প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড
চতুর্থ খণ্ড
পঞ্চম খণ্ড

১.৬ কারখানার হাসপাতালে

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ

মঁসিয়ে ম্যাদলেন ফাঁতিনেকে কারখানার হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে নার্সদের দেখাশোনা করতে বলল। তার গায়ে তখন দারুণ জ্বর এবং রাত্রিতে প্রলাপ বকতে লাগল জ্বরের ঘোরে। পরে সে ঘুমিয়ে পড়ল।

পরদিন দুপুরে তার ঘুম ভাঙলে সে বুঝতে পারল তার বিছানার পাশে কার নিশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মশারিটা একটু তুলে দেখল মঁসিয়ে ম্যাদলেন তার মাথার দিকের দেয়ালের উপর একটি ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তির তলায় দাঁড়িয়ে বেদনার্ত দৃষ্টিতে সেই মূর্তির দিকে তাকিয়ে আছে।

এখন ফাঁতিনের চোখে মঁসিয়ে ম্যাদলেন একেবারে বদলে গেছে। তার মনে হচ্ছিল ম্যালেনের গোটা চেহারাটা এক স্বর্গীয় জ্যোতিতে জ্যোতির্ময় হয়ে উঠেছে। তার ঠোঁট দুটো কাঁপছিল। ফাঁতিনে কোনও বাধা সৃষ্টি না করে ম্যালেনের দিকে নীরবে তাকিয়ে রইল। অবশেষে সে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করল, আপনি কী করছেন?

ম্যাদলেন সেইখানে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়েছিল। ফাঁতিনের ঘুম ভাঙার জন্য অপেক্ষা করছিল সে। ফাঁতিনের ঘুম ভেঙেছে দেখে তার হাতটা ধরে নাড়ি টিপে বলল, এখন কেমন আছ?

ফাঁতিনে বলল, এখন ভালো বোধ করছি। আমার ঘুম ভালো হয়েছে। আমার মনে হয় আমি ভালো হয়ে গেছি। মারাত্মক কিছু হয়নি।

ম্যাদলেন এবার ফাঁতিনের প্রশ্নটার জবাব দিয়ে বলল, আমি তোমার জন্য প্রার্থনা করছিলাম।

গতকাল রাত থেকে আজকের সারা সকাল ফাঁতিনে সম্বন্ধে সব খবরাখবর সগ্রহ করেছে। তার সকরুণ জীবনকাহিনীর সব জেনেছে। সে বলল, তুমি বড় কষ্ট ভোগ করেছ মেয়ে। তবে আর কোনও কষ্ট তোমার থাকবে না। সব ক্ষতি পূরণ হয়ে যাবে। এইভাবে যে দুঃখভোগের মধ্য দিয়ে মানুষ সেন্ট হয় তার জন্য অপরকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। যে নরকযন্ত্রণা তুমি ভোগ করেছ সে নরকই স্বর্গের দ্বারপথ। সেই নরকের মধ্য দিয়ে তোমাকে স্বর্গে যেতে হবে।

ম্যাদলেন দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফাঁতিনে তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।

গতরাত্রিতেই জেতার্ত একটা চিঠি নিয়ে সকাল হতেই ডাকঘরে যায় চিঠিটা ফেলতে। চিঠিটা প্যারিসের পুলিশ বিভাগের সচিবের কাছে লেখা। পুলিশ ফাঁড়িতে গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে তা শহরে জানাজানি হয়ে যায়। তাই সে ডাকঘরে চিঠি ফেলতে গেলে ডাকঘরের লোকরা ভাবল সে পদত্যাগপত্র পাঠাচ্ছে।

মঁসিয়ে ম্যাদলেন থেনার্দিয়েরকে একখানি চিঠি দিল। সে তিনশো ফ্ৰাঁ পাঠিয়েছে। চিঠিতে লিখে দিল একশো ফ্রাঁ ঋণের টাকা কেটে নিয়ে বাকি টাকায় সে ফাঁতিনের মেয়েকে দিয়ে যাবে মন্ত্রিউলে।

সে চিঠি পেয়ে থেনার্দিয়ের আশ্চর্য হয়ে গেল। সে বলল, হা ভগবান! মেয়েটাকে এখন পাঠানো চলবে না। এ যে দেখছি সোনার খনি। বুঝতে পেরেছি কী হয়েছে। মনে হয় কোনও ধনী লোক ওর মার প্রেমে পড়েছে।

থেনার্দিয়ের চিঠির জবাবে মোট পাঁচশো ফ্রাঁ দাবি জানাল। লিখল, ডাক্তার দেখাতে ও তার রোগ সারাতে অনেক খরচ হয়েছে। আসলে ওর মেয়েদের ডাক্তারখরচের সব বিলগুলোর কথা উল্লেখ করল। শেষে তিনশো ফ্রাঁ পেয়েছে সেটাও জানাল।

ম্যাদলেন আরও তিনশো ফ্ৰাঁ পাঠিয়ে কসেত্তেকে তাড়াতাড়ি পাঠাতে লিখে দিল।

থেনার্দিয়ের তা পেয়ে বলল, বয়ে গেছে আমাদের পাঠাতে।

এদিকে ফাঁতিনে তখনও হাসপাতালেই ছিল। তার রোগ সারেনি। হাসপাতালের নার্সরা প্রথমে ঘৃণার চোখে দেখত তিনেকে। এইসব অধঃপতিত মেয়েকে তারা ভালো চোখে দেখে না। কিন্তু ফাঁতিনের স্র স্বভাব এবং ভদ্র আচরণ দেখে নার্সরা সন্তুষ্ট হল। তাছাড়া তারা যখন দেখল ফাঁতিনে এক সন্তানের জননী তখন তাদের মমতা হল তার ওপর। জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকার সময় ফাঁতিনে একবার বলে, আমি পাপ করেছি ঠিক, কিন্তু আমার সন্তান আমার কাছে এলে বুঝব ঈশ্বর আমাকে ক্ষমা করেছে। আমি নোংরা

জীবনযাপন করার জন্যই তাকে কাছে রাখতে পারিনি। আমি তার জন্যই, তার ব্যয়ভার। বহনের জন্যই কুপথে নেমেছি। সে এখানে এলে বুঝব ঈশ্বরের আশীর্বাদ আমি পেয়েছি। তার নিষ্পাপ মুখ দেখে আমি জোর পাব মনে। আমার জীবনে কী ঘটেছে না ঘটেছে তার কিছুই জানে না সে। দেবদূতের মতো সরল নিষ্পাপ সে। তার বয়সে আমাদেরও দেবদূতের মতো পাখা ছিল।

দিনে দুবার করে ম্যাদলেন হাসপাতালে এসে দেখা করত ফাঁতিনের সঙ্গে। সে দেখতে এলেই ফাঁতিনে জিজ্ঞাসা করত, কসেত্তে কখন আসবে?

ম্যাদলেন বলত, সম্ভবত কাল। যে কোনও সময়েই সে এসে পড়তে পারে।

এ কথা শুনে ফাঁতিনের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠত।

কিন্তু ফাঁতিনের অবস্থা মোটেই ভালোর দিকে যাচ্ছিল না। বরং দু এক সপ্তা যেতেই তার অবস্থা খারপের দিকে যেতে লাগল। তার ঘাড়ের উপর লাগানো একমুঠো বরফের হিম তার অস্থিমজ্জার ভেতরে ঢুকে দীর্ঘদিনের সঞ্চিত পুরনো সব রোগ ঠেলে এনেছে। অধ্যাপক লেনেক অনেক করে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে লাগলেন।

রোগ পরীক্ষা হলে ম্যালেন ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করল, কেমন দেখলেন?

ডাক্তার বলল, তার কি কোনও সন্তান আছে?

ম্যাদলেন বলল, তার একটি কন্যাসন্তান আছে।

তা হলে যত তাড়াতাড়ি পারেন তাকে এখানে আনার ব্যবস্থা করুন।

ম্যাদলেন ভয় পেয়ে গেল। কিন্তু ফাঁতিনে তাকে ডাক্তার কী বলল তা জিজ্ঞাসা করায় সে বলল, ডাক্তার জোর করে হেসে বলল, তোমার মেয়ে তোমার কাছে এলেই রোগ সেরে যাবে।

ফাঁতিনে বলল, ডাক্তার ঠিকই বলেছেন। থেনার্দিয়েররা কেন এখনও কসেত্তেকে রেখে দিয়েছ? কবে সে ঠিক এসে যাবে? তা হলে আমি খুব সুখী হব।

কিন্তু থেনার্দিয়েররা যত সব আজেবাজে কারণ দেখিয়ে আটকে রেখে দিয়েছিল কসেত্তেকে। তারা লিখল, এখনও ছোটখাটো অনেক দেনা আছে, তার হিসাব তারা তৈরি করছে। তাছাড়া অসুখের পর সে এখন পথ হাঁটতে পারবে না এই শীতকালে।

ম্যাদলেন আবার একটা চিঠি লিখল ফাঁতিনের কথামতো। তার পর চিঠিটার শেষে ফাঁতিনের সইটা করিয়ে নিল।

কিন্তু ইতোমধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে গেল। আমরা আমাদের জীবনের রহস্যময় উপাদানগুলোকে নাড়াচাড়া করে জীবনকে যেভাবেই গড়ে তুলতে চাই না। কেন, ভাগ্যের কুটিল বিধান সব ওলটপালট করে দেয়।

.

সেদিন সকালে তার অফিসে বসে কতকগুলি জরুরি কাজ সেরে নিচ্ছিল ম্যাদলেন। যদি তাকে মঁতফারমেলে যেতে হয় তার জন্য কাজগুলো সেরে রাখছিল। এমন সময় তাকে জানানো হল ইন্সপেক্টর জেতার্ত তার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে। জেভার্তের নামটা তার ভালো লাগল না। সেদিনের সেই ঘটনার পর থেকে জেভার্তের সঙ্গে দেখা হয়নি তার। জেভাৰ্তও তাকে এড়িয়ে চলে।

ম্যাদলেন বলল, তাকে নিয়ে এস এখানে।

বলার সঙ্গে সঙ্গে জেতার্ত ঢুকে পড়ল ঘরে।

ম্যাদলেন তার টেবিলে বসে রইল হাতে কলম নিয়ে। কতকগুলি আইনভঙ্গের রিপোর্ট পড়ছিল সে। সে নীরসভাবে বসতে বলল জেতার্তকে।

জেভাৰ্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে ম্যাদলেনকে নমস্কার জানিয়ে ম্যালেনের সামনে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল।

জেভাৰ্তকে আগে যারা দেখেছে, যারা তার চরিত্রের কথা জানে তারা এখন তাকে দেখলে অবাক হয়ে যাবে অপার বিস্ময়ে। ম্যালেনের প্রতি তার সেই দীর্ঘসঞ্চিত গোপন বিতৃষ্ণা আর নেই। জেভার্তের কঠোর, নিষ্ঠুর, অনমনীয় স্বরূপের সঙ্গে পরিচিত যে কোনও লোক তাকে এখন দেখলে বুঝতে পারবে সে একটা বড় রকমের আত্মিক সংকটে ভুগছে। এখন যেন তার গোটা আত্মাটাই ফুটে উঠেছে তার চোখে-মুখে। সব আবেগপ্রবণ লোকের মতো জেভার্তেরও খুব তাড়াতাড়ি মনের ভাবের পরিবর্তন হয়। তখন তার আচরণটা সত্যিই রহস্যময় মনে হচ্ছিল। সে এমনভাবে ম্যাদলেনকে অভিবাদন জানাল যে ভাবের মধ্যে বিন্দুমাত্র ক্রোধ বা বিতৃষ্ণা ছিল না। সে ম্যালেনের সামনে থেকে কয়েক পা দূরে সামরিক কায়দায় ধৈর্য ধরে সমভরে দাঁড়িয়ে রইল। টুপিটা হাতে নিয়ে নম্র নীরব আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে সে দাঁড়িয়ে ছিল। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন একজন সৈনিক তার ঊর্ধ্বতন অফিসারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, আবার একই সঙ্গে মনে হচ্ছিল কোনও অপরাধী আসামি যেন দাঁড়িয়ে আছে তার বিচারকের সামনে। কখন দয়া করে মেয়র তার দিকে তাকাবে তার জন্য নীরবে অপেক্ষা করছে সে। তার পাথরের মতো কঠিন মুখখানায় একমাত্র এক ব্যাপ্ত বিষাদ ছাড়া অতীতের আর কোনও আবেগানুভূতির চিহ্নমাত্র নেই। তার সমস্ত চেহারাটার মধ্যে তখন ফুটে উঠেছিল এক উদ্ধত আনুগত্য আর পরাভূত বীরত্বের এক মিশ্রিত ভাব।

অবশেষে হাত থেকে কলমটা নামিয়ে ম্যাদলেন প্রশ্ন করল, কী বলবে জেভার্ত? জেভাৰ্ত একমুহূর্ত কী ভেবে নিয়ে বিষাদগম্ভীর কণ্ঠে বলল, এক দারুণ শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা ঘটে গেছে মঁসিয়ে।

কী ধরনের শৃঙখলভঙ্গ?

নিম্নপদস্থ এক সরকারি কর্মচারী একজন ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি দারুণ অশ্রদ্ধার ভাব দেখিয়েছে এবং তাকে অপমান করেছে। আমি কর্তব্যের খাতিরে আপনাকে জানাতে এসেছি।

ম্যাদলেন প্রশ্ন করল, দোষী কে?

জেভার্ত বলল, আমি নিজে।

তুমি?

হ্যাঁ।

সেই ম্যাজিস্ট্রেট কে যার প্রতি অসদাচরণ করা হয়েছে?

আপনিই সেই ম্যাজিস্ট্রেট, মঁসিয়ে মেয়র।

চমকে উঠল ম্যাদলেন। চোখ দুটো নামিয়ে বলে চলল জেভাৰ্ত, আমি আপনার কাছে অনুরোধ জানাতে এসেছি আপনি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাকে বরখাস্ত করার জন্য সুপারিশ করুন।

ম্যাদলেন মুখ তুলে কী বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু জেভার্ত তাকে বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে লাগল, আপনি হয়তো বলতে পারেন আমি তো পদত্যাগ করতে পারি। কিন্তু সেটা যথেষ্ট হবে না। পদত্যাগ করাটা সম্মানের ব্যাপার। কিন্তু অপরাধ করেছি এবং তার জন্য আমার শাস্তি পাওয়া উচিত। আমাকে বরখাস্ত করা উচিত।

একটু থেমে আবার বলতে লাগল জেতার্ত, মঁসিয়ে মেয়র, দিনকতক আগে আপনি আমার প্রতি অন্যায় আচরণ করেছিলেন। এবার ন্যায়সঙ্গত আচরণ করুন।

ম্যাদলেন বলল, কিন্তু কী বলছ তুমি আমি তো বুঝতেই পারছি না। তুমি কিভাবে আমাকে অপমান করেছ? কী অপরাধ করেছ তুমি? আমার কী ক্ষতি করেছ? তুমি বলছ তুমি চাকরি থেকে–

জেভার্ত বলল, হ্যাঁ বরখাস্ত।

ঠিক আছে বরখাস্ত, কিন্তু কেন?

আমি বুঝিয়ে বলছি।

জেভাৰ্ত একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবেগহীন কণ্ঠে বলতে লাগল, আমি সেই মেয়েটির ব্যাপারে আপনার ওপর এমন প্রচণ্ডভাবে রেগে গিয়েছিলাম যে ছয় সপ্তাহ আগে আমি আপনার নামে নিন্দাবাদ করেছি।

তুমি আমার নামে নিন্দা করেছ?

হ্যাঁ, প্যারিসে পুলিশ বিভাগের প্রধান সচিবের কাছে।

মঁসিয়ে ম্যাদলেন জেভার্তের মতো হাসত না। কিন্তু এবার সে জেভার্তের কথা শুনে হো হো শব্দে হেসে উঠল।

একজন মেয়র একজন পুলিশের কাজে হস্তক্ষেপ করেছে, এই নিন্দা করেছ?

না, আপনি একজন ভূতপূর্ব কয়েদি, এই বলে।

ম্যালেনের মুখের ভাবটা সহসা বদলে গেল। জেভার্ত তখন মাটির দিকে তাকিয়ে বলে চলল, আমি তাই বিশ্বাস করতাম। এ ধারণা আমার অনেক দিন ধরে ছিল। আপনার সঙ্গে মুখের কিছু মিল, ফেবারোলে আপনি যে খোঁজখবর নিয়েছিলেন তার ব্যাপারটা, ফকেলেভেন্তের গাড়ি ভোলার সময় আপনি যে দৈহিক শক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন সেটা, আপনার অভ্রান্ত লক্ষ্যভেদ, কিছুটা খোঁড়ানোর ভাব… এগুলো এমন কিছু না। তবু আমি সন্দেহ করতাম আপনিই জাঁ ভলজাঁ।

কী নাম বললে?

জাঁ ভলজাঁ। আজ হতে কুড়ি বছর আগে আমি যখন তুলো’র জেলে এক প্রহরীর কাজ করতাম তখন সে সেই জেলের কয়েদি ছিল। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সে এক বিশপের বাড়িতে চুরি করে এবং রাস্তার উপর একটি ছোট ছেলের টাকা চুরি করে। তাকে আবার ধরার চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু সে পালিয়ে যায়। তার পর আট বছর তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমি বিশ্বাস করেছিলাম… যাই হোক, রাগের মাথায় আমি প্যারিসে কর্তৃপক্ষের কাছে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করি।

ম্যাদলেন টেবিলের উপর কাগজগুলো আবার দেখতে লাগল। তার পর বলল, তারা কী বলল?

জেভার্ত বলল, তারা বলল, আমি পাগল।

আর কী বলল?

বলল, তারা ঠিক।

তুমি এটা বুঝতে পেরেছ জেনে খুশি হলাম।

তারাই ঠিক কারণ আসল জাঁ ভলজাঁ ধরা পড়েছে।

ম্যালেনের হাত থেকে একটা কাগজ পড়ে গেল। সে জেভার্তের দিকে কড়াভাবে তাকিয়ে বলল, তা বটে।

জেভার্ত বলল, ব্যাপারটা হল এই। এইলি লে–হত-~~ ক্লোশে গাঁয়ে শ্যাম্পম্যাথিউ নামে একটা লোক ছিল। সে ছিল এক গরিব নিরাশয়। সে এত গরিব ছিল যে কিভাবে জীবন ধারণ করত সেটা ছিল সকলের বিস্ময়ের বস্তু। গত শরঙ্কালে সে একবার কিছু আপেল চুরি করার জন্য গ্রেপ্তার হয়। তার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। সে পাঁচিলে উঠে গাছের কিছু ডাল ভাঙে। কিছু আপেলও তার হাতে পাওয়া যায়। তাকে জেল-হাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। সামান্য একটা ঘটনা বলে সেটা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। কিন্তু ঘটনাটা সহসা এক অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়। সে যে জেলে হাজতবাস করছিল সেটা তখন মেরামত হওয়ার জন্য তাকে অ্যারোসের জেলে পাঠানো হয়। সেই জেলে একজন পুরনো কয়েদি ছিল। তার নাম ছিল ব্রিভেত। সে খুব বিশ্বাসী ছিল, কারণ তার আচরণ ভালো ছিল। সে শ্যাম্পম্যাথিউকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠে, আমি ওকে চিনি। ও হচ্ছে এক পুরনো কয়েদি। তুল জেলে আমরা একসঙ্গে কুড়ি বছর ছিলাম। ওর নাম হচ্ছে জাঁ ভলজাঁ।

শ্যাম্পম্যাথিউ অবশ্য একথা অস্বীকার করে। সে বলে জাঁ ভলজাঁ’র নাম সে কখনও শোনেনি। কিন্তু এ ব্যাপারে তদন্ত করা হয়। তদন্ত করে দেখা যায় তিরিশ বছর আগে শ্যাম্পম্যাথিউ বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ফেবারোল গাঁয়ে গাছ কাটার কাজ করে বেড়াত। মাঝখানে ছিল অনেকদিনের ফাঁক। কিন্তু পরে এই অভার্নে ও প্যারিসে খোঁজখবর নেওয়া হয়। ম্যাথিউ বলে, ও চাকা মেরামত আর চাকা তৈরির কাজ করত। আর ওর একটা মেয়ে ছিল যে বেড়ার কাজ করত। পরে সে ঘুরতে ঘুরতে ফেবারোলে চলে আসে। কিন্তু চুরির দায়ে জেলে যাওয়ার আগে জাঁ ভলজাঁ কী করত? সে ফেবারোলে গাছ কাটার কাজ করত। কিন্তু এইটাই সব নয়। ভল’র খ্রিস্টীয় নাম ছিল আঁ আর তার মা’র কুমারীজীবনের নাম ছিল ম্যাথিউ। মনে হয় সে জেল থেকে বেরিয়ে এসে তার আসল নামটা গোপন করে তার নিজের ও মা’র নাম দুটো মিলিয়ে নিজেকে জাঁ ম্যাথিউ নামে চালাতে থাকে। আর এটাই স্বাভাবিক। অভার্নে অঞ্চলে জাকে শা বলে আর তাই থেকে লোকের মুখে মুখে শ্যাম্প হয়। এইভাবে তার নাম শ্যাম্পম্যাথিউ হয়ে দাঁড়ায়। আমার কথাটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন? ফেবারোলে আরও তদন্ত করা হয়। কিন্তু সেখানে জাঁ ভলজাঁদের পরিবারের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এটা এমন কিছু অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। এই ধরনের পরিবারের লোকেরা এক জায়গায় কখনও থাকে না। তিরিশ বছর পরে ফেবারোল গাঁয়ের কোনও লোক জাঁ ভলজাঁদের কথা স্মরণ করতে পারল না। তার পর তুলতে তদন্ত করা হয়। সেখানে আরও দু জন কয়েদি পাওয়া যায় যারা তাকে চিনত। এই দু জন কয়েদির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তারা হল কোশেপেত আর শেনিলদিউ। তাদের দুজনকেই অ্যারাস জেলে আনা হয় এবং তারা দু জনেই ব্রিভেতের কথাকে সমর্থন করে এবং বলে তথাকথিত শ্যাম্পম্যাথিউই হল জাঁ ভলজাঁ। দু জনেরই বয়স চুয়ান্ন, এক বয়স, এক চেহারা, দেহের গঠন এক, এককথায় সেই মানুষ। ঘটনাটা ঘটে সেদিন, যেদিন আমি আপনার বিরুদ্ধে চিঠিটা পাঠাই। তারা আমাকে চিঠির উত্তরে জানায় আসল জাঁ ভলজাঁ অ্যারাসে জেলে ভরা আছে। এইটাতেই আমি আরও আঘাত পাই। অ্যারাসে গিয়ে ব্যাপারটা নিজের চোখে দেখে আসার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় আমাকে।

ম্যাদলেন বলল, তার পর?

জেভার্ত তেমনি গম্ভীরভাবে বলল, সত্য সত্য মঁসিয়ে মেয়র। আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি সেই শ্যাম্পম্যাথিউ নামে লোকটাই আসল জাঁ ভলজাঁ। আমিও লোকটাকে চিনতে পারি।

ম্যাদলেন নিচু গলায় বলল, এ বিষয়ে তুমি নিশ্চিত?

জেভাৰ্ত তার কথার নিশ্চয়তা বোঝাবার জন্য এক নীরস হাসি হেসে বলল, হ্যাঁ, এ বিষয়ে নিশ্চিত আমি। জাঁ ভলকে দেখার পর আমিও এই কথা ভাবছি যে আমি কী করে এত বড় একটা ভুল ধারণাকে পোষণ করলাম এতদিন। আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি মঁসিয়ে মেয়র। আমাকে মার্জনা করুন।

মাত্র কয়েক সপ্তা আগে যে তাকে তার নিম্নতন কর্মচারীদের সামনে অপমান করেছে, তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে গিয়ে তার মধ্যে একই সঙ্গে সরলতা আর আত্মমর্যাদাবোধের মিশ্রণে এক ভাব ফুটে ওঠে তার চোখে-মুখে।

ম্যাদলেন হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল, কিন্তু লোকটা কী বলে?

জেভার্ত বলল, দেখুন মঁসিয়ে মেয়র, অপরাধটা ওর পক্ষে সত্যিই গুরুতর যদি সত্যিই ভলজাঁ হয়। কারণ ও একজন জেল-ফেরত কয়েদি। পাঁচিল ডিঙিয়ে আপেল চুরি করা কোনও ছেলে বা প্রাপ্তবয়স্ক লোকের পক্ষে এমন কিছু গুরুতর অপরাধ নয়, কিন্তু কোনও এক জেল-ফেরত কয়েদির পক্ষে একটা গুরুতর অপরাধ। পাঁচিল ডিঙিয়ে চুরি করতে যাওয়ার অপরাধ, তাতে আবার জেল-ফেরত কয়েদি–এর বিচার ম্যাজিস্ট্রেট করবে না, করবে বিশেষ একদল বিচারক এবং এর শাস্তি কয়েকদিনের জেল নয়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। তার ওপর আছে একটি ছেলের টাকা চুরির অভিযোগ, অবশ্য ছেলেটাকে যদি পাওয়া যায়। লোকটা যদি ভলজাঁ হয় তা হলে তার অবস্থা সত্যিই শোচনীয়। কিন্তু লোকটা এমন চতুর যে তাতে আমার আরও সন্দেহ হয়। ভলজাঁ’র নামটা শুনে সে এমনভাবে তাকাতে লাগল যেন সে কিছুই জানে না। সে বলল, আমার নাম শ্যাম্পম্যাথিউ, এ ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। লোকটা সত্যিই চালাক। কিন্তু চালাকি করে কিছু হবে না। জোর সাক্ষী আছে। চার-চারজন সাক্ষী তাকে চেনে। অ্যারাসে তার বিচার হবে এবং আমাকেও সাক্ষ্য দিতে হবে।

ম্যাদলেন টেবিলের উপর রাখা কাগজগুলো আবার দেখতে লাগল। দেখে মনে হচ্ছিল তার মনে অনেক চিন্তা আছে। সে ইন্সপেক্টারের দিকে তাকিয়ে বলল, ধন্যবাদ জেতার্ত। এত সব খুঁটিনাটি শোনার আমার কোনও আগ্রহ নেই। তাছাড়া আমাদের প্রত্যেকেরই আপন আপন কাজ আছে। বুলোপিয়েদ নামে একমহিলা গাড়িচালক পিয়ের শেষনেলভের বিরুদ্ধে নালিশ করেছে, তাকে আর তার মেয়েকে আর একটু হলে চাপা দিত। চালক হিসেবে লোকটা হঠকারী, তাকে একটা উচিত শিক্ষা দিতে হবে। আরও অনেক অভিযোগ আছে। সেগুলো তদন্ত করে দেখতে হবে। এগুলো সব পুলিশ আইন ভঙ্গ করার ব্যাপার। তোমাকে আমি অনেক কাজ দেব। তবে তুমি তো অ্যারাসে যাবে। বোধ হয় এক সপ্তা থাকবে, না।

জেভার্ত বলল, তার আগেই চলে আসব আমি। আমি আজ রাতের গাড়িতেই যাচ্ছি।

ম্যাদলেন বলল, সেখানে ক’দিন লাগবে?

একদিনের বেশি নয়। আগামী কালই সন্ধের মধ্যে রায় বার হবে। তবে আমাকে এতক্ষণ থাকতে হবে না। আমি সাক্ষ্য দিয়েই চলে আসব।

ম্যাদলেন বলল, ঠিক আছে।

এরপর ইশারায় তাকে যেতে বলল। কিন্তু তবু গেল না জেভার্ত। সে বলল, মাপ। করবেন, একটা জিনিস আমি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই মঁসিয়ে মেয়র।

কিসের কথা?

আমাকে বরখাস্ত করতে হবে।

ম্যাদলেন উঠে দাঁড়াল। সে বলল, জেভাৰ্ত, তুমি একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং আমি তোমাকে শ্রদ্ধা করি। তুমি তোমার অপরাধটাকে বাড়িয়ে বলছ। অপরাধের ব্যাপারটা আমার সঙ্গে জড়িত। তোমাকে উপরে উঠতে হবে জেতার্ত, নিচে নামতে হবে না। আমি চাই তুমি এই পদে যেমন আছ তেমনি বহাল থাক।

জেভার্ত স্থির স্বচ্ছ দৃষ্টিতে ম্যালেনের দিকে তাকাল। তার সেই দৃষ্টির স্বচ্ছতার। মধ্যে যে একটুখানি সংকীর্ণ বিবেক ফুটে উঠেছিল তা একই সঙ্গে ঋজু এবং কঠোর বলে মনে হচ্ছিল। সে শান্ত কণ্ঠে বলল, মঁসিয়ে মেয়র, আমি আপনার একথা মেনে নিতে পারলাম না।

ম্যাদলেন বলল, আমি আবার বলছি, তোমার এ অপরাধের ব্যাপারটা আমার সঙ্গে জড়িত।

কিন্তু জেভার্ত নিজস্ব চিন্তার ধারাটাকে আঁকড়ে ধরে থেকে বলে যেতে লাগল, আপনি যে বাড়িয়ে বলার কথা বললেন সেটা ঠিক নয়, আমি কিছুই বাড়িয়ে বলিনি। কিন্তু ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখুন। আমি আপনাকে অন্যায়ভাবে সন্দেহ করেছি, এটা এমন কিছু অন্যায় নয়, যদিও আমাদের ঊর্ধ্বতন অফিসারদের বিরুদ্ধে এই ধরনের সন্দেহ পোষণ করার কথাটা ভেবে দেখা উচিত। কিন্তু আপনি একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, মেয়র, ম্যাজিস্ট্রেট। প্রচণ্ড ক্রোধ এবং প্রতিশোধবাসনার বশবর্তী হয়ে আমি আপনাকে জেলফেরত কয়েদি হিসেবে বিনা প্রমাণে অভিযুক্ত করেছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। অমি নিজে একজন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি হয়ে আপনার মতো একজন সরকারের পদস্থ প্রতিনিধিকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছি। আমার অধীনস্থ কোনও কর্মচারী যদি আমার প্রতি এমন অন্যায় আচরণ করত তা হলে আমি বলতাম সে তার পদের অযোগ্য এবং তাকে আমি অবশ্যই বরখাস্ত করতাম। আর একটা কথা মঁসিয়ে মেয়র। আমি খুব রুক্ষ ও রূঢ় প্রকৃতির লোক ছিলাম। আমি অপরের প্রতি অত্যন্ত রূঢ় ও নিষ্ঠুর ব্যবহার করেছি। তখন হয়তো তার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এখন যখন আমি নিজে অন্যায় করেছি, এখন আমার নিজের ওপর আমার অবশ্যই কঠোর ও রূঢ় হওয়া উচিত। তা না হলে আমার অতীতের সব কাজ, সব আচরণ ঘোরতর অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। আমি যেমন এর আগে আর পাঁচজন অন্যায়কারীকে শাস্তি হতে অব্যাহতি দিইনি তেমনি আজ আমাকে নিজেকেও শাস্তি হতে অব্যাহতি দেওয়া কখনই উচিত নয়। তা হলে সেটা এক জঘন্য অপরাধ হবে এবং যারা আমাকে শুয়োর বলে গালাগালি করে তাদের আচরণ ন্যায়সঙ্গত হিসেবে গণ্য হবে। আপনি অনেককে মার্জনা করেছেন এবং তা দেখে আমার খুব রাগ হয়েছে। কিন্তু আপনার মার্জনা আমি চাইনি। আমার মতে যে নারী শহরের একজন বিশিষ্ট শ্রদ্ধাভাজন নাগরিককে অপমানিত করেছিল সবার সামনে তাকে মার্জনা করা যেমন অন্যায়, তেমনি যে পুলিশ অফিসার মেয়রকে লোকচক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছিল তাকে মার্জনা করাটাও অন্যায়। এই ধরনের মার্জনা সমাজের নৈতিক মানকে অবনত করে। দয়ালু হওয়া সহজ, কিন্তু ন্যায়পরায়ণ হওয়া কঠিন। আমি যা সন্দেহ করেছিলাম আপনি যদি তা-ই হতেন তা হলে আমি আপনার প্রতি কোনও দয়া দেখাতাম না মঁসিয়ে মেয়র। অপরের প্রতি আমি যে ব্যবহার করি, নিজের প্রতিও আমার সেই ব্যবহার করা উচিত। যেহেতু আমি অন্যায় করেছি, অপরাধ করেছি, আমাকে বরখাস্ত ও কর্মচ্যুত করা উচিত। আমার হাত-পা আছে, আমি মাঠে চাষের কাজ পারি এবং সেটা আমার পক্ষে খুব একটা কষ্টকর হবে না। সরকারি কর্মের ক্ষেত্রে আমি এক আদর্শ সৃষ্টি করতে চাই মঁসিয়ে মেয়র। আমার অনুরোধ, আপনি ইন্সপেক্টর জেতার্তকে বরখাস্ত করার ব্যবস্থা করুন।

জেতার্ত তার কথাগুলো এমন এক উচ্চস্তরের নম্রতা আর উগ্র আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে বলল যে তার অন্তর্নিহিত সততা বাইরে প্রকটিত হয়ে এক অদ্ভুত মহত্ত্বে পরিণত হল।

ম্যাদলেন বলল, ঠিক আছে। ব্যাপারটা পরে ভেবে দেখতে হবে।

এই বলে সে করমর্দনের জন্য জেভার্তের দিকে হাতটা বাড়াতেই পিছিয়ে গেল জেভাৰ্ত। কড়াভাবে বলল, এ হতেই পারে না। একজন ম্যাজিস্ট্রেট কখনও একজন পুলিশের লোকের সঙ্গে করমর্দন করে না। আমি পুলিশ অফিসারের ক্ষমতা ও পদমর্যাদাকে কলুষিত করেছি। আমাকে আর অফিসার বলা উচিত নয়।

মাথাটা নত করে অভিবাদন জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ঘুরে দাঁড়িয়ে জেভার্ত বলল, ঠিক আছে মঁসিয়ে মেয়র, আমার প্রার্থনা মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত আমি কাজ করে যাব।

জেভার্ত চলে গেল। মঁসিয়ে ম্যাদলেন চিন্তান্বিতভাবে দাঁড়িয়ে বারান্দার উপর তার দৃঢ় পদক্ষেপের ক্রমবিলীয়মান শব্দগুলো শুনতে লাগল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *