1 of 2

১.০৬ চক্ষুর মোহিনী শক্তি

ষষ্ঠ পাঠ
চক্ষুর মোহিনী শক্তি

উপযুক্তরূপে সম্মোহন আদেশ প্রদানের ক্ষমতা লাভের সঙ্গে, শিক্ষার্থী তাহার দৃষ্টি বা চাহনিকে স্থির ও প্রখর করিবে। যদিও মানুষকে কেবল আদেশ দ্বারাও সম্মোহিত করা যায়, তথাপি তাহার সম্মুখীন হইয়া তাহাকে বশীভূত করিতে, প্রথম সম্মোহন আদেশ শক্তির এবং তৎপরেই চক্ষুর মোহিনী শক্তির সাহায্য গ্রহণ করিতে হয়। ফলতঃ চক্ষুর যে মোহিনী শক্তি আছে, তাহা সর্বত্র সুবিদিত। কৰ্ম্মানুরোধে শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত যে সকল লোকের সংস্রবে আসিতে হয়, তাহাদের মধ্যে স্বভাবতঃ যাহাদের দৃষ্টির এই মোহিনী শক্তি আছে, অর্থাৎ যাহারা স্থির ও প্রখর দৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়া আপনাপন বক্তব্য বিষয় ব্যক্ত করিতে পারে, তাহাদের নিকট সে সহজেই বশীভূত হইয়া পড়ে। এরূপ ঘটনা সে কখনও লক্ষ্য না করিতে পারে, কিন্তু ইহা সত্য কথা। আর যদি লক্ষ্য করিয়া থাকে, তাহা হইলে হয়ত মনে করিবে যে, তাহার ‘চক্ষুলজ্জা’ বশতঃই সে তাহাদের অনুরোধ রক্ষা করিতে বাধ্য হইয়াছে। কিন্তু উহা কি বাস্তবিক চক্ষুলজ্জা’?—না মনের দুর্বলতা? যে মানসিক দুর্বলতা বশতঃ সে নির্বোধের মত, তাহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন কি, অনেক স্থলে বিবেকের বিরুদ্ধেও তাহাদের আদিষ্ট কার্য সম্পাদন করিতে বাধ্য হইয়াছে? অনভিজ্ঞ লোকেরা যাহা চক্ষুলজ্জা” বলিয়া মনে করে, অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানবিদগণ তাহা মনের দুর্বলতা বলিয়া নির্দেশ করেন। আর যাহা সে অনুরোধ বলিতে চায়, তাহাও বাস্তবিক অনুরোধ নহে,-তাহাদের প্রবল আদেশ;-যাহার অন্তর্নিহিত গুপ্তশক্তি তাহাকে বশীভূত করিয়া, তাহাদের অভীতি কার্য সম্পাদনে বাধ্য করিয়াছে। যে সকল ব্যক্তি কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিতে পারে না এবং ঘন ঘন চক্ষু বুজে কিম্বা চক্ষুর পাতা উঠা-নামা করে, তাহাদের দৃষ্টির কোন বিশেষত্ব নাই। এরূপ দৃষ্টি কথনও কাহাকে বশীভূত করিতে পারে না। সুতরাং যযোপযুক্ত অভ্যাস দ্বারা শিক্ষার্থীর দৃষ্টি স্থির ও প্রখর করিতে হইবে।

চক্ষুর মোহিনী দৃষ্টি অনেক প্রকারে বর্ধিত করা যায়। কেহ কেহ পকেট বা হাত ঘড়ির চলন্ত কাটার উপর, কেহ বা সাদা দেওয়ালে রূপার দোয়ানীর আকারে একটি কাল বৃত্ত চিত্রিত করিয়া তাহার উপর, আবার কেহ বা হাতের তালুতে খুব চকচকে একটি সিকি বা আধুলি রাখিয়া উহার উপর দৃষ্টি স্থির করণ’ অভ্যাস করিয়া থাকে। কিন্তু ইহাদের মধ্যে নিয়োক্ত প্রণালীটিই আমার সর্বাপেক্ষা ভাল বলিয়া বোধ হয়। যেহেতু, উহা দ্বারা দৃষ্টি স্থির করণ’ এবং ‘অপরের মোহিনী দৃষ্টির কাৰ্য প্রতিরোধ বা বিফল করিবার’ শক্তি লাভ হইয়া থাকে। এজন্য আমি শিক্ষার্থীকে উহা অভ্যাস করিতেই পরামর্শ দিতেছি। অবশ্য, উহা অভ্যাস করিতে যদি কাহারও কোন অসুবিধা হয়, তবে সে, তাহার ইচ্ছামত পূৰ্ব্ব কথিত প্রণালী সমূহের যে কোন একটি অবলম্বন করিতে পারে।

 

অনুশীলন

একটি নিভৃত ও নির্জন গৃহে একখানা পুরু আয়না লইয়া, উহা দেওয়ালের গায়ে, শিক্ষার্থীর মুখের সমান উচুতে, এমন ভাবে ঝুলাইবে, যেন উহার সম্মুখে সরল ভাবে দাঁড়াইয়া দৃষ্টিপাত করিলে সম্পূর্ণ মুখের ছবি উহাতে প্রতিফলিত হয়। তৎপরে শিক্ষার্থী ঐ অয়নার ২৩ ফুট দূরত্বের মধ্যে হাত দুই খানি দুই পাশে ঝুলাইয়া দিয়া সরলভাবে দাঁড়াইবে এবং চক্ষু দুইটি সম্পূর্ণরূপে মেলিয়া ঐ আয়নার প্রতি তাকাইলে যে উহাতে তাহার মুখের প্রতিকৃতি প্রতিফলিত হইবে, সেই প্রতিকৃতির নাকের গোড়ায় (হৃদয়ের মধ্যস্থলের কিঞ্চিৎ নিম্নে) আধ মিনিট বা এক মিনিট সময় দৃষ্টি স্থির রাখিবে এবং ঐ সময়ের মধ্যে চক্ষু দুইটিকে কখনও নাড়া চাড়া করিবে না। একবার ঐরূপ করা হইলে, আধ মিনিটের জন্য চক্ষু দুইটিকে একটু বিশ্রাম দিয়া, (আধ মিনিটের স্থলে ১০ বার এবং এক মিনিটের স্থলে ৭ বার) উহার পুনরাবৃত্তি করিবে ও প্রতিবার আধ মিনিট সময় উহাদিগকে বিরাম দিবে। সে ১০ মিনিট কাল প্রতি দিন নিয়মিতরূপে এই অনুশীলনটি অভ্যাস করিবে এবং বিশেষ কোন অন্তরায় উপস্থিত না হইলে কোন দিন অনুশীলন বন্ধ রাখিবে না।

শিক্ষার্থী এই অনুশীলনটি একটি নীরব ও নির্জন গৃহে দিনের বেলা অভ্যাস করিবে। সকাল, মধ্যাহ্ন বা অপরাহ্নে যখন তাহার অবসর বা সুবিধা হইবে, তখনই সে উহা করিতে পারে; কিন্তু উহা রাত্রিতে অভ্যাস করিবে না। কারণ তাহাতে অপটিক নার্‌ভ, (optic nerve) নামক স্নায়ুর উপর বেশী চাপ লাগিয়া চক্ষের অনিষ্ট করিতে পারে। অভ্যাস করিবার সময় বাহিরের বাতাস তাহার চক্ষে না লাগে, অথচ ঘর ও অন্ধকার না হয়, এরূপ ভাবে সে ঐ ঘরের দরজা-জানালাগুলি পূৰ্বে বন্ধ করিয়া দিবে। ইহা অভ্যাস করিবার সময় চক্ষু হইতে জল পড়িলে কিম্বা চক্ষু জ্বালা করিলেও উহাদিগকে রগড়াইবে না; অনুশীলনটি শেষ হওয়া মাত্র উহাদিগকে শীতল জলে উত্তমরূপে ধুইয়া ফেলিলেই আর কোন আলা-যন্ত্রণা থাকিবে না।

শিক্ষার্থী তাহার সামর্থ্যানুসারে আধ মিনিট বা এক মিনিট সময় লইয়া অভ্যাস আরম্ভ করিবে। যাহার চোখ স্বভাবতঃ দুৰ্বল, সে আধ মিনিটেরও কম সময় (১৫ বা ২০ সেকেণ্ড), আর যাহার দৃষ্টি সবল সে এক মিনিটেরও অধিক সময় লইয়া প্রথম অভ্যাস আরম্ভ করিতে পারে। দৃষ্টির স্থিরতা সম্বন্ধে উন্নতি বুঝিলে (অর্থাৎ কিছুদিন অভ্যাস করার পর তাহার দৃষ্টি পূর্বাপেক্ষা বেশীক্ষণ স্থায়ী ও প্রখর হইয়াছে এরূপ বোধ কৰিলে। সে প্রতি ৩৪ দিন অন্তর আধ মিনিট বা এক মিনিট হিসাবে অভ্যাসের সময় বাড়াইতে পারে। যতদিন সে বিনাক্লেশে স্থির ও সতেজ দৃষ্টিতে ১৫/২০ মিনিট কাল তাকাইয়া থাকিতে সমর্থ না হইবে, ততদিন উক্ত নিয়মে অভ্যাসের সময় বাড়াইতে থাকিবে। এই অনুশীলনটি সে কেবল দশ মিনিট অভ্যাস করিবে; সুতরাং যেমন সে ৩৪ দিন পর পর অভ্যাসের সময় বাড়াইবে, সেই পরিমাণে তাহাকে অভ্যাসের পুনরাবৃত্তির সংখ্যাও কমাইতে হইবে। যে আধ মিনিট লইয়া অভ্যাস করিবে সে ১০ বার, আর যে এক মিনিট লইয়া করিবে, সে ৭ বার উহার পুনরাবৃত্তি করিবে; কিন্তু যখন সে ২ মিনিট সময় লইয়া অভ্যাস করিতে সমর্থ হইয়াছে, তখন কেবল ৪ বার উহার পুনরাবৃত্তি করিবে। বলা বাহুল্য যে, অভ্যাসের সময় বাড়াইবার সঙ্গে তাহাকে উক্ত নিয়মে পুনরাবৃত্তির সংখ্যাও কমাইতে হইবে। সে প্রথম প্রথম ১০ মিনিটের বেশী সময় লইয়া উহা অভ্যাস করিবে না। কিন্তু কিছুদিন অভ্যাসের পর তাহার চাহনি পূৰ্ব্বাপেক্ষা স্থির ও সতেজ হইলে তখন সে ১৫ বা ২০ মিনিট কাল উহা অভ্যাস করিতে পারে।

এই অনুশীলনটি অভ্যাস করিবার সময়, চক্ষের মোহিনী শক্তি লাভ সম্বন্ধে, শিক্ষার্থী একটি গভীর আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে পোষণ করিবে এবং প্রত্যেক দিনের অভ্যাসেই তাহার উক্ত শক্তি বর্ধিত হইতেছে এরূপ ধারণা করিবে। উক্ত অনুশীলনের সাহায্যে এই শক্তি বর্ধিত করিয়া যখন সে কাহারও নাসিকা-মূলে স্থির ও সতেজ দৃষ্টি স্থাপন পূর্বক আদেশ দিবে, তখন সেই শক্তি প্রায় অনিবাৰ্য্যরূপে কাৰ্যকরী হইবে সে গভীর আকাঙ্ক্ষা এবং দৃঢ় বিশ্বাসের সহিত নিয়মিতরূপে অভ্যাস করিলে, নিশ্চয় এই মোহিনী শক্তি লাভ করিতে সমর্থ হইবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *