যখনকার কথা বলিতেছি, তখন সম্পাদক এবং সংবাদপত্রের এত ছড়াছড়ি ছিল না| দুই-একখানির সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বাহির হইত| তাহারই একখানিতে এই হত্যাকাহিনী ছাপার অক্ষরে গ্রথিত হইয়া বাহির হইল, –
“অত্যাশ্চর্য নারীহ্ত্যা!”
“মেহেদী-বাগানের হত্যাকাণ্ডের ন্যায় অদ্ভুত হ্ত্যাকাণ্ড আর কখনও ঘটে নাই| রাত তিনটার সময়ে মোবারক-উদ্দীন, বিখ্যাত ধনী রাজাব-আলির বাটী হইতে মেহেদী-বাগানের ভিতর দিয়া নিজের বাসায় ফিরিতেছিলেন| তিনি সেইখানকার একটা নির্জ্জন গলিপথে একটি স্ত্রীলোকের মৃতদেহ দেখিতে পান| এবং তখনই তিনি নিকটবর্ত্তী ঘাটির পাহারাওয়ালাদিগকে ডাকিয়া সেই মৃতদেহ হাসপাতালে পাঠাইবার বন্দোবস্ত করেন| হাঁসপাতালে সেই লাস্ পরীক্ষা করা হইয়াছে| রমণীর প্রতি যে কোনরূপ বলপ্রয়োগ করা হইয়াছে, এরূপ কোন চিহ্ণ দেখিতে পাওয়া যায় নাই| গলদেশের একপার্শ্বে সামান্য একটু ক্ষত্চিহ্ণ, তাহাতে মৃত্যু ঘটিতে পারে না| দেখিয়া বোধ হয়, হত্যাকারী রমণীর কণ্ঠভূষা জোর করিয়া ছিনাইয়া লইয়াছে ! তাহা ছাড়া কোনপ্রকার সাঙ্ঘাতিক আঘাতের চিহ্ণ নাই|
“কিন্তু ডাক্তারী পরীক্ষায় স্থির হইয়াছে, রক্ত বিষাক্ত হওয়ায় রমণীর মৃত্যু হইয়াছে| রমণীর দেহ বিবর্ণ, স্থানে স্থানে ফুলিয়া উঠিয়াছে, জিহ্বাও বক্রভাবে মুখের বাহিরে আসিয়া পড়িয়াছে – মুখমণ্ডল কালিমাঙ্কিত – এ সকলে বিষ প্রয়োগেরই লক্ষণ| রমণীর গলদেশে যে সামান্য একটু ক্ষতচিহ্ণ দেখিতে পাওয়া গিয়াছে, তাহা বিষাক্ত ছুরি বা অন্য কোন অস্ত্র-প্রয়োগেরই চিহ্ণ|
“স্থানীয় থানার ইন্স্পেক্টর রমণীর আকৃতি ও বেশভূষা বর্ণনা করিয়া এই হত্যাকাহিনীর একখানি বিজ্ঞাপন শহরের সর্ব্ব্ত্র প্রচার করিয়া দিয়াছেন| সকল রাজপথের গৃহ-প্রাচীরে সেই বিজ্ঞাপন সংলগ্ন করিয়া দেওয়া হইয়াছে; তথাপি এখনও মৃতার কোন পরিচয় পাওয়া যায় নাই|
“সুযোগ্য ডিটেক্টিভ দেবেন্দ্রবিজয়ের উপরে এই মোকদ্দমার তদন্তের ভার পড়িয়াছে; সুতরাং আশা করা যায়, প্রকৃত হত্যাকারী শীঘ্র ধরা পড়িবে; এবং সেই মৃতা স্ত্রীলোকটি যে কে, তাহাও জানিতে পারা যাইবে| দুর্ভেদ্য রহস্যের ভিতর হইতে হত্যাকারীকে চিনিয়া বাহির করিবার তাঁহার কত বড় ক্ষমতা, তাহা আমরা সবিশেষে অবগত আছি| তাঁহার তীক্ষ্ণদৃষ্টি হইতে এ পর্য্যন্ত আমরা কখনও কোন অপরাধীকে নিষ্কৃতিলাভ করিতে দেখি নাই|”