ষোড়শ পাঠ
পাত্রকে নিদ্রিত করণ
প্রথম নিয়ম
পাত্র মনোনীত করিয়া তাহাকে চেয়ারে বসাইবে অথবা বিছানায় শোওয়াইবে। চেয়ারে বসাইলে তাহার মাথা কাৎ করিয়া চেয়ারের হেলান দিবার কাষ্ঠখণ্ডের উপর স্থাপন করতঃ তাহার হাত দুইখানাকে কোলের উপর রাখিবে; অথবা তাহাকে চিৎ করিয়া বিছানায় শোওয়াইয়া হাত দুইখানা দুই পাশে স্থাপন করিবে। আসল কথা এই যে, তাহাকে এরূপ ভাবে বসাইবে বা শোওয়াইবে, যেরূপে সে বেশ আরামের সহিত ঘুমাইতে পারে। তাহার সুবিধা মত তাহাকে বসাইতে কিম্বা শোওয়াইতে যদি উক্ত নিয়মের কথঞ্চিৎ ব্যতিক্রম হয়, তাহাতে কোন ক্ষতি নাই; কিন্তু ইহা সর্বদা লক্ষ্য রাখিবে যে, তাহার শরীরের মাংসপেশী গুলি যেন খুব শিথিল থাকে। তৎপরে তাহাকে শরীরটি খুব শিথিল করিতে বলিবে। নিদ্রার সময় মানুষের শরীর স্বভাবতঃ যেরূপ অসার ও বলশূন্য হয়, তাহার শরীরটি ঠিক সেইরূপ শিথিল হইবে। তৎপরে সে চক্ষু বুজিয়া খুব মনাযোগের সহিত নিম্নোক্তরূপ ভাবিবে—আমার শরীর বলশূন্য ও নির্জীব হইয়া পড়িতেছে,—আমার মাথা ক্রমে ক্রমে খুব ভারী হইয়া পড়িতেছে,আমার চক্ষু দৃঢ়রূপে জোড়া লাগিয়া বন্ধ হইয়া আসিতেছে,-আমি কিছুতেই আর চোখ টানিয়া খুলিতে পারিব না,–ক্রমেই আমার শরীর অত্যন্ত অসার ও অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে,আমি এখনই ঘুমাইয়া পড়িব,-আমার খুব ঘুম হইবে,-আমার নিশ্চয় গভীর নিদ্রা হইবে। সে ক্রমাগত একাগ্র চিত্তে এইরূপ চিন্তা করিতে থাকিবে।
যখন সে উক্তরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক তাহার সামনে দাঁড়াইয়া অথবা বসিয়া তাহার নাসিকা-মুলে স্থির ও প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূৰ্ব্বক, উভয় হাত দ্বারা তাহার শরীরের উপর নিম্নোক্তরূপে হাত বুলাইবে অর্থাৎ পাস দিবে। উভয় হাতের অঙ্গুলিগুলি বিস্তৃত করিয়া উহাদিগকে তাহার মাথার সম্মুখভাগের উপর স্থাপন করিবে; তৎপরে উভয় হাত দুইখানা আস্তে আস্তে তাহার শরীরের উপর দিয়া টানিয়া বরাবর পা পৰ্যন্ত লইয়া আসিবে এবং যখন একবার ঐরূপ করা হইয়াছে, তখন উহাদিগকে পূর্বোক্ত স্থানে স্থাপন করতঃ পুনৰ্ব্বার ঐরূপ করিবে ও ক্রমাগত ৫ হইতে ১৫ মিনিট ঐরূপ করিতে থাকিবে। ইহাকে “স্পর্শযুক্ত নিম্নগামী পাস” বলে। এই পাস দিবার সময় কাৰ্যকারককে উপুড় বা কুঁজো হইয়া কার্য করিতে হইবে, কিন্তু তাহার দৃষ্টি যথা সম্ভব পাত্রের নাসা-মূলে স্থির থাকিবে। পাস দিবার সঙ্গে সে ধীর, গম্ভীর ও একঘেয়ে সুরে নিম্নোক্তরূপ আদেশ দিবে। বলিবে—“ঘুম-ঘুম-ঘুম —গভীর নিদ্রা; ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; যু-উ-ম-ঘু-উ-ম -ঘু-উ-ম—গভীর নিদ্রা।” চার-পাঁচ মিনিট এরূপ আদেশ দেওয়ার পর বলিবে—“তোমার মাথা ক্রমে ক্রমে অত্যন্ত ভারী হইয়া পড়িতেছে—ক্রমে ক্রমে তোমার শরীর খুব অলস ও অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে-তোমার চক্ষু খুব শক্তরূপে বন্ধ হইয়া গিয়াছে—তুমি আর উহাদিগকে টানিয়া খুলিতে পারিবে না-কিছুতেই পারিবে না। তোমার কেবল ঘুম পাচ্ছেখুব ঘুম পাচ্ছে—গভীর নিদ্রা হচ্ছে। এমন গভীর নিদ্রা তোমার কখনও হয় নাই—এমন আরাম জনক নিদ্রা তুমি জীবনে কখনও উপভোগ কর নাই;-এখন তুমি কিছুই অনুভব করিতে পারিতেছ না-একটুও নড়াচড়া করিতে পারিতেছ না-কাহারও কথা—কোন শব্দই তুমি শুনতে পাচ্ছ না—কেবল আমার কথাই শুনতে পাচ্ছ।” চার-পাঁচ বার এইরূপ আদেশ দেওয়ার পর বলিবে—“ঘ-উ-ম-ঘু-উ-ম-মু-উম —গভীর নিদ্রা;-ঘূ-উ-ম-ঘু-উ-ম-ঘুউ-ম—গভীর নিদ্রা (৪৫ বার বলিবে); খুব আরামদায়ক নিদ্রা-খুব শান্তিজনক নিদ্রা —গভীর নিদ্রা; এখন তোমার খুব ঘুম হয়েছে তোমার ঘুম আরও গভীর-খুব গভীর হচ্ছে। এই ঘুম আর ভাঙ্গিবে না, -আমি তোমাকে না জাগাইলে তুমি আর জাগিবে না, আমি ভিন্ন আর কেহই তোমার ঘুম ভাঙ্গিতে পারিবে না। এইক্ষণ তোমার জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস হচ্ছে—খুব জোরে -আরও জোরে জোরে হচ্ছে। এখন তুমি নাক ডাকাইয়া ঘুমাইতে থাকিবে (এই আদেশের অব্যবহিত পরে, যদি পাত্রের শ্বাসপ্রশ্বাস গভীররূপে বহিতে আরম্ভ না হয়, তবে কাৰ্য্যকারক স্বয়ং কিছুক্ষণের জন্য জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস টানিতে আরম্ভ করিবে। তাহার শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনিতে পাইয়া পাও জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলিতে আরম্ভ করিবে; যখন পাত্র ঐরূপ করিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন সে তাহা বন্ধ করিবে, কিন্তু পাত্র বরাবর জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলিতে থাকিবে) তোমার গভীর নিদ্রা হয়েছে,-খুব গাঢ় ঘুম হয়েছে, তোমার ঘুম কিছুতেই ভাঙ্গিবে না; যতক্ষণ না আমি তোমাকে জাগিতে বলিব, ততক্ষণ তুমি কিছুতেই জাগিতে পারিবেনা; গভীর নিদ্রা—শান্তিজনক নিদ্রা।” যখন বোধ হইবে যে, পাত্র নিদ্রিত হইয়াছে, তখন তাহাকে কোন কাৰ্য্য করিতে আদেশ দিবার পূর্বে অষ্টাদশ পাঠের নিয়মানুসারে পরীক্ষা করিয়া লইবে।
দ্বিতীয় নিয়ম
পূৰ্ব কথিত নিয়মে পাত্রকে একখান সাধারণ চেয়ারে বসাইবে কিম্বা বিছানায় শোওয়াইবে। সে বেশ আরামের সহিত বসিয়া বা শুইয়া শরীরটি সাধ্যমত বলশূন্য ও শিথিল করতঃ চক্ষু বুজিয়া খুব একাগ্র মনে নিম্নোক্তরূপ ভাবিবে—“আমার শরীর অলস, অবসন্ন ও শিথিল হইয়া পড়িতেছে,-আমার মাথা ক্রমেই খুব ভারী হইয়া পড়িতেছে,আমার চক্ষু ক্রমেই দৃঢ়রূপে বন্ধ হইয়া যাইতেছে,আমি আর চোখের পাতা টানিয়া খুলিতে পারিব না,-ক্রমেই আমার অত্যন্ত ক্লান্তি বোধ হইতেছে,
ক্রমেই আমার খুব ঘুম পাইতেছে,আমি ৪৫ মিনিটের মধ্যেই ঘুমাইয়া পড়িব, আমার খুব গভীর ও শান্তিজনক নিদ্রা হইবে” ইত্যাদি। যখন সে এইরূপ চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক নিজের দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলিটি (পাত্রের) কপালের ঠিক মধ্য স্থলের কিঞ্চিৎ উপরে স্থাপন করতঃ ঐ হাতের অপর অঙ্গুলিগুলিকে কপালের বামপার্শ্বে (at the left temple of subject’s fore-head) atfeta 07? Oteter বাম বৃদ্ধাঙ্গুলিটি (পাত্রের) কপালের ঠিক মধ্যস্থলে (দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলির নিম্নে) স্থাপন করতঃ অপর অঙ্গুলিগুলি কপালের দক্ষিণ পার্শ্বে (at the right temple of subjects fore-head) ata qeforefas ন্যায় স্থাপন করিবে। পাত্রের কপালের উপর কাৰ্যকারকের বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটি এরূপ ভাবে স্থাপিত হইবে যেন, একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত না হয়। তৎপরে কাৰ্যকারক বাম ও দক্ষিণ হাতের অঙ্গুলিগুলি উহাদের নির্দিষ্ট স্থান হইতে স্থানান্তরিত না করিয়া, বাম বৃদ্ধাঙ্গুলিটি পাত্রের দক্ষিণ জ্বর সীমান্ত পর্যন্ত এবং দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলিটি তাহার নাসিকার উপর দিয়া, বরাবর নীচের দিকে উহার অগ্রভাগ পর্যন্ত আস্তে আস্তে বুলাইয়া আনিবে, অর্থাৎ পাস করিবে। ঐরূপ করিবার সময় কাৰ্যকারককে ইহা স্মরণ রাখিতে হইবে যে, দুইটি বৃদ্ধাঙ্গুলিকেই এক সময়ে –উহাদের নির্দিষ্ট স্থান হইতে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পাস করিয়া আনিতে হইবে—অর্থাৎ দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলিটি কপালের মধ্যস্থল হইতে নাসিকার অগ্রভাগ পর্যন্ত এবং বাম বৃদ্ধাঙ্গুলিটি কপালের মধ্যস্থল হইতে দক্ষিণ জ্বর সীমান্ত পর্যন্ত আনিতে হইবে এবং ঐরূপ করিবার সময় একটি অপরটির সহিত যুক্ত হইবে না। এইরূপে একবার পাস করা হইলে, বৃদ্ধাঙ্গুলি দুইটি পুনৰ্ব্বার পূৰ্ব স্থানে স্থাপন করিয়া উক্তরূপ পাস করিবে এবং ক্রমাগত ৫ হইতে ১৫ মিনিট কাল ঐরূপ করিবে। পাস দিবার সঙ্গে ধীর, গম্ভীর ও একঘেয়ে সুরে নিম্নলিখিতরূপ আদেশ প্রদান করিবে। বলিবে—“ঘুমঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; যু-উম -যুউ-ম-ঘুউ-ম-গভীর নিদ্রা,ঘু-উ-ম-ঘু-উ-ম-ঘু-উ-ম গভীর নিদ্রা; শান্তিজনক নিদ্রা-আরামদায়ক নিদ্রা-গাঢ় নিদ্রা ইত্যাদি। চার-পাঁচ মিনিট এইরূপ আদেশ দেওয়ার পর আবার বলিবে—“তোমার মাখা ক্রমে ক্রমে অত্যন্ত ভারী হইয়া পড়িতেছে,-তোমার সমস্ত শরীর অত্যন্ত অলস ও অবসন্ন হইয়া পড়িতেছে-তুমি আর নড়া-চড়া করিতে পারিতেছ না, কিছুই অনুভব করিতে পারিতেছ না—তোমার চক্ষু খুব দৃঢ়রূপে বন্ধ হইয়া গিয়াছে,-তুমি আর উহাদিগকে টানিয়া খুলিতে পারিবে না-কখনও পারিবে না;-তুমি এখন আমার কথা ছাড়া আর কিছুই শুনিতে পাইতেছ না। তোমার গভীর নিদ্রা হইয়াছে—খুব গাঢ়—সুনিদ্রা হয়েছে। এখন তোমার জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস বহিতে থাকিবে-জোরে—আরও জোরে—খুব জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস বহিবে;-এখন তুমি নাক ডাকাইয়া ঘুমাইতে থাকিবে-তোমার গভীর নিদ্রা হয়েছে।” সাধারণতঃ ১০/১৫ মিনিট কাল উক্ত আদেশের সহিত পাস দিলেই পাত্র সম্মোহন নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িবে। বলা বাহুল্য যে, পাত্র নিদ্রিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হইলে, তাহাকে কোন কাৰ্য্য করিতে আদেশ দিবার পূর্বে অষ্টাদশ পাঠের নিয়মানুসারে তাহাকে পরীক্ষা করিয়া লইবে।
তৃতীয় নিয়ম
পূৰ্ব্বকথিত নিয়মে পাত্রকে বেশ আরামের সহিত বসাইবে কি শোওয়াইবে। তৎপরে তাহাকে চক্ষু বুজিয়া পূর্বের ন্যায় ঘুমের বিষয় পাত্রকে নিদ্রিত করণ ভাবিতে বলিবে। যখন সে উক্তরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক তাহার দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলি পাত্রের কপালের উপর (কপালের মধ্য স্থলের কিঞ্চিৎ উপরে) স্থাপন করতঃ তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূৰ্ব্বক, উক্ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা আস্তে আস্তে, বরাবর নীচের দিকে, নাসিকার অগ্রভাগ পর্যন্ত পাস দিবে। একবার পাস করা হইলে, পুনৰ্ব্বার উহা করিবে এবং বার বার ঐরূপ করিতে থাকিবে। পাস করিবার সময় একাগ্রতার সহিত ধীর, গম্ভীর ও একঘেয়ে সুরে নিম্নোক্তরূপ আদেশ দিবে। বলিবে—“ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; ঘুম-ঘুমযুম—গভীর নিদ্রা; শান্তিজনক নিদ্রা; গভীর নিদ্রা-গাঢ় নিদ্রা; তোমার মাখা ভারী হইয়া গিয়াছে—শরীর অলস ও অবসন্ন হইয়া পড়িয়াছে-তুমি কিছুই অনুভব করিতে পারিতেছ না—আমার কথা ছাড়া তুমি কিছুই শুনিতে পাইতেছ না—তোমার কেবল ঘুম পাচ্ছে—গভীর নিদ্রা হচ্ছে। শান্তিজনক নিদ্রা-আরাম দায়ক নিদ্রা” ইত্যাদি। উক্ত নিয়মে পাস করিবার সঙ্গে ৫ হইতে ১৫ মিনিট ঘুমের আদেশ দিলে অনেক পাত্র নিদ্রিত হইয়া পড়িবে।
চতুর্থ নিয়ম
পূর্বোক্ত নিয়মে পাত্রকে বসাইবে অথবা শোওয়াইবে। তৎপরে তাহাকে চক্ষু বুজিয়া মনাযোগের সহিত ঘুমের বিষয় ভাবিতে বলিবে। যখন সে উক্তরূপ ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক নিজের দক্ষিণ তালুর গোড়ার অংশটি পাত্রের বাম জ্বর উপর স্থাপন করতঃ ঐ হাতের আঙ্গুলগুলি তাহার মাথার উপর রাখিবে এবং ঠিক সেইরূপে বাম তালুর গোড়ার অংশটি তাহার দক্ষিণ জ্বর উপর স্থাপন করিয়া, ঐ হাতের আঙ্গুলগুলি দক্ষিণ হাতের আঙ্গুলগুলির ন্যায় তাহার মাথার উপর রাখিবে। তৎপরে কাৰ্যকারক উভয় হাতের আঙ্গুলগুলি উহাদের নির্দিষ্ট স্থান হইতে স্থানান্তরিত না করিয়া, দক্ষিণ তালুর গোড়ার অংশটি (যাহা পাত্রের বাম জ্বর উপর স্থাপিত রহিয়াছে। তাহার বাম জ্বর উপর দিয়া, ঐ জ্বর সীমান্ত পর্যন্ত এবং তাহার বাম তালুর গোড়ার অংশটি { যাহা পাত্রের দক্ষিণ জ্বর উপর রহিয়াছে। তাহার দক্ষিণ জ্বর উপর দিয়া, ঐ জ্বর সীমান্ত পর্যন্ত আস্তে আস্তে টানিয়া আনিবে। উভয় হাতের তালুর গোড়ার অংশ দ্বারা একই সময়ে, তাহার উভয় হৃদ্বয়ের উপর উক্তরূপে পাস করিতে হইবে। একবার পাস দেওয়া হইলে, বার বার ঐরূপ করিবে এবং তৎসঙ্গে ঘুমের আদেশ দিবে। বলিবে— “ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা; —গাঢ় নিদ্রা-সুনিদ্রা—খুব শান্তিজনক নিদ্রা” ইত্যাদি। উপরোক্ত পাসের সহিত ১০/১৫ মিনিট আদেশ দিলেই পাত্র নিদ্রিত হইয়া পড়িবে।
পঞ্চম নিয়ম
পুর্বোক্ত নিয়মে পাত্রকে বসাইবে; কিন্তু তাহার মাথাটি কাভাবে রাখিয়া সোজা ভাবে বঁড় করাইয়া রাখিবে। তৎপরে তাহাকে একাগ্রতার সহিত পূর্বের ন্যায় ঘুমের বিষয় ভাবিতে বলিবে। যখন সে ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্য্যকারক তাহার ডান হাত দ্বারা পাত্রের মাথাটি দৃঢ়রূপে ধরিয়া উহাকে আস্তে আস্তে ক্রমাগত গোলাকারে ঘুরাইতে আরম্ভ করিবে। বলা বাহুল্য যে, তাহার মাথাটি এরূপ ভাবে ঘুরাইবে, যেন সে উহাতে ব্যথা না পায়। উক্তরূপে পাত্রের মাথা ঘুরাইতে ঘুরাইতে ঘুমের আদেশ প্রদান করিবে। বলিবে—“ঘুম-ঘুম-ঘুম—গভীর নিদ্রা” ইত্যাদি।
ষষ্ঠ নিয়ম
পাত্রকে পূর্বের ন্যায় বসাইবে কিম্বা শোওয়াইবে। তৎপরে তাহার কপাল হইতে প্রায় এক ফুট উন্ধে, কাৰ্যকারক নিজের দক্ষিণ তর্জনীটিকে নিম্নাভিমুখী করিয়া, শূন্যের উপর (দেড় বা দুই ফিট পরিধির মধ্যে), গোলাকারে আস্তে আস্তে ঘুরাইতে আরম্ভ করিবে। যখন সে তর্জনীটি ঘুরাইবে, তখন পাত্র ঐ তর্জনীর অগ্রভাগের প্রতি স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিয়া, তাহার চক্ষু দ্বারা উহার গতি অনুসরণ করিবে, অর্থাৎ তর্জনীটি যেমন গোলাকারে ঘুরিতে থাকিবে, পাত্রের দৃষ্টিও ঘুরিয়া ঘুরিয়া উহার গতি অনুসরণ করিবে। যে পৰ্য্যন্ত পাত্রের চক্ষু ক্লান্ত না হইবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাৰ্যকারক তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূৰ্ব্বক তর্জনীটি উক্তরূপে ঘুরাইতে থাকিবে। পরে যখন তাহার চক্ষু অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া পড়িবে, তখন সে চক্ষু বুজিয়া একাগ্ৰমনে ঘুমের বিষয় ভাবিতে আরম্ভ করিবে। সে চক্ষু বুজিবার পর, কাৰ্য্যকারক আঙ্গুল ঘুরাণ বন্ধ করিয়া গম্ভীর ও একঘেয়ে সুরে ঘুমের আদেশ দিবে এবং তৎসঙ্গে তাহার শরীরের উপর কয়েকটি স্পর্শযুক্ত নিম্নগামী পাস প্রয়োগ করিবে। বলিবে-ঘুম-ঘুম-ঘুম—গভীর নিদ্রা-গাঢ় নিদ্রা ইত্যাদি। তর্জনীটি পাত্রের কপালের উপর উক্তরূপে ঘুরাইবার উদ্দেশ্য এই যে, উহার গতি অনুসরণ করিবার নিমিত্ত পাত্রকে তাহার চক্ষু দুইটি ঐ আঙ্গুলের গতির সঙ্গে সঙ্গে ক্রমাগত ঘুরাইতে হইবে, তাহাতে তাহার চোখ দুইটি শীঘ্রই ক্লান্ত ও অবসন্ন হইয়া পড়িবে। তৎপরে ঘুমের আদেশ ও পাস দিলেই সে কয়েক মিনিটের মধ্যে নিদ্রিত হইয়া পড়িবে।
সপ্তম নিয়ম
পাত্রকে পূর্বোক্ত নিয়মে চেয়ারে বসাইয়া মনাযোগের সহিত ঘুমের বিষয় ভাবিতে বলিবে। যখন সে চক্ষু বুজিয়া তাহা ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক তাহার নাসা-মূলে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থাপন করতঃ নিজের দক্ষিণ তর্জনী ও মধ্যমার অগ্রভাগ দ্বারা তাহার মাথার মধ্যস্থলে তালে তালে আঘাত করিবে (অবশ্য সে ব্যথা না পায়, এরূপভাবে উহা করিতে হইবে) এবং ক্রমাগত ৫ হইতে ১০ মিনিট কাল ঐরূপ করার সঙ্গে ঘুমের আদেশ দিবে। বলিবে—“ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা” ইত্যাদি।
অষ্টম নিয়ম
পূর্বোক্ত নিয়মে পাত্রকে বসাইবে কিম্বা শোওয়াইবে এবং চক্ষু বুজিয়া ঘুমের বিষয় ভাবিতে বলিবে। যখন সে একাগ্রচিত্তে ঘুমের বিষয় ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্য্যকারক তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক, নিজের দক্ষিণ বৃদ্ধাঙ্গুলিটি তাহার কপালের সর্বোচ্চ সীমায় (চুলের গোড়ায়) স্থাপন করিয়া ঐ হাতের অপর অঙ্গুলিগুলি তাহার কপালের পার্শ্বে রাখিবে। তৎপরে দক্ষিণ হাতের অঙ্গুলিগুলি কপালের পার্শ্ব হইতে না সরাইয়া, বৃদ্ধাঙ্গুলিটি ঐ স্থান হইতে বরাবর নীচের দিকে নাসিকার অগ্রভাগ পর্যন্ত আস্তে আস্তে টানিয়া আনিবে এবং পুনঃ পুনঃ ঐরূপ করিতে থাকিবে ও তৎসঙ্গে ঘুমের আদেশ দিবে। বলিবে “ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা” ইত্যাদি।
নবম নিয়ম
পূর্বোক্ত নিয়মে পাত্রকে বসাইবে কিম্বা শোওয়াইবে। তৎপরে কাৰ্য্যকারক তাহার নাসা-মুলে স্থির ও তীব্র দৃষ্টি স্থাপন করতঃ ধীরে ধীরে “এক” হইতে কুড়ি পর্যন্ত সংখ্যাগুলিকে গণিবে। সে এক সেকেণ্ডে এক একটি সংখ্যা গণিবে, সুতরাং “কুড়ি’ গণিতে তাহার কুড়ি সেকেণ্ড সময় লাগবে। তাহার এক একটি সংখ্যা গনণার সঙ্গে সঙ্গে পাত্র এক একবার তাহার চক্ষু বন্ধ করিয়া আবার তৎক্ষণাৎ উহাদিগকে খুলিয়া ফেলিবে। উক্তরূপে বার বার বন্ধ করিতে ও খুলিতে যখন পাত্রের চোখ অত্যন্ত ক্লান্ত হইবে, তখন সে উহাদিগকে দৃঢ়রূপে বন্ধ করিয়া একাগ্র মনে ঘুমের বিষয় ভাবিতে আরম্ভ করিবে। শিক্ষার্থীর ‘কুড়ি’ গণার মধ্যে তাহার চক্ষু ক্লান্ত ও বন্ধ না হইলে, সে পুনরায় এক হইতে ‘কুড়ি’ পৰ্যন্ত সংখ্যা গণিবে; কিন্তু পূর্বে যেমন সে এক সেকেণ্ডে এক একটি সংখ্যা গণনা করিয়াছে, এবার সেরূপে গণনা না করিয়া, প্রত্যেক পাঁচ সেকেণ্ড অন্তর অন্তর এক একটি সংখ্যা গণিবে। যদি দ্বিতীয় বারেও তাহার চক্ষু বন্ধ না হয়, তবে পুনরায় গণনা আরম্ভ করিবে; কিন্তু এইবার দশ দশ সেকেণ্ড অন্তর এক একটি সংখ্যা গণিবে। আবশ্যক হইলে এইরূপ পাঁচ বার পর্যন্ত গণনা করা যাইতে পারে; কিন্তু প্রতি বারেই গণনার মধ্যে ৫ সেকেণ্ড সময় বাড়াইয়া দিবে। পাত্রের চক্ষু বন্ধ হওয়া মাত্রই সম্মোহনবিৎ সংখ্যা গণনা পরিত্যাগ না করিয়া উহার পরবর্তী আরও কয়েকটি সংখ্যা গণনা করিবে। তৎপরে তাহাকে ঘুমের বিষয় ভাবিতে বলিয়া, তাহার শরীরের উপর কিছুক্ষণ স্পর্শযুক্ত নিম্নগামী পাস ও তৎসঙ্গে ঘুমের আদেশ দিবে। বলিবে—“ঘুম-ঘুম-ঘুমগভীর নিদ্রা; ঘুম-ঘুম-ঘুম-গভীর নিদ্রা;-গাঢ় নিদ্রা—সুনিদ্রা খুব শান্তিজনক নিদ্রা“ ইত্যাদি। উপরোক্ত পাসের সহিত ১০/১৫ মিনিট কাল আদেশ দিলে অনেক পাত্র নিদ্রিত হইয়া পড়িবে।
যে সকল পাত্র অন্যান্য নিয়মে নিদ্রিত হয় না, তাহাদের অধিকাংশের উপর এই নিয়মটি বেশ কার্যকরী হইবে। ইহা “ডাক্তার ফ্লাওয়ারের প্রণালী” (Dr. Flower’s method) বলিয়া খ্যাত।
দশম নিয়ম
পাত্রকে পূর্বোক্ত নিয়মে চেয়ারে বসাইবে এবং তাহার হাতে খুব চকচকে একটা টাকা বা আধুলি দিয়া, স্থির দৃষ্টিতে উহার দিকে তাকা ইয়া থাকিতে বলিবে। পাত্র ঐ উজ্জ্বল পদার্থটার প্রতি যতক্ষণ স্থির পাত্রকে নিদ্রিত করণ দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিতে সমর্থ, ততক্ষণ সে উহার প্রতি তাকাইয়া থাকিবে। উক্তরূপে তাকাইয়া থাকিতে থাকিতে যখন তাহার চক্ষু ক্লান্ত হইয়া পড়িবে, তখন সে উহাদিগকে দৃঢ়রূপে বন্ধ করিয়া একাগ্ৰমনে ঘুমের বিষয় ভাবিতে আরম্ভ করিবে। টাকা বা আধুলির পরিবর্তে রূপা বা জার্মান-সিলভারের নির্মিত কোন একটা চক্চকে জিনিষ—যেমনসিগারেট কেস, পানের ডিবা, সুরতির কৌটা, ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা যাইতে পারে। যখন পাত্র উক্ত বিষয় চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন সম্মোহনবিৎ তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করতঃ গম্ভীর ও একঘেয়ে সুরে ঘুমের আদেশ ও তৎসঙ্গে কয়েকটি নিম্নগামী স্পর্শযুক্ত পাস দিবে। বলিবে—“ঘুম-ঘুম-ঘুম—গভীর নিদ্রা ইত্যাদি। পাঁচ হইতে পনর মিনিট কাল উক্তরূপে পাস ও আদেশ দিলে অনেক পাত্র নিদ্রাভিভূত হইয়া পড়িবে।
একাদশ নিয়ম
পাত্রকে পূৰ্ব্বকথিত নিয়মে বসাইবে কিম্বা শোওয়াইবে। কাৰ্যকারক তাহার সম্মুখে দাঁড়াইয়া কিম্বা বসিয়া তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন করিবে এবং পাত্র স্থির দৃষ্টিতে তাহার চোখের দিকে তাকাইয়া থাকিয়া নির্ভুল রূপে ১০০ হইতে ১ পর্যন্ত সংখ্যাগুলিকে বিপরীত ভাবে গণনা করিবে। ঐরূপ করিতে করিতে তাহার চক্ষু ক্লান্ত হইয়া পড়িলে, সে উহাদিগকে দৃঢ়রূপে বন্ধ করিয়া ঘুমের বিষয় চিন্তা করিবে। যখন সে উহা ভাবিতে আরম্ভ করিয়াছে, তখন কাৰ্যকারক তাহার মাথা হইতে আরম্ভ করিয়া পা পর্যন্ত স্পর্শযুক্ত নিম্নগামী পাস ও তৎসঙ্গে ঘুমের আদেশ দিবে। দশ হইতে পনর মিনিট কাল পাস ও আদেশ দিলেই পাত্র নিদ্রিত হইয়া পড়িবে। যাহাদের মানসিক একাগ্রতা অল্প, সম্মোহনবিৎ তাহাদের অনেককে এই নিয়মে অভিভূত করিতে পারিবে।
দ্বাদশ নিয়ম
পাত্রকে পূর্বোক্ত নিয়মে বসাইবে কিম্বা শোওয়াইবে। সম্মোহনবিৎ পাত্রের সম্মুখস্থ দেওয়ালের গায়ে (ভূমি হইতে) ৬৭ ফিট উচ্চে পেসিল দ্বারা পোয়া ইঞ্চি পরিধির একটি বৃত্ত অঙ্কিত করতঃ (বৃত্তটি সুস্পষ্ট ও কাল বর্ণের হইবে) পাত্রকে উহার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিতে বলিবে। সে যতক্ষণ ঐ বৃত্তটির প্রতি স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিতে পারিবে, ততক্ষণ উহার দিকে চাহিয়া থাকিবে; যখন তাহার চক্ষু ক্লান্ত হইবে, তখন সে উহাদিগকে দৃঢ়রূপে বন্ধ করতঃ মনাযোগের সহিত ঘুমের বিষয় ভাবিতে আরম্ভ করিবে। এইক্ষণ কার্যকারক তাহার নাসিকা-মূলে প্রখর দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক তাহার মাথা হইতে পা পর্যন্ত স্পর্শযুক্ত নিম্নগামী পাস ও তৎসঙ্গে ঘুমের আদেশ প্রদান করিবে। দশ-পনর মিনিট উক্ত পাস ও ঘুমের আদেশ দিলেই পাত্র নিদ্রিত হইয়া পড়িবে।