প্রথম কাণ্ড। অষ্টম প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- অনুমত্যৈ পুরোডাশমষ্টাকপালং নিৰ্বপতি ধেনুদক্ষিণা যে প্রত্যঞ্চঃ শম্যায়া অবশীয়ন্তে তং নৈঋতমেককপালং কৃষ্ণং বাসঃ কৃষ্ণতুষ দক্ষিণা, বীহি স্বাহাহহুতিং জুষাণ এষতে নিঋতে ভাগো ভূতে হবিষ্মত্যসি মুঞ্চেমমংহসঃ স্বাহা নমো য ইদং চকারাহদিত্য চরুং নির্বপতি বয়রা দক্ষিণাহগ্নবৈষ্ণবমেকাদশকপালং বামনো বহী দক্ষিণাহগীযোমীয়মেকা দশকপালং হিরণ্যং দক্ষিণেন্দ্ৰমেকাদশকপালমৃষভো বহী দক্ষিণাংগ্নেয় মষ্টাকপালমৈং দধষভো বহী দক্ষিণেন্দ্রাগংদ্বাদশকপালং বৈশ্বদেবং চরুং প্রথমজো বৎসসা দক্ষিণা সৌম্যং শ্যামাকং চরুং বাসো দক্ষিণা সরস্বত্যৈ চরুং সরস্বতে চরুং মিথুনৌ গাবৌ দক্ষিণা ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন-তত্র প্রথমানুবাকে প্রথমং তাবঘ্রাহ্মণের কর্মদ্বয়ং বিধীয়তে। চতুর্দশীমিশ্রিতায়া পৌর্ণমাস্যা অভিমানিদেবতাহনুমতিঃ। অর্থাৎ–এই প্রথম অনুবাকে বলা হয়েছে যে, চতুর্দশীমিশ্রিত পূর্ণিমা তিথির নাম অনুমতি, এবং এই স্থানে সেই অনুমতি তিথির অভিমানিনী দেবতার উদ্দেশে হবিঃ নির্বপণ করা হয়েছে]
মর্মার্থ- অনুমতি তিথির অভিমানিনী দেবতার উদ্দেশ্যে অষ্টকপালে পুরোডাশ পৃথক করে রাখা কর্তব্য এবং দক্ষিণায় ধেনু দান করতে হয়। এই কর্মে পুরোডাশের নিমিত্ত তণ্ডুল পেষণ করতে হয় এবং পশ্চিম দিকে শিলার নীচে স্থাপিত, শম্যাতে (দৃষদমভ্যাধাতুমধঃ স্থাপিতায়াঃ শম্যায়াঃ পশ্চাদ্যে) যে তণ্ডুলের পিষ্টাবশিষ্ট পতিত হয়, সেই অবশিষ্ট অংশজাত দ্রব্য নিঋতি দেবতার উদ্দেশে প্রদান করতে হয়; এখানকার দক্ষিণা কৃষ্ণ বাস বা কৃষ্ণ তৃষ (কৃষ্ণং বাসঃ কৃষ্ণতৃষং দক্ষিণা)। মন্ত্র–আমাদের হতে বিশ্লিষ্টা হও, আমাদের আঘাত দান করো না। হে গার্হপত্য অগ্নি! স্বাহা মন্ত্রের দ্বারা আপনাকে আহুতি প্রদান করছি, এই আহুতি গ্রহণপূর্বক আপনি শান্তরূপে এই স্থানে অবস্থান করুন। হে নিঋতি! এই তোমার ভাগ, তুমি এই হবিঃ ভক্ষণ করো। হে ভূতে! তুমি হবিযুক্ত হয়েছে তুমি এই হবির্দানকারী যজমানকে দারিদ্রপ্রদ পাপ হতে মুক্ত করো (দারিদ্রপ্রদাৎ পাপাত্মাঞ্চ)। যে গার্হপত্য অগ্নি আমাদের উচ্চারিত শব্দের দ্বারা প্রার্থনা আকাঙ্ক্ষা করেন, তার উদ্দেশে হবিঃ প্রদান করা হচ্ছে এবং স্বাহা মন্ত্রে নমস্কার করা হচ্ছে। দেবমাতা অদিতির উদ্দেশে চরু নির্বপণ (দান) করা হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে গাভী দক্ষিণারূপে প্রদেয়। অগ্নি ও বিষ্ণুর উদ্দেশে চরু নির্বাপন করা হচ্ছে, এই ক্ষেত্রে একাদশ কপাল ও বামনাকৃতি ভারবাহী বীলব দক্ষিণারূপে প্রদেয়। অগ্নি ও সোমদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল ও হিরণ্য দক্ষিণা রূপে প্ৰদেয়। ইন্দ্রের উদ্দেশে একাদশ কপাল ও ভারবাহী বলীবর্দ দক্ষিণা রূপে প্রদেয়। অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকপাল ও ইন্দ্রের উদ্দেশে দধি প্রদেয়। ইন্দ্র ও অগ্নির উদ্দেশে একাদশ কপাল দক্ষিণা দেয়। বৈশ্যদেবের উদ্দেশে নির্বপিত চরুর দক্ষিণা (গাভীর) প্রথমজাত বৎস। সোমদেবের উদ্দেশে শ্যামাক (অকৃষ্টপচ্য অর্থাৎ বিনাকর্ষণে উৎপন্ন শস্য হতে প্রস্তুত) চরু ও দক্ষিণারূপে বস্ত্র প্রদেয় (বাসো দক্ষিণা)। সরস্বতীর উদ্দেশে চরু নির্বপন করে সমৃদ্ধিহেতু দক্ষিণা রূপে গো-মিথুন প্রদান করতে হয় (মিথুনৌ গাবৌ দক্ষিণা সমৃদ্ব্যৈ) ॥১॥
[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বিতীয়ে চাতুর্মাস্যেষু প্রথমপর্বরূপং হবিষ্টকং বিধন্তে। অর্থাৎ–এই দ্বিতীয় অনুবাকে চাতুর্মাস্য যাগের প্রথম পর্বের আটটি হবিঃ নির্বপণের বিধান উক্ত হয়েছে।]
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- আগ্নেয়মষ্টাকপালং নিৰ্ব্বপতি সৌম্য চরুং সাবিত্রং দ্বাদশকপালং সারস্বতং চরুং পৌষ্ণং চরুং মারুতং সপ্তকপালং বৈশ্বদেবীমামিক্ষাং দ্যাবাপৃথিব্যমেককপাল ॥ ২॥
মর্মার্থ- অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকপাল হবিঃ নির্বপণ কর্তব্য। সোমের উদ্দেশে চরু, সবিতাদেবের উদ্দেশে দ্বাদশকপাল, সরস্বতীর উদ্দেশে চরু, পূষা দেবতার উদ্দেশে চরু, মরুৎ দেবতার উদ্দেশে সপ্ত কপাল, বৈশ্বদেবীর উদ্দেশের আমিক্ষা অর্থাৎ ছানা (তপ্তে পয়সি দধ্যানয়তি সা বৈশ্বদেব্যামিক্ষা বাজিভ্যো বাজিন), ও দ্যাবাপৃথিবীর উদ্দেশে এক কপাল হবিঃ নির্বপণ কর্তব্য ॥২॥
[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয় বরুণঘাসাখ্যৎ দ্বিতীয় পর্বোচ্যতে। অর্থাৎ-পূর্বোক্ত অনুবাকে বৈশ্বদেব নামে আখ্যাত প্রথম পর্ব কথিত হয়েছে। এই তৃতীয় অনুবাকে বরুণপ্রঘাস নামে আখ্যাত দ্বিতীয় পর্ব কথিত হয়েছে।]
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- ঐন্দ্রাগ্নমেকাদশকপালং মারুতীমামিক্ষাং বারুণীমামিক্ষাং কায়মেক কপালং প্রঘাস্যা হবামহে মতো যজ্ঞবাহসঃ করম্ভেণ সজোষসঃ। মো ষণ ইন্দ্র পৃসু দেবাস্তু স্ম তে শুম্মিম্নবয়া। মহী হ্যস্য মীচুষো যব্যা। হবিষ্মতো মরুতে বন্দতে গীঃ। যগ্রামে যদরণ্যে যৎসভায়াং যদিল্টিয়ে। যচ্ছদ্রে যদৰ্য্য এনশ্চকৃমা কয়।। যদেকস্যাধি ধর্মণি তস্যাযজনমসি স্বাহা। অকর্ম কর্মকৃতঃ সহ ৰাচা ময়োভুবা। দেবেভ্যঃ কৰ্ম্ম কৃত্বাহস্তং প্রেত সুদানবঃ ॥৩৷৷
মর্মার্থ- ইন্দ্রদেব ও অগ্নিদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল, মরুৎদেবতার উদ্দেশে আমিক্ষা, বরুণ দেবতার উদ্দেশে আমিক্ষা এবং কায় অর্থাৎ প্রজাপতির (কায়ঃ প্রজাপতিদেবতাকঃ) উদ্দেশে এক কপাল হবিঃ নির্বপণ করণীয়। যজ্ঞের বহনকারী প্রঘাস মরুৎ-গণকে আমরা আহ্বান করছি; দধি, সর্পি (অর্থাৎ ঘৃত) মিশ্রিত সঙ্কু (অর্থাৎ ছাতু) নিম্পাদিত করম্ভের পাত্রের সাথে তাদের পরস্পর সমান-প্রীতি। হে ইন্দ্রদেব! আমাদের যেন সংগ্রামে প্রবৃত্তি না হয়। হে বলবন্ত! আপনার প্রসাদে সর্বদা আমাদের যজ্ঞের অনিষ্ঠ বিনাশ হোক। বৃষ্টিসেচনসমর্থ আপনার প্রসাদে আমাদের ভূমি (চাষের ক্ষেত্র) যব-ধন্য ইত্যাদিতে পূর্ণ হোক অর্থাৎ যব-ধান্য ইত্যাদির উৎপত্তি স্থান আমাদের ভুমির সকল অনিষ্ট নিবারিত হোক (তস্মাদনিষ্টশন-মিত্যন্বয়ঃ)। আমাদের স্তুতিরূপা বাক করম্ভপাত্ররূপ হবিযুক্ত মরুগণের বন্দনা করুক (বন্দতে নমস্করোতি স্তোতীত্যর্থঃ)। যে গ্রামে, যে অরণ্যে, যে সভায়, যে চক্ষু ইত্যাদি ইন্দ্রিয়ে, যে শুদ্রে, যে বৈশ্যে (যদৰ্য্য) আমরা জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে যে পাপ করেছি, হে করম্ভপাত্রজাত! আপনি সেই সকলেরই বিনাশকুর্তা, আপনাকে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। অধ্বযু প্রমুখ সকল যজমান সুখভাবে ভাবিত হয়ে মন্ত্রোচ্চারণরূপ বচন সহযোগে করম্ভপাত্র হোমের অন্ত পর্যন্ত কর্ম করেছেন। হে সুদানবঃ (সুষ্ঠু হবিঃর প্রদাতা) যজমানবর্গ! দেবগণের নিমিত্ত এই (দেবার্থামিদং) কর্ম সাধিত করে আপনারা আপন গৃহে গমন করুন ॥৩॥
[সায়ণাচার্য বলেন-চতুর্থপঞ্চমষষ্ঠেযু সাকমেধাখ্যং তৃতীয় পর্বোচ্যতে। তত্র পর্ব দিনদ্বয়েহনুষ্ঠেম। অর্থাৎ–তৃতীয় অনুবাকে চাতুর্মাস্য সম্পর্কিত দ্বিতীয় পর্ব কথিত হয়েছে। এইবার চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ অনুবাকে দুই দিনে অনুষ্ঠেয় সাকমেধ নামে আখ্যাত তৃতীয় পর্ব উক্ত হচ্ছে।]
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নয়েহনীকবতে পুরোডাশমষ্টাকপালং নিৰ্বপতি সাকং সূৰ্যেপোদ্যতা মরুভঃ সান্তপনেভ্যো মধ্যদিনে চরুং মরুত্তো গৃহমেধিভ্যঃ সৰ্বসাং দুগ্ধে সায়ং চরুং, পূর্ণা দৰ্বি পরা পত সুপূর্ণা পুনরা পত। বমেব বি কৃণাৰহা ইষমূৰ্জং শতক্রতো। দেহি মে দদামি তে নি মে ধেহি নি তে দধে। নিহারমিন্নি মে হরা নিহার নি হামি তে। মরুভঃ জীড়িভ্যঃ পুরোডাশং সপ্তকপালং নিৰ্ব্বপতি । সাকং সুৰ্য্যেপোদ্যতাহগ্নেয়মষ্টাকপালং নিৰ্বপতি সৌম্যং চরুং সাবিত্রং দ্বাদশকপালং সারস্বতং চরুং পৌষ্ণ চরুমৈন্দ্রাগ্নমেকাদশকপালমেন্দ্রং চরুং বৈশ্বকৰ্ম্মণমেককপালম ॥৪॥
মর্মার্থ- সূর্যের উদয়কালের মুহূর্তে সৈন্যযুক্ত (অনীকবতে সৈন্যবতে) অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্টকপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়, সূর্যের তীক্ষ্ণকিরণ সন্তপ্ত মধ্যাহ্নকালে শত্ৰুসন্তাপক মরুঙ্গণের উদ্দেশে চরু নির্বপণ করতে হয়, এবং সূর্যের অস্তকালে অর্থাৎ সন্ধ্যায় মরুৎগণের উদ্দেশে গাভীদোহন ও চরু প্রদান করতে হয়। হে দর্বি! আপনি শরনিষ্কাসনপূর্বক পূর্ণ হয়ে (শরনিষ্কাসেন পূর্ণা সতী) ইন্দ্রের প্রতি গমন করো, এবং তার প্রসাদে ধনে পূর্ণ হয়ে পুনরায় আমাদের নিকট আগত হও। হে শতক্রতু! আমরা উভয়ে বণিকের ন্যায় ক্রয়-বিক্রয় করবো। যেমন লোকে নিজের কোনও ধন প্রদান করে তণ্ডুল ইত্যাদি ক্রয় করে থাকে, সেই রকমই আমরা আপনাকে (অর্থাৎ ইন্দ্রকে) শর প্রদান করে বিনিময়ে) অন্ন ও বল ক্রয় করবো। হে ইন্দ্র! আমাদের আকাঙ্ক্ষিত (অপেক্ষিত) বস্তু আপনি দান করুন, আপনার আকাঙ্ক্ষিত বস্তু আমরা প্রদান করছি; দত্তবস্তু আপনি আমাদের সমীপে স্থাপন করুন, আপনার নিকটে আমরা স্থাপন করছি। সেগুলি উভয়ই এক সঙ্গে নয় (সকৃদেব না ভবতি), কিন্তু পুনঃ পুনঃ (বা একটি একটি করে) আমাদের সমীপে স্থাপন করুন, আমরাও পুনঃ পুনঃ তা আপনার সমীপে স্থাপন করবো। দ্বিতীয় দিনে সূর্যোদয় কালে মরগণের উদ্দেশে সপ্তকপাল পুরোডাশ নির্বপণ কর্তব্য; অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকপাল নির্বপণ কর্তব্য, সোমের উদ্দেশে চরু, সবিতার উদ্দেশে দ্বাদশকপাল, সরস্বতীর উদ্দেশে চরু, পূষার উদ্দেশে চরু, ইন্দ্র ও অগ্নির উদ্দেশে একাদশ কপাল, ইন্দ্রের উদ্দেশে চরু (ঐন্দ্রাগ্নমেকাদশ কপালমৈন্দ্রং চরুং), এবং বিশ্বকর্মার উদ্দেশে একাদশ কপাল হবিঃ প্রদান কর্তব্য ॥৪॥
[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমে তদীয়শেষে মহাপিতৃযজ্ঞ উচ্যতে। অর্থাৎ–চতুর্থ অনুবাকে সাকমেধ নামে আখ্যাত তৃতীয় পর্বের প্রধান হবিঃ কথিত হয়েছে। এই পঞ্চম অনুবাকে তার শেষরূপ মহাপিতৃযজ্ঞের কথা বলা হয়েছে।]
.
পঞ্চম অনুবাক
মন্ত্র- সোমায় পিতৃমতে পুরোডাশং ষট্কপালং নিৰ্বপতি পিতৃভ্যো বহিষভ্যো ধানাঃ পিতৃভভ্যাংগ্নিত্তেভ্যোহভিবন্যায়ৈ দুন্ধে মন্থমেতত্তে তত যে চ ত্বমন্বেতত্তে পিতামহ প্রপিতামহ যে চ ত্বমনু, অত্র পিতরো যথাভাগং মন্দধ্বং সুসদৃশং ত্বা বয়ং মঘবন্দিীমহি। প্র নূনং পূর্ণবন্ধুরঃ সুতো যাসি বোম অনু। যোজা ন্দি তে হরী। অক্ষমীমদন্ত হ্যব প্রিয়া অধূষত। অস্তোষত স্বভানবো বিপ্রা নবিষ্ঠয়া মতী। যোজা ৰিন্দ্ৰ তে হরী। অক্ষপিতরোহমীমদন্ত পিতরোহতীতৃপন্ত পিতরোহমীমৃত পিতরঃ। পরতে পিতরঃ সোম্যা গম্ভীরৈঃ পথিভিঃ পূৰ্ব্বৈঃ। অথা পিতৃসুবিদত্ৰাং অপত যমেন যে সধমাদং মদন্তি। মনো ৰা হুবামহে নারাশংসেন স্কেমেন পিতৃণাং চ মন্মভিঃ। আ ন এতু মনঃ পুনঃ ত্রত্বে দক্ষায় জীবসে। জ্যোচ সূৰ্য্যং দৃশে। পুনঃ পিতরো মনো দদাতু দৈব্যো জন। জীবং ব্রাতং সচেমহি।। যদন্তরিক্ষং পৃথিবীমুত দ্যাং যমাতরং পিতরং বা জিহিংসিম। অগ্নিৰ্মা তম্মদেনসো গার্হপত্যঃ প্র মুঞ্চতু দুরিতা যানি চকৃম করোতু মামনেনসম্ ॥৫॥
মর্মার্থ- পিতৃমতে সোমদেবের উদ্দেশে ছয় কপাল পুরোডাশ নির্বপণ কর্তব্য, বহিষদ পিতৃগণের উদ্দেশে ধান, অগ্নিদাত্ত (অজ্ঞনিষ্ঠাঃ) পিতৃগণের উদ্দেশে মৃতবৎসা গাভীর (অভিবন্যা ধেনু) দুগ্ধের সাথে মিশ্রিত যবের ছাতু (ক্ষীরে যবপিষ্টং প্রক্ষিপ্য মিশ্ৰীকৃতং দ্রব্যং মন্থঃ) প্রদান করতে হয়। হে পিতা! এই আপনার পিণ্ডীকৃত অন্ন এবং অন্য যারা আপনার অনুবর্তন করছেন তাদেরও প্রদান করছি। হে পিতামহ! এই আপনার অন্ন এবং অন্য যারা আপনার অনুবর্তনকারী, তাদেরও এই অন্ন প্রদান করছি। হে প্রপিতামহ! এই আপনার অন্ন এবং অন্য যারা আপনাকে অনুবর্তন করছেন, তাদেরও এই অন্ন প্রদান করছি। হে পিতৃগণ! এই পিণ্ডের আপন আপন ভাগ্যের দ্বারা আপনারা হৃষ্ট হোন (হৃষ্টা ভবত)। হে মঘব! সুষ্টু দৃষ্টিতে সকলের দর্শক আপনার আমরা তর্পণ করছি (বয়ং তৰ্পয়ামঃ)। আমাদের দ্বারা প্রদত্ত হবিঃ দ্বারা রথপৃষ্ঠ পরিপূরিত করে আমাদের দ্বারা স্তুতিযুক্ত হয়ে আপনার অভীষ্ট দেশে প্রস্থান করুন। হে ইন্দ্র! আপনার হরিবর্ণ অশ্ব দুটি আপনার রথে যোজিত আছে। পিতৃগণ অন্ন ভক্ষণ করে তৃপ্তিলাভ করেছেন, যেহেতু তারা শিরঃ-প্রভৃতি অঙ্গ কম্পিত করে ভোজনতৃপ্ত ব্রাহ্মণের ন্যায় ভোজনের স্তুতি করছেন (স্তুতিং কৃতবন্তঃ)। পিতৃগণ অন্ন ভোজন করে নিজেরা তৃপ্ত হয়ে আমাদের তৃপ্ত ও শোধিত করেছেন (অমীমৃজন্তাশ্মশোধিতবন্তঃ)। হে সোম্য পিতৃগণ! আপনারা এক্ষণে পূর্বকৃত সুলভ অন্নময় পথে প্রেরিত হোন। অনন্তর সেখানে (গৃহে গমন করে) সেই পিতৃলোকে যমের সাথে হৃষ্ট সুষ্ঠুজ্ঞানযুক্ত (সেখানকার বৃত্তান্তজ্ঞানী) পিতৃপুরুষগণকে প্রাপ্ত হোন। মনুষ্যগণের ও পিতৃগণেরও প্রশংসাযোগ্য মাননীয় বাক্যসমূহের দ্বারা আমরা আমাদের পিতৃযজ্ঞের অনুষ্ঠানপরায়ণ চিত্তকে দ্রুত আহ্বান করছি। কর্মানুষ্ঠানে দক্ষতা, সেই সেই (কর্ম) সাধনের সামর্থ্য, দীর্ঘজীবন ও সূর্যের ন্যায় চিরন্তন মোক্ষের যোগ্য মন পুনঃ পুনঃ যেন আমরা প্রাপ্ত হই। হে পিতৃগণ! দেবসম্বন্ধি পুরুষসমূহ আমাদের কর্মানুষ্ঠানপর চিত্ত প্রদান করুন। আমরাও যেন সম্বৎসরসংঘাতরূপ জীবন ভোগ করতে পারি (সচেমহি সেবেমহি)। অন্তরিক্ষ, পৃথিবী ও দুলোকের প্রতি, মাতা-পিতার প্রতি আমরা যে হিংসা করেছি (হিংসিতুমিচ্ছেম), সেই সকল দুরিত অর্থাৎ পাপ হতে গার্হপত্য অগ্নিদেব আমাদের মুক্তি প্রদান করুন। আমরা অন্যান্য যা পাপ করেছি তা হতেও মুক্ত করুন (তেভ্যোহপি মুঞ্চতু)। আমাকে সকল পাপরহিত করুন (মামনেনসং সর্বপাপরহিতং করোতু) ॥৫॥
[সায়ণাচার্য বলেন– ষষ্ঠে ত্র্যম্বকপুরোডাশাঃ সাকমেধশেষা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে সাকমেধের শেষরূপ এ্যম্বক পুরোশের বিষয় কথিত হয়েছে]
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- প্রতিপূরষমেককপালামিপত্যেকমতিরিক্তং যাবস্তো গৃহ্যাঃ স্মস্তেভ্যঃ কমকরং পশুনাং শৰ্মাসি শৰ্ম্ম যজমানস্য শৰ্ম্ম মে যচ্ছৈক এক রুদ্রো ন দ্বিতীয়ায় তস্থে আখুস্তে রুদ্র পশুস্তং জুষ, এষ তে রুদ্র ভাগঃ সহ স্বাকিয়া তং জুষ ভেষজ গবেহশ্বায় পুরুষায় ভেষজমথো অভ্যং ভেষজং সুভেষজম যথাহসতি। সুগং মেষায় মেষ্যৈ অবাম্ব রুদ্রমদিমহ্যব দেবং ত্র্যম্বক। যথা নঃ শ্রেয়সঃ করদ্যথা নো বস্যসঃ করদ্যথা নঃ পশুমতঃ করদ্যথা নো ব্যবসায়য়াৎ। এ্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধন। উৰ্বারুকমিব বন্ধনামৃত্যোর্মুক্ষীয় মাহমৃতাৎ। এষ তে রুদ্র ভাগং জুষ তেনাবসেন পরো মৃজবতোহতীহ্যবততধম্বা পিনাকহস্তঃ কৃত্তিবাসাঃ ॥৬
মর্মার্থ- প্রতি পুরুষের উদ্দেশে এক একটি কপাল নির্বপণ কর্তব্য। আমাদের (অর্থাৎ যজমানের) গৃহে যারা স্থিত আছে, তাদের সকলের নিমিত্ত এর দ্বারা সুখসম্পাদন কর্ম করব। হে রুদ্র। আপনি পশুগণের প্রিয়, যজমান আমি, আমাকে সুখ প্রদান করুন। জগতে একটি মাত্রই রুদ্র আছেন, দ্বিতীয় কেউ নেই, অর্থাৎ দ্বিতীয় রুদ্র কোথাও নেই (দ্বিতীয় রুদ্ৰো ন কোহপ্যবস্থিতঃ)। আখুস্থানীয় একটি পুরোডাশ আপনার প্রীতির কারণ, আপনি তা গ্রহণ করুন। হে রুদ্র! এই আপনার ভাগ, ভগিনীবৎ হিতকারিণী অম্বিকা বা পার্বতী দেবীর সাথে এই অংশের সেবা করুন। হে রুদ্র! আমাদের গো, অশ্ব ইত্যাদি পশুগণকে সুভেষজ প্রদান করুন, যাতে তারা আরোগ্য হয়। আমাদের বাহক মেষ দুগ্ধদানকারিণী মেষী যেন রোগরহিত হয়ে সঞ্চারণ করতে পারে, তেমন করুন (তথা কুরু)। হে পার্বতি! ত্রিনেত্রধারী দেব রুদ্রের উদ্দেশে আমরা পুরোডাশ ইত্যাদি অর্পণপূর্বক স্তুতি করছি, তিনি যেন আমাদের (শাস্ত্র অধ্যয়নের দ্বারা শ্রেষ্ঠ করেন, উত্তম ধনবান্ করেন, গবাশ্বাদিযুক্ত করেন, ব্যবসাযুক্ত করেন ও শাস্ত্ৰার্থনিশ্চয়যুক্ত করেন। পুণ্যগন্ধবান পুষ্টিবর্ধনকারী, এমন এ্যম্বককে পূজা করছি। এই লোকে যেমন প ফলসমূহ (লোকে যথোর্বাকফলানি) স্বয়ং বৃন্তচ্যুত (মুচ্যন্তে) হয়ে থাকে, সেই রকম আমি যেন ত্র্যম্বকের প্রসাদে মৃত্যুর বন্ধন হতে মুক্ত (মোচনমুক্ত) হই; কিন্তু অমৃত অর্থাৎ চিরজীবীত্ব হতে নয় (মা মুক্ষীয়)। হে রুদ্র! এই পুরোডাশসঘ আপনার ভাগ, এই ভাগ আপনি সেবন করুন (ভাগস্তং সেব)। আমাদের বিরোধী পাপসমূহের বিনাশকর পাথেয় গ্রহণ করে পিনাকনামক ধনুহঁস্তে জ্যা আকর্ষণ পূর্বক কৃত্তিবাস (চর্মপরিহিত) আপনি এই (মায়াময়) বর্তমানকে অতিক্রম করে অবস্থান করছেন ॥৬॥
[সায়ণাচার্য বলেন-সপ্তমে শুনাসীৰ্যামিং (তৃতীয়ং) চেতি কমদ্বয়ং পঞ্চেধীয়মা আপামার্গহোম মন্ত্রাস্ফোচ্যন্তে।]
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- ঐন্দ্রাগ্নং দ্বাদশকপালং বৈশ্বদেবং চরুমিন্দ্রায় শুনাসীরায় পুরোেশম দ্বাদশকপালং বায়ব্যং পয়ঃ সৌমেক কপালং দ্বাদশগবং সীরং দক্ষিণাংগ্নেয়মষ্টাকপালং নিৰ্বপতি রৌদ্রং গাবীধুকং চরুমৈন্দ্র দধি বারুণং যময়ং চরুং বহিনী ধেনুর্দক্ষিণা যে দেবাঃ পুরঃ সদোহগ্নিনেত্রা দক্ষিণসদো যমুনেত্রাঃ পশ্চাৎসদঃ সবিতৃনেত্রা উত্তরসদো বরুণনেত্রা উপরিষদো বৃহস্পতিনেত্রাঃ রক্ষোহণস্তে নঃ পা তে নোহব তেভ্যঃ নমস্তেভ্যঃ স্বাহা সমূঢ়ং রক্ষঃ সন্দগ্ধ রক্ষ ইদমহং রক্ষোহভি সং দম্যগ্নয়ে রক্ষোয়ে স্বাহা যমায় সবিত্রে বরুণায় বৃহস্পতয়ে দুবতে রক্ষোয়ে স্বাহা প্রষ্টিবাহী রথো দক্ষিণা দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসবেংশ্বিনোৰ্ব্বাহুভ্যাং পুষ্ণো হস্তাভ্যাং রক্ষসো বধং জুহোমি হতং রক্ষোইবধিম্ম রক্ষো যদ্বস্তে তদক্ষিণা ॥৭॥
মর্মার্থ- ইন্দ্র ও অগ্নির উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল, বিশ্বদেবের উদ্দেশে চরু, বায়ু ও আদিত্যযুক্ত (শুনো বায়ুঃ সীর আদিস্তাভ্যাং যুক্ত শুনাসীরঃ) ইন্দ্রদেবতার উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ, বায়ুর উদ্দেশে জল (পয়ঃ) ও সূর্যের উদ্দেশে এক কপাল হবি এবং দক্ষিণায় দ্বাদশটি বলীবর্দযুক্ত (দ্বাদশভিৱঁলীবরুৈহ্যমানং লাঙ্গল প্রদান কর্তব্য। অগ্নির উদ্দেশে অষ্টকপাল, রুদ্রের উদ্দেশে অরণ্যধান্যবিশেষের চরু, ইন্দ্রের উদ্দেশে দধি, বরুণের উদ্দেশে চরু ও ধেনু দক্ষিণা প্রদান কর্তব্য। পূর্বদিকবর্তী অগ্নিপ্রমুখ দেবগণ, দক্ষিণদিক্রবর্তী যমপ্রমুখ দেবগণ, পশ্চিমদিকবর্তী সবিতাপ্রমুখ দেবগণ, উত্তরদিবর্তী বরুণপ্রমুখ দেবগণ, ঊধ্বদিবর্তী বৃহস্পতিপ্রমুখ রাক্ষস-নিবারক দেবগণ আমাদের রক্ষা করুন; পুনরায় তারা আমাদের কর্মানুষ্ঠানে যুক্ত হোন; সেই দেবগণকে আমরা নমস্কার করছি ও স্বাহা মন্ত্রে এই হবিঃ আহুতি প্রদান করছি। আমাদের প্রতিকুল রাক্ষসজাতীয়গণ সমূলে বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছে, সর্বতে অবস্থিত তাদের অনুচরগণকে এক্ষণে সম্যভাবে দগ্ধ করছি। অগ্নয়ে রক্ষোঘ্নে স্বাহা অর্থাৎ রাক্ষস-বিনাশক অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। (এইভাবে) রাক্ষস-বিনাশক যম, সবিতা, বরুণ ও পরিচর্যাযুক্ত (পরিচৰ্য্যাবদিত) বৃহস্পতিদেবতার উদ্দেশে (যথাক্রমে) স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। এই স্থলে প্রষ্টিবাহী অর্থাৎ তিনটি অশ্বের দ্বারা বাহিত (ত্রিপাদাধারাবদশ্বত্ৰয়েলোহ্যমানঃ) রথ দক্ষিণা প্রদান সমৃদ্ধিহেতু প্রশংসনীয়। সবিতা দেবতার প্রেরণায় অশ্বিযুগলের বাহুদ্বয়ের ও পূষাদেবতার হস্তদ্বয়ের দ্বারা রাক্ষসগণকে বধের উদ্দেশে এই আহুতি প্রদান করছি। রাক্ষসগণ বিনাশ প্রাপ্ত হয়েছে, আমরা তাদের বিনাশ করেছি। হোমকালে যে বস্ত্রের দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়, এই স্থলে সেইটি দক্ষিণারূপে দানই বিধি ॥৭॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টমে দেবিকাদিকমষটুকমেদিনকর্তব্যম উচ্যতে। অর্থাৎ-পূর্বোক্ত অনুবাকে একদিনে করণীয় শুনাসীর্য ইত্যাদি চারটি কর্ম কথিত হয়েছে। এই অষ্টম অনুবাকে এক দিনে করণীয় দেবিকা ইত্যাদি ছটি কর্মের কথা উক্ত হয়েছে।]
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- ধাত্রে পুরোডাশং দ্বাদশকপালং নিৰ্বপত্যনুমত্যৈ চরুং রাকায়ৈ । চরুং সিনীবাল্যৈ চরুং কুহৈ চরুং মিথুনৌ গাবৌ দক্ষিণাহগ্না বৈষ্ণবমেকাদশকপালং নিৰ্বপত্যৈন্দ্রাবৈষ্ণবমেকাদশকপালং বৈষ্ণবং ত্ৰিকপালং বামনো বহী দক্ষিণাহগ্নীষোমীয়মেকাদশকপালং নিৰ্ব্বপতীন্দ্ৰাসোমীয়মেকাদশকপালং সৌম্যং চরুং বদক্ষিণা সোমাপৌষ্ণং চরুং নিৰ্বপত্যৈন্দ্রাপৌষ্ণং চরুম পৌষ্ণং চরুং শ্যামো দক্ষিণা বৈশ্বানরং দ্বাদশকপালং নিৰ্বপতি হিরণ্যং দক্ষিণা বারুণং যবনয়ং রুমশ্বে দক্ষিণা ॥৮॥
মর্মার্থ- সংবৎসরকালের স্বামীর উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। অনুমতি অর্থাৎ চতুর্দশীযুক্তা পূর্ণিমার অভিমানী দেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণ করণীয়। রাকা অর্থাৎ পূর্ণিমার অভিমানী দেবতার, সিনীবালী অর্থাৎ চর্তুদশীযুক্ত বা প্রতিপদযুক্তা অমাবস্যার অভিমানী দেবতার ও কুহর অর্থাৎ অর্থাৎ অমাবস্যার অভিমানী দেবতার উদ্দেশেও চরু নির্বপণ কর্তব্য। এই চারটি ক্ষেত্রেই গো-মিথুন দক্ষিণা প্রদান করতে হয়। অগ্নি ও বিষ্ণুর উদ্দেশে একাদশ কপাল, ইন্দ্র ও বিষ্ণু উদ্দেশে একাদশ কপাল এবং বিষ্ণুর উদ্দেশে তিন কপাল হবিঃ ও বামনাকৃতিসম্পন্ন বৃষ দক্ষিণা প্রদান করতে হয়। অগ্নি ও সোমের উদ্দেশে এবং ইন্দ্র ও সোমের উদ্দেশে যথাক্রমে একাদশ কপাল করে চরু নির্বপণ করতে হয়; পিঙ্গল অর্থাৎ কপিলবর্ণের গাভী (বঃ কপিলঃ) দক্ষিণস্বরূপ প্রদেয়। সোম ও পূষাদেবতার উদ্দেশে এবং ইন্দ্র ও পূষাদেবতার উদ্দেশে যথাক্রমে চরু নির্বপণ করণীয়; দক্ষিণাস্বরূপ শ্যামবর্ণের গাভী প্রদান করতে হয়। বৈশ্বানরে উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হয় এবং দক্ষিণায় হিরণ্য প্রদান করতে হয়। বরুণদেবের উদ্দেশে যবময় চরু এবং দক্ষিণারূপে অশ্ব প্রদান করতে হয় ॥৮]
[সায়ণাচার্য বলেন-নবমে রঙ্গিনাং হবীংষ্যনুদিনং ক্রমেণ কর্তব্যানুচ্যন্তে।]
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- বাম্পত্যং চরুং নির্বপতি ব্ৰহ্মণণা গৃহে শিতিপৃষ্ঠো দক্ষিণেন্দ্ৰমেকা দশকপালং রাজন্যস্য গৃহ ঋষভো দক্ষিণাহদিত্যং চরুং মহিষ্যৈ গৃহে ধেনুর্দক্ষিণা নৈঋতং চরুং পরিক্ত্যে গৃহে কৃষ্ণানাং ব্রীহীণাং নখনির্ভিন্নং কৃষ্ণা কুটা দক্ষিণাংগ্নেয়মষ্টাকপালাং সেনানন্যা গৃহে হিরণ্যং দক্ষিণা বারুণং দশকপাল সূতস্য গৃহে মহানিরস্টো দক্ষিণা মারুতং সপ্তকপালং গ্রামণ্যো গুহে পৃদ্দিক্ষিণা সাবিত্রং দ্বাদশকপাল ক্ষহ উপধ্বন্তো দক্ষিণাইনিং দ্বিকপালং সংগ্রহীতুহে সত্যৌ দক্ষিণা পৌষ্ণং চরুং ভাগদুঘস্য গৃহে শ্যামো দক্ষিণা রৌদ্রং গাবীবুকং চরুমাবাপস্য গৃহে শবল উদ্বারো দক্ষিণেন্দ্রায় সুব্রামণে পুরোডাশমেকাদশকপালং প্রতি নির্বপতীন্দ্রা য়ংহোমুচেহয়ং নো রাজা বৃত্ৰহা রাজা ভূত্বা বৃত্ৰং বধ্যান্মৈত্রাবাম্পত্যং ভবতি শ্বেতায়ৈ শ্বেতবৎসায়ৈ দুগ্ধে স্বয়ংমুর্তে স্বয়মথিত আজ্য আশ্বাখে পাত্রে চতুঃক্তৌ স্বষমবপন্নয়ৈ শাখায়ৈ কর্ণাংশ্চা কর্ণাংশ্চ তণ্ডুলাৰি চিনুয়াদ্যে কর্ণাঃ স পয়সি বাম্পতো যেহকর্ণাঃ স আজ্যে মৈত্রঃ স্বয়ংকৃতা বেদির্ভবতি স্বয়ং দিনং বহিঃ স্বয়ংকৃত ইঃ সৈব শ্বেতা শ্বেতবৎসা দক্ষিণা৷ ৯৷৷
মর্মার্থ- ব্ৰহ্মরূপ ঋত্বিকের গৃহে গমন পূর্বক (ব্রহ্মাভিমাণী) ক্ষত্রিয় বা রাজারূপে বৃত বৃহস্পতির উদ্দেশে চরু নির্বপণের পর শ্বেতপৃষ্ঠশালী (শিতিপৃষ্ঠো) গো দক্ষিণা প্রদান কর্তব্য। রাজন্যের গৃহে গমনপূর্বক ইন্দ্রের উদ্দেশে একাদশ কপাল চরু নির্বপণ করে একটি বৃষ (ঋষভ) দক্ষিণা প্রদান কর্তব্য। কৃতাভিষেকা রাণীর গৃহে গমন করে আদিত্যের উদ্দেশে চরু নির্বপণ পূর্বক দক্ষিণস্বরূপ ধেনু প্রদান কর্তব্য। রাজার দ্বিতীয়া রাণী, যিনি প্রীতিরহিতা (পরিবৃত্তিঃ প্রীতিরহিতা রাজ্ঞঃ স্ত্রী), তার গৃহে গমন করে নিঋতির উদ্দেশে কৃষ্ণবর্ণ খ্রীহি অর্থাৎ আশুধান্য ও নখের দ্বারা নির্ভিন্ন অর্থাৎ বিদীর্ণ তলে নিম্পাদিত চরু নির্বপণ করে ভগ্নশৃঙ্গ গো-দক্ষিণা প্রদান কর্তব্য। সেনানী অর্থাৎ সৈন্যাধ্যক্ষ বা সেনাপতির গৃহে গমন করে অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্ট সৈন্যাধ্যক্ষ বা সেনাপতির গৃহে গমন করে অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল চরু নির্বপণ করে দক্ষিণায় হিরণ্য প্রদান কর্তব্য। সুতঃ অর্থাৎ সারথির গৃহে গমন করে বরুণের উদ্দেশে দশ কপাল চরু এবং পীড়িত বৃষ দক্ষিণারূপে প্রদেয়। গ্রামের প্রধানের গৃহে গমন করে মরুৎ-দেবতার উদ্দেশে সপ্ত কপাল চরু নির্বপণ করে পৃশ্নি অর্থাৎ শুক্ল বর্ণের গো দক্ষিণা প্রদান কর্তব্য। অন্তঃপুরের অধ্যক্ষের গৃহে গমন করে সবিতাদেবের উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল চরু নির্বপণের পর দক্ষিণাস্বরূপ মিশ্রিতবর্ণ গো দক্ষিণারূপে প্রদান কর্তব্য। ধনসংগ্রহকর্তা অর্থাৎ কোষাধ্যক্ষের গৃহে গমন করে দুই কপাল পুরোশ ও সহোদর (সমানমাতরৌ) বস দক্ষিণা প্রদান করতে হয়। রাজার করগ্রহণকারীর (যো রাজ্ঞঃ প্রাপ্তং ষষ্ঠং ভাগং প্রজাভ্যো গতি স ভাগদুঘঃ) গৃহে গমন করে পূষাদেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণপূর্বক শ্যামবর্ণের গো দক্ষিণা প্রদান কর্তব্য। দ্যুতকার অর্থাৎ পাশা-ক্রীড়কের গৃহে গমন করে রুদ্রদেবের উদ্দেশে তণ্ডুল ও গমশস্যনিষ্পন্ন চরু নির্বপণ পূর্বক দক্ষিণস্বরূপ বহুবর্ণবিশিষ্ট (শবল) দীর্ঘপুচ্ছ (উদ্বাররা) গো প্রদান কর্তব্য। সুষ্ঠু-পালয়িতা ইন্দ্রের উদ্দেশে একাদশ কপাল হবিঃ প্রদান কর্তব্য। প্রতিব্যক্তিভবের বা প্রতি গৃহে গমনপূর্বক পাপমোচনকারী ইন্দ্রের উদ্দেশে একাদশ কপাল পুরোডাশ অনুবর্তন কর্তব্য। আমাদের এই অধ্বর্যপতি রাজা শক্ৰহন্তক হয়ে শত্রুগণকে বিনাশ করুন। অতঃপর ইন্দ্রের উদ্দেশে নির্বপণ কর্ম সমাপ্ত হলে মিত্র ও বৃহস্পতির উদ্দেশে হবিঃ অর্পণ কর্তব্য। বৃহস্পতির নিমিত্ত শ্বেতবৎসা ও শ্বেতবর্ণা গাভী (অর্থাৎ যে শ্বেতবর্ণা গাভীর বৎসের বর্ণও শ্বেত, এমন গাভী) দোহন করতে হয়। সেই গাভীর দুগ্ধ হতে স্বয়ং মন্থন করে প্রাপ্ত ঘৃতের দ্বারা প্রস্তুত চরু মিত্রদেবতার উদ্দেশে অশ্ববৃক্ষ হতে বায়ু ইত্যাদির অভিঘাতে স্বয়ং-পতিত পত্রে প্রদান কর্তব্য। বৃহস্পতির নিমিত্ত দুগ্ধে খণ্ডিত তণ্ডুল দিয়ে চরু নিষ্পন্ন করতে হয়। মিত্রের নিমিত্ত অখণ্ডিত তণ্ডলৈ নিষ্পন্ন চরু প্রদান কর্তব্য। এই স্থলে মন্ত্র ইত্যাদি ব্যতিরেকে বেদি (স্বয়ংকৃত), শাস্ত্রীয় ইন্ধন ইত্যাদি রহিত দর্ভ ও কাষ্ঠ (ইন্ধন) সংগ্রহ কর্তব্য। এই স্থলে দক্ষিণস্বরূপ সেই শ্বেতগাভীটি অর্থাৎ যার দুগ্ধ দোহন করা হয়েছে, সেইটিকে প্রদান করা কর্তব্য ॥৯॥ ।
[সায়ণাচার্য বলেন-দশমে দেবসুবাং হবীংযুচ্যন্তে। অর্থাৎ দশম অনুবাকে দেবগণের উদ্দেশে হবিঃ নির্বপণের বিষয় উক্ত হয়েছে]
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নয়ে গৃহপতয়ে পুরোডাশমষ্টাকপলং নিৰ্বপতি কৃষ্ণানাং ব্রীহীণাং সোমায় বনস্পতয়ে শ্যামাকং চরুৎ সবিত্রে সত্যপ্ৰসবায় পুরোডাশং দ্বাদশ কপালমশূন্যাং ব্রীহীণাং রুদ্রায় পশুপতয়ে গাবীধুক চরুং বৃহস্পতয়ে বাচস্পতয়ে নৈবারং চরুমিায় জ্যেষ্ঠায় পুরোশমেকাদশকপালং মহাব্রীহীণাং মিত্রায় সত্যায়াহদানাং চরুৎ বরুণায় ধর্মপতয়ে যবয়ং চরুং সবিতা ত্বা প্রসবানাং সুবমগ্নিগৃহপতীনাং সোমা বনস্পতীনাং রুদ্রঃ পশূনা বৃহম্পতির্বাচামিন্দ্রো জ্যেষ্ঠানাং মিত্রঃ সত্যানাং বরুণো ধৰ্ম্মপতীনাং যে দেবা দেবসুবঃ স্থ ত ইমমামুয্যায়ণমনমিত্রায় সুবধ্বং মহতে ক্ষত্রায় মহত আধিপত্যায় মহতে জানরাজ্যয়ৈৰ বো ভরতা রাজা সোমোস্মাকং ব্রাহ্মণানাং রাজা প্রতি ত্যন্নাম রাজ্যময়ি স্বাং তনুবং বরুণো অশিশ্রেছুচে ৰ্ম্মিস্য ব্ৰত্যা অভূমামহি মহত ঋতস্য নাম সৰ্ব্বে ব্ৰাতা বরুণস্যাভূবম্বি মিত্র এবৈররাতিমতারীসযুদস্ত যজ্ঞিয়া ঋতেন ব্যু ত্ৰিতত জরিমাণং ন আনবিষ্ণোঃ ক্রমোহসি বিষ্ণোঃক্রান্তমসি বিষ্ণোর্বিক্ৰান্তমসি ॥১০
মর্মার্থ- গৃহপতি অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। বনস্পতি সোমদেবের উদ্দেশে কৃষ্ণবর্ণ ব্রীহি (আশুধান্য) ও শ্যামাকের (শ্যামা ধান্যের) চরু প্রদান করতে হয়। অমোঘ অনুজ্ঞাকারী (আমোঘাভ্যনুজ্ঞানায়) সবিতার উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়। পশুপতি রুদ্রদেবের উদ্দেশে ব্রীহি অর্থাৎ আশুধান্যের তৃণযুক্ত চরু, বাচস্পতি বৃহস্পতিদেবের উদ্দেশে নবারের (উড়িধান্যের বা তৃণধান্যের) চরু, শ্রেষ্ঠ (জ্যেষ্ঠায়) ইন্দ্রের উদ্দেশে একাদশ কপাল স্থলবীজ-সম্পন্ন পুরোডাশ, সত্যস্বরূপ মিত্রের উদ্দেশে আম্বা নামক ধানবিশেষের চরু, ধর্মপতি বরুণের উদ্দেশে যবময় চরু নির্বপণ করতে হয়। হে যজমান! সকল কর্মে আদেশ প্রদানের নিমিত্ত সবিতা আপনাকে প্রেরণ করুন। সেইভাবে গৃহপালনের নিমিত্ত অগ্নি, বনের পালনের নিমিত্ত সোম, পশুগণের পালনের নিমিত্ত রুদ্র, বাক্য পালনের নিমিত্ত বৃহস্পতি, শ্রেষ্ঠ কর্ম পালনের নিমিত্ত ইন্দ্র, সত্য পালনের নিমিত্ত মিত্র ও ধর্ম পালনের নিমিত্ত বরুণ আপনাকে প্রেরণ করুন। হে দেবগণে! আপনারা যারা সৎ-বংশজাত যজমানের প্রেরণকর্তা, তাঁরা যজমানকে শত্রুরহিত করুন; মহৎ বলের নিমিত্ত, অপ্রতিহত আধিপত্যের সামর্থের নিমিত্ত, সার্বভৌমত্বের নিমিত্ত যজমানকে প্রেরণ করুন। হে ভরতবংশজ রাজবর্গ! আপনাদের বংশোদ্ভূত এই রাজা রাজসূয় যজ্ঞের অনুষ্ঠান করছেন। সোমদেব ব্রাহ্মণ আমাদের রাজা। এই মহৎ রাজ্য আমাতে প্রতিষ্ঠাপিত বোক, কারণ বরুণ আমার শরীরকে আশ্রয় করেছেন (তনুবমশিশ্রেদাশ্রিতবা। পবিত্র মিত্ৰদেবের অনুজ্ঞায় আমরা কর্মযোগ্য (ব্রাতাঃ) হবো, রাজসূয় যজ্ঞের অনুষ্ঠান করবো। সকল ঋত্বিক বরুণের অনুজ্ঞায় কর্মযোগ্য হয়েছেন। মিত্রদেব আমাদের রক্ষকরূপে আগমনপূর্বক আমরা যাতে বৈরিগণকে অতিলঙ্ঘন করতে পারি, তা করেছেন (বৈরিণমতিলয়ামস্তথাইকরো)। যজ্ঞীয় ঋত্বিকগণ যজ্ঞের দ্বারা রক্ষিত হয়েছেন (রক্ষিতবঃ)। ব্রাহ্মণ ইত্যাদি তিন বর্ণের দ্বারা বিস্তৃত (বিস্তা) আমাদের স্তুতি শ্রবণপূর্বক তার ফল প্রদান করুন। হে রথ! তুমি বিষ্ণুর ক্রম হও, তুমি বিষ্ণুর বিক্রম হও, বিষ্ণুর বিজয়ের ন্যায় তুমি সর্বলোকে অভিজয়ের কারণ হও॥১০৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন-একাদশেহভিষেকাৰ্থজলবিষয়া মন্ত্র উচ্যন্তে। অর্থাৎ~-এই একাদশ অনুবাকে অভিষেকের নিমিত্ত জল-বিষয়ক মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে।]
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- অর্থেতঃ স্থাপাং পতিরসি বৃষাসূৰ্ম্মিবৃষসেনোহসি ব্রজক্ষিতঃ স্থ মরুতামোজঃ সু সূৰ্য্যবসঃ স্থ সূৰ্য্যত্বসঃ ও মান্দাঃ স্থ বাশাঃ স্থ শকৃরীঃ স্থ বিশ্বভৃতঃ স্থ জনভৃতঃ স্থাগ্নেস্তেজস্যাঃ স্থাপামোষধীনাং রসঃ স্থাপপা দেবীৰ্মধুমতীরগৃহজ্জতী রাজসূয়ায় চিতানাঃ। যাভিৰ্মিত্রাবরুণাবভ্যষিঞ্চন্যাভিরিন্দ্রনয়ন্নত্যরাতীঃ। রাষ্ট্রদাঃ ২ রাক্টং দত্ত স্বাহা, রাষ্ট্রদাঃ স্বরাষ্ট্রমমুস্মৈ দত্ত ॥১১৷
মর্মার্থ- হে জল (সারস্বত্য)! তুমি প্রয়োজনের উদ্দেশ্যে নদী (সরস্বত্যা) হতে যজ্ঞদেশে গমন করা; তুমি জলসমুহের পতি, তোমাকে (বা ত্বদীয়ং জলং) গ্রহণ করছি। [সায়ণাচাৰ্যকৃত মন্ত্র-ব্যাখ্যায় জল অর্থে এখানে প্রাথমিকভাবে সরস্বতী নদীর জলকেই নির্দেশ করা হয়েছে। উপরে উল্লিখিত বন্ধনীকৃত শব্দগুলি সেই ধারণারই পরিপোষক। যেমন, তুমি জলসমূহের পতি-র ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সমুদ্রং কাঞ্চিদীং পুংনদং বা সম্বোধাপাং পতিরসীত্যুচ্যতে। অর্থাৎ সমুদ্র বা কাঞ্চি ইত্যাদির জলসমূহের পতি বা শ্রেষ্ঠ সরস্বতীর জল]। হে ঊর্মে (তরঙ্গ, বা তরঙ্গশালিনী)। তুমি সেচক হও (সেচকোহসি), জলরাশিরূপা সেচনক্ষমা সেনা তোমার আছে। হে কুপ্যা (জল)। ব্রজে অর্থাৎ গোষ্ঠবৎ নিবাসযোগ্য স্থানে তোমরা অবস্থান করে থাকো। হে প্রতীপগামিনী অর্থাৎ বিপরীত দিকে গমনকারিণী (জলরাশি)! তোমরা বায়ুর ন্যায় বলরূপা (অর্থাৎ বায়ুর আবর্তনে প্রতিহত হয়ে বিপরীতে গমন করে থাকো)। হে সূর্যের প্রতিবিম্বগ্রাহিণী জল! তোমরা সূর্যের ন্যায় তেজঃযুক্ত (অর্থাৎ সূর্যের প্রতিবিম্ব গ্রহণ করে তেজঃযুক্ত)। হে স্থাবরা (স্থিতিশীলা) জল! তোমরা এ মন্দগতিরূপা। হে নীহারগতা (ঘনীভূতা) জল! তোমরা বশীভূতা। হে জল! তোমরা শঙ্করীগর্ভ (অর্থাৎ নদীগর্ভ) রক্ষায় শক্ত হও। হে ক্ষীরগতা (দুগ্ধসদৃশ) জল! তোমরা বিশ্বকে ধারণ করে থাকো (অর্থাৎ দুগ্ধের দ্বারা যেমন প্রাণিজাত পুষ্ট হয়, তেমন)। হে দধিগতা (দধিসদৃশ) জল! তোমরা সকলকে পালন করো। হে ঘৃতদ্রবরূপা জল! তোমরা অগ্নির তেজঃস্বরূপা (অর্থাৎ অগ্নির তেজে দ্রবীভূত ঘৃতের ন্যায়) হও। হে মধুদ্ররূপা জল! তোমরা ওষধির রস-স্বরূপা হও। রাজসূয় যজ্ঞের নিমিত্ত ঋত্বিকগণ দীপ্যমানা, মধুমতী ও ঊর্জস্বতী (বলপ্রদা) তোমাদের গ্রহণ করেছেন। হে জল! পূর্বে দেবগণ তোমাদের দ্বারাই মিত্র-বরুণের অভিষেক করেছিলেন (মিত্রাবরুণাবভ্যষিঞ্চন), পুনরায় তারা শত্রুগণকে অতিক্রম পূর্বক ইন্দ্রকে আনয়ন করবার নিমিত্ত তোমাদের গ্রহণ করেছেন। হে জল! তোমরা রাষ্ট্র প্রদানকারী, যজমানগণকে রাষ্ট্র দান করো। স্বাহাকারান্তো রাষ্ট্রদা ইত্যাদি মন্ত্রে আমরা তোমাদের উদ্দেশে আহুতি প্রদান করছি। এই যজমানকে রাষ্ট্র দান করো ॥১১।
[সায়ণাচার্য বলেন-দ্বাদশ তজ্জলসংস্কারমন্ত্রা উচ্যন্তে। অর্থাৎ-পূর্ব অনুবাকে যে জলমন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে, এই দ্বাদশ অনুবাকে সেই জলের সংস্কার ইত্যাদি মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে।]
.
দ্বাদশ অনুবাক
মন্ত্র- দেবীরাপঃ সং মধুমতীৰ্মধুমতীভিঃ সৃজধ্বং মহি বৰ্চঃ ক্ষত্রিয়ায় বানাঃ অনাধৃষ্টাঃ সীতোর্জতীৰ্ম্মহি বৰ্চঃ ক্ষত্রিয়ায় দধতীঃ, অনিভৃষ্টমসি বাচো বন্ধুস্তপোজা সোমস্য দামসি শুক্রা বঃ শুক্রোণোৎপুনামি চন্দ্রাশ্চন্ত্রেণামৃতা অমৃতেন স্বাহা রাজসূয়ায় চিতানাঃ। সধমাদো দ্যুমিনীরূৰ্জ এতা অনিভৃষ্টা অপবো বসান। প্যাসু চক্রে বরুণঃ সধহুমপাং শিশুঃ মাতৃতমিস্বন্তঃ। ক্ষত্রসস্যামসি ক্ষত্রস্য যোনিরস্যাবিমো অগ্নিগৃহপতিরাবি ইন্দ্রো বৃদ্ধশ্রবা আবিঃ পূষা বিশ্ববেদা আবিগ্নৌ মিত্রাবরুণাবৃতাবৃধাবাবিন্নে দ্যাবাপৃথিবী ধৃতব্রতে আবিন্না দেব্যদিতির্বিশ্বরূপ্যাবিন্নোহয় মসাবামুয্যায়ণ্যেহস্যাং বিশ্যাস্মিল্লাষ্ট্রে মহতে ক্ষত্রায় মহত আধিপত্যায় মহতে জানারাজ্যায়েব বো ভরতা রাজা সোমোস্মাকং ব্রাহ্মণানাং রাজেন্দ্রস্য বজ্রোহসি বাত্রস্তয়াইয়ং বৃত্ৰং বধ্যাচ্ছবাধনাঃ স্থ পাত মা প্রত্যঞ্চং পাত মা তিৰ্য্যঞ্চমঞ্চংমা পাত দিভ্যো না পাত বিশ্বাভ্যো মা। নাস্ত্রাভ্যঃ পাত হিরণ্যবর্ণাৰুষসাং বিরোকেয়ঃস্থণাবুদিতৌ সূৰ্য্যস্যাহরোহতং বরুণ মিত্র গর্তং ততশ্চক্ষাথামদিতিং দিতিং চ ॥১২।
মর্মার্থ- হে জলদেবীগণ! নানা পাত্রের দ্বারা গৃহীতা আপনারা ক্ষত্রিয় রাজার নিমিত্ত মহৎ তেজঃ সম্পাদিত করে পরস্পর সংসাবিশিষ্ট হোন; আপনারা মধুরা, মধুরাগণের সাথে সংসর্গবিশিষ্ট হোন; আপনারা মধুরা, মধুরাগণের সাথে সংসর্গবিশিষ্টা হোন (মধুমতীমধুরা মধুমতীভিমধুরাভিঃ সহ)। হে জল (বা জলদেবীগণ)! অন্যের দ্বারা অ-তিরস্কৃত হয়ে বলবতী আপনারা রাজাকে মহৎ তেজঃ প্রদান পূর্বক অবস্থান করুন। হে হিরণ্য! তুমি যব ইত্যাদির ন্যায় বহ্নি-সংযোগেও অতিশয় সৃষ্ট (জলের উপসেক ব্যতীত বালুকা ও অগ্নিসংযোগ দ্বারা ভর্জিত অর্থাৎ ভাজা) হয়ো না; তুমি বাক্যের বন্ধু (বাচো বন্ধুরসি), হিরণ্যবৎ রাজা অমাত্যের বাক্য সকলে আদর করে (বার্বৈরাদ্রিয়তে)। তুমি সন্তপ্ত অগ্নি হতে জাত হয়েছ, তুমি সোমের ক্ৰয়াৰ্থে প্রদত্ত হওয়ার যোগ্য। হে জল! তুমি নির্মল (শুক্র), তোমাকে দীপ্তিমান হিরণ্যের সাথে পবিত্র করছি। উভয়ই আহ্বদকর অর্থাৎ চন্দ্রের সাথে (চন্দ্রময়) তোমাকে, অমৃতময় তোমাকে অমৃতের সাথে পবিত্র করছি; তুমি রাজসূয় যজ্ঞের নিমিত্ত সম্পাদিত হয়েছ। অতিহেযুক্তা মাতা যেমন পুত্রকে পালন করে, সেইরকম জলের পুত্র বরুণ গৃহস্থানীয় জলের দ্বারা পালিত হন। জলরাশি বরুণের সাথে একত্রে স্থিত হওয়ায় সেই জলরাশি আনন্দপ্রদা, দীপ্তা, বলহেতুভূতা, যব ইত্যাদির মতো ভর্জনযোগ্যা হয় না এবং কর্ম ইচ্ছা করে। হে ঘৃতাক্ত বস্তু! তুমি ক্ষত্রিয়ের আচ্ছাদন সদৃশ, তুমি যজমানের বলের কারণ। অগ্নি ইদানীং এই কর্মের দ্বারা গৃহপতিত্ব লাভ করেছেন, ইন্দ্র প্রবৃদ্ধকীর্তি লাভ করেছেন, পূষা বিজ্ঞান লাভ করেছেন, মিত্রাবরুণ সত্যবচনের বৃদ্ধি লাভ করেছেন, দ্যাবাপৃথিবী নিয়মের দ্বারা সর্বস্ব ব্যাপারুরূপ ব্রতধারণ লাভ করেছেন এবং দেবমাতা আদিতি দেবতারূপ বহুপুত্র উৎপাদনে সামর্থ্য লাভ করেছেন। আমাদের সম্মুখে (পুরতো) বর্তমান অমুকের (যজমান রাজার) পুত্র-পৌত্র এই যজমানের এই রাষ্ট্রে মহৎ বল, আধিপত্য ও প্রভুত্ব লাভ করেছেন। হে ভরতবংশজ রাজবর্গ, আপনাদের এই রাজা রাজসূয় যজ্ঞের অনুষ্ঠান করছেন। সোমদের ব্রাহ্মণ আমাদের রাজা। হে ধনু! তুমি ইন্দ্রের বজ্রের মতো প্রহার-সাধনক্ষম হও (বজ্রবৎ প্রহার-সাধনমসি), তোমার দ্বারা এই যজমান বৈরিকে বধ করুন। হে ইযুগণ (বাণরাশি)! তোমরা শত্রুগণের বাধক (প্রতিবন্ধক) হও; সম্মুখে, পার্শ্বে, পশ্চাতে কিংবা সকল দিক হতে আমার প্রতি আগত শত্রুর নিক্ষিপ্ত বাণ হতে আমাকে রক্ষা করো। কেবল বাণাঘাত নয়, সকল লোক হতে আগত বিনাশের কারণ হতেও আমাকে রক্ষা করো। হে বরুণ ও মিত্রদেব। আপনারা উষাশেষে সূর্যোদয়ে রথে আরোহণ পূর্বক হিরণ্যের ন্যায় দীপ্তিময় ও লৌহস্তম্ভের ন্যায় দৃঢ় যজমানের শনিবারক বামহস্ত এবং শত্রুমারক দক্ষিণ হস্ত রক্ষা করো। অতঃপর আপন সেনাকে অখণ্ডিত এবং পরসেনাকে (অর্থাৎ শত্রুসেনাকে) খণ্ডিত করণ–এই রকম অনুগ্রহ ও নিগ্রহ দৃষ্টিতে দর্শন করো (ক্ৰমেণানুগ্রহনিগ্রহদৃষ্ট্যা সমীক্ষেথা) ॥১২।
[সায়ণাচার্য বলেন-য়োদশে দিব্যাস্থাপনমন্ত্ৰা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে দিক-ব্যাস্থাপন মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে]
.
ত্রয়োদশ অনুবাক
মন্ত্র- সমিধ তিষ্ঠ গায়ত্রী ত্বা ছন্দসামবতু ত্রিবৃৎস্তোমো রথস্তরং সামাগ্নিদেবতা। ব্ৰহ্ম দ্রবিণমুগ্ৰামা তিষ্ঠ ত্রিষ্টুদ্বা ছন্দসামবতু পঞ্চদশঃ স্তোমো বৃহৎসামেন্দ্রো দেবতা ক্ষত্ৰং দ্রবিণং বিরাজমা তিষ্ঠ জগতী ত্বা ছন্দসামবতু সপ্তদশঃ তোমো বৈরূপং সাম মরুততা দেবতা বিৰিণমুদীচীমা তিষ্টানুষ্ঠুত্বা ছন্দসামবত্বে কবিংশঃ স্তোমো বৈরাজং সামমিত্রাবরুণেী দেবতা বল দ্রবিণমূৰ্দামা তিষ্ঠ পঙক্তিত্ত্বা ছন্দসামবহু ত্ৰিণবয়স্ত্রিংশেী স্তোমৌ শাররৈবতে সামনী বৃহস্পতি তো বর্চো দ্রবিণমীদৃঙ চান্যাদৃঙ চৈতাদৃঙ চ প্রতিদৃষ্ণ মিতশ্চ সংমিশ্চ সভরাঃ। শুক্ৰজ্যোতিশ্চ চিত্ৰজ্যোতিশ্চ সত্যজ্যোতিশ্চ জ্যোতিন্মাংশ্চ সত্যশ্চৰ্ত্তপাশ্চ অত্যংহাঃ। অগ্নয়ে স্বাহা সোমায় স্বাহা সবিত্রে স্বাহা সরস্বত্যৈ স্বাহা পুষ্ণে স্বাহা বৃহস্পতয়ে স্বাহেন্দ্রায় স্বাহা ঘোয় স্বাহা শ্লোকায় স্বাহাহংশায় স্বাহা ভগায় স্বাহা ক্ষেত্রস্য পতয়ে স্বাহা পৃথিব্যৈ স্বাহাহন্তরিক্ষায় স্বাহা দিবে স্বাহা সূৰ্য্যায় স্বাহা চন্দ্রমসে। স্বাহা নক্ষত্রেভ্যঃ স্বাহাহত্তঃ স্বাহৌষধীভ্যঃ স্বাহা বনস্পতিভ্যঃ স্বাহা চরাচরেভ্যঃ স্বাহা পবিপ্লবেভ্যঃ স্বাহা সরীসৃপেভ্যঃ স্বাহা ॥১৩
মর্মার্থ- প্রাচী (পূর্ব দিকে স্থিত তোমাকে ছন্দের মধ্যে গায়ত্রী ছন্দ, স্তোমের মধ্যে (স্তোম– স্তুতি বিশেষ) ত্রিবৃৎ স্তোম, সামের মধ্যে রথম্ভর সাম ও দেবগণের মধ্যে অগ্নিদেব রক্ষা করুন। ব্রাহ্মণ তোমার ধন রক্ষা করুন। দক্ষিণ দিকে স্থিত তোমাকে ছন্দের মধ্যে ত্রিষ্টুপছন্দ, স্তোমের মধ্যে পঞ্চদশ স্তোম, সামের মধ্যে বৃহসাম ও দেবগণের মধ্যে ইন্দ্রদেব রক্ষা করুন। ক্ষত্রিয় তোমার ধন রক্ষা করুন। প্রতীচী (পশ্চিম) দিকে স্থিত তোমাকে ছন্দের মধ্যে জগতী ছন্দ, স্তোমের মধ্যে সপ্তদশ স্তোম, সামের মধ্যে বৈরূপ সাম ও দেবগণের মধ্যে মরুৎ-দেবগণ রক্ষা করুন। বৈশ্যগণ তোমার ধন রক্ষা করুন। উদীচী (উত্তর) দিকে স্থিত তোমাকে ছন্দের মধ্যে অনুষ্টুপ ছন্দ, স্তোমের মধ্যে একবিংশ স্তোম, সামের মধ্যে বৈরাজ সাম ও দেবগণের মধ্যে মিত্রাবরুণ দেবদ্বয় রক্ষা করুন। বল তোমার ধন রক্ষা করুন (বলং দ্রবিণ। উর্ধ্বে অবস্থিত তোমাকে ছন্দের মধ্যে পঙক্তি ছন্দ, স্তোমের মধ্যে সপ্তবিংশ (ত্রিনব) ও ত্রয়স্ত্রিংশ স্তোম, সামের মধ্যে শাকর ও বৈরত সাম ও দেবগণের মধ্যে বৃহস্পতিদেবতা রক্ষা করুন। তেজঃ (বচ্চো) তোমার ধন রক্ষা করুন। অতঃপর ঈদ ইত্যাদি মরুৎ-বিশেষের নাম অনুসারে চতুর্দশ কপাল পুরোশ নির্বপণ কর্তব্য। যথা–হে প্রথম কপাল! তুমি ঈদৃক হও (তমীদৃঙচাসি এতন্নামকমেবাসি)….ইত্যাদি। এই চতুর্দশ মরুৎ, যথা ঈদৃক, অন্যাদৃ, এতাদৃক, প্রতিদৃক, মিত, সম্মিত, সভরা, শুক্ৰজ্যোতি, চিত্ৰজ্যোতি, সত্যজ্যোতি, জ্যোতিষ্মন, সত্য, ঋতপা ও অত্যংহা। (ঈদৃঙঙিত্যাদীনি মরুদ্বিশেষানাং নামধেয়ানি। তপেন ভাবিতত্বাৎ কপালানামপি তন্নাম)। অতঃপর আহুতি প্রদান; যথা–অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। এইভাবে সোম, সবিতা, সরস্বতী, পূষা, বৃহস্পতি, ইন্দ্র, ঘোষ, শ্লোক, অংশ, ভগ, ক্ষেত্ৰপতি (ক্ষেত্রস্য পতয়ে), পৃথিবী, অন্তরিক্ষ, দ্যুলোক (দিবে), সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র, জল (অদ্ভঃ), ওষধি, বনস্পতি, চরাচর, পরিপ্লব ও সরীসৃপগণের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি ॥১৩ ৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্দশেহভিষেক উচ্যতে। অর্থাৎ–এই চতুর্দশ অনুবাকে অভিষেক সম্পর্কে বলা হয়েছে।]
.
চতুর্দশ অনুবাক
মন্ত্র- সোমস্য ব্রিষিরসি তবে মে ত্বিষির্ভুয়াদমৃতমসি মৃত্যোর্মা পাহি দিদ্যোম্মা পাহ্যবেষ্টা দশুকা নিরস্তং নমুচেঃ শিরঃ। সোমো রাজা বরুণো দেবা ধৰ্ম্মসুবশ্চ যে। তে তে বাচং সুবন্তাং তে তে প্রাণং সুবন্তাং তে তে চক্ষুঃ সুবন্তাং তে তে শ্রোত্রম্ সুবন্তাং সোমস্য ত্বা দ্যুম্মেনাভি যিষ্ণাময়ে তেজসা সূর্যস্য বর্ডসেন্দ্রস্যেন্দ্রিয়েণ মিত্রাবরুণয়ো বীর্যেণ মরুতামোজসা ক্ষত্রাণাং ক্ষত্রপতিরস্যতি দিবম্পাহি সমাবৃত্ৰন্নধরাগুদীচীরহিং বুধিয়মনু সঞ্চরন্তীস্তাঃ পর্বতস্য বৃষভস্য পৃষ্ঠে নাবশ্চরন্তি স্বসিচ ইয়ানাঃ। রুদ্রে যত্তে ক্রয়ী পরং নাম তস্মৈ হুমসি যমেষ্টমসি। প্রজাপতে ন ত্বদেন্যন্যা বিশ্বা জাতানি পরি তা বড়ব। যক্কামাস্তে জুহুমমো অস্তু বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ীণাম ॥১৪৷
মর্মার্থ- হে শার্দুলচর্ম! তুমি সোমের দীপ্তি স্বরূপ, তোমার ন্যায় আমার দীপ্তি হোক। তুমি অমৃতস্বরূপ, আমাকে মৃত্যু হতে রক্ষা করো। বিদ্যুঞ্জপ আয়ুধ হতে আমাকে রক্ষা করো। দন্দশুক অর্থাৎ দংশনশীল সর্প ইত্যাদি প্রতিহত হয়েছে, নমুচি অসুরের শির বিনাশপ্রাপ্ত হয়েছে। যে সোম রাজা, যে বরুণ রাজা, অন্যান্য যে (গৃহপতি অগ্নিদেব ইত্যাদি) দেবগণ ধর্মের অনুমোদন করে থাকেন, তাঁরা সকলে তোমাকে বাক্য প্রদান করুন। এবং এইভাবে তারা তোমাতে প্রাণ, চক্ষু, শ্রোত্র ইত্যাদি যুক্ত করুন। হে যজমান! আপনাকে সোমের দীপ্তির সাথে অভিষিক্ত করছি, এইরকম অগ্নির তেজের সাথে, সুর্যের তেজের সাথে, ইন্দ্রের তেজের সাথে; মিত্রাবরুণের (মিত্র ও বরুণের) বীর্যের সাথে ও মরুৎগণের ওজস অর্থাৎ তেজঃ বা বলের সাথে আপনাকে অভিষিক্ত করছি। হে যজমান! আপনি ক্ষত্রিয়গণের পতি, দীপ্তিমান পার্থিবগণকে (রাজাগণকে) অতিক্রম পূর্বক পৃথিবী পালন করুন। যে জল লেপরূপে উর্ধ্বে ও অধে (নিম্নে) ক্ষরিত হচ্ছে (সুবন্তি), যা উত্তমাঙ্গ অর্থাৎ মস্তক হতে পাদের অগ্রভাগ পর্যন্ত সঞ্চারিত হয়, যা পর্বত সদৃশ (বিশাল) বর্ষণক্ষম মেঘের উপরে নদীতে নৌকার মতো বিচরণ করে, যা যজমানের ক্ষেত্রকে সিঞ্চিত করে (যজমানক্ষেত্ৰং সিঞ্চন্তীতি), সেই জল সর্বত্র ব্যাপ্ত আছে। হে রুদ্র! প্রতি যজ্ঞকর্মে আগ্নীপ্র অর্থাৎ অগ্নি রক্ষণে নিযুক্ত ঋত্বিক আপনার যে শর্ব, শিব, পশুপতি ইত্যাদি শ্রুতি প্রসিদ্ধ পরমোকৃষ্ট নামে জপ করেন, তা আপনিই; এই নাম যম কর্তৃকও পূজিত; আপনার সেই নামের উদ্দেশে এই জলরূপ হবিঃ আহুতি প্রদান করছি। হে প্রজাপতি! আপনি ব্যতীত অপর কোনও পুরুষ এই উৎপন্ন বিশ্বকে পরিভব করতে সমর্থ নন। অতএব, যে কামনায় আমরা এই যজ্ঞ করছি, আপনার প্রসাদে আমরা যেন তার ফল লাভ করি; ( আমরা যেন ধনের পতি বা পালক হই (বয়ং ধনানাং পতয়ঃ স্যাম) ॥১৪।
[সায়ণাচার্য বলেন-পঞ্চদশে রথেন বিজয়হভিধীয়তে। এই অনুবাকে রথের দ্বারা বিজয় বর্ণিত হয়েছে।]
.
পঞ্চদশ অনুবাক
মন্ত্র- ইন্দ্রস্য বজ্রোহসি বাত্রগ্নয়াহয়ং বৃত্ৰং বধ্যাত্ৰিাবুণয়োস্তা প্রশাস্ত্রোঃ প্রশি। যুনজি যজ্ঞস্য যোগেন বিষ্ণোঃ ক্রমোহসি বিষ্ণোঃ ক্রান্তমসি বিষ্ণোর্বিক্ৰান্তমসি মরুতাং প্রসবে জেষমাপ্তং মনঃ সমহমিন্দ্রিয়েণ বীৰ্য্যেণ পশূনাং মনুরসি তবে মে মোর্ভূয়াম্নমো মাত্রে পৃথিব্যৈ মাহহং মাতরং পৃথিবীং হিংসিষং মা মাং/ মাতা পৃথিবী হিংসীদিয়দস্যায়ুরস্যায়ুৰ্ম্মে ধে্যুৰ্গৰ্জং মে ধেহি যুঙঙসি বৰ্চোহসি বৰ্চো ময়ি ধেহ্যগ্নয়ে গৃহপতয়ে স্বাহা সোমায় বনস্পতয়ে স্বাহেন্দ্রস্য বলায় স্বাহা মরুতামোজসে স্বাহা হংসঃ শুচিযদ্বসুরন্তরিক্ষসদ্ধোতা বেদিষদতিথিদুরোণসৎ। বৃষরসদৃতসদ্বোমদলজা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতং বৃহৎ ॥১৫৷
মর্মার্থ- হে রথ! তুমি বৃঘাতী ইন্দ্রের বজ্রের মতো হও, তোমার সহায়তায় এই যজমান শত্রুগণকে বধ করুন। হে দক্ষিণ অশ্ব! তুমি আজ্ঞাকারী মিত্রাবরুণের প্রকৃষ্ট আদেশে (প্রশাসন) যজ্ঞের নিমিত্ত রথে যুক্ত হচ্ছে। তুমি ব্যাপনশীল দেবতার (বিষ্ণুর) প্রথম পাদবিক্ষেপের মতো ভূলোকজয়ী হও, দ্বিতীয় পাদবিক্ষেপের মতো অন্তরিক্ষজয়ী হও, তৃতীয় পাদবিক্ষেপের মতো স্বর্গলোকজয়ী হও। আমি মরুৎ-নামধারী দেবগণের অনুজ্ঞায় জয়লাভ করব। এই কর্মের দ্বারা আমি অভিমত (সামগ্রী) প্রাপ্ত হয়েছি। আমি ইন্দ্রিয় (অর্থাৎ হস্ত ইত্যাদি ইন্দ্রিয়গত সামর্থ্য) ও বীর্য লাভ করেছি। হে বরাহচর্মনির্মিত উপানৎ (পাদুকা)! তুমি পশুগণের ক্রোধস্বরূপ (মনুরূপাহসি), সেইরকম আমারও বৈরির প্রতি ক্রোধ সাত হোক। মাতা পৃথিবীতে নমস্কার, মাতা পৃথিবীকে যেন আমি হিংসা না করি; মাতা পৃথিবী ও যেন আমাকে হিংসা না করেন। হে রজতময় মণি! তুমি পরিমিত আয়ুস্বরূপ, অতএব আমার সেই পরিমাণ আয়ু দান করো। হে তাম্রময় মণি! তুমি বলস্বরূপ, অতএব আমাকে বল প্রদান করো। হে সুবর্ণময় মণি! তুমি তেজঃস্বরূপ, অতএব আমাকে কান্তি প্রদান করো। আমি গৃহপতি অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি; আমি বনস্পতি সোমের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি; আমি ইন্দ্রের বলের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি, আমি মরুৎ-গণের তেজের উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি। পরমাত্মা (হংস) শুচিযুক্ত স্থানে অবস্থিত থাকেন, তিনি র্বশ্রেষ্ট, তিনি হৃদয়রূপ অন্তরিক্ষে বিচরণ করে থাকেন, দেবগণকে আহ্বানকারী, যজ্ঞের নিমিত্ত বেদিতে অবস্থিত থাকেন, অতিথিসদৃশ সর্বত্রগতি, গৃহ ইত্যদিতে অধিষ্ঠিত, প্রাণিবর্গের শরীরে রাজমান, সর্বফলের ডোক্তা, সত্যে পরিনিষ্ঠিত, সকল রকম রক্ষণকর্মে অস্তিত্বমান, জলের উৎপাদনকর্তা, গো ইত্যাদি পশুগণকে অনুগ্রহ করবার জন্য উৎপন্ন, যজ্ঞের নিমিত্ত জাত (যজ্ঞার্থং জাতত্বাৎ), পর্বত ইত্যাদিতে (অর্থাল পাষাণসদৃশরূপে) জাত, তিনি সত্যরূপে বৃহৎ ব্রহ্ম ॥১৫৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–যোড়শে বিজয়াদুমাসন উপবিশ্য সর্বৈঃ সেবত্বং বর্ণতে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে বিজয়ের পরে ঊর্ধ্ব আসনে উপবিষ্ট সকলের সেবা বর্ণনা করা হয়েছে]
.
ষোড়শ অনুবাক
মিত্রোহসি বরুণোহসি সমহং বিশ্বৈৰ্দেবৈঃ ক্ষস্য নাভিরসি ক্ষত্রস্য যোনিরসি স্যোনামা সীদ সুষদামা সীদ মা ত্বা হিংসীমা মা হিংসীন্নি বসাদ ধৃতব্রতো বরুণঃ প্যাস্বা সাম্রাজ্যায় সুকতুব্রহ্মাহম্ভং রাজন ব্রহ্মাহসি সবিতাহসি সত্যসবো ব্ৰহ্মাহন্তং রাজন ব্রহ্মহসীন্দ্রোহসি সত্যৌজাঃ ব্ৰহ্মাহং রাজন্ ব্ৰহ্মহসি মিত্রোহসি সুশেবো ব্ৰহ্মাহং রাজন্ ব্ৰহ্মাহসি বরুণোহসি সত্যধৰ্ম্মেস্য বজ্রোইসি বায়স্তেন মে রধ্য দিশোহভ্যয়ং রাজাহভূৎ সুশ্লোকাঁ সুমঙ্গলাঁ সত্যরাজ। অপাং নপত্রে স্বাহোর্জো নপত্রে স্বাহাহগ্নয়ে গৃহপতয়ে স্বাহা ॥১৬
মর্মার্থ- হে দক্ষিণবাহু! তুমি মিত্র হও, অর্থাৎ মিত্রবৎ ইষ্টসাধক (অর্থাৎ প্রাপক) হও; হে বামবাহু! তুমি বরুণ হও অর্থাৎ বরুণের ন্যায় অনিষ্টনিবারক হও। আমি সর্ব দেবগণের সঙ্গ ইচ্ছা করি। হে চমপট (চর্মনির্মিত আসন)! উপবেশনের নিমিত্ত তুমি ক্ষত্রিয়ের নাভির ন্যায় মধ্যস্থানবর্তী (নাভিবন্মধ্যস্থানমসি) এবং মাতৃবৎ-ধারকত্বের নিমিত্ত ক্ষত্রিয়ের উৎপত্তিস্থল বা কারণ। হে মদীয় শরীর! সুখকর এই আসনের সমীপস্থ হও, সুখে উপবেশনের যোগ্য এই আসনে উপবিষ্ট হও। এই আসন তোমার (অর্থাৎ আমার শরীরের প্রতি) যেন হিংসা না করে, আমিও (অর্থাৎ শরীরের ধারণকর্তা) যেন এর হিংসা না করি। এই যজমান ধৃতব্রত হয়ে (অর্থাৎ যজ্ঞসাধনের উদ্দেশে) বরুণবৎ অনিষ্ট-নিবারক রূপে এই আসনে উপবেশন করেছেন। তিনি বহু বৈরিগৃহ হতে আগত হয়ে সাম্রাজ্যের (স্থাপনের) উদ্দেশে সম্যক সঙ্কল্পসিদ্ধ হোন। রাজা অধ্বর্যকে আহ্বান করলেন–হে ব্ৰহ্মণ (ব্রহ্ম)! এর প্রত্যুত্তরে অধ্বর্য বললেন–হে রাজন! আপনিই ব্রহ্ম (যজ্ঞীয় ঋত্বিকবিশেষ), আমি নই, কারণ সবিতার ন্যায় সকলের সকল অনুষ্ঠানের পালক অনুজ্ঞাতা আপনিই; আপনার আমোঘ শাসনে সকলই প্রবর্তিত হয়; বর্ণাশ্রম ধর্ম আপনারই অধীনত্বে পালিত, অতএব আপনিই ব্রহ্ম। রাজা পুনরায় ব্রহ্মকে আহ্বান করলেন-হে ব্ৰহ্মণ! তার প্রত্যুত্তরে ব্রহ্ম (ঋত্বিক) বললেন হে রাজন! আপনিই ব্রহ্ম, কারণ আপনিই ইন্দ্র অর্থাৎ পরমৈশ্বর্যবান হন এবং অমোঘ বীর্যশালীরূপে সকলকে নিয়ন্ত্রিত করেন। রাজা হোতাকে আহ্বান করলেন–হে ব্ৰহ্মণ! প্রত্যুত্তরে হোতা বললেন-হে রাজন! আপনিই ব্রহ্মা, কারণ আপনিই মিত্রদেব অর্থাৎ শিষ্টপরিপালক দেবের (মিত্রের) ন্যায় সকলের ত্রাণকর্তা ও সকলের দ্বারা সুষ্ঠু সেবার যোগ্য (সুষ্টু সেবিতুং যোগ্যোহসি)। রাজা উতাকে আহ্বান করলেন-হে ব্ৰহ্মণ! প্রত্যুত্তরে উদ্গাতা বললেন-হে রাজন! আপনিই ব্রহ্ম; কারণ আপনিই বরুণদেব অর্থাৎ বরুণদেবের ন্যায় অনিষ্টনিবারক ও সত্যধর্মা অর্থাৎ শাস্ত্রীয়-ধর্মযুক্ত। অতঃপর ব্রহ্মা (ঋত্বিক) রাজকে স্ক্য-নামক অস্ত্র প্রদান করে স্ক্য-য়ের উদ্দেশে বললেন-হে স্ক্য! তুমি বজ্রের তৃতীয়াংশ হতে উদ্ভূত, সুতরাং বিরোধীঘাতী বজ্রস্বরূপ। এর দ্বারা আমাদের শত্রুগণকে বিনাশ করো। এই যজমান রাজা উধ্বদিক সহ পঞ্চ দিককে পরাভূত করে সাম্রাজ্যপতি হোন। অতঃপর রাজা প্রার্থনা জ্ঞাপন করলেন–আমি যেন শোভন-শ্লোক অর্থাৎ স্তুতি-যোগ্য কীর্তিশালী হই; আমি যেন শোভন-মঙ্গল অর্থাৎ প্রজাগণের পক্ষে মঙ্গলদায়ক হই; আমি যেন সত্যশীল রাজা হই (সত্যস্যাবশ্যম্ভাবিনোহন্তঃপুরবক্ষণস্য স্বামী ক্ষত্তা সত্যরাজা)। আমি জলের পৌত্র (নপত্রে) অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি; আমি গৃহপতি অগ্নির উদ্দেশে স্বাহা মন্ত্রে আহুতি প্রদান করছি ॥১৬।
[সায়ণাচার্য বলেন-যোড়শে জিতবতো রাজ্ঞ ইতরসেব্যত্বরূপ উপচারো বর্ণিতঃ। সপ্তদশে সংস্পাং হবীংষি দশসংখ্যাকানি বিধীয়ন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে দশটি সংসৃপ হবিঃ নির্বপণের কথা বলা হয়েছে ]
.
সপ্তদশ অনুবাক
মন্ত্র- আগ্নেয়মষ্টাকপালং নিৰ্বপতি হিরণ্যং দক্ষিণা সারস্বতং চরুং বৎসতরী দক্ষিণা সাবিত্রং দ্বাদশকপালপধ্বস্তে দক্ষিণা পৌষ্ণম চরুং শ্যামো দক্ষিণা বাম্পত্যং চরুং শিতিপৃষ্ঠো দক্ষিণেন্দ্ৰমেকাদশকপালমৃষভো দক্ষিণা বারুণং দশকপালং মহানিরষ্টো দক্ষিণা সৌম্যং চরুং বভ্রর্দক্ষিণা ভ্ৰাষ্ট্ৰমষ্টাকপালং শুঠো দক্ষিণা বৈষ্ণবং ত্ৰিকপালং বামনো দক্ষিণা ॥১৭৷৷
মর্মার্থ- অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল হবিঃ নির্বপণ ও দক্ষিণায় হিরণ্য প্রদান কর্তব্য। দেবী সরস্বতীর উদ্দেশে চরু নির্বপণ ও দক্ষিণায় বৎসতরী অর্থাৎ বকন বাছুর (যে গোবৎসা স্তন্যপান করে, এমন) প্রদান কর্তব্য। সবিতাদেবের উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ ও দক্ষিণায় বিবর্ণ গাভী প্রদান কর্তব্য। পূষাদেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণ ও শ্যামবর্ণসম্পন্ন গাভী প্রাদন কৰ্ত্তব্য। বৃহস্পতিদেবতার উদ্দেশে চরু ও কৃষ্ণবর্ণ বা শুক্লবর্ণপৃষ্ঠ (শিতিপৃষ্ঠো) গো প্রদান কর্তব্য। ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ ও দক্ষিণায় ঋষভ (বৃষ) প্রদান কর্তব্য। বরুণদেবতার উদ্দেশে দশ কপাল হবিঃ ও দক্ষিণায় রুগ্ন (মহানিরষ্ট) গো প্রদান কর্তব্য। সোমদেবের উদ্দেশ্যে চরু নির্বপণ ও দক্ষিণায় পিঙ্গল অর্থাৎ নীলপীতমিশ্রিত গাভী প্রদান করতে হয়। বিশ্বকর্মার (তৃদেবের ) উদ্দেশে অষ্ট কপাল হবিঃ নির্বপণ ও দক্ষিণায় শুক্লবর্ণের (শুক্লকায়ঃ শুণ্ঠঃ) গাভী প্রদান কর্তব্য। বিষ্ণু দেবতার উদ্দেশে তিন কপাল হবিঃ নির্বপণ ও খর্বাকৃতি (বামনো) গাভী দক্ষিণাস্বরূপ প্রদান কর্তব্য ॥১৭।
[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টাদশে দশপেয় উচ্যতে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে দশটি বৈকৃত চমসে সোমরস পানরূপ দশপেয় নামে আখ্যাত যজ্ঞের বিষয় কথিত হয়েছে]
.
অষ্টাদশ অনুবাক
মন্ত্র- সদ্যো দীক্ষয়ন্তি সদ্যঃ সোমং ক্রীণন্তি পুণ্ডরিজাং প্র যচ্ছতি দশভিৎসতরৈঃ সোমং ক্ৰীণাতি দশপেয়ো ভবতি শতং ব্রাহ্মণাঃ পিবন্তি সপ্তদশং স্তোত্রং ভবতি প্রাকাশাবধ্বৰ্য্যবে দদাতি সুজমুদগাত্রে রুক্সং হোত্রেহশ্বং প্রস্তোতৃপ্রতিহতৃভ্যাং দ্বাদশ পষ্ঠেীহীব্ৰহ্মণে বশাং মৈত্রাবরুণায়ভং ব্রাহ্মণাচ্ছংসিনে বাসসী নেক্টাপোতৃভ্যাং সুরি যবাচিতমচ্ছাবাকায়ানড়াহমগ্নীধে ভার্গবো হোতা ভবতি শ্রায়ন্তীয়ং ব্রহ্মসামং ভবতি বারবত্তীয়মগ্নিক্টোমসামং সারস্বতীরপো গৃহাতি ॥১৮
মর্মার্থ- একই দিনে (সদ্যঃ-সমে অহনি) দীক্ষা ও সোমত্রয় করণীয়। (দীক্ষায় দ্বাদশটি) শ্বেতপদ্মের মাল্য যজমান-দেহে প্রদান করতে হয়। সোমক্রয়ের জন্য দশটি বসতরী (উপরতস্তনপানাঃ) প্রদান করতে হয়। যে যজ্ঞে এক একটি (একৈকস্মি) পাত্রে দশজন ব্রাহ্মণ সোম পান করেন, সেই যজ্ঞ দশাপেয় নামে অভিহিত। এই ভাবে এক এক পাত্রে দশ দশ করে মিলিত হয়ে শতসংখ্যক ব্রাহ্মণের সোম পান বিহিত। এইরকমে যজ্ঞে যত যত স্তোত্র হবে, সবগুলির স্তোম সপ্তদশ সংখ্যক। দক্ষিণাকালে অধ্বযুকে সুবর্ণ ও দর্পণ দান করতে হয়; উতাকে হিরণ্যের মাল্য দান করতে হয়; হোতাকে বর্তুলাকার সুবর্ণের অলঙ্কার দান করতে হয়; প্ৰস্তোতা ও প্রতিহর্তাকে অশ্ব দান করতে হয়; ব্রহ্মাকে দ্বাদশটি বালগর্ভিনী গাভী দান বিধি (বালগার্ভিনীনাং গবাং দানং বিধত্তে)। মিত্র ও বরুণকে বন্ধ্যা গাভী দান করতে হয়; ব্রাহ্মণাচ্ছংসীকে (যজ্ঞে ব্রাহ্মণগ্রন্থ-পাঠকারীকে) ঋষভ (রেতঃসেচনসমর্থস্য গোর্দানং) দান করতে হয়; নেষ্টা ও পোতা প্রত্যেককে দুটি বস্ত্র দান করতে হয়। অচ্ছাবাকের (অর্থাৎ যজ্ঞের সম্মুখভাগে অবস্থিত থেকে বাক্য উচ্চারণকারী ঋত্বিকের) জন্য যবপূর্ণ শকট দান কর্তব্য; অগ্নীধ অর্থাৎ যজ্ঞে অগ্নি প্রজ্বলনকারীকে শকটবাহী বলদ দান কর্তব্য। সেই যজ্ঞে হোতা হবেন ভার্গব, ব্রহ্মার শ্রায়ন্তীয় সামগান গীত হবে, অগ্নিষ্টোমের বারতীয় সামগান গীত হবে এবং সরস্বতী নদীর জল গ্রহণ করতে হবে–এটাই বিধি (সরস্বতীগতা এবাহপো বিধীয়ন্তে) ॥১৮
[সায়ণাচার্য বলেন–একোনবিংশে দিশামবেষ্টয়ঃ পশুদ্বয়ং সাত্যদূতানাং হবীংষি চ বিধীয়তে। অর্থাৎ এই অনুবাকে দিক্-আবেষ্টন ও হবিঃ নির্বপণের বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
উনবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নেয়মষ্টাকপালং নির্বপতি হিরণ্যং দক্ষিণেমেকাদশকপাল-মৃষভো দক্ষিণা বৈশ্বদেবং চরুং পিশঙ্গী পষ্ঠেীহী দক্ষিণা মৈত্রাবরুণীমামিক্ষাংশা দক্ষিণা বাম্পত্যং চরুং শিতিপৃষ্ঠো দক্ষিণাহদিত্যাং মহাং গর্ভিণীমা লভতে মারুতীং পৃশ্নিং পষ্ঠোহীমশ্বিভ্যাং পূষ্ণে পুরোশং দ্বাদশকপালং নিৰ্বপতি সরস্বতে সত্যবাচে চরুং। সবিত্রে সত্যপ্রসবায় পুরোশং দ্বাদশকপালং তিসৃধং শুষ্কদৃতিক্ষিণা ॥ ১৯।
মর্মার্থ- অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল হবিঃ নির্বপণ করণীয় ও দক্ষিণায় হিরণ্য প্রদান কর্তব্য। ইন্দ্রদেবের উদ্দেশে একাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ ও দক্ষিণায় বৃষ প্রদান কর্তব্য। বিশ্বদেবের উদ্দেশে চরু নির্বপণ করতে হয় এবং দক্ষিণায় পিঙ্গলবর্ণ বলদ দান করতে হয়। মিত্র ও বরুণদেবের উদ্দেশে আমিক্ষা (দুগ্ধ বিকার বা ছানা) নির্বপণ করতে হয় ও দক্ষিণায় বশা অর্থাৎ বন্ধ্যা গাভী দান করতে হয়। বৃহস্পতিদেবতার উদ্দেশে আমিক্ষা (দুগ্ধ বিকার বা ছানা) নির্বপণ করতে হয় ও দক্ষিণায় বশা অর্থাৎ বন্ধ্যা গাভী দান করতে হয়। বৃহস্পতিদেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণ করতে হয় ও দক্ষিণায় শ্বেতপৃষ্টযুক্ত গাভী দান করতে হয়। আদিত্যদেবতার উদ্দেশে গলস্তনযুক্ত ছাগী দান করতে হয়। মরুৎ-দেবগণের উদ্দেশে চরু নির্বপণ করতে হয়। আদিত্যদেবতার উদ্দেশে গলস্তনযুক্ত ছাগী দান করতে হয়। মরুৎ-দেবগণের উদ্দেশে চরু নির্বপন করতে হয় ও দক্ষিণায় শ্বেতবর্ণ বলদ দান করতে হয়; অশ্বিদেবদ্ধয় ও পূষাদেবতার উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয়, সরস্বন-নামক সত্যবাক দেবতার উদ্দেশে চরু নির্বপণ করতে হয়; অমোঘ অনুজ্ঞাকারী সবিতাদেবতার উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল পুরোডাশ নির্বপণ করতে হয় এবং দক্ষিণায় তিনটি বাণযুক্ত (বর্ণশালী) ধনু দান করতে হয় ॥ ১৯।
[সায়ণাচার্য বলেন–অর্থ বিংশে প্রযুজাং হবীংষ্যচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে প্রযুজা হবির দ্বারা যাগের বিষয় উক্ত হয়েছে।]
.
বিংশ অনুবাক
মন্ত্র- আগ্নেয়মষ্টাকপালং নিৰ্বপতি সৌম্যং চরুং সাবিত্রং দ্বাদশকপালং বাম্পত্যং চরুং ত্বাঈমষ্টাকপালং বৈশ্বানরং দ্বাদশকপালং দক্ষিণো রথবাহন- বাহে দক্ষিণা সারস্বতং চরুং নিৰ্ব্বপতি পৌষ্ণম চরুং মৈত্রং চরুং বারুণং চরুং ক্ষৈত্ৰপত্যং রুমাদিত্যং চরুমুওয়ো রথবাহনবাহে দক্ষিণা। ২০।
মর্মার্থ- অগ্নিদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হয়। সোমদেবের উদ্দেশে চরু, সবিতাদেবের উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল হবিঃ, বৃহস্পতিদেবতার উদ্দেশে চরু, ত্বদেবের উদ্দেশে অষ্ট কপাল হবিঃ, বৈশ্বানরে উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হয় এবং দক্ষিণায় দক্ষিণদিকে রথ বহনের নিমিত্ত যুক্ত বলদ প্রদান করতে হয়। সরস্বতী দেবতার উদ্দেশে চরু, পূষাদেবের উদ্দেশে চরু, মিত্র ও বরুণদেবতার উদ্দেশে চরু, ক্ষেত্রপালক দেবতার উদ্দেশে চরু ও আদিত্যদেবের উদ্দেশে চরু নির্বপণ করতে হয় এবং দক্ষিণায় উত্তর দিকে রথ বহনের নিমিত্ত যুক্ত বলদ প্রদান করতে হয় ॥২০।
[সায়ণাচার্য বলেন–একবিংশে সৌভ্রামণ্যা মন্ত্রাঃ পশবো হবীংষি উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে সৌভ্রামণি যাগের মন্ত্র, পশুসমূহ ও হবিঃ সম্পর্কে কথিত হয়েছে।]
.
একবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- স্বাদ্বীং ত্বা স্বাদুনা তীব্ৰাং তীব্রণামৃতামতেন সৃজামি সং সোমন সোমোহস্যশিভ্যাং পচ্যস্ব সরস্বত্যৈ পচ্যন্দ্রোয়। সুত্রামণে পচ্যস্ব পুনাতু তে পরিতং সোমং সূৰ্য্যস্য দুহিতা। বারেণ শশ্বতা না। বায়ুঃ পূতঃ পবিত্রেণ প্রত্যঙুসোমো অতিদ্রুতঃ। ইন্দ্রস্য যুজ্যঃ সখা! কুবিদঙ্গ যমস্তো যবং চিদ্যথা দাত্যনুপূৰ্ব্বং বিযুয় ইহেহৈযাং । কৃণুত ভোজনানি যে বহিষো নমোবৃক্তিং ন জম্মুঃ। আশ্বিনং ধূষমা লভতে সারস্বতং মেষমৈমৃষভমৈন্দ্ৰমেকাদশকপালং নির্বপতি সাবিত্র দ্বাদশকপালাং বারুণং দশকপালং সোমপ্রতীকাঃ পিতর-পণুত বড়বা দক্ষিণা ॥ ২১।
মর্মার্থ- হে সুরা! স্বাদু (মিষ্ট) তোমাকে স্বাদু রসের সাথে, তীব্রগন্ধশালী তোমাকে উগ্র গন্ধের সাথে, অমৃতময় তোমাকে অমৃতের সাথে সৃষ্টি করছি (সৃজামি)। তুমি সোমের ন্যায় প্রশংসনীয় হও; অশ্বিযুগল, সরস্বতী ও সামর্থ্যবান ইন্দ্রের নিমিত্ত পাকনিষ্পন্ন হও। হে ইন্দ্র! আপনার নিমিত্ত সূর্যের দুহিতা দ্রবীভূত সোমকে নিত্য শোধন করুন (শোধয়তু)। এই পবিত্রের দ্বারা (পবিত্রেণানেন) পূত সোম বায়ুবৎ শীঘ্রগামী হয়ে অধোবর্তী পাত্রাভিমুখে দ্রুত পতিত হচ্ছে। এই সোম ইন্দ্রের (বা আপনার) যোগ্য সখা। যেমন লোকে যব ইত্যাদি ধান্যযুক্ত (যবাদিধানন্যাপেতঃ) কৃষকগণ গোধুম, প্রিয়ংগু ইত্যাদি হতে যবকে পক ও অপক পৃথক করে, সেইরকম আপনারাও (অর্থাৎ অশ্বি, সরস্বতী, ইন্দ্র ইত্যাদি দেবগণও) নমস্কার ইত্যাদি রহিত নাস্তিক ও আস্তিক (অর্থাৎ নমস্কার ইত্যাদি সম্পন্ন) যজমানকে পৃথক করে যিনি আস্তিক বা শ্রদ্ধালু তার প্রদত্ত হবিঃ গ্রহণ করুন। দেব-ভিষক অশ্বিযুগলের উদ্দেশে ধূ, বাকের দেবী সরস্বতী উদ্দেশে মেষ, ইন্দ্রিয়-দেবতা ইন্দ্রের উদ্দেশে মেষ প্রদান করতে হয়। ইন্দ্রের উদ্দেশে একাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হয়; সবিতার উদ্দেশে দ্বাদশ কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হয় ও বরুণের উদ্দেশে দশ কপাল হবিঃ নির্বপণ করতে হয়। সোম-প্রমুখ পিতৃবর্গ এতে তৃপ্তি লাভ করুন। এই কর্মে দক্ষিণস্বরূপ বড়বা অর্থাৎ অশ্ব প্রদান করতে হয় ॥২১।
[সায়ণাচার্য বলেন–একবিংশে সৌভ্রামণীমুক্তা রাজসূয় সমাপিতঃ। দ্বাবিংশে কাম্যাযাজ্যা (পুরোনুবাক্যা) উচ্যন্তে। অর্থাৎ–একবিংশে সৌত্ৰামণি যাগের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজসূয় সমাপিত হয়েছে। দ্বাবিংশে মযাজ্যা ও পুরোনুবাক্যা কথিত হয়েছে।]
.
দ্বাবিংশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নাবিষ্ণু মহি তদ্বাং মহিত্বং বীতং ঘৃতস্য গৃহ্যানি নাম। দমদমে সপ্ত রত্না দুখানা প্রতি বাং জিহ্বা ঘৃতমা চরণ্যেৎ। অগ্নাবিষ্ণু মহি ধাম প্রিয়ং ৰাং বীথো ঘৃতস্য গৃহা জুষাণ। দমেদমে সুষ্টতীৰ্বাবৃনা প্রতি বাং জিহ্বা ঘৃতমুচ্চরণ্যেৎ। প্র নো দেবী সরস্বতী বাজেভিব্রাজিনীবতী। ধীনামবিবতু।। আ গো দিবো বৃহতঃ পর্বদা সরস্বতী যজতা গন্তু যজ্ঞ। হবং দেবী জুজুষাণা ঘৃতাচী শগাং নো বাচমুশতী শৃণোতু। বৃহস্পতে জুষ নো হব্যানি বিশ্বদেব্য।। রাস্তু রত্নানি দাশুষে। এবা পিত্রে বিশ্বদেবায় বৃষ্ণে যজ্ঞৈৰ্বিধেম নমসা হবিভিঃ। বৃহম্পতে সুপ্ৰজা বীরবন্তো বয়ং স্যাম পতয়ো রয়ীণ্য। বৃহম্পতে অতি যদৰ্যো অহামদ্বিভাতি ক্রতুজুনেযু। যদ্দীদয়চ্ছবসাপ্রজাত তদম্মাসু দ্রবিণং ধেহি চিত্র। আ নো মিত্রাবরুণা ঘৃতৈগতিমুক্ষত। মধ্বা রজাংসি সুক্ৰতু। প্র বাহবা সিস্তম জীবসে ন আ নো গন্যূতিমুক্ষতং ঘৃতেন। আ নো জনে বয়তং যুবানা শ্রুতং মে মিত্রাবরুণা হবেমা। অগ্নিং বঃ পূৰ্ব্বং গিরা দেবমীড়ে বসূনা।। সপৰ্য্যন্তঃ পুরুয়িং মিত্রং ন ক্ষেত্রসাধসম্। মক্ষু দেবতো রথঃ শুয়রী বা পৃৎসু কাসু চিৎ। দেবানাং য ইন্মনো যজমান ইয়ত্যভীদজ্বনো ভুবৎ। ন যজমান রিষ্যসি ন সুম্বন ন দেবয়ো। অসদ সুবীৰ্য্যমুত ত্যদাশিয়। নকিষ্ট কৰ্ম্মণা নশন্ন প্র যোষন্ন ঘোষিত। উপ ক্ষন্তি সিন্ধবো ময়োব ঈজানং চ যক্ষ্যমাণং চ ধেনবঃ। পৃণন্তং চ পপুরিং চ এবস্যবো ঘৃতস্য ধারা উপ যন্তি বিশ্বতঃ। সোমারুদ্ৰা বি বৃহতং বিষু চীমমীবা যা নো গায়মাবিবেশ। আরে বাধেথাং নিঋতিং পরাচৈঃ কৃতং চিদেনঃ প্র মুমুক্তমম্মৎ। সোমারুদ্ৰা যুবমেন্যষ্মে বিশ্বা তনুষু ভেষজানি ধৰ্তম্। অব স্যতং মুঞ্চতং যন্নে অস্তি তনুষু বদ্ধং কৃতমনো অস্মৎ। সোমাপূষণা জননা রয়ীণাং জননা দিবো জননা পৃথিব্যাঃ। জাতৌ বিশ্বস্য ভুবনস্য গোপাদে অকৃথমৃতস্য নাভি। ইমো দেবৌ জায়মানৌ জুষন্তেমৌ তমাংসি গৃহতামজুষ্টা। আভ্যামিঃ পকৃমামাস্বন্তঃ সোমাপুষভ্যাং জনদুশ্ৰিয়াসু ॥২২।
মর্মার্থ- হে অগ্নি ও বিষ্ণুদেব! আপনারা মহনীয় মহত্বের নিমিত্ত পৃথ্বীলোকে পুজিত। আপনারা ঘৃত-প্রতীক বস্তু (সপিরিত্যাদীনি) প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। আপনারা প্রত্যেকে যজমানগণের গৃহে গৃহে গমন করে সপ্তসংখ্যক রত্ন-সদৃশ জ্বালাবিশেষ ধারণ করে থাকেন, আপনাদের জিহ্বা ঘৃত পান করুক (পিবত্বিত্যৰ্থঃ)। হে অগ্নি ও বিষ্ণুদেব! আপনাদের প্রিয় ধাম অর্থাৎ যজ্ঞশালারূপ স্থান পূজনীয়। আপনারা ঘৃতের পুরোডাশ ভক্ষণ করে থাকেন। আপনারা সকল যজমানের গৃহে শোভন স্তুতি বর্ধন করে থাকেন (শোভনাঃ স্তুতিবদ্বয়ন্তৌ)। আপনাদের জিহ্বা ঘৃত পান করুক। অন্নপ্রদা, যজ্ঞবিষয়ে আমাদের বুদ্ধিসমুহের পালয়িত্রী দেবী সরস্বতী আমাদের অনুদানের দ্বারা রক্ষা করুন (রক্ষতু)। যজনীয়া (যষ্টব্য) সরস্বতী দুলোক হতে, বৃহৎ পর্বত হতে আমাদের যজ্ঞের প্রতি আগত হোন। সেইভাবে আগতা হয়ে আমাদের সুখপ্রাপিকা স্তুতিরূপ বাক্যসমূহ কামরমানা হয়ে শ্রবণ করুন। সেই দেবী আমাদের আহ্বানে সেবমানা হয়ে ঘৃত প্রাপ্ত হোন। হে সকল দেবগণের হিতকারী বৃহস্পতি! আপনি আমাদের হব্যসমূহ গ্রহণ করুন। হবিঃ-দানকারী (হবিত্তবতে) যজমানকে রত্নসমূহ দান করুন। হে বৃহস্পতি! পিতৃবৎ পালক, সর্বদেবতার গুরু, অভিমত ফলবর্ষণকারী আপনাকে বহুবিধ যাগ, ভক্তিপূর্বক নমস্কার ও আজ্য পুরোডাশ ইত্যাদির দ্বারা সর্বথা পরিচর্যা করব। আমরা আপনার প্রসাদে বীরবন্ত অর্থাৎ শোভন অপত্যযুক্ত হবো, ভৃত্যসম্পন্ন ও ধনসমূহের পতি হবো। হে বৃহস্পতি! রাজা অন্যকে অতিক্রম করে রত্ন ইত্যাদি যে ধন স্বয়ং প্রাপ্তির ইচ্ছা করেন, যা আমাত্য ইত্যাদি রূপ জনে ভূষণরূপে দীপ্তি প্রাপ্ত হয়, যা যজমানরূপ জনের যাগসাধনবৎ দীপ্তি পায়, পুনরপি যা (যে ধন) অন্নের বা বলের কারণ হয়ে সৈন্যরূপ জনকে দীপ্ত করে, হে সত্যপ্রব (ঋতপ্রজাত)! সেই অভিপ্রেত ধন আমাদের দান করুন। হে মিত্র ও বরুণদেব! আপনারা প্রভূত দুগ্ধ ঘৃত ইত্যাদির দ্বারা আমাদের গোষ্ঠস্থানসমূহকে সিঞ্চিত করুন, মধুর জলে সকলকে সিঞ্চিত করুন। হে মিত্র ও বরুণ দেবদ্বয়! আপনারা দুই জনে আমাদের জীবন রক্ষার নিমিত্ত ধনপূর্ণ বাহু সহ আমাদের সমীপে আগমন করুন। আপনারা আমাদের গাভীগুলিকে ঘৃতের দ্বারা সিঞ্চিত করুন। হে নিত্যযুবা মিত্র ও বরুণদেব! আমাদের জনসভায় (ব্রাহ্মণাদিযজমানসভায়াং) আপনারা আপনাদের বাহুবল স্থাপন করুন এবং আমাদের এই আহ্বান শ্রবণ করুন (শুনুত)। হে ঋত্বিক ও যজমান! আমরা ধনপ্রার্থী হয়ে আপনাদের নিমিত্ত প্রথমে আরাধিত অগ্নির উদ্দেশে স্তুতি করছি। সেই অগ্নি আমাদের পিতা-ভ্রাতা ইত্যাদি সুহৃদের ন্যায় আমাদের ক্ষেত্রের সাধক (ক্ষেত্রস্য সাধক)। যেমন কখনও সংগ্রাম প্রবর্তমান হলে যোদ্ধাগণ আপন দেহের বিষয় বিস্মৃত হয়ে পরসেনাকে হত্যা করবার নিমিত্ত ত্বরায় গমন করে, সেইরকমই দেবগণের উদ্দেশে যাগানুষ্ঠানের নিমিত্ত যজমানের মনোবৃত্তি রথের ন্যায় শীঘ্র গমন করছে (মনোবৃত্তিরয়া রথবচ্ছতীত্যর্থঃ); যে যজমান দেবতাগণের মনের প্রসন্নতা বাঞ্ছা করে পূজা করেন, তিনি (অর্থাৎ সেই যজমান) যাগরহিত পুরুষগণকে অভিভূত করেন (যাগরহিতা পুরুষানভিভুবদিদাভিভবত্যেব)। হে যজমান! আপনি যাগ করে হিংসিত হবেন না বা বিনাশ প্রাপ্ত হবেন না (ন বিনশ্যসি)। হে সোমযাজী! আপনিও হিংসিত হবেন না। পাকযজ্ঞ ইত্যাদির দ্বারা যাঁরা দেবগণের (প্রাপ্ত হতে ইচ্ছা করেন, তারা হিংসিত হন না। যাঁরা দেবগণের চিত্তপ্রসাদ কামনা করে পূজা করেন তারা অযাগশীল শত্রুগণকে বিনাশ করতে সমর্থ হন। এই যজমানের শোভনসামর্থ্য হোক এবং শীঘ্রগামী অশ্বের মতো শোভন বীর্য তোক (শোভনবীর্যমস্তু)। রাক্ষস ইত্যাদি যেন সেই যজমানকে বিনাশ করতে না পারে, যজ্ঞবিরোধী পাপ যেন যজমানের সাথে মিশ্রিত হতে না পারে, যজমানও যেন কোন পাপে মিশ্রিত হতে না পারেন। নদীসদৃশা সুখভাবা ধেনুগণ পূর্বে যাগানুষ্ঠানকারী ও পরে যাগানুষ্ঠানে রত হবেন এমন পুরুষগণের নিকটে আগমন করে বহুতর দুগ্ধ প্রদান করে (বহুতরং ক্ষীরং প্রযচ্ছত্তীত্যর্থঃ)। শ্রাদ্ধকর্মে পিতৃপুরুষগণের আনন্দবর্ধনকারী ও পিতৃবর্গের তৃপ্তিসাধনকারী অন্নযুক্ত ঘৃতের ধারা সর্ব দিকে হতে যজমানের নিকট প্রাপ্ত হয়। হে সোম ও রুদ্রদেব! যে রোগরূপা নিঋতি আমাদের শরীরে বা গৃহে আগত হয়েছে, সে যাতে নানা দিকে (নানাদি) পলায়ন করতে না পারে, সেইভাবে তাকে বিশেষভাবে উম্মলিত করুন; পরাঙ্খী সেই নিঋতিকে দুরে প্রেরণ করুন; সেই নিঋতি দ্বারা কৃত আমাদের রোগরূপ পাপ প্রকর্ষের সাথে মোচন করুন (প্রকর্ষেণস্মত্তো মোয়ত। হে সোমদেব ও রূদ্রদেব! সর্বলোকে যে সমস্ত ভেষজ আছে, আপনারা দুইজনে সেগুলিকে আমাদের শরীরে স্থাপন করুন। আমাদের শরীরে নিঋতিকৃত যে পাপ আছে, প্রথমে তাদের পৃথক করুন, তারপর তাদের বিনাশ করুন। হে সোমদেব ও পুষাদেবতা! আপনারা ধন, আকাশ (দিবো) ও পৃথিবীর জনক; আপনারা ভুবনে জামাত্র সকল প্রাণীর রক্ষক; আপনারা ঐতিক-আমুষ্মিক কর্মফলের দ্বারা সকলকে বন্ধনে কৃতবন্ত হয়েছেন। সকল দেববর্গ জায়মান এই দেবতাদ্বয়কে (সোম ও পূষার) সেবা করে থাকেন (সর্বে দেবা জায়মানাবিমৌ দেবৌ জুযন্ত সেবন্তে)। এই দেবতা দুজন অপ্রিয় অন্ধকার (অপ্রিয়াণি তমাংসি) বিনাশ করেন (বিনাশায়তা)। এঁদের সাথে মিলিত হয়ে ইন্দ্রদেব তরুণী গাভীতে (তরুণষু গোম্বন্তাত পক দুগ্ধ উৎপন্ন করেন (রসপোষকাভ্যাং পকং ক্ষীরং জনজ্জনয়তি)। এই মহাপ্রভাবী দেবতাদ্বয় রোগকে বিনষ্ট করে আমাদের শোভন করুন ॥ ২২৷৷
–প্রথম কাণ্ড সমাপ্ত —