জুগ্গাত্ সিং প্রায় এক ঘণ্টা আগে বাড়ী থেকে বেরিয়েছিল। রাতের মাল ট্রেনের শব্দ শুনে তার মনে হয়েছিল এটাই তার জন্য নিরাপদ সময় এবং তখনই সে বেরিয়েছিল। ঐ রাত্রে তার এবং ডাকাতদের জন্য রাতের মাল ট্রেনের আগমন শব্দই ছিল সঙ্কেত ধ্বনি। দূর থেকে ট্রেনের শব্দ শুনেই সে নিঃশব্দে চারপাই থেকে নেমে পড়ল। পাগড়ি তুলে নিয়ে মাথায় জড়িয়ে নিল। তারপর সে নিঃশব্দে আঙিনা পেরিয়ে খড়ের গাদার কাছে গিয়ে একটা বল্লম হাতে নিল। পা টিপে টিপে সে পুনরায় বিছানার কাছে এসে জুতা পরে ধীরে ধীরে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।
কোথায় যাচ্ছো?
জুগ্গাত্ সিং দাঁড়ালু। এটা তার মায়ের প্রশ্ন।
মাঠে, সে বলল, কাল রাতে বুনো শুয়োরের ছানারা ক্ষেতের খুব ক্ষতি করেছে।
শুয়োর ছানা! তার মা বলল, চালাকি করার চেষ্টা করো না। তুমি কি ইতিমধ্যে ভুলে বসেছে যে, তুমি পুলিশের নজরবন্দীর মধ্যে আছো—তোমার সন্ধ্যার পর গ্রামের বাইরে যাওয়া নিষেধ। তারপরও হাতে করে নিয়ে যাচ্ছে একটা বল্লম! শত্রুরা দেখে তোমার কথা বলে দেবে। তারা তোমাকে আবার জেলে পাঠাবে। তখন তোমার ফসল, গরু, ছাগল কে দেখবো?
আমি শিগ্গিত আসব, জুগ্গাত্ সিং বলল, চিন্তার কিছু নেই। গ্রামের সবাই ঘুমিয়ে আছে।
না, তার মা বলল। সে চীৎকার করে কাঁদতে শুরু করল।
চুপ কর, সে বলল, তুমিই পাড়াপাড়শীদের জাগিয়ে তুলবে। শান্ত হও, কোন অসুবিধা হবে না।
যাও! তুমি যেখানে যেতে চাও সেখানেই যাও। কোন কুয়ায় ঝাঁপ দিতে চাইলে ঝাঁপ দাও। তোমার বাপের মত ঝুলে মরতে চাইলে ঝুলে মর। আমার ভাগে আছে শুধু দুঃখ। এটাই আমার কিসমত, কপালে করাঘাত করে সে বলল, এখানে সব কিছু লেখা আছে।
জুগ্গাত্ সিং দরজা খুলে দুই দিকে তাকিয়ে দেখল। না, কেউ কোথাও নেই। দেয়ালের ধার ঘেঁষে সে গলিপথ ধরে এগিয়ে একেবারে পুকুরের ধারে এসে থামল। সে দেখতে পে, দু’টো সাদা হাড়গিলা পাখি কাদায় ব্যাঙ ধরার জন্য এপাশ-ওপাশ করছে। তারা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। জুন্নীত সিং তাদের ধরতে আসেনি, এ ব্যাপারে পাখি দু’টো নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সে দেয়ালের ধারেই দাঁড়িয়ে রইল। তারপর সে গলিপথ ছেড়ে মাঠের মধ্য দিয়ে নদীর দিকে এগিয়ে চলল। নদীতটের বালি পেরিয়ে সে একবারে স্রোতের কাছে এসে থামল। বল্লমের ধারাল দিকটা ওপরে রেখে সে বল্লমাট পুঁতে দিল। তারপর সে নিজেই বালির ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের তারা দেখতে লাগল। নীল-কালো আকাশের নিচের ছায়াপথে পেল উল্কার দৃশ্য, যেন একটা রূপালী পথ! হঠাৎ তার চোখের ওপর দুটি হাত এসে থামল।
কে বল?
জুগ্গাত্ সিং তার মাথার ওপর দিয়ে দু’হাত প্রসারিত করে অন্ধকারে হাতড়াতে লাগল। মেয়েটি হাত দু’টো সরিয়ে দিল। জুগ্গাত্ সিং এবার চোখের ওপর রাখা হাত থেকে শুরু করে ওপরের দিকে বাহু, কাঁধ এবং তারপর মেয়েটির মুখের ওপর হাত রাখল। সে তার হাতের অতি পরিচিত মেয়েটির চিবুক, চোখ ও নাকে হাত বুলাল আদরের সাথে। সে আঙ্গুল দিয়ে মেয়েটির ঠোঁট দু’টোর ওপর খেলা করতে চাইল, যেন সে আঙ্গুলো চুমো দেয়। মেয়েটি মুখ খুলে তার আঙ্গুল জোরে কামড়ে দিল। জুগ্গাত্ সিং জোর করে হাতটা সরিয়ে নিল। আকস্মিকভাবে সে দু’হাত দিয়ে ময়েটির মাথা জড়িয়ে ধরে জোর করে তার মুখ নিজের মুখের ওপর নিয়ে আসল। তারপর সে তার হাত দু’টো মেয়েটির কোমরের নিচে নিয়ে গিয়ে তার দেহকে উঁচু করে ধরল। মেয়েটি কাঁকড়ার মত শূন্যে পা লাফাতে লাগল। মেয়েটি হাতে ব্যথা না পাওয়া পর্যন্ত সে তাকে ঘুরিয়ে আনার চেষ্টা করল। তারপর সে একেবারে নিজের দেহের ওপর সমান্তরালভাবে শুইয়ে দিল। দুই দেহ মিলে হয়ে গেল এক।
মেয়েটি তার গালে একটা চড় মারল।
তুমি অন্য একটি মেয়ের গায়ে হাত দিলে? তোমার ঘরে কি মা-বোন নেই? তোমার কি লজ্জা নেই? পুলিশ রেজিস্টারে তোমার নাম লেখা আছে খারাপ চরিত্রের লোক বলে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। ইন্সপেক্টর সাহেবকে আমিও বলে দেব যে, তুমি একটা বদমায়েশ।
আমি শুধু তোমার কাছেই বদমায়েশ, নূরু। জেলখানায় একই সেলে আমাদের তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা দরকার।
তুমি বেশি কথা বলতে শিখেছে। আমাকে এখন অন্য লোক দেখতে হবে।
জুগ্গাত্ সিং তার দু’টো হাত মেয়েটির পিছনে নিয়ে এমনভাবে চাপ দিল যে, তার বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলো। মেয়েটি কোন কথা বলতে গেলেই সে দেয়, ফলে তার কথা গলায় এসে থেমে যায়। সে আর কথা বলার চেষ্টা করল। পরিশ্রান্ত অবস্থায় সে নিজেকে এলিয়ে দিল জুগ্গাত্-এর দেহের ওপর। জুগ্গাত্ব তাঁকে বাঁদিকে সরিয়ে দিল। মেয়েটির মাথা রইল। তার বাহুর ওপর। ডান হাত দিয়ে সে তার চুল ও মুখে আলতোভাবে বুলাতে লাগল।
মাল ট্রেনের হুইসেল শোনা গেল দুবার ইঞ্জিনের হুশ হুশ শব্দ শোনা গেল কয়েকবার। এরপর ট্রেনটি চলতে শুরু করল ব্রিজের দিকে। পুকুর থেকে হাড়গিলে পাখিগুলো ‘ক্রাক ক্রাক’ শব্দ করে উড়ে নদীর দিকে গেল। নদীর ওপর এক পাক দিয়ে তারা আবার পুকুরে এসে বসল।
ট্রেনটি ব্রিজ পার হওয়ার পরও দীর্ঘক্ষণ ধরে তারা একের পর এক ‘ক্রাক ক্ৰাক’ শব্দ করতে লাগল। ট্রেনের হুশি হুশ শব্দ এক সময় নিস্তন্ধে মিশে গেল।
জুগ্গাত্ সিং-এর আদর ক্রমশ কামুকতায় পরিণত হলো। তার হাত মেয়েটির মুখ থেকে বুক এবং বুক থেকে কোমরে এসে থামল। মেয়েটি তার হাত দু’টো ধরে পুনরায় তার মুখের ওপর নিয়ে ছেড়ে দিল। জুগ্গাত্-এর শ্বাস-প্রশ্বাসে কামুকতা ছড়িয়ে পড়ল এবং তা বইতে লাগল ধীরে ধীরে। তার হাত যেন ভুল করে পুনরায় নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ঘুরে বেড়াল এবং লক্ষ্যস্থল স্পর্শও করল। মেয়েটি তার হাত ধরে সরিয়ে দিল। জুগ্গাত্ সিং তার বাম হাতটি প্রসারিত করে মেয়েটির একটা হাত ধরল। মেয়েটির অন্য হাত আগে থেকেই জুগ্গাতের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মেয়েটি হয়ে পড়ল অসহায়।
না! না! না! আমার হাত ছেড়ে দাও! না! আমি তোমার সাথে আর কোনদিন কথা বলব না। জুগ্গাত্রে কামাতুর মুখ থেকে বাঁচার জন্য সে তার মাথা জোরে এপাশ-ওপাশ করতে লাগল।
জুগ্গাত্ সিং তার হাতটা ঢুকিয়ে দিল মেয়েটির কামিজের মধ্যে। অনুভব করল অরক্ষিত স্তনের প্রান্তরেখা। এগুলো ছিল সুউচ্চ। স্তনের বোঁটা ছিল শক্ত ও কঠিন। তার কঠিন হাত দু’টো তার স্তন থেকে নাভি পর্যন্ত ওঠানামা করল বার বার। মেয়েটির পেটের ওপরটা রোমাঞ্চে স্ফীত হলো।
না! না! না! দয়া কর। তোমার ওপর আল্লাহ্র গজব পড়বে। আমার হাত ছেড়ে দাও। এ রকম আচরণ করলে তোমার সাথে আমি আর কখনও দেখা করব না।
জুগ্গাতু সিং-এর অনুসন্ধানী হাত মেয়েটির পাজামার দড়ির একটা কোণা পেল। হ্যাঁচকাটান দিয়ে সে পাজামার দড়ি খুলে ফেলল।
না,–মেয়েটি কর্কশ স্বরে চীৎকার করে উঠল।
একটা গুলির শব্দ হল। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ঐ শব্দ মিলিয়ে গেল। হাড়গিলে পাখিগুলো পুকুর থেকে উড়ে ডাকাডাকি শুরু করল। কিকার গাছে কাক ডেকে উঠল। জুগ্গাত্ সিং একটু থেমে অন্ধকারের মধ্যে গ্রামের দিকে তাকাল। মেয়েটি নিঃশব্দে তার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে কাপড়-চোপড় গুছিয়ে নিল। কাকেরা গাছে আবার চুপচাপ করে রইল, হাড়গিলে পাখিগুলো নদীর ওপর দিয়ে উড়ে গেল। কেবল কুকুরগুলো ডাকাডাকি করতে লাগল।
বন্দুকের গুলির শব্দ মনে হয়, ভয়ে ভয়ে মেয়েটি বলল। জুগ্গাত্ সিং তাকে পুনরায় জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করল। মেয়েটি তাকে বাধা দিয়ে বলল, গ্রামের দিক থেকে গুলির শব্দ এলো না?
জানি না। তুমি পালাবার চেষ্টা করছ কেন? এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। জুগ্গাত্ সিং তাকে তার পাশে শুইয়ে দিল।
এখন আনন্দ করার সময় নয়। গ্রামে নিশ্চয়ই কেউ খুন হয়েছে। আমার বাপ জেগে উঠে আমার খোঁজ করবে। আমাকে এখনই ফিরে যেতে হবে।
না, তোমার যাওয়া হবে না। আমি তোমাকে যেতে দেব না। তুমি বলবে যে, তুমি তোমার এক বান্ধবীর সাথে ছিলে।
চাষার মত কথা বলো না। কি ভাবে… জুগ্গাত্ সিং তার হাত দিয়ে মেয়েটির মুখ চেপে ধরল। সে তার বিরাট দেহটা মেয়েটির দেহের ওপর তুলে দিল। মেয়েটি নিজেকে মুক্ত করার আগেই জুল্লাহু তার পাজামার দড়ি পুনরায় খুলে দিল।
আমাকে যেতে দাও। আমাকে…
জুগ্গাত্ সিং-এর পশু শক্তির বিরুদ্ধে সে লড়তে পারছিল না। সত্যিকারভাবে সেও তা চাচ্ছিল না। তার বিশ্ব সংকীর্ণ হয়ে এলো নিঃশ্বাসের ছন্দময় শব্দের মধ্যে। তার বিষন্ন দেহ উত্তপ্ত হল এবং জুগ্গাতের দৈহিক স্পর্শ ও শরীরের গন্ধ তাকে উতলা করে তুলল। জুগ্গাত্-এর ঠোঁট দু’টো তার চোখ ও চিবুকে আলতোভাবে ঘুরে বেড়াল, জিহ্বা ঢুকে যেতে চাইল তার কানের মধ্যে। নূরানের ধারাল নখ পাগলের মত জুগ্গাতের পাতলা দাঁড়িতে কি যেন খুঁজে ফিরে নাকে গিয়ে আঘাত করল। তার মাথার ওপরে আকাশের তারাগুলো যেন উন্মাদের মত ঘুরপাক খেয়ে স্বস্থানে ফিরে এসে থেমে গেল নাগরদোলার মত। জীবন ঠাণ্ডা হয়ে গেল, জীবনের গতি নেমে এলো স্বাভাবিক অবস্থার নীচে। জীবন্মৃত লোকটার দেহভরে সে অনুভব করল, তার চুলের মধ্যে বালি, উলঙ্গ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হল হিমেল হাওয়া। আকাশের লক্ষ লক্ষ তারা তাদের দিকে তাকিয়ে রইল অপালক দৃষ্টিতে। সে জুগ্গাতুকে ঠেলা দিয়ে সরিয়ে দিল, জুগ্গাত্ তার পাশেই শুয়ে পড়ল।
এটাই তুমি চাও এবং তা তুমি পেয়েও গেলো। তুমি নেহায়েতই একটা চাষা। সব সময় তুমি বীজ বুনতে চাও। সারা দুনিয়া জাহান্নামে গেলেও তোমার এটা চাই। এমনকি গ্রামে গুলি চললেও তোমার এটা চাই। তাই না? নূরান বিরক্তভাবে বলল।
কেউ কোন বন্দুক ছোঁড়েনি। এটা তোমার কল্পনা, ক্লান্তভাবে উত্তর দিল জুগ্গাত্। সে নূরানের দিকে ফিরেও তাকাল না।
নদীতীরে বাতাসে ভেসে আসছিল বিলাপের অস্পষ্ট আওয়াজ। নূরান ও জুগ্গাত্ দু’জনই উঠে বসল এ আওয়াজ স্পষ্টভাবে শোনার জন্য। পর পর দুটি গুলির শব্দ শোনা গেল। কিকার গাছ থেকে কাকেরা উড়ে গেল, তারা ডাকতে লাগল পাগলের মত।
মেয়েটি কাঁদতে শুরু করল।
গ্রামে কিছু একটা ঘটছে। আমার বাবা জেগে জানতে পারবে যে, আমি বাইরে গিয়েছি। সে আমাকে মেরে ফেলবে।
জুৰ্গাত্ সিং তার কথা শুনছিল না। সে কি করবে বুঝতে পারল না। সে গ্রামের বাইরে গিয়েছে একথা জানাজানি হলে পুলিশ তাকে বিপদে ফেলবে।-পুলিশের বিপদ তার কাছে বড় হয়ে দেখা দিল না। সে ভাবল নূরানের বিপদের কথা। সে আর আসবে না। এমন কথাই সে বলছিল, তোমার সাথে দেখা করতে কখনই আর আসবো না। আল্লাহ্ এবার মাফ করে দিলে আর কখনও এ কাজ করব না।
তুমি কি কথা বন্ধ করবে, না তোমার মুখ ভেঙ্গে দেব?
নূরান কাঁদছিল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। সে একথা বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে, এই লোকটিই কয়েক মুহুর্ত আগে তার সাথে যৌন মিলনে রত ছিল।
চুপ কর! কিছু যেন এদিকে আসছে, মেয়েটির মুখে হাত দিয়ে চুপিচুপি বলল জুগ্গাত্। তারা দুজন বালির ওপর শুয়ে অন্ধকারে মাথা উঁচু করে রইল। বন্দুক ও বল্লম হাতে নিয়ে পাঁচ জন লোক তাদের থেকে মাত্রা কয়েক গজ দূর দিয়ে অতিক্রম করল। তারা কথা বলছিল এবং তাদের মুখ ছিল খোলা।
ডাকাত! তুমি তাদের চেনো! চুপি চুপি মেয়েটি বলল।
হ্যাঁ, জুগ্গাত্ বলল। টর্চ হাতে লোকটার নাম মাল্লি। তার মুখমণ্ডলে প্রতিহিংসার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠল। মাল্লি ছিল তার বোনের প্রেমিক। আমি তাকে হাজার বার বলেছি, এখন ডাকাতি করার সময় নয়। অথচ সে এসেছে আমার গ্রামে তার দলবল নিয়ে। তার সাথে আমার এ নিয়ে কাল বোঝাপড়া হবে।
ডাকাতরা নদীর ধারে গিয়ে নদীতীর ধরে কয়েক মাইল হেঁটে গেল। এক জোড়া জলচর পাখির ডাকে নীরবতা ভঙ্গ হল নিস্তব্ধ রাতের। তিত্-তিতি-তিতি-উত্, তিতি উত্, তিত্-তি-উত্।
তুমি কি পুলিশের কাছে ওদের কথা বলবে?
জুগ্গাত্ সিং-এর মুখে চাপা হাসি দেখা দিল।
গ্রামের লোক আমাকে অনুপস্থিত দেখার আগেই আমাদের ফেরা উচিত।
জুগ্গাত্ ও নূরান মানো মাজরার দিকে হেঁটে চলল। জুগ্গাত্ আগে, নূরান পিছনে। তারা ক্ৰন্দনধ্বনি ও কুকুরের ডাক শুনতে পাচ্ছিল। এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে মেয়েরা জোরে কথা বলছিল। গ্রামের সব লোকই যেন জেগে ছিল। পুকুরের ধারে জুগ্গাত্ দাঁড়াল। পিছন ফিরে সে নূরানকে অনুরোধ করে বলল, নুরু, তুমি কি কাল আসবে?
তুমি আগামীকালের কথা চিন্তা করছ, আর আমি চিন্তা করছি আমার জীবন নিয়ে। আমি খুন হলেও তোমার সুসময় থাকবে।
আমি বেঁচে থাকতে তোমার কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। মানো মাজরায় এমন কেউ নেই যে, তোমার দিকে চোখ উঁচু করে তাকাতে পারে। জুৰ্গার কাছ থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নেয়ার সাহস কারও নেই। আমি বদমায়েশ নই, বেশ উদ্ধান্তভাবেই বলল জুগ্গাত্। সব ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর কাল বা পরশু রাতের মাল ট্রেন চলে যাওয়ার পর আমাকে সব খুলে বলবে।
না! না! না! উত্তরে মেয়েটি বলল, বাপকে এখন আমি কি বলব? এই গোলমালে নিশ্চয়ই সে জেগে উঠেছে।
এমনি বলবে যে, তুমি বাইরে গিয়েছিলে। তোমার পেট ভাল ছিল না বা এমন ধরনের অজুহাত দেখাবে। তুমি গুলির শব্দে লুকিয়ে ছিলে ডাকাতরা চলে না যাওয়া পর্যন্ত। পরশু দিন কি আসবে?
না, একই কথা বলল নূরান। তবে এই না বলার মধ্যে দৃঢ়তা ছিল না। এই অজুহাত হয়ত কাজে আসবে। কারণ তার বাপ প্রায় অন্ধ। সে নূরানের সিল্কের কামিজ বা চোখের সুরমা দেখতে পাবে না। অন্ধকারের মধ্যে নূরান এগিয়ে গেল এমন প্রতিজ্ঞা করে যে, সে আর আসবে না।
গলিপথ ধরে জুগ্গাত্ বাড়ীর দিকে গেল। দরজা খোলাই ছিল। আঙিনায় কয়েকজন গ্রামবাসী তার মায়ের সাথে আলাপ করছিল। নিঃশব্দে সে ফিরে এসে পুনরায় নদীতীরে যাওয়ার পথ ধরল।