মিনু ভাবী খয়েরী রঙের একটা শাড়ি পরেছেন। লণ্ঠনের আলোয় তাঁর মুখখানি করুণ দেখাচ্ছে। তিনি মৃদু স্বরে বললেন, চা খাবেন জহুর ভাই?
জ্বি-না।
বৃষ্টি হবে আজ রাতে। ঘনঘন বিজলি চমকাচ্ছে। বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত, কিন্তু জহুর উঠল না। ঘাড় ঘুরিয়ে ঘরের সাজসজ্জা দেখতে লাগল। চারদিকে মেয়েলি স্পর্শ আছে। দেখেই বোঝা যায়, এখানে বহুদিন ধরেই কোন পুরুষমানুষ থাকে না।
আপনার চলে কীভাবে ভাবী?
চৌধুরী সাহেব আমার জন্যে একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
তাই নাকি?
হুঁ। আমার জন্যে অনেক করেছেন।
জহুর মৃদু হাসল। মিনু নরম স্বরে বলল, তাঁর সাহায্য নিতে ইচ্ছা হয় নি, কিন্তু না নিয়েও কী করব বলেন?
তা ঠিক।
মিনু খানিকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল।
ঝড়-বৃষ্টি হবে, আমি উঠি ভাবী।
বসেন না। আরেকটু বসেন।
জহুর ইতস্তত করে বলল, আমার এ রকম আসা ঠিক না, লোকজন নানান কথা বলতে পারে।
বলুক। আমি এখন এই সব নিয়ে মাথা ঘামাই না। কত কথা রটল আমাকে নিয়ে, বুঝলেন জহুর ভাই। বিধবা মেয়েদের বড়ড়া কষ্ট।
জহুর উঠে দাঁড়াল।
ছাতা এনেছেন?
জ্বি-না।
আমারটা নিয়ে যান। বৃষ্টি আসবে।
না, থাক।
থাকবে কেন জহুর ভাই? নিয়ে যান।
হারিকেন হাতে মিনু চাপা স্বরে বলল, শহরে একটা ঝামেলা হচ্ছে, সেটা তো জানেন। একটা লোককে মেরে ফেলেছে।
জানি।
জহুর ভাই, এই সব নিয়ে আপনি কোনো কথাবার্তা বলবেন না।
এই কথা বলছেন কেন?
আপনি তাহলে আবার অসুবিধায় পড়বেন। জেলে-টেলে দিয়ে দেবে।
জহুর অস্পষ্ট স্বরে বলল, আমাকে জেলে দিলে কারো তো কোনো ক্ষতি নেই ভাবী।
মিনু সে-কথার জবাব দিল না। হারিকেনটা হাতে নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।
ঘনঘন বিজলি চমকাচ্ছে। রাতে খুব ঝড়-বৃষ্টি হবে। জহুর একটা সিগারেট ধরিয়ে হালকা গলায় বলল, যাই ভাবী। মিনু ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল।
বাতাস দিতে শুরু করেছে। ভেজা গন্ধ আসছে। দূরে কোথায়ও বৃষ্টি নেমেছে বোধহয়। জহুর মৃদু স্বরে বলল, যাই আজ।
মিনু কিছু বলল না।