১.৪
এরপর সাতদিন কেটে গেছে। আয়রন সাইড রোডে সরকারি বাসভবনের তিনতলায় ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ডি সি হুমায়ুন কবির-এর কোয়ার্টার। তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা গেছে মুর্শিদাবাদে দেশের বাড়িতে। গরম পড়েছে খুব, কবির সাহেব একটা পাজামা ও পাতলা সাদা পাঞ্জাবি পরে বসেছেন। বারান্দায় একটা ইজিচেয়ারে। তাঁর স্ত্রীর খুব ফুলের শখ, অনেকগুলি টবে ফুটেছে ফুল। বেল ফুল থেকে ছড়াচ্ছে সুগন্ধ।
খানিক বাদে এলেন তার বন্ধু বিনায়ক ঘোষাল। তিনি বেশ নামকরা লেখক, একটা সংবাদপত্রের সঙ্গেও যুক্ত। আজ তার একটা বক্তৃতা ছিল বিড়লা সভাঘরে, খুব কাছেই, সেখান থেকে টুক করে চলে এসেছেন বন্ধুর বাড়িতে।
বিনায়ক প্রথমে কয়েকটা ফুলগাছে আলতো করে হাত বুলোতে লাগলেন। ফুল ছেঁড়েন না তিনি, শুধু হাত বুলোন।
বিনায়কের ধারণা, গাছের গায়ে আদর করে হাত বুলোলে গাছ খুব খুশি হয়। গাছ এই ধরনের মানুষদের ভালোবাসে। এইভাবে মানুষ ও গাছের মধ্যে একটা অদৃশ্য যোগাযোগ হবে। হুমায়ুনের ধারণা গাছকে আদর করা ভালো। কিন্তু সন্ধের পর নয়। এই সময় গাছ ঘুমোয়। মানুষের চেয়েও ওরা অনেক আগে-আগে ঘুমোয়। সূর্যের আলোর সঙ্গেই তো ওদের সম্পর্ক।
হুমায়ুন বললেন, যথেষ্ট হয়েছে। এবার বসো। কিছু খাবে?
হুমায়ুন বললেন, স্টকে নেই বোধহয়। আনাতে হবে। মাসের শেষ ভাই, আমার হাতে বিশেষ কিছু নেই। তুমি দু-একখানা পাত্তি ছাড়ো!
পুলিশের আবার মাসের শেষ কী? এমন গরিব পুলিশ অফিসার আমি আগে দেখিনি। বন্ধুকে বিয়ার খাওয়াতেও পারো না, টাকা চাইছ! হাত পেতে ঘুষের টাকা নাই বা নিলে, ভেট নিতে পারো না? তাতে দোষ নেই।
কেউ তো দেয় না কিছু। বাঙালিরা বহুত কঞ্জুষ হয়ে গেছে। ঘুষ দিতে চাইলে নিতাম। কি না ভেবে দেখতাম। কিন্তু কেউ তো কিছু অফারই করে না।
তোমাদের সার্ভিসে মানস মজুমদার তোমার জুনিয়ার না? সে সল্টলেকে বাড়ি বানাচ্ছে। কী করে?
বলে তো যে ওর বউয়ের অনেক সম্পত্তি আছে। আমি শালা বিয়েও করেছি গরিবের মেয়েকে।
একটু পরে এল বিয়ারের বোতল।
প্রথম চুমুক দেওয়ার পর হুমায়ুন বললেন, তোমার সঙ্গে কাজের কথা আছে। সেদিন তুমি তো বসে-বসে অতক্ষণ ধরে শুনলে লক্ষ্মীমণি নামে মেয়েটির কথা। এবার তোমার ওপিনিয়ান জানতে চাই।
বিনায়ক বললেন, হ্যাঁ, শুনলাম। এমন তো নতুন কিছু নয়। এরকম কাহিনিই তো শোনা যায়।
তা ঠিক। এই ধরনের মেয়েদের কাহিনি অনেকটাই একরকম।
সেদিন আমি নিজে থেকে কোনও প্রশ্ন করিনি। করা উচিত ছিল না। কিন্তু মনের মধ্যে যেন কয়েকটা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল। মেয়েটি মাঝে-মাঝেই সত্যি কথা গোপন করছিল কেন?
ইচ্ছে করে? না, পুরোপুরি হান্ডেড পারসেন্ট সত্যি কথা অনেক মানুষই বলতে পারে না। অনেক মহাপুরুষও পারেন না। তুমি একই ঘটনা তিনবার বলতে বলো, দেখবে একটু একটু বদলে যাচ্ছে। টুথ ইজ আ ডিফিকাল্ট সাবজেক্ট। মিথ্যে কথা বলা সহজ। অনেক মানুষকে দেখেছি, এমনি-এমনি মিথ্যে কথা বলে, অকারণেও।
পুলিশের চাকরি করতে গিয়ে তোমার মানুষের চরিত্র বেশ ভালোভাবে স্টাডি করা হয়ে গিয়েছে, তাই না?
বিনায়ক, সামারসেট মম-এর কথাটা তুমি পড়োনি? মম এক জায়গায় বলেছেন, মানুষের চরিত্র সবচেয়ে ভালো বোঝে ইস্কুল মাস্টার, ডিটেকটিভ আর লেখকরা। সেই হিসেবে তুমি আর আমি একই লেভেলে, যদিও আমি লিখতে পারি না।
রিটায়ার করার পর স্মৃতিকথা লিখবে, খুব ইন্টারেস্টিং হবে। শোনো, মিথ্যে কথা ছাড়াও সেদিনের ইন্টারোগেশানে কয়েক জায়গায় ফঁক রয়ে গেছে। বলব?
বলো।
প্রথমত ধরো, লক্ষ্মী নামের বউটি চড়কের মেলায় যেতে চাইল, তাও অনেক দূরে, ট্রেনে যেতে হবে। তবু তার স্বামী পারমিশান দিয়ে দিল? আবার পাঁচটা টাকাও দিল। এটা কি স্বাভাবিক? গ্রামের বউরা এতটা স্বাধীনতা পায়?
সাধারণত পায় না। তবে, কোনও-কোনও স্বামী তো উদার হতেও পারে। বউকে যদি খুব ভালোবাসে, তার একটা শখ মেটাতেও পারে।
দ্যাখো, হুমায়ুন, ভালোবাসা শব্দটা অমন চট করে ব্যবহার কোরো না। বিভিন্ন জাতের মধ্যে, বিভিন্ন সামাজিক স্তরে ভালোবাসার রূপ নানারকম। আমরা যেভাবে ভালোবাসা বুঝি, গ্রামের নীচের তলার মানুষ কি সেভাবে বোঝে? গ্রামের মানুষ ভালোবাসতে জানে না তা বলছি, কিন্তু তার ধরন-ধারণ আলাদা। সেই ভালোবাসার মধ্যে বোধহয় স্বাধীনতা বিশেষ থাকে না।
আমি বলছি না যে এরকমভাবে পারমিশান দেওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু কেউ কেউ ব্যতিক্রম হতেও পারে। কিংবা হয়তো লক্ষ্মী মিথ্যে বলছে, পারমিশান না নিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল।
আরও একটা ব্যাপার লক্ষ করো। শাশুড়ি কী বলেছে? হ্যাঁ কিংবা না কিছুই বলেনি। মুখের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। সে মাঝে-মাঝে কাঁদত। তার মানে কী?
কিছু একটা মানে আছে নিশ্চয়ই।
আমার যতদূর ধারণা, শাশুড়ি হয়তো আগে থেকেই জানত, এ বউ আর ফিরবে না।
তার মানে তাড়িয়ে দিয়েছে।
তাড়িয়ে দিলে আর কাঁদবে কেন?
মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী। দ্যাখো, কোনও নর্মাল ফ্যামিলিতে বাড়ির বউ যদি মেলা দেখতে গিয়ে ফিরে না আসে, তা হলে হুলুস্থুল পড়ে যায়। চতুর্দিকে খোঁজখবর, আজকাল সবাই থানায় ডায়েরি করতেও শিখে গেছে। মুন্সিগঞ্জ থানায় কি লক্ষ্মীমণির নামে কোনও মিসিং ডায়েরি আছে?
মুন্সিগঞ্জে থানা নেই। থানা আছে পাশের গ্রাম নবীপুরে। সেখানে গত এক-দেড় বছরের মধ্যে লক্ষ্মীমণির কোনও উল্লেখ নেই। বরং সরিফন বিবি নামে একজনের নামে মিসিং ডায়েরি আছে।
তুমি এই সরিফন আর লক্ষ্মীমণির ব্যাপারটা গুলিয়ে ফেলেছ। আমরা যাকে দেখছি, সে লক্ষ্মীমণিই নিশ্চিতই। একেবারে সম্পূর্ণ পরিচয়টা বদলে ফেলার ক্ষমতা ওর নেই। বদলাবেই বা কেন?
বিনায়ক, তুমি আর একটা সম্ভাবনার কথা ভেবে দেখেছ? এ মেয়েটির স্বামী ও শাশুড়ির ব্যবহার খানিকটা স্ট্রেঞ্জ, তার একটা কারণ হতে পারে, ওকে হয়তো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।
সে কথাটা আমারও মনে এসেছে।
সব মেয়েকেই তো দালাল কিংবা আড়কাঠিরা ভুলিয়ে-ভালিয়ে পাচার করে না, অনেক মেয়ে বিক্রিও হয়। মেয়ে বিক্রির একটা নিঃশব্দ বাজার চলেছেই। তবে, সাধারণত পনেরো থেকে কুড়ি-বাইশ বছরের মেয়েরাই বিক্রি হয়, এর বয়েস পঁয়তিরিশ-ছত্রিশ, তবে এর স্বাস্থ্য ভালো, সেক্স অবজেক্ট হিসেবে দাম আছে।
বিক্রি করবে কেন? ঘরের বউ, দুটি সন্তান আছে তবু তাকে বিক্রি করবে, এতটা চরম দারিদ্র্য কি আছে? বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় আদিবাসীদের মধ্যে কিছুটা আছে, কিন্তু চব্বিশ পরগনার। গ্রামে, সে গ্রামে ভালো করে খোঁজখবর নিয়েছ?
তোমার একটা সিগারেট দাও, আমার শেষ হয়ে গেছে। হা, খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তোমাকে একটু কু দিতে পারি। ওখানকার স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ক্লাস সিক্সে রতন পাড়ুই নামে একটি ছাত্র আছে, যার বাবার নাম ধীরাজ পাড়ুই। ছেলেটির মা নেই। খুব সম্ভবত এটাই সেই ফ্যামিলি।
ধীরাজের কোনও ভাই আছে?
না নেই। মানে এখন নেই, ছিল, মারা গেছে ছমাস আগে। এরা একেবারে না খেতে পাওয়ার মতন গরিব নয়। বছরের কয়েকটা মাস খুব টানাটানি চলে।
লক্ষ্মীই সেই কথা বলেছে। ধীরাজের যে ভাই মারা গেছে, তার নাম কী?
বিরাজ।
তবে তো মিলেই গেছে। আগে বলছিলে না কেন?
বিনায়ক, তোমাকে আগে বলিনি, তার কারণ আছে।
ওই বিরাজ কীসে মারা গেছে?
ক্যান্সারে।
সর্বনাশ। তার মানে তো প্রচুর খরচের ব্যাপার। চিকিৎসা করিয়েছিল কিছু?
হ্যাঁ। বিরাজ সার্ভে অফিসে কাজ করত, নির্দিষ্ট উপার্জন ছিল তার। তাকে বাঁচাবার জন্য তার মা ও দাদা সব চেষ্টা তো করবেই। চিকিৎসার খরচের জন্যই সম্ভবত বউটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। গ্রামের মানুষ ভাবে, বউ মরলে কিংবা বউ চলে গেলে আবার বউ পাওয়া যাবে। কিন্তু ভাই মরলে কিংবা ছেলে মরলে তো আর পাওয়া যাবে না। তাই বউদের জীবনের দাম কম।
জীবনের দাম কম, শরীরের কিছুটা দাম আছে।
এই বউটি বিক্রি হয়েই হোক কিংবা আড়কাঠির পাল্লায় পড়েই হোক, প্রায় এক বছর ধরে নানারকম অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছে। এর থেকেও খারাপ অবস্থায় পড়ে অনেক মেয়ে। পুরোপুরি বেশ্যাবৃত্তিই করতে হয়। একে দেখা যাচ্ছে, একটা পর্যায়ে বেশ ভালো অবস্থাতেই ছিল।
সূরয সিং-এর সঙ্গে ইটভাটায়?
ওর কথা শুনে মনে হল যে নিজের স্বামীর চেয়েও পুরুষ হিসাবে সূরয সিং-কে বেশি পছন্দ হয়েছিল। তাই না? সূরয সিং যদি ওইভাবে মারা না যেত, তা হলে ওখান থেকে লক্ষ্মী আর পালাতে চাইত না!
অনেক মেয়েই তো আর ফেরে না।
বিনায়ক, তোমার কাছে একটা ব্যাপারে সাহায্য চাইছি। তুমি একজন গল্পলেখক, তুমি যদি লক্ষ্মীকে নিয়ে একটা গল্প লিখতে, তা হলে সে গল্পের শেষ পরিণতি কী হত?
ওকে বাড়ি ফিরিয়ে দিতাম।
কল্পনায়, না বাস্তবে? বাস্তবে কি ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব?
চেষ্টা করে দেখতে হবে।
তা তো আমরা চেষ্টা করবই। কিন্তু তুমি গল্প লিখলে কী হত? বিবাহিত মেয়েটি এই কমাসে বেশ কিছু পুরুষের সঙ্গে শুয়েছে, এমনকী একবার প্রেগন্যান্টও হয়েছিল, এসব তো আর লুকোবার উপায় নেই। এখন সে ফিরে এলেও তার শ্বশুরবাড়ি তাকে গ্রহণ করবে কেন? বরং সঙ্গে সঙ্গে তাড়িয়ে দেবে। শুধু আমাদের দেশে কেন, সব দেশেই এরকম হয়। গল্পে তুমি যদি মিলিয়ে দাও, স্বামী-স্ত্রী আবার এক সংসারে থাকতে লাগল, তা হলে বেশ একটা ইচ্ছাপূরণ হতে পারে। হ্যাপি এনডিং, অ্যান্ড দে লিভড হ্যাপিলি এভার আফটার। কিন্তু সেটা একেবারেই অবাস্তব।
ওরকম মিষ্টি মিষ্টি অবাস্তব গল্প আমি লিখি না।
মেয়েটাকে তা হলে তুমি কোথায় পাঠাবে?
এক কাজ করা যায়, ধরে নিচ্ছি স্বামী আর শাশুড়ি মিলে বউটাকে বিক্রি করেই দিয়েছিল। সেটা একটা গুরুতর অপরাধ। তোমরা দুজনে এ ব্যাপারে কনফার্মড় হয়ে দুজনকে জেলে দেওয়ার ভয় দেখাও। তখন বউটাকে ফেরত নিতে বাধ্য হবে।
আ-হা-হা, কী সলিউশানই বাতলালে! মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড, পুলিশ ভয় দেখিয়ে বাধ্য করতে পারে, কিন্তু তাতে সম্পর্ক জোড়া লাগে না। কদিন বাদেই মেয়েটার ওপর দারুণ অত্যাচার শুরু করবে। পাড়া প্রতিবেশীরা ঘেন্নায় ওর সঙ্গে কথা বলবে না। ওকে তাড়াতে বাধ্য করবে। এরকম কেস আমরা আগেও দেখেছি।
তা হলে কী গতি হয় এইসব মেয়েদের?
ওর সামনে দুটোই পথ খোলা আছে। আত্মহত্যা কিংবা কোনও বেশ্যাপল্লিতে গিয়ে যোগ দেওয়া।
কেন, কোনও অনাথ আশ্রম-টাশ্রমে জায়গা পেতে পারে না?
এরকম কেস এত বেশি যে এদের আশ্রয় দেওয়ার মতন তত বেশি অনাথ আশ্রম আমাদের দেশে নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোর পরিবেশও ভালো নয়। অনেক মেয়েই বেশিদিন টিকতে পারে না। আর যদি কোনও মেয়ের স্বাস্থ্যের জেল্লা থাকে, তা হলে সে কোনও না কোনও মাংস-ব্যবসায়ীর নজরে পড়বেই।
মেয়েটাকে যদি কোনও কাজ দেওয়া যায়, স্বাধীনভাবে উপার্জন করে একলা থাকতে পারে।
একটা অশিক্ষিত, গ্রাম্য মেয়ে। তাকে কী কাজ দেবে? বড়জোর ঝি-গিরি। তাও আগেকার পরিচয় জানতে পারলে কেউ ওরকম ঝিকে বাড়িতে রাখে না। তোমার বাড়িতে রাখবে? তোমার বউ রাজি হবে না! ওহে লেখকপ্রবর, বলো, বলো, এই মেয়েটার ভাগ্যে কী হবে।
আমি কী করে বলব!
সেইজন্যই তো জিগ্যেস করছি, তুমি এরকম একটা মেয়েকে নিয়ে গল্প লিখলে কোথায় শেষ করতে?
শোনো হুমায়ুন, অন্যের দেওয়া সাবজেক্ট নিয়ে আমি গল্প লিখি না। আর গল্প লেখার সময় তার নিজস্ব একটা গতি আসে। তাই আগে থেকে শেষটা বলা যায় না। আমি লেখক ছাড়াও তো একজন মানুষ। গল্পের চরিত্র হিসেবে নয়, আমি একজন অসহায় মেয়ে হিসেবেই ওর সম্পর্কে চিন্তিত। গল্প না লিখেও তো আমি ওকে কিছুটা সাহায্য করতে পারি। আশা করি পারব।
কী সাহায্য করবে?
এক্ষুনি বলতে পারছি না। একটা উপায় মাথায় এসেছে।
দুদিন বাদে লেখক আবার দেখা করলেন তাঁর পুলিশ বন্ধুটির সঙ্গে। লক্ষ্মীর জন্য একটা কাজ ঠিক হয়েছে।
লেখকের স্ত্রী বিশাখা একটা বাচ্চাদের স্কুলে পড়ান। তিনিই হেড মিস্ট্রেস। সেন্ট মেরি কিন্ডারগার্টেন স্কুল। বাচ্চাদের দেখাশুনা করার জন্য আয়া শ্রেণির দু-একটি মেয়েকে রাখতে হয়। সেই কাজ দেওয়া হল লক্ষ্মীকে।
প্রথম একমাস তার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগই করা হল না। দেখতে হল, লক্ষ্মী এ কাজ ঠিক পারছে কি না। লক্ষ্মী এ কাজ বেশ ভালোই পারছে। মন দিয়ে কাজ করে। স্কুলের পেছনে তার থাকার জন্য একটা ঘরও আছে। এক মাসের মাইনে অগ্রিম দেওয়া হয়েছে, সে নিজেই রান্না করে খায়। .
তারপর কী হল?
এবার পুলিশ খোঁজখবর নিল তার বাড়ির। ছেলেমেয়ে দুটিকে নিয়ে এল লক্ষ্মীর কাছে, তাদের জড়িয়ে ধরে মায়ের কী হাপুস কান্না!
ছমাস কেটে গেছে। দিব্যি ভালোই আছে লক্ষ্মী। একটা সুস্থ জীবন যাপন করছে। ছেলেমেয়ে দুটি মাঝে-মাঝেই আসে। একবার ওদের বাবাও সঙ্গে এল। সে-ও কাঁদল লক্ষ্মীর হাত ধরে।
স্বামীকে লক্ষ্মী পঞ্চাশটা টাকা দিল আর শাশুড়ির জন্য একটা শাড়ি। সেসব নিতে দ্বিধা করল না ধীরাজ।
এর পরেও লক্ষ্মীর জীবনে অন্য কিছু ঘটতে পারে। আপাতত সে একজন স্বাধীন মানুষের মতন বেঁচে আছে।