2 of 3

২০ জুন, রবিবার ১৯৭১

২০ জুন, রবিবার ১৯৭১

বিশ্বব্যাঙ্কমিশন এসে তদন্ত করেফিরে গেছে। প্রিন্স সদরুদ্দিন এসে দেখেশুনে ফিরে গেছেন। চারদিন আগে তিন সদস্যের ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি প্রতিনিধিদলও এসে ঘুরে গেলেন। এরা খুলনা, যশোর, সিলেট, চট্টগ্রাম টুর করলেন, চটকল দেখলেন, চা বাগান দেখলেন, মিল-কারখানা দেখলেন, বেনাপোল সীমান্তে গেলেন, ঝিকরগাছায় অভ্যর্থনা কেন্দ্রও পরিদর্শন করলেন। তারপর গতকাল তারাও ফিরে গেছেন।

এঁরা সবাই ফিরে গিয়ে সন্তোষজনক রিপোর্ট না দিলে বোধহয় কোনো পশ্চিমী দেশ থেকেই এইড-ফেইড আর পাবে না ইয়াহিয়া সরকার। কিন্তু সন্তোষজনক রিপোের্ট দেবার উপায় আছে কি কারো। কদিন ধরে, আকাশবাণী, বি.বি.সি., স্বাধীন বাংলা, রেডিও অস্ট্রেলিয়া–সবখান থেকেই কে এম এন্থনী মাসকারেনাসের রিপোর্ট সম্বন্ধে খুব শোনা যাচ্ছে। এই সাংবাদিকটি নাকি পাকিস্তানি নাগরিক, করাচির মর্নিং নিউজের এসিস্ট্যান্ট এডিটর। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ইয়াহিয়া সরকার তাঁকে একদল সাংবাদিকের সঙ্গে পূর্ব বাংলায় পাঠায়। সব দেখেশুনে করাচি ফিরে গিয়ে প্রথমে বউ ছেলেমেয়ে লন্ডনে পাঠিয়ে দেন। তারপর নিজে পালিয়ে গিয়ে লন্ডনের সানডে টাইমসে প্রকাশ করেন তার রিপোর্ট।

এই রিপোর্ট বেরোনোর পরপরই ইয়োরোপ-আমেরিকায় হৈচৈ পড়ে গেছে। এতদিনে সত্যি সত্যিই সবার প্রত্যয় হয়েছে যে পূর্ব বাংলায় ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী যা করেছে, তাকে গণহত্যা ছাড়া অন্য কোন কিছু বলা যায় না।

শরীরটা কেন জানি ভালো ঠেকছে না। শরীরের চেয়ে মনই বেশি বেঠিক। লোহার সাঁড়াশি দিয়ে দুই পাঁজর চেপে ধরলে যেমন দম আটকানো ব্যথা হয়, সেই রকম ব্যথা। ধরছে পাজরে মাঝে মাঝেই। রুমী কি বর্ডার ক্রস করতে পেরেছে? পথে কোথাও খানসেনাদের সামনে পড়ে নি তো? কি করে জানব? জানার কোনো উপায় নেই। শুধু সহ্য করে যাওয়া।

ঘরের ভেতরে শরীফ, জামী, আর বাইরে থেকে সাদ এলে কেবল তার সঙ্গে ছাড়া আর কারো সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে মন হালকা করার কোন উপায় নেই। অন্য সবার সঙ্গেই সপ্রতিভ হাসিমুখে অভিনয়। এমনকি মার সঙ্গে, লালুর সঙ্গে। মা একটু চেষ্টা করেছিলেন জেরা করে জানবার। তাকে কঠিন, গম্ভীর মুখে বলেছি, রুমী তার বন্ধুর সঙ্গে দেশের বাড়িতে গেছে।

মোতাহার সাহেব প্রায় প্রায়ই আসেন। আমরাও যাই। ওঁর বড় ছেলে শামীমকেও কদিন থেকে দেখি না। একদিন বেভুলে জিগ্যেস করতেই মোতাহার সাহেব খুব সপ্রতিভ মুখে বললেন, ও শামীম ও তো দেশে গেল সেদিন। এসে পড়বে দুচারদিনের মধ্যেই। বুঝলাম। শামীমও মুক্তিযুদ্ধ গেছে।