প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
1 of 2

১.১০ হিরণ আর সুধা

হিরণ আর সুধা সোজা পুবদুয়ারী ঘরখানায় চলে এল, তাদের পিছু পিছু বিনুও। যুগলও সঙ্গে এসেছিল। সে ভেতরে ঢুকল না। দরজার কাছে উদ্গ্রীব দাঁড়িয়ে থাকল।

অবনীমোহন কি লারমোর, সুরমা কিংবা স্নেহলতা–সবাই ঢিলেঢালাভাবে তক্তপোশে বসে ছিলেন। আর এলোমেলো গল্প করছিলেন।

হিরণকে দেখে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন লারমোর। উচ্ছ্বাসের সুরে বললেন, আরে শ্যামচন্দর যে! আয় আয়।

ঘাড় বাঁকিয়ে হাসিমুখে হিরণ বলল, আমি তো শ্যামচরকালো কুটকুটে। তুমি কী?

সুর করে এক কলি গেয়ে উঠলেন লারমোর, আমি গোরাচাঁদ হে—

তাই নাকি!

নিশ্চয়ই। বিশ্বসংসার সে কথা বলবে। নিজের একখানা হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে লারমোর বললেন, দ্যাখ কেমন ধবধবে–

ঠোঁট কুঁচকে কপট তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে লালমোরের হাতখানা ঠেলে দিল হিরণ, এ হাত বার করে আর রঙের গর্ব করতে হবে না। গোরাচাঁদ একদিন হয়তো ছিলে, এখন আর নেই। এদেশে থাকতে থাকতে–

সন্দিগ্ধ চোখে লারমোর তাকালেন, থাকতে থাকতে কী?

আমাদের মতো কষ্টিপাথর হয়ে গেছ।

বলছিস, বলছিস?

একবার কেন, হাজার বার বলছি।

একটু আগে লারমোরের চোখেমুখে কণ্ঠস্বরে লঘু কৌতুকের আভা ছিল, এবার তাতে ভিনভাবের রং লাগল। আবেগপূর্ণ সুরে তিনি বলতে লাগলেন, কষ্টিপাথরই আমি হতে চেয়েছিলাম রে। যেদিন প্রথম এদেশে আসি সেদিন থেকেই আমার সাধ বাঙালি হব। তারপর চল্লিশ বছর ধরে সেই চেষ্টাই করে আসছি। নিজের বলতে যা ছিল সব ফেলে দিয়ে, সব ভুলে গিয়ে এ দেশের অন্ন-বস্ত্র-ভাষা মাথায় তুলে নিয়েছি। প্রাণভরে সারা গায়ে এখানকার আলো-বাতাস ধুলোকাদা মেখেছি। বাকি ছিল গায়ের রংটা। তুই তো বলছিস, রঙের গর্ব আমার ঘুচেছে। এতদিনে আমি কি তবে পুরোপুরি এদেশের মানুষ হতে পারলাম?

লারমোরের আবেগ হিরণের বুকের অতলে সব চাইতে স্পর্শকাতর তারটাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল। গম্ভীর গলায় সে বলল, তুমি শুধু এদেশের মানুষ না লালমোহন দাদু, সব দেশের সব কালের মানুষ। তুমি বাঙালি হতে চেয়েছ, তার বদলে আমরা যদি তোমার মতো হতে চাইতাম, জীবন ধন্য হয়ে যেত।

খানিক আগের ঘোরটা হঠাৎ কেটে গেল। হালকা গলায় লারমোর বললেন, থাক, আমাকে আর আকাশে তুলতে হবে না। একটু থেমে আবার বললেন, যার মতো হলে সত্যি সত্যি ধন্য হতে পারতুম সে আমি না, ওই মানুষটা–

লারমোর আঙুল দিয়ে হেমনাথকে দেখিয়ে দিলেন।

বিব্রতভাবে চেঁচামেচি করে উঠলেন হেমনাথ, বেশ তো দু’জনের ভেতর হচ্ছিল। তার মধ্যে আমাকে আবার টানাটানি কেন? হিরণ তোমাকে আকাশে চড়াতে চাইছে। একলাই ওঠ না বাপু। অত উঁচুতে ওঠার লোভ আমার নেই।

আপন মনেই এবার বুঝি লারমোর বললেন, আমি যদি এ দেশের মানুষ হতে পেরে থাকি তা ওই হেমের জন্যে। আমার সব কাজ সব ভাবনার পেছনে ঈশ্বরের দূত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আছে।

হেমনাথ চোখ পাকিয়ে তেড়ে উঠলেন, আবার—

কিছুক্ষণ নীরবতা।

এর ভেতর সুধা আর বিনু তক্তপোশে উঠে সুনীতির গা ঘেঁষে বসে পড়েছে।

একসময় হিরণের চোখে চোখ রেখে হেমনাথ ডাকলেন, অ্যাই শিম্পাজি—

মাথাটা সামনের দিকে ঈষৎ ঝুঁকিয়ে হেসে হেসে হিরণ বলল, চমৎকার খেতাব। এই মাথা পেতে নিলাম।

হিরণ এমনভাবে এমন সুরে বলল যে সবাই হেসে উঠল।

হাসাহাসির ভেতর লারমোর বললেন, তুমি দেখছি হিরুটাকে মানুষের ভেতরেই রাখতে চাও, হেম। নাম কেটে একেবারে শিম্পাঞ্জির দলে নামিয়ে দিলে!

দেব না? হেমনাথ বলতে লাগলেন, কাল রাত্তিরে সেই যে গেল বাঁদরটা, তারপর আজ এই এতক্ষণে আসার সময় হল। অথচ বলে গিয়েছিল, সকালবেলা আসবে, আমাদের সঙ্গে রাজদিয়া বেড়াতে যাবে। হেন তেন কত কী। একটা কথার যদি ঠিক থাকে! বলতে বলতে হিরণের দিকে ফিরে চোখ পাকালেন, সারাদিন কোন রাজিতে থাকা হয়েছিল শুনি? মিথ্যে কথা বললে কিন্তু মাথা ভেঙে দেব।

হিরণ চোখ তুলে একবার সুধাকে দেখে নিল। সুধার টেপা ঠোঁটে এবং চোখের তারায় শব্দহীন হাসি খেলে যাচ্ছিল। তার লাঞ্ছনায় মেয়েটা বুঝিবা খুব খুশি। তাড়াতাড়ি চোখ ফিরিয়ে কপট ভয়ে হিরণ বলল, ভোর রাত্তিরে উঠে গয়নার নৌকো করে সিরাজদীঘায় আহাদ কাকার বাড়ি গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ফিরতি নৌকোয় সকাল সকাল চলে আসতে পারব। আহাদ কাকা দুপুরে না খাইয়ে ছাড়ল না। তাই তো ফিরতে দেরি হয়ে গেল।

হেমনাথ বললেন, আহাদের ওখানে কোন রাজকাৰ্যটা ছিল?

গ্রামোফোনের বাক্সটা তুলে ধরে হিরণ বলল, এইটা আনতে গিয়েছিলাম। গেল মাসে আহাদ কাকার মেয়ের বিয়ে গেছে না, তখন এটা নিয়ে গিয়েছিল।

আজই ওটার কী দরকার পড়ল?

লারমোর এই সময় বলে উঠলেন, গ্রামোফোন দিয়ে কী হয়? ছেলেটা ঘরে পা দিতে না দিতে তুমি যে মোক্তারের জেরা শুরু করে দিলে হেম। বোস রে হিরু–

হিরণ তক্তপোশের একধারে বসল।

গ্রামোফোনের নামে উৎসাহিত হয়ে উঠেছিলেন লারমোর। বললেন, আজ একটু গানবাজনা হোক তা হলে।

হিরণ বলল, সেই জন্যেই এটা নিয়ে এলাম।

লারমোর শুধোলেন, কী কী রেকর্ড আছে রে?

রবীন্দ্রসঙ্গীতই বেশি।

রবীন্দ্রসঙ্গীত! মন্ত্র জপ করার মতো লারমোর বললেন, মানুষের পৃথিবীতে নিষ্পাপ, পবিত্র জিনিস খুব বেশি নেই। অল্প যে ক’টা আছে তার ভেতর রবীন্দ্রনাথের গান একটা, না কি বল হেম? বলে হেমনাথের দিকে তাকালেন।

আস্তে মাথা নাড়লেন হেমনাথ, হ্যাঁ। ওই গানগুলো দিয়ে ঈশ্বরকে যেন ছোঁয়া যায়।

ঠিক বলেছ। লারমোর আবার হিরণের দিকে ফিরলেন, রবীন্দ্রসঙ্গীত ছাড়া আর কী আছে? কীর্তন?

হিরণ বলল, আছে দু’চারখানা।

ভাটিয়ালি?

আছে।

এ যে একেবারে মহোৎসবের ব্যাপার রে। দে, লাগিয়ে দে।

স্নেহলতা এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলেন। এবার বলে উঠলেন, উঁহু উঁহু, এখন না।

লারমোর বললেন, তবে কখন?

সন্ধের পর। ইলিশ মাছগুলো রাত্তিরে খেতে হবে তো।

নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।

কাঁচা নিশ্চয়ই খাওয়া যাবে না। যাই, কিরকম কী রান্না হবে ওদের বলে আসি। বলতে বলতে হাতের ভর দিয়ে উঠে পড়লেন স্নেহলতা।

আকুল সুরে লারমোর বললেন, ইলিশ ভাতে আর ইলিশের ডিম দিয়ে টক যেন অবশ্যই হয়।

বর দেবার ভঙ্গিতে স্নেহলতা বললেন, হবে। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

একটু পরেই সন্ধে নেমে গেল। অন্ধকারটা কোথায় যেন হাত-পা গুটিয়ে চুপটি করে বসে ছিল, লাফ দিয়ে বেরিয়ে এসে চোখের পলকে দিগদিগন্তে ছড়িয়ে পড়ল। খুব ঘন করে বোনা কালো শাড়ির মতো আশ্বিনের সন্ধে চোখের সামনের সজল শ্যামল দৃশ্যপটকে দ্রুত মুড়ে ফেলতে লাগল।

এতক্ষণ জোনাকিদের দেখা পাওয়া যায় নি। হঠাৎ তারা উঠোনে, দূর ধান বনে, বাগানের নিবিড় গাছপালার ফাঁকে নাচানাচি শুরু করে দিল।

এদিকে স্নেহলতা ইলিশ মাছের ব্যবস্থা করে ঘরে ঘরে হেরিকেন জ্বালিয়ে দিলেন। তারপর দরজায় দরজায় জলছড়া দিয়ে সন্ধেবাতি দেখিয়ে পুবদুয়ারী ঘরে চলে এলেন। তক্তপোশের একধারে বসতে বসতে হিরণকে বললেন, নে, এবার আরম্ভ কর।

গ্রামোফোনে দম দিয়ে নতুন পিন লাগিয়ে রেকর্ড বাজাতে শুরু করল হিরণ। একের পর এক গান–সাহানা দেবীর, নীহারবালার, অমলা দত্তর, কনক দাসের। সবগুলোই রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান।

প্রায় সবাই তন্ময় হয়ে শুনছিল। কিন্তু তক্তপোশের দূর প্রান্তে যেখানে সুধা সুনীতি বসে আছে সেখানকার হাওয়ায় ফিসফিসানির মতো একটা শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে।

বিনুও সুধা সুনীতির কাছেই এতক্ষণ বসে ছিল, এখন শুয়ে পড়েছে। সারাদিন ঘোরাঘুরি গেছে। আর বসে থাকতে পারছিল না সে। চোখের পাতা ধীরে ধীরে ভারী হয়ে জুড়ে আসছিল।

এই মুহূর্তে রবীন্দ্রনাথের সেই গানটা বাজছে, আমার প্রাণের মাঝে সুধা আছে—

আধো ঘুমে বিনু শুনতে পেল সুনীতি সুধাকে বলছে, অ্যাই ছুটকি সুধা বলল, কী বলছিস? বেছে বেছে কিরকম গান এনেছে দেখেছিস? কিরকম? গলা আরও নামিয়ে সুনীতি বলল, একেবারে সুধামাখানো।

আড়ে আড়ে একবার স্নেহলতা সুরমাদের দেখে নিয়ে জিভ ভেংচে দিল সুধা, ভাল হবে না বলছি দিদি-ই-হি-হি-হি–

আগের গানটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। হিরণ রেকর্ড বদলে দিল। নতুন গানটায় মৃদু নেশার মতো আলতোভাবে কী যেন জড়ানো।

ভালবাসিবে বলে ভালবাসি নে,
আমার এই রীতি, তোমা বই জানি নে।
বিধুমুখে মধুর হাসি, দেখিলে সুখেতে ভাসি।
তাই তোমারে দেখতে আসি,
দেখা দিতে আসি নে।

ছোট বোনের গালে আস্তে টোকা দিয়ে সুনীতি বলল, শুনছিস, শুনছিস–

সুনীতির দিকে মুখ না ফিরিয়ে ঈষৎ ঝাঁঝাল গলায় সুধা বলল, শুনছি। তুই আর বকবক করিস না।

সুনীতির ঠোঁটে মুখে, চোখের কালো তারায় দুষ্টুমি নাচছিল। এমনিতে সে বেশ গম্ভীর। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রগলভতা যেন তার ওপর ভর করে বসেছে। সুধার কানের কাছে মুখটা নিবিড় করে সে বলল, এই সব গান খুঁজে খুঁজে কার জন্যে এনেছে জানিস?

কার জনে?

তোর জন্যে।

চাপা গলায় সুধা ঝঙ্কার দিল, তোকে বলেছে?

সুনীতি হেসে হেসে বলল, মুখে ফুটে ঠিক বলে নি। তবে—

কী?

তোকে ছাড়া আর কাকেই বা এসব গান শোনাতে পারে বল?

সুধার মাথায় এবার দুষ্টুমি ভর করল, কেন, তোকেও তো পারে।

মাথাটা ধীরে ধীরে দুলিয়ে সুনীতি বলল, উঁহু–

সুধা এবার আর কিছু বলল না, স্থির দৃষ্টিতে বড় বোনের দিকে তাকাল।

সুনীতি বলল, কাল থেকে তোর আর হিরণকুমারের ভেতর যা চলছে তাতে এই গানগুলো না শোনালে আমি ওর প্রাণদন্ড দিতাম।

সুধা চকিত হল। তার বিব্রত মুখে, চোখের তারায় ভয়ের মতো কিছু যেন ফুটল। কাঁপা গলায় সুধা শুধলো, কী চলছে আমাদের ভেতর?

কাল ফিটনে করে আসবার সময় দু’জনে মুখোমুখি বসে শুধু গল্প আর গল্প। বাড়ি ফিরেও সে গল্প থামে না। আজও বাগানের ভেতর দিয়ে আসতে আসতে দু’জনে কথার ফোয়ারা ছোটাচ্ছিলি। আর–

আর কী!

একজন আরেক জনের দিকে কেমন করে তাকিয়েছিলি জানিস?

কেমন করে?

একেবারে মুগ্ধ, মুগ্ধ, মুগ্ধ হয়ে—

সুধা ঠোঁট টিপল। চোখের তারা নাচিয়ে বলল, যেমন তুই আনন্দবাবুর দিকে তাকিয়েছিলি, না?

চোখ পাকিয়ে সুনীতি কী বলতে যাচ্ছিল, সেই সময় গ্রামোফোনে কড় কড় করে খানিক কর্কশ আওয়াজ তুলে গান বন্ধ হয়ে গেল। সুধা সুনীতি চমকে সেদিকে তাকাল। বিনুও মাথা তুলতে চেষ্টা করল, পারল না। চোখ দুটোয় ঘন আঠা লাগিয়ে কেউ যেন আরও বেশি করে জুড়ে দিচ্ছে।

উদ্বেগের সুরে স্নেহলতা বললেন, কী হল রে হিরু?

খানিকক্ষণ গ্রামোফোনটা নাড়াচাড়া করে হিরণ বলল, স্প্রিং আর একটা ছোট কল কেটে গেছে।

তা হলে?

না সারালে রেকর্ড বাজবে না। কালই নারাণগঞ্জ থেকে এটা সারিয়ে আনব।

লারমোর ওধার থেকে আক্ষেপের সুরে বললেন, জমজমাট আসরটা একেবারে মাটি হয়ে গেল।

হেমনাথ বললেন, মাটি বলে মাটি–

স্নেহলতা সুরমা শিবানী–সবাই মগ্ন হয়ে শুনছিলেন। এমন চমৎকার গানের আসর মাঝপথে ভেঙে যাওয়াতে তাঁরাও দুঃখিত হলেন।

হঠাৎ সুধা বলে উঠল, গান কিন্তু এখনও চলতে পারে।

হিরণ উৎসুক হল, কিভাবে?

সুধা বলল, দিদি খুব ভাল গাইতে পারে। যদি একটা হারমোনিয়াম—

তার কথা শেষ হবার আগেই চাপা গলায় সুনীতি বলতে লাগল, এই সুধা, এই–

হিরণ হাসিমুখে বলল, ওঁকে এই এই করছেন কেন? আমাদের বাড়ি হারমোনিয়াম আছে। এক্ষুণি নিয়ে আসছি।

না–না, কিছুতেই না– সুনীতি দু’হাত সমানে নাড়তে লাগল।

না কি হ্যাঁ, পরে বোঝা যাবে’খন। আগে তো হারমোনিয়ামটা নিয়ে আসি। হিরণ উঠে দাঁড়াল। আমি গাইব না, কিছুতেই না। সুনীতি প্রায় চেঁচাতেই লাগল, শুনুন, আমার চাইতে সুধা ঢের, ঢের ভাল গাইতে পারে, অভিনয়ও করতে পারে। কলেজের ফাংশনে গান গেয়ে অভিনয় করে কত কাপ মেডেল পেয়েছে।

হিরণের চোখের তারা এবার সুধার দিকে ঘুরল। মুখ দেখে মনে হল, এতখানি বিস্মিত আগে আর কখনও হয় নি সে। আস্তে করে বলল, অভিনয় করতে পারেন? তাহলে পুজোয় একটা ভাল নাটক করতেই হয়।

হঠাৎ এই সময় হেমনাথ বললেন, আমাদের সুধাদিদি আর হিরণের মধ্যে দেখছি অনেক মিল। দু’জনেই কথাসরিৎসাগর, আবার দুজনেই অভিনয় করতে পারে।

সুরমা অবাক হয়ে বললেন, হিরণ অভিনয় করতে পারে!

পারে আবার না! হেমনাথ বলতে লাগলেন, প্লে বলতে তো ও একেবারে অজ্ঞান, নাওয়া খাওয়ার কথা পর্যন্ত ভুলে যায়। পুজোর ছুটিতে রাজদিয়ার সবাই ফিরে আসুক, তখন দেখবে হিরণচন্দর নাটক বগলে করে এ বাড়ি ও বাড়ি কেমন ছোটাছুটি করছে। তখন চলা-ফেরা-চাউনি দেখলে মনে হবে স্বয়ং শিশির ভাদুড়ি।

ঈষৎ অসহিষ্ণু সুরে হিরণ বলল, নাটক এখন থাক। আমি ছুটে গিয়ে হারমোনিয়ামটা নিয়ে আসছি।

সুধা হাসল, নীহারবালা, কনক দাসের রেকর্ড শোনার পর আমার গান কারও ভাল লাগবে না। না না, হারমোনিয়াম আনবেন না। কিছুতেই না।

এরপর হিরণ কী বলল, বিনু শুনতে পেল না। গাঢ় ঘুম চারদিক থেকে তখন তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *