২০. মাওয়া জেগে উঠল

২৫শে ডিসেম্বর। ভোর ৫-১০।

মাওয়া জেগে উঠল প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণের শব্দে। শব্দ কমে আসতেই সে শুনল একসঙ্গে অনেকগুলি সাব-মেশিনগান থেকে কানে তালা ধরানোর মতো আওয়াজ আসছে। সে-শব্দও থেমে গেল। আলাদা-আলাদাভাবে গুলির শব্দ হতে থাকল। কী হচ্ছে এসব? আবার একটি বিস্ফোরণ। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। মনে হল ফোর্টনকের সবটাই উড়ে গেছে। দরজা-জানালা সব ভেঙে গেছে নাকি? মাওয়া হতভম্ব হয়ে উঠে বসল বিছানায়, ঠিক তখনি বন্ধ দরজা কে যেন লাথি মেরে ভাঙল।

তুমি মাওয়া?

মূর্তির মতো মাথা নাড়ল মাওয়া।

আমরা নিশোকে নিতে এসেছি। তুমি চাবি নিয়ে আমার সঙ্গে এস।

কিসের চাবি?

কোনো বাজে কথা বলবে না। একটি বাজে কথা বলবে গুলি করে এখানেই শেষ করে দেব।

সাব-মেশিনগান থেকে আবার শব্দ আসছে। একটিমাত্র সাব-মেশিনগান। অনবরত ক্যাটক্যাট শব্দ। ভয়াবহ কিছু-একটা হয়ে গেছে।

মাওয়া অনুগত ছেলের মতো চাবির গোছা হাতে নিচে নেমে এল। সিঁড়ির মাথায় দেখা গেল আরেক জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে। সেই লোকটি ভারি গলায় বলল, এই কি মাওয়া?

জ্বি স্যার।

ভালো। মাওয়া, আমি ফকনার। তোমাদের সৈন্যবাহিনীর এমন খারাপ অবস্থা, আমার ধারণা ছিল না। একদল গার্লস-গাইডও তো এর চেয়ে ভালো ডিফেন্স দিত। এইসব অপদার্থদের তো লাথি দিয়ে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত।

সূর্য এখনো ওঠে নি। তবু আবছাভাবে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। মাওয়া ভালো-মতো চারদিকে তাকানোরও সাহস পাচ্ছে না। কোথাও কোনো শব্দ হচ্ছে না। শুধু ফ্যামিলি কোয়ার্টারগুলি থেকে মেয়েদের চেচিয়ে কান্নার আওয়াজ আসছে। সৈন্যবাহিনীর ব্যারাক মোটামুটিভাবে একটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মাওয়া সেলের তালা খুলল। সেলে ঢুকল হার্ভি ফকনার।

সুপ্রভাত জুলিয়াস নিশো।

নিশো কিছু বললেন না। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।

আপনি কেমন আছেন?

আমি ভালেই আছি। কিন্তু হচ্ছে কি?

তেমন কিছু না। আমরা আপনাকে নিতে এসেছি।

তোমরা কারা?

আমরা হচ্ছি বুনো হাঁস। আমার মনে হয় না আপনি হাঁটতে পারবেন।

ফকনার ইশারা করতেই এক জন এসে তাঁকে পিঠে তুলে নিল। নিশো মৃদুস্বরে বললেন, অনেক কিছুর পিঠেই চড়েছি, মানুষের পিঠে কখনো চড়ি নি।

ফকনার বলল, আপনাকে অল্প কিছু সময় কষ্ট করতে হবে মিঃ নিশো। ভোর ছটা পঁচিশে আমাদের উদ্ধারকারী প্লেন আসবে। এখানে এমন কিছু কি আছে, যা আপনি সঙ্গে নিতে চান?

না। কয়েকটি প্রেমের কবিতা লিখেছিলাম, সেগুলি আমি মাওয়াকে দিয়ে যেতে চাই।

মাওয়াকে দেওয়া অর্থহীন, ওকে আমি এক্ষুনি মেরে ফেলব।

অসম্ভব। আমার চোখের সামনে কাউকে হত্যা করতে পারবে না।

চোখের আড়ালেই করা হবে।

না না। দয়া কর।

ফকনার হেসে ফেলল।

নিশো চোখ বন্ধ করে উচ্চৈস্বরে বললেন, ঈশ্বর, দয়া কর। বলেই খেয়াল হল—তিনি একজন নাস্তিক। তবু তিনি আবারও ঈশ্বরের নাম নিলেন।

1 Comment
Collapse Comments
হামিদুল August 14, 2021 at 9:07 pm

Read it.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *