২০. লক

২০. লক

…শিক্ষক আসার আগে ব্ল্যাকবোর্ড যে-রকম খালি আর শূন্য থাকে..

সাড়ে আটটায় বাড়ি পৌঁছাল সোফি। চুক্তির সময়ের চেয়ে দেড় ঘন্টা পরে, অবশ্য ওটাকে ঠিক চুক্তি বলা যায় না। সে কেবল ডিনারটা এড়িয়ে গিয়ে তার মায়ের জন্যে একটা মেসেজ রেখে গিয়েছিল যে সাতটার আগেই ফিরে আসবে সে।

এটা তো আর চলতে দেয়া যায় না, সোফি। তথ্য কেন্দ্রে ফোন করতে হয়েছিল আমাকে, এ-কথা জানতে যে ওল্ড টাউনে অ্যালবার্টো নামে কেউ আছে বলে ওদের কাছে রেকর্ড আছে কিনা। ওরা হাসল আমার কথা শুনে।

উঠে আসতে পারছিলাম না আমি। আমার ধারণা, জটিল একটা রহস্য ভেদ করতে যাচ্ছি আমরা।

যত্তোসব।

সত্যি বলছি।

তুই কি ওকে পার্টিতে দাওয়াত দিয়েছিস?

এই যা, ভুলেই গেছি।

দ্যাখ, আমি আবারো বলছি, লোকটার সঙ্গে দেখা করতে চাই আমি। কালকের মধ্যেই। একজন বয়স্ক লোকের সঙ্গে একটা কম বয়েসী মেয়ের এভাবে দেখা সাক্ষাৎ করাটা স্বাভাবিক নয়।

অ্যালবার্টোর ব্যাপারে ভয় পাবার কোনো কারণ নেই তোমার। বরং হিল্ডার বাবার ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা আরো খারাপ হতে পারে।

হিল্ডাটা আবার কে?

লেবাননের সেই লোকটার মেয়ে। লোকটা আসলেই বদ। মনে হচ্ছে গোটা দুনিয়াটা তারই খেয়াল-খুশিতে চলছে।

অ্যালবার্টোর সঙ্গে তুই যদি শিগগিরই আমাকে পরিচয় করিয়ে না দিস তাহলে তার সঙ্গে আর তোকে দেখা করতে দিচ্ছি না আমি। অন্তত লোকটা দেখতে কেমন সেটা না দেখা পর্যন্ত তার ব্যাপারে স্বস্তি পাবো না আমি।

হঠাৎ করে দারুণ একটা বুদ্ধি খেলে গেল সোফির মাথায়, নিজের ঘরে ছুটে গেল সে।

কী হলো রে তোর হঠাৎ? পেছন থেকে বলে উঠলেন তার মা।

নিমিষেই আবার ফিরে এলো সোফি।

এক্ষুণি তুমি দেখতে পাবে উনি দেখতে কেমন। আর তখন আশা করি তুমি আর আপত্তি করবে না।

ভিডিও ক্যাসেটটা দুলিয়ে দেখিয়ে ভিসিআরটার কাছে চলে গেল সে।

 লোকটা কি তোকে ভিডিও দিয়েছে?

এথেন্স থেকে…

শিগগিরই অ্যাক্রোপলিসের ছবি ফুটে উঠল স্ক্রীনের ওপর। সোফির মা হতবাক। হয়ে বসে দেখতে পেলেন অ্যালবার্টো সামনে এগিয়ে এসে সরাসরি সোফির সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন।

ভুলে গিয়েছিল এ-রকম একটা ব্যাপার এবার খেয়াল করল সোফি। নানান দলে বিভক্ত হয়ে থাকা টুরিস্টে ভর্তি অ্যাক্রোপলিস। একটা দলের মাঝখান থেকে ছোট্ট একটা প্ল্যাকার্ড তুলে ধরা হয়েছে। সেটাতে লেখা হিল্ডা…। অ্যালবার্টো ঘুরে বেড়াচ্ছেন অ্যাক্রোপলিস জুড়ে। খানিক পর তিনি প্রবেশ পথটা ধরে নিচে নেমে গিয়ে অ্যারিওপেগস পাহাড়ে চড়লেন, যেখান থেকে পল ভাষণ দিয়েছিলেন এথেনীয়দের উদ্দেশে। এরপর তিনি স্কোয়্যার থেকে কথা বলে চললেন সোফির সঙ্গে। সোফির মা বসে বসে ছোট ছোট কথায় মন্তব্য করে চললেন ভিডিওটা সম্পর্কে :

অবিশ্বাস্য… এই কি অ্যালবাটো? আবার খরগোশের কথা বলল লোকটা।…কিন্তু, হা, লোকটা সত্যিই কথা বলছে তোর সঙ্গে, সোফি। পল যে এথেন্স গিয়েছিলেন সেটা তো জানতাম না…।

 প্রাচীন এথেন্স যেখানে হঠাৎ ধ্বংসাবশেষ থেকে জেগে উঠল সেই অংশটায় চলে আসছিল ভিডিওটা। শেষ মুহূর্তে টেপটা বন্ধ করে দিতে পারল সোফি। মাকে সে অ্যালবার্টোকে দেখিয়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাই বলে প্লেটোর সঙ্গেও তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার নেই।

ঘরে নীরবতা নেমে এসেছে।

কেমন মনে হলো তোমার ওঁকে দেখতে সুদর্শন, তাই না? ফোড়ন কাটল সোফি।

 লোকটা নিশ্চয়ই আজব ধরনের হবে, নইলে প্রায় অচেনা একটা মেয়েকে পাঠানোর জন্যেই শুধু নিজেকে ফিল্ম-বন্দি করে কেউ এথেন্সে গিয়ে? কবে এথেন্স গিয়েছিল সে?

সে-সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই আমার।

কিন্তু আরো একটা ব্যাপার আছে…।

কী?

লোকটা দেখতে বনের মধ্যে ছোট্ট কুঁড়েঘরটায় যে-মেজর থাকতো তাঁর মতো।

হয়তো তিনিই সেই মেজর, মা।

কিন্তু গত পনেরো বছরে কেউ তাকে দেখেনি।

হয়ত উনি ঘুরে বেরিয়েছেন মেলা…এথেন্স অব্দিও হতে পারে।

মাথা নাড়লেন তার মা। সত্তরের দশকে আমি যখন তাঁকে দেখি তখন তিনি এই মাত্র দেখা এই অ্যালবার্টোর মতোই ছিলেন বয়েসে। বিদেশি বিদেশি একটা নাম ছিল তার।

নক্স?

হতে পারে সোফি। হতে পারে নক্স-ই ছিল তার নাম।

 নাকি ন্যাগ?

কিছুতেই মনে করতে পারছি না।…তা, তুই কোন নক্স বা ন্যাগ-এর কথা বলছিস?

একজন অ্যালবার্টো, অন্যজন হিল্ডার বাবা।

আমার মাথা ঘুরছে এ-সব দেখে-শুনে।

বাড়িতে খাবার কিছু আছে?

মিটবলগুলো গরম করে নিতে পারিস।

.

ঠিক দুহপ্তা হয়ে গেছে অ্যালবার্টোর কাছ থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাচ্ছে না সোফি। হিল্ডার জন্যে পাঠানো আরেকটা কার্ড পেয়েছে সে, কিন্তু আসল দিনটা এগিয়ে আসতে থাকলেও সে নিজে একটা কার্ড পায়নি।

একদিন বিকেলবেলা সে ওল্ড টাউনে গিয়ে অ্যালবার্টোর দরজায় টোকা দিল। তিনি বাড়িতে নেই, কিন্তু দরজায় ছোট্ট একটা চিরকুট সাঁটা। তাতে লেখা :

শুভ জন্মদিন, হিল্ডা! পরম সেই সন্ধিক্ষণ দোরগোড়ায় হাজির। সত্যের মুখোমুখি হওয়ার সময়, বুঝলি সোনামণি। যখনই এ-বিষয়টা নিয়ে ভাবি, হাসি থামাতে পারি না আমি। স্বাভাবিকভাবেই, এর সঙ্গে বার্কলের একটা সম্পর্ক রয়েছে, কাজেই তৈরি থাকিস।

.

দরজা থেকে চিরকুটটা টেনে ছিঁড়ে অ্যালবার্টোর ডাকবাক্সের মধ্যে সেটা ঢুকিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো সোফি।

যত্তসব! লোকটা নিশ্চয়ই এথেন্স ফিরে যায়নি? এতোগুলো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উনি তাকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে পারেন না নিশ্চয়ই?

১৪ই জুন স্কুল থেকে ফিরে সোফি দেখে হামেস বাগানে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। সোফি দৌড়ে গেল সেটার দিকে, কুকুরটাও খুশিতে লাফাতে লাফাতে এগিয়ে এলো তার দিকে। কুকুরটার গলা বেড় দিয়ে ধরল সোফি, যেন ওটাই পারে সব কটা ধাঁধার জবাব দিতে।

মায়ের জন্যে আবার একটা চিরকুট রেখে গেল সে, তবে এবার তাতে অ্যালবার্টোর ঠিকানাটা জুড়ে দিল।

শহরের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে পরের দিনের কথা ভাবতে থাকল সোফি। তার নিজের জন্মদিনের কথা অবশ্য ততটা নয়, মিডসামার ঈভূ-এ সেটা পালন করা হচ্ছে না। কিন্তু কাল হিল্ডার ও জন্মদিন। সোফি ঠিক জানে, রীতিমতো অসাধারণ একটা কিছু ঘটবেই ঘটবে। অন্তত লেবানন থেকে আসা জন্মদিনের কার্ডগুলোর হাত থেকে তো বাঁচা যাবে।

মেইন স্কোয়্যার পেরিয়ে ওরা যখন ওল্ড টাউনের দিকে যাচ্ছে, খেলার মাঠসহ একটা পার্ক-এ এসে পড়ল ওরা। একটা বেঞ্চির পাশে এসে থেমে দাঁড়াল হার্মেস, যেন সে চাইছে সোফি ওটাতে বসুক।

তাই করল সে আর সে যখন কুকুরটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে তখন সেটার চোখের দিকে তাকাল সোফি। হঠাৎ ভীষণভাবে কাঁপতে শুরু করল কুকুরটা। এক্ষুণি ঘেউ ঘেউ করে উঠবে ওটা, ভাবল সোফি।

এরপরই চোয়াল দুটো কাঁপতে লাগল কুকুরটার, কিন্তু ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠল না হার্মেস। বরং সে মুখটা খুলে বলে উঠল :

শুভ জন্মদিন, হিল্ডা!

সোফি তো হতবাক একেবারে। কুকুরটা কি সত্যিই কথা বলল তার সঙ্গে? অসম্ভব, এ নিশ্চয়ই তার কল্পনা, কারণ হিল্ডার কথা ভাবছিল সে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে নিশ্চিত বুঝতে পেরেছে হার্মেসই কথা বলেছে একটা চাপা, অনুনাদী, গুরুগম্ভীর স্বরে।

পর মুহূর্তেই সব কিছু স্বাভাবিক। বার কয়েক ঘেউ ঘেউ করে উঠল হার্মেস খানিক আগেই যে সে মানুষের গলায় কথা বলেছে সে ব্যাপারটি ধামাচাপা দেবার জন্যেই যেন-তারপর দুলকি চালে আগে আগে চলতে লাগল অ্যালবার্টোর নিবাসের দিকে। ভেতরে ঢোকার সময় আকাশের দিকে তাকাল সোফি। সারাটা দিন আবহাওয়া ভালোই ছিল, কিন্তু এখন বেশ দূরে ভারি মেঘ ঘনাতে শুরু করেছে।

অ্যালবার্টো দরজা খুলে দিতেই সোফি বলে উঠল : কোনোরকম তা দেখাবেন না দয়া করে। আপনি ভালো করেই জানেন আপনি মানুষটা একটা নির্বোধ।

কী হলো আবার?

 মেজর হার্মেসকে কথা বলতে শিখিয়েছে।

ও, ব্যাপারটা তাহলে এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে।

হ্যাঁ, ভাবুন একবার।

তা কী বলল কুকুরটা?

তিনটে সুযোগ দিচ্ছি আপনাকে অনুমান করার।

 আমার মনে হয় শুভ জন্মদিন সংক্রান্ত কিছু বলেছে হার্মেস!

সাবাস!

সোফিকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন অ্যালবার্টো। তার পরনে আরেক প্রস্থ নতুন পোশাক। আগেরবারের চেয়ে পোশাকটা খুব যে বেশি ভিন্ন তা না হলেও আজ বো বা লেস কিছুই নেই বললেই চলে।

কিন্তু সেটাই সব নয়, সোফি বলল।

কী বলতে চাইছ?

ডাকবাক্সে চিরকুটটা পাননি?

 ও, ওটা। ওটা আমি তখনই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি।

বার্কলের কথা ভাবতে গেলেই যদি তার হাসি পায় তাহলে আমার কিছু করার নেই। কিন্তু বিশেষ এই দার্শনিকটির ব্যাপারে এতো হাসির কী আছে?

সেটা দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে আমাদের।

কিন্তু আপনি তো আজই তার সম্পর্কে আলাপ করতে যাচ্ছেন, তাই না?

হ্যাঁ, আজই।

সোফায় আরাম করে গা এগিয়ে দিলেন অ্যালবার্টো। তারপর তিনি বললেন :

শেষ যে-বার এখানে বসেছিলাম সেদিন আমি দেকার্তে আর স্পিনোজা সম্পর্কে বলেছিলাম তোমাকে। সেদিন আমরা এই ব্যাপারে একমত হয়েছিলাম যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই দুজনের মিল রয়েছে আর তা হলো এঁরা দুজনেই ছিলেন বুদ্ধিবাদী (rationalist)।

আর, একজন যুক্তিবাদী হচ্ছেন সেই লোক যিনি যুক্তির গুরুত্বে প্রবলভাবে বিশ্বাসী।

ঠিক, প্রজ্ঞাকেই তিনি জ্ঞানলাভের প্রথম উৎস হিসেবে মনে করেন আর সেই সঙ্গে তিনি সম্ভবত এ-কথাও বিশ্বাস করেন যে মানুষের মনে কিছু সহজাত ভাব রয়েছে যে-সব ভাব কোনো ধরনের অভিজ্ঞতার আগেই তৈরি হয়েছে। আর এসব ভাব যতই স্বচ্ছ হবে ততোই এ-ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে ভাবগুলোর সঙ্গে বাস্তবের একটা যোগ রয়েছে। তোমার নিশ্চয়ই মনে আছে একটি নিখুঁত সত্তা সম্পর্কে দেকার্তের কীরকম পরিষ্কার এবং স্পষ্ট ধারণা ছিল যার ওপর ভিত্তি করে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে ঈশ্বর আছেন।

আমি অতোটা ভুলো মন নই।

সপ্তদশ শতাব্দীর দর্শনের পক্ষে এ-ধরনের বুদ্ধিবাদী চিন্তা ছিল খুবই সাধারণ। মধ্য যুগের কাছেও এই দর্শনের ঋণ প্রচুর, তাছাড়া প্লেটো আর সক্রেটিসের কথাও মনে পড়ে আমাদের এ-প্রসঙ্গে। কিন্তু আঠারো শতকে দর্শনটি ক্রমবর্ধমানভাবে বিশদ সমালোচনার বিষয় হয়ে পড়ে। বেশ কিছু দার্শনিক বিশ্বাস করতে থাকেন যে ইন্দ্রিয়গুলোর সাহায্যে প্রত্যক্ষ করা হয়নি এমন কোনো কিছুই আমাদের মনের ভেতর নেই। এ-ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিকে বলে অভিজ্ঞতাবাদ(empiricism)।

আজ বুঝি আপনি আমাকে এদের কথা বলবেন, অভিজ্ঞতাবাদীদের কথা?

হ্যাঁ, চেষ্টা করব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতাবাদীরা অর্থাৎ অভিজ্ঞতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দার্শনিকেরা হলেন লক, বার্কলে আর হিউম আর এদের এই তিনজনই ব্রিটিশ। অন্যদিকে সপ্তদশ শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিবাদী দার্শনিকেরা হলেন ফরাসী দেকার্ত, ওলন্দাজ স্পিনোজা আর জার্মান লাইবনিজ। অর্থাৎ আমরা দেখতে পাচ্ছি একদিকে রয়েছে ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদ আর অন্যদিকে কন্টিনেন্টাল বুদ্ধিবাদ।

কত যে কঠিন কঠিন শব্দ! অভিজ্ঞতাবাদের অর্থটা বলবেন আরেকবার?

একজন অভিজ্ঞতাবাদী জাগতিক সমস্ত জ্ঞান আহরণ করেন ইন্দ্রিয় থেকে পাওয়া তথ্য হতে। অভিজ্ঞতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির ধ্রুপদী সূত্রটি দিয়েছিলেন অ্যারিস্টটল। তিনি বলেছিলেন : মনের মধ্যে এমন কিছু নেই ইন্দ্রিয়গুলোতে যা প্রথমে ধরা পড়েনি। এই দৃষ্টিভঙ্গিটি আসলে প্লেটোর তীব্র সমালোচনা, কারণ প্লেটো মনে করতেন যে মানুষ ভাব-জগৎ থেকে এক তাড়া ভাব নিয়ে আসে জন্মানোর সময়। লক অ্যারিস্টটলের কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং লক যখন কথাগুলো বলেন তখন সেগুলো বললেন দেকার্তকে উদ্দেশ্য করে।

মনের মধ্যে এমন কিছু নেই…ইন্দ্রিয়গুলোতে যা প্রথমে ধরা পড়েনি?

যে-পৃথিবীতে আমাদেরকে আনা হয়েছে তা দেখার আগে সে-সম্পর্কে আমাদের কোনো সহজাত ভাব জন্মেনি। আমাদের মনে যদি এমন কোনো ভাব থাকে যার সঙ্গে অভিজ্ঞতালব্ধ কোনো তথ্যের সম্পর্ক নেই তাহলে সেটাকে একটা মিথ্যে ভাব বলে মনে করতে হবে। যেমন ধরো, আমরা যখন ঈশ্বর, চিরন্তনতা, বা সারবস্তু, এই কথাগুলো ব্যবহার করি তখন কিন্তু প্রজ্ঞার অপপ্রয়োগ হচ্ছে, কারণ কারো অভিজ্ঞতাতেই ঈশ্বর, চিরন্তনতা বা দার্শনিকেরা যাকে সারবস্তু বলেছেন সেগুলো নেই। কাজেই, দেখতেই পাচ্ছো যে এ-সব নিয়ে পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনেক প্রবন্ধ হয়ত লেখা যায় কিন্তু তাতে আসলে সত্যিকার অর্থে নতুন কোনো ধ্যান-ধারণা থাকে না। এটার মতো অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তৈরি করা একটি দার্শনিক পদ্ধতি আপাতদৃষ্টিতে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়ার মতো হলেও আসলে কিন্তু তা নিখাদ আজগুবি কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। সতেরো এবং আঠারো শতকের দার্শনিকেরা এ-ধরনের বেশ কিছু পাণ্ডিত্যপূর্ণ লেখা পেয়েছিলেন। নানান হাত ঘুরে এসেছিল সেগুলো। এবার সেগুলোকে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে পরীক্ষা করার সময় এলো। সময় এলো সেগুলোর সমস্ত শূন্যগর্ভ মতামত ঝেটিয়ে বিদেয় করার। ব্যাপারটাকে আমরা হাত দিয়ে ছেকে সোনা বাছাই করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে তুলনা করতে পারি। যা উঠে আসে তার বেশিরভাগই কিন্তু বালু আর কাদা। কিন্তু তারই মধ্যে তুমি দেখতে পাবে কোনো না কোনো স্বর্ণকণার দীপ্তি।

আর সেই স্বর্ণকণা হলো গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা?

কিংবা অন্তত সেই সমস্ত ভাবনা চিন্তা যেগুলোর সঙ্গে অভিজ্ঞতার একটা সম্পর্ক রয়েছে। মানবীয় সমস্ত ধ্যান-ধারণার বাস্তব অভিজ্ঞতাপ্রসূত কোনো ভিত্তি রয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখাটা ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিকের জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, চলো আমরা বরং এক এক জন দার্শনিক নিয়ে এগোই।

ঠিক আছে, শুরু করুন।

প্রথমেই আসছেন ইংরেজ দার্শনিক জন লক (John Locke), তাঁর জন্ম ১৬৩২ সালে, মৃত্যু ১৭০৪-এ। তাঁর প্রধান কাজ হচ্ছে ১৬৯০ সালে প্রকাশিত এসে কনসানিং হিউম্যান আন্ডারস্ট্যান্ডিং। এই বইটিতে তিনি দুটো প্রশ্নের সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রথমত, আমরা আমাদের ধারণাগুলো কোথা থেকে পাই আর দ্বিতীয়ত, আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো আমাদেরকে যে-সব তথ্য দেয় সে-সবের ওপর আমরা ভরসা করতে পারি কিনা।

এটাকে তো এক ধরনের প্রকল্পই বলা যায়।

প্রশ্নগুলো একটা একটা করে দেখা যাক। লকের দাবি হলো, আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর সাহায্যে যে-সব জিনিস আহরণ করেছি সে-সব থেকেই আমাদের সমস্ত চিন্তা-চেতনা ধ্যান-ধারণা উদ্ভূত হয়। কোনো কিছুই যখন প্রত্যক্ষ করা হয়নি তখন আমাদের মনটা একটা টেবুলা রাসা বা শূন্য শ্লেট।

 ল্যাটিনটা আপনি স্বচ্ছন্দে বাদ দিয়ে যেতে পারেন।

অর্থাৎ কোনো কিছুই যখন প্রত্যক্ষ করা হয়নি তখন আমাদের মনটা থাকে শিক্ষক আসার আগে ব্ল্যাকবোর্ড যে-রকম খালি আর শূন্য থাকে ঠিক সে-রকম। আসবাবপত্র রাখা হয়নি এ-রকম একটা কামরার সঙ্গেও মনকে তুলনা করেছেন লক। একসময় বিভিন্ন জিনিস প্রত্যক্ষ করতে থাকি আমরা। নিজেদের চারপাশের জগত্তাকে দেখি, গন্ধ নিই, স্বাদ নিই, স্পর্শ করি, শুনি। আর এই কাজটা সদ্যোজাত শিশুদের চেয়ে বেশি কেউ করে না। লক যাকে ইন্দ্রিয়ের সরল ধারণা (simple ideas of sense) বলছেন সেটা এভাবেই জন্ম নেয়। কিন্তু মন যে তার বাইরে থেকে নানান সব তথ্য নিষ্ক্রিয়ভাবে গ্রহণ করে তা কিন্তু নয়। একটা প্রতিক্রিয়া মনের ভেতরেও ঘটে। ভাবনা-চিন্তা, যুক্তি, বিশ্বাস আর সন্দেহ ইত্যাদি একক ইন্দ্রিয়গত ধারণার ওপর কাজ করে আর তার ফলেই জন্ম নেয়, তাঁর ভাষায়, অনুচিন্তন (reflection)। অর্থাৎ তিনি সংবেদন আর অনুচিন্তন, এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন বিষয়টিকে। মন স্রেফ একটা নিষ্ক্রিয় গ্রহীতা নয়। সংবেদনগুলো যখন স্রোতের মতোন এসে ঢুকতে থাকে তখন মন সেগুলোর শ্রেণীবিন্যাস করে, সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে। আর ঠিক এই জায়গাটিতেই মানুষকে সাবধান হতে হবে।

সাবধান হতে হবে?

 লক এ-কথা জোরের সঙ্গে বলেছেন যে আমরা কেবল সরল সংবেদনই প্রত্যক্ষ করতে পারি। যেমন ধরো, আপেল খাওয়ার সময় একটি মাত্র একক সংবেদন দিয়ে গোটা আপেলটাকে প্রত্যক্ষ করতে পারি না আমি। আসলে আমি ধারাবাহিক কিছু সরল সংবেদন লাভ করি– যেমন, দেখতে পাই যে একটা জিনিসের রং সবুজ, ঘ্রাণটা বেশ টাটকা, স্বাদটা বেশ রসাল আর কড়া। বেশ কয়েকবার আপেল খাওয়ার পরেই কেবল ভাবি যে আমি একটা আপেল খাচ্ছি। লক হলে বলতেন, আপেল সম্পর্কে আমরা একটা যৌগিক ভাব (complex idea) লাভ করেছি। যখন আমরা একেবারে শিশু ছিলাম, প্রথমবারের মতোন আপেলের স্বাদ গ্রহণ করেছি, তখন এ-ধরনের যৌগিক ধারণা ছিল না। কিন্তু আমরা সবুজ রঙের একটা জিনিস দেখেছি, টাটকা, রসাল, মজার একটা জিনিসের স্বাদ নিয়েছি … খানিকটা টকও ছিল সেটা। একটু একটু করে আমরা একই ধরনের অনেক সংবেদন জড়ো করে আপেল, নাশপাতি, কমলা-র মতো ভাব তৈরি করি। তবে শেষ বিচারে, আমাদের জাগতিক জ্ঞানের সমস্ত উপাদান আমরা আমাদের সংবেদনগুলোর মাধ্যমেই পাই। যে-জ্ঞানের সূত্র খুঁজতে গিয়ে কোনো সরল সংবেদনের কাছে পৌঁছানো যায় না সে-জ্ঞানটি অতএব মিথ্যা জ্ঞান এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

তাহলে যে কোনো হিসেবেই এই বিষয়টি নিশ্চিত বলে তাহলে ধরে নেয়া যেতে পারে যে আমরা যা কিছু দেখি, শুনি, যে-সব জিনিসের ঘ্রাণ আর স্বাদ নেই তার সবই হচ্ছে সে-রকম যেভাবে আমরা সেগুলোকে প্রত্যক্ষ করি।

একই সঙ্গে হা এবং না। আর এই সূত্র ধরেই আমরা পৌঁছাবো দ্বিতীয় সেই প্রশ্নটিতে লক যার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছেন। কোত্থেকে আমরা আমাদের ধারণাগুলো পাই সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি আগে দিয়েছেন। এবার তিনি প্রশ্ন করছেন জগক্টাকে আমরা যেভাবে প্রত্যক্ষ করি সেটা আসলে সে-রকম কিনা। ব্যাপারটা খুব সহজ নয়, বুঝলে, সোফি। এ-ব্যাপারে হুট করে সিদ্ধান্তে পৌঁছালে চলবে না। এই একটা কাজ একজন সত্যিকার দার্শনিক যেন কখনোই না করেন।

আমি একটা কথাও বলিনি।

– মুখ্য এবং গৌণ গুণ বলে দুটো জিনিসের মধ্যে একটা পার্থক্য নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এবং এর মাধ্যমে তিনি দেকার্তসহ সমস্ত মহান দার্শনিকের কাছে তার ঋণ স্বীকার করেছেন।

 মুখ্য গুণ (primary qualities) বলতে তিনি বুঝিয়েছেন ব্যাপ্তি, ওজন, গতি, সংখ্যা, ইত্যাদিকে। এ-ধরনের প্রসঙ্গে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে ইন্দ্রিয়গুলো এই গুণগুলোকে নৈর্ব্যক্তিকভাবেই রিপ্রোডিউস করে। কিন্তু বস্তুর মধ্যে আমরা অন্য কিছু গুণও প্রত্যক্ষ করি। আমরা বলি জিনিসটা মিষ্টি বা টক, সবুজ বা লাল, গরম বা ঠাণ্ডা। এদেরকে লক বলছেন গৌণ গুণ (secondary qualities)। বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ, শব্দ, এই ধরনের সংবেদনগুলো বস্তুর অন্তনিহিত প্রকৃত গুণগুলোকে রিপ্রোডিউস করে না। আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর ওপর বাইরের জগৎ যে-প্রভাব ফেলে ওগুলো শুধু সে-সবই তুলে ধরে।

কমলা খাওয়ার সময় জোয়ানার মুখের যে-চেহারাটা হয় সেটা অন্য কোনো লোকের হয় লেবু খাওয়ার সময়। একবারে এক কোয়ার বেশি মুখে দিতে পারে না। ও। বলে, কমলা নাকি টক। ঠিক সেই কমলাটাই আমার কাছে চমৎকার আর মিষ্টি বলে মনে হয়।

ব্যাপারটা এমন নয় যে তোমাদের মধ্যে একজন ঠিক বলেছ, অন্যজন ভুল। কমলাটা তোমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর ওপর কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে তোমরা ঠিক তারই বর্ণনা দিচ্ছো। হয়ত লাল এর একটা শেড তোমার পছন্দ নয়। কিন্তু জোয়ানা সেই রঙেরই একটা পোশাক কিনলে তোমার মতটা চেপে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। রঙটার ব্যাপারে তোমাদের দুজনের অভিজ্ঞতা দুরকম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেটা সুন্দর বা কুৎসিত।

কিন্তু কমলা যে গোল সে ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।

হ্যাঁ, একটা গোল কমলা হাতে নিয়ে তুমি মনে করতে পারবে না যে এটা বর্গাকার। তুমি মনে করতে পারো কমলাটা মিষ্টি বা টক, কিন্তু ওটার ওজন মাত্র দুশো গ্রাম হলে তুমি মনে করতে পারো না যে ওটার ওজন আট কিলো। তুমি অবশ্যই বিশ্বাস করতে পারো যে ওটার ওজন বেশ কয়েক কিলো হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তোমার অনুমানে বিরাট ভুল হবে। কোনো একটি জিনিসের ওজন কত এ-ব্যাপারে যদি বেশ কিছু লোককে অনুমান করতে বলা হয় তাহলে দেখা। যাবে তাদের মধ্যে একজন অন্য সবার চেয়ে সঠিক। সংখ্যার ব্যাপারেও ঠিক একই কথা খাটে। ক্যান-এর ভেতর হয় ৯৮৬টা মটর আছে নয় নেই। গতির ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য। গাড়িটা হয় চলছে নয় দাঁড়িয়ে আছে স্থির হয়ে।

বুঝতে পারছি।

কাজেই, পরিব্যাপ্ত বাস্তবতার প্রশ্নে লক দেকার্তের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন যে সেটার এমন কিছু গুণ রয়েছে যা মানুষ প্রজ্ঞার সাহায্যে বুঝতে সক্ষম।

এ-ব্যাপারে একমত হওয়াটা এমন কঠিন কিছু নয়।

তিনি যাকে স্বজ্ঞামূলক (intuitive) বা প্রামাণিক (demonstrative) জ্ঞান বলেছেন সেটা যে অন্যান্য ক্ষেত্রেও আছে লক তা স্বীকার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি মনে করতেন বিশেষ কিছু নৈতিক সূত্র সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অন্য কথায় বলতে গেলে, তিনি একটি স্বাভাবিক ন্যায় (natural right)-এর ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। আর এটা তাঁর চিন্তার বুদ্ধিবাদী বৈশিষ্ট্যেরই প্রকাশ। একই রকম আরেকটি বুদ্ধিবাদী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, লক বিশ্বাস করতেন, মানুষের প্রজ্ঞার ভেতরেই এ-কথা জানার ক্ষমতা নিহিত রয়েছে যে ঈশ্বর আছেন।

হয়ত তিনি ঠিকই বলেছেন।

কোন বিষয়ে?

 ঈশ্বর যে আছেন সে-বিষয়ে।

সেটা অবশ্য সম্ভব, কিন্তু ব্যাপারটিকে তিনি বিশ্বাসের ওপর ছেড়ে দেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের প্রজ্ঞা থেকেই জন্ম নিয়েছে ঈশ্বরের ধারণা। ওটা একটা বুদ্ধিবাদী বৈশিষ্ট্য। এই সঙ্গে আমার যোগ করা উচিত যে তিনি বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা এবং সহনশীলতার পক্ষে সোচ্চার হয়েছিলেন। নারী পুরুষের সাম্য নিয়েও অনেক চিন্তা ভাবনা করেছেন তিনি এবং তিনি মনে করতেন নারী যে পুরুষের অধীন এই ব্যবস্থাটি পুরুষেরই সৃষ্টি। কাজেই এর পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।

এ-ব্যাপারে আমি একমত না হয়ে পারছি না।

নারী-পুরুষের ভূমিকা সংক্রান্ত বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে-কজন দার্শনিক আগ্রহ বোধ করেছেন লক তাদের প্রথম কয়েকজনের অন্যতম। জন স্টুয়ার্ট মিল এর (John Stuart Mill) ওপর লক-এর প্রভাব প্রবল এবং মিলও নারী পুরুষের সমতার লড়াই-এ একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। মোটের ওপর, লক ছিলেন অসংখ্য উদারনৈতিক ধারণার অগ্রদূত আর এ-সব ধারণা সপ্তদশ শতকে ফরাসী আলোকপ্রাপ্তির (French Enlightenment) যুগে পরিপূর্ণভাবে বিকাশ লাভ করেছিল। লকই প্রথম ক্ষমতার বিভাজন-এর পক্ষে মত প্রকাশ করেন…

তার মানে কি রাষ্ট্রের ক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ করে দেয়া নয়?

কোন কোন প্রতিষ্ঠান তা কি মনে আছে তোমার?

এই যেমন আইনপ্রণয়নকারী পরিষদ বা নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, তাছাড়াও রয়েছে বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা বা আদালত। আর তারপর রয়েছে নির্বাহী ক্ষমতা বা সরকার।

ক্ষমতার এই বিভাজন-এর বিষয়টি এসেছে ফরাসী আলোকপ্রাপ্তির সময়কার দার্শনিক মতেঙ্কুর (Montesquieu) কাছ থেকে। লক-ই সবার আগে এ-কথা জোরের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন যে স্বৈরাচার এড়াতে হলে আইনপ্রণয়নকারী এবং নির্বাহী ক্ষমতাকে পৃথক করতেই হবে। লক-এর সমসাময়িক ছিলেন চতুর্দশ লুই, যিনি সমস্ত ক্ষমতা নিজের হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমিই রাষ্ট্র। আমাদের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন পরম (absotute) শাসক। আমাদের দৃষ্টিতে চতুর্দশ লুই-এর শাসন ছিল স্বেচ্ছাচারী এবং খামখেয়ালি। লক মনে করতেন একটি বৈধ রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে জনগণের প্রতিনিধিদেরকেই আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সরকারকে তা কার্যকর করতে হবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *