২১. বটতলার ছবি

বটতলার ছবি

বটতলার ছবি ও বাঙালি শিল্পীরা কোনোদিন কোনো শিল্পরসিকের আলোচ্য বিষয় ছিল বলে মনে হয় না। বাইরে জন্মে বটতলার অলিগলিতে তাঁরা বাস করেছেন, অথবা বটতলায় জন্মেছেন, বটতলায় বসে শিল্পচর্চা করেছেন, বটতলার লেখক, পাঠক ও প্রকাশকরা তার তারিফ করেছেন। তারপর একদিন বটতলার কোনো অন্ধকার গলিতে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। কেউ তাঁদের জন্য একবিন্দু চোখের জল ফেলেনি, কোনো শ্রদ্ধাঞ্জলিও তাঁরা পাননি। বটতলার এই বাঙালি শিল্পীরা তার মুখাপেক্ষীও ছিলেন না, কারণ তখনও তাঁরা আত্মসচেতন আর্টিস্ট হননি, দক্ষ কারিগর ছিলেন মাত্র। আর্টিস্ট ও ক্রাফটসম্যানে বিচ্ছেদ ঘটেনি বটতলার কালেও।

বটতলা থেকে চৌরঙ্গি অনেক দূরে, যুগের ব্যবধানও অনেক। প্রায় একশো-দেড়শো বছরের ব্যবধান। এর মধ্যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের পথে বাঙালি সমাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বটতলার যুগে ‘ব্যক্তি’ থাকলেও ‘ব্যক্তিত্ব’ ছিল না। ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপযুক্ত ক্ষেত্র বোধহয় বটতলা নয়, অন্তত তখনও হয়নি। মধ্যযুগের অস্তগামী সূর্যের বর্ণচ্ছটায় তখনও বটতলার আকাশ বেশ উদ্ভাসিত। তাই বটতলার শিল্পীরা তখনও আধুনিক অর্থে শিল্পী হননি, তাঁরা প্রধানত কারিগরই ছিলেন এবং চিরপুরাতন কারিগর। তাঁদের গোষ্ঠী ছিল, গিল্ড ছিল, গিল্ডের কারিগরির বিশেষত্ব ও সুপ্রাচীন ঐতিহ্য ছিল, কিন্তু কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক ‘স্কুল’ ছিল না। ‘মুড’ বা মর্জির তখনও জন্ম হয়নি। অর্থাৎ ইডিওসিনক্রেসিও নয়, ট্র্যাডিশনই তখন সবচেয়ে বড় কথা। এই ট্র্যাডিশন বা ঐতিহ্যের নোঙর ছিঁড়ে খামখেয়ালের উত্তাল সমুদ্রের পাড়ি দেওয়ার যুগ তখনও আসেনি। বটতলার শিল্পীরা তাই ট্র্যাডিশনই আঁকড়ে ধরেছিলেন। তাঁরা ছিলেন কারিগর, চিরাচরিত রীতি ও গতানুগতিক ধারাই ছিল তাঁদের একমাত্র সম্বল। নোঙর ছেঁড়ার তাঁরা সাহস পাননি, পাবার মতন অবস্থাও তখন সৃষ্টি হয়নি। চিরকাল তাঁদের পিতা, পিতামহরা যা এঁকেছেন, যেভাবে এঁকেছেন, বটতলার শিল্পীরা তা—ই এঁকেছেন এবং সেই একই পদ্ধতিতে এঁকেছেন। বিষয়বস্তু বা পদ্ধতি কোনোটাই তাঁরা বদলাননি।

বটতলার যুগ ছাপাখানার যুগ, ছাপা বইয়ের যুগ, বটতলার সাহিত্যের যুগ। বটতলা আর সেই নবাবি আমলের বা নবকৃষ্ণর আমলের বটতলা নেই। পুঁথি—পাণ্ডুলিপির যুগও প্রায় অস্তাচলে। বই ছাপা শুরু হয়েছে, বাংলা বইও। বাঙালি কম্পোজিটার গঙ্গাকিশোর প্রথম উদ্যোগী হয়ে বাংলা বই ছেপে প্রকাশ করা ও বিক্রি করা আরম্ভ করলেন। ছাপলেন ভারতচন্দ্রর ‘অন্নদামঙ্গল’, ১৮১৬ সালে বউবাজারের বটতলার ‘ফেরিস এন্ড কোম্পানি’র প্রেস থেকে। বউবাজার—বটতলার পৌরসীমানার বাইরে হলেও, নৈতিক সীমানার বাইরে ছিল না তখন। দেড়শো বছর আগে বউবাজারের জোব চার্নকের সেই বিখ্যাত বিশ্রামস্থান পিপুলতলায় বসে শোভাবাজারের বটতলা খুব বেশি দূর মনে হত না। ইমারত অট্টালিকার প্রাচীর তখনও বটতলা ও বউবাজারের পিপুলতলার মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করেনি। ‘অন্নদামঙ্গল’ ছাপা হল অবশ্য পিপুলতলা থেকে এবং যিনি ছাপলেন তিনি নিজে ‘বেঙ্গল গেজেটি’ প্রেস করে (১৮১৮ সালে) বটতলার কোলের কাছে উঠে এলেন চোরবাগানে। গ্রাম সেই সময় বিশ্বনাথ দেব প্রেস করলেন এবং চোরবাগানের মল্লিকরাও পিছিয়ে রইলেন না। গঙ্গাকিশোরের বইয়ের ব্যবসায়ে অনুপ্রাণিত হয়ে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করলেন বটতলার মধ্যেই, এবং অল্পদিনের মধ্যে রঙ্গ—ব্যঙ্গ—কৌতুক—সাহিত্যের পসরায় বটতলার আসর সরগরম হয়ে উঠল।

এই সময় শুধু যে বটতলার সাহিত্যিকদেরই চাহিদা বাড়ল তা নয়, শিল্পীদেরও ডাক পড়ল। বই শুধু ছাপা হলেই হল না, অনেক বইয়ের সঙ্গে ছবিও ছাপা দরকার হল। অর্থাৎ শুধু ছাপা বই নয়, সচিত্র ছাপা বইয়েরও প্রয়োজন। এতদিন পুঁথির পাট্টায় ও পৃষ্ঠায় যাঁরা ছবি এঁকেছেন, তাঁদের ডাক পড়ল ছাপা বই চিত্রিত করার জন্য। কাঠখোদাই ছাড়া ছবি ছাপার উপায়ও ছিল না, তার সঙ্গে শুধু ধাতু খোদাই চলত। সুতরাং বটতলার সাহিত্যিকদের সঙ্গে বাঙালি কারিগর—শিল্পীদেরও চাহিদা বাড়ল।

‘অন্নদামঙ্গল’ যখন ছাপা হল তখন শুধু ছাপা হল না, নদিয়ার বিখ্যাত পণ্ডিত পদ্মলোচন চূড়ামণি মহাশয়কে দিয়ে পাঠসংশোধন করে ছাপা হল। তাতেও বই ছাপালে বিক্রি হবে কি না এবং ছাপার খরচ পোষাবে কি না, সে সন্দেহ গঙ্গাকিশোরের মন থেকে গেল না। নবকৃষ্ণের আমল থেকেই বটতলার একটা নিজস্ব রুচি তৈরি হয়েছিল এবং সেটা সুরুচি কি কুরুচি তা বিচার করলে বটতলার বই—ব্যবসায়ীর চলে না। শুধু পদ্মলোচন পণ্ডিতের সংশোধন ও ছাপাখানার ছাপায় যদি বটতলার বাবুরা খুশি না হন, তাহলে গঙ্গাকিশোরের সমস্ত উদ্যম পণ্ড হয়ে যায়। ‘অন্নদামঙ্গল’ ছাপা হবে, অথচ বিদ্যা ও সুন্দরের কাহিনির কোনো ছবি থাকবে না, এ যেন বটতলার যুগে ভাবাই যায় না। দূরদর্শী গঙ্গাকিশোর দু’খানি কাঠখোদাই ও ধাতুখোদাই ছবি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করলেন। খোদাইশিল্পী হলেন রামচাঁদ রায়। বইয়ের বিজ্ঞাপন দেওয়া হল ছবির কথা উল্লেখ করে :

‘অন্নদামঙ্গল ও বিদ্যাসুন্দর পুস্তক……উত্তম বাঙ্গালা অক্ষরে ছাপা হইতেছে পুস্তকের প্রতি উপক্ষণে এক ২ প্রতিমূর্তি থাকিবে।’

গঙ্গাকিশোরের পথ আরও অনেকে অনুসরণ করলেন। বই সচিত্র না হলে বটতলার বই বলেই যেন মনে হয় না। শুধু বই নয়, কতকটা যেন পাল্লা দিয়েই ‘পঞ্জিকা’ ছাপা আরম্ভ হল। পীতাম্বর সেনের যন্ত্রালয়ের পঞ্জিকা, চোরবাগানের মল্লিকদের প্রেসের পঞ্জিকা, চন্দ্রিকা যন্ত্রের পঞ্জিকা, বিশ্বনাথ দেবের প্রেসের পঞ্জিকা, এইরকম আরও অনেক পঞ্জিকা ছাপা শুরু হল। সবই পঞ্জিকা, সুতরাং তার মধ্যে বৈচিত্র্য ও বিশেষত্ব না থাকলে চলবে কেন? পাঁজির আবার বিশেষত্ব কী? তিথি—নক্ষত্র গণনার ও দেবদেবীর ছবির দুয়েরই বিশেষত্ব পাঁজিতে থাকতে পারে। একেবারে রাশিচক্র থেকে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, অন্নপূর্ণা, কার্তিক, গণেশ, কালী, ভাইফোঁটা ইত্যাদির ছবির মধ্যেও বৈচিত্র্য থাকতে বাধা নেই। অতএব পণ্ডিত ও খোদাইশিল্পীরা প্রকাশকদের হয়ে পাল্লা দিতে লাগলেন। কাঠখোদাই ও ধাতুখোদাই ছবিতে পঞ্জিকার পৃষ্ঠা ক্রমে ভরে গেল। বটতলার ছবি অমর হয়ে রইল পাঁজির পৃষ্ঠায়। দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী ইত্যাদি দেবদেবীর মূর্তির কত পরিবর্তন হল পটুয়ার হাতে, কিন্তু পঞ্জিকার পৃষ্ঠায় আজও সেইসব দেবদেবী বটতলার খোদাইশিল্পীদের অক্ষয়কীর্তিস্বরূপ রয়ে গেছেন।

এ ছাড়া, বটতলার শিল্পীদের সঙ্গে এই সময় ইয়োরোপের গ্রিনউডতলার খোদাইশিল্পীরাও যোগ দিয়েছিলেন। কলকাতা শহরে ব্রিটিশ, ফরাসি, ডাচ শিল্পীরা তখন এসেছিলেন এ দেশের জন্তুজানোয়ার, লোকজন, গাছপালা ও সাহেব—নবাবদের ছবি আঁকার জন্য। তাঁদের মধ্যে খোদাইশিল্পীর সংখ্যাও কম ছিল না। বটতলার শিল্পীদের সঙ্গে এই বিলেতি শিল্পীদের যেভাবেই হোক একটা যোগাযোগ যে হয়েছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কে কার শিক্ষক ছিলেন বা কার কাছে শিক্ষানবিশি করেছেন, তা সঠিক বলা যায় না। এইটুকু বলা যায় যে, একটা লেনদেন উভয়ের মধ্যেই হয়েছিল। ধাতুখোদাইয়ের নতুন রীতিনীতি হয়তো এ দেশি শিল্পীরা কিছুটা আবার বিদেশিদের কাছ থেকে শিখেছিলেন। সে যাই হোক, এই ইয়োরোপীয় শিল্পীরা কেবল যে ছবি আঁকতেন তা নয়। আমাদের দেশে লিথোগ্রাফি বা পাথরে ছাপার প্রচলন এঁদের চেষ্টাতেই প্রথম হয়। ১৮২০—২২ সালের মধ্যেই কলকাতায় লিথোগ্রাফিক প্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮২২ সালে ‘ক্যালকাটা জার্নাল’—এর (২৬ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ থেকে জানা যায় যে, মঁসিয়ে বেলনস (Belnos) ও মঁসিয়ে শ্যাভিষাঁক (Shavighnac) নামে দু’জন ফরাসি শিল্পীর চেষ্টায় কলকাতা শহরে লিথোগ্রাফিক প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। বেলনস নামে আর—একজন মহিলা শিল্পী এ—দেশের সামাজিক চিত্রও অনেক এঁকেছিলেন। ইনি বোধহয় মাদাম বেলনস, স্বামী—স্ত্রী দু’জনেই ছিলেন শিল্পী।

লিথোগ্রাফিক প্রেস প্রতিষ্ঠার পর রীতিমতো ছবির বইও ছাপা হতে থাকে। এ সম্বন্ধে একটি চমকপ্রদ খবর ১৮২৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় :

‘—চিত্রবিদ্যা বিষয়ক যাহা সর্বজনগ্রাহ্য বিশেষতঃ এতদ্দেশে শ্রীশ্রীত্মপ্রতিমার প্রতিমূর্তি চিত্র করিতে ও গৃহে রাখিতে সকলেরি অভিলাষ হয় কিন্তু চিত্রবিদ্যা শিক্ষা করিবার কোন উপায় এদেশে না থাকাতে অনেকের তাহাতে মনোযোগ পাই এবং পটুয়া আদি যাহারা জানে তাহারাও উত্তমরূপে পারে না এ প্রযুক্ত চিত্রবিদ্যা সর্ব্বজন শিক্ষার নিমিত্ত ইংরেজি উত্তম চিত্রাভিজ্ঞ সকলের মত গৌরীয় ভাষায় সঙ্কলন করিয়া ও চিত্র আদর্শ নিমিত্ত মনুষ্য ও পশ্বাদির ছবি ১৫ খান পরিমাণ বিশেষ করিয়া এক গ্রন্থ প্রস্তুত হইয়াছে…..’

ইয়োরোপীয় শিল্পীদের আঁকা ও ছাপা এইসব বই যে এ দেশের শিল্পীদের উপর কোনো রেখাপাত করেনি, তা নয়। নিশ্চয় করেছে। লোকজন, জন্তুজানোয়ারের মূর্তির উপর তার প্রভাব নিশ্চয় পড়েছে। বোঝা যায়, কলকাতা শহরে তখন খোদাইশিল্পী ও পটুয়া শিল্পীরাই বেশি থাকতেন। খোদাইশিল্পীদের বাজার বটতলার সাহিত্যের শ্রীবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠল, বটতলাতেই তাঁরা শিল্পচর্চা করতে লাগলেন। আর পটুয়া শিল্পীরা ছিলেন কালীঘাটের মন্দিরের কাছাকছি, তাঁরা প্রধানত তীর্থযাত্রীদের জন্য পট আঁকতেন। কলকাতার নবাগত ইয়োরোপীয় শিল্পীদের সঙ্গে শুধু যে বটতলারই যোগাযোগ হল তা নয়, বটতলা থেকে কালীঘাটের পটুয়াপাড়া পর্যন্ত তার বিস্তার হল। সে কথা কালীঘাটের পটুয়াদের ছবি প্রসঙ্গে বলেছি।

বটতলা ও বটতলার সাহিত্যকে কেন্দ্র করে যেসব বাঙালি খোদাইশিল্পীর আবির্ভাব হয়েছিল তাঁদের মধ্যে রামচাঁদ রায়, বিশ্বম্ভর আচার্য, রামধন স্বর্ণকার, মাধবচন্দ্র দাস, রূপচাঁদ আচার্য, রামসাগর চক্রবর্তী, বীরচন্দ্র দত্ত প্রভৃতির নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। কলকাতা স্কুল—বুক সোসাইটি দ্বিতীয় বার্ষিক বিবরণে (১৮১৮—১৯ সাল) শিল্পী কাশীনাথ মিস্ত্রীর দক্ষতা ও কারিগরির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৮২০ সালের (সেপ্টেম্বর) ‘ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় জোড়াসাঁকো নিবাসী শিল্পীর হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলাকুশলতার উচ্চপ্রশংসা করা হয়েছে। বটতলার শিল্পীরা শুধু বটতলার বাবুদের সাময়িক রুচির খোরাক জোগাননি। তাঁরা যে তখনকার শিক্ষিত সমঝদার শ্রেণির কাছেও বাহবা পেয়েছিলেন, সেটা কম কৃতিত্বের কথা নয়। বটতলার ছবিতে হয়তো নূতনত্ব কিছু নেই, কারিগরিটাও তার অনেকটা অন্ধ অভ্যাসগত যান্ত্রিক কারিগরি। বটতলার ছবি সব ফ্রেমে আঁটা খাঁচায় বন্দি ছবি, তার প্রাণ নেই, প্রসার নেই। না থাক, তবু ছবির ইতিহাসে তার মূল্য আছে। বিশেষ করে কলকাতার বিদেশি শিল্পীদের ছবির সঙ্গে বটতলার ছবির এবং বটতলার ছবির সঙ্গে কালীঘাটের পটুয়াদের ছবির কথা ভাবলে তার মূল্য স্বীকার না করে উপায় থাকে না। বটতলার ছবির আজ কদর না থাকলেও, তার মূল্য আজও রয়েছে দেখা যাচ্ছে। বটতলাতে তো আছেই, স্কুলের অনেক পাঠ্যপুস্তকে এবং পঞ্জিকার পাতায় বটতলার ছবি আজও বিরাজমান। অথচ বটতলার যুগ কবে কেটে গেছে তার ঠিক নেই এবং বটতলার সাহিত্য বা বটতলার ছবি বলতে আমাদের অশ্রদ্ধার সীমা নেই।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *