২০. পরিণতি

পরিণতি

ভিন্‌-প্রদেশী বর্মণ ও সেনাধিপত্য সূচনার সঙ্গে সঙ্গেই (তখন পাল পর্বের শেষ অধ্যায়) বাংলার ইতিহাস-চক্র সম্পূর্ণ আবর্তিত হইয়া গেল। বৈদিক, আর্য ও পৌরাণিক ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, সংস্কার ও সংস্কৃতি বাংলাদেশে গুপ্ত আমল হইতেই সবেগে প্রবাহিত হইতেছিল, সে-প্রমাণ আমরা আগেই পাইয়াছি। তিনশত সাড়েতিনশত বৎসর ধরিয়া এই প্রবাহ চলিয়াছে। বৌদ্ধ খড়গ-পাল-চন্দ্র রাষ্ট্রের কালেও তাহা ব্যাহত হয় নাই; বরং আমরা দেখিয়াছি সামাজিক আদর্শ ও অনুশাসনের ক্ষেত্রে এইসব রাষ্ট্র ও রাজবংশ ব্রাহ্মণ্য আদর্শ ও অনুশাসনকেই মানিয়া চলিত, কারণ সেই আদর্শ ও অনুশাসনই ছিল বৃহত্তর জনসাধারণের, অন্ততঃ উচ্চতর স্তর সমূহের লোকদের আদর্শ ও অনুশাসন। কিন্তু, বৌদ্ধ বলিয়াই হউক বা অন্য সামাজিক বা অর্থনৈতিক কারণেই হউক, পাল-চন্দ্র রাষ্ট্রের সামাজিক আদর্শ ও অনুশাসনের একটা ওদার্য ছিল—তাহার দৃষ্টান্ত সত্য সত্যই অফুরন্ত– ব্রাহ্মণ্য সামাজিক আদর্শকেই একটা বৃহত্তর সমন্বিত ও সমীকৃত আদর্শের রূপ দিবার সজাগ চেষ্টা ছিল; অন্যতর সামাজিক যুক্তিপদ্ধতি ও আদর্শকে অস্বীকার করার কোনও চেষ্টা ছিল না, কোনও সংরক্ষণী মনোবৃত্তি সক্রিয় ছিল না। সেন-বর্মণ আমলে কিন্তু তাহাই হইল; সমাজ ব্যবস্থায় কোনও ঔদার্য, অন্যতর আদর্শ ও ব্যবস্থার কোনও স্বীকৃতিই আর রহিল না; ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, সংস্কার ও সংস্কৃতি এবং তদনুযায়ী সমাজ ও বর্ণ ব্যবস্থা একান্ত হইয়া উঠিল; তাহারই সবর্ণময় একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হইল—রাষ্ট্রের ইচ্ছায় ও নির্দেশে।

ফল যাহা ফলিবার সঙ্গে সঙ্গেই ফলিল। বর্ণবিন্যাসের ক্ষেত্রে তাহার পরিপূর্ণ রূপ দেখিতেছি সমসাময়িক স্মৃতি গ্রন্থাদিতে, বৃহদ্ধর্ম  পুরাণে, ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে, সমসাময়িক লিপিমালায় এবং কিছু কিছু পরবর্তী কুলজী গ্রন্থমালায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *