প্রথম কাণ্ড। সপ্তম প্রপাঠক
প্রথম অনুবাক
মন্ত্র- পাকষজ্ঞং বা অম্বাহিতাগ্নেঃ পশব উপ তিষ্ঠ ইড়া খলু বৈ পাকঃ সৈহস্তরা প্রজানুযাজা যজমানস্য লোকেহবহিতা, তামাহ্রিয়মাণামভি মন্ত্রয়েত সুরুপবর্ষবর্ণ এহীতি পশবো বা ইড়া পশুনেবোপ হয়তে। যজ্ঞং বৈ দেবা অন্যজ্ঞোহসুরা অদুহত্তেহসুরা যজ্ঞদুগ্ধাঃ পরাহভবনন্যা বৈ যজ্ঞস্য দোহং বিদ্বান্ যজতেহপ্যন্যং যজমানং দুহে, সামে সত্যাহশীরস্য যজ্ঞস্য ভূয়াদিত্যাহৈ বৈ যজ্ঞস্য দোহস্তেনৈবৈনং দুহে প্রত্তা বৈ গৌড়ুহে প্রত্তেড়া যজমানায় দুহ এতে বা ইড়ায়ৈ না ইভোপহুতেতি বায়ুৰ্বৎসঃ যহি, হোতেমুপহুয়েত তহি যজমানো হোরমীক্ষমাণো বায়ুং মনসা ধ্যায়েৎ মাত্রে বংসমুপাবসৃজতি, সৰ্বেণ বৈ যজ্ঞেন দেবাঃ সুবর্গং লোকমায় পাকযজ্ঞে মনুরশ্রাম্যৎ সেড়া মনুমুপাবৰ্ত্তত তাং দেবাসুরা ব্যহ্য়ন্ত প্রতীচীং দেবাঃ পরাচীমসুরাঃ সা দেবানুপাবৰ্ত্তত পশব্যে বৈ তদ্দেবানবৃণত পশবোহসুরান জহুঃ, যং কাময়েতাপশুঃ স্যাদিতি পরাচীং তস্যড়ামুপহুয়েতাপশুরে ভবতি, যং কাময়েত পশুমাৎস্যাদিতি প্রতীচীং তস্যেমুপ হুয়েত পশুমানেব ভবতি। ব্রহ্মবাদিনো বদন্তি সত্বা উ ইড়ামুপহুয়াহআনমিড়ায়ামুপ হয়েতেতি সা নঃ প্রিয়া সুপ্রতুৰ্ত্তিৰ্ম্মমোনীত্যাহেড়ামেবোপহুয়াহআনমিয়ামুপ হয়তে, ব্যস্তমিব বা এতদৃযজ্ঞস্য যদি সামি প্রশ্নন্তি সামি মাৰ্জয় এতৎপ্রতি বা অসুরাণাং যজ্ঞো ব্যচ্ছিদাত ব্ৰহ্মণা দেবাঃ সমদধুবৃহস্পতিতামিমং ন ইত্যাহ ব্ৰহ্ম বৈ দেবানাং বৃহস্পতিব্রহ্মণৈব যজ্ঞং সং দধাতি, বিচ্ছিন্নং যজ্ঞং সমিমং দধাত্বিত্যাহ সন্তত্যৈ, বিশ্বে দেবা ইহ মাদয়স্তামিত্যাহ সন্তত্যৈব যজ্ঞং দেবেনভ্যাহনু দিশতি, যাং বৈ যজ্ঞে দক্ষিণাং দদাতি তামস্য পশবোহনু সংক্রমান্তি স এষ ঈজানোহপশু ভাবুকো যজমানেন খলু বৈ তৎকাৰ্য্যমিত্তাহুযথা দেবত্ৰা দত্তং কুব্বীতাহত্ন পশন রময়েতেতি, ব্ৰধু পিম্বস্বেত্যাহ যজ্ঞো বৈ ব্ৰধ্যে যজ্ঞমেব তন্মহয়্যথো দেবত্রৈব। দত্তং কুরুত আত্ন পশু রময়তে, দদতে মে মা ক্ষায়ীত্যাহা ক্ষিতিমেবোপৈতি কুৰ্ব্বতী মে মোপ দসদিত্যাহ ভূমানমেবোপৈত্তি ॥১॥ [সায়ণাচার্য বলেন–তত্র প্রথমেইনুবাক ইড়ানুমন্ত্রণমুচ্যতে। অর্থাৎ–এই প্রথম অনুবাকে ইড়ার অনুমন্ত্রণগুলি কথিত হয়েছে।
মর্মার্থ- আহিতাগ্নির পাকযজ্ঞের উদ্দেশে (আহিতাশ্নেঃ পাকযজ্ঞমনু) গো ইত্যাদি পশুবর্গ অবস্থিত থাকে। এই স্থানে ইড়াভক্ষণ পাকযজ্ঞ, অর্থাৎ ইড়াভক্ষণের দ্বারা পশুবৰ্গ লব্ধ হয় (অতোহনেপীড়াভক্ষণেন পশবো লভ্যন্তে)। ইহলোক যজমানের ফলসাধনে প্রযাজ ও অনুজের মধ্যে ইড়ার অনুষ্ঠান করতে হয় (অনুষ্ঠেয়ত্বৎ)। সেই ইড়া হোর সমীপে নীত হলে তুমি সুরূপ বর্ষবর্ণ, আগত হও–ইত্যাদি মন্ত্র উচ্চারিত হয়। ইড়াদেবতার পশুসাধনত্বের (গোরূপত্বের) উদ্দেশনায় মন্ত্রমধ্যে আগত হও পদে পশুকেই আহ্বান করা হয়। দেবগণ প্রথমে যজ্ঞের সারফল স্বীকার পূর্বক যজ্ঞের দোহন করেছিলেন (যজ্ঞমদুন্নদুহ), সেই যজ্ঞ অসুরবর্গকে দোহন করেছিল, তারপর তারা পরাভূত হয়েছিল। যে যজমান দেবগণ কর্তৃক যজ্ঞের রিক্তীকরণ বা যজ্ঞ কর্তৃক অসুরদের রিক্তীকরণ বা দোহন জ্ঞাত আছেন, তিনি অপর যজমানের রিক্তীকরণ বা দোহন করেন। (দোহনং রিক্তীকরণং)। এতে যজমানের কোনও ক্ষতি হয় না, কারণ এই যজ্ঞের ফল আমার প্রাপ্ত হোক–ইত্যাদি বাক্যে মন্ত্রের প্রশংসার দ্বারা তিনি যজ্ঞের আশিস লাভ করেন। এইটি যজ্ঞের দোহন, এইটির দ্বারা অন্য যজমানের দোহন করা হয়। গো-দোহনকালে প্রসুতস্তনী গাভী যখন বৎসের গাত্র লেহন করে, তখন যেমন দুগ্ধ ক্ষরিত হয়, সেইরকম ইড়া বৎসের গাত্র লেহন করতে থাকলে, যজমানের ফল দোহন হয়। সেই ইড়ার স্তন হলো ইডোপহুতে ইত্যাদি মন্ত্রভাগ, বৎস হলো বায়ু (বায়ুবৎস)। যখন হোতা ইড়াকে আহ্বান করেন, তখন যজমান হোতাকে ঈক্ষণ করে মনে মনে বায়ুকে ধ্যান করা মাত্রই দোহনের নিমিত্ত বায়ু মায়ের নিকটে বৎসকে প্রেরণ করেন। মনুর সাথে সর্ব দেবতা দর্শপূর্ণমাস যাগের দ্বারা স্বর্গলোক প্রাপ্তির উদ্যোগ করেছিলেন (স্বর্গলোকং প্রাপ্তমুদ্যতাঃ)। মনু পাকযজ্ঞের দ্বারা শ্রান্ত হন; ইড়া হলো পাক্যজ্ঞ–এমন উক্ত হয় (ইড়া খলু বৈ পাকযজ্ঞ ইত্যুক্ত। সেই ইড়াদেবতা মনুর নিকট উপগতা হয়। তা দর্শন করে দেবতা ও অসুরগণ পরস্পর বৈপরীত্যানুসারে তাকে আহ্বান করতে থাকেন। দেবগণ সম্মুখ দিক হতে (প্রতীচীং) আহ্বান করেছিলেন, সুতরাং ইড়া তাদের নিকট গমন করেছিল; অসুরগণ পশ্চাৎ দিক হতে আহ্বান করার জন্য ইড়া তাদের প্রতি বিমুখ (পরাচীন) হন, অর্থাৎ তাদের পরিত্যাগ করেছিলেন। পশ্চাৎ দিক হতে যারা আহ্বান করেছিল, তারা পশুলাভ করতে ব্যর্থ হয়েছিল, আর যারা সম্মুখ দিক হতে আহ্বান করেছিলেন, তারা পশু-প্রাপ্ত হয়েছিলেন (প্রাপ্তবঃ)। বেদার্থবিচারকবর্গ বলে থাকেন। যাঁরা বুদ্ধিমান তারা ইড়াকে সম্মুখ দিক হতে আহ্বান করে তাতে (অর্থাৎ ইড়াতে) আত্মা যোজনা করেন (তস্যামিড়ায়ামাত্মা মুপহুয়তে যোজয়তি); তারা যথাশাস্ত্র ইড়াকে আহ্বান করেন (যথাশাস্ত্রমুপহুয়েতিতি)। সেই ইড়া আমাদের প্রিয় ইত্যাদি বচনের দ্বারা ইড়াতে আপন আত্মা যোজিত করণীয়। ইড়ার ভাগরূপ পুরোডাশের অবশিষ্টাংশ (লেশ) ঋত্বিকগণ ভক্ষণ করেছিলেন, তার সামান্য জল শিরে সিঞ্চন করেছিলেন। এই কর্ম পূর্বে কৃত হওয়ার কারণে যাগ বিচ্ছিন্ন হয়; তার ফলে অসুরগণ অনুযাজ ইত্যাদি বিস্মৃত হয়ে যায়। দেবগণ সতর্কভাবে তা লক্ষ্য করেন। দেবগুরু বৃহস্পতি আমাদের এই যজ্ঞের বিস্তার সাধন করুন ইত্যাদি মন্ত্রে প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। ব্রহ্ম দেবগণের বৃহস্পতি, ব্রহ্মের দ্বারাই যজ্ঞ সম্পাদিত হয়। বিচ্ছিন্ন এই যজ্ঞ ব্রহ্ম সংযুক্ত করুন ইত্যাদি মন্ত্রে যজ্ঞের অবিচ্ছেদত্ব কামনা করা হয়েছে। সকল দেবতা এই যজ্ঞে তৃপ্তিলাভ করুন– ইত্যাদি মন্ত্র যজ্ঞের বিস্তৃতির জন্য উক্ত হয়েছে। যজমানের দ্বারা ঋত্বিকবর্গ গো ইত্যাদি দক্ষিণা দান করলে, সেই পশুগুলিও তাদের অনুগমন করে (তদীয়াঃ পশবঃ সর্বেইপ্যনুগচ্ছত্তি); তখন যজ্ঞের অনুষ্ঠাতা পশুরহিত হয়ে থাকেন (তদা যজ্ঞানুষ্ঠাতা চ পশুরহিতো ভবতি)। অতএব দেবতাকে উদ্দেশ করে ঋত্বিগণকে এমন দক্ষিণাদ্রব্য দান করতে হবে, যাতে পশুগুলি নিজেদেরই থাকে (যথা স্বস্মিন্নেব রমন্তে); যজমানের এমন কর্তব্যই বুদ্ধিমন্ত বলা হয় হে ব্ৰধু, তুমি প্রীত হও ইত্যাদি মন্ত্রে ব্ৰধু অর্থে যজ্ঞকে বোঝায় এবং সেই যজ্ঞের পূজার প্রোৎসাহের দ্বারা দেবতার উদ্দেশে দান করো এবং পশুগুলি নিজেদের তৃপ্ত করুক এই যথোক্ত প্রয়োজন দুটি সম্পাদিত হয়েছে। যজ্ঞে দান করলে, সেই দানের ক্ষয় হয় না–ইতাদি মন্ত্রে দানপ্রযুক্ত দ্রব্যক্ষয় নিবারণের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে (দানপ্রযুক্ত দ্রব্যক্ষয়ো মা ক্ষারীতি প্রার্থনেন ভবতি)। দানকারী আমার যেন ক্ষয় না হয়–এই মন্ত্রের উপক্ষয় নিবারণের জন্য অর্থাৎ অভিবৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। বাহুল্য হিসাবে এতে প্রার্থনাকারী ভূমাকে প্রাপ্ত হয় (বাহুলমেব প্রার্থতে ভূমানমেবোপৈতীতি) ॥১।
[সায়ণাচার্য বলেন–ইড়াদ্যমন্ত্রণমন্ত্রাঃ প্রথমে ব্যাখ্যাতাঃ। তামিড়াং দ্বিতীয়ে দ্বয়োর্মনোর প্রশ্নোত্তরাভ্যাং প্রশংসতি। অর্থাৎ–প্রথম অনুবাকে ইড়ার অনুমন্ত্রণের মন্ত্রগুলি ব্যাখ্যাত হয়েছিল। এই দ্বিতীয় অনুবাকে দুই মুনির প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সেগুলির প্রশংসা উক্ত হয়েছে।] ।
.
দ্বিতীয় অনুবাক
মন্ত্র- সংশ্রবা হ সৌবচ্চনসস্তুমিঞ্জমৌপোদিতিমুবাচ। যৎসত্ৰিণাং হোতাহভূঃ কামিড়ামুপাখা ইতি। তামুপাহু ইতি হোবাচ যা প্রাণেন দেবান্দার ব্যানেন মনুষ্যানপানেন পিতৃনিতি। ছিনত্তি সা ন ছিনত্তীতি। ছিনত্তীতি হোবাচ শরীরং বা অস্যৈ তদুপাহুথা ইতি হোবা গৌর্বৈ অস্যৈ শরীরং গাং বাব তৌ তৎপৰ্য্যবদতাং যা যজ্ঞে দীয়তে সা প্রাণেন দেবালাধার যয়া মনুষ্যা জীবন্তি সা ব্যানেন মনুষ্যান্যাং পিতৃভ্যো ঘন্তি সাহপানেন পিতৃন্ য এবং বেদ পশুমান্ ভবত্যথ বৈ তামুপাহু ইতি হোবাচ যা প্রজাঃ প্রভবন্তীঃ প্রত্যাভবতীত্যন্নং বা অস্যৈ তদুপাহুথা ইতি হোবাচৌষধয়ো বা অস্যা অন্নমোষধয়ো বৈ প্রজাঃ প্ৰভবন্তীঃ প্ৰত্যা ভবন্তি। য এবং বেদান্নদোভব্যথ বৈ তামুপান্তু ইতি হোবাচ যা প্রজাঃ পরাভবন্তীরনুগৃতি প্রত্যাভবন্তীহাতীতি প্রতিষ্ঠাং বা অস্যৈ তদুপাহুথা ইতি হোচেয়ং বা অস্যৈ প্রতিষ্ঠা ইয়ং বৈ প্রজাঃ পরাভবন্তীরনুগৃতি প্রত্যাভবন্তীৰ্গতি য এবং বেদ প্রত্যেক তিষ্ঠ্যথ বৈ তামুপাহু ইতি হোবাচ যস্যৈ নিক্রমণে ঘৃতং প্রজাঃ সঞ্জীবন্তীঃ পিবন্তীতি ছিনত্তি সা ন ছিনত্তী ইতি ন ছিনত্তীতি হোবাচ প্র তু জনয়তীত্যেষ বা ইড়ামুপাহুথা ইতি হোবাচ বৃষ্টিৰ্ব্বা ইড়া বৃষ্ট্যে বৈ নিক্রমণে ঘৃতং প্রজাঃ সং–জীবন্তীঃ পিবন্তি য এবং বেদ প্রৈব জায়তেহন্নাদো ভবতি ॥ ২॥
মর্মার্থ- সুবৰ্চনা ঋষির পুত্র সংশ্রবা নামধারী মুনি, উপদিত ঋষির পুত্র তুমিঞ্জ নামধারী মুনিকে প্রশ্ন করলেন, যজ্ঞকর্মে যখন আপনি হোতা হন, তখন কোন্ ইড়াকে (কোন গুণের কারণে) আহ্বান করেন? তুমিঞ্জের উত্তর, যে প্রাণবায়ুর দ্বারা দেবগণকে ব্যাণবায়ুর দ্বারা মনুষ্যবর্গকে এবং অপানবায়ুর দ্বারা পিতৃগণকে ধারণ করে, এমন গুণসম্পন্না ইড়াকে আহ্বান করি। (সংশ্রবার) পুনঃ প্রশ্ন,সে বিনাশ করে কি? অর্থাৎ আপনা কর্তৃক আহুতা এই গোরূপা ইড়া দক্ষিণাকালে প্রতিগ্রহীতাকে প্রতিগ্রহ দোষের জন্য বিনাশ করে কি না, এটাই প্রশ্নের বিচারার্থ। (তুমিঞ্জের) উত্তর, বিনাশ করে। প্রশ্নবাদী তখন এই ইড়ার দোষ বর্ণনা করে বললেন, তাহলে এই ইড়া মুখ্য ইড়া নয়। আপনি এই ইড়াদেবতার শরীরকেই আহ্বান করেছেন, সেই দেবতাকে নয় (ন তু সা দেবতা)। গাভী এই ইড়ার শরীর। ইড়ার শরীরভূত গাভীরূপকে জ্ঞাত হওয়ার জন্যই তার নিন্দা করা হচ্ছে। যজ্ঞে দক্ষিণারূপে যা দান করা হয়, তা প্রাণের দ্বারা দেবতাগণকে ধারণ করে। যজ্ঞে দক্ষিণারূপে দত্ত গাভী দেবগণকে তুষ্ট করে, তারা তার দোহন করেন না বা বিনাশ করেন না (ন তু তাং দুহস্তি নাপি ঘন্তি)। মনুষ্যগণ গাভী দোহনপূর্বক দুগ্ধ ইত্যাদির দ্বারা জীবন ধারণ করে। এই প্রাণ ও অপানের মধ্যবর্তী বৃত্তি ব্যানের দ্বারা মনুষ্যগণকে ধারণ করে। অপানের দ্বারা সেই গাভী অধমবৃত্তি অপানের দ্বারা (মারণরূপী হয়ে) পিতৃগণকে ধারণ করে। যিনি এইরূপ জ্ঞাত হন, তিনি পশুযুক্ত (পশুমা) হন। অনন্তর তুমিঞ্জ আপন আহূত ইড়ার অন্য গুণ প্রদর্শন করছেন–আমি সেই ইড়াকে আহ্বান করি যে প্রজাগণের (মনুষ্যগণের) প্রত্যাভিমুখে (সম্মুখে) অবস্থান করে। সংশ্রবা এই ইড়ারও মুখ্যত্ব নিবারণ করে দেখালেন–এই ইড়ার অন্নকে আপনি আহ্বান করেছেন। ওষধিসমূহ এই ইড়ার অন্ন; ওষধিসমূহ প্রভূতভাবে মনুষ্যগণের সম্মুখে থাকে। ওষধিসমূহ গাভীগণের খাদ্যরূপে প্রসিদ্ধ। প্রভূতরূপে মনুষ্যগণের গৃহে বহুজনের ভোজনের জন্য ব্রীহি ইত্যাদি ওষধি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। যিনি এইরূপ জ্ঞাত হন তিন অন্নের ভক্ষক হন। পুনরপি তুমিঞ্জ গুণান্তর উক্তির দ্বারা ইড়ার মুখ্যত্ব সম্পাদনের উদাহরণ দিলেন–আমি সেই ইড়ার আহ্বান করি, যে ইড়া পরাভূয়মান (পীড়িত) মনুষ্যগণকে পুষ্টি দানপূর্বক অনুগ্রহ করে, পীড়িত মনুষ্যগণ যাকে অপেক্ষিত স্থান প্রদান করে (অর্থাৎ অবলম্বন করে)। এইবার ইড়ার পীড়াহীনতারূপ মুখ্যত্ব নিরাকরণার্থে সংশ্রবা উক্তি করলেন–আপনি এই ইড়ার গোরূপের প্রতিষ্ঠাকেই আহ্বান করে থাকেন; গাভীরূপা ইড়ার প্রতিষ্ঠা যে ভূমি, আপনি সেই ভূমিকেই আহ্বান করে থাকেন, মুখ্য ইডাকে নয়। এই ভূমি হলো গাভীরূপা ইড়ার প্রতিষ্ঠার স্থান, যা পীড়িত মনুষ্যগণকে পুষ্টি প্রদান করে এবং মনুষ্যগণ যাকে আশ্রয় করে। যিনি এইরকম জ্ঞাত আছেন, তিনি প্রতিষ্ঠিত হন (প্রত্যেব তিষ্ঠতি)। অতঃপর মুখ্যত্ব সম্পাদনের নিমিত্ত (তুমিঞ্জের) উক্তি–আমি সেই ইড়ার আহ্বান করি যার নিষ্ক্রমণে মনুষ্যগণ ঘৃত পান করে সঞ্জীবিত হয়ে থাকে। বৃষ্টিরূপ ইড়ার নিক্রমণে ক্ষরিত জল গ্রহণ পূর্বক মনুষ্যগণ জীবিত থাকে; আমি সেইরকম ইড়াকে আহ্বান করে থাকি (তাদৃশীমিড়ামুপহুতবানস্মি)। পূর্বের মত ইড়ার দোষভাবে ভাবিত হয়ে পুনরায় সংশ্রবা প্রশ্ন করলেন–সেই ইড়া বিনাশ করে কিনা। গাভী, অন্ন, ভূমি–এইগুলির প্রতিগ্রহ দোষ আছে, কিন্তু বৃষ্টিরূপ ইড়ার গ্রহণে সেই দোষ আছে কিনা এইটিই জিজ্ঞাস্য। প্রতিগ্রহদোষাভাব প্রদর্শনের নিমিত্ত ইড়ার গুণান্তরে তুমিঞ্জু উক্তি করলেন, না বিনাশ করে না; এই ইড়া কোনও পুরুষকে বিনাশ করে না; কোনরকম দোষদান করে না, কিন্তু প্রকর্ষের সাথে শস্য ইত্যাদি উৎপন্ন করে। সংশ্রবা ইড়ার মুখ্যত্ব স্বীকারপূর্বক বললেন,–আপনি এই ইড়ার আহ্বান করুন; এই বৃষ্টিরূপা ইড়া বৃষ্টিপাতে জলদান করে। বৃষ্টির ফলে শস্য ইত্যাদির বৃদ্ধি ঘটে; তার ফলে সকলে জীবন ধারণ করে। যিনি এইরকম জানেন, তিনি অন্নের ভক্ষক হন।-এই অনুবাকে সর্বপ্রাণীর উপকারী গাভী, অন্ন, ভূমি ও বৃষ্টিরূপা ইড়ার প্রশস্তি করা হয়েছে (তদেবমস্মিন্ননুবাকে সর্বপ্রাণুপকারিভিগবান্নভূমিবৃষ্টিরূপৈরিয়মিড়া প্রশস্তা) ॥২॥
[সায়ণাচার্য বলেন–তৃতীয়েহহার্য উচ্যতে। এই তৃতীয় অনুবাকে অন্যহার্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। অনুকূলে আনয়ন করাকে অন্যহার্য বলা হয়।]
.
তৃতীয় অনুবাক
মন্ত্র- পরোক্ষং বা অন্যে দেবা ইজ্যন্তে প্রত্যক্ষমন্যে যদ্যজতে য এব দেবাঃ পরোক্ষমিজ্যন্তে তানেব তদ্যজতি যন্বহাৰ্য্যমাহরত্যেতে বৈ দেবাঃ প্রত্যক্ষং যব্রাহ্মণাস্তানেব তেন প্রীণাত্যথো দক্ষিণৈবাস্যৈ যাহথো যজ্ঞস্যৈ ছিদ্রমপি দধাতি যদ্বৈ যজ্ঞস্য ক্রং যদ্বিলিষ্টং তদাহাৰ্য্যোম্বারতি তদন্থাহাৰ্য্যস্যাম্বাহাৰ্য্যত্বং দেবদূতা বা এতে যদৃত্বিজো যদৰাহাৰ্য্যমাহরতি দেবদূতানেব প্রীতি প্রজাপতিদ্দেবেডভ্যা যজ্ঞৰ্য্যাদিশৎ স রিরিচানোহমন্যত স এতমন্বহাৰ্য্যমভক্তমপশ্যত্তমাত্মন্নধত্ত স বা এষ প্রজাপত্যো যদাহাৰ্য্যো যসৈবং বিদুষোহন্বাহাৰ্য্য আহ্রিয়তে সাক্ষদেব প্রজাপতিমৃত্যেপরিমিতো নিরুপোহপরিমিতঃ প্রজাপতিঃ প্রজাপতেঃ আপ্ত্যৈ দেবা বৈ যদ্যজ্ঞেহকুব্বত তদসুরা অকুৰ্বত তে দেবা এতং প্রাজাপত্যমন্বহাৰ্য্যমপশ্যতমন্বহরস্ত ততো দেবা অভবন পরাইসুরা যস্যৈবং বিদুষোহন্বাহাৰ্য্য আহ্রিয়তে ভবত্যাত্মানা পরাহস্য ভ্রাতৃব্যো ভবতি। যজ্ঞেন বা ইষ্টী পকেন পূৰ্ত্তী যস্যৈবং বিদুষোহৰাহাৰ্য্য আত্ৰিয়তে স ত্বেবেষ্টাপূর্তী প্রজাপতের্ভাগোহসি ইত্যাহ প্রজাপতিমেব ভাগধেয়েন সমৰ্দ্ধয়ত্যুজ্জান পয়নিত্যাহোর্জমেবাস্মিন্ পয়ো দধাতি প্রাণাপানৌ মে পাহি সামানব্যানৌ মে পাহীত্যাহাহশিষমেবৈমা শাস্তেহক্ষিতোহস্যক্ষিত্যৈ ত্ব মা মে ক্ষেষ্ঠা অমুত্রাষ্মিল্লোঁক ইত্যাহ ক্ষীয়তে বা অমুন্মিল্লোকেইন্নমিতঃ প্রদানং হ্যমুন্মিল্লোঁকে প্রজা উপজীবন্তি যদেবমভিমৃশত্যক্ষিতি মেবৈনাময়তি নাস্যামুন্মিল্লোঁকেহন্নং ক্ষীয়তে ॥৩॥
মর্মার্থ- দেবতাগণের উদ্দেশে পরোক্ষ যাগ এবং ঋত্বিৰ্গণের উদ্দেশ্যে প্রত্যক্ষ যাগ করা হয়। অগ্নি, ইন্দ্র ইত্যাদির অদৃশ্যমানত্বের কারণে তাদের যাগ পরোক্ষ যাগ। ঋত্বিগণের দৃশ্যমানতার কারণে তাদের যাগ পরোক্ষ যাগ। ঋত্বিগণকে অন্যহার্য অর্থাৎ ওদন বা সিদ্ধান্ন বা বাত প্রদান করতে হয. (দদ্যাৎ)। কারণ ব্রাহ্মণগণ প্রত্যক্ষ দেবতা, তাদের অনুদানের দ্বারা প্রীত করতে হয়। দক্ষিণারূপে অন্নদানের ফলে যজ্ঞের ছিদ্র পূর্ণ হয় (যজ্ঞস্যৈব ছিদ্রমপি দধাতি)। যজ্ঞের যা অতিরিক্ত এবং যা নন, এই উভয়ই অহার্য দামের দ্বারা সমাধা করা হয় (সমাদধাতি)। অনুকুলে আনয়ন করাকে অন্বহার্য বলা হয়। ঋত্বিগণের প্রীতিহেতুত্বের জন্য পুনরায় অন্যাহার্যের প্রশস্তি করা হয়েছে। ঋত্বিৰ্গণ হলেন দেবদূত তুল্য, তাদের অন্নদান করলে দেবদুতের তুষ্টি সাধিত করা হয়। প্রজাপতি অগ্নি ইত্যাদি দেবগণকে যাগ বিভাগ করে দিয়ে দেখলেন যে, তাঁর নিজের কোন ভাগ (পুরোডাশ) অবশিষ্ট নেই, তখন তিনি এই অন্যহার্যকে অবিভাজ্য দেখে তা নিজেতে স্থাপন করলেন (তমাতুনি স্থাপিতবা); সেই হতে অন্যহার্যকে প্রাজাপত্য বলা হয়ে থাকে। যাঁরা এই কথা জ্ঞাত হয়ে অন্নদান করেন, তাঁরা প্রজাপতির প্রীতি সাধিত করে থাকেন। সর্ব দেবগণের স্বামিত্বের জন্য, অর্থাৎ ব্যাপ্তি বা বাহুল্যের কারণে প্রজাপতির অপরিমিতত্ব। এই অহাৰ্য প্রজাপতির তৃপ্তি, আপন বিজয়েহেতুত্বের ও বৈরি-পরাজয়হেতুত্বের কারণ। দেবতাগণ যজ্ঞে যা করেছিলেন, অসুরগণও তা-ই করেছিল। দেবগণ প্রাজাপত্যনামে অভিহিত এই অহাৰ্য আহৃত করে জয় লাভ করলেন, অসুরগণ (তা না করে) পরাজিত হলেন। এইরকম জ্ঞাত হয়ে যিনি অহাৰ্য আহরণ করেন, তিনি বিজয় লাভ করেন এবং তার শত্রুবৰ্গ বিনাশ প্রাপ্ত হয়। যজ্ঞেন বা ইষ্টী অর্থাৎ যজ্ঞের দ্বারা ইষ্টী, ও পকেন পূর্তী অর্থাৎ পকের বা পক্ক অন্নের দ্বারা পূর্তী (ইচ্ছাপূরণ)–এইরকম জ্ঞাত হয়ে যিনি অহাৰ্য আহরণ করে থাকেন, তার ইষ্টাপূর্তী হয় (অর্থাৎ যজ্ঞ সম্পূর্ণ হয়)। আগ্নেয় (যাগানুষ্ঠান) ইত্যাদি শ্রৌতকর্ম ইষ্ট, পুষ্করিণী কুপ (প্রতিষ্ঠা) ইত্যাদি স্মার্তকর্ম পূর্ত। আগ্নেয় ইত্যাদি যাগানুষ্ঠানের দ্বারা ইষ্টসম্পত্তি (তত্রাইগ্নেয়াদিযাগেনেষ্টসম্পত্তিঃ) এবং পক অন্ন ইত্যাদির অর্থাৎ অদাহার্যের দ্বারা (দানের দ্বারা) পূর্তসম্পত্তি (পকেনাহার্যেণ পূর্তসম্পত্তিঃ) লব্ধ হয়। আপনি প্রজাপতির ভাগ হোন–ইত্যাদি মন্ত্রে অন্বহার্য দানে প্রজাপতির ভাগধেয়ের সম্যক্ বর্ধন করা হয়। অন্নবান, রসবান্ ইত্যাদি মন্ত্রে অন্যহার্যের বলবত্তার কথা বলা হয়েছে। প্রাণাপানৌ মে পাহি. অর্থাৎ আমার প্রাণ অপান সমান ব্যান রক্ষা করুন–ইত্যাদি মন্ত্রে ঋত্বিকগণকে অন্যহার্য দানপূর্বক আপন প্রাণ ইত্যাদি বায়ুর পালনরূপ আশীর্বাদ (স্বকীয়প্রাণাদিপালনমাশীৰ্বাদ) প্রার্থিত হয়েছে। হে অন্যহার্য! আপনি অক্ষয়, পরলোকে আমার ভোগের নিমিত্ত যেন ক্ষয় হবেন না–ইত্যাদি মন্ত্রে অন্বহার্য দানের দ্বারা অক্ষয় ফলপ্রাপ্তির বিষয় কথিত হয়েছে। স্বর্গের কর্মভূমিত্বের অভাবের নিমিত্ত সেখানে অন্নের উৎপত্তি হয় না অর্থাৎ অন্ন দানের সাধন সম্পাদিত হয় না। কিন্তু স্বর্গপ্রাপ্ত মনুষ্যগণ, সেই স্থানে (স্বর্গলোকে) ইহলোকে অনুষ্ঠিত কর্মের ফল ভোগ করছেন (উপজীবন্তি)। অতএব অক্ষিতোহসীতি মন্ত্রের দ্বারা এই লোকে অন্নদান করলে স্বর্গে অক্ষয় ফল প্রাপ্ত হওয়া যায় ॥৩॥
[সায়ণাচার্য বলেন–চতুর্থে শেষাহুতীনামনুমন্ত্রণমন্ত্ৰা ব্যাখ্যায়ন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে পূর্বোক্ত ষষ্ঠ প্রপাঠকের চতুর্থ অনুবাকে উক্ত শেষহুতির অনুমন্ত্রণ-মন্ত্রগুলি ব্যাখ্যাত হয়েছে।]
.
চতুর্থ অনুবাক
মন্ত্র- বহিষোহহং দেবযজ্যয়া প্রজাবান ভূয়াসমিত্যাহ বহিষ বৈ প্রজাপতি প্রজা অসৃজত তেনৈব প্রজাঃ সৃজতে নরাশংসস্যাহং দেবযজ্যয়া পশুমান ভুয়াসমিত্যাহ নরাশংসেন বৈ প্রজাপতিঃ পশনসৃজত, তেনৈব পশুৎ সৃজতেহগ্নেঃ স্বিষ্টকৃতোহহং দেবযজ্যয়াইয়ুস্মন্ যজ্ঞেন প্রতিষ্ঠাং গমেয় মিত্যাহাইয়ুরেবাহত্মন্ধত্তে প্রতি যজ্ঞেন তিষ্ঠতি দর্শপূর্ণমাসয়ো র্বৈ দেবা উজ্জিতিমনুদজয়ন্দপূর্ণমাসাভ্যামসুরানপানুদাগেরহমুজ্জিতিমনুজ্জেষমিত্যাহ দর্শপূর্ণমাসয়োরেব দেবতানাম যজমান উজ্জিতিমনূজ্জয়তি দর্শপূর্ণমাসাভ্যাং ভ্রাতৃব্যানপ নুদতে বাজবতীভ্যাং ব্যহত্যন্নং বৈ বাজোহন্নমেবাব রুন্ধে দ্বাভ্যাং প্রতিষ্ঠিত্যৈ যো বৈ যজ্ঞস্য দ্বেী দোহৌ বিদ্বান্ যজত উভয়তঃ এব যজ্ঞং দুহে পুরস্তাস্কোপরিষ্টাচ্চৈষ বা অন্যে যজস্য দোহ ইড়ায়ামনন্যা যৰ্হি হোতা যজমানস্য নাম গৃহীয়াত্তৰ্হি ব্রয়াদে অগ্নন্নাশিমো দোহকামা ইতি সংস্তুতা এব দেবতা দুহেহথো উভয়ত এব যজ্ঞং দুহে পুরস্তাস্কোপরিষ্টাচ্চ রোহিতেন ত্বহগ্নিৰ্দেবতা, গময়ত্বিত্যাহৈতে বৈ দেবাশ্বা যজমানঃ প্রস্তয়ো যদেতৈঃ প্রস্তরং প্রহরতি দেবাশ্বৈরেব যজমানং সুবর্গং লোকং গময়তি বি তে মুঞ্চামি রশনা বি রশ্মীনিত্যাহৈষ বা অগ্নেৰ্বিমোকস্তেনৈবৈনম বি মুঞ্চতি বিষ্ণোঃ শংযোরহং দেব্যজ্যয়া যজ্ঞেন প্রতিষ্ঠাং গমেয়মিত্যাহ যজ্ঞো বৈ বিষ্ণু এবান্ততঃ প্রতি তিষ্ঠতি সোমস্যাহং দেবযজ্যয়া সুরে রেতো ধিষীয়েত্যাহ সোমো বৈ রেতোধাস্তেনৈব রেত আত্মন্ধত্তে তৃষ্ঠুরহং দেবযজয়া পশূনাম রূপং পুষেয়মিত্যাহ ত্বষ্টা বৈ পশূনাং মিথুনানাং রূপকৃত্তেনৈব পশূনাং রূপমাত্মদ্ধত্তে দেবানাং পত্নীরগ্নিগৃহপতির্যজ্ঞস্য মিথুন তয়োরহং দেবযজ্যয়া । মিথুনেন প্ৰ ভূয়াসমিত্যাহৈতস্মাদ্বৈ মিথুনাৎ প্রজাপতিৰ্মিথুনেন প্রাজায়ত তস্মাদেব যজমানো মিথুনেন প্ৰ জায়তে বেদোহসি বিত্তিরসি বিদেয়েত্যাহ বেদেন রৈ দেবা অসুরাণাং বিত্তং বেদ্যমবিন্দত তদ্বেদস্য বেদত্বং যদ্যভ্রাতৃব্যস্যাভিধ্যায়েত্তস্য নাম গৃহীয়াত্তদেবাস্য সৰ্ব্বং বৃঙক্তে ঘৃতবন্তং কুলায়ি রায়ম্পোষং সহণিং বেদো দদাতু বাজিনমিত্যাহ প্র সহস্র পশূনাগ্নেত্যাহস্য প্রজায়াং বাজী জায়তে য এবং বেদ ॥৪॥
মর্মার্থ- বহিঁযোহহং দেব্যজ্যয়া প্রজাবা-ভূয়াসং.. অর্থাৎ বৰ্হি নামক দেবতার যাগের দ্বারা আমি প্রজাবান্ (বহু অপত্যশালী) হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে বলা হয়েছে, বহি নামক অগ্নির দেবযাগের অনুমন্ত্রণের দ্বারা প্রজাপতি প্রজাগণকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার দ্বারাই প্রজা সৃষ্টি করে থাকেন। নরাশংসস্যাহং…. অর্থাৎ নরাশংস নামক অগ্নির দেবযাগের দ্বারা আমি পশুযুক্ত হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে নরাশংস অগ্নির দেবযাগের অনুমন্ত্রণের দ্বারা প্রজাপতি পশুগণকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার দ্বারাই তিনি পশু সৃষ্টি করে থাকেন। স্বিষ্টকৃতোহহং… অর্থাৎ স্বিষ্টকৃৎ অগ্নির দেবযাগের অনুমন্ত্রণের দ্বারা প্রজাপতি আয়ুষ্মন হয়েছিলেন ও যজ্ঞের ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিলেন, অর্থাৎ এই মন্ত্রে আয়ু ও যজ্ঞের ফল লাভের কথা ব্যক্ত হয়েছে। দর্শপূর্ণমাস যজ্ঞের দ্বারা দেবগণ বিজয়প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং তার দ্বারা অসুরবর্গকে পরাভব করেছিলেন। হে অগ্নি! আমিও উৎকর্ষ লাভ করব–ইত্যাদি মন্ত্রে দর্শপূর্ণমাস যাগের দ্বারা জয়লাভ হয় এবং তার দ্বারা শত্রুদের বিনাশ সাধন সূচিত হচ্ছে। এই মন্ত্রে উজ্জিতি অর্থে উৎকর্ষ বা সম্পূর্ণতা বোঝায়। বাজস্য মা… অর্থাৎ ইন্দ্র অন্নের প্রসূতি-নিমিত্তে সুত বা সুচার উধ্বগ্রহণের দ্বারা আমাকে উৎকর্ষ প্রদান করেছেন ইত্যাদি মন্ত্রে বাজ শব্দের দ্বারা অন্নকে বোঝানো হচ্ছে। প্রকর্ষের দ্বারা স্থিতি অর্থের জন্য মন্ত্রের দ্বিত্ব হয়েছে (পদদ্বয়েনেব প্রকর্ষেণ স্থিত্যর্থং মন্ত্রদ্বিত্বমিত্যাহ)। যজ্ঞের দুটি দোহন জ্ঞাত হয়ে যাগ বিধেয়। উভয় ক্ষেত্রে পূর্বে ও পরে পৃথকভাবে যাগ করণীয়, একটি যজ্ঞের দোহন, অন্যটি ইড়ার দোহন। যখন হোতা যজমানের নাম গ্রহণ করবেন, তখন বলবেন, এই আশীর্বাদগুলি আমার প্রতি আগত হোক-ইত্যাদি এবং এই মন্ত্রে দর্শপূর্ণমাসের সকল দেবতার দোহন করবেন, এর পূর্বে ও পরে যজ্ঞের দোহন কর্তব্য।রোহিতেন ত্বাইগ্নিদেবতাং গময়তু হরিভ্যানং…. অর্থাৎ রোহিত নামক অশ্বের দ্বারা অগ্নি আমাদের দেবতাবৃন্দের নিকট গমন করান–ইত্যাদি মন্ত্রে যজমানবৎ যাগের সাধনত্ব বা প্রকরণ নির্দেশ পূর্বক যজমানের আরোপ করা হয়েছে। দেবগণের অশ্ববর্গের দ্বারা যজমানকে সুবর্গলোকে অর্থাৎ স্বর্গলোকে গমন করানো হচ্ছে। বি তে মুঞ্চামি রশনা বি রশ্মীন্থি যোত্ৰা… অর্থাৎ অশ্বের রঞ্জু প্রভৃতির মোচনের মতো, হে অগ্নি! আপনার বন্ধন মোচিত করছি–ইত্যাদি মন্ত্রে অগ্নির উদ্দেশে বলা হওয়ায় এটি অগ্নির বিমোক। বিষ্ণোঃ শংযোরহং দেব্যজ্যায়া.. অর্থাৎ বহুঁকার্যে ব্যস্ত বৃহস্পতির পুত্র শংযুর দেব্যাগের দ্বারা আমি যজ্ঞে প্রতিষ্ঠা লাভ করব–ইত্যাদি মন্ত্রে যজ্ঞই বিষ্ণু, তা সমাপ্তিকালে ফল প্রদান করে থাকে (অন্ততঃ সমাপ্তিকালে)। এই স্থলে ফলের ব্যাপ্তির কারণে যজ্ঞের বিষ্ণুত্ব কথিত হয়েছে (যজ্ঞস্য ফলব্যাপ্ত বিষ্ণুত্বম)। সোমোস্যাহং দেব্যজ্যয়া সুরে রেতো. অর্থাৎ সোমদেবতার উদ্দেশে দেব্যাগের দ্বারা আমরা অমোঘ বীর্য ধারণ করব–ইত্যাদি মন্ত্রে সোম রেতের ধারক। তার দ্বারা রেত ধারণ করব বলায় সোমকে রেতোধা বলা হচ্ছে। গর্ভাশয়ে রেত-ধারণ সোমের অনুগ্রহেই হয় (গর্ভশয়ে রেতোধারণং সোমস্যানুগ্রহাদ্ভবতি)। তৃষ্ঠুরহঃ দেব্যজ্যয়া… অর্থাৎ ত্বষ্টার (তথা বিশ্বকর্মার) দেবযাগের দ্বারা আমরা পশুগণকে (পশুগণের রূপ) পোষণ করব–ইত্যাদি মন্ত্রে দৃষ্টাকে পশুমিথুনের রূপস্রষ্টা (রূপকৃৎ) বলা হয়েছে, অর্থাৎ তিনি নিষিক্ত রেতকে পশু ইত্যাদির বিকার ঘটিয়ে থাকেন, ইত্যাদি উক্ত হয়েছে। (যাবচ্ছো বৈ রেতসঃ সিক্তস্য ত্বষ্টা রূপানি বিকরোতি)। দেবানাং পত্নীরগ্নিগৃহপসিযজ্ঞস্য… অর্থাৎ দেবগণের পত্নীবর্গ ও গৃহপতি অগ্নি মিলিত হয়ে যজ্ঞসম্বন্ধি মিথুনসদৃশ, তাদের উদ্দেশে দেবযাগের দ্বারা আমরা প্রকৃষ্টভাবে পুত্ৰপুত্রী লাভ করব ইত্যাদি মন্ত্রে বলা হচ্ছে যে, প্রজাপতি মিথুন হতে প্রজা লাভ করেছিলেন, সেইরকমে যজমানও মিথুন হতে প্রাপ্ত হন। বেদোহসি বিক্তিরসি বিদেয় কর্মাসি করুণমসি ক্রিয়াসং.. অর্থাৎ হে দর্ভময়! আপনি বেদ-নামক হন, আপনি দ্রব্য লাভের সাধন, আপনার প্রসাদে আমরা ধন লাভ করব–ইত্যাদি মন্ত্রে বোঝানো হয়েছে যে, দেবগণ অসুরবর্গের পূর্ব ও পরলব্ধ ধন যেস্থানে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল তা অবগত হয়েছিলেন। যার দ্বারা ধন জ্ঞাপিত হওয়া যায়, এই অর্থে বেদ শব্দের (বেদত্ব) নিষ্পন্ন হয়েছে। শত্রুগণের গৃহ ইত্যাদি সকল বস্তু আমি লাভ করব–ইত্যাদি মন্ত্রে যজমান সেই বস্তুগুলির নাম মন্ত্রের মধ্যে গ্রহণ করে সেই মন্ত্র পাঠ করবেন (মন্ত্ৰমধ্যে গৃহীত্বা বিদেয়েত্যেতৎপদং পঠেৎ)। এইজন্য মন্ত্রের শেষভাগে সহস্ৰ সংখ্যক পদের উচ্চারণ প্রশস্ত। ঘৃতবন্তং কুলায়িনং রায়স্পোষং সহনিং বেদো দদাতু বাজিন–অর্থাৎ হে বেদ! আপনি আমাকে ধনপুষ্টি দান করুন, আপনি আমাকে ঘৃত ইত্যাদি ভোজ্য-সাধনে সমৃদ্ধ করুন, নিবাসের হেতুভূত বহু গৃহ দান করুন, সহস্র লক্ষ ইত্যাদি সংখ্যোপেত ভোজ্য অন্নে সমৃদ্ধ করুন–ইত্যাদি মন্ত্রে সহস্র পশু প্রাপ্ত হওয়া যায়। যিনি এইটি জ্ঞাত আছেন তিনি সর্বতঃ পুত্র ও অন্নে সমৃদ্ধ হন (প্রজায়াং সন্ততৌ সর্বতঃ পুত্ৰোহন্নসমৃদ্ধো জায়তে) ॥৪॥
[সায়ণাচার্য বলেন–পঞ্চমে ত্বপ্যায়নাদিমন্ত্ৰা ব্যাখ্যায়ন্তে। অর্থাৎ–এই পঞ্চম অনুবাকে পূর্বোক্ত ষষ্ঠ প্রপাঠকের পঞ্চম অনুবাকের আপ্যায়ন ইত্যাদি মন্ত্রসমূহের ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে।]
.
পঞ্চম অনুবাক
মন্ত্র- ধ্রুবাং বৈ রিচ্যমানাং যজ্ঞোহনু রিচ্যতে যজ্ঞং যজমানো যজমানং প্রজা ধ্রুবামাপ্যায়মানাং যজ্ঞোই প্যায়তে যজ্ঞং যজমানো যজমানং প্রজা আ প্যায়তাং ধ্ৰুবা ঘৃতেনেত্যাহ ধ্ৰুবামেবাইপ্যায়য়তি তামাপ্যায়মানাং যজ্ঞোহ প্যায়তে যজ্ঞং যজমানো যজমানং প্রজাঃ প্রজাপতের্বিভান্নাম লোকস্মিংস্থা দধামি সহ যজমানেনেতি আহায়ং প্রবৈঃ প্রজাপতের্বিভান্নাম লোকস্মিন্নে–বৈনং দধাতি সহ যজমানেন রিচ্যত ই বা এতদ্যদ যজতে যদ যজমানভাগ প্রশ্নত্যানমেবীণাতি এতাবান্ধৈ যজ্ঞো যাবান যজমানভাগো যজ্ঞো যজমানো যদ্যজমানভাগংপ্রাশ্নাতি যজ্ঞ এব যজ্ঞ প্রতিষ্ঠাপয়ত্যেতদ্বৈ সুসং সোদকং যদ্বর্হিশ্চাহপশ্চৈত যজমানস্যাহয়তনং যদ্বেদির্যপূর্ণপাত্রমন্তৰ্বেধি নিনয়তি স্ব এবাহয়তনে সুষসং সোদকং কুরুতে সদসি সন্মে ভূয়া ইত্যাহাহপো বৈ যজ্ঞ আপোহমৃতং যজ্ঞমেমৃতমাত্মন্ধত্তে সৰ্বাণি বৈ ভূতানি ব্ৰতমুপয়মনুপ যন্তি প্রাচ্যাং দিশি দেবা ঋত্বিজো মাজ্জয়স্তামিত্যাহৈষ বৈ দর্শপূর্ণমাসয়োরবyথঃ যান্যেবৈনং ভূতানি ব্ৰতমুপয়ন্তমনূপয়ন্তি তৈরের সহাবভৃথমবৈতি বিষ্ণুমুখা বৈ দেবাচ্ছন্দোভিরিমান্নোকানপজয্যমভ্যজয় যদিষ্ণুমান্ ক্ৰমতে বিষ্ণুরের ভূত্বা যজমানচ্ছন্দোভিরিমাল্লোকানন- পজয্যমভি জয়তি বিষ্ণোঃ ক্রমোহস্যভিমাতিহেত্যাহ গায়ত্রী বৈ পৃথিবী ত্ৰৈষ্ঠুভমন্তরিক্ষং জাগতী দ্যেরানুষ্টভীৰ্দিশচ্ছন্দোভিরেবেমাল্লোকান্যথা- পূর্বমভি জয়তি ॥৫৷
মর্মার্থ- যজ্ঞের অসম্পূর্ণতার কারণে যজমানের পক্ষে যজ্ঞফল প্রাপ্তির অভাব ঘটে বলে তাঁর প্রজা (সন্তানসন্তুতি), অন্ন ইত্যাদির অভাব দেখা যায়; এবং যজ্ঞের পূর্ণতায় তার প্রজা ও অন্ন ইত্যাদির বৃদ্ধি ঘটে। প্রজাপতেৰ্বিভান্নাম… অর্থাৎ প্রজাপতি-সম্বন্ধিনি বিভান নামক এই ভূলোকে বা কর্মভূমিতে যজমানরূপী আমার সাথে তোমাকে (ধ্রুবাকে, পূর্ণপাত্রকে) স্থাপন করছি–ইত্যাদি মন্ত্রে বিভান শব্দের দ্বারা এই ভূলোককে বোঝানো হয়েছে, এই ভূলোক কর্মভূমি বলে প্রজাপতির বিভাগ নামক লোকে স্থাপন করার কথা বলা হয়েছে। এই বেদিতে হবিঃ ধারণের জন্য এটি যজমানের স্থান (যজমানস্থানত্ব), এই উচ্চ স্থানে বিস্তীর্ণ তৃণ ও জল বিদ্যমান। এই বেদির ও মধস্থেলে যে পূর্ণপাত্র স্থাপিত হয়, তা তৃণ ও জলের দ্বারা সমৃদ্ধ করতে হবে (তৃণসমৃদ্ধিং সোদকমুদকসমৃদ্ধিং চ কুরুতে)। সদসি সমে… অর্থাৎ হে পূর্ণপাত্র! তুমি শোভনস্বরূপ হও। অতঃপর আমাকে যজ্ঞফল প্রদানের দ্বারা আমার পক্ষেও সংযমন ইত্যাদি কার্যকারী হও–ইত্যাদি মন্ত্রে যজ্ঞ নিষ্পন্ন হওয়ার জন্য জলের যজ্ঞসাধনত্ব এবং জীবনদানের হেতুভূত হওয়ায় অমৃতত্ব অভিলক্ষিত হয়েছে। সেই যজ্ঞরূপ অমৃত আমি যেন ধারণ করতে পারি (স্বস্মিন্ধারয়তি)। সর্বানি বৈ ভূতানি ব্রতমুপয়ন্তমপন্তি… অর্থাৎ সকল প্রাণী যজ্ঞ দর্শন করতে আসে, পূর্বদিকে দেবতাভিমানী ঋত্বির্গ আমার যজ্ঞের শোধন করুন–ইত্যাদি মন্ত্রে দেবগণ পিতৃগণ ইত্যাদির মার্জন প্রতিপদনের দ্বারা সকলের সাথে অবyথ প্রাপ্তির কথা বলা হয়েছে। পূর্বকালে দেবগণ বিষ্ণুকে মুখ্য করে গায়ত্রী-ত্রিষ্টু-জগতী ইত্যাদি ছন্দ-অভিমানী দেবগণের সহযোগে অন্যের অজেয় লোকসমূহ জয় করেছিলেন, এই নিমিত্ত যজমান বিষ্ণুর ক্রম গ্রহণ করেন, তাতে তিনি বিষ্ণুর মতো সকল লোক জয় করেন। বিষ্ণোঃ ক্রমোহস্যভিমাতিহা… অর্থাৎ আপনি বিষ্ণুর ক্রম–ইত্যাদি মন্ত্রের অভিপ্রায় এই যে, গায়ত্রী ইত্যাদি ছন্দ-অভিমানী দেববর্গ পৃথিবী ইত্যাদি লোকের স্বামিত্বের জন্য তাদের সহযোগে সকল লোক জয় করতে সমর্থ ॥৫॥..
[সায়ণাচার্য বলেন–উপস্থানাদিমন্ত্ৰা ষষ্ঠে ব্যাখ্যায়ন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে পূর্বোক্ত ষষ্ঠ প্রপাঠকের ষষ্ঠ অনুবাকের উপস্থান ইত্যাদি মন্ত্রের ব্যাখ্যা উক্ত হয়েছে।]
.
ষষ্ঠ অনুবাক
মন্ত্র- অগন্ম সুবঃ সুবরগন্মেত্যাহ সুবৰ্গমেব লোকমেতি সদৃশস্তে মা ছিৎসি যত্তে তপস্তস্মৈ তে মাহবৃক্ষীত্যাহ যথাযজুরেবৈতৎ সুভুরসি শ্রেষ্ঠো রশ্মীনামায়ুৰ্দ্ধা অস্যায়ুৰ্ম্মে ধেহীত্যাহাহশিষমেবৈতাত্মা শাস্তে প্র বা এমোহশ্মল্লোকাচ্চাবতে যঃ বিষ্ণুক্রমা ক্ৰমতে সুবর্গায় হি লোকায় বিষ্ণুমাঃ ক্রমান্তে ব্ৰহ্মবাদিননা বদন্তি সে হৈ বিষ্ণুমান্ ক্ৰমেত য ইমাল্লোঁকা ভ্রাতৃব্যস্য সংবিদ্য পুনরিমং লোকং প্রত্যবরোহেদিতোষ বা অস্য লোস্য প্রত্যবরোহো যদাহেদমহমমুং ভ্রাতৃব্যমাভ্যো দিগভ্যোহস্যৈ দিব ইতীমানেব লোকান্ ভ্রাতৃব্যস্য সংবিদ্য পুনরিমং লোকং প্রত্যবরোহতি সং জ্যোতিষাহভূমিত্যাহাম্মিন্নেব লোকে প্রতি তিষ্ঠত্যৈন্দ্রীমাবৃতমন্ববৰ্ত্ত ইত্যাহাসৌ বা আদিত্য ইন্দ্ৰস্তস্যৈবাহবৃতমনু পর্যাবৰ্ত্ততে দক্ষিণা পর্যাবর্ততে স্বমেব বীৰ্য্যমনু পৰ্যবৰ্ত্ততে তস্মাদ্দক্ষিণোহৰ্দ্ধ আত্মনো বীৰ্য্যাবত্তাহথো আদিত্যস্যৈবাহবৃতমনু পৰ্য্যাবৰ্ত্ততে। সমহং প্রজয়া সং ময়া প্রজেত্যাহাহশিষ এবৈতামা শাস্তে সমিঘদ্ধা অগ্নে মে দীদিহি সমেদ্ধা তে অগ্নে দীদ্যাসমিত্যাহ যথাযজুরেবৈতদ্বসুমান্যজ্ঞো বসীয়ান ভূয়াসমিত্যাহাহশিষমেবৈতামা শান্তে বহু বৈ গাহপত্যস্যান্তে মিশ্রমিব চৰ্য্যত আগ্নিপাবমানীভ্যাং গার্হপত্যমুপতিতে পুনাত্যেবাগ্নিং পুনীত আত্মানং দ্বাভ্যাং প্রতিষ্ঠিত্যা অগ্নে গৃহপত ইত্যাহ যথাযজুরেবৈতচ্ছতং হিমা ইত্যাহ শতং ত্বা হেমন্তানিন্বিষীয়েতি বাবৈতদাহ পূত্রস্য নাম গৃহূত্যন্নদমেবৈনং কয়রাতি তামাশিষমা শাসে তবে জ্যোতিষ্মতীমিতি ব্ৰয়াদ্যসা পুত্রোহজাতঃ স্যাত্তেজস্ব্যোবাস্য ব্ৰহ্মবéসী পুত্রো জায়তে তামাশিষমা শাসেহমুষ্মৈ জ্যোতিষ্মতীমিতি ব্ৰয়াদ্যস্য পুত্রো জাতঃ স্যাত্তেজ এবাস্মিন ব্রহ্মবর্ডসং দধাতি যো বৈ যজ্ঞং প্রযুজ্য ন বিমুঞ্চত্যপ্রতিষ্ঠাননা বৈ স ভবতি কত্ত্বা যুক্তি স ত্বা বি মুঞ্চত্বিত্যাহ প্রজাপতির্বৈ কঃ প্রজাপতিনৈবৈনং যুক্তি প্রজাপতিনা বি মুঞ্চতি প্রতিষ্ঠিত্যা ঈশ্বরং বৈ ব্ৰতমবিসৃষ্টং প্রদহোহগ্নে ব্রতপতে ব্ৰতমচারিষমিত্যাহ ব্রতমেব বি সৃজতে শাস্ত্যা অপ্রদাহায় পরাবাব যজ্ঞ এতি ন নি বৰ্ত্ততে পুনর্যো বৈ যজ্ঞস্য পুনরালম্ভ বিদ্বান্যজতে মভি নি বৰ্ত্ততে যজ্ঞো বভূব স আ বভূবেত্যাহৈ বৈ যজ্ঞস্য পুনরালম্ভস্তেনৈবেনং পুনরা লভতেহনবরুদ্ধা বা এতস্য বিরাজ আহিতাগ্নিঃ সন্নসভঃ পশবঃ খলু বৈ ব্রাহ্মণস্য সভেষ্টাপ্রাঙৎক্রম্য ব্ৰয়াৰ্গোমা অগ্নেহবিমাং অশ্বী যজ্ঞ ইত্যব সভ্যাং রুন্ধে প্র সহস্রং পশুনাপোত্যাৎস্য প্রজায়াং বাজী জায়তে ॥৬৷৷
মর্মার্থ- অগন্ম সুবঃ সুবরগন্ম অর্থাৎ হে আহুনীয়! আপনার প্রসাদে প্রথমে কর্মফল ভোগের স্থান স্বর্গলোকে গমন করব–ইত্যাদি মন্ত্রে আদরের আধিক্যের কারণে দ্বিরুক্তি করা হয়েছে। এতে স্বর্গলোক অবশ্যই প্রাপ্ত হবো–এই কথাই প্রজ্ঞাপিত হয়েছে (দ্বিরুক্ত্যাহদরস্য প্রতীতেঃ সৰ্বৰ্থা প্রাপ্লেত্যেব)। সদৃশস্তে মা ছিৎসি যত্তে তপস্তস্মৈ তে মাহবৃক্ষি অর্থাৎ আপনার দর্শন হতে যেন বিচ্ছিন্ন না হই; আপনার নিমিত্ত যে তপস্যা আমরা সম্পাদিত করেছি, তার ফলস্বরূপ আপনার অনুগ্রহ হতে যেন বিচ্ছিন্ন না হই–ইত্যাদি মন্ত্রে তপঃ শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায়–এই যজুমন্ত্র হতেও যেন বিচ্ছিন্ন না হই–এমন প্রার্থনা করা হয়েছে! সুভূরসি শ্রেষ্ঠো রশ্মীনামায়ুৰ্ঘা অস্যায়ুৰ্ম্মে ধেহী অর্থাৎ হে আদিত্য! আপনি সুষ্ঠুভাবে উদিত হয়ে থাকেন, রশ্মিযুক্ত চন্দ্র ইত্যাদির মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ। আপনি আয়ুর স্থাপনকর্তা, আমাতে আয়ু স্থাপন করুন–ইত্যাদি মন্ত্রে আমাতে আয়ু স্থাপন করুন ইত্যাদি আর্শীবাদ প্রতীয়মান হয়েছে। যো বিষ্ণুক্রমা ক্ৰমতে… অর্থাৎ যিনি বিষ্ণু-ক্রমে পাদবিক্ষেপ করেন, তিনি এই লোক হতে স্বর্গলোকে গমন করেন ইত্যাদি মন্ত্রে বলা হচ্ছে– স্বর্গলোকের নিমিত্ত বিষ্ণুক্রম অনুসরণ করলে এই লোক হতে প্রচ্যুতি ঘটে। এই প্রচ্যুতি পরিহারের উপায়স্বরূপ ব্ৰহ্মবাদিগণ পরস্পর বলে থাকেন–যে যজমান এই লোকের বৈরিগণকে জয় করে বিষ্ণুক্রমের দ্বারা স্বর্গারোহণ করলে পুনরায় এই মনুষ্যলোকে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন, সেই যজমান বিষ্ণুক্রম বিষয়ে চতুর। ইদমহমমুং ভ্রাতৃব্যমাডভ্যা… অর্থাৎ যে শত্রু পৃথিবী ইত্যাদি লোকয়ে পূর্ব ইত্যাদি দিকে আমার বিরোধ আচরণ করে, আমার অন্ন জোরপূর্বক অপহরণ করে, আমি তাকে এই পৃথিবী ইত্যাদি লোক হতে অপসারিত করব–ইত্যাদি মন্ত্রে এই ভূলোকে প্রত্যাবর্তনের (বা অবতরণের) কথা ব্যক্ত হয়েছে। সং জ্যোতিষাহভুবম অর্থাৎ আমি আদিত্যের জ্যোতিঃর সাথে মিলিত হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে এই লোকে জ্যোতির সাথে সংগত হয়ে আমি প্রতিষ্ঠিত হবে–এটাই প্রতীয়মান হয়েছে। ঐন্দ্রিমাবৃতমন্ববৰ্ত্তে অর্থাৎ ইন্দ্রবৎ পরম ঐশ্বর্যযুক্ত আদিত্যের আবর্তনের আমি অনুবর্তন করছি–ইত্যাদি মন্ত্রে আদিত্য হচ্ছেন ইন্দ্র, তার আবর্তন আমি অনুসরণ করব। পরম ঐশ্বর্য ইত্যাদি যুক্ত হওয়ায় আদিত্যকে ইন্দ্র বলা হয়েছে (পরমেশ্বৰ্যযোগাদাদিত্যস্যেন্দ্ৰত্বম)। দক্ষিণ দিক হতে বামদিকে প্রদক্ষিণ করাই বিধান। পুরুষের দক্ষিণভাগে অতিশয় সামর্থ্য থাকার জন্য সেই দিক হতেই অনুবর্তন করা হয়। যেহেতু পুরুষের দক্ষিণভাগে অতিরিক্ত বীর্য বা শক্তি থাকে, সেইজন্য লোকেও সকল ব্যাপারে দক্ষিণ হস্তের বীর্যাতিশয় উপলভ্য (জ্ঞাপিত হয়। সমহং প্রজয়া সং ময়া প্রজা… অর্থাৎ আমি সন্ততিজনের সাথে সংগত (মিলিত) হবো; সেই সন্ততিজনেরাও আমার সাথে সংগত হোক–ইত্যাদি মন্ত্রে মন্ত্রোচ্চারক ও তার সন্ততি, উভয়ের মিলনের প্রার্থনা করা হয়েছে। সমিদ্বো অগ্নে… অর্থাৎ হে অগ্নি! আপনি এই সমিধের দ্বারা আমার নিমিত্ত দীপ্য হোন। আপনার দীপ্তকারী আমিও আপনার প্রসাদে দীপ্ত হবো–ইত্যাদি মন্ত্রে অগ্নিতে সমিধ প্রদান পূর্বক আপনিই দীপ্ত হবার প্রার্থনা করা হয়েছে। বসুমান্যজ্ঞো বসীয়াভূয়াস অর্থাৎ হে অগ্নি! এই যজ্ঞ আপনার প্রসাদে ধনযুক্ত হয়েছে; আমিও আপনার প্রসাদে তার অপেক্ষা অধিক ধনযুক্ত হবো।–ইত্যাদি মন্ত্রে অতিশয় ধনবান হবার প্রার্থনা জ্ঞাপিত হয়েছে। গৃহে বহুবিধ জন্তুর (পিপীলিকা ইত্যাদি বহু ক্ষুদ্র প্রাণীর) বিনাশজনিত পাতকের সম্ভাবনা থাকে। সেইজন্য যজমান হে অগ্নি! আমাকে দীর্ঘ আয়ু প্রদান করুন–ইত্যাদি মন্ত্রে গার্হপত্য অগ্নির সমীপে পাপক্ষয়ের নিমিত্ত হোম ইত্যাদি কর্ম অনুষ্ঠান করে অগ্নি ও পবমান দেবতার নিকট শুদ্ধ প্রার্থনা করে থাকেন। অগ্নে গৃহপতে সুগৃহপতিরহং… অর্থাৎ হে গৃহপতি অগ্নি! আপনার দ্বারা অনুগৃহীত হয়ে আমি সুগৃহপতি হবো। আপনি আমারূপী গৃহপতির দ্বারা পুজিত হয়ে সুষ্ঠু গৃহপতি হোন। শতসংবৎসরব্যাপী অগ্নিযাগ সম্পাদিত করে অনুৎপন্ন বহু পুত্র ইত্যাদির নিমিত্ত আপনার সেই উৎপত্তি প্রকাশের সামর্থ্যরূপ আশিষ আকাঙ্ক্ষা করছি–ইত্যাদি মন্ত্রে শতবৎসরব্যাপী পুত্র ইত্যাদির অন্ন লাভের ও অনুৎপন্ন (ভাবীকালে জন্মাবে, এমন) ব্রহ্মতেজঃসম্পন্ন পুত্র লাভের প্রার্থনা জ্ঞাপিত হয়েছে। যে পুত্র এখনও জন্মায়নি, তার নাম না থাকার জন্য সন্তান শব্দ এবং জাত পুত্রের সম্পর্কে তার নাম উল্লেখ কর্তব্য। (অজাতস্য পুত্রস্য বিশেষনামাভাবাত্তম্ভব ইত্যেদেব সামান্যনাম গৃহীয়াৎ..)। যিনি যজ্ঞ অনুষ্ঠিত করে তা বিসর্জন দেন না, তিনি সেই যজ্ঞের ফল প্রাপ্ত হন না। যিনি আপনাকে যুক্ত করেছেন, তিনি আপনাকে মুক্ত করবেন। প্রজাপতি যজ্ঞ যুক্ত করেছেন, সেই প্রজাপতি প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত আপনাকে মুক্ত করবেন ইত্যাদি যজ্ঞবিমোচক মন্ত্রে যজ্ঞ বিসর্জনের কথা উক্ত হয়েছে। ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্ট যে ব্ৰত গৃহীত হয়, তা বিসর্জন না করা হলে, তা যজমানকে প্রদগ্ধ করতে সমর্থ হয়; এইজন্য অগ্নে ব্রতপতে ইত্যাদি মন্ত্রপাঠের দ্বারা এই ব্রত বিসর্জন করতে হয়। তাহলে তা শীতল (বা শান্ত) হয় এবং দগ্ধ করে না। যজ্ঞ বিমুখ হলে আর নিবৰ্ত্তিত (প্রত্যাবর্তিত) হন না, কিন্তু পুনরালম্ভমন্ত্রবাদী যজমানের (অর্থাৎ পুনরালম্ভ মন্ত্র যিনি জ্ঞাত আছেন, এমন যজমানের) নিকট পুনরায় প্রত্যাবর্তিত হয়। যজ্ঞো বভুব …অর্থাৎ যজ্ঞ হয়েছিল-ইত্যাদি পুনরালম্ভ মন্ত্র পাঠ করলে যজ্ঞ পুনরায় লব্ধ হয় (পুনরালম্ভস্তেনৈবৈনং পুনরা লভতে)। যে যজমান অগ্নিকে আহিত করে তার সাথে সভারহিত হন (আহিতাগ্নিরপি স সভারহিতো ভবেৎ), তিনি অবরুদ্ধ হয়ে অস্বাধীন (স্বাধীনতাহীন) হন। এই স্থলে সভা অর্থে রাজার ন্যায় অমাত্য যোদ্ধা ইত্যাদি যুক্ত (রাজ) সভা নয়, সেইটি ব্রাহ্মণোচিত সভা, কারণ সেইটি যজ্ঞনিম্পাদক দ্বিপাদ ও চতুষ্পদ পশুসমূহ লাভের সভা। যজ্ঞ সম্পন্ন করে বলতে হয় (ক্ৰয়াৎ)–হে অগ্নি! আমি বহু গো, অবি, অশ্ব ইত্যাদি (সমৃদ্ধ) সভা লাভ করব। এর ফলে যজমান পশুবান ও অনুশালী পুত্রপৌত্র ইত্যাদি লাভ করে থাকেন ॥৬॥
[সায়ণাচার্য বলেন–ইখং ষট্নুবাকে্যু দার্শিযাজমানব্রাহ্মণশেষো বর্ণিতঃ। অথ দেব সবিতঃ প্র সুবেত্যাদিষু ষট্সু বাজপেয়বিষয়া আধ্বৰ্য্যমন্ত্ৰা উচ্যন্তে। তত্রাস্মিন্ সপ্তমেহনুবাকে রথবিষয়া মন্ত্রাঃ কথ্যন্তে। অর্থাৎ–এই অনুবাকে বাজপেয়-বিষয়ক মন্ত্রের রথের বিষয় কথিত হয়েছে।]
.
সপ্তম অনুবাক
মন্ত্র- দেব সবিতঃ প্ৰ সুব যজ্ঞং প্ৰ সুব যজ্ঞপতিং ভগায় দিব্যো গন্ধর্বঃ। কেতপূঃ কেতং নঃ পুনাতু বাচস্পতিৰ্বাচমদ্য স্বদাতি নঃ। ইন্দ্রস্য বজ্রেহসি বাত্রস্তুয়াহয়ং বৃত্ৰং বধ্যাৎ। বাজস্য নু প্রসবে মাতরং মহীমদিতিং নাম বচসা করামহে। যস্যামিদং বিশ্বং ভুবনমাবিবেশ স্যাং নো দেবঃ সবিতা ধৰ্ম্ম সাবিষৎ।। অপসু অন্তরমৃতমসু ভেষজমপামুত প্রশস্তিষশ্বা ভবথ বাজিনঃ। বায়ুৰ্ব্বা বা মনুৰ্ব্বা ত্বা গন্ধৰ্ব্বাঃ সপ্তবিংশতিঃ। তে অগ্রে অশ্বমাযুঞ্জন্তে অশ্বিঞ্জবমাহদখুঃ। অপাং নপাদাশুহেমন্য উৰ্ম্মিঃ ককুম্মা প্রতুৰ্ত্তিৰ্ব্বাজাসাতমন্তেনায়ং বাজং সেৎ। বিষ্ণোঃ ক্রমোহসি বিষ্ণোঃ ক্রান্তমসি বিষ্ণোৰ্বিক্রান্তমস্যকৌ ন্যাভিতোরথম যৌ ধ্বন্তং বাতাগ্ৰমনু সঞ্চরস্তৌ দূরেতেতিরিন্দ্রিয়াবান। পতত্রী তে নোহগ্নয়ঃ পয়ঃ পারয়ন্তু ॥৭৷৷
মর্মার্থ- হে সবিতা দেব! আপনি অন্তর্যামি হয়ে আমাদের বাজপেয় যজ্ঞের প্রবর্তন করুন; যজ্ঞপতিকে (যজমানকে) সৌভাগ্যানুষ্ঠানরূপ ঐশ্বর্যের জন্য প্রবৃত্ত করান। আপনি দিব্য, বৃষ্টির দ্বারা যজ্ঞের প্রবর্তক। আপনার অনুগ্রহে যে বায়ুদেব প্রাণিগণের জ্ঞানসমূহকে শোধন করেন, তিনি আমাদের জ্ঞানকে, পুনরায় শোধন করুন। আপনার অনুজ্ঞায় বাচস্পতি (বৃহস্পতি) এই কর্মে আমাদের বাজপেয় মন্ত্র দান করে সুমতি প্রদান করুন। হে রথ! তুমি ইন্দ্রের বৈরিঘাতী বজ্রতুল্য, তুমি বৃত্রের হননকারী; ইন্দ্র যে রথে আরোহণ করে বৃত্রাসুরকে বধ করেছিলেন, সেই রথ তুমি (স এব ত্বমসি)। তোমার সহকারিগণের সাথে এই যজমান (আমি) যজ্ঞের শত্রুগণকে বধ করব। অন্নের উৎপত্তির নিমিত্ত অন্নের নির্মাণকত্রী বেদিরূপা অদিতির (অর্থাৎ পৃথিবীর) আমরা স্তুতি করছি। যে পৃথিবীতে সকল ভূতজাত (প্রাণিগণ) প্রবিষ্ট হয়ে অবস্থান করছে, তাতে আমাদের ধারণকর্তা সবিতাদেব অনুমোদন করুন। জলে শরীর প্রক্ষালিত হয়। জলের মধ্যে অপমৃত্যুনিবারক ও লোগনিবারক সারপদার্থ আছে। হে অন্নবস্ত অশ্বগণ! জল-সম্বন্ধিনী প্রশংসা, যথা–অমৃতত্ব ভেষজত্ব সদৃশী অন্যান্য গুণবত্বও, তোমাদের হোক। তোমরাও তার মতো স্বভাব প্রাপ্ত হও। হে রথ! বায়ু মনু ও পঞ্চবিংশতিসংখ্যক গন্ধর্ব মিলিত হয়ে পূর্বে তোমাতে অশ্ব যোজিত করেছিলেন, আমিও তোমাকে যুক্ত করব। তারা (সেই অশ্বগণ) তোমাকে বেগযুক্ত করুক। হে অশ্ব! তুমি জলের পৌর এবং শীঘ্র গমনশীল। প্রধান ঊর্মি বা তরঙ্গ তোমার প্রতি গমন করছে। তুমি অন্নের দাতা, যজমানকে অন্ন দান করো। হে রথ! তুমি বিষ্ণুর ক্রমতুল্য (বিষ্ণুমামতে), বিষ্ণুর বিক্রমের ন্যায় জয়শীল তুমি, তুমি বিষ্ণুর বিজয়সদৃশ বিজয়ের কারণ স্বরূপ। রথের দুটি চক্র নিরন্তর ঘূর্ণিত হচ্ছে, সে দুটি শব্দযুক্ত ও বায়ুর পুরোদেশে সঞ্চরণ করছে (অর্থাৎ বায়ু অপেক্ষাও শীঘ্ৰতর গমনশীল হচ্ছে)। দুরে হেতি, ইন্দ্রিয়বান্ ও পতত্রী নামক অগ্নিক্রয় আমাদের কর্মযোগ্য করে তুলুন ॥৭॥
[সায়ণাচার্য বলেন–অষ্টমে রথস্য ধাবন মন্ত্ৰা বৰ্ণান্তে। অর্থাৎ–এই অষ্টম অনুবাকে পূর্বোক্ত মন্ত্রে উল্লেখিত রথের ধাবন-মন্ত্রগুলি বর্ণিত হয়েছে]
.
অষ্টম অনুবাক
মন্ত্র- দেবস্যাহং সবিতুঃ প্রসবে বৃহস্পতিনা বাজজিতা বাজং জেষং দেবস্যাহং সবিতুঃ প্রসবে বৃহস্পতিনা বাজজিতা বর্ষিষ্ঠাং নাক রুহেয়মিন্দ্রায় বাচং বদতেন্দ্রং বাজং জাপয়তেন্দ্রো বাজমজয়িৎ। অশ্বাজনি বাজিনি বাজেযু বাজিনীবত্যৎ সমসু বাজয়। অৰ্ব্বাহসি সপ্তিরসি বাজ্যসি বাজিনো বাজং ধাবত মরুতাং প্রসবে জয়ত বি যোজনা মিমীধ্বমধ্বনঃ স্কীতি কাষ্ঠাং গচ্ছত বাজেবাজেহবত বাজিনো নো ধনেষু বি অমৃতা ঋতজ্ঞাঃ। অস্য মধ্বঃ পিবত মাদয়ধ্বং তৃপ্তা যাত পথিভিযোনৈঃ। তে নো অৰ্বন্তো হবনশ্রুততা হবং বিশ্বে শৃন্বন্তু বাজিনঃ। মিতদ্রবঃ সহসা মেধতা সনিষ্যবঃ। মহো যে রত্নং সমিথেষু জভ্রিরে শং নো ভবন্তু বাজিনো হবে। দেবতাতা মিতদ্রবঃ স্বর্কাঃ। জয়ন্তোহহিং বৃকৎ রক্ষাংসি রক্ষাংসি সনেম্যম্মদয়বন অমীবাঃ। এষ স্য বাজী ক্ষিপণিং তুরণ্যতি গ্রীবায়াং বন্ধো অপিকক্ষ আসনি। তুং দধিক্রা অনু সম্ভবীত্বৎপথামঙ্কাংস্যপনীফণৎ। উত স্মাস্য দ্রবতস্তরণ্যতঃ পর্ণং ন বেরনু বাতি প্রগাৰ্দ্ধনঃ।। শ্যেনমস্যব প্ৰজতো অঙ্কসং পরি দধিক্ৰাৰ্ণঃ সহজ্জো তরিত্ৰতঃ। আ মা বাজস্য প্ৰসবো জগম্যাদা দ্যাবাপৃথিবী বিশ্বশদ্ভু। আ মা গাং পিতরা মাতরা চাংমা সোমো অমৃতত্বায় গম্যাৎ। বাজিনো বাজজিততা বাজং সরিষ্যস্তো বাজং জেষ্যতো বৃহস্পতে। ভাগমব জিব্রত বাজিনো বাজজিতে বাজং সংসো বাজং জিগিংসো বৃহম্পর্ভোগে নি মৃডমিয়ং বঃ সা সত্যো সদ্ধাহভূদ্যামিদ্রেণ সমধদধ্বমজীজিপত বনস্পতয় ইন্দ্রং বাজং বি মুচ্যধ্বম্ ॥৮॥
মর্মার্থ- সকলের প্রেরণকর্তা সবিতা দেবের অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে অন্নের জয়কারী বৃহস্পতির। অনুগ্রহে অন্ন জয় করব। সবিতা দেবের অনুজ্ঞায় অন্নের জয়কারী বৃহস্পতির আনুকূল্যে বৃহৎ স্বর্গতুল রথে (বা রথচক্রে) আরোহণ করব। হে দুন্দুভি! ইন্দ্র যাতে জয়লাভ করেন, তুমি তেমন শব্দ করো। অশ্বের প্রেরণকর্তা, অন্নের সাধনকারী হে কশা (চাবুক)! তুমি অশ্বগণকে সমরে প্রেরণ করো (ত্বমশ্বান্ সমৎসু বাজয় গময়)। তুমি ধাবনকুশল, সংগ্রামের প্রাপক ও অন্নযুক্ত হও। হে অশ্বগণ! অন্নসম্পাদনের নিমিত্ত তোমরা ত্বরায় ধাবন করো; মরুৎ-গণের অনুজ্ঞায় অন্নকে জয় করো। শীঘ্র ধাবনের দ্বারা বিশেষ ভাবে বহু যোজন দীর্ঘ (পথ) পরিমিত বা অল্প করো! শীঘ্রগতির দ্বারা পথগুলিকে স্কয়ত অর্থাৎ শব্দরুদ্ধ করো, এবং পীড়িত করো। হে অশ্বগণ! প্রতি অন্নের জন্য, ধনের জন্য আমাদের রক্ষা করো। ব্রাহ্মণের ন্যায় স্নানের দ্বারা শুদ্ধ ও অমৃত বা সত্যের গন্তব্যদেশ সম্পর্কে জ্ঞাতা হে অশ্বদেবগণ! তোমরা ধাবনের পূর্বে মধুসম চরুরস (ঘৃত) পান করো এবং তুষ্ট হও। তৃপ্ত হয়ে দেবযান পথের প্রতি গমন করো। হে গতিকুশল, সর্বত্র আহ্বান-শ্রবণকারী অশ্বগণ! তোমরা সকলে আমাদের আহ্বান (যজ্ঞের আহ্বান) শ্রবণ করো। প্রভূত অনুরাশির দাতা, যজ্ঞের প্ৰদাতা, আমাদের ধন দান করতে ইচ্ছাবান অশ্ববর্গ সংগ্রামে শত্রুর প্রচুর ধন হরণপূর্বক আমাদের সুখকর হোক। দেবতাগণের অর্থনকারী অর্থাৎ পূজাকারী, শীঘ্র-ধাবনকারী সেই অশ্বগণ সপবৎ, বৃকবৎ যজ্ঞধ্বংসকারী রাক্ষসগণকে ভগ্ন করে ক্ষিপ্রতার সাথে আমাদের নিকট হতে পৃথক করুক; আমাদের রোগ বিযযাজিত করুক। গ্রীবা, কক্ষ ও আস্যে যথাযথ (তত্ত) রজ্জ্ববিশেষের দ্বারা বদ্ধ এই অশ্ব কশার দ্বারা তাড়নাপ্রাপ্ত হয়ে আরোহীর অভিপ্রায় অনুসারে পথের অবরোধক পাষাণ ইত্যাদি অতিক্রম পূর্বক উচ্চনীচ বক্র পথে (মার্গাণামঙ্কাংসি লক্ষণানি কুটিলানি নিম্নেন্নতানি চ) শীঘ্র ধাবন করছে। গন্তব্য পথ অতিক্রম করতে ইচ্ছাকামী শীঘ্র ধাবনকারী এই অশ্বের দেহলগ্ন অলঙ্কাররূপ বস্ত্র চামর ইত্যাদি সজ্জাগুলি উড্ডীয়মান পক্ষীর পক্ষের ন্যায় বিস্পষ্ট পরিদৃষ্ট হচ্ছে এবং শ্যেনবৎ দ্রুত ধাববান পর্বত ইত্যাদি অতিক্রমকারী এই অশ্ব অত্যন্ত বলের সাথে (অত্যন্তবলেন) ত্বরিতে ধাবিত হচ্ছে। অন্নের উৎপতি আমার নিকট প্রত্যাগত হোক (প্রত্যাজগম্যাদাগচ্ছতু)। দাবাপৃথিবী জগতের সুখভাব সহ আমার নিকট আগত হোক। আমার পিতা মাতা চিরজীবনের জন্য আমার নিকট সমাগত হোন (চিরজীবিত্বায় সমাগচ্ছতা), এবং সোম অমৃতত্বের নিমিত্ত আমার দেবত্ব প্রাপ্তির জন্য আগমন করুন। অন্ন জয়ের উদ্দেশ্যে ধাবমান অশ্বগণ, যুদ্ধে গমনপূর্বক অন্ন জয় করে তোমরা বৃহস্পতির ভাগ চরুর ঘ্রাণ গ্রহণ করো। (মুয়ং বৃহস্পর্ভোগমিমং চমবজিত)। হে অশ্বগণ! অন্নের নিমিত্ত যুদ্ধে ধাবনকারী, অন্ন জয়কারী তোমরা বৃহস্পতির এই ভাগের দ্বারা শুদ্ধি লাভ করো। হে রথ। ইন্দ্রের অনুগ্রহে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে, সেই যুদ্ধগমনের প্রতিজ্ঞা সত্য হয়েছে। হে বনস্পতির বিকার দুন্দুভিগণ! তোমরা যাগস্বামী ইন্দ্রকে অগ্নের জিতবা (বিজয়ী) করেছ, এক্ষণে মুক্ত হয়ে তোমরা বিশ্রাম গ্রহণ করো ॥৮॥
[সায়ণাচার্য বলেন-অষ্টমে রথধাবনমুক্তং নবমে যুপারোহণ-মুচ্যন্তে। অর্থাৎ–অষ্টম, অনুবাকে রথধাবন উক্ত হয়েছে, এবং এই নবমে যুপে আরোহণের কথা বলা হয়েছে।]
.
নবম অনুবাক
মন্ত্র- ক্ষত্ৰস্যোমসি ক্ষত্ৰস্য যোনিরসি জায় এহি সুবোব রোহাব হি সুবরহং নাবুভয়োঃ সুবো ক্ষ্যামি বাজশ্চ প্রসবশ্যাপিজশ্চ ক্রতুশ্চ সুবৰ্শ মূর্ধা চ ব্যয়িশ্চহ্যায়নশ্চাত্যশ্চ ভৌবনশ্চ ভুবনশ্চাধি পশ্চি। আয়ুজ্ঞেন কল্পতাং প্রাণো যজ্ঞেন কল্পতামপানঃ যজ্ঞেন কল্পতাং ব্যানো যজ্ঞেন কল্পতাং চক্ষুর্যজ্ঞেন কল্পতা শ্রোত্রং যজ্ঞেন কল্পতাং মনো যজ্ঞেন কল্পতাম বাগ্যজ্ঞেন কল্পতামাত্মা যজ্ঞেন কল্পতাং যজ্ঞো যজ্ঞেন কল্পদ্যাং সুবর্বোন্ অগম্মামৃতা অভূম প্রজাপতেঃ প্রজা অভুম সমহং প্রজয়া সং ময়া প্রজা সমহংরায়পোষেণ সং ময়া রায়ম্পোষোহমায়া ত্বাহন্নাদ্যায় ত্ব বাজায় ত্বা বাজায় ত্বা বাজজিত্যায়ৈ ত্বাহমৃতমসি পুষ্টিরসি প্রজননমসি ॥৯॥
মর্মার্থ- হে বস্তু! তুমি রাজস্থানীয় যজমানের আবরণ হও। হে দর্ভময় পট (বস্ত্র)! রাজমহিষী স্থানীয় পত্নী-শরীরের শীতনিবারণের কারণ হও। হে জায়া! তুমি এখানে আগমন করো, আমরা স্বর্গপ্রাপ্তির কারণস্বরূপ সোপানে আরোহণ করবো-যজমান যজ্ঞারম্ভে এইরকম আহ্বান করলে পত্নীও সেইভাবে বলেছিলেন। বাজপ্রসবীয়ের জন্য দ্বাদশসংখ্যক হোম করণীয়। সেগুলির নাম, যথা–বাজ (অন্ন), প্রসব (অন্নের উৎপত্তি), অপিজ (পুনরুৎপতি), ক্রতু (ভোগ ইত্যাদি বিষয়ে যাগ), সুব, মূর্ধা, ব্যশিয়, অত্যায়ন, আত্য, ভৌবন, ভুবন ও অধিপতি। বাজ ইত্যাদি শব্দে সম্বৎসরের চৈত্র ইত্যাদি নামবিশেষ বলে কারো কারো অভিমত, সেই সেই কালে সকলে বা অনুক্ত কাল ইত্যাদি দেবতা তুষ্ট হোন–এইরকমই অর্থ। এই যজ্ঞের দ্বারা আয়ু, প্রাণ, আপান, ব্যান, চক্ষু, শ্রোত্র, মন, বাক, আত্ম ও যজ্ঞ আপন আপন প্রয়োজন সামর্থ্য লাভ করুক (আয়ুরাদায়ঃ স্ব স্ব প্রয়োজন সমর্থ ভবতু)। এই ঊর্ধ্বারোহণের দ্বারা আমরা স্বর্গপ্রাপ্ত হবো, আমরা স্বৰ্গাবস্থিত দেবতাগণকে প্রাপ্ত হবো। আমরা অমর হবো। আমরা প্রজাপতির প্রজা (সন্তান) হবো। অতঃপর প্রজাপতির প্রীতিবিষয়ক সন্তান আমরা এই ভূলোকে যজ্ঞানুষ্ঠানপরায়ণ হবো। আমি পুত্র ইত্যাদির সাথে মিলিত হবো, পুত্র ইত্যাদিও আমার সাথে সংগত হোক। আমি ধনপুষ্টির সাথে সংগত হবো, ধনপুষ্টিও (অর্থাৎ ধন ও তার পোষণ সামর্থ্য) আমার সাথে যুক্ত হোক। অন্নভোজনের সামর্থ্যের নিমিত্ত, সংগ্রামের সামর্থ্যের নিমিত্ত এবং সংগ্রামে জয়প্রাপ্তির সামর্থ্যের জন্য তোমাকে তাড়না করছি। তুমি অমৃতের কারণভূত হও, তুমি পুষ্টির হেতুভূত হও, তুমি সন্তান-সন্ততির উৎপত্তির মূলীভূত হও॥৯॥
[সায়ণাচার্য বলেন–দশমোহন্নহোমা উচ্যন্তে। অর্থাৎ-দশম অনুবাকে অন্নহোম সম্পর্কে বলা হয়েছে।]
.
দশম অনুবাক
মন্ত্র- বাজস্যেমং প্রসবঃ সুয়ুবে অগ্রে সোমং রাজানমোষধীষন্দু। তা অস্মভাং মধুমতীৰ্ভবন্তু বয়ং রাষ্ট্রে জাগ্রিয়াম পুরোহিতাঃ। বাজস্যেদং প্রসব আ বভূবেমা চ বিশ্বা ভুবনানি সৰ্ব্বতঃ। স বিরাজং পৰ্য্যেতি প্রজান প্রজাং পুষ্টিং বর্ধয়মানো অম্মে। বাজস্যেমাং প্রসবঃ শিশিয়ে দিবমিমা চ বিশ্বা ভুবনানি সম্রাট। অদিসন্তং দাপয় তু প্রজান রয়িম্ চ নঃ সৰ্ববীরাম্ নি যচ্ছতু। অগ্নে অচ্ছা বদেহ নঃ প্রতি নঃ সুমনা ভব। প্রণো যুচ্ছ ভুবম্পতে ধনদা অসি নম্।। প্র পো যচ্ছত্বৰ্য্যমা প্ৰ ভগঃ প্র বৃহস্পতিঃ। প্র দেবাঃ পোত সূন্যতা প্র বাগদেবী দদাতু নঃ। অৰ্য্যমণং বৃহস্পতিমিংদানায় চোদ্দয়। বাচং বিষ্ণুং সরস্বতীং সবিতারং চ বাজিন। সোমং রাজানং বরুণমগ্নিমম্বারভামহে। আদিত্যান্বিষ্ণুং সূৰ্য্যং ব্ৰহ্মণং চ বৃহস্পতি। দেবস্য ত্বা সবিতুঃ প্রসেবেংশ্বিনোৰ্ব্বাহুভ্যাং পৃষ্ণো হস্তাভ্যাং সরস্বত্যৈ বাচো যন্তুর্যন্ত্রেণায়েস্তা সাম্রাজ্যেনাভি যিঞ্চামীন্দ্রস্য বৃহস্পতো সাম্রাজ্যেনাভি যিঞ্চামি ॥১০৷
মর্মার্থ- অন্নের উৎপাদক পরমেশ্বর (বাজস্যান্নস্যোৎপাদকঃ পরমেশ্বর) ওষধি ও জলে সারভূত এই বল্লীরূপে দীপ্তিমন্ত সোমকে সকল পদার্থের পূর্বে অর্থাৎ প্রথমে উৎপাদিত করেছিলেন। সেই ওষধি ও জল আমাদের নিমত্ত মধুময় ও মাধুর্যময় হোক। আমরাও এই রাষ্ট্রে পুরোহিতরূপে যাগ ইত্যাদি কর্মে পুরোগামী হয়ে জাগরূপ থাকব। অন্নের প্রসবিতৃ (উৎপাদক) পরমেশ্বর এই অনুষ্ঠীয়মান কর্ম উৎপাদিত করেছেন, সকল ভুবনের সবই উৎপাদিত করেছেন। সেই পরমেশ্বর আমাদের অভিপ্রায় জ্ঞাত হয়ে আমাদের জন্য সন্ততি ও তার পুষ্টি বর্ধনের নিমিত্ত সর্বতোভাবে অন্ন প্রাপ্ত করান। অন্নের প্রসবিতৃ (উৎপাদক) ঈশ্বর সেই দুলোক ও অন্যান্য সকল ভুবেন আশ্রিত হয়ে আছেন। তিনি সকল ভুবনসমূহের রাজা, হবির্দানে অনিচ্ছুক সন্তানরূপ আমাকে বুদ্ধি প্রেরণ করে হবিঃ অর্পণ করান। আমাদের পুত্র ভৃত্য ইত্যাদি সকল জনকে যথানিয়মে ধন দান করুন। হে অগ্নি! এই কর্মসমূহ সাধনের পক্ষে আমাদের অভিমুখে হিত (কথা) বলুন, আমাদের প্রতি করুণাদ্রচিত্ত হোন। যেহেতু আপনি আমাদের স্বামী (প্রভু) ও ধনদানকারী, সেই জন্য হে ভুবম্পতি! আপনি আমাদের প্রকর্ষের জন্য ধন দান করুন। অর্যমা, ভগ, বৃহস্পতি ও অন্য দেবগণ আমাদের ধন প্রদান করুন। আরও, সুনৃত অর্থাৎ প্রিয়বাক্যের অভিমানী দেবতা এবং বার্মাত্রের অভিমানিনী দেবী, তারা উভয়ে আমাদের ধন প্রদান করুন। হে ঈশ্বর! আপনি পুনরায় আমাদের ধন দানের নিমিত্ত অমা, বৃহস্পতি, ইন্দ্র, বিষ্ণু, বাত্রের অভিমানিনী অর্থাৎ বাগদেবী সরস্বতী, সবিতা ও বাজিন অর্থাৎ অন্নাধিপতি দেববর্গকে প্রেরণ করুন। রাজা সোম, বরুণ ও অগ্নির অনুগ্রহ এই কর্মারম্ভে অবলম্বন করছি। আদিত্য, বিষ্ণু, সূর্য, ব্রহ্ম ও বৃহস্পতির অনুগ্রহ আমরা প্রার্থনা করছি। সবিতাদেবের ১ অনুজ্ঞায় অশ্বিনীকুমার যুগলের বাহুর দ্বারা পূষাদেবতার হস্ত দুটির দ্বারা বাকের অধিষ্ঠাত্রী সরস্বতীর ও তেজঃ-প্রদায়ক অগ্নির অনুজ্ঞায় আপনাকে সাম্রাজ্যের নিমিত্ত অভিষিক্ত করছি। (নিয়মনেনানুজ্ঞায়া সাম্রাজ্যনিমিত্তং ত্বামভিষিঞ্চামি)। ইন্দ্র ও বৃহস্পতির অনুজ্ঞায় সাম্রাজ্যের নিমিত্ত আপনাকে অভিষিক্ত করছি ॥১০৷
[সায়ণাচার্য বলেন-একাদশ উজ্জিতিমন্ত্ৰা উচ্যন্তে। অর্থাৎ–এই একাদশ অনুবাকে উজ্জিতি মন্ত্রগুলি কথিত হয়েছে।]
.
একাদশ অনুবাক
মন্ত্র- অগ্নিরেকাক্ষরেণ বাচমুদজয়দখিনৌ স্বাক্ষরেণ প্রাণাপানাবুদজয়ং বিষ্ণুস্রক্ষরেণ শ্রীল্লোঁকানুদজয়ৎ সোমশ্চতুরক্ষরেণ চতুষ্পদঃ পশনুদজয়ৎ পূষা পঞ্চাক্ষরেণ পঙক্তিমুদজয়দ্ধাতা সড়ক্ষরেণ ষড়নুদজয়ন্মরুতঃ সপ্তাক্ষরেণ সপ্তপদাং শকৃরীমুদজয়ধৃহস্পতি রষ্টাক্ষরেণ গায়ত্ৰীমুদ জয়ন্মিত্রো নবাক্ষরেণ ত্রিবৃতং ভোমমুদজয় বরুণো দশাক্ষরেণ বিরাজ মুদজয়দিন্দ্র একাদশাক্ষরেণ ত্রিষ্টুভমুদজয়দ্বিশ্বে দেবা দ্বাদশাক্ষরেণ জগতীমুদজয়ম্বসস্ত্রয়োদশাক্ষরেণ এয়োদশং স্তোমমুদজয়ন্ রুদ্রাশ্চ তুর্দশাক্ষরেণ চতুর্দশং ভোমমুদজয়ন্নাদিত্যাঃ পঞ্চদশাক্ষরেণ পঞ্চদশং স্তোমমুদজয়নুদিতিঃ যোড়শাক্ষরণ যোড়শং স্তোমমুদজয়ৎ প্রজাপতিঃ সপ্তদশাক্ষরেণ সপ্তদশং স্তোমমুদজয়ৎ ॥১১৷
মর্মার্থ- একটি অক্ষর সম্পন্ন মন্ত্রবীজের দ্বারা অগ্নি বাকে জয় করেছিলেন, সেইরকমে আমিও এক অক্ষরের দ্বারা বাকে জয় করব (মন্ত্রেণাগ্নেৰ্বাগুজ্জয়ঃ)। সেইরকম অশ্বিযুগল দুটি অক্ষরের দ্বারা প্রাণ ও আপনাকে জয় করেছিলেন, আমিও দুই অক্ষরের দ্বারা প্রাণ ও অপানকে জয় করব। বিষ্ণু তিন অক্ষরের দ্বারা তিন লোককে জয় করেছিলেন, সেইরকমে আমিও তিন অক্ষরের দ্বারা তিন লোককে জয় করব। এইভাবে সোম চার অক্ষরের দ্বারা চতুষ্পদ পশুগণকে, পূষা পঞ্চ-অক্ষরের দ্বারা পঙক্তিগণকে, ধাতা ছয় অক্ষরের দ্বারা ছয় ঋতুকে জয় করেছিলেন; সেইরকম আমিও চার অক্ষরের মন্ত্র জপের দ্বারা চতুষ্পদ পশুবৰ্গকে, পঞ্চ-অক্ষরের দ্বারা পঙক্তিগণকে এবং ষড়-অক্ষরের দ্বারা ছয় ঋতুকে জয় করব। মরুত্বর্গ সপ্ত অক্ষরের দ্বারা সপ্তপদা শরীকে, বৃহস্পতি আট অক্ষরের দ্বারা গায়ত্রীকে, মিত্র নয় অক্ষরের দ্বারা ত্রিবৃৎ স্তোমকে, বরুণ দশ অক্ষরের দ্বারা বিরাটকে, ইন্দ্র একাদশ অক্ষরের দ্বারা ত্রিপকে, বিশ্বদেববর্গ দ্বাদশ অক্ষরের দ্বারা জগতাঁকে, বসুগণ এয়োদশ অক্ষরের দ্বারা ত্রয়োদশ স্তোমকে, রুদ্রবর্গ চতুর্দশ সংখ্যক অক্ষরের দ্বারা চতুর্দশ স্তেমকে, আদিত্যবর্গ পঞ্চদশ অক্ষরের দ্বারা পঞ্চদশ সংখ্যক স্তোমকে, অদিতি যোড়ষ অক্ষরের দ্বারা যোড়শ স্তোমকে, প্ৰজাপিত সপ্তদশ অক্ষরের দ্বারা সপ্তদশ স্তোমকে জয় করেছিলেন। আমিও তাঁদের দ্বারা সেইভাবেই সেইগুলিকে জয় করব।–(সপ্তদশ অক্ষর সমন্বিত মন্ত্রসঙ্ঘ এক একটি অক্ষর ক্রমে বৃদ্ধি করলে সেই সেই মন্ত্র পাঠের দ্বারা সেইমতো সামর্থ্য অর্জন করে বা ইত্যাদিকে জয় করা হয়)। ১১।
[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বাদশেহতিগ্রাহ্যমন্ত্ৰা উচ্যন্তে। অর্থাৎ-দ্বাদশ অতিগ্রাহ মন্ত্রগুলি উক্ত হয়েছে]
.
দ্বাদশ অনুবাক
মন্ত্র- উপমহীতোহসি নৃষদং ত্বা দ্রুষদং ভুবনসদমিায় জুষ্টং গৃহূমেষ তে যোনি রিদ্ৰায় ত্বা উপমগৃহীতোহস্যষদং ত্বা ঘৃতসদং ব্যোমসদমিন্দ্রায় জুষ্টং গৃহূমেষ তে যোনিরিায় ত্বা উপযামগৃহীতোহসি পৃথিবিষদং ত্বহস্তরিক্ষসদং নাকসমিল্লায় জুষ্টং গৃহাম্যেষ তে যোনিরিন্দ্রায় ত্বা। যে গ্রহাঃ পঞ্চজনীনা যেষাং তিঃ পরমজাঃ। দৈব্যঃ কোশঃ সমুবজিতঃ। তেষাং বিশিপ্রিয়াণামিষমুজ্জং সমগ্রভীমেষ তে যোনিরিন্দ্রায় জ্বা। অপাং রসমুদ্বয়সং সূর্যরশ্মিং সমাভৃত। আপাং রসস্য যো রসস্তং বো গৃহ্বাত্তমমেষ তে যোনিরিায় ত্বা। অয়া বিষ্ঠা জনয়রাণি স হি ঘৃণিরুরুব্বরায় গাতুঃ। স প্রত্যুদৈন্ধরুণো মধ্বে অগ্রং স্বায়াং যত্তনুবাং তমৈরয়ত। উপযামগৃহীতোহসি প্রজাপতয়ে ত্বা জুষ্টম গমেষ তে যোনিঃ প্রজাপতয়ে ত্ব৷১২।
মর্মার্থ- হে গ্রহ! তুমি পৃথিবী-আত্মক পাত্রের দ্বারা গৃহীত হয়েছে। মনুষ্য, বনস্পতি ও ভুবনে আধিপত্যের দ্বারা অবস্থিত ইন্দ্রের প্রীতির নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। এই খরপ্রদেশে তোমাকে ইন্দ্রের নিমিত্ত স্থাপন করছি। হে গ্রহ! তুমি পাত্রে গৃহীত হয়েছে; জল, ঘৃত ও ব্যোমে অবস্থিত তোমাকে ইন্দ্রের প্রীতির নিমিত্ত গ্রহণ করছি। এই তোমার স্থান, ইন্দ্রের নিমিত্ত তোমাকে এই স্থানে স্থাপন করছি। হে গ্রহ! তুমি পাত্রে গৃহীত হয়েছ; পৃথিবী, অন্তরিক্ষ ও নাগলোকে (স্বর্গলোকে) অবস্থিত তোমাকে ইন্দ্রের প্রীতির নিমিত্ত গ্রহণ করছি। এই তোমার স্থান, ইন্দ্রের নিমিত্ত তোমাকে এই স্থানে স্থাপন করছি। যে অতিগ্রাহ্যরূপা গ্রহগুলি পঞ্চজনীন, অর্থাৎ দেব, মনুষ্য, অসুর, রাক্ষস ও গন্ধর্ব এই পঞ্চজনের, অথবা নিষাদ ইত্যাদি পঞ্চ বর্ণের মঙ্গলকারী, সেই অতিগ্রাহ্যগুলির মধ্যে আগ্নেয়ী, ঐন্দ্রী ও সৌরী (আগ্নেয়ৈন্দ্র-সৌৰ্য্যাখ্যাতিগাহ্যরূপা) এই তিনটি প্রকৃতিজাত (পরমজাঃ প্রকৃতয়ঃ), কিন্তু যাদের প্রভাবের দ্বারা মেঘসমূহ বর্ষাভিমুখ হয়, বিবিধ হনুস্থানীয় অতিগ্রাহ্যগুলির পূরণের নিমিত্ত অন্নসদৃশ বলপ্রদ সোমরস আমি সম্যভাবে গ্রহণ করছি। হে গ্রহ! এই তোমার স্থান, ইন্দ্রের নিমিত্ত তোমাকে এই স্থানে স্থাপন করছি। হে অতিগ্রাহগণ! যে তোমাদের মধ্যে উত্তম গ্রহ, তাকে (তথাবিধং) গ্রহণ করছি। জলের সারভূত যে সোমাস, অনুভূত ও জীবনহেতুভূত যে সোমরস, সূর্যরশ্মির ন্যায় পরিপাকের হেতুভূত যে সোমরস, দ্যুলোক হতে গায়ত্রীর দ্বারা সম্যক আনীত হয়েছে যে সোমরস, যা জলের সারভূত ও সোমবল্লীরূপে পরিণত যে সোমরস, তাকে তেজোযুক্ত করছি। হে গ্রহ! এই তোমার স্থান, ইন্দ্রের নিমিত্ত এই স্থানে তোমাকে স্থাপন করছি। যে প্রজাপতি বিশেষভাবে স্থিত হয়ে এই সকল কর্ম সম্পন্ন করেন, সেই প্রজাপতি দীপ্তিমান্ বা প্রকাশক হয়ে (দীপ্তিমাপ্রকাশকো ভূত্ব) শ্রেষ্ঠ কর্মফলের নিমিত্ত বিস্তীর্ণ পথ হন; তিনি কর্মফলের ধারয়িতা হয়ে আমাদের প্রতি আগত হোন। যদি তিনি স্বকীয় শরীরে আমাদের তনুকে প্রেরণ করেন, তবে আমরা ফল প্রাপ্ত হবো। হে গ্রহ! তুমি পাত্রে গৃহীত হয়েছ, প্রজাপতির প্রীতির নিমিত্ত তোমাকে গ্রহণ করছি। এই তোমার স্থান, এই স্থানে প্রজাপতির নিমিত্ত তোমাকে স্থাপন করছি ॥১২৷৷
[সায়ণাচার্য বলেন–দ্বাদশে বাজপেয়মন্ত্রাঃ সমাপিতাঃ। এয়োদশে কামযাজ্যা (পুরোনুবাক্যা) উচ্যন্তে। অর্থাৎ-দ্বাদশ অনুবাক পর্যন্ত বাজপেয় মন্ত্র সমাপ্ত হয়েছে। এয়োদশ অনুবাকে যাজ্যা ও পুরোনুবাক্য কথিত হয়েছে।]
.
ত্রয়োদশ অনুবাক
মন্ত্র- অন্বহ মাসা অন্বিনান্যন্বেষধীরনু পর্বতাসঃ। অম্বিং রোদসী বাবশানে অপো অজিহত জায়মান। অনু তে দায়ি মহ ইন্দ্রিয়ায় সত্ৰা তে বিশ্বমনু বৃহত্যে। অনু ক্ষমনু সহো যজত্রে দেবেরিনু তে নৃহ্যে।। ইন্দ্রাণীমাসু নারিষু সুপত্নীমহমশ্রম। ন হ্যাঁস্যা অপরং চন জরুসা মরতে পতিঃ। নাহমিন্দ্রাণি রারণ সখ্যৰ্বষাকপেঋতে।। যস্যেদমপ্যাং হবিঃ প্রিয় দেবেষু গচ্ছতি। যো জাত এব প্রথমো মনস্বাবো দেবা তুনা পৰ্য্যভূষৎ। যস্য শুম্মাদ্রোদসী অভ্যসেতাং নৃণস্য মহা স জনাস ইন্দ্রঃ। আ তে মহ ইন্দ্রোত্যুগ্ম সমন্যবো যৎসমর সেনাঃ। পতি দিদ্যুন্নৰ্য্যস্য বাহুবোৰ্ম্মা তে মনো বিম্বদ্রিয়থিচারী। মা নো মীরা ভরা দর্জি তন্নঃ প্ৰ দাশুশে দাঁতবে ভূরি যত্তে। নব্যে দেষ্ণে শস্তে অস্মিন্ত উথে প্র ব্ৰবাম বয়মি স্তবম্ভঃ। আ তু ভর মাকিরেত পরিষ্ঠাদ্বি হি ত্বা বসুপতিং বসুনাম। ইন্দ্রে যত্তে মাহিনং দমস্ত্যস্মভ্যং তদ্ধশ্ব প্র যন্ধি। প্রদাতারং হবামহ ইন্দ্ৰমা হবিষা বয়। উভা হি হস্তা বসুনা পৃস্বাহপ্র যচ্ছ দক্ষিণাদোত সব্যাৎ। প্রদাতা বর্জী বৃষভস্তুরাছুম্মী রাজা বৃত্ৰহা সোমপাবা অস্মিন্যজ্ঞে বহিষ্যা নিষ্যদ্যাথা ভব যজমানায় শং যোঃ। ইন্দ্ৰঃ সুত্রামা স্ববাং অবোভিঃ সুমৃড়ীকো ভবতু বিশ্ববেদাঃ। বাধতাং দ্বেষো অভয়ং কৃপোতু সূবীৰ্য্যস্য পতয়ঃ স্যাম। তস্য বরং সুমতৌ যজ্ঞিয়স্যাপি ভদ্রে সৌমনসে স্যাম। স সুত্ৰামা স্ববাং ইন্ট্রো অম্মে আরাচ্চিদদ্বেষঃ সনুতযুয়োতু। রেবতীর্নঃ সধমাদ ইন্দ্ৰে সন্তু তুবিবাজাঃ। ক্ষুমন্তো যাভিৰ্ম্মদেম। প্রো স্বস্মৈ পুরোথমিন্দ্রায় শূষমচ্চত। অভীকে চিদু লোককৃৎসঙ্গে সমত্ম বৃত্ৰহা। অস্মাকং বোধি চোদিতা নভামন্যকে। জ্যাকা অধি ধম্ব ॥১৩
মর্মার্থ- চৈত্র ইত্যাদি মাসগুলি জায়মান হয়ে ইন্দ্রের অনুসরণপূর্বক অনুগ্রহ করবার নিমিত্ত আমাদের প্রাপ্ত হয়েছে। সেইরকমে বননী, ওষধি, পর্বতরাজি আমাদের কাময়মান হয়ে দ্যাবাপৃথিবী আমাদের নিকটে যযাজিত হয়েছে। হে মহান্ ইন্দ্র! সকল যজ্ঞে অগ্নি ইত্যাদি সকল দেবতাগণ অপেক্ষা আপনাকেই অনুক্রমানুসারে (অর্থাৎ অধিক) হবিঃ প্রদান করা হয়ে থাকে, যেহেতু আপনি বলসিদ্ধ, বৃত্রের বধকারী, ধনশালী ও বৈরিগণকে তিরস্কারশীল। দেবস্ত্রীগণের মধ্যে ইন্দ্রাণীকে সুপত্নী অর্থাৎ পতিব্রতা বলে শ্রবণ করেছি। এই ইন্দ্রাণীর পতি কখনও জরায় মারা যান না (নাহি মরতে নৈব মিয়তে)। হে ইন্দ্রাণী! আমি আপনার প্রিয় ইন্দ্র বিনা অপর কোন দেবের কীর্তন করি না। আমার জলজাত সোম পুরোডাশ ইত্যদি রূপ হবিঃ প্রীতিপ্রদ (প্রিয়মিষ্টং) হয়ে সকল দেবতার নিকট গমন করে অর্থাৎ সকল দেবতা তা প্রাপ্ত হন। যে ইন্দ্র উৎপন্নমাত্রই দেবগণের মধ্যে মুখ্য (রূপে বৃত হন), মনস্বী, বৃত্রবধ ইত্যাদি কর্মের দ্বারা অগ্নি ইত্যাদি অন্যান্য দেবগণকে অতিক্রান্তবান, যে ইন্দ্রের পরাক্রমে দ্যাবাপৃথিবী ভীতা, হে জনগণ! সেই ইন্দ্র স্বকীয় বলের মহিমায় তোমাদের রক্ষা করুন। হে উগ্র ইন্দ্র! আপনার রক্ষণ সর্বাপেক্ষা অধিক (তবোতী রক্ষণং মহোহধিকম)। যদিও এই রক্ষণের দ্বারা আমাদের সেনাগণ বৈরিগণের বিষয়ে কোপযুক্ত হয়ে তাদের সম্যভাবে অগ্রাহ্য করে ক্রীড়া করছে। মনুষ্যগণের মঙ্গলের জন্য আপনার বাহুধৃত খঙ্গ ইত্যাদির দীপ্তি সর্বত্র প্রসারিত হচ্ছে (প্ৰসরতি)। আপনার মন বহুমুখী হয়ে যেন বিচরণ না করে (অর্থাৎ আমাদের জয়ের নিমিত্তই যেন অবিচল হয়ে নিযুক্ত থাকে)। হে ইন্দ্র! আমাদের ও আমাদের সন্তুতিদের কলহার্থী অর্থাৎ কলহপরায়ণ করবেন না; কিন্তু প্রকর্ষের সাথে হবিদানকারী (দত্তবতে) ঘজমানকে প্রদান করার নিমিত্ত আপনার নিকট যে ভুরি ভুরি ধন সঞ্চিত আছে, তা আহরণ করে আমাদের দান করুন। হে ইন্দ্র! আপনার নব্য দানসাধনে প্রশস্ত এই কর্মে উথ মন্ত্রে স্তব করে আমরা প্রকর্ষের সাথে এই প্রার্থনা করছি (প্রকর্ষেণ প্রার্থনামহে)। হে ইন্দ্র! আপনি ধন আহরণ করুন; এইরকমে আমাদের নিমিত্ত আহৃত ধন ক্ষয় বা শেষ হবে না, কারণ আপনি বসুপতি (অর্থাৎ ধনপতি) নামে উক্ত হন। হে ইন্দ্র! দাঁতব্যের নিমিত্ত আপনার যে মহনীয় ধন আছে, হে হরি-নামক অশ্বদ্বয়-বান্ ইন্দ্র (বা হস্য, অর্থাৎ হরিত্বর্ণ হয়েছে অশ্ব যাঁর)! সেই ধন আমাদের প্রদান করুন। প্রকর্ষের সাথে দানকারী ইন্দ্রকে আমরা হবিঃ-দ্বারা আহ্বান করছি। হে ইন্দ্র! আপনি আপনার উভয় হস্ত ধনের দ্বারা পূর্ণ করুন (ধনেন পূরয়); অতঃপর আমার অভিমুখে আগত হয়ে দক্ষিণ ও বাম হস্তে ধন প্রদান করুন (দক্ষিণাস্তাৎ প্রযচ্ছ, সব্যাপ্যাভিমুখ্যেন প্রযচ্ছ)। প্রকৃষ্টরূপে দাতা, বজ্ৰবান (বজ্রধারী), ধন-বর্ষণকারী, শত্রুগণকে শীঘ্র অভিভাবকারী, বলবান, দীপ্যমান, বৃত্ৰহা অর্থাৎ বৃত্রকে হননকারী, সোমের পালনকর্তা (সোমস্য পাতা), এইরকম হে ইন্দ্র। আপনি বেদিতে আস্তীর্ণ এই দুর্ভে উপবেশনের পর আমাদের পক্ষে সুখকর ও অনিষ্ট-বিযোজক হও। এই ইন্দ্র সুষ্ঠুভাবে ত্রাণকারী, ধনবান্ (স্ববান্ধনবানবোভী) রক্ষণের দ্বারা সুখকর এবং আমাদের অনুষ্ঠিত সকল কর্মে অভিজ্ঞ হোন। আমাদের বাধা প্রদানকারী বৈরিদের বিদ্বেষী সেই ইন্দ্র আমাদের অভয় করুন (অস্মাকমভয়ং করোতু)। তাঁর প্রসাদে আমরা সকলে বৈরিগণকে অভিভব করবার সামর্থ্যের অধিকারী হবো (তপ্ৰসাদাদ্বয়ং সুবীর্যস্য বৈভিভবসামর্থস্য পতয়ঃ স্যাম স্বামিনো ভবেম)। যজ্ঞ-সম্বন্ধী সেই ইন্দ্রের অনুগ্রহে আমরা পরমঙ্গলে মনঃ-সমাধানে অবস্থিত হতে পারব। সুষ্ঠু ত্রাতা, ধনবান সেই ইন্দ্ৰ হবিদানকারী আমাদের বিদ্বেষীগণকে দূর হতে পৃথক করুন। ধনশালী, হর্ষযুক্ত ও বহু অন্নযুক্ত (বহুন্নোপেতাঃ) দাহশান্তিপ্রদা জলদেবীগণ আমাদের সুখের নিমিত্ত (অস্মসুখায়) স্বামী ইন্দ্রের সাথে থাকুন। তাঁদের সাথে আমরা ইন্দ্রের স্তবের দ্বারা হৃষ্ট হবো। এই ইন্দ্রের রথের পুরোভাগে বাক্যের দ্বারা সুষ্ঠুভাবে পূজা করো, তাহলে আমরা তার রক্ষণীয় বলে জানতে পারবেন। এই ইন্দ্র শত্রুঘাতী, সংগ্রামে শত্রুসেনা অতি নিকটবর্তী হয়ে হত্যা করতে কামনা করলেও তিনি স্থির থাকেন (স্থিতিং করোত্যেব), পলায়ন করেন না (নতু পলায়তে)। সেই ইন্দ্র বৈরিগণের কুৎসিত ধনুর জ্যা বিনষ্ট (ভঙ্গ) করে দিন ।১৩৷৷