গণযুগ ও গণতন্ত্র
স্বাধীনতা লাভের বিশ বৎসর পরে আমাদের রাজনীতিক ইতিহাসে যে নতুন যুগ শুরু হল তার নাম দেওয়া যেতে পারে গণযুগ।
চতুর্থ সাধারণ নির্বাচনের পর কংগ্রেসবিরোধী নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, এই আমাদের দেশে প্রথম সৎ ও স্বাধীন নির্বাচন। কথাটা সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য নয়। ১৯৬৭ সালে হঠাৎ নির্বাচন পরিচালনায় আমাদের সততার মান উন্নীত হয়েছে এমন নয়। অতীতের সঙ্গে এবারকার অভিজ্ঞতার মূল পার্থক্যটা নিবার্চন পরিচালনার বহিরঙ্গে নয়, বরং গণমনের অন্তরঙ্গে। শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটা ধূমায়িত অসন্তোষ ভোটদাতাদের। মনে অনেক দিন ধরেই প্রচ্ছন্ন ছিল। কিন্তু পুরনো নেতাদের বিদায় দিতে একটা দ্বিধাও। এতদিন এই অসন্তোষের সঙ্গে মিশে ছিল। ১৯৬৭ সালের নির্বাচনে যে জিনিসটা নতুন, তা হল গণমনে একটা অভূতপূর্ব আত্মপ্রত্যয়, স্বাধীন ইচ্ছায় নতুন নেতাকে ডেকে আনবার সাহস। জনগণের মনে এই সাহস ও আত্মবিশ্বাস গণতন্ত্রের পক্ষে একটা বড় সম্পদ।
কিন্তু গণতন্ত্রের জয়যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হলে ভবিষ্যতের কয়েকটি সমস্যা সম্বন্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
জনগণ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। এর কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রথমেই বলা হয় যে শাসনব্যবস্থার নানা ত্রুটি ও দুর্নীতি ভোটদাতাদের কংগ্রেসের প্রতি বিরূপ করে তুলেছে। কথাটা সত্য বটে; কিন্তু এই অনুমানটুকু আশ্রয় করে ভারতময় ভোটের ফলাফলের কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা সম্ভব কি? মাদ্রাজে কংগ্রেস সম্পূর্ণ পরাজিত; মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস জয়ী। শাসনব্যবস্থায় ত্রুটি ও দুর্নীতি কি মাদ্রাজেই বেশি ছিল মধ্যপ্রদেশের তুলনায়? এর বিপরীতই যে সত্য এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে ভোট কিসের বিপক্ষে?
সাধারণ নির্বাচনে কেরলে কম্যুনিস্টদের জয় হয়েছে, উড়িষ্যায় স্বতন্ত্র দলের। কংগ্রেসের ভিতর একদিকে সাম্যবাদী নামে খ্যাত সুভদ্রা যোশী ও মালব্যের পরাজয় ঘটেছে, আবার অন্যদিকে দক্ষিণপন্থী দুর্ধর্ষ নেতা পাতিলও জিততে পারেননি। ভোট তবে কিসের পক্ষে?
অতঃপর রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনেকেই এই এসেছেন যে, এবারকার ভোটাভুটিতে গণমনের কোনো সদর্থক ইচ্ছাই প্রকাশিত হয়নি। শিশুর মত আক্রোশে গণমন নিতান্ত বেহিসাবীভাবে পুতুল আছড়ে ভেঙেছে মাত্র। কিন্তু এ-সিদ্ধান্তটা টেকসই নয়। আসলে দেশের মানুষের অভিপ্রায় নির্ধারণের জন্য আমরা যে প্রশ্নগুলি তুলি অথবা। যে-মানদণ্ডের আশ্রয় নিই (দক্ষিণপন্থী? বামপন্থী?) ওগুলোই আমাদের বিভ্রান্ত করে এবং নির্বাচনের ফলাফলের প্রকৃত অর্থ আমাদের দৃষ্টি থেকে আচ্ছন্ন করে রাখে।
ভোট পড়েছে একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতির বিপক্ষে, অন্যদিকে প্রাদেশিকতার সপক্ষে।
প্রাদেশিকতার সপক্ষে–এ কথাটার সামান্য বিশ্লেষণ প্রয়োজন। স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিতর দিয়ে এদেশে উপরের দিকে এমন একটা মত ও নেতৃত্ব গড়ে উঠেছিল যেটা বহু পরিমাণে সর্বভারতীয়। কিন্তু গ্রামে গ্রামে যে অসংখ্য মানুষ বাস করেন তারা অঞ্চল ও ভাষার গণ্ডির বাইরে তাঁদের ধারণাকে বড় বিস্তৃত করতে পারেননি। প্রশ্নোত্তরে কিছুদিন আগে এই আশ্চর্য তথ্যটি প্রকাশ পেয়েছে যে, “ভারত” নামক দেশটি কোথায়, গ্রামের বহুলোক এখনও সেটা জানেন না। গণমনের জাগরণ তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রাদেশিকতারও জাগরণ।
মাদ্রাজে নিবাচনের ফলাফল ভাষা-ভিত্তিক আঞ্চলিকতারই জয়। এমনকি কেরলেও কংগ্রেসের পরাজয়ের মূলে আছে কম্যুনিস্ট মতবাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ ততটা নয়, যতটা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল ও বহুবিস্তৃত বিক্ষোভ। কেন্দ্রীয়। মন্ত্রিসভায় কোনো কেরলপুত্র তেমন পদমর্যাদা অর্জন করতে পারেননি, শিল্পপ্রসারে কেরলকে অবহেলা করা হয়েছে, খাদ্যের ব্যাপারে ওঁদের দাবি উপেক্ষিত হয়েছে, এই সব নানা অভিযোগ ওখানে বারবারই শোনা গিয়েছে। উত্তর ভারতে হিন্দীপ্রধান অঞ্চলে জনসঙ্ঘের শক্তি বৃদ্ধিতেও প্রাদেশিকতার প্রকাশ। জাতীয়তাবোধ সম্ভবত আজ মহারাষ্ট্রেই বলিষ্ঠতম, কারণ মারাঠা নিজেকে ভারতের আগামী দিনের নেতা হিসাবে চিন্তা করতে অভ্যস্ত। সেখানে কংগ্রেসের জয় আশ্চর্য নয়।
গণশক্তির অভ্যুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে প্রাদেশিকতার শক্তি বৃদ্ধির উদাহরণ ইতিহাসে এই নতুন নয়। আকারে ও বৈচিত্র্যে পশ্চিম ইয়োরোপের সঙ্গে ভারতের তুলনা করা চলে। ইয়োরোপের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক জাগরণের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্বাধীনতার ভিত্তিতে বহু ছোট বড় রাষ্ট্রের অভ্যুত্থান আধুনিক যুগের একটি বড় ঘটনা। এদেশের অভিজ্ঞতার সঙ্গে আর এক দিক থেকে বিশেষভাবে তুলনীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উনিশ শতকের প্রথমার্ধের ইতিহাস। স্বাধীনতা লাভের পর যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম যাঁরা রাষ্ট্রপতির পদ লাভ করেন, তাঁরা আমাদের প্রথমপর্বের নেতাদের মতই ছিলেন খ্যাতি ও শিক্ষা সংস্কৃতিতে সাধারণের বহু উর্ধ্বে। ১৮২৮ সালে জ্যাকসনের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে এক নতুন গণযুগের সূচনা। হল। এরপর তিরিশ বছর ধরে ঝোঁকটা স্পষ্টত প্রাদেশিকতার পক্ষে। কেন্দ্রীয় শক্তি খর্ব করবার দিকে মার্কিন দেশ তখন যতটা এগিয়েছে, এ-দেশে সেটা প্রায় অকল্পনীয়। একটি উদাহরণই যথেষ্ট। রাষ্ট্রপতি হবার পর জ্যাকসন দেশ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তুলে দিলেন, কেন্দ্রগত নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করবার জন্য! বহুদিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ছিল না।
এদেশে আমাদের এই নতুন যুগে বিভিন্ন রাজ্য নানা ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি করে স্বাতন্ত্র্য চাইবে। এই স্বাতন্ত্র্যের দাবি অনেক ক্ষেত্রে মেনে নেওয়া উচিত হবে। মার্কিন দেশে বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিবাহ সংক্রান্ত আইন ভিন্ন; আমাদের দেশে তা নয়। কিন্তু বিবাহ। সংক্রান্ত আইন বাংলা ও রাজস্থানে এক না-হলেও মহাভারত অশুদ্ধ হত না, যদিও আইনের জটিলতা তাতে খানিকটা বাড়ত। তেমনি কৃষি ও ভূমিস্বত্বব্যবস্থা কেরলে ও মধ্যপ্রদেশে এক বার প্রয়োজন নেই। বিভিন্ন রাজ্যে আর্থিক ও সামাজিক অবস্থার বৈচিত্র্য স্বীকার করে নেওয়া ভাল।
কিন্তু সেই সঙ্গে ঐক্যের দাবিটাও উপেক্ষণীয় নয়। বহুত্বের মাঝে দেশের একত্বের প্রতিষ্ঠা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সেটা দেখা দরকার। ইয়োরোপ একদিন বহু খণ্ডে খণ্ডিত হয়েছে, কিন্তু আজ সে ধীরে ধীরে ঐক্য সংগঠনে সচেষ্ট। আমাদের দেশকে আবারও আমরা খণ্ড খণ্ড হতে দিলে তাতে দেশের বিষম ক্ষতি। আর্থিক পরিকল্পনার প্রয়োজনটাও একেবারে ভুললে চলবে না; উনিশ শতকের প্রথম ভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক যখন তুলে দেওয়া হয় দেশময় তখন আর্থিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়; তবে সেদিনের অবস্থায় সেটাও সহনীয় ছিল। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তুলে দেবার কথা এদেশে কেউ বলছেন না। তবে বিভিন্ন রাজ্য আর্থিক ব্যাপারে আরও বেশি স্বাধীনতা চাইছেন। এ-দাবি সর্বতোভাবে অযৌক্তিক নয়। কিন্তু কোথাও সীমা টানা প্রয়োজন। বিভিন্ন রাজ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে যাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ডিঙিয়ে, এটা হতে দেওয়া যায় না; কারণ এতে মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থের অপব্যবহারের সমূহ সম্ভাবনা।
জাতীয় ঐক্য ও ভাষাসমস্যা নিয়েও আজ নতুন করে আলোচনা আবশ্যক। বিভিন্ন রাজ্যে সেই সেই রাজ্যের ভাষার ব্যবহার প্রয়োজন। রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় প্রাদেশিক ভাষার ব্যবহার বাড়বে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে শাসনযন্ত্রের যোগ সহজ হবে, এটাই বাঞ্ছনীয়। শিক্ষার ক্ষেত্রেও মাতৃভাষার ব্যবহার চাই। সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রের এই দাবি অমান্য করা চলবে না; শিক্ষানীতির দিক থেকেও এটা শ্রদ্ধেয়।
কিন্তু উচ্চশিক্ষায় মাতৃভাষার পাশে সযত্নে স্থান দেওয়া প্রয়োজন আরও একটি ভাষাকে, সারা ভারতের বিদ্বৎসমাজে অবাধ ভাব বিনিময়ের যেটি বাহন হবে। ভারতের সঙ্গে বহির্বিশ্বের চিন্তার যোগের কথা এখানে বলছি না। সেটা তো প্রয়োজন বটেই। কিন্তু আপাতত দেশের আভ্যন্তরীন ভাব বিনিময়ের কথাটাই বলছি। ওই ভাব বিনিময় চলে দুটো ভিন্ন স্তরে, ভিন্ন প্রয়োজনে। এক আছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ব্যবসা ও হৃদ্যতার বিনিময়। এজন্য কোনো আইন প্রয়োজন হয় না, প্রকৃতির গোপন অথচ অমোঘ। নিয়মেই বিবর্তিত হয় প্রাকৃত ভাষা। কিন্তু বহুভাষী দেশে উচ্চচিন্তার সাধারণ বাহন হিসাবে একটি বিশেষ ভাষারও আবশ্যক আছে। এজন্য চুচা প্রয়োজন। এই অর্থে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐক্যের বাহন একদিন ছিল সংস্কৃত। আজও আমাদের সমাজ সংগঠনের নতুন যুগে দেশব্যাপী বিজ্ঞান দর্শন ও সমাজনীতির আলোচনার মাধ্যম হিসাবে এমন একটি ভাষা চাই যেটি প্রাদেশিকতার ঊর্ধ্বে। হিন্দী সে ভাষা হতে পারে না। দক্ষিণের দ্রাবিড় আন্দোলন আমাদের দ্ব্যর্থহীন ভঙ্গীতে জানিয়ে দিয়েছে যে, হিন্দীও কার্যত ভারতের একটি প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক ভাষা মাত্র। সাধারণ নির্বাচনে জনসঙ্ঘের শুদ্ধ আঞ্চলিক সাফল্যে এই সিদ্ধান্তটাই পুনরায় প্রতিপন্ন হয়েছে। ভারতময় বিদ্বজ্জন সমাজের চিন্তা বিনিময়ের সাধারণ ভাষা হিসাবে মাতৃভাষার পাশে আমাদের সযত্নে রক্ষা করতে হবে ইংরেজীকে।
কথাটা আবারও বলি। মার্কিন দেশে প্রাদেশিকতার অভ্যুত্থানের ভিতরও জাতীয় সংহতি অটুট থেকেছে অদ্বিতীয় একটি ভাষার সহজ ঐক্যবন্ধনে। সোভিয়েত রাষ্ট্রে প্রতিদ্বন্দ্বিবিহীন একটি দল সারা দেশের ঐক্য বিনষ্ট হতে দেয়নি। আমরা বহু ভাষা ও বহু দল নিয়ে দেশকে যদি এক সূত্রে আবদ্ধ রাখতে চাই তো সেজন্য ঐক্যের সূত্রটি বিশেষ চেষ্টায় রক্ষা করতে হবে। অবহেলায় ঐক্য রক্ষা পাবে না। মাতৃভাষার সঙ্গে একটি সর্বভারতীয় ভাষাকে উচ্চশিক্ষার জন্য আবশ্যিক করা না হলে প্রথমে দেশের মন ও বুদ্ধি। এবং পরে দেশের দেহ খণ্ড খণ্ড হবে।
জাতীয় ঐক্যের জন্য আরও প্রয়োজন দলনির্বিশেষে সংবিধানের প্রতি গভীর আনুগত্য। আমাদের গণতান্ত্রিক সংবিধান জাতিকে একটি মহৎ উদ্দেশ্যের আকর্ষণে সংহত করছে। এই সংবিধানের সর্বজনস্বীকৃত সীমারেখার ভিতরই আবদ্ধ দলীয় ও প্রাদেশিক দ্বন্দ্ব। এই সীমারেখাঁটি একবার মুছে দিলে বহির্মুখী শক্তিকে কোথাও আর রোখা যাবে না। নিবার্চনোত্তর গণযুগে তাই সংবিধান আমাদের পরম সম্পদ।
সর্বশেষে আর একটি কথা সংক্ষেপে বলব।
গণশক্তির নবজাগরণ, জনগণের নতুন আত্মপ্রত্যয় ও নিজ ক্ষমতা সম্বন্ধে সচেতনতা–এ-সবই বলিষ্ঠ গণতন্ত্রের পক্ষে প্রয়োজনীয় উপাদান। কিন্তু গণযুগের একটি। সম্ভাব্য বিপদের প্রতিও দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। এমন দেখা গেছে যে একদিকে নবজাগ্রত গণশক্তি নিয়মের বন্ধন মানতে চায় না, অন্য দিকে যা-কিছু ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে বিশিষ্ট, সাধারণের ব্যতিক্রম, তাকেই সে সন্দেহের চোখে দেখে। এই অসহিষ্ণুতার ফাঁক দিয়েই স্বৈরতন্ত্রের প্রবেশ; সাময়িক আতিশয্য বলে একে উপেক্ষা করা নিরাপদ নয় যে দেশে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের মূল্য সম্বন্ধে মানুষ সজাগ নয়, সেখানে গণজাগরণের প্রথম যুগে যে-একটা বিশেষ বিপদের আশঙ্কা আছে, সে-বিষয়ে বহুদিন আগে বিখ্যাত দার্শনিক অরটেগা ই গাসেট স্মরণীয় ভাষায় আমাদের সাবধান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন “Toxday we are witnessing the triumphs of hyperdemocracy…. The mass crushes beneath it everything that is excellent, individual, qualified and select. Anyone who is not like everybody runs the risk of being eliminated.” দশের থেকে যিনি স্বতন্ত্র দশ তাঁকে সন্দেহ ও বিদ্বেষের চোখে দেখে। এই অন্ধ, অসহিষ্ণু গণশক্তি গণতন্ত্রের শত্রু, কারণ ব্যক্তিকে গোষ্ঠীর চাকায় পিষ্ট করে স্বাধীন সমাজ গড়া যায় না। গাসেটের ঐ উক্তির কিছুদিনের ভিতরই ইয়োরোপের এক বড় অংশ জুড়ে সামষ্টিক শাসনের চাপে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটে।
স্বাধীনতা ও ঐক্য এদেশের দুটি বড় সম্পদ। একদিকে বৃহৎ অথচ একদলীয় শাসনে পিষ্ট চীন আর অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরস্পর বিবদমান ছোট ছোট দেশগুলির প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা সহজ হয় যে, ভারতের ঐক্য ও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আমাদের কত বড় সৌভাগ্য। এদেশের নতুন গণযুগে এই স্বাধীনতা ও ঐক্যকে সতর্ক দৃষ্টিতে শ্রদ্ধার সঙ্গে রক্ষা করে চলতে হয়।
গণযুগ ও গণতন্ত্র (১৯৬৭)