্বর্ণ আল্লাহর পথে দান করলেও সাহাবীগণের ঐ পরিমাণ বা তার অর্ধেক দানেরও সমান হবে না। আর রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে তার ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তাআলা নবুওত দান করেন এবং ৬৩ বছর বয়সে তাকে দুনিয়া থেকে তুলে নেন, এটাই প্রসিদ্ধ মত।

২৩ বছরের এই স্বল্প মেয়াদে তিনি কল্যাণকর জ্ঞান ও সৎকর্মে সকল নবী (আঃ)-কে অতিক্রম করে গিয়েছেন। এমন কি নূহ (আ) যিনি দীর্ঘ ৯৫০ বছর তাঁর সম্প্রদায়কে লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের প্রতি দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং দিনে-রাতে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত ছিলেন; তাঁর উপরও রাসূলুল্লাহ (সা) শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। তাঁর সকল নবীর উপর সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক! এই উম্মত, তারা গৌরবান্বিত হয়েছে এবং দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হয়েছে তাদের নবীর শ্রেষ্ঠত্ব, মাহাত্ম্য ও সম্মানের বরকতে। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন :

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তিনি তার অনুগ্রহে তোমাদেরকে দিবেন। দ্বিগুণ পুরস্কার এবং তিনি তোমাদেরকে দিবেন। আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এটি এজন্যে যে, কিতাবীগণ যেন জানতে পারে, আল্লাহর সামান্যতম অনুগ্রহের উপরও তাদের কোন অধিকার নেই। অনুগ্রহ আল্লাহরই ইখতিয়ারে, যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি তা দান করেন। আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

অধ্যায় : কুরআন করীমে এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসে বনী ইসরাঈল সম্পর্কে বহু বিবরণ রয়েছে। তার সবগুলো যদি আমরা উল্লেখ করতে যাই। তবে গ্রন্থটির কলেবর বেড়ে যাবে। ইমাম বুখারী (রা) যা উল্লেখ করেছেন আমরা সেগুলোই এই কিতাবে উল্লেখ করলাম। এতটুকুই যথেষ্ট, এ অধ্যায়ের জন্যে এগুলো স্মারক ও নমুনা। আল্লাহই সম্যক অবগত। (৫৭ হাদীদ : ২৮-২৯)

ইসরাঈলীদের থেকে বর্ণিত তাদের বর্ণনা, যেগুলো অনেক তাফসীরকার ও ঐতিহাসিকগণ উল্লেখ করেছেন, তার সংখ্যা তো বহু, এগুলোর কিছু কিছু সঠিক এবং প্রকৃত ঘটনার অনুকূল বটে; কিন্তু অধিকাংশ হল মিথ্যা, অসত্য ও বানোয়াট। তাদের পথভ্রষ্ট ও সত্যত্যাগী লোকেরা এগুলো রটনা করেছে এবং তাদের কাহিনীকাররা প্রচার করেছে।

ইসরাঈলী বৰ্ণনাগুলো তিন প্রকার। (১) কতক বর্ণনা সঠিক। আল্লাহর কুরআনে বর্ণিত এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-এর হাদীসে বিবৃত ঘটনাসমূহের অনুরূপ (২) কতক বর্ণনা এরূপ যে, কুরআন ও হাদীসের সরাসরি বিপরীত হওয়ার কারণে এগুলোর অসত্য ও বানোয়াট হওয়া সুস্পষ্ট (৩) কতক এমন যে, এগুলো সত্যও হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। এ জাতীয় বর্ণনাগুলো সম্পর্কেই আমাদেরকে নীরব থাকতে বলা হয়েছে যে, আমরা এগুলোকে সত্যও বলব না, মিথ্যাও বলব না। বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন,

ইয়াহুদী-নাসারাগণ যখন তোমাদের নিকট কোন কথা পেশ করে তখন তোমরা তাদেরকে সত্যবাদী ও সব্যস্ত করো না; মিথ্যাবাদীও সাব্যস্ত করো না। বরং তোমরা বল : আমরা সে সবের প্রতি ঈমান এনেছি, যেগুলো আমাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতিও

Sbra

(و حیث و عن بنی اسرائیل ولا حراج)।।।।।। 5।।8f5}{363 f۹।। 5)}63& ۹1 آf۹۶। তোমরা ইসরাঈলীদের থেকে হাদীস বর্ণনা কর, তাতে দোষ নেই—এর প্রেক্ষিতে এ প্রকারের উদ্ধৃতিগুলো বর্ণনা করা বৈধ।

ইয়াহুদী জাতি। আল্লাহ তাআলা হযরত মূসা ইব্‌ন ইমরানের প্রতি তাদের জন্যে তাওরাত নাযিল করেন। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন : L, L., <!! …….. …, q। * آ>T1 >s .۹।। 5।।।।۶ج آ6F CR{}2یلاl۹Rگ علی الذی أحسن و تفصیلا لیگل شنید পরায়ণদের জন্যে সম্পূর্ণ, যা সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ।

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :

قل من أنزل الكتب الذى جاء به موسلى نورا وهدى للناس تجعلونة AeA AhAqAAA AAAA AAAASBBS BB BDBB BBB BBB BS BBBB জন্যে আলো ও পথনির্দেশ ছিল, তা তোমরা বিভিন্ন পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ করে কিছু প্রকাশ কর ও যার অনেকাংশ গোপন রাখা।

و لقد اتینا موسی و هارون الفرقان و ضیاء : ۶۱۰)> S।।।।।।।।।।।।।।।।। 5।। SIIIl SII۹8 ………11 453, আমি তো মূসাও হারুনকে দিয়েছিলাম কুরআন, জ্যোতি ও উপদেশ মুত্তাকীদের জন্যে। আল্লাহ্ তাআলা অন্যত্র বলেছেন : (৩.৭ وأتيناهما الكثب الم …a 4.2.11 1, 10%…।। [a! ,A3) আমি উভয়কে দিয়েছিলাম বিশদ কিতাব। আমি উভয়কে পরিচালিত করেছিলাম সৎপথে। (৩৭ সাফফাত ১১৭)

আল্লাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে বলেন :

আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম, তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো, নবীগণ যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইয়াহুদীদেরকে তদনুসারে বিধান দিত আরও বিধান দিত রাব্বানীগণ এবং বিদ্বানগণ কারণ তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল এবং তারা ছিল সেটির সাক্ষী। সুতরাং মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর এবং আমার আয়াত তুচ্ছ

ミbrbr

মূল্যে বিক্রয় করো না আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন। সে আনুযায়ী যারা বিধান দেয় না, তারাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী। (৫ মায়িদা : ৪৪)

দীর্ঘকাল পর্যন্ত ইয়াহুদীরা তাওরাত কিতাব অনুযায়ী ফয়সালা করেছিল এবং সুদৃঢ়ভাবে সেটিকে গ্রহণ করেছিল। তারপর তারা সেটিকে পরিবর্তন করতে, বিকৃত করতে ভুল ব্যাখ্যা দিতে ও যা তার মধ্যে নেই তা প্রচার করতে শুরু করল। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন :

তাদের মধ্যে এক দল লোক আছেই, যারা কিতাবকে জিহ্বা দ্বারা বিকৃত করে, যাতে তোমরা সেটিকে আল্লাহর কিতাবের অংশ মনে কর; কিন্তু সেটি কিতাবের অংশ নয়, এবং তারা বলে; এটি আল্লাহর পক্ষ হতে,কিন্তু সেটি মুলত আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত নয়। তারা জেনে-শুনে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে। (৩। আল ইমরান : ৭৮)

আলোচ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিলেন যে, তারা তাওরাতের অসত্য, মিথ্যা ও অপ্ৰাসংগিক ব্যাখ্যা করে। তারা যে এরূপ অপকর্মে জড়িত, তাতে আলিমগণের মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। তাঁরা এ ব্যাপারে একমত যে, তারা তাওরাতের বিকৃত অর্থ প্রকাশ করে এবং মূল মর্মের সাথে সম্পর্কহীন ভিন্ন অৰ্থ বুঝানোর জন্যে সংশ্লিষ্ট বাণী ব্যবহার করে। যেমন উক্ত কিতাবে রজম বা প্রস্তর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিধান বিদ্যমান থাকা সত্তেও তারা উক্ত বিধানকে বেত্ৰাঘাত ও মুখে চুনকালি মেখে দেয়ার বিধান দ্বারা পরিবর্তন করেছে। অনুরূপভাবে চুরির শাস্তি কার্যকর এবং আশরাফ-আতরাফ নির্বিশেষে সকল চোরের হাত কাটার জন্যে তারা আদিষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তাদের কোন সভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তাকে তারা ছেড়ে দিত। আর নিম্নশ্রেণী ও দুর্বল কেউ চুরি করলে তার উপর দণ্ড কার্যকর করত।

অবশ্য তারা তাওরাত কিতাবের মূল শব্দ পরিবর্তন করেছে কি-না, এ বিষয়ে একদল বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন যে, তারা পুরো তাওরাতের সকল শব্দই পরিবর্তন করে ফেলেছে। অপর একদল বলেন যে, তাওরাতের মূল শব্দ পরিবর্তন করা হয়নি। প্রমাণ স্বরূপ তারা এই

তারা আপনার উপর কিভাবে বিচার ভার ন্যস্ত করবে যখন তাদের নিকট রযেছে তাওরাত যাতে আল্লাহর আদেশ আছে। (৫ মায়িদা : ৪৩)

এবং আল্লাহ তাআলার বাণী :

যে উম্মী নবীর উল্লেখ তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইনজীলে রয়েছে। তাতে তারা লিপিবদ্ধ পায় যে তাদেরকে সৎকার্যের নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্যে বাধা দেয়, যে তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু বৈধ করে। (৭ আরাফ : ১৫৭) নীচের আয়াতও তাদের প্রমাণ

বল, তোমরা তাওরাত নিয়ে আস, সেটি পাঠ করা, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। (৩ আল ইমরান : ৯৩)

রজম (প্ৰস্তুরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড) সম্পর্কিত ঘটনাটিও তাদের প্রমাণ। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইব্‌ন উমর (রা) থেকে, সহীহ মুসলিমে বারা ইব্‌ন আযিবা ও জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ থেকে এবং সুনান গ্ৰন্থসমূহে আবু হুরায়রা (রা) প্রমুখ থেকে বর্ণিত যে, এক ইহুদী পুরুষ ও ইহুদী মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হলে তাদের বিচারের জন্যে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট উপস্থিত করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, রজম কার্যকর করা সম্পর্কে তোমাদের তাওরাতে কী নির্দেশ পাও? তারা, বলল, এ জাতীয় লোকদেরকে আমরা অপমান ও বেইজ্জত করে দেই এবং বেত্ৰাঘাত করি। রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে তাওরাত উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন। তাওরাত নিয়ে এসে তারা যখন পাঠ শুরু করল তখন রজমের আয়াত তারা গোপন করছিল। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন সূরিয়া তার হাত দিয়ে রজমের আয়াত ঢেকে রেখেছিল এবং ঐ আয়াতের পূর্বের ও পরের অংশ পাঠ করছিল।

রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে কানা! তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত তুলল, তখন দেখা গেল সেখানে রজমের আয়াত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (স) ওদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন বললেনঃ

হে আল্লাহ! আমিই তো প্রথম ব্যক্তি, তারা অকার্যকর করার পর যে আপনার নির্দেশকে পুনজীবিত করল।

আবু দাউদ (র)-এর বর্ণনায় আছে, তারা যখন তাওরাত নিয়ে আসলো তখন তিনি তার নীচ থেকে বালিশ টেনে এনে তাওরাতের নীচে রাখলেন এবং বললেন- আমি তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, এবং যিনি তোমাকে নাযিল করেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছি। কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাওরাতের সম্মানার্থে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। এই সনদ সম্পর্কে আমি অবগত নই। আল্লাহই ভাল জানেন।

অনেক কালাম শাস্ত্ৰবিদ যারা বলেন যে, রাজা বুখত নসরের সময়ে তাওরাত কিতাবের তাওয়াতুর বা সন্দেহাতীত প্ৰসিদ্ধি বিলুপ্ত হয়ে যায়, উপরোক্ত দলীল-প্রমাণ তাদের বক্তব্যের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে। তারা বলেন যে, সে সময়ে একমাত্র উযায়র (আ) ব্যতীত অন্য কারো নিকট তাওরাত সংরক্ষিত ছিল না। এ প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, যদি তা-ও হয় এবং উক্ত উযায়র নবী হয়ে থাকেন তবে তাতে তাওয়াতুর বা সন্দেহাতীত প্রসিদ্ধি বিনষ্ট হবে না। কারণ নবী নিষ্পাপ। নিষ্পাপ ব্যক্তি পর্যন্ত যথাযথভাবে পৌছাই যথেষ্ট। অবশ্য, যদি কেউ বলেন যে, তাঁর নিকট থেকে তাওয়াতুর বা সন্দেহাতীত প্রসিদ্ধি সূত্রে পৌঁছেনি, তাহলে সমস্যা থেকে যাবে। এই সমস্যা নিরসনে এ-ও বলা যায় যে, বুখত নসরের শাসনামলের পর যাকারিয়্যা, ইয়াহিয়া ও ঈসা (আ) প্রমুখ নবীগণ এসেছেন। তারা সবাই তাওরাতের অনুসরণ করেছেন তাওরাত যদি বিশুদ্ধরূপে বিদ্যমান ও আমলযোগ্য না থাকত। তবে তারা সেটির উপর নির্ভর করতেন না। তারা তো নিষ্পাপ নবী।

ইহুদীগণ যা সত্য বলে বিশ্বাস করতে কুমতলব হাসিলের উদ্দেশ্যে তা থেকে তারা সরে যেত। বিচার মীমাংসার জন্যে তাদেরকে অনিবাৰ্যভাবে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট যেতে আদেশ দেয়া সত্ত্বেও তারা রাসূলের আনীত বিধানকে প্রত্যাখ্যান করত। অবশ্য তাদের বানোয়াট ও স্বরচিত কিছু কিছু বিষয়কে তারা সত্য বলে বিশ্বাস করুত। যা মূলত আল্লাহর নির্দেশের পরিপন্থী। যেমন ব্যভিচারের শাস্তি স্বরূপ বেত্ৰাঘাত ও মুখে চুনকালি মেখে দেয়া। এটি অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশের সরাসরি বিরোধী। তারা বলেছিল, তোমাদের জন্যে বিধান হল বেত্ৰাঘাত ও মুখে কালি মেখে দেয়া, তোমরা এটি গ্রহণ কর, কিয়ামতের দিনে আল্লাহর নিকট এ বলে তোমরা ওযর পেশ করতে পারবে যে, তোমরা একজন নবীর হুকুম পালন করেছ। আর যদি এই নবী তোমাদের জন্যে বেত্ৰাঘাত ও মুখে কালি মাখা শাস্তির নির্দেশ না দিয়ে রজম (প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ডের) নির্দেশ দেন, তবে তোমরা তা গ্ৰহণ করা থেকে বিরত থাকবে। সত্য দীনের বিপরীতে তাদের দুষ্ট মনের প্ররোচণা ও কু-প্রবৃত্তির অনুসরণের এই অসৎ উদ্দেশ্য প্রত্যাখ্যান করে।,

আল্লাহ তাআলা বলেন :

তারা তোমার উপর কীভাবে বিচারভার ন্যস্ত করবে। অথচ তাদের নিকট রয়েছে তাওরাত যাতে আল্লাহর আদেশ আছে, এরপরও তারা মুখ ফিরিয়ে লয় এবং তারা মুমিন নয়। নিশ্চয় আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছি। তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো। নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল তারা ইহুদীদেরকে সে অনুযায়ী বিধান দিত রব্বানীগণ এবং বিদ্বানগণ- কারণ তাদেরকে আল্লাহ্র কিতাবের রক্ষক করা হয়েছিল। (৫ মায়িদা : ৪৪-৪৫)

এ প্রেক্ষিতেই রাসূলুল্লাহ (সা) ঐ ব্যভিচারীদের জন্যে রজম-এর রায় দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে আপনার নির্দেশ পুনরুজীবিত করেছে, যখন তারা তা মৃত করে ফেলেছিল।

পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কেন তারা এরূপ আল্লাহর নির্দেশ বর্জন করেছিল? উত্তরে তারা বলেছিল : আমাদের সম্ভান্ত লোকদের মধ্যে ব্যভিচার ব্যাপকভাবে সংঘটিত হচ্ছে। তাদের উপর দণ্ড প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্বল ও নিম্ন শ্রেণীর যারা ব্যভিচার করে, শুধু তাদের উপরই আমরা রজম দণ্ড প্রয়োগ করে থাকি। তারপর আমরা পরামর্শ করে বললাম যে, ব্যভিচারের শাস্তি হিসাবে আমরা এমন একটি মাঝামাঝি দণ্ড নির্ধারণ করি, যা আশরাফ-আতরাফ সকলের উপর কার্যকর করা চলে। ফলে আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে বেত্ৰাঘাত ও মুখে কালি মেখে দেয়ার দণ্ড নির্ধারণ করি। এটি তাদের তাওরাত বিকৃতি, পরিবর্তন ও ভুল ব্যাখ্যার একটি উদাহরণ। কিতাবে রজমের শব্দ অক্ষুন্ন রেখে তারা তার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। উপরোক্ত হাদীস তা প্রমাণ করে। এ জন্যে কৃতিক লোক বলেন যে, তারা শুধু অর্থের বিকৃতি ও ভুল ব্যাখা প্রদান করেছে। শব্দগুলো সব কিতাধে যথাযথ বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রকারের লোকদের বিরুদ্ধে এই যুক্তি দেয়া যায় যে, তারা যদি তাদের কিতাবের সকল কিছু পালন করতো তাহলে তা অবশ্যই তাদেরকে সত্যের অনুসরণ ও রাসূল মুহাম্মদ (সা)-এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের দিকে পরিচালিত করত।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

– যারা অনুসরণ করে বার্তাবাহক উন্মী নবীর, যার উল্লেখ তাওরাত ও ইনজীল যা তাদের নিকট আছে তাতে লিপিবদ্ধ পায়। যে তাদেরকে সৎ কার্যের নির্দেশ দেয় ও অসৎকার্যে বাধা

দেয়, যে তাদের জন্যে পবিত্র বস্তু বৈধ করে ও অপবিত্র বস্তু অবৈধ করে এবং যে মুক্ত করে তাদেরকে তাদের গুরুভার হতে ও শৃংখল হতে যা তাদের উপর ছিল। (৮ আনফাল : ১৫৭)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :

তারা যদি তাওরাত, ইনজীল ও তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত, তাহলে তারা তাদের উপর ও পদতল হতে আহার্য লাভ করত। তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা মধ্যপন্থী। (৫ মায়িদা : ৬৫)

বল, হে কিতাবীরা! তাওরাত, ইনজীল ও যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তোমরা তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তি নেই। (१ भांशिनी 8 ७b)

তাওরাতের শব্দে বিকৃতি ঘটেনি। বরং অর্থেই বিকৃতি ঘটানো হয়েছে এই অভিমত হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা)-ও পোষণ করতেন বলে ইমাম বুখারী (র) তাঁর সহীহ গ্রন্থের শেষ দিকে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী (র) নিজেও এই অভিমত সমর্থন করেছেন। আল্লামা ফখরুদ্দীন /

রায়ী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, অধিকাংশ কালাম শাস্ত্ৰবিদ এই অভিমত পোষণ করতেন।

নাপাক ব্যক্তির জন্যে তাওরাত স্পর্শ করা জায়েয নেই

হানাকী ফিকহ বিদদের মতে নাপাক অবস্থায় ও বিনা উদ্যুতে তাওরাত স্পর্শ করা জায়েয নেই। আল্লামা হানাতী তাঁর ফাতাওয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, কতক শাফিঈ পন্থী আলিমও উপরোক্ত মত পোষণ করেন। এই মতটি একটি বিরল মত। কতক উলামা উভয় অভিমতের মাঝামাঝি অভিমত পোষণ করেন। তাদের মধ্যে শায়খ ইমাম আল্লামা আবুল আব্বাস ইব্‌ন তায়মিয়্যা অন্যতম। তিনি বলেন, যারা এ মত পোষণ করে যে, তাওরাত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণই পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে এবং এর একটি অক্ষরও আসল অবস্থায় নেই, তাদের এ অভিমত কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। তদ্রুপ যারা এ অভিমত পোষণ করে যে, তাওরাত আদৌ পরিবর্তন করা হয়নি, তাদের অভিমতও গ্রহণযোগ্য নয়। সত্য ও বাস্তবতা এই যে, তাওরাতের কতক শব্দে হ্রাস-বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবর্তন, বিকৃতি ও রূপান্তর সংঘটিত হয়েছে; যেমন বিকৃতি ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এর মর্ম ও ব্যাখ্যায়। ভালভাবে চিন্তা করলে এটি অবগত হওয়া যায়। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই। আল্লাহই ভাল জানেন।

তাদের তাওরাত বিকৃতির একটি উদাহরণ হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র কুরবানীর ঘটনা। সেখানে আছে এJ১-২৩ এ1, 1 & 31 তোমার একক পুত্রকে কুরবানী কর। 5656لى 715 691 اذبح ابن لك وحيد لك بكرك اسحاق عC।كا () STG-1694 6585 61816 *i) শিশু পুত্র ইসহাককে কুরবানী করা। এসব কপিতে বর্ণিত L=L শব্দটি নিঃসন্দেহে তাদের নিজেদের সংযোজন। কারণ তখন হযরত ইবরাহীমের একক ও প্রথম শিশু পুত্র ছিলেন। হযরত ইসমাঈল (আ)। হযরত ইসহাক (আ)-এর জন্মের ১৪ বছর পূর্বে ইসমাঈল (আ)-এর জন্ম হয়। তাহলে ইসহাক (আ) একক শিশু পুত্র হন। কীভাবে? আরবদের প্রতি তাদের বিদ্বেষের প্রেক্ষিতে আরবদের পূর্ব পুরুষ হযরত ইসমাঈল (আ)-এর জন্যে কুরবানী বিষয়ক সামান নির্ধারণের জন্যে তারা আল্লাহ ও রাসূল (সা) সম্বন্ধে মিথ্যা আরোপ করে L_2_.) শব্দ সংযোজন করে দিয়েছে।

তাদের এই সংযোজনের প্রেক্ষিতে পূর্বের ও পরের অনেক লোক প্রতারিত হয়েছে এবং তাদের সাথে এ মত পোষণ করেছেন যে, কুরবানী বিষয়ক পুত্র হলেন ইসহাক (আ)। সঠিক মতামত এই যে, কুরবানী বিষয়ক পুত্র ছিলেন। হযরত ইসমাঈল (আ)। ইতিপূর্বে আমরা তা বর্ণনা করেছি। আল্লাহই ভাল জানেন। সামিরা সম্পাদিত তাওরাতের দশম বাক্যে নামাযে তুর পর্বতের দিকে মুখ করার নির্দেশটি তাদের অতিরিক্ত সংযোজন। ইয়াহুদী ও নাসারাদের অন্যান্য কপিতে এটুকু নেই। হযরত দাউদ (আ)- এর নামে প্রচলিত যাবুরের কপিতে প্রচুর অসংগতি পাওয়া যায়। তাতে এমন সব অতিরিক্ত ও সংযুক্ত বিষয়াদি পাওয়া যায়, যা মূলত যাবৃরের ভাষ্য নয়। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইয়াহুদীদের নিকট এখন যাবুরের যে আরবী অনুবাদ রযেছে, তার মধ্যে যে প্রচুর বিকৃতি পরিবর্তন, সংযোজন ঘটনার মিথ্যাচারিতা ও স্পষ্ট হ্রাস-বৃদ্ধি রয়েছে, তাতে কোন বিবেকবান মানুষেরই সন্দেহ থাকতে পারে না। এ কপিতে সুস্পষ্ট মিথ্যাচার ও প্রচুর মারাত্মক ভ্ৰান্তি রয়েছে। তারা নিজেদের ভাষায় যা পাঠ করে এবং নিজেদের কলমে যা লিখে সে সম্পর্কে অবশ্য আমাদের জানা নেই। তবে তারা যে মিথ্যাবাদী, বিশ্বাস ভঙ্গকারী এবং আল্লাহ তার রাসূল ও তাঁর কিতাব সম্পর্কে মিথ্যা আরোপকারী এরূপ ধারণা করার যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। নাসারাদের ইনজীল চতুষ্টয় যা মার্ক, লুক, মথি ও যোহন থেকে বর্ণিত, সেগুলো তওরাতের তুলনায় আরো

বেশী পরস্পর বিরোধী ও অসংগতিপূৰ্ণ;

নাসারগণ কোন কোন ক্ষেত্রে তাওরাত ও ইনজীল উভয়ের বিধানের বিরোধিতা করে। এ সকল ক্ষেত্রে তারা নিজেরা নিজেদের জন্যে নতুন বিধান তৈরী করে নেয়। এ জাতীয় বিধান সমূহের একটি হল তাদের পূর্বমুখী হয়ে নামায আদায় করা। ইনজীল চতুষ্টয়ের কোনটিতেই সরাসরি এ বিধান নেই এবং এ বিষয়ে তারা আদিষ্ট নয়। অনুরূপ তাদের উপাসনালয়ে মূর্তি স্থাপন, খতনা বর্জন, রোজার সময়কে বসন্তকালে সরিয়ে দেয়া- এবং রোযার মেয়াদ ৫০ দিন পর্যন্ত বর্ধিত করণ, শূকরের গোশত খাওয়া, ক্ষুদ্র একটি খিয়ানন্তকে বড় আমানত বলে গ্রহণ করা, সন্যাসব্রতের প্রচলন করা, সন্যাসব্রত হল ইবাদতে আগ্রহী ব্যক্তির বিয়ে-শাদী বর্জন করা এবং তার জন্যে বিয়ে-শাদী হারাম বলে গণ্য করা এবং ৩১৮ জন ধর্মযাজক কর্তৃক রচিত বিধি-বিধানগুলো লিপিবদ্ধ করা ১ এসবই হচ্ছে তাদের বানানো ও স্বরচিত বিধান। কনস্টান্টিননোপল রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট কনস্টান্টিন ইব্‌ন কিন্তুনি- এর শাসনামলে তারা এগুলো তৈরি করে ও তার প্রচলন ঘটায়। রাজা কনস্টান্টের সময়কাল ছিল হযরত ঈসা। (আ)-এর ৩০০ বছর পর। তাঁর পিতা ছিলেন রোমের একজন রাজা। তাঁর পিতা হারবান অঞ্চলে শিকারের উদ্দেশ্যে এক সফরে গিয়ে তার মাতা হায়লানাকে বিবাহ করেন। এই মহিলাটি প্রাচীন সন্ন্যাসব্ৰতী খৃষ্টান সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন।

কনস্টান্টিন তাঁর বাল্যকালে দর্শনশাস্ত্র শিক্ষা করেন এবং তাতে বুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি তাঁর মায়ের ধর্ম খৃষ্টবাদের প্রতি কিছুটা ঝুকে পড়েন। নিজে দর্শনের অনুসারী হয়েও খৃষ্টবাদী অবলম্বীদেরকে তিনি মোটামুটি শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। তার পিতার মৃত্যুর পর তিনি রাজ্যের সর্বেসর্বা হয়ে উঠেন। প্রজাদের প্রতি তিনি ন্যায় বিচার করতেন। জনসাধারণও তাকে ভালবাসতে থাকে। তিনি তাদের মধ্যে নেতৃত্ব অর্জন করেন এবং সামরিক অভিযান চালিয়ে দ্বীপ সমূহসহ সমগ্র সিরিয়া জয় করে নেন। এতে তার সম্মান ও মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম কায়সার। তাঁর শাসনামলে ত্রিমুখী ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টি হয়। একদিকে নাসারগণ একদিকে আলেকজান্দ্ৰিয়ার আকসান্দরূস অন্য দিকে তাদেরই। জনৈক পণ্ডিত ব্যক্তি নাম আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আর ইউস। আকসিন্দরূস-এর মতে হযরত ঈসা (আ) ছিলেন আল্লাহর পুত্র। আল্লাহ তাআলার শান তার এ মতের অনেক উর্ধে।

ইব্‌ন আর ইউসের মতে, ঈসা (আ) ছিলেন আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। নাসারাদের একটি ছোট দল তাঁর অনুসরণ করেছিল। তাদের অধিকাংশ লোক তাদের ধর্ম যাজকের অভিমতই গ্রহণ করে। তারা ইব্‌ন আরাইউস ও তার অনুসারীদেরকে তাদের উপাসনালয়ে প্রবেশে বাধা দেয়। ইব্‌নে আর ইউস তার প্রতিদ্বন্দী আকসান্দরূস ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে রাজা কনষ্টান্টইনের নিকট অভিযোগ দায়ের করে। রাজা তার মতবাদ সম্পর্কে জানতে চান। তিনি হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বিষয়ে নিজের অভিমত রাজার নিকট পেশ করেন এবং এ বিষয়ে দলীল- প্রমাণ ও যুক্তি উপস্থিত করেন। এতে রাজা তার প্রতি আকৃষ্ট হন। এবং তাঁর বক্তব্যের প্রতি বুকে পড়েন।

রাজ দরবারে কেউ কেউ প্ৰস্তাব করে যে, ইব্‌ন আরইউসের বক্তব্য যখন শোনা হল তখন তার প্রতিপক্ষের বক্তব্যও তো শোনা উচিত। রাজা তখন তার প্রতিপক্ষকে উপস্থিত করতে নির্দেশ দিলেন। সাথে সাথে নেতৃস্থানীয় ধর্মভীরু ব্যক্তি, খৃষ্ট ধর্ম সম্পর্কে অভিজ্ঞ সকল লোক এবং বায়তুল মুকাদ্দাস, এন্টিয়ক, রোম ও আলেকজান্দ্ৰিয়ার ধর্মযাজকদেরকেও উপস্থিত করার নির্দেশ জারী করেন।

কথিত আছে যে, চৌদ্দ মাস সময়ের মধ্যে ২০০০-এর অধিক ধর্মযাজক সমবেত হন। রাজা তাদেরকে একটি মজলিসে উপস্থিত করেন। তাদের তিনটি প্রসিদ্ধ মজলিসের এটি হল প্রথম মজলিস। এরা সবাই পরস্পর প্রচণ্ডভাবে ভিন্ন মতাবলম্বী। তাদের পরস্পরের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য প্রচণ্ড ও গুরুতর। ক্ষুদ্র একটি দল এমন মতবাদে বিশ্বাস করে যা অন্য কেউ সমর্থন করে না। এ ৫০ জন হল এক আদর্শে বিশ্বাসী, অপর ৮০ জন অপর এক মতবাদে বিশ্বাসী। অপর দশজন এক মতবাদপন্থী অপর ৪০ জন ভিন্ন এক আদর্শের অনুসারী। ১০০ জন। এক প্রকার বিশ্বাসের অনুসারী তো অন্য ২০০ জন অন্য অভিমত পোষণকারী। একদল ইব্‌ন আর ইউসের মতাবলম্বী তো, অন্যদল অন্য মতাবলম্বী। এসব ধর্মীয় ব্যক্তিদের মতদ্বৈততা ও মতপার্থক্য যখন চরমে পৌঁছে তখন রাজা কনস্টান্টিনোপল। হতভম্ব ও কিংকৰ্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। অবশ্য তাঁর পূর্বসূরী গ্ৰীক সাবিইনদের ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মমতের প্রতি তিনি বীতশ্রদ্ধ छिटुब्लन्।

১. এখানটি ৩২৫ খ্ৰীষ্টানদের। এটি খ্ৰীষ্টান যাজকদের প্রথম কাউন্সিল বলে পরিচিতি।

অবশেষে যে অভিমতের পক্ষে সমর্থক সংখ্যা বেশী, তিনি সে দলের প্রতি মনোযোগী হলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, ৩১৮ জন্য ধর্মযাজক আকসিন্দারুম-এর মতের সমর্থক। তাদের সমান সংখ্যক অন্য কোন দল তিনি পেলেন না। তিনি বললেন যে, এরাই সাহায্য পাওয়ার অগ্ৰাধিকারী। কারণ, তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। আমি তাদেরকে সহায়তা দিব। তিনি তাদের সাথে একান্ত বৈঠকে বসলেন। তিনি তার তরবারী ও ঘোড়া তাদের হাতে অর্পণ করলেন এবং বললেন, আমি ছাড়া আর সবাই রাজাকে সিজদা করল। তিনি তাদেরকে ধমীয় বিধান সম্বলিত একটি পুস্তক প্রণয়নের অনুরোধ জানালেন। তিনি এও বললেন যে, উসামনা যেন পূর্বমুখী হয়ে আদায় করা হয়, কারণ নায়্যিারা নক্ষত্র পূর্বদিক থেকে উদিত হয়। আর তাদের উপাসনালয়ে যেন দেহ বিশিষ্ট মূর্তি স্থাপন করা হয়। তারা সমঝোতায় উপনীত হয় যে, মূর্তি স্থাপন করা হবে উপসনালয়ের প্রাচীরে। এ সব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছার পর রাজা তাদেরকে সাহায্য করতে শুরু করেন। তিনি তাদের মতকে প্রতিষ্ঠিত করতে, বিরুদ্ধবাদীদেরকে কোনঠাসা করতে এবং তাদের মতবাদকে দুর্বল করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। রাজা এ পৃষ্ঠপোষ্টকতায় তারা বিরুদ্ধবাদীদের উপর ধজয় ও প্রতিষ্ঠা পায়। নিজেদের দীনের স্বপক্ষে বহু সংখ্যক উপাসনালয় নির্মাণের জন্যে রাজা তাদেরকে নির্দেশ দেয়। রাজার দীন অনুসরণকারী হিসেবে তারা মালাকামী (রাজতান্ত্রিক সম্প্রদায়) আখ্যায়িত হয়। সম্রাট কন্টাষ্টিাটনের আমলে সিরিয়া ও অন্যান্য শহরে ও জনপদে তারা ১২০০-এর অধিক গীর্জা নির্মাণ করে। রাজা নিজেই হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মস্থানে বেথেলহাম ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তাঁর মা হায়লানাহ তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ)-এর শূলে চড়ানোর স্থানে বায়তুল মুকাদাসে একটি গম্বুজ নির্মাণ করেন।

ইহুদী ও নাসারগণ তাদের মূর্খতা ও জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে এ বিশ্বাস পোষণ করে যে, ঈসা (আ) সেখানে শূলবিদ্ধ হয়েছিলেন।

কথিত আছে যে, রাজা কনষ্টান্টাইন উক্ত মতাদর্শের বিরোধীদেরকে হত্যা করেন এবং তাদের জন্যে মাটিতে বড় বড় গর্ত খনন করে। তাতে আগুন জ্বালিয়ে তাদেরকে পুড়িয়ে মারেন। সূরা বুরুজের তাফসীরে আমরা এ প্রসংগে আলোচনা করেছি। রাজা খ্রিষ্ট ধর্মের এই শাখাকে মর্যাদার আসনে আসীন করেন। এবং তার কারণে এ মতাদর্শ অন্যসব মতাদর্শের উপর বিজয় লাভ করে। তিনি এই ধর্মকে এতই বিকৃত করেন, যা কখনো সংশোধন হওয়ার নয়। এগুলো বজায় রেখে ঐ ধর্ম দ্বারা কল্যাণ অর্জনও সম্ভব নয়। তাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় লোকদের ংখ্যাধিক্যের কারণে তাদের পূজা-পাৰ্বণ অনেক বৃদ্ধি পায়। তাদের সাধু সন্তদের নামে প্রচুর সংখ্যাক গীর্জা স্থাপিত হয়। তাদের কুফারী চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে। তারা স্থায়ীভাবে গোমরাহীর শিকার হয় এবং তাদের কুকর্ম বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ্ তাদের অন্তরকে হিদায়াতের দিকে ধাবিত করেন নি বা তাদের অবস্থাও সংশোধন করেন নি। বরং তাদের অন্তরকে সত্য থেকে বিচুর্য্যত করেছেন এবং সত্যে অবিচলতা থেকে তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। ৭

এরপর তারা নাসতুরিয়্যা ও ইয়াকুবিয়্যা নামক আরো দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল অপর দলকে কাফির বলতে থাকে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীগণ চিরস্থায়ী জাহান্নামী হবে বলে ধারণা করতে থাকে। কোন উপাসনালয়েই তাদের উভয় পক্ষকে একত্রিত হতে দেখা যেত না। প্রত্যক দলই তিন মূল সত্তার প্রবক্তা ছিল- পিতা, পুত্র এবং কলেমা বা বাণী সত্তা। কিন্তু অতীন্দ্ৰিয় জগত ও পার্থিব স্রষ্টার অবতাররূপে আগমন অথবা মানবাকৃতির মধ্যে একাত্ম হওয়া

বিষয়ে তাদের মধ্যে চরম মতভেদ ছিল। আল্লাহ তাআলা খোদ ঈসা (আ)-এর রূপে অবতরণ করেছিলেন, না কি তাঁর মধ্যে প্রবেশ করেছিলেন, না। আল্লাহ্ ও ঈসা একীভূত সত্তা ভুক্ত এ বিষয়ে তাদের মতবিরোধ চরমে পৌঁছেছিল। এ কারণে তাদের কুফারী জঘন্য পর্যায়ে পৌঁছেছিল। মূলত তাদের সকল পক্ষই ছিল বাতিল, অসত্যের অনুসারী।

অবশ্য আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আর ইউসের অনুসারীগণ যারা বলত যে, হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, আল্লাহর দাসীর পূত্র ও তাঁর বাণী, মারয়ামের প্রতি এ বাণী নিক্ষেপ করেছেন এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে রূহ রূপে আবির্ভূক্তত হয়েছিলেন তারা সত্যপন্থী ছিল। মুসলমানরাও হযরত ঈসা (আ) সম্পর্কে অনুরূপ মত পোষণ করেন। কিন্তু আর ইউসী পন্থীগণ যখন এই বিশ্বাসে অনমনীয় থাকে, তখন উপরোক্ত তিন ফির্ক এসে তাদের উপর আক্রমণ করল এবং তাদেরকে মেরে-কেটে ছত্রভঙ্গ করে দূরে তাড়িয়ে দিল। ক্রুমে ক্রমে তাদের সংখ্যা হ্রাস পেতে পেতে অবশেষে এমন হয়ে গেল যে, এখন ঐ পন্থী কাউকেই দেখা যায় না। আল্লাহই ভাল জানেন।

পূর্বতন নবীগণের বিবরণ বিষয়ক অধ্যায়

আল্লাহ তাআলা বলেন :

এই রাসূলগণ, তাদের কতককে অপর কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে এমন কেউ কেউ রয়েছে, যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন। আবার কতককে উচ্চ মর্যাদায় উনীত করেছেন। মারিয়াম তনয় ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্ৰদান করেছি ও পবিত্র আত্মা দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি। (২ বাকারা ২৫৩)

আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

আমি আপনার নিকট ওহী প্রেরণ করেছি। যেমন নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট প্রেরণ করেছিলাম। ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরগণ ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস হারুন এবং সুলায়মানের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলাম এবং দাউদকে যাবুর দিয়েছিলাম। আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছি। যাদের কথা পূর্বে তোমাকে বলেছি এবং অনেক রাসূল যাদের কথা আমি বলিনি। এবং মূসার সাথে আল্লাহ সাক্ষাত বাক্যালাপ করেছিলেন। আমি সুসং S সাবধানকারী রাসূল প্রেরণ করেছি। যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (৪ নিসা ১৬৩-১৬৫)

ইব্‌ন হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে ইব্‌ন মারদুয়েহ তার তাফসীর গ্রন্থে এবং অন্যান্য অনেকে আবু যর (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করি, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! নবীদের সংখ্যা কত? তিনি বললেন, এক লাখ চব্বিশ হাজার। আমি আবার বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)! তাদের মধ্যে রাসূল কতজন? তিনি বললেন ৩১৩ জন, তাদের সংখ্যা প্রচুর। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম কে ছিলেন? তিনি বললেন, আদম (আ)। আমি বললাম, তিনি কি রিসালাতপ্রাপ্ত নবী? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা। তাকে আপন হাতে তৈরী করেছেন। তার মধ্যে তাঁর রূহ ফুকে দিয়েছেন। তারপর তাঁকে প্রথম মানবরূপে তৈরী করেছেন। এরপর রাসূলল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, হে আবু যর! ৪জন নবী সুরয়ানী ভাষাভাষি তারা হলেন আদম, শীছ, নূহ ও খানুখ অর্থাৎ ইদরীস (আ)। হযরত ইদরীস সর্বপ্রথম কলম ব্যবহার করেন। ৪ জন নবী আরব বংশোদ্ভূত। হুদ, সালিহ, শুআয়ব, ও তোমাদের এই নবী। হে আবুযর! বনী ইসরাঈল বংশীয় প্রথম নবী হযরত মূসা (আ)। আর তাদের গোত্রভুক্ত শেষ নবী হযরত ঈসা (আ)। সর্বপ্রথম নবী হচ্ছেন্ন হযরত আদম (আ) এবং সর্বশেষ নবী তোমাদের নবী। আবুল ফয়জ ইব্‌ন জাওয়ী এ হাদীসকে বানোয়াট বলে অভিহিত করেছেন।

ইব্‌ন আবী হাতিম……. আবু উমামা (র) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা:)! নবীগণের সংখ্যা কত? তিনি বললেন, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার। তন্মধ্যে রাসূল ৩১৫ জন। তাঁদের সংখ্যা অনেক। এই সনদটিও দুর্বল। বর্ণনাকারী মাআয, তাঁর শায়খ এবং এই শায়াখের শায়খ তাঁরা তিনজনই দুর্বল বর্ণনাকারী।

আবু ইয়ালা মাওসেলী…… আনাস ইব্‌ন মালিক (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন আল্লাহ তাআলা আট হাজার নবী প্রেরণ করেছেন। চার হাজার বনী ইসরাঈলের প্রতি আর চার হাজার অন্য সকল লোকের প্রতি। এই বর্ণনার দুজন বর্ননাকারী মূসা ও তাঁর শায়খ উভয়ে দুর্বল রাবী।

আবু ইয়ালা …… আনাস ইব্‌ন মালিক (রা) থেকে ভিন্ন সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, আমার পূর্বসূরী নবীগণের সংখ্যা ছিল আট হাজার। তারপর আসেন ঈসা (আ), তারপর আমি। এই সনদে ইয়ায়ীদ রক্কাশী দুর্বল রাবী।

হাকিম আবু বকর….. আনাস ইব্‌ন মালিক (রা) সূত্রে অনুরূপ আরেকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

অন্য একটি হাদীস

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আহমদ….. আবুল ওয়াদাক সূত্রে বলেন, আবু সাঈদী বলেছিলেন, আপনি কি খারিজীদেরকে দাজ্জাল বলে স্বীকার করেন? তিনি বলেন, আমি বললাম, না। আবু সাঈদ (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) ইরশাদ করেছেন, আমি এক হাজার কিংবা ততোধিক নবীর শেষ নবী। আল্লাহ্ তাআলা অনুসরণযোগ্য যত নবী প্রেরণ করেছেন, সকলেই নিজ নিজ উম্মতকে দাজাল সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। দাজালের পরিচিতি ও চিহ্ন সম্পর্কে আমাকে যত বেশী স্পষ্ট জানানো হয়েছে। অন্য কাউকে ততটুকু জানানো হয়নি। দাজ্জাল হবে এক চোখ বিশিষ্ট। তোমাদের প্রতিপালক একচোখ বিশিষ্ট নয়। তার ডান চোখ কানা এবং কোটির থেকে বের হয়ে থাকবে। এটি গোপন রাখা যায় না। এ যেন আস্তর করা প্রাচীরের উচিয়ে থাকা অংশ। তার বাম চোখ যেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার নিকট থাকবে সকল ভাষার জ্ঞান সম্ভার। আরও থাকবে সবুজ রং এর কৃত্রিম বেহেশত। তাতে পানি প্রবহমান থাকবে। আবও থাকবে ধূমায়িত কালো কৃত্রিম দোযখী। এটি গরীব পর্যায়ের বর্ণনা। হাকিম আবু বকর রাজ্জাক……. জাবির (রা) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তবে তাঁর বর্ণিত হাদীসের সনদ হাসান পর্যায়ের। উক্ত হাদীসটিতে দাজাল সম্পর্কে সর্তককারী নবীগণের সংখ্যাই কেবল উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য রিওয়ায়েতে প্রত্যেক নবীই এ ব্যাপারে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন বলে উল্লেখিত হয়েছে।

ইমাম বুখারী (র)….. হযরত আবু হুরায়রা (রা) সূত্র বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, নবীগণই বনী ইসরাঈলীদের শাসন পরিচালনা করতেন। এক নবীর ইনতিকালের পর অপর নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন। তবে আমার পরে কোন নবী আসবে না। অবশ্য আমার খলীফাগণ আসবেন। খলীফা হবেন বহু সংখ্যক ৷ সাহাবা-ই কিরাম বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! সে পরিস্থিতিতে আপনি আমাদেরকে কী করার নির্দেশ দেন? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তখন তোমরা প্ৰথমে প্রথম খলীফার বায় আতে অটল থাকবে। তারপর পর্যায়ক্রমে যারা খলীফা হবেন তাদেরকে তাদের হক (আনুগত্য) আদায় করবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা। তাদেরকে তাদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন।

ইমাম বুখারী (র) ……. হযরত আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রা) সূত্রে বলেন, আমি যেন এখনও দেখছি, রাসূলুল্লাহ (সা) একজন নবীর ঘটনা বর্ণনা করছেন। নিজের সম্প্রদায়ের লোকেরা ঐ নবীকে প্ৰহারে প্রহারে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল। নবী তাঁর মুখমণ্ডল থেকে রক্ত মুছে ফেলছিলেন। তখনও নবী বলছিলেন, হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে ক্ষমা করে দিন, কারণ তারা সত্য উপলব্ধি করতে পারছে না। ইমাম মুসলিমও আনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমদ….. আবু সাঈদ খুদরী (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, একজন ব্যক্তি তার ডান হাত রেখেছিল রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উপর। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দেহ মুবারকের যে প্ৰচণ্ড উত্তাপ, তাতে আমি আমার হাত আপনার দেহে রাখতে পারছি না। নবী করীম (সা) বললেন, আমরা নবীগণ, আমাদেরকে বহুগুণ বেশী বিপদ-আপদ দ্বারা পরীক্ষা করা হয়, যেমন আমাদের ছওয়াবও বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। একজন নবীকে উকুনের যন্ত্রণা দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে তাঁর মৃত্যু ঘটে। একজন নবীকে দারিদ্র্যের কষ্ট দ্বারা পরীক্ষা করা হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি জামা সেলাইয়ের পেশা গ্রহণ করেছিলেন। তারা অবশ্য স্বচ্ছলতা ও নিরাপত্তার সময় যেমন খুশী থাকতেন, বালামুসীবতের সময়ও তেমনি খুশী থাকতেন। ইবুন মাজাহ (র) ….. আবু সাঈদ (রা) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।

ইমাম আহমদ . সাদ (রা) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! কোন প্রকারের মানুষ কঠোরতম বিপদে পতিত হয়? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :

সর্বাধিক কঠোর বিপদে পতিত হন নবীগণ (আ)! তারপর নেককারগণ। এরপর পর্যায়ক্রমে অপেক্ষাকৃত উত্তম লোকগণ। মানুষকে বিপদাপদ দ্বারা পরীক্ষা করা হয় তার দীন বা ধর্মের প্রতি দৃঢ়তা ও নিষ্ঠা অনুপাতে। যদি ধর্মের প্রতি তার দৃঢ়তা ও অবিচলতা থাকে, তাহলে তার বিপদ আরো কঠিন করা হয়। আর যদি ধর্মের প্রতি তার শৈথিল্য থাকে, তবে তার বিপদ হালকা করে দেয়া হয়। কোন কোন ব্যক্তির উপর বিপদ আসতে থাকে অনবরত। অবশেষে সে পৃথিবীতে বিচরণ করে এমনভাবে যে, তার কোন পাপ থাকে না।

ইমাম তিরমিয়ী (র) নাসাঈ ও ইব্‌ন মাজাহ (র) উক্ত হাদীসটি ভিন্ন সনদে উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিয়ী (র) বলেন, হাদীসটি সহীহ এবং হাসান। ইতিপূর্বে একটি হাদীস نحن معاشر الانبياء اولاد هاكي) 6ة اما (8 أكة (TI) خليج (65ft & CRI( CR, NRة حقيقة آما)।।।।।।।।।।।SITA।। 5।। ۹ آما) مانع }Rگ)।।।।।।।।।।।। ۹।।۹।।۹।।।।۹।।।।।।।।।।।S علات دیننا واحد وامها تنها شئی দীন ধর্ম এক। আমাদের মায়েরা হচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন। অর্থাৎ নবীগণের শরীয়ত সমূহে শাখাগত মাসআলায় যদিও বা ভিন্নতা ও পার্থক্য রয়েছে এবং এদের একটি অপরটিকে মানসূখ বা রহিত করতে গিয়ে পর্যায়ক্রমে সবগুলো শরীয়ত হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর শরীয়তে এসে মিলে গিয়েছে; তবু এটা ব্রুব সত্য যে, যত নবীকেই আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন, তাদের সকলের দীন ছিল ইসলাম ধর্ম। ইসলাম ধর্মের মূল কথা তাওহীদ তথা একক লা শরীক و ما آرسنا من قبال من آ6)}।।۶।।।।।।।।।55।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।تا l21806ع ای با کم 15 کم کچ।।।।।।।।।।।।।।।।S।।।। 6।। آلای )III ۲۶ اوت।।ifت رسول الاً نواحی الیه آنگه لاً اله الاً آنافاعی بدون . রাসূল প্রেরণ করিনি তার প্রতি এই ওহী ব্যতীত যে, আমি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। সুতরাং আমারই ইবাদত কর। (২১ আম্বিয়া ২৫)

واسأل من أرسلتا من قبلك من رسلنا -10615ة 9 كtiثة R STSliT ثالثة ۹۹।। 6।।۶।।।।।।।।।। ۶۲۹ 65 If Sirf।।।।।। 69 آجعلنا من دون الرحمن الههٔ یغبدون . করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর, আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোন দেবতা স্থির করেছিলাম যার ইবাদত করা যায়? (৪৩ যুখরুফ ৪৫)

আল্লাহ তাআলআ আরও বলেন

আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতিকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্যে আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। অতঃপর তাদের কতককে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন। এবং তাদের কতকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল। (১৬ নাহল ৩৬)

উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা যায় যে, বৈমাত্রের ভাই বলতে তাদেরকে বুঝান হয়েছে, যাদের পিতা একজন আর মা ভিন্ন ভিন্ন। নবী (আ)-দেরকে পরস্পর বৈমাত্রের ভাই বলার তাৎপর্য এই যে, তাদের সকলের দীন একটি। এটি হল তাওহীদ ও একত্ববাদ। এটিকে পিতারূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর তাদের প্রত্যেকের শরীয়তগুলো বিধি বিধান ও রীতি নীতির ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। এগুলোকে মা রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ প্রসংগে আল্লাহ

আইন ও স্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি। (৫ মায়িদা ৪৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন : JK)

ইবাদত পদ্ধতি, যা তারা অনুসরণ করে। (২২ হজ্জ : ৪৮) আল্লাহ্ তাআলা অন্যত্র বলেন : 4,642, ১৯ 4, JkJ, প্রত্যেকের একটি দিক রয়েছে, যে দিকে সে মুখ করে। উক্ত আয়াতের একটি ব্যাখ্যা অনুযায়ী এ আয়াত আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

মোদ্দাকথা, শরীয়ত বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকার হয়েছে বটে। কিন্তু; এর সবগুলোই একক লা-শরীক আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশক। আর তা হলো ইসলাম। সকল নবীর জন্যে আল্লাহ তাআলা-এর বিধান দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন এ দীন ব্যতীত অন্য কিছু আল্লাহ গ্ৰহণ করবেন না। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন :

কেউ ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দীন গ্ৰহণ করতে চাইলে তা কখনো কবুল করা হবে না। এবং সে হবে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। (৩ আলে ইমরান : ৮৫)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :

যে নিজেকে নির্বোধ করেছে, সে ব্যতীত ইবরাহীমের ধর্মদর্শ হতে আর কে বিমুখ হবে? পৃথিবীতে তাকে আমি মনোনীত করেছি, পরকালেও সে সৎকর্ম পরায়ণদের অন্যতম। তার প্রতিপালক যখন তাকে বলেছিলেন, আত্মসমর্পণ করা। সে বলেছিল, জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। এবং ইবরাহীম ও ইয়াকুব এ সম্বন্ধে তাদের পুত্ৰগণকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিল- হে পুত্ৰগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্যে এই দীনকে মনোনীত করেছেন। সুতরাং আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা কখনো মৃত্যু বরণ করো না। (২ বাকারা, আয়াত-১৩০,৩২)

আল্লাহ তাআলা বলেন :

আমি তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলাম, তাতে ছিল পথনির্দেশ ও আলো, নবীগণ, যারা আল্লাহর অনুগত ছিল, তারা ইহুদীদেরকে সে অনুযায়ী বিধান দিত। (৫ মায়িদা ৪৪)

সুতরাং দীন ইসলাম হল একক লা-শরীক আল্লাহর ইবাদত করা এবং এটি হল একনিষ্ঠভাবে একক আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত নিবেদন করা। অন্য কারো উদ্দেশ্যে নয়। আর ইহসান হল নির্দেশিত সময়সীমার মধ্যে শরীয়ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে ইবাদত করা। তাই মুহাম্মদ (সা)-কে তাঁর জন্যে নির্ধারিত শরীয়ত প্রেরণ করার পর অন্য শরীয়তের কোন ইবাদত আল্লাহ তাআলা কবুল করবেন না। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন : ণ্ড। ৩.০%,। (4,1 , J, [, – 2011/10,…, বল, হে লোকসকল! আমি তোমাদের সকলের জন্যে আল্লাহর রাসূল। (৭ আরােফ ১৫৮) –

আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসূল (সা)-কে বলেন, হে রাসূল! আপনি বলুন : 11 –>,1, & 1 & -3 – 2,259 31, 4।। IAA) এবং এই কুরআন আমার নিকট প্রেরিত হয়েছে, যেন আমি তোমাদেরকে এবং যাদের নিকট এটি পৌঁছবে তাদেরকে এটি দ্বারা সতর্ক করি। آFJ۱۹ اک و من یگفر به من الاحزاب فالنگار موعده : ۶۶۹) ۹ SIIsll STSIIll SII۹6 দলের যারা এটিকে অস্বীকার করে অগ্নিই তাদের প্রতিশ্রুত স্থান। (৬ আনআম ১৯) রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন : ১১.১, ১৯৯১। এ113.*? আমি গােরা-কালো সকল মানুষের প্রতি রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি। এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন যে, এতদ্বারা আরব, অনারব

বুঝান হয়েছে। আর কেউ কেউ বলেন যে, জিন-ইনসান বুঝান হয়েছে।

VOo NR

রাসূলুল্লাহ (সা) আরও বলেন :

যে মহান সত্তার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম, যদি মূসা (আ) তোমাদের মধ্যে থাকতেন। এবং তোমরা তার অনুসরণ করতে আর আমাকে বর্জন করতে তবে নিশ্চয়ই তোমরা পথভ্রষ্ট

হতো। এ বিষয়ে প্রচুর হাদীস রয়েছে।

অপর একটি হাদীস এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন : – ১৩১ ৷৷ ৩-১, -৭, ৩১ % به چاک Gift با آl।। Pof Gگl।।।। ۹।।۶।।।। STNکSIN لاً نورد ماتر گنا فهو صدقهٔ যাই না। আমরা যে সম্পদ রেখে যাই, তা সাদকা স্বরূপ। এটি সম্মনিত নবীগণের বৈশিষ্ট্য। কেননা, দুনিয়া ও পার্থিব ধন-সম্পদ তাদের নিকট নিতান্ত তুচ্ছ বিষয় নিজের ইনতিকালের পর কাউকে এর উত্তরাধিকারী করে যাওয়ার ব্যাপারটিকে তারা কোন গুরুত্বই দেন না। উপরন্তু তাদের অবর্তমানে তাদের সন্তানাদির সুব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা আল্লাহর উপরই নির্ভর করে থাকেন। তাঁদের অনুসৃত এ তাওয়াকুল ও আস্থা খুবই দৃঢ় ও গভীর। যেখানে আল্লাহ তাআলা। রয়েছেন, সেখানে তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্যে কিছু সহায়-সম্পত্তি রেখে গিয়ে এগুলো দ্বারা তারা নিজেদের ছেলে-মেয়েদেরকে অন্যান্য সাধারণ মানুষের উপর প্রাধান্য দিবেন, এমন অবস্থান থেকে তারা বহু উদ্ধেৰ্ব্ব। বরং তাঁরা যা-ই রেখে যান, তার সবই দরিদ্র, অভাবগ্ৰস্ত ও অসহায় লোকদের জন্যে সাদকা বলে গণ্য হয়।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর বৈশিষ্ট্যাবলীসহ সকল নবী (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্যাবলী আল আহকামুল কাবীর কিতাবে বিবাহ অধ্যায়ের শুরুতে আমি উল্লেখ করব। ইমাম আবু আব্দুল্লাহ শাফিঈ (র)-এর অনুসরণে অনেক নেতৃস্থানীয় লেখক নবীদের (আ) বৈশিষ্ট্যাবলী উক্ত অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন। আমিও তাই করব।

ইমাম আহমদ (র) . আবৃদে রাব্বিল কাবা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, একদিন আমি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রা)-এর নিকট উপস্থিত হই। তিনি তখন কাবা শরীফের ছায়ায় বসা ছিলেন। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি বলছিলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে এক সফরে ছিলাম। তিনি এক জায়গায় থামলেন। তখন আমাদের মধ্যে কেউ তাঁবু খাটানোর কাজে লেগে গেল, কেউ বেরিয়ে পড়ল পশুগুলো নিয়ে চারণ ক্ষেত্রের দিকে। কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে গল্প-গুজব ও কথাবার্তায় মেতে উঠল।

এমন সময় মুয়াযযিন ঘোষণা করলেনঃ ঝুঁ__AU ১১%> 1 নামাযের জামাত প্রস্তুত। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমরা সবাই একত্রিত হলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) দাঁড়িয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, প্রত্যেক নবী নিজ নিজ উম্মতকে নিজের অবগতি মুতাবিক কল্যাণের পথ দেখিয়েছেন এবং যেটিকেই তিনি অকল্যাণকর ও ক্ষতিকর বলে জেনেছেন তা থেকে উম্মতকে সাবধান করে দিয়েছেন। আর তোমরা এই উম্মত! এই উম্মতের নিরাপত্তা ও শান্তি তাদের প্রথম যুগের লোকদের অনুসরণের মধ্যে নিহিত। এদের শেষ জামানার লোকদের উপর আসবে বিপদাপদ এবং তারা সম্মুখীন হবে এমন সব পরিস্থিতির, যা তাদের জন্যে হবে অস্বস্তিকর। তাদের উপর একের পর এক ফিতনা ও নানারূপ বিপর্যয় নেমে আসবে। এমন মারাত্মক মারাত্মক অশান্তি ও বিশৃংখলা নেমে আসবে যে, ঈমানদার ব্যক্তি বলবে, এটিতেই আমার ধ্বংস অনিবার্য। তারপর ঐ বিপর্যয় কেটে যাবে। আবার নতুন ফিতনা আসবে। ঈমানদার লোক বলবে, এটিতেই আমি ধ্বংস হব। তারপর বিপর্যয় কেটে যাবে। তোমাদের মধ্যে যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাতে প্রবেশের আশা রাখে, তার মৃত্যু যেন এ অবস্থায় হয় যে, সে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী থাকে এবং সে যেন মানুষের সাথে তেমন ব্যবহার করে, যে আচরণ সে নিজের জন্য পছন্দ করে।

যে ব্যক্তি নিজের হাত ও অন্তর দিয়ে কোন ইমামের আনুগত্যের শপথ করে, সে যেন সাধ্যানুযায়ী তার আনুগত্য করে। অন্য কেউ যদি নেতৃত্বে দাবী করে, তোমরা তার গর্দান উড়িয়ে দেবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তখন লোকজনের ভিড়ের মধ্যে আমার মাথা ঢুকিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, আমি আপনাকে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি কি নিজে এই হাদীস রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর মুখে শুনেছেন? তখন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রা) তাঁর কান দুটোর দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার এ কান দুটো হাদীসটি শুনেছে এবং আমার অন্তরে তা সংরক্ষিত রেখেছে।

বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি বললাম, ইনি আপনার চাচাত ভাই অর্থাৎ মুয়াবিয়া (রা) তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন। আমরা যেন অসৎ পথে একে অন্যের ধন-সম্পদ ভােগ করি এবং আমরা যেন নিজেরা নিজেদেরকে খুন করি।

হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ কর না। (৪নিসা ২৯) এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রা) দুহাত একত্রিত করে তাঁর কপালে রাখলেন। কিছুক্ষণ মাথা নিচু রেখে তারপর তিনি মাথা তুললেন এবং বললেন, তাঁর আনুগত্যে আল্লাহর আনুগত্য হলে আপনি তখন তাঁর আনুগত্য করুন আর অন্যথায় আপনি তার নির্দেশ পালন করবেন না। ইমাম আহমদ (র) ভিন্ন সূত্রে কিছুটা শাব্দিক পরিবর্তনসহ অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

ইমাম মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ও ইব্‌ন মাজাহ (র) প্রমুখ রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

আরব জাতির বর্ণনা

কেউ কেউ বলে থাকেন যে, গোটা আরব জাতি হযরত ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর। তবে

বিশুদ্ধ ও প্ৰসিদ্ধ অভিমত এই যে, আরব-ই-আরিবা নামে পরিচিত আরবগণ হযরত ইসমাইল (আ)-এর পূর্ব যুগের লোক। আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, আদ, ছামুদ, তসম, জাদীছ, উমাইম, জুরহুম, আমালীক ও আরো অনেক সম্প্রদায় যাদের সম্পর্কে শুধু আল্লাহ-ই জানেন, তারা সবাই আরব-ই- আরিবা-এর অন্তর্ভুক্ত। এরা হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পূর্ববতী যুগের লোক ছিল। হযরত ইবরাহীম (আ)-এর যুগেও তাদের অস্তিত্ব ছিল। তবে আরবে মুস্তারাবা নামে পরিচিত হিজায্যের আরবগণ ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর।

আরব-ই ইয়ামন নামে যারা পরিচিত, তারা হল হিময়ারী- আরব। প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী তারা কাহতানের বংশধর। কাহতানের নাম মুহাযযাম এই মন্তব্য ঐতিহাসিক ইব্‌ন মাকুলার। বলা হয়ে থাকে যে, তারা ছিল চার ভাই-কাহতান, কাহিত, মুকহিত এবং ফালিগ। কাহতান ছিলেন হুদের পুত্র। কেউ কেউ বলেন, হ্রদের নামই কাহতান। কারো কারো মতে, হুদ ছিলেন কাহতানের ভাই। অপর কেউ কেউ বলেন, হুদ কাহতানের অধঃস্তন বংশধর। কতক গবেষকের ধারণা, কাহতান হযরত ইসমাঈলের বংশধর। ইব্‌ন ইসহাক (র) প্রমুখ এরূপ বলেছেন। এ সূত্রে তাঁরা এ বংশ তালিকা পেশ করেন কাহতান ইব্‌ন তীমান ইব্‌ন কায়দার ইব্‌ন ইসমাঈল। অবশ্য হযরত ইসমাঈল (আ) পর্যন্ত কাহতানের বংশ তালিকা কেউ কেউ অন্যভাবেও বর্ণনা করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইমাম বুখারী (র) তার সহীহ গ্রন্থে এ বিষয়ে একটি শিরোনাম রচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই অধ্যায় আরব-ই ইয়ামন নামে পরিচিত লোকগণ হযরত ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর সাব্যস্তকরণ বিষয়ে। ইমাম বুখারী সালমা (র) সূত্রে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আসলাম গোত্রের কতক লোকের নিকট গেলেন। তারা তখন তরবারী পরিচালনার প্রতিযোগিতা করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, হে ইসমাঈলের বংশধরগণ! তোমরা তীর নিক্ষেপ করতে থাক, আমি অমুক দলের সাথে যোগ দিলাম। তখন অপর পক্ষ হাত গুটিয়ে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমাদের কী হল? তারা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি অমুক দলে থাকা অবস্থায় আমরা তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করব কীভাবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ঠিক আছে, তোমরা তীর নিক্ষেপ করা; আমি তোমাদের সকলের সাথে থাকলাম। এই বর্ণনা শুধু ইমাম বুখারী-ই উদ্ধৃত করেছেন।

কোন কোন বর্ণনায় আছে, হে ইসমাঈলের বংশধরগণ! নিক্ষেপ করতে থাক, কারণ তোমাদের পূর্ব-পুরুষ ইসমাঈল নিক্ষেপকারী ছিলেন। তোমরা নিক্ষেপ কর, আমি ইব্‌ন আন্দরা-এর পক্ষে যোগ দিলাম। তখন অপরপক্ষ তীর নিক্ষেপ বন্ধ করে দিল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ঠিক আছে, তোমরা নিক্ষেপ কর। আমি তোমাদের সকলের সাথে আছি।

ইমাম বুখারী (র) বলেন, আসলাম-এর বংশ তালিকা হল, আসলাম ইব্‌ন আকসা ইব্‌ন হারিছ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আমির। এরা খুযাআ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। খুযাআ গোত্র হল ধ্বংসপ্রাপ্ত সাবা সম্প্রদায়ের রক্ষাপ্রাপ্ত একটি ক্ষুদ্র গোত্র। আল্লাহ তাআলা যখন সাবা সম্প্রদায়ের উপর আরিম প্লাবন প্রেরণ করেছিলেন। তখন সাবা সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাদের বর্ণনা পরবর্তীতে আসবে। আউস ও খাযরাজ গোত্র এদের উপগোত্ৰ। রাসূলুল্লাহ (সা) তাদেরকে বলেছিলেন  হে ইসমাঈলের বংশধরগণ! তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। এতে প্রমাণিত হয় যে, এরা হযরত ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর।

একদল ভাষ্যকার উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) গোটা আরব জাতির প্রতি ইঙ্গিত করে এ সম্বোধন করেছেন। অবশ্য এটি অসংগত ব্যাখ্যা। কারণ তা স্পষ্ট বৰ্ণনার বিপরীত। আর এ ব্যাখ্যার পেছনে কোন দলীল নেই। অধিকাংশ গবেষকের মতে ইয়ামানী আরবের কাহতানী আরবগণ ও অন্যরা হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর নন। তাদের মতে সমগ্র আরবজাতি দুই ভাষায় বিভক্ত। (১) কাহতানী আরব ও (২) আদনানী আরব। কাহতানী আরবগণের শাখা দুটো। (১) সাবা (২) ও হাদারা মাউত। আদনানী আরবদেরও দুটো শাখা। (১) রবীয়া (২) ও মুযার। এরা দুজন নেয়ার ইব্‌ন মাদ ইব্‌ন আদানানের পুত্র। আরবদের ৫ম শাখা হল কুযাআ গোত্র। এদের ব্যাপারে গবেষকগণ ভিন্ন ভিন্ন মন্তব্য করেছেন।

কেউ বলেছেন, এরা আদনানী আরবীভুক্ত। ইব্‌ন আবদিল বার বলেন, অধিকাংশ গবেষক এটি গ্রহণ করেছেন। হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা), ইব্‌ন উমর (রা), জুবোয়র ইব্‌ন মুতইম, যুবোয়র ইব্‌ন বাক্কার, মুযআব্ব যুবাইরী ও ইব্‌ন হিশাম প্রমুখ উপরোক্ত অভিমত সমর্থন করেন। একটি বর্ণনায় কুযাআ ইব্‌ন মাদার বলা হয়েছে। এটি সঠিক নয়।

ইব্‌ন আবদিল বার প্রমুখ এরূপ বলেছেন। বলা হয় যে, জাহিলী যুগে এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগে তারা নিজেদেরকে আদনানী ৰলে দাবী করত। অতঃপর মুআবিয়া (রা)-এর পৌত্র খালিদ ইব্‌ন ইয়াবীদ-এর শাসনামলে তাৱা নিজেদেরকে কাহতানী আরব বলে দাবী করতে শুরু করে। তারা ছিল খালিদের মাতুল গোত্র। তাদের এ বংশ পরিবর্তনের উল্লেখ করে কবি আশা ইব্‌ন ছালাবা নিম্নোক্ত কসীদা রচনা করেনঃ

أبلغ قضاعة فى قرطاس أنهم – لولاً خلائف ال اللّه ما عتقوا কুযাআ গোত্রকে চিঠি লিখে জানিয়ে দাও যে, তারা যদি আল্লাহর প্রিয় মানুষদের বংশধর না হত। তবে তারা মুক্তি পেত না।

قالت قضاعة انا من ذوی یمن – و الله ی فلم ما بروا وما صدقوا কুযাআ গোত্র বলেছে, আমরা ইয়ামানী আরব। অথচ আল্লাহ তাআলা জানেন যে, এ বক্তব্যে তারা সত্যবাদী নয়।

قد ادعوا والد ما نال أمهم – قد يفلّمون ولكن ذلك الفرق তারা এমন একজনকে তাদের পিতা বলে দাবী করছে, যে তাদের মাতাকে কোন দিন কাছে পায়নি। এ সত্য তারাও জানে বটে, কিন্তু এটি তাদের মিথ্যাচার।

আবু উমর সুহাইলী কতগুলো আরবী কাসীদ উল্লেখ করেছেন, যেগুলোতে কুযাআ গোত্রের ইয়ামানী আরব হওয়ার দাবীকে নতুন উদ্ভাবন বলে অভিহিত করা হয়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন।

দ্বিতীয় অভিমত হল, তারা কাহতানী আরব। এটি ইব্‌ন ইসহাক, কালৰী ও একদল বুলজী বিশারদের অভিমত। তাদের বংশ তালিকা বৰ্ণনা করে ইব্‌ন ইসহাক বলেন, কুযাআ ইব্‌ন। जाल-विनाशा ७शान निशा (२अ थe) ०.०-

  • VOOV2

কবি উমর ইব্‌ন মুররা (রা) সাহাবী বলেন (ইনি দুটো হাদীসও বর্ণনা করেছেন)।

يأيها التماعی أذعنا وأبشر – ولكن قضاعيا ولاً تنزر হে আহবানকারী!! আমাদেরকে আহবান করুন এবং সুসংবাদ দিন আপনি কুযাআ গোত্রের সাথে সম্পৃক্ত হোন। এদেরকে অল্প সংখ্যক মনে করবেন না।

আমরা সুদৰ্শন ও সম্ভত ব্যক্তি কুযাআ ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন হিময়ারের বংশধর।

আমাদের বংশ পরিচিতি সুপ্রসিদ্ধ, অখ্যাত ও অপরিচিত নয়, আমাদের বংশ তালিকা মিম্বরের নীচে পাথরে খোদাই করা রয়েছে।

কতক বংশ বিশারদ বলেন, তিনি হলেন কুযাআ ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন উমর মুররা ইব্‌ন

বলেছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)। আমরা কি মাদ-এর বংশধর নই? তিনি বললেন, না। তখন আমি বললাম, তাহলে আমরা কার বংশধর? তিনি বললেন : তোমরা কুযাআ ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন হিময়ার-এর বংশধর।

ইব্‌ন আবদিল বার বলেন, উকবা ইব্‌ন আমির আল জুহানী যে জুহায়না ইব্‌ন যায়দ ইব্‌ন আসওয়াদ ইব্‌ন আসলাম ইব্‌ন ইমরান ইব্‌ন ইলহাফ ইব্‌ন কুযাআ যে জুহানীর গোত্রের লোক, তাতে ঐতিহাসিকদের কোন দ্বিমত নেই। এই হিসাবে বলা যায় যে, কুযাআ ইয়ামানী আরব এবং হিময়ার ইব্‌ন সাবার বংশধর।

কতক বংশ শাস্ত্ৰবিশারদ উভয় অভিমতের মধ্যে যুবোয়র ইব্‌ন বাক্কার প্রমুখের বক্তব্য অনুযায়ী এভাবে সমম্বয় সাধন করেছেন যে, কুযাআ হলেন জুরহুম গোত্রের জনৈকা মহিলা।

জন্ম হয়। এরপর মাদ ইব্‌ন আদনান কুযাআকে বিবাহ করেন। তখনও পূর্বোল্লেখিত সন্তানটি ছোট ছিল। মতান্তরে মাদ ইব্‌ন আদানানের সাথে কুযা আর বিবাহকালে এ সন্তানটি কুযা আর গর্ভে ছিল। ফলে সে তার সৎপিতার পুত্র রূপে পরিচিত হয়। যেমনটি আরবের অনেক লোকই করে থাকে।

কুলজী বিশারদ মুহাম্মাদ ইব্‌ন সালাম বখরী বলেন, আরব জাতি তিন বংশধারা থেকে উৎসারিতঃ আদনানী, কাহতানী ও কুযাআ। তাকে জিজ্ঞেস করা হল যে, সংখ্যায় কারা বেশী আদনানী, না কাহতানী? তিনি বললেন কুযায়ীগণ যাদের সাথে যোগ দেয়, তাদের সংখ্যা বেশী। তারা যদি নিজেদেরকে ইয়ামানী বলে দাবী করে তবে কাহতানী আরবদের সংখ্যা বেশী। আর তারা যদি নিজেদেরকে আদনানী বলে দাবী করে তবে আদনানী আরবদের সংখ্যা বেশী, এতে প্রমাণিত হয় যে, বংশ পরিচিতি বর্ণনায় তারা সমালোচনা যোগ্য পথ অনুসরণ করে। ইব্‌ন। নুহায় আর পূর্বোল্লেখিত হাদীছসটি যদি বিশুদ্ধ হয় তবে প্রমাণিত হবে যে, তারা মুলত কাহতানী আরব। আল্লাহই ভাল জানেন।

আল্লাহ তাআলা বলেন

হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে। পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি। বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পোর। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, যে অধিকতর মুত্তাকী। (৪৯ হুজুরাত -১৩)

কুলজী বিশারদগণ বংশের স্তর ও পর্যায়ক্রম সম্পর্কে বলেন যে, প্রথমত এ-১, তারপর JAL ঐ তারপর ১৭L- তারপর ৬৬৯-এ তারপর ১L৯ ai৩ এবং তারপর JAL~~; তারপর এL.-এর এক বচন ১১, …• ঘনিষ্ঠতম বংশগত আত্মীয়। এর চাইতে নিকটতর। আর কোন স্তর নেই।

আমরা প্ৰথমে কাহতানী আরবদের কথা আলোচনা করব। এরপর ইনশাআল্লাহ আলোচনা করব। হিজাষী আরব তথা আদনানী আরব ও তাদের জাহিলী যুগের অবস্থাসমূহ, যাতে এটা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সীরাতের আলোচনার সাথে সংযুক্ত থাকে।

ইমাম বুখারী (র) বলেন, কাহাতান-এর আলোচনা বিষয়ক পরিচ্ছেদ আব্দুল আষীয আৰু হুরায়রা (রা) সুত্রে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সা) বলেন : cয়,,, …।। 644 8,llة 864 5 قة إك كTةR Ri 9 * * {55856 رجل من قحطان يسوق الناس بمصاه যতক্ষণ না কাহতান বংশ থেকে একটি লোক বেরিয়ে মানুষকে লাঠি দ্বারা হাঁকিয়ে না নিবে। ইমাম মুসলিম (র) কুতীয়বা … ছাওর ইব্‌ন যায়দ সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। সুহায়লী বলেন, কাহতানই প্রথম ব্যক্তি, যাকে বলা হয়েছিল, আপনি অভিশাপ দিতে অস্বীকার করেছেন এবং তাঁর উদ্দেশ্যেই সর্বপ্রথম বলা হয়েছে, শুভ সকাল।

ইমাম আহমদ. ধী ফজাব (র) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেছেন, এ নেতৃত্ব হিময়ারীদের মধ্যে ছিল। আল্লাহ তাআলা এটি তাদের থেকে ছিনিয়ে কুরায়শদের হস্তে অৰ্পণ করেছেন। অবশ্য অতি সত্ত্বর পুনরায় তাদের মধ্যে ফিরে আসবে।

সাবা বাসীদের বর্ণনা

আল্লাহ তাআলা বলেন :

সাবাবাসীদের জন্যে তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শন-দুটো উদ্যান, একটি ডান দিকে অপরটি বাম দিকে। ওদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের প্রতিপালক প্রদত্ত রিযক ভোগ কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। উত্তম এই স্থান এবং ক্ষমাশীল তোমাদের প্ৰতিপালক। পরে তারা আদেশ অমান্য করল। ফলে আমি তাদের উপর প্রবাহিত করলাম বাধ ভাঙ্গা বন্যা, এবং তাদের উদ্যান দুটোকে পরিবর্তন করে দিলাম। এমন দুটো উদ্যানে, যাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউগাছ এবং কিছু কুল গাছ। আমি তাদেরকে এই শাস্তি দিয়েছিলাম তাদের কুফুরীর জন্যে। আমি অকৃতজ্ঞ ব্যতীত আর কাউকে এমন শান্তি দিই না। ওদের এবং যে সব জনপদের প্রতি আমি অনুগ্রহ করেছিলাম, সেগুলোর অন্তর্বর্তী স্থানে দৃশ্যমান বহু জনপদ স্থাপন করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম তোমরা এসব জনপদে নিরাপদে ভ্ৰমণ কর দিবস ও রজনীতে। কিন্তু তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের সফরের মনযিলের ব্যবধান বর্ধিত করুন। এভাবে তারা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছিল। ফলে আমি ওদেরকে কাহিনীর বিষয়বস্তুতে পরিণত করলাম এবং ওদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিলাম। এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে নিদর্শন রয়েছে। (৩৪ সাবা : ১৫)

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক সহ কুলজী বিশারদগণ বলেছেন যে, সাবার নাম হল আব্বদ শামস ইব্‌ন ইয়াশজুব ইব্‌ন ইয়ারুব ইব্‌ন কাহতান। তারা বলেন, এ ব্যক্তিই প্রথম আরব, যাকে বন্দী করা হয়েছিল। তাই তাঁর নাম হল … অর্থাৎ কারারুদ্ধ। তাঁকে আররাইশ বা দাতা নামেও ডাকা হত। কারণ তিনি নিজের ধন-সম্পদ থেকে মানুষকে অকাতরে দান করতেন। সুহায়লী বলেন, তিনিই সর্বপ্রথম মাথায় মুকুটু পরিধান করেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, তিনি মুসলমান ছিলেন। তাঁর কতক কবিতা আছে সেগুলোতে তিনি প্রিয় নবী (সা)-এর আবির্ভাবের সুসংবাদ দিয়েছেন। তার কতক এই :

یمللن بغد نام لگا عظیما – نبی لاً برخص فی الحرام আমাদের পরে একজন নবী বিশাল রাজত্বের অধিকারী হবেন। তিনি কোন অন্যায় ও হারাম কাজকে প্রশ্ৰয় দিবেন না।

তার পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্য থেকে অনেক রাজা আসবে। তারা কোন অপরাধ ছাড়াই মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করবে।

ويملك بغدهم من ملول – يصير الملك فينا باقتسام. ওদের পর আমাদের বংশ থেকে কতক রাজা হবে। তখন আমাদের মধ্যে রাজত্ব থাকবে ভাগাভাগির ভিত্তিতে।

وی مللن بغد قحطان نبی – تقی جبینهٔ غیرالانام কাহতানদের পরে একজন সৎ পূণ্যবান ও পবিত্র নবী রাজা হবেন, তিনি সর্বোত্তম মানব।

তাঁর নাম হবে আহমদ! হায়, তার নবুওত প্ৰাপ্তির পর আমি যদি অন্তত একটি বছর জীবিত থাকতাম!

তাহলে আমি আমার সর্বশক্তি দিয়ে তাকে সাহায্য করতাম এবং তাকে ভালবাসতাম!

তিনি যখনই আবির্ভূত হন না কেন তোমরা তার সাহায্যকারী হয়ো, তার সাথে যার দেখা হবে আমার সালাম তাকে জানিয়ে দিও।

ইব্‌ন দিহয় তাঁর আততানভীর ফী মাওলিদিল বাশীরিন নায়ীর গ্রন্থে এগুলো উল্লেখ করেছেন। ইমাম আহমদ-আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রা) সূত্রে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে সাবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল যে, সাবা কি পুরুষ না মহিলা, না কোন এলাকার নাম? উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন : সাবা একজন পুরুষ লোক। তার ১০টি সন্তান ছিল। তাদের ছয়জন ছিল। ইয়ামানে আর চারজন সিরিয়াতে ৷ ইয়ামানে বসবাসকারীগণ হল(১) মাযহাজ (২) কিন্দা (৩) আযাদ (৪) আশা আরি (৫) আনমার ও (৬) হিময়ার। সিরিয়ায় বসবাসকারীগণ হল (১) লোখম। (২) জুবাম। (৩) আমিলা ও (৪) গাসসান। তাফসীর গ্রন্থে আমরা উল্লেখ করেছি যে, এই প্ৰশ্নকারী ছিলেন ফারাওয়া ইব্‌ন মিসসীক আল গাতিকী। আমরা এই হাদীছটি সমস্ত সনদ ও শব্দাবলী সেখানে উল্লেখ করেছি।

মূল কথা হল, সাবাই হচ্ছে এসব আরব গোত্রের আদি পুরুষ। এদের মধ্যে তুব্বাগণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাবাবিআ (a-, L) শব্দের একবচন তুব্বা (৫৭)। তুব্বা রাজাগণ বিচারের সময় পারস্য সম্রাট কিসরাদের মত মুকুট পরিধান করতেন। যে ব্যক্তি শাহর ও হাদ্রামাউতসহ ইযমানের রাজা হতেন, তাকে আরবগণ তুব্বা নামে আখ্যায়িত করত। যেমন কোন লোক দ্বীপাঞ্চল সহ সিরিয়ার রাজা হতে পারলে তাকে কায়সার, পারস্যের রাজাকে কিসরা মিসরের রাজাকে ফিরআওন, হাবশার রাজাকে নাজাশী এবং ভাবতবর্ষের রাজাকে বাতলী মূসা বলা হত। হিময়ারী রাজাদের মধ্যে ইয়ামান রাজ্যে রাণী বিলকীসও ছিলেন।

হযরত সুলায়মান (আ)-এর বর্ণনা প্রসঙ্গে আমরা রাণী বিলকীসের কথাও আলোচনা করেছি।

সাবা রাজ্যের অধিবাসীগণ পরম সুখ-শান্তিতে বসবাস করত। তাদের সেখানে ছিল খাদ্য দ্রব্য, ফলমূল ও শস্যক্ষেত্রের প্রাচুর্য। এতদসত্ত্বেও তারা সত্যনিষ্ঠা, সরল পথ ও হিদায়াতের পথে জীবন যাপন করত। অবশেষে তারা যখন আল্লাহর নিয়ামতের নাশোকরী করল, আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতিদানে অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করল তখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে ধ্বংসের মুখে cछहल निव्ल।

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক। ওহাব ইব্‌ন মুনাবিবহ থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি তের জন নবী প্রেরণ করেছিলেন। সুদী (র) বলেন, আল্লাহ তাআলা বার হাজার নবী তাদের নিকট প্রেরণ করেন। আল্লাহই ভাল জানেন।

বস্তৃত তারা যখন হিদায়াতের পথ ত্যাগ করে গোমরাহীর পথ ধরে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে সূর্যের উপাসনা শুরু করে। সেটা রাণী বিলকীসের রাজত্বকাল এবং তার পূর্বর কথা। পরেও তারা অনবরত সে পথে চলতে থাকে। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবন প্রেরণ করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

পরে তারা আদেশ অমান্য করল, ফলে আমি তাদের উপর প্রবাহিত করলাম বাঁধ ভাঙ্গা বন্যা এবং তাদের উদ্যান দুটোকে পরিবর্তন করে দিলাম। এমন দুটো উদ্যানে, যাতে উৎপন্ন হয়

বিস্বাদ ফলমূল। ঝাউ গাছ এবং কিছু কুল গাছ। আমি ওদেরকে এই শাস্তি দিয়েছিনাম ওদের কুফরীর জন্যে। আমি কৃতঘ্ন ব্যতীত আর কাউকে এমন শাস্তি দিই না। (৩৪ সাবা ১৬)

প্রাচীন ও আধুনিক বহু তাফসীরকার ও অন্যান্য উলামা-ই-কিরাম বলেছেন, আরিম বঁাধ নির্মাণের পটভূমি এই যে, পর্বতের মধ্যখানে পানি প্রবাহিত হত। বহু বছর আগে তারা পর্বর্ত দুটোর মধ্যখানে মজবুত করে একটি বাঁধ নির্মাণ করে। এতে পানি উপরের দিকে উঠে আসে। এবং পর্বত দুটির উপরিভাগে এসে পৌছায়। তারপর তারা সেখানে ব্যাপক হারে বাগান তৈরী করে, সুস্বাদু ফলমূলের গাছ লাগায় এবং ক্ষেত খামারের ব্যবস্থা করে।

কথিত আছে, সর্বপ্রথম সাবা ইব্‌ন ইয়ারুব এ বাঁধ নির্মাণ করেন। প্রায় ৭০টি পাহাড়ী উপত্যককে তিনি এ বাঁধের আওতায় নিয়ে আসেন। তিনি বাধে ৩০টি সুইস গেট তৈরী করেন। যাতে সেগুলো দিয়ে পানি বেরিয়ে যায়। তিনি অবশ্য বাধের সকল কাজ সম্পন্ন করে যেতে পারেন নি। তার পরে রাজা হিমায়ার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সকল কাজ সুসম্পন্ন করেন। এটির ব্যাপ্তি প্ৰায় ৯ বর্গমাইল ছিল। তারা পরম সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও আরাম-আয়েশে জীবন যাপন করছিল।

এ প্রসঙ্গে কাতাদা (র) প্রমুখ বলেন, সে যুগে তাদের ফলমূল এত বেশী ছিল যে, কোন একজন মহিলা মাথায় খালি একটি সোয়ামনি ঝুড়ি নিযে পথে বের হলে স্বাভাবিক নিয়মে ঝরে পড়া পাকা ফলে তার ঝুড়ি ভর্তি হয়ে যেত। সে দেশের আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এমন সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত ছিল যে, সেখানে কোন মশা-মাছি ও বিষাক্ত জীবজন্তু ছিল না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন…. সাবা বাসীদের জন্যে তাদের বাসভূমিতে ছিল এক নিদর্শনঃ দুটো উদ্যান, একটি ডান দিকে, অপরটি বাম দিকে। তাদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের প্রদত্ত রিযক ভোগ কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। উত্তম এ স্থান এবং ক্ষমাশীল তোমাদের প্রতিপালক ৷

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন

স্মরণ করা, তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিব। আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (১৪ ইব্রাহীম : ৭)

সাবা রাজ্যের অধিবাসীগণ অতঃপর আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উপাসনা শুরু করে। আল্লাহর অনুগ্রহ পেয়েও তারা দৰ্প করে। তাদের জনপদ সমূহের অবস্থান কাছাকাছি হওয়া, বাগবাগিচা ও বৃক্ষরাজির কারণে পরিবেশ উন্নত হওয়া এবং যাত্রাপথ নিরাপদ থাকার পর তারা প্রার্থনা জানায় যেন তাদের যাত্রা পথে দূরত্ব সৃষ্টি করে দেওয়া হয় এবং সফরকে কষ্টদায়ক ও কঠিন করে দেয়া হয়। যেমন বনী ইসরাঈলীরা মান্না ও সালাওয়ার পরিবর্তে শাকসবজি, কাঁকড়, গম, ডাল ও পেয়াজের জন্য আবদার করেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের শহর নগরগুলোকে ধ্বংস করে তাদেরকে দূর-দূরান্তে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ঐ মহা অনুগ্রহ ও সার্বিক কল্যাণ প্রত্যাহার করে নিলেন।

এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন :

তারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। ফলে আমি তাদের প্রতি বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবন প্রবাহিত করে দিলাম।

অনেক তাফসীরকার বলেন, আল্লাহ্ তাআলা এই বঁধ ভেঙ্গে দেয়ার যখন ইচ্ছে করলেন তখন এটির ভিত্তিমূলে দলে দলে ইদুর পাঠিয়ে দিলেন। লোকজন যখন তা জানতে পারল তখন তারা ইদুর দমনের জন্যে বঁধ এলাকায় বহু সংখ্যক বিড়াল এনে ছেড়ে দিল। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। কারণ প্ৰবাদ আছে যে, পাতিল গরম হয়ে গেলে তখন সতর্ক হয়ে কোন লাভ নেই। তখন বঁাচার কোন পথ থাকে না। ইদুরের আক্রমণে বাঁধের ভিত্তিমূল ঝাজরা হয়ে যায় এবং বাধা ভেঙ্গে যায়। ফলে সকল নালা বিনষ্ট হয়ে পানি সমতল অঞ্চলের দিকে গড়িয়ে যায়। ফলমূল বাগ-বাগিচা, ক্ষেত-খামার সব বিধ্বস্ত হয়ে যায়। মনোরম আবাসিক এলাকা পরিণত হয় বিরান জনপদে। এর পরিবর্তে জন্ম নেয় বিস্বাদ আজেবাজে গাছ-গাছালি ও এবং তাদের উদ্যান দুটোর পরিবর্তে দিলাম। এমন দুটো উদ্যান, যাতে উৎপন্ন হয় বিস্বাদ ফলমূল, ঝাউ গাছ। ইব্‌ন আব্বাস (রা) মুজাহিদ এবং অনেক ভাষ্যকার বলেছেন যে, ॥১, ২ শব্দ দ্বারা পিলু গাছ এবং তার ফল এবং U। শব্দ দ্বারা ঝাউগাছ বুঝানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ঝাউগাছ জাতীয় এমন একটি গাছ বুঝানো হয়েছে, যা কাঠসর্বস্ব, কোন ফল ধরে না।

এবং কতক কুল বৃক্ষ। কারণ, জবলী কুল গাছে ফল হয় কম আর তাতে কঁাটা বেশী। ঐ কুলও তেমনি বিস্বাদ। যেমন প্ৰবাদ আছে, উটের গোশত নষ্ট হল উঁচু পাহাড় চূড়ায়, এমন সমতল নয় যে, সেখানে সহজে উঠা যাবে, আবার এমন নাদুস-নুদুস নয় যে, তা পরিচ্ছন্ন থাকবে। এ জন্যে আল্লাহ্ তাআলা বলেন :

তাদের কুফরার কারণে আমি তাদেরকে এই শাস্তি দিয়েছি। অকৃতজ্ঞ ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে আমি এমন শান্তি দিই না। অর্থাৎ আমি এমন কঠিন শাস্তি শুধু তাদেরকেই দেই, যারা আমার প্রতি কুফৱী করে, আমার রাসূলদেরকে প্রত্যাখ্যান করে আমার নির্দেশের বিরোধিতা করে এবং আমার নিষেধাজ্ঞাগুলো অমান্য করে। আল্লাহ তাআলা।

পরিণত করলাম এবং তাদেরকে ছিন্নভিন্ন করে দিলাম।

বস্তৃত তাদের ধন-সম্পদ যখন ধ্বংস হয়ে গেল এবং শহর-নগর বিরান হয়ে পড়ল তখন এলাকা পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যেতে তারা বাধ্য হল। তারা তখন ছত্ৰভঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন উচু ও নীচু অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের একদল চলে আসে হিজায তথা আরব এলাকায়। কুযাআ গোত্র মক্কার উপকণ্ঠে এসে বসতি স্থাপন করে। তাদের বিবরণ পরে আসবে।

তাদের কতক মদীনা মুনাওয়ারায় এসে বসবাস করতে থাকে। এরা মদীনার আদি

বাসিন্দা। এরপর বানু কায়ানুকা, বানু কুরায়যা ও বনু নষীর- এই তিন ইয়াহুদী গোত্র মদীনায় তারা এসে আওস ও খাযরাজ গোত্রের সাথে মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন করে এবং সেখানে বসবাস করতে থাকে।

তাদের বিশদ বিবরণ আমরা পরে উল্লেখ করব। সাবার অধিবাসীদের একদল সিরিয়ায় অবতরণ করে। তারাই পরবর্তী কালে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্ৰহণ করে। এরা হল গাসসান, আমিলা, বাহরা, লাখম, জুযাম তনুখ, তাগলিব প্রভৃতি গোত্র। হযরত আবু বকর (রা) ও হযরত উমর (রা)-এর শাসনামলে সিরিয়া বিজয় সম্পর্কে আলোচনা করার সময় আমরা এ গোত্রগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করব।

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আবু উবায়দা (রা) আমাকে বলেছেন যে, আশা ইব্‌ন কায়স ইব্‌ন ছালাবা ওরকে মায়মুন ইব্‌ন কায়স বলেছেন :

আদর্শকামী ব্যক্তির জন্যে এর মধ্যে রয়েছে আদর্শ, বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবন তো মারিম বঁধকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।

এটি একটি শ্বেত পাথরের তৈরী বাধা। হিময়ার তাদের জন্যে এটি নির্মাণ করেছিলেন। প্ৰচণ্ড পানির ঢেউ এলেও তা নষ্ট করতে পারতো না।

এই পানি বণ্টন করে নেয়ার পরও এটি যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষেত খামার ও সংশ্লিষ্ট এলাকা সিঞ্চিত করে দিত।

অবশেষে তারা ধ্বংস হয়ে গেল। এমন হল যে, শিশু তার মায়ের দুধ পান ছাড়ার পর তাকে পানীয় দিতে পারছিল না।

মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইসহাক তাঁর সীরাত গ্রন্থে লিখেছেন, বাঁধ ভাঙ্গা প্লাবনের পূর্বে সর্বপ্রথম যিনি ইয়ামন থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন, তিনি হলেন অমর ইব্‌ন আমির লাখমী। লাখম হলেন

আরীব ইব্‌ন ইয়াশজুব ইব্‌ন যায়দ আব্বন কাহলান ইব্‌ন সাবা। কেউ কেউ তাঁর বংশ তালিকা এরূপ বলেছেন, লাখম ইব্‌ন আব্দী ইব্‌ন আমর ইব্‌ন সাবা। এটি ইব্‌ন হিশাম (র)-এর বর্ণনা।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আমর ইব্‌ন আমিরের সাবা থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের কারণ সম্পর্কে আবু যায়দ আনসারী আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, আমরা একদিন দেখলেন যে, বাঁধ তাদের জন্যে পানি ধরে রাখে এবং তারা প্রয়োজন মাফিক নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী ওখান থেকে পানি সরবরাহ করেন একটি জংলী ইদুর সেই বাঁধের মধ্যে একটি গর্ত খুঁড়ছে। এতে তিনি বুঝে নিলেন যে, এই বঁাধ আর বেশী দিন টিকবেনা। তাই তিনি ইয়ামন ছেড়ে চলে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু তাঁর সম্প্রদায় তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং তাঁকে চলে যেতে বাধা দেয়। তিনিও একটি কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি তাঁর ছোট ছেলেকে বলেন যে, আমি তোমার প্রতি রেগে গিয়ে তোমাকে চড় মারলে তুমিও আমার মুখে চড় মারবে। তাঁর ছেলে নির্দেশানুযায়ী তাই করল।

এরপর আমরা বললেন, যে শহরের এমন পরিবেশ যে, আমার ছোট ছেলে আমার মুখে চড় মারতে পারল, আমি আর সেই শহরে থাকব না। তিনি তার ধন-সম্পদ বেচে দেয়ার ঘোষণা দিলেন। সে শহরের সন্ত্রান্ত লোকেরা বলল, আমরের রাগকে কাজে লাগাও, এ সুযোগে তাঁর ধন সম্পদ কিনে নাও। অতঃপর আমরা তাঁর ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী সবাইকে নিয়ে সাবা এলাকা ত্যাগ করেন। এটা দেখে আযাদ গোত্রের লোকেরা বলল, আমরা চলে গেলে আমরা এখানে থাকব না। তারাও নিজেদের ধন-সম্পদ বিক্রি করে দেয় এবং আমরের সাথে বেরিয়ে পড়ে।

যেতে যেতে তারা আক এর অঞ্চলে উপস্থিত হয়। সে দেশ অতিক্রম করে যেতে চাইলে আক গোত্রীয়রা তাদেরকে বাধা দেয় এবং যুদ্ধ শুরু করে। যুদ্ধের ফলাফল কখন পক্ষে আবার কখনো বিপক্ষে যায়।এ প্রসংগে আব্বাস ইব্‌ন মিরদাস বলেন :

আক ইব্‌ন আদনান যুদ্ধ খেলা খেলেছ গাসসানী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে। শেষে তাদেরকে সদল বলে বিতাড়িত করেছে।

বর্ণনাকারী বলেন,অতঃপর তারা আক এর এলাকা অতিক্রম করে বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে পড়ে। জাফনা ইব্‌ন আযর ইব্‌ন আমিরের পরিবার বসবাস করতে থাকে সিরিয়ায়। আউস ও খাযরাজ গোত্র অবতরণ করেন। ইয়াছরিবে (মদীনা শরীফে )। খুযাআ গোত্ৰ গেল মুর আঞ্চলে। আযদ গোত্রের লোকজন ভিন্ন ভিন্ন উপগোত্রে বিভক্ত হয়ে তাদের কেউ কেউ সারাতে এবং কেউ কেউ ওমানে বসতি স্থাপন করে। এরপর আল্লাহ তাআলা মারিব বাধে সর্বনাশা প্লাবন প্রেরণ করেলেন। প্লাবনের তোড়ে ভেঙ্গে চুরে ধ্বংস হয় মারিব বাঁধ। এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা। উপরোক্ত আয়াতগুলো নাযিল করেন।

তাফসীরকার সুদী (র) থেকেও প্রায় এরকম বর্ণনা এসেছে। মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাকের একটি বর্ণনা এরূপ এসেছে যে, আমর ইব্‌ন আমির নিজে জ্যোতিষী ছিলেন। কেউ কেউ বলেন, আমরা নিজে নয়, বরং তাঁর স্ত্রী তারিফা বিনত খােয়র হিময়ারীই জ্যোতিষী ছিলেন। তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিলেন যে, অতি সত্ত্বর এ জনপদ ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা যেন মারিব বঁধে ইদুরের ধ্বংস লীলা দেখতে পেয়েছিল। তাই তারা যা করার তা করে। আল্লাহই ভাল জানেন। ইব্‌ন আবী হাতিম তাফসীর গ্রন্থে। ইকরামা থেকে এ ঘটনাটিও বিশদভাবে উল্লেখ করেছেন।

পরিচ্ছেদ

বঁধ ভাঙ্গা প্লাবনে আক্রান্ত হওয়ার পর সাবার সকল গোত্ৰ ইয়ামন ছেড়ে চলে যায়নি। তাদের অধিকাংশই সেখানে বসবাস করেছে। এলাকায় অবস্থানকারী মারিবাসিগণ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলে গিয়েছিল। ইতিপূর্বে বর্ণিত হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর হাদীসের মর্মও এই যে, সাবার সকল গোত্র ইয়ামন ছেড়ে চলে যায়নি এবং তাদের চারটি গোত্র অন্যত্র চলে যায়। ইয়ামানেই থেকে যায় এবং ছয়টি গোত্র তারা হলো মুযহিজ, ফিন্দা, আনমার (আবু খাসআম) আশআরী, বুজায়লা ও হিময়ার গোত্র। সাবা সম্প্রদায্যের এই ছয়গোত্ৰ ইয়ামনেই বসবাস করতে থাকে। বংশানুক্রমে তাদের মধ্যে রাজত্ব ও তুব্বা পদ চলে আসছিল। অতঃপর এ সময় ইথিওপিয়ার রাজা তার সেনাপতিদ্বয় আবরাহা ও আরইয়াত-এর নেতৃত্বে অভিযান প্রেরণ করে ওদের হাত থেকে বছর রাজত্ব ইথিওপীয়দের হাতে থাকে। অবশেষে সায়ফা ইব্‌ন ষী ইয়ামীন হিময়ারী ওদের হাত থেকে রাজত্ব পুনরুদ্ধার করে। এই পুনরুদ্ধার সম্পন্ন হয় প্রিয় নবী (সা)-এর আবির্ভাবের অল্প কিছু দিন পূর্বে। এর বিস্তারিত বিবরণ ইনশাআল্লাহ পরে আমরা উল্লেখ করব।

পরবর্তীতে নবী করীম (সা) ইয়ামানের অধিবাসীদের নিকট হযরত আলী (রা) ও হযরত খালিদ ইব্‌ন ওলীদ (রা)-কে প্রেরণ করেন। তারও পরে তিনি আবু মূসা আশআৱী ও মুআয ইব্‌ন জাবাল (রা)-কে সেখানে প্রেরণ করেন। তাঁরা লোকজনকে আল্লাহর প্রতি দাওয়াত দিতে এবং তাওহীদী, ঈমান ও ইসলামের যুক্তি প্রমাণগুলো তাদের নিকট স্পষ্টভাবে তুলে ধরতেন।

এক সময় ভণ্ড নবী আসওয়াদ আনাসী ইয়ামানে প্রভাব সৃষ্টি ও প্রধান্য বিস্তার করে। সে রাসূলুল্লাহ (সা)-এর প্রতিনিধিকে সেখান থেকে বের করে দেয়। আসওয়াদ আনসী নিহত হওয়ার পর হযরত আবু বকর সিদীক (রা)-এর খিলাফতকালে সেটি পুনরায মুসলমানদের কবজায় এসে যায় এবং ইসলামের বিজয় নিশান উড়তে শুরু করে। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর সীরাত ও ইতিহাস বর্ণনার পর আমরা ইয়ামানে ইসলামী বিজয়ের বিবরণ উল্লেখ করব ইনশা আল্লাহ।

রবীআ আবন নাসর লাখমীর বিবরণ

এই রবীআ পূর্বোল্লেখিত রবীআ লাখমী বলে ইব্‌ন ইসহাক বলেছেন। সুহায়লী বৰ্ণনা করেন, ইয়ামানের বংশ বিশারদগণ বলেন, ইনি হলেন নাসয় ইব্‌ন রবীআ ইব্‌ন নাসর ইব্‌ন হারিক ইব্‌ন নুমারা ইব্‌ন লাখম। যবিয়ান ইব্‌ন বাক্কার বলেন, ইনি হলেন রবীআ ইব্‌ন নাসর ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন শুউয ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন আজম ইব্‌ন আমর ইব্‌ন নুমারা ইব্‌ন লাখম। লোখম ছিলেন জুযামের ভাই।

লাখম শব্দটির অর্থ হচ্ছে চপেটাঘাত করা। আপন ভাইকে চপেটাঘাত করায় তার নাম পড়ে দিয়েছিল। লাখম। আর চপেটাঘাতকারীর হাত কামড়ে ধরেছিল বলে অপর ভাইয়ের নাম হল জুযাম। জুযাম মানে দংশন করা।

রবীআ ছিলেন তুব্বা উপাধিধারী হিমইয়ারী সম্রাটদের অন্যতম। শাক ও সাতীহ নামের দুজন গণকও রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আগমন সম্পর্কে তাদের নিকট সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। গণক সাতীহ এর নাম ও বংশ পরিচয় হল রাবী ইব্‌ন রাবীআ ইব্‌ন মাসউদ ইব্‌ন মাযিন। ইব্‌ন যিব ইব্‌ন আব্দী ইব্‌ন মাযিম গাসসান। আর শাক এর বংশ পরিচয় হল;

আনমার ইব্‌ন নেযার। মতান্তরে আনমার ইব্‌ন আরাশ ইব্‌ন লিহিয়ান ইব্‌ন আমর ইব্‌ন গাওছ

কথিত আছে যে, সাতীহ লোকটির কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল না। সে ছিল ছাদের ন্যায় সমান। তার মুখমন্ডল ছিল পিঠের উপর। ক্ৰোধ এলে সে ফুলে যেত এবং বসে যেত। শাক লোকটি ছিল সাধারণ মানুষের অর্ধাংশ। বলা হয় যে, খালিদ ইব্‌ন আবদুল্লাহ বিননুল কাসরী তারই অধঃস্তন পুরুষ।

সুহায়লী বলেন, ওরা দুজন একই দিন জন্মগ্রহণ করেছিল। দিনটি ছিল তরীফা বিনত খােয়র হিমইয়ারীর মৃত্যু দিবস। বর্ণিত আছে যে, তাদের জন্মের পর সে তাদের প্রত্যেকের মুখে থুথু ছিটিয়েছিল। তাতে তারা তার জ্যোতিষ বিদ্যার উত্তরাধিকার পেয়েছিল। তরীফা ছিল পূর্বোল্লেখিত আমর ইব্‌ন আমিরের স্ত্রী। আল্লাহই ভাল জানেন।

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক বলেন, রবীআ ইব্‌ন নাসর ছিলেন ইয়ামানের তুব্বা উপাধিধারী সম্রাটদের অন্যতম। একদা তিনি এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে আতংকগ্ৰস্ত ও অস্থির হয়ে পড়েন। অতঃপর তার রাজ্যের সকল জ্যোতিষী যাদুকর ও জ্যোতির্বিদকে তার দরবারে একত্রিত করে বললেন, আমি এক ভয়ংকর,স্বপ্ন দেখেছি, যা আমাকে ভীত ও শঙ্কিত করে তুলেছে। আপনারা আমাকে স্বপ্ন ও তার তাৎপর্য বলে দিন। তারা বলল, আপনি স্বপ্নটা আমাদেরকে বলুন; আমরা তার ব্যাখ্যা বলে দিব। সম্রাট বললেন, না তা নয়, আমি যদি স্বপ্ন বলে দিই তারপর আপনারা তার ব্যাখ্যা দেন, সেই ব্যাখ্যায় আমি আস্থা রাখতে পারব না। কারণ এ স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা সেই ব্যক্তিই দিতে পারবে, আমার বলা ছাড়া যে স্বপ্নটা জানতে পারবে। একজন বলল, ঠিক আছে, সমাট যদি তাই চান তবে ব্যাখ্যার জন্যে শাক ও সাতীহের নিকট লোক পাঠিয়ে দেয়া হোক। এই শাস্ত্রে তাদের চেয়ে অভিজ্ঞ কেউ নেই। তারাই সম্রাটের ইচ্ছা মুতাবিক ব্যাখ্যা বলতে পারবে। লোক পাঠিয়ে তাদেরকে আনা হল। শাকের পূর্বে সাতীহের সাথে কথা বললেন সম্রাট। তিনি বললেন, আমি এক ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি, যা আমাকে ব্যতিব্যস্ত ও অস্থির করে তুলেছে। আগে বল, সে স্বপ্নটি কি? তুমি যদি স্বপ্নটি ঠিক ঠিক বলতে পোর তবে তোমার ব্যাখ্যাও সঠিক হবে। সাঁতীহ বলল, ঠিক আছে, আমি তাই করছি। আপনি একটি কালো বস্তু দেখেছেন যা অন্ধকার থেকে বের হয়েছে। অতঃপর সমুদ্র উপকুলবতী নিচু ভূমিতে গিয়েছে এবং যেখানে মাথা ভূমিতে গিয়েছে এবং সেখানে মাথা বিশিষ্ট যা পেয়েছে তার সব কিছু খেয়ে ফেলেছে। সম্রাট বললেন, সাতীহ! তুমি একটুও ভুল বলনি। এখন বল দেখি তোমার মতে এর ব্যাখ্যা কী?

সে বলল : দুশিলা ভূমির মাঝে অবস্থিত সকল পশু-পাখীর শপথ করে বলছি, হাবশি জাতি আপনাদের রাজ্যে অবতরণ করবে এবং আবয়ান থেকে জারশ পর্যন্ত এলাকায় রাজত্ব করবে। সম্রাট বললেন, সাতীহ! এতো এক অনাকাংখিত ও বেদনাদায়ক ব্যাপার, কবে নাগাদ তা ঘটবে; আমার রাজত্বকালে, না আরও পরে? সে বলল, আপনার পিতার শপথ, বরং আপনার পরে আরো ৬০/৭০ বছরের অধিক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর। সমাট বললেন, তাদের রাজত্ব কি চিরস্থায়ী হবে? না কি পতন ঘটবে? সে বলল, ৭৩ থেকে ৭৯ বছরের মধ্যে তাদের পতন ঘটবে। তারপর তাদেরকে হত্যা করা হবে এবং তারা সেখান থেকে পালিয়ে যাবে। তিনি বললেন, কে তাদেরকে হত্যা ও বিতাড়িত করবে? সে বলল, ইরামসী ইয়াযিন। এডেন থেকে সে আসবে এবং ওদের কাউকে ইয়ামানে অবশিষ্ট রাখবে না।

সম্রাট বললেন, তার রাজত্ব কি চিরস্থায়ী হবে? নাকি তার পতন ঘটবে? সে বলল, বরং পতন ঘটবে। সম্রাট বললেন, কার হাতে তার পতন ঘটবে? সে বলল, একজন পুণ্যবান নবীর হাতে উর্ধাকাশ থেকে তার নিকট ওহী আসবে। সম্রাট বললেন, নবী কোন। বংশের সন্তান হলে? সে বলল, গালিব ইব্‌ন ফিহর ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন নজরের অধঃস্তন পুরুষ। আখেরী যামানা পর্যন্ত রাজত্ব তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকবে। সম্রাট বললেন, যুগেরও কি আবার শেষ আছে? সে বলল, হ্যাঁ যুগের শেষ হল এমন একটি দিন, যেদিনে পূর্ববতী ও পরবর্তী সবাইকে একত্রিত করা হবে। সৎকর্মশীলগণ হবে ভাগ্যবান আর পাপাচারীগণ হবে ভাগ্যাহত। সম্রাট বললেন, তুমি যা বলছি তা কি ঠিক? সে বলল, অন্তরাগ, অন্ধকার এবং উদ্ভাসিত প্ৰত্যুষের শপথ করে বলছি, আমি আপনাকে যা জানিয়েছি তা অবশ্যই সত্য।

বৰ্ণনাকারী বলেন, অতঃপর জ্যোতিষী, শাক সম্রাটের নিকট আসল। সাতীহকে যা বলেছিলেন তিনি তাকেও তাই বললেন। উভয়ের বক্তব্য একরূপ হয়, নাকি ভিন্ন ভিন্ন, তা দেখার জন্যে সাতীহের বক্তব্য তিনি শাকের নিকট প্ৰকাশ করলেন না। শাক বলল, আপনি দেখেছেন একটি কালো বস্তু। সেটি বেরিয়ে এসেছে অন্ধকার থেকে। তারপর উদ্যান ও ফলাবাগানে গিয়ে পতিত হয়েছে। অতঃপর সেখানে যত প্ৰাণী ছিল সব খেয়ে ফেলেছে। এতটুকু বলার পর সম্রাট বুঝলেন যে, উভয়ের বক্তব্য অভিন্ন। সম্রাট বললেন, হে শাক! তুমি একটুও ভুল বলনি। এখন তোমাদের এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী? সে বলল, দুশিলা তুমির মাঝে অবস্থিত মানব সম্প্রদায়ের শপথ করে বলছি, আপনাদের রাজ্যে অবশ্যই কৃষ্ণাঙ্গর অবতরণ করবে। সকল অধিবাসীর উপর তারা বিজয় লাভ করবে এবং আলায়্যান থেকে নজরান পর্যন্ত তাদের শাসনাধীন হবে। সম্রাট বললেন, হে শাক! তোমার পিতার শপথ, এটি তো আমাদের জন্যে ক্ষোভ ও দুঃখের ব্যাপার। তবে এটি কবে ঘটবে? আমার মামলে, নাকি এর পরবর্তী যুগে? সে বলল, না, বরং এর কিছুকাল পরে।

তারপর একজন প্রতাপশালী ব্যক্তি আপনাদেরকে ওদের হাত থেকে মুক্ত করবে এবং ওদেরকে চরম অপমান ও লাঞ্ছিত করবে। তিনি বললেন, ঐ প্রতাপশালী ব্যক্তিটি কে? সে বলল, একটি বালক-গ্রামবাসীও নয়, শহরবাসীও নয়। মী। ইয়াযান-এর বংশ থেকে বেরিয়ে সে তাদের উপর আক্রমণ করবে। তিনি বললেন, তার রাজত্ব কি চিরস্থায়ী হবে, নাকি তার পতন ঘটবে? সে বলল, বরং তার রাজত্বের পতন ঘটবে জনৈক রাসূলের হাতে, যিনি দীনের প্রচারক ও মর্যাদাশীল হবেন এবং সত্য ও ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে আসবেন। বিচার দিবস পর্যন্ত রাজত্ব তার সম্প্রদায়ের হাতে থাকবে।

সম্রাট বললেন, বিচার দিবস। আবার কী? সে বলল, যে দিবসে সকল কর্মের প্রতিদান দেয়া হবে। সেদিন আকাশ থেকে ঘোষণা দেয়া হবে। জীবিত মৃত সবাই সে ঘোষণা শুনবে। নির্দিষ্ট স্থানে তখন লোকজন সমবেত হবে। যারা তাকওয়া ও সংযম অবলম্বন করেছে, তারা তখন সফলতা ও কল্যাণ লাভ করবে। তিনি বললেন, তুমি যা বলছি, তা কি সত্য? সে বলল, হ্যাঁ, আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিপালকের শপথ এবং এ উভয়ের মাঝে উঁচু-নীচু যা কিছু আছে, তার সবগুলোর শপথ, আমি যা বলছি তা সত্য। তাতে কোন ব্যত্যয় নেই। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, সাতীহ শাক-এর বক্তব্য রাবীআ ইব্‌ন নাসরের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তিনি তাঁর ছেলে-মেয়ে ও পরিবার-পরিজনকে ইরাকে পাঠিয়ে দিলেন এবং সাবুর ইব্‌ন খারজাম নামের জনৈক পারসিক রাজাকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কথা লিখে দিলেন। সে তাদের হীরা রাজ্যে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিল। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, রবীআ ইব্‌ন নাসরের অধঃস্তন বংশধর হলেন নুমান ইব্‌ন মুনয্যির ইব্‌ন নুমান ইব্‌ন মুনয্যির ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আব্দী ইব্‌ন রবীআ ইব্‌ন নাসর। এই নুমান পারস্য রাজ্যের প্রতিনিধিরূপে হীরা শাসন করতেন। আরবগণ তার নিকট যেত এবং তার প্রশংসা করত। মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক যা বলেছেন যে, নুমান ইব্‌ন মুন্নাযির রবীআ ইব্‌ন নাসরের অধঃস্তন পুরুষ, অধিকাংশ ঐতিহাসিক তা সমর্থন করেছেন।

ইব্‌ন ইসহাক বৰ্ণনা করেন যে, নুমান ইব্‌ন মুনযিরের তরবারী হযরত উমর ইব্‌ন খাত্তাবের (রা) নিকট আনয়ন করা হলে তিনি জুবোয়র ইব্‌ন মুতইম (রা)-কে জিজ্ঞেস করলেন যে, সে কার বংশধর? জুবোয়র (রা) বললেন, সে কানাস ইব্‌ন মাআদ ইব্‌ন আদিনানের বংশধর। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, সে যে কোন বংশের ছিল তা আল্লাহই ভাল জানেন। }

বায়তুল্লাহ শরীফের বিরুদ্ধে অভিযানের প্রয়াস এবং পরবর্তীতে সম্মানাৰ্থে বায়তুল্লাহ শরীফে গিলাফ ছড়ান প্রসঙ্গে

ইব্‌ন ইসহাক বললেন, রবীআ ইব্‌ন নাসরের মৃত্যুর পর সমগ্ৰ ইয়ামান হাস্সান ইব্‌ন তুব্বান আসআদ। আধু কুরাবের করতলগত হয়। তুব্বান আসআদি ছিলেন সর্বশেষ তুব্বা। ইনি ছিলেন কালকীরের ইব্‌ন যায়দ, যোয়দ ছিলেন সর্বপ্রথম তুব্বা তিনি ছিলেন আমরা যিল আযআর

কাব কাহফুষ যুলাম ইব্‌ন জায়দ ইব্‌ন আহিল ইব্‌ন আমর ইব্‌ন কুস ইব্‌ন মুআবিয়া ইব্‌ন জাসিম ইব্‌ন আবদে শামস ইব্‌ন ওয়াইল ইব্‌ন গাওছ ইব্‌ন কুন্তান ইব্‌ন আরিব ইব্‌ন যুহায়র ইব্‌ন আনাস ইব্‌ন হামাইসি, ইব্‌ন আরবাহাজ। এই আরবাহাজ হচ্ছেন হিমইয়ার ইব্‌ন সাবা আল আকবার ইব্‌ন ইয়ারুব ইব্‌ন ইয়াশজুয। ইব্‌ন কাহতান। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, এই তুব্বাল আসআদি আবু কুরাব সেই ব্যক্তি যে মদীনায় এসেছিলেন এবং দুজন ইহুদী ধর্মযাজককে তার সাথে ইয়ামানে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বায়তুল্লাহ শরীফের সংস্কার সাধন ও তাতে সর্বপ্রথম গিলাফ চড়িয়েছিলেন তার শাসন কাল ছিল রবীআ ইব্‌ন নাসরের শাসনকালের পূর্বে। পূর্ব দেশীয় রাজ্যগুলো জয় করে তিনি মদীনা হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করছিলেন। অভিযানের শুরুতেও তিনি মদীনা হয়ে গিয়েছিলেন। মদীনার অধিবাসীদেরকে তিনি উচ্ছেদ করেন নি। তার এক পুত্রকে তিনি তাদের শাসকরূপে রেখে গিয়েছিলেন। গুপ্তঘাতকের হাতে ১ তার ওই পুত্ৰ সেখানে নিহত হন। এ কারণে তিনি মদীনা ধ্বংস, তার অধিবাসীদেরকে উচ্ছেদ এবং উদ্যানরাজি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্য মদীনায় ফিরে আসল। তাদের নেতৃত্ত্বে ছিল নাজ্জার বংশীয় আমর ইব্‌ন তাশাহা। তিনি বানু আমর ইব্‌ন মান্বযুলেরও একজন মান্বযুলের নাম আমির ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন নাজ্জার। নাজারের নাম তায়মুল্লাহ ইব্‌ন ছালাবা ইব্‌ন আমর ইব্‌ন খাযরাজ ইব্‌ন হারিছা ইব্‌ন ছালাবা ইব্‌ন আমির।

ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন নাজ্জার। তালহা তার মায়ের নাম। তালহা ছিলে আমির ইব্‌ন যুরায়ক খায়রাজি-এর কন্যা।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন বানু আদীি ইব্‌ন নাজ্জার গোত্রের আলমার নামে জনৈক ব্যক্তি তুব্বার দলের এক ব্যক্তির উপর আক্রমণ করে বসে। লোকটি আহমারের খেজুর গাছ থেকে খেজুর কাটছিল। কাঁচির আঘাতে আহমর তাকে হত্যা করেন এবং বলেন খেজুর সে পাবে যে

১. ধ1, অর্থ বিশ্বাসঘাতকতা।

তার যত্ন করে। এ ঘটনায় তুব্বা তাদের প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ হন। ফলে উভয়পক্ষে যুদ্ধ শুরু হয়। আনসারগণের ধারণা তাদের পূর্বপুরুষরা দিনে তুব্বা পক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন আর রাতে তাদের মেহমানদারী করতেন। তাদের আচরণে তুব্বা খুব খুশী হন এবং বলেন হায়! আমাদের সম্প্রদায় তো অলস। আনসারদের সূত্রে ইব্‌ন ইসহাক বৰ্ণনা করেন যে, তুব্বা ক্ষেপে ছিলেন। ইহুদী জাতির বিরুদ্ধে। কারণ তারা আনসারদের হয়ে তার বিরুদ্ধে লড়েছিল।

সুহায়লী বলেন, কথিত আছে যে, তুব্বা এসেছিলেন ইহুদীদের বিরুদ্ধে আনসারদেরকে সাহায্য করতে। আনসারগণ ছিলেন তার চাচার বংশধর। ইহুদীগণ শর্ত সাপেক্ষে মদীনায় বসবাসের অনুমতি পেয়েছিল। পরে তারা শর্তগুলো পূরণ করেনি। বরং আনসারদের বিরুদ্ধে শক্তি প্ৰদৰ্শন করেছিল। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, তুব্বা যখন যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন তখন বানু কুরায়যা গোত্রের দুজন ইহুদী ধর্মযাজক তাঁর নিকট আসেন। তারা জেনেছিলেন যে, তুব্বা মদীনা ধ্বংস ও মদীনাবাসীদের মূলোৎপাটনের জন্যে এসেছেন। তারা তাকে বললেন রাজন! আপনি এরূপ করবেন না। এরপরও যদি আপনি আপনার পরিকল্পনা কার্যকর করতে চান তবে আপনি তাতে ব্যর্থ হলে এবং আপনার উপর আল্লাহর গািযবা নাযিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বললেন, কেন এরূপ হবে? তারা বললেন, কারণ, এই মদীনা হল আখেরী যামানায় এই কুরায়শীয় হারাম শরীফ থেকে আবির্ভূত নবীর হিজরত স্থল। এটি হবে তাঁর বাসস্থান ও অবস্থান স্থল। এতে তুব্বা যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হলেন। তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই দুজন গভীর জ্ঞানের অধিকারী। তাদের কথা তার খুব ভাল লেগেছে। ফলে, তিনি মদীনাবাসীদের ধর্মে হস্তক্ষেপ না করেই মদীনা ত্যাগ করেন।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, তুব্বার সম্প্রদায় মূর্তিপূজারী ছিল। তারা দেব-দেবীর পূজা করত। তুব্বা মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন। এটা ছিল। ইয়ামানের পথে। উসফান ও আমাজের মধ্যবর্তীর্ণ স্থানে আসার পর হুযায়াল (ইব্‌ন মুদারিকা ইব্‌ন ইলিয়াছ ইব্‌ন মুযার ইব্‌ন নেযার ইব্‌ন মাদ ইব্‌ন আদনান) গোত্রের একদল লোক তার নিকট এল। তারা বলল, হে রাজন! আমরা কি আপনাকে একটি গৃহের সন্ধান দিব, যেটি পুরাতন হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। আপনার পূৰ্ববতী রাজা বাদশাহ ঐ গৃহ সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল ছিলেন না। সেখানে রয়েছে। মনি-মানিক্য, স্বর্ণ-রৌপ্য ও মহামূল্য ইয়াকৃত পাথর। তিন বললেন, হ্যাঁ ঠিক আছে। তারা বলল, সেটি মক্কায় অবস্থিত একটি গৃহ। তার ভক্তবৃন্দ সেখানে ইবাদত করে এবং সেখানে প্রার্থনা করে। হুযায়ল গোত্রীয়গণ এর দ্বারা তুব্বার ধ্বংসের চক্রান্ত করেছিল। কারণ তারা জানত যে, কোন রাজা এ গৃহে ধ্বংস করা কিংবা এটির নিকট ঔদ্ধত্য দেখালে তার ধ্বংস অনিবাৰ্য, তারা যা বলেছিল তা করার সংকল্প করে তুব্বা এ ব্যাপারে পরামর্শের জন্যে পূর্বোক্ত যাজকদ্বয়ের নিকট লোক পাঠালেন। তারা বললেন, এ লোকেরা আপনার নিজের ও আপনার সৈন্য-সামন্তের ধ্বংসই চেয়েছে। আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে এই পবিত্র গৃহ ব্যতীত অন্য কোন গৃহকে নিজের জন্যে নির্দিষ্ট রেখেছেন বলে আমাদের জানা নেই। তারা আপনাকে যা করতে বলেছে, আপনি যদি তা করেন। তবে আপনিও ধ্বংস হবেন, আপনার সাথে যারা আছে তারাও। তিনি বললেন, আমি গৃহের নিকট পৌঁছলে আপনারা আমাকে কী করতে পরামর্শ দিচ্ছেন? তারা বলল, আপনি তা-ই করবেন যা ওখানকার লোকজন করে। ঐ গৃহের তাওয়াফ করবেন, সেটির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে মাথা মুণ্ডন করবেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে না। আসা পর্যন্ত সেটির প্রতি ভক্তি প্ৰদৰ্শন করতে থাকবেন। তিনি বললেন, আপনারা তা করতে বাধা কোথায়? তারা বলল, সেটি হল আমাদের পিতা ইবরাহীমের (আ) গৃহ। এ গৃহ সেরূপই যা আমরা আপনার নিকট বর্ণনা করেছি, কিন্তু ওখানকার লোকজন ঐ গৃহের আশে-পাশে প্রতিমা স্থাপন করে এবং খুনখুনি ও রক্তারক্তি করে আমাদের মাঝে এবং ঐ গৃহের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে রেখেছে। তারা শিরকবাদী, তারা অপবিত্র। তুব্বা তাদের উপদেশ) উপলব্ধি করলেন এবং তাদের কথায় সত্যতা অনুধাবন করলেন। হুযায়ল গোত্রের কিছু লোক তাঁর নিকটে এলে তিনি তাদের হাত-পা কেটে দিলেন। তারপর তিনি মক্কায় আসলেন। বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করলেন, সেখানে পশু কুরবানী দিলেন, মাথা মুণ্ডন করলেন এবং মক্কায় ছয়দিন অবস্থান করলেন।

কথিত আছে যে, এই সময়ে তিনি সেখানে পশু জবাই দিতেন এবং সেখানকার লোকজনকে আপ্যায়িত করতেন এবং তাদেরকে মধু পান করাতেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি কাবা শরীফে গিলাফ চড়িয়ে দিচ্ছেন। ফলে তিনি কাবা শরীফে মোটা কাপড়ের গিলাফ চড়িয়ে দিলেন। তারপর তিনি স্বপ্নে দেখলেন, যেন তিনি তার চেয়ে ভাল গিলাফ চড়ান, তখন তিনি মুআফিরী বস্ত্ৰে গিলাফ চড়ালেন। আবার স্বপ্ন দেখলেন, যেন তার চাইতেও ভাল গিলাফ চড়ান। তখন তিনি মালা এবং নক্সান্দার ইয়ামানী বন্ত্রের গিলাফ চড়িয়ে দিলেন। ঐতিহাসিকদের ধারণা যে, তুব্বাই সর্বপ্রথম কাবা শরীফে গিলাফ চড়িয়ে ছিলেন। তিনি জুরহুম গোত্ৰকে কাবা শরীফের তত্ত্বাবধান করা, সেটি পবিত্র রাখা, রক্ত, মৃত প্ৰাণী এবং ঋতুস্রাবের বস্ত্ৰাদি থেকে পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিলেন। তিনি কাবা শরীফের একটি দরজা তৈরী করে তাতে তালা-চাবির ব্যবস্থা করলেন। তুব্বার এ সকল খেদমত ও কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে সুবাইআ বিনত আহাব তাঁর পুত্র খালিদ ইব্‌ন আবদ মানাফ ইব্‌ন কবি ইব্‌ন কাব। ইব্‌ন সাদ ইব্‌ন তায়ম ইব্‌ন মুররা ইব্‌ন কাব। ইব্‌ন লুআয় ইব্‌ন গালিব)-কে উপদেশ দিয়ে এবং মক্কায় কোন প্রকারের সীমালংঘন ও বিদ্রোহ না করার নির্দেশ দিয়ে বলেছিল?

হে বৎস! মক্কাতে ছােট-বড় কোন জুলুম বা পাপাচার করবে না।

হে বৎস! এর মর্যাদা রক্ষা করো এবং এ ব্যাপারে কোন ধোকায় পড়ো না যেন।

হে বৎস, মক্কায় যে জন জুলুম করে, অকল্যাণ আর দুর্ভোেগ তার জন্যে অবধারিত।

হে বৎস! মুখে আর গালে জানান্নামের আগুন আঘাত করবে।

ابنی قذجر بتها فوجدت ظالمهایبور. হে বৎস! আমার অভিজ্ঞতা যে, এখানে জুলুমকারী সুনিশ্চিতভাবেই ধ্বংস হয়।

الله امنها و ما بنیت بعرصتها قصور . আল্লাহ তাআলাই তার এবং তার প্রাঙ্গণস্থ দালান-কোঠার হেফাজতকারী।

و الله امن طیرها و العصنم کامن فی ثابیر আল্লাহই এর পাখীগুলো এবং শ্বেত হরিণকে ছাবীর পর্বতে নিরাপদে রাখেন।

ولقد غزاها نبع فكسا بنيلها الحبير. তুব্বা যুদ্ধ করতে আসল এবং কাবা গৃহে গিলাফ চড়ান।

وأذل ربى ملكة فيها فأوفى بالنذور . আল্লাহ তাআলা তাকে থামিয়ে দেন। তিনি তার মানত পুরো করেন।

یمشی الیها حافیا بفنانها آلفا بعیر. তিনি নগ্ন পায়ে তার দিকে হেঁটে আসেন। এবং তার প্রাঙ্গণে হাজারো উট কুরবানী

করেন।

ويظل يطعم أهلها – لحم المهارى والجزور. ছোট বড় উটের গোশতের দ্বারা তিনি মক্কবাসীদের আপ্যায়িত করেন।

يسقيهم العسل الصفى والرحيض من الشعير. তিনি তাদেরকে খাটি মধু পান করান এবং ভাল। রুটি আহার করান।

والفيل أهلك جيشه يرمون فيها بالصحّور তাতে হাতী বাহিনী ধ্বংস হয়, তাদের প্রতি পাথর বর্ষিত হয়।

والملك فی آقص البلاد و فی الاعاجم و ا لخنزوار . তাঁর (আল্লাহর) কর্তৃত্ব সর্বস্থানে, আরবে আর অনারবে।

فاسمع اذا حيثك وافهم كيف عاقبة الأمور . যখন কিছু বলা হয়, তখন তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং ভালভাবে বুঝে নিবে যে, শেষ পরিণতি কেমন হয়।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন অতঃপর তুব্বা তাঁর সৈন্য-সামন্ত ও ইহুদী ধর্ম যাজকদ্বয়কে সাথে নিয়ে স্বদেশ ইয়ামানের দিকে যাত্রা করলেন। সেখানে পৌছে তাঁর সম্প্রদায়কে তিনি তার নবদীক্ষিত ধর্ম গ্রহণের আহবান জানালেন। ইয়ামানে অবস্থিত বিশেষ অগ্নিকুণ্ডের মাধ্যমে ফয়সালা না হওয়া ব্যতীত তারা নতুন ধর্ম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।

বর্ণনা করে বলেছেন যে, আমি ইবরাহীম ইব্‌ন মুহাম্মদ ইব্‌ন তালহা ইব্‌ন উবাইদুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকালে তুব্বা যখন ইয়ামানের কাছাকাছি পৌছলেন এবং ইয়ামানে প্রবেশ করতে যাবেন তখন হিমইয়ারী গোত্রের লোকজন তাঁকে বাধা দিল এবং বলল, আপনি এদেশে প্রবেশ করবেন না, আপনি আমাদের ধর্ম ত্যাগ করেছেন। তিনি তাদেরকে তার নবদীক্ষিত ধর্মের দাওয়াত দিয়ে বললেন, এটি তোমাদের ধর্ম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ধর্ম। তারা বলল, আমরা অগ্নিকুণ্ডের মাধ্যমে ফয়সালা করব। তিনি বললেন হ্যাঁ, তাই হোক।

ইয়ামানবাসীদের ধারণা যে, তাদের একটি অগ্নিকুণ্ড রয়েছে। বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোতে এই অগ্নিকুণ্ড তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়। অত্যাচারী টেনে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। আর অত্যাচারিতের কোন ক্ষতি করে না। লোকজন তাদের দেব-দেবী এবং ধর্মমত অনুযায়ী সুপারিশযোগ্য বস্তুগুলো নিয়ে বের হল। আর ধর্মযাজক দুজন গলায় কিতাব বুলিয়ে রওয়ানা হলেন। সেখান থেকে আগুন বের হচ্ছিল সেখানে গিয়ে সবাই ঘৰ্ম্মল, আগুন বেরিয়ে এলে ইয়ামানবাসীদের দিকে যখন এগিয়ে আসতে লাগল, তখন তারা অন্যদিকে ভয়ে সরে যেতে লাগল, উপস্থিত লোকজন তাদেরকে ধমক দেয়ায় এবং স্থির থাকতে নির্দেশ দেয়ায় তারা স্থির থাকল। অবশেষে আগুন এসে তাদেরকে ঢেকে ফেলল এবং তাদের দেব-দেবী এবং এতগুলো বহনকারী হিমইয়ারী লোকজন সবাইকে গ্ৰাস করে ফেলল। ধর্মযাজক দুজন গলায় কিতাবসহ। স্বাভাবিকভাবে বেরিয়ে আসলেন। তাদের কপালে ঘাম দেখা দিয়েছিল। আগুন তাদের কোন ক্ষতি করলো না, তখন হিমইয়ারী দৃঢ়ভাবে যাজকদ্বয়ের ধর্ম গ্রহণ করল। তখন থেকে ইয়ামানে ইহুদী ধর্মের সূচনা হয়।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, জনৈক শাস্ত্ৰবিশারদ। আমাকে বলেছেন যে, যাজকদ্বয় এবং হিমইয়ারীগণ আগুনকে তার উৎসস্থলে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে আগুনের পেছনে-পেছনে ছুটলেন। তারা বলেছিলেন যে, যে পক্ষ আগুনকে ফিরিয়ে দিতে পারবে সে পক্ষই সত্যপন্থী ৷ হিমইয়াবর লোকজন তাদের প্রতিমাসমূহ নিয়ে আগুনের নিকট এগিয়ে গেল তাদেরকে গ্রাস করার জন্য। আগুন তাদের নিকট এগিয়ে এল। তারা পালিয়ে যেতে চাইল। আগুনকে ফিরিয়ে দিতে পারল না। অতঃপর যাজকদ্বয় আগুনের নিকটবতী হলেন। তারা অবিরাম তাওরাত পাঠ করছিলেন আর আগুন ক্ৰমে ক্ৰমে তাদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত আগুন যেখান থেকে উঠে এসেছিল তারা তাকে সেখানেই ফিরিয়ে দিলেন। তখন হিমইয়ারীগণ তাদের ধর্মে আস্থাশীল হল। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, রাছাম নামে তাদের একটি উপাসনালয় ছিল। তারা সেটিকে ভক্তি করত। সেখানে পশু কোরবানী করতো ঐ গৃহের মধ্যে কথাবার্তা বলত। তখন তারা মুশরিক ছিল। যাজকদ্বয় তুব্বাকে বললেন, শয়তান এটি দ্বারা তাদেরকে বিপথে পরিচালিত করছে। আমাদেরকে অনুমতি দিন আমরা একটু দেখি। তুব্বা বললেন, আপনারা যা ইচ্ছা করুন। ইয়ামানীদের ধারণা, তারা ঐ গৃহ থেকে একটি কালো কুকুর বের করে আনে এবং সেটি জবাই করে দেয়। তারপর উক্ত ঘর ভেঙ্গে ফেলে। আমার জানা মতে, ঐ গৃহের পাশে বলিদানের রক্ত চিহ্ন তখনও তার স্মৃতি বহন করছে।

নবী করীম (সা) থেকে বর্ণিতঃ 1.1৬< • »L• [: 1.4, ১ -তোমরা তুব্বাকে গালি দিও না, কারণ তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। এ তাফসীরগ্রন্থে এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় আমরা উল্লেখ করেছি যে, সুহায়লী বলেছেন, বর্ণনাকারী মামার হাম্মাম ইব্‌ন মুনব্বিহ থেকে এবং তিনি হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলাল্লাহ (সা) বলেছেন : তোমরা আসআদি হিমইয়ারীকে গালি দিও না। কারণ, তিনি সর্বপ্রথম কাবা শরীফে গিলাফ

চড়ান।

সুহায়লী বলেন, যাজকদ্বয় যখন তুব্বাকে রাসূলুল্লাহ (সা) সম্পর্কে অবহিত করলেন, তখন তিনি কবিতার ছন্দে বলেন :

شهدت على أخمد أنّه رسول من اللّه بارى النَّسم সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি আসআদ-সৃষ্টিকর্তার রাসূল আহমদ (সা)

فلومی عمری الی عمره – گنت وزیر الهٔ و ابن عم ততদিন যদি বেঁচে থাকতাম, তার উজীর ও সাখী হতাম।

দূর করতাম দুঃখ যত জন্ম নিত বক্ষে তাঁর।

বর্ণনাকারী বলেন, বংশানুক্রমে এ কবিতা আনসারদের মধ্যে সুরক্ষিত ছিল। তারা যত্ন সহকারে এটি সংরক্ষণ করতেন। সর্বশেষ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা)-এর নিকট এটি সংরক্ষিত ছিল।

সুহায়লী বলেন, ইব্‌ন আবিদ দুনিয়া তাঁর কিতাবুল কুবুরে উল্লেখ করেছেন যে, সানাআ অঞ্চলে একটি কবর খননের পর তাতে দুজন মহিলার লাশ পাওয়া যায়। তাদের সাথে ছিল একখণ্ড রৌপ্যলিপি। তাতে স্বর্ণীক্ষরে লিখিত ছিল এ হল তুব্বার দুই কন্যা লামীস ও হিব্বার কবর। তারা সাক্ষ্য দিত যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই, তিনি একক তার কোন শরীক নেই, এ বিশ্বাস সহকারে তাদের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পূর্ববতী নেককার লোকগণ এ বিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

অতঃপর রাজত্ব এল তুব্বান আসআদের পুত্র হাসসানের হাতে। তিনি ছিলেন ইয়ামামা-ই

যুরাকা-এর ভাই। জাও নগরীর প্রবেশ পথে ইয়ামামাকে শূলিতে চড়ানো হয়েছিল। সেদিন থেকে শহরটির নাম পড়ে যায় আল-ইয়ামামা।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আবু কুরাব তুব্বান আসআদের পুত্র হাসসান সিংহাসনে বসে ইয়ামানের অধিবাসীদেরকে নিয়ে আরব ও অনারব ভূমি ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ইরাক পৌছে হিমইয়ার ও ইয়ামানের কতক গোত্র তার সাথে যেতে অসন্মতি জানায়। তারা স্বদেশে নিজেদের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চাইল। আমার নামে তার এক ভাইয়ের নিকট তারা নিজেদের ইচ্ছা জানাল। সে কাফেলার সাথে ছিল। তারা আমরকে বলল, আপনি আপনার ভাই হাস্সানকে হত্যা করুন তাহলে আমরা আপনাকে রাজা বানাব। আপনি আমাদেরকে নিয়ে স্বদেশে ফিরে যাবেন। সে তাদের আহবানে সাড়া দিল। যু-রুআইন জনৈক হিমইয়ারী ছাড়া তারা সবাই এ ষড়যন্ত্রে একমত হল। সে যু-রুআইন আমরকে অপকর্মে বাধা দিয়েছিল সে তা শোনেনি। তখন সে আমরের উদ্দেশ্যে একটি চিরকুট লিখল। তাতে নিম্নোক্ত পংক্তি দুটো লিখিত ছিল।

নিদ্ৰা দিয়ে বিনিদ্রা কিনে কোনজন; ভাগ্যবান সেইজন-প্রশান্ত রক্তনী যে করে যাপন।

প্রকাশ করে যু-রুআঈন তার ব্যক্তিগত বেজারী।

তারপর চিরকুটটি সে আমরের নিকট জমা রাখল। আপন ভাই হাসসানকে হত্যা করে আমর দেশে ফেরার পর থেকে তার আর ঘুম হয় না। রাতের পর রাত সে বিনিদ্র রজনী যাপন করতে থাকে। ডাক্তার, কবিরাজ, জ্যোতিষী-গণক এবং রেখাবিশেষজ্ঞদের নিকট সে এর কারণ জানতে চাইল। তাকে বলা হল যে, আল্লাহর কসম, কেউ যদি তার ভাই কিংবা কোন ঘনিষ্ঠ আত্মীয়কে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তবে তার ঘুম হারাম হয়ে যায় এবং অনিদ্ৰা তার নিত্য সাখী। হয়। যারা আমরকে ভ্ৰাতৃ হত্যায় ইন্ধন যুগিয়েছিল, এবার সে একে একে তাদেরকে হত্যা করতে শুরু করলো। যু-রুআইনের পালা আসলে সে বলল, আপনার কাছে আমার একটি মুক্তিসনদ আছে। আমরা বলল, সেটি কি? যু-রুআইন বলল, আপনাকে আমি যে চিরকুটটি দিয়েছিলাম তা। সে চিরকুটটি বের করল। খুলে দেখল তাতে উক্ত পংক্তি লিখিত রয়েছে। তখন সে যু-রুআইনকে মুক্তি দিল এবং আমরা উপলব্ধি করতে পারল যে, যু-রুআইন তাকে যথার্থ উপদেশ দিয়েছিল। অবশেষে আমরের মৃত্যু হয় এবং হিমইয়ারীদের মধ্যে অনৈক্য*, বিশৃংখলা ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

লাখনীআহ যুশানাতির-এর ইয়ামান আক্রমণ

উপরোক্ত রাজা ২৭ বছর সেখানে রাজত্ব করেন। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, এরপর হিমইয়ার গোত্রের এক ব্যক্তি ইয়ামানীদের উপর আক্রমণ চালায়। সে মূলত রাজবংশীয় ছিলেন তার নাম ছিল। লাখনী আহি ইয়ানুফযু শান্নাতির। ইয়ামানের সন্ত্রান্ত লোকদেরকে সে হত্যা করে এবং রাজ পরিবারের অন্তঃপুরবাসীদেরকে নিয়ে রস কৌতুক করে। তার সাথে ছিল একজন অসৎ লোক।

সে ছিল লুত সম্প্রদায়ের অপকর্ম সমকামিতায় অভ্যস্ত। সে রাজ পরিবারের অপ্রাপ্তবয়স্ক বালকদেরকে তুলে আনতে নির্দেশ দিত। পরে ঐ ছেলেকে নিয়ে ঘৃণিত সমকামিতা সম্পাদনের জন্যে নির্মিত একটি কক্ষে গিয়ে তার অসদুদ্দেশ্য চরিতাৰ্থ করত। যাতে রাজ পরিবারের কেউ পরবর্তীতে রাজা হতে না পারে। অপকর্ম শেষে নিজের মুখে একটি দাঁতন গুজে দিয়ে সে তার প্রহরী ও উপস্থিত সৈন্যদের দিকে তাকিয়ে দেখত, তখন তারা বুঝে নিত যে, সে তার অপকর্ম শেষ করেছে। শেষ পর্যন্ত সে লোক পাঠায় হাস্সানের ভাই যুরআ যু-নুওয়াস ইব্‌ন তুব্বান আসাআদকে ধরে নিতে। তার ভাই হাসসান যখন নিহত হয় তখন সে ছিল ছোট্ট শিশু পরবর্তীতে সে সুদর্শন, রূপবান ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন যুবক হিসেবে বেড়ে উঠে। পাপাচারী লোকটির প্রতিনিধিকে দেখে সে ঐ ব্যক্তির কুমতলব আঁচ কবিতে পারে। সে তখন পাতলা, নতুন ও সুতীক্ষ্ণ একটি ছুরি তার দুপায়ের মাঝখানে জুতোর ভেতর লুকিয়ে রাখে এবং পাপাচারীর নিকট উপস্থিত হয়। এক সময় উভয়ে নির্জন কক্ষে পৌঁছায় পর সে যুন্নুওয়াসকে সাপটে ধরে। সাথে সাথে যু-নুওয়াস তার লুকিয়ে রাখা ছুরি নিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং আঘাতে আঘাতে তাকে হত্যা করে। তারপর তার মাথা কেটে নিয়ে সেই বাতায়নে রাখে। যেখান দিয়ে সে বাহিরে তাকাত। তার মুখের মধ্যে গুজে দেয় তার দাঁতন। অতঃপর লোকজনের নিকট বেরিয়ে আসে।

লোকজন বলল, হে যু-নুওয়াস, ব্যাপার কি? তাজা না শুকনো; সে বলে ওকে জিজ্ঞেস কর, কোন অসুবিধা নেই। তখন তারা ঐ বাতায়নের দিকে তাকায়; তারা লাখনী আহ এর কর্তিত মুণ্ড দেখতে পায়। এরপর যু-নুওয়াসের খোজে তারা বের হয়। শেষে তারা তাকে খুঁজে পায়। যু-নুওয়াসকে তার বলে আপনিই আমাদের রাজা হওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি। আপনিই সক্ষম হয়েছেন আমাদেরকে এই ঘূণ্য ব্যক্তি কবল থেকে উদ্ধার করতে।

অতঃপর যু-নুওয়াস তাদের রাজা হন। হিমাইয়ারীদের সকল লোক এবং ইয়ামানী সকল গোত্র তার নেতৃত্ব মেনে নেয়। সে সর্বশেষ হিমইয়ারী রাজা। তাকে ইউসুফ নামে অভিহিত করা হয়। দীর্ঘকাল তিনি ওখানে রাজত্ব করেন। হযরত ঈসা (আঃ)-এর দীন অনুসারী আসমানী কিতাব ইঞ্জিল আমলকারী কতক লোক তখন নাজরানে বসবাস করছিল। তাদের জনৈক ধর্মগুরু ছিল। তার নাম আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ছামুর।

অতঃপর ইব্‌ন ইসহাক (র) নাজরানবাসীগণ কিভাবে খ্রিস্ট ধর্ম গ্ৰহণ করল, তার বর্ণনা দেন। তারা ফাইমিউন নামের জনৈক খৃষ্ট ধর্মাবলম্বী লোকের হাতে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। তিনি একজন নিষ্ঠাবান ইবাদতকারী লোক ছিলেন। সিরিয়ার কোন এক এলাকায় ছিল তার আস্তানা। তার দেয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হত। সালিহ নামে এক লোক তার সাথী হয়। রবিবারে দুজনে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। সপ্তাহের অবশিষ্ট দিনগুলোতে ফাইমিউন নিজ ঘরের মধ্যে আমল করতেন। রোগী ও বিপদগ্ৰস্ত লোকদের জন্যে তিনি দোয়া করতেন। তার দোয়ার বরকতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সুস্থ ও বিপদ মুক্ত হত।

একদিন এক বেদুইন তাদের দুজনকে বন্দী করে নিয়ে যায় এবং নাজরান প্রদেশে নিয়ে তাদেরকে বিক্রি করে দেয়। যে ব্যক্তি ফাইমিউনকে খরিদ করেছিল সে লক্ষ্য করে যে, ফাইমিউন যে ঘরে নামায আদায় করে তার রাত্রিকালীন নামাযের সময় সমগ্র ঘর জ্যোতিতে জ্যোতির্ময় হয়ে উঠে। এতে সে অবাক হয়। সে যুগে নাজরানের লোকজন একটি সুদীর্ঘ খেজুর গাছের পূজা করত। মহিলাদের গহনা-পত্ৰ এনে তারা ঐ গাছে ঝুলিয়ে দিত এবং ওখানে অবস্থান করতো।

একদিন ফাইমিউন তার মালিককে বলেন, আমি যদি আল্লাহ তাআলার দরবারে এই গাছটি ধ্বংসের জন্যে দোয়া করি এবং এটি ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে কি আপনারা একথা মেনে নিবেন। যে, আপনারা যে মতবাদ পোষণ করেন তা বাতিল? মালিক বলল, অবশ্যই আমরা তা মেনে নিব।

অতঃপর সে নাজরানবাসীদেরকে ফাইমিউনের নিকট একত্রিত করে। ফাইমিউন নামাযে দীড়ান এবং খেজুর বৃক্ষ ধ্বংসের জন্যে আল্লাহর নিকট দোয়া করেন। আল্লাহ্ তাআলা প্রচণ্ড ঝড় প্রেরণ করেন। প্রচণ্ড ঝঞা এসে গাছটি উপড়ে ফেলে দেয়। এই প্রেক্ষিতে নাজরানের অধিবাসীগণ খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয় এবং তিনি তাদেরকে আসমানী কিতাব ইনজীল ভিত্তিক শরীয়ত পালনে উৎসাহিত করেন। এভাবেই তারা খ্রিষ্টধর্ম পালন করে আসছিল। অবশেষে বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্ট ধর্মে যে আনাচার প্রবেশ করে তাদের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটেই আরব অঞ্চল নাজরানে খ্রিষ্ট ধর্মের সূত্রপাত হয়।

এরপর ইব্‌ন ইসহাক (র) ফাইমিউনের হাতে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ছামুরের খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ এবং ফাইমিউন ও তার অনুসারীদেরকে অগ্নিকূপে নিক্ষেপ করে রাজা যু-নুওয়াস কিভাবে হত্যা করে এসব বিবরণ উল্লেখ করেছেন।

ইব্‌ন হিশাম বলেন, ওদের জন্যে যে অগ্নিকুপ খনন করা হয়েছিল সেটি ছিল আয়তকার গর্তের ন্যায়। ঐ গর্তে আগুন জ্বালানো হয়েছিল এবং ওদেরকে ঐ আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। অবশিষ্ট লোকদেরকে হত্যা করা হয়। তখন প্রায় বিশ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। ইসরাঈলীদের ঘটনা প্রসংগে আমরা তা উল্লেখ করেছি। আমাদের তাফসীর গ্রন্থে সূরা বুরুজেও তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। সকল প্ৰশংসা আল্লাহর।

ইয়ামানের রাজত্ব হিময়ার গোত্র থেকে সুদানী হাবশীদের কবলে আসা প্ৰসঙ্গ

পূর্বোল্লেখিত দুই জ্যোতিষী, শাক এবং সাতীহ যেমন বলেছিলেন তা-ই ঘটলো। বস্তৃত যু-নাওয়াসের আক্রমণে সকল নাজরানবাসী ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মাত্র একজন লোক প্ৰাণে বেঁচেছিল। তার নাম দাওস যুছালাবান। সে ছিল ঘোড়সওয়ার বালুকাময় রাস্তায় ঘোড়া ছুটিয়ে সে পালিয়ে যায়। শত্ৰুগণ তাকে ধরতে ব্যর্থ হয়। সে ছুটতে ছুটতে রোমান সম্রাট কায়সারের দরবারে গিয়ে উপস্থিত হয়। যু-নুওয়াস ও তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে সে তার কাছে সাহায্য কামনা করে এবং তাদের অত্যাচার নির্যাতনের বিবরণ প্ৰদান করে।

কায়সার ছিলেন তাদের মতই খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী। তিনি বললেন, আমার এখান থেকে তোমার জন্যে লিখে দিচ্ছি। সেও খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী এবং তার রাজ্য তোমার রাজ্যের কাছাকাছি। অতঃপর তিনি আবিসিনীয় রাজাকে দাওসকে সাহায্য করতে যু-নুওয়াসের অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে নির্দেশ দিলেন। রোমান সম্রাটের পত্র নিয়ে নাজাসীর নিকট উপস্থিত হলো। তিনি তাকে সাহায্য করার জন্যে ৭০,০০০ হাবশী সৈন্য প্রেরণ করলেন এবং আরয়াত নামের এক ব্যক্তিকে সেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত করলেন। সেনাপতি সৈন্যদলের মধ্যে আবরাহা আশরামও ছিল। সেনাপতি আরুয়াত তার সেনাবাহিনী নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইয়ামানের সমুদ্রতীরে ঘাটি স্থাপন করে। দাওস তার সাথেই ছিল। ওদিক থেকে হিময়ারী লোকজন ও ইয়ামানের অনুগত গোত্রগুলো নিয়ে মুকাবিলা করার জন্যে এগিয়ে আসে অত্যাচারী রাজা যু-নুওয়াস। উভয় পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। অবশেষে যু-নুওয়াস ও তার সৈন্যগণ পরাজিত হয়। k

স্বপক্ষীয় সৈন্যদের এ শোচনীয় পরিণতি দেখে যু-নুওয়াস সমুদ্রের দিকে তার ঘোড়া হাঁকায় এবং ঘোড়াকে চাবুকাঘাত করে তীব্ৰ গতিতে এসে সমুদ্রে ঝাপ দেয়। সমুদ্রের খর স্রোত তাকে তলদেশে ডুবিয়ে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত এভাবে তার মৃত্যু হয়। সেনাপতি আরয়াত বিজয়ীবেশে ইয়ামান প্রবেশ করে এবং রাজত্বের অধিকারী হয়। সমসাময়িককালে, সংঘটিত এসব আশ্চর্যজনক ঘটনা সম্পর্কে রচিত আরবদের কতক কবিতা ইব্‌ন ইসহাক এ প্রসংগে উল্লেখ করেছেন। এগুলো যেমন বিশুদ্ধ ও অলংকার সমৃদ্ধ, তেমনি শ্রুতিমধুর। আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে এবং পাঠকগণ বিরক্তি বোধ করবেন। এ আশংকায় আমরা সেগুলো উল্লেখ থেকে বিরত রইলাম।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আরিয়াত বেশ কয়েক বছর ইয়ামানে একচ্ছত্রভাবে রাজত্ব করে। তারপর তার অধীনস্থ সৈনিক আবরাহা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। হাবশী সৈনিকগণ অতঃপর দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল আবরাহার পেছনে এবং অপর দল আরিয়াতের পেছনে সমবেত হয়। উভয় পক্ষ যুদ্ধের জন্যে অগ্রসর হয়। উভয় দল যখন প্রায় মুখোমুখি তখন আবরাহা এই বলে আরয়াতকে চিঠি লিখে যে, হাবশীদের এক দলকে অপর দলের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে এবং যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়ে ক্ৰমান্বয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া আপনার জন্যে সমীচীন নয়। বরং এক কাজ করুন। আমরা দুজনে দ্বন্দুযুদ্ধে অবতীর্ণ হই। আমাদের মধ্যে যে জয়ী হবে হাবশী সৈন্যরা তার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে। উত্তরে আরয়াত বলে যে, তুমি সঙ্গত কথাই বলেছ। এরপর আবরাহা যুদ্ধের ময়দানে বেরিয়ে আসে। সে ছিল একজন খাটো হৃষ্টপুষ্ট ও খ্রিষ্ট ধর্মানুসারী ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে এল আরয়াত। সে ছিল সুদর্শন, দীর্ঘাঙ্গী ও মোটা মানুষ। তার হাতে ছিল একটি বর্শা। আবরাহার পেছনে আতৃন্দা নামে এক যুবক ছিল সে আবরাহার পেছনে দিক পাহারী দিত। আরয়াত তার বর্শা নিক্ষেপ করে আবরাহার মাথার খুলি লক্ষ্য করে। সেটি গিয়ে পড়ে তার কপালে। কেটে কেটে ক্ষত-বিক্ষত হয় তার ভ্র, চোখ, নাক ও ঠোট। এজন্যেই তার আবরাহা আশরাম তথা ঠোট কাটা আবরাহা নাম পড়ে যায়।

আবরাহার পশ্চাত দিক থেকে তার প্রহরী আতৃদা আরয়াতের উপর আক্রমণ চালায় এবং তাকে হত্যা করে। ফলে আরয়াতের অনুগামী সৈন্যরা আবরাহার দলে যোগ দেয়। ইয়ামানে সকল হাবশী সৈন্য আবরাহার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আবরাহা আরয়াতের স্থলাভিষিক্ত হয়। আবিসিনিয়ার রাজা নাজাশীর দরবারে এই সংবাদ পৌছে। তিনি আবরাহার উপর ভীষণ ক্ষুদ্ধ হয়। তিনি বলেন, সে আমার নিযুক্ত সেনাপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং আমার অনুমতি ব্যতীত তাকে হত্যা করেছে! তিনি শপথ করলেন যে, আবরাহার রাজ্য পদানত না করে এবং তার মাথা ন্যাড়া না করে তিনি তাকে ছাড়বেন না। নাজাশীর এই ক্রুদ্ধ মন্তব্য ও শপথের সংবাদ পৌঁছে যায় আবরাহার নিকট। সে নিজে তার মাথা ন্যাড়া করে ফেলে এবং এক থলে ভর্তি ইয়ামানের মাটি নেয়। তারপর তা নাজাশীর নিকট প্রেরণ করে। সাথে এ মর্মে চিঠি লিখে যে, মহারাজ! সেনাপতি আরয়াত আপনার আজ্ঞাবহ ছিল। আমিও আপনার আজ্ঞাবহ। আপনার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। উভয়ের কর্ম তৎপরতা ছিল আপনার প্রতি আনুগত্য নির্ভর। তবে এখানকার হাবশীদের নেতৃত্বের জন্যে আমি তার চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী উপযুক্ত ও দক্ষ।

মহারাজের শপথের কথা শুনে আমি নিজে আমার মাথা ন্যান্ডু করে ফেলেছি, এবং আমার রাজ্যের এক থলে মাটি রাজদরবারে প্রেরণ করেছি, যাতে তা আপনার পদতলে রাখতে পারেন। তাহলে আমার সম্বন্ধে মহারাজ যে শপথ করেছেন সে শপথ পূর্ণ হবে।

পত্রটি পেয়ে নাজ্জাশী আবরাহার প্রতি সন্তুষ্ট হন। তিনি তার নিকট লিখে পাঠান যে, আমার পরবর্তী নির্দেশ আসা পর্যন্ত তুমি ইয়ামান রাজ্যে রাজত্ব করে যাও। এভাবে আরবাহা ইয়ামানের শাসন ক্ষমতার অধিষ্ঠিত হয়।

কাবা ধ্বংসের উদ্দেশ্যে মক্কায় আবরাহার হাতি বাহিনী প্রেরণ

আল্লাহ তাআলা বলেন :

তুমি কি দেখনি, তোমার প্রতিপালক হাতিওয়ালাদের প্রতি কী করেছিলেন? তিনি কি ওদের কৌশল ব্যর্থ করে দেননি? ওদের বিরুদ্ধে তিনি বাকে বাকে পাখি প্রেরণ করেন। সেগুলো ওদের উপর পাথুরে কংকর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি ওদেরকে ভক্ষিত খড়ের মত করেন।

কথিত আছে যে, যোহহাকের হত্যাকারী আফৱীদূন ইব্‌ন আছাফিয়ান সর্বপ্রথম হাতিকে পোষ মানিয়েছিলেন। তাবারী (র) এরূপ বলেছেন। ঘোড়ার পিঠে জীনও তিনিই প্রবর্তন করেন। অবশ্য সর্বপ্রথম সে ব্যক্তি ঘোড়াকে পোষ মানায় এবং ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয় সে হল ফাতাহা মূরছ। তিনি গােটা পৃথিবীতে রাজত্বকারী তৃতীয় সম্রাট। কারো কারো মতে, যে সর্বপ্রথম ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন। হযরত ইবরাহীম (আ)-এর পুত্র ইসমাঈল (আঃ)। এর ব্যাখ্যা এমনও হতে পারে যে, আরবদের মধ্যে সর্বপ্রথম ঘোড়ার পিঠে আরোহণকারী ছিলেন। হযরত ইসমাঈল (আ)। আল্লাহই ভাল জানেন।

কথিত আছে যে, হাতি বিশাল দেহী জন্তু হওয়া সত্ত্বেও বিড়াল দেখে ভড়কে যায়।

করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের সময় বিড়াল দেয়া হলে সেগুলোর ভয়ে হাতি বাহিনী ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়।,

ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, অতঃপর আবরাহা সানআ নগরীতে কুলায়স নামে একটি গীর্জা নির্মাণ করে। ঐ যুগে এমন উন্নতমানের প্রাসাদ দ্বিতীয়টি ছিল না। সে নাজ্জাশীর নিকট এ মর্মে পত্র লিখে যে, আপনার জন্যে আমি একটি গীর্জা নির্মাণ করেছি। আপনার পূর্বে কোন রাজার জন্যে এমন প্রাসাদ নির্মিত হয়নি। আরবদের হজ্জ এখানে স্থানান্তরিত না করা পর্যন্ত আমি ক্ষান্ত হব না।

সুহায়লী বলেন, এই ঘূণ্য উপাসনালয় নির্মাণ করতে গিয়ে আবরাহা ইয়ামানের অধিবাসীদেরকে বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করেছে। কেউ সূর্যোদয়ের পূর্ব থেকে কাজ শুরু না করলে সে তার হাত কেটে ফেলত। বিলকীসের শাহী প্রাসাদ থেকে শ্বেত পাথর, মর্মর ও অন্যান্য অমূল্য রত্নাবলী খুলে এনে ঐ গীর্জায় সংযোজন করে। তবে মিম্বার ছিল গজদণ্ড ও আবলুস কাঠে তৈরী। এর ছাদ ছিল অনেক উঁচু আয়তন, বিশাল বিস্তৃত।

আবরাহা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর হাবশীগণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এরপর কোন ব্যক্তি ঐ গীর্জার আসবাব পত্র কিংবা ঘর দরজা খুলে নিতে চাইলে সে জিনদের আক্রমণের শিকার হত। কারণ ঐ গীর্জা নির্মিত হয়েছিল দুটো প্রতিমার নামে। প্রতিমাণ দুটি ছিল আয়ব ও তার স্ত্রীর। এ দুটো প্রতিমার প্রত্যেকটির উচ্চতা ছিল ৬০ গজ করে। অতঃপর ইয়ামানবাসিগণ গীর্জাটিকে ঐ অবস্থায় রেখে দেয়। প্রথম আব্বাসী খলীফা। সাফফাহর- এর সময় পর্যন্ত সেটি ঐ অবস্থায়ই ছিল। সাফফাহ একদল সাহসী, বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী গুণী লোক পাঠালেন। তারা একে একে সকল পাথর খুলে নিয়ে সেটি ভেঙ্গে ফেলেন। অতঃপর তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।

ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, নাজাশীর প্রতি প্রেরিত আবরাহার পত্র সম্পর্কে আরবদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কিনানা গোত্রের জনৈক লোক একথা শুনে ভীষণভাবে ক্ষেপে যায়। যারা যুদ্ধ নিষিদ্ধ মাসগুলোকে যুদ্ধ সিদ্ধ মাসের দিকে ঠেলে দিতে এসেছিল, সে ঐ দলভুক্ত। (Akur1 or a ১৬:৩১, ……..।। ( ….।) এই যে, মাসকে পিছিয়ে দেয়া কেবল কুফরীই বৃদ্ধি করে (৯ তওবা ৩৭)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, অতঃপর কিনান বংশীয় লোকটি পথে বের হয়। সে এসে পৌঁছে উপরোক্ত কুলায়স গীর্জায়। যে সকলের আগোচরে গীর্জার ভেতরে মলত্যাগ করে। এরপর বের হয়ে সে নিজ দেশে ফিরে আসে। এ সংবাদ আবরাহার কানে পৌছে। কে এই অঘটন। ঘটিয়েছে সে জানতে চায়। তাকে জানানো হয় যে, মক্কায় অবস্থিত কাবা গৃহের যারা হজ্জ করে তাদের একজন এ কর্মটি করেছে। আপনি আরবদের হজকে ঐ ঘর থেকে ফিরিয়ে এ ঘরের দিকে আনবেন শুনে সে রেগে এমনটি করেছে। সে বুঝতে পেরেছে যে, এ ঘরটি হজ্জ করার উপযুক্ত নয়।

এ কথা শুনে আবরাহা ক্ৰোধে ফেটে পড়ে। সে শপথ করে, মক্কা গিয়ে কাবা গৃহ ধ্বংস করবেই। সে হাবশীদেরকে মক্কা গমনে প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়। হাতি বাহিনীসহ সে সদল বলে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা করে। আরবগণ তার অগ্রাভিযান সম্পর্কে অবগত হয়। তারা এটিকে ভয়ানক বিপদ মনে করে এবং তাতে বিচলিত হয়ে পড়ে। আল্লাহর সম্মানিত ঘর কাবা শরীফ ধ্বংসের কথা শুনে তারা আবরাহার বিরুদ্ধে জিহাদ করা অনিবাৰ্য জ্ঞান করে।

ইতিমধ্যে ইয়ামানবাসী রাজবংশীয় ও সন্ত্রান্ত এক লোক মক্কায় আগমন করে। তার নাম ছিল যুনর। সে তার সম্প্রদায় ও আরবদেরকে আবরাহার বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহণের আহবান জানায়। কারণ সে আল্লাহর ঘর ধ্বংসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। যারা সাড়া দেবার তারা তার তাকে সাড়া দেয়। তারা আবরাহায় সম্মুখে প্রতিরোধ সৃষ্টি করে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যায়। যু-নফর ও তার সাখীগণ পরাজিত হয়। বন্দী অবস্থায় যু-নফরকে নেয়া হয় আবরাহর নিকট। আবরাহা যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয় তখন সে বলে,  মহারাজ! আমাকে হত্যা করবেন না। আমাকে হত্যা করার চেয়ে আমাকে জীবিত রাখা হযরত আপনার জন্যে, অধিক কল্যাণকর হবে। ফলে সে হত্যা থেকে রেহাই পায় এবং কারারুদ্ধ থাকে। আধয়াহ ছিল অত্যন্ত ধৈর্যশীল লোক। অতঃপর সে তার উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে সম্মুখে অগ্রসর হয়। খাছ আমি এলাকায় পৌঁছে সে বাধাপ্রাপ্ত হয়। শাহরান ও নাহিস গোত্রদ্বয় এবং অনুগামী আরবদেরকে নিয়ে তার নুফ্যারল ইব্‌ন হাবীব খাছআমী তার গতিরোধ করে। সেখানে যুদ্ধ হয়। আবরাহা তাকে পরাজিত করে। বন্দী অবস্থায় তাকে আবরাহার নিকট নিয়ে আসা হয়। আবরাহা যখন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয় তখন সে বলে, মহারাজ! আমাকে হত্যা করবেন না। আমি আপনাকে আরবের পথগুলো চিনিয়ে দিব। আপনার প্রতি আমার খাছতমামী শাহরান ও নাহিস গোত্ৰ দ্বয়-এর আনুগত্যের প্রতীকরূপে এই আমি আমার দুহাত আপনার সমীপে নিবেদন করছি। রাজা তাকে মুক্তি দেয় এবং সে রাজাকে আরবের পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। তায়েফ পৌঁছলে ছাকীফ গোত্রের একদল লোক নিয়ে তাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়, মাসউদ ইব্‌ন মুতাব (ইব্‌ন মালিক কবি ইব্‌ন আমর ইব্‌ন সাদ ইব্‌ন আওফ ইব্‌ন ছাকীফ) তারা বলে মহারাজ! আমরা আপনার গোলাম। আপনার নির্দেশ পালনকারী ও আনুগত্য প্রদর্শনকারী আমরা আপনার বিরোধিতা করব না।

আপনি যে উপাসনালয় ধ্বংসের উদ্দেশ্যে যাত্ৰা করেছেন সেটি আমাদের উপাসনালয় নয়। অর্থাৎ সেটি লাত দেবীর উপাসনালয় নয়। আপনি যাচ্ছেন মক্কায় অবস্থিত উপাসনালয় ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। আপনাকে ঐ উপাসনালয়ের পথ দেখাবার লোক আমরা আপনার সাথে দিচ্ছি। অতঃপর সে তাদেরকে অতিক্রম করে এগিয়ে যায়। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, লাত হল তায়েফে অবস্থিত তাদের একটি উপাসনালয়। তারা সেটিকে কাবাকে সম্মান করার ন্যায়ই সম্মান করত। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, অতঃপর তারা কাবারই পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্যে আবু রেগালকে তার সাথে প্রেরণ করে। আবু রেগালসহ আবরাহা বাহিনী সম্মুখের দিকে অগ্রসর হয়ে মাগমাস নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করে। সেখানে আবু রেগালের মৃত্যু হয়।

আরবগণ আবু রেগালের কবরে পাথর ছুড়ে। মাগমাসে যে কবরে পাথর নিক্ষেপ করা হয় সেটি এই আবু রেগালের কবর। ইতিপূর্বে ছামুদ সম্প্রদায়ের আলোচনায় এসেছে যে, আবু রেগাল তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। সে হারাম শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করে, নিজেকে রক্ষা করত। একদিন সে হারাম শরীফ এলাকা ছেড়ে বের হয়। তখনই একটি পাথর তাকে আঘাত করে এবং তাতে তার মৃত্যু হয়। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তার নিদর্শন হল তার সাথে স্বর্ণের দুটো কাঠি- দাফন করা হয়েছে। সাহাবীগণ ঐ কবর খনন করেন এবং সেখানে স্বর্ণের দুটো কাঠি পান। তিনি বলেন, আবু রেগাল ছাকীফ গোত্রের আদি পুরুষ।

আমি বলি, এই বর্ণনা ও ইব্‌ন ইসহাকের বর্ণনার মধ্যে এভাবে সমন্বয় করা যায় যে, আবরাহার সাখী আবু রেগাল ছামুদ সম্প্রদায়ের আবু রেগালের অধঃস্তন পুরুষ। আলোচ্য আবু রেগাল ও তার পূর্বপুরুষ আবু রেগালের নাম অভিন্ন। উভয় আবু রেগালের কবরেই লোকজন পাথর ছুড়ে মারতো। আল্লাহই ভাল জানেন।

কবি জায়ীর বলেন :

ফরযদকের মৃত্যু পরে তার কবরে পাথর ছুড়ে মারবে।

যেমনটি পাথর মেরেছিল আবু রেগালের কবরে।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আবরাহা মাগমাসে এসে আসওয়াদ ইব্‌ন মাকসুদ নামের জনৈক হাবশী লোককে একদল অশ্বারোহীসহ মক্কায় প্রেরণ করে। তারা মক্কায় আসে এবং কুরায়শদের তেহামা অঞ্চলে লুটপাট চালায়। তারা সেখানকার কুরায়শ ও অন্যান্য গোত্রের সমস্ত ধন সম্পদ নিয়ে আবরাহার নিকট পেশ করে। লুষ্ঠিত মালামালের মধ্যে আব্দুল মুত্তালিব ইব্‌ন হাশিমের ২০০ উট ছিল। তিনি ছিলেন কুরায়শদের দলপতি। এতে কুরায়শ, কিনানা হুযায়ল এবং হারাম শরীফে অবস্থানকারী অন্যান্য গোত্রের লোকজন আবরাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ায় সংকল্প করে। পরে তার বিরুদ্ধে বিজয় লাভে সক্ষম হবে না বুঝতে পেরে তারা এ পরিকল্পনা ত্যাগ করে।

এদিকে আবরাহা হিনাতা হিমায়ারী নামের এক লোককে মক্কায় প্রেরণ করে। সে তাকে বলে যে, তুমি মক্কায় গিয়ে উক্ত নগরীর নগরপতিকে খুঁজে বের করবে এবং তাকে বলবে যে, আমরা আপনাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমরা এসেছি। ঐ উপাসনালয়টি ধ্বংস করার জন্যে। ঐ উপাসনালয় রক্ষাকল্পে আপনারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করেন, তবে আপনাদের রক্তপাত আমাদের প্রয়োজন নেই। তাদের সর্দার আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করতে সম্মত হলে তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। হিনাত মক্কায় এসে সেখানকার নগরপতিকে তা জিজ্ঞেস করে। তাকে জানানো হয় যে, আব্দুল মুত্তালিব। এ নগরপতি। সে আব্দুল মুত্তালিবের সাথে সাক্ষাত করে এবং আবরাহা যা বলতে নির্দেশ দিয়েছিল তা বলে। তখন আব্দুল মুত্তালিব বলেন, আল্লাহর কসম আমরা আবরাহার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাই না। আমাদের সেই শক্তি নেই। এটি আল্লাহর সম্মানিত গৃহ এবং আল্লাহর খলীল ইবরাহীম (আ)-এর গৃহ। আব্দুল মুত্তালিব এটা বা এ মর্মের কোন কথা তিনি বলেছিলেন। আরও বলেন, আল্লাহ যদি আবরাহার হাত থেকে এ গৃহকে রক্ষা করেন, তবে তা তারই সম্মানিত স্থান ও গৃহ আর তিনি যদি আবরাহাকে তা করতে দেন, তবে আল্লাহর কসম, তাকে বাধা দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।

হিনাতা বলল, ঠিক আছে, আপনি আমার সাথে তার নিকট চলুন। তিনি আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছেন। হিনাতার সাথে আব্দুল মুত্তালিব রওয়ানা হলেন। তার কয়েকজন ছেলেও তার সাথে যায়। তিনি আবরাহার সৈন্যবাহিনীর নিকট এসে ওদের কাছে যুনফর আছে কি-না জানতে চান। যুনািফর ছিল আবদুল মুত্তালিবের বন্ধু। অনুমতি নিয়ে আবদুল মুত্তালিব গিয়ে যুনফরের বন্দীখানায় পৌঁছেন। তিনি বললেন, যুনফর! আমাদের উপর যে বিপদ এসেছে, তা থেকে মুক্তি লাভের কোন পথ তোমার জানা আছে কি? সে বলল, রাজার হাতে বন্দী সকাল-সন্ধ্যায় মৃত্যুর প্রতীক্ষারত একজন মানুষের কী-ই বা করার থাকতে পারে?

আপনাদেরকে বিপদ থেকে উদ্ধার করার কোন ক্ষমতা আমার নেই। তবে আনিস নামে জনৈক ব্যক্তি আছে, সে হস্তি বাহিনীর পরিচালক এবং আমার বন্ধুও বটে। আমি তার নিকট সংবাদ পাঠাব এবং আপনাকে সাহায্য করার অনুরোধ জানাব। তার নিকট আপনার গুরুত্ব তুলে ধরব। আমি তাকে অনুরোধ করব, সে যেন আপনাকে রাজার নিকট নিয়ে যায়। অতঃপর আপনি সরাসরি রাজার সাথে কথা বলবেন। সক্ষম হলে সে রাজার নিকট আপনার জন্যে সুপারিশ করবে। এটা শুনে আবদুল মুত্তালিব বলেন, এতটুকুই আমার জন্যে যথেষ্ট। যুনফর আনীসের নিকট এ বার্তা নিয়ে লোক পাঠায় যে, আবদুল মুত্তালিব কুরায়শ বংশের নেতা এবং মক্কার যম যম কৃপের তত্ত্বাবধানকারী। তিনি সমতলের লোকজন এবং পাহাড়ের পশুদেরকে আহাৰ্য দিয়ে থাকেন। রাজা তার ২০০টি উটি ছিনিয়ে এনেছেন। রাজার সাথে দেখা করার জন্যে তুমি তাকে অনুমতি নিয়ে দাও এবং যথাসম্ভব তাঁর উপকার করো। আনীস বলল, ঠিক আছে, আমি তা-ই করব।

আনীস তখন আবরাহার সাথে আলাপ করে। সে বলে, মহারাজ! এই কুরায়শ প্রধান আপনার দ্বারে উপস্থিত। আপনার সাথে দেখা করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি মক্কার যমযম কৃপের তত্ত্বাবধায়ক। তিনি সমতলে লোকজনের এবং পাহাড়ে পশুদের আহার্যের ব্যবস্থা করে থাকেন। তাঁকে আপনার নিকট আসার অনুমতি দিন। যাতে তিনি তাঁর সমস্যার কথা আপনাকে

জানাতে পারেন। আবরাহা অনুমতি দিল। আবদুল মুত্তালিব ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন ও সুপুরুষ।

আবরাহা তাকে দেখে তার অবস্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে আৗচ করতে পারলো এবং তাকে মেঝেতে বসতে দিতে কুষ্ঠাবোধ করল। অন্যদিকে আবদুল মুত্তালিবকে রাজ সিংহাসনে বসিয়েছে হাবশীগণ এটা দেখুক তাও তার মনপূত ছিল না। ফলে আবরাহা তার সিংহাসন থেকে নেমে বিছানায় বসে এবং আবদুল মুত্তালিবকে পাশে বসায়। তারপর তার দোভাষীকে বলে, তাঁর সমস্যার কথা পেশ করতে বল। দোভাষী আবদুল মুত্তালিবকে তাঁর কথা পেশ করতে বললে তিনি বলেন, আমার যে দুশটি উটি রাজার নিকট নিয়ে আসা হয়েছে সেগুলো ফেরত দেয়া হোক।

আবরাহা তার দোভাষীকে বলল, আমার এ বক্তব্য তাকে বল যে, আপনাকে দেখে আমি খুব খুশী হয়েছিলাম। কিন্তু আপনার কথা শুনে আমি হতাশ হয়েছি। হায়! আপনি আমার হাতে আসা এই সামান্য দুশোটি উটের কথা বলছেন। অথচ আপনার নিজের ধর্মের প্রতীক এবং আপনার পূর্ব-পুরুষের ধর্মের প্রতীক উপাসনালয়টি সম্পর্কে কিছুই বললেন না। আমরা তো সেটি ধ্বংস করতে এসেছি। সেটি সম্পর্কে আপনি কি আমাকে কিছুই বলবেন না? আবদুল মুত্তালিব বললেন, আমি তো কেবল উটেরই মালিক। ঐ গৃহের একজন মালিক আছেন। তিনিই সেটি রক্ষা করবেন। আবরাহা বলে, তিনি তো আমার হাত থেকে সেটি রক্ষা করতে পারবেন। না। আবদুল মুত্তালিব বলেন, সেটি আপনার ও তার ব্যাপার। তখন আবরাহা আবদুল মুত্তালিবের উটগুলো ফেরত দিয়ে দেয়।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, বর্ণিত আছে যে, আবদুল মুত্তালিবের সাথে বনী বকর গোত্রের প্রধান ইয়ামার ইব্‌ন নাকাহু (ইব্‌ন আদী ইব্‌ন দায়ল ইব্‌ন বকর ইব্‌ন আবদ মানাত ইব্‌ন কিনানাহ) এবং হুযায়ল গোত্রের প্রধান কুওয়ালিদ ইব্‌ন ওয়াছিলা অববাহার নিকট গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রস্তাব করেছিলেন যে, আবরাহা যদি তাদের এখান থেকে চলে যায় এবং আল্লাহর ঘর ধ্বংস না করে তৰে তারা তাকে তিহামাহ্ আঞ্চলের সমগ্ৰ ধন সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দিয়ে দিবেন। আবরাহা তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। মূলত তা কতটুকু সত্য তা আল্লাহই ভাল জানেন।

উপস্থিত হন এবং সকল বিষয় তাদেরকে অবহিত করেন। তিনি তাদেরকে মক্কা ছেড়ে পাহাড়ের উপর নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর আবদুল মুত্তালিব নিজে কুরায়শদের একটি জামাতকে সাথে নিয়ে কাবা শরীফের দরজার কড়া ধরে দাঁড়ান এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করতে থাকেন। তাঁরা আবরাহা ও তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন।

কাবা শরীফের দরজা ধরে আবদুল মুত্তালিব বলেন :

لأهم أن العبد يمنع رحلة فأمنع رحالك হে আল্লাহ! বান্দা তার নিজের ঘরের হেফাজত করে সুতরাং আপনি আপনার ঘর রক্ষা

করুন।

لا يغلبن صليبهم – ومحالهم غدوا محالك আগামী সকালে যেন তাদের ক্রুশ চিহ্ন কোনক্রমেই বিজয়ী না হয়। আর আপনার গৃহের উপর তাদের গৃহ প্রাধান্য না পায়।

ان کنت تارکهم وقبل – تنا فأمر ما بد الك আর আপনি যদি আমাদের কেবলাকে তাদের হাতে ছেড়েই দেন। তবে আপনার যা ইচ্ছা!

তাই করুন। ইব্‌ন হিশাম বলেন, আবদুল মুত্তালিব। এ কবিতাগুলো বলেছিলেন বলে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হয়েছে।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, এরপর আবদুল মুত্তালিব কাবা শরীফের দরজার কড়া ছেড়ে দিয়ে কুরায়শদেরকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং আবরাহা ও তার সৈন্যরা কী করে, তা অবলোকন করতে থাকেন।

পরদিন সকালে আবরাহা মক্কা প্রবেশের প্রস্তুতি নেয়। তার হাতি বাহিনীকে সজ্জিত করে এবং সৈন্যদেরকে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত করে। তার হাতির নাম ছিল মাহমুদ। হাতিটিকে মক্কা অভিমুখী করলে মুহুর্তে নুফ্যােয়ল ইব্‌ন হাবীব সেখানে উপস্থিত হয়। সে হাতিটির পাশে এসে দাঁড়ায়। হাতির কান ধরে সে বলে, হে মাহমুদ! তুমি মাটিতে বসে যাও এবং যেদিক থেকে এসেছে সোজা সে দিকে ফিরে যাও। কারণ, তুমি আল্লাহর সম্মানিত শহরে এসেছে। এই বলে সে হাতিটির কান ছেড়ে দেয়। হাতিটি হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। সুহায়লী বলেন, হাতি মাটিতে পড়ে যায়। কারণ, হাতি হাঁটু গেড়ে বসতে পারে না। অবশ্য, কেউ কেউ বলেন যে, এক প্রজাতির হাতি উটের ন্যায় হাঁটু গেড়ে বসতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে নুফ্যােয়ল ইব্‌ন হাবীব দৌড়ে গিয়ে পাহাড়ে ওঠে। আবরাহার সৈন্যরা হাতিটিকে দাঁড় করানো জন্যে প্রহার করতে থাকে। হাতি কোন মতেই উঠলো না, তারা তার মাথায় কুঠারাঘাত করে। তবুও সে উঠলো না। এরপর তারা তার চামড়ায় বঁকা আকশি ঢুকিয়ে দেয় এবং চামড়া ছিড়ে ফেলে তারপরও সে উঠলো না। তারা এবার ইয়ামানের দিকে তার মুখ ফিরিয়ে দেয়। কালবিলম্ব না করে হাতিটি দাঁড়িয়ে যায় এবং দ্রুত হাঁটতে শুরু করে। এরপর তারা তাকে সিরিয়ার দিকে মুখ করে দেয়। সে ঐ দিকে দ্রুত হাঁটতে থাকে। এরপর তারা তাকে পূর্বমুখী করে দেয়। সে একইভাবে দ্রুত সেদিকে হাঁটতে থাকে। এবার তারা পুনরায় তাকে মক্কা অভিমুখী করে দেয়। সে পুনরায় মাটিতে বসে পড়ে। আল্লাহ তাআলা সমুদ্রাঞ্চল থেকে তাদের প্রতি এক ঝাক পাখী প্রেরণ করেন। এগুলো ছিল এক প্রকার ছোট পাখী। প্রতিটি পাখী তিনটি করে কঙ্কর নিয়ে এসেছিল। একটি ঠোঁটে আর দুটো দু পায়ে। কঙ্করগুলো ছিল ছোলা ও মশুর ডালের ন্যায়। যার উপর কঙ্কর পড়লো সে-ই ধ্বংস হয়ে গেল।

অবশ্য আবরাহার সকল সৈন্যের গায়ে কঙ্কর লাগেনি। যাদের গায়ে তা পড়েনি তারা পালিয়ে প্ৰাণে বেঁচে যায়। যে পথে এসেছিল তারা সে পথেই ফিরে যেতে থাকে। ইয়ামানের পথ চিনিয়ে দেয়ার জন্যে তারা নুফােয়ল ইব্‌ন হাবীবকে তালাশ করতে থাকে। এ প্রসঙ্গে

তুমি কি আমাদের পক্ষ থেকে অভিনন্দন পাওনি হে রুদায়না? আমরাতো তোমাদেরকে

সাদর সম্ভাষণ জানিয়েছি।

হে রাব্দীনা! মুহাসসাব অঞ্চলে আমরা যা দেখেছি তুমি যদি তা দেখতে তবে তুমি সে দিকে

ফিরে তাকাতে না।

(১) বঁ1, 4 অর্থ বিশ্বাসঘাতকতা।

তখন তুমি আমার ওযর গ্রহণ করতে এবং আমার কাজের প্রশংসা করতে। যা হারিয়ে গেছে তাঁর জন্যে তুমি আক্ষেপ করতে না।

যখন আমি পক্ষীকুল দেখেছি তখন আমি আল্লাহর প্রশংসা করেছি। আবার আমাদের উপর পাথর বর্ষিত হয় নাকি তার ভয়ও করেছি।

সবাই নুফায়লকে খোজ করছে যেন আমার নিকট সকল হাবশী লোকের পাওনা রয়েছে।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, অতঃপর আবরাহার সৈন্যরা সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে যে যেদিকে পারে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে লাগল। পক্ষীকুলের নিক্ষিপ্ত কঙ্কর আবরাহার দেহেও বিদ্ধ হয়। তারা নিজেদের সাথে আবরাহাকেও টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু কঙ্কর বিদ্ধ হওয়ার পর থেকে তার দেহ থেকে ক্ৰমে ক্রমে এক আঙ্গুল এক আঙ্গুল করে খসে পড়তে শুরু করে। একটি আঙ্গুলোর পর আরেকটি আঙ্গুল ঝরে পড়ছিল। এভাবে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়। এভাবে তার রক্ত ও পুঁজ নিঃশেষিত হয়ে যায়। তারা তাকে সানা আতে নিয়ে আসে। তখন সে যেন একটি পাখির ছানা।

কথিত আছে যে, তার মৃত্যুর সময় তার বুক ফেটে হৃৎপিণ্ড বের হয়ে পড়ে। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, ইয়াকুব ইব্‌ন উতবা আমাকে বলেছেন যে, জনশ্রুতি ছিল যে, আরব দেশে সর্বপ্রথম হাম এবং বসন্তরোগ দেখা যায় সেই বছরই। সেখানে তিক্ত বৃক্ষ হারমাল, হানযাল ও আশার দেখা যায়। সেই একই বছরে।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, হযরত মুহাম্মদ (স)-কে রাসূল রূপে প্রেরণ করার পর আল্লাহ তাআলা কুরায়শদের প্রতি তাঁর যে সকল নেয়ামত ও অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন সেগুলোর অন্যতম হল তাদের অবস্থান ও অস্তিত্বের লক্ষ্যে তাদের থেকে হাবশীদের আক্রমণ প্রতিহত করা।

এ প্রসংগে আল্লাহ তাআলা বলেন :

তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক হাতিওয়ালাদের প্রতি কী করেছিলেন? তিনি কি ওদের

কৌশল ব্যৰ্থ করে দেননি? ওদের বিরুদ্ধে তিনি বাকে বাকে পাখী প্রেরণ করেন। সেগুলো ওদের উপর পাথুরে কঙ্কর নিক্ষেপ করে। তারপর তিনি ওদেরকে ভক্ষিত খড়ের মত করেন।

(১০৫. ফীলু। ১-৫)

ইব্‌ন ইসহাক ও ইব্‌ন হিশাম অতঃপর এই সূরা ও তৎপরবর্তী সূরাগুলোর তাফসীর শুরু করেন। আমার তাফসীর গ্রন্থে আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্যে তাই যথেষ্ট হবে। সকল প্ৰশংসা আল্লাহ তাআলার।

ইব্‌ন হিশাম বলেন, U.(1 শব্দের অর্থ ঝাক বা দল। আমার জানা মতে আরবরা এ শব্দের একবচন ব্যবহার করে না। তিনি বলেন JAL শব্দ সম্পর্কে ব্যাকরণবিদ ইউনুস ও আবু উবায়দা বলেছেন যে, এটি দ্বারা আরবগণ সুকঠিন অৰ্থ বুঝায়। কোন কোন তাফসীরকার বলেছেন যে, J. … শব্দটি মূলত দুটো ফারসী শব্দের সমষ্টি। আরবরা এটিকে এক শব্দরূপে ব্যবহার করে। ফারসী শব্দ দুটো হল এ. এবং U< … অর্থ পাথর (J< অর্থ কাদা। তারা বলেন যে, পাথর ও কাদার তৈরী কঙ্কর-ই ওদের প্রতি নিক্ষেপ করা হয়েছিল।

ইব্‌ন হিশাম আরও বলেন যে, … … অর্থ উদ্ভিদ ও তৃণলতার পাতা।

কাসাই বলেন জনৈক ব্যাকরণবিদকে আমি বলতে শুনেছি যে,, 0, 1 এর একবচন J, প্রাচীনকালের অনেক ভাষাবিদ বলেন, আবাবীল হলো পাখি শাবকের ঝাঁক, যেগুলো এখানে সেখানে একদল অন্য দলের পেছন পেছন ছুটে।

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, আবরাহা বাহিনীর উপর কঙ্কর নিক্ষেপকারী পাখীগুলোর চঞ্চ ছিল সাধারণ পাখির মত। পাগুলো ছিল কুকুরের থাবার মত। ইকরামা (রা) বলেন, সে গুলোর মাথা ছিল হিংস্র প্রাণীর মাথার মত। এগুলো সমুদ্র থেকে উড়ে এসেছিল এবং এগুলোর রঙ ছিল সবুজ। উবায়দ ইব্‌ন উমোয়র বলেন, সেগুলো ছিল সামুদ্রিক কাল পাখি। সেগুলোর চঞ্চ ও পায়ে করে কঙ্কর নিয়ে এসেছিল।

হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, পাখিগুলোর আকৃতি ছিল কল্পনার আনকা পাখির মত। তিনি আরও বলেন যে, তাদের আনীত কঙ্করগুলোর ক্ষুদ্রতম কঙ্কর ছিল মানুষের মাথার সমান। কতক ছিল উটের সমান। ইব্‌ন ইসহাক থেকে ইউনুস ইব্‌ন বুকোয়র এরূপ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, ঐ কঙ্করগুলো ছিল ক্ষুদ্ৰাকৃতির। আল্লাহই ভাল জানেন বিবরণগুলোর কোনটি যথার্থ। и

ইব্‌ন আবী হাতিম উবায়দ ইব্‌ন উমোয়র সূত্রে বলেন, হাতি বাহিনীকে যখন আল্লাহ তাআলা ংস করার ইচ্ছা করলেন তখন ওগুলোর প্রতি পাখির ব্যাক প্রেরণ করলে সেগুলো এসেছিল সমূদ্র থেকে। আকৃতি ছিল বাজ পাখির মত। প্রতিটি পাখি তিনটি করে কঙ্কর নিয়ে এসেছিল। দুটো দুপায়ে একটি চঞ্চতে। সেগুলো এসে আবরাহা বাহিনীর মাথার উপর সারিবদ্ধভাবে অবস্থান নেয়। তারপর বিকট আওয়াজ করে এবং পায়ের ও চঞ্চর কুঙ্করগুলো নিক্ষেপ করে। যারই মাথায় কঙ্কর পড়েছে তা তার মলদ্বার ভেদ করে বেরিয়ে এসেছে। যার দেহের একদিকে পড়েছে তার অন্য দিক দিয়ে তা বেরিয়ে গিয়েছে। আল্লাহ তাআলা তখন প্ৰচণ্ড বায়ু প্রেরণ করেছিলেন। সেটি কঙ্করগুলোকে আঘাত করে। এতে কঙ্করগুলো আরও প্ৰচণ্ডভাবে তাদের উপর নিক্ষিপ্ত হয়। ফলে তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যায়।

ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, ইব্‌ন ইসহাক বলেছেন, আবরাহা বাহিনীর সকলের গায়ে পাথর লাগেনি। বরং তাদের কতক লোক ইয়ামেনে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। তারা সেখানে গিয়ে তাদের সাখীদের ধ্বংস ও বিপদের কথা ওখানকার লোকদেরকে জানায়। কতক ঐতিহাসিক বলেন যে, আবরাহাও ফিরে এসেছিল। তবে তার দেহ থেকে এক আঙ্গুল এক আঙ্গুল করে ঝরে পড়ছিল। ইয়ামানে পৌঁছার পর তার বুক ফেটে যায় এবং তার মৃত্যু হয়। তার প্রতি আল্লাহর ল্যানত।

ইব্‌ন ইসহাক হযরত আয়েশা (রা) সূত্রে বলেন :

দুজনকেই আমি মক্কায় দেখেছি। দুজনই তখন অন্ধ এবং চলৎশক্তিহীন। মানুষের নিকট খাবার ভিক্ষা করছে। উপরে বর্ণিত হয়েছে যে, হাতিব সহিসের নাম আনীস; বাহিনীর পরিচালকের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায় না। আল্লাহ্ই ভাল জানেন।

তাফসীরকার নাককাশ তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, প্লাবন এসে তাদের মৃত দেহগুলো ভাসিয়ে নিয়ে সাগরে নিক্ষেপ করে। সুহায়লী বলেন, হাতি বাহিনীর এ ঘটনা ঘটেছিল যুল-কারনাইন বাদশাহের যুগ থেকে ৮৮৬ বছর পর, মুহাররম মাসের পয়লা তারিখে।

আমি বলি, ঐ বছরই রাসূল্লাহ্ (সা)-এর জন্ম হয়। এটিই প্রসিদ্ধ অভিমত। কেউ কেউ বলেন যে, এটি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর জন্মের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনা। এ বিষয়ে আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব ইনশা আল্লাহ।

এই ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা উপলক্ষে আরবদের রচিত কবিতাগুলো ইব্‌ন ইসহাক উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনায় আল্লাহ তাআলা তার সেই সম্মানিত গৃহকে রক্ষা করেছেন। হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে প্রেরণের মাধ্যমে। তিনি যে গৃহকে মর্যাদাময় ও পবিত্র করতে ইচ্ছে করেছিলেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর জন্যে প্রথম এক সুদৃঢ় দীন ও ধর্ম নির্ধারণ করেছেন যার অন্যতম রুকন হল সালাত। বরং এই ধর্মের মূল স্তম্ভই হচ্ছে সালাত। এই ধর্মের কিবলা হিসেবে তিনি কাবা শরীককে নির্ধারণ করার ব্যবস্থা করেছেন। হাতি বাহিনীকে ধ্বংস করার পেছনে মূলত কুরায়শদের সাহায্য অভীষ্ট ছিল না। কারণ, ধ্বংস ও আযোব আপতিত হয়েছিল খ্ৰীষ্ট ধর্মাবলম্বী হাবশীদের উপর। কুরায়শীয় মুশরিকদের তুলনায় হাবশীগণ তার অধিকতর হকদার ছিল। এই সাহায্য ছিল সম্মানিত গৃহের সাহায্যার্থে এবং হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে প্রেরণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে, এ প্রসংগে আবদুল্লাহ ইব্‌ন যাব। আরী সাহসী

তারা ফিরে গিয়েছে মক্কা ভূমি থেকে শাস্তি পেয়ে শঙ্কিত মনে। প্রাচীনকাল থেকেই এর অধিবাসীদেরকে লাঞ্ছিত করার কথা কেউ ভাবতে পারতো না।

যে সময়ে উক্ত এলাকাকে হারাম শরীফ তথা সম্মানিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে সে। সময়ে শিরা নক্ষত্র সৃষ্টি করা হয়নি। কোন প্রতাপশালী ব্যক্তিই উক্ত স্থানের মর্যাদা বিনষ্টের অপপ্ৰয়াস চালাতে পারে না। কারণ কোন প্ৰতাপশালী ব্যক্তিই এটির মানহানির চেষ্টা করত না।

সেনাধ্যক্ষাকে জিজ্ঞেস করুন সে কী দেখেছে। এ ঘটনা সম্পর্কে। ওদের মধ্যে যার অবগতি আছে সে অবগতিহীন ব্যক্তিদেরকে জানিয়ে দিবে।

তাদের ষাট হাজার লোক পুনরায় নিজেদের বাস ভূমিতে ফিরে যেতে পারেনি। অসুস্থ দু একজন ফিরে গেলেও অতঃপর তারা জীবিত থাকেনি।

তাদের পূর্বে সেখানে বসবাস করেছিল আদি ও জুরহুম গোত্র, সকল বান্দার উপরে খোদ

আল্লাহ তাআলা সেটিকে কায়েম রাখেন।

এ প্রসংগে আবু কায়স ইব্‌ন আসূলত আনসারী আল মাদানী বলেন :

তাঁর (আল্লাহ তাআলার) কুদরতের একটি নিদর্শন হল হাবশীদের হাতি বাহিনী প্রেরণের দিবসের ঘটনা, যখনই তারা হাতি পাঠানোর চেষ্টা করেছিল তখনই সে আর্ত-চীৎকার করেছিল।

তাদের লোহার আকলী তার পেটের চামড়ার নীচে তার ঢুকিয়ে দিয়েছিল তারা তার নাকটি চিরে দিয়েছিল। ফলে তা বিদীর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

তাদের চাবুকের মাথায় তারা লোহার পেরেক জুড়ে দিয়েছিল হাতির ঘাড়ে আঘাতের সাথে সাথে তা ক্ষত সৃষ্টি করে দিয়েছিল।

অবশেষে তারা পিছু হটে গিয়েছিল সে পথে, যে পথে তারা এসেছিল এবং সেখানে যারা ছিল তারা অন্যায় ও অপরাধের শাস্তি পেয়েছিল।

তাদের উপরওয়ালা আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি কঙ্কর প্রেরণ করেছিলেন এবং তাদের লাশগুলোকে থরে থরে ফেলে রেখেছিলেন ভীরু লোকদের লাশের স্তুপের ন্যায়।

তাদের ধর্মযাজকগণ তাদেরকে ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করছিল। অথচ তারা ভীত সন্ত্রস্ত ব্যকরী পালের ন্যায়। ভ্যা ভ্যা করছিল।

এ প্রসংগে আবু সালত রাবীআ ইব্‌ন আবী রাবীআ ওয়াহাব ইব্‌ন ইলাজ ছাকাকীর কবিতাগুলো প্ৰণিধানযোগ্য। ইব্‌ন হিশাম বলেন, এ কবিতাগুলো উমাইয়া ইব্‌ন আবী সালত এর বলেও কেউ কেউ বলেছেন। সেগুলো ছিল এরূপ :

আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাদি সুস্পষ্ট ও সমুজ্জ্বল। কাফির ব্যতীত অন্য কেউ এগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে না।

তিনি সৃজন করেছেন দিবস ও রাত্রিকে। এর প্রত্যকটি সুস্পষ্ট এগুলোর হিসাব সুনির্দিষ্ট।

এরপর দয়াময় প্ৰভু দিবসকে আলোকময় করেন বিশাল বিস্তৃত পৃথিবী জুড়ে। সেটির আলো ও কিরণ ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি রুখে দিয়েছেন হাতিকে মুগাম্মাস নামক স্থানে। এরপর সেটি খোড়া ও আহত পশুর ন্যায় হাত পা গুটিয়ে ওখানে বসে পড়ে।

যেন হাতিটি তার গর্দানের অগ্রভাগ গুটিয়ে রেখেছিল। যেন সেটি পর্বতচূড়ার প্রস্তররাশি থেকে বিচ্ছিন্ন নীচের দিকে গড়িয়ে পড়া একখণ্ড পাথর।

তার চতুষ্পার্শ্বে রয়েছে কিন্দা গোত্রের উৎসাহ দানকারী নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, যুদ্ধে যারা বাজ পাখির ন্যায় দুর্ধর্ষ আক্রমণকারী।

তারা সকলে হাতিকে পেছনে ছেড়ে এসেছে। তারপর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সবাই পলায়ন করেছে। পালিয়েছে খোড়াতে খোড়াতে যেন প্রত্যেকের পায়ের নলা ভাঙ্গা।

কিয়ামত দিবসে আল্লাহর নিকট একমাত্র দীন হানীফ তথা দীন-ই ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল দীন বিলুপ্ত হবে। এ প্রসংগে আবু কায়স ইব্‌ন আসলাত বলেন :

উঠে, তোমাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং পর্বত সমূহের মাঝে অবস্থিত এই ঘরের বরকতময় রুকন সমূহ স্পর্শ কর।

কারণ তার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্যিই একটি পরীক্ষা এসেছিল। সেটি ছিল। সেনাপতি আবু ইয়াকসুমের (আবরাহার) অভিযান পরিচালনা দিবসে।

তার ঘোড় সওয়ারগণ সমতল পথে হেঁটে চলেছে আর তার পদাতিক বাহিনী অবস্থান নিয়েছে পর্বত শৃঙ্গে।

তোমাদের প্রতি যা এসেছে তা হল আরশ অধিপতির সাহায্য। পরম পরাক্রমশীল মহান মালিকের (আল্লাহ তাআলা) সেনাবাহিনী প্ৰচণ্ড বায়ু ও কঙ্কর নিয়ে এসে ওদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে।

অতঃপর তারা দ্রুত পলায়ন করল। হাবশীদের মাত্র কয়েকদল লোক ছাড়া অন্য কেউ নিজ নিজ পরিবারের নিকট ফিরে যেতে পারেনি।

কাবা শরীফ ধ্বংসের অপচেষ্টার হাত থেকে সেটিকে রক্ষা করা এবং কাবা শরীফের মান মর্যাদা সম্পর্কে উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন কায়স যে কবিতা রচনা করেছে তাও এ প্রসংগে উল্লেখ করা

যায় ৪

হাতি বাহিনী নিয়ে আসা ব্যক্তির আশরাম এই পবিত্র গৃহ সম্পর্কে ষড়যন্ত্র করেছিল। অতঃপর যে পেছনের দিকে পালিয়ে গেল, তার সৈন্যরাও হল পরাজিত।

বড় বড় পাথর নিয়ে পাখি বাহিনী তাদের উপর জমায়েত হল। অবশেষে সেই আশরাম হল পাথর নিক্ষেপে জর্জরিত ও ক্ষত-বিক্ষত।

এটি এজন্যে হল যে, যে ব্যক্তিই এ গৃহের বিরুদ্ধে লড়তে যাবে সে নিশ্চিতভাবে ফিরে যাবে। এমতাবস্থায় যে, সে পরাজিত সৈনিক এবং নিন্দিত।

ইব্‌ন ইসহাক ও অন্যরা বলেন যে, আবরাহার মৃত্যুর পর তার পুত্র ইয়াকসুম রাজা হয়। তারপর আসে তার ভাই মাসরূক ইব্‌ন আবরাহা। সে ছিল তাদের বংশের শেষ রাজা। পারস্য সম্রাট নওশেরাওয়া-এর প্রেরিত সৈন্যবাহিনী নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে সায়ক ইব্‌ন ইয়াযনে হিময়ারী মাসরূকের হাত থেকেই রাজত্ব ছিনিয়ে নেয়। এ বিষয়ে পরে আলোচনা হবে।

হাতি বাহিনীর এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল রোমান ইতিহাস খ্যাত সমাট দ্বিতীয় ইসকান্দার ইব্‌ন ফিলিপস মাকদুনী ওরফে সম্রাট যুলকারনাইনের যুগ থেকে ৮৮৬ তম বছরের মুহাররাম भोजन।

আবরাহা ও তার দুপুত্রের মৃত্যু এবং হাবশা থেকে রাজত্ব ইয়ামানে স্থানান্তরিত হওয়ার পর আবরাহার নির্মিত উপাসনালয় কুলায়স পরিত্যক্ত গৃহে পরিণত হয়। অতঃপর তার আর কোন উক্ত অনুরক্ত থাকল না। অথচ নিৰ্বদ্ধিতা ও মুখতার কারণে আবরাহা সেটিকে তৈরী করেছিল আরবদের হজ্জকে কাবা শরীফ থেকে ঐ কুলায়সে সরিয়ে আনার জন্যে।

আবরাহা সেটি তৈরী করেছিল দুটো মূর্তির উপর। মুর্তি দুটো হল কুআয়ব ও তার স্ত্রীর। এ দুটো ছিল কাঠের তৈরী। প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য উচ্চতায় ৬০ গজ। এগুলো মূলত দুটো নিজের প্রতিকৃতি। এ জন্যেই কেউ কুলায়স গীর্জায় কোন সম্পদ খুলে নিতে চেষ্টা করলে জিনেরা তাকে আক্রমণ করত। অতঃপর এটি প্রথম আব্বাসী খলীফা। সাফফাহ-এ খিলোফতকাল পর্যন্ত এভাবেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। তাকে কুলায়স তার মধ্যে রক্ষিত ধনসম্পদ ও বহুমূল্য শ্বেতপাথর সম্পর্কে জানানো হয়। এগুলো আবরাহ রাণী বিলকীসের প্রাসাদ থেকে এনে কুলায়সে স্থাপন করেছিল।

অতঃপর খলীফা। সাফফাহ এটি ভাঙ্গার জন্যে লোক প্রেরণ করলেন। তারা একটি একটি করে সকল পাথর খুলে নেয় এবং তার সকল ধনসম্পদ নিয়ে আসে। সুহায়লী এরূপই উল্লেখ করেছেন। আল্লাহই ভাল জানেন।

হাব্বশীদের হাত থেকে রাজত্ব সায়ফ ইব্‌ন যুইয়াখীনের হাতে রাজত্ব স্থানান্তর মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, আবরাহার মৃত্যুর পর তার পুত্র ইয়াকসুম রাজত্ব লাভ

করে। ইয়াকসুমের দিকে সম্পৃক্ত করে আবরাহাকে আবু ইয়াকসুম বলা হয়। ইয়াকসুমের মৃত্যুর পর তার ভাই মাসরুদ্ধক হাবশী ইয়ামানের রাজত্ব গ্ৰহণ করেন।

ইয়ামামাবাসীদের উপর যখন নির্যাতন দীর্ঘস্থায়ী হতে থাকে তখন সায়ফ ইব্‌ন যু-উয়াযান হিময়ারী আবির্ভূত হন। ইনি হলেন সায়ফ ইব্‌ন যুআষীন (ইব্‌ন যাইসবাহ ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন যায়দ ইব্‌ন সাহল ইব্‌ন আমর ইব্‌ন কায়স ইব্‌ন মুআবিয়া ইব্‌ন জােশম ইব্‌ন আবন ওয়ায়েল ইব্‌ন গাওছ ইব্‌ন কুতুন ইব্‌ন আরাদ শামস ইব্‌ন আযমান ইব্‌ন হুমায়সা ইব্‌ন আরীব ইব্‌ন যুহায়ব ইব্‌ন আযমান ইব্‌ন হুমায়সা ইব্‌ন আরবাহাজ আরবাহাজ হচ্ছে সাবার পুত্র। হিময়ায়ের সাঙ্গ। সায়ফ এর উপনাম ছিল আবু মুররা।

সায়ফ রোমান সম্রাট কায়সারের নিকট গিয়ে নিজেদের দূরবস্থার কথা জানিয়ে তার সাহায্য কামনা করেন। তিনি প্ৰস্তাব করেন যেন কায়সার তিনি নিজে বা অন্য কাউকে পাঠিয়ে সম্রাট তার প্রস্তাবে সাড়া দিলেন না।

সায়ফ সেখান থেকে বেরিয়ে নুমান ইব্‌ন মুনযিরের দরবারের পৌছেন। নুমান তখন পারস্য সম্রাটের পক্ষ থেকে হীরা ও তৎসংলগ্ন ইরাকী অঞ্চলের প্রশাসক তিনি হাবশীদের অত্যাচার নির্যাতনের কথা নুমানকে অবহিত করেন। নুমান বলেন, বছয়ে একবার করে আমি একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে পারস্য সমাট কিসারার দরবারে হাজির হয়ে থাকি। আপনি সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সায়ফ তা-ই করেন। যথাসময়ে তাকে নিয়ে নুমান কিসরার দরবারে হাজির হন। দরবারের যেখানে রাজমুকুট স্থাপিত কিসারা সেখানেই স্নান গ্ৰহণ করতেন। তাঁর মুকুট ছিল বৃহদাকার পাত্রের ন্যায়। সেটি ছিল মনি-মুক্তা, ইয়াকুত ও স্বর্ণ-রৌপ্য খচিত। সেটি থাকত। তার সিংহাসনের উপরে স্বর্ণের শিকল দ্বারা একটি তাকের সাথে ঝুলন্ত। সেটি এত ভারী ছিল যে, রাজার ঘাড় তা বহন করতে পারত না। আসন গ্রহণের সময় তার চারিদিকে কাপড়ের বেষ্টনী তৈরী করা হত। লোকচক্ষুর অন্তরালে তিনি ঐ আসনে বসতেন এবং ঝুলন্ত মুকুটে মাথা ঢুকিয়ে দিতেন। যথাযথভাবে আসন গ্রহণ করার পর কাপড়ের বেষ্টনী তুলে নেয়া হত। অতঃপর ইতিপূর্বে তাকে দেখেনি এমন কেউ তার এ গাম্ভীর্যপূর্ণ অবস্থান দেখলে ভয়ে উপুড় হয়ে পড়ে যেত।

সায়ফ যখন রাজার দরবারে প্রবেশ করেন তখন তিনি ও মাথা অবনত করে ফেলেন। সম্রাট বলেলেন, এই নির্বোধিটি এত উঁচু দরজা দিয়ে আমার নিকট প্রবেশ করার সময়ও নিজের মাথা নুইয়ে রাখছে কেন? সম্রাটের এ মন্তব্য সায়ফকে জানানো হয়। উত্তরে তিনি। বলেন, আমার দুশ্চিন্তার কারণে আমি এরূপ করেছি। কারণ আমার দুশ্চিন্তার সম্মুখে সব কিছুই সংকীর্ণ মনে হয়। এরপর তিনি বললেন : মহারাজ! পশ্চিমা বিদেশীরা আমার দেশ দখল করে রেখেছে। কিসারা প্রশ্ন করেন, কারা সেই বিদেশী? হাবশীরা, নাকি সিন্ধীরা? তিনি বললেন : বরং হাবশীরা আমি আপনার নিকট এসেছি সাহায্যপ্ৰাথী হয়ে। অতঃপর আপনি বিজয়ী হলে আমাদের দেশ আপনার অধীন হবে। সম্রাট বললেন, তোমাদের দেশ তো অনেক দূরে।

প্রেরণ করতে আগ্রহী নই। ঐ দেশটির অধীনে আনার আমার কোন প্রয়োজনও নেই। সম্রাট তাকে দশ হাজার দিরহামের আর্থিক অনুদান এবং চমৎকার একজোড়া পোশাক দান করেন। অনুদান গ্রহণ করে সায়ফ সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং ঐ অর্থ লোকজনকে অকাতরে বিলিয়ে দেন। এ সংবাদ সম্রাটের গোচরীভূত হয়।

সম্রাট বলেন, এর মধ্যে নিশ্চয়ই কোন রহস্য আছে। তিনি তাকে ডেকে পাঠান। তারপর বলেন, তুমি সম্রাটের দেয়া অনুদান লোকজনকে বিলিয়ে দিচ্ছঃ ব্যাপার কী? জবাবে তিনি বলেন : আপনার অনুদান দিয়ে আমি কী করব? আমার যে দেশ থেকে আমি এসেছি তার পাহাড় পর্বত তো পুরোটাই স্বর্ণ রৌপ্যে ভরপুর। এটার প্রতিই মানুষ আসক্ত হয়। একথা শুনে সম্রাট তার অমাত্যেদেরকে ডেকে এ লোকের ব্যাপারে তাদের অভিমত জানতে চাইলেন। একজন বলল, মহারাজ! আপনার বন্দীখানায় কতক বন্দী লোক আছে যাদেরকে হত্যা করার জন্যে আপনি আটকিয়ে রেখেছেন। তাদেরকে যদি আপনি এ লোকের সাথে পাঠিয়ে দেন এবং সেখানে যুদ্ধ করে তারা যদি মারা যায়। তবে তাদেরকে হত্যা করার আপনার যে ইচ্ছা ছিল তা পূর্ণ হবে। আর তারা যদি যুদ্ধে জয়লাভ করে তবে একটি অতিরিক্ত রাজ্য আপনার অধীনে আসবে। প্ৰস্তাবটি রাজার মনঃপুত হয় এবং কারারুদ্ধ ৮০০ ব্যক্তিকে তিনি সায়ফের সাথে প্রেরণ করেন। ওয়াহরিজ নামের একজনকে তিনি সেনাপতি নিযুক্ত করে দেন। ওয়াহরিজ ছিল তাদের মধ্যে বয়োবৃদ্ধ এবং সর্বাধিক অভিজাত বংশীয়। ৮টি নীেকায় তারা যাত্রা করে। দুটো নৌকা ডুবে যায় এবং অবশিষ্ট ৬টি নীেকা এডেন উপকূলে গিয়ে পৌছে। অতঃপর যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের বহু লোককে সায়ফ এনে ওয়াহরিজের নেতৃত্বে দেন। ওয়াহরিজের প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করে সােয়ফ বলেন, সর্বক্ষণ আমার বাহিনী আপনার সাথে থাকবে যতক্ষণ আমাদের সবার মৃত্যু হয় কিংবা যতক্ষণ না আমরা সবাই বিজয় লাভ করি। ওয়াহরিজ বললেন, আপনি ন্যায়ানুগ। কথা বলেছেন।

এ দিকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে ইয়ামানের রাজ্য মাসরূক ইব্‌ন আবরাহা বেরিয়ে আসে এবং সৈন্য সমাবেশ ঘটায়। ওদের যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে প্রথমত ওয়াহরিজ তার পুত্রকে যুদ্ধার্থে পাঠান। যুদ্ধে তার পুত্রটি নিহত হয়। এতে ওয়াহরিজ ওদের প্রতি আরও ক্রুদ্ধ হন। সৈন্যগণ যখন নিজ নিজ সারিতে সারিবদ্ধ তখন ওয়াহরিজ বলেন যে, ওদের রাজা কোন ব্যক্তি তা আমাকে দেখিয়ে দাও! সৈন্যগণ বলল, ঐ যে ব্যক্তিটি হাতির পিঠে অবস্থান করছে তার মাথায় মুকুট এবং দুচক্ষুর মধ্যখানে রক্তিম ইয়াকুত পাথর রয়েছে তাকে কি আপনি দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, দেখতে পাচ্ছি। লোকজন বলল, সে ব্যক্তিই ওদের রাজা। ওকে আমার জন্যে ছেড়ে দাও। আমি দেখছি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তিনি আবার বললেন, এখন ঐ রাজা কিসে সওয়ার আছে? তারা বলল, সে এখন ঘোড়ার পিঠে সওয়ার আছে। তিনি বললেন, ঠিক আছে তোমরা ওকে থাকতে দাও। আমি তাকে দেখছি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ওয়াহরিজ আবার বললেন : এখন সে কিসের উপর সওয়ার আছে? তারা বললো, এখন সে এক মাদী খচ্চরের পিঠে উপবিষ্ট আছে। ওয়াহরিজ বললেন : গাধার ইয়াযিনকে অভিবাদন জানানোর জন্যে দলে দলে তার নিকট আসতে থাকে। রাজ্য ক্ষমতায় ফিরে আগমনকারী প্রতিনিধি দলসমূহের মধ্যে আবদুল মুত্তালিব ইব্‌ন হাশিমও ছিলেন। তখন সায়ফ ইব্‌ন যুইয়াখীন আবদুল মুত্তালিবকে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর আগমনের সুসংবাদ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করেন। এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর আগমনের সুসংবাদ শিরোনামে আলোচিত হবে।

ইব্‌ন ইসহাকের মতে আবু সালত ইব্‌ন আবী রাবীআ ছাকাকী এবং ইব্‌ন হিশামের মতে উমাইয়া ইব্‌ন আবী সালত বলেছেন :

ইব্‌ন খী ইয়াযিনের ন্যায় লোকদেরই উচিত প্ৰতিশোধ গ্রহণের এগিয়ে যাওয়া শোভা পায়। যিনি প্ৰতিশোধ নেয়ার জন্যে বছরের পর বছর ধরে সমুদ্রের পাড়ে লুকিয়ে থাকেন।

তার দেশ ত্যাগের সময় তিনি রোমান সম্রাট কায়সারের নিকট গেলেন। কিন্তু তার প্রার্থিত সাহায্য সেখানে তিনি পেলেন না।

তারপর পারস্য সম্রাট কিসারার নিকট গেলেন। দশ বছর পর তিনি নিজের ব্যক্তিত্ত্ব ও ধন-সম্পদকে তুচ্ছ জ্ঞান করে।

অবশেষে তিনি এলেন বনি আহরার গোত্রের নিকট। তিনি তাদেরকে প্ৰতিশোধ গ্রহণের জন্যে উত্তেজিত করেন। আমার জীবনের শপথ আপনি খুব দ্রুত আন্দােলন সৃষ্টি করেছেন।

সেই বাহিনীটি এক সময় বিস্ময়করভাবে অভিযানে বেরোল যে, মানব সমাজে আমি তো তাদের তুল্য কাউকে দেখিনি।

তারা সাদা বিজয়ী রাজন্য বর্গ এবং স্বচ্ছ ঝলমলে কংকন পরিদানকারী। তারা সেই সিংহ গভীর জঙ্গলে যারা সিংহ শাবক লালন-পালন করে। তারা প্ৰভাত আলোতে তীর নিক্ষেপ করে

ওগুলো দ্রুত লক্ষ্যভেদ করে।

তারা প্ৰভাত আলোতে তীর নিক্ষেপ করে ওগুলো দ্রুত লক্ষ্য ভেদ করে।

আপনি কালো কুকুরদের প্রতি সিংহ লেলিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাদের পলায়নপর বাহিনী ভুলষ্ঠিত হয়েছে।

আপনি তৃপ্ত চিত্তে পানীয় পান করুন। আপনার মাথায় রয়েছে রাজমুকুট। আপনার বিশ্রামস্থল। গুমদান প্রাসাদ, এটি আপনার বৈধ ভবনে পরিণত হয়েছে।

আপনি তৃপ্তি সহকারে পান করুন। শত্রুরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এখন আপনি আপনার চাদর জোড়া হেঁচড়িয়ে অহংকারী চালে পথ চলুন।

এগুলো মহৎ গুণাবলী পানি মিশ্ৰিত দুধের তেমন দুটি পাত্ৰ যেগুলো পরিণত হয় প্রস্রাবের 9G

কথিত আছে যে, গুমদান হলো ইয়ামানের একটি রাজপ্রাসাদ। ইয়ারুব ইব্‌ন কাহতান সেটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী ওয়াইলা ইব্‌ন হিমইয়ার ইব্‌ন সাবা কৌশলে সেটি করতলগত করেন। বলা হয়ে থাকে যে, এটি ছিল বিশ তলা বিশিষ্ট প্রাসাদ। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন আদি ইব্‌ন যায়দ হিমইয়ারী বলেছেন, তিনি ছিলেন বনী তামীম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত।

সান আর পাওনের এটির কী হলো? যা গড়ে তুলে ছিলেন শাসকবৰ্গ যাদের দান দক্ষিণা ছিল অবারিত।

যে ব্যক্তি এটি নির্মাণ করেছে। সে এটিকে মেঘমালা পর্যন্ত উনীত করেছিলেন। এটির মেহরারগুলো থেকে কিন্তুরির সুবাস ছড়িয়ে পড়ে।

এটি পর্বতরাজি দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত থেকে নিরাপদ। এ প্রাসাদের চূড়ায় আরোহণ করা যায় না।

সান্ধ্যকালীন বজনিনাদ ঐ প্রাসাদে কাঠ মিস্ত্রীর শব্দের ন্যায় খটখটি শব্দ করে।

নানা প্রকারের উপাদান বনী আহরার গোত্রের সৈনিকদেরকে তার দিকে টেনে এনেছে। তাদের অশ্বারোহীগণ এসেছিল মিছিল সহকারে।

মৃতপ্রায় ভারবাহী খচ্চরগুলোকে পৃথক করে দেয়া হয়েছে। তাদের সাথে ছুটে গেল তাদের বাচ্চাগুলো।

বস্তৃত হিমইয়ারী রাজাগণ দুর্গের উপর থেকে ওদের প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা অশ্বারোহী বাহিনীকে দেখতে পেলেন।

যেদিন তারা বর্বর কায়সুম বংশের লোকদেরকে ডাক দিয়েছিল ওদের পলায়নকারী পালিয়ে বাচতে পারবে না।

সে দিবসের এ আলোচনাই শুধু অবশিষ্ট রয়েছে যে, মর্যাদাবান ও শক্তিশালী একদল মানুষ সে দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল।

সে দিন উত্তেজিত বাহিনী নিরীহ জিরাফে পরিণত হয়েছিল। সেই দিনগুলো বহু ঘটনার সাক্ষীতে পরিণত হয়েছে।

সম্মানিত তুব্বা সম্প্রদায়ের পর এ দুর্গে পারস্যের সামন্তগণ নিশ্চিন্তে সেটির মালিকানা লাভ

করেন।

ইব্‌ন হিশাম বলেন, পূর্বোল্লেখিত জ্যোতিষী সাতীহ তার বক্তব্য তারপর ইরাম গ্ৰী ইয়াখীন তাদের নিকট আসবে আদান থেকে। অতঃপর কাউকেই ইয়ামানে অবশিষ্ট রাখবে না। দ্বারা

এটাই বুঝিয়েছিল। আর জ্যোতিষী শিক এমন একটি বালক যে, গ্রাম্যও নয় শহুরেও নয়। মীইয়াযানের গোত্র থেকে সে বের হবে। দ্বারাও এ দিকেই ইঙ্গিত করেছিল।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, ওয়াহরিয এবং পারসিকগণ ইয়ামানে বসবাস করতে থাকে। এখনকার ইয়ামানের অধিবাসিগণ সেই পারসিকদের বংশধর। আরিয়াতের ইয়ামানে প্ৰবেশ থেকে শুরু করে পারসিকদের হাতে মাসরুক ইব্‌ন আবরাহ-এর নিহত হওয়া এবং হাবশীদের ইয়ামান থেকে বহিষ্কৃত হওয়া পর্যন্ত তাদের রাজত্বকাল ছিল ৭২ বছর। এই মেয়াদে পরপর

W8 by

চারজন হাবশী রাজা রাজত্ব করে। তারা হলো পর্যায়ক্রমে আরইয়াত, আবরাহা, ইয়াকসুম ইব্‌ন আবরাহা এবং মাসরূক ইব্‌ন আবরাহা।

ইয়ামানে পারসিকদের শেষ পরিণতি

ইব্‌ন হিশাম বলেন, ওয়াহরিযের মৃত্যুর পর পারস্য সম্রাট কিসারা ওয়াহারিযের পুত্র মারযুবানকে ইয়ামানের শাসনকর্তা নিযুক্ত করে। মারযুবানের মৃত্যুর পর তদীয়পুত্ৰ

তাইনুজনকে তারও মৃত্যুর পর তার পুত্রকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তাইনুজনের পুত্রকে বরখাস্ত করে বাযিালকে ইয়ামানের শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হয়। বাযানের শাসন আমলেই রাসূলুল্লাহ্ (সা) নবুওত প্রাপ্ত হন।

ইব্‌ন হিশাম বলেন, আমার নিকট সংবাদ পৌঁছেছে যে, পারস্য সম্রাট কিসারা ইয়ামানের শাসনকর্তা বাযানের নিকট এই মর্মে পত্র লিখেছিল, আমার নিকট সংবাদ এসেছে, কুরায়শ বংশের জনৈক ব্যক্তি মক্কা নগরীতে আত্মপ্ৰকাশ করেছে এবং সে নিজেকে নবী বলে দাবী করছে। তুমি তার কাছে যাও। তাকে বল সে যেন ঐ দাবী ত্যাগ করে। সে যদি তা ত্যাগ করে তবে তো নতুবা তুমি তার ছিন্নমস্তক আমার নিকট পাঠাবে। বাদ্যাল তখন সম্রাটের পত্রটি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট প্রেরণ করে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) লিখেন, আল্লাহ তাআলা আমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন যে, অমুক মাসের অমুক তারিখে কিসারা নিহত হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর উত্তর পেয়ে শাসনকর্তা বাযান উল্লেখিত দিনের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন। তিনি বলেন উক্ত ব্যক্তি যদি সত্যই নবী হয়ে থাকেন। তিনি যা বলেছেন অচিরেই ঘটবে। রাসূলুল্লাহ (সা) কিসরার নিহত হওয়ার যে তারিখ উল্লেখ করেছিলেন ঠিক সে তারিখেই আল্লাহ তাআলা তাকে হত্যা করান।

ইব্‌ন হিশাম বলেন, কিসরা নিহত হয় তার পুত্র শের ওয়েহের এর হাতে। কোন কোন

হরমুখ ইব্‌ন নওশেরাওয়া ইব্‌ন কুবায। সে-ই রোম সম্রাটকে পরাস্ত করেছিল ৪ এ – 1 : 1,, – আলিফ, লাম, মীম, রোমকগণ পরাজিত হয়েছে নিকটবতী অঞ্চলে আয়াতে সেই রোম বিজয়ের উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীতে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। সুহাইলী বলেন, নবম হিজরীর জুমাদাল উলা মাসের ১১ তারিখ বুধবারে সে নিহত হয়। কথিত আছে যে, তাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে তার প্রতি রাসূলুল্লাহ্ (সা) যে পত্ৰ পাঠিয়েছিলেন সেটি পেয়ে সে ভীষনণ ক্রুদ্ধ হয় এবং পত্রটি ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। অতঃপর তার বক্তব্য লিখে ইয়ামানের শাসনকর্তা বাযানের নিকট পত্ৰ পাঠায়।

কোন কোন বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বাযানের প্রতিনিধিকে বলেছিলেন, আমার প্রতিপালক তো এ রাতে তোমার রাজাকে হত্যা করেছেন। পরে দেখা গেল, রাসূলুল্লাহ (সা) যা বলেছেন তা-ই হয়েছে। ঠিক ঐ রাতেই সে নিহত হয়েছে। প্ৰথম দিকে ন্যায়পরায়ণ থাকলেও পরবর্তীতে সে অত্যাচারী হয়ে উঠে। ফলে তার ছেলেরা তাকে সিংহাসনচ্যুত করে এবং হত্যা করে। তারা তার পুত্র শেরওয়েহকে সিংহাসনে বসায়। পিতা নিহত হওয়ার ছয়মাস বা তারও কম সময়ের মধ্যে শেরওয়েহর মৃত্যু হয়। এ প্রসংগে কালিদ ইব্‌ন হক শায়বাণী বলেন :

আর কিসারার ব্যাপারটি তার পুত্ৰগণ তাকে তলোয়ার দ্বারা টুকরো টুকরো করেছে। যেমন

টুকরো করা হয় গোশত।

একদিন তার মৃত্যু এলো এবং প্রত্যেক জীবেরই মৃত্যু আছে।

যুহরী (র) বলেন, এ সংবাদ অবগত হয়ে বাযান নিজের ইসলাম গ্রহণ এবং তার সাখী। পারসিকদের ইসলাম গ্রহণের বার্তা সহ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর নিকট প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। তখন প্রতিনিধিগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সা)! আমরা কাদের সাথে যুক্ত হবো? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, তোমরা আমাদের পরিবারের সাথে যুক্ত হবে। এ প্রসংগে যুহরী (র) বলেন, যে দৃষ্টিকোণ থেকে রাসূলুল্লাহ্ (সা) হযরত সালমান (রা) সম্পর্কে বলেছিলেন (JA1 %- ৩L.1. এ. I) সালমান রাসূল পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। আমি বলি আলোচ্য বর্ণনা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বাযানের ইসলাম গ্রহণের সম্পর্কিত ঘটনা সংঘটিত হয় রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মদীনায় হিজরতের পর। এ জন্যে ইয়ামানের লোকজনকে ভাল কাজের শিক্ষা দেয়া এবং আল্লাহর পথে দাওয়াত দেয়ার জন্যে তিনি প্ৰশাসকগণকে ইয়ামান প্রেরণ করেছিলেন। সর্বপ্রথম প্রেরণ করেন। খালিদ ইব্‌ন ওলীদকে এবং আলী ইব্‌ন আবী তালিব (রা)-কে। তারপর প্রেরণ করেন আবু মুসা। আশআরী ও মুআয ইব্‌ন জবল (রা)-কে। এ সময়ে ইয়ামানবাসীরা ইসলামের ছায়াতলে আসে। বাযানের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র শাহর ইব্‌ন বাযান তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ভণ্ড নবী আসওয়াদ আনাসী যখন নবুওত দাবী করে তখন সে শাহর ইব্‌ন বাযানকে হত্যা করে এবং তার স্ত্রীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সে ইয়ামানে নিযুক্ত রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর প্রতিনিধিকেও সেখান থেকে বহিষ্কার করে। এ বিষয়ে পরে আলোচনা আসবে। আসওয়াদ আনাসী নিহত হওয়ার পর সেখানে পুনরায় মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ইব্‌ন হিশাম বলেন, জ্যোতিষী সাতীহ তার বক্তব্য পবিত্র নবী, উৰ্ধৰ্ব্ব জগত থেকে তাঁর ওহী আসবে। দ্বারা এদিকে ইঙ্গিত করেছিল এবং জ্যোতিষী শিক তার বক্তব্য এবং ঐ রাজত্বে ছেদ পড়বে। একজন রাসূলেী দ্বারা। তিনি সত্য ও ন্যায় সহকারে আসবেন, তিনি আসবেন দীনদার ও মর্যাদাবান লোকদের মধ্যে অতঃপর কিয়ামত দিবস পর্যন্ত রাজত্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকবে। দ্বারা এদিকেই ইঙ্গিত করেছে।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, ইয়ামান বাসীরা দাবী করে যে, সেখানকার একটি পাথরে যাবুর কিতাবের উক্তি লিখিত ছিল। এটি প্রাচীন যুগের লিখিত হয়েছিল। তাতে লেখা ছিল রাজত্বের মালিক হবে শ্রেষ্ঠ হিময়ারীগণ। রাজত্বের মালিক হবে মন্দ লোক হাবশীগণ, রাজত্বের মালিক হবে স্বাধীন পারসিকগণ। রাজত্বের মালিক হবে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কুরায়শগণ।

একজন কবি এই বিষয়টিকে কবিতায় সন্নিবেশিত করেছেন। মাসউদী তা উল্লেখ করেছেন

যুদ্ধের প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন হল তখন বলা হল তুমি কার পক্ষে? তখন যে বলল শ্রেষ্ট সম্প্রদায় হিমইয়ারীদের পক্ষে।

তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হল, এবার তুমি কার? তখন সে বলল, মন্দ ব্যক্তি হাবশীদের

পক্ষে ۔۔۔۔ ه

তারপর তারা বলল, এবার তুমি কার পক্ষে? সে বলল স্বাধীন চেতা পারসিকদের পক্ষে। ثم قالوا من بغد ذلك لمن أنت – فقالت الى قريش التجار তারপর বলা হল এবার তুমি কার পক্ষে? সে বলল, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় কুরায়শদের পক্ষে। কথিত আছে, যে, মুহাম্মাদ ইব্‌ন ইসহাক এখানে যা উল্লেখ করেছেন তা হযরত হুদ (আ)-এর কবরের পাশে লিখিত পাওয়া গিয়েছিল। বায়ু প্রবাহের ফলে ইয়ামানে অবস্থিত তাঁর কবরের মাটি সরে গেলে এটি পাওয়া যায়। রাণী বিলকীসের শাসনামলেব অল্প কিছুদিন পূর্বে আমার যিলি। ইযআবের ভাই মালিক মীল মানারের শাসনামলে এ ঘটনা ঘটে। কেউ কেউ বলেন, এটি হযরত হ্রদ (আ)-এর কবরের উপরের লেখা ছিল এটি তারই বাণী। শেষোক্ত মন্তব্য করেছেন আল্লামা সুহায়লী (র)। আল্লাহই ভাল জানেন।

হযর অধিপতি সাতিরূন-এর বিবরণ

আব্দুল মালিক ইব্‌ন হিশাম, এ পর্যায়ে সাতিরুন-এর আলোচনার অবতারণা করেছেন। কারণ ইয়ামান রাজ্য পুনরুদ্ধারে সােয়ক ইব্‌ন খী ইয়াযানের নুমান ইব্‌ন মুনযিরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা প্রসংগে যে নুমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে কোন কোন কুলজী বিশারদ বলেছেন যে, সেই নুমান হায্যর অধিপতি সাতিরুন- এর অধঃস্তন বংশধর। ইতিপূর্বে ইব্‌ন ইসহাক সূত্রে আমরা উল্লেখ করেছি যে, নুমান ইব্‌ন মুনযির হচ্ছেন রাবীআ ইব্‌ন নাসর এর বংশধর। উপরন্ত জুবায়র ইব্‌ন মুতইম সূত্রে ইব্‌ন ইসহাক উল্লেখ করেছেন যে, নুমান হল কায়সার ইব্‌ন মার্দি ইব্‌ন আদানানের বংশধর। বস্তৃত৷ নুমান ইব্‌ন মুনযিরের বংশ তালিকা সম্পর্কে এ তিন প্রকারের বক্তব্য এসেছে। এই সূত্রে ইব্‌ন হিশাম (র) হাৰ্যর অধিপতি সাতিরুন- এর আলোচনার অবতারণা করেছেন। হায্যর হল একটি বিশাল দূর্গ 1 বাদশা সাতিরুন ফোরাত নদীর তীরে এটি নির্মাণ করেন। প্রাসাদটি গগনচুম্বী, সুউচ্চ, সুপ্ৰশস্ত ও বিশালায়তন। এটির চৌহদী একটি বিরাট শহরের সমান। দৃঢ়তা, সৌন্দর্য ও চমৎকারিত্বে এটি তুলনাহীন। চতুর্দিক থেকে সড়ক ও জনপথ সমূহ এখানে এসে থেমেছে। সাতিরুনের নাম দীবান ইব্‌ন মুআবিয়া ইব্‌ন উবায়দ ইব্‌ন আজরম। আজরম হল সাতিহ ইব্‌ন হুলওয়ান ইব্‌ন ইলাহাফ ইব্‌ন কুযাআ-এর বংশধর। ইব্‌ন কুযাআ তার এ বংশ তালিকা উল্লেখ করেছেন।

অন্যান্য কুলজী বিশারদগণ বলেন, সে ছিল জারমুক বংশের অন্তর্ভুক্ত এবং একজন আঞ্চলিক রাজা। তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলে সাতিরুনকে সকলের সম্মুখে এগিয়ে দেয়া হতো। তার দূর্গ ছিল দিজলা ও ফোরাত নদীর মধ্যবর্তী স্থানে।

ইব্‌ন হিশাম বলেন, পারস্য সম্রাট সাপুর যুল আকতাফ আলোচ্য হযর অধিপতি সাতিরুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ইব্‌ন হিশাম ব্যতীত অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেন, হাযর অধিপতি সাতিরুনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল সাপুর ইব্‌ন আব্বাদশীর ইব্‌ন বাবক, সে সাসান গোত্রের প্রথম রাজা। সে আঞ্চলিক রাজাদেরকে পদানত করে পারস্য সাম্রাজ্যের অধীনে ফিরিয়ে এনেছিল। পক্ষান্তরে সাপুর যুল আকতাফ ইব্‌ন হরমুয সে পূর্বোক্ত সাপুর ইব্‌ন আরদশীরের বহুকাল পরের লোক। আল্লাহই ভাল জানেন। এটি সুহায়লীর বর্ণনা। ইব্‌ন হিশাম বলেন, পারস্য সম্রাট সাপুর সাতিরুনকে দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত দুর্গের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখে। অন্যরা বলেন, এই অবরোধের মেয়াদ ছিল চার বছর, আক্রমণের কারণ এই ছিল যে, সম্রাট সাপুর ইরাক সফরে থাকার কারণে অনুপস্থিতির প্রাক্কালে সাতিরুন গিয়ে সাপুরে রাজ্য আক্রমণ করে এবং সেখানে লুটপাট চালায়। প্রতিশোধ স্বরূপ সাপুর তার উপর আক্রমণ করে এবং অবরোধ সৃষ্টি করে। অবরোধকালীন সময়ে একদিন সাতিরুনের কন্যা দুর্গের ছাদে আরোহণ করে। তার নাম নায়ীরা। সম্রাট সাপুরকে দেখে মেয়েটি আসক্ত হয়। সাপুরের পরনে ছিল রেশমী কাপড় আর মাথায় ছিল মনি মুক্তা ও ইয়াকুত পাথর খচিত স্বর্ণ মুকুট। সে ছিল সুদৰ্শন ও রূপবান যুবক। নায়ীরা গোপনে সাপুরের নিকট বার্তা পাঠায় যে, পিতার দুর্গের ফাটক খুলে দিলে তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে? সাপুর ইতিবাচক উত্তর দেয়।

সন্ধ্যা বেলা সাতিরুন প্রচুর মদপান করে সে নেশাগ্ৰস্ত হয়ে পড়ে। নেশাগ্ৰস্ত না হয়ে সে ঘুমাতো না ইত্যবসরে নায়ীরা সাতিরুনের মাথার নীচ থেকে দুর্গের চাবি নিয়ে আসে এবং তার এক ক্রীতদাসের মাধ্যমে তা সাপুরের নিকট পাঠিয়ে দেয়। সাপুর প্রাসাদের ফটক খুলে ফেলে। কেউ কেউ বলেন, নায়ীরা ওদেরকে একটি প্রশস্ত ঝর্নার কথা জানিয়ে দেয়। সেটির মধ্য দিয়ে প্রাসাদের ভেতরে পানি প্রবেশ করত। অতঃপর ঐ ঝর্নার ভেতর দিয়ে তারা হযর দুর্গে প্ৰবেশ করে। আবার কেউ কেউ বলেন, হাযর প্রাসাদে অবস্থানরত একটি গুপ্তরহস্য সে তাদেরকে জানিয়ে দেয়। তাদের জানা ছিল যে, একটি নীল কবুতর ধরে তার পা দুটি যতক্ষণ না কুমারী বালিকার রজঃস্রাবের রক্তে রঞ্জিত না করা হবে এবং সেটিকে ছেড়ে না দেয়া হবে ততক্ষণ ঐ ফটক খুলবে না। ঐ কবুতর গিয়ে দুর্গের প্রাচীরে পতিত হলে ঐ যাদুকরী প্রভাব বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং ফটক খুলে যাবে। সাপুর তাই করল এবং দরজা খুলে গেল। সে তখন ভিতরে ঢুকে সাতিরুনকে হত্যা করে হায্যর প্রাসাদকে লুটতরাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় এবং ধ্বংস করে ফেলে। তারপর ন্যায়ীরাকে নিয়ে বিয়ে করে। একরাতে নায়ীরা বিছানায় ঘুমুতে গিয়ে অনিদ্রায় ছটফট করতে থাকে। সাপুর একটি প্ৰদীপ আনিয়ে তার বিছানা পরীক্ষা করে বিছানায় একটি ফুলের পাতা খুঁজে পায়। সে নায়ীরাকে বলে, এটাই কি তোমার অনিদ্রার কারণ? উত্তরে সে বলে, হ্যাঁ, সাপুর বলে তোমার পিতা তোমাকে নিয়ে কি করত? সে বলল, তিনি আমার জন্যে মখমলের বিছানা বিছাতেন। আমাকে রেশমী কাপড় পড়াতেন। হাড়ের মগজ খাওয়াতেন এবং মন্দ পান করাতেন। সাপুর বলে, তুমি তোমার পিতার সাথে যে আচরণ করেছ। এটি কি তুর উচিত প্রতিদান? আমার প্রতি তোমার বিশ্বাসঘাতকতা তা হলে আরো দ্রুততর হবে। অতঃপর তার চুলের বেনীকে ঘোড়ার লেজের সাথে বেঁধে ঘোড়াটিকে ছুটিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে তার মৃত্যু হয়। এ প্রসঙ্গে কবি আশা ইব্‌ন কায়েছ ইব্‌ন ছালাবা বলেন :

الم تر لالحضر اذا اهله بنعمی و هلی خالد من نعم তুমি কি দেখনি হায্যর দুর্গের অধিবাসীদেরকে যখন তারা ভোগ বিলাসে মত্ত ছিল? কোন নিয়ামত ও শান্তি কি চিরস্থায়ী?

اقام به شاهبروا الجنود حولين تضرب فيه القدم বাদশাহ সাপুর দুবছর দুর্গের চারিদিকে তার সৈনিক দ্বারা অবরোধ করে রেখেছিল। তাতে

فلما دعا ربه دعوة – اناب اليه فلم ينتقم যখন তার প্রতিপালক ডাক দিল। তখন সে তার দিকে ফিরে গেল। প্ৰতিশোধ গ্রহণ করল न्ती।

فهل زاده ر به قوة – و مبثل مجاور ه لم یقم তার প্রতিপালক কি তার কোন শক্তি বৃদ্ধি করেছে? ঐ রূপ আশ্রয়দাতা কোন সাহায্য করতে পারে না। Wሕ »

و کان دعا قومهٔ دعوة – هلمهوا الی آمرگم قد صارم সে তার সম্প্রদায়কে ডাক দিয়েছিল। এই বলে যে, তোমরা এগিয়ে আসা এমন এক কর্মের প্রতি যা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে

فموتو اکراما باسیاف گم – آری الموت برجشمه من جشم তোমরা তরবারী ধারণ করে মর্যাদার সাথে মৃত্যুবরণ করা। আমি মনি করি, যে ব্যক্তি কষ্ট সহিষ্ণু মৃত্যু সহজে তার নিকট আসে না।

এ প্রসঙ্গে আদী ইব্‌ন যায়দেরও দীর্ঘ কবিতা রয়েছে যার শেষ কয়টি পংক্তি এরূপঃ

و تذکر رب الخورنق اذ- آشرف یوما و لالهدی تفکیر তুমি স্মরণ কর খাওরানাক ১ প্রাসাদের মালিকের কথা। একদিন সে প্রাসাদের ছাদে উঠেছিল। তার জীবনে হেদায়াত প্রার্থীদের জন্যে চিন্তার খোরাক রয়েছে।

سرهٔ مالهٔ وکثرهٔ ما یمللن و البحر مغرضا و السنکیر তার ধন-সম্পদ ও মালিকানাধীন বস্তুসমূহ তাকে আনন্দ দান করেছিল।

فارعوی قلبهٔ وقال و ما غبثطهٔ حی الی الممات یصیر অবশেষে তার অন্তর সুপথ প্রাপ্ত হল এবং সে বলল, কোন জীবিত ব্যক্তির ঈর্ষণীয় কীই বা আছে? সে তো মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।

অবশেষে তারা হয়ে গেল শুকনো পাতার ন্যায়। পূবাল ও পশ্চিমী বায়ু সেটিকে ওলট-পালট করে দেয়।

প্রথম নুমান কর্তৃক নির্মিত রাজপ্রাসাদ

আমি বলি কবিতায় উল্লেখিত খাওরানাক প্ৰসাদের মালিক হলো প্রাচীন যুগের অন্যতম খ্যাতিমান রাজা। তার অপচয়, সত্যুদ্রোহিতা সীমালংঘন, গোড়ামী, কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং আপন প্রতিপালকের অবাধ্যতার জন্যে সে যুগের জনৈক আলেম তাকে উপদেশ দেন। তার পূৰ্ববতী রাজা বাদশাহ ও রাজ্য রাজত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি তাকে উপদেশ দেন যে, কেমন করে ওরা সবাই ধ্বংস হয়ে গেল এবং তাদের কেউই অবশিষ্ট থাকল না। তিনি আরো বললেন, অন্যের নিকট থেকে যে রাজত্ব হস্তান্তরিত হয়ে আপনার নিকট এল আপনার মৃত্যুর পর সেটি হস্তান্তরিত হয়ে অন্যের নিকট চলে যাবে। উক্ত আলেমের উপদেশ তার মনে গভীর রেখাপাত করে এবং চূড়ান্ত ভাবাবেগের জন্ম দেয়। ফলে তার অন্তর হিদায়াতের দিকে ফিরে আসে। সে একদিন একরাত চিন্তা করে। সংকীর্ণ কবরের ভয় তার অন্তরে জাগে। অতঃপর সে তাওবা করে। এবং ইতিপূর্বেকার সকল অপকর্ম থেকে নিবৃত হয়। সে রাজত্ব ত্যাগ করে। ফকীর বেশে মাঠে প্রান্তরে ঘোরা ফেরা করে এবং নির্জনতাপ্রিয় হয়ে উঠে। প্রবৃত্তির অনুসরণ ও বিশ্ব প্রতিপালকের অবাধ্যতা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখে।

শায়খ ইমাম মুওয়াফফিক ইব্‌ন কুদাসা মুকাদ্দিসী (র) তাঁর আত তাউয়াবীন কিতাবে এই ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন। মজবুত সনদে সুহাইলী তার সুবিন্যস্ত কিতাব আররাওযুল উনুফ কিতাবে এটি উল্লেখ করেছেন।

আঞ্চলিক রাজাদের বিবরণ

ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে হায্যর অধিপতি সাতিরুন ছিল আঞ্চলিক রাজাদের মধ্যে শ্ৰেষ্ঠ। তার মেসিডোনিয়ার ফিলিপস তনয় গ্ৰীকসম্রাট আলেকজান্ডারের যুগ। কারণ তিনি যখন পারস্য সম্রাট দারা ইব্‌ন দারার বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন, তার সম্রাজ্য পদানত করেন এবং তার

করে যেন তখন তিনি এই সংকল্পও করেন যে, অতঃপর তারা যেন কোন প্রকারেই ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে। এজন্যে তিনি তাদের এক একজন লোককে আরব-অনারব অঞ্চলের এক একটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের জনগণের জন্য রাজা রূপে মনোনীত করেন। এদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকার নিরাপত্তা বিধান করে। বহিরাক্রমণ থেকে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করত এবং কর আদায় করত। সংশ্লিষ্ট কোন রাজার মৃত্যু হলে তারই কোন পুত্র কিংবা ঐ সাম্প্রদায়ের অন্য কাউকে তার স্থলে রাজা রূপে নিয়োগ করা হতো। প্রায় ৫০০ বছর এভাবেই অতিবাহিত হয়। তারপর / আবির্ভাব হয় সম্রাট  আরদশীর ইব্‌ন বাবকের। তিনি ছিলেন সাসান (ইব্‌ন বাহমান ইব্‌ন ইসকান দিয়ার ইব্‌ন ইয়াশতাসিব ইব্‌ন লাহরাসিব)-এর অন্যতম পুত্র। তিনি পারস্য রাজ্য পুনরুদ্ধার করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়। তিনি সকল আঞ্চলিক রাজ্য তার অধীনে নিয়ে আসেন আঞ্চলিক সকল রাজার রাজ্যের তিনি বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। তাদের কোন ধন সম্পদ তিনি অক্ষুন্ন রাখেননি। তাদের সংশ্লিষ্ট রাজ্য হায্যর পুনর্দখল হয় অনেক দেরীতে। আরব্দশীরের মৃত্যুর পর তার পুত্ৰ সাপুর তা অবরোধ করেন এবং তা দখল করে নেন। ইতিপূর্বে এ ঘটনা আলোচনা হয়েছে। আল্লাহই ভাল জানেন।

ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধরগণে এবং জাহেলী যুগ থেকে নবুওয়াত প্ৰাপ্তিকাল পর্যন্ত ঘটনাবলী

নবীগণের আলোচনা প্রসংগে হযরত, ইসমাঈল (আ)-এর কথা আলোচিত হয়েছে। তাঁর মা হাজেরাসহ তাকে সাথে নিয়ে পিতা ইবরাহীম (আ) মক্কায় যে আগমন আলোচনা করেছিলেন। এবং ফারান পর্বতের পাদদেশে তাদের বসবাসের ব্যবস্থা করে ছিলেন তাও আলোচিত হয়েছে।

সেখানে তাঁর না ছিল কোন বন্ধু-বান্ধব আর না ছিল কোন সহানুভূতিশীল লোক। তখন হযরত ইসমাঈল (আ) দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন। আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইবরাহীম (আ) তাদেরকে সেখানে রেখে চলে যান। এক থলে খেজুর ও এক মাত্র পানি ছাড়া হাজেরা (আ)-এর নিকট তখন অন্য কিছু ছিল না। তা শেষ হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তাআলা হযরত হাজেরা (আ)-এর জন্যে যম যম কুয়ো উৎসারিত করে দেন। এটির পানি ছিল একই সাথে সুমিষ্ট খাদ্য স্বরূপ ও রোগের প্রতিষেধক। ইমাম বুখারী (র) বর্ণিত হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর দীর্ঘ হাদীসটিতে তা আলোচিত হয়েছে। এরপর মক্কায় হাজিরা (আ)-এর পার্শ্ববতী এলাকায় আগমন করে জুরহুম গোত্র। এ কুয়ো থেকে তাদের শুধুমাত্ৰ পানি পান করার ও প্রয়োজনীয় কার্যাদি সমাধার অনুমতি ছিল।

সঙ্গীরূপে তাদেরকে পেয়ে হযরত হাজেরা স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। হযরত ইবরাহীম (আ) নিয়মিত তাদের খোঁজখবর নিতে আসতেন। কথিত আছে যে, বায়তুল মুকাদ্দস ও মক্কা যাতায়াতে তিনি বুরাকে আরোহন করতেন। হযরত ইসমাঈল যখন দৌড়াদৌড়ি করার মত বয়সে পৌছলেন এবং পিতার সাথে কাজ করার মত তরুণে পরিণত হলেন তখন তার কুরবানী বিষয়ক ঘটনাটি সংঘটিত হল। ইতিপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, বিশুদ্ধ মতানুযায়ী হযরত ইসমাঈল (আঃ)-কেই কুরবানীর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। হযরত ইসমাইল (আঃ) বয়ঃপ্রাপ্ত হলে জুরহুম গোত্রের এক মহিলার সাথে তাঁর বিবাহ হয়। পরে ঐ স্ত্রীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং তিনি অন্য মহিলাকে বিবাহ করেন। এবার তিনি বিবাহ করেন মুদাদ ইব্‌ন আমর জুরহুমীর কন্যা সাইয়েদাকে। তার গর্ভে ১২ জন পুত্ৰ সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। ইতিপূর্বে তাদের কথাও আলোচিত হয়েছে। এ পুত্ৰগণ হলেন নাবিত, কায়যার, মানশা, মিসমা, মাশী, দিম্বা, আযর, ইয়াতুর, নায়শী, তাইমা এবং কায়যুমা। মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক ও অন্যরা কিতাবীদের গ্রন্থ সূত্রে এরূপই উল্লেখ করেছেন। হযরত ইসমাঈল (আঃ)- এর একজন মাত্র কন্যা সন্তান ছিলেন। তার নাম ছিল নাসিমা। তাঁর ভ্রাতুষ্পপুত্র ঈসূ ইব্‌ন ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীমের নিকট তাকে বিবাহ দেন। ঐ কন্যার গর্ভে রূম ও কারিমের জন্ম হয়। এক বর্ণনা মুতাবিক আশাবানও তাঁর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন।

হেজাজী আরবগণ বিভিন্ন গোত্র ও উপগোত্রে বিভক্ত হলেও বংশগত উৎসের দিক থেকে তারা হযরত ইসমাঈল (আ)-এর দুপুত্ৰ নাবিত ও কায়যার-এর বংশধর। হযরত ইসমাঈল (আ) এরপর তাঁর পুত্ৰ নাবিত কাবা শরীফ ও যমযমের তত্ত্বাবধায়ক, মক্কা মুকাররমার প্রশাসক হন এবং ঐ অঞ্চলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি জুরহুমীদের ভাগ্নেও বটে। এরপর ভাগ্নেদের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে জুরহুমীগণ কাবা শরীফের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। অতঃপর ইসমাঈল বংশীয়দের স্থলে তারাই দীর্ঘদিন মক্কা মুকাররমা ও পার্শ্ববতী এলাকা শাসন করে। নাবিত এরপর জুরহুমীদের মধ্যে সর্বপ্রথম শাসনভার গ্রহণ করে মুদাদ ইব্‌ন আমার ইব্‌ন সাদ ইব্‌ন রাকীবি ইব্‌ন আবীর ইব্‌ন নাবিত ইব্‌ন জুরহুম। জুরহুম ছিলেন কাহতানের পুত্র।

কেউ কেউ বলেন, জুরহুমের বংশ তালিকা হল জুরহুম ইব্‌ন ইয়াকতান ইব্‌ন আবীর ইব্‌ন শালিখা ইব্‌ন আরফাখশান্য ইব্‌ন সাম ইব্‌ন নূহ। তিনি বসতি স্থাপন করেছিলেন মক্কার উচু অঞ্চল কাইকাআল নামক স্থানে। কাতুরা সম্প্রদায়ের নেতা সামীদা তার সম্প্রদায়কে নিয়ে বসতি স্থাপন করেন মক্কার নিম্নাঞ্চলে। তাদের উভয়ে নিজ নিজ এলাকা দিয়ে মক্কায় যাতায়াতকারী কাফেলা থেকে কর উত্তল করত। পরবর্তীতে জুরহুম ও কাতুরা সম্প্রদায়ের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং তারা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে সামীদা নিহত হয়। মুন্দাদের ক্ষমতা অধিকতর দৃঢ় হয়। তিনি মক্কা মুকাররমা ও বায়তুল্লাহর একচ্ছত্র শাসকরূপে আবির্ভূত হন। ইসমাঈল বংশীয় লোকজন তখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ মর্যাদাবান এবং মক্কায় ও অন্যান্য স্থানে প্রভাব রিস্তারকারী ছিল। কিন্তু মুদাদ তাদের মাতুল হওয়ার কায়ণে এবং বায়তুল্লাহ শরীফের সম্মানের খাতিরে ইসমাঈল বংশীয় কেউ তার বিরুদ্ধাচারণ করেন নি। মুন্দাদের পর তার পুত্ৰ হারিছ কর্তৃত্ব লাভ করে। তারপর ক্ষমতা লাভ করেন হারিছের পুত্র আমর। এরপর জুরহুম গোত্র মক্কায় সত্যুদ্রোহিতা ও অনাচারে লিপ্ত হয়। তারা চরম অশান্তি সৃষ্টি করে। মসজিদুল হারামে পাপ কাৰ্য সংঘটিত করে।

কথিত আছে যে, আসাক ইব্‌ন বুগা নামক জনৈক পুরুষ এবং নাইলা বিনত ওয়ায়িল নামী এক মহিলা কাবা শরীফে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। আল্লাহ তাআলা তাদের দুজনকে পাথরে পরিণত করে দেন। তাদের দুজনকে দেখে মানুষ যেন শিক্ষা গ্ৰহণ করে এ উদ্দেশ্যে তাদের প্রস্তরমূর্তি বায়তুল্লাহ শরীকের অদূরে এক জায়গায় স্থাপন করা হয়। দীর্ঘদিন পর খুযাআ গোত্রের শাসনামলে মানুষ আল্লাহকে ছেড়ে এ দুটি মূর্তির উপাসনা শুরু করে। শেষ পর্যন্ত তারা আসাফ ও নাইলা নামের দেব-দেবীতে পরিণত হয়।

জুরহুম গােত্র যখন হারাম শরীফ ও সম্মানিত নগরীতে ব্যাপক হারে পাপাচার ও সীমালংঘন শুরু করে তখন খুযাআ গোত্র তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। খুযাআ গোত্র ইতিপূর্বে হারাম শরীফ এলাকায় বসবাস করছিল। তারা ছিল আমর ইব্‌ন আমির-এর বংশধর। ইয়ামানের বঁাধ ভাঙ্গা প্লাবনের ঘটনায় সে ইয়ামান ত্যাগ কয়ে এ অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেছিল। কেউ কেউ বলেন যে, খুযাআ ছিল হযরত ইসমাঈল (আ)-এর বংশধর। আল্লাহ ভাল জানেন।

বস্তৃত জুরহুমীদের অনাচারের প্রেক্ষিতে খুযাআ গোত্র ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে সংঘবদ্ধ হয় এবং ওদেরকে যুদ্ধের আহবান জানায়। উভয় পক্ষে যুদ্ধ হয়। এ সময়ে ইসমাঈল বংশীয়গণ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে। যুদ্ধে খুযাআ গােত্রের জয় হয়। তারা বনু বকর ইব্‌ন আবদ মানাত গোত্র ও গাবশান গোত্র, তারা জুরহুমীদেরকে বায়তুল্লাহ শরীফ ও তৎসংলগ্ন এলাকা থেকে বহিষ্কার করে। তখন তাদের নেতা আমর ইব্‌ন হারিছ ইব্‌ন মুদাদ জুরহুমী বায়তুল্লাহ শরীফের দুই প্রধান ও প্রিয় বস্তু রুকন ও হাজরে আসওয়াদ খুলে নেয়। সাথে অলংকৃত

৩৫৬ ৷ আল-বিদাৰিয়া ওয়ান নিহায়া

তরবারগুলো এবং অন্য কতক বস্তু কাবা শরীফ থেকে খুলে নিয়ে সবগুলো যম যম কূপের মধ্যে পুতে ফেলে এবং যম যম কূপে একটি চিহ্ন স্থাপন করে। অবশেষে নিজের সম্প্রদায়ের লোকজনসহ সে ইয়ামানে ফিরে যায়।

এ উপলক্ষে দলনেতা আমর ইব্‌ন হারিছ ইব্‌ন মুদাদ বলেন :

و قائلة والد مع سكب مبادر – وقد شرقت بالدمع منها المحاجر এ সব প্রত্যাবর্তনকারী কাফেলা তাদের অশ্রুরাশি দ্রুত গড়িয়ে পড়ছে। এদিকে চোখের অশ্রু ঝড়িয়ে মক্কার হাতীম ও সম্মানিত স্থানগুলোও পূর্বদিকে যাত্রা করেছে।

كأن لم يكن بين الحجون الى الصفا – ولم سيمر بمكة سامر যেন সুদূর সাফা পর্বত পর্যন্ত পাহাড়ে পর্বতে তার কোন বন্ধু ছিল না এবং ছিল না মক্কা ভূমে রাত্রে একান্ত কথা বলার কোন সুজন।

فقلت لها والقلب منى كأئما – يلجلجه بين الجناحين طائر প্রিয়ভূমি মক্কার উদ্দেশ্যে আমি বললাম, তখন আমার হৃদয় এমন অস্থির ছিল, যেমন থাকে দুপাখার মাঝখানে মাথা আছড়ানো পাখি।

بلى نحن كنا أهلها فاز الثا – صروف الليالفى والجذور العواثر হ্যাঁ আমরাই তার উপযুক্ত অধিবাসী ছিলাম, অতঃপর যুগচক্র ও বদনসীবী আমাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিল।

وكنا ولاة البيت من بغد نابت – نطوف بذالك البيت والخير ظاهر

তাওয়াফ করতাম। এতে কল্যাণ ও লাভ তো সুস্পষ্ট।

وزحن ولينا البيت من بغدا نابت – بعز فما يظى لدينا المكاثر নাবিতের পর আমরা অত্যন্ত সম্মান ও গৌরবের সাথে ঐ গৃহের তত্ত্বাবধান করেছি। ফলে পরম ঐশ্বৰ্যশালী ব্যক্তিও আমাদের ন্যায় সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেনি।

ملكنا فعززنا فاعظم بمكنا – فليس لحي غيرنا ثم فاخر

গৌরবের। সেখানে আমরা ব্যতীত অন্য কোন গোত্র ও সম্প্রদায়ের জন্যে অহংকার প্রদর্শনের অবকাশ ছিল না।

الم تنكحول من خير شخص و علم تنهٔ – فأبناؤه منا ونحن ألأصاهر তোমরা কি শ্ৰেষ্ঠ ব্যক্তির সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করনি? নিশ্চয়ই আমি তো তা জানি। সুতরাং সে ব্যক্তির ছেলেমেয়ে আমাদেরই রক্ত সম্পর্কিত এবং আমরা শ্বশুর গোষ্ঠী। فان تنثنى الدّنيا علينا بحالها – فان لها حالأوفيها التشاجر

পৃথিবী যদি তার পূর্বাবস্থা সহকারে পুনরায় আমাদের নিকট ফিরে আসে। তবে তখন তার একটা স্মরণযোগ্য অবস্থা সৃষ্টি হবে এবং তাতে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মুকাবিলা হবে।

فأخرجنا منها المليك بقُدّرة – كذلك يا للناس تجرى المقادر মহান মালিক ও প্ৰভু আপনি কুদরাতে আমাদেরকে ওখান থেকে বের করে দিলেন। হায়! এভাবেই মানুষের জন্যে অদৃষ্টর লিখন কার্যকর থাকে।

أقول اذا نام الخلى ولم أنتم – اذا ألعرش لا يبعد سهيل وعامر উদ্বেগ উৎকণ্ঠাহীন ব্যক্তিবর্গ যখন নিশ্চিন্তে ঘুমায় তখনও আমি ঘুমাই না, আমি জেগে৷ জেগে বলি, হায় আরশ যেন সুহায়াল ও আমিরকে বিতাড়িত না করে।

وبدأت منها أوجها لا أحبها – قبائل منها حمير ويحابير শেষ পর্যন্ত আমার পরিবর্তে এমন কতক লোককে স্থান দেয়া হয়। আমি যাদেরকে ভালবাসি না। তারা হল হিমায়ার ও ইউহাবির গোত্ৰ।

وصرنا أحاديث وكنا بغبيلة – بذلك عضثنا السنون الغوابر অনন্তর আমরা হয়ে গেলাম কাহিনীর বিষয়বস্তু ও ইতিহাসেৱ উপাদান। অথচ আমরা ছিলাম অন্যের ঈর্ষার কারণ। অনাগত কাল পরিক্রমা আমাদেরকে দংশন করেছে।

فسحت ذموم العين تبكى لبلدة – بها حرم أمن وفيها المشاعر চোখে অশ্রু নিৰ্গত হল অবিরাম, সেই শহরের জন্যে ক্ৰন্দনের কারণে যে শহরে রয়েছে হারাম শরীফ এবং যেখানে রয়েছে কুদরতের নিদর্শনাবলী।

و تبكى لبيت ليس بؤذى حمامه – يظل به أمنا وفيه العصافر চক্ষু ক্ৰন্দন করছিল সেই মহান গৃহের জন্যে যেখানে কবুতর কষ্ট পায় না। বরং যেখানে এসে নিরাপদে ছায়া ভোগ করে, যেখানে রয়েছে নিরুদ্বিগ্ন চড়ুই পাখির দল।

و فیه و حوش لاتر ام آنیسهٔ – اذا خرجت منهٔ فلیس ثغادر সেখানে রয়েছে বন্য পশু পাখি, সেগুলোকে পোষ মানানোর প্রয়াস চাওয়া হয় না। সেগুলো সেখান থেকে একবার বেরিয়ে গেলেও স্থায়ীভাবে সে স্থান ছেড়ে যায় না।

ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, জুরহুমীদের পরে মক্কার কৃর্তৃত্ব গ্রহণকারী বনু বকর ও গাবশান গোত্রের কথা উল্লেখ করে আমর ইব্‌ন হারিছ ইব্‌ন মুদাদ আরও বলেছেন : یا آیها الناس سپروا ان قصار گم – أن تُصبحوا ذات يوم لأتتسيرونا

হে লোক সকল! (বনু বকর ও গাবশান) তোমরা ভ্ৰমণ কর এগিয়ে যাও। কারণ তোমাদের শেষ সীমানা এতটুকু যে, এমন একদিন আসবে যখন তোমরা আর চলাচল করতে পারবে না।

উটকে উত্তেজিত কর, উদ্বেলিত কর এবং তার লাগাম শিথিল করে দাও মৃত্যু আমার পূর্বেই এবং যা করতে চাও মৃত্যুর পূর্বেই তা করে নাও।

كنا أناسا كما كنتم فغيرنا – دهر فأنتم كما صرنا تصيرونا তোমরা এখন যেমন আমরাও একসময় তেমন ছিলাম। কালচক্র আমাদেরকে পরিবর্তিত ও স্থানান্তরিত করে দিয়েছে। আমরা যেরূপ হয়েছি। আমাদের যে পরিণতি হয়েছে তোমরাও সেরূপ হবে।

ইব্‌ন হিশাম (র) বলেন, আমর ইব্‌ন হারিছের কবিতাগুলোর মধ্যে এগুলোই আমরা বিশুদ্ধ সূত্রে পেয়েছি কতক কবিতা বিশেষজ্ঞ আমাকে জানিয়েছেন যে, এগুলোই আদি আরবী কবিতা। ইয়ামান দেশে পাথরে লিখিত অবস্থায় এগুলো পাওয়া গেছে। এগুলো রচনা করেছে। কোন ব্যক্তি তার অবশ্য উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সুহায়লী (র) এগুলোর সম পর্যায়ের অনুরূপ আরো কতক কবিতা উল্লেখ করেছেন এবং সেখানে এক অদ্ভূত ঘটনাও বর্ণনা করেছেন এগুলো অন্য ভাষা থেকে আরবীতে রূপান্তরিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, আবুল ওলীদ আযরাকী তাঁর ফাযায়েলে মক্কা গ্রন্থে আমর ইব্‌ন হারিছের উপরোল্লেখিত কবিতার সাথে নিম্নোক্ত কবিতাগুলো সংযোজন করেছেন।

قذ مال ذهر علينا ثم أهلكنا بالبغى فينا وبز الناس ناسونا. কালচক্র আমাদেরকে আঘাত করেছে। অতঃপর আমাদের মধ্যে সত্যদ্রোহীতা সৃষ্টি করে

আমাদেরকে ধ্বংস করেছে। অথচ মানুষের মধ্যে সাহসী ও দক্ষ যোদ্ধা ছিল আমাদের লোকগুলো।

যে, আমাদের জন্যে সত্য পথ যেমন উন্মুক্ত হয়েছিল শেষ পর্যন্ত অপমান ও লাঞ্ছনাও তেমনি

তোমাদের পূর্বে দীর্ঘকাল আমরা মানুষের উপর রাজত্ব করেছি আল্লাহ তাআলার সম্মানিত স্থান হারাম শরীফে বসবাস করেছি। আমরা।,

খুযাআ গোত্র, আমর ইব্‌ন লুহাই এবং আরবদের মূর্তি পূজার সূচনা

ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, বনু বকর ইব্‌ন আবদ মানাতকে বাদ দিয়ে খুযাআ গোত্রের গাবশান উপগোত্র কাবা শরীফের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হয়। আমর ইব্‌ন হারিছ গাবশানী। উক্ত উপগোত্রের দলপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে। কুরায়শ গোত্র তখন পরস্পর বিচ্ছিন্ন ও বনী। কিনানার বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।

○○ s)

ঐতিহাসিকগণ বলেন, ইয়ামান ত্যাগ করে সিরিয়া অভিমূখে যাত্রা কালে আমরা আমর ইব্‌ন আমিরের বংশধরদের মধ্য থেকে তারা বিচ্ছিন্ন ও পৃথক হয়ে যাওয়ার কারণে এদেরকে খুযাআ (বিচ্ছিন্নতা দল) বলা হয়? মারারুদ্য মাহরান নামক স্থানে এসে তারা বসবাস করতে থাকে।

আওন ইব্‌ন আইয়ুব আনসারী খাযরাজী (রা)-এ প্রসংগে বলেন :

আমরা যখন মরু অঞ্চলে অবতরণ করি তখন খুযাআ গোত্র দলবদ্ধভাবে আমাদের থেকে

বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

তারা তিহামা অঞ্চলের সকল উপত্যক সংরক্ষণ কবেছে এবং সুকঠিন বর্শা ও সুতীক্ষ্ণ ধার

আবুল মুতাহহার ইসমাঈল ইব্‌ন রাফি আনসারী আওসী বলেন :

আমরা যখন মক্কার জমিতে অবতরণ করলাম তখন খুযাআ ঐ বৃক্ষ ভর্তি খেজুরের দেশের প্ৰশংসা করল।

নাজদের উচ্চ ভূমি ও সমুদ্র তীরের মধ্যবর্তী সকল গোত্রের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল।

তারা মক্কা ভূমি থেকে জুরুহুম গোত্রীয় লোকদেরকে বিতাড়িত করে এবং সুঠামদেহী খুযাআ গোত্রীয় সম্মানের পোশাক তারা পরিধান করেছে।।

বস্তৃত খুযাআ গোত্র তখন বায়তুল্লাহ। শরীফের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হয়। পুরুষানুক্রমে একের পর এক তারা ঐ দায়িত্ব পালন করে। এই পর্যায়ে তাদের শেষ ব্যক্তি ছিল খলীল ইব্‌ন হাবিশিয়্যা ইব্‌ন সালুল ইব্‌ন কাব ইব্‌ন আমর ইব্‌ন রয়ীআ খুযাঈ। কুসাই ইব্‌ন কিলাব খলীলের কন্যা হিরীকে বিবাহ করে। এই স্ত্রীর ঘরে তিনি ৪টি পুত্ৰ সন্তান লাভ করেন। তারা হল আবদুন্দার, আবদ মানাফ, আবদুল উদ্যযা ও আবদ নামে অপর একজন। অতঃপর বায়তুল্লাহ শরীফের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আসে কুসাই ইব্‌ন কিলাবের হাতে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা যথাস্থানে আসবে ইনশাআল্লাহ।

খুযাআ গোত্র একাধিক্রমে প্রায় ৩০০ বছর মতান্তরে ৫০০ বছর বায়তুল্লাহ শরীফ দেখা শোনার দায়িত্ব পালন করে। আল্লাহই ভাল জানেন। তাদের সময়কালে তারা জঘন্য অনাচারে লিপ্ত হয়। কারণ তাদের শাসনামলেই হেজাযে সর্বপ্রথম মূর্তি পূজার প্রচলন ঘটে। এ অপকর্মের মূল হোতা ছিল তাদের নেতা আমর ইব্‌ন লুহাই। তার প্রতি আল্লাহর লানত হোক! কেননা সেই সর্বপ্রথম তাদেরকে মূর্তি পূজার দিকে আহবান করে। সে অগাধ ধন-সম্পত্তির অধিকারী। কথিত আছে যে, সে ২০টি উটের চোখ বিদ্ধ করেছিল। অর্থাৎ সে ২০ হাজার উটের মালিক হয়েছিল। আরব দেশে প্রথা ছিল যে, কেউ এক হাজার উটের মালিক হলে সে একটি উটের চোখ বিদ্ধ করতো। এটি দ্বারা তারা অবশিষ্ট উটগুলোর প্রতি বদন জর প্রতিরোধের ধারণা পোষণ করত। আযরাকী এরূপ বলেছেন।

সুহায়লী বলেন, আমর ইব্‌ন লুহাই কোন কোন সময়ে হজ্জ উপলক্ষে দশ হাজার উট জবাই করত, প্রতিবছর দশ হাজার জোড়া বস্ত্ৰ দান করত। আরবদের জন্যে ভোজের আয়োজন করত। ঘি, মধু এবং ছাতুর দিয়ে হালুয়া তৈরি করত। ঐতিহাসিকগণ বলেন, আরবদের মাঝে তার কথা ও কাজ শরীয়তের মত অনুসরণ করতো। এটি ছিল তার মর্যাদা, অবস্থান ও তাদের প্রতি তার অকাতর বিদ্যান্যতার ফল।

ইব্‌ন হিশাম (র) বলেন, কতক বিত্তজন আমাকে জানিয়েছেন যে, একদা আমর ইব্‌ন লুহাই কোন এক কাজে মক্কা থেকে সিরিয়া গমন করে। বালকা অঞ্চলে মাআব নামক স্থানে গিয়ে সে দেখতে পায় যে, সেখানকার লোকজন প্রতিমা পূজা করছে। ঐ অঞ্চলে তখন বসবাস করত। আমালীক সম্প্রদায়। তারা ইসলাক-এর বংশধর।

কেউ কেউ বলেন, তারা হল আমালীক ইব্‌ন লাওয ইব্‌ন সাম ইব্‌ন নূহ (আ)-এর ংশধর। প্রতিমা পূজায় লিপ্ত দেখে সে বলল, এগুলো কেমন প্রতিমা যে তোমরা এগুলোর উপাসনা করছ? তারা বললেন, আমরা এ সকল প্রতিমার উপাসনা করি, অতঃপর আমরা ওগুলোর নিকট বৃষ্টি চাইলে ওরা আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ করে। আমরা ওগুলোর নিকট সাহায্য কামনা করলে ওরা আমাদেরকে সাহায্য করে। আমরা বলল, তোমরা কি আমাকে একটি প্রতিমা দিবে যে, আমি সেটি নিয়ে আরব অঞ্চলে যাব এবং আরবগণ এটির উপাসনা করবে? ওরা তাকে হুবল নামের একটি প্রতিমা দান করে এবং লোকজনকে সেটির উপাসনা করার এবং সেটির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়।

ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, হযরত ইসমাঈল (আ)-এর বংশধরদের মধ্যে সর্বপ্রথম মূর্তি পূজা প্রচলনের সূচনা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের ধারণা এই যে, মক্কায় জনজীবন সংকুচিত ও ংকটাপন্ন হয়ে পড়লে তাদের কোন কাফেলা তা থেকে মুক্তিলাভ ও স্বচ্ছতা অর্জনের আশায় অন্য এলাকায় সফর করত। তখন তার হারাম শরীফের প্রতি সম্মান প্ৰদৰ্শন ও বরকত লাভের আশায় হারাম শরীফের এক একটি পাথর সাথে নিয়ে যেত। তারা যেখানে তাঁবু ফেলত সেখানে ঐ পাথর রাখত এবং কাবা শরীফের তাওয়াফের ন্যায় সেটির চারিদিকে তাওয়াফ করত। এভাবেই তাদের রীতি চলে আসছিল। এক সময় তারা তাদের প্রিয় ও পছন্দের পাথর পেলেই তারা উপাসনা শুরু করে দেয়। অবশেষে আগমন ঘটে তাদের উত্তরসূরীদের। এরা সরাসরি মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয় এবং সূচনা পর্বের রীতি ও উদ্দেশ্যের কথা ভুলে যায়।

আস সাহীহ গ্রন্থে আবু রাজা আতারদী থেকে বর্ণিত আছে… তিনি বলেন, জাহেলী যুগে আমরা এমন ছিলাম যে, কোন পাথর না পেলে আমার মাটির স্তুপ তৈরি করতাম। সেখানে একটি বকরী এনে দুধ দোহন করে ঐ মাটিতে নজরানা দিতাম, অতঃপর সেটির চারিদিকে তাওয়াফ করতাম।

ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, এভাবে তারা হযরত ইবরাহীম (আ) ও ইসমাঈল (আঃ)-এর দীন বিকৃত করে প্রতিমা পূজায় লিপ্ত হয় এবং তাদের পূর্ববতী গোমরাহ ও বিভ্রান্তি উম্মতদের ন্যায় একই উম্মতে পরিণত হয়। হযরত ইবরাহীম (আ)-এর দীনে ছিল না, এমন বহু কিছু তার মধ্যে সংযোজন করা সত্ত্বেও তাঁর দীনের কতক নিদর্শন ও রীতিনীতি তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তারা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সেগুলো ধরে রেখেছিল। যেমন বায়তুল্লাহ শরীফকে সম্মান করা, সেটির তাওয়াফ করা ও ওমরাহ করা, আরাফাত ময়দান ও মুযদালফাতে অবস্থান করা, উট কুরবানী করা। হজ্জ ও উমরাহ করার জন্যে ইহরাম বাধা।

কিনানা ও কুরায়শ গোত্র ইহরাম বাঁধার সময় উচ্চস্বরে বলত :

হে আল্লাহর বান্দা হাজির বান্দা হাজির ৷ বান্দা হাজির হে আল্লাহ! আপনার কোন শরীক নেই, তবে একটি শরীক আছে যে আপনারই। আপনি তার এবং তার মালিকানাধীন সবকিছুর মালিক। সে কোন কিছুর মালিক নয়।

তালবিয়্যা উচ্চারণে তারা প্রথম পর্যায়ে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকৃতি দেয়। এরপর তার সাথে তাদের মূর্তিগুলোর কথা উল্লেখ করে এবং সেগুলোর মালিকানা আল্লাহর হাতে ন্যস্ত করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন :

তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে স্বীকার করে কিন্তু তাঁর শরীক করে। (১২ ইউসুফ : ১০৬) অর্থাৎ আমার যথাযথ পরিচিতি জানার প্রেক্ষাপটে তারা আমার একত্ববাদের ঘোষণা দেয়। আর সেই সাথে আমারই সৃষ্টি জগতের কাউকে আমার শরীক সাব্যস্ত করে।

সুহায়লী প্রমুখ বলেন, উপরোক্ত তালবিয়াহ সর্বপ্রথম পাঠ করেছে। আমর ইব্‌ন লুহাই। একদিন একজন বুযুর্গ লোকের রূপ ধরে ইবলীস এসে তার নিকট হাজির হয়। ইবলীস উচ্চস্বরে এই তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকে এবং আমর ইব্‌ন লুহাই তা শুনতে থাকে এবং অনুরূপ পাঠ করতে থাকে। অবশেষে মুশরিক আরবগণ আমর ইব্‌ন লুহাইর পাঠ অনুসরণে এ তালবিয়াহ উচ্চারণ করে। বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে উদ্ধৃত রয়েছে যে :

অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (স) যখন তাদের তালবিয়াহ পাঠ শুনতেন এবং যখন তারা এ, এ11 এI_°১ (বান্দা হাজির আপনার কোন শরীক নেই) পর্যন্ত পাঠ করত তখন রাসূলুল্লাহ (স) বলতেন, থাম, থাম, যথেষ্ট হয়েছে।

ইমাম বুখারী (র) বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, যে নবী করীম (সা) বলেছেন :

সর্বপ্রথম দেবতার নামে পশু উৎসর্গ করেছে এবং মূর্তি পূজা চালু করেছে আৰু খুযাআ আমর ইব্‌ন আমির। আমি তাকে দেখেছি যে, জাহান্নামে সে তার নাড়িতুড়ি হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আলোচ্য বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, আমর ইব্‌ন লুহাই হল গােটা খুযাআ গােত্রের আদি পুরুষ। তার নাম অনুসারেই খুযাআ গোত্রের নামকরণ করা হয়।

ইব্‌ন ইসহাক ও অন্যান্যদের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, কতক বংশ বিশারদ এরূপ বলেছেনও বটে। আমরা যদি এতটুকুতেই সীমিত থাকি তবে এটি একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। কিন্তু কোন কোন বর্ণনা এর বিপরীত এসেছে।

যেমন ইমাম বুখারী (র) সাঈদ ইব্‌ন মুসায়্যাব (রা) সূত্রে বলেছেন, বাহীরা হল সেই প্রাণী যার স্তনকে তাগুত বা দেবতার জন্যে সংরক্ষিত রাখা হয়। অতঃপর কেউই তার দুধ দোহন

করে না। সাইবা হল সেই প্ৰাণী যা তারা তাদের দেবতার নামে ছেড়ে দেয়, অতঃপর তার পিঠে কিছুই চাপানো হয় না।

ইমাম বুখারী (র) আরো বলেন, হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ফরমান : رایت عمرو بن عامر الخزاعی یجر قصبهٔ فی النار کان اول من

سیب السوانب . আমি আমর ইব্‌ন আমির খুযাঈকে দেখেছি জাহান্নামে সে তার নাড়িভূড়ি হেঁচড়িয়ে পথ চলছে। সেই সর্বপ্রথম সাঈবা প্রাণী ছেড়ে দেয়ার রেওয়াজ চালু করে। ইমাম মুসলিম (র)-ও ভিন্ন সূত্রে এটি উদ্ধৃত করেছেন।

সর্বপ্রথম ইমাম আহমদের এ সংক্রান্ত বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে বাহীরা প্রাণী রেওয়াজও সেই চালু করেছে।

উপরোক্ত বর্ণনাসমূহে উল্লিখিত খুযাই শব্দ দ্বারা বুঝা যায় যে, আমর ইব্‌ন আমির খুযাআ গোত্রের আদি ব্যক্তি নয় বরং সেও ঐ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সে বর্ণনায়

তাকে আবু খুযাআ বলা হয়েছে সেটি বর্ণনাকারীর ভ্রমপ্ৰমাদ হতে পারে যে, তিনি আখু খুযাআ, বলতে গিয়ে আবু খুযাআ বলে ফেলেছেন। অথবা এমন ও হতে পারে যে, সে মূলত খুযাআ

গোত্রের একজন ছিল এবং তার উপনাম ছিল আবু খুযাআ। এবং তাকে খুযাআ গোত্রের মূল ব্যক্তি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া ঐ বর্ণনায় উদ্দিষ্ট ছিল না। আল্লাহই ভাল জানেন।

মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক বলেন, মুহাম্মদ ইব্‌ন ইবরাহীম হযরত আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি তিনি আকছাম ইব্‌ন জওন খুবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন হে আকছাম! আমি আমর ইব্‌ন লুহাই ইব্‌ন কামআ ইব্‌ন খিনদাককে দেখেছি জাহান্নামে সে তার নাড়িতুড়ি হেঁচড়িয়ে চলছে। তার সাথে তোমার যে সদৃশ্য এবং তোমার সাথে তার সে সাদৃশ্য এমন আমি অন্য কাউকে দেখিনি। তখন আকছাম বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা)! তার সাথে আমার যে সাদৃশ্য তাতে আমার কি কোন ক্ষতি হবে? রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, না, কোন ক্ষতি হবে না। কারণ তুমি ঈমানদার আর সে কাফির। সেই সর্বপ্রথম ইসমাঈল (আ)-এর ধর্মের বিকৃতি সাধন করেছে, মূর্তি প্রতিমা, স্থাপন করেছে, বাহীরা সাইবা, ওসীলা প্ৰাণী হামী প্ৰাণীকে দেবতার জন্যে সংরক্ষিত রাখাব রেওয়াজ চালু করেছে।

অবশ্য বিশুদ্ধ কিতাবসমূহে এরূপে বর্ণনাটি নেই; ববং ইব্‌ন জারীর (র) আবু হুরায়রা (রা)-এর সনদে এরূপ হাদীস উদ্ধৃত করেছেন।

বুখারী তাবারানী (র) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে প্রায় একই মর্মের হাদীস উদ্ধৃত

করেছেন।

বস্তৃত আমর ইব্‌ন লুহাই আরবদের জন্যে ধর্মের মধ্যে কতক নতুন বিষয়ের প্রচলন ঘটিয়েছে যা দ্বারা সে দীন-ই ইবরাহীমকে বিকৃত করে দিয়েছে। এসব বিষয়ে আরবগণ তার অনুসরণ করেছে। ফলে তারা ন্যাক্কারজনক জঘন্যভাবে পথভ্রষ্ট হয়েছে। আল্লাহ তাআলা। কুরআন করীমের একাধিক আয়াতে এর নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন :

ولا تقولوا لم تصف السنتكم الكذب هذا حلال وهذا حرام لتفت روا

على اللّه الكذب. তোমাদের জিহবা মিথ্যা আরোপ করে বলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার জন্যে তোমরা বলো না। এটি হালাল এবং এটি হারাম। আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন :

ما جعل اللهٔ من بحيرة والأسائبة ولا و صيلة والأحسام ولكن الذين

كفروا يفترون على اللّه الكذب وأكثرهم لا يعقلون . বাহীরা, সাইবা, ওসীলা, ও হাম আল্লাহ স্থির করেন নি। কিন্তু কাফিররা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই উপলব্ধিই করে না। (৫ মায়িদা : ১০৩)

বাহীরা ও অন্যান্য প্ৰাণী সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং এ নামের প্রাণীগুলোর ব্যাখ্যা সম্পর্কে তাফসীরকারদের বিভিন্ন অভিমত বৰ্ণনা করে এসেছি।

আল্লাহ তাআলা বলেন :

আমি ওদেরকে যে রিযক দান করি তারা তার একাংশ নির্ধারিত করে তাদের জন্যে যাদের সম্বন্ধে ওরা কিছুই জানে না। (১৬ নাহল : ৫৬) W

আল্লাহ যে শস্য ও গবাদিপশু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তারা আল্লাহর জন্যে এক অংশ নির্ধারিত করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, এটি আল্লাহর জন্যে এবং এটি আমাদের দেবতাদের জন্যে যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এবং যা আল্লাহর

ংশ তা তাদের দেবতার কাছে পৌঁছায় তারা যা মীমাংসা করে তা নিকৃষ্ট।

ধ্বংস সাধনের জন্যে এবং তাদের ধর্ম সম্বন্ধে তাদের বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা তা করত না। সুতরাং তাদেরকে তাদের মিথ্যা নিয়ে থাকতে দাও। (৬ আনআম : (۹ (حالا –

তারা তাদের ধারণা অনুসারে বলে, এসব গবাদিপশু ও শস্য ক্ষেত্ৰ নিষিদ্ধ। আমরা যাকে ইচ্ছা করি সে ব্যতীত কেউ এসব আহার করতে পারবে না এবং কতক গবাদি পশুর পৃষ্ঠে আরোহণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং কতক পশু জবাই করার সময় তারা আল্লাহর নাম নেয় না। এ সকলই তারা আল্লাহ সমন্ধে মিথ্যা রচনার উদ্দেশ্যে বলে, তাদের এই মিথ্যা রচনার প্রতিফল তিনি অবশ্যই তাদেরকে দিবেন। (৬ আনআম : ১৩৮)

তারা আরও বলে, এ সব গবাদি পশুর গর্ভে যা আছে তা আমাদের পুরুষদের জন্যে নির্দিষ্ট এবং এটি আমাদের স্ত্রীদের জন্যে অবৈধ আর সেটি যদি মৃত হয়, তবে নারী-পুরুষ সকলে সেটিতে অংশীদার। তাদের এরূপ বলার প্রতিফল তিনি তাদেরকে দেবেন। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। যারা নিবুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞানতাবশত নিজেদের সন্তানদের? হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্য নিষিদ্ধ গণ্য করে তারা তো

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা অবশ্যই বিপথগামী হয়েছে এবং তারা সৎপথ প্রাপ্ত ছিল না। (৬ আন আম ১৩৮-৩৯)

আরবদের অজ্ঞতা ও কুসংস্কার

আবু নুমান ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বলেন, তুমি যদি আরবদের অজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাও তবে সূরা আল আনামের ১৩০ নং আয়াতের পরবর্তী আয়াতগুলো পাঠ করা যারা নিবুদ্ধিতার দরুন ও অজ্ঞানতা বশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ গণ্য করে তারা তো

ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে। তারা অবশ্যই বিপথগামী হয়েছে এবং তারা সৎপথ প্রাপ্তও ছিল না। (৬ আনআম ১৪০)

আমরা এ আঁয়াতের ব্যাখ্যা উল্লেখ করেছি এবং তার যে অসত্য ও বাতিল দীন চালু করেছে তাও উল্লেখ করে এসেছি। তাদের গুরু আমর ইব্‌ন লুহাই অবশ্য এটিকে পশু প্রাণীর প্ৰতি দয়া প্ৰদৰ্শন ও কল্যাণ সাধন বলে ধারণা করত এটা নিছক তার মিথ্যাচার। তার এ মুখতা ও ভ্রান্তি সত্ত্বেও আরবের নির্বোধি লোকেরা তার অনুসরণ করে। (১) (সূরা আনআম আয়াত – ১৪০) তাতে বরং তার চাইতেও জঘন্য-এর কাজেও তারা তার অনুসরণ করেছে { আর তা হল আল্লাহর সাথে প্রতিমাদের পূজা করা। আল্লাহ তাআলা শিরক ও অংশীবাদ হারাম করে এককভাবে তাঁরই ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে যে সরল পথও সুদৃঢ় ধর্ম সহকারে হযরত ইবরাহীম (আ)-এ প্রেরণ করেছিলেন তারা তা পরিবর্তিত করে ফেলেছিল এবং সবল-দুর্বল তো দূরের কথা, এমনকি কোন দুর্বল দলীল প্রমাণ ব্যতীত দীনের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও হজ্জের নিদর্শনমূলক বিধানসমূহ বিকৃত করে ফেলেছিল। তারা তাদের পূর্ববতী অংশীবাদী উম্মতসমূহের পথ অনুসরণ করেছিল এবং নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের মত হয়ে গিয়েছিল। বস্তৃত নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ই সর্বপ্রথম আল্লাহর সাথে শিরকের প্রথা চালু করেছিল এবং মূর্তি পূজায় লিপ্ত হয়েছিল। এ জন্যে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি হযরত নূহ (আ)-কে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি ছিলেন সর্বপ্রথম প্রেরিত রাসূল যিনি লোকদেরকে মূর্তিপূজা থেকে নিষেধ করতেন। হযরত নূহ (আ)-এর আলোচনায় তা বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।

এবং তারা বলেছিল, তোমরা কখনও পরিত্যাগ করো না তোমাদের দেব-দেবীকে, পরিত্যাগ করো না ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নাসরকে। তারা অনেককে বিভ্রান্ত করেছে। (৭১ নূহ ২৩) হযরত ইব্‌ন আব্বাস বলেন, ওয়াদ, সুওয়া ইয়াগুছ, ইয়াউক এরা ছিলেন নূহ (আ)-এর সম্প্রদায়ের সৎকর্মশীল লোক। এঁদের মৃত্যুর পর লোকজন এদের কবরে অবস্থান করতো। এভাবে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর লোকজন এদের পূজা শুরু করে দেয়। এদের এই উপাসনার রীতি-নীতি সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করে এসেছি। এখানে তা পুনরুল্লেখের প্রয়োজন নেই।

ইব্‌ন ইসহাক (র) ও অন্যরা বলেন, আরবের লোকেরা যখন হযরত ইসমাঈল (আ)-এর দীনকে পরিবর্তিত করে ফেলল। তখন উপরোল্লেখিত মূর্তিগুলো আরবদের উপাস্যতে পরিণত হল। তখন ওয়াদ প্রতিমা থাকল বনী কালব (ইব্‌ন মুররাহ ইব্‌ন তাগলিব ইব্‌ন হালওয়ান ইব্‌ন ইমরান ইব্‌ন ইলহাফ ইব্‌ন কুযাআ) গােত্রের জন্যে। এটি স্থাপিত ছিল দুমাতুল জান্দাল নামক স্থানে। সুওয়া প্রতিমা ছিল বনী হুযায়ল (ইব্‌ন ইলিয়াস ইব্‌ন মুদরিকাহ ইব্‌ন মুগরি) গোত্রের জন্যে। এটি অবস্থিত ছিল রাহাত নামক স্থানে ইয়াগুছ ছিল এই বংশের বনী আনউম ও মিযহাজ বংশের জন্য এটি অবস্থিত জারশ এলাকায়। ইয়াউক প্রতিমা ছিল। ইয়ামানের হামদান অঞ্চলে। এটি ছিল হামদানের একটি উপগোত্র বনী খায়ওয়ান-এর তত্ত্বাবধানে। নাসর প্রতিমা স্থাপিত ছিল হিমইয়ার অঞ্চলে। মূল কিলা গোত্র ছিল এর উপাসক।

ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, নিজেদের এলাকায় খাওলান গোত্রের একটি মূর্তি ছিল। সেটির নাম ছিল আন্মে আনাস (আনাসের চাচা)। তারা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী চতুস্পদ জন্তুও ফল ফসল তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে বণ্টন করত। বণ্টন আল্লাহ্র জন্যে নির্ধারিত কোন অংশ যদি আন্মে আনাসের ভাগে পড়ত, তবে তা তারা সেখানে রেখে দিত। পক্ষান্তরে আম্মে আনাসের জন্যে নির্ধারিত কোন অংশ যদি আল্লাহর ভাগে পড়ে যেত, তবে তা সেখান থেকে নিয়ে ঐ প্রতিমার ভাগে দিয়ে দিত। তাদের এ অপকর্মে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ

আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তারা আল্লাহর জন্যে এক অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণানুযায়ী বলে, এটি আল্লাহর জন্যে এবং এটি আমাদের দেবতাদের জনে। (আনআম ১৩৬)

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, বনী মলাকান ইব্‌ন কিনানা ইব্‌ন খুযায়মা ইব্‌ন মুদরিকা গোত্রের একটি প্রতিমা ছিল। তার নাম সাদ সাখরাহ। এক উন্মুক্ত ও বিস্তৃত প্রান্তরে ছিল এটির অবস্থান। এক ব্যক্তি তার উটের পাল নিয়ে এসেছিল এ উদ্দেশ্যে যে, উটগুলোকে ওখানে দাঁড় করিয়ে তার ধারণা অনুযায়ী ঐ প্রতিমার আশীবাদ নেবে। আরোহীবিহীন ঐ উটগুলো ঘাস খেতে-খেতে রক্তমাখা প্রতিমা দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যেটি যেদিক পেরেছে ছুটে পালায়। এতে উটের মালিক ক্ষেপে যায় এবং একটি পাথর নিয়ে প্রতিমার দিকে ছুড়ে মারে। সে বলে, আল্লাহ তোমাতে যেন বরকত ও আশীৰ্বাদ না দেন। তুমি আমার উটগুলোকে ছত্ৰভঙ্গ করে দিয়েছ। অতঃপর সে তার উট খুঁজতে বের হয়। উটগুলো একত্রিত করার পর সে বলে :

আমরা এসেছিলাম সাদ এর নিকট এ মকসুদ নিয়ে যে, সে আমাদের অবস্থা সংহত করে দিবে। কিন্তু সে আমাদেরকে আরও বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। ফলে আমরা কোন কল্যাণ লাভে সমর্থ হইনি। সুতরাং আমরা তার কেউ নই।

সাদ তো ধুধু মরু প্রান্তরে অবস্থিত একটি পাথর বৈ অন্য কিছু নয়। সে ভাল বা মন্দ কিছুর জন্যেই প্রার্থনা জানাতে পারে না।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, দাওস গোত্রের আমর ইব্‌ন হামামা দাওসীর একটি প্রতিমা ছিল। কুরায়শরা কাবা শরীফের অভ্যন্তরে একটি কুপের মধ্যে একটি প্রতিমা রেখেছিল। সেটির নাম হুবল। ইতিপূর্বে ইব্‌ন হিশাম (র)-এর বর্ণনায় এসেছে যে, এটি প্রথম প্রতিমা আমর ইব্‌ন লুহাই স্থাপিত প্রথম প্রতিমা।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, তারা আসাফ ও নাইলা নামের দুটো প্রতিমা যমযমের স্থানে স্থাপন করেছিল। ওগুলোর সম্মুখে তারা পশু কুরবানী দিত। এ প্রসংগে পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে। কাবা শরীফের অভ্যন্তরে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় আল্লাহ তাআলা তাদের উভয়কে পাথরে রূপান্তরিত। করে দিয়েছিলেন। ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইব্‌ন আবু বকর হযরত আয়েশা (রা) সূত্রে বলেন, আমরা বরাবরই শুনে এসেছি যে, আসাফ ও নাইলা ছিল একজন পুরুষ লোক ও একজন মহিলা। তারা জুরহুম গোত্রভুক্ত। দুজনে অশ্লীল কাজ করেছিল কাবা শরীফের অভ্যন্তরে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের দুজনকে পাথরে পরিণত করে দেন।

কথিত আছে যে, আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে ঐ অপকর্ম করার অবকাশ দেননি। বরং তার পূর্বেই পাথরে পরিণত করে দেন। এরপরে লোকজন। এ দুটোকে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে নিয়ে স্থাপন করে। এরপর আমর ইব্‌ন লুহাইর সময়ে সেগুলোকে সেখান থেকে তুলে এনে যম যম কূপের স্থানে স্থাপন করে এবং লোকজন। এ দুটোর তাওয়াফ করতে শুরু করে।

এ প্রসংগে আবু তালিব বলেন :

যেখানে আশআরী গোত্রের লোকজন তাদের সওয়ারী থামায় সেই প্লাবনের প্রবাহ পথে আসাফ ও নাইলা রযেছে।

ওয়াকিদী বলেন, মক্কা বিজয়ের দিবসে রাসুলুল্লাহ (সা) যখন নাইলা মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন, তখন দেখা যার যে, সেটি থেকে জনৈকা সাদা কালো চুল বিশিষ্ট কুচকুচে কালো

মহিলা হায়রে দুঃখ, হায়রে ধ্বংস বলে বলে বিলাপ করতে করতে মুখে খামচি মেরে মেরে বেরিয়ে আসল।

সুহায়লী উল্লেখ করেছেন যে, আজ ও সালমা হলো হেজায্যের দুটো পাহাড়। আজা নামের একজন পুরুষ এবং সালমা নামের একজন মহিলার নামে এ দুটো পাহাড়ের নামকরণ হয়েছে। আজা ইব্‌ন আবদুল হাই নামের পুরুষ লোকটি সালম বিনত হাম নামের মহিলাটির সাথে পাপচারে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের দুজনকেই এ দুটো পাহাড়ের শূলিবিদ্ধ করা হয়েছিল। অতঃপর তাদের নামানুসারে পাহাড় দুটো পরিচিত হয়। তিনি বলেন, আজ এবং সালমা এ দুটোর মধ্যখানে তাই গোত্রের কুলস নামক একটি প্রতিমা ছিল।

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, তখন প্রত্যেক গোত্রের পৃথক পৃথক প্রতিমা ছিল। গোত্র ভুক্ত সকল লোক সেটির পূজা-অৰ্চনা করত। তাদের কেউ সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করলে সওয়ারীতে আরোহণ করার সময় ঐ প্রতিমার গায়ে হাত বুলিয়ে যেত। যাত্ৰা প্ৰস্তৃতির এটি ছিল শেষ ধাপ।

VS)S2t

মূর্তি প্রতিমা ছুয়েই সে যাত্রা শুরু করত। সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে সে পুনরায় সেটির গায়ে হাত বুলিয়ে দিত। সফর শেষে গৃহে প্রবেশের পূর্বে প্রতিমা স্পর্শ করা হতো তার প্রথম কাজ। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে যখন তাওহীদের বাণী সহকারে প্রেরণ করলেন তখন তারা বলে উঠেছিল?

সে কি বহু ইলাহের পরিবর্তে এক ইলাহ বানিয়ে নিয়েছ? এটিতো এক অতাশ্চর্য ব্যাপার!

ইব্‌ন ইসহাক বলেন, আরবরা কাবা শরীফের সমান্তরালে আরও বহু পূজামণ্ডপ ও আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ পূজামণ্ডপ হল কতগুলো গৃহ, তারা সেগুলোকে কাবা শরীফের ন্যায় সম্মান করত। ঐ গৃহগুলোর জন্যে নির্দিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক এবং খাদিম ছিল। কাবা শরীফের উদ্দেশ্যে যেমন কুরবানীর পশু প্রেরণ করা হত, ঐ পূজামণ্ডপগুলোর উদ্দেশ্যেও সেরূপ পশু প্রেরণ করা হত এবং কাবা শরীফের তাওয়াফের ন্যায় ঐ গুলোর চরি দিকেও তাওয়াফ করা হত এবং সেগুলোর সম্মুখে পশু যাবাই করা হত। তা সত্ত্বেও ঐ গৃহগুলোর উপর কাবা শরীফের অধিকতর সম্মান ও মর্যাদা ছিল সর্বজনস্বীকৃত। কারণ সেটি ছিল হযরত ইবরাহীম (আ)-এর তৈরী এবং তার মসজিদ।

কুরায়শ ও বনী। কিনানা এর নির্ধারিত প্রতিমা ছিল নাখলাতে অবস্থিত উযযা প্রতিমা। সেটির তত্ত্বাবধায়ক ও খাদিম ছিল বনী হাশিম গোত্রের মিত্র সুলায়ম গোত্রের উপগোত্র বানু। শায়বান। মক্কা বিজয়ের সময় হযরত খালিদ ইব্‌ন ওলীদ (রা) ঐ প্রতিমাটি ভেঙ্গে দিলে যেমন রূপে আসছে বনু ছাফীক গোত্রের নির্ধারিত প্রতিমা ছিল। লাত। এটির আবস্থান ছিল তায়েফে। ছাকীফ গোত্রের বানু মুতার উপগোত্র ছিল ঐ পূজামণ্ডপের তত্ত্বাবধায়ক ও খাদিম। তায়েফবাসীদের নিকট আগমনের পর আবু সুফিয়ান ও মুগীরা ইব্‌ন শুবা (রা) ঐ প্রতিমাটি ভেঙ্গে দিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ পরবর্তীতে আসবে।

তিনি বলেন, আওস ও খাযরাজ গোত্র এবং তাদের সাথে মতাদর্শের অনুসারী মদীনাবাসী যারা ছিল, তাদের জন্যে নির্ধারিত প্রতিমা ছিল মানান্ত। কাদীদ অঞ্চলের মুশাল্লিল নামক স্থানের পাশে সমুদ্র তীরে এটি অবস্থিত। এটিও ধ্বংস করে ছিলেন। হযরত আবু সুফিয়ান (রা)। মতান্তরে আলী ইব্‌ন আবী তালিব (রা)। দাওস খাছআম বুজায়লা এবং এতদঞ্চলের আরবদের মূর্তি ছিল যুলখুলাসােহ। এটি ছিল তাবালা নামক স্থানে। এটাকে কাবা-ই-ইয়ামানিয়্যা বা ইয়ামানের কাবা বলা হতো আর মক্কা শরীফের কাবাকে বলা হত। কাবায়ে শামীয়া বা শামী কাবা। জারীর ইব্‌ন আবদুল্লাহ বাজালী (রা) কর্তৃক যুলখুলাসার উপরোক্ত মূর্তিটি ধ্বংস করেন। তাঈ গোত্র এবং তাঈ অঞ্চলের আজ ও সালমা পাহাড়ের আশে-পাশে যারা ছিল তাদের প্রতিমা ছিল কুলস। এটির অবস্থান ছিল আজ ও সালমা পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে। এ দুটো মশহুর পাহাড়ের কথা ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাআম ছিল হিমইয়ার গোত্র ও ইয়ামান বাসীদের উপাসনালয়। হিমইয়ারী রাজা তুব্বার আলোচনা প্রসংগে এর উল্লেখ করা হয়েছে। এটিও উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুজন ইয়াহুদী ধর্মযাজক ঐ গৃহ ধ্বংস করেছে এবং

Os

সেটি থেকে বেরিয়ে আসা একটি কালো কুকুর হত্যা করেছে রিয়া নামের উপাসনালয়টি ছিল বনী রবীআ ইব্‌ন কাব ইব্‌ন সাদ ইব্‌ন যায়দ মানাত ইব্‌ন তামীম গোত্রের। ঐ উপাসনালয় সম্পর্কে কব ইব্‌ন য়াবী আ ইব্‌ন কাব ওরফে মুসতাওগির বলেন :

আমি প্রচণ্ড আক্রমণ করেছি। রিযা পূজা মণ্ডপে, অতঃপর সেটিকে আমি সমতল ভূমিতে কালো ও শূন্য ভিটেরূপে রেখে এসেছি।

এটি ঘৃণিত করতে আবদুল্লাহং সাহায্য করেছেন। আবদুল্লাহরর মতই আমি ঐ নিষিদ্ধ বস্তুকে আচ্ছাদিত করে দিয়েছি।

কথিত আছে যে, উপরোল্লেখিত পংক্তির রচয়িতা মুসতাওগির ৩৩০ বছর কাল জীবিত ছিলেন। তিনি মুযার গোত্রের সবচাইতে দীর্ঘজীবি লোক ছিলেন। তিনি আরও বলেছেন :

আমি সুদীর্ঘ জীবন কালের কষ্ট ভােগ করেছি এবং কয়েক শতাব্দীর আয়ু পেয়েছি।

مائة حدثها مائتان لى – وازددت من عدد الشهور একশত বছরের পর দুশো বছর এবং অতিরিক্ত আরো কয়েক বছর। ممبر

هل ما بقى الأكما قد فاتنا – يوم يمر وليلة تحذونا আমরা যে যুগ অতিক্রম করে এসেছি, যে রাত দিনের পৌণ-পৌণিক আগমন, পরবর্তী যুগ কি তদপেক্ষা ব্যতিক্রম অন্য কিছু?

ইব্‌ন হিশাম বলেন, এ পংক্তিগুলো যুহায়ার ইব্‌ন জানাব ইব্‌ন হুবল-এর রচিত বলেও কেউ কেউ বলেছেন।

সুহায়লী বলেন, দুশ তিন বছরের অধিক আয়ু যারা পেয়েছিলেন, আলোচ্য যুহায়র ছিলেন তাদের অন্যতম। উবায়দ ইব্‌ন শিরবাহ, বংশ তালিকা বিশারদ দাগফাল ইব্‌ন হানযালা, রাবী

গীতফান প্রমুখ ব্যক্তিও এরূপ দীর্ঘায়ু প্ৰাপ্ত লোক ছিলেন। নাসর ইব্‌ন দাহ দাহমানের এবং তার পিঠ কুজো হওয়ার পর পুনরায় সোজা হয়েছিল।

যুল কাবাত ছিল বকর, তাগলিব ইব্‌ন ওয়াইল ও আইয়াদ গোত্রের উপাসনালয়। এটি ছিল সিনদান অঞ্চলে। এ সম্পর্কে কবি আশা ইব্‌ন কায়স ইব্‌ন ছালাবা বলেন :

بین الخورنقي والسرير وبارق — والبیلبیت ذی الشرفات من سنداد

খাওরানাক, সাদীর, বারিক ও সিনদাদে অবস্থিত সম্মানিত গৃহের মধ্যবর্তী স্থানে। এ পংক্তিমালার আগে আরো কত পংক্তি রয়েছে।

সুহায়লী বলেন, খাওরানাক হল একটি নয়নাভিরাম প্রাসাদ। নুমান-ই-আকবর এটি সম্রাট সাবুরের জন্যে তৈরী করেছিলেন। সিনেমার নামক একজন প্রকৌশলী দীর্ঘ ২০ বছর পরিশ্রম করে এটি নির্মাণ করেন। এর চাইতে সুন্দর কোন প্রাসাদ তখনকার দিনে দেখা যেত না। সিন্নেমার অন্য কোন ব্যক্তির জন্যে এরূপ প্রাসাদ যেন নির্মাণ করতে না পারেন, সে জন্যে নুমানকে ঐ প্রাসাদের ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে। এ উদাহরণ উল্লেখ করে কবি বলেন :

আল্লাহ্ তাকে নিকৃষ্টতম শাস্তি দান করুন, সে আমাকে প্রতিদান দিয়েছে সিন্নেমারের প্রতিদানের ন্যায়। মূলত সিন্নেমারের কোন দোষ ছিল না।

سوى رضفه البنيان عشرين حجة – يُغلّ عليه بالقرامد والسكب তার একটি মাত্র অপরাধ ছিল বিশ বছর ধরে সে ঐ প্রাসাদ নির্মাণ করেছে। পাথর কুচি মোজাইক ও পানি ঢেলে ঢেলে অত্যন্ত যত্ব সহকারে সে এটি তৈরী কৰেছিল। فلما انتهى البنيسان يوما تمامة – واحى كمثل الطود والباذخ عب سمجھ صممي অবশেষে একদিন যখন সেটির নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পীেছল এবং সুউচ্চ ও সুবিশাল টিলার ন্যায় সেটি সুদৃঢ় ও মজবুত হল।

তখন সে ফেলে দিল সিন্নেমারকে ঐ প্রাসাদের চূড়া থেকে। আল্লাহর কসম এটি জঘন্যতম কাজ।

সুহায়লী বলেন, প্রখ্যাত ভাষাবিদ জাহিয। এই কবিতাটি আল মাইওয়ান ওয়াস সিমার মিন আসমাইল কামার নামক গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন।

মূল কথা হল পূর্বোক্ত সকল প্রতিমা পূজার কেন্দ্রগুলো ধ্বংস ও বিনষ্ট করে দেয়া হয়। ইসলামের আবির্ভাবের পর রাসূলুল্লাহ্ (সা) উপরোল্লেখিত প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা ধ্বংস করার জন্যে লোক প্রেরণ করেন। তাঁরা ঐ সবগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দেন। শেষ পর্যন্ত

কাবা শরীফের প্রতিদ্বন্দ্বী কোন গৃহই অবশিষ্ট থাকল না। আর তখন ইবাদত নিবেদিত হতে থাকিল একক লা-শরীক আল্লাহর উদ্দেশ্যে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *