কুড়ি
কথা বাতাসের আগে ছোটে। আকাশলাল আজ মেলার মাঠে ভার্গিসের কাছে ধরা দেবে এমন খবর চাউর হওয়া মাত্র সেটা এই শহরের মানুষদের নিঃশ্বাস ভারী করে তুলল। যাকে ধরতে সরকার কতরকমের অত্যাচার চালিয়েছে, লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে কিন্তু কোনও কাজ হয়নি সেই মানুষটি আজ স্বেচ্ছায় ধরা দিতে আসবে এমন বিশ্বাস করা অনেকের পক্ষেই কঠিন।
কিন্তু মানুষ বিশ্বাস না করলেও কৌতুহলী হয়। আর সেই কারণেই মেলার মাঠ থিকথিকে জনতায় ভরে গেল। দেহাতি থেকে শহরের মানুষদের মনে একই চিন্তা। এমন কি ব্যাপার ঘটল যাতে আকাশলাল ধরা দিচ্ছে! যারা নির্বিবাদে থাকতে চায়, পুলিশের সঙ্গে ঝামেলা এড়িয়ে চলে তারাও আকাশলাল সম্পর্কে একধরনের সহানুভূতি রাখে। আবার কেউ কেউ মনে করে বিপ্লবীরা নিজেদের স্বার্থে আকাশলালের অস্তিত্ব প্রচার করে। আসল আকাশলাল অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছে। বোর্ডের যা ক্ষমতা তাতে এদেশে থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখা অসম্ভব। অথচ পুলিশ মানুষটাকে ধরতে পারছে না। যে নেই তাকে ধরবে কি করে।
আজ যখন খবরটা চাউর হল তখন কারও কারও বুক টন টন করে উঠল। ওই মানুষটার আত্মসমর্পণ মানে এদেশ থেকে বিপ্লবের শেষ সম্ভাবনা মুছে ফেলা। নিজেরা যে করে হোক জীবনটাকে কাটিয়ে দিয়েছে কিন্তু বাচ্চাগুলো ভবিষ্যতে যে আরামে থাকবে তার কোনও সম্ভাবনাই রইল না। কয়েকটা পরিবার নিজেদের আরও ধনী করতে করতে একসময় দেশটাকেই হয়তো বিক্রি করে দেবে। যারা দেশটাকে নিজের সম্পত্তি ভাবে তারা তো স্বচ্ছন্দেই সেটা করতে পারে! আকাশলালের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করতে পারছিল না অনেকেই। অবশ্য তারা নিজেরাও জানে শত্রুতা না করলেও আকাশলালের পাশে দাঁড়িয়ে বোর্ডের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কখনও নামেনি। একটার পর একটা সংঘর্ষে যখন আকাশলালের দল ক্রমশ ছোট হয়ে এসেছে তখনও ভয়ে নীরব দর্শক থেকে গেছে। কিন্তু আজ আকাশলালের আত্মসমর্পনকে তারা মানতে পারছিল না কিছুতেই। সেই দুঃখ নিয়েই জমা হয়েছিল মেলার মাঠে।
কিন্তু অনেকেই মনে করছে আজ একটা চমৎকার নাটক হবে। আকাশলাল কখনওই ধরা দিতে আসতে পারে না। এত বছর ধরে যে ভার্গিসকে বোকা বানিয়েছে সে খবরটা রটিয়ে দিয়ে মজা দেখবে। অথবা এমন একটা কাণ্ড বেলা বারোটায় হবে যে ভার্গিসের মুখ চুপসে যাবে। সেই মজা দেখতেই অনেকে চলে এসেছে।
মেলা উপলক্ষে বাইরের কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে এদেশীয় সাংবাদিকরাও ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এতবড় একটা খবর কানে যাওয়া মাত্র তাঁরাও ছুটে এসেছেন বাঁশ দিয়ে ঘেরা জায়গাটায়, যেখানে নাকি আত্মসমর্পণের ঘটনাটা ঘটবে। এমন কি পরিস্থিতি হল যার কারণে এইরকম সিদ্ধান্ত নিতে হল তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা চলছিল সাংবাদিকদের মধ্যে। পুলিশ যেমন আকাশলালকে খোঁজার চেষ্টা করে গেছে এবং সফল হয়নি সাংবাদিকদেরও একই অবস্থা হয়েছিল। আকাশলালকে খুঁজে বের করে একটা জম্পেশ ইন্টারভিউ নিতে পারলে কাগজের প্রচার হুহু করে বেড়ে যেত। কিন্তু লোকটার কোনও হদিশই কেউ পায়নি।
সাংবাদিকদের দলে একটি তরুণী সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। মেয়েটি সুন্দরী তো বটেই কিন্তু ওর পরনে জিনস আর সার্ট। চুল ছোট করে ছাঁটা। কাঁধে ব্যাগ। মেয়েটির সৌন্দর্য রুক্ষতার বেড়া দিয়ে ঘেরা। কোন মতেই পেলব অথবা কোমল নয়। বাঁশের বেড়ার ওপাশে ভার্গিশের জিপ এসে দাঁড়ানো মাত্র সাংবাদিকরা তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু সেপাইরা এগোতে দিচ্ছিল না তাদের। এদেশীয় সাংবাদিকরা অবশ্য সেই চেষ্টা করছিল না। সরকার বিব্রত হতে পারে এমন লেখা তারা লিখতে পারে না। এখানকার বোর্ড সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন যদিও সরকার বিরোধী কোনও কাগজের অস্তিত্ব এখানে নেই। বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যেসব সাংবাদিকরা আসে নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের সব জায়গায় যেতে দেওয়া হয় না এবং এদের পাঠানো রিপোর্টের প্রতিবাদ করতে সরকার সবসময়ই ব্যস্ত থাকে। জিপে বসেই ভার্গিস দেখলেন সাংবাদিকদের। তাঁর মনে হল এই লোকগুলোকে এখান থেকে সরানো দরকার। এই দেশের দুটো পত্রিকার সাংবাদিকরা এখন তাঁর তাঁবেদার কিন্তু বাইরে থেকে আসা লোকগুলো বেআদব। চেকপোস্টেই এদের আটকে দেওয়া উচিত ছিল অন্য অজুহাতে। ভার্গিসের চোখ পড়ল মেয়েটির ওপরে। সেপাইদের সঙ্গে তর্ক করছে বাঁশের বেড়ার ওপাশে দাঁড়িয়ে। চোখ টানার মতো ধারালো মেয়ে। এত্ত সাংবাদিক নাকি। ইউরোপ আমেরিকার মত ইন্ডিয়াতেও তাহলে মেয়েরা সাংবাদিকতার মাঠে নেমে পড়েছে। ভার্গিস চুরুট ধরালেন। তারপর একজন অফিসারকে ডেকে নিচু গলায় কিছু বললেন।
অফিসার এগিয়ে গেলেন জটলাটার দিকে। তারপর গলা তুলে বললেন, ‘সি পি আপনাদের সঙ্গে আলাদা দেখা করতে চান। এখানে জনতার সামনে কোনও রকম ইন্টারভিউ নয়। আপনারা হেডকোয়ার্টার্সে গিয়ে অপেক্ষা করুন।’
এই সময় মেয়েটি প্রশ্ন করল, ‘আকাশলাল কি আসছেই?’
অফিসার মাথা নাড়লেন, ‘হ্যাঁ, তাই তো জানি।’
‘তা হলে সেই আসার মুহূর্তটাকে ধরে রাখার জন্যে আমাদের এখানে থাকা দরকার।’
‘কিন্তু সি পি চাইছেন—!’
‘বারবার সি পি সি পি করবেন না তো? ভদ্রলোককে বলুন গাড়ি থেকে নেমে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে। আমরা ওঁকে প্রশ্ন করতে চাই।’ মেয়েটির গলায় কর্তৃত্ব।
অফিসার সামান্য ঝুঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ম্যাডামের নাম?’
‘আমি ইন্ডিয়া থেকে এসেছি। কাগজের নাম দরবার।’
অফিসার ফিরে গিয়ে ভার্গিসকে বললেন সব। ভার্গিস লোকটাকে দেখলেন, ‘ওয়ার্থলেশ! তোমাকে বলেছিলাম ওদের হটিয়ে দিতে। যাকগে, ওদের বলল সামনে থেকে সরে এসে ওই নো-এনট্রি করা রাস্তায় ফাঁকায় ফাঁকায় দাঁড়াতে। কাজ হয়ে গেলে তখন কথা বলব। আর জানিয়ে দেবে যেহেতু আমি সাংবাদিকদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি তাই জনতার ঠেলাঠেলির মধ্যে না রেখে ফাঁকা জায়গায় যাওয়ার অনুমতি দিলাম।’
ইচ্ছে হোক বা না হোক সেপাইররা সাংবাদিকদের নো এনট্রি করা রাস্তাটার মুখে নিয়ে গেল। সেখানে অবশ্য আরামেই দাঁড়ানো যাচ্ছে এবং ঘেরা জায়গাটা পরিষ্কার, চোখের সামনে। মেয়েটি ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে আরম্ভ করতেই একজন অফিসার এগিয়ে এল, ‘ম্যাডাম, আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী কোনও পুলিশ অফিসারের ছবি তোলা নিষিদ্ধ।’ মেয়েটি মাথা নাড়ল কিন্তু ক্যামেরা ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলল না। ওদিকে ঢাকঢোল কাড়ানাকাড়া সানাই এবং মানুষের গলা থেকে ছিটকে ওঠা শব্দাবলি মিলেমিশে এক জমজমে পরিবেশ গড়ে তুলেছিল মেলার মাঠে। পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে গ্রামীণ দেবীদের মাথায় নিয়ে ছুটে আসা দলগুলো একের পর এক মেলার মাঠে ঢুকে পড়ছিল। তাদের উৎসাহ দিচ্ছিল সমবেত জনতা।
জিপের ভেতর বসে ভার্গিস ঘড়ি দেখছিলেন। যদি আকাশলাল মিথ্যে কথা বলে তা হলে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্য পরিকল্পনা করতে হবে তাঁকে। যে লোকটা কখনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি সে কেন খামোকা আগ বাড়িয়ে মিথ্যে বলতে যাবে! কিন্তু এও তো ঠিক, লোকটার আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছে বোকামির চেয়েও খারাপ ব্যাপার। সেটা আকাশলালের চেয়ে ভাল কেউ জানে না। যদি সত্যি হাতে আসে লোকটা, ভার্গিস চোখ বন্ধ করলেন, এতদিনের সব অপমানের প্রতিশোধ তিনি এমনভাবে নেবেন যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।
জিপের যেদিকে ভার্গিস বসেছিলেন তার সামনে চারজন সেপাইকে তিনি এমনভাবে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন যাতে দৃষ্টি ব্যাহত না হয় অথচ কেউ তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারবে না। আজ কোনও ঝুঁকি নিতে চান না তিনি। মরিয়া লোকদের কিছু নমুনা তিনি জানেন। আজ যদি আকাশলালের সব পথ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আত্মসমর্পণের নামে সোজা এগিয়ে এসে তাঁকে গুলি করতে পারে। লোকটাকে সার্চ করার আগে কোনও ঝুঁকি নয়।
ভার্গিসের জিপটা দাঁড়িয়েছিল মাঠের একপাশে ঘেরা জায়গাটায়। তাড়াহুড়োয় বাঁশ দিয়ে ঘেরা হয়েছিল ভার্গিসের নির্দেশে এবং ভিড়ের চাপ পড়েছে বাঁশের ওপর। দূরে একটার পর একটা দেবীদের আগমন ঘটছে। লোকগুলো এত কষ্ট করে মাথায় তুলে কেন যে ওদের নিয়ে আসে তা ভর্গিস আজও বুঝতে পারেন না। একজন দেবতা এখানে বাস করেন আর বছরের এই উৎসবের দিনে তাঁকে দর্শন করাতে দেবীদের নিয়ে আসা হচ্ছে। একজন পুরুষ আর অনেক মহিলা। পৌরাণিক দিনগুলো বেশ ভাল ছিল। ভার্গিসের নিঃশ্বাস পড়ল, নিজের জীবনে মেয়েমানুষ নিয়ে কখনই মাথা ঘামাননি।
‘মিস্টার ভার্গিস!’
ভার্গিস চমকে উঠলেন। মাইকে কে তার নাম ধরে ডাকছে!
‘মিস্টার ভার্গিস, আমি আকাশলাল। আপনি আমার মাথার দাম লক্ষ লক্ষ টাকা রেখেও এদেশের জনসাধারণকে বিশ্বাসঘাতক করতে পারেননি।’ গলাটা গমগম করে উঠতেই মেলায় সমস্ত আওয়াজ থেমে গেল।
‘বছরের পর বছর এদেশের গরিব মানুষদের ওপর বোর্ড এবং আপনারা যে অত্যাচার চালিয়েছেন আমি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে কোনও দিনই ধরতে পারতেন না। কিন্তু যখন আমি জানতে পারলাম আমাকে না পেলে আপনি আমার পৈতৃক গ্রাম জ্বালিয়ে দেবেন তখন বাধ্য হচ্ছি আত্মসমর্পণ করতে।’
হঠাৎ একটা চিৎকার শোনা গেল, ‘না, না, কক্ষনো না।’
‘আকাশলাল জিন্দাবাদ। আকাশলাল যুগ যুগ জিও।’
মুহূর্তেই শ্লোগানগুলো ছড়িয়ে পড়ল মুখে মুখে। সাধারণ দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়াল। আকাশে হাত ছুঁড়তে লাগল তারা। ভার্গিস মাথা নাড়লেন, আবার টেপ বাজিয়ে পাবলিক তাতানো হচ্ছে। এবার যদি ওই জনতা তাঁর দিকে ছুটে আসে তাহলে পেছনের নো-এনট্রি করা রাস্তা ছাড়া পালাবার কোনও পথ নেই। তিনি দেখলেন কিছু লোক কাউকে জায়গা করে দিচ্ছে সসম্রমে। জিপের আশেপাশে যেসব সেপাই বা অফিসার ছিল তারা বন্দুক উঁচিয়ে ধরল।
‘ভার্গিস। ওদের বলো বন্দুক নামাতে। আমার গায়ে গুলি লাগলে বন্ধুরা তোমাকে জিপসমেত গ্রেনেড ছুঁড়ে উড়িয়ে দেবে পরমুহূর্তেই।’
ভার্গিস চমকে উঠলেন। গ্রেনেড। চার সেপাই-এর দেওয়াল তাঁকে গুলি থেকে বাঁচাতে পারে কিন্তু গ্রেনেড উড়ে আসবে মাথার ওপর দিয়ে! তিনি হুকুম দিলেন, ‘ফায়ার করবেন না।’
এবং তখনই তিনি লোকটাকে দেখতে পেলেন। জনতার ফাঁকা করে দেওয়া জায়গাটায় হাত তিরিশেক দূরে যে এসে দাঁড়িয়েছে সে-ই আকাশলাল? খুব রোগা লাগছে। দাবি করলেই তো হবে না, প্রমাণ দিতে হবে। ‘হে আমার দেশবাসী বন্ধুগণ। আজ আকাশলালের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনারা আমার ওপর যে বিশ্বাস রেখেছিলেন তার জন্যে আমি কৃতজ্ঞ। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই আমি আমার বিনিময়ে কিছু নিরীহ মানুষকে মরতে দিতে পারি না। আমি জানি পুলিশ আমাকে পেলে কি করতে পারে। কিন্তু আমার উপায় নেই। তবে আশা করব ওরা আমার বিচার করবে। আমার বক্তব্য শোনার সময় দেবে। আর যদি ওরা আমাকে কাপুরুষের মত মেরে ফেলে, হে আমার বন্ধুগণ, আপনারা তার বদলা নেবেন। ভার্গিস, তুমি জিপ থেকে নেমে দাঁড়াও, আমি এগোচ্ছি। আমার কাছে কোনও অস্ত্র নেই এবং আপনারা সবাই দেখতে পাচ্ছেন, আমি সুস্থ, সম্পূর্ণ সুস্থ।’ আকাশলাল আরও একটু এগিয়ে এল। ভার্গিস তাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলেন।
আকাশলাল আবার মাইকে ঘোষণা করল, ‘হে আমার দেশবাসী বন্ধুগণ, আমার সঙ্গে পুলিশকমিশনারের চুক্তি হয়েছে যে সে আমাকে বিনা বিচারে হত্যা করবে না। আমি আপনাদের সামনে সেই চুক্তিমত আত্মসমর্পণ করছি।’
হঠাৎ জনতা চিৎকার করতে আরম্ভ করল। ভার্গিসের মনে হচ্ছিল তিনি বধির হয়ে যাবেন। এই জনতা যদি তাঁর দিকে ছুটে আসে তাহলে পালাবার পথ পাবেন না। আকাশলালের মনে হচ্ছে সেই মতলব নেই কারণ সে ধীরে ধীরে বাঁশের বেড়ার দিকে এগিয়ে আসছে। মানুষ তাকে পথ করে দিচ্ছে সসম্মানে। নিচু হয়ে বেড়া পেরিয়ে আকাশলাল একবার হাত তুলে জনতাকে অভিবাদন জানাল। সঙ্গে সঙ্গে গর্জনটা আকাশ স্পর্শ করল।
আকাশলাল ভার্গিসের সামনে এসে দাঁড়াল, ‘আমি আকাশলাল।’
ভার্গিস ভাল করে দেখলেন। বেশ শীর্ণ চেহারা হলেও লোকটা যে আকাশলাল তা কোনও শিশুও বলে দেবে। তিনি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘এরকম একটা নাটক করার কি দরকার ছিল? সোজা হেড-কোয়াটার্সে চলে এলেই তো হত!’
‘সেক্ষেত্রে পুরস্কারের টাকা কে পাবে তা নিয়ে সমস্যা হত।’
‘তার মানে?’
‘আমি চাইছি আমাকে ধরে দেবার পুরস্কারটা বোর্ড তোমাকেই দিক। আজ হাজার হাজার মানুষ সাক্ষী থাকল ঘটনার।’ খুব খুশির সঙ্গে বলল আকাশলাল।
লোকটা তাঁকে স্বচ্ছন্দে তুমি বলছে, ভাবভঙ্গিতে গুরুজন গুরুজন ভাব। মতলবটা কি? এইসময় নো এনট্রি করা রাস্তায় দাঁড়ানো সাংবাদিকরা ভেতরে ঢোকার জন্য ছোটাছুটি শুরু করে দিল। তাদের আটকাচ্ছে সেপাইরা, কেউ কেউ দূর থেকেই চিৎকার করছে, ‘মিস্টার আকাশলাল, আপনি কেন স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন?’ ‘মিস্টার আকাশলাল, আপনি কি বিপ্লবের আশা ছেড়ে দিয়েছেন?’ পুলিশ ওদের আটকে রাখছিল কিন্তু মেয়েটিকে পারল না। একটা ফাঁক পেয়ে সে দৌড়ে চলে এল এদের সামনে, ‘মিস্টার আকাশলাল, আত্মহত্যা না আত্মসমর্পণ কি ভাবে এই ঘটনাটা আপনি ধরতে চাইবেন?’
আকাশলাল খুব অবাক হয়ে গেল, ‘আপনি?’
‘আমি একজন বিদেশি সাংবাদিক। আমার কাগজের নাম দরবার। কিন্তু সেটা বিষয় নয়। এই কাজের জন্য আপনার দেশের মানুষকে কি কৈফিয়ৎ দেবেন?’
সেই অফিসারটি দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়ালেন, ‘নো’। এখানে নয়। যদি কিছু প্রশ্ন থাকে হেডকোয়াটার্সে আসুন। সি পি-র অনুমতি নিয়ে ওখানে কথা বলবেন। মিষ্টার আকাশলাল, ‘আপনি আসুন।’
একজন সেপাই এসে আকাশলালের হাত ধরে দ্বিতীয় জিপে তুলল। সঙ্গে সঙ্গে ভার্গিসের জিপ বেরিয়ে গেল নো-এনট্রি করা রাস্তায়। তাঁর পেছনে দ্বিতীয় জিপে আকাশলাল এবং গোটা তিনেক ভ্যান, যেগুলো রাস্তায় অপেক্ষা করছিল। সমস্ত মেলাজুড়ে তখন বিশৃঙ্খলতা শুরু হয়ে গিয়েছে। বাঁশের বেড়া ভেঙে গেছে। মানুষজন পাগলের মতো ছোটাছুটি করছে। গ্রামীণ বিগ্রহগুলো নিয়ে যারা এসেছিল তারা কোনও মতে সেগুলোকে বাঁচাতে ব্যস্ত।
দশ মিনিট পরে হেডকোয়াটার্সে নিজের চেম্বারে বসে ভার্গিস মিনিস্টারকে ফোন করলেন, ‘স্যার! চিতাকে খাঁচায় বন্দি করেছি।’
‘অভিনন্দন ভার্গিস। অনেক অভিনন্দন।’ মিনিস্টারের গলার স্বর আজ অন্যরকম শোনা গেল, ‘লোকটাকে এখন কোথায় রেখেছ?’
‘দোতলার একটা ঘরে।’
‘ওঃ অনেকদিন পরে আজ একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারব। কিন্তু তুমি নিঃসন্দেহ তো যে লোকটা সত্যিকারের আকাশলাল?’
‘হ্যাঁ স্যার। কোনও সন্দেহ নেই।’
‘ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।’
‘তাহলে আপনি বোর্ডকে আমার কথা বলবেন।’
‘অবশ্যই! তবে ওই লোকটাকে আমার চাই।’
‘কাকে স্যার?’
‘ওই কেয়ারটেকারকে। জীবিত অথবা মৃত। ম্যাডাম আমাকে একটু আগেও টেলিফোন করেছিলেন। ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
‘আমি দেখছি স্যার।’
‘আকাশলালকে জিজ্ঞাসাবাদ করো। ওর কাছ থেকে এই তথাকথিত আন্দোলনের সব খবর বের করে একটা রিপোর্ট দেবে। তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। তিন-চার দিন সময় নাও। প্রথম দুটো দিন ভদ্রতা কোরো। রেসপন্স না করলে ব্যবস্থা নিয়ো।’
‘ধন্যবাদ স্যার। বিদেশি সাংবাদিকরা ওর সঙ্গে কথা বলতে চায়।’
‘জিজ্ঞাসাবাদ শেষ না করে অ্যালাউ কোরো না। আর ওর সঙ্গীসাথীদের যে করেই হোক খুঁজে বের করো। গাছ উপড়ে ফেললেও মাটির তলায় থাকা ছেঁড়া শেকড় থেকে নতুন গাছ মাথা চাড়া দিতে পারে।’ মিনিস্টার ফোন রেখে দিলেন।
চুরুট ধরালেন ভার্গিস। আঃ আরাম। ফোন বাজল। খবর শুনে গম্ভীর হয়ে একটু ভাবলেন, ‘টেক অ্যাকশন।’
শহরের বিভিন্ন রাস্তায় গোলমাল শুরু হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ নিজে থেকেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকটা সরকারি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, এসব বরদাস্ত করবেন না তিনি। একজন অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার তাঁর ঘরে ঢুকে স্যালুট করল, ‘স্যার। মেলার মাঠের বিগ্রহগুলো থাকলে অ্যাকশন নেওয়া একটু অসুবিধে হতে পারে। কি করব?’
‘ওগুলোকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলুন।’
‘আপনি যদি একটা অর্ডার দেন, মানে, এমনিতে প্রথা অনুযায়ী ওদের সন্ধে পর্যন্ত ওখানে থাকার কথা!’
‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আজ চারটে থেকে শহরে কারফিউ জারি করা হচ্ছে। অতএব সব বিগ্রহ যেন তার আগে নিজের নিজের গ্রামে ফিরে যায়। বিকেল চারটে থেকে আগামী কাল ভোর ছটা পর্যন্ত কারফিউ। অ্যানাউন্স করে দিন।’ ভার্গিস হুকুম দেওয়ামাত্র অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার স্যালুট করে বেরিয়ে গেল।
চুরুটে টান দিলেন ভার্গিস। এতদিনে হাতের মুঠোয় পেয়েছেন লোকটাকে। উঃ, কম জ্বালিয়েছে। মিনিস্টার যাই বলুন জিজ্ঞাসাবাদের ধার ধারবেন না তিনি। লোকটার শরীর থেকে চামড়া তুলে নিয়ে নুন ছড়িয়ে দিতে হবে। আজকের দিনটা এইভাবেই কাটুক। রাত্রে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে সকাল থেকে কাজ শুরু করবেন। আজ বিকেল পর্যন্ত তাঁকে সময় দেওয়া হয়েছিল! এখন বোর্ড তাঁকে নিয়ে কি ভাবছে? হঠাৎই মেজাজ খারাপ হতে লাগল ভার্গিসের। আকাশলাল যদি স্বেচ্ছায় ধরা না দিত তাহলে এইভাবে পা নাচাতে তিনি পারতেন না। ওই লোকটাই তাঁর ভাগ্য ফিরিয়ে দিল। অর্থাৎ ওর কাছেই তাঁর কৃতজ্ঞ থাকা উচিত? অসম্ভব। আজ না হোক কাল তিনি লোকটাকে ধরতেনই। দিনটা আজ না হলে তিনি নিশ্চয়ই বিপাকে পড়তেন। কিন্তু কতটা? একটা অস্ত্র তো তাঁর হাতে ইতিমধ্যে এসে গিয়েছে।
টেলিফোনের দিকে তাকালেন। সার্জেন্ট ছোঁড়াটা কেয়ারটেকারটাকে ঠিকঠাক রেখেছে তো! সব কিছু নির্ভর করছে লোকটার ওপরে। যতক্ষণ কর্তৃপক্ষ তাঁর সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে ততক্ষণ তিনিও ভাল থাকবেন। কিন্তু কতদিন? ভার্গিসের মনে পড়ল মিনিস্টার আজই কেয়ারটেকারটাকে খুঁজে বের করতে হুকুম দিয়েছেন। মামার বাড়ি! বাংলোতে টেলিফোন আছে কিন্তু নাম্বারটা তাঁর জানা নেই। অপারেটারকে জিজ্ঞাসা করা নিরাপদ নয়। বোর্ড এবং মিনিস্টার কোথায় কাকে টাকা খাইয়ে রেখেছে তা টের পাওয়া অসম্ভব। ভার্গিস একটা টেলিফোন গাইড চেয়ে পাঠালেন।
গাইডের পাতায় বাংলোর নাম্বারটা পেয়ে মনে মনে গেঁথে ফেললেন। না, কোথাও লিখে রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তারপর নিজস্ব টেলিফেনের সেই নম্বরটা টিপলেন। রিং হচ্ছে। দশবার রিং হল কিন্তু কেউ রিসিভার তুলল না। সার্জেন্ট কি করছে? আর তখনই খেয়ালে এল। সার্জেন্টের পক্ষে টেলিফোন না ধরাটাই স্বাভাবিক। ওকে বলা হয়েছে লুকিয়ে থাকতে। লাইন কেটে দিলেন ভার্গিস। কিন্তু তাঁর অস্বস্তি শুরু হল। লোকটা ঠিক ওখানে আছে তো? যদি না থাকে? এই মুহূর্তে জানার কোনও উপায় নেই। তাঁর খুব ইচ্ছে করছিল এখনই জিপ নিয়ে বাংলোয় চলে যেতে। নিজের চোখে না দেখলে, কানে না শুনলে আজকাল কিছুই বিশ্বাস হয় না।
এইসময় তাঁর বিশেষ টেলিফোনটা বেজে উঠল। ভার্গিস কথা বললেন, ‘ইয়েস!’
‘মিস্টার ভার্গিস!’
‘ইয়েস ম্যাডাম!’
‘অভিনন্দন।’
‘ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ।’
‘খুব ব্যস্ত?’
‘একটু, তবে কোনও কাজ থাকলে!’
‘আমি অপেক্ষা করছি।’ ম্যাডাম লাইন কেটে দিলেন।
সোজা হয়ে বসলেন ভার্গিস। টুপিটা টেনে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এলেন ঘর থেকে। করিডোর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একজন অ্যাসিসটেন্ট কমিশনারকে এগিয়ে আসতে দেখেও থামলেন না। লোকটার হতভম্ব মুখের সামনে দিয়ে বাঁক নিলেন।
নিচে কিসের জটলা? ভার্গিসের সেদিকে তাকাবার সময় নেই। একজন অফিসার ছুটে এল তাঁর কাছে, ‘স্যার, সাংবাদিকরা বলছে আপনি নাকি কথা দিয়েছেন।’
নিজের জিপে ততক্ষণে উঠে বসেছেন ভার্গিস, ‘অপেক্ষা করতে বলুন, ‘দে হ্যাভ অল দ্য টাইম ইন দ্য ওয়ার্ল্ড?’ নির্দেশ পেতেই ড্রাইভার জিপ চালু করল। প্রথামত পেছনে দুজন সশস্ত্র সেপাই উঠে বসেছে। ভার্গিসের জিপ হেডকোয়াটার্স থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পড়ল। তখন বিকেল।
ম্যাডামকে আজ দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছে। ভদ্রমহিলার বয়স তাঁর মুখচোখ চামড়া এবং ফিগারের কাছে হার মেনেছে। আজ ম্যাডাম নিজের হাতে দরজা খুললেন, ‘ওয়েলকাম।’
ভার্গিসের পা ঝিমঝিম করে উঠল। ম্যাডাম এই গলায় এবং ভঙ্গিতে কখনই কথা বলেননি। দুজনে মুখোমুখি সোফায় বসার পর ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কফি না ভদকা?’
‘ধন্যবাদ। কিছু লাগবে না।’ কৃতার্থ গলায় বললেন ভার্গিস।
‘আমি একটা ভদকা নেব।’ ম্যাডাম হাততালি দিতেই একটি কাজের লোক ঢুকল, ‘একটা টল ভদকা, অনেকটা বরফ দিয়ো’ টেবিলের ওপর রাখা গোল বাক্সের ঢাকনা খুললেন তিনি। ভার্গিস দেখলেন সেখানে সিগারেটগুলো বাজনার তালে তালে ঘুরছে। একটা তুলে নিতেই ভার্গিস স্মার্ট হবার চেষ্টা করবেন। লাইটার জ্বেলে এগিয়ে গিয়ে সম্ভ্রমের সঙ্গে ধরিয়ে দিলেন। ম্যাডাম বললেন, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।’
চোখ বন্ধ করে যখন ম্যাডাম ধোঁয়া উপভোগ করছেন তখন ভার্গিস এক ঝলক দেখে নিলেন ওঁকে। যে কোনও বয়সের পুরুষ ওঁকে পেলে ধন্য হয়ে যাবে। রূপের সঙ্গে অহঙ্কার না মিশলে মেয়েরা সত্যিকারের সুন্দরী হয় না। নিজের জন্য মাঝে মাঝে কষ্ট হয় ভার্গিসের। পৃথিবীর কোনও মেয়ের জন্য তিনি আকর্ষণ বোধ করেন না। করতে পারেন না।
‘ভার্গিস! আপনি আকাশলালকে কি টোপ দিয়েছেন জানতে পারি?’
টোপ! ভার্গিস চমকে উঠলেন।
ম্যাডাম হাসলেন, ‘নইলে লোকটা এই বোকামি করত না। আপনি হয়তো জানেন না মিনিস্টার আজকে পদত্যাগ করে বাইরে চলে যেতে চেয়েছিল। আপনার ঘটনা সব পাল্টে দিল। কিন্তু এরকম লোক সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে।’
‘আসলে আমি এমনভাবে আকাশলালকে চেপে ধরেছিলাম যে—’
‘আমাকে মিথ্যে বলবেন না, প্লিজ।’ ম্যাডাম অনুযোগ করলেন, ‘ঠিক আছে, পরে শুনলেও চলবে। আচ্ছা ভার্গিস, আপনাকে যদি বোর্ড মিনিস্টার হিসেবে মনোনীত করে তাহলে কেমন হয়? আপনার বয়স কম, দারুণ এফিসিয়েন্ট। এই কাজটার জন্য যদি কোনও পুরস্কার দেওয়া হয় তাহলে তো এমনই করা যেতে পারে!’
ভার্গিসের গলার স্বর রুদ্ধ হয়ে গেল, ‘আমি! মিনিস্টার?’
‘হোয়াই নট? আপনার আপত্তি আছে?’
‘আমি কি বলব! ম্যাডাম, আপনি যা বলবেন তাই হবে।’ ভার্গিস বিগলিত।
বেশ। আপনি জানেন মিনিস্টারের সঙ্গে আমার এককালে বন্ধুত্ব ছিল। আমি নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে সেই বন্ধুত্বের মূল্য ওকে দিয়েছি। তাছাড়া লোকটা নিজেই আমাকে বলেছে পদত্যাগ করতে চায়। অতএব আমার কোনও দায়িত্ব নেই। এখন কথা হল, আপনি কি করবেন?’
ম্যাডাম উঠে দাঁড়ালেন, ‘তা হলে আগামী কাল থেকে আপনি মিনিস্টার হচ্ছেন।’
ভার্গিস আবেগে আপ্লুত হলেন। সোফা থেকে উঠে একটা হাঁটু মুড়ে ম্যাডামের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাতেই ম্যাডাম তাঁর বাঁ হাত এগিয়ে ধরলেন। এবং এই প্রথম ভার্গিস কোনও স্ত্রীলোকের হাতের চামড়ায় সজ্ঞানে চুম্বন করলেন।
‘ভার্গিস!’
‘ইয়েস ম্যাডাম!’
‘বাবু বসন্তলালের বাংলোর কেয়ারটেকারকে কাল সকালের মধ্যে আমার চাই।’
উঠে দাঁড়াতে গিয়ে নড়ে গেলেন ভার্গিস। কি উত্তর দেবেন তিনি? কোনও রকমে মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললেন ভার্গিস।
ম্যাডাম বললেন, ‘আপনি এবার যেতে পারেন।’
ম্যাডামের বাড়ি থেকে জিপে বসে ভার্গিস ঠিক করলেন মিনিস্টার হতে পারলে তাঁর আর কিছু চাওয়ার নেই। কেয়ারটেকারকে আজই আনিয়ে নেবেন বাংলো থেকে। ফালতু ঝামেলা করে কোনও লাভ নেই। এইসময় তাঁর গাড়ির বেতারযন্ত্রে হেডকোয়াটার্স থেকে পাঠানো একটা খবর বেজে উঠতেই ভার্গিস চিৎকার করে উঠলেন, ‘ওঃ, নো!’