২১. এয়ারপোর্টে সবাই অপেক্ষা করছে

২৫শে ডিসেম্বর। ভোর ৬-২০।

এয়ারপোর্টে সবাই অপেক্ষা করছে। ফকনারের হাতে সিগারেট। তার মুখ হাসি-হাসি। পঞ্চাশ জন মাভোর সবাই আছে। একটা অস্বাভাবিক ঘটনা। বিশ্বাস হয়েও হতে চায় না। কিন্তু এটা স্বপ্ন নয়-সত্যি। ঐ তো জুলিয়াস নিশো চোখ বড়-বড় করে তাকিয়ে আছেন।

ইঞ্জিনের আওয়াজ আসছে। প্ৰেন এসে পডল বোধহয়। রানওয়ে ভালো নয়, তব প্লেনের নামতে বা উঠতে অসুবিধা হবে না। ডাকোটা প্লেনগুলি ধানখেতেও নেমে পড়তে পারে। ফকনার চেচিয়ে উঠল, স্কোয়াড, অ্যাটেনশন। গেট রেডি।

কমান্ডোদের মধ্যে একটা চাঞ্চল্য জাগল। হ্যাঁ, প্লেন দেখা যাচ্ছে। ডাকোটা প্লেন। ফকনারের নির্দেশে ওয়্যারলেসে প্লেনের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

হ্যালো ডাকোটা। বুনো হাঁস কলিং। হ্যালো ডাকোটা, বুনো হাঁস কলিং-ওভার। হ্যালো ডাকোটা।

প্লেনের পাইলটকে শেষ পর্যন্ত ধরা গেল। ফকনার কথা বলবার জন্যে এগিয়ে এল।

গুড মনিং ডাকোটা অ্যান্ড হাপি ক্রিসমাস।

হ্যাপি ক্রিসমাস। কর্নেল ফকনার?

হ্যাঁ।

তোমার জন্যে একটি বড় রকমের দুঃসংবাদ আছে।

বলে ফেল।

আমি তোমাদের নেবার জন্যে নামছি না। কিছুক্ষণ আগেই আমাকে জানানো হয়েছে যে, নিশোকে উদ্ধারের যে-মিশন পাঠানো হয়েছে, তা বাতিল করা হয়েছে।

কেন?

জেনারেল ডোফার সঙ্গে আমেরিকান সরকারের চুক্তি হয়েছে, তারা এখন ডোফাকেই রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চায়।

ভালো কথা। আমাদের কি হবে?

পাইলট সে-কথার কোনো জবাব দিল না। বিমানটি এয়ারপোর্টের ওপর দুবার চক্কর দিয়ে দক্ষিণ দিকে উড়ে গেল।

সবাই তাকাচ্ছে, কিছু-একটা শুনতে চায় ফকনারের কাছ থেকে। কি বলা যায়? ফকনার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, বন্ধুরা, চমৎকার একটি সকাল।

রবিনসন ভ্রূ কুঁচকে বলল, ব্যাপারটা কি?

ফকনার জবাব দিল না। এক দল থুথু ফেলল। পকেট থেকে সিগারেট বের করল। প্যাকেট বাড়িয়ে দিল রবিনসনের দিকে। রবিনসন বিরক্ত মুখে বলল, আমি সিগারেট ছেড়ে দিয়েছি।

ক্যানসারের ভয়ে?

রবিনসন ঠান্ডা গলায় বলল, কেন আজেবাজে কথা বলছ? যা জানতে চাচ্ছি তা বল।

কি জানতে চাচ্ছ? ফকনার সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, ব্যাপারটা তুমি যতটুকু জান, আমিও ঠিক ততটুকুই জানি। ওয়্যারলেসে কথাবার্তা যা হয়েছে, তুমি শুনেছ। তার পরেও আমাকে জিজ্ঞেস করবার অর্থ কি? এসব হচ্ছে মেয়েলি স্বভাব।

মেয়েলি স্বভাব থোক বা না-হোক, আমি পরিষ্কারভাবে জানতে চাই-তুমি কি ভাবছ?

এই মুহূর্তে আমি কি ভাবছি, জানতে চাচ্ছ?

হ্যাঁ।

এই মুহূর্তে আমি ভাবছি, এক কাপ গরম কফি পেলে মন্দ হয় না।

রসিকতা করছ?

না, রসিকতা করব কেন? সত্যি-সত্যি কফির পিপাসা বোধ হচ্ছে। সবার জন্য গরম কফির ব্যবস্থা কর। সেই সঙ্গে খাবারদাবার। শীতকালের নেকড়ের মতো ক্ষুধার্ত বোধ করছি।

এর বেশি তোমার কিছু বলার নেই।

আপাতত না।

কফি কি আমরা এই এয়ারপোর্টেই খাব?

মন্দ কি?

এরকম একটা খোলামেলা জায়গায়?

অসুবিধা কি?

দেখ ফকনার, তোমার বুদ্ধির ওপর আমি চিরকাল আস্থা রেখেছি। তবুও বলছি, তোমার কি মনে হয় না জেনারেল ডোফা বিমান থেকে একটা আক্রমণ চালাতে পারে?

মনে হয় না। ডোফার কথাবার্তা বোকার মতো, কিন্তু সে তোমার মতই বুদ্ধিমান। কাঁচা কাজ করবে না। আলাপ-আলোচনায় বসবে।

কিসের আলোচনা?

ডোফা আমাদের সঙ্গে একটা চুক্তিতে আসতে চাইবে বলে আমার ধারণা। সে আমাদের অক্ষত অবস্থায় এ-দেশ থেকে চলে যেতে দেবে, তার বদলে নিশোকে ওদের হাতে তুলে দিতে হবে। হরতনের টো আমাদের হাতে।

তাসের কিছু-কিছু খেলায় হরতনের টেক্কা মূল্যহীন।

নিশো মূল্যহীন নয়। সেটা তুমি জান, আমি জানি, জেনারেল ডোফাও জানে। নিশা যতক্ষণ আমাদের হাতে আছে ততক্ষণ ভয় নেই। ব্যাটা বেঁচে আছে তো?

হুঁ।

বাঁচিয়ে রাখ। নিশো হচ্ছে আমাদের বেঁচে থাকার পাসপোর্ট। ওকে ঠিকমত রাখ।

দ্রুত কফির ব্যবস্থা হল। ফকনার কফির মগ হাতে শান্ত গলায় ছোট্ট একটা বক্তৃতা দিল।

বন্ধুগণ, বুঝতেই পারছ, ক্ষুদ্র একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে। যারা আমাদের এই কাজে লাগিয়েছে, তাদের কাছে আমাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমরা ফাঁদে আটকা পড়ে গেছি। পশুদের জন্য ফাঁদ একটা ভয়াবহ ব্যাপার। এক বার ফাঁদে আটকা পড়লে তারা বেরুতে পারে না।……

সৌভাগ্যক্রমে আমরা পশু নই, মানুষ, এবং বুদ্ধিমান মানুষ। ফাঁদ কেটে বেরিয়ে আসব। আপাতত আমরা যা করব, তা হচ্ছে কভার নেব। যাতে অনুসন্ধানী বিমান আমাদের দেখতে না পায়। কারো কি এই প্রসঙ্গে বলার আছে?

এক জন হাত তুলল। ফকনার বলল, কী বলার আছে?

আমাদের মধ্যে যাদের যাদের বাথরুম পেয়েছে, তারা কি বাথরুমের কাজটা এয়ারপোর্টে সারতে পারি? এদের এখানে ভালো বাথরুম আছে।

সবাই হা-হা করে হেসে উঠল। হাসি আর থামতেই চায় না। ফকনার আরেকটি সিগারেট বের করতে-করতে মনে-মনে বলল, দলটা ভালো। এদের বিশ্বাস করা যায়। এদের উপর ভরসা করা যায়।

বাথরুম সারবার জন্যে দশ মিনিট সময় দেওয়া হল। ডিসমিস।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *