নহরে জুবায়দার তীর। বিকাল বেলা। খর্জুরবীথির পাশে একটা টিলার উপর আতাহিয়া ও আবু নওয়াস উপবিষ্ট।
আতাহিয়া : নহরে বাতাসের দোলা লাগছে, দ্যাখো দ্যাখো, নওয়াস।
নওয়াস : নারীর স্নেহ পানি-রূপে এখানে বিগলিত হয়ে ঝরে পড়ছে, আতাহিয়া। আহ্, মানবের প্রেম-মমতা যদি এমনই রূপ পেতো!
আতাহিয়া : কিন্তু তুমি দিন দিন এমন উদাসীন হয়ে যাচ্ছ, আমার আর ভাল লাগছে না, আবু নওয়াস। তুমি আর উচ্ছলিত ঝর্ণা নও।
নওয়াস : আতাহিয়া, সাহারা মশ্রুর অনেক নিচে পৃথিবীর বুক যে-পানি সঞ্চিত রেখেছে–তা কি শান্ত, অনুচ্ছল?
আতাহিয়া : তা নয়।
নওয়াস : মাঝে মাঝে উপরে সব শুকিয়ে ফেলতে হয়, ভেতরে সরস তাজা থাকার জন্যে।
আতাহিয়া : কিন্তু আমি তোমার স্তব্ধতা সইতে পারি নে। উপরিভাগ শুকিয়ে ফেলতে যে অনেক কষ্ট, নওয়াস।
নওয়াস : তা ত হবেই। সকলের কথা তোমার মুখ দিয়ে বলার ভার যে নিয়েছ, বন্ধু। তোমার একার বোঝা ত হালকা। কিন্তু শত-সহস্রের বোঝা যখন তোমার কণ্ঠে চাপে—তখন? কে চায় শুকিয়ে সাহারা হতে? কিন্তু প্রাণধারা সঞ্জীবনের জন্য এই বিশুষ্কতাই মাঝে মাঝে বেছে নিতে হয়।
আতাহিয়া : চলো, কোন সরাইখানায় যাই।
নওয়াস : আমি এখন সরাইখানার দর্শক, শরীকদার নই।
আতাহিয়া : তুমি চলো।
নওয়াস : দর্শনকার আর শরীকদার-রূপেই জীবনকে মেলাতে হয় তবেই জীবনের শতদল ফোটে। চলো।
আতাহিয়া : কি চুপ করে যেয়ো না। তোমার কথাই ত আমি শুনতে চাই।
নওয়াস : তা হলে এই বুকে কান পাতো, মুখের দিকে তাকিয়ো না।
আতাহিয়া : যথাদেশ। তা-ই শুনব বন্ধু। চলো, তার আগে কোন পানশালার ওতে আড়াল হয়ে নিই।
নওয়াস : চলো।