২০. মিলি একাই কাঁদছে

মিলি একাই কাঁদছে।

ওসমান সাহেব লক্ষ্য করলেন বাবার মৃত্যু তাকে তেমন অভিভূত করতে পারছে না। অস্বস্তি লাগছে এই পর্যন্তই। তার মনে হল, এখন যদি কেউ বলে আপনার এখানে থাকার দরকার নেই আপনি চলে যান, তাহলে তিনি খুশিই হবেন। তার প্রচণ্ড চায়ের পিপাসা হচ্ছে।

ফয়সল সাহেবের শরীর সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা। সাদা চাদর এখানে একটা রহস্যের সৃষ্টি করেছে। আড়াল মানেই রহস্যময়তা। গোল্ড রিমের চশমা পরা একজন ডাক্তার এসে বলল, আপনারা সবাই এখানে ভিড় করছেন কেন? বাইরে অপেক্ষা করেন। ডেডবডি নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করেন।

মিলি চেঁচিয়ে কাঁদছে। গ্রাম্য ধরনের কান্না। বিরক্তিকর। ওসমান সাহেব মৃদু স্বরে বললেন, চুপ কর মিলি। মিলি চোখ বড় বড় করে বলল, কেন চুপ করব, কেন?

সবাইকে বিরক্ত করছিস।

বেশ করছি।

ওসমান সাহেব ডাক্তারের কাছে এগিয়ে গেলেন। যেন ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এমন ভঙ্গিতে বললেন, আমরা এক্ষুণি ডেডবডি নেবার ব্যবস্থা করব। আপনি কিছু মনে করবেন না। ডাক্তার তাকাল অবাক হয়ে।

আপনি কে?

যে মানুষটি মারা গেছেন আমি তাঁর বড় ছেলে।

ডাক্তার তাকিয়ে আছে। তার চোখে বিস্ময়। ওসমান সাহেবের মনে হল শুধু বিস্ময় নয় অভিযোগও আছে। যেন সে বলছে তুমি মৃত ব্যক্তিটির ছেলে অথচ তোমার চোখ শুকনো, তুমি দিব্যি নিশ্চিন্ত ভঙ্গিতে হাঁটাহাঁটি করছ। তোমার বোনকে বলছি… . কান্না বন্ধ করতে। এটা ঠিক না।

তিনি বারান্দায় চলে গেলেন। লম্বা বারান্দায় বহু লোকজন অপেক্ষা করছে। প্রতীক্ষা। প্রতীক্ষার মত খারাপ আর কিছুই নেই। এরা সবাই প্রতীক্ষা করছে। তিনি সিগারেট ধরালেন। ডেডবিডি নেবার ব্যবস্থা তিনি না থাকলেও হবে। এবং ভালভাবেই হবে। এর মধ্যে তার আর থাকতে ইচ্ছা! করছে না। থাকার প্রয়োজনও নেই। এ সমস্ত কাজের জন্যে প্রচুর উৎসাহী লোকজন আছে। এরা খুব আগ্রহ নিয়ে ছোটাছুটি করবে।

আচ্ছা তিনি কী তাঁর কোনো উপন্যাসে মৃত্যু বর্ণনা করেছেন? তিনি মনে করতে পারলেন না। তবে দীর্ঘ বর্ণনা কোথাও নেই এটা প্রায় একশ ভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। মৃত্যু ব্যাপারটি তিনি সব সময় এক দুই লাইনে সারতে চেষ্টা করেছেন। তার ধারণা তিনি একা নন মৃত্যুর বর্ণনা খুব কম লেখকই দিয়েছে। সবার মধ্যে একটা পাশ কাটানোর ভাব। প্ৰায় সবাই ফিলসফি করার চেষ্টা করছেন। মূল বর্ণনা তেমন নেই।

শরৎচন্দ্রের দেবদাসেরও একই ব্যাপার। শরৎচন্দ্র পাঠককে বললেন, মরণে ক্ষতি নাই। কিন্তু সেই সময় একটি সুখকর স্পর্শ কপালে আসিয়া পৌঁছে যেন একটি দয়ার্দ্র স্নেহময় মুখ দেখিতে দেখিতে জীবনের ইতি হয়।

ওসমান সাহেব।

তিনি চমকে তাকালেন। বেঁটে মত লোকটিকে চিনতে পারলেন না। কিছু কিছু মুখ সব সময় অচেনা থাকে। দীর্ঘ পরিচয়েও তাদের কখনো চেনা মনে হয় না।

আপনি এখানে কী করছেন?

কিছু করছি না।

সবাই আপনাকে খুঁজছে।

কেন?

ডেডবডি বের করতে হবে না?

বের করুন। আমাকে দরকার কেন?

বেঁটে লোকটি অবাক হয়ে বলল, সেকি আপনি ধরবেন না?

কী ধরব?

লাশ বের করার সময় ধরতে হবে না?

না।

আরে আপনি বলেন কী?

বেঁটে লোকটির বিস্ময়ের সীমা রইল না। তার বিস্ময় দেখে ওসমান সাহেব অস্বস্তি বোধ করতে লাগলেন। লাশ বের করবার সময় তার বোধহয় ধরা উচিত। এটা নিশ্চয় কোনো একটা সামাজিক নিয়ম। কুৎসিত সব নিয়মকানুন চালু আছে। এ সমাজে।

ওসমান সাহেব শীতল স্বরে বললেন, যা করতে হয় আপনার করুন। আমাকে টানবেন না। প্লিজ।

লোকটি চলে গেল। শেষ মাথা পর্যন্ত গিয়ে পেছন ফিরে তাকাল, তার মানে সে বড়ই অবাক হয়েছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না বলেই দ্বিতীয়বার তাকিয়েছে।

তিনি ঘড়ি দেখলেন। ঘড়ি কী বন্ধ হয়ে আছে? মাত্র আটটা বাজে। হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলে কেমন হয়? একটা রিকশায় উঠে চলে যাওয়া যায়। বাড়িতে গিয়ে অপেক্ষা করলেই হবে।

ওসমান সাহেব, স্নামালিকুম।

ওয়াল্যাইকুম সালাম।

দ্বিতীয় এই লোকটিকেও তিনি চিনতে পারলেন না। এও কী এসেছে তাকে নিয়ে যেতে?

আমি এখানকার একজন ডাক্তার। আমার নাম নাজমুল।

কেমন আছেন?

স্যার ভাল আছি। আপনাকে প্রথম দেখে আমি চিনতে পারিনি। চেনা চেনা লাগছিল। এখানে কী করছেন? কোনো পেসেন্ট আছে নাকি?

হ্যাঁ একজন ছিলেন। আমার বাবা। মারা গেছেন।

ডাক্তার সাহেব একটু হকচকিয়ে গেলেন। সান্তুনা দেয়ার ব্যাপারটা ডাক্তারেরা একেবারেই পারে না। রোগীর মৃত্যু মানেই ডাক্তারদের পরাজয়। পরাজিত মানুষেরা কখনো গুছিয়ে কিছু বলতে পারে না। ওসমান সাহেব। বললেন, আপনি কী আমাকে এক কাপ চা খাওয়াতে পারেন?

নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই। আসুন স্যার আমার সঙ্গে?

আমাকে স্যার বলছেন কেন?

ডাক্তার সাহেব হেসে ফেললেন। হাসি মুখেই বললেন, আপনি আমার কাছে অনেক বড় ব্যক্তি। আপনার প্রায় লেখাই আমি দুতিনবার পড়েছি।

ওসমান সাহেব কিছু বললেন না। ডাক্তার সাহেব বললেন, আমার সৌভাগ্য আপনার সঙ্গে দেখা হল। আমার অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার আছে আপনাকে।

জিজ্ঞেস করুন।

আজ না অন্য একদিন।

ডাক্তারের ঘরটি ছোটখাটো কিন্তু বেশ সুন্দর করে সাজানো। দেয়ালে সূর্যাস্তের একটা জল রঙ ছবি পর্যন্ত আছে। ফুলদানীতে কিছু প্লাস্টিকের ফুল। এটা চোখে লাগে। প্লাস্টিক দিয়ে ফুল বানানোর বুদ্ধি মানুষকে কে দিল কে জানে।

চায়ের কথা বলে এসেছি আপনি স্যার আরাম করে বসুন।

আরাম করেই বসেছি।

তিনি ঘড়ি দেখলেন। ঘড়ি বোধ হয় বন্ধই হয়ে আছে, এখনো আটটা বাজে।

কটা বাজে বলতে পারবেন ডাক্তার সাহেব?

আটটা।

তাই নাকি?

জি। আটটা বাজে দুমিনিট হবে। আমার ঘড়ি একটু স্লো।

ওসমান সাহেব হঠাৎ অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কী একটা জিনিস লক্ষ্য করছেন, মৃত্যু প্রসঙ্গ আমি মোটামুটি এড়িয়ে গেছি। আমার উপন্যাসগুলির কোনোটিতে মৃত্যু বিষয়ক কোন বর্ণনা নেই।

এটা তো স্যার ঠিক বললেন না। আপনার অন্য দিন উপন্যাসের মৃত্যুর দীর্ঘ বর্ণনা আছে। চমৎকার বর্ণনা। মা মারা যাচ্ছে। তার ছোট ছেলে ও বড় মেয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ছোট ছেলেটির বয়স পাঁচ বছর, বড় মেয়েটির বয়স দশ বছর। শীতের রাত।

তিনি চমকে উঠলেন। তাঁর মনে ছিল না। এই দৃশ্যটি তিনি ব্যবহার করেছেন। ডাক্তার সাহেব বললেন, স্যার বর্ণনা এত আন্তরিক যেন মনে হয় লেখকের চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটেছে।

ওসমান সাহেব ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, চোখের সামনেই ঘটেছে। ছোট ছেলেটি হচ্ছি। আমি আর বড় মেয়েটি আমার বোন। ওর নাম ছিল নীলাঞ্জনা। খুব কাব্যিক নাম। আমার মায়ের রাখা; ও মারা যায় এগারো বছর বয়সে।

বলতে বলতে তার গলা ধরে এল। দীর্ঘদিন পর তার চোখ ভিজে উঠল। মানুষের দুঃখগুলি কোথায় লুকানো থাকে?

চা নিন স্যার। চিনি হয়েছে?

হ্যাঁ হয়েছে।

আপনার বোধ হয় সিগারেট শেষ হয়ে গেছে। সিগারেট আনিয়ে দেই?

দিন। আপনার নামটা ভুলে গেছি। কী নাম বলেছিলেন যেন?

নাজমুল। নাজমুল হক।

নাজমুল সাহেব, চায়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি কী এখন কাইন্ডলি দেখবেন আমার বাবার ডেডবডি নেবার ব্যাপারে ওরা কত দূর কী করেছে। উনি একুশ নম্বর বেডে ছিলেন।

ডাক্তার সাহেব বের হয়ে গেলেন। ওসমান সাহেব। ঘড়ি দেখলেন। সাড়ে আট। সময় সত্যিচ সত্যি থেমে গেছে। আইনস্টাইন সাহেবের থিওরি অব রিলেটিভিটি। কোথায় যেন পড়েছিলেন। ফাসির আসামির কাছে সময় শ্লথ হয়ে যায়। এক এক মিনিট ও তাদের কাছে মনে হয অনন্তকাল। সেই হিসেবে এরাই সবচেয়ে দীর্ঘজীবী মানুষ।

ডাক্তার সাহেব সিগারেটের একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে ঢুকলেন। মৃদু স্বরে বললেন, ওরা এখন বেরুচ্ছেন একটা এমুলেন্সে ডেডবডি নেয়া হচ্ছে। আসুন স্যার। ওরা অপেক্ষা করছেন আপনার জন্যে।

ওসমান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।

সিগারেট নিন স্যার।

তিনি সিগারেট নিলেন। ধন্যবাদ জাতীয় কিছু বলা উচিত, বলতে পারলেন না। বলার বোধ হয় প্রয়োজনও নেই।

নাজমুল সাহেব, যাই।

স্যার আবার দেখা হবে।

অন্য দিনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে ভাল করেছিন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ডাক্তার সাহেব কিছুই বুঝতে পারলেন না। ওসমান সাহেব থেমে থেমে বললেন, অনেক দিন পর আপনি আমার বড় বোনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। থ্যাংকস।

নটার মধ্যে ফয়সল সাহেবের বাড়ি মানুষজনে ভরে গেল। ঢাকা শহরের পরিচিত অর্ধ পরিচিত সব আত্মীয় স্বজন চলে এসেছে। গেট দিয়ে ঢুকেছে অত্যন্ত চিন্তিত ও বিষন্ন মুখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা সহজ ও স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। একদল ঘুরে বেড়াচ্ছে অলস ভঙ্গিতে, অন্য একদল দারুণ ব্যস্ত। যদিও এতটা ব্যস্ততার কোনোই কারণ নেই। সবাইকে খরব দেয়া। পত্রিকার অফিসে নিউজ পাঠানো। ফটোগ্রাফার এনে ছবি তোলানো। অসংখ্য কাজ।

ওসমান সাহেব দোতলার বারান্দায় চাদর গায়ে দিয়ে বসেছিলেন। তার একটু শীত শীত করছে। বীথি এসে বলল, আপনি ভেতরে গিযে বসুন না। শীত লাগছে তো।

না ঠিক আছে। মিলি কী করছে?

ও শুয়ে আছে।

জ্ঞান ফিরেছে?

হ্যাঁ ডাক্তার সিডেটিভ দিয়েছে। ঘুমিযে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই। আপনি কিছু খাবেন? দুপিস কেক এনে দেই?

দিন।

বলেই তার লজ্জা লাগল। দুভাই বোনের একজন ঘন ঘন ফিট হচ্ছে। অন্যজন দিব্যি বসে আছে। কেক বিসকিট খাচ্ছে।

আপনি একটু মিলিকে ডেকে দিন।

ওকে এখন আর ডাকাডাকি করবেন না। ঘুমুতে দিন।

মিলির হ্যাসবেন্ড কোথায়?

উনি মিলির সঙ্গে আছেন। উনাকে ডেকে দেব?

না থাক।

বীথি। খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, ডেডবডি তো গ্রামের বাড়িতে যাবে। আপনি যাচ্ছেন তো সঙ্গে?

গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে নাকি?

হ্যাঁ। স্যার সেরকম বলে গেছেন। আপনি কী যাচ্ছেন সঙ্গে।

কখন যাবে?

কাল ভোরে। ট্রাক ভাড়া করতে গেছে। আপনি একটু কিছু মুখে দিয়ে নিচে গিয়ে বসুন। এভাবে বসে থাকা ভাল দেখায় না।

নিচে গিয়ে আমি করবটা কী?

কিছু করতে হবে না। বসে থাকবেন।

ওসমান সাহেব নিচে নেমে আসতেই নতুন একটা উদ্দীপনা দেখা দিল। খাটের চারপাশে কয়েকজন দোয়া-দরুদ পড়ছিলেন, তাদের গলার স্বর হঠাৎ অনেকখানি উঁচুতে উঠে গেল। ওসমান

সাহেব লক্ষ্য করলেন অনেকেই রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন। সম্পূর্ণই লোক দেখানো ব্যাপার। তাঁর বাবা এমন কোনো মানুষ ছিলেন না। যার মৃত্যুতে পরিচিত মানুষজন চোখের জল ফেলবে।

তিনি কঠিন প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। কাউকে কখনো নরম স্বরে কিছু বলেননি। আশপাশের প্রতিটি মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে এত লোকজন রুমালে চোখ মুছছে ব্যাপারটা शjदश्।

ধূপকাঠি এবং আতরের গন্ধে ওসমান সাহেবের মাথা ধরে গেল। তবু তিনি বসেই রইলেন। লম্বা এবং রোগা ধরনের একজন মওলানা সাহেব কোরান শরীফ পড়ছেন। তার কল্পনাতেও ছিল না। পড়ার ভঙ্গিতে, গলার স্বাবে কোথাও যেন একটা অপার্থিব কিছু আছে যা মন ছুঁয়ে যায়। তিনি চোখ বন্ধ করে ফেললেন।

ওসমান একটু শুনে যাও তো।

তিনি চোখ মেললেন। মগবাজারের সিদ্দিক সাহেব। তবে দূব সম্পর্কের চাচা।

একটু বাইরে আস আমার সাথে।

তিনি বারান্দায় এলেন। সিদ্দিক সাহেব নিচু স্বরে বললেন, ঘবেব আলমাবির সব চাবি নিজের কাছে নিয়ে যাও, নয়ত হরির লুট হয়ে যাবে।

হরির লুট হওয়ার মত কিছু নেই।

তুমি বললেই হল, নাই। কিছুই জানো না তুমি। ক্যাশ টাকাই আছে দশ-বাবা হাজার।

দেখি।

না, দেখাদেখির কিছু নাই। আর শোন, এই বাড়ি ভর্তি ফালতু লোকজন। এদেব সবাবার ব্যবস্থা কর।

কেন?

পরে আর সরাতে পারবে না। গ্যাট হয়ে বসবে। দান করে গেছেন। হেন তেন সতেরো কথা

বলবে।

ওসমান সাহেব কিছু বললেন না।

তোমার বলতে লজা লাগে তো আমি বলে দেখা।

আপনার বলার দরকার নেই।

খুব দরকার আছে। তুমি ব্যাপারটার গুরুত্বই বুঝতে পাৰ্লছ না। তা ছাড়া শুনলাম বাড়ি ঘর সব নাকি ঐ মেয়েকে দিযে গেছেন?

হ্যাঁ, দিয়ে গেছেন।

একদম চেপে যাও। আমি দেখব। ব্যাপারটা। তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।

ওসমান সাহেব। আবার দোতলায় চলে এলেন। মিলি ঘুমাযনি, খুন খুন কবে কাঁদছে। সে কী বাবার মৃত্যুর জন্যেই এমন কাঁদছে না। পুরনো কোনো দুঃখের কথা ভেবে ভেবে কাঁদছে? জানার কোনো উপায় নেই। নিজের মনকেই কখনো জানা যায় না। অন্যের মন জানার তো প্রশ্নই ওঠে না।

ওসমান সাহেব সিগারেট ধরিয়ে হাটতে লাগলেন। ক্ষিধে লেগেছে। কটা বেজেছে কে জানে? বীথি এগিয়ে আসছে। অন্ধকারে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কেন জানি ওসমান সাহেবের ইচ্ছা হল বীথির মুখ ভাল করে লক্ষ্য করতে। গালে চোখের জলের কোনো চিহ্ন আছে কী না। চোখ লাল হয়ে আছে কিনা। তিনি হোত ইশারা করে বীথিকে ডাকলেন।

বীথি এগিয়ে এল।

কিছু বলবেন?

ওসমান সাহেব নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিকভাবে বললেন, অনেকদিন ধরে আমি কিছু লিখতে পারছি না। বীথি তাকিয়ে রইল। বেশ কিছুক্ষণ কোনো কথা বলল না। ওসমান সাহেব বললেন, মৃত্যু আমার কাছে খুব ছোট ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে। আমার কষ্ট অনেক বেশি।

বীথি কোমল স্বরে বলল, আপনি রানু ভাবীকে নিয়ে আসুন। একটা গাড়ি নিয়ে চলে যান।

ওকে এনে কী হবে?

বাবার মৃত্যু সংবাদ তো অন্তত তাকে দিন। দেয়া উচিত। টগরকেও আনুন। ওসমান সাহেব রানুকে খবর দিতে গেলেন অনেক রাতে।

রানু ঘুমিয়ে পড়েছিল। এত রাতে তাঁকে আসতে দেখে সে খুব অবাক হল। চিন্তিত মুখে বলল, কী হয়েছে? বাবার মৃত্যু সংবাদ দেবার বদলে ওসমান সাহেব ক্লান্ত স্বরে বললেন, রানু আমি কিছু লিখতে পারছি না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *