প্রথম খণ্ড – প্রথম পাঠ
সংজ্ঞা ও পরিভাষা
যে বিদ্যা বলে মানুষকে সম্মোহিত বা বশীভূত করিয়া তাহার দ্বারা অভীপিত কাৰ্য্য সকল সম্পাদন করা যায়, উহাকে “সম্মোহন বিজ্ঞান” বা “সম্মোহন বিদ্যা” (Hypnotism or Mesmerism) বলে। এই বিদ্যা ব্যবহারিক মনোবিজ্ঞানের (Applied Psychology) একটি সমুন্নত শাখা।
সংবেদনার যে একটি বিশেষ অবস্থায় উপনীত হইয়া মোহিত, সম্মোহিত বা বশীভূত ব্যক্তি সম্মোহনবিদের আদিষ্ট কাৰ্য সকল সম্পাদন করে, উহাকে “মোহিত” বা “সমোহিতাবস্থা” (hypnosis or mesmeric state) বলা যায়। এই অবস্থা নিদ্রার সাহায্যে বা উহা ব্যতিরেকে, এক ব্যক্তি কর্তৃক অপর এক ব্যক্তির কিম্বা তাহার নিজের উপর উৎপাদিত হইয়া থাকে। এই অবস্থায় মোহিত ব্যক্তির “বহির্মন” (Objective Mind) অল্পাধিক পরিমাণে সুপ্ত, নিশ্চেষ্ট বা নিষ্ক্রিয়াবস্থায় সম্মোহন বিদ্যা অবস্থান করে, আর “অন্তর্মন” (Subjective Mind) তাহার স্বাভাবিক ক্রিয়া সম্পাদনে রত থাকে।* (*চতুর্থ পাঠ দ্রষ্টব্য)
যে ব্যক্তি মানুষকে সম্মোহন করিতে (hypnotise or mes merise) সমর্থ তাহাকে “সম্মোহনবিৎ” (hypnotist, mesmerist or operator.) বলে। যে ব্যক্তি সর্ব সাধারণে কেবল সম্মোহন ক্রীড়া (hypnotic or mesmeric demonstrations) copata fant বেড়ায়, তাহাকে “হিপ্নোটাইজার” বা “মেস্মেরাইজার” (hypnotiser or mesmeriser) বলে; আর যে বৈজ্ঞানিক ভাবে এই বিদ্যার চর্চা করে, তাহাকে “হিপ্নোটিষ্ট” বা “মেস্মেরিষ্ট” (hypnotist or mesmerist) বলিয়া অভিহিত করা হয়।
হিপ্নোটিজম, মেস্মেরিজম ও ম্যানিমেল মাগ্নেটিজম (Hypnotism, Mesmerism and Animal Magnetism) :
হিপ্নোটিজম হইতে মেসমেরিজম এবং মেসমেরিজম হইতে য্যানিমেল ম্যাগ্নেটিজম প্রাচীনতর বিদ্যা। পাশ্চাত্য দেশে এই বিদ্যা প্রথম “য়্যানিমেল ম্যাগ্নেটিজ্ম” নামে পরিচিত ছিল; পরে ইহা “মেস্মেরিজম” এবং তৎপরে আবার “হিপ্নোটিজ্ম” নামে আখ্যা প্রাপ্ত হইয়াছে। বর্তমান সময়ে এই বিদ্যা “মেস্মেরিজুম” ও “হিপ্নোটিজম” নামে সর্বত্র পরিচিত।
হিপ্নোটিজ্ম অপেক্ষা মেস্মেরিজম উন্নত প্রণালীর বশীকরণ বিদ্যা। হিপ্নোটিজমে যাহা সম্পন্ন করা যায়, মেস্মেরিজমের সাহায্যে তাহা অনায়াসেই সম্পন্ন হইতে পারে। মেস্মেরিজমে সচরাচর যে সকল সংজ্ঞা ও পরিভাষা ইন্দ্রিয়গ্রাহরূপ (phenomena) যেমন—“দিব্যদৃষ্টি”, “চিন্তা-পঠন, “দিব্যানুভূতি” ইত্যাদি (Clairvoyance, Thought-transference, Psychometry etc.) বিষয়ক নানা প্রকার ব্যাপার সংঘটিত হইয়া থাকে, হিপ্নোটিজম দ্বারা তাহা কদাচিৎ সম্পন্ন হয়। এজন্য হিপ্নোটিজম অপেক্ষা মেস্মেরিজমক শ্রেষ্ঠতর সম্মোহন বিদ্যা বলিয়া অভিহিত করা হইয়া থাকে। হিপ্নোটিজম সহজেই শিক্ষা করা যায়, কিন্তু মেস্মেরিজম শিক্ষা সময় সাপেক্ষ; যেহেতু উপযুক্ত সাধনা দ্বারা মনঃশক্তি সমধিক পরিমাণে বর্ধিত না হইলে কাৰ্য্যকুশল মেসমেরিষ্ট হওয়া যায় না।
অষ্ট্রিয়া দেশবাসী ডাক্তার এন্টনি মেদমার (Dr. Anthony Mesmer) নামক একজন চিকিৎসক, জ্যোতির্বিদ ও দার্শনিক “য়ানিমেল ম্যাগ্নেটিজম” বা “জৈব আকৰ্ষণী বিদ্যার” চর্চা করিতেন। তিনি এই বিদ্যা ফাদার হেল (Father Hehl) নামক এক পাদরীর নিকট হইতে শিক্ষা করিয়াছিলেন। ফাদার হেলের বহু পূৰ্বে এই বিদ্যা ইজিপ্টবাসী, রোমান ও গ্রীকদিগের মধ্যে প্রচলিত ছিল। ডাক্তার মেমার এই অ্যানিমেল ম্যাগ্নেটিজম বিদ্যা বলে রুগ্ন ব্যক্তিদিগকে অভিভূত বা সম্মোহিত করিয়া তাহাদের নানা প্রকার রোগ আরোগ্য করিতেন। তিনি এই প্রণালীর চিকিৎসা আরম্ভ করার পর, যখন ইহাতে খুব সাফল্য লাভ করিতে লাগিলেন, তখন তাহার সমব্যবসায়ী চিকিৎসকগণ ঈর্ষান্বিত হইয়া ঘোরতর রূপে তাহার বিরুদ্ধাচরণ করিয়া ছিল এবং এমন কি, তজ্জন্য তাহারা গবর্ণমেন্টের সাহায্যে তাহাকে নিৰ্বাসিত করিতেও ত্রুটি করে নাই। যাহা হউক, তাহাদের শত্রুতাচরণ সত্বেও এই বিদ্যা চর্চায় তাহার অসাধারণ সাফল্য লাভ দেখিয়া জন সাধারণ তাহার প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট হইয়াছিল এবং কয়েক জন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ইহা শিক্ষার জন্য তাহার শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন। তাহার সময় হইতেই তাহার শিষ্য ও অনুসরণকারিগণের দ্বারা এই ম্যানিমেল ম্যাগ্নেটিজম বিদ্যা “মেস্মেরিজম” নামে অভিহিত হয়। উহার পরে আবার ম্যানচেষ্টার নিবাসী ডাক্তার ব্রেড, (Dr. Braid of Manchester) এই বশীকরণ বিদ্যাকে “হিপ্নোটিজম” নামে আখ্যা প্রদান করেন। কিন্তু ডাক্তার ব্রেইএর আবিষ্কৃত হিপ্নোটিজম বিদ্যা মেস্মেরিম বা ম্যানিমে ম্যাগ্নেটিজ্ম এর সদৃশ হইলেও উহা ভিন্ন জিনিষ। কারণ উহাদের সিদ্ধান্ত এবং ব্যবহার প্রণালী হইতে হিপ্নোটিজম এর সিদ্ধান্ত ও ব্যবহার প্রণালী স্বতন্ত্র। ব্রেইড, নিজেও তাহার হিপ্নোটিজকে স্বতন্ত্র বিদ্যা বলিয়া স্বীকার করতঃ যানিমেল ম্যাগ্নেটিজম বা মেসমেরিজম এর পার্শ্বে উহার স্থান নির্দেশ করিয়া গিয়াছেন।
অ্যানিমেল ম্যাগ্নেটিজম বা জৈব আকর্ষণী বিদ্যা সম্বন্ধে সংক্ষেপে ডাক্তার মেমারের মত এই যে, একটি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তরল পদার্থ, যাহা মনুষ্য শরীর হইতে বিনির্গত হইয়া থাকে, তাহা পাস বা হাত বুলান (pass), মোহিনী দৃষ্টি ও একাগ্রতা দ্বারা মনুষ্য শরীরে নিক্ষিপ্ত হইলে, তাহাকে মোহিত বা বশীভূত করিতে পারে।
ন্যান্সীমতবাদিগণ (The School of Nancy) বলেন যে, “আদেশ” বা “ইঙ্গিত”ই (suggestion) মেসমেরিজম বা হিপ্নোটিজম দ্বারা উৎপাদিত ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য ব্যাপার সমূহের (phenomena) মূল কারণ; এই ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য রূপ সকল যথার্থরূপে কোন না কোন রকমের মানসিক ক্রিয়ার বিকাশ।
আর, ডাক্তার ব্ৰেইড এর মত (The School of Charcot) উপরোক্ত দুই মত হইতে স্বতন্ত্র। তিনি বলেন যে, মোহিতাবস্থা ম্যাগে টিজম বা আদেশের ফল নহে, ইহা হিষ্টিরিয়া বা মূচ্ছার ন্যায় এক প্রকার রোগ বিশেষ এবং ইহা দুৰ্বল স্নায়ু বিশিষ্ট লোকের উপরই খুব সহজে উৎপাদিত হইয়া থাকে।
অতএব মোহিতাবস্থা উৎপাদনের নিমিত্ত এই সকল বিভিন্ন মতাবলম্বী সম্মোহনতত্ত্ববিদগণ যে সকল নিয়ম-প্রণালী ব্যবহার করিতে উপদেশ দিয়াছেন, শিক্ষাভিলাষীকে এই বিদ্যা হাতে-কলমে শিক্ষা করিতে উহাদেরই অনুসরণ করিতে হইবে।
ম্যাগ্নেটিক্ হিলিং, সাইকোথেরাপিউটিক্স, সার্জেটিভ থেরাপিউটিক্স, স্পিরিচুয়াল হিলিং, ক্রিশ্চিয়ান্ সায়েন্স, ফেইথ কিওর (Magnetic Healing, Psycho-Therapeutics, Suggestive Therapeutics, Spiritual Healing, Christian Science, Faith Cure) ইত্যাদি বিষয়গুলি রোগ চিকিৎসা বিষয়ক। এই সকল প্রণালী দ্বারা ভেষজ বা ঔষধ ব্যতিরেকে নানা প্রকার রোগ আরোগ্য করা যায়। এই বিষয়গুলি নামে বিভিন্ন হইলেও মূলতঃ প্রায় একই রকমের চিকিৎসা। ইচ্ছাশক্তি পূর্ণ আদেশ, হাত বুলান ও পাস এই তিনটিই উহাদের মূল বিষয়।
জড় দর্শনেন্দ্রিয়ের সাহায্য ব্যতিরেকে মনশ্চক্ষু দ্বারা ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্তমানের বস্তু বা ঘটনা দর্শন বা প্রত্যক্ষ করাকে “দিব্যদৃষ্টি”, “দিব্যদর্শন”, “অতীন্দ্রিয় দর্শন” (Clairvoyance or Second Sight) বলে।
সকল মনুষের হৃদয়েই প্রকৃতি দত্ত এই দিব্যদৃষ্টিশক্তি (clairvoyant power) অল্পাধিক পরিমাণে নিহিত আছে। যাহাদের মধ্যে স্বভাবতঃ ইহার পরিমাণ অধিক তাহার অল্প চেষ্টাতেই এই শক্তিকে আয়ত্ত করিতে পারে। আবার কাহারও বা জ্ঞানের অগোচরে—কেবল প্রকৃতির অনুগ্রহেই ইহা লাভ হইয়া থাকে। এই শ্রেণীর আত্মিক সংবেদ্য ব্যক্তিগণ (psychically susceptible persons) কোন দক্ষ সম্মোহনবিদের সাহায্যেও এই শক্তিকে সমধিক পরিমাণে বদ্ধিত করিয়া লইতে পারে। মিথ্যা-প্রবঞ্চনা, ছল-চাতুরী, হিংসা-দ্বেষ ইত্যাদিকে অনভ্যস্ত এবং পবিত্র ও সৎভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে সচরাচর যাহাদের দৃষ্ট স্বপ্ন সত্য হয় (অর্থাৎ ফলে), সাধারণতঃ তাহাদের হৃদয়েই এই শক্তি অধিক পরিমাণে বর্তমান থাকে। তাহারা আহার-বিহার ইত্যাদিতে সংযমী হইয়া উপযুক্ত প্রণালীতে সাধনা করিতে পারিলে অল্প সময়ের মধ্যেই ইহাকে বিকশিত করিতে পারে। মনের যে সকল নিজস্ব ক্ষমতা (psychic powers) আছে, উহাদের মধ্যে ইহা একটি প্রধান শক্তি। ইহার সাহায্যেই আৰ্য-ঋষিগণ ত্রিকালের সংবাদ বলিতে পারিতেন। দিব্যদৃষ্টির অনেক প্রকার রূপ বা অবয়ব (phases) আছে।
ক্রিষ্টেল (Crystal) এক প্রকার উৎকৃষ্ট শ্রেণীর স্বচ্ছ কাচ বিশেষ। “ক্রিষ্টেল গেইজিং” (Crystal Gazing) অর্থে একটি নির্দিষ্ট প্রণালীতে উক্ত কাচ খণ্ডের প্রতি দৃষ্টি ক্ষেপন বুঝায়। ইহা ‘নখ দর্পণের’ ন্যায় একটি বিষয়। কোন বস্তু বা বিষয় সম্বন্ধে কোন অতীত কালে যাহা কিছু ঘটিয়াছে, বা কোন দূরবর্তী স্থানে বর্তমানে যাহা ঘটিতেছে, কিম্বা কোন ভবিষ্যৎ কালে যাহা সংঘটিত হইবে, উহার চিত্র ক্রিষ্টেলে প্রতিবিম্বিত হইয়া থাকে। সুতরাং ইহাও দিব্যদৃষ্টির মত একটি বিষয়। সকল লোক ক্রিষ্টেল গেইজিং এর অভ্যাসে সফলকাম হয়না। যাহাদের আত্মিক সংবেদনা (psychic susceptibility) স্বভাবতঃ অধিক, কেবল তাহারাই ক্রিষ্টেলের মধ্যে নানা প্রকার চিত্রাদি দর্শন করিতে সমর্থ হইয়া থাকে; অপরাপর ব্যক্তিরা উহাতে কিছুই দেখিতে পায় না। ইহা দ্বারা চুরি, ডাকাতি, হত্যা, ব্যভিচার ইত্যাদি দুষ্কৰ্ম্মকারিগণের প্রতিকৃতি বা কোন দূরস্থ রোগী বা ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা ইত্যাদি সঠিকরূপে প্রত্যক্ষ করা যায়।
যে বিজ্ঞান অপরের মনের কথা বা চিন্তা জানিতে বা পাঠ করিতে শিক্ষা দেয়, উহাকে “মাইণ্ড-রিডিং”, “থট্-রিডিং”, বা “থট্-ট্রান্সফারেন্স” (Mind-reading, Thought-reading, or Thoughttransference) বলে। “বাঙ্গলায়” এই বিজ্ঞানকে “চিন্তা-পঠন বিদ্যা” বলিয়া আখ্যা দেওয়া হইয়াছে। চিন্তা-পঠন দুই প্রকার; “স্পর্শ যুক্ত” ও “স্পর্শ হীন”। স্পর্শ যুক্ত চিন্তা-পঠনকে ইংরাজীতে “মাস-রিডিং” (Muscle-reading); আর স্পর্শ হীন চিন্তা-পঠনকে “টেলিপ্যাখি” (Telepathy) বা “ট্রান্সফারেন্স” (Thought-transference) বলে। মাসল-রিডিং সহজ কিন্তু টেলিপ্যাথি কঠিন বিষয়। টেলিপ্যাথিতে বহু দূর স্থান হইতে দুই ব্যক্তি পরস্পরের মধ্যে টেলিগ্রাফের ন্যায় সংবাদ আদান-প্রদান করিতে পারে। এজন্য কেহ কেহ ইহাকে “মেণ্টেল টেলিগ্রাফি”(Mental Telegraphy) বলিয়াও অভিহিত করিয়াছেন।
নিদ্রিতাবস্থায় ভ্রমণ করাকে স্বপ্ন-সঞ্চরণ” বা “স্বপ্নভ্রমণ (somnumbulism) বলে। উক্তাবস্থা প্রাপ্ত ব্যক্তিকে “স্বপ্নভ্রমণকারী” (somnumbulist) বলিয়া অভিহিত করা হয়। ইহা এক প্রকার রোগ বিশেষ। নিদ্রাকালীন অত্যধিক মানসিক উত্তেজনা বশতঃ এই রোগ উৎপন্ন হইয়া থাকে। এই রোগাক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমন্ত অবস্থায় শয্যা ত্যাগ করতঃ জাগ্রত মানুষের ন্যায় লিখন, পঠন, গান, ভ্রমণ ইত্যাদি কাৰ্য্য করিয়া থাকে এবং জাগ্রত হওয়ার পর তাহার আর উহা স্মরণ থাকে না। এই অবস্থা, মোহিত ব্যক্তির মনে সম্মোহন আদেশের সাহায্যে অতি সহজে উৎপাদিত হইতে পারে।
জড় শ্রবণেন্দ্রিয়ের সাহায্য ব্যতিরেকে কেবল মন শক্তি দ্বারা দূরস্থ কোন লোকের বা পরলোকবাসী সূক্ষ্মদেহিগণের কথা-বার্তা শ্রবণ করার শক্তিকে “দিব্যশ্রুতি বিদ্যা” (Clairaudience) বলে।
মনের যে শক্তি বলে (জড় ত্বকেন্দ্রিয়ের মধ্যবর্তিতায় কোন পদার্থের প্রকৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি অবগত হওয়া যায়, উহাকে “দিব্যানুভূতি” (Psychometry) বলা যায়। ইহাও দিব্যদৃষ্টির ন্যায় একটি বিষয়। দিব্যানুভূতি শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ কোন একটি বস্তু স্পর্শ দ্বারা উহা কি, কোথায় জন্মিয়াছে, কোথা হইতে আসিল, কাহার নিকট আছে এবং তাহার ধাতু-প্রকৃতি-চেহারা কি রূপ, সে সম্বন্ধে যাবতীয় বিষয় যথার্থরূপে বর্ণনা করিতে পারে। ইহা দ্বারা লাভ জনক তাম্র, অভ্র, কয়লা ইত্যাদির খনি আবিষ্কৃত, জটিল রোগ সমূহের কারণ নির্ণীত, আদিম কালের বা প্রাগৈতিহাসিক যুগের নানা প্রকার জীব-জন্তুর আকৃতি-প্রকৃতি এবং আরও অনেকানেক তত্ত্ব প্রকটিত হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। এই শক্তি বলে খামে-বদ্ধ চিঠি-পত্রের সংবাদ কিংবা রুদ্ধ পুস্তকাদির অংশবিশেষও কেবল বাহ স্পর্শ দ্বারা অবগত হওয়া যায়।
পারসনেল ম্যায়েটিজম (Personal Magnetism) অর্থে ইহা উপলব্ধি হয় যে, মনুষ্য-শরীরে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম যে একটি তরল পদার্থ (odyleor life-force etc.) বিদ্যমান আছে, উহা দ্বারা এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তির বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, ভালবাসা ইত্যাদি আকর্ষণ ও তাহার জ্ঞানের অগোচরে তাহার মনের উপর আধিপত্য করিতে পারে। ইহাকে “ব্যক্তিগত আকর্ষণী শক্তি” বলিয়া অভিহিত করা যাইতে পারে। এই আকর্ষণী শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিগণ স্বীয় স্বীয় কর্মক্ষেত্রে অপরাপর ব্যক্তি অপেক্ষা অনেক বেশী পরিমাণে সাফল্য লাভে সমর্থ হইয়া থাকে।
“উই পাওয়ার”, “উইল ফোর্স” (will-power or willForce) বা “ইচ্ছা শক্তি”কে ‘হৃদয়ের গভীরতম আকাঙ্ক্ষা বা কামনা’ বলিয়া অভিহিত করা যায়। এই শক্তির প্রভাব অতি অদ্ভুত। সাধনা বলে এই শক্তিকে সমধিক পরিমাণে বর্ধিত বা বিকশিত করিতে পারিলে, মানুষ ইহা দ্বারা বহু প্রকার কঠিন কাৰ্য, এমন কি অসাধ্য সাধন করিতে পারে। সকল নর-নারীর হৃদয়েই প্রকৃতি-দত্ত এই শক্তি-কণা নিহিত আছে এবং উপযুক্ত সাধনায় সমর্থ হইলে সকলেই উহাকে অল্প বা অধিক পরিমাণে বর্ধিত করিতে পারে।* (* মৎ প্রণীত “ইচ্ছাশক্তি” পুস্তকে এই শক্তি বর্জনের সরল পন্থা প্রদর্শিত হইয়াছে।)
বিশেষ কোন উচ্চারিত বাক্য বা অঙ্গ-ভঙ্গী কিম্বা চিন্তা দ্বারা কাহারও মনে আবেগ” বা “বিশ্বাস” জ্ঞাপন করার নাম “সাজেশন বা কমাণ্ড” (Suggestion or Command) এই শব্দদ্বয়কে যথাক্রমে ‘ইজিত’ বা ‘আদেশ’ বলিয়া অনুবাদ করা হইয়াছে; এবং হিরোটি সাজ্জোনকে (hypnotic suggestion) সম্মোহন আদেশ’ বা সংক্ষেপে কেবল ‘আদেশ’ (command) বলিয়া অভিহিত করা।
ব্যক্তি বিশেষকে সম্মোহিত করিতে বা তাহার কোন রোগ আরোগ্য করিতে তাহার শরীরে যে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে হাত বুলাইতে হয়, উহাকে “পাস করা” (pass) বা “হাত বুলান” বলে।
যাহাকে হিপ্নোটিজম বা মেসমেরিজমের কোন পরীক্ষায় অভিভূত অর্থাৎ সম্মোহিত বা মোহিত করা হয়, তাহাকে “পা”, “মোহিত ব্যক্তি”, “সম্মোহিত,” (subject, sensitive, medium, hypnotee) ইত্যাদি বলে। প্রেততত্ত্ববাদিগণ তাহাকে “মধ্যবর্তী বা “আবিষ্ট” বলিয়াও অভিহিত করেন।
পরলোকবাসী সূক্ষ্মশরীরিগণের সঙ্গে সংবাদ আদান-প্রদান করিবার জন্য সহানুভূতি বিশিষ্ট স্বল্প সংখ্যক লোক লইয়া যে একটি সভা করা হয়, উহাকে “বৈঠক” বলে। ইংরাজীতে উহাকে “সার্কেল”, “সিটিং” বা “সিয়াঙ্গ” (circle, sitting, or seance) বলে।
সব অদ্ভুতুড়ে