প্রথম অধ্যায় – রান্নার প্রস্তুতি
যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, কাজের ধারা এবং খাওয়ার রুচিরও পরিবর্তন হয়ে আসছে। সৃজনশীল মানুষ রান্নাকে বই পুস্তকের আওতায় এনে রন্ধনজ্ঞানের সীমা বিস্তৃত করেছে। এ সঙ্গে প্রচলন হয়েছে রেসিপির। রেসিপি এমন একটি রন্ধন সম্বন্ধীয় তালিকা যা পড়ে অনায়াসে খাবার প্রস্তুত করা যায়। পরবর্তী অধ্যায়গুলিতে পানীয়, সুপ, সালাদ, মিস্টানন, মাছ, মাংস ও সবজি দিয়ে তৈরি বিভিন্নরকম খাবার প্রস্তুতের রেসিপি দেয়া হয়েছে।
রেসিপি
রান্নার রেসিপিতে উপকরণের মাপ এবং কিভাবে রান্না করতে হবে তা লেখা থাকে। রেসিপি দেখে রেসিপির মাপে রান্না করলে জিনিসের অপচয় হয় না। কতজন খেতে পারবে সেই পরিবেশন সংখ্যাও রেসিপিতে উল্লেখ থাকে। তাছাড়া রেসিপি দেখে নুতন খাবার রান্না করা যায়। খাবার কিভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে সে নির্দেশও রেসিপিতে দেয়া হয়।
রান্না করার জন্য কিরূপ প্রস্ততির প্রয়োজন :
(১) রেসিপি পড়ে ঠিকভাবে বুঝে নিতে হবে।
(২) রেসিপিতে যে সব উপকরণ দেয়া হয় তা ব্যবহার করতে হবে।
(৩) উপকরণ সাবধানে এবং সঠিকভাবে মাপতে হবে।
(৪) রেসিপিতে রান্নার যে কৌশলের উল্লেখ থাকে সে কৌশল অবলম্বন করতে হবে।
(৫) খাদ্য প্রস্ততে উপযুক্ত পাত্র ব্যবহার করা, সঠিক তাপে রান্না করা, পানি মাপ মতো দেয়া এবং হাঁড়ির মুখ খোলা রেখে বা বন্ধ করে রান্না করার বিষয়সমুহ মনোযোগ দিয়ে অনুসরণ করতে হবে।
(৬) রান্না শেষে সময় মতো চুলা থেকে নামাতে হবে।
(৭) রেসিপির নির্দেশ মতো খাবার ঠান্ডা বা গরম এবং বিভিন্ন সস ও চাটনি ইত্যাদি সহযোগে নানা উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
রেসিপি বুঝার নির্দেশ
রেসিপি বুঝতে হলে খাদ্যের মাপ ও ওজন, রান্নার সরঞ্জম, রান্নার কৌশল, বিভিন্ন পদ্ধতিতে রান্না, রান্নার উপকরণ ও মসলা এবং বিনিময় বা বিকল্প খাদ্য ইত্যাদি কয়েকটি বিষয় সম্বন্ধে আগেই পড়ে জেনে নিতে হবে।
এ বইয়ের রেসিপি হতে কিছু কিছু অংশ উদ্ধত করে বুঝিয়ে দেয়া হলো :
(১) মাংস, টুকরা – ১ কেজি
(২) চিংড়িমাছ, খোসা ছাড়ানো – ১/২ কেজি
(৩) পেঁয়াজ, কুচি – ১ টে.চামচ
(৪) আলু, স্লাইস – ৪ টি
(৫) আম, ফালি – ২ টি
(৬) মরিচ, বাটা – ১ চা চামচ
(৭) দারচিনি, ২ সে.মি. লম্বা – ২ টুকরা
(৮) পাউরুটি, ২ সে.মি. পুরু – ৩ স্লাইস
১নং- এক কিলোগ্রাম মাংস টুকরা করে নেয়া বুঝায়।
২নং- চিংড়িমাছ খোসা ছাড়িয়ে আধা কাপ মেপে নেয়া্ বুঝায়।
৩নং- পেঁয়াজ কুচি করে ১ টেবিল চামচ নিতে হবে।
৪নং- চারটি আলু খোসা ছাড়িয়ে স্লাইস করে কাটতে হবে।
৫নং- দুটো আম খোসা ছাড়িয়ে j¤^v টুকরা করতে হবে।
৬নং- বাটা মরিচ ১ চামচ নেয়া বুঝায়।
৭নং- ২ সে.মি. লম্বা ২ টুকরা দারচিনি এবং
৮নং- ২ সে.মি.পুরু ৩ স্লাইস পাউরুটি বুঝায়।
রান্নার প্রস্ততি
রেসিপি বুঝতে যাতে অসুবিধা না হয় সেজন্য রান্নার জ্ঞাতব্য বিষয়গুলো সহজভাবে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে মাপ ও ওজনের সাংকেতিক চিহ্ন (যেমন টে.চা.কেজি) রান্নার কৌশল, রান্নার পদ্ধতি, রান্নার তৈজসপত্র, তাপ, মসলা ইত্যাদি বিষয়গুলো পড়ে বুঝে নিতে হবে। রেসিপি বুঝে ঠিক মাপে এবং ঠিক পদ্ধতিতে রান্না করা একান্ত দরকার। তবে লবণ, চিনি এবং ঝাল ও মসলা ব্যবহারে নিজের পছন্দমতো মাপে কম বা বেশি করা যেতে পারে। চুলার তাপ বেশি বা কম হলে পানির পরিমাণে তফাৎ হয়। এ অবস্থায় নিজের বিবেচনায় পানির পরিমাণ বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে। রেসিপিতে যে পরিমাণ দেয়া আছে তার চেয়ে দ্বিগুণ/ তিনগুণ খাবার তৈরি করতে হলে উপকরণের পরিমাণগুলো ২, ৩, …. দিয়ে গুণ করে নিতে হবে। আবার কম করতে চাইলে ২, ৩ ….. দিয়ে ভাগ করতে হবে।
রান্নার সরঞ্জাম ও তৈজসপত্র
মাপার সরঞ্জাম
চা চামচ, টেবিল চামচ, এক কাপ, আধা কাপ ইত্যাদি সরঞ্জাম মাপার কাজে ব্যবহার করা হয়। মাপার জন্য যে কাপ ব্যবহৃত হয় তা বড় চায়ের কাপ এর সমান।
মাপার সরঞ্জাম : (১) তরল জিনিস মাপার কাপ, (২) শুকনা জিনিস মাপার কাপ, (৩) একসেট মাপার চামচ, (৪) সমান করার ছুরি।
কাটার সরঞ্জাম :
ছুরি, বটি, কুরুনি, শিলনোড়া, বিস্কুট কাটার নক্সা, ডোনাট কাটার, কিমার মেশিন ইত্যাদি সরঞ্জাম দিয়ে খাদ্য নানা ভাবে কাটা হয়, কুরানো হয় এবং বাটা হয়।
সবজি কুরুনি (grater) : নারিকেল কুরুনি ছাড়াও বাজারে সবজি কুরুনি বিক্রি হয়। সবজি কুরুনি টিনের তৈরি, এতে অনেক ছিদ্র থাকে। ছিদ্রগুলি ধারাল থাকে বলে সবজি কুরিয়ে নেয়া যায়। ছোট ছিদ্রের কুরুনিতে মিহি কুরানো হয় এবং বড় ছিদ্রের কুরুনিতে মোটা করে বা ঝুরি করে কুরানো যায়। লাউ দুধ রান্নার জন্য লাউ কুরিয়ে নেয়া হয়, আবার মার্মালেডের জন্য গাজর, আম ঝুরি করে কুরিয়ে নিতে হয়।
বিস্কুট কাটার নক্সা : বিস্কুটের খামির বেলে কাটার জন্য টিনের তৈরি নানা আকারের নক্সা পাওয়া যায়। এই নক্সাগুলি গোল, চারকোণা, তিনকোণা, বরফি, তারা, ফুল, মাছ ইত্যাদি আকারের হয়। এই নক্সাগুলির চারধার সমান বা ঢেউ খেলানো থাকে। যে দোকানে টিন কাটা হয় সেখানে নক্সা দেখিয়ে বিস্কুট কাটার নক্সা তৈরি করে নেয়া যায়।
ডোনাট কাটার : এ টি ৭. ৬ সে. মি.ব্যাসের একটি বিশেষ রকম গোলাকার নক্সা। এর মাঝখানে ছোট আর একটি গোলাকার টিন আটকানো থাকে, তাই ডোনাটের মাঝের অংশ কেটে বাদ যায় ফলে ডোনাট ভাজার পর মাঝে ছিদ্র হয়। পরবর্তী অধ্যায়ে ডোনাটের রেসিপি দেয়া হয়েছে।
মিশাবার সরঞ্জাম
রান্না করার সময় নানারকম খাবার একসাথে মিশাবার জন্য, চামচ, ঘুটনি, বিটার, চালনী, গামলা খঞ্চা ইত্যাদি সরঞ্জামের ব্যবহার হয়।
এগ বিটার / হুইস্ক (whisk) : ডিম ফেটাবার জন্য এগ বিটার এবং হুইস্ক ব্যবহার করা হয়। মেরাং, মেয়নেজ হুইস্ক দিয়ে করা যায়।
ফুলঝুরি : বিস্কুট কাটার নক্সার মতো টিনের তৈরি নক্সা। এই নক্সা ৩০ সে.মি. লম্বা মোটা তারে আটকানো থাকে। ব্যবহারের সময় প্রথমে ফুলঝুরি নক্সা গরম তেলে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তেল থেকে তুলে গোলানো ময়দায় নক্সাজ ৩/৪অংশ ডুবিয়ে সাবধানে তুলে নিয়ে আবার চুলার উপর গরম তেলে ডোবাতে হবে। গরম তেলে পিঠা ফুলে উঠলে ফুলঝুরির মোটা তার ধরে আস্তে আস্তে ঝাঁকিয়ে পিঠা ছাড়িয়ে ফুলঝুরি তুলে নেবে। ফুলঝুরি নক্সা গোলানো ময়দায় সম্পূর্ণ ডুবাতে হয় না। সম্পুর্ণ ডুবালে পিঠা ফুলঝুরিতে আটকে যাবে। অষ্টম অধ্যায়ে ফুলঝুরি পিঠার রেসিপি দেয়া হয়েছে।
ছাঁচ (মোল্ড) : এ্যালিউমিনিয়াম, টিন অথবা কাঁচের তৈরি নানা আকারের মোলডে খাঁজ কাটা নক্সা করা থাকে। ভাপের পুডিং তৈরির জন্য মোলড ব্যবহার হয়। মোলডে জেলাটিন সবজি ও ফল দিয়ে তৈরি সালাদ জমানো যায়।
বেকিং এর সরঞ্জাম
তন্দুর বা ওভেনে পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, প্যাটিস, ক্রিমরোল, পাই এসব খাবার বেক করার জন্য নানা আকারের পাত্রের দরকার। ঠিক মাপ ও সঠিক আকারের পাত্র না হলে কেক, পাউরুটি ভাল বেক হয় না। বেকিং এর পাত্র টিন অথবা এ্যালিউমিনিয়াম অথবা ওভেন প্রেুফ কাঁচ দিয়ে তৈরি।
কেকের পাত্র (কেক প্যান) : নানা রকম কেক বেক করার জন্য গোলাকার, আয়তাকার, বর্গাকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের পাত্র ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া নক্সা করা পাত্রেও কেক বেক করা যায়। পাউরুটির পাত্র সাধারণত আয়তাকার হয়ে থাকে।
মাফিন প্যান : ছয়টি বা বারটি পেয়ালা বসানো মাফিন প্যান টিন অথবা এ্যালিউমিনিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। মাফিন, কাপকেক, টার্টপেস্ট্রি ও ডিনার রোল বেক করার জন্য এটি বিশেষ ধরনের পাত্র।
বেকিং ট্রে ও শিট : টিনের বা এ্যালিউমিনিয়ামের তৈরি বেকিং ট্রে ও শিট বর্গাকার বা আয়তাকার হয়। বেকিং ট্রের চারধার ২.৫ সে.মি.উঠানো থাকে। জ্যাম রোল বেকিং ট্রেতে বেক করা হয়। বিস্কুট, ক্রিমরোল, প্যাটিস এসব বেকিং শিটে বেক করা সুবিধাজনক।
পাইপ্যান : এটি বিশেষ আকারের গোলাকার পাত্র, চারধার সামান্য উচু ও ঢালু। এতে পাই বেক করা হয়।
পেস্ট্রিব্রাশ : বেকিং এর কাজে ব্যবহার করার জন্য এটি একধরনের মোটা তুলি। রং দেয়ার মোট তুলিও পেস্ট্রিব্রাশ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। মুরগীর পালক বা পাট দিয়ে ব্রাশ তৈরি করা যায়। পেস্ট্রেব্রাশের সাহায্যে বিস্কুট, পাউরুটি, প্যাটিস এর উপর ফেটানো ডিমের প্রলেপ দিয়ে ওভেনে দেয়া হয়।
পাইপিং ব্যাগ : মোটা কাপড়ের তৈরি কোণাকৃতি ব্যাগ। পাইপিং ব্যাগের সঙ্গে টিনের তৈরি বিভিন্ন রকম নক্সা থাকে। ব্যাগের কোণাকৃতি মুখে এই নক্সা আটকে কেক, বিস্কুট বা পুডিং সাজান হয়। আজকাল প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি কেক সাজাবার সরঞ্জাম পাওয়া যায়। ট্রেসিং পেপার দিয়ে পানের খিলির মত তৈরি করে, সুচাকৃতি মুখ কাঁচি দিয়ে কেটে নিয়ে পাইপিং ব্যাগের মতো ব্যবহার হয়। পাইপিং ব্যাগে লেমন ক্রিম, মাখন ক্রিম বা মেরাং ভরে ব্যাগে চাপ দিয়ে নক্সা করার কৌশল আয়ত্ত্ব করে নিতে হবে। কাঁচা হাতে কেক সুন্দর করে সাজাতে না পারলেও কয়েকদিনের অভ্যাসে হাত পাকা হয়ে যায়।
পাইরেক্স ডিস : বিশেষ ভাবে তৈরি এই কাচের পাত্র তাপে নষ্ট হয় না। ওভেনে বেক করার জন্য এই পাত্র ব্যবহার করা হয়। এতে পুডিং, সুফলে, মেকারনি চিজ ইত্যাদি বেক করা যায়।
ক্রিম রোলের ছাঁচ : ১৫ সে. মি. j¤^v ও ১ সে. মি. ব্যাসের গোলাকার কাঠে ক্রিম রোল পেঁচানো হয়। এই সরঞ্জাম কাঠের পরিবর্তে টিন দিয়েও তৈরি হয়। টিনের রোলারের একপ্রান্ত মোটা এবং অপর প্রান্ত অপেক্ষাকৃত কম মোটা হয়।
উনুনে রান্না করার সরঞ্জাম :
হাঁড়ি, সসপ্যান, কড়াই, ফ্রাইপ্যান, তাওয়া, প্রেসার কুকার ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের পাত্রে বিভিন্ন রকম রান্না হয়। এ্যালিউমিনিয়ামের পাত্রেই রান্নার প্রচলন বেশি। লোহার কড়াই এবং তামার ডেগচিতে টক খাবার রান্না করা উচিত নয়।কালাই ছাড়া তামার ডেগচিতে রান্না খাবারে ক্ষতি করে।
প্রেসার কুকার : প্রেসার কুকার ষ্টেনলেস স্টীলের তৈরি বেশ মজবুত হাঁড়ি। ঢাকনার ভিতরের দিকে রবার বসান থাকায় হাঁড়ির মুখ এমন ভাবে বন্ধ হয় যে বাষ্প বের হতে পারে না, ফলে হাঁড়ির ভিতরের বাষ্পের চাপে তাপ বৃদ্ধি পায় ও রান্না তাড়াতাড়ি হয়। প্রেসার কুকারের ঢাকনায় প্রেসারের চাকতি বসাবার জন্য ছিদ্র থাকে। ঢাকনার ছিদ্র দিয়ে বাস্প বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসারের চাকতি বসাতে হয় এবং রেসিপির সময় অনুযায়ী চুলা থেকে নামাতে হয়। প্রেসার কুকার ঠান্ডা করার পর ঢাকনার মুখ খোলা উচিত। মাংস, ডাল, সবজি প্রেসার কুকারে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। প্রেসারে ভাপের পুডিং তাড়াতাড়ি জমে, ইলিশ মাছের কাঁটা নরম হয়ে মাছের সাথে মিশে যায়।
রান্নার জ্ঞাতব্য বিষয়
বাংলাদেশে খাদ্যদ্রব্য গ্রাম, কিলোগ্রাম, কুইন্টাল এবং মেট্রিক টন, লিটার ইত্যাদি বিভিন্ন ওজনে বেচাকেনা হয়। কিন্তু রান্নাঘরে খাদ্যদ্রব্য ওজন করে নিয়ে রান্না করা ঝামেলার কাজ। ওজন করার পরিবর্তে মেপে নিলে কাজ সহজ হয়। রান্নাঘরে মাপার জন্য কাপ ও চামচের ব্যবহার সুবিধাজনক। এক কাপ ওজনে ২০০ গ্রামের সমান, এক টেবিল চামচ ১৫ মিলিগ্রামের সমান এবং এক চা চামচ ৫ মিলিগ্রামের সমান।
মেট্রিক পদ্ধতিতে ওজন ও দৈর্ঘ্যের মাপ :
মেট্রিক প্রণালীতে ওজনের একক গ্রাম এবং দৈর্ঘ্যের একক মিটার। এক গ্রাম খুব সামান্য ওজন। অত্যন্ত কম ওজন মিলিগ্রামে এবং বেশি ওজন গ্রাম, কিলোগ্রাম ও কুইন্টালে নেয়া হয়। তরল পদার্থের পরিমাণ লিটারে প্রকাশ করা হয়।
১০০০ গ্রাম = ১ কিলোগ্রাম
১০০ কিলোগ্রাম = ১ কুইন্টাল
১ কেজি = ২.২ পাউন্ড
১ কেজি = প্রায় ১ লিটার
৪ লিটার = ১ গ্যালন
এক কিলোগ্রাম ওজনকে সংক্ষেপে ১ কিলো বা ১ কেজি বলা হয়।
দৈর্ঘ্য মাপার একক
১০ মিলিমিটার = ১ সেন্টিমিটার
১০০ সেন্টিমিটার = ১ মিটার
১০০০ মিটার = ১ কিলোমিটার
মেট্রিক পদ্ধতিতে ওজন নেয়ার জন্য বিভিন্ন মাত্রার বাটখারা আছে। বাটখারার পরিমাণগত মাত্রাগুলো মাত্রাগুলো হচ্ছে- ৫ গ্রাম, ১০ গ্রাম, ২০ গাম, ৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম ও ১০০০ গ্রাম।
মনে করা যাক, বিস্কুট তৈরি করার জন্য কিভাবে ৩৭০ ও ৭৬৫ গ্রাম ময়দা মাপতে হবে। ৩৭০ গ্রাম ও ৭৬৫ গ্রাম মাপার জন্য নিুলিখিত ওজনের বাটখারা নিতে হবে।
যেমন :
৩৭০ গ্রাম = ২০০ গ্রাম + ১০০ গ্রাম + ৫০ গ্রাম + ২০ গ্রাম
৭৬৫ গ্রাম = ৫০০ গ্রাম + ২০০ গ্রাম + ৫০ গ্রাম + ১০ গ্রাম + ৫ গ্রাম
মাপার জন্য এ বইয়ে কয়েকটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে যথা :
চা চা. = চা চামচ
টে চা. = টেবিল চামচ
সে : = সেলসিয়াস
ফা : = ফারেনহাইট
মি. গ্রা. = মিলিগ্রাম
কেজি = কিলোগ্রাম
মি. মি. = মিলিমিটার
সে. মি. = সেন্টিমিটার
বিভিন্ন প্রকার মাপ ও ওজনের তালিকা
কাপের মাপ
৩ চা চা. = ১ টে. চা.
১৬ টে. চা. = ১ কাপ
১ কাপ = ৮ আউন্স
গ্রামের মাপ
১০০০ মি. গ্রাম. = ১ গ্রাম
১০০০ গ্রাম. = ১ কিলোগ্রাম
১০০০ কিলোগ্রাম = ১ মেট্রিক টন
বিভিন্ন ওজন ও মাপের সম্পর্ক
১ চা চা. = ৫ মিলি লিটার
১ টে. চা. = ১৫ মিলি লিটার
১ কাপ = ২৪০ মিলি
১ পাইন্ট = ২.৫ কাপ
সমতুল মাপ
ফা : | সে : | গ্যাসমার্ক | আউন্স | গ্রাম | ইঞ্চি | সে. মি. |
২৫০ | ১২০ | .৫ | ১ | ২৫ | ৮ | ২০ |
২৭৫ | ১৩৫ | ১ | ২ | ৫০ | ৯ | ২৩ |
৩০০ | ১৫০ | ২ | ৩ | ৭৫ | ১০ | ২৫ |
৩২৫ | ১৬০ | ৩ | ৪ | ১০০ | ১৫ | ৩৮ |
৩৫০ | ১৮০ | ৪ | ৮ | ২২৫ | ২০ | ৫০ |
৩৭৫ | ১৯০ | ৫ | ১০ | ২৭৫ | ||
৪০০ | ২০০ | ৬ | ১৬ | ৪৫০ | ||
৪২৫ | ২২০ | ৭ | ||||
৪৫০ | ২৩০ | ৮ |
ওভেনে বেক করার জন্য বিভিন্ন মাত্রার তাপ
তাপ | সেলসিয়াস (সেঃ) | ফারেনহাইট (ফাঃ) | খাবার |
অতিমৃদু | 120º | 250º-275º | মেকারুন |
মৃদু | 160º | 300º-325º | পুডিং, মিটলোফ |
মধ্যম | 180º | 350º-375º | নানখাতাই, জ্যাম বিস্কুট, কেক, মেকারনি চিজ |
উচ্চ | 210º | 400º-425º | বিস্কুট, পাউরুটি, মাফিন, পিৎজা, পাই |
অতিউচ্চ | 320º | 450º-475º | ক্রিম পাফ, একলেয়ার |
রান্নার উপকরণ মাপার পদ্ধতি
শুকনা খাদ্য মাপা
চাল, আটা, ময়দা, চিনি, বেকিং পাউডার, গুঁড়া মসলা ইত্যাদি শুকনা খাদ্য কাপ বা চামচ দিয়ে মাপতে হলে মাপার পাত্রে উপকরণ হালকাভাবে ভরতে হবে। তারপর ছুরি বা কাঠি দিয়ে পাশের চিত্রের ন্যায় পাত্রের মুখ সমান করে দিতে হবে। কাপ ঠেসে উঁচু করে ভরলে সব সময়ে সমান মাপ হয় না। কেক, বিস্কুট, প্যানকেক ইত্যাদি যেসব খাবারে বেকিং পাউডার ব্যবহার করা হয় সেই সব খাবার প্রস্তুত করার সময় উপকরণের মাপ ভুল হলে খাবার ভাল হয় না। চপ, কাটলেট, কালিয়া, কোরমা, পোলাও, পিঠা সব রান্নার জন্যই উপকরণ মেপে নেয়া প্রয়োজন।
তরল ও নরম খাদ্য মাপা
রান্নাঘরে তেল, ঘি, ডালডা, দুধ, দই, সিরকা, বাটা মসলা, সস ইত্যাদি কাপ ও চামচ দিয়ে মাপা যায়। বেশি পরিমাণে মাপার জন্য লিটারের পাত্র ব্যবহার করা যায়। আবার কোনও হাড়ি, গামলা, মোলড ইত্যাদি পাত্রের মাপ জানা না থাকলে পাত্রটি পানি দিয়ে ভরে সেই পানি কাপ দিয়ে মেপে নিলে পাত্রটির মাপ জানা যায়। তরল খাদ্য মাপার জন্য পাইন্ট এবং গ্যালনের পাত্রও ব্যবহার করা হয়।
রান্নার কৌশল
রান্নার প্রতি স্তরে সতর্ক ও যত্নবান হলে ভাল খাবার তৈরি করা যায়। ভাল খাবার তৈরির জন্যে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা প্রয়োজন। খাদ্য প্রস্ততের কতগুলি কলাকৌশল আয়ত্ত করতে পারলেই দক্ষতা অর্জন করা যায়। রান্নার জন্য যেমন ভাল সরস উপকরণ চাই তেমনি সেগুলি কিভাবে ধুয়ে, কেটে, মিশিয়ে রান্না করতে হবে তাও ঠিকমতো জানা চাই। খাদ্য নানাভাবে কেটে, মিশিয়ে উনানে রান্না করা হয়। ভর্ত্তা, ভাজি, সুক্তা, নিরামিষ, চাওমিন, চপস্যুয়ে এসব বিভিন্ন রান্নায় সবজি ভিন্ন ভিন্নভাবে কাটা হয়। ভাজির জন্য ঝুরি, নিরামিষের জন্য টুকরা, আমচুরের জন্য আম ফালি করে কাটা, আবার চিকেন উইত ভেজিটেবল এই চাইনিজ রান্নার সবজি পাতলা স্লাইস করে কাটার প্রচলিত নিয়মে আমরা অভ্যস্ত। টুকরা, ফালি, স্লাইস, ঝুরি, ছেঁরা, গুড়া এবং বাটা ইত্যাদি কাটার কৌশল। শুধু কাটা নয়, খাদ্য মিশাবার পদ্ধতিও নানা রকমের হতে পারে। নেড়ে মিশান, ঘুটে মিশান, ঘুটে মিসান, ফেটান, বেটে বা চেলে মিশান ইত্যাদি মিশবার বিভিন্ন কৌশল। গুঁড়া খাদ্য চেলে, নরম খাদ্য বেটে এবং তরল খাদ্য ঘুটে মিশান হয়। ডুবোতেলে ভাজার সময়ে বেসনের বা ময়দার গোলায় ডুবিয়ে ভাজা, ডিমে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়ায় গড়িয়ে নিয়ে ভাজার কারণে খাবার সুন্দর বাদামি রঙের হয়, মচমচে হয়। জিরা, সরিষা, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি গরম তেলে ছেড়ে ফোড়ন দিলে খাবারের স্বাদ গন্ধ উন্নত হয়। ফুলকো লুচির ময়দার ময়ান দেয়া, মথা, লুচি বেলা ও ভাজা এই চারটি কৌশলের মধ্যেই ভাল লুচি তৈরির নৈপুণ্য। সুস্বাদু কালিয়া, কোরমা, বিরিয়ানী রান্নার কৃতিত্বে রয়েছে পরিমাণমতো মসলার ব্যবহার করা, কষাণ ও দমে রাখা। এ কাজগুলো বিশেষ কৌশলে দক্ষ হাতে নিপুণভাবে করতে পারলেই ভাল খাবার প্র্স্তত করা যায়। সুতরাং খাবার স্বাদে, গন্ধে, রঙে, রূপে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য রান্নার কৌশলগুলি আয়ত্ত করা দরকার।
ফালি : লম্বায় টুকরা করা। আম, গাজর, কুমড়া ফালি করে কাটা হয়।
স্লাইস : গোল, লম্বা, চারকোণা ইত্যাদি নানা আকারে পাতলা করে কাটা। পেঁয়াজ, আলু, বীট, শসা, পাউরুটি স্লাইস করে কাটা হয়।
কুচি : মাংসের কিমার মতো মিহি করে কাটা। পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনে পাতা কুচি করে কাটা হয়।
কুরানো / ঝুরি : সাধারণত নারিকেল কুরানো হয়। সবজি, কুরুনিতে বিভিন্ন সবজি, ফল কুরিয়ে ঝুরি করা হয়। পাকা আনারস, পেয়ারা, আম পেপে চামচ দিয়ে কুরিয়ে তোলা যায়।
চিরা, চেরা : টুকরা না করে কিছু অংশ কেটে ফাক করা। দোলমার জন্য পটল, করলা চিরে নেয়া হয়।
পোঁচ দিয়ে কাটা : ধারাল ছুরি খাদ্য বস্তর উপর বসিয়ে হালকাভাবে সামনে ও পিছনে চালিয়ে কাটা। কাটবার সময় ছুরি দিয়ে চাপ দিলে ভাল স্লাইস হয় না। পাউরুটি, কেক পোঁচ দিয়ে কেটে স্লাইস করা যায়।
কেঁচা : জোরে এবং তাড়াতাড়ি মিশান। কেক তৈরি করার সময় ডালডা ও চিনি একসাথে ফেটতে হয়। ডিমের সাদা অংশ ফাঁপাতে হলে খুব জোরে এবং তাড়াতাড়ি ফেটতে হবে।
মেরাং : ডিমের সাদা অংশ খুব জোরে ফেটাবার পর বিটার তুললে সূচাল চুড়ার মতো হয় বা জমাট বাঁধা অবস্থায় থাকে। ছবিতে জমাট বাঁধা মেরাং এবং সুচাল চুড়া দেখা যোচ্ছে। মেকারুন, লেমন পাই মেরাং দিয়ে তৈরি। মেরাং ও আইসিং সুগার দিয়ে কেকের জন্য ফুস্টিং তৈরি করা হয়। মেরাং তৈরি করার জন্য সাবধানে ডিম ভেঙে কুসুম ও সাদা আলাদা করে নিতে হবে। সামান্য কুসুম সাদার সাথে মিশে গেলে মেরাং হবে না।
ভাঁজে মিশান : মেরাং অন্য খাদ্যের সঙ্গে ভাঁেজে মিশাতে হয়। অন্য খাদ্যের উপর মেরাং ঢেলে নীচের খাদ্য ২-৩ বার উপরে তুলে ভাঁজে মিশানো হয়। মেরাং কিভাবে ভাঁজে মিশাতে হয় তা পরবর্তী পাতায় ছবিতে দেখান হল। ভাঁজে মিশালে মেরাং টুকরা হয়ে মিশে কিন্ত সম্পূর্ণভাবে ভেঙে মিশে যায় না। সুফলে করার সময়ে মেরাং ভাঁজে মিশান হয়।
মেরিনেটিং : তেল সিরকা বা লেবুর রসের মিশ্রণে খাবার রান্নার আগে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা। এরুপ মিশ্রণের নাম মেরিনেড
ময়ান : ময়দা বা আটার সঙ্গে ঘি, ডালডা বা তেল মিশানো। লুচি, ডালপুরী, নিমকপারা তৈরির জন্য ময়দার ময়ান দেয়া হয়।
মথা : আটা বা ময়দায় পানি মিশিয়ে হাতের তালু দিয়ে ভালভাবে মাখানো।
ছেনে নেওয়া : নরম বা তরল খাদ্য ছাঁকনি অথবা কাপড়ে নিয়ে ছাঁকা।
মচমচে : মচমচে খাবার দু’আঙ্গুলের মধ্যে রেখে চাপ দিলে গুঁড়া হয়ে যায়।
খাদ্য রোদে শুকিয়ে, খোলায় টেলে, বেক করে অথবা তেলে ভেজে মচমচে করা হয়। মুড়ি, টেষ্টি বিস্কুট, সমুসা, পটেটো চিপস্ মচমচে খাবার।
বেরেস্তা : মিহিস্লাইস করা পেঁয়াজ তেল বা ঘিয়ে হালকা বাদামি রং করে ভেজে
বাতাসে ছড়িয়ে রাখলে ঠান্ডা হওয়ার পর মচমচে হয়। এমনি ভাজা মচমচে পেঁয়াজকে বেরেস্তা বলে। বেরেস্তার রং যাতে হালকা হয় সেজন্য ভাজার সময় পেঁয়াজ সামান্য বাদামি রং ধরলেই চুলা থেকে নামিয়ে নাড়তে হবে। বেরেস্তা দিয়ে পোলাও ইত্যাদি সাজানো হয়।
ফোড়ন : মেথি, জিরা, সরিষা, পাঁচফোড়ন ইত্যাদি গরম তেলে ছাড়া।
কষান : রান্না করার সময় খাবারের পানি শুকিয়ে যাওয়ার পর মৃদু আঁছে ঘন ঘন নেড়ে কিছুক্ষণ রান্না করা।
তেলের উপর উঠা : মাংস, হালুয়া কষাবার পর পানি শুকিয়ে তেল দেখা দিলে আমরা বলি তেলের উপর উঠেছে।
দম : রান্না শেষে খুব মৃদু আঁচে ঢেকে রাখা। কোরমা, কালিয়া, রেজালা, দমে রাখলে তেলের উপর উঠে। পোলাও, জরদা দমে রাখলে ঠান্ডা হওয়ার পর ঝরঝরে হয়।
ভাপানো : ফুটন্ত পানি বা বাষ্পের মধ্যে কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নেয়া। অণুজীব ও এনজাইম নষ্ট করার জন্য বরফে জমিয়ে বা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণের সময় খাদ্য ভাপানো হয়।
নির্বীজন করা : খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ছুরি, চামচ, শিশি, বোতল ইত্যাদি ডুবো পানিতে ৩০ মিনিট ফুটিয়ে নেয়াকে নির্বীজন করা বলে। নির্বীজন করার জন্য শিশি, বোতল ডুবো পানিতে দিয়ে চুলায় দিতে হবে। পানি ফুটার বিশ মিনিট পর নামিয়ে পরিষ্কার ট্রের উপর বোতল রেখে সম্পূর্ণভাবে শুকাতে হবে।
প্রক্রিয়াজাতকরণ বা প্রোসেসিং : সংরক্ষণ করার জন্য খাদ্য বোতলে ভরে মুখ বন্ধ করার পর বড় হাঁড়িতে বা প্রেসারকুকারের মধ্যে পানিতে (পানি বোতলের ২ সে.মি.উপরে উঠবে) ডুবিয়ে ধীরে ধীরে কয়েক ঘন্টা ফুটিয়ে প্রোসেস করা হয়। মুখ খোলা স্কোয়াসের বোতল এবং টিনের পাত্র প্রোসেস করার সময় পাত্রের এক তৃতীয়াংশ পানির উপরে থাকে। প্রোসেস করার ফলে ব্যাকটেরিয়া, ঈস্ট মোলড ইত্যাদি অণুজীব এবং এবং এনজাইম ধ্বংস হয়, এতে খাদ্য অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
বায়ুরুদ্ধ করে সীল কার : খাদ্য প্রোসেসিং এর সময় উত্তাপে বোতল বা টিনের পাত্রের জলীয় অংশ বাষ্পীভুত হয়। বাষ্পের উর্ধ্বগতিতে ভিতরের বাতাস বের হয়ে যায়। ভিতরের তাপমাত্র 80º সেঃ হলে সব বাতাসে দুরীভুত হয়। জলীয় বাষ্প সেই শুন্যস্থান দখল করে। ঠিক সেই সময় মেশিনের সাহায্যে বোতল বা পাত্রের মুখ বায়ুরুদ্ধভাবে বন্ধ করে দিলে ভিতরে বায়ু প্রবেশের সুযোগ ঘটে না। বোতল বা পাত্র ঠান্ডা হলে ভিতরে বায়ুশুন্য থাকে। এভাবে বায়ুশুন্য করে অনুজীব বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করা হয়।
বোতলে সংরক্ষণ করা খাবার প্রোসেস করার জন্য বোতলের ঢাকনা বিশেষভাবে তৈরি থাকে বলে বাইরের বাতাসের চাপে ঢাকনা বোতলের সাথে সেটে গিয়ে বোতলের মুখ সীল হয়ে যায়। আমাদের দেশে বোতলে খাদ্য প্রোসেস করার জন্য বিশেষ ধরনের বোতল তৈরি হয় না। বাড়িতে তৈরি জ্যাম জেলী বোতলে ভরার পর ঠান্ডা হলে মোম গালিয়ে বোতলের মুখে ঢেলে দিলে মোমের একটা পাতলা আবরণে খাবার ঢেকে যায়। এতে বোতলের ভিতরে বাতাস ঢুকতে পারে না।
পিকলিং : লবণ এবং সিরকায় কাঁচা ফল, সবজি রেখে নরম করার পরে তেল, মসলা ইত্যাদি উপকরণ সহযোগে আচারের স্বাদ এনে খাদ্য প্রস্তুত করাকে পিকলিং বলা হয়, প্রস্তুত-দ্রব্য পিকেলস নামে পরিচিত। পিকেলস এবং আচার একই ধরনের খাবার।
ডালের অঙ্কুরোদয় : খোসাসহ মুগ বা মাষকলাই ডাল থালায় আধা সে.মি. পুরু করে সমান পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রেখে একদিন অন্তর পানি পরিবর্তন করতে হবে এবং ভিজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তিন দিন পর অঙ্কুর বের হবে। অঙ্কুর বের হওয়ার পর ডালে শুধু পানি ছিটিয়ে দিয়ে আরও দুদিন ভিজানো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পাঁচদিন পর অঙ্কুর বড় হলে ডালের খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নেয়ার পর রান্নায় ব্যবহার করা যাবে। চিকেন এগরোল, নুডলস, চাওমিন ও বিফ উইত ভেজিটেবল ইত্যাদি খাবারে অঙ্কুরিত ডাল দেয়া যায়। অঙ্কুরিত ডালে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
খাদ্য নির্বাচন ও ক্রয়
বাজারে গিয়ে সরস জিনিস পছন্দ করে কেনার মধ্যেও কৃতিত্ব আছে। কিনতে গিয়ে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে তা হলে-(১) খাদ্যের মান ও গুন বিচার করা (২) দাম যাচাই করে কেনা (৩) ভাল খাদ্য বেছে নেয়া এবং (৪) মাপ ও ওজনের প্রতি লক্ষ্য রাখা।
যেকোন খাবারের রং, আকার ও বন্ধ থেকে টাটকা কি বাসি বুঝা যায়। তাজা শাকসবজির সবুজ, হলুদ, লাল ও সাদা রং মানুশষকে আকৃষ্ট করে। তাজা পরিণত সবজি ডাসা ও কচকচে হয়। বাসি হলে শাকসবজির পানি কমে যায়। শাক নেতিয়ে যায়, সবজি ও ফলের খোসা কুচকে যায়, ডাঁসা কচকচে ভাব থাকে না। হাতে কেমন নরম নেতানো বোধ হয়। এসাথে রংও ফিকে হয়, পুষ্টিমান কমে যায়। উন্নতমানের শাকসবজি ও ফলের পরিণত অবস্থা ও পরিপক্কতার উপর এদের গুন বিচার করা হয়। যেমন-ফুলকপি, পালংশাক, ঢেড়স, ঝিঙ্গা, পেয়ারা, কুল ইত্যাদির সরসতা এদের আকার এবং বয়সের সাথে হয়ে থাকে। ঠিক খাওয়ার উপযোগী হলে এসব খাদ্যের পরিপক্কতা এমন হবে, যা আমরা বুঝাব ডাঁসা ও কচকচে বলে। কেনার সময় এমন খাবার নির্বাচন করতে হবে যা পুষ্টি, রং, আকার এসব মানের বিচারে প্রথম শ্রেণীতে আসে। টাটকা ও সরস খাবারে পুষ্টিউপাদান বেশি পাওয়া যায়। বাসি, পঁচা ও পোকায় খাওয়া থাকে না বলে কুটা-বাছায় খাদ্যের অপচয় হয় না। কম দামে নিুমানের খাদ্য ক্রয় অপেক্ষা টাটকা ও সরস খাদ্য কেনা সুবিবেচনার পরিচয়।
কোন অনুষ্ঠান উপলক্ষে বেশি লোককে খাদ্য পরিবেশনের আয়োজন করতে হলে কি পরিমাণে খাদ্য ক্রয় করা উচিত তার একটি তালিকা নীচে দেয়া হলো।পুষ্টি বিজ্ঞান মতে একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক লোকের দৈনিক খাদ্যের চাহিদার প্রতি দৃষ্টি রেখে খাদ্যের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়েছে। তালিকায় একজনের প্রয়োজনীয় পরিমাণ এবং সে অনুপাতে ৫০ জনের জন্য কি পরিমাণ কেনা দরকার তা দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য | জনপ্রতি পরিমাণ | ৫০ জনের জন্য পরিমাণ |
ভাতের চাল পোলাওর চাল ময়দা, পরটার জন্য নুডলস সেমাই, দুধ সেমাইর জন্য মাছ মাংস মোরগের মাংস আলু মটরগুটি ফুলকপি বাঁধাকপি সালাদপাতা শসা টমেটো গাজর | ১০০ গ্রাম ৬০ গ্রাম ২টা পরটা ১/২ – ৩/৪ কাপ ১/২ কাপ ১০০ গ্রাম ১০০ গ্রাম ১/৮ অংশ ১ টা বড় ১/২ কাপ ১/২ কাপ ১/২ কাপ ২ টি পাতা ৪ স্লাইস ৩ স্লাইস ৪ ফালি | ৫ কেজি ৩ কেজি ২.৫ কেজি ৩-৪ প্যাকেট ৬০০ গ্রাম ৫ কেজি ৫ কেজি ৭ টা বড় মোরগ ৫ কেজি ৬ কেজি ৬ টি ৫ টি ৮ টি গাছ ৩ কেজি ৫ কেজি ২ কেজি |