বিংশ পরিচ্ছেদ
ওসিআর ভার্সন। ভুল সংশোধন করা হয়নি।
রাসমণি দিন দিন বিছানার সঙ্গে মিশিয়ে যাচ্ছেন। আর যে আশা নেই, তা উমাও বোঝে একসময়। বোঝে আর তার বুকের মধ্যে হিম হয়ে আসে, আশ্রয় এবং অবলম্বন– দুটোই তার একসঙ্গে খসে পড়বে।
অথচ কীই বা করতে পারে সে?
অনেক কষ্টে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে হোমিওপ্যাথ পালটে কবিরাজ ডাকা হল। কবিরাজের পর ডাক্তার। রাসমণি জীবনে কখনও ডাক্তারী ওষুধ খান নি, আপত্তি ছিল যথেষ্ট– শুধু উমার চোখের জলেই রাজী হলেন শেষ পর্যন্ত। আহা, ওকে ত একেবারেই পথে বসিয়ে যাচ্ছেন বলতে গেলে ওর পক্ষে তাঁকে ধরে রাখবার চেষ্টা খুবই স্বাভাবিক, ডাক্তার ডেকেই যদি মনে শান্তি পায় ত পাক। তেজস্কর উগ্র আর কটু আস্বাদের ডাক্তারী ওষুধ খেতে তাঁর বমি আসত, চোখে জল বেরিয়ে যেত– তবু প্রাণপণে খেতেন।
কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না।
জ্বর ঠিক নিয়মিত আসে বিকেলের দিকে, সন্ধ্যার কিছু পরে ছেড়ে যায়। রেখে যায় আপরিসীম দুর্বলতা।
এমন সময়ে উমা বলে, ‘চলুন মা, আপনাকে নিয়ে দেওঘর যাই যা আছে সব বেচেও সারিয়ে আনি। দেওঘরের হাওয়া শুনেছি খুব ভাল। যে যায় সে-ই সেরে আসে। বাবা বদ্যিনাথের দয়ায় আপনিও ভাল হয়ে উঠবেন নিশ্চয়ই।’
রাসমণি হাসেন। অতি কণ্ঠে বলেন, ‘ক্ষেপেছিস তুই! আমি তো মড়াই, মড়া নিয়ে কোথায় যাবি? যেতে যেতেই হয়ে যাবো। না– টানাহেঁচড়ায় আর কাজ নেই।’
কমলাও জিদ করে, ‘চলুন না মা। না হয় সেকেন্ কেলাসে শুইয়ে নিয়ে যাবো। ওতে অত ভিড় হয় না। আগে থাকতে রিজাব করা যায়। না হয় আমার একটা গয়নাই বিক্রি করবো।’
ধমক দেন ওরই মধ্যে। বলেন, ‘কার গয়না তুই আমার জন্যে বিক্রি করবি তাই শুনি? ও ত তোর ছেলের গয়না। ছেলে মানুষ করতে হবে তোকে।… ঘাটের মড়াকে ঘাটে পাঠাবার ব্যবস্থা কর। আর কেন? ধানের ভাত তেতো লাগছে-
বাঁচব! আমার দিন ফুরিয়েছে
ক্রমশ দিন ফুরোবার অন্য লক্ষণও প্রকাশ পায়।
আর কি আমি
ছেলেমানুষের মত হয়ে পড়েন। অমন গাম্ভীর্য, অমন স্থিরবুদ্ধি কোথায় যেন চলে গেল! কে বলবে সেই মানুষ! আহারে লোভ কোনদিন ছিল না, ক্রমশ তাও দেখা দেয়। কেবলই কুপথ্য খেতে চান, না দিলে রাগ করেন। ডাক্তার বলেছে ভাত দিতে গলাভাত অল্প করে আর কাঁচকলার ঝোল। কিন্তু কাঁচকলার ঝোল দেখলেই রেগে যান। যেদিন হাতে একটু জোর থাকে– ছুঁড়ে ছড়িয়ে ফেলে দেন ভাত– কান্নাকাটি করেন। দুধ বার্লি খাওয়াতে গেলে দাঁতে দাঁত চেপে থাকেন। কেবল খেয়াল থাকে একাদশীর কথাটা। প্রাইয় জিজ্ঞাসা করেন, ‘হ্যাঁরে, একাদশ কবে হল? তোরা একাদশীতে খাইয়ে দিচ্ছিস্ না ত?’
ওরা আগে আগে বোঝাবার চেষ্টা করত। এতকাল ক’রে এসেছেন— এখন অপটু শরীরে আর কেন! আতুরে নিয়মো নাস্তি। কিন্তু রাসমণি কিছুতেই বোঝেন না। বলেন, ‘এতকাল করে এসেছি, এখন ফেলে দেব? এই ক’টা দিনের জন্যে? লাভ কি? শরীর ত যেতে বসেছেই তাকে আর দুটো দিন ধরে রাখতে ধর্মটা দেব কেন?
অগত্যা মিছে কথা বলতে হয়। এখনও দেরি আছে বলে চালিয়ে, কিছু দিন পরে বলা হয়– একাদশী ত কবে কেটে গেছে!
রাসমণি বলেন, ‘কৈ, তা তোরা আমাকে বললি না ত?’
,
‘হ্যাঁ, আপনি করলেন যে। আপনি আজকাল বড্ড ভুলে যান!’
ছেলেমানুষের মতই আশ্বাস লাভ করেন সহজে। বলেন, ‘তা হবে। মরণকালে ভীমরতি হয় মানুষের। বেভুল হয়ে যায় সব– কিছু কি মনে থাকে! থাকে না।’
একদিন– ঠিক একাদশীর আগের দিন,–হঠাৎ বলে বসলেন, ‘পাঁজিটা আন, আমি পাঁজি দেখব! ‘
অগত্যা পাঁজি আনতে হল। হাত কাঁপে, বই ধরতে পারেন না। গোবিন্দ উঁচু ক’রে ধরলে বুকের ওপর। চোখের দৃষ্টি হয়ে এসেছে ঝাপ্সা–ভাল ক’রে দেখা যায় না কিছু। অতি কষ্টে বহু দূরে রেখে যদি বা নজর চলে ত তারিখ তিথি সব গোলমাল হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত গোবিন্দকে জিজ্ঞেস করেন,’আজ কি তারিখ দেখ তো। মিছে কথা বলিস্ ত আর কখনও ভালবাসব না!’
কমলার চোখ-টেপা গোবিন্দ দেখতে পায় না। সে তারিখটা বলে দেয়।
রাসমণি হিসেব ক’রে দেখে বলেন, ‘কাল ত একাদশী! ঠিক হয়েছে– মনে ক’রে রাখব। পরের দিন সত্যিই তাঁকে কিছু খাওয়ানো গেল না। সন্ধ্যাবেলা প্রবল জ্বরের ধমকে তৃষ্ণায় বুক পর্যন্ত শুকিয়ে উঠল যখন, তখন হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন শুধু, ‘মুখে একটু গঙ্গাজল দে উমি, শুনেছি গঙ্গাজলে দোষ নেই। আর পারছি না!’
সেই এক চুমুক গঙ্গাজল খেয়েই সেদিন সারা দিনরাত কেটে গেল। আশ্চর্য এই যে– ওরা যতটা আশঙ্কা করেছিল তার কিছুই হ’ল না। প্রতিদিন যেমন থাকেন তেমনই রইলেন।
দুই
মাঝে মাঝে পুরোনো ব্যক্তিত্বের বিদ্যুৎস্ফুরণ ঘটে জ্যৈষ্ঠের গোড়ার দিকে রাসমণি হঠাৎ একদিন
২২৩
বই
শ্যামাকে খবর দে
উমি, আমি বেঁচে থাকতে থাকতে যা ক্ষুদকুঁড়ো আছে ভাগ করে দিয়ে যাই– নইলে তাকে ত আমি চিনি– তার সঙ্গে তোরা পেরে উঠবি না!’
উমা ক্লান্ত সুরে বললে, ‘কি হবে মা আপনার এই দুর্বল দেহ ব্যস্ত করে? না হয় সে-ই সব নেবে। আমার আর কি হবে?’
তোমাকে আর গিন্নিত্ব করতে হবে না মা–যা বলছি তাই শোন! বাসনগুলো থাকলে অসময়ে বিক্রি ক’রে খাওয়া যায়, রোগ হ’লে ডাক্তার দেখানো যায়। তুমি কি আমার চেয়ে বেশি বোঝ?’
‘তার ছেলেমেয়ে আছে–’ তবুও উমা বলতে চেষ্টা করে, ‘তার দরকার বেশি।’
‘তোমার সঙ্গে আমি আর বকতে পারি না মা। আমার মুখ ব্যথা করে। ওর ছেলেমেয়ে আছে বলেই দরকার কম। তারা মানুষ হয়ে ওকে দেখবে। তোমাকে কে দেখবে? তুমি কি এমন তালেবর যে, দু’শ পাঁচ’শ টাকা রোজগার ক’রে জমাবে!’
অগত্যা শ্যামাকে চিঠি লেখা হ’ল।
শ্যামা শশব্যস্তে এসে পৌঁছল। প্রায় ছুটতে ছুটতে।
এতদিনের আশা ও আশঙ্কা তার।
আশাই বেশি। মা কি আর সত্যি কথাই বলেছেন! কিছুই কি নেই! মনে তা হয় না। রাসমণি ইঙ্গিতে বসিয়ে দিতে বললেন। তিন-চারটে বালিশ উঁচু করে পিঠের নিচে দিয়ে তাঁকে বসিয়ে দেওয়া হল। তারপর কমলা ও উমা সিন্দুক খুলে বাসনের স্তূপ এনে তাঁর সামনে সাজাতে লাগল। শ্যামাও ছুটে গিয়ে ওদের সাহায্য করতে লাগল। কাঁসার বাসনের স্তূপ। খাগড়াই বাসন, ডাকাই বাসন– কটকীও আছে দু-একখানা, কিন্তু সে খুব কম। ভারী ভারী থালা।
এ ছাড়া পাথরের বাসন। সাদা পাথরের সেট, কষ্টিপাথরের সেটা। জয়পুর, গয়া ও মুঙ্গেরের ভাল ভাল বাসন। লোভে চোখ জ্বলতে থাকে শ্যামার।
সব বাসন উজাড় ক’রে এনে সাজিয়ে দেওয়া হল।
তারপর চোখের ইঙ্গিতে উমা হাতির দাঁতের কাজ-করা কাঠের বাক্সটা এনে রাখল ওঁর পাশে। গয়নায় বাক্স। উৎকণ্ঠিত শ্যামা নিশ্বাস রুদ্ধ করে আছে। কি অচিন্তিত রহস্য ওর মধ্যে লুকিয়ে আছে কে জানে?
আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন রাসমণি। কমলা তিনটে ভাগ করতে থাকে। যেগুলো তিনের পর্যায়ে আছে সেগুলো আপনিই ভাগ হয়। যেমন এক সাইজের ছিল ছ’খানা— দুখানা করে পড়ল। যা ঠিক ভাগ-মত নেই, সেগুলোর মনে মনে একটা হিসেব ক’রে নেন রাসমণি।
চারটে ছোট বাটি দু’ভাগ করে তার জায়গায় একটা বড় বাটি আন্দাজমত দেন তৃতীয় ভাগে। এইটুকু করতেও ক্লান্তি বোধ হয় তাঁর। তিনি মধ্যে মধ্যে চোখ বুজে বিশ্রাম ক’রে নেন খানিকটা, আবার একসময় চোখ মেলে কাজ শুরু করেন।
অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভাগ করা দেখে দেখে একসময় আর থাকতে পারলে না শ্যামা। বলে উঠল, ‘ভাগটা কি সমান করা উচিত হচ্ছে মা! আমার এতগুলো ছেলে-মেয়ে, উমার মোটেই নেই, দিদির ত মোটে একটা! দরকার আমারই বেশি!’
228
লজ্জায় কমলা উমার মুখ লাল হয়ে ওঠে। শ্যামা এমন নির্লজ্জভাবে বললে কি ক’রে– ওরা ভাবে। শ্যামারও যে একেবারে লজ্জা করে না তা নয়। তবে তার প্রতিকূল ভাগ্য এতাবৎ তাকে এই শিক্ষাই দিয়েছে যে এসব ব্যাপারে চক্ষুলজ্জার স্থান নেই। লজ্জা করতে গেলেই ঠকতে হয়।
রাসমণি তাঁর রোগক্লান্ত চক্ষু দুটি মেলে স্থির দৃষ্টিতে তাকান কিছুক্ষণ শ্যামার মুখের দিকে। কথা কইতে আজকাল তাঁর একটু সময় লাগে, যেন ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় ক’রে নেন। তারপর বলেন, ‘তোমার ছেলেমেয়ের ভাবনা তুমি ভাবো মা, আমি ভাবছি আমার মেয়েদের ভাবনা! তার বেশি ভাবতে গেলে ত আমার চলে না। কত দূর ভাবব বলো– এই গোবিন্দরই হয়ত দশটা ছেলে হ’তে পারে। তোমার হেমের হয়ত একটাও হল না!… উমার স্বামী এসেছিলেন, দেখা ক’রে গেছেন। কে জানে তাঁর মত ফিরবে কি না– এই উমারই হয়ত একঘর ছেলেমেয়ে হবে একদিন। তাছাড়া তোমার ছেলেমেয়ে আছে ব’লেই ত তোমাকে আর কিছু দেওয়া উচিত নয়। তোমার হেম ত এখনই রোজগার ক’রে খাওয়াচ্ছে। উমাকে কে দেখবে?’
শ্যামা দমবার পাত্রী নয়। সে বললে, হেমই দেখবে।’
‘সে আমি জানি। অশক্ত হয়ে তোমার ছেলের ঘাড়ে গিয়ে পড়লে হয়ত একমুঠো ভাত সে দেবে। কিন্তু ধার ক’রে ডাক্তার দেখাবে না, এটাও ঠিক!… আর হেমই যদি দেখে— সে-ই ত একদিন পাবে এসব, নেহাত যদি উমার কপাল কোনদিন না ফেরে!’
শ্যামা বোধ করি আরও কি বলতে যাচ্ছিল, রাসমণি কম্পিত হাতের তর্জনী তুলে নিষেধ করলেন। তারপর কমলাকে ইঙ্গিত করলেন ভাগ করে যেতে।
সব বাসন ভাগ করা শেষ হ’লে রাসমণি আর একবার শ্যামার মুখের দিকে তাকালেন। ম্লান অথচ বিদ্রুপের একটুখানি হাসি তাঁর ঠোঁটের কোণে খেলে গেল।
‘তাই বুঝি মা তুমি ওদের অত সাহায্য করতে দৌড়চ্ছিলে! বড় খাগড়াই বাটিটা আর সরপোশ দেওয়া গেলাসটা আসতে আসতে কোথায় হাতসাফাই করেছ ব’লে দাও– গোবিন্দ গিয়ে নিয়ে আসুক!’
কমলা ও উমা স্তম্ভিত। একবার সন্দেহ হ’ল মার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে সত্যি-সত্যিই? এমন কথা কি ক’রে বলতে পারলেন তিনি? কিন্তু আরও স্তম্ভিত হল শ্যামার অবনত আরক্ত মুখের দিকে চেয়ে। অপরাধ স্বীকারের এমন স্পষ্ট ভাষা তারা আর কখনও ইতিপূবে এভাবে কারও মুখে ফুটে উঠতে দেখে নি। শ্যামার সুগৌর মুখ অগ্নিবর্ণ হয়ে উঠেছে, এই কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ললাটের স্বেদবিন্দু মুক্তোর মত বড় বড় হয়ে উঠেছে।
শ্যামা বার-দুই ঢোক গিলে বললে, ‘আপনি অকারণ আমাকে অপমান করেন মা– আনতে আনতে বড্ড ভার বোধ হ’ল তাই– তারপর একদম ভুলে গেছি!’
‘বেশ ত, কোথায় রেখেছ বলো?’
‘আমি আনছি–’
শ্যামা একরকম দৌড়েই চ
থেকে বেরোয় বাসন দুটো।
উঁকি মেরে দেখে, সিন্দুকেরই তলা
225
রাসমণি হাসেন।
‘বেভুল হয়েছে ঠিকই, হবার কথাও। কিন্তু শুনেছি দিন শেষ হ’লে আবার সব মনে আসে। আমারও আর দেরি নেই রে! সেব যেন আমার গোনাগাঁথা– এমনি মনে পড়ছে!’
উমার চোখে জল টলটলই করছিল, এবার আর বাধা মানল না। ঝরে পড়ল ঝরঝর ক’রে। সেদিকে চেয়ে আর একবার হাসলেন রাসমণি। বাটি আর গেলাস এনে ওঁর সামনে নামিয়ে দিয়ে শ্যামা নত-মুখে বসল। তার আর যেন কথা বলবার ক্ষমতা নেই।
রাসমণি বললেন, ‘কমলা, আমার ইচ্ছে এ দুটো মহাশ্বেতার বরকে দিই! কী বলো তুমি?’ কমলা তাড়াতাড়ি বললে, ‘বেশ ত, দিন না মা।’
‘আর ঐ বড় ফুলকাটা রেকাবিখানা– ফরমাশ দিয়ে গড়ানো ওটা, দু’সের ওজন- ঐটে দিও খেঁদির বরকে। কিছুই নয়– দিদিমার একটা স্মৃতিচিহ্ন, এই আর কি!
এইবার গয়নার বাক্স খোলা হ’ল। সব ভুলে শ্যামা উদ্গ্রীব লোলুপ হয়ে উঠল আবার। আশা বা আশঙ্কা কোটা ফলে কে জানে!
কিন্তু যা বেরোল বাক্স থেকে তা সত্যিই হতাশ হবার মত। খান দশেক গিনি, একটা সাতনরী হার, একজোড়া বড় কান, দুজোড়া ঝুমকো আর একগাছা বালা। আর কিছু কুচো সোনা। গোটা-দুই আংটি, হীরের নাকছাবি একটা, আর একটা আসল মুক্তোর নথ। একটা বালা সম্প্রতি বিক্রি করা হয়েছে– নইলে একজোড়াই ছিল।
একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন সেদিকে রাসমণি। চেয়ে চেয়ে তাঁরও চোখে জল ভরে এল। কত কী যে তাঁর মনে হচ্ছিল কে বলবে! কত পুরোনো স্মৃতি ও অতীতের প্রায় ভুলে- যাওয়া দাম্পত্য প্রেমের ঝাপসা ইতিহাস! প্রতিটি অলঙ্কারের পিছনে একটা ইতিহাস আছে বৈকি, ছোট বা বড়! সে সব ইতিহাস আজ এতকাল পরে এই মৃত্যুপথযাত্রিণীর মনে ভিড় ক’রে এসে দাঁড়িয়েছিল কি না, তাই বা কে বলবে? এগুলো যে নারীর সর্বাপেক্ষা প্রিয় বস্তু, শুধু তাও ত নয়– এ যে তাঁর এই দীর্ঘ নিঃসম্বল জীবনের অবলম্বনও বটে। তাঁর জীবনে বিড়ম্বনা ও দুঃখ ছিল কিন্তু তবু শেষ পর্যন্ত কারও কাছে ভিক্ষা না ক’রে মর্যাদার সঙ্গে কাটিয়ে যেতে পারলেন এইটেই বড় লাভ। আর তা সম্ভব হয়েছে এগুলোর জন্যেই! তাছাড়া একদা তিনি স্বামীর প্রিয়তমা ছিলেন– তারও চিহ্ন বহন করছে এই স্বর্ণখন্ডগুলি। কারণে অকারণে প্রিয়াকে খুশী করার জন্যই অলঙ্কার উপহার দিয়েছেন তিনি– তাঁর সেই প্রেমেরই নিদর্শন এই সব অলঙ্কার। সেইজন্যই এরা সাধারণ অলঙ্কারের চাইতে অনেক বেশি মূল্য বহন করছে চিরকাল তাঁর কাছে।
অনেক– অনেকক্ষণ চেয়ে রইলেন রাসমণি। অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে গেছে ক্ষীণ দৃষ্টি– তবু চোখ নামাতে পারেন না যেন।
অবশেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এলিয়ে পড়েন বালিশে। কিছুই বলতে পারেন না, চিন্তা আচ্ছন্ন হয়ে আসছে কিনা তাও বোঝা যায় না। ঘরসুদ্ধ সকলেই চেয়ে থাকে ওঁর দিকে। কেবল উমা ছাড়া; তার চোখের জল আর কিছুতেই অবরোধ মানছে না– সে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে বারান্দায় পড়ে কাঁদছে ফুলে ফুলে।
অবশেষে একসময় আবার রাসমণি চোখ মেলে তাকান। আঙুল দিয়ে কমলাকে কাছে ডাকেন। উৎকণ্ঠিতা শ্যামাও আর থাকতে না পেরে কাছে এগিয়ে আসে।
রাসমণি ফিসফিস ক’রে বলেন, ‘বালাটা বোধ হয় লাগবে, আরও যে কদিন বাঁচব তার জন্যে। গিনি ক’খানা রইল– শ্রাদ্ধের খরচ। ওর চেয়ে বেশী খরচ করতে যেও না। বহুল্যতার দরকার নেই। সাতনরী হারটা উমাকে দিও, তার কাজে লাগবে। কান জোড়াটা গোবিন্দর রইল। ঝুমকো দুজোড়া শ্যামার। আর কুচো যা আছে আংটি-ফাংটি
সবই উমার থাক। ওকেই সব চেয়ে অসহায় রেখে গেলুম, এটুকু ওকে দিতে তোমাদের আপত্তি থাকার কথা নয়। তোমাদের কারও বিয়েই খুব ভাল দিতে পারি নি– কিন্তু ঈশ্বর জানেন, আমার কোন অপরাধ ছিল না। তবু উমার দুর্ভাগ্যের ভাবনা আমাকে পরলোকে গিয়েও শান্তি দেবে না। শুধু তোদের দুঃখেই ভেবে ভেবে গুমরে গুমরে অকালে বুড়ী হয়ে গেলুম এই ভেবে আমাকে মাপ করিস তোরা।’
রাসমণি আবারও এলিয়ে পড়লেন। অজ্ঞানের মত হয়ে পড়েছেন তিনি। কমলা ছুটে গিয়ে পাখা এনে বাতাস করতে লাগল।
কেবল শ্যামা বসে রইল পাথরের মত স্থির হয়ে। ওর হতাশার পরিমাণ ওর বিবর্ণ ভাবলেশহীন মুখের দিকে চেয়ে বোধ করি একমাত্র রাসমণিই অনুমান করতে পারতেন কিন্তু তাঁর সে শক্তি তখন ছিল না।
তিন
রাসমণি ইদানীং ওষুধ খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলেন একেবারে, এমন কি বরাটের হোমিওপ্যাথি ওষুধ দেখলেও যেন জ্বলে উঠতেন– এখন আহারও ত্যাগ করলেন। কিছুই মুখে রোচে না। কমলা পীড়াপীড়ি করলে বলতেন, কেন জোর করছিস– বুঝতে পারছিস না যে আমার এখানকার খাওয়া শেষ হয়ে গেছে! নইলে মুখে সব তেতো লাগবে কেন? আর দেরি নেই—-ধানের ভাত যখন তেতো লেগেছে তখনই বুঝেছি– এ পৃথিবীর খাওয়া শেষ হয়েছে। আর জোর করিস নি।’
কমলা তবু হয়ত মৃদু অনুযোগ করে, ‘কিন্তু দেহটা যতদিন আছে–’
‘আছে কেন, শেষ হয়ে যাক না! লোকে না খেয়েও ত থাকে দেখি! আর এ দেহ বাঁচিয়েই বা লাভ কি? শুধু শুধু তোদের ভোগান্তি।’
জ্বর দেখারও উপায় নেই। থার্মোমিটার দেখলে একেবারেই ক্ষেপে যান। কোথা থেকে ঐ পাত-করা দেহে শক্তি আসে তা ভেবে পায় না উমা। পর পর দুটো থার্মোমিটার ভাঙলেন। অকস্মাৎ শীর্ণ হাত বাড়িয়ে এমন অতর্কিতে টেনে নিয়ে আছড়ে ফেলে দেন যে উমা সতর্ক হবারও সময় পায় না। মুখ ভেঙিয়ে বলেন,
‘ঐ এক শিখেছেন ওরা!…যখন-তখন জ্বর-কাঠি গোঁজা! কাজ নেই কর্ম নেই। কী হবে? জ্বল মেপে দেখলেই আমি সেরে উঠব?’
শেষ দিনে এমন একটা কুৎসিত কটু মন্তব্য করলেন যে, উমা সহ্য করতে না পেরে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল। এ কী হল? আজীবন সংযতবাক্ দেবীর মত মহিময়ী তার মায়ের এ কি অধঃপতন! একেই কি তাহলে ভীমরতি বলে?
কমলা ওকে সান্ত্বনা দেয়, ‘মরণের আগে এমনি হয়, তাই বলে মরবার আগে মতিচ্ছন্ন! এ সইতেই হবে– উপায় ত নেই।’
এমনি চিকিৎসা-সংক্রান্ত ব্যাপার নিয়ে বিরক্ত না করলে রাসমণি চুপ করে পড়েই থাকেন। কথা কন না, পাশও ফেরেন না। শুধু বুকের কাছে দুকদুক করে জীবন। বেশিদিন যে নয় তা ক্রমে স্পষ্ট হয়ে এল সকলের কাছেই। কমলা বললে, ‘আত্মীয়- স্বজনদের চিঠি দে উমি–এখনত ভেঙে পড়লে চলবে না! যা কর্তব্য তা করতেই হবে। যদি কেউ দেখে যেতে চায়ত যাক।’
শ্রান্ত কণ্ঠে উমা বলে, গোবিন্দকে বলো দিদি। আত্মীয়-স্বজনই বা কে তাও ত বুঝি না।’ অগত্যা কমলা গোবিন্দকেই কখনো পোস্টকার্ড লিখে দিতে বলে। কখানাই বা! সত্যিই ত, আত্মীয়-স্বজন আর ওদের এমন কে আছে?
একটু ইতস্তত করে কমলা জিজ্ঞাসা করে, ‘শরৎ জামাইকেও ত তা-হলে একটা খবর দেওয়া উচিত। না কি বলিস!’
উমা চমকে ওঠে। ওর কদিনের রাত্রি-জাগরণে শীর্ণ-বিবর্ণ হয়ে যাওয়া মুখে এক ঝলক রক্ত যেন কে ছড়িয়ে দেয়।
তারপর সহজ কণ্ঠে বলে, ‘না। কি দরকার? তার সঙ্গে কিই বা সম্পর্ক? শুধু শুধু মার মৃত্যুর সময় আবার নতুন করে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়া।’
তা বটে। কমলাও স্বীকার করলে মনে মনে কথাটার যৌক্তিকতা।
হেম এসে কাছে বসে দিদিমার শীর্ণ হাতখানা হাতের মধ্যে টেনে নিলে। কতকটা ভয়ে ভয়ে– সসঙ্কোচে। দিদিমার সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠতা করবার সাহস ওর কোনকালেই ছিল না। আজ উপায় নেই বলেই এতদিনের সসম্ভ্রম দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলে। আস্তে আস্তে ডাকে, ‘দিদিমা!’
জীবনে লক্ষণ দেখা দেয় আগে ঠোঁটে। ঠোঁট দুটো একটু কাঁপে– বোধ হয় প্ৰশ্ন বেরোতে চায়– ‘কে?’ কিন্তু দন্তহীন গহ্বরের মধ্যে থেকে নড়ে। একটু একটু করে অর্ধ-উন্মীলিত হয় চোখ দুটি– শেষে প্রশ্নও বেরোয়,
‘
– ‘কে?’
‘আমি হেম, দিদিমা! আমাকে কিছু বলবেন?’ হেমকে কাছে ডাকেন, সেই ঘোলাটে বিবর্ণ দৃষ্টি! হেম খুব কাছে মুখ নিয়ে যায়। আস্তে আস্তে বলেন রাসমণি, ‘আমাকে একটা কথা দিবি ভাই? যা বলব তা শুনবি?’
‘নিশ্চয়ই শুনব দিদিমা। কথা দিচ্ছি।’
‘ছোট মাসিকে একটু দেখিস। যথাসাধ্য অবশ্য। তোর মা হয়ত ভুলে যাবে বোনের কথা। কিন্তু তুই একটু দেখবি ত! বল্, কথা দে?’
‘আমার যতটুকু ক্ষমতা দেখব দিদিমা। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।’
বাঁচালি ভাই। বোধহয় এই জন্যেই প্রাণটা যাচ্ছিল না। তুই ছেলেমানুষ– তবু তোর এই কথাতেই যেন ভরসা হল খানিকটা। আমার এই মৃত্যুশয্যায় কথা দিলি, মনে
থাকে যেন।
আবার চোখ রোজেন। ঠোঁট দুটিও মুখগহ্বরের ভেতরে চোখের কোল বেয়ে দুটি ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।
আর একবার চোখ খোলেন অভয়পদ এসে বসতে।
এঁটে যায়। শুধু দুই
অভয়পদ এসেও ওঁরই বিছানার একপাশে বসে আস্তে আস্তে ডাকে,
‘দিদিমা?’
নতুন কোন কণ্ঠ, তা সেই জড়-আচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যেও কেমন করে বোঝেন। আজও চোখের পাতা কাঁপে, একটু একটু করে চোখ খোলেন। বেশির মধ্যে ভ্রুটা ঈষৎ কুচকে যায়। অর্থাৎ বিস্ময়বোধ করেন।
‘আমি অভয়পদ দিদিমা!’
কমলা মাথার কাছে মুখটা এনে বলে, ‘আপনার নাতজামাই এসেছেন মা। বড় নাতজামাই-মহার বর!
প্রসন্ন হাসি ফুটে ওঠে মুখে। ঠোঁট দুটি খুলতে পারেন না ভাল করে– কিন্তু বিস্তৃত হয়ে বুঝিয়ে দেয় যে তিনি হাসতেই চাইছে। অনেক কষ্টে ঠোঁট নেড়ে কি যেন বলেন, বোধ হয় আশীর্বাদই করেন।
অভয়পদ বলে, ‘এখন কেমন আছেন দিদিমা?’
এইবার ভাল করেই হাসি ফোটে মুখে! একটু ঘাড়ও নাড়েন।
তারপর কোনমতে বলেন, ‘একেবারেই ভাল ভাই। আর দেরি নেই!’
‘দিদিমা, কিছু খাবেন? কী খেতে ইচ্ছে করে বলুন?’ অভয়পদ একটু ইতস্তত করে প্রশ্ন করে। এ অবস্থায় আর কী বলা যেতে পারে তা ঠিক সে বুঝতেই পারে না।
চোখ দুটো বিস্ফারিত হয় বিস্ময়ে। রাসমণি প্রথমটা যেন বুঝতেই পারেন না ওর কথা। তারপর অনেক কষ্টে বলেন, ‘তুেমি খাওয়াবে ভাই তোমার পয়সায়!’
‘হ্যাঁ দিদিমা। আমিই খাওয়াবো।’
‘রাজ-রাজ্যেশ্বর হও ভাই। বেঁচে থাকো। মহার মহাভাগ্য তোমার হাতে পড়েছে।’
‘কিন্তু আপনি কি খাবেন তা বললেন না?’
অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন। হয়ত বা মৃত্যুপথযাত্রিণী তাঁর বিগত জীবনের ঝাপসা-হয়ে-আসা ইতিহাসের মধ্যে নিজের প্রিয় খাদ্য খুঁজে বেড়ান। অথবা সবই আজ একাকার হয়ে গেছে মনের ভেতর–প্রিয়-অপ্রিয়, স্মৃতি আর চিন্তাশক্তি কোন অতল আঁধারে তলিয়ে গেছে, নাগালই পাচ্ছেন না!
অবশেষে একসময় বলেন ঠোঁট, খুলে, আনারস খাবো ভাই। আনারস আর গরম সন্দেশ। খাওয়াবে ত?’
‘এখুনি নিয়ে আসছি দিদিমা।’
তখনও আনারসের সময় নয়। সেটা বৈশাখ মাস। তবু অভয়পদ নতুন বাজার থেকে খুঁজে খুঁজে পাকা আনারসই সংগ্রহ করে। আর তিন-কড়ি ময়রার দোকান থেকে গরম গরম সন্দেশের ঠাসা |
কিন্তু জিরের মত করে আনারস কুচিয়ে কুচিয়ে যখন কমলা মুখে দিতে গেল, তখন অবস্থাৎ রেগে গেলেন রাসমণি, ‘তোরা সবাই মিলে আমাকে একাদশীতে খাওয়াতে এসেছিস? যা নিয়ে যা- থুথু!’
কমলা ব্যাকুল কণ্ঠে বোঝাতে গেল, ‘আজ যে চতুর্দশী মা। আমি আপনাকে ছুঁয়ে বলছি আজ একাদশী নয়। পরশু একাদশীর উপোস হয়ে গেছে। কাল তেরোস্পর্শ গেছে, আজ চতুর্শশী। আপনি খান!’
‘দূর দূর, দূর হয়ে যা! সব্বনাশীরা রিমার সময় আমার বর্ণাশ করতে এসেছে।
229
অভয়পদও বোঝাবার চেষ্টা করে, ‘আমি বলছি দিদিমা আজ একাদশী নয়। নইলে আমি আনব কেন?’
‘তোরা সব বেইমান। আমি জানি। থু– থু!’
প্রাণপণে ঠোঁট দুটো চেপে ধরেন রাসমণি। কিছুতেই কেউ বোঝাতে পারে না যে সেদিন একাদশী নয়।
পূর্ণিমার দিন ভোরবেলা মারা গেলেন রাসমণি। আগের দিন সেই যে মুখ বুজেছিলেন আর খোলেন নি। চোখও চান নি। নিস্তব্ধ নিঃসাড়ে পড়েছিলেন। তবু সকলেই কেমন করে বুঝেছিল যে শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রায় সারারাতই সকলে ঘিরে বসেছিল। তিন মেয়ে, নাতিনাতনী, দুই নাতজামাই। ছিল না কেবল জামাইরা কেউ। নরেনের পাত্তা জানা নেই– শরৎ কে ইচ্ছে ক’রেই খবর দেওয়া হয় নি।
শেষরাত্রির দিকে শ্বাসলক্ষণ দেখা দিল। নাকটা ভেঙে গেল। রাঘব ঘোষাল বসেছিলেন; তিনি বললেন, ‘আর দেরি নেই। নাক ভেঙেছে এইবার হয়ে এল! গোবিন্দ, তুই বাবা গঙ্গাজল দে একটু মুখে। তোমরা সবাই নাম শোনাও! অন্তে নারায়ণ ব্রহ্ম। গঙ্গাযাত্রা করবে নাকি?’
অশ্রুমুখী কমলা প্রবলবেগে ঘাড় নাড়ে। বড় মাসিমার অভিজ্ঞাতই যথেষ্ট।
শেষরাত্রে অকস্মাৎ নিশ্বাসটা সহজ হয়ে আসে। একসময় আবারও ঠোঁট দুটি নড়ে। মনে হয় যেন কী বলতে চাইছেন!
ওঠেঃ
একেবারে মুখের কাছে কান পেতে শোনে অভয়পদ– নামই করছেন রাসমণিঃ ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে-
99
গলাটা পরিষ্কার করে নিয়ে অভয়পদ বলে, ‘উনিও নামই করছেন। আপনারা–’ সে আর বলতে পারে না। ক্রন্দনের কলরোলের মধ্যে রাঘব ঘোষালের কণ্ঠ বেজে
‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে-
গোবিন্দ গঙ্গাজল দিতে যায় মুখে, হাত কেপে জল গলায় পড়ে। রাঘবই হাত ধরে মুখে গঙ্গাজল দেওয়ান।
কিন্তু সে জল আর গলার ভেতর পর্যন্ত গেল না, কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। দীর্ঘদিনের বিপুল ব্যথা-বেদনার সঞ্চার নিয়ে রাসমণি কোন্ অজানা সান্ত্বনার পথে যাত্রা করলেন, তা কে জানে!