বাড়ি পৌঁছোবার পর সুব্রত যখন দেখল জামাইবাবু এসেছেন, তখন সে বুঝল একটু রাত পর্যন্ত হইহল্লা হবেই। সে দিদিকে বলল, আমি একটু ঘুরে আসছি।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে সুব্রত প্রথম গেল অনিন্দ্যদের বাড়িতে। তাকে বাড়িতে পেল না। তারপর গেল বৃতিকান্তর কাছে। সে-ও বাড়িতে নেই। তারপর সে তাদের নির্দিষ্ট চায়ের দোকানে, ইউনিয়ন অফিসে ঘুরে এল—কোথাও কেউ নেই। আজ সবাই একসঙ্গে কোথায় গেল? বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার যখন দারুণ ইচ্ছে হয়, তখন কারুকে পাওয়া না গেলে মনে হয় সমস্ত পৃথিবী তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র করছে। গত দু-দিন ধরে সুব্রত কারুর সঙ্গে মুখ খুলে ভালো করে কথাই বলতে পারেনি। জ্বর জ্বর ভাবটা কলকাতায় এসেই কেটে গেছে।
তখন তার ক্ষীণ সন্দেহ হল, তাহলে সবাই কি শিখার বাড়িতে গেছে? শিখার আজ জন্মদিন, সে-সম্পর্কে সুব্রতর কোনো সন্দেহ নেই। গতবছর শিখা নেমন্তন্ন করেছিল। এ-বছর তো করেনি। কিংবা এ-বছর শিখা অন্যদের নেমন্তন্ন করে তাকে বাদ দিয়েছে? হতেও পারে। শিখা সব পরীক্ষা দিয়েছে, সে দেয়নি। শিখা পাশ করবেই। কয়েক মাস পরেই শিখা ইউনিভার্সিটিতে চলে যাবে। সুব্রতকে ফিরতে হবে কলেজে—অনেক তফাৎ হয়ে যাবে। সুব্রতর বুকটা মুচড়ে উঠল। এ-রকম ভুল মানুষে করে! তখন খেয়াল হয়নি যে অন্যরা এগিয়ে চলে যাবে! যদি কোনো টাইম-মেশিনে একটা বছর আগে চলে যাওয়া যেত, তাহলে সুব্রত এমনভাবে পড়াশুনো শুরু করত যাতে অনিন্দ্যদের বিট দেওয়া যায়।
শিখাদের বাড়িটা বেশ দূরে। তবু সুব্রত একবার সেখানে না গিয়ে পারল না। অন্তত এইটুকু এখনও দেখা দরকার, শিখা তাকে সত্যিই বাদ দিয়েছে কি না। শিখাদের বাড়ির উলটো দিকে একটু অন্ধকার মতন জায়গা দেখে সুব্রত দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল।
শিখাদের বাড়ির সামনে দু তিনটে গাড়ি দাঁড়িয়ে। বোঝা যায়, ভেতরে অনেক লোকজন। গতবছর শিখা শুধু নিজেদের বন্ধুদেরই নেমন্তন্ন করেছিল, খুব বেশি লোকজন তো ছিল না। এবার কি আত্মীয়স্বজনদেরও বলেছে? কিংবা শিখার বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে গেছে, শুধু বাদ পড়ে গেছে সুব্রত।
অভিমানে সুব্রতর বুকটা ভারী হয়ে আসে। পৃথিবীতে তার আর কোনো বন্ধু নেই। কেউ তার কথা মনে রাখেনি। অনিন্দ্যরাও তো শিখাকে বলতে পারত, কী রে সুব্রতটাকে এবার বলিসনি?
অনিন্দ্য কি এসেছে? ধৃতি? সুব্রত নিজেই শিখাদের বাড়িতে এখন ঢুকে পড়তে পারে না? যেন তার জন্মদিনের কথাটা মনে নেই, এমনিই শিখার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। কিন্তু সুব্রত তা পারবে না। এমনিভাবে একা এসে দেখা করবার অধিকার শিখা তো তাকে দেয়নি।
একটু বাদে দেখা গেল অনিন্দ্য আর দেবযানী মশলা চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে আসছে। যাতে ওরা তাকে দেখতে পায়, তাই সুব্রত আরও দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল। অনিন্দ্য আর দেবযানী দু-জনেই খুব হাসছে। ওদের ঝগড়া ছিল না? অনিন্দ্যটা দেবযানীর কাঁধে হাত রাখল। ওরা বড়োরাস্তার দিকে না গিয়ে উলটো দিকে হাঁটছে। তার মানে যোধপুর পার্কে ওরা বেড়াবে।
তাহলে প্রমাণ হয়ে গেল, শিখা তাকে বাদ দিয়েছে। অনিন্দ্যও বেমালুম ভুলে গেছে তাকে। নাকি শিখা তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করেছিল? মাকে কিছু বলে এসেছিল? কিছুই তো জিজ্ঞেস করেনি।
আরও কারা যেন বেরোচ্ছে! সুব্রত দেখল তার সামনে কয়েকটি ভিখিরি ছেলে-মেয়ে জড়ো হয়েছে। ওরা এসেছে উচ্ছিষ্টের ললাভে। সুব্রতও কী ওদের মতন? সে কী দাঁড়িয়ে আছে শিখাকে এক পলক দেখবার জন্য!
সুব্রত আর দাঁড়াল না। হনহন করে হাঁটতে লাগল বাসরাস্তার দিকে। তার চোখ এখন বিস্ফারিত। ঘরের কোণঠাসা বেড়ালের মতন রাগি হয়ে উঠছে সে। চোয়াল শক্ত। মনে মনে বিড়বিড় করে বলছে, দেখে নেব, সব শালাকে দেখে নেব।
সারারাস্তা ধরে সুব্রত মনে মনে ওই কথা বলতে বলতে ফিরল। মাঝে মাঝে তার মনে পড়ছে, প্রবল ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে সে নৌকোর হাল ধরেছিল। শেষপর্যন্ত পেরেছিল তো, বাবা পর্যন্ত স্বীকার করেছেন। এই সুব্রতই আজ থেকে দশ বছরের মধ্যে ভারতের নেভাল অ্যাডমিরাল জেনারেল, সাদা পোশাক, নীল স্ট্র্যাপ লাগানো টুপি, দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী তাকে ডেকে পাঠাচ্ছে… যুদ্ধ লেগেছে, সাবমেরিনের মধ্যে সুব্রত… বড়োলাকের মোটকা গিন্নি হয়ে শিখা আর দেবযানী তখন খবরের কাগজে সুব্রতর ছবি দেখবে আর প্রতিবেশীদের কাছে গর্ব করে বলবে, ছাত্রবয়েসে একে আমি চিনতাম।
বাড়ি ফিরে দেখল, সকলের খাওয়া হয়ে গেছে। যথারীতি তার খাবার ঢাকা রেখে মা বসে আছেন। বাবা কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছেন। জামাইবাবুর আনা মিষ্টি আর আম খেতে হল সুব্রতকে। একটুও রুচি নেই। কতক্ষণে সে ওপরে নিজের ঘরে যাবে।
ওপরে এসে সে সিগারেট ধরিয়েই ফিজিক্স বই খুলে বসল। এখন থেকে প্রতিরাত্রে অন্তত তিন ঘণ্টা পড়বে। সামনের বছর সে সব শালাকে দেখিয়ে দেবে! যাক-না ওরা এক বছর এগিয়ে, এখনও তো সারাজীবন পড়ে আছে।
সকাল বেলা অনেক ডাকাডাকিতে সুব্রতর ঘুম ভাঙল। মাত্র সাড়ে ছটা বাজে। সে অনেকক্ষণ ঘুমোবে ভেবেছিল। মণি বলল, ছোটোমামু, শিগগির নীচে এসো। দিদু তোমাকে ডাকছেন।
বাবুর ঘরে সবাই ভিড় করে আছে, শিয়রের কাছে মা। ঘরের মধ্যে পা দিয়েই সুব্রতর বুক কেঁপে উঠল।
নিশানাথ সাংঘাতিক অসুস্থ। তিনি হাত, পা কিছুই নাড়তে পারছেন না। চোখ দুটি বিস্ফারিত। গলার আওয়াজ ফ্যাসফেসে। তিনি বলছেন, আমাকে তুলে ধরো! আমাকে দাঁড় করাও।
একজন বিরাট শক্তিমান পুরুষ নিজের হাত-পা-ও নাড়াতে পারছেন না, দৃশ্যটি এমনিই করুণ যে অন্য সবাই নির্বাক। সুব্রত বিশ্বাসই করতে পারছে না। কাল বাবার বুকে চোট লেগেছিল, কেন কাল ডায়মণ্ড হারবারেই সে ডাক্তার দেখায়নি! কিন্তু বাবার অমতে কিছু কি করা যায়?
হয়তো নিশানাথ এখনও হুকুমই দিতে চাইছেন, গলার আওয়াজ যে বদলে গেছে তা নিজেও জানেন না।
সুব্রতর চোখে চোখ রেখে নিশানাথ বললেন, আমাকে তুলে দে। একবার তুলে দিলেই আমি যেতে পারব। আমাকে যেতেই হবে! কথা দিয়েছি।
মা বললেন, খোকন, শিগগির একজন ডাক্তার ডাক। নিশানাথ এই কথাটা শুনতে পেলেন। তিনি বললেন, জীবনকে খবর দাও। অনেক কথা আছে।
সুব্রত আর দেরি করল না। জীবন ডাক্তারকে খবর পাঠানোর কথা পরে চিন্তা করলেও চলবে। একজন যেকোনো ডাক্তার দরকার।
পাড়ার ডাক্তারখানাটা এখনও খোলেনি। ডাক্তারবাবুর বাড়ি অনেক দূরে। এখন সকাল সাতটা, এখন কোথায় ডাক্তার পাওয়া যাবে? হাসপাতালে যাবে কি! তারপরেই সুব্রতর মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে একটা বাসে উঠে পড়ল।
ইন্দ্রাণীদের বাড়িতে তখনও দরজা খোলেনি। রোগীরা আসতে শুরু করে আটটা থেকে। সুব্রত বার বার বেল বাজাতে লাগল। চাকর দরজা খুলতেই সে বলল, ডাক্তারবাবু উঠেছেন? আমার বিশেষ দরকার। না-হলে ইন্দ্রাণীকে খবর দাও, উনি আমাকে চেনেন।
চাকর বলল, বসুন, খবর দিচ্ছি।
লম্বা বেঞ্চটায় বসল সুব্রত। সামনেই একটা দরজা খোলা। টেবিলের ওপর শুয়ে আছে একজন মানুষ। খাড়া নাক আর চিবুকের খানিকটা অংশ দেখেই সুব্রত যন্ত্রের মতন উঠে চলে এল। ভালো করে দেখে শিউরে উঠল একেবারে। দাদা!
আর চিন্তা করারও সময় পেল না, সুব্রত দু-হাত দিয়ে ধাক্কা দিতে লাগল মণীশকে। পাগলের মতন চেঁচাতে লাগল, দাদা, দাদা, দাদা–
মণীশের একটু আগে ঘোর কেটেছে। তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব। চেঁচামেচিতে অত্যন্ত বিরক্তি হয়ে খেকিয়ে উঠল, কেন চেল্লাছিস?
দাদা, আমি খোকন!
খোকন তো তাতে কী হয়েছে? চেল্লাচ্ছিস কেন এত?
শিগগির ওঠো! বাবার খুব অসুখ।
মণীশ পকেটে হাত দিয়ে সিগারেট খুঁজল। এ-পকেট, ও-পকেট খুঁজেও না পেয়ে ভুরু কোঁচকাল। তারপর ধড়মড় করে উঠে বসে বলল, কে?
আমি খোকন।
মণীশ নিজের ছোটো ভাইকে এবার ভালো করে দেখল। আর কিছু বলল না।
এতক্ষণে সুব্রত জিজ্ঞেস করল, তুমি এখানে?
না। বাবার খুব অসুখ, ভীষণ অসুখ।
তোর বাবার তো কখনো অসুখ হয় না। অত ঘাবড়াচ্ছিস কেন?
সুব্রতর মুখের ওপর যেন একটা চাবুক পড়ল। এই দাদা ছিল তার ছেলেবেলার হিরো!
মণীশের চোখ দুটো এখনও টকটকে লাল। চুলগুলো উশকোখুশকো, জামায় ছোপ ছোপ ময়লা লেগে গেছে। মুখখানা ফ্যাকাশে, এখনও নেশা ঠিকমতন কাটেনি, কথা বলার সময় বিশ্রি গন্ধ বেরোচ্ছে।
অমরনাথ দেরি করছেন কেন, সেটা দেখবার জন্য সুব্রত দরজার দিকে এগিয়ে গেল। মণীশ ডেকে জিজ্ঞেস করল, এই শোন, কী হয়েছে?
প্যারালিসিস!
অমরনাথ আর ইন্দ্রাণী একসঙ্গেই নেমে এসেছে। সব শুনে অমরনাথ বললেন, আমি গাড়ি বার করছি। মণীশকে তৈরি হয়ে নিতে বলো!
মণীশ কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল, আমি গিয়ে কী করব?
ইন্দ্রাণী ছুরির মতন চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি যাবে না?
প্যারালিসিস হয়েছে তো, আমি গিয়ে কী করব? আমি তো বলেই দিয়েছি, কারুর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই! কারুর সঙ্গে না!
সুব্রত বলল, ইন্দ্রাণীদি, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
তোমায় যেতে হবে না! তুমি থাকো তোমার অভিমান নিয়ে। চলো সুব্রত
ওর ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার পর মণীশ টেবিল থেকে নামল, জামার বোতামগুলো আটকাল, বেল্টটা ঠিক করল, তারপর হাঁটতে গিয়ে দেখল তার তখনও মাথা ঘুরছে। তবু বেরিয়ে এল ঘর থেকে, সেইসময় চাকর এক কুঁজো জল ভরে আনছিল, তার হাত থেকে কুঁজোটা নিয়ে মণীশ প্রায় অর্ধেকটা জল খেয়ে ফেলল ঢকঢক করে। জল গড়িয়ে ভিজে গেল তার জামা। তারপর বেরিয়ে এল বাইরে।
অমরনাথ তখন গাড়িতে স্টার্ট দিচ্ছেন। মণীশ অনুমতি না নিয়েই সামনের দরজা খুলে বসে পড়ল ভেতরে। ঘাড় ফিরিয়ে ইন্দ্রাণীর দিকে তাকিয়ে বলল, অভিমান নয়।
ওরা যখন পৌঁছোলো, তখন ঘরের মধ্যে স্পষ্ট মৃত্যুর ছায়া। অমরনাথ গম্ভীর হয়ে গেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, কখন থেকে এ-রকম হয়েছে?
সুব্রত বলল, কাল সন্ধ্যে থেকেই বুকে ব্যথা।
এরমধ্যে কোনো ডাক্তার দেখানো হয়নি?
রাজি হননি।
অমরনাথ নিশানাথের পাশে হাঁটুগেড়ে বসে পড়ে বললেন আপনি কি মানুষ?
নিশানাথ কিছু কথা শুনতে পাচ্ছেন না। তাঁর কানের কাছে অসম্ভব জোর একটা ঘর্ঘর শব্দ। তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন, দরজার মধ্যে দুটো ঘুণপোকা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছে। দুটো ঘুণপোকা আসছিল দু-দিক থেকে। মাঝপথে দেখা হয়েছে, একজন জিজ্ঞেস করল, সব ঠিক আছে তো? অন্যজন উত্তর দিচ্ছে, সব ঠিক। চলছে, চলবে। কী সাংঘাতিক জোরালো তাদের কণ্ঠস্বর।
তিনি কথা বলতে পারছেন না। চোখ দুটে খোলা। তিনি দেখলেন, সামনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তাঁর জামাই আর বড়ো ছেলে। ঠিক যেন দুই যমদূত। মণীশ এল কোথা থেকে? কে তাকে ডেকেছে? কেউ ওকে দূর করে দিচ্ছে না কেন? ও কি দয়া দেখাতে এসেছে? চেহারা দেখলেই বোঝা যায়, অধঃপাতের শেষসীমায় গেছে! ও যেন কী বলতে চাইছে, ঘুণপোকারা ঢেকে দিচ্ছে ওদের কথা।
জামাইটাও বদলে গেছে। কাল ওর কাছে পুলিশ এসেছিল। সভ্য, ভদ্র, সৎ লোকের কাছে পুলিশ আসে না। এবার বাড়িটা তছনছ করে দেবে। মেয়েদের কে দেখবে? সব গেল। একবার যদি এরা কেউ তাঁকে তুলে দাঁড় করিয়ে দিতে পারত! সিল্কের জামা পরেছে সঞ্জয়, ঠিক লম্পটদের মতন। এর ওপর অনেকের আশা ছিল। চালচলন একেবারে বদলে গেছে— মণীশ এসে গেছে, এবার ওদের মিলবে ভালো। যদি এখনও এ-দুটোকেই দূর করে দেওয়া যেত! সঞ্জয়ও কী যেন বলতে চাইছে। ঘুণ দুটোর কথা কি ওরা কেউ শুনতে পাচ্ছে না? একবার যদি কেউ তাঁকে তুলে দাঁড় করিয়ে দিত, তিনি দরজাটাই ভেঙে আগুনে গুঁজে দিতেন।
আধ ঘণ্টা বাদে অমরনাথ সরে এসে বললেন, আর কষ্ট দিয়ে লাভ নেই।
সুব্রত তখন তার দাদা আর জামাইবাবুকে ভেদ করে সামনে এসে খাটের পাশে মাটিতে বসে পড়ে ব্যাকুলভাবে বলল, বাবা, আমি জীবনকাকার কাছে ফিরে যাব, আমি কথা দিচ্ছি।
নিশানাথ সে-কথাও বুঝতে পারলেন না। ঘুণ দুটোর শব্দ আরও প্রবল হয়ে উঠে সব কিছু ঢেকে দিচ্ছে। কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম। ছোটো ছেলের মেলে দেওয়া হাতটার দিকে তাকিয়ে তাঁর শুধু মনে হল, এর হাতে এখনও ময়লা লাগেনি। কিন্তু আর কতদিন!
বুকের মধ্যে যেন একটা কুমির বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। নিশানাথের ব্যথা বোধ অনেক কমে গেছে। কিন্তু তার ক্ষীণ সন্দেহ হচ্ছে, বুঝি তার চোখে জল। এই কুলাঙ্গারদের সামনে তিনি চোখের জল ফেলবেন? প্রাণপণ চেষ্টা করলেন, হাতটা তুলে চোখের জল মুছে ফেলার জন্য।
বড়ো একটা নিশ্বাস ফেলার আগে, নিশানাথ পৃথিবীর সব মানুষের মতনই ভাবলেন, জীবনটা যদি গোড়া থেকে আর একবার শুরু করা যেত।