অপটু হাতে নৌকো বাইতে বাইতে দু’জন পুকুর পেরিয়ে ধানখেতে এসে পড়ল। ঘন ধানবন ঠেলে ঠেলে একটু পর তারা যেখানে এল সেখানে আশ্বিনের শান্ত জলে শুধু পদ্ম আর শাপলা। আর আছে চাপ চাপ কচুরিপানা, সেগুলোর মাথায় থোকা থোকা নীল ফুল, মাঝে মাঝে মুত্রা আর নলখাগড়ার ঝোঁপ। দু’চারটে মান্দার গাছও চোখে পড়ে, লাল ফুলে ফুলে সেগুলোর ডালপালা ছেয়ে আছে। কিছু কিছু বউন্যা গাছও ইতস্তত ছড়ানো। বউন্যার নিচু নিচু ডাল থেকে শক্ত শক্ত অসংখ্য গোলাকার ফল জলের কাছাকাছি ঝুলছে। আর মুত্রাঝোঁপ তো সাদা ফুলের মুকুট পরে গরবিনী হয়েই আছে।
শুধু ফুলই না, কত যে পাখি গাছের মাথায় মাথায় আর আকাশময় রঙিন পাপড়ির মত উড়ছে তার হিসেব নেই।
ঝুমা খুশিতে হাততালি দিয়ে উঠল। তারপর চেঁচিয়ে বলল, ইস, কত ফুল! কত পাখি!
এ দৃশ্য বিনুর অচেনা নয়। কালই চারদিকের এই ঝোঁপঝাড় ফুলফল এবং পাখিদের রাজ্য পাড়ি দিয়ে সুজনগঞ্জের হাটে গিয়েছিল সে। যেতে যেতে প্রতিটি গাছ, প্রতিটি লতা আর পাখির নাম শিখিয়েছিল যুগল। সে সব ঠিক ঠিক মনে আছে বিনুর। ওই যে ওই পাখিটা হল মাছরাঙা, ওইটা হলদিবনা, ওইটা পাতিবক–
পরিচিত দৃশ্য। তবু মুগ্ধ হয়ে গেল বিনু।
ঝুমা আবার বলল, কী সুন্দর জায়গাটা, না?
হ্যাঁ– বিনু মাথা নাড়ল।
আমি জোর করে ধরে আনলাম বলে তো, নইলে কি কখন এখানে আসতে?
বিনু বলল, কালই এসেছিলাম।
সত্যি! ঘাড় বাঁকিয়ে ঝুমা তাকাল। তার গলার স্বরে এবং চোখের তারায় অবিশ্বাস।
হ্যাঁ, সত্যি। মা কালীর দিব্যি।
মা কালীর নামে যখন দিব্যি কেটেছে তখন আর সন্দেহ করা চলে না। ঝুমা শুধলো, কার সঙ্গে এসেছিলে?
কে নিয়ে এসেছিল, বিনু বলল।
কী জন্যে এসেছিলে?
বিনু তা-ও জানায়।
যুগলের নৌকোয় সুজনগঞ্জে পাড়ি দেবার কথা শুনে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল ঝুমা। তারপর ঈর্ষা এবং লোভ-মেশানো গলায় বলল, সুজনগঞ্জের হাট কোথায়?
অনেক দূর। বিনু বলতে লাগল, সকালবেলা বেরুলে পৌঁছতে দুপুর হয়ে যায়।
সুর টেনে টেনে ঝুমা বলল, এ-ত-দূর!
হুঁ–
সেখানে কী দেখলে?
কাল হাটে গিয়ে যে সব বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে, বলে গেল বিনু। মন দিয়ে শুনে ঝুমা বলল, যুগলকে একটা কথা বলবে?
কী?
আমাকে একদিন সুজনগঞ্জে নিয়ে যেতে।
বলব।
ঠিক তো?
ঠিক।
একটুক্ষণ চুপ।
তারপর চারদিকের অসংখ্য পাখি দেখতে দেখতে ঝুমা বলল, ইস, আমার এয়ার-গানটা যদি আনতাম–
বিনু শুধলো, তা হলে কী হত?
দেখতে এতক্ষণে কতগুলো পাখি শিকার করে ফেলতাম—
তুমি বন্দুক ছুঁড়তে পার।
চোখ বড় করে মাথা নাড়তে নাড়তে ঝুমা বলল, তোমার বুঝি কিছু মনে থাকে না! একেবারে হাঁদারাম শিকদার–
বিনুর মুখ লাল হয়ে উঠল। থতমত খেয়ে সে বলল, কী মনে থাকে না আমার?
সেদিন তোমাকে এয়ার গান ছোঁড়ার কথা বললাম না?
এবার মনে পড়ে গেল। বন্দুক ছোঁড়ার কথা বলেছিল বটে ঝুমা। তা ছাড়া, যার মামা বাঘ ভাল্লুক মারতে পারে, তার ভাগনী কি আর দু’একটা পাখি শিকার করতে পারবে না?
ঝুমা আবার বলল, কি মশাই, মনে পড়েছে?
নিঃশব্দে ঘাড় কাত করল বিনু।
ঝুমা পাখিশিকার নিয়ে আর কিছু শুধলো না। চারদিকে ফুটন্ত ফুলের মেলার দিকে তাকিয়ে বলল, এয়ার-গান যখন আনি নি তখন ফুল তুলি এস–
বিনু উৎসাহিত হয়ে নৌকোর ধারে এসে ঝুঁকে বসল। ঝুমাও বসল তার পাশে। তারপর ক্ষিপ্ত হাতে দু’জনে ফুল ছিঁড়তে লাগল। চোখের পলকে শাপলা আর পদ্মে, মুত্রা এবং কচুরি ফুলে নৌকো বোঝাই হয়ে গেল।
ফুলটুল তুলতে তুলতে হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল ঝুমা, ওটা কী গাছ জানো? বলে সামনের দিকে আঙুল বাড়িয়ে দিল।
অথৈ জলের মাঝখানে গাছটা এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে। ডিঙি মেরে সেটা আকাশের ওপারের কোনও রহস্য বুঝি দেখতে চেষ্টা করছে। কালই গাছটা চিনিয়ে দিয়েছিল যুগল। বিনু বলল, ওটা কাউ গাছ।
গাছটার সারা ডালপালা ফলে বোঝাই। হলুদ আভা-মাখানো সবুজ রঙের ফলগুলো সরু বোঁটায় ঝুলছে। সেগুলো দেখিয়ে ঝুমা বলল, ওগুলো খায়?
হ্যাঁ—
তুমি খেয়েছ?
না।
তবে কী করে বুঝলে খায়?
যুগল বলেছে।
খেতে কিরকম লাগে জানো?
খুব টক।
লোভে চোখ চকচক করতে লাগল ঝুমার। দ্রুত চাপা স্বরে সে বলল, চল, ক’টা কাউ পাড়ি। বাড়ি গিয়ে নুন দিয়ে খাব।
ব্যাপারটা খুবই লোভনীয়। বিনু তক্ষুণি রাজি হয়ে গেল, আচ্ছা–
বৈঠা টেনে টেনে নৌকোটাকে কাউ গাছের কাছে নিয়ে এল দু’জনে। আনা মাত্র হাত বাড়াল ঝুমা, কিন্তু ফলগুলো ধরতে পারল না। কাজেই পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে আরও খানিক লম্বা হয়ে নিল। এবারও ফলগুলো ছোঁয়া গেল না।
অগত্যা বিনুর দিকে তাকাল ঝুমা। করুণ হেসে বলে, পারলাম না।
বিনু বলল, তুমি বেঁটে যে–
তুমি যেন কত লম্বা!
গম্ভীর চালে বিনু বলল, তোমার চাইতে অনেক–
চোখ কুঁচকে বিনুর পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিল ঝুমা। তারপর বলল, কেমন লম্বা এবার দেখব। পাড়ো তো ওই কাউটা–
নৌকোর একেবারে ধারেই পঁড়িয়ে ছিল বিনু। খানিক ঝুঁকে গাছের দিকে হাত বাড়াতে গিয়ে হঠাৎ অঘটন ঘটে গেল। টাল সামলাতে না পেরে হুড়মুড় করে সোজা জলে গিয়ে পড়ল সে।
এখানে অগাধ জল, পায়ের তলায় মাটি খুঁজে পেল না বিনু। একবার ডুবে যাচ্ছে সে, পরক্ষণে ভেসে উঠছে। আর সমানে হাত-পা ছুঁড়ছে। হাত বাড়িয়ে কিছু একটা যে ধরবে তেমন কিছুই নেই। কাছাকাছি। এরই ভেতর অনেকখানি জল খেয়ে ফেলল সে।
খানিক পর বিনুর মনে হল, জলের ওপর আর মাথা তুলতে পারছে না। এবার সে নির্ঘাত ডুবে যাবে। নৌকোটা কিংবা কাউফলের গাছটা কোথায় কোন দিকে সে বুঝতে পারছে না, দেখতে পাচ্ছে না। দেখতে পেলে সেদিকে যেতে চেষ্টা করত। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে লাগল তার, আঙুলের ডগাগুলো ঝিনঝিন করতে লাগল, কানের কাছে একসঙ্গে হাজার ঝিঁঝি একটানা ডেকে চলল। অথৈ জলে ডুবে যেতে যেতে প্রাণপণে চেঁচিয়ে উঠল বিনু, মরে গেলাম, মরে গেলাম। আমাকে বাঁচাও–
আর তখনই সে শুনতে পেল, কেউ যেন ঝপাং করে জলে লাফিয়ে পড়েছে। পরমুহূর্তেই টের পেল, তার চুলগুলো কার হাতের মুঠোয়। জলের ওপর তাকে ভাসিয়ে রেখে চুল ধরে কেউ টেনে নিয়ে চলেছে।
যে চুল ধরেছে তাকে দেখা যাচ্ছে না। তাকে ধরবার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল বিনু, কিন্তু সে এমনভাবে জলে ভেসে রয়েছে যে ধরা যাচ্ছে না।
ধরাই যখন যাচ্ছে না তখন আর সে চেষ্টা করল না বিনু। এখন সে ভেসে থাকতে পারছে। বুক ভরে হাওয়া টানতে টানতে হঠাৎ তার মনে হল, ঝুমা আর সে ছাড়া এখানে তো কেউ ছিল না। তবে কি ঝুমাই তাকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দিয়েছে?
যতখানি পারল মাথাটা উঁচু করে একবার নৌকোর দিকে তাকাল বিনু। সেখানে কেউ নেই। ঝুমা–নিশ্চয়ই ঝুমা তাকে টেনে নিয়ে চলেছে।
বিনু ডাকল, ঝুমা।
পাশ থেকে ঝুমাই সাড়া দিল, কী বলছ?
তুমি আমাকে বাঁচালে। নইলে—
বিনুর কথা শেষ হবার আগেই ঝুমা বলে উঠল, এখন কথা বলতে হবে না। আগে নৌকায় উঠে নাও–
একসময় তারা নৌকোর কাছে এসে পড়ল। গলুই দেখিয়ে ঝুমা বলল, এটা ধর।
বিনু গলুই ধরল।
ঝুমা আবার বলল, আমি তোমার কোমর ধরে ওপর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। তুমি নৌকোয় ওঠ।
দুতিনবার চেষ্টা করেও বিনু উঠতে পারল না। ঝুমা তখন বলল, গলুইটা খুব শক্ত করে ধরে থাকো। আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়ে নৌকোয় উঠি।
এস্ত সুরে বিনু বলল, আমাকে ছেড়ে দেবে?
বা রে, ছেড়ে না দিলে নৌকোয় উঠব কী করে? আমি উঠে তোমায় টেনে তুলব। কোনও ভয় নেই–
ভরসা দিয়ে বিনুকে ছেড়ে দিল কুমা। তারপর ডুব-সাঁতারে নৌকোর ওধারে গিয়ে চোখের পলকে বেয়ে বেয়ে ওপরে পাটাতনে উঠে পড়ল।
প্রাণপণে দুহাত দিয়ে গলুইটা ধরে ছিল বিনু। জলে পড়ে যাবার পর থেকেই সীমাহীন এক আতঙ্ক তাকে ঘিরে আছে। ঘোরের ভেতর সে ঝুমার সাঁতার কাটা, নৌকোয় ওঠা দেখতে লাগল।
এদিকে পাটাতনে উঠেই বিনুর দিকে অনেকখানি ঝুঁকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ঝুমা। সে বলল, আমাকে ধরে ওঠ।
ঝুমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নৌকোয় উঠল বিনু। উঠেই টের পেল, পেটটা খুব ভারী লাগছে।
মনে পড়ল, খানিক আগে প্রচুর জল খেয়েছে। বুকের ভেতরটা তার থর থর করছিলই, নিরাপদ জায়গায় উঠবার পর কাপুনিটা হাজার গুণ বেড়ে গেল। কিছুক্ষণ নির্জীবের মতো বসে থেকে ক্লান্ত গলায় বিনু বলল, তুমি না থাকলে আমি আজ মরে যেতাম।
গলা ঝাঁকিয়ে ঝুমা বলল, যেতেই তো। ধাড়ি ছেলে, এখনও সাঁতার শেখ নি!
মুখ নিচু করে বিনু বলল, তুমি কিন্তু খুব ভাল সাঁতার কাটতে পার।
পারিই তো।
কোথায় শিখলে?
কলকাতায় একটা সাঁতারের ক্লাবে। কী করে জল থেকে মানুষ তুলতে হয় তাও শিখেছি। ভাগ্যিস শিখেছিলাম!
বিনু চুপ করে থাকল। এতক্ষণ কিছুই দেখতে বা শুনতে পাচ্ছিল না সে। বুঝতেও না। তার সামনে থেকে পাখি-ফুল-ধানখেত, পেঁজা তুলোর মতো সাদা মেঘ এবং ঝকঝকে নীলাকাশ দিয়ে ঘেরা জল-বাংলার এই আশ্চর্য রূপের জগৎটি মুছে গিয়েছিল। জলের ভেতর থাকার সময় একটুখানি শক্ত নিরাপদ মাটি আর বুক-ভরা বাতাসের জন্য সে ছটফট করছিল।
এখন ভয়টা দ্রুত কেটে যাচ্ছে। স্পষ্ট করে সব কথা ভাবতে পারছে বিনু। কিভাবে অথৈ জল থেকে চুলের মুঠি ধরে ঝুমা তাকে তুলে এনেছে, এই কথাটা যতই সে ভাবল ততই অপার বিস্ময় যেন চারদিক থেকে ঘিরে ধরতে লাগল। কৃতজ্ঞ চোখে দুঃসাহসী মেয়েটাকে একবার দেখে নিল বিনু।
গম্ভীর চালে ঝুমা বলল, সাঁতারটা তাড়াতাড়ি শিখে নেবে, বুঝলে?
আস্তে মাথা নাড়ল বিনু।
ঝুমা এবার বলল, কাউফল খেয়ে আর কাজ নেই, কি বল? বলে ফিক করে হেসে ফেলল।
বিনু চুপ। ঘাড় নিচু করেই ছিল সে। এবার আরও একটু নুয়ে পড়ল।
ঝুমা ঠোঁট কুঁচকে হেসে বলল, তখন তো পাড়তে গিয়ে উলটে মুলটে জলে পড়লে। আবার পাড়তে গেলে কী করে যে বসবে! তার চাইতে চল, বাড়ি যাই। হঠাৎ কী মনে পড়ে যেতে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, উঁহু উঁহু
বিনু মুখ তুলে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে থাকল।
ঝুমা বলল, এক্ষুণি তো যাওয়া হবে না।
এতক্ষণে গলায় স্বর ফুটল বিনুর। অবাক হয়ে বলল, কেন?
আঙুল দিয়ে নিজের এবং বিনুর ভিজে জামাটামা দেখিয়ে বলল, এগুলো আগে শুকিয়ে নিই। নইলে বলে চোখের একটা ইঙ্গিত করল।
ইঙ্গিতটা বুঝল বিনু। একটু হেসে অন্য দিকে মুখ ফেরাল।
ঝুমা ডাকল, অ্যাই–
খানিক দূরে নলখাগড়া ঝোঁপের মাথায় এক ঝাঁক ফড়িং পাতলা ফিনফিনে ডানায় উড়ে বেড়াচ্ছিল। তাদের ওড়াউড়ি দেখতে দেখতে বিনু সাড়া দিল, কী?
ঝুমা বলল, তুমি যে জলে পড়ে গিয়েছিলে, একথা কিন্তু কাউকে বলল না। আমার মা যদি জানতে পারে তোমাকে নিয়ে এসেছি, কাউফল পাড়তে বলেছি, আর সেই জন্যেই তুমি জলে পড়ে গেছ, তা হলে কী হবে জানো?
ফড়িংদের দিক থেকে দ্রুত মুখ ফিরিয়ে বিনু বলল, কী?
মা আমাকে ঠিক মেরে ফেলবে।
বিনু বলল, জানতে পারলে আমার মা-বাবাও খুব বকবে। আর কক্ষণো নৌকোয় উঠতে দেবে না।
আচ্ছা– বিনু ঘাড় কাত করল। পরক্ষণেই তার মনে পড়ে গেল, বারো বছরের জীবনে কোনও দিন কোনও কথা মা-বাবার কাছে লুকোয় নি সে। কিন্তু এই কথাটা গোপন রাখতেই হবে। নইলে বাইরে বেরুবার পথ আজ থেকে বন্ধ, সারাক্ষণ কেউ না কেউ তাকে পাহারা দিয়ে রাখবে।
সব চাইতে মজার ব্যাপার, ঝুমাকে সে ভাল চেনে না, জানে না। রাজদিয়াতে এসেই তাকে প্রথম দেখেছে। অথচ এই প্রায়-অচেনা মেয়েটা তার লুকনো কথাটা জানবে, আর কেউ না।
আরও কিছুক্ষণ বসে থেকে জামাপ্যান্ট যখন শুকিয়ে গেল, জলে ডোবার কোনও চিহ্নই যখন আর নেই, সেই সময় ঝুমা বলল, চল, এবার যাই।
বিনু বৈঠা নিয়ে তখনকার মতো গলুইর কাছে যাচ্ছিল, ঝুমা চেঁচিয়ে উঠল, না–না—
চমকে বিনু তাকাল, কী হল?
তোমাকে আর ওস্তাদি করে নৌকো বাইতে হবে না। মাঝখানে বসে থাকো। বৈঠা চালাতে গেলে আবার যদি পড়ে যাও–
ঝুমা যেভাবে যে কণ্ঠস্বরে কথা বলছে তাতে মনে হয় সে বিনুর চাইতে অনেক বড়। বিনু তার কাছে যেন অবোধ শিশু। ঝুমার চালচলন, ভাবভঙ্গি, সব কিছুই অভিজ্ঞ, বয়স্ক মহিলার মতো।
সাঁতার না জেনে অথৈ জলে পড়ে যাওয়া খুব লোভনীয় ব্যাপার নয়। একটু আগে বিনুর সে অভিজ্ঞতা হয়েছে। কাজেই বৈঠা ফেলে ঝুমার কথামতো তাড়াতাড়ি নৌকোর মাঝখানে এসে বসল সে।