মহালয়ার পর থেকেই পড়াশোনা একরকম বন্ধ করে দিল বিনুরা। যে বইগুলো বাক্স থেকে বার করা হয়েছিল সেগুলো আবার বাক্সে গিয়ে ঢুকল না অবশ্য, তাকের ওপর সারি সারি গিয়ে জমা হল। সেগুলোর ওপর আশ্বিনের ধুলো জমতে লাগল।
মহালয়ার দিন থেকেই রাজদিয়ার রং গেছে বদলে। বর্ষার নতুন জলের মতো দিগ্বিদিক থেকে প্রবাসী সন্তানেরা সবাই ফিরে এসেছে।
রাজদিয়ার এ পাড়া সে পাড়া থেকে এখন ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসে। আশ্বিনের শেষাশেষি বাতাস যেন সানাই হয়ে উঠেছে। আর রোদটা যেন সারা গায়ে কাঁচা হলুদ মেখে এসে দাঁড়ায়। শিউলি গাছগুলোর পাতা আর দেখা যায় না, ফুলে ফুলে সেগুলো ছেয়ে গেছে। নদীতীরে আর খালের পাড়ে কাশবন তাদের শেষ ফুলটিও ফুটিয়ে দিয়েছে। আকাশের নীল এখন আরও ঝকমকে, আরও উজ্জ্বল। পেঁজা তুলোর মতো মেঘগুলো আরও শুভ্র, আরও ভারহীন মনে হয়। হলদিবনা আর মোহনচূড়া পাখিগুলো, হরিয়াল-টুনটুনি-ঝুটকলি এবং দানিভোলার ঝক নিতান্ত অকারণেই নেশা প্রমত্তের মতো আকাশময় উড়ে উড়ে বেড়ায়।
এ সময় বইয়ের পাতায় কারোর মন বসে!
তা ছাড়া নাটকের ব্যাপার আছে। বেশির ভাগ দিনই রিহার্সালের আসর বসে হেমনাথের বাড়িতে। বিকেলবেলা রাজ্যের মানুষ জুটিয়ে এনে হিরণ নাটকের মহড়া শুরু করে দেয়। এ ব্যাপারে সব চাইতে বেশি উৎসাহ অবনীমোহনের, হেমনাথও কম মেতে ওঠেন নি। হইচই, চিৎকার, হাসাহাসি এবং পরিহাসে আসর সরগরম হয়ে ওঠে। রিহার্সাল ভাঙতে ভাঙতে রাতদুপুর।
এত হুল্লোড়ে পড়াশোনা হবার কথা নয়। বিনুর আজকাল সারাদিনই ছুটি। বিজয়া’ নাটকে ছোট একটা রোল পেয়েছে সে। সেটুকু রিহার্সাল দিতে কতক্ষণ আর লাগে! নইলে বাকি দিনটা যুগলের সঙ্গে কিংবা একা একাই ঘুরে বেড়ায়। ছোট্ট নগণ্য রাজদিয়া শহরের সব কিছুই চিনে ফেলেছে বিনু। নদীতীর, চিত্রবিচিত্র পালতোলা অসংখ্য নৌকো, ইলশেডিঙি, স্টিমারঘাটা, কাশফুল, শিউলি বনে আশ্বিনের মোহিনী মায়া–এ সবের আকর্ষণ তো আছেই। সব চাইতে বড় আকর্ষণ যেটা, তা হল প্রতিমা।
রাজদিয়ায় মোট সাতখানা পুজো হচ্ছে। দুটো বারোয়ারি, বাকিগুলো বংশ পরম্পরায় বাড়ির পুজো।
পটুয়াদের এখন আর ব্যস্ততার শেষ নেই। সারাদিনই প্রতিমার গায়ে রং লাগাচ্ছে, শোলা দিয়ে জরি দিয়ে ডাকের সাজ তৈরি করছে। সারা রাজদিয়া টহল দিয়ে প্রায় সমস্ত দিনই প্রতিমা দেখে বেড়ায় বিনু।
এইভাবে চলছিল। হঠাৎ একদিন সকলবেলা স্নেহলতা হেমনাথকে বললেন, তুমি কী বল তো?
হেমনাথ হকচকিয়ে গেলেন।
স্নেহলতা আবার বললেন, একটু হুঁশ উঁশও যদি তোমার থাকে! পুজো এসে গেল, এখনও নতুন কাপড়-চোপড় কিছুই কেনা হল না। ওরা এই প্রথম দাদু-দিদার কাছে এল। ষষ্ঠীর দিনে ওদের হাতে একটু নতুন সুতো দিতে হবে না?
অপরাধীর মতো মুখ করে হেমনাথ বললেন, বড় ভুল হয়ে গেছে। আজই কমলাঘাটের বাজারে গিয়ে কিনে নিয়ে আসব।
নিশ্চয়ই।
বেলা একটু চড়লে অবনীমোহনকে নিয়ে কমলাঘাট রওনা হলেন হেমনাথ। বিনুকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। রাজদিয়ার একচালির বিশাল বিশাল প্রতিমাগুলি ছেড়ে সে যেতে রাজি হল না।
.
আজ রিহার্সাল বসেছিল হেমনাথদের বাড়ি। শুরু হয়েছিল সেই সন্ধেবেলায়, একটানা ঘন্টাতিনেক চলবার পর সে পালা চুকল। তারপর আরও কিছুক্ষণ গল্পটল্প করে হিরণরা চলে গেল।
হিরণরা যখন যায় তখন দুপুর রাত। চারদিকের ঝোঁপঝাড় বাগান-পুকুর এবং ধানখেত-সব একাকার হয়ে এখন যেন নিশুতিপুর।
হেমনাথরা সকালবেলা সেই যে কমলাঘাটের গঞ্জে পুজোর জামাকাপড় কিনতে গিয়েছিলেন, এখনও ফেরেন নি। তাদের জন্য বিনুদের আর অপেক্ষা করতে দিলে না স্নেহলতা। সুধা-সুনীতি ঝিনুক-বিনু, এমন কি সুরমাকেও খেতে বসিয়ে দিলেন।
সুরমা আপত্তি করতে যাচ্ছিলেন, স্নেহলতা শুনলেন না। বললেন, তুমি রোগা মানুষ, রাতদুপুর পর্যন্ত আর না খেয়ে জেগে বসে থাকতে হবে না। খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড় গিয়ে।
সুরমা তবু খুঁতখুঁত করতে লাগলেন, মামারা এখনও ফিরলেন না। পুরুষমানুষদের কারোর খাওয়া হল না, আর আমি আগেই গিলতে বসে যাই!
পুরুষমানুষদের জন্যে তো অত ভাবনার দরকার নেই। সে জন্যে আমি আছি, ঠাকুরঝি আছে। তোর খাওয়া তুই খেয়ে নে তো
না না করেও স্নেহলতার ভয়ে সুরমাকে খেতে বসতে হল।
খাওয়া যখন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে সেই সময় হইচই করতে করতে হেমনাথরা ফিরে এলেন। পুকুরঘাট থেকে তার গলা পাওয়া গেল, কোথায় রে আমার দাদাভাই দিদিভাইরা? যুগল কোথায়? সব ঘুমিয়ে পড়লি নাকি?
সকালবেলা যুগল তাদের সঙ্গে কমলাঘাটের গঞ্জে যায় নি। নিজের ঘরে বসে এই মুহূর্তে কী যেন করছিল। ডাক শোনামাত্র হেরিকেন নিয়ে ছুটল।
বিনুরা ধীরে ধীরে গল্প করতে করতে খাচ্ছিল, এখন গোগ্রাসে শেষ ভাত ক’টা মুখে পুরতে লাগল। তাদের খাওয়ার মধ্যেই হেমনাথরা ভেতর-বাড়ির উঠোনে এসে পড়লেন।
হেমনাথ অবনীমোহন সামনের দিকে ছিলেন। তাদের ঠিক পেছনে আরেক জন কেউ আছে, অন্ধকারে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
স্নেহলতা লক্ষ করছিলেন। স্বামীর উদ্দেশে বললেন, তোমাদের পেছনে কে গো?
রহস্যময় হেসে হেমনাথ বললেন, তোমার আসামী।
মানে?
আলোটা তুলে দেখই না—
দাওয়ার দু’ধারে দু’টো হেরিকেন জ্বলছিল। একটা নিয়ে উঁচুতে তুলে ধরলেন স্নেহলতা। আর তখনই দেখা গেল, হেমনাথদের পেছনে যিনি গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে আছেন তিনি আর কেউ নন– লারমোর।
ঘাড়খানা বাঁকিয়ে চোখ কুঁচকে কিছুক্ষণ লারমোরকে দেখলেন স্নেহলতা। তারপর ডাকলেন, ঠাকুরঝি ঠাকুরঝি–
শিবানী কাছাকাছি ছিলেন, ছুটে এলেন।
লারমারের দিকে আঙুল বাড়িয়ে স্নেহলতা বললেন, দেখ দেখ, কেমন গোরুচোরের মতো দাঁড়িয়ে আছে!
শিবানীও তাঁর সঙ্গে তাল দিয়ে বেজে উঠলেন, যা বলেছ। ঠিক গোরুচোর–
স্নেহলতা এবার সোজাসুজি লারমোরকে বললেন, আর রঙ্গ করতে হবে না সাহেব, আড়াল থেকে বেরিয়ে এস। নতুন করে রূপ দেখে চোখ জুড়োই।
ভয়ে ভয়ে হাতজোড় রে বেরিয়ে এলেন লারমোর। তাঁর ভঙ্গি দেখে স্নেহলতা হেসে ফেললেন।
স্নেহলতা বললেন, আর পারি না আপনাকে নিয়ে।
স্নেহলতা কখনও লারমোরকে ‘আপনি’ বলেন, কখনও ‘তুমি’। দু’জনের সম্পর্ক অত্যন্ত মধুর এবং নির্মল। মাঝে মধ্যে স্নেহলতা রেগে যান ঠিকই, তার ভেতর কিন্তু দাহ নেই। যা আছে তা হল কৌতুকমলিনতাহীন স্নিগ্ধ পরিহাস।
লারমোর বললেন, এই বারটা, শুধু এইবারটা ক্ষমা করে দিন বৌঠাকরুন। আর কখনও এরকম হবে না।
তীক্ষ্ণ কুটিতে লারমোরকে বিদ্ধ করতে করতে স্নেহলতা বললেন, চল্লিশ বছর ধরে খালি এইবারটা এইবারটা’ শুনছি। এবাড়ির সীমানা পেরুলে আমার কথা কি আপনার মনে থাকে?
এবার থেকে ঠিক থাকবে।
ঠিক যে কত থাকবে, সে আমি জানি। স্নেহলতা বলতে লাগলেন, সুজনগঞ্জের হাট থেকে সেদিন ফিরে আসার কথা ছিল না?
ছিল– লারমোর মাথা নাড়লেন। ভয়ে ভয়ে বললেন, কিন্তু সুজনগঞ্জের হাট থেকে এক রোগীর জন্যে চরবেহুলা যেতে হল যে। সে কথা তো হেম জানে। আপনাকে বলে নি?
থাক, চোরের সাক্ষী গাঁটকাটাকে ডাকতে হবে না। এখন দয়া করে হাত-পা ধুয়ে কাপড় ছেড়ে নিন।
হাতমুখ ধধায়া হয়ে গেলেও রেহাই পেলেন না লারমোর। স্নেহলতা সমানে বলতে লাগলেন, খালি রোগী–রোগী–রোগী! নিজের ঘুম-বিশ্রাম-স্বাস্থ্য-কোনও দিকে নজর নেই। রোগীরা স্বর্গে বাতি জ্বেলে দেবে!
লারমোর চুপ।
কী ভেবে স্নেহলতা প্রশ্ন করলেন, বয়েস কত হল শুনি?
লারমোর বললেন, যাট পঁয়ষট্টি হবে।
জোয়ান বয়েসে যা মানাত এখন আর তা মানায় না, বুঝলেন মশাই। দৌড়ঝাঁপ লাফালাফিগুলো একটু থামান। একবার বিছানায় পড়লে এই বয়েসে আর উঠতে হবে না।
হ্যাঁ—
স্নেহলতা ঝঙ্কার দিয়ে উঠলেন, কী হ্যাঁ?
লারমোর ভীরু গলায় বললেন, এবার থেকে নিজের দিকে খুব নজর দেব। আমারই যদি ভালমন্দ কিছু একটা হয়ে যায়, দেখবে কে? রোগী ধুয়ে তখন কি জল খাব?
সঙ্গে সঙ্গে কিছু বললেন না স্নেহলতা। ঘাড়খানা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদিক থেকে সেদিক থেকে লারমোরকে দেখতে লাগলেন। পরে বললেন, বেশ ভাল ভাল কথা বেরুচ্ছে মুখ থেকে। কিন্তু আমি তো জানি–
কী জানেন?
স্বভাব যায় না মরলে, আর–
স্নেহলতাকে শেষ করতে দিলেন না লারমোর, তার আগেই তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন, দেখে নেবেন, এবার থেকে গুড বয় হয়ে যাব।
অবিশ্বাসের গলায় স্নেহলতা বললেন, দেখা যাবে।
বিনুদের খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। আঁচিয়ে টাচিয়ে তারা হেমনাথদের কাছে এসে দাঁড়াল।
দু’চোখে অবাক বিস্ময় মেখে অপলক তাকিয়ে ছিল বিনু। লারমোরকে প্রথম যেদিন দেখে সেদিন থেকেই যে বিস্ময় আর মুগ্ধতার শুরু, এখনও তা কাটে নি। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।
একটা কথা জানবার ভারি ইচ্ছে হচ্ছিল বিনুর। সুজনগঞ্জের হাট থেকে গহরালিদের সঙ্গে সেই যে লারমোর চলে গিয়েছিলেন তারপর একদিন কোথায় কাটালেন? গহরালিদের কী?
বিনু হয়তো জিজ্ঞেস করত। তার মনের কথাটা অন্তর্যামীর মতো আগে ভাগে জানতে পেরে বুঝি স্নেহলতা সেই প্রশ্নটাই করলেন।
লারমোর যা উত্তর দিলেন তা এইরকম। চরবেহুলায় তিনি ছিলেন মোটে দু’দিন। তার যাবার খবর আগেভাগেই রটে গিয়েছিল। ফলে চারপাশের গ্রাম গঞ্জে যত যত রোগী আছে, তাদের আত্মীয় স্বজনেরা এসে ছেকে ধরেছিল। একবার যখন ওদিক যাওয়াই হয়েছে তখন তো আর অসুস্থ শয্যাশায়ী মানুষগুলোকে ফেলে আসতে পারেন না লারমোর। কাজেই চরবেহুলা থেকে তাকে যেতে হয়েছে। কুকুটিয়া, সেখানে থেকে রসুনিয়া, রসুনিয়া থেকে আউটশাহী। এইভাবে নানা জায়গা ঘুরে আজ দুপুরে এসেছিলেন কমলাঘাটের গঞ্জে। রাজদিয়াগামী নৌকো খুঁজছিলেন তিনি। এদিকে যারা আসবে তাদের কারোর সহযাত্রী হবেন, এই রকম ইচ্ছে। এমন সময় হেমনাথদের সঙ্গে দেখা, তাঁদের সঙ্গে সারাদিন ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করেছেন লারমোর। তারপর সন্ধের আগে আগে নৌকোয় উঠেছেন।
স্নেহলতা বললেন, অনেক বক্তৃতা হয়েছে। এবার খেতে চলুন।
আচমকা যেন মনে পড়ে গেছে এমনভাবে লারমোর বলে উঠলেন, হ্যাঁ হ্যাঁ, বড্ড খিদে পেয়েছে।
খেতে খেতে বিনুর সঙ্গে, সুধা সুনীতির সঙ্গে, সুরমা শিবানী ঝিনুকের সঙ্গে অনেক গল্পটল্প করলেন লারমোর। তারপর হঠাৎ অবনীমোহনের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা তো একদিনও আমার ওখানে গেলে না?
স্নেহলতা ঝঙ্কার দিয়ে উঠলেন, যেতে কখনও বলেছেন যে যাবে?
ধবধবে ফর্সা মানুষটি একেবারে লাল হয়ে গেলেন। বিব্রত মুখে বললেন, যেতে যে বলব, নানা ঝঞ্ঝাটে একেবারেই মনে ছিল না।
স্নেহলতা বললেন, রমু না হয় আরও এসেছে। কিন্তু অবনী-সুধা-সুনীতি-বিনু, ওরা তো এই প্রথম রাজদিয়া এল। কোথায় তাদের নিয়ে আমোদে-আহ্লাদ করবে, তা নয়। আজ চরবেহুলা, কাল রসুনিয়া, এই করে বেড়াচ্ছে!
লারমোর বললেন, সত্যি খুব অন্যায় হয়ে গেছে। বলেই অবনীমোহনের দিকে ফিরলেন, কবে আমার ওখানে যাচ্ছ বল। সকালবেলা চলে যাবে, সারাদিন থাকতে হবে।
অবনীমোহন বললেন, তাড়া কি, যাব একদিন।
একদিন ট্যাকদিন না, ঠিক তারিখটা জানতে চাই।
হেমনাথ এতক্ষণ চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছিলেন। এবার বললেন, পুজোর ভেতর একদিন যাবে। ধর, সপ্তমীর দিন।
লারমোর বললেন, বেশ, পাকা কথা তো?
অবনীমোহনদের হয়েই হেমনাথ জবাব দিলেন, পাকা কথা।
খাওয়া দাওয়ার পর লারমোর বললেন, এখন তা হলে আমি চলি—
স্নেহলতা বললেন, এত রাত্তিরে কোথায় যাবেন?
আমার গীর্জায়।
আজ আর যেতে হবে না। বিছানা করে দিচ্ছি, শুয়ে পড়ুন। কাল সকালবেলা উঠে চলে যাবেন।
দু’হাত জোড় করে লারমোর বললেন, আজ আর থাকতে বলবেন না বৌ-ঠাকরুন, চরবেহুলা যাবার আগে কাঁদেরের জ্বর দেখে গিয়েছিলাম। কদিন তার খবর জানি না। বড্ড চিন্তা হচ্ছে।
এতদিন হুঁশ ছিল না। রাজদিয়ায় পা দিতেই বুঝি কাঁদেরের জন্যে প্রাণ কেঁদে উঠল!
না না, সব সময় ওর কথা ভেবেছি। কিন্তু কী করব, রোগী ফেলে তো আর আসা যায় না। রাজদিয়ায় যখন এসেই পড়েছি তখন–
এই সময় বিনু বলে উঠল, কাদের কে?
লারমোর বললেন, আরেক দিনও তার কথা জিজ্ঞেস করছিলি দাদা-ভাই। কাদের আমার ফিটন গাড়িটা চালায়। আমার কাছেই থাকে ও।
এবার বিনুর মনে পড়ে গেল। আর কিছু বলল না সে।
স্নেহলতা আরও দু’একবার রাতটা কাটিয়ে যেতে বললেন, লারমার রাজি হলেন না।
অগত্যা হেমনাথ বললেন, একা একা এতটা পথ অন্ধকারে যাবে। যুগল বরং হেরিকেন নিয়ে তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসুক।
লারমোর বললেন, যুগল যাবে? এই রাত্তিরবেলা ছেলেটাকে আবার কষ্ট দেওয়া।
হেমনাথ বললেন, কিছু কষ্ট না। তুমি একটু দাঁড়াও, ও খেয়ে নিক। তারপর স্ত্রীর দিকে ফিরে বললেন, তাড়াতাড়ি যুগলকে খেতে দাও–
তিন থাবায় খাওয়া শেষ করে লারমোরের সঙ্গে চলে গেল যুগল। একটু পর বাগানের দূর প্রান্ত থেকে লারমোরের গম্ভীর সুরেলা কণ্ঠস্বর ভেসে এল। অন্ধকারে নির্জন পথে যেতে যেতে তিনি খ্রিস্টবন্দনা শুরু করেছেন:
Hear the right O Lord,
Attend unto my cry,
Give ear unto my prayer,
That goeth not out of feigned lips.