২১ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার ১৯৭১
সকাল সাড়ে সাতটার সময় তৈরি হয়ে ডাঃ খালেকের সঙ্গে সেক্রেটারিয়েট এসেছি। ফখরুজ্জামানের মেডিক্যাল বোর্ডের অর্ডার হেলথ মিনিস্ট্রি থেকে হাতে হাতে বের করে না নিলে কতোদিন যে লাগবে, কে জানে। এদিক ওর বিলেত যেতে যত দেরি হবে, ওর কিডনির ক্যান্সারও তত বেশি খারাপ হতে থাকবে।
অর্ডার টাইপ হয়ে সই হয়ে হাতে আসতে আসতে বারোটা বাজল। কাগজ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এলাম। এখন এটাতে ডাঃ আলী আশরাফের সই লাগবে। তিনি অপারেশন থিয়েটারের ভেতর। ফখরুর বউ আঙুকে সঙ্গে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে যে ছোট্ট অ্যান্টিরুম আছে, সেইখানে দাড়িয়ে আছি। ওয়ার্ড বয়ের হাতে করকরে দুটো দশ টাকার নোট গুঁজে দিয়ে খুব ভালো করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, একটা অপারেশন শেষ করে মুখের মাস্ক খোলামাত্রই যেন ডাঃ আলী আশরাফকে সে বলে যে আমি খুব জরুরি ব্যাপারে তাঁর জন্য এখানে অপেক্ষা করছি। অবশ্যই যেন দুমিনিটের জন্য তিনি এ ঘরে আসেন। একটু দেরি হলেই কিন্তু আর ওঁকে পাওয়া যাবে না।
ডাঃ আলী আশরাফ খুব রাগী মানুষ। এভাবে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডেকে আনার স্পর্ধা স্বরূপ ওয়ার্ড বয় তো বকা খাবেই, আমারও কপালে কি আছে, কে জানে। কিন্তু এদিক আর তো সময় নেই। আজ ওঁর সই না হলে ফরেন এক্সচেঞ্জ যোগাড় করতে দেরি হয়ে যাবে। আগামীকাল, পরশু দুদিনই এগারোটা পর্যন্ত ব্যাঙ্ক, তার পরের দিন রোববার ব্যাঙ্ক বন্ধ।
ডাঃ আলী আশরাফ গনগনে মেজাজ নিয়ে এলেন, প্রচণ্ড বকাবকি করলেন আমায়–তাকে এভাবে দুই অপারেশানের মাঝখানে ডেকে পাঠানোর জন্য। আমিও গলা চড়িয়ে বললাম, এছাড়া আর উপায় ছিল না। একটা লোক মরতে বসেছে। দেরি করলে তার আর কোনো চান্স থাকবে না।
বকাবকি করতে করতেই সইটা করে দিলেন ডাঃ আলী আশরাফ। সব ভুলে দাঁত বের করে হেসে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
ফখরুজ্জামানের কেবিনে ঢুকে দেখি ডাঃ ফজলে রাব্বি তাকে দেখতে এসেছেন। শুনলাম ফখরুকে রাব্বি বলছেন, যান, ভালো হয়ে ফিরে আসুন। এসে দেখবেন আমরা হয়তো অনেকেই নেই।