কায়স্থ ও রাজা
পরে কিন্তু ব্রাহ্মণের এ বিষয়ে কায়স্থদের নিকট যথেষ্ট সাহায্য পাইয়াছিলেন। উঁহারা পূর্বেই বোধ হয় একটু দোটানায় ছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তাঁহাদের আগে বেশ শ্রদ্ধা ছিল, কেননা, অনেক কায়স্থ অনেক বৌদ্ধগ্রন্থ লিখিয়া গিয়াছেন। ধর্মপালের সময় হইতে বল্লাল সেনের সময় পর্যন্ত তাঞ্জুরে আমরা অনেক কায়স্থের নাম দেখিতে পাই। পরে, যখন তাহারা দেখিলেন বৌদ্ধ ধৰ্ম আস্তে আস্তে লোপ হইল, তখন তাঁহারা একেবারে ব্রাহ্মণের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িলেন এবং ব্রাহ্মণদের হইয়া পুরাণাদি বাংলা করিতে লাগিলেন। গুণরাজখাঁর কৃষ্ণমঙ্গল ও কাশীদাসের মহাভারত বাঙালীকে অনেক বড় করিয়া দিয়াছে। কাশীদাসের আরও দুই ভাই গদাধর ও কৃষ্ণদাস ভাল ভাল বই লিখিয়া গিয়াছেন। সকলেরই উদ্দেশ্য সেই এক— বাঙালী হিন্দু হউক। কায়স্থেরা শুধু বই লিখিয়াই সমাজের উপকার করিয়া গিয়াছেন, তাহা নহে। এদেশের অনেক জমিই তাঁহাদের হাতে ছিল, জমিদারভাবেও দেশের ও সমাজের যথেষ্ট উপকার করিয়া গিয়াছেন। রাজা গণেশ ও তাঁহার সন্তানসন্ততি বাংলার সুলতান না হইলে রায়মুকুট বড় কিছু করিতে পারিতেন না। হিরণ্য ও গোবৰ্ধন না থাকিলে চৈতন্য সম্প্রদায় গড়িতেই পারিতেন কিনা মনোহ। বুদ্ধিমন্ত খাঁ না থাকিলে নবদ্বীপের ব্রাহ্মণ-পণ্ডিতসমাজকে অর্থের জন্য বিস্তর কষ্ট পাইতে হইত। এইরূপে কায়স্থ-ব্রাহ্মণে মিশিয়া বাংলায় একটা প্রকাণ্ড হিন্দুসমাজ গড়িয়া তুলিলেন।