দ্বিতীয় অনুবাক
প্রথম সূক্ত
[ঋষি : সৌভরি। দেবতা : ইন্দ্র। ছন্দ : প্রগাথ।]
বয়মু স্বামপূর্ব স্থূরং ন কচ্চিৎ ভরন্তোহবস্যবঃ। বাজে চিত্রং হবামহে॥১॥ উপ জ্বা কর্মনূতয়ে স নো যুবোগ্রশ্চক্রাম যো ধৃষৎ। ত্বামিদ্ধ্যবিতারং ববৃমহে সখায় ইন্দ্র সানসিম্ ॥ ২৷৷ যো ন ইদমিদং পুরা প্র বস্য আনিনায় তমু ব স্তষে। সখায় ইন্দ্রমূতয়ে ৷৩৷৷ হর্ষশ্বং সৎপতিং চর্ষণীসহং স হি স্মা যো অমন্দত। আ তু নঃ স বয়তি গব্যমখ্যং স্তোতৃভ্যো মঘবা শতম্ ॥ ৪
বঙ্গানুবাদ –হে সর্বদা গমনে নবীন (অপূর্ব) ইন্দ্র! পূজনীয় (চিত্রং) আপনি, আপনি পোষণকর্তা অথবা হবিঃ ইত্যাদির দ্বারা আপনাকে পুষ্ট করে (ত্বম ভরন্তঃ) রক্ষার কামনাশালী আমরা অন্নের নিমিত্তভূত হয়ে অথবা সংগ্রাম জয়ের নিমিত্ত (বাজে) আপনাকে আহূত করছি (বয়ম্ হবামহে)। আপনি আমাদের প্রতি আগত হোন, আমাদের প্রতিপক্ষের প্রতি নয় (উম্)। (তার দৃষ্টান্ত কি? না–) স্তুরং ন কচ্চিৎ ভরন্তঃ অবস্যবঃ অর্থাৎ লোকে যেমন কদাচিৎ গুণাঢ্য রাজা ইত্যাদিকে। অভিমত প্রদানের দ্বারা পোষণ পূর্বক আপন জয়ের নিমিত্ত আহ্বান করে, সেই রকম ॥ ১।
হে ইন্দ্র! যুদ্ধ ইত্যাদি কর্মে প্রস্তুত হয়ে (কর্ম) রক্ষার নিমিত্ত আপনার নিকট আমরা গমন করছি (ত্বা উতয়ে উপ) বা আপনার আশ্রয় গ্রহণ করছি। যে ইন্দ্র নিত্যযুবা (যুবা), উগ্র্ণবল (উগ্রঃ), শত্রুবর্গের ধর্ষক (ধৃষৎ)–সেই ইন্দ্র আমাদের সহায়তার্থে আগত হোন (স নঃ চক্রাম)। হে ইন্দ্র! সম্যক্ পূজনীয় (সানসিং), রক্ষক (অবিতারং) আপনাকেই (তামিদ্ধি) সখারূপে বরণ করে অর্থাৎ আপনারই মিত্রভূত হয়ে আমরা আপনাকেই সম্ভজনা বা কামনা করছি (ববৃমহে)। ২
হে মিত্রভূত (সখায়ঃ) যজমানবৃন্দ! আপনাদের রক্ষার্থে (বঃ উতয়ে) সেই ইন্দ্রের স্তব করছি (তং ইন্দ্ৰং স্তবে); যে ইন্দ্র পূর্বেই (পুরা) আমাদের (নঃ) অতি-প্রশংসনীয় বা শ্রেষ্ঠ হিরণ্য ইত্যাদি ধনসামগ্রী (প্র বস্যঃ) ও গো-ইত্যাদি নির্দিষ্ট প্রাণীগণকে (ইদমিদং) প্রাপ্ত করিয়েছেন (আনিনায়)। আমরা সেই অভীষ্ট-প্রদাতা ইন্দ্রের স্তুতি করছি (তম্ উম্ বঃ স্তষে) ৷ ৩৷৷
হরিনামক অশ্বযুগল-সম্পন্ন (হশ্বং), শ্রেষ্ঠ কর্মকারীগণের পালক (সৎপতিং), মনুষ্যবর্গের অভিভবিতা বা নিয়ন্তা (চর্ষণীসহং) ইন্দ্রের স্তুতি করছি। যে ইন্দ্র স্তুতির দ্বারা প্রসন্ন হয়ে থাকেন (যে অমত) তিনি নিশ্চয় স্তুতির যোগ্য (স হি স্ম); (অতএব উক্ত গুণবিশিষ্ট সেই ইন্দ্রের স্তুতি করছি–এটাই বক্তব্য)। অথবা–যে জন ইন্দ্র কর্তৃক প্রদত্ত ধনে প্রসন্ন হয়ে ছিল, সেই জন ইন্দ্রকে স্তুতি করতে অভিলাষী হয়ে থাকে। সেই ধনবান ইন্দ্র (মঘবা) আমারা হেন স্তোতৃবর্গকে (স্তোতৃভ্যো নঃ) শতসংখ্যক গো ও শতসংখ্যক অশ্ব প্রাপ্ত করিয়ে দিন (শত গব্যম্ অশ্যম্ আ বয়তি ॥ ৪৷
বিনিয়োগ ও টীকা –উপযুক্ত সূক্ত এবং পরবর্তী তিনটি সূক্ত, অর্থাৎ এই অনুবাকের মোট চারটি সূক্তই উকথ্যে, ক্রতুতে, ব্রাহ্মণাচ্ছংসীতে ও শস্ত্রে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। চতুর্থ সূক্তের শেষে শস্ত্রযাজ্যা। এগুলি বৈতানে (৪১) সূত্রিত আছে। (২০কা, ২অ. ১সূ.)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত
[ঋষি : গোতম। দেবতা : ইন্দ্র। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ।]
প্র মংহিষ্ঠায় বৃহতে বৃহদ্রয়ে সত্যশুম্মায় তবসে মতিং ভরে। অপামিব প্রবণে যস্য দুর্ধরং রাধে বিশ্বায়ু শবসে অপবৃতম্ ॥১॥ অধ তে বিশ্বমনু হাসদিষ্টয় আপো নিম্নেব সবনা হবিষ্মতঃ। যৎ পর্বতে ন সমশীত হর্ষত ইন্দ্রস্য বজ্রঃ শথিতা হিরণ্যয়ঃ ২৷৷ অস্মৈ ভীমায় নমসা সমধ্বর উষো ন শুভ্র আ ভরা পনীয়সে। যস্য ধাম শ্রবসে নামেন্দ্ৰিয়ং জ্যোতিরকারি হরিতো নায়সে ৷৩৷৷ ইমে ত ইন্দ্র তে বয়ং পুরুষ্টুত যে ত্বারভ্য চরামসি প্রভূবসো। নহি ত্বদনন্যা গির্বণে গিরঃ সঘৎ ক্ষোণীরিব প্রতি নো হ তৎ যচঃ ॥৪॥ ভূরি ত ইন্দ্ৰ বীর্যং তব স্মস্যস্য স্তোতুর্মঘবন্ কামমা পৃণ। অনু তে দ্যৌবৃহতী বীর্যং মম ইয়ং চ তে পৃথিবী নেম ওজসে ৷৷ ৫৷৷ ত্বং তমিন্দ্র পর্বর্তং মহামুরুং বজ্রেণ বজ্বিন পর্বশশ্চকর্তিথ। অবাসৃজো নিবৃতাঃ সৰ্তৰা অপঃ সত্ৰা বিশ্বং দধিষে কেবলং সহঃ ॥ ৬৷৷
বঙ্গানুবাদ— অতিশয় অর্চনীয় বা দাতৃতম অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ দাতা (মংহিষ্ঠায়), মহৎ গুণে প্রবৃদ্ধ (বৃহতে), প্রভূত ধনশালী (বৃহৎ-রয়ে), যথার্থ সামর্থশালী (সত্যশুম্মায়), অতিশয়িত বলসম্পন্ন (তবসে) ইন্দ্রের উদ্দেশে অথবা বলোভের নিমিত্ত উক্ত গুণসম্পন্ন ইন্দ্রের উদ্দেশে স্তোত্র সম্পাদন করছি অর্থাৎ স্তুতি করছি (মতিং প্র ভরে)। সেই ইন্দ্র সকল মনুষ্যগণের পোষণসমর্থ ধন (বিশ্বায়ু রাধঃ) অবনত প্রদেশে বেগে প্রবাহিত জলের মতো (অপামিব প্রবণে) প্রয়োজনে (শবসে) অপগতাবরণ করেছেন, অর্থাৎ উন্মোচন করেছেন (অপাবৃত)। (সেই ইন্দ্রকে আমরা স্তুতি করছি- এটাই বক্তব্য) ॥১॥
হে ইন্দ্র (অধ)! জল যেমন নিম্ন স্থানের অনুকুলে অনুক্রমে প্রবাহিত হয় (আপো নিম্নেব), সেই রকম তোমার এষণায় বা যাগের নিমিত্ত (তে ইষ্টয়ে) সর্ব জগৎ অনুকূল হোক (বিশ্বম্ অনু হ অসৎ)। (অথবা পরবর্তী দৃষ্টান্ত)-জলের নিম্নগামিতার মতো যজমানের সবনত্রয় (সবনা) অর্থাৎ প্রাতঃ-মাধ্যন্দিন-সায়ংকালীন যজ্ঞাঙ্গ স্নান বা সোমাভিষব আপনার অনুগমন করছে (আপো..হবিষ্মতঃ)। যেহেতু (যৎ) কমনীয় (হত), শত্রুগণের প্রতি হিংসক (শথিতা), হিরণ্যভূষিত (হিরণ্যয়ং) ইন্দ্রের বজ্র পর্বতেও বাধা পায় না, কিন্তু পর্বতকেও বিদারিত করে (পর্বতে ন সমশীত)। (অতএব সর্ব জগৎ তাঁর অনুকূল হবে–এটাই বক্তব্য)। ২।
হে শুভ্র দীপ্তিময়ী উষা দেবতা! শত্রুগণের ভয়ঙ্কর (ভীমায়), অতিশয় স্তোতব্য (পনীয়সে) ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগ করুন (আ ভর), এবং অন্ন (নমঃ) ও উক্তলক্ষণ ইন্দ্রকে সম্যরূপে আমাদের প্রাপ্ত করিয়ে দিন অর্থাৎ এই স্থানে আনয়ন করুন। (ঊষা উদিত হলে ইন্দ্রের আগমন হওয়ার কারণে ইন্দ্রের আহরণ কথিত হয়েছে। অথবা অন্নের সমৃদ্ধিতে ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগপ্রবৃত্তি হয়, এই জন্য এমন বলা হয়েছে)। যে ইন্দ্রের ধাম (যস্য ধাম), সকলের ধারক বা পোষক ইন্দ্রহিত বা ইন্দ্রদত্ত জলসমূহ (নাম) অন্নের সমৃদ্ধির নিমিত্ত হয় (শবসে), এবং যে ইন্দ্রের দ্বারা সকল প্রাণীর গমন ইত্যাদি ব্যবহারের নিমিত্ত (হরিতঃ ন অয়সে) জ্যোতির প্রকাশ করা হয় (জ্যোতিঃ অকারি)। (সেই ইন্দ্রের উদ্দেশে যাগ করুন–এটাই বক্তব্য) ॥ ৩॥
হে ইন্দ্র! এইগুলি আপনার (ত ইমে), আমরাও আপনার স্বভূত অর্থাৎ আপন জন (বয়ম্ তে)। হে বহুপ্রকারে স্তুত (পুরুষ্টুত) ইন্দ্র! আমরা হেন যারা আছি (যে বয়ং), হে প্রভূত ধনশালী (প্রভূবসো) ইন্দ্র! তারা আপনার আশ্রিত হয়ে অর্থাৎ শরণ লাভ করে বিচরণ করছি (ত্বাং আরভ্য চরামসি)। হে ভজনীয় ইন্দ্র (গির্বণঃ) আপনি ব্যতিরিক্ত অন্য কোনও দেবতা (ত্বৎ অন্য) আমাদের বচন সহ্য করেন না (গিরঃ নহি সঘৎ), অর্থাৎ আপনিই আমাদের স্তুতি বচন সহ্য করেন; (তার দৃষ্টান্ত)-ক্ষোণীরিব অর্থাৎ প্রজাগণ যেমন যেমন রাজাকে, বিজ্ঞাপিত করেন, তা সবই রাজা সহ্য করেন, তেমন। অতএব আপনি আমাদের সেইরূপ বচন অর্থাৎ স্তুতিবচনের (নঃ তৎ বচঃ) প্রতিকামনা করুন (প্রতি হর্য)। ৪
হে ইন্দ্র! আপনার বীরকর্ম বৃত্রবধ ইত্যাদি লক্ষণসমন্বিত বহু রকমের (বীর্যং ভূরি ত); অতএব আমরা আপনার বশ্য বা উপাসক হয়েছি (স্মসি)। হে ধনবান্ (মঘব) ইন্দ্র! এই আমি হেন আপনার স্তবকারী (অস্য স্তোতুঃ) যজমানের কামনা প্রীণিত বা আপূরিত করুন (কামং আ পৃণ)। আপনার বীর্য মহতী দ্যুলোক অনুক্রমে বিভক্ত বা ব্যাপ্ত করেছে (তে বীর্যং বৃহতী দৌঃ অনু মমে)। কেবল দ্যুলোকে নয়, এই পৃথিবীও (ইয়ং পৃথিবী চ) আপনার বলের নিমিত্তে (তে ওজসে) নম্র হয়েছে (নেমে)। (ইন্দ্রের দ্বারা সৃষ্ট বৃষ্টির জলে দ্যুলোক পরিচ্ছন্ন, অন্য কোন পরিচ্ছেত্তা নেই। তেমনই ইন্দ্রের ওজঃস্যুতের দ্বারা পৃথিবীও গিরি-তরু-গুল্ম-প্রাণী ইত্যাদি ধারণে নত–এটাই বক্তব্য)। ৫।
হে বজ্ৰবান্ (বজি) ইন্দ্র! আপনি আপনার বর্জ্যরূপ আয়ুধের দ্বারা (বজ্রেণ) মহত্বযুক্ত অতি বিরাট পর্বতের (উরু পর্বতং) পক্ষ ইত্যাদি ক্রমে (পর্বশঃ) ছেদন করেছেন (চকর্তিথ)–অথবা বৃষ্টির অভিমানী মেঘসমূহকে (পূর্বতং) বজ্রের দ্বারা (বজ্রেণ) বিদারিত করেছেন (পর্বশঃ)। অনন্তর সেই মেঘের দ্বারা নিরন্তর আবৃত জল (নিবৃতাঃ অপ) নদী ইত্যাদির দ্বারা প্রবাহিত করণের নিমিত্ত (সৰ্তবৈ) নিম্নাভিমুখে বিসৃষ্টবান্ অর্থাৎ নিক্ষেপকারী হয়েছেন (অব অসৃজঃ)। এইরকম অসাধারণ (কেবলং) সকল বল (বিশ্বং) আপনি ধারণ করেছেন (ত্বং দধিষে); এটি সত্য, মিথ্যা নয় (এতৎ সত্ৰা) ৷ ৬ ৷৷
বিনিয়োগ ও টীকা –উপযুক্ত সূক্তের বিনিয়োগ উথ্যে, ক্রতুতে ও ব্রাহ্মণাচ্ছংসীশস্ত্রে উক্ত হয়েছে। (২০কা, ২য়, ২সূ.)।
.
তৃতীয় সূক্ত
[ঋষি : অয়াস্য। দেবতা : বৃহস্পতি। ছন্দ : ত্রিষ্টুপ।]
উদঞতো ন বয়ো রক্ষমাণ বাবদতো অদ্রিয়স্যেব ঘোষাঃ। গিরিভ্রজো নোময়ো মদন্তো বৃহস্পতিমভ্যর্কা অনাবন্ ॥১৷৷ সং গোভিরাঙ্গিরসো নক্ষমাণো ভগ ইবেদর্যমণং নিনায়। জনে মিত্রো ন দম্পতী অনক্তি বৃহস্পতে জয়াশূরিবাজৌ ॥ ২॥ সাধ্বর্যা অতিথিনীরিষিরা স্পাহাঃ সুবর্ণা অনবদ্যরূপাঃ। বৃহস্পতিঃ পর্বতেভ্যো বির্যা নিৰ্গা ঊপে যবমিব স্থিবিভ্যঃ ॥৩৷৷ আষায় মধুন ঋতস্য যোনিমবক্ষিপন্নৰ্ক উল্কামিব দ্যোঃ। বৃহস্পতিরুদ্ধরনুশ্মনো গা ভূম্যা উদ্রেব বি ত্বং বিভেদ ৷৷ ৪৷৷ অপ জ্যোতিষা তমো অন্তরিক্ষাদুদঃ শীপালমিব বাত আজৎ। বৃহস্পতিরনুমৃশ্যা বলস্যামিব বাত আ চক্র আ গাঃ ॥৫॥ যদা বলস্য পীয়তো জসুং ভেদ বৃহস্পতিরগ্নিতপোভিরর্কৈঃ। দদ্ভিন জিহ্বা পরিবিষ্টমাদদাবিনিধীরকৃণোদুষিয়াণাম ৷৷ ৬ ৷৷ বৃহস্পতিরমত হি ত্যদাসাং নাম স্বরীণাং সদনে গুহা যৎ। আণ্ডেব ভিত্বা শকুনস্য গর্ভমুদুশ্লিয়াঃ পর্বতস্য সুনাজৎ ॥৭॥ অশ্নাপিনদ্ধং মধু পর্যপশ্যন্মৎস্যং ন দীন উদনি ক্ষিয়ন্ত। নিষ্টজ্জভার চমসং ন বৃক্ষাৎ বৃহস্পতির্বিরবেণা বিকৃত্য ॥ ৮ সোষামবিন্দৎ স স্বঃ সো অগ্নিং সো অর্কেণ বি ববাধে তমাংসি। বৃহস্পতিগোবপুষো বলস্য নির্মজ্জানং পর্বণণা জভার ॥৯৷৷ হিমেব পর্ণা মুষিতা বনানি বৃহস্পতিনাকৃপয়দ বলো গাঃ। অনানুকৃত্যমপুনশ্চকার যাৎ সূর্যমাসা মিথ উচ্চরাতঃ ১০ অভি শ্যাবং ন কৃশনেভিরশ্বং নক্ষত্রেভিঃ পিতরো দ্যামপিংশন। রাত্রাং তমো অদধুর্জোতিরহন বৃহস্পতির্ভিনদদ্রিং বিদদ গাঃ ॥১১৷ ইদমকর্ম নম অভ্রিয়ায় যঃ পূর্বীরব্বানোনীতি। বৃহস্পতিঃ স হি গোভিঃ সো অঃৈ স বীরেভিঃ স নৃভির্নো বয়ো ধাৎ ১২
বঙ্গানুবাদ –জলে গমনপূর্বক বিচরণশীল (উদঃ ), ব্যাধি ইত্যাদি হতে নিজেদের রক্ষাকারী (রক্ষমাণাঃ) পক্ষীগণ যেমন উচ্চরব ধ্বনিত করে (বয়ো ন বাবদতঃ), মেঘের নিকট হতে অধোমুখে পতনকালে শস্য ইত্যাদির তৃপ্তিপ্রদ জলরাশি (গিরিভ্রজঃ মদন্তঃ উর্ময়ো ন) যেমন মেঘের ন্যায় গর্জন করে (অভ্রিয়স্য ইব ঘোষাঃ), সেইরকম অর্চনসাধন মন্ত্রাবলী অথবা অর্চনাকারী স্তোতৃগণ (অর্কাঃ)। বৃহতীর অর্থাৎ মন্ত্রবাক্যের পতির (বৃহস্পতি) অভিস্তবন করছে (অভি অনাব)। ১।
মহর্ষি আঙ্গিরস অর্থাৎ আঙ্গিরাগোত্রোৎপন্ন মহর্ষি যেমন ভগদেবের ন্যায় গো-ঘৃত ইত্যাদির সাথে অথবা স্তুতিবাক্যের সাথে বিবাহকালে বরবধূকে বিবাহহোমাভিমানী অর্যমা দেবতার শরণ প্রাপ্ত করিয়ে থাকেন, তেমনই এই দম্পতিকে অমা দেবতার শরণ লাভ করিয়ে দিন। যেমন মিত্র অর্থাৎ সূর্যদেব প্রকাশের নিমিত্ত আপন রশ্মিসমূহকে একত্রিত করেন, তেমনই এই পতি-পত্নীকে একভাবে যুক্ত করুন। হে বৃহস্পতি দেব! যুদ্ধে উদ্যত বীর যেমন অশ্বগুলিকে (রথে) যোজিত করে, সেইরকম আপনিও এই বধূ ও বরকে সংযযাজিত করুন (বাজয়)। ২৷
সেই গাভীগণ সুন্দর গমনশীলা (সাধ্বর্যা), দুগ্ধ ইত্যাদি দানে অতিথিগণের তৃপ্তিসম্পাদিকা বা অতনশীলা, স্পাহনীয়া (স্পার্থ), সুন্দর বর্ণোপেতা, অনিন্দিতরূপা–এইরকম লক্ষণা গাভীগণকে বৃহস্পতিদেব বলসম্বন্ধী অসুরগণের দ্বারা অবরুদ্ধ পর্বত হতে উদ্ধার পূর্বক স্তোতৃগণকে প্রদান করছেন। (তার দৃষ্টান্ত) যবমিব স্থিরিব্য অর্থাৎ যবকাণ্ড হতে যব নিষ্কাশিত পূর্বক যেমন বপন করা হয়, তেমন; অথবা ব্রীহ্যাধার বা গোলা হতে যব বা শস্য নিষ্কাশনের মতো। ৩।
যেমন আদিত্য (অর্কঃ) দুলোক হতে অধোদিকে উল্কাকে ক্ষেপণ করেন, তেমনভাবেই বৃহস্পতিদেবতা জলের দ্বারা সর্বতো ভূমি সিঞ্চনের নিমিত্ত (মধুনা আষায় জলের কারণভূত মেঘকে দুলোক হতে নিম্নাভিমুখে প্রেরণ করছেন (অবক্ষিপ)। অধিকন্তু, সেই বৃহস্পতি দেবতা মেঘের নিকট হতে (অশ্মনঃ) জলরাশি (গাঃ) উদ্ধার পূর্বক ভূমির ত্বক বা উপরিভাগ (ত্ব) সিঞ্চিত বা ভিন্ন করছেন। অথবা–পণি নামক অসুরগণের দ্বারা আচ্ছাদিত পর্বত হতে তাদের দ্বারা অপহৃত গাভীগুলিকে উদ্ধার করে সেই গাভীগুলির খুরাগ্রে ভূমির ত্বক বা উপরিভাগ বিদীর্ণ করাচ্ছেন, অর্থাৎ সর্বত্র গাভীগুলিকে বিচরণ করাচ্ছেন ৷৷ ৪৷৷
বৃহস্পতি দেবতা আপন দীপ্তি প্রকাশের দ্বারা (জ্যোতিষা) অন্তরিক্ষরূপ গিরিকুহর হতে (অন্তরিক্ষাৎ) অন্ধকার অপসারিত করছেন; (তার দৃষ্টান্ত)বাত উন্নঃ শীপালমিব অর্থাৎ বায়ু যেমন জল হতে শৈবালগুলিকে অপগমিত করে, সেই রকম। অধিকন্তু, বৃহস্পতি দেবতা বলনামক অসুরের দ্বারা অপহৃত গাভীগুলির অবস্থানপ্রদেশ জ্ঞাত হয়ে সেই স্থান হতে সেই গাভীগুলিকে সর্বত্র ব্যাপ্ত করছেন। (তার দৃষ্টান্ত)–বাতঃ অভ্রমিব অর্থাৎ বায়ু যেমন মেঘকে ছিন্ন-ভিন্ন করে সর্বতঃ প্রসারিত করে থাকে, সেই রকম। ৫।
যখন বল নামধারী হিংসাকর্মকারী (পীয়স) অসুরের হিংসাসাধন আয়ুধকে (জসুং) বৃহস্পতি দেবতা অগ্নিসম তাপদায়ক (অগ্নিতপোভিঃ) আপন দীপ্ত রশ্মি বা মন্ত্রের দ্বারা (অর্কৈঃ) ভেদ করেন, তখন জিহ্বা যেমন মন্টক ইত্যাদি লক্ষণ অন্ন দন্তের দ্বারা চর্বণ পূর্বক ভক্ষণ করে, সেইরকমে তিনি বলনামক অসুরকে ভক্ষণ করেছেন (আদ)। এবং তারপর তাঁর অপহৃত গাভীগুলিকে (উস্রিয়াণাং) আবিষ্কার করেছেন (নিধীন) অর্থাৎ স্পষ্ট করেছেন (অকৃণোৎ)। ৬।
বৃহস্পতি দেবতা যখন পর্বত গুহায় বা সদনে লুক্কায়িত ভাবে রক্ষিত শব্দায়মান গাভীগুলির (স্বরীণাম আসাং) নাম জ্ঞাত হয়েছিলেন, তখন সেই দুগ্ধক্ষরণশালিনী গাভীগণ নিজেরাই (ত্মনা) অর্থাৎ অপরের সহায়নিরপেক্ষ হয়ে পর্বত ভেদ করে উগমন করেছিল (উৎ আজৎ), অর্থাৎ বাহির হয়েছিল। (তার দৃষ্টান্ত)–আণ্ডের ভিত্বা শকুনস্য গর্ভ অর্থাৎ ময়ূর ইত্যাদি পক্ষীসকল যেমন অণ্ড ভেদ করে তার গর্ভ হতে নিষ্ক্রান্ত হয়ে আসে, সেইরকম। ৭৷
বৃহস্পতি দেবতা পর্বতের দ্বারা (অশ্না) আবৃত (অপিনদ্ধং) মধুর ন্যায় ভোগযোগ্য গাভীগণকে আবরণভূত পর্বত অপসারণ পূর্বক দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিলেন (পরি অপশ্যৎ)। (তার দৃষ্টান্ত)–দীনে উদনি ক্ষিয়ন্তং মৎস্যং ন অর্থাৎ অল্প জলাশয়ে নিবাসকারী মৎস্যকে যেমন দেখা যায়, তেমন। চমস নামক যজ্ঞীয়। সোমপাত্র যেমন তার উপাদানভূত মধু নিষ্কাশন পূর্বক হরণ বা ভক্ষণ করে সেই রকমে বৃহস্পতি ও দেবতা বিরবের দ্বারা অর্থাৎ বিকৃত হস্তালক্ষণ রবের দ্বারা গোরূপধারী বল নামক অসুরকে জ্ঞাত হয়ে তাকে ছিন্ন করে পর্বত-গহ্বর হতে গাভীগুলিকে উদ্ধার করেছিলেন (নির্জভার)। ৮।
সেই হেন পূর্বোক্ত বৃহস্পতি দেবতা (স) পর্বতকুহরের অন্ধকারে গোপনে রক্ষিত গাভীগুলিকে দর্শনের উদ্দেশে উষাকে লাভ করেছিলেন (উষাং অবিন্দ), আদিত্যকে (স্বঃ) প্রকাশের উদ্দেশে লাভ করেছিলেন, এবং অগ্নিকে লাভ করেছিলেন। তারপর সূর্যের তেজঃপ্রভাবে অন্ধকার বিদূরিত করে বিশেষভাবে বাধিত হয়েছিলেন (বি বাধে)। তারপর বৃষভরূপধারী (গোবপুষঃ) বলাসুরকে হনন পূর্বক গাভীগুলিকে নিষ্কাশিত করে আহরণ করেছিলেন (নিঃ জভার) ॥ ৯৷
হিম যেমন (বৃক্ষের) পত্রগুলি নিঃসার করে অপহরণ করে (মুষিতা), সেইভাবে বৃহস্পতি দেবতা গো-লক্ষণ ধনরাশি (বনানি) অপহরণ পূর্বক আনয়ন করেছিলেন, এবং বল-নামক অসুরও অপহৃত গাভীগুলিকে প্রত্যর্পণ করেছিল (অকৃপয়ৎ)। অধিকন্তু, বৃহস্পতি দেবতা যে কর্ম করেছিলেন, সেই কর্ম অন্যের অননুকরণীয় (অননুকৃত্যং) অর্থাৎ অন্য কেউই এই কর্ম সম্পাদনে সমর্থ নয়; পুনরায় কাউকে কখনও যে কর্ম সাধন করতে হবে না, অর্থাৎ যে কর্ম অন্যের পুনঃ কর্তব্যরহিত। (কি সেই কর্ম, তা বলা হচ্ছে)–সূর্য ও চন্দ্র (সূর্যমাসা) যে পরস্পর (মিথঃ) অর্থাৎ অনুক্রমে দিবায় ও রাত্রে ঊর্ধ্বে বিচরণ করছে (উৎ চরাতঃ)-এটাই বৃহস্পতির সেই কর্ম) ॥ ১০৷
তখন পালক দেবগণ অর্থাৎ ইন্দ্র ইত্যাদি সকল রক্ষক দেববৃন্দ (পিতরঃ) লোকে যেমন কপিশবর্ণ অর্থাৎ নীলপীতবর্ণ অশ্বকে (শ্যাবং ন অশ্ব) সুবর্ণময় অলঙ্কারে অলঙ্কৃত করে (কৃশনেভিঃ–কৃশনৈঃ পিংশন্তি), সেইভাবে গ্রহ-তারকা ইত্যাদির দ্বারা (নক্ষত্রেভিঃ) দ্যুলোককে অলঙ্কৃত করেছিলেন (দ্যা অপিংশন); এইরূপে তারা রাত্রিকালে অন্ধকার (রাাম্ তমঃ) এবং দিবাভাগে (অহ) জ্যোতিঃ অর্থাৎ সকলের দীপক আদিত্য নামক তেজঃ স্থাপিত করেছিলেন (অদধুঃ)। (কখন? না–) যখন বৃহস্পতি দেবতা গাভীগুলির আচ্ছাদক পর্বত বিদারিত করে (অদ্রিম্ ভিনৎ) গাভীগুলিকে প্রাপ্ত হয়েছিলেন (গাঃ বিদৎ)। ১১।
মেঘকে বিদীর্ণ করে জল নিষ্কাশনকারী বৃহস্পতি দেবতার উদ্দেশে এই নমস্কার করছি বা নমস্কারোপলক্ষিত অন্নসাধন করছি বা স্তুতি করছি। বৃহস্পতি দেবতা (যো) বহু ঋকের অনুক্রমে (পূর্বীঃ অনু) স্তুতি করেছেন–এ কথা বলা হয় (আনোনবীতি)। তিনিই নিশ্চয় (সঃ হি) আমাদের বহু গাভীর সাথে অন্ন প্রদান করুন (বয়ঃ অধৎ)। এইভাবে বৃহস্পতি দেবতা বহু অশ্বের সাথে অন্ন প্রদান করুন। সেই বৃহস্পতি দেবতা বহু পুত্রের (বীরোভিঃ) সাথে অন্ন প্রদান করুন। এবং সেই বৃহস্পতি দেবতা বহু ভৃত্য ইত্যাদির সাথে (ভিঃ) আমাদের (নঃ) অন্ন প্রদান করুন। ১২।
বিনিয়োগ ও টীকা –উপযুক্ত সূক্তের উথ্যে, ক্রতুতে ও ব্রাহ্মণাচ্ছংসিশস্ত্রে অর্থাৎ পূর্ববর্তী সূক্তের মত বিনিয়োগ উক্ত হয়েছে ৷ (২০কা, ২৩অ ৩সূ.)।
.
চতুর্থ সূক্ত
[ঋষি : কৃষ্ণ, বসিষ্ঠ। দেবতা : ইন্দ্র। ছন্দ : জগতী, ত্রিষ্টুপ।]
অচ্ছা ম ইন্দ্রং মতয়ঃ স্বদিঃ সীচীর্বিশ্বা উশতীরন্ষত। পরি স্বজন্তে জনয়ো যথা পতিং মর্যং ন শুল্ক্যং মঘবানমূতয়ে॥১॥ ন ঘা বৃদ্রিগপ বেতি মনস্তে ইৎ কামং পুরুত শিশ্রয়। রাজেব দম্ম নি যদোহবি বহিষ্যস্মিসু সোমেহবপানমস্তু তে॥ ২॥ বিষুবৃদিলা অমতেরুত ক্ষুধঃ স ইদ্রায়ো মঘবা বস্ব ঈশতে। তস্যেদিমে প্রবণে সপ্ত সিন্ধবো বয়ো বর্ধন্তি বৃষভস্য শুষ্ণিণঃ ॥ ৩৷৷ বয়োন বৃক্ষং সুপলাশমাসদৎসোমাস ইন্দ্ৰং মন্দিনশ্চমূষদঃ। প্রৈষামনীকং শবসা দবিদ্যুৎ বিদৎ স্ব মনবে জ্যোতিরাম ॥৪॥ কৃতং ন শ্বঘ্নী বি চিনোতি দেবনে সংবর্গং যন্মঘবা সূর্যং জয়ৎ। ন তত্তে অন্যো অনু বীর্যং শকন্ন পুরাণো মঘবন্ নোত নূতনঃ ॥৫বিশংবিশং মঘবা পর্বশায়ত জনানাং ধেনা অবাকশদ বৃষা। যস্যাহ শক্রঃ সবনেষু রণতি স তীব্রৈঃ সোমৈঃ সহতে পৃতন্যতঃ ॥ ৬৷৷ অপো ন সিন্ধুমভি যৎ সমক্ষরৎসোমাস ইন্দ্রং কুল্যা ইব হ্রদ। বর্ধন্তি বিপ্রা মহো অস্য সাদনে যবং ন বৃষ্টিদিব্যেন দানুনা ॥৭॥ বৃষা ন ক্রুদ্ধঃ পয়দ রজঃস্বা যো অর্যপত্নীরকৃণোদিমা অপঃ। স সুন্বতে মঘবা জীরদানবেহবিন্দজ্জ্যোতির্মনবে হবিষ্মতে ৷ ৮৷৷ উজ্জায়তাং পরশুর্জোতিষা সহ ভূয়া ঋতস্য সুদুঘা পুরাণবৎ। বি নোচতামরুযো ভানুনা শুচিঃ স্বর্ণ শুক্রং শুশুচীত সৎপতিঃ ॥৯॥ গোভিষ্টরেমামতিং দুরেবাং যবেন ক্ষুধং পুরুহুত বিশ্বা। বয়ং রাজভিঃ প্রথমা ধনান্যম্মাকেন বৃজনেনা জয়েম ॥১০। বৃহস্পতির্নঃ পরি পাতু পশ্চাদুতোত্তরম্মাদধরাদঘায়োঃ।. ইন্দ্রঃ পুরস্তাদূত মধ্যতো নঃ সখা সখিভ্যো বরিবঃ কৃণোতু ॥১১৷৷ বৃহষ্পতে যুবমিশ্চ বম্বো দিব্যস্যেশাথে উত পার্থিবস্য। ধং রয়িং স্তুবতে কীরয়ে চিয়ং পাত স্বস্তিভিঃ সদা নঃ ॥১২।
বঙ্গানুবাদ –ইন্দ্রদেবকে অভিমুখী করে (অচ্ছ) স্বর্গ বা সুখপ্রাপক (স্বর্বিদঃ), পরস্পর সঙ্গত (সীচীঃ), ব্যাপ্ত (বিশ্বাঃ), ইন্দ্রের প্রতি কাময়মান (উশতীঃ) আমার স্তোত্রগুলি স্তুতি করছে (মে মতয়ঃ অনুষত)। জনয়ঃ অর্থাৎ অপত্য উৎপাদনকারিণী যোষিৎ-বর্গ যেমন পতিকে দৃঢ় আলিঙ্গন করে (পরি স্বজন্তে), অধিকন্তু দূরদেশ হতে আগত পিতা ইত্যাদিকে পুত্র প্রমুখ বন্ধুজনবর্গ (শুল্কং) নিজেদের রক্ষার নিমিত্ত আলিঙ্গন করে (উতয়ে পরিজন্তে), সেইরকম আমার স্তুতিসমূহ রক্ষার নিমিত্ত ধনবন্ত ইন্দ্রকে (মঘবান) আলিঙ্গন করছে ৷ ১।
হে বহুজনের দ্বারা বা বহুভাবে আহূত ইন্দ্রদেব (পুরুহুত)! আপনার অভিমুখে গমনশীল আমার মন (মে মনঃ) কখনও অপসরণ করে না (ন ঘ অপ বেতি); বরং আপনারই আশ্রয় কামনা করে (শিশয় কামং)। হে শত্রুগণের বিনাশক বা দর্শনীয় ইন্দ্রদেব (দস্ম)! রাজা যেমন (রাজেব) সিংহাসনে উপবিষ্ট হন, আপনি তেমন এই আস্তীর্ণ দর্ভে উপবেশন করুন (অধি বহিষি নি ষদঃ)। (এখানে বসে কি লাভ? বলা হচ্ছে–) এই সোমযাগে বা অভিযুত সোমে আপনার অবনত পান সূচিত হোক (তে অবপানং অস্ত), অর্থাৎ উধ্বলোক হতে ১. নিম্নে অবতরণ পূর্বক এই সোমযাগে আগমন করুন অর্থাৎ সোম পান করুন। ২।
ইন্দ্রদেব আমাদের দারিদ্র্যের নিঃশেষক হোন (অমতেঃ) অর্থাৎ দারিদ্র্যের বিনাশক হোন এবং ক্ষুধা-বিতাড়ক হোন (বিষুবৃদ ভবতু)। সেই ধনবান্ ইন্দ্র দানাহ ধনের স্বামী (বায়ঃ বস্বঃ ঈশতে)। অধিকন্তু, কামবর্ষণকারী, বলবান (বৃষভস্য শুষ্ণিণঃ) সেই ইন্দ্রের (তস্যেৎ) প্রসিদ্ধ (ইমে) গঙ্গা ইত্যাদি স্যন্দনশীলা নদী অথবা লবণ-ইক্ষু ইত্যাদি সপ্ত সমুদ্র (সপ্ত সিন্ধবঃ) অবনত দেশে (প্রবণে) অন্নের বৃদ্ধি সাধিত করছে (বয়ঃ বর্ধন্তি)। ৩
যেমন পক্ষীগুলি (বয়ঃ) শোভনপর্ণযুক্ত বৃক্ষে (সুপলাশং) উপবেশন করে, সেইরকম মদকর অর্থাৎ হর্ষদায়ক (মন্দিনঃ) চম্বোরধিষবণফলকসমূহে অবস্থিত (চমূদঃ) সোমরাশি ইন্দ্রকে আশ্রয় করেছে (আসদ। এই সোমরাশি বা তাদের মুখসমূহ (এষাং অনীকং) দ্যোতিত হচ্ছে। অধিকন্তু সেই সোমরাশি আদিত্য নামে আখ্যাত (স্বঃ) অরণীয় অর্থাৎ অভিগমনীয় (আর্য) জ্যোতি মনুষ্যগণের প্রকাশের নিমিত্ত প্রদান করেছেন (বিদৎ)। ৪
কিতব অর্থাৎ জুয়াড়ী (শ্নগ্নী) যেমন দূতে অর্থাৎ পাশার জুয়ায় (দেবনে) কৃতশব্দবাচ্য লাভহেতু পাশার গতি বা চাল (কৃত) অন্বেষণ করে (বি চিননাতি), সেইরকম আমাদের স্তুতিসমূহ ক্রীড়নে বা প্রমোদে নিমিত্তভূত হয়ে ইন্দ্রকে অন্বেষণ করছে; যে কারণে (যৎ) ধনবান্ ইন্দ্র (মঘবা) অন্ধকার-বিনাশক (সম্বৰ্গং) সূর্যদেবকে সকল জগতের প্রকাশের নিমিত্ত দিবিলোকে স্থাপন করেছিলেন (জয়ৎ)। হে ধনবান্ ইন্দ্র (মঘব)! আপনার উক্ত লক্ষণসম্পন্ন শক্তি (বীর্য) অপর কেউ অনুকরণ করতে সক্ষম নয় (ন অনু শকৎ); পূর্বকালেও (পুরাণঃ) কেউ সক্ষম হয়নি; অধিকন্তু আধুনিক কালেও কেউই (নূতনঃ) সক্ষম হবে না। ৫।
সকল উপাসকের বা যজমানের (বিশংবিশং) যজ্ঞে সমকালে আপন বিভূতির প্রভাব গমনকারী (পরি অশায়ত) কামবৰ্ষক (বৃষা) ধনবান্ (মঘবা) ইন্দ্র স্তোতৃগণের (জনানাং) প্রীতিপ্রদ স্তুতিসমূহ এককালে শ্রবণ করছেন (ধেনাঃ অবচাশৎ)। এইরকম সমর্থবান ইন্দ্র (শঃ) যার অর্থাৎ যে যজমানের তিনটি সবনে সন্তোষ লাভ করেন, সেই যজমান অত্যন্ত মদকর সোমরস (তীব্রৈঃ সোমৈঃ) পানের দ্বারা সংগ্রামে শত্রুগণকে পরাভূত করে (পৃতন্যতঃ সহতে)। ৬৷
জলরাশি (আপঃ) অর্থাৎ নদী ইত্যাদি যেমন সমুদ্রের দিকে ধাবিত হয়, কিংবা নালাসমূহ (কুল্যা) যেমন হ্রদের দিকে ধাবিত হয়, সেইরকম সোমগুলি যখন ইন্দ্রদেবের প্রতি সর্বতোভাবে ক্ষরিত হয় (অভি সমক্ষরণ), তখন মেধাবী স্তোতৃবর্গ (বিপ্রাঃ) যজ্ঞগৃহে (সাদনে) স্তুতির দ্বারা এঁর অর্থাৎ ইন্দ্রের (অস্য) মাহাত্ম্য বর্ধন করেন (মহঃ বর্ধন্তি)। (তার দৃষ্টান্ত কি? না) যবং ন বৃষ্টিরিতি অর্থাৎ যেমন মেঘ দিব্য জলের দ্বারা (দিব্যেন দানুনা) বা বৃষ্টি আপন দানের দ্বারা (দিব্যেন) যবের বর্ধন করে থাকে, সেইরকম। ৭।
যে ইন্দ্ৰ আদিত্যের দ্বারা পালিত, অর্থাৎ সূর্য কর্তৃক রক্ষিত, (অর্যপত্নীঃ) প্রসিদ্ধ জলরাশিকে (ইমা অপঃ) ভূমিতে স্থিত করেছেন (অকৃণোৎ করতি), সেই ইন্দ্র সর্ব লোকে মেঘকে বিদারিত করার উদ্দেশে গমন করেন (রজঃসু আ পতয়ৎ); (কেমন ভাবে? না) বৃষা ন ক্রুদ্ধ অর্থাৎ ক্রোধের দ্বারা অন্ধীভূত বৃষভ অর্থাৎ যণ্ড যেমন তার প্রতিদ্বন্দ্বী বৃষভকে পরাভূত করতে গমন করে, সেই ভাবে। অনন্তর ধনবান ইন্দ্র (মঘবা) সোমাভিষবকারী (সুন্বতে), শীঘ্র হবিঃ প্রদানকারী (জীরদানবে), সোম ইত্যাদি হবিযুক্ত (হবিষ্মতে), যজমানকে জ্যোতি প্রকাশক তেজঃ প্রাপ্ত করান, অর্থাৎ প্রদান করেন (মনেব জ্যোতিঃ অবিন্দৎ) ৮
আপন তেজঃপ্রভাবে (জ্যোতিষা) মেঘকে বিদীর্ণ করার নিমিত্ত ইন্দ্রের বজ্র (পরশুঃ) ঊর্ধ্বে প্রাদুর্ভূত হোক (উজ্জায়তাং)। জলের সুষ্ঠু দোহয়িত্রী মাধ্যমিকা বাণী (ঋতস্য সুদুখা), অর্থাৎ জলের কলধ্বনির মাধ্যমে উৎসারিতা বাক্, পূর্বের ন্যায় এখনও প্রকট হোক (পুরাণবৎ ভূয়াঃ); অধিকন্তু দীপ্তমান্ (অরুষঃ) আপন তেজের দ্বারা (ভানুনা) প্রজ্বলন্ পূর্বক (শুচিঃ) প্রকাশিত হোক (বি রোচং )। আদিত্য যেমন দীপ্ত তেজঃ প্রকাশ করেন (স্বঃ ন শুক্র), অর্থাৎ তেজের দ্বারা স্বয়ংই দীপ্যমান হন, সেইমতোই সাধুজনের রক্ষক (সৎপতি) ইন্দ্র অত্যন্ত দীপ্তিশালী হোন (শুশুচীত) ৯।
হে পুরুহুত! আমরা যজমানবৃন্দ আপনার অনুগৃহীত হয়ে (বয়ং) আপনার দানে (গোভিঃ) অর্থাৎ কৃপায় দুর্গমনীয় (দুরেবাং) দারিদ্র্য বা দারিদ্র্যের বাধা (দুরেবাং) অতিক্রম করবো (তরেম)। অধিকন্তু আপনার দেওয়া যব, ব্রীহি ইত্যাদির দ্বারা সকলের (বিশ্বা) অর্থাৎ পুত্র-ভৃত্য ইত্যাদির ক্ষুধা অতিক্রম করবো (যবেন ক্ষুধম্ তরেম)। আরও, আপনার অনুগ্রহের দ্বারা সমজাতীয়গণের মধ্যে মুখ্যভূত (প্রথমাঃ) হয়ে আমরা ক্ষত্রিয় ভূপালগণের সাথে (রাজভিঃ) বহু ধন (ধনানি) লাভ করবো এবং আমরা আমাদের বলের দ্বারা শত্রুগণকে জয় করবো (অস্পাকেন বৃজনেন জয়েম) ১০।
বৃহস্পতিদেব পশ্চিম দেশ হতে আগত (পশ্চাৎ) পাপ (অঘায়োঃ) ইচ্ছাকারী হিংসকগণের নিকট হতে আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করুন (পরি পাতু); অধিকন্তু (উত) উত্তর ও অধো দেশ হতে (উত্তরস্মাদ অধরাৎ চ) আগমনকারী পাপেচ্ছু হিংসকগণের নিকট হতে আমাদের রক্ষা করুন। এইরকমে ইন্দ্রদেবও সম্মুখ বা পূর্ব দেশ হতে (পুরস্তাৎ) ও মধ্য দেশ হতে আগত হিংসক পাপীগণের নিকট হতে আমাদের রক্ষা করুন। এইভাবে সর্বতো রক্ষা করে মিত্রভূত (সখা) ইন্দ্রদেব সখ্যতাপন্ন (সখিভ্যঃ-সখিভূতেভ্যঃ) আমাদের বহু ধনে ধনী করুন (বরিবঃ কৃণোতু) অর্থাৎ প্রভূত ধন প্রদান করুন। ১১।
হে বৃহস্পতি ও ইন্দ্র (বৃহস্পতে ইন্দ্ৰশ্চ)! আপনারা উভয়ে (যুবং) দিব্য লোকস্থ ও পৃথিবী লোকস্থ (দিবস্য পার্থিবস্য চ) ধনরাশির স্বামী (বস্বঃ ঈশাখে); অতএব আপনাদের স্তোত্রকারী আমাদের (স্তুবতে কীরয়ে) ধন প্রদান করুন (রয়িম্ ধত্তম) এবং আপনারা (যুয়) সর্বদা পরম মঙ্গলের সাথে আমাদের (সদা স্বস্তিভিঃ নঃ) পালন বা রক্ষা করতে থাকুন (পাত)। ১২।
বিনিয়োগ ও টীকা— উপযুক্ত সূক্তটিও উথ্যে ও ব্রহ্মশস্ত্রে বিনিযুক্ত হয়। এর মধ্যে ১১শ মন্ত্রটি (বৃহস্পতিঃ পরি পাতু ইত্যাদি) পরিধানীয়া এবং ১২শ মন্ত্রটি (বৃহস্পতে যুবমিন্দ্ৰশ্চ ইত্যাদি) শস্ত্রজ্যা। ৮ম মন্ত্রের হবিষ্মতী শব্দটি শুক্লযজুর্বেদে (৩৪) বিশেষভাবে উল্লেখিত হয়েছে। (২০কা, ২অ, ৪সূ.)।