কয়েকদিন পর।
হরেরামের মৃতদেহ পুলিশ সদরে নিয়ে গেল, ফিরিয়ে দিল। রায় দিল, হরেরাম আত্মহত্যা করেছে।
মরা ছেলে বিয়োল হরেরামের বউ। আর মানুষ দেখলে কেবলি চোখ বড় বড় করে বলে, চিনি চিনি। মনে করি আগে তা’পরে বলব সবারে। বলে আর হাসে, কাঁদে।
অস্পষ্ট স্মৃতির জ্বালায় বউ আজ বাউরি হয়েছে হরেরামের। বাউরি বউয়ের শোক নিয়ে নয়নপুরের বাতাস হয়েছে বাউরি। শুধু নয়নপুরের নয়, ক’টা মহকুমা জুড়ে। অসময়ে ধর্মঘটের পুজো দিল চাষীরা। পণ রাখল মরণের, কাস্তে কুড়ল হাতুড়ি বাটালি সব ছাড়ল চাষী কামাররা। বছরের সুদিন এলে বৈশাখে আবার দেবে তারা ধর্মঘটের পুজো। কিন্তু যে যমের দ্বারে হরেরামকে গলা টিপে ঠেলে দিয়ে এল শত্রুরা, তাদের সঙ্গে রফা নেই।
দিন যায়, ধান ঝরে মাঠে, পায়রার ঝাঁক ঝাঁপিয়ে পড়ে যেন পালা পড়েছে তাদের। দেশ যেন অরাজক, শস্য বুঝি মূল্যহীন। কারও কারও মনে খটকা লাগল, এ তো ঠিক হচ্ছে না। নিজের ভাগেরটা কেন ছাড়ি? লাগ লাগ করে আবার বৈঠক হয়। সবাই মিলে সাব্যস্ত করে : হাঁ নিজের পাওনা ঘরে তোলে।
এমন সময়ে রফার কথা এল জমিদারের। বেগার নজরানা দুটোই খুশির ব্যাপার। না দিলে কথা নেই, দিলে বাপ ছেলের মধুর সম্পর্ক বজায় থাকবে। জবরদস্তি রইল না। খাটনির দাম দেওয়া হবে। পড়তি খাজনা মকুব করা গেল। এ ঘোষণায় সবাই নিরস্ত হল বটে, কিন্তু বুঝল, শক্ত তাদের সবার বড় সর্বনাশ সমাধা করেছে হরেরামকে মেরে। আজ হোক, কাল হোক, এর প্রতিশোধ নিতেই হবে। আবার জ্বলবে আগুন।
আগুন জ্বালা রইল মহিমের ঘরে। সবাই আসে হরেরামের সেই মুখ দেখতে। সত্য, এ তো মুখ নয়, শত্তুরের পৈশাচিক কীর্তি। এ মুখ কেউ ভুলল না।