২১. দ্য আই অব দ্য স্নেক
রোববার সকালে যখন দুফুট পরিমাণ বরফ জমেছে হারমিওন তখন হ্যাগ্রিডের কেবিনের রাস্তায় যাত্রা শুরু করলো। হ্যারি আর রনের খুবই আসার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু পর্বতপরিমাণ হোমওয়ার্ক ওদের প্রবল ইচ্ছেতে বাধ সাধলো। বাইরের মাঠে ছেলে-মেয়েরা খেলা করছে, তাদের হৈ চৈ হট্টোগোল কানে আসলে কি হবে যাবার তো উপায় নেই, দিনের পর দিন ফেলে রাখা হোমওয়ার্ক শেষ তো করতে হবে। বরফজমা লেকে স্কেটিং ওদের সবচেয়ে আনন্দের খেলা। সেটাও বন্ধ স্লেজ গাড়ি চালাতে পারছে না। ওরা দেখছে গ্রিফিন্ডর টাওয়ার থেকে শুধু বরফ পড়ছে, জানালায় বরফ পড়ার খটাখট শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
রন হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো ওহো! জানালাটা খুলে বাইরে মুণ্ডুটা বার করে দেখলো ছেলে-মেয়েরা স্নো-বল ছোঁড়াছুঁড়ি করছে। তারই একটা জানালার কাছে এসে লেগেছে। আমি একজন প্রিফেক্ট আর একটাও যদি স্নো-বল জানালায় লাগতো তো… আউচ!
রন মাথাটা টেনে নিলো। বেশ বড় আকারের স্নো-বল ওর মুখে এসে লেগেছে। সারা মুখ ওর ভরে গেছে স্নোতে। জানালাটা দড়াম করে বন্ধ করে বললো–ফ্রেড আর জর্জের কাণ্ড! কি আর করে ওরা! হোমওয়ার্ক করতে থাকে।
লাঞ্চের একটু আগে হারমিওন হ্যাগ্রিডের কেবিন থেকে ফিরলো। ওর আলখেল্লা স্নো লেগে ভিজে গেছে, ঠাণ্ডায় ঠক ঠক করে কাঁপছে।
–হায়, রন বললো–তাহলে প্ল্যান অনুযায়ী সব লেসন সমাপ্ত?
–হ্যাঁ আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি, কথাটা বলে ও হ্যারির পাশে একটা খালি চেয়ারে বসে জাদুদণ্ড বার করে একটা কমপ্লিকেটেড লিটিল ওয়েভ সৃষ্টি করতেই দণ্ডের মুখ থেকে গরম হাওয়া বেরুতে লাগলো। ও তারপর গরম হাওয়া আলখেল্লায় ছড়াতে ছড়াতে শুকিয়ে নিলো, আরে আধঘণ্টা ধরে দরজা ধাক্কা দিলাম কেউ খুললো না। তারপর হ্যাগ্রিড অরণ্যের ভেতর থেকে এলেন।
হ্যারি নিষিদ্ধ অরণ্যের কথা শুনে মনের দুঃখে আর্তনাদ করে উঠলো। ওই অরন্য থেকে ওর অনেক দুপ্রাপ্য পোকামাকড়, জম্ভ ইত্যাদি সংগ্রহের প্রবল আগ্রহ। কিন্তু নিষেধের জন্য সেখানে ঢুকতে পারে না।
ও বললো, ওখানে কি সব রাখছেন জানতে পারলে?
–নাঃ হারমিওন হতাশ হয়ে বললো, উনি বললেন, সকলকে সত্যিকারের সারপ্রাইজ দেবেন। আমি হ্যাগ্রিডকে আমব্রিজের মতলব অনেকভাবে বোঝাতে চেষ্টা করলাম, পাত্তাই দিলেন না। বললেন, যাদের মাথার গোবর পোরা তারা নারলস আর চিমায়েরাসের মর্ম কিছু বুঝবে না, আমার মনে হয় হ্যাগ্রিডের কাছে চিমায়েরা নেই। কথাটা বলে হারমিওন হ্যারি–রনের বোকা বোকা মুখের পানে তাকিয়ে বললেন, ওদের ডিম সগ্রহ সবচেয়ে দুরূহ কাজ। আমি অন্তত তাকে হাজার বার গ্রাবলি প্ল্যাঙ্কের প্ল্যান অনুসরণ করতে বললাম। আমার দৃঢ় ধারণা ওই ডিম সংগ্রহ নিয়ে এতোই উত্তেজিত যে কথার অর্ধেকও শুনলেন না। সব সময় মজা করে চলেছেন। এখনও বলছেন না, কেমন করে চোখ মুখে মারাত্মক আঘাত লেগেছে।
পরেরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে হ্যাগ্রিডের আবির্ভাব সব ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও রকম উৎসাহ দেখালো না। ফ্রেড, জর্জ, আর লী আনন্দে হৈ হৈ করে। উঠলো। গ্রিফিন্ডর আর হাফলপাফ টেবিল থেকে লাফিয়ে উঠে ত্যাগ্রিডের বিরাট হাত চেপে ধরলেও অন্যরা–যেমন পার্বতি, ল্যাভেন্ডর শুধু ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা দোলালো।
হ্যারি খুব ভাল করেই জানে ওদের মধ্যে অনেকেই প্রফেসর গ্রাবলি-প্ল্যাঙ্কের লেসন পছন্দ করে না, সবচেয়ে বিশ্রী তার লেসন। কেউ কেউ ভাবে, তার আইডিয়া মাফিক চললে হয়তো একদিন তাদের মুণ্ডুটা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে।
কিছুটা মনের মধ্যে সংশয় নিয়ে মঙ্গলবার দিন ওরা তিনজনে ত্যাগ্রিডের কেবিনে ছুটলো। দারুণ শীত তাও ওদের দমাতে পারলো না। হ্যারি খুবই চিন্তিত, শুধু যে সিলেবাসের বাইরে থেকে হ্যাগ্রিড কিছু শেখাতে মন পাক্কা করেছেন তা নয়, ক্লাসের অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা সেই লেশন কেমনভাবে নেবে তারও চিন্তা। ম্যালফয় আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা বেগড় গাইবে যদি দেখে হ্যাগ্রিড বাইরে থেকে সেই লেসন শেখাচ্ছেন।
যাইহোক ওরা উচ্চ তদন্তকারীকে হ্যাগ্রিডের কাছাকাছি দেখতে পেলো না। হ্যাগ্রিড অরণ্যের মুখে ওদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। অবিশ্রান্ত স্নো ফল শেষ হচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই। গত শনিবারের মতো তার ক্ষত আর সবুজ–হলুদ বর্ণের মতো নেই। কিছুটা শুকিয়েছে, আবার কিছু ক্ষত থেকে রক্তপাত হয়ে চলেছে। হ্যারির মনে হলো খুব সম্ভব হ্যাগ্রিডকে এমন কোনও জন্ত আক্রমণ করেছিলো যার বিষ খুবই মারাত্মক আর সহজে সেটা কবলে আসবে না। হ্যাগ্রিডকে দেখে মনে হয় কাঁধের ওপোর তার মুণ্ডুর বদলে একটা অর্ধেক মৃত গরু বসানো রয়েছে।
যেসব ছাত্র-ছাত্রী অরণ্যের বড় বড় গাছের তলায় অন্ধকারে জমায়েত হয়েছে হ্যাগ্রিড তাদের দেখে আনন্দে অধীর হয়ে বললেন, আজকে আমরা এখানে কাজ করবো, জায়গাটা বেশ নিরিবিলি। ওরা নির্জন আর অন্ধকার পছন্দ করে।
হ্যারির কানে এলো ভীত-সন্ত্রস্থ ম্যালফয়ের গলা। ও ক্র্যাবি, গোয়েলকে বললো, উনি কি বললেন রে? ওরা অন্ধকার পছন্দ করে, মানে? কে পছন্দ করে অন্ধকার?
–তোমরা সবাই প্রস্তুত, হ্যাগ্রিড ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন–আজ পর্যন্ত আমি তোমাদের গভীর অরন্যে নিয়ে যাইনি, আজ আমি তোমাদের অদ্ভুত অদ্ভুত সব জন্তু দেখাবো, যারা গভীর অরণ্যের অন্ধকারে থাকে, ওখান থেকে কোথাও বেরোয় না। আমি তাদের নিয়ে আজ যেসব স্টাডি করবো, কাজ করবো তা আজ পর্যন্ত ব্রিটেনে কেউ করেনি, তাদের ট্রেনিং দেবার ও ব্যবস্থা করতে পারেনি।
সকলেই হ্যাগ্রিডের ক্ষত-বিক্ষত মুখের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে রইলো।
–ভয় পাবার কিছু নেই, তারা ট্রেনড। তুমি ঠিক জান? ম্যালফয় বললো।
হ্যাগ্রিড রেগে গিয়ে বললেন–এখন তোমরা কি মুখের মতো আজেবাজে কথা বলছো। নিজের চরকায় তেল দিয়ে আমার সঙ্গে চল।
হ্যাগ্রিডের আদেশ শুনে কেউ ওর সঙ্গে অরন্যের ভেতরে যেতে সাহস করলো।
দাঁড়িয়ে থেকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলো। হ্যারি, রন, হারমিওন স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে হ্যাগ্রিডের আদেশ অমান্য করতে সাহস করলো না। ওরা হ্যাগ্রিডের পিছু পিছু চলতেই বাকি সবাই ওদের সঙ্গে চললো। হ্যাগ্রিড যেন সেনাপতি, তার সৈন্যদের যুদ্ধ ক্ষেত্রে লড়াইয়ের জন্য নিয়ে চলেছেন।
প্রায় দশ মিনিট হাটার পর হ্যাগ্রিড থামলেন। গভীর অরন্য, বড় বড় গাছগুলো পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। এতো বিস্মৃত গাছের শাখা-প্রশাখা, তাদের সবুজ পাতা ভেদ করে সূর্যের আলো আসতে পারে না। আলো-অন্ধকার, গভীর অন্ধকার। গাছের তলায় একবিন্দু আলো নেই। হ্যাগ্রিড ঘোঁৎ ঘোৎ শব্দ করে কাঁধের ওপোর চাপানো প্রায় অর্ধেক গরুটা গাছের তলায় রাখলেন। ছাত্রছাত্রীরা হ্যাগ্রিডের পরবর্তী নিজেশের শy:পক্ষায় চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সকলের মনের মধ্যে কিছু একটা ঘটতে পারে গোছের ভয়।
হ্যাগ্রিড ওদের উৎসাহিত করে বললেন–সুন্দর! এবার তোমরা সকলে গোল হয়ে দাঁড়াও। এখন সেই সব অদ্ভুত প্রাণীরা মাংসের গন্ধ পেয়ে ওদের স্থায়ী আস্ত না থেকে এক এক করে বেরিয়ে আসবে। তাহলেও আমি ওদের ডাকছি, কারণ ওরা আমার গলার স্বর চেনে। বুঝতে পারবে আমি এসেছি।
কথাটা বলে হ্যাগ্রিড মুখের ওপোর ঝুলে পড়া মাথার চুলগুলো ঝটকা মেরে সরিয়ে ফেলে অদ্ভুত এক শব্দ করলেন মুখের ভেতর থেকে। অদ্ভুত শব্দটা প্রতিধ্বণিত হতে লাগলো। একজনও হাসলো না, সকলেই ভয়ে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো পরবর্তী দৃশ্যের জন্য।
তারপর হ্যারি দুটো গাছের ফাঁক থেকে দেখতে পেলো একজোড়া উজ্জ্বল সাদা চোখ। একটু একটু করে সেই চোখ দুটো বড় হতে লাগলো সেই অন্ধকার গাছের অন্তরাল থেকে। তারপর একটা প্রকাণ্ড কৃষ্ণবর্ণ ডানাওয়ালা ঘোড়া দেখতে পেলো। ঘোড়াটার দেহ কঙ্কালসার, মুখ ড্রাগনের মতো। ঘোড়াটা প্রথমে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকালো, তারপর ছাত্রছাত্রীদের দিকে। তারপর ওর বিরাট চুলওয়ালা ল্যাজের ঝাপ্টা মেরে মাথাটা নামিয়ে ওর লম্বালম্বা দাঁত দিয়ে গরুর মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে লাগলো।
ঘাম দিয়ে হ্যারির জ্বর ছাড়লো। তাহলে ও দেখতে পেয়েছে।
হ্যাগ্রিড খুব খুশি। মুখে অদ্ভুত শব্দ করতেই আরও একটি কালো ঘোড়া অন্ধকার গাছের জঙ্গল থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো। তবে ডানা দুটি খুলে নয়। ও এসে মাথা গুঁজে খেতে শুরু করলো। যারা ওদের দেখতে পাচ্ছে তারা হাত তোল।
ওই অদ্ভুত ঘোড়াদুটির শেষ রহস্য বুঝতে পারার জন্য হ্যারি হাত তুললো। হ্যাগ্রিড হাসিমুখে হ্যারির দিকে তাকালেন।
–হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি জানতাম তুমি দেখতে পাবে হ্যারি, হ্যাগ্রিড রাশভারী কণ্ঠে বললেন। তারপর রনের দিকে তাকালেন, রন তখনও গাছের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। খুব আস্তে বললো, হ্যাগ্রিড ওদের যেতে বলছেন না কেন?
হ্যাগ্রিড গাছের তলায় পড়ে থাকা গরুর হাড়-গোড়গুলো আঙ্গুল দিয়ে দেখালেন। ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রীরা কয়েক সেকেন্ড সেই দিকে তাকালো। পার্বতী ভয়জড়িত কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলো। হ্যারি বুঝতে পারলো কেন হাড়ের ওপোর থেকে মাংসের চাই একটু একটু করে বাতাসের সঙ্গে মিলিয়ে যাচ্ছে। পার্বতী হাড়গুলো দেখে কাঁপা কাঁপা গলায় গাছের আড়াল থেকে বললো–কারা খাচ্ছে?
হ্যাগ্রিড গর্বের সঙ্গে বললেন, প্রেস্ট্রালস। হারমিওন খুব আস্তে বললো, ওঃ! ওর কথার মধ্যে উপলব্ধির ক্ষমতা।
হ্যাগ্রিড বললেন, হোগার্টসের ওইরকম যতো আছে তারা সবাই এখানে এসেছে–এখন কে বলতে পারে?
পার্বতী বাধা দিয়ে বললো, যারা এসেছে তারা সত্যসত্যই দূর্ভাগা! ওর চোখে মুখে আতঙ্ক ছেয়ে গেছে। ওদের যারা দেখতে পায় তাদের অনেক মারাত্মক, নিদারুণ দুর্দশা হবে। কথাটা আমাকে একবার প্রফেসর ট্রিলনী বলেছিলেন।
–না না না মোটেই না, হ্যাগ্রিড চাপা হাসিতে বললেন–অন্ধবিশ্বাস মাত্র, আসলে তারা মোটেই দুর্ভাগা নয়, তারা অত্যন্ত চালাক এবং কাজের! এই জন্তুগুলো অনেক কাজের। ওদের প্রধানত স্কুলের গাড়ি টানার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে ডাম্বলডোরের প্রয়োজন হবে স্কুলের গাড়ি টানার জন্য নয়। দেখো, আরও এক জোড়া এসেছে।
আরও দুটি সেইরকম ঘোড়া গাছের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এলো। তার মধ্যে একটা পার্বতীর গা ঘেঁষে যেতেই পার্বতী ভয়ে আঁতকে একটা গাছ জড়িয়ে ধরলো। বললো, আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।
–না, ওরা তোমার কোনও ক্ষতি করবে না, হ্যাগ্রিড ধীর স্থির হয়ে বললেন। আচ্ছা এখন আমাকে সত্যি করে বলো, কেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘোড়াদের দেখতে পাওনি, অথচ দেখেছো খণ্ড খণ্ড গরুর মাংস মৃত গরুর দেহ থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে?
হারমিওন হাত তুললো।
হ্যাগ্রিড বললেন–কারণ বলো।
ও বললো–থ্রেস্টালসদের দেখতে পায় সেইসব মানুষেরা যারা চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছে। যারা দেখেনি তারা পায় না।
–সম্পূর্ণ সত্যি, হ্যাগ্রিড গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বরে বললেন। দশ পয়েন্ট। এখন বলি থেট্রাল সম্বন্ধে।
হেম–হেম!
সেই একই পোশাক পরে প্রফেসর আমব্রিজ হাতে ক্লিপবোর্ড নিয়ে হ্যাগ্রিডের পাশে এসে দাঁড়ালেন। হ্যাগ্রিড আগে অবশ্য আমব্রিজের শুকনো কাসি শোনেননি, শুনলে জানতে পারতেন আমব্রিজ কাগজপত্র, ফাইল নিয়ে ইন্সপেকসনে এসেছেন।
খুক খুক কাসি!
–ওহ, হ্যালো, কাসির শব্দ কোথা থেকে আসছে দেখতে পেয়ে হ্যাগ্রিড বললেন।
আমব্রিজ সেই একই রকম সুরে হ্যাগ্রিডকে বললেন, আজ সকালে আপনার কেবিনে যে নোটটি পাঠিয়েছিলাম আশাকরি পেয়ে থাকবেন? তাতে আমি জানিয়েছিলাম, আজ আমি আপনার ক্লাসে ইন্সপেকসনে আসবো?
হ্যাগ্রিড বললেন, ও হ্যাঁ পেয়েছি। আশাকরি এই জায়গাটায় এসে আপনার ভাল লেগেছে। আমরা আজকে স্ট্রোলস বিষয়ক কাজকর্ম করছি।
আমব্রিজ দুকানে আঙ্গুল চেপে, সামান্য কেসে খুব উচ্চস্বরে বললেন, আমি অত্যন্ত দুঃখিত, আপনি কী বললেন?
হ্যাগ্রিড সামান্য থতমত হয়ে আমব্রিজের মুখের দিকে তাকালেন।
–থেস্ট্রালস! খুব জোরে জোরে বললেন হ্যাগ্রিড। বড় বড় ডানাওয়ালা ঘোড়া, আপনি জানেন না? হ্যাগ্রিড তার প্রকাও বড় দুটো হাত ডানার মতো মেলে ধরলেন আমব্রিজের সামনে।
আমব্রিজ তখন নোট লিখছেন অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি এবং অদ্ভুত উচ্চারণ।
–থাকগে, হ্যাগ্রিড ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে সামান্য ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন ও হ্যাঁ, কি বলছিলাম?
–মনে হয় স্মৃতি শক্তি হ্যাগ্রিডের খুবই কম। আমব্রিজ বিড় বিড় করে বলতে বলতে লিখলেন। অবশ্য তার কথা উপস্থিত সকলেই শুনতে পেলো। ড্রাকো ম্যালয়ের মুখ দেখে মনে হয় ক্রিসমাস যেনো একমাস আগে এসেছে। ওদিকে হারমিওনের মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে।
হ্যাগ্রিড, আমব্রিজের ক্লিপবোর্ড সাঁটা নোটের দিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, যা বলছিলাম ডানাওয়ালা ঘোড়া সম্বন্ধে।
এই ঘোড়াটা, (হ্যাগ্রিড প্রথমে যে ডানাওয়ালা ঘোড়াটা এসেছিলো তার পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন) এর নাম হচ্ছে টেনেব্রাস ও আমার সবচেয়ে প্রিয়। প্রথমটির জন্ম গভীর অরণ্যে।
আমব্রিজ চিৎকার করে বললেন আপনি কি জানেন না ম্যাজিক মন্ত্রণালয় ব্রেসটালদের মারাত্মক জন্তু হিসেবে চিহ্নিত করেছে?
হ্যারির বুকের ভেতরটা আমব্রিজের কথা শুনে পাথর হয়ে গেলেও, ত্যাগ্রিড শুধু মৃদু হেসে বললেন–থ্রেসটালরা মোটেই মারাত্মক নয়, তবে কেউ যদি তাদের বিরক্ত করে তাহলে হয়তো কামড়ে দিতে পারে।
আমব্রিজ তার নোটশিটে লিখলেন ভায়োলেন্সের কথা শুনলে খুব আনন্দ উপভোগ করে। লেখার সময় আগের মতো কথাগুলো সকলে যাতে শুনতে পায় তেমনিভাবে থেমে থেমে বলতে বলতে লিখলেন।
–ভুল লিখলেন, হ্যাগ্রিড বললেন, আমি বলছি একটি কুকুরের স্বভাবের কথা, তাকে অযথা বিরক্ত করলে কামড়ে দিতে পারে। দুঃখের বিষয় ওদের সম্বন্ধে একটা ভুল ধারণা আমাদের মনে রয়েছে। তারা ভাবে–মানে ওদের দেখতে পাওয়ার ব্যাপারে… একটা অশুভ কিছু। সকলে ব্যাপারটা অনুধাবন করতে পারে না। পারে কী?
আমব্রিজ তার নোট লেখা শেষ করে বললেন, অনুগ্রহ করে আপনি আপনার ক্লাস শেষ করুন, আমি এখন হাঁটতে যাচ্ছি। (ম্যালফয় আর প্যানসি পারকিনসন মনে মনে হাসতে লাগলো।)
.
হ্যাগ্রিড এক দৃষ্টে আমব্রিজের চলার পথে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলেন, আমব্রিজ কেন ভাবছেন ও ইংরেজি ঠিক মতো বলতে পারে না বা বোঝে না?
হারমিওনের চোখে জল, রাগ ও অপমানের।
আমব্রিজ পার্সি পারকিনসনের দিকে গেলে হারমিওন চাপা গলায় বললো, আমি ভাল করেই জানি আমব্রিজ মানুষের ক্ষতি করছে, শয়তান, নোংরা মেয়েছেলে।
হ্যাগ্রিড হারমিওনের পিঠে হাত রেখে স্নেহভরা কণ্ঠে বললেন, যেতে দাও, যা করছেন তা করতে দাও। নাও সময় নষ্ট না করে আমাদের আজকের পড়ার কাজ শেষ করি।
প্রফেসর আমব্রিজ প্যানসিকে জিজ্ঞেস করেছেন, সত্যি করে বলতো তুমি কী হাগ্রিডের ইংরেজি বুঝতে পারো?
হারমিওনের মতো পার্সি পারকিনসনের দুচোখে জল। তবে ওর চোখের জল অন্য কারণে, হ্যাগ্রিডকে প্রকারন্তরে অপমান করার জন্য, আনন্দের হাসি চাপার জন্য।
হ্যাগ্রিড যেনো সার্কাসের ক্রাউন, হাসির পাত্র। প্রফেসর আমব্রিজের নানাবিধ প্রশ্নের প্রশ্রয়ে ম্যালফয়, প্যানসি, গোয়েলে, ক্র্যাবে শুধু হাসাহাসি নয় আমব্রিজ চলে গেলে অসভ্যের মতো আচরণ করতে লাগলো।
রন বললো, আমব্রিজ বলে গেলেন ব্রেস্টালরা মারাত্মক, হিংস্র জন্তু।
হারমিওন বললো, অদ্ভুত জম্ভ! কেউ ওদের দেখতে পায়, কেউ আবার দেখতে পায় না, আমি কেন দেখতে পেলাম না?
রন বললো, আমাদের ক্লাসের তিনজন মাত্র দেখতে পেয়েছে। ম্যালয়, ক্রাবে আর গোয়েলে ওর কথাটা শুনে হ্যাঁ হ্যাঁ করে হেসে গান গেয়ে উঠলো, উইসলি আমাদের রাজা।
হারমিওন বললো–যেতে দাও, যেতে দাও, ওদের কথায় কান দিও না।
***
ডিসেম্বর মাস এসে ঘাড়ের ওপর পড়ল। পঞ্চম বার্ষিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সঙ্গে করে নিয়ে এলো হাড় কাপানি ঠাণ্ডা, বরফ পাত আর পর্বতপরিমাণ হোম ওয়ার্ক। রন আর হারমিওনের প্রিফেক্ট হিসেবে খুবই গুরুভার আরও কষ্টদায়ক হয়ে গেলো ক্রিস্টমাস আসার অপেক্ষায়। ওদের ক্যাসেল সাজানোর ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হলো। (পীভসকে নিয়ন্ত্রণে রাখারও)। এছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় বার্ষিকের ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর কড়া নজর রাখা যাতে ওরা হঠাৎ বাইরে বেরিয়ে গিয়ে ঠাণ্ডা লাগায়। আরগাস ফিলকের সঙ্গে পালা করে করিডোর পরিদর্শন। এত কাজ যে, হারমিওন বাধ্য হয়ে এলফদের জন্য টুপি বোনা শিকেয় তুলে রাখলো।
–বেচারি এলফদের আজও আমি মুক্তি দিতে পারিনি, ওরা ক্রিসমাসের দুর্দান্ত শীতে টুপিবিহীন অবস্থায় দিন-রাত কাটাতে বাধ্য হবে।
হ্যারি জানে ডব্বি খুব যত্নের সঙ্গে এলস্কদের জন্য হারমিওনের বুনে দেওয়া টুপি, মোজা ইত্যাদি যাদের দেবার দিয়ে দেবে। তাহলেও হিস্ট্রি অফ ম্যাজিক নিয়ে এতে ব্যস্ত যে, হারমিওনকে খবরটা ইচ্ছে করেই দেয়নি। হ্যারি ঠিক করেছে, এবার ক্রিসমাসের ঠাণ্ডা দিনের ছুটিগুলো প্রতিবারের মতো ভাববে না। হোগার্টসে ছুটি কাটাবে না। কিন্তু যাবে কোথায়? রন অবশ্য ওকে আগেই মিসেস উইসলির বারে আসার নিমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে। খেলা নেই, ডিএর মিটিং-ও নেই। সব সদস্যরা যে যার বাবা–মায়ের কাছে ক্রিসমাসের ছুটিতে যাবে। হারমিওন আগেই জানিয়ে রেখেছে, ওর বাবা-মার কাছে যাবে। স্কিইং করবে। রন কথাটা শুনে হেসে অস্থির। ও কখনও শোনেনি মাগলরা পায়ে পাতলা পাতলা দুটো কাঠের খণ্ড বেঁধে বরফের পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি করে। রন অবশ্য বাড়িতে যাবে! খবরটা শুনে হ্যারির খুব মন খারাপ হয়েছিলো। কিন্তু মন খারাপের কোনও কারণ নেই। মিসেস উইসলি সাগ্রহে রনের সঙ্গে হ্যারির আসার প্রতিক্ষায় রয়েছেন।
হারমিওন বাবা-মার কাছে গেলেও ওর মন পড়ে থাকবে বারোতে উইসলি পরিবারে, কিন্তু উপায় নেই। হ্যারি ভাবে সিরিয়স যে আগুনে দেখা দিয়েছিলেন তারপর আর যোগাযোগ করেননি। সিরিয়সের ফেস্টিভ পিরিয়ডে মিসেস উইসলির বাড়িতে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। তিনি সিরিয়সকে তেমন পছন্দ করেন না, তাছাড়া ডাম্বলডোর শুনেছে যে তিনি চান না সিরিয়স থিমন্ড প্লেস ছেড়ে অন্য কোথায় যান। আমব্রিজ নানা রকম ফাঁদ পেতে রেখেছেন সিরিয়সকে ধরার। তাই এই সময় সিরিয়সের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষতির কারণ হতে পারে। হ্যারির মনে তাই গডফাদার সিরিয়সের জন্য খুবই দুঃখ। বেচারি বলতে গেলে একা একা তার মায়ের পুরনো ভাঙাবাড়িতে ক্রেচারের সঙ্গে দিন কাটাবেন।
ছুটির আগে শেষ ডিএ মিটিং-এর জন্য রিকোয়ারমেন্ট রুমে ঢুকে হ্যারি মশাল জ্বালাতেই ঘরের ক্রিসমাস পূর্ব জমজমাট সাজানো দেখে চমকে গেলো। বুঝতে বাকি রইলো না এলফদের সাহায্য নিয়ে ডবি ঘর সাজিয়েছে। আরও আশ্চর্য হয়ে গেলো সিলিং-এ অন্তত একশটা কাঁচের বল ঝুলিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ওর ছবি আর চিরাচরিত লেখন হ্যাভ অ্যা ভেরি হ্যারি (হ্যাপি নয়) ক্রিসমাস।
হ্যারি ঠিক সেই সময় দরজা খোলার শব্দ হতে দেখলো, লুনা লাভগুড! চোখে মুখে স্বাভাবিকভাবে স্বপ্নালু ভাব!
–হ্যালো, ঘরের সাজ দেখতে দেখতে ও ভাসা ভাসা ভাবে বললো।
–খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, তুমি একা হাতে সাজিয়েছো?
হ্যারি বললো, না, সবকিছু ডব্বি করেছে। আমাদের হাউজ এলফ। ঠিক হ্যারির মাথার ওপোর একগোছা (মিসলটো) চিরহরিৎ পরাশ্রয়ী গুল্ম দেখে বললো মিসলটো! বাহ কি সুন্দর, মাঝে মাঝে এতে নার্গলস ইনফেকসন হয়।
ওই নার্গলস যে কি সেটা জানার কৌতূহল থেকে বেঁচে গেলো অ্যাঞ্জেলিনা, কেটি আর অ্যালিসা ঘরে ঢোকাতে। ওদের দেখে মনে হয় বাইরের শীতে ওরা খুবই কাবু।
অ্যাঞ্জেলিনা ওর গায়ের আলখেল্লাটা ঘরের এক কোণায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কোনও ভূমিকা না করে বললো–শেষ পর্যন্ত তোমাকে আমরা সরিয়ে দিলাম হ্যারি।
–আমাকে সরিয়ে দিলে? হ্যারি ভ্যাবাচাকা খেয়ে বললো।
–শুধু তোমাকে নয় ফ্রেড আর জর্জকেও, ও এক সেকেন্ড দেরি না করে বললো, আমরা অন্য একজন সীকার পেয়েছি।
–কে? হ্যারি বললো।
–জিনি উইসলি, কেটি বললো।
হ্যারি ওর মুখের দিকে সোজা তাকালো।
–হ্যাঁ, আমি ঠিকই করেছি, অ্যাঞ্জেলিনা ওর ম্যাজিক ওয়ান্ডটা বের করে হাত ছড়িয়ে বললো, ও খুবই ভাল খেলে। তোমার খেলার মতো অবশ্যই, বিশেষ কারণে তোমাকে রাখা সম্ভব নয়।
ও বিশ্রীভাবে হ্যারির দিকে তাকালো।
হ্যারি মনে মনে হাসলো। অ্যাঞ্জেলিনা ভেবেছে ওকে সরিয়ে দারুণ এক কাজ করেছে। কিন্তু জানে না, ঠিক এই রকমটি হ্যারি মনে মনে চাইছিলো! ওর চাইতে শতগুণ বেশি।
–তো বিটারদের? ও গলার স্বর কাবু করে বললো।
–অ্যালিসিয়া স্বাভাবিকভাবে বললো, অ্যান্ড্রু কির্কে, জ্যাক সপার দুজনেই অবশ্য তুলনামূলকভাবে ব্রিলিয়ল্ট না হলেও বলা যায় চলনসই। অন্যদের কথা না তোলাই ভাল।
রন, হারমিওন আর নেভিল এসে গেলে কিভিচ প্লেয়ার পরিবর্তনের কথা যবনিকাপাত হলো। মিনিট খানেকের মধ্যে (ডিপ্রেসিং ডিসকাসন) প্লেয়ার পরিবর্তনের হাওয়া উধাও হয়ে গেলো। অ্যাঞ্জেলিনার মুখের দিকে ইচ্ছে করেই হ্যারি তাকালো না।
হ্যারি বললো, তোমরা সবাই এসেছো ভালই হয়েছে। আমরা তো কয়েকদিন পরই ক্রিসমাসের ছুটিতে যে যার বাড়ি যাচ্ছি, কাজ কিছু করার নেই। আলোচনা করা যাক, কতদূর এগোলাম আমরা। তিন সপ্তাহ পরে আবার কাজকর্ম হবে।
–নতুন কিছু করার নেই, আগে জানলে আজ আসতাম না, জ্যাকেরিয়া স্মিথ মুখ গোমড়া করে বললো।
ফ্রেড বললো, হ্যারি তোমাকে না জানানোর জন্য সত্যই আমরা দুঃখিত।
হ্যারি বললো, যাকগে, আমরা দুজনে মিলে একটা দল করে ইমপেডিমেন্ট জিঙ্কস গ্র্যাকটিস করতে পারি। দশ মিনিট, তারপর কুবনে নিয়ে পুনরায় স্টানিং করবো।
ঘণ্টাখানেক প্র্যাকটিস করার পর হ্যারি সকলকে থামতে বললো, সত্যি সত্যি তোমরা সবাই অসাধারণ কাজ করছে। ছুটি থেকে আসার পর আমরা দেখে নতুন একটা কিছু করবো ধরো পেট্রোনিউসেস।
তারপর বলতে গেলে সবাই হ্যাপি ক্রিসমার্স জানিয়ে চলে গেলো। রন হারমিওনও। হ্যারি পড়ে থাকা কুশনগুলো মাটি থেকে তুলে গুছিয়ে রাখতে লাগলো। তারপর হঠাৎ ওর ঘরের এক কোণে চোখ পড়ে গেলো। গোছাতে গোছাতে এতো ব্যস্ত যে ও চোকে দেখতে পায়নি। ওর দুচোখ জলে ভরে গেছে।
–কী ব্যাপার? হ্যারি খুব নরম সুরে বললো।
হ্যারির জীবনে এ ব্যাপারে কোনও অভিজ্ঞতা নেই। জানে না কি করতে হবে, কি বলতে হবে!
ও আবার বললো–কী হয়েছে, তুমি কাঁদছো কেন?
চো শুধু ওর মাথাটা সামান্য দুলিয়ে জামার হাতা দিয়ে ভেজা চোখ মুছলো।
–দুঃখিত হ্যারি, চো ধরা ধরা গলায় বললো, আমি ভাবছিলাম কেন এসব শিখছি, কার জন্য শিখছি। সেড্রিক যদি এসব জানতো তাহলে ও হয়তো বেঁচে থাকতো।
চো, সেড্রিকের কথা আজও ভুলতে পারেনি। ওর সেটা জানা উচিত ছিলো, ও সেড্রিকের কথা বলতে পারতো।
–তুমি বোধহয় জানো না আমি যা যা জানি তা সেড্রিক জানতো। আসলে ভোল্ডেমর্ট দারুণ শক্তিশালী, ও হত্যা করতে চায়, যেমন করেই হোক হত্যা করবে। চাইলে তোমাকেও করতে পারে।
ভোল্ডেমের্টের নাম শুনে চোয়ের মুখ শুকিয়ে গেলো।
–শুনেছি, তোমার শিশু অবস্থাতে ও তোমাকে হত্যা করতে চেষ্টা করেছিল, চো বললো।
–ঠিকই শুনেছ। কেন হত্যা করতে চেয়েছিলো এখনও তার কারণ আমি জানি। অবশ্য এর জন্য গর্বিত হবার কোনও কারণ নেই।
–আমি জানি তুমি সেড্রিককে তোমার চোখের সামনে হত্যা করাতে মনে কত ব্যথা পেয়েছে, আমি চাই তুমি সেইসব কথা ভুলে যাও।
কথাটা শুনে হ্যারি চুপ করে রইলো।
–তুমি সত্যি খুব ভাল টিচার, চো বললো সামান্য হেসে, আমি কখনও কাউকে স্টান করতে পারিনি হ্যারি।
হ্যারি খুব লজ্জিত হয়ে বললো, ধন্যবাদ।
ওরা দুজনে দুজনের দিকে অনেকটা সময় তাকিয়ে রইলো। হ্যারি চাইলো ঘর থেকে ছুটে পালিয়ে যেতে; কিন্তু পারলো না, কোন এক অদৃশ্য শক্তি ওর পা দুটো চেপে ধরে রইলো।
–মিসলটো? চো সিলিং-এ ঝোলানো গুলুগুলো আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো।
–হ্যাঁ। ওর গলার ভেতরটা সম্ভত: লার্গলসের জন্য শুকিয়ে গেছে। গাছটায় লার্গলস লেগে গেছে।
–সেটা কী?
–আমার কোনও ধারণা নেই, হ্যারি বললো। চো তখন অনেকটা হ্যারির কাছে এসে গেছে। সম্ভবত: হ্যারির ব্রেন স্টানড হয়ে গেছে।
–তুমি লুসি, লুনাকে জিজ্ঞেস করতে পারো।
চো হ্যারির আরও অনেক কাছে এসে গেছে। ফুঁপিয়ে কান্নার মাঝে কিছু শব্দ থাকে সেটা হ্যারির মুখ থেকে বেরিয়ে এলো। ও হ্যারির এত কাছে এসে দাঁড়িয়েছে যে, ওর তপ্ত নিঃশ্বাস গালে এসে লাগছে। হ্যারি ওর গালের ছোট ছোট ব্রণগুলোর সংখ্যাও গুণে বলতে পারে।
–হ্যারি, হ্যারি আমার তোমাকে ভাল লাগে, তুমি বড় ভাল।
হ্যারি দেখতে পাচ্ছে ওর গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে।
কমনরুমে যে সময় হ্যারি সাধারণত আসে তার আধঘণ্টা পরে ঢুকে দেখলো রন, হারমিওন অনেক আগে আসার দৌলতে দিব্যি দুটি চেয়ার ফায়ারপ্লেসের সামনে টেনে এনে আগুন পোয়াচ্ছে। সকলেই শীতের রাত বলে শুতে চলে গেছে। হ্যারি দেখলো হারমিওন নিমগ্ন হয়ে চিঠি লিখছে। আগুনের কাছে পা টেনে এনে রন ট্রান্সফিগারেসনের হোমওয়ার্ক শেষ করতে ব্যস্ত।
দেরি কেন? হ্যারি রনের পাশের চেয়ারে বসতেই রন বললো। হ্যারি ওর প্রশ্নের কোনও জবাব দিলো না। ওর মাথার ভেতরটা চোয়ের সঙ্গে কথা বলার পর কেমন যেন কিলবিল করছিলো। যা ঘটেছে তার অর্ধেকটা ও রনকে বলতে চাইলো; কিন্তু বাকিটা তো একজন তার কবরে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।
হারমিওন কুইলটা তুলে বললো, তোমার শরীর ভালো আছে তো হ্যারি?
হ্যারি ঠিক জানে না ও ভাল আছে না নেই। তাই শুধু কাঁধটা নাচালো।
–ব্যাপার কী? কী হয়েছে? রন ওর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো। হ্যারি ঠিক বুঝতে পারলো না ব্যাপারটা ওদের ঠিক মতো গুছিয়ে বলতে পারবে কি না।
–চোর ব্যাপার? হারমিওন বিজনেস লাইক ওয়েতে প্রশ্ন করলো, ও তোমাকে মিটিং-এর পর কোনঠাসা করেছিলো নাকি?
কি জবাব দেবে জানে না হ্যারি। তবু বললো ও কী তাই চায়?
–তুমি ওর ঠোঁটে কী চুমু দিয়েছিলে? হারমিওন মজা করে বললো।
রন কথাটা শুনে লাফিয়ে উঠলো। ওর ধাক্কায় টেবিল থেকে কালির দোয়াত ছিটকে মাটিতে পড়ে গেলো। ও হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইলো।
–কী ব্যাপার? রন জিজ্ঞেস করল।
ও হারমিওনের হাসি আর রনের প্রশ্নের মাঝে যেন আটকে গেছে।
রন দারুণ এক উৎসাহে দড়াম করে একটি ঘুষি মারলো যেন হ্যারি জিতে গেছে। তারপর দারুণভাবে খিল খিলিয়ে হাসতে লাগলো।
হ্যারি হঠাৎ দারুণ বুদ্ধ হয়ে গেছে। কি করবে, কি বলবে কোনও কিছুই বুঝতে পারছে না।
রন হাসি থামিয়ে বললো, এবার সব বলো, আমরা শুনি।
বলবে কি বলবে না ভেবে হ্যারি কয়েক মুহূর্ত চুপ করে রইলো।
–বেশ বলছি।
রন এমন এক শব্দ করলো যা আনন্দ না বিরক্তি বোঝা ভার–কারণ ও কাঁদছিলো।
–তাই, রনের মুখের হাসি মিলিয়ে যেতে থাকে। তুমি কি ওকে চুম্বনের উপযুক্ত নও?
–বলতে পারছি না, এই সম্বন্ধে আমি কোনও ভাবনা চিন্তা করিনি। কথাটা বলেই ওর মনে হলো হয়তো কথাটা ঠিক বলেনি তাই তৎক্ষণাৎ বললো–হতেও পারে আমি উপযুক্ত নই।
–অবশ্যই তুমি ফেলনা নও, হারমিওন একবার চিঠির কাগজ থেকে মুখ তুলে সংক্ষেপে কথাটা বলে আবার লিখতে লাগলো।
–তুমি কি করে বুঝলে? রন তীক্ষ্ণভাবে বললো।
–কারণ ও আজকাল ওর অর্ধেক সময় ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদে, খাবার সময়ও, কোথায় কাঁদে না সেটাই বলো, হারমিও বললো।
রন দাঁত বার করে হাসতে হাসতে বললো–তুমিও পাল্টা চুমু দিতে পারতে, হলে ও একটু নতুন স্বাদ পেতো।
রন! হারমিওন লেখা বন্ধ করে শক্ত কণ্ঠে বললো, ইদানীং তুমি দেখছি খুব বেশি বাজে কথা বলছে। বুঝলে মানুষের অন্তরের কথাটা বুঝতে শেখো।
–বাবা! তোমার কথার মানে বুঝতে পারলাম না। একটি মেয়ে, একটি ছেলেকে চুমু দেবার সময় চোখের জল ফেলবে কেন?
–বুঝতে চেষ্টা করো রন। হারমিওন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চিঠি লেখা বন্ধ করলো। সাধারণ কথায় এখন ও দোটানায় পড়েছে। একদিকে সেড্রিক যাকে ও ভালোবাসতো, এখন আর ও নেই; অন্যদিকে আমাদের হ্যারি। বিভ্রান্তির আরও একটা ব্যাপার। ও র্যাভেনক্লর কিডিচ টিম থেকে বাদ গেছে, ঠিক মতো খেলতে পারছে না। হ্যারি শোন, তুমি ওর ওপোর রাগ করবে না, বুঝতে চেষ্টা করবে ওকে, ওর সঙ্গে ভাল করে কথা বলবে।
হ্যারি বললো, আমাদের ডিএর মিটিং আছে, কথাতো বলতে হবেই।
হ্যারি চুপ করে কিছু ভাবতে লাগলো। হারমিওনের কথা ওর সামনে যে এক ভয়াবহ যথার্থতার ও সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করে দিয়েছে। ও একাই চোকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। কোথায়? হগসমিডে… আরও অনেক কথা মাথায় এল ওর কৈলোর–যৌবনের সন্ধিক্ষণে।
রন মুখে বিচক্ষণতার ভাব এনে হ্যারির মনের ভাব অনেকটা সময় বোঝবার চেষ্টা করতে লাগলো। ভাবলো–যদি হ্যারি পিছিয়ে আসে, কথা বলতে না চায়?
হারমিওন বললো, বোকার মতো কথা বলবে না রন। হ্যারি ওকে চুপিসারে অনেকদিন থেকে মনের মধ্যে বন্দি করে রেখেছে, তাই না হ্যারি?
হ্যাঁ, হারমিওনের কথার মধ্যে কোনও অসত্যতা নেই। অনেকদিন থেকেই ওর কৈশোর জীবনে চো চ্যাং ছায়াপাত করেছে। সেই ছায়া আজও আছে। কিন্তু ও চোর দুটো রূপ দেখে চলেছে; একদিকে নিজের সুখ আনন্দ নিয়ে সদা ব্যাস্ত অন্যদিকে আজকের নতুন রূপ! কাধে মাথা রেখে বলগা ছাড়া ক্রন্দন।
রন হারমিওনের চিঠির দিকে তাকিয়ে পড়বার চেষ্টা করে বললো–জানতে পারি কি, কার জন্য এই বিরাট উপন্যাসটা লিখছো?
–ভিক্টরের জন্য।
–তাই নাকি, ক্রাম?
–কজন ভিক্টরকে তুমি চেনো?
হারমিওনের মুখ থেকে সোজাসাপটা কথাটা শুনে রন বিষণ্ণ মুখে তাকিয়ে রইলো। ওরা আরও কুড়ি মিনিট নিঃশব্দে বসে রইলো। রন অনেক কাটাকুটি ও বদলাবার পর ট্রান্সফিগারেসনের প্রবন্ধ শেষ করল। হারমিওনেরও চিঠি লেখা খতম। সেটার মুখবন্ধ লিখছে। হ্যারি আগুনের দিকে তাকিয়ে আশা করছে যদি সিরিয়স একবার দেখা দিয়ে চো সম্বন্ধে কিছু উপদেশ দেন। কিন্তু আগুন জ্বলে যাচ্ছে ফট ফট শব্দ করে। একটু একটু করে আগুনও নিভে গেলো পড়ে রইলো শুধু ছাই।
হারমিওনের ঘুম পেয়েছে, বিরাট হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে গুডনাইট বলে ঘুমোতে চলে গেলো।
হ্যারির সঙ্গে নিজেদের ঘরে যেতে যেতে রন হঠাৎ বলে উঠলো, ক্রামের মধ্যে ও কী খুঁজে পেলো কে জানে!
–খুব সম্ভব ও হারমিওনের চেয়ে বড় শুধু নয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কিডি প্লেয়ার।
–কিন্তু দারুণ বদমেজাজী। কী ভুল বললাম?
–একটু। হ্যারির মাথায় তখনও চো ঘুরছে।
–গুড নাইট, রন আপাদমস্তক কম্বল মুডি দিয়ে বললো।
–গুড নাইট, হ্যারি ঘুমোবার জন্য দুচোখ বন্ধ করে বললো।
হ্যারির চোখে ঘুম নেই, ও নেভিলের নাক ডাকা শুনতে পেল। তারপরই বাইরে একটা প্যাচা বিকটভাবে ডাকতে ডাকতে উড়ে গেলো।
হ্যারি ঘুমিয়ে পড়লো। স্বপ্ন দেখলো! ও আবার ডিএ রুমে ফিরে এসেছে। চো ওকে সেই ঘরে বিনা কারণে ডেকে আনার জন্য ও রেগে গেছে। চো একশ পঞ্চাশটা ফ্রগ চকোলেট দেবে যদি ডিএ রুমে আমি আসি। হ্যারি বললো, কখনোই না। কথাটা শুনে চো চীকার করে উঠলো, এই দেখো, দেখবে? সেডরিক আমাকে গাদাগাদা ফ্রগ চকোলেট দিয়েছে। কথাটা বলে চো রোবের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে একমুঠো কার্টুন বার করে হ্যারির দিকে ছুঁড়ে দিলো। তারপর ও হারমিওনের দিকে তাকালো। হারমিওন বললো, বাঃ হ্যারি তুমি ওকে দেবে বলে দিলে না? তাহলে অন্য কিছু দাও, তা তোমার ফায়ার বোল্ট? হ্যারি রেগে গিয়ে বললো–কখনোই আমি আমার ফায়ার বোল্ট দেবো না। ওটা আমব্রিজের কাছে রয়েছে। স্বপ্নটার মধ্যে না আছে মাথা, না আছে মুণ্ডু। ওতে ডিএ রুমে এসেছে ক্রিসমাসের জিনিসপত্র সাজাতে। কিছু কিছু ক্রিসমাস বাল অনেকটা ডব্বির মুণ্ডুর মতো।
আবার নতুন এক স্বপ্ন দেখলো হ্যারি।
ওর শরীর অনেক শক্তিশালী, হালকা আর নমনীয় হয়ে গেছে। ও একটা চকচকে কালো পাথরের ওপরে দুটো চকচকে মেটাল বারের মধ্য দিয়ে ভেসে চলেছে, ওর পেটটা পাথরের উপর। চতুর্দিক গাঢ় অন্ধকার হলেও সবকিছুই দেখতে পাচ্ছে। জিনিসগুলো অদ্ভুতভাবে জ্বল জ্বল করছে। ও মাথাটা তুললো, দেখলো করিডোরটা শূন্য, না শূন্য নয় অদূরে মেঝের ওপর একজন বসে রয়েছে। তার মাথাটা নিচু করা, মুখ দেখতে পাচ্ছে না, শুধু লোকটার অবয়ব, অন্ধকারে জ্বল জ্বল করছে।
হ্যারি ওর জিব বের করে লোকটার গায়ের গন্ধ বাতাস থেকে পেতে চাইল। লোকটা বেঁচে থাকলেও আছে করিডোরের শেষ প্রান্তে একটা বন্ধ দরজার সামনে। হ্যারির ইচ্ছে লোকটাকে কামড়ে দিতে কিন্তু ওকে আকস্মিকভাবে আঘাত করার শিক্ষা দরকার। ওকে আকস্মিক কামড়ে দেওয়া ছাড়া আরও অনেক কাজ যেন বাকি আছে।
লোকটা হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়তেই ওর রূপালী রং-এর আলখেল্লাটা শরীর থেকে খুলে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।
তারপর দেখলো হঠাৎ ও উঠে দাঁড়িয়ে ওর দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। ওকে বাধা না দিলে লোকটা হয়তো ওকেই মেরে ফেলবে। হ্যারি ফ্লোর থেকে লাফিয়ে উঠে একবার, দুবার, তিনবার ওকে লম্বা লম্বা ছুঁচোলো দাঁত দিয়ে কামড়ে দিলো। লোকটার রক্ত-মাংসের দেহ থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুতে লাগলো। ওর দেহ থেকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে চকচকে মেঝেতে পড়তে লাগলো।
লোকটা যন্ত্রণায় কাতরাতে লাগলো, তারপর চুপ হয়ে গেলো।
হ্যারির কপালে ব্যাথাটা অসম্ভবভাবে বেড়ে গেলো। মনে হতে লাগলো মাথাটা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।
হ্যারি! হ্যারি?
হ্যারি ধীরে ধীরে ওর দুচোখ খুললো। ওর শরীর ঠাণ্ডা বরফে ভিজে চপ চপ করছে। বিছানার চাঁদর লণ্ডভণ্ড, মাথার বালিশ মেঝেতে পড়ে গেছে।
হ্যারি!
হ্যাঁ, যা যা স্বপ্নে দেখেছে সবই রনকে বলতে হবে। হ্যারি ভারি দেখে একটা লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে উঠে বসলো। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো কয়েকজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। কে যেন বললো–ও খুবই অসুস্থ।
হ্যারি তাকাতে পারছে না কপালে অসহ্য যন্ত্রণার জন্য।
ও হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, তোমার বাবা, তাকে কেউ আক্রমণ করেছে।
রন অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে বললো–কী বললে?
–তোমার বাবা! তাকে কেউ কামড়ে দিয়েছে–খুবই মারাত্মকভাবে, চতুর্দিকে শুধু রক্ত আর রক্ত!
–দাঁড়াও আমি দেখছি, আগের লোকটির ভয়ার্ত স্বর। হ্যারির কানে এলো কারও ডরমেটরি থেকে চলে যাবার পদশব্দ।
–হ্যারি! হ্যারি! রন অধীর হয়ে বললো–তুমি ভীষণ বিশ্রী স্বপ্ন দেখেছে।
–না, হ্যারি ক্ষিপ্তের মতো বললো, খুবই মারাত্মক, স্বপ্ন নয়, সাধারণ স্বপ্ন নয়, আমি সেখানে ছিলাম, আমি দেখেছি, আমি কামড়ে দিয়েছি।
সিয়াস আর ডিনের কথা ওর কানে এলো; কিন্তু কি বলছে বুঝতে পারলো না।
–হ্যারি তোমার শরীর খুব খারাপ, নেভিল সাহায্যের জন্যে বাইরে গেছে।
–না, আমি খুব ভাল আছি! হ্যারি বললো, সত্যি বলছি আমার কিছু হয়নি! তোমার বাবার জন্য তুমি ভাবো। এখন তিনি কোথায় আমাদের খুঁজতে হবে, তার শরীর থেকে রক্ত বন্ধ হচ্ছে না। আমি ছিলাম… একটা বিরাট সাপ।
হ্যারি বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলে রন ওকে চেপে ধরে শুইয়ে দিলো। রন চুপ করে বসে রইলো। ওর কাটা দাগের অসহ্য ব্যথা ধীরে ধীরে কমছে মনে হল। তারপর দুএকজনের ওর ডরমেটরিতে ঢোকার পদশব্দ শুনতে পেলো।
–এদিকে, প্রফেসর।
প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ডরমেটরিতে ঢুকেছেন। তার গায়ে টার্টান ড্রেসিং গাউন, নাকের কাছে চশমা ঝুলে পড়েছে।
–কী হয়েছে পটার? তোমার কোথায় যন্ত্রণা হচ্ছে?
ও জীবনে এতো আনন্দিত, এতো খুশি হয়নি ম্যাকগোনাগলকে দেখে। ও চায় কোনও অপ্রয়োজনীয় পোসান, তাতে ওর যন্ত্রণা কমবে না, কিছু হবে না। ওর দরকার অর্ডার অফ ফিনিক্সের একজন পদস্থ সদস্য।
–তুমি কী দেখেছে, কেমন দেখেছো? প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তার গভীর দুই ভুরু একত্র করে বললেন।
–আমি জানি না! আমি ঘুমাচ্ছিলাম। তারপর আমি সেখানে ছিলাম।
–তার মানে তুমি স্বপ্নে সেখানে গিয়েছিলে?
–না, হ্যারি রাগে ফেটে পড়ে বললো, আপনারা কেউ বুঝতে পারবেন না। প্রথমে আমি একটা বোকা বোকা মাথামুণ্ডুহীন স্বপ্ন দেখছিলাম… তারপর, তারপর অন্য এক স্বপ্ন, আমি ঠিক বুঝিয়ে বলতে পারছি না। মি. উইসলি মাটিতে বসে ঘুমচ্ছিলেন। তাকে তখন বিরাট একটা সাপ তার বিরাট বিরাট দাঁত বার করে কামড়ে দিলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে লাগলো, তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। আপনারা কেউ যান, খুঁজে বার করুন এখন তিনি কোথায়।
প্রফেসর ম্যাকগোনাগল তার দুই আতঙ্ক ভরা চোখে হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইলেন।
–আমি পাগল নই, আমি যা বললাম সব সত্যি, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। হ্যারি রাগ আর উত্তেজিত স্বরে বললো। আমি আপনাকে বলছি, আমি ঘটনাটা স্বচক্ষে দেখেছি। ম্যাকগোনাগল অবিচলিত স্বরে বললেন, আমি তোমার কথা অক্ষরে অক্ষরে বিশ্বাস করছি পটার। ড্রেসিং গাউন পরে নাও, আমরা এখন হেড মাস্টারের কাছে যাবো।