অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো
[পঞ্চম শুক্লা হত্যামামলা
তদন্তকারী অফিসার অনিল ব্যানার্জি]
—রাগের মাথায় করে ফেলেছি স্যার, মাথার ঠিক ছিল না।
—ওটা ধরা পড়ার পর সবাই বলে।
—না স্যার, বিশ্বাস করুন…
—বিশ্বাস-অবিশ্বাস পরে। আগে বল, বডি কোথায়? তাড়াতাড়ি, বেশি সময় নেই হাতে।
—পুঁতে দিয়েছি স্যার।
—কোথায়?
—ঝিলে, কাদার তলায়।
—কোন ঝিল, কোথাকার? পুরোটা বল, না হলে বলানোর হাজারটা উপায় জানা আছে আমাদের।
—বলছি স্যার। তারাতলার কাছে।
—গাড়িতে ওঠ।
আদেশ নির্বিবাদে পালন করেন মধ্যতিরিশের বিহারি যুবক। বন্দর অঞ্চল থেকে গাড়ি যাত্রা শুরু করে গন্তব্যে, তারাতলা।
—ঝিলটা কোথায়?
—বাঁ দিকের রাস্তাটায় ঢুকতে হবে স্যার …
গাড়ি থামল তারাতলা রোড থেকে একটু ভিতরে একটি ঝিলের সংলগ্ন এলাকায়। মধ্যরাত অতিক্রান্ত তখন। রাস্তাঘাট জনমানবহীন, যথেষ্ট আলোকিত নয়। পথ দেখিয়ে নিয়ে চললেন জেরায় বিধ্বস্ত যুবক, টর্চ হাতে অনুসরণে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অফিসাররা। অসময়ের বর্ষণে কর্দমাক্ত পথঘাট। উর্দিধারীদের পায়ে গামবুট, আবশ্যিক সাবধানতাস্বরূপ।
বডি ওইখানে স্যার, পোঁতা আছে। ভেবেছিলাম, কেউ খুঁজে পাবে না কখনও।
বডি? বডি আর কই? পচেগলে কঙ্কাল, কী-ই বা অবশিষ্ট আর?
একে একে পণ্যবাহী জাহাজ এসে নোঙর ফেলছে খিদিরপুর ডকে। হুগলি নদীর বুকে ভাসমান সার দিয়ে, নিত্যদিনের নিয়মে। পণ্যসামগ্রী যে কত, কত বিচিত্র আকার-আয়তনের যে বাক্স শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে, দেখে তাক লেগে যায় পঞ্চমের। পরিচিত দৃশ্যপট, তবু রোজই ভাবে, এত মালপত্র কোথা থেকে আসে, কারা পাঠায়? ডিউটির পর নদীর ধারে চুপচাপ কিছুটা সময় কাটানো প্রাত্যহিক অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে তার। বন্ধুরা ঠাট্টা করে, একই জিনিস, জাহাজ আসছে, মাল খালাস হচ্ছে। রোজ কী এত দেখিস?
পঞ্চম নিরুত্তর থাকে। উত্তরটা তার নিজেরও অজানা। কলকাতা বন্দরে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীর চাকরিটা যখন পেয়েছিল বেশ কয়েকবছর আগে, সুদূর উত্তর ভারত থেকে পাড়ি দিয়েছিল অজানা-অচেনা বঙ্গদেশে, কখনও ভাবেনি জায়গাটা এত ভাল লেগে যাবে। সব ভাল লাগা ব্যাখ্যা করা যায়?
আজ অবশ্য মনটা ভারী হয়ে আছে। একটু আগে ঝগড়া হয়ে গেল বন্ধুর সঙ্গে।
—আমি আর অপেক্ষা করতে পারব না পঞ্চম। খুব বেশি হলে আর এক সপ্তাহ সময় দিতে পারি। তার বেশি কিছুতেই নয়।
—তুই তো জানিস, আমি চেষ্টা করছি টাকাটা জোগাড়ের। আর একটু সময় চাই।
—এই কথাটা তো গত দু’মাস ধরে শুনছি। পাঁচ-দশ টাকার ব্যাপার হলে বলতাম না। পাঁচশো টাকা! বাবার থেকে ধার করে দিয়েছিলাম তোকে। শোধ করতে পারবি না জানলে দিতাম না।
—এইভাবে রোজ তাগাদা দিবি জানলে চাইতামও না। চুরি-ডাকাতি না করলে এক ধাক্কায় পাওয়া যায় পাঁচশো টাকা?
—তা হলে চুরি-ডাকাতিই কর! নদীর ধারে বসে জাহাজ গুনলে তো আর টাকা আসবে না!
মাথা গরম হয়ে যায় পঞ্চমের।
—দেব না যা! এক পয়সাও ফেরত দেব না। লেখাপড়া করে তো আর টাকা নিইনি, কোনও প্রমাণ নেই। যা পারিস কর।
—হ্যাঁ, সেটাই করব। টাকা কীভাবে আদায় করতে হয়, আমার জানা আছে। আমার টাকা মেরে দিয়ে কীভাবে চাকরি করিস, দেখব।
—আরে যা যা, মুরোদ থাকলে দেখে নিস যা দেখার!
পঞ্চমের মনে হয়, এতটা মেজাজ গরম না করলেই হত। সত্যিই তো, পাঁচশো টাকা তো কম নয় নেহাত। তবে সে যে চেষ্টা করছে না, এমনও তো নয়। সেটা বুঝবে না? মা-বাবা একসঙ্গে অসুস্থ না হয়ে পড়লে প্রয়োজনও হত না একসঙ্গে অত টাকার। কী করবে এখন? গ্রামের বাড়ির জমিটা বেচে দেবে? বাবা-কাকারা রাজি হবেন?
নদীর ধার থেকে উঠে পড়ে পঞ্চম। হাঁটতে শুরু করে কোয়ার্টারের দিকে। স্ত্রী এবং দুই শিশুপুত্রের জন্য মন কেমন করে ফিরতে ফিরতে। কত দিন দেশের বাড়ি যাওয়া হয়নি। পরের সপ্তাহে সুপারভাইজার সাহেবের কাছে ছুটির দরখাস্ত পেশ করবে স্থির করে ফেলে। কাজে ফাঁকি দেয় না বলে সাহেব পছন্দই করেন তাকে। দেশে গিয়ে জমিজমা বেচার কথাটাও এবার পাড়তে হবে। এভাবে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আর কত দিন?
নামেই ঝিল, জলের থেকে কাদারই প্রাধান্য। গভীর রাতে কিঞ্চিৎ শ্রমসাধ্যই ছিল ঝিলের মাঝামাঝি পুঁতে রাখা দেহ উদ্ধার। ‘দেহ’ লিখলাম বটে, বাস্তবে কঙ্কাল। আক্ষরিক অর্থেই। মাংস নেই কণামাত্র। একটি ধুতি এবং ছেঁড়া শার্ট আলগা লেগে রয়েছে। চোয়ালের নীচের অংশ আর বুকের বাঁ দিকের কিছু হাড় নেই। নেই ডান পায়ের মালাইচাকি (Patella), নেই hyoid bone (ঘাড় থেকে চিবুক পর্যন্ত বিস্তৃত অনেকটা ‘U’ আকারের হাড়, যা জিভের নড়াচড়া ও খাবার গলাধঃকরণে সাহায্য করে)। বেশ বোঝা যায়, জায়গাটি কর্দমাক্ত ছিল বলে পচনপ্রক্রিয়াও (decomposition) ঘটেছে দ্রুততর। শেয়াল-শকুনেও পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে অভাবিত খাদ্যবস্তুর।
মাটি খুঁড়ে পাওয়া পঞ্চম শুক্লার কঙ্কাল
ছেঁড়া শার্টটিতে চারটি বোতাম, পকেটে একটি ছোট লাল পতাকা, সাদা বর্ডারসহ। বন্দরের সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীদের পোশাকে থাকত যে চিহ্ন। পইতেও রয়েছে অক্ষত। রাত ভোর হলে ঝিলটির সর্বত্র তল্লাশি চালিয়ে কাদার মধ্য থেকে মিলল চোয়ালের হাড়। চুন রাখার একটি ছোট কৌটো, যার উপরে হিন্দিতে খোদাই করা, “ওম জয় হিন্দ”। প্রায় ফুটখানেক লম্বা একটি ছুরিও পোঁতা ছিল কাদাতে, উদ্ধার হল। খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র?
পঞ্চম শুক্লা হত্যা মামলা। সাউথ পোর্ট পুলিশ স্টেশনে নথিভুক্ত। তারিখ ২১ মার্চ, ১৯৬০। সে প্রায় ছয় দশক আগের কথা। অভিযোগ খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ এবং হত্যার। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ এবং ৩০২ ধারা।
এ মামলায়, শুরুতেই লিপিবদ্ধ থাক, রহস্য উদঘাটনের রুদ্ধশ্বাস রোমাঞ্চ নেই, যা পাঠক সন্ধান করেন গোয়েন্দাকাহিনিতে, সে কাল্পনিক ঘটনাই হোক বা সত্য। নেই একাধিক সন্দেহভাজনের মধ্যে অপরাধীকে চিহ্নিত করার উত্তেজনা।
সমাধানে মেধার ব্যতিক্রমী প্রয়োগ ছিল, এমন দাবি অন্যায্য। অন্যান্য খুনের মামলার তুলনায় কিনারা ছিল সহজসাধ্যই। তবু, কলকাতা পুলিশের সুদীর্ঘ ইতিহাসে এই মামলা এক চিরকালীন মাইলফলক। শুধু কলকাতাই বা লিখি কেন, সারা দেশেই দিকচিহ্ন তদন্ত-গবেষণায়। কারণ?
কারণ নিহিত, বাস্তবের সঙ্গে কল্পনার পার্থক্যে | তদন্তপথের দুটি স্পষ্ট বিভাজন থাকে। একটি অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা পর্যন্ত, তার গ্রেফতারি পর্যন্ত। যে বিন্দুতে সমাপন কাল্পনিক রহস্যকাহিনির। সত্যজিতের ফেলুদাই হন বা শরদিন্দুর ব্যোমকেশ, নীহাররঞ্জনের কিরীটিই হন বা হেমেন্দ্রকুমারের জয়ন্ত-মানিক, অপরাধটা কে করল এবং কীভাবে করল, তাতেই মূলত সীমাবদ্ধ থাকে রহস্যপিপাসুর কৌতূহল। না লেখকের, না পাঠকের, দায় থাকে না বিচারপর্বের সাতকাহনের। বাস্তবের গোয়েন্দাদের কাছে, লালবাজারের ফেলু-ব্যোমকেশদের কাছে যার গুরুত্ব অপরিসীম।
কিনারা-পরবর্তী কর্মকাণ্ড শাস্তিবিধান নিশ্চিত করতে পারে অভিযুক্তের। আপাতনীরস এবং রোমাঞ্চবর্জিত এক পথ। অতিক্রম করতে ব্যর্থ হলে নিরর্থক যাবতীয় প্রাক্-কিনারা পরিশ্রম। এই পর্বে উত্তেজনার উপাদান যেহেতু সচরাচর থাকে না তেমন, তদন্তের এই অংশটি সম্পর্কে কাল্পনিক গোয়েন্দাগল্পের নিরাসক্তি সহজবোধ্য। আলোচ্য মামলার বিবরণীতে কিনারা-উত্তর অংশটিই প্রধান উপজীব্য।
রোজ কোয়ার্টারে ফিরে আসেন সন্ধে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে। ১০ মার্চ অন্যথা হল। রাত গড়িয়ে ভোর হল, ভোর গড়িয়ে সকাল, পঞ্চম ফিরলেন না। পঞ্চমের শ্যালকও বন্দরকর্মী ছিলেন। থাকতেন সংলগ্ন কোয়ার্টারেই। খোঁজাখুঁজি এবং উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার পর সাউথ পোর্ট থানায় মিসিং ডায়েরি নথিভুক্ত হল সে-রাতেই।
কারও নিখোঁজ হওয়ার খবর পেলে যা যা করণীয় প্রথামাফিক, করা হল। ওয়ারলেস বার্তা শহরের থানাগুলিতে, কোথাও কোনও দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না তার তথ্যতালাশ, নিখোঁজ ব্যক্তির ছবি সংগ্রহ এবং যথাসাধ্য প্রচারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। ফল হল না, বছর পঁয়ত্রিশের পঞ্চম নিখোঁজই।
পঞ্চম শুক্লা
যত সহকর্মী ছিলেন পঞ্চমের, বন্ধুবৃত্তে ছিলেন যাঁরা, প্রস্তুত হল তালিকা। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীনই তাঁদের একজনের থেকে জানা গেল, রামলোচন নামের এক বন্ধুর সঙ্গে কাপড়ের ব্যবসা করার কথা ইদানীং ভাবছিলেন পঞ্চম। বন্দরে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী, হঠাৎ কাপড়ের ব্যবসা কেন? খোঁজ শুরু হল রামলোচনের। ঠিকানা পাওয়া গেল অচিরেই। তারাতলায় একতলা ফ্ল্যাট তিন কামরার, থাকতেন একাই।
প্রতিবেশীরা জানালেন, ১১ মার্চ ভোরবেলা থেকে রামলোচনকে আর দেখেননি। ঘর তালাবন্ধ। সাদা পোশাকের পুলিশকে লাগানো হল চব্বিশ ঘণ্টার নজরদারিতে।
কিছুদিনের নিষ্ফলা প্রহরার পর ২১ মার্চ ভোররাতে নিজের বাড়িতে চাদরমুড়ি দিয়ে ঢোকার সময় আটকানো হল রামলোচনকে। পুরো নাম রামলোচন আহির। বয়স ত্রিশের কোঠায়, থানায় এনে ঘণ্টাদুয়েকের জেরাতেই প্রকাশ্যে এল পঞ্চম-হত্যার ইতিবৃত্ত।
রামলোচন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। অবাঙালি, কিন্তু বংশপরম্পরায় বাস কলকাতায়। বাবা-ঠাকুরদার পারিবারিক ব্যাবসা ছিল কাপড়ের। রামলোচন ছিলেন ঝুঁকিপ্রবণ প্রকৃতির, শুধুই কাপড়ের ব্যবসায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখায় আগ্রহী ছিলেন না। নানাবিধ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে প্রবল উৎসাহ ছিল। বিদেশে পণ্যরফতানির কথাও ভাবতে শুরু করেছিলেন সম্প্রতি। সেই সূত্রে যাতায়াত বেড়েছিল ডক এলাকায়, আলাপ হয়েছিল পঞ্চমের সঙ্গে। যা দ্রুত পরিণত হয়েছিল সখ্যে।
বাবা-মা দেশের বাড়িতে প্রায় একইসঙ্গে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিছুকাল আগে জরুরি ভিত্তিতে অর্থের প্রয়োজন হয় পঞ্চমের। চিকিৎসা ছিল প্রভূত খরচসাপেক্ষ। শরণাপন্ন হলেন অর্থবান বন্ধুর। বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ালেন রামলোচন। পাঁচশো টাকা ধার দিলেন। সে-সময়ে, ছয়ের দশকে, পাঁচশো মানে অনেক টাকা।
গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির ব্যবসার কথা বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলেন রামলোচন, বিনিয়োগও করে ফেলেছিলেন বহুলাংশে। কিন্তু ব্যবসাকে একটা ভদ্রস্থ জায়গায় দাঁড় করাতে আরও অর্থের জোগান একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। পঞ্চমের কাছে ধার দেওয়া টাকা ফেরত চাইলেন। পঞ্চম জানালেন, চেষ্টা করবেন শোধ করতে, কিন্তু আপাতত অপারগ।
নিয়মিত তাগাদা শুরু করলেন রামলোচন, তাঁরও আশু প্রয়োজন অর্থের। এই নিয়েই ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে একদিন তীব্র বচসা।
—আমার টাকা চাই তিনদিনের মধ্যে। না হলে পুলিশে যাব।
—যা না, কোনও প্রমাণ আছে? লেখাজোকা তো কিছু হয়নি, আমি পুলিশকে বলব, টাকা নিইনি।
—ঠিক আছে, আমিও দেখাব, আমার টাকা মেরে দিয়ে তুই পার পাবি ভেবেছিস?
—বললাম তো, যা করার করে নিস।
ক্রোধান্ধ রামলোচন সেদিনই স্থির করলেন, পঞ্চম বাঁচার অধিকার হারিয়েছেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেখা করলেন পঞ্চমের সঙ্গে।
—পঞ্চম, তোর সঙ্গে ঝগড়া হওয়ার পর থেকেই মনটা খারাপ। তুই কিছু মনে করিস না ভাই।
—সে তো আমারও মেজাজটা তেতো হয়ে আছে সেদিনের ঘটনার পর থেকে। আমি কি বলেছি টাকা দেব না?
—আরে ছাড়, যা হওয়ার হয়েছে। আমার মাথায় একটা প্ল্যান এসেছে।
—কী?
—গাড়ির পার্টসের ব্যবসাটা ঠিক জমছে না। কাপড়ের ব্যবসার ঘাঁতঘোঁত আমার হাতের তালুর মতো জানা। ওটাই ভাল করে করব ভাবছি। একজন রাজি হয়েছে টাকা ঢালতে, পরশু বাড়িতে আসবে। তুইও আয়।
—কিন্তু আমি গিয়ে কী করব?
—আরে তুই চাকরির পর ফ্রি-টাইমে লেবার দিবি। হুট করে তো আর টাকার জোগাড় করতে পারবি না। এভাবে শোধ দিবি আস্তে আস্তে। ঝগড়া করে কী লাভ?
পঞ্চম সম্মত হয়ে গেলেন রামলোচনের প্রস্তাবে। নির্ধারিত দিনে রাত আটটায় পৌঁছলেন বন্ধুর বাড়ি। পানাহার হল। দশটা নাগাদ সামান্য অধৈর্য হয়ে পড়লেন পঞ্চম।
—ঘুম পাচ্ছে রে এবার। কখন আসবে তোর ব্যবসায়ী বন্ধু?
—এসে যাওয়ার তো কথা। কেন যে দেরি করছে? মনে হয় আটকে গেছে কোথাও। এক কাজ করি চল, হেঁটে আসি একটু ঝিলের পাশ থেকে, যা গুমোট গরম। পাশেই তো, মিনিট পনেরো হাওয়া খেয়ে চলে আসব। তারপর তুই বাড়ি চলে যাস। আমিও চলে আসব।
—হুঁ … চল।
ঝিলের পাড়ে কিছু সময় কাটল গল্পগুজবে। ঘন হয়ে এসেছে অন্ধকার। রাত সোয়া এগারোটা নাগাদ পঞ্চম বললেন, চল, এবার বাড়ি যাই।
উঠতে যাবেন, সহসা জামার ভিতরে গোঁজা ধারালো ছুরি বার করলেন রামলোচন। চালিয়ে দিলেন পিছন থেকে, পঞ্চমের ঘাড়ে। আকস্মিক আঘাতের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না শক্তসমর্থ চেহারার পঞ্চম, বিস্ময়ের ঘোর কাটার আগেই একের পর কোপ বসিয়ে দিয়েছেন রামলোচন। রক্তাক্ত এবং ভূপতিত পঞ্চমের উপর নির্বিচার ছুরিকাঘাত এর পর, বুকে-পেটে-গলায়। মৃত্যু এল অনিবার্য।
—তারপর?
—ভেবেই রেখেছিলাম আগে। বডিটাকে পুঁতে দিলাম ঝিলের কাদাজলের মধ্যে। জলেই ফেলে দিলাম ছুরিটা, যেটা বাবা শখ করে কিনেছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে দিল্লি থেকে। জামার ভিতর গুঁজে নিয়ে গিয়েছিলাম ঝিলে। আমার টাকা দিচ্ছিল না পঞ্চম, আবার রোয়াবও দেখিয়েছিল, মাথার ঠিক ছিল না তাই। ভুল করে ফেলেছি স্যার, স্রেফ রাগের মাথায়।
কলকাতা পুলিশের ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের ইনস্পেকটর শ্রীঅনিল ব্যানার্জির উপর পড়ল তদন্তভার। কিনারা সম্পূর্ণ হয়েছে নিঃসংশয়, অপরাধ স্বীকার করেছে অভিযুক্ত। কিন্তু প্রমাণ? ভারতীয় সাক্ষ্য আইন (Indian Evidence Act)-এর ২৭নং ধারায় অভিযুক্তের বয়ান অনুসরণে উদ্ধার হয়েছে কঙ্কাল। মিলেছে ছুরি (weapon of offence)। মৃতের আত্মীয়স্বজন চিহ্নিত করেছেন ধুতি-শার্ট, চুনের কৌটো। কী বাকি থাকে আর?
বাকি যে মূল কাজটাই, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারছিলেন অনিলবাবু। কঙ্কালটি যে পঞ্চমেরই, তা তর্কাতীত প্রমাণ করা। পরামর্শ করলেন বিশিষ্ট আইনজ্ঞদের সঙ্গে। যাঁরা জানালেন দ্ব্যর্থহীন, অভিযুক্ত যা-ই কবুল করুক পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে, অপরাধের সঙ্গে সংস্রব অস্বীকার করবেই আদালতে, যেমন করে নিরানব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে। এবং বেকসুর খালাস পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, যদি না সন্দেহাতীত প্রমাণ পেশ করা যায় যে কঙ্কালটি পঞ্চমেরই দেহের। এখনও পর্যন্ত প্রমাণস্বরূপ যা রয়েছে হাতে, তা নিশ্চিত চিহ্নিতকরণের পক্ষে অপর্যাপ্ত। সন্দেহের আনুকূল্য অভিযুক্ত পাবেনই, ধরে নিয়ে অগ্রসর হওয়াই সমীচীন।
অনিলবাবু প্রয়াত হয়েছেন বেশ কিছুকাল হল। তাঁর তৎকালীন অধীনস্থ অফিসারদের মধ্যে যাঁরা এখনও জীবিত, তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতায় কিঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যায় আদ্যন্ত কর্তব্যনিষ্ঠ মানুষটির চরিত্রবৈশিষ্ট্যের। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের নিস্পৃহ নিধন করায়ত্ত ছিল না হয়তো, কিন্তু মনোভঙ্গি ছিল গাভাসকরের। হাজার প্রতিকূলতার মধ্যেও স্থিতধী সংকল্পে। পরিকাঠামোর সহায়তায় সাফল্যে বিশ্বাসী ছিলেন না, বরং তার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শৃঙ্গস্পর্শে ছিলেন একমুখী। নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস ছিল, দেশবিদেশের অপরাধ-তদন্তের বহমান ধারাটি সম্পর্কে সদাসচেতন থাকতেন পেশাগত উৎকর্ষের তাগিদে।
চিন্তান্বিত হয়ে পড়লেন, কীভাবে হবে কঙ্কালের শনাক্তকরণ? বকেয়া টাকা ফেরত না পাওয়ার আক্রোশে একটা জলজ্যান্ত লোককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করল, খালাস পেয়ে যাবে? অবসরে অনেকটা সময় কাটাতেন ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে, তৎকালীন ইন্টারনেটহীন সময়কালে জ্ঞানবৃদ্ধিতে গ্রন্থাগারই ছিল মুখ্য ভরসাস্থল। বিদেশে কোথায় একটা এমন মামলা হয়েছিল না? কোথায় যেন পড়েছিলেন? অনিল ছুটলেন আলিপুরে। জাতীয় গ্রন্থাগার যদি দেখাতে পারে কাঙ্ক্ষিত আলোর দিশা।
দিশা মিলল বিস্তর বইপত্র নেড়েচেড়ে। এই তো! এই কেসটাই তো খুঁজছিলেন, “The Buck Ruxton ‘Jigsaw murders’ case”।
মামলার সংক্ষিপ্তসার এই। বাক রাক্সটনের জন্ম ভারতে। নাম ছিল বখতিয়ার রুস্তমজি রতনজি হাকিম। ডাক্তারি পাশ করে চলে যান ইংল্যান্ডে। ওকালতনামা করে নাম পরিবর্তন করেছিলেন। চিকিৎসক হিসেবে রোগীমহলে যথেষ্ট সমাদৃতই ছিলেন। স্ত্রী ইসাবেলা এবং মহিলা গৃহকর্মী মেরি রজারসনকে নিজের ল্যাঙ্কাশায়ারের বাড়িতে কুপিয়ে খুন করেছিলেন। ১৯৩৫-এর সেপ্টেম্বরে।
রাক্সটন নিজে চিকিৎসক ছিলেন, প্রয়োগ করেছিলেন অধীত বিদ্যা। দুটি দেহেরই অগুনতি খণ্ড করেছিলেন। শনাক্ত করার যাবতীয় শরীরচিহ্ন মুছে দিতে চেষ্টা করেছিলেন এক এক করে। খণ্ডগুলি পার্সেলে মুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন স্কটল্যান্ডের একটি ব্রিজের নীচে। উদ্দেশ্য স্পষ্ট, দেহাংশ যদি পরে আবিষ্কৃতও হয়, শনাক্তকরণ যেন হয় অসম্ভব। মোটিভ? যৌন-ঈর্ষা জনিত সন্দেহপ্রবণতা। রাক্সটনের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, ইসাবেলা জড়িয়ে পড়েছেন গভীর পরকীয়ায়। তীব্র অশান্তি হত স্বামী-স্ত্রীর। একাধিকবার সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলেও গিয়েছিলেন ইসাবেলা। প্রতিবারই ফিরিয়ে এনেছিলেন রাক্সটন। অবিশ্বাস-সন্দেহ-বাদানুবাদ অবশ্য অব্যাহতই থেকে গিয়েছিল। যার চূড়ান্ত পরিণতি ইসাবেলার হত্যায়। এবং ঘটনার সাক্ষী থাকায় গৃহকর্মী মেরিকেও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ায়।
ঘটনার পক্ষকাল পরে পার্সেলে মোড়া দেহাংশ আবিষ্কার করেন কয়েকজন পথচারী। ছিন্নবিচ্ছিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছবি তদন্তকারীদের মনে করিয়ে দিয়েছিল ‘Jigsaw Puzzle’-এর কথা। নানা টুকরো জুড়ে একটি পূর্ণ ছবি তৈরি করার খেলা। মামলাটির নামই হয়ে গিয়েছিল ‘Jigsaw Murders’।
একঝাঁক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অসাধ্যসাধন করেছিলেন। দুটি দেহের অসংখ্য খণ্ডাংশ জুড়ে পূর্ণাবয়বে ফিরিয়ে এনেছিলেন, ফরেনসিক প্যাথলজিস্ট অধ্যাপক জন গ্লেইস্টার এবং অ্যানাটমি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জেমস কুপার ব্র্যাশের নেতৃত্বে। ফরেনসিক প্রমাণের এহেন অভিনব এবং সফল প্রয়োগ হয়নি অতীতে। বিশ্বে সেই প্রথম ‘Photographic Superimposition’ ব্যবহৃত হয়েছিল তদন্তে। যা নিশ্চিত চিহ্নিত করেছিল মৃতা দুই মহিলাকে, অকাট্য প্রমাণে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ডা. রাক্সটন। ফাঁসি হয়েছিল।
কী প্রবল চর্চিত হয়েছিল এ মামলা, কী তীব্র প্রভাব ফেলেছিল জনমানসে, উদাহরণ দিই। ‘Red sails in the sunset’ গানটি তখন তুমুল জনপ্রিয় বিশ্বজুড়ে। বিখ্যাত গীতিকার জিমি কেনেডি লিখেছিলেন। আয়ারল্যান্ডের উত্তর উপকূলে পোর্টস্টুয়ার্ট (Portstewart) শহরে বাড়ি ছিল কেনেডির, সমুদ্র থেকে অদূরে। প্রায়ই দেখতে পেতেন একটি বিলাসবহুল প্রমোদতরী। সেই দৃশ্যই গানটির অনুপ্রেরণা। রাক্সটন মামলা নিয়ে গান পর্যন্ত বেঁধে ফেলা হয়েছিল ‘Red sails…’-এর ছায়ায়।
“Red stains on the carpet/ red stains on the knife Oh Dr Buck Ruxton/ You murdered your wife Then Mary she saw you/ You thought she would tell So Dr Buck Ruxton/ You killed her as well.”
অনিল ন্যাশনাল লাইব্রেরি থেকে ছুটলেন ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (FSL)। মুষ্টিমেয় মামলাতেই তখনও প্রয়োগ হয়েছে ‘Photographic Superimposition’-এর। কিন্তু হয়েছে তো! পঞ্চম শুক্লার ক্ষেত্রে কেন করা যাবে না?
FSL-এর তৎকালীন ডিরেক্টর ছিলেন অধ্যাপক ড. নির্মলকুমার সেন। অনিল সবিস্তার জানালেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় কঙ্কাল থেকে লিঙ্গনির্ধারণ হয়ে গিয়েছে। উচ্চতা এবং বয়স-নিরূপণও সম্পূর্ণ। পঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষদেহ, পাঁচ ফিট ছয়। যা মিলে যাচ্ছে পঞ্চমের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে। প্রশ্নাতীত শনাক্তকরণের জন্য, সেই প্রাক-DNA যুগে, রাক্সটন মামলার পদ্ধতির শরণ নেওয়া ছাড়া উপায় কী আর? দেখবেন একবার চেষ্টা করে?
ড. সেন অক্লান্ত পরিশ্রম করলেন। ভারতে সেই প্রথম কোনও মামলার তদন্তে ব্যবহৃত হল ‘সুপারইম্পোজ়িশন’ পদ্ধতি। প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসকদের হাতযশে যে কত অভিযুক্ত পর্যবসিত হয়েছে অপরাধীতে, হিসাবের অতীত। আলোচ্য মামলায় যেমন।
সুপারইম্পোজ়িশন কী? সহজ ভাষায়, কোনও এক অবয়বের কোনও একটি জায়গায় একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অন্য একটি অবয়বের ওই জায়গার ওই নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলে যাওয়া, মিশে যাওয়া নিখুঁতভাবে। মানবদেহের ক্ষেত্রে এই বিন্দুগুলিকে বলা হয় nodal point। যা শারীরগত, এবং ব্যক্তিবিশেষে এক এক জনের ক্ষেত্রে ভিন্ন অবস্থান প্রকৃতিগত পার্থক্যে। বিন্দুর সঙ্গে যদি মেলাতে হয় বিন্দুকে, দুটি অবয়বকে একই মাপের, একই আকৃতির করে নেওয়া জরুরি। যে কারণে পঞ্চম শুক্লার পাসপোর্ট সাইজের ছবিটিকে নেগেটিভের সাহায্যে পরিবর্তিত করা হল quarter size-এ। উদ্দেশ্য, খুলির পরিমাপের সঙ্গে ছবির সাযুজ্য স্থাপন।
এখানে দু’-একটি কথা প্রাসঙ্গিক। আমাদের মুখ, নাক, কপাল, চিবুক ও কান আলাদা প্রত্যেকের, হাড়ের গঠন অনুযায়ী। কারও কপাল চওড়া, কারও মাথা বড়। কারও চিবুক ছোট, কারও গলা স্বাভাবিকের তুলনায় মাপে বড়। কাজ করা হচ্ছে দুটি অবয়ব নিয়ে। কপালের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা nodal point-কে যদি চিবুকের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে বা এক গালের একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে যদি অন্য গালের একটি বিন্দুর সঙ্গে এক সরলরেখায় যোগ করা যায় এবং দুটি অবয়বের ক্ষেত্রেই যদি দৈর্ঘ্য এক হয়, তবে বলা যায় যে দুটি অবয়ব একই ব্যক্তির।
পঞ্চম শুক্লার করোটি
পঞ্চমের ক্ষেত্রে কোয়ার্টার সাইজের ছবিটিকে স্থাপন করা হল ক্যামেরার ঘষা কাচের (Ground Glass) নীচে। চিহ্নিত করা হল nodal point সমূহ। রেখাঙ্কিত করে নেওয়া হল অবয়বকে। ছবিটির উপর অতঃপর বসানো হল একটি স্ট্যান্ড। খুলিটিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আনা হল একই অক্ষে। এবং দেখা গেল, খুলির নোডাল পয়েন্টগুলির সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে অবয়বের নোডাল পয়েন্ট। মুখাবয়বের গড়ন, নাক-কান-গলা-চিবুক, সব। প্রাপ্ত খুলি এবং ছবিটি যে একই ব্যক্তির, প্রমাণিত হল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায়। তর্কের অবকাশ ছিল না বিন্দুমাত্র।
মৃত্যুর এগারো দিন পরে উদ্ধার হওয়া কঙ্কাল থেকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে দেহের শনাক্তকরণ। তা-ও প্রথম বিশ্বের তুলনায় অনগ্রসর দেশে, প্রযুক্তির নিরিখে তুলনায় অনুন্নত পরিসরে, সাড়া পড়ে গিয়েছিল ভারতের পুলিশ মহলে।
বর্তমান সময়ে তদন্তে ‘সুপারইম্পোজ়িশন পদ্ধতির’ কম্পিউটার-নির্দেশিত প্রয়োগ নিতান্ত স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগে, এদেশে অচিন্তনীয় ছিল বিজ্ঞানভাবনার এই অভিনব প্রয়োগশৈলী। যাঁর দূরদৃষ্টি চালিকাশক্তি ছিল সাফল্যের নেপথ্যে, সেই অনিল ব্যানার্জি প্রয়াত হয়েছেন দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু জীবদ্দশাতেই স্বীকৃতি পেয়েছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক তদন্তের।
ভারতের পুলিশ মহলে তদন্তপ্রক্রিয়ার উৎকর্ষের সিলমোহর পড়ত ‘Indian Police Journal’-এ বিবরণী স্থান পেলে। ডাকসাইটে আইপিএস অফিসার, স্বনামধন্য আইনবিদ বা যশস্বী চিকিৎসক ছাড়া লেখকতালিকায় স্থান পাবেন কেউ, ঘটত কদাচিৎ।
ইনস্পেকটর অনিল ব্যানার্জিকে পঞ্চম শুক্লা হত্যা মামলার নির্যাস পত্রিকায় লিপিবদ্ধ করার সসম্মান আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সম্পাদকমণ্ডলী। অনিলবাবু লিখেছিলেন তথ্যসমৃদ্ধ নিবন্ধ। শীর্ষক, ‘Camera identifies human skull’। যাতে ধরা ছিল অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলোর আখ্যান, যা আজও অবশ্যপাঠ্য তদন্তশিক্ষার্থীর।
বিচারপর্বে প্রশ্ন উঠেছিল ব্যবহৃত পদ্ধতির আইনি বৈধতা এবং প্রমাণমূল্য নিয়ে, ধোপে টেকেনি। নিম্ন আদালত প্রাণদণ্ড দিয়েছিলেন রামলোচনকে। হাইকোর্ট সাজা হ্রাস করেছিলেন যাবজ্জীবন কারাবাসে। যে রায় অপরিবর্তিত থেকেছিল সুপ্রিম কোর্টে।
কলকাতা পুলিশকে যে তুলনা করা হত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে, সর্বজনবিদিত। এই অভিধাপ্রাপ্তিতে অবদান আছে তদন্তে বিরল সাফল্যের নজিরসৃষ্টিকারী অসংখ্য মামলার, যার মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবে এই পঞ্চম শুক্লা হত্যা। ঘটনাচক্রে যার কিনারা হয়েছিল স্কটল্যান্ডেরই একটি ব্রিজের নীচে পড়ে থাকা দেহাংশের রহস্যভেদ প্রক্রিয়ার অনুসরণে।
অন্য কোথাও নয়, স্কটল্যান্ডে! কী আশ্চর্য সমাপতন!