১.৭ গুলি খেয়েছেন ডন কর্লিয়নি

০৭.

 গতকাল গুলি খেয়েছেন ডন কর্লিয়নি। সাংঘাতিক ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কাটছে আজকের দিনটা।

ফোন ছেড়ে নড়ছে না মাইকেল। অসংখ্য টেলিফোনকল একের পর এক আসছেই। ধৈর্য ধরে সবার কথা শুনছে সে, তারপর সনিকে খবরের সারমর্ম জানাচ্ছে।

ওদিকে টম হেগেনেরও এক মুহূর্ত ফুরসত নেই। সলোযোর সাথে দেখা করার। ব্যাপারে শর্তাবলী আদান প্রদানের জন্যে একজন মধ্যস্থকারী দরকার, উপযুক্ত লোক খুঁজে বের করতে হবে। তুর্ক ব্যাটা একেবারে বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে বাতাসের সাথে। তার অবশ্য কারণও আছে। ক্লেমেঞ্জা আর টেনিওর বাটনম্যানরা তার সন্ধানে শহরের প্রতিটি অলিগলি হাতড়ে বেড়াচ্ছে, এ খবর তার অজানা থাকার কথা নয়। টাটাগ্রিয়া পরিবারের মাথাগুলো নিজেদের গোপন আস্তানায় গা ঢাকা দিয়েছে, ধরে নেয়া হলো সলোযো তাদের কোলের ভিতরই লুকিয়ে আছে। শত্রুপক্ষ, প্রাথমিক সতর্কতা অবলম্বন করবে, এটাই স্বাভাবিক বলে ধরে নিয়েছে সনি।

পলি গাটোকে নিয়ে ক্লেমেঞ্জাও ব্যস্ত। টেসিওকে ভার দেয়া হয়েছে লুকা ব্রাসিকে খুঁজে বের করার। ডনের গুলি খাওয়ার আগের রাত থেকে কোন খবরই নেই তার, খুব অশুভ লক্ষণ এটা। কিন্তু লুকা বেঈমানী করেছে বা কেউ অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাকে মেরে ফেলেছে, একথাও বিশ্বাস করতে পারছে না সনি।

হাসপাতালের কাছাকাছি পারিবারিক কোন বন্ধুর বাড়িতে রয়ে গেছেন সনির মা। এই সঙ্কটে জামাই কার্লো রিটসি কোন সাহায্য করতে পারে কিনা জানতে চেয়েছে, উত্তরে তাকে বলা হয়েছে নিজের ব্যবসা দেখাশোনা করছে, তাই করুক, এদিকে তার মাথা গলাবার দরকার নেই, ম্যানহাটনের ইতালীয় এলাকায় রেস-এর সাথে জড়িত অত্যন্ত লাভজনক একটা ব্যবসার মালিক সে এখন, ডন কর্লিয়নিই তাকে এ ব্যবসাতে বসিয়েছেন। শহরে মার কাছেই আছে কনি, ঘনঘন যাতে হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে দেখে আসতে পারে।

ফ্রেডিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ওষুধ খাইয়ে এখনও ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে তাকে। দেখে চমকে ওঠার মত চেহারা হয়েছে তার। যেন কত যুগ ধরে অসুস্থ। তাকে দেখে বাইরে বেরিয়ে এসে অবাক হয়ে সনি মাইকেলকে বলল, এমন <লো কি করে! একটাও গুলি খায়নি, অথচ বাবার চেয়ে রুগ্ন দেখাচ্ছে ওকে।

উত্তর না দিয়ে কাঁধ ঝাঁকাল মাইকেল। যুদ্ধের সময় এসব দেখা আছে তার। তবে ফ্রেড যে এতটা নাড়া খাবে ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি ও। ছোটবেলায় এই ফ্রেডই ছিল সবচেয়ে শক্ত। কিন্তু হলে কি হবে, সব ব্যাপারেই পিছু হটে যাবার একটা স্বভাবও ছিল তার, ব্যক্তিত্বও তেমন জোরালো ছিল না। বুদ্ধি যে একেবারেই ছিল না তা নয়, কিন্তু যেটুকু ছিল, তাতে ধার ছিল না এতটুকু। নির্মম তো সে কোনোকালেই নয়। ব্যবসাতে মেজ ছেলেটি যে উন্নতি করতে পারবে না, একথা অনেকদিন আগেই বুঝে নিয়েছিলেন বাবা।

জনি ফন্টেনের ফোন এল সন্ধ্যা নাগাদ।

ফোন ধরল সনি। খুব শান্ত, বুঝিয়ে বলার ভঙ্গিতে জনিকে সে বলল, না, ভাই, বাবাকে দেখার জন্যে অতদূর থেকে তোমার আসার দরকার নেই। তুমি আসছ, এ খবরটা তো আর চাপা থাকবে না, তাতে তোমার সুনাম ক্ষুণ্ণ হতে পারে। সে ঝুঁকি তুমি নাও, এ আমি চাই না। বাবা সুস্থ থাকলে তিনিও চাইতো না। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুন, তখন এসো। হা হা, অবশ্যই; নিশ্চয়ই তোমার কথা বলব। ক্র্যাডলে রিসিভার রেখে ছোট ভাইয়ের দিকে তাকাল সনি। জনি আসতে চেয়েছিল শুনে বাবা খুব খুশি হবেন রে।

সন্ধ্যা একটু গাঢ় হতে ক্লেমেঞ্জার একজন লোক এসে জানাল কোন এক ভদ্রমহিলা মাইকেলকে চাইছেন। কোম্পানির তালিকাভুক্ত ফোনটা ধরার জন্যে কিচেনে এল মাইক।

কেমন আছেন তোমার বাবা? ক্লান্ত কণ্ঠে প্রথমেই জানতে চাইল কে অ্যাডামস।

সাথে সাথে ব্যাপারটা বুঝে নিল মাইকেল। খবরের কাগজে বাবা পের্কে যেসব কথা বলা হয়েছে… গুণ্ডা সর্দার, চোরাকারবারী, গ্যাংস্টার, এসব দেখে ঘাবড়ে গেছে কে, বিশ্বাসই করতে পারছে না।

এখন ভালই আছেন।

হাসপাতালে তোমার সাথে আমিও যেতে চাই, বলল সে।

মনে মনে হেসে ফেলল মাইকেল। তার কথা খুঁটিয়ে সব মনে রাখে কে, এটা বুঝতে পেরে খুব ভাল লাগল ওর বুড়ো ইতালীয়দের মন জয় করতে হলে কি কি করতে হয় ঠাট্টাচ্ছলে তা একধার শেখাবার চেষ্টা করেছিল ও কে-কে, সে-কথা মনে রেখেই এখন বাবাকে দেখার জন্যে হাসপাতালে যেতে চাইছে ও।

এখন তোমার যাওয়া উচিত হবে না, বলল মাইকেল। পিরস্থিতিটা ঠিক স্বাভাবিক নয়, সে তো তুমি বুঝতেই পারছ। সাংবাদিকরা তোমার নাম জানাবে, কালই ডেলি নিউজে খবর ছাপা হবে এই হেডিংয়ে কুখ্যাত মাফিয়া গুণ্ডা-সর্দারের ছেলের সাথে প্রখ্যাত ইয়াঙ্কি পিরবারের কন্যার গোপন সম্পর্ক। তোমার গুরুজনরা কিভাবে নেবেন ব্যাপারটা, ভেবে দেখো।

ওরা ডেলি নিউজ পড়েন না, সাথে সাথে উত্তর দিল কে। একটু থেমে উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জানতে চাইল, মাইক, তামাকে লুকিয়ো না, তোমার কোন বিপদের ভয় নেই তো?

আমাকে সবাই ভাল মানুষ গোবেচারা হিসাবে জানে, হাসছে মাইকেল। আমার তরফ থেকে বিপদ হতে পারে, একথা কেউ বিশ্বাসই করে না। সুতরাং, আমাকে ওরা গোণার মধ্যেই ধরে না। তাছাড়া, কে, যা হবার হয়ে টয়ে চুকে গেছে। সব, আর কিছু ঘটবে না। দেখা হলে বুঝিয়ে দের সব।

দেখাটা কবে হবে?

একটু চিন্তা করল মাইকেল। কে-র মানসিক অস্থিরতার কথা বিবেচনা করল। বলল, আজও হতে পারে, কে। একটু বেশি রাতে, কেমন? শোনো, কাউকে বলো না কথাটা। কাল সকালের কাগজে তোমার আমার ছবি বেরুক তা চাই না বুঝছ তো? জানাজানি হয়ে গেলে তোমার মা-বাবার জন্যে গোটা ব্যাপারটা অপ্রীতিকর হয়ে উঠবে।

ওসব কথা থাক। তোমার জন্যে কি করতে পারি তাই বলো। বড় দিনের কিছু কেনাকাটা করব? কিংবা…এই সময়ে তোমার কাজে লাগতে পারলে মনটা ভাল থাকত আমার।

হঠাৎ নিজেকে সাংঘাতিক ভাগ্যবান বলে মনে হলো মাইকেলের। অদ্ভুত একটা পুলক অনুভব করছে সে। বলল, আমার জন্যে অপেক্ষা করো। আর কিছু চাই না।

ওদিকে ফোনের অপরপ্রান্তে কে অ্যাডামসের শরীরে রোমাঞ্চের হোত বইতে শুরু করেছে। ছোট্ট, চাপা উত্তেজনার সাথে হাসল সে। ওটাই তো আমার আনন্দের কাজ, তোমার জন্যে অপেক্ষা করে থাকা, চিরকাল থাকব, মাইক। একটু ইতস্তত করে আবার বলল, আমি তোমাকে যে কথাটা বলতে পারি-ভালবাসিসে কথাটা, কই, তুমি তো বলো না।

কিচেনের গুণ্ডাপাণ্ডাদের দিকে চোখ বুলাল মাইকেল। নীরস গলায় বলল, পারি না।

কে-র সাড়া নেই অপরপ্রান্তে। এদিকে মাইকেলও কথা বলছে না। এভাবে অনেকক্ষণ কাটল। শেষে মাইকেল বলল, আমি আসব তো?

এসো, অস্ফুটে বলল কে।

ক্র্যাডলে রিসিভার রেখে ক্লেমেঞ্জার দিকে তাকাল মাইকেল। খানিক আগে ফিরে এসে একে-তাকে ধমক-ধামক মেরে চুলোয় এক হাঁড়ি টমেটো-সস চাপিয়েছে সে। তার উদ্দেশ্যে মাথা একটু ঝাঁকিয়ে শেষ প্রান্তের কামরায় ফিরে এল মাইকেল। হেগেন আর সনি অপেক্ষা করছে ওর জন্যে। দুজনেই উত্তেজিত।

ক্লেমেঞ্জা কোথায়?

বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মাইকেল বলল, কিচেনে।

ডাকো ওকে। সাথে টেসিওকেও নিয়ে আসতে বলো।

অফিস ঘরে হাজির হলো সবাই। ক্লেমেঞ্জাকে ছোট্ট একটা প্রশ্ন করল সনি, ওর খবর বলো?

নির্বিকার ক্লেমেঞ্জা জবাব দিল, শেষ।

শিরশির করে উঠল মাইকের শরীর। কার সম্পর্কে কথা হচ্ছে, তার পরিণতি কি হয়েছে, সবই বুঝতে পারছে সে। উৎসব অনুষ্ঠানে যে লোক সবচেয়ে বেশি আনন্দে মাতোয়ারা করে সবাইকে, সে আমুদে ক্লেমেঞ্জা খুন করেছে পলি গাটোকে।

সলোযোর বিষয়ে কতদূর কি জানা গেল? হেগেনের দিকে তাকাল সনি।

উপযুক্ত লোক এখনও ঠিক করতে পারিনি। বলল হেগেন। সলোযো বিশ্বাস করবে, এমন লোক হওয়া চাই। আপোস একটা করতেই হবে, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ও। বুড়ো ভদ্রলোক বেঁচে গেছেন, তার মানে সব সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে ওর।

কিন্তু আমাদের পরিবারের সাথে এতটা চাতুর্যের সাথে, এত বড় ঝুঁকি নিয়ে কেউ কখনও লাগতে আসেনি, এ-কথাটা আমাদের মনে রাখতে হবে, বলল সনি। বাবাকে সেরে ওঠার সময় দেবার জন্যে আমরা সময় নষ্ট করছি, এটাই সে ধরে নিয়েছে বলে মনে হয়।

তা সে যাই ধরে নিক না কেন, আপোস রক্ষার চেষ্টা এখন তাকে করাতেই হবে। কাল নাগাদ একটা ব্যবস্থা করতে পারব আমি।

দরজায় নক করে ক্লেমেঞ্জার একজন লোক ঢুকল কামরায়। রেডিও নিউজ। পলি গাটোর গাড়িতে তার লাশ পাওয়া গেছে।

কর্কশ গলায় হুঙ্কার ছাড়ল ক্লেমেঞ্জা। তাতে তোমার কি? যাও ভাগো!

হতভম্ব লোকটা তার ক্যাপোরেজিমির দিকে বোকার মত তাকিয়ে থাকল। কিন্তু পরমুহূর্তে ব্যাপারটা বুঝে নিয়ে চরকির মত আধপাক ঘুরে দ্রুত পালিয়ে গেল কামরা ছেড়ে।

ডন এখন কেমন আছেন? ভারি গলায় জানতে চাইল সনি।

ভাল, বলল হেগেন। আর দিন দুই পর কথা বলতে পারবেন। অপারেশনের ধকলটা তো গুলি খাওয়ার চেয়েও সাংঘাতিক। করণীয় সম্পর্কে তার সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত লক্ষ রাখতে হবে, সলোযো বোকার মত আবার কিছু করে না ফেলে। সেজন্যেই আমি মনে করি ওর সাথে আলোচনা শুরু করে দেয়া উচিত তোমার।

আমি তৈরি, কিন্তু ওরই তো কোন খবর নেই, বলল সনি। ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও খুঁজছে ওকে, খুজতে থাকুক। তারপর আলোচনা যখন শুরু হয় হবে।

সলোযো জানে, বলল হেগেন, আলোচনার টেবিলে একবার যদি বসে, নিজেকে প্রায় পুরোপুরি আমাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। সম্ভবত সেজন্যেই আপস করতে মন চাইছে না তার। ওর এখন সবচেয়ে বেশি দরকার নিউ ইয়র্কের অন্যান্য পরিবারের সমর্থন। তাই পাবার চেষ্টা করছে সে। এবং যদি পায়, ওর বিরুদ্ধে চরম কোন সিদ্ধান্ত ডন নিলে তা বাস্তবায়িত করা সহজ হবে না আমাদের পক্ষে।

সনি ঠিক বুঝল না। ভুরু কুঁচকে উঠল তার। কি বলতে চাইছ? আর সব পরিবার বাবার বিরুদ্ধে চলে যাবে? কেন শুনি?

অধৈর্য না হয়ে হাসল হেগেন। তারপর বুঝিয়ে দিল, বড় গোছের একটা যুদ্ধ বেধে যাক তা কেউ চায় না, তাই। যুদ্ধ বাধলে সবার ক্ষতি, খবরের কাগজ এবং সরকারের নাক গলাবার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

সনির মুখ ধীরে ধীরে গম্ভীর হয়ে উঠছে।

আবার বলল হেগেন, ওরা সলোযোকে সমর্থন করবে। তার মেলা কারণ আছে। সলোযোর কাছ থেকে লাভের অংশ পাবে ওরা। মাদক ব্যবসায় প্রায় সবটুকুই লাভ, এ তো আমরাও জানি। আমাদের ওসব দরকার না থাকতে পারে, জুয়ার ব্যবসাটাকেই সবচেয়ে ভাল বলে মনে করছি আমরা, কিন্তু আর সব পরিবারের খাই অনেক, অনেক বেশি। লাভের সম্ভাবনা দেখলে ওরা পাগল হয়ে যায়। ভারি চালাক-চতুর লোক সালোয়য। ওদেরকে লোভ দেখিয়ে খেপিয়ে তুলতে তার কোন অসুবিধেই হবে না। কি দাঁড়াচ্ছে তাহলে? ওদের কাছে সলোহোর অনেক দাম, তাই নয় কি? এত যার দাম, তাকে ওরা মরতে দেবে কেন?

সনির মুখের দিকে তাকিয়ে মাইকেল তার জীবনের আরেক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। রক্তশূন্য, ফ্যাকাসে হয়ে গেছে সনির চেহারা। তারপর দ্রুত রক্ত ফিরে এসে মস্ত মুখটাকে টকটকে লাল করে তুলল। অস্বাভাবিক গভীর, কিন্তু শান্ত গলায় বলল সে, ওদের লাভ লোকসানের খতিয়ান আমি শুনতে চাই না। ওদেরকে আমি গ্রাহ্যই করি না। এই যুদ্ধে কেউ যদি নাক গলাতে আসে, নিজের ধ্বংস ডেকে, আনবে সে। আমাকে ওরা এখনও চেনেনি।

কাঠের মত শক্ত হয়ে গেছে ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও। সনি এখন ডনের প্রতিনিধিত্ব করছে, তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সামগ্রিক যুদ্ধের ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত যদি গ্রহণ করে সে, প্রতিপক্ষদের দুর্ভেদ্য দুর্গ আক্রমণ করতে হবে তাদেরকেই। লড়তে ভয় নেই ওদের, কিন্তু লড়াই করে শেষটায় কি লাভ হবে, বিজয় উৎসবে যোগ দেবার জন্যে কর্লিয়নি পরিবারের কেউ বেঁচে থাকবে কিনা, সেটাই সবচেয়ে আগে ভেবে দেখতে হবে।

ধৈর্যচ্যুতি ঘটল হেগেনের। কিন্তু গলা না চড়িয়ে সে বলল, ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করো, সনি। ডন এ ধরনের কথা শুনতে পছন্দ করেন না। কেউ গায়ের জোর দেখিয়ে কোন সমস্যার সমাধান করলে তিনি বলেন, লোকটা লোকসানের বীজ রোপন করল। কিন্তু, একথাও ঠিক, আমরা সবাই জানি, ডন যদি নির্দেশ দেন সলোযোকে সরাতে হবে, দুনিয়ার কোন শক্তি আমাদেরকে ঠেকাতে পারবে না। হেগেন আরও গম্ভীর হলো। সমস্যাটা ব্যক্তিগত নয়, ব্যবসায়িক। এর সমাধান ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে না এসে আসতে হবে ব্যবসা-বুদ্ধি থেকে।

কিন্তু তুমি বলছ অন্যান্য পরিবারগুলো সলোযোকে বাঁচাতে চাইবে, বলল সনি। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল সে, কিন্তু হেগেন তাকে বাধা দিল।

চাইবেই তো, বলল হেগেন। নিজেদের লাভটা দেখবে না ওরা?

 তাহলে…

এই সমস্যারও সমাধান আছে, মৃদু হেসে বলল হেগেন। সলোযোকে আমরা খতম করতে চাই এটা তাদেরকে স্পষ্ট ভাবে না জানিয়ে আমরা তাদেরকে কি ধরনের কি কি বাড়তি লাভের সুযোগ করে দিতে রাজি আছি তা জানালেই আমাদের ইচ্ছাটা কি তা পরিষ্কার বুঝে নেবে ওরা। তখন একটা কেন, এক ডজন সলোযোকেও যদি আমরা খুন করি, ওরা দেখেও না দেখার ভান করবে। সেজন্যেই বলছি, ক্ষেপে গিয়ে রক্তলোলুপ হয়ে উঠো না। এটা আমাদের ব্যবসা। তোমার বাবাকে ব্যক্তিগত কারণে নয়, ব্যবসায়িক কারণেই গুলি করা হয়েছে। এটুকু বোঝার ক্ষমতা তোমার থাকা উচিত।

চোখমুখ এখনও উ ক্রোধে রক্তিম হয়ে আছে সনির। আমি আর কিছু শুনতে চাই না, শুধু দেখতে চাই সলোযোর পিছনে যদি লাগি, কেউ যেন বাধা দিতে না আসে। টেসিওর দিকে ফিরল ও। লুকার খবর বলো।

খবর নেই, অসহায় ভাবে মাথা নাড়ল টেসিও। সলোমোর খপ্পরে পড়েছে কিনা…

চিন্তিতভাবে হেগেন বলল, লক্ষ্য করেছি, লুকার কথা ভেবে একটুও ঘাবড়ায়নি সলোযো। তখনই খটকা লেগেছিল আমার। মাথায় মগজ আছে এমন কেউ লুকাকে ভয় করবে না, এ হতেই পারে না।

কোথায় রাগ, আশঙ্কায় নীল হয়ে উঠল সনি। অস্ফুটে বলল, ফর গভর্স সেক, ওই একটা মাত্র ব্যাপারকে যমের মত ভয় পাই আমি। লুকা আমাদের বিরুদ্ধে চলে যায়নি তো? তোমরা কি ভাবছ, ক্লেমেঞ্জা? টেসিও?

খুব ধীর গলায় বলল ক্লেমেঞ্জা, পলির কথা ভাবো একবার। আমি বলতে চাইছি, যে কেউ দল শ্রাগ করতে পারে। কিন্তু লুকা? না! অসম্ভব।

কেন অসভব?

অসম্ভব এ জন্যে যে লুকা ব্রাসি ভয় করে না কাউকে, বিশ্বাস করে না কাউকে–শুধু একজনকে ছাড়া, বলল ক্লেমেঞ্জা। এই একজন হলেন গড ফাদার। অনেকের অনেক পথ থাকতে পারে, কিন্তু লুকার একটা পথ। গড ফাদারের ওপর ওর যে ভক্তি, তার তুলনা নেই। কথাটা শুনতে যাই হোক, কিন্তু বর্ণে বর্ণে সত্যি যে সবাই গড ফাদারকে ভক্তি করে, কিন্তু লুকার মত? না। আমার প্রাণ বাজি রেখে বলতে পারি, লুকা বেঈমানী করেনি, করতে পারে না। আবার, সলোযো যতই ধড়িবাজ চতুর হোক, লুকাকে বাগে পেয়ে সর্বনাশ ঘটিয়ে ফেলেছে বলেও আমি বিশ্বাস করি না। সম্ভাব্য যে কোন বিপদের জন্যে তৈরি থাকে সে। এমন হতে পারে, দুএকদিনের জন্যে কোথাও গেছে সে।

গম্ভীর হয়ে ক্লেমেঞ্জার দিক থেকে টেসিওর দিকে তাকাল সনি।

ব্রুকলিনের ক্যাপোরেজিমি টেসিও শ্রাগ করল। ততটা কাউকেই আমি বিশ্বাস করি না। কে কি কারণে বেঈমানী করে বসে, কিছু বলা যায় না। লুকার একটা দুর্বলতার কথা আমার জানা আছে। একটুতেই দুঃখ পে সে। ডনের কোন আচরণে মনে চোট পেয়ে থাকতে পারে। তার মানে কিন্তু আমি বলতে চাইছি না যে লুকা বেঈমানী করেছে। আমার বিশ্বাস সলোযো যেভাবেই হোক ওকে সরিয়ে দিয়েছে। ক্লেমেঞ্জার বিশ্বাসের সাথে এখানেও একমত হতে পারছি না আমি। দুনিয়ার কেউ অজেয় নয়। সবাইকেই, তা যে যত শক্তিশালী আর দুর্ধর্ষই হোক, সাবাড় করা সম্ভব। আমি বরং কনসিলিয়রির সাথে একমত, সবচেয়ে জঘন্য বিপদের জন্য নিজেদেরকে তৈরি রাখা উচিত আমাদের।

টেসিও থামতে সনি খানিক চিন্তা করল। তারপর বলল, পলি গাটোর খবর তো পেয়ে গেছে, সলোযোর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে?

কর্লিয়নিরা নির্বোধ নয়, এটুকু অন্তত বুঝবে, প্রচণ্ড আক্রোশে মুখটা বিকৃত দেখাচ্ছে কুমেঞ্জার। নেহাত কপালের জোরে যা করার করেছে

তীক্ষ কণ্ঠে বাধা দিল সনি। কি বললে? কুপালের জোর? বোকা নাকি! এর মধ্যে কপাল কোথায় দেখতে পাচ্ছ তুমি? বলো, সাধনার জোরে। বলো পরিকল্পনার জোরে। অনেকদিন থেকে বাবার গতিবিধির ওপর নজর রেখেছে ওরা। শুধু তাই নয়, বেঈমানী করার জন্যে আমাদের লোককে প্রস্তাব দিয়েছে। পলির কথা বলছি। হয়তো লুকাকেও। তারপর টমকে হাইজ্যাক করার ব্যাপারটাও ধরো। নিখুঁত প্ল্যান ধরে প্রতিটি কাজ করেছে ওরা। ঠিক সময়টিতে নিয়ে গেছে ওকে। এবার বলো, কপালের, জোর কোথায় দেখছ? বরং, একথা বলো যে কপাল ওদের সাথে অসহযোগিতা করেছে? ওঁদের প্ল্যানে কোন খুঁত ছিল না। কিন্তু কপাল দোষে ভাড়াটে খুনেগুলো যথেষ্ট দক্ষতা দেখাতে পারেনি, বাবা এক সেকেণ্ড আগেই সব বুঝে ফেলেছিলেন। প্রথম দফায় গুলি খেয়েও পড়ে যাননি।

একটু থামল সনি। সবার দিকে তাকাল একবার করে। চুপচাপ বসে আছে মাইকেল। কি ভাবছে না ভাবছে মুখের ভাব দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।

বাবা মারা গেলে আপোস না করে উপায় ছিল না আমার, আবার বলল সনি। আপোস করা মানে পরাজয় মেনে নেয়া। তাই মেনে নিতাম। তারপর সুযোগে অপেক্ষায় থাকতাম। পাঁচ বছর বা দশ বছর কেটে যেত, তারপর প্রতিশোধ নেবার সূযোগ আসত। এই যে সুযোগটা আসত, এটাকে তুমি কি বলবে, পীট? কপালের জোর? মোটেই না। এরই নাম কৌশল, এরই নাম প্ল্যান। শেষের দিকে সনির কথায় ঝাঁঝের মাত্রা কমে গেল।

কিচেন থেকে মস্ত এক ডিশে করে নিয়ে আসা হলো স্প্যাগেটি। সাথে কয়েকটা প্লেট, কাঁটা চামচ, গ্লাস এবং মদের বেশ কয়েকটা বোতল। কথা ওদের থামেনি, কিন্তু খাবারের প্রতি অবহেলাও করছে না কেউ, শুধু মাইকেল ছাড়া। অবাক হয়ে দেখছে সে ব্যাপারটা। ভেবেই পাচ্ছে না এই পরিস্থিতিতে খিদে আসে কোত্থেকে! ক্লেমেঞ্জা আর টেসিও নড়েচড়ে বসে তৈরি হয়ে নিয়ে খাবারের উপর হামলা চালাল। সমিকেও প্রস্তুতি নিয়ে শুরু করতে দেখা গেল। এটা যদি সম্ভব হয়, খাবার নিয়ে তিনজনের মধ্যে মারামারি লেগে গেলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই, কথাটা ভেবে হাসি পেল মাইকেলের। টম অবশ্য এসব লক্ষ্যই করছে না। শোকে বা ভয় কাহিল হয়নি সে, বুদ্ধির ধার দিয়ে জট ছিঁড়ে প্রকৃত অবস্থাটা অনুধাবন করতে এতই মগ্ন যে, কারও নড়াচড়া তার দৃষ্টিতে ধরাই পড়ছে না ভাল করে, শুধু কে কি বলছে তাই শুনতে পাচ্ছে।

সলোযোর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে, সে ব্যাপারেও ক্লেমেঞ্জার সাথে দ্বিমত পোষণ করল টেসিও। তার ধারণা খবরটা পেয়ে ঘাবড়াবে না সলোমো। সে বরং ভাববে, বুদ্ধুটা খুন হয়ে ভালই হয়েছে, মাসে মাসে আর বেতন গুণতে হবে না। ভয়ও সে পাবে না। এই অবস্থায় পড়লে কর্লিয়নিরা কি ভয় পেত?

এতক্ষণ নির্বাক শ্রোতার ভূমিকা পালন করেছে মাইকেল। টেসিও থামতে নরম গলায় সে বলল, এসব ব্যাপারে আমি একেবারে আনাড়ী, কিন্তু তবু একটা কথা বলতে চাই। সলোযে লোকটা সম্পর্কে তোমাদের মুখে মোটামুটি সবই তো শুনলাম। টমের সাথে যোগাযোগ কেটে দিয়েছে সে, এটাকে ভাল লক্ষণ বলে মনে করছি না আমি। আমার ধারণা গোপনে কোন সুবিধে করে নিচ্ছে ও। তৈরি হয়েই হয়তো এমন কোন চাল চেলে বসবে, দেখতে পাব নিরাপদ জায়গায় বসে কর্লিয়নিদের মাথার ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে সে। এখন আমাদের উচিত আগে থেকে সঠিক আঁচ করা সেই চালটা ওর কি হবে। নির্ভুলভাবে তা যদি জানতে পারি, ও কোন সুবিধে করতে পারবে না, আমরাই লাঠি ঘোরাব।

মাইকেলের বক্তব্যের সাথে সবাই একমত হয়ে মাথা নাড়ল। ঠিক এই কথাগুলো গুছিয়ে সে কেন আগে বলতে পারেনি ভেবে নিজের উপর একটু রাগ হলো সনির। মুখ একটু ভার করে ফেলল সে। বলল, আমি তাই ভেবেছি। কি সুবিধে করে নিতে পারে তাও জানা আছে আমার। লুকাকে সরাতে পারলেই মস্ত সুবিধে হয়ে যায় সলোহোর। একটু থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সে। চারদিকে রটিয়ে দেয়া হয়েছে কর্লিয়নিরা লুকাকে তার পুরানো দায়িত্বগুলো দেবার জন্যে খুঁজছে, দেখা যাক কি হয়।

থামল সনি। তারপর গ্লাসে মদ ঢালতে শুরু করে আবার বলল, আরেকটা সুবিধে পাবার চেষ্টা করতে পারে সলোযো। নিউ ইয়র্কের আর সব পরিবারগুলোর সমর্থন। কাঁধ ঝাঁকাল সে। ঢক ঢক করে গলায় মদ ঢালল। কালই হয়তো খবর আসবে। আমাদেরকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয়া হবে সংগ্রাম শুরু হলে ওরা সবাই আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।

সেক্ষেত্রে?

সলোযোর প্রস্তাব মেনে না নিয়ে উপায় থাকবে না, মাথা নিচু করে বলল সনি।

মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল হেগেন। ঠিক। ডনের অনুমতি ছাড়া যুদ্ধ ঘোষণা করার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি সব বোঝেন, এবং সবকটা পরিবারের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণার ঝুঁকি একমাত্র তিনিই নিতে পারেন। ডনের রাজনৈতিক ক্ষমতার ওজন জানা আছে সবার, সেই ক্ষমতার সাহায্য সব সময় দরকার হয় সবগুলো পরিবারের, সুতরাং কিসের বিনিময়ে কি চেয়ে বোঝাঁপড়া করতে হবে তা একমাত্র ডনই ভাল বুঝবেন।

কোথাকার পানি কোথায় গড়াবে, কিছুই বলা যায় না, বলল সনি।

চিন্তিতভাবে উপর নিচে মাথা নাড়ল হেগেন।

দপ করে যেন জ্বলে উঠল ক্লেমেঞ্জ। কর্কশ, রূঢ় গলায় বলল, এ-বাড়িয় কাছেপিঠে খোদ যমও ঘেষতে পারবে না, সনি। এব্যাপারে তুমি চিন্তা করো না। যার বাটনম্যান ইদানীং বেঈমানী করেছে তার মুখে দৃঢ় ভঙ্গির কথাগুলো ঠিক যেন মানাল না।

ভুরু কুঁচকে কয়েক সেকেণ্ড ক্লেমেঞ্জার দিকে তাকিয়ে থাকন সনি। তারপর ধীরে ধীরে টেসিওর দিকে ফিরল। হাসপাতালের খবর বলো। যারা পাহারা দিচ্ছে সবাই তোমার বাছাই করা লোক তো?

আজকের আলোচনায় এই প্রথম টেসিওর চেহারায় আত্মবিশ্বাস ফুটে উঠল। ধীরস্থির ভঙ্গিতে কথা বলছে সে, বাছাই করা লোকদের নিয়েই আমার দল। হাসপাতালের ভিতরে ওরা প্রতিটি ইঞ্চির ওপর চোখ রেখেছে। বাইরে, চারদিক থেকে একরকম গায়ে গা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওরা। ওরা না চাইলে বাতাসেরও ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই। একটু থেমে টেসিও বলল, পুলিশ বিভাগও কড়া পাহারার ব্যবস্থা করেছে। তবে একটা হাস্যকর ব্যাপার হলো, ভনের কামরার বাইরে গোয়েন্দারা বসে অপেক্ষা করছে, উনি জ্ঞান ফিরে পেলেই কথা বলবে, তাই। কিচেনেও পাহারা আছে, কিন্তু খাবার পরীক্ষা করা হচ্ছে না তার কারণ, ডন এখনও কিছু খাচ্ছেন না। কোন দিক থেকে কোন সুবিধে করতে পারবে না হাসপাতালে, উনকে ওদের নাগালের একেবারে বাইরে রেখেছি আমরা।

রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিল সনি। হাইজ্যাকের সম্ভাবনা ষোলো আনা। প্রশ্ন হলো, কাকে? একটু হাসল সে। আমাকে? এদিক ওদিক মাথা দোলাল সে। আমাকে নিয়ে গেলে ওদের উদ্দেশ্য পূরণ হবে না। এখন আমি পরিবারের মাথা, কারবার করতে হবে আমার সাথে। উঁহু, আমাকে নিয়ে যাবার মতলব নেই, ওদের। ছোট ভাই মাইকেলের দিকে তাকাল সনি, আবার হাসল সে। কে জানে, তোমাকে দিয়ে ওদের কাজ চলবে কিনা! সলোমোর মতলব কিছুই বলা যায় না। তোমাকে আটকে রেখে আমার সাথে রফা করার প্রস্তাব পাঠাবে, এই রকম ভেবে থাকতে পারে।

অসন্তুষ্ট চিত্তে ভাবছে মাইকেল, কে-র সাথে দেখা করা বুঝি শিকেয় উঠল। বাড়ি থেকে সনি বোধহয় বেরুতেই দেবে না তাকে।

দূর! বিরক্তির সাথে বলল হেগেন। জিম্মি রাখার কথা ভেবে থাকলে মাইককে ওরা কত আগেই তো ধরে নিয়ে যেতে পারত। জানতে কারও বাকি। আছে, পারিবারিক ব্যবসার সাথে মাইকের কোন সম্পর্ক নেই? মাইক একজন সাধারণ সিটিজেন, ওর সাথে এই রেষারেষির কোন সম্পর্ক নেই। সলোযো এত নীচ কাজ করতে সাহসই পাবে না। জানে, এ কাজ করলে আর সব পরিবারগুলো মুহূর্তে তার ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করবে। শুধু তাই নয়, সবগুলো পরিবার টাটাগ্লিয়াদের বাধ্য করবে সনোযোকে ধরে আমাদের হাতে তুলে দেবার জন্যে।

মুখের বিরক্তিভাব বদলে গেল হেগেনের। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল। যেন বহুদূর অবধি দেখতে পাচ্ছে। আবার কথা বলল সে, পরিবারগুলোর সমর্থন আদায় করছে ও, এটাই তার গোপন সুবিধে। কাল হয়তো সবার তরফ থেকে একজন প্রতিনিধি আসবে আমাদের কাছে। বলবে, সলোযোর সাথে ব্যবসা করতেই হবে আমাদের।

ধীরে ধীরে নিঃশব্দে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মাইকেল বলল। একটা কথা। রাতে আমাকে একটু বেরুতে হবে।

বিস্ময়ে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল সনি, কি বলছ তুমি?

বাবাকে দেখতে চাই, হাসছে মাইকেল, আরও একটা কাজ আছে। বাবা ডন কর্লিয়নির স্বভাব পেয়েছে সে, আসল উদ্দেশ্যটা কাউকে জানায় না। না জানাবার পিছনে কোন কারণ থাকে না, এমনি এটা একটা অভ্যাস ওর।

কিচেন থেকে উত্তেজিত গলা ভেসে আসছে শুমতে পেয়ে কামরা থেকে বেরিয়ে গেল ক্লেমেঞ্জা। প্রায় তখুনি ফিরে এলো সে। হাতে একটা বুলেট প্রুফ গেঞ্জি দেখা যাচ্ছে। বিরাট একটি মাছকে গেঞ্জিটা দিয়ে জড়িয়ে রাখা হয়েছে।

গেঞ্জিটা দেখেই ছ্যাৎ করে উঠল সনির বুক।

 ঝট করে উঠে দাঁড়াল হেগেন। কাঁপছে সে।

ক্লেমেঞ্জা বলল, পলি পাটোর খবর পেয়ে প্রতিদান হিসাবে এই খবরটা পাঠিয়েছে সলোযো।

কেঁপে গেল টেসিওর কণ্ঠস্বর, অস্ফুটে বলল সে, যা ভেবেছিল্লাম তাই! লুকা ব্রাসিকে কতল করেছে সলোয়যা।

চুরুট ধরাতে গিয়ে সনি লক্ষ্য করল, তার হাত দুটো কাঁপছে। গ্লাসে মদ ঢেলে নিয়ে ঢক ঢক করে নিঃশেষ করল। ঠক করে নামিয়ে রাখল গ্লাসটা, মেঝেতে ছিটকে পড়ল ভাঙা কাঁচ।

কিছু বুঝতে পারছে, কিছু গোলমেলে লাগছে, মাইকেলের। এর-ওর মুখের দিকে বোকার মত তাকাচ্ছে সে। কিন্তু কেউ কথা বলছে না দেখে নিজেই জানতে চাইল, মরা মাছ কেন? ওটার মানে কি?

সে প্রশ্নের উত্তর এলো আইরিশ কনসিলিয়রি টম হেগেনের মুখ থেকে, মহাসাগরের নিচে ঘুমাচ্ছে লুকা ব্রাসি। এটা একটা সিসিলীয় সাঙ্কেতিক বার্তা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *