দুর্গাপুজোর পর কোজাগরী। তারপর একে একে কালীপুজো, ভ্রাতৃদ্বিতীয়াও চলে গেল। অবনীমোহন কলকাতায় ফেরার কথা আর বলেন না।
কার্তিকের শেষাশেষি একদিন সুরমা বললেন, কি গো, তোমার মতলবটা কী?
অবনীমোহন বললেন, কিসের মতলব?
কলকাতায় ফিরছ কবে?
কলকাতায় আর ফিরছি না।
তার মানে?
ইস্টবেঙ্গলেই থেকে যাব ভাবছি।
সুরমা অবাক, কী বলছ তুমি!
অবনীমোহন হাসতে হাসতে বললেন, মাথার ভেতর সেই পোকাটা নড়ে উঠেছে।
পুবের ঘরের দাওয়ায় বসে সুরমা আর অবনীমোহন কথা বলছিলেন। তারা ছাড়া আরও দুজন এখানে রয়েছে বিনু এবং ঝিনুক। সুধা সুনীতি কোথায়, কে জানে। হয়তো ভেতর-বাড়িতে স্নেহলতা শিবানীর সঙ্গে গল্পটল্প করছে; কিংবা বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হেমনাথ বাড়ি নেই, ভোরবেলা উঠেই কী একটা কাজে কমলাঘাটের গঞ্জে গেছেন। ফিরতে ফিরতে রাতদুপুর।
সময়টা বিকেল। এই তো খানিক আগে দুপুর পার হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেই হেমন্তের শেষ বেলাটা দ্রুত জুড়িয়ে যাচ্ছে। রোদ কেমন যেন মলিন আর স্তিমিত। বাগানে ছায়া ঘন হতে শুরু করেছে। অনেক দূরে–পুকুর এবং ধানখেতের ওপারে আকাশ আর দিগন্ত যেখানে একাকার, সেই জায়গাটা কেমন যেন ঝাঁপসা। বেলা থাকতে থাকতেই কি ওখানে হিম পড়ছে?
বিনুর কোনও দিকে হৃক্ষেপ নেই। মা-বাবার মুখের দিকে পলকহীন সে তাকিয়ে আছে, গোগ্রাসে তাদের কথা গিলছে। ঝিনুকও একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল।
অবনীমোহন যখন বললেন, কলকাতায় আর ফিরবেন না, রাজদিয়াতেই থেকে যাবেন, তখন থেকেই উত্তেজনায় আনন্দে বিনুর বুকের ভেতরটা দুলতে শুরু করেছে। আদিগন্ত ধানের খেত, জল পূর্ণ প্রান্তর, পাখির ঝাঁক, লারমোর, হেমনাথ, যুগল, দ্বীপের মতো ভাসমান গ্রামগুলি, সুজনগঞ্জের হাট, যাত্রার আসার–সব একাকার হয়ে এই স্নিগ্ধ শ্যামল দেশ বিনুকে একেবারে জাদু করে ফেলেছে। এদের ছেড়ে যেতে হলে ভয়ানক কষ্ট হতো তার।
ওদিকে সংশয়ের গলায় সুরমা বললেন, সত্যিসত্যিই কলকাতায় যাবে না?
অবনীমোহন বললেন, কেন, আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না?
কিন্তু—
কিন্তু টিন্তু নয়, আমি মনস্থির করে ফেলেছি।
মাথার ভেতর সত্যিই তা হলে পোকাটা নড়েছে?
ইয়েস ম্যাডাম।
সুরমা এবার আর অবাক হলেন না, কেননা তিরিশ বছর ধরে তিনি অবনীমোহনকে দেখে আসছেন। মানুষটি বিচিত্র। আর দশজনের সঙ্গে অবনীমোহনের মেলে না। তার স্বভাবের ভেতর কোথায় যেন একটা অস্থির যাযাবরের বাস। সেটা দু’দন্ড তাঁকে পা পেতে বসতে দেয় না, নিয়ত ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায়।
কেউ হয়তো কোনও অজানা দেশের গল্প করল, অমনি ঘর-সংসার ভুলে অবনীমোহন ছুটলেন। কিছুদিন সেখানে গিয়ে থাকতে না পারলে তার স্বস্তি নেই। কেউ হয়তো রমণীয় কোনও দৃশ্যের, কোনও পাহাড়-নদী-জলপ্রপাত কিংবা সমুদ্রের খবর নিয়ে এল। আর যায় কোথায়? অবনীমোহনের ঘুম গেল, খাওয়া গেল। জগৎ রসাতলে যাক, তিনি সে সব জায়গায় না গিয়ে পারবেন না।
আজ রামেশ্বর, কাল অমরকন্টক, পরশু দ্বারকা-সারা বছর এ সব লেগেই আছে। চিরদিন এই ছোটাছুটির খেলা দেখে আসছেন সুরমা। এর জন্য ছেলেমেয়েদের ক্ষতিও কি কম হয়েছে?
কোথাও গিয়ে সেই জায়গাটা যদি মনে ধরে গেল, কার সাধ্য সেখান থেকে অবনীমোহনকে নড়ায়? যতক্ষণ না নতুন চমকপ্রদ কোনও অঞ্চলের খবর আসছে, তিনি সেখানেই থেকে যাবেন। একবার কাশী গিয়ে তো বছর খানেকই কাটিয়ে এলেন, আরেক বার মধুপুরে থেকে এলেন ন’মাসের মতো। এই করে সুনীতির দুটো বছর নষ্ট হয়েছে। সুধার গেছে দেড় বছর। নইলে এতদিনে ওরা বি.এ, টি.এ পাশ করে যেত। বিনুর অবশ্য ক্ষতি হয় নি। একটা বছর যেতে যেতে কোনও রকমে বেঁচে গেছে।
দেখে শুনে একেক সময় তাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন মনে হয়। আসলে কিন্তু তিনি তা নন। এই যে নিয়ত ছুটে বেড়াচ্ছেন সেটা যেন পুরোপুরি সজ্ঞানে নয়, বিচিত্র এক ঘোরের মধ্যে। অস্থিরতার ঈশ্বর যেন তাকে দুই অদৃশ্য ডানা দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন আর তীক্ষ্ণ চোখে লক্ষ রাখছেন। না, থামবার উপায় নেই অবনীমোহনের।
দূর দেশের আকর্ষণেই শুধু নয়, কলকাতা শহরেই কি কম ছোটাছুটি করে বেড়ান অবনীমোহন? বছরে কতবার করে যে বাড়ি বদলান তার আর লেখাজোখা নেই। আজ হয়তো টালিগঞ্জে আছেন, কাল লরীতে মালপত্র চাপিয়ে চলে গেলেন কসবা, পরশু পাড়ি জমালেন বাগবাজরে। শেষ পর্যন্ত ভবানীপুরে একখানা বাড়ি কিনে থিতু হয়েছেন।
অবনীমোহনের পেছনে ঘুরে ক্লান্ত, ছুটে ছুটে বিরক্ত সুরমা প্রথম প্রথম বলতেন, এক জায়গায় দু’দিন স্থির হয়ে থাকতে কি তোমার ইচ্ছে করে না?
অবনীমোহন মাথা নাড়তেন আর হাসতেন, না সখী। না—
অবনীমোহন বলতেন, আমার কি ভাল লাগে জানো?
সুরমা জিজ্ঞাসু চোখে তাকাতেন, কী?
নিত্য নতুন।
নিত্য নতুন কী? জায়গা না মানুষ?
মজাটা বুঝতে পেরে হেসে অবনীমোহন বলতেন, দুই-ই।
এবার সুরমার গলায় পরিহাসের ছোঁয়া লাগত, আমি কিন্তু পুরনো হয়ে গেছি। দেখো, এই বয়সে আর নতুনের পেছনে ছুটো না। বলে স্বামীর দিকে তরল চোখের দৃষ্টি হাসতেন।
রগড়ের গলায় অবনীমোহন বলতেন, তার আর উপায় নেই প্রাণেশ্বরী।
কপট ভয়ের সুরে সুরমা বলতেন, উপায় থাকলে বুঝি ছুটতে?
ভেবে দেখিনি। এবার থেকে ভাবব।
ভাল কথাই মনে করিয়ে দিলাম দেখছি।
একটু নীরব থেকে দূরমনস্কের মতো অবনীমোহন বলতেন, আমার স্বভাবটাই কেমন যেন সৃষ্টিছাড়া। কোথাও একটানা থাকতে ইচ্ছে করে না, এক কাজ বেশিদিন করতে ইচ্ছে করে না।
স্বভাবের এই যাযাবরত্ব তার নিজেরই কম ক্ষতি করে নি। অবশ্য এই ক্ষতিকে ক্ষতি বলেই মানেন না অবনীমোহন।
সাধারণ মানুষ পায়ের তলায় নিশ্চিন্ত একটু আশ্রয় পেলেই স্থির হয়ে বসে। সেইখানেই জীবনকে ফুলফলে ভরে তোলে। অবনীমোহন কোনও দিন তা পারলেন না। পায়ের নিচে স্থির ভূমি তো কতবারই তিনি পেয়েছন। প্রথম জীবনে বিরাট সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন, সেটা থাকলে এতদিনে। হাজার টাকার বেশি মাইনে হয়ে যেত। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই চাকরি ছেড়ে কলেজে অধ্যাপনা শুরু করলেন। অধ্যাপক হিসেবে প্রচুর খ্যাতি হল, কিন্তু তার আয়ুও বেশিদিন নয়, বড় জোর বছর চারেক। তারপর কালো কোট গায়ে চাপিয়ে উকিল সাজলেন, ওকালতিতে যথেষ্ট পয়সা হল। কিন্তু একদিন দেখা গেল, আদালত টাদালতের বদলে শেয়ার মার্কেটে যাতায়াত শুরু করেছেন, হেসিয়ান আর বুলিরান মার্কেটের রহস্য কিছুদিন তাকে আচ্ছন্ন করে রাখল।
মোট কথা, কোথাও নোঙর ফেলে বসা তার স্বভাবে নেই। এটা ছাড়ার জন্য তার কতখানি ক্ষতি হল, ওটা পেয়ে কতখানি লাভবান হলেন, অবনীমোহন কোনও দিন তা ভাবেন না। লাভ ক্ষতি, কোনও কিছুর জন্য তার অনুশোচনা নেই, দুঃখ নেই, আসক্তি নেই।
এই বসুন্ধরায় কত দিকে কত রঙের মেলা সাজানো। এক জায়গায় থেমে থেকে জীবনকে একরঙা প্রতিমা বানাতে চান না অবনীমোহন। সমস্ত পিছুটান আর একঘেয়েমি ছিঁড়ে সামনের দিকে তিনি শুধু ছোটেন আর নিজের জন্য এক আশ্চর্য জগৎ গড়ে তোলেন।
অবনীমোহন যখন একবার স্থির করেছেন যাবেন না, তখন এই রাজদিয়াতেই থেকে যেতে হবে। যতদিন পূর্ব বাংলা তাকে মুগ্ধ বিস্মিত চমৎকৃত করে রাখছে ততদিন এখান থেকে যাবার কোনও আশাই নেই।
তবু সুরমা বললেন, দুম করে তো বলে বসলে যাবে না। সব দিক ভেবে দেখেছ?
অবনীমোহন বললেন, সব দিক বলতে?
প্রথমে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথাই বল। বছর শেষ হতে চলল, আর ক’দিন পর পরীক্ষা। এখন এখানে থেকে গেলে নির্ঘাত একটা করে বছর নষ্ট।
নষ্ট যাতে না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কেমন করে?
মামাবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করে দেখি।
চিন্তিত মুখে সুরমা বললেন, ছেলেমেয়েগুলোর যা হবে তা তো বুঝতেই পারছি। কিন্তু তোমার ব্যবসা? এত খেটেখুটে যে দাঁড় করালে, তার কী হবে?
রাজদিয়া আসার আগে ব্যবসা শুরু করেছিলেন অবনীমোহন–এজেন্সির ব্যবসা। কয়েকটা বড় বড় বিলিতি কোম্পানির এজেন্সি যোগাড় করেছিলেন। এজন্য তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। রাতদিন কত যে ছোটাছুটি করেছেন আর কত লোককে ধরেছেন তার হিসেব নেই।
অবনীমোহন বললেন, ব্যবসা আর করব না।
এমন অক্লেশে তিনি কথাগুলো বলে গেলেন যে সুরমা একেবারে থ। বিমূঢ়ের মতো প্রতিধ্বনি করলেন, ব্যবসা করবে না?
না।
একটুক্ষণ নীরবতা। তারপর সুরমা আবার বললেন, ব্যবসা না হয় নাই করলে কিন্তু কলকাতায় বাড়ি আছে, সেখানে আমাদের মালপত্র রয়েছে। সে সবের কী হবে?
অবনীমোহন বললেন, মাঝখানে আমি একবার কলকাতায় যাব, সমস্ত বন্দোবস্ত করে আসব।
যা ভাল বোঝ কর, আমি আর কী বলব! সুরমা বলতে লাগলেন, এই পূর্ব বাংলাই যে তোমার কতদিন ভাল লাগবে তা-ই ভাবছি। কবে আবার বলবে, এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে আরেক জায়গায় চল–
অবনীমোহন হাসতে লাগলেন।
মৃদু ধমকের গলায় সুরমা বললেন, অমন হেসো না –
বে কী করব?
হাসতে হাসতে অবনীমোহন শুধোলেন।
এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সুরমা বললেন, তোমার হাসি দেখলে আমার গা জ্বলে যায়।
অবনীমোহন কিছু বললেন না, নিঃশব্দে হাসতেই থাকলেন।
সুরমা থামেননি, সত্যি, একটা কথা ভাবলে আমার মাথার ঠিক থাকে না।
কী কথা?
প্রায় পঞ্চাশ বছর বয়েস হল তোমার, এখনও ওড়ার স্বভাব গেল না। কবে যে তোমার স্থিতি হবে!
ওটা বোধহয় এ জন্মে আর হবে না।
আমারও তাই মনে হয়।
এবার অবনীমোহন যা বললেন তা এই রকম। এই পৃথিবীতে ক’দিনের জন্যেই বা মানুষ আসে। পঞ্চাশ ষাট কিংবা সত্তর বছর। তার বেশি তো নয়। অল্পক্ষণের এই প্রবাসে এক জায়গায় স্থির হয়ে গিয়ে জীবনকে বদ্ধজলার মতো গতিহীন, বর্ণহীন করে তোলার কোনও মানে হয় না। তার চাইতে বহতা নদীর মতো দেশ দেশান্তরে ঘুরে যত দিকের যত মাধুর্য পার, লুট করে নাও।
জীবন সম্পর্কে অবনীমোহনের ধ্যানধারণার সঙ্গে সুরমার মেলে না। বিরক্ত গলায় তিনি বললেন, চিরকাল ওই এক বক্তৃতা। শুনে শুনে কান পচে গেল–
অবনীমোহন কী বলতে যাচ্ছিলেন, ভেতর-বাড়ি থেকে স্নেহলতার গলা ভেসে এল, রমু—রমু–
সুরমা উঠে পড়লেন, মামীমা ডাকছে, যাই–বলতে বলতে পা বাড়িয়ে দিলেন।
একটু পর অবনীমোহনও উঠলেন। তিনি অবশ্য ভেতরে গেলেন না, উঠোন পেরিয়ে বাগানের গাছপালার ভিড়ে অদৃশ্য হলেন।
তারপরও খানিকটা সময় কাটল।
হেমন্তের শেষ বেলাটা দ্রুত নিবে যাচ্ছে। লাটাইতে সুতো গুটনোর মতো কেউ যেন দিনান্তের রোদটুকু টেনে নিতে শুরু করেছে। গাছপালার মাথায়, দূরের ধানবনে গাঢ় বিষাদের মতো কী যেন নামছে।
আশ্বিন মাসে বিনুরা যখন রাজদিয়া এল, আকাশ তখন কত উজ্জ্বল। সারা বর্ষার জলে ধুয়ে ধুয়ে তার নীল রংখানি শরতে খুলে গিয়েছিল। সমস্ত দিন পরিষ্কার আয়নার মতো আকাশটা ঝকঝক করত। কিন্তু কার্তিক পড়তে না পড়তেই তার চেহারা বদলে গেছে। আকাশ এখন ধূসর, শোকাতুরের মতো সারাদিন বিষণ্ণ হয়ে থাকে।
একটু পরেই ঝপ করে সন্ধে নেমে যাবে। তার নিঃশব্দ আয়োজন চলছে চারদিকে।
হঠাৎ পাশ থেকে ঝিনুক ডেকে উঠল, বিনুদাদা—
বিনু ঝাঁপসা আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। সেখানে চোখ রেখেই আস্তে সাড়া দিল।
ঝিনুক বলল, কী মজা, না?
কিসের মজা?
বারে, মেসোমশাই কী বলল, শোন নি?
অন্যমনস্কের মতো বিনু বলল, কী বলল?
ঝিনুক বলল, তোমাদের কলকাতায় যাওয়া হবে না।
বিনু উত্তর দিল না।
আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। তোমার?
বিনুর যে আনন্দ হচ্ছিল না, তা নয়। হঠাৎ কুমার কথা মনে পড়ে গেল তার। বলল, আমাদের কলকাতায় যাওয়া না হলে ভারি মুশকিল হবে।
ঝিনুক জানতে চাইল, কিসের মুশকিল?
ঝুমারা কলকাতায় আমাদের বাড়ি আসবে বলেছিল। আমরা না গেলে ওরা এসে নিশ্চয়ই ফিরে যাবে।
একদৃষ্টে কিছুক্ষণ বিনুকে দেখল ঝিনুক। মনে মনে তার ভীষণ রাগ হচ্ছিল। একসময় গম্ভীর গলায় বলল, তা হলে রাজদিয়াতে থাকতে তোমার আনন্দ হচ্ছে না, কেমন? ·
বিনু কুমার কথা ভাবছিল, তাই সাড়া দিল না।
রাগ করে আর কোনও কথাই বলল না ঝিনুক। গাল ফুলিয়ে বসে থাকল।
হেমন্তের সন্ধেটা যেন সরু সুতোয় ঝুলছিল। সুতোটা ছিঁড়ে গিয়ে ঝপ করে সেটা নেমে এল।
ঘরে ঘরে সন্ধে প্রদীপ দেখাতে বেরিয়ে পুবের বারান্দার এসে স্নেহলতা অবাক। বিনু আর ঝিনুক তখনও বসে আছে।
স্নেহলতা বললেন, তোরা এখানে?
ঝিনুক বিনু একসঙ্গে বলে উঠল, হুঁ—
ভূতের মতো চুপচাপ বসে এখানে তোরা কী করছিস? এমনি বসে আছি। স্নেহলতা আবার কী বলতে যাচ্ছিলেন, ঝুম ঝুম ঘুন্টির আওয়াজ ভেসে এল। মুখ ফেরাতেই দেখতে পেলেন, ভবতোষদের সেই ফিটনটা উঠোনের দিকে এগিয়ে আসছে।